ইদানিং খুব একা একা লাগে সজীবের । একা লাগাটাই স্বাভাবিক । এমনিতে এই বয়সে হঠাৎ করেই সবাই বন্ধুহীন হয়ে পড়ে ।
স্কুলের বন্ধুদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটে এসএসসির পর , তাদের কথা হয়তো মনে পড়ে, খারাপ লাগাও কাজ করে , কিন্তু সেই শূন্যতা থাকেনা বেশিদিন । কিছুদিনের মধ্যেই কলেজে নতুন বন্ধু জুটে যায় । একই ব্যাপার কলেজ শেষেও । কলেজের বন্ধুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় , কিন্তু ভার্সিটির ক্লাস শুরু হলেই আবার জোটে নতুন মাত্রার বন্ধুরা । স্কুলের পর ভার্সিটি লেভেলেই বন্ধুত্ব হয় দীর্ঘদিনের । কলেজে তো মাত্র মোটে দুটো বছর , দেখতে দেখতেই পার হয়ে যায় । তার ওপর ক্লাস , কোচিং , প্রাইভেট , পরীক্ষা । সবমিলে কলেজের সময়টা কাটে খুব তাড়াতাড়ি । বন্ধুত্ব গাঢ় হবার সুযোগ পায়না সে সময়টায় ।
মেডিকেল কলেজে ছাত্রদের অফুরন্ত সময় নেই , সেভেন্টি ফাইভ পার্সেন্ট ক্লাস এটেন্ডেন্স । আইটেম , কার্ড , টার্ম , ওয়ার্ড ফাইনাল , ব্লক পোস্টিং , প্রফেশনাল পরীক্ষা নামের বিভীষিকা । তবুও পাঁচ ছয় বছর তো কম সময় নয় ! এতগুলো দিন একসাথে থাকা , খাওয়া , ক্লাস ওয়ার্ড করা , পরীক্ষা দেয়া , এটা সেটা প্রোগ্রাম করা , ক্লাস ফাঁকি দিয়ে , আইটেম পেন্ডিং দিয়ে ঘুরতে যাওয়া । এসব কিছুর মাঝেই বন্ধুত্ব দিন দিন বাড়তেই থাকে ।
তারপর একটা সময় আসে , পাশ করে যাবার পর । সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে । একই হাসপাতালে ডিউটি , কারো হয়তো মেডিসিনে । কারো সার্জারিতে , কারো গাইনি । একজনের মর্নিং তো আরেকজনের নাইট । একই রুমে থেকেও দেখা হয়না । বিকালে কফি খাওয়ার সময় বয়ে যায় , সার্জারির বন্ধুকে ফোন করলে হয়তো রিসিভই করতে পারেনা , অথবা কোনমতে ফোনটা কানে লাগিয়ে বলবে, দোস্ত তোরা যা । আমি ওটিতে দাঁড়িয়েছি ।
মেডিসিনে ডিডটি যার সে হয়তো বলবে, দোস্ত আমি বের হতে পারবো না । একটা পেশেন্ট খারাপ , ডিকে ডেভেলাপ করেছে । গাইনিতে যার পোস্টিং সে হয়তো ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলবে , আমি একটু ঘুমাই রে । তোরা যা । কাল নাইট ডিউটি ছিল , মর্নিং করে এসে শুয়েছি । গাইনির নাইট মানে তো বুঝিস ।
কার্ডিওলজিতে দম ফেলার ফুরসত নেই । এদিকে ইসিজি করো , ট্রিটমেন্ট অর্ডার লেখো , ওষুধ কিনতে পাঠাও । ফলোআপ দাও । সিপিআর দাও । এর মাঝেই হয়তো কেউ ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চলে গেছে পরপারে । মন খারাপ করে ডেথ সার্টিফিকেট লেখো ।
এর মাঝেও তবু এর ওর সাথে শিডিউল এক্সচেন্জ করে বন্ধুরা মিলে কোথাও খেতে বসা যায় । গভীর রাতে হোস্টেলের ছাদে বসে কথা বলা যায় ।
কিন্তু এর পরের সময়টা আরো ভয়ংকর । ইন্টার্নশিপ শেষ মানে ছড়িয়ে পড়ো । কে যে কখন কীভাবে কোনদিক দিয়ে কোথায় চলে যায় , ঠিকমত বিদায় নেয়াও হয়না । এই কথাটাও বলা হয়না- দোস্ত , গেলাম ।
কেউ শহর ছাড়ে , কেউ দেশ ছাড়ে । কেউ বিয়ে করে , কেউ টাকা জমায় , কেউ উচ্চতর ডিগ্রীর জন্যে নাক ডুবিয়ে পড়াশোনা করে , কেউ ট্রেনিং করে । কেউ বিসিএস দিয়ে পোস্টিং নিয়ে গ্রামে চলে যায় । এক অন্যরকম শুন্যতা , বন্ধুহীনতা , একাকীত্ব ঘিরে ধরে এসময় ।
যারা বিয়ে করে ফেলে তারা হয়তো একাকীত্ব থেকে কিছুটা মুক্তি পায় , কিন্তু যারা বিয়েও করেনি তাদের একাকীত্ব জেঁকে বসে । কারণ , গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার জন্য যতটা সময় একজন আরেকজনকে দেয়া দরকার , এসময় কারো হাতেই অতটা সময় নেই । সবাই ব্যস্ত জীবনের ঘোড়দৌড়ে । নতুন পরিচয় হয়তো হয় , কিন্তু বন্ধুত্ব যাকে বলে সেটা আর হয়না ।
এরকমই একটা সময় কাটাচ্ছে সজীব ।
বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছে । পোস্টিং হয়েছে যে উপজেলায় , সেটাকে গ্রাম বলাটাই শ্রেয় । মানুষগুলো এত সহজ সরল , ওদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে । দিনের বেলাটা তাই ভালোই কাটে হাসপাতালের ব্যস্ততায় । সময় গড়ায় , পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে একাকীত্ব ।
বিকেল হলেই হাসপাতাল এরিয়াটা খা খা করে । একা একা ঘরে বসে না থেকে মাঝে মাঝে রিক্সা ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ে সজীব । আজও বেরিয়েছে । গন্তব্য আত্রাই নদী । দুই কিলো দুরে আত্রাই নদী । বড় নয় , ছোট নদী । পানি থাকে কম , কোথাও কোথাও হাঁটু পানি বলা চলে । সজীব শুনে অবাক হয়ে যায় , বর্ষায় নাকি এই নদীর পানিতেই তলিয়ে যায় আশেপাশের কয়েক গ্রাম । মেডিকেল কলেজে থাকতে প্রায় বিকেলেই যাওয়া হত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত । এখানে সমুদ্র নেই , একটা নদী যে আছে তাতেই খুশি সজীব । রিক্সাওয়ালা টুংটাং শব্দে বেল বাজাচ্ছে । ফাঁকা কাচা রাস্তার দুধারে বাশঝাড় , বট গাছ গাবগাছ । কারো বাড়ির পেছন দিকটায় নারকেল সুপারির সারি । খারাপ লাগে না । সবকিছু ভালোই লাগে , সমস্যা শুধু একটাই , খুব একা লাগে এখানে । মোবাইল আছে বলে রক্ষা । তবু ফোনে কথা বলা যায় । যদিও মোবাইলে কথা বলাটা সজীবের পছন্দ না খুব একটা । ফোনে কথা বলে কখনো মন ভরেনা । ফোনে এক ঘন্টা কথা বলার চেয়ে সরাসরি দশ মিনিট কথা বলাও অনেক ভালো । মানুষের মুখের কথাই সব নয় । কথার সাথে চাহনি , আন্তরিক ভঙ্গি এসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ । ফোনে অবলীলায় মিথ্যা বলা যায় । মন খারাপ থাকলেও বলে দেয়া যায় , ভালো আছি । সামনাসামনি কারো চোখের দিকে তাকিয়ে সহজে মিথ্যা বলা যায়না । কাছের মানুষেরা ঠিকই ধরে ফেলে , সামথিং ইজ রং ।
কিন্তু এখানে আর উপায় কী ?
রাস্তার পাশে একটা ছোট হোটেল । খুব সাধাসিধে একটা নাম , ভাই ভাই চা বিতান । সজীব দেখলো , গরম পরোটা তৈরি হচ্ছে । রিক্সা থামিয়ে দুজনের জন্য চারটা পরোটা আর দুকাপ চা অর্ডার করলো । চায়ে পরাটা চুবিয়ে খাওয়া শুরু করলো সজীব । চট্টগ্রামের মানুষদের এই অভ্যাসটা আছে , চায়ে পরোটা বা রুটি ভিজিয়ে খাওয়া । ব্যাপারটা কেমন বিদঘুটে লাগে সজীবের । কিন্তু মন খারাপ থাকলে বিদঘুটে কাজগুলোই করতে ইচ্ছে করে কেন যেন । ওর দেখাদেখি রিক্সাওয়ালাও ঐভাবে খেতে লাগলো ।
নদীর পুব পাড়ে একটা ঘাসে ঢাকা ঢিবির ওপর এসে বসেছে সজীব । পাশে একটা মসজিদে আসরের নামাজটা সেরে নিয়েছে । বেশ ভালো লাগছে এখানে । ঢিবিটার সামনের ঢালু জায়গাটাতে বেশ বড় বড় ঘাস । কাশফুল ফুটেছে বেশ কয়েকটা । আসলেই অসাধারণ লাগছে জায়গাটা । মোবাইলটা বের করে ফেসবুকে লগইন করে কিছুক্ষণ হোমপেজ স্ক্রল করলো । তারপর বিরক্ত হয়ে আবার লগআউট করলো । ফেসবুকটাও এখন আর ভালো লাগেনা । লাগবে কীভাবে ? বাঙালির রাজনীতি আগে ছিল শুধু চায়ের কাপে , এখন সেটা এসেছে ফেসবুকে । সামান্য রাজনৈতিক মতভেদ নিয়ে কত বিভেদ বিশৃঙ্খলা যে করছে এই বাঙালিরা । একে অপরের বিরুদ্ধে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোই যেন কিছু লোকের মূল কাজ । শেখ মুজিবের চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার , জিয়ার চেয়ে বড় বিএনপি সেজেছে কেউ কেউ । কেউ আবার হয়ে গেছে স্বঘোষিত আলেম , এরা যখন যাকে ইচ্ছা কাফের ফতোয়া দিয়ে দেয় । এসব দেখে মনটা বিষিয়ে উঠছে দিনদিন । ভালো এতটুকু , এর মাঝেই বন্ধুবান্ধবদের খোঁজখবর পাওয়া যায় , বিভিন্ন সংবাদ পাওয়া যায় । আর তাছাড়া এই চরম একাকীত্বে তবু ভার্চুয়ালি হলেও বন্ধুদের সাথে থাকাটাও বা কম কিসে !
আনমনে মোবাইলের টাচস্কৃনে আঙুল চালাতে লাগলো সজীব । ফেসবুক এপটির নিচেই আরেকটা এপ । আগে থেকেই আছে , এই মুহূর্তে হঠাৎ যেন নতুন করে চোখে পড়লো সজীবের । মিগ ৩৩ ! হাহ । সে একটা সময় ছিল বটে । ফেসবুক জনপ্রিয় হবার আগের সময়টার কথা । মোবাইলে ইন্টারনেট আর মিগ ৩৩ । প্রথমে উদ্দেশ্য ছিল মোবাইলের বিল কমানো । সেসময় একমিনিট কলের দাম পড়তো সাত থেকে দশ টাকা । কোন পালস নেই । দশ সেকেন্ড কথা বললে সাত টাকা ! অথচ মিগে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করতে কয়েক টাকা খরচ হয় । সেজন্য জরুরি কথা ছাড়া বেশিরভাগ কথা হত মিগ চ্যাটেই । চ্যাট রুম বানিয়ে গসিপ করা ছিল ক্লাস চলাকালীন সময়টার উপযুক্ত সদ্ব্যবহার !
একটা আইডি খুলে সজীবও ঢুকে পড়ে একদিন সেই মিগের ভার্চুয়াল জগতে । আর মিগের মাধ্যমেই ‘ড্রিমবয় সজীবে’র ভার্চুয়াল পরিচয় হয় আকাশনীলার সাথে । শব্দটা ঠিক আকাশনীলা নাকি আকাশলীনা তা নিয়ে সজীব আজো কনফিউজড । হায় আকাশলীনা ! কোথায় আছে কে জানে ?
আকাশলীনাই প্রথম নক করেছিল সজীবকে । Hi ! হাই সম্বোধনটা তখন মিগের কল্যাণে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল । ভদ্রতার খাতিরে সজীবও রিপ্লাই দিয়েছিল । হাই ! তারপর হাই থেকে হ্যালো , টুকটাক কথাবার্তা । একটা সময় সজীব বুঝতে পারলো আকাশলীনা ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে । একদিন দেখা করতে চাইলো আকাশলীনা । বেঁকে বসলো সজীব । না , দেখা করবে কেন ? সজীব কেবল ফার্স্ট ইয়ারে , আকাশলীনা আরো ছোট । দেখা করার উদ্দেশ্য কী ? প্রেম করা ? এভাবে প্রেম করা কি ধর্মে স্বীকৃত ? শুধুমাত্র বিয়ের উদ্দেশ্যে হয়তো দেখা হতে পারে, অথবা খুব জরুরি কোন প্রয়োজনে । এখানে কোনটা আছে ?
আকাশলীনাকে স্পষ্ট করে সেকথা জানিয়ে দিয়েছিল সজীব ।
আকাশলীনাও আর কথা বাড়ায়নি । এতটা বছর , মানে গত পাঁচটা বছর আর কখনো নক করেনি সে । অবশ্য ফেসবুক জনপ্রিয় হবার পর থেকে মিগ কেউ তেমন একটা চালায়ও না বলা যায় । দিনে দিনে আরো কতকিছুই তো এসেছে । ভাইবার, নিমবায, হোয়াটসাপ, স্কাইপে ।
সজীব মিগে লগইন করার চেষ্টা করলো । পাসওয়ার্ড ভুলে গেছে । পাসওয়ার্ড তো দূরের কথা, কবে শেষ মিগে লগইন করেছিল সেটাও তো মনে নেই ! ফরগট পাসওয়ার্ড এ ক্লিক দিয়ে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করে লগইন করলো । আকাশলীনার শেষ মেসেজটা এখনো মনে পড়ে সজীবের ।
একদিন সে আসবে । পূর্ণ অধিকার নিয়ে আসবে ! কথাটার অর্থ এখনো পরিষ্কার করে বোঝেনা সজীব ।
পকেটে রাখা দ্বিতীয় মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো । বড় আপা ফোন করেছে ।
-সালাম আলিকুম আপু । তুই তো হাজার বছর বাঁচবি ।
-ওয়ালাইকুম সালাম । রাখ তোর প্যাচাল । কোথায় তুই এখন ?
-আমি কোথায় তা দিয়ে কার কী আসে যায় ? আছি বনবাসে ।
-কার কী আসে যায় একটু পরেই বুঝবি । একটু সেজেগুজে নে । তোকে দেখতে গেছে মেয়েপক্ষ ।
-কীসব আবোল তাবোল বকছিস ? মেয়েপক্ষ মানে কী ?
-মানে মেয়ে নিজে । সাথে তার বড়ভাই । কাউকে কিছু না জানিয়েই চলে গেছে । এখন তোকে খুঁজে না পেয়ে ফোন করেছে আমাকে ।
-দুষ্টামি ছাড় । আসল খবর কী সেইটা বল ।
-দুষ্টামি না । সব ষড়যন্ত্র পাকা হয়ে গেছে । তোকে কেউ কিছু জানায় নি এতদিন । কিন্তু মেয়ে দেখাদেখি আমরা সেরে ফেলেছি । ওরাই প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল । আমাদেরও পছন্দ হয়েছে । তোর ছবি দেখেই নাকি মেয়েরও পছন্দ হয়েছে । একটু আগে ফোন করে জানালো ওরা এখন আত্রাই গেছে । তোকে দেখার জন্য । কী ডাঙর মেয়েরে বাবা , তোর হাড্ডি চিবিয়ে খাবে । এখন যা , একটু ফ্রেশট্রেশ হয়ে থাক ।
-হা , তুই বললেই হলো ? বানিয়ে বানিয়ে একটা কাহিনী বললি আর আমি পাগল হয়ে গেলাম ? ছোট হতে পারি , কিন্তু অত বোকা না আমি । আর কোন সে রাক্ষসী ? হাড্ডি চিবায় কেন ? বলে দিস, আমার হাড্ডি শক্ত আছে , দাঁত ভেঙে যাবে ।
-ঠিক আছে । থাক তুই তোর চালাকি নিয়ে । দেখবো তোর হাড্ডির জোর । শেষে তো বউয়ের আঁচল ছাড়া নড়বি না !
মোবাইল পকেটে রেখে কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেলো সজীব । আচ্ছা, আপা যা বললো সেটা কি সত্য হতে পারে ? হলে কেমন হবে । ও যে এখানে এসেছে এটাতো কেউ জানে না । এসে ফিরে যাবে মেয়েপক্ষ ! যাক । এখানে নিশ্চিন্তে থাকা যায় ।
মোবাইলের স্ক্রিনে মিগ ওপেন আছে । পর্দায় চোখ দিয়েই হতবাক হয়ে গেল সজীব । একি ! আকাশলীনা লিখেছে এক মিনিট আগে । মিঃ ড্রিমবয় , একটু পেছনে তাকানো যায় ?
ঢিবির ওপরেই তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল সজীব । ভয়ে ভয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো । একজন , হ্যা একজনই তো ! দাঁড়িয়ে আছে ছায়ামূর্তির মত । হঠাৎ করেই মাথায় এলো , দারোয়ান তো জানে ও মাঝেমাঝে এখানে আসে ! তাহলে ওই ব্যাটার কাছেই জেনেছে । হায় হায় , এ কী হলো ?
ছায়ামূর্তিটা এগিয়ে এলো । বললো , হাই ড্রিমবয় , আমি আকাশলীনা ! এলাম , পূর্ণ অধিকার নিতে !
সজীবের পেছনে গোধূলীর সূর্যটা টকটকে লাল । এতক্ষণে ডুবে যাওয়ার কথা ছিল, হয়তো এই মুহূর্তটা দেখার জন্যই এখনো ডুবে যায়নি ! সজীব নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না । সবকিছু ঝাপসা লাগছে তার । সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সেকি সূর্য না চন্দ্র, মানবী না অতিমানবী , পরী না পেত্নি, প্রেয়সী না রাক্ষসী তা ঠাহর করা এই মুহূর্তে সজীবের পক্ষে সম্ভব নয় ।
স্কুলের বন্ধুদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটে এসএসসির পর , তাদের কথা হয়তো মনে পড়ে, খারাপ লাগাও কাজ করে , কিন্তু সেই শূন্যতা থাকেনা বেশিদিন । কিছুদিনের মধ্যেই কলেজে নতুন বন্ধু জুটে যায় । একই ব্যাপার কলেজ শেষেও । কলেজের বন্ধুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় , কিন্তু ভার্সিটির ক্লাস শুরু হলেই আবার জোটে নতুন মাত্রার বন্ধুরা । স্কুলের পর ভার্সিটি লেভেলেই বন্ধুত্ব হয় দীর্ঘদিনের । কলেজে তো মাত্র মোটে দুটো বছর , দেখতে দেখতেই পার হয়ে যায় । তার ওপর ক্লাস , কোচিং , প্রাইভেট , পরীক্ষা । সবমিলে কলেজের সময়টা কাটে খুব তাড়াতাড়ি । বন্ধুত্ব গাঢ় হবার সুযোগ পায়না সে সময়টায় ।
মেডিকেল কলেজে ছাত্রদের অফুরন্ত সময় নেই , সেভেন্টি ফাইভ পার্সেন্ট ক্লাস এটেন্ডেন্স । আইটেম , কার্ড , টার্ম , ওয়ার্ড ফাইনাল , ব্লক পোস্টিং , প্রফেশনাল পরীক্ষা নামের বিভীষিকা । তবুও পাঁচ ছয় বছর তো কম সময় নয় ! এতগুলো দিন একসাথে থাকা , খাওয়া , ক্লাস ওয়ার্ড করা , পরীক্ষা দেয়া , এটা সেটা প্রোগ্রাম করা , ক্লাস ফাঁকি দিয়ে , আইটেম পেন্ডিং দিয়ে ঘুরতে যাওয়া । এসব কিছুর মাঝেই বন্ধুত্ব দিন দিন বাড়তেই থাকে ।
তারপর একটা সময় আসে , পাশ করে যাবার পর । সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে । একই হাসপাতালে ডিউটি , কারো হয়তো মেডিসিনে । কারো সার্জারিতে , কারো গাইনি । একজনের মর্নিং তো আরেকজনের নাইট । একই রুমে থেকেও দেখা হয়না । বিকালে কফি খাওয়ার সময় বয়ে যায় , সার্জারির বন্ধুকে ফোন করলে হয়তো রিসিভই করতে পারেনা , অথবা কোনমতে ফোনটা কানে লাগিয়ে বলবে, দোস্ত তোরা যা । আমি ওটিতে দাঁড়িয়েছি ।
মেডিসিনে ডিডটি যার সে হয়তো বলবে, দোস্ত আমি বের হতে পারবো না । একটা পেশেন্ট খারাপ , ডিকে ডেভেলাপ করেছে । গাইনিতে যার পোস্টিং সে হয়তো ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলবে , আমি একটু ঘুমাই রে । তোরা যা । কাল নাইট ডিউটি ছিল , মর্নিং করে এসে শুয়েছি । গাইনির নাইট মানে তো বুঝিস ।
কার্ডিওলজিতে দম ফেলার ফুরসত নেই । এদিকে ইসিজি করো , ট্রিটমেন্ট অর্ডার লেখো , ওষুধ কিনতে পাঠাও । ফলোআপ দাও । সিপিআর দাও । এর মাঝেই হয়তো কেউ ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চলে গেছে পরপারে । মন খারাপ করে ডেথ সার্টিফিকেট লেখো ।
এর মাঝেও তবু এর ওর সাথে শিডিউল এক্সচেন্জ করে বন্ধুরা মিলে কোথাও খেতে বসা যায় । গভীর রাতে হোস্টেলের ছাদে বসে কথা বলা যায় ।
কিন্তু এর পরের সময়টা আরো ভয়ংকর । ইন্টার্নশিপ শেষ মানে ছড়িয়ে পড়ো । কে যে কখন কীভাবে কোনদিক দিয়ে কোথায় চলে যায় , ঠিকমত বিদায় নেয়াও হয়না । এই কথাটাও বলা হয়না- দোস্ত , গেলাম ।
কেউ শহর ছাড়ে , কেউ দেশ ছাড়ে । কেউ বিয়ে করে , কেউ টাকা জমায় , কেউ উচ্চতর ডিগ্রীর জন্যে নাক ডুবিয়ে পড়াশোনা করে , কেউ ট্রেনিং করে । কেউ বিসিএস দিয়ে পোস্টিং নিয়ে গ্রামে চলে যায় । এক অন্যরকম শুন্যতা , বন্ধুহীনতা , একাকীত্ব ঘিরে ধরে এসময় ।
যারা বিয়ে করে ফেলে তারা হয়তো একাকীত্ব থেকে কিছুটা মুক্তি পায় , কিন্তু যারা বিয়েও করেনি তাদের একাকীত্ব জেঁকে বসে । কারণ , গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার জন্য যতটা সময় একজন আরেকজনকে দেয়া দরকার , এসময় কারো হাতেই অতটা সময় নেই । সবাই ব্যস্ত জীবনের ঘোড়দৌড়ে । নতুন পরিচয় হয়তো হয় , কিন্তু বন্ধুত্ব যাকে বলে সেটা আর হয়না ।
এরকমই একটা সময় কাটাচ্ছে সজীব ।
বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছে । পোস্টিং হয়েছে যে উপজেলায় , সেটাকে গ্রাম বলাটাই শ্রেয় । মানুষগুলো এত সহজ সরল , ওদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে । দিনের বেলাটা তাই ভালোই কাটে হাসপাতালের ব্যস্ততায় । সময় গড়ায় , পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে একাকীত্ব ।
বিকেল হলেই হাসপাতাল এরিয়াটা খা খা করে । একা একা ঘরে বসে না থেকে মাঝে মাঝে রিক্সা ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ে সজীব । আজও বেরিয়েছে । গন্তব্য আত্রাই নদী । দুই কিলো দুরে আত্রাই নদী । বড় নয় , ছোট নদী । পানি থাকে কম , কোথাও কোথাও হাঁটু পানি বলা চলে । সজীব শুনে অবাক হয়ে যায় , বর্ষায় নাকি এই নদীর পানিতেই তলিয়ে যায় আশেপাশের কয়েক গ্রাম । মেডিকেল কলেজে থাকতে প্রায় বিকেলেই যাওয়া হত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত । এখানে সমুদ্র নেই , একটা নদী যে আছে তাতেই খুশি সজীব । রিক্সাওয়ালা টুংটাং শব্দে বেল বাজাচ্ছে । ফাঁকা কাচা রাস্তার দুধারে বাশঝাড় , বট গাছ গাবগাছ । কারো বাড়ির পেছন দিকটায় নারকেল সুপারির সারি । খারাপ লাগে না । সবকিছু ভালোই লাগে , সমস্যা শুধু একটাই , খুব একা লাগে এখানে । মোবাইল আছে বলে রক্ষা । তবু ফোনে কথা বলা যায় । যদিও মোবাইলে কথা বলাটা সজীবের পছন্দ না খুব একটা । ফোনে কথা বলে কখনো মন ভরেনা । ফোনে এক ঘন্টা কথা বলার চেয়ে সরাসরি দশ মিনিট কথা বলাও অনেক ভালো । মানুষের মুখের কথাই সব নয় । কথার সাথে চাহনি , আন্তরিক ভঙ্গি এসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ । ফোনে অবলীলায় মিথ্যা বলা যায় । মন খারাপ থাকলেও বলে দেয়া যায় , ভালো আছি । সামনাসামনি কারো চোখের দিকে তাকিয়ে সহজে মিথ্যা বলা যায়না । কাছের মানুষেরা ঠিকই ধরে ফেলে , সামথিং ইজ রং ।
কিন্তু এখানে আর উপায় কী ?
রাস্তার পাশে একটা ছোট হোটেল । খুব সাধাসিধে একটা নাম , ভাই ভাই চা বিতান । সজীব দেখলো , গরম পরোটা তৈরি হচ্ছে । রিক্সা থামিয়ে দুজনের জন্য চারটা পরোটা আর দুকাপ চা অর্ডার করলো । চায়ে পরাটা চুবিয়ে খাওয়া শুরু করলো সজীব । চট্টগ্রামের মানুষদের এই অভ্যাসটা আছে , চায়ে পরোটা বা রুটি ভিজিয়ে খাওয়া । ব্যাপারটা কেমন বিদঘুটে লাগে সজীবের । কিন্তু মন খারাপ থাকলে বিদঘুটে কাজগুলোই করতে ইচ্ছে করে কেন যেন । ওর দেখাদেখি রিক্সাওয়ালাও ঐভাবে খেতে লাগলো ।
নদীর পুব পাড়ে একটা ঘাসে ঢাকা ঢিবির ওপর এসে বসেছে সজীব । পাশে একটা মসজিদে আসরের নামাজটা সেরে নিয়েছে । বেশ ভালো লাগছে এখানে । ঢিবিটার সামনের ঢালু জায়গাটাতে বেশ বড় বড় ঘাস । কাশফুল ফুটেছে বেশ কয়েকটা । আসলেই অসাধারণ লাগছে জায়গাটা । মোবাইলটা বের করে ফেসবুকে লগইন করে কিছুক্ষণ হোমপেজ স্ক্রল করলো । তারপর বিরক্ত হয়ে আবার লগআউট করলো । ফেসবুকটাও এখন আর ভালো লাগেনা । লাগবে কীভাবে ? বাঙালির রাজনীতি আগে ছিল শুধু চায়ের কাপে , এখন সেটা এসেছে ফেসবুকে । সামান্য রাজনৈতিক মতভেদ নিয়ে কত বিভেদ বিশৃঙ্খলা যে করছে এই বাঙালিরা । একে অপরের বিরুদ্ধে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোই যেন কিছু লোকের মূল কাজ । শেখ মুজিবের চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার , জিয়ার চেয়ে বড় বিএনপি সেজেছে কেউ কেউ । কেউ আবার হয়ে গেছে স্বঘোষিত আলেম , এরা যখন যাকে ইচ্ছা কাফের ফতোয়া দিয়ে দেয় । এসব দেখে মনটা বিষিয়ে উঠছে দিনদিন । ভালো এতটুকু , এর মাঝেই বন্ধুবান্ধবদের খোঁজখবর পাওয়া যায় , বিভিন্ন সংবাদ পাওয়া যায় । আর তাছাড়া এই চরম একাকীত্বে তবু ভার্চুয়ালি হলেও বন্ধুদের সাথে থাকাটাও বা কম কিসে !
আনমনে মোবাইলের টাচস্কৃনে আঙুল চালাতে লাগলো সজীব । ফেসবুক এপটির নিচেই আরেকটা এপ । আগে থেকেই আছে , এই মুহূর্তে হঠাৎ যেন নতুন করে চোখে পড়লো সজীবের । মিগ ৩৩ ! হাহ । সে একটা সময় ছিল বটে । ফেসবুক জনপ্রিয় হবার আগের সময়টার কথা । মোবাইলে ইন্টারনেট আর মিগ ৩৩ । প্রথমে উদ্দেশ্য ছিল মোবাইলের বিল কমানো । সেসময় একমিনিট কলের দাম পড়তো সাত থেকে দশ টাকা । কোন পালস নেই । দশ সেকেন্ড কথা বললে সাত টাকা ! অথচ মিগে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করতে কয়েক টাকা খরচ হয় । সেজন্য জরুরি কথা ছাড়া বেশিরভাগ কথা হত মিগ চ্যাটেই । চ্যাট রুম বানিয়ে গসিপ করা ছিল ক্লাস চলাকালীন সময়টার উপযুক্ত সদ্ব্যবহার !
একটা আইডি খুলে সজীবও ঢুকে পড়ে একদিন সেই মিগের ভার্চুয়াল জগতে । আর মিগের মাধ্যমেই ‘ড্রিমবয় সজীবে’র ভার্চুয়াল পরিচয় হয় আকাশনীলার সাথে । শব্দটা ঠিক আকাশনীলা নাকি আকাশলীনা তা নিয়ে সজীব আজো কনফিউজড । হায় আকাশলীনা ! কোথায় আছে কে জানে ?
আকাশলীনাই প্রথম নক করেছিল সজীবকে । Hi ! হাই সম্বোধনটা তখন মিগের কল্যাণে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল । ভদ্রতার খাতিরে সজীবও রিপ্লাই দিয়েছিল । হাই ! তারপর হাই থেকে হ্যালো , টুকটাক কথাবার্তা । একটা সময় সজীব বুঝতে পারলো আকাশলীনা ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে । একদিন দেখা করতে চাইলো আকাশলীনা । বেঁকে বসলো সজীব । না , দেখা করবে কেন ? সজীব কেবল ফার্স্ট ইয়ারে , আকাশলীনা আরো ছোট । দেখা করার উদ্দেশ্য কী ? প্রেম করা ? এভাবে প্রেম করা কি ধর্মে স্বীকৃত ? শুধুমাত্র বিয়ের উদ্দেশ্যে হয়তো দেখা হতে পারে, অথবা খুব জরুরি কোন প্রয়োজনে । এখানে কোনটা আছে ?
আকাশলীনাকে স্পষ্ট করে সেকথা জানিয়ে দিয়েছিল সজীব ।
আকাশলীনাও আর কথা বাড়ায়নি । এতটা বছর , মানে গত পাঁচটা বছর আর কখনো নক করেনি সে । অবশ্য ফেসবুক জনপ্রিয় হবার পর থেকে মিগ কেউ তেমন একটা চালায়ও না বলা যায় । দিনে দিনে আরো কতকিছুই তো এসেছে । ভাইবার, নিমবায, হোয়াটসাপ, স্কাইপে ।
সজীব মিগে লগইন করার চেষ্টা করলো । পাসওয়ার্ড ভুলে গেছে । পাসওয়ার্ড তো দূরের কথা, কবে শেষ মিগে লগইন করেছিল সেটাও তো মনে নেই ! ফরগট পাসওয়ার্ড এ ক্লিক দিয়ে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করে লগইন করলো । আকাশলীনার শেষ মেসেজটা এখনো মনে পড়ে সজীবের ।
একদিন সে আসবে । পূর্ণ অধিকার নিয়ে আসবে ! কথাটার অর্থ এখনো পরিষ্কার করে বোঝেনা সজীব ।
পকেটে রাখা দ্বিতীয় মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো । বড় আপা ফোন করেছে ।
-সালাম আলিকুম আপু । তুই তো হাজার বছর বাঁচবি ।
-ওয়ালাইকুম সালাম । রাখ তোর প্যাচাল । কোথায় তুই এখন ?
-আমি কোথায় তা দিয়ে কার কী আসে যায় ? আছি বনবাসে ।
-কার কী আসে যায় একটু পরেই বুঝবি । একটু সেজেগুজে নে । তোকে দেখতে গেছে মেয়েপক্ষ ।
-কীসব আবোল তাবোল বকছিস ? মেয়েপক্ষ মানে কী ?
-মানে মেয়ে নিজে । সাথে তার বড়ভাই । কাউকে কিছু না জানিয়েই চলে গেছে । এখন তোকে খুঁজে না পেয়ে ফোন করেছে আমাকে ।
-দুষ্টামি ছাড় । আসল খবর কী সেইটা বল ।
-দুষ্টামি না । সব ষড়যন্ত্র পাকা হয়ে গেছে । তোকে কেউ কিছু জানায় নি এতদিন । কিন্তু মেয়ে দেখাদেখি আমরা সেরে ফেলেছি । ওরাই প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল । আমাদেরও পছন্দ হয়েছে । তোর ছবি দেখেই নাকি মেয়েরও পছন্দ হয়েছে । একটু আগে ফোন করে জানালো ওরা এখন আত্রাই গেছে । তোকে দেখার জন্য । কী ডাঙর মেয়েরে বাবা , তোর হাড্ডি চিবিয়ে খাবে । এখন যা , একটু ফ্রেশট্রেশ হয়ে থাক ।
-হা , তুই বললেই হলো ? বানিয়ে বানিয়ে একটা কাহিনী বললি আর আমি পাগল হয়ে গেলাম ? ছোট হতে পারি , কিন্তু অত বোকা না আমি । আর কোন সে রাক্ষসী ? হাড্ডি চিবায় কেন ? বলে দিস, আমার হাড্ডি শক্ত আছে , দাঁত ভেঙে যাবে ।
-ঠিক আছে । থাক তুই তোর চালাকি নিয়ে । দেখবো তোর হাড্ডির জোর । শেষে তো বউয়ের আঁচল ছাড়া নড়বি না !
মোবাইল পকেটে রেখে কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেলো সজীব । আচ্ছা, আপা যা বললো সেটা কি সত্য হতে পারে ? হলে কেমন হবে । ও যে এখানে এসেছে এটাতো কেউ জানে না । এসে ফিরে যাবে মেয়েপক্ষ ! যাক । এখানে নিশ্চিন্তে থাকা যায় ।
মোবাইলের স্ক্রিনে মিগ ওপেন আছে । পর্দায় চোখ দিয়েই হতবাক হয়ে গেল সজীব । একি ! আকাশলীনা লিখেছে এক মিনিট আগে । মিঃ ড্রিমবয় , একটু পেছনে তাকানো যায় ?
ঢিবির ওপরেই তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল সজীব । ভয়ে ভয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো । একজন , হ্যা একজনই তো ! দাঁড়িয়ে আছে ছায়ামূর্তির মত । হঠাৎ করেই মাথায় এলো , দারোয়ান তো জানে ও মাঝেমাঝে এখানে আসে ! তাহলে ওই ব্যাটার কাছেই জেনেছে । হায় হায় , এ কী হলো ?
ছায়ামূর্তিটা এগিয়ে এলো । বললো , হাই ড্রিমবয় , আমি আকাশলীনা ! এলাম , পূর্ণ অধিকার নিতে !
সজীবের পেছনে গোধূলীর সূর্যটা টকটকে লাল । এতক্ষণে ডুবে যাওয়ার কথা ছিল, হয়তো এই মুহূর্তটা দেখার জন্যই এখনো ডুবে যায়নি ! সজীব নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না । সবকিছু ঝাপসা লাগছে তার । সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সেকি সূর্য না চন্দ্র, মানবী না অতিমানবী , পরী না পেত্নি, প্রেয়সী না রাক্ষসী তা ঠাহর করা এই মুহূর্তে সজীবের পক্ষে সম্ভব নয় ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন