এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০১৪

বিশ্বাসের সুতোয় গেঁথেছি হৃদয়মাল্য – ১

একটা সময় এমন প্রশ্নগুলো আমাকেও ভাবিয়েছে -  আচ্ছা এমন কি হতে পারেনা যে মুহাম্মাদ (সাঃ) আসলে আল্লাহর রাসুল নন ? যেরকমটা মক্কার ইহুদী ও মুশরিক নেতারা দাবি করতো সেটাই সঠিক ? হয়তো তিনি কোনভাবে কিছু জ্ঞান লাভ করেছিলেন পুরনো কিতাব থেকে । হয়তো তিনি ছিলেন একজন ভালো  , ক্যারিশমাটিক নেতা মাত্র ! হয়তো তাঁর ছিল অসাধারণ সম্মোহনী ক্ষমতা আর ছিলেন অনেক চতুর ও ধুরন্ধর একজন ! হয়তো তিনি চেয়েছিলেন কোনভাবে আরবের ক্ষমতাবান কেউ হতে । হয়তো কোন জ্বিন তাঁকে সাহায্য করতো ! আর সবকিছু মিলিয়ে তিনি সফল হয়েছিলেন ! এমন কি হতে পারেনা ?

আল্লাহ্‌ , ফেরেশতা, দোযখ, বেহেশত, পরকাল । বিশ্বাসের এই মূল বিষয়গুলো নিয়েই এমনি কত প্রশ্ন , কত সন্দেহ সংশয় বারবার আঘাত করেছে মনে । আমি জানি, এরকম বিভ্রান্তি থেকেই কতজনে পথ হারিয়ে চলে গেছে ইবলিশের রাস্তায় । আল্লাহর রহমতে বিশ্বাসীদের কাতার থেকে আমাকে কখনো বিচ্যুত করতে পারেনি শয়তান । ইসলামের মূল টেক্সট কুরআন ও হাদীসেই আমি একে একে পেয়ে গেছি সব সন্দেহের জবাব । ধীরে ধীরে কেটে গেছে সন্দেহ সংশয় । দিনে দিনে বিশ্বাসের ভিত হয়েছে শক্ত । এই সিরিজে আমি টুকরো টুকরো করে লিখে রাখবো কীভাবে আমার বিশ্বাস ক্রমে ক্রমে দৃঢ়তা পেয়েছে । হয়তো এতে করে অন্য কেউ পেয়ে যেতে পারেন তাঁর সংশয়ের জবাব ।

***
হাদীস পড়ার সময় আমি সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত একটি হাদীস পাই সহীহ বুখারীর দ্বিতীয় খন্ডে ।

‘আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ (র.).............. মুগীরা শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) এর সময় যে দিন (তাঁর পুত্র) ইব্রাহীম (রাঃ) ইন্তেকাল করেন, সেদিন সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। লোকেরা তখন বলতে লাগল, ইব্রাহীম (রাঃ) এর মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বললেনঃ কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন তা দেখবে, তখন সালাত আদায় করবে এবং আল্লাহর নিকট দু’আ করবে’।  
( সহীহ বুখারী )

রাসুল (সাঃ) বলেন , সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কারো মৃত্যু কিংবা জন্মের কারণে হয়া । আল্লাহ্‌র নিদর্শন সমূহের মধ্যে এ হলো দু’টি নিদর্শন , যা আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন । (বুখারী)


***
নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রমাণ করার ইচ্ছা সব মানুষেরই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি । একজন মানুষের শিশুসন্তান মারা গেছে আর সেদিনই সূর্যগ্রহণ হয়েছে । লোকেরা বলাবলি করছে যে অমুকের ছেলের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে । যে লোক নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরতে চায়, যে নিজেকে বিশেষ কেউ হিসেবে মানুষের মাঝে প্রচার করে, যে নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় , এমন কোন ব্যক্তি কি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের এরকম একটা মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করবে ?

এ তো এখন থেকে দেড় হাজার বছর আগের আরবের কথা । যদি মুহাম্মাদ (সাঃ) সত্যি সত্যি আল্লাহ্‌র নবী না হয়ে সাধারণ কেউ হতেন , নবুয়তের মিথ্যা দাবিদার হতেন, তাহলে তিনি নিশ্চিতভাবেই বলতেন – হ্যা । আমার ছেলের  মৃত্যুর কারণেই আজ সূর্যগ্রহণ হয়েছে । আর সেকথা লোকেরা তো আগে থেকে বলাবলি করছিলোই । তাদের সে বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত হত । মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি তাঁদের বিশ্বাস নিশ্চয়ই আরো দৃঢ় হতো । এই একবিংশ শতাব্দীতেও মানুষ অলৌকিক কিছু ভাবতে, দেখতে, শুনতে ভালোবাসে । সেই সময়ের মানুষ তো নবীদের কাছে দাবিই করতো অলৌকিক কিছু দেখানোর ।
মিথ্যা দাবিদার হলে মুহাম্মাদ (সাঃ) কি এই সুযোগ হাতছাড়া করতেন ?

অথচ কী নির্দ্বিধায় রাসুল (সাঃ) মানুষকে জানিয়ে দিলেন- কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না ।

তাঁর শৈশব কৈশোর যৌবনের সর্বজনস্বীকৃত সততা ও সচ্চরিত্রের অনন্যতা তো রয়েছেই ।  মুহাম্মাদ (সা:) যে প্রকৃতই আল্লাহ্‌র প্রেরিত নবী- এই হাদীসে উল্লেখিত ছোট্ট ঘটনাটি আমার সেই বিশ্বাসের সুতোয় আরো একটি ফুল হিসেবে গেঁথে যায় ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন