১ ।
একজন
প্রকৃত সুখী মানুষ , বন্ধু ডাঃ tanzim refat একদা বলিল –
‘আমরা
যখন ক্যান্টনমেন্টের বাসায় থাকতাম , আমি চলার সময় রাস্তায় দাঁড়ানো সেন্ট্রি,
দারোয়ানরা সালাম দিত । স্যালুট দিত । যে আগে সালাম দেয় তার মর্যাদা ইসলামে বেশি আর
সবাইকে সালাম দেয়া দরকার জেনে পরে একসময় আমি সবাইকে আগে সালাম দেয়া শুরু করলাম ।
কয়েকদিন
পর দেখি সেন্ট্রি-দারোয়ানরা কেউ আর সালাম স্যালুট দিচ্ছেনা ! কেউ কেউ সালামের
উত্তরও দিচ্ছে না । কেমন অবজ্ঞার চোখে তাকায় ! ওদের ভাবটা এমন, আমাকে সালাম দিচ্ছে
মানে ব্যাটা নিশ্চয়ই আমার চেয়ে নিচু স্তরের কোন কর্মচারী হবে !!’’
২।
অনেকক্ষণ
ধরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন আসলাম সাহেব । অফিস শেষে বাসায় ফেরার সময় প্রতিদিনই
তাকে এই ঝক্কি পোহাতে হয় ।
এর আগে
কয়েকটা বাস চলে গেছে । লোক বেশি, তাকে নিতে চায় নাই । বাসে উঠতে পারলেই হয়,
কিছুদূর দাঁড়িয়ে গেলেও সামনে সিট পাওয়া যাবে । কিন্তু ব্যাটা হেল্পার উঠতেই দিলনা
!
যাক,
অবশেষে ঐযে একটা বাস আসছে । তিনি তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লেন । পেছনের দিকে একটা সিটও
পেয়ে গেলেন । আরো অনেক লোক উঠল । এখনো
সবাই উঠতে পারেনি ।
লোক
তুলছে হেল্পার ।
আসলাম
সাহেব এবার চিৎকার দিলেন- ঐ ব্যাটা হেল্পার, আর কত লোক তুলবি ? তোগো পেট ভরেনা ?
গাড়ি ছাড় !!! এত লোক তোলে এরা , অসহ্য !
৩।
যেখানে
যে নিয়ম, ডাঃ আব্দুল্লাহ চেষ্টা করেন একজন সাধারণ নাগরিকের মত তার ভেতরে থেকে
কাজ করতে । কোন অফিসে গেলেন, হয়তো সেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকেই । তিনিও
লাইনেই দাড়ান । পরিচয় না দিয়েই কাজ
করার চেষ্টা করেন । নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে ভাবতেই
স্বচ্ছন্দবোধ করেন তিনি ।
তিনি
গেলেন পাসপোর্ট অফিসে । অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছে । তিনিও দাঁড়ালেন । বেশিরভাগ লোকই
হয়তো শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাবে ।
তিনি
কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলেন, বিনা কারণে লোকদের ধমকাধমকি করছে অফিসের লোকজন ।
ফরমে এটাসেটা ভুল ধরছে । দালালের ছড়াছড়ি । তাঁর ফরমেও একটা ভুল বের করে ফেললো !
সিলটা অর্ধেক পড়ার কথা ছিল ছবিতে, আপনারটাতে একটু কম পড়েছে । যান, আবার নতুন ফরম
পুরণ করে ঠিকমত সিল দিয়ে নিয়ে আসেন ! কয়েকজন দালাল এসে বললো- ভাইজান, চিন্তা কইরেন
না । আমারে দেন, সব ঠিক করে দিমু ।
অবশেষে
সারি থেকে বের হলেন ডাঃ আব্দুল্লাহ । তিনি ভেতরে ঢুকে দায়িত্বরত অফিসারকে নিজের
পরিচয় দিলেন । সব ঠিক হয়ে গেল !
যেকোন
অপরিচিত মানুষকে সাধারণভাবে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার কথা । কিন্তু আমাদের দেশে
প্রথমেই সবাইকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয় । তারপর যদি আপনার পরিচয় দেন এবং যদি
সেটা তাদের উপরে হয়- তবেই আপনি হয়তো পাবেন কিছুটা সম্মানজনক আচরণ ।
এখন
কোথাও গেলে পরিচয় দেন ডাঃ আব্দুল্লাহ । তাতে করে কাজ হয় তাড়াতাড়ি । মাঝে মাঝে মনে হয়- এটা কি অতিরিক্ত সুবিধা নেয়া ?
পরক্ষণেই
মনে হয়, নাহ । এটাতো আমার এমনিতেই পাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু বাঙাল চরিতের কারণে তা
আর হয়না...
৪।
গায়ে গতরে আমি মোটেই হোমরা চোমরা নই । মুরুব্বিরা বলেন , চেহারায় এখনো
বাচ্চাভাবটা রয়ে গেছে । কিছুটা শিশুসুলভ
স্বভাবও নাকি আছে ! এ ব্যাপারে বন্ধু রিয়াদ সবসময়ই অভিযোগ করে এসেছে, আর আমি বরাবরই
অস্বীকার করে এসেছি । আর এজন্য বিব্রতকর অবস্থাতেও কম পড়তে হয়নি ! তবে নাক টিপলে
দুধ বের হবে কিনা তা অবশ্য জানিনা , কারণ নাক টেপার সাহস এখনো কেউ করেনি !
.
যাহোক আসল কথায় আসি । ভবঘুরে ব্যাচেলর বলে অনেক সময়ই হোটেলে খেতে হয়
। যেখানে ক্ষুধা সেখানেই উদরাপ্যায়ন । খাদ্য গ্রহণের নিমিত্তে হোটেলে গিয়ে বসি ।
ওয়েটারকে নরম স্বরে সুন্দর করে ডাকি , ভাইয়া এখানে খাবার দিয়ে যান । তারপর
মোবাইল গুতাতে গুতাতে অপেক্ষা করি । বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় , ডাক শোনার পরেও
ওয়েটার ঢিমেতালে হাঁটাহাটি করছে । খোশগল্প করছে । এ টেবিলে ও টেবিলে যাচ্ছে ।
একেতো চেহারা সুরতে কম , তার ওপর এমন বিনয়ী ভাব আমার , সেজন্যে সম্ভবত
আমাকে পাত্তা দেয়া অতটা জরুরি মনে হয়না ওয়েটারের । কী আর করা ?
বাধ্য হয়ে এবার আমি কন্ঠ পাল্টাই । মোটা গলায় বলি , ঐ কে আছস ।
এদিকে আয় । কী আছে দে দেখি ।
ওমা ! এইবার দেখি সুড়সুড় করে ভাত পানি নিয়া হাজির । হাত কচলাতে
কচলাতে বলে , স্যার কী খাইবেন ?
আমি সেভাবেই মোটা গলায় তুই তোকারি লেভেল বজায় রেখেই বাকি অর্ডার করি
। আর মনে মনে বলি , হায়রে বাঙাল জাত ! ভালো ব্যবহারের মূল্য বুঝলি না !
.
একই অবস্থা রিক্সাওয়ালাদের ক্ষেত্রেও । সুন্দর করে জিজ্ঞেস করি ,
ভাই
যাবেন ? রিক্সাওয়ালার ভাব বেড়ে যায় । ভাড়া হাকে দ্বিগুনের কাছাকাছি । হয়তো
মনে মনে বলে , পাইছি মক্কেল একটা ! শহরে মনে হয় নতুন আইছে !
পরের রিক্সাওয়ালাকে বলি , ওই খালি যাইবা ? হাহ , এবার সব ঠিক ।
ভাড়া নির্দিষ্ট ভাড়ার কাছাকাছিই বলবে । অথবা কাচুমাচু করে বিনয়ের সাথে বলবে ,
স্যার
আপনেগো কাছে দুই পয়সা চাইয়া নিমুনা তো কার কাছে নিমু ?
.
পেশা হিসেবে কোন পেশাকেই ছোট করে দেখতে ইচ্ছে করেনা । সবাইকে সম্মান
দিয়ে কথা বলতেই ভালো লাগে । ইসলামের শিক্ষাও সেটিই । কিন্তু এ যে বাঙাল
জাত , তা
করিতে দিলে জাতের মর্তবা রহিবে কীরুপে ?
৫।
মানুষকে চেনার জন্য বাঙালি সবসময় তার খারাপ দিকটা নামের সাথে জুড়ে দেয়। যেমনঃ খাঁটো আবুল, কানা বাবুল, ল্যাংড়া মকবুল, কাইল্যা মফিজ, কানকাটা জগলু, মোটা অমুক, চিকনা তমুক ইত্যাদি। এইটা আমাদের কীরকম মানসিকতা? মানুষের ভালো কোনকিছুই কি আমাদের চোখে পড়ে না?
৬।
কেউ কোনো ভালো কাজ করে প্রচার করলে অনেকেই বলতে আসেনঃ লোক দেখানোর জন্য এসব করছেন!! আমি বলি- ভাই, যার যে উদ্দেশ্যই থাকুক না কেন, সবাই ভালো কাজ করুন। আল্লাহর ওয়াস্তে হলেও ভালো কাজ করুন। লোক দেখানোর জন্যে হলেও ভালো কাজ করুন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হলেও ভালো কাজ করুন। সুনাম অর্জনের জন্য হলেও ভালো কাজ করুন। দুর্নাম ঘুচানোর জন্য ভালো কাজ করুন। সওয়াবের জন্যে ভালো কাজ করুন, গুনাহের কাফফারা হিসেবে ভালো কাজ করুন। যার যে উদ্দেশ্যই থাকুক, সকলের সকল ভালো ও কল্যাণকর কাজের প্রতি সর্বদা আমার অকুন্ঠ সমর্থন। একটা ভালো কাজ করে মন চাইলে গোপন রাখুন, মন চাইলে ফেসবুকে বাহারি ঢঙ্গে ছবি দিন। আমি 'লাইক' দিবোই দিবো- কথা দিলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন