এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মঙ্গলবার, ২ নভেম্বর, ২০২১

হুঁশিয়ার

বহুদিন কবিতা লিখিনি বলে, ভেবোনা ভুলে গেছি শব্দের কারুকাজ, 

বাগানে বহুদিন যাইনি বলে, ভেবোনা ভুলে গেছি গোলাপের চাষ। 


বহুদিন কাঁধে স্টেনগান তুলিনি বলে, ভেবোনা ভুলে গেছি বুলেটের নিশানা- 

পুরনো কথা মুখে আনিনা বলে, ভেবোনা ভুলে গেছি অতীতের ইতিহাস। 

বুধবার, ১৮ আগস্ট, ২০২১

বেকুব

 ধরেন আপনি এক বেকুবকে খুব পরামর্শ দিলেনঃ "দেখো ভাই, তোমাকে খুব বুদ্ধি করে চলতে হবে। প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তার সাথে পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।" 


তো এইটা দেখে আমি বুঝে গেলাম যে আপনিও একজন বেকুব। যার যেটুকু বুদ্ধি জ্ঞান আছে সে তো তার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নিবে! সে কীভাবে বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজ করবে? বুদ্ধি যদি থাকতোই তাহলে তো সে শুরুতেই তার ভিত্তিতে কাজ করতো!! বা পরেও এমনিই করবে!! 


আবার দেখেন আমিও কীরকম একটা বেকুব যে আপনাকে পরামর্শ দিচ্ছি- বেকুবকে বুদ্ধিমানের মত কাজ করার পরামর্শ না দিতে!! কারণ, আপনি যে একটা বেকুব সেটা তো একটু আগেই প্রমাণ হয়ে গেছে 😂

শুক্রবার, ১৮ জুন, ২০২১

ঈমাম মাহদী

 যারা ঈমাম মাহদি বা হযরত ঈসার (আঃ) আগমনের অপেক্ষা করছেন, ভাবছেন- খুব শীঘ্রই ঈমাম মাহদীর আগমন হবে, হয়তো পুলকিত হচ্ছেন, খুব মজা হবে...(!) তারা হলেন এমন লোক যারা নিজে নিজের বিপদ ডেকে আনতে চান। থামেন, আমি ঈমাম মাহদী বা ঈসা (আঃ)কে বিপদ বলছি না, তাঁদের আগমন হবে দুনিয়াবাসীর জন্য আল্লাহর বিরাট রহমত, কিন্তু আপনার আমার জন্য বিরাট পরীক্ষা। আপনি কি নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে আপনি ঈমাম মাহদীর দলেই থাকবেন? ধরুন আপনার জীবদ্দশায় ঈমাম মাহদী এলেন আর আপনি কোনোভাবে তার বিপক্ষে থেকে গেলেন- সেটা আপনার জন্য কতবড় বিপদ হবে কখনো ভেবেছেন? মুহাম্মাদ (সাঃ) আসবেন জেনে শতবছর আগে থেকেই ইহুদীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে মদীনায় গিয়ে বসতি স্থাপন করেছিলো, কিন্তু ফলাফল কী হয়েছে দেখেছেন!! রাসুল (সাঃ) এর সময়ে যদি আপনার জন্ম হত, আপনি যে আবু জেহেলের পক্ষে থাকতেন না তার কোন নিশ্চয়তা আছে? যখন মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে মুহাম্মাদ (সাঃ) ও ইসলামের জয়জয়কার, সেসময়েও তো এই অঞ্চলের মানুষেরা কাফের হিসেবেই মারা গেছে নাকি?


আজকেই যদি ঈমাম মাহদী আসেন- সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, যেসব হুজুর ঈমাম মাহদীর আলোচনা করে দিন কাটাচ্ছেন, তাদের মধ্যেই অনেকে হয়তো ঈমাম মাহদীর বিরোধিতা করে বসবেন!! কারণ ঈমাম মাহদীর নাম তো আর 'ঈমাম মাহদী' থাকবে না। নবী চেনার মত করে তাঁকেও চিনতে হবে। প্রতিষ্ঠিত হবার আগ পর্যন্ত ঈমাম নিজেও জানবেন না যে তিনিই ঈমাম মাহদী। তাছাড়া ঈমাম মাহদীর চিন্তা ও সিদ্ধান্তগুলোও অনেকের সাথেই মিলবে না! এমনও হতে পারে- কেউ কেউ হয়তো ঈমাম মাহদীকেই কাফের ফতোয়া দিয়ে বসতে পারেন! 

তো জেনেবুঝে আপনারা কেউকি এরকম পরিস্থিতিতে, এরকম সময়ে উপস্থিত থাকতে চান? 


ঈমাম মাহদীর জন্য অপেক্ষা না করে আমাদের দোয়া করা উচিত- আল্লাহ যেন আমাদের ঈমাম মাহদী আসার আগেই ঈমানের সাথে তুলে নেন। যখন সময় হবে তখন আল্লাহ তায়ালা ঈমাম মাহদীকে প্রেরণ করবেন, কিন্তু সেসময় যেন তিনি আমাদেরকে জীবিত না রাখেন। কারণ, এতবড় পরীক্ষায় আমরা অনেকেই হয়তো উত্তীর্ণ হতে পারবো না।

শুক্রবার, ২১ মে, ২০২১

হলোকাস্ট ও মুসলিম

 হিটলার ইহুদিদের মেরে সাফ করে দিয়েছিলো- এই ঘটনায় অনেক মুসলিমকে আনন্দ প্রকাশ করতে দেখা যায়, যেটা ইসলামের নীতি ও শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। এসব মুসলিমের উল্লাস দেখে মনে হতে পারে- ইসলাম বোধহয় ইহুদিদের কচুকাটা করতে বলেছে!! বিষয়টা অত্যন্ত দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক। আরো দুর্ভাগ্যজনক হলো- যারা নিজেদের আলেম বলে দাবি করেন, ওয়াজ নসিহত করেন তাদেরও অনেকে এই মানসিকতা উস্কে দেন। অথচ কুরআন বলছেঃ "যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। আর যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।"- সুরা আল মায়েদাঃ ৩২। 


হিটলার যেভাবে নারী পুরুষ শিশু বৃদ্ধ নির্বিশেষে  ইহুদিদের হত্যা করেছিলো একজন মুসলমান কীকরে সেটা সমর্থন করতে পারে? 


রাসুল (সাঃ) যেসব ইহুদী গোত্রকে মদীনা থেকে বের করে দিয়েছিলেন তা ছিলো তাদের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে, এই কারণে নয় যে তারা ইহুদী ছিলো। শেষ জামানায় ঈসা (আঃ) যেসব ইহুদীদের হত্যা করবেন- তা করবেন যুদ্ধের ময়দানে। নিরীহ নিরপরাধ সিভিলিয়ান ইহুদিদের নয়, অথবা কেবল একারণে নয় যে- তারা 'ইহুদী'।

বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০২০

বিয়ের ক্ষেত্রে বংশ কিংবা চেহারা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট?

সেসময় মদিনায় একজন উচ্চবংশীয়, ধনীর দুলালী, সুন্দরী মেয়ে ছিল। সে ছিল তৎকালীন মদিনার অন্যতম Most wanted, most eligible পাত্রী। তাঁকে বিয়ে করার জন্য আগ্রহী ছিল অনেকেই। 


একদিন মহানবী (সাঃ) সেই মেয়ের বাবার কাছে গেলেন। জানালেন যে তিনি তাঁর মেয়ের জন্য বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। মেয়ের বাবা খুব খুশি হলেন। তিনি ভেবেছিলেন, রাসুল (সাঃ) বোধহয় নিজের জন্যই প্রস্তাব করছেন। কিন্তু রাসুল (সাঃ) জানালেন যে, তিনি প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন জুলাইবিব (রাঃ) এর জন্য। 


জুলাইবিব (রাঃ) ছিলেন এমন একজন সাহাবী, যার চেহারা একদম ভালো ছিলো না। তিনি ছিলেন খাটো, সেই সাথে দেখতে যথেষ্টই কুৎসিত। লোকেরাই তার নাম দিয়েছিল জুলাইবিব। জুলাইবিব শব্দের অর্থই হলো বেঁটে/খারাপ চেহারার লোক। আমাদের দেশে যেমন কেউ কালো হলে কাইল্যা বলে ডাকে (যা অনুচিত), আবার খাটো হলে বলা হয় বাইট্যা, তেমনি জুলাইবিব নামের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল তাঁর আসল নাম। 


তাঁর বাবা-মা পরিবার সম্পর্কেও কেউ জানতোনা। কারণ, তিনি মক্কা বা মদিনার লোক ছিলেন না। হয়তো দূরের কোন গোত্রের লোক ছিলেন, কিন্তু কেউ তা জানতো না। ফলে মদিনায় তিনি ছিলেন নাম-পরিচয়-গোত্রহীন, বেঁটে খাটো আর কুৎসিত চেহারার একজন নগন্য মানুষ। 


জুলাইবিবের খারাপ চেহারার জন্য কেউ তাকে ভালোবাসতোনা। মদিনার কোন লোক তার সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে চাইতোনা। 


কিন্তু রাসুল (সাঃ) এর কাছে মানুষের চেহারা ইম্পর্ট্যান্ট ছিলনা। তিনি জুলাইবিবকে খুব ভালোবাসতেন। 


কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মেয়ের বাবা বিষয়টি নিয়ে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করতে গেলেন। প্রস্তাব শুনে মেয়ের মা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি চিৎকার চেঁচামেচি করে রাসুলুল্লাহর (সাঃ) এই অনাকাঙখিত প্রস্তাব নাকচ করে দিতে বলেন। 


বিষয়টি জানতে পেরে মেয়ে নিজেই এগিয়ে এসে তার বাবা-মাকে জানায়, সে এই প্রস্তাবে রাজি। কারণ, এই প্রস্তাব এসেছে আল্লাহ্‌র রাসুলের (সাঃ) তরফ থেকে। নিশ্চয়ই এর মধ্যেই নিহিত আছে সত্যিকার কল্যাণ। 


এভাবে পরম সুন্দরী, ধনীর দুলালী, 'মিস মদিনা'র সাথে বিয়ে হলো বংশপরিচয় হীন বেঁটে খাটো কুৎসিত দর্শন এবং অত্যন্ত গরীব সাহাবী জুলাইবিব (রাঃ) এর। 


ওহুদের যুদ্ধে শহীদ হয়ে যান এই সাহাবী। রাসুল (সাঃ) নিজে তাঁকে খুঁজে বের করেন, নিজ হাতে তাঁর লাশ দাফন করেন। 


তিনি শহীদ হবার আগ পর্যন্ত সুখে শান্তিতে সংসার করেন অসাধারণ এই দম্পতি। 


***** 

বিয়ের ক্ষেত্রে বংশ কিংবা চেহারা কতটা ইম্পর্ট্যান্ট? এটা এখন একটা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন। একটা সময় বংশকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হতো। ভালো বংশের ছেলে/মেয়ে ভালোই হবে- এই ছিল সবার সুনির্দিষ্ট (Pre-fixed) ধারণা। আর এটার যথেষ্ট বাস্তবতাও ছিল। 


কিন্তু বর্তমান সময়ে এই বাস্তবতা আগের মত নাই। শিক্ষার প্রসার, প্রযুক্তির সহজলভ্যতা, মানুষে মানুষে সহজ যোগাযোগ, এই সবকিছুর কারণে যেকেউ যেকোন রকম হয়ে যেতে পারে। পরিবারের শিক্ষা এখন কাউকে ভালো বা খারাপ করার জন্য যথেষ্ট নয়। ভালো বংশের যেকোন ছেলে বা মেয়ে হয়ে যেতে পারে খারাপ চরিত্রের, আবার কারো কারো বংশ তেমন উল্লেখযোগ্য না হলেও তিনিই হতে পারেন সোনার মানুষ। 


শুধু জুলাইবিবই (রাঃ) নন, রাসুল (সাঃ) তাঁর দাস (পরে মুক্ত এবং পালকপুত্র হিসেবে গৃহীত)  যায়েদের (রাঃ) সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন কুরাইশ বংশের মেয়ে জয়নব (রাঃ) কে। আবার আফ্রিকান নিগ্রো বেলাল (রাঃ) র সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন তৎকালীন আরবের অন্যতম শীর্ষ ধনী আব্দুর রহমান ইবনে আউফ (রাঃ) এর বোনকে। 


এভাবে বংশের অহংকার আর বর্ণবাদী মানসিকতার মূলে কুঠারাঘাত করেছিলেন রাসুল (সাঃ)। সবকিছুকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। 


বিদায় হজ্বের ভাষণে রাসুল (সাঃ) বলেন- মনে রেখো, কোন অনারবের ওপর কোনো আরবের প্রাধান্য নেই, এবং প্রাধান্য নেই কালোর ওপর কোনো সাদার। আর তোমাদের মধ্যে সে-ই সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়া অবলম্বন করে। 


বংশকে গুরুত্ব দেয়াতে দোষের কিছু নেই, কিন্তু তার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে ব্যক্তির আচার ব্যবহার, চরিত্র এবং ধার্মিকতাকে। 


দু'জন মানুষের জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য যখন এক হয়ে যায়, তখন দেশ জাতি বর্ণ বংশ চেহারা সবকিছুই তাদের কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়।


(বিবাহ কথন