এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭

বিয়ের মাধ্যমে আল্লাহর তায়ালার ইচ্ছা বাস্তবায়ন হয়

 "বিয়ের মাধ্যমে দ্বীনের অর্ধেক পূরণ হয়", নানান প্রচার প্রচারণার ফলে হাদিসের এই বক্তব্যটুকুর যথেষ্টই প্রচলন হয়েছে। কিন্তু যে কথাটা কেউ বলে না বা প্রচলিত হয় নাই তা হলোঃ বিয়ের মাধ্যমে আসলে আল্লাহর তায়ালার ইচ্ছাই বাস্তবায়ন হয়। 


আদম (আঃ) কে সৃষ্টির আগে আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদের ডেকে বলেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি। তখন ফেরেশতাগণ বললেন, আপনি কি পৃথিবীতে এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন যে দাঙ্গা-হাঙ্গামার সৃষ্টি করবে এবং রক্তপাত ঘটাবে? অথচ আমরা নিয়ত আপনার গুণকীর্তন করছি এবং আপনার পবিত্র সত্তাকে স্মরণ করছি। তিনি বললেন, নিঃসন্দেহে আমি জানি, যা তোমরা জান না। 

(সুরা বাকারাঃ৩০) 


এভাবে পৃথিবীতে প্রতিনিধি পাঠানোর উদ্দেশ্য নিয়ে আল্লাহ তায়ালা একজন মানুষ সৃষ্টি করলেন। তারপর তার থেকেই তৈরি করলেন তাঁর সঙ্গী হাওয়াকে। আর এই দু'জন হতে সৃষ্টি করলেন সমগ্র মানব জাতিকে। অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল মানুষকে আল্লাহ তায়ালা দু'জন মানুষ থেকেই সৃষ্টি করেছেন এবং করবেন। 


আল্লাহ তায়ালা কিন্তু এখন আর মানুষ সৃষ্টি করে সরাসরি পাঠাচ্ছেন না, বরং আল্লাহ মানুষ পাঠাচ্ছেন মানুষেরই মাধ্যমে। আর এই মাধ্যমটাই হলো বিয়ে। দু'জন মানুষ বিয়ের মাধ্যমে এক হলে তাদের মাধ্যমেই আল্লাহ তায়ালা তাঁর মানুষ প্রেরণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখছেন। 


"তিনিই সে সত্তা যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন একটি মাত্র সত্তা থেকে; আর তার থেকেই তৈরী করেছেন তার জোড়া, যাতে তার কাছে স্বস্তি পেতে পারে।" (সুরা আরাফঃ১৮৯)


"হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী।" (সুরা নিসাঃ১)


এর অর্থ স্পষ্টত এটাই দাঁড়ায় যে, বিয়ে করাটা শুধু রাসুলের সুন্নাতই নয়, এর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহরই ইচ্ছা পূরণ হয়। আর এজন্যই আল্লাহ তায়ালা দিয়েছেন বিয়ের মাধ্যমে পরিবার গঠনের চিরায়ত সিস্টেম। নিষিদ্ধ করেছেন নারী পুরুষের বিয়ে বহির্ভূত সবধরণের শারীরিক সম্পর্ক। 

শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

সাকসেস বনাম হ্যাপিনেস

সাফল্য (Success) এর সাথে সুখের (Happiness) সম্পর্কটা খুব জটিল। মানুষ চায় Happy হতে, কিন্তু সে ছোটে Success এর পেছনে। এটা ঠিক যে Success সুখ আনে, কিন্তু Success কখনো কখনো সুখকে নষ্টও করে।
Success কে সংজ্ঞায়িত করাটা কঠিন। এটা নির্ভর করে কিসের মানদন্ডে বিচার করা হচ্ছে তার ওপর। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছানোই কি সাফল্য? ধরি ঢাকায় পৌঁছানো টার্গেট। এখন একজন লোক গাজীপুর থেকে রওনা দিয়ে ঢাকায় পৌঁছালো। অন্য একজন মানুষ রংপুর থেকে রওয়ানা দিয়ে সেই সময়ে টাঙ্গাইল পৌঁছালো।
আপনি কাকে সফল বলবেন? দ্বিতীয়জন হয়তো পরের দিন ঢাকায় পৌঁছাবে। অথবা সে সাভারে গাড়ি এক্সিডেন্টে মারা গেলো। আপনি কি তাকে ব্যর্থ বলবেন? শুধুমাত্র এ কারণ যে সে ঢাকায় পৌঁছাতে পারে নাই? অথচ দূরত্বের বিচারে দ্বিতীয় জনই বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে!
সাফল্য বিচার করাটা চরম মাত্রার আপেক্ষিক ব্যাপার। স্টার্টিং পয়েন্টটাকে আমলে নিতে হবে, পথের বাধা বিপত্তিকে আমলে নিতে হবে, উপায় উপকরণের সহজলভ্যতা বা প্রাপ্যতাকে আমলে নিতে হবে।
আমরা বেশিরভাগ সময়েই আমাদের উদ্দেশ্য ভুলে যাই। সফল হতে চাই কেন? Happy হবার জন্য। Happy থাকার জন্য। অথচ Success এর পেছেনে ছুটতে ছুটতে আমরা হ্যাপিনেসকেই বিসর্জন দিয়ে ফেলি।
বিষয়টা অনেকটা এরকম, আরামে থাকার জন্য অনেক দামী বাসা ভাড়া করলাম, কিন্তু সেই বাসার ভাড়া যোগাড় করতে এত কাজ করতে হয় যে বাসাতেই থাকা হয় না।
ছেলেমেয়ের ভালোর জন্যই সব করেন, কিন্তু এত কাজ করেন যে ছেলেমেয়েদের সাথেই ঠিকমত কথা বলতে পারেন না।
পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে, আমাদের চোখে যারা Successful, কিন্ত তাদের জীবনে হ্যাপিনেস নেই। জীবনটা তাদের কাছে দুর্বিষহ। তাদের আনন্দের একমাত্র উৎস হলো ড্রাগ। প্রতিদিন তাদের ঘুমের জন্য ঔষধের প্রয়োজন হয়।
Success এর পেছনে আমাদের দৌঁড়াতে হবে। কারণ, ব্যর্থ জীবনে সুখ নেই। তবে তা হতে হবে- To a certain limit. যতক্ষণ পর্যন্ত তা Happiness কে নষ্ট না করে। চূড়ান্ত লক্ষ্যই যেখানে Happy হওয়া, সেখানে Happiness কে বিসর্জন দিয়ে Success পেয়ে লাভ কী?

সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

মানুষ কেন বিয়ে করে?

মানুষ কেন বিয়ে করে? প্রশ্নের উত্তরটা এক কথায় দেয়া মুশকিল। কারণ, এখানে জৈবিক প্রয়োজনের চেয়েও বেশি কিছু আছে।
আদম (আঃ) এর জীবন থেকেই এর উত্তরটা আমরা সহজে পেয়ে যাই। ভালোই ছিলেন তিনি, জান্নাতের অফুরন্ত অভাবনীয় সব প্রাচুর্যের ভেতর সময় কাটছিল তাঁর। বলা হয়- জান্নাতে কোনকিছুরই অভাব নেই, একমাত্র যে বিষয়টা সেখানে অনুপস্থিত, তাহলো 'অভাব'। অথচ সেই জান্নাতে থেকেও কিসের যেন 'অভাব' বোধ করছিলেন আদম (আঃ)।
তিনি চরম নিঃসঙ্গ বোধ করছিলেন। বলা হয়, তার নিঃসঙ্গতা দূর করার জন্য আল্লাহ তায়ালা সৃষ্টি করেন হাওয়া (Eve) কে।
মানুষ কিছু সময়ের জন্য একা থাকতে ভালোবাসে, কিন্তু দীর্ঘ সময় সে একা থাকতে পারেনা। তার একজন সঙ্গী দরকার হয়। মানুষ এমন এক প্রাণী, যে কথা না বলে থাকতে পারেনা, কথা না শুনে থাকতে পারেনা। কিছু কিছু কথা থাকে, কাউকে বলতে না পারলে যেন দম আটকে আসে।
একটা মেয়ের বয়স যখন ১৮-২০ পার হয়, তখন থেকেই সে একে একে তার বান্ধবীদের হারাতে থাকে। অনেকের বিয়ে হয়ে যায়, অনেকেই দূরে চলে যায়। কারো সাথে বছরে দু'বছরে একবার দেখা হয়, কারো সাথে তাও হয় না। ধীরে ধীরে সে নিজেকে আবিস্কার করে নিঃসঙ্গ জগতে।
ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। বয়স যতই বাড়তে থাকে, ততই বাড়তে থাকে একাকীত্ব, বাড়তে থাকে নিঃসঙ্গতা। পড়ালেখা শেষে বন্ধুরা কেউ বিয়ে করে পর হয়, কেউ চাকরি নিয়ে দূরে চলে যায়। কাছে থাকলেও ব্যস্ততার কারণে চাইলেই যখন তখন আর আগের মত টি-স্টলে বা কফিশপে আড্ডা দেয়া হয়ে ওঠে না।
কর্মস্থলে কলিগেরা থাকে, কিন্তু কলিগ কলিগই। কলিগের সাথে আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে কম। কারণ, সেখানে কিছুনা কিছু স্বার্থের দ্বন্দ্ব থেকেই যায়।
অনেক কিছু ঘটে যায় প্রতিদিনকার জীবনে, কাউকে বলা যায় না। অনেক কথা জমে থাকে। কাউকেই বলা হয় না।
এসময় খুব বেশি করে এমন একজনের অভাব বোধ হতে থাকে, যাকে সবকিছু নিশ্চিন্তে বলা যায়। যার সবকিছু শোনা যায়।
সবসময় দরকারী কথা শুনতে মানুষের ভালো লাগেনা, কখনো কখনো তার একদম অদরকারী, নিতান্তই অপ্রয়োজনীয় কথা শুনতে ইচ্ছে হয়। শুনতে ভালো লাগে। বলতে ইচ্ছে হয়। বলতে ভালো লাগে।
যে ছেলেটা মেসে থাকতে বিয়ের নামও মুখে নিতোনা, চাকরি নিয়ে দূরে চলে যাওয়ার ক'মাসের মধ্যে তার বিয়ের খবর শোনা যায়। যে ছেলেটা ছিল খুব সৌন্দর্যপ্রবণ, সুন্দরী মেয়ে ছাড়া যে বিয়েই করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিল, দেখা যায় নিঃসঙ্গতার আঘাতে সব পণ ভেঙ্গে গেছে তার। কারণ, সৌন্দর্যের চেয়েও বেশি প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল একজন কথা বলার সঙ্গীর, একজন সমব্যথী মানুষের। সেটা খুঁজে পেলেই ঘটনা খতম হয়ে যায়।
জীবনের নানান সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে খুব কনফিডেন্ট ছেলেটাও একটা সময় কেমন যেন দ্বিধাদ্বন্দে ভোগে। সে চায়, কেউ অন্তত একজন তাকে সাহস যোগাক- কেউ একজন মন থেকে বলুকঃ 'তুমি ঠিক পথে আছো'। অথবা, কেউ একজন তাকে বলুক, ও কাজ করোনা। আমার মন বলছে- ওটা তোমার জন্য ভালো হবে না।
নির্মলেন্দু গুণের 'তোমার চোখ এত লাল কেন?' কবিতায় উঠে এসেছে এই আকাঙখার কাব্যিক রুপ।
"আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে , আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।
আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ আমাকে খেতে দিক। আমি হাতপাখা নিয়ে
কাউকে আমার পাশে বসে থাকতে বলছি না,
আমি জানি, এই ইলেকট্রিকের যুগ
নারীকে মুক্তি দিয়েছে স্বামী -সেবার দায় থেকে।
আমি চাই কেউ একজন জিজ্ঞেস করুকঃ
আমার জল লাগবে কি না, নুন লাগবে কি না,
পাটশাক ভাজার সঙ্গে আরও একটা
তেলে ভাজা শুকনো মরিচ লাগবে কিনা।
এঁটো বাসন, গেঞ্জি-রুমাল আমি নিজেই ধুতে পারি।
আমি বলছি না ভলোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন ভিতর থেকে আমার ঘরের দরোজা
খুলে দিক। কেউ আমাকে কিছু খেতে বলুক।
কেউ অন্তত আমাকে
জিজ্ঞেস করুকঃ 'তোমার চোখ এতো লাল কেন?'
(বিবাহ কথন-৩৫)

শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

ওরা আসছে

ওরা আসছে।
কোলে অবুঝ শিশু, পিছু পিছু হাঁটছে বড় বাচ্চারা
কাঁধের পুটলিতে কয়েকটি কাপড়
থালা-বাসন, হাড়ি পাতিল, হাতের কাছে যা পাওয়া গেছে।
ওরা আসছে। বাবা নেই, মা নেই, ভাই নেই, বোন নেই,
বুলেট কিংবা আগুন নিয়ে গেছে জীবনের সবটুকু সম্বল।
ওরা আসছে এইটুকু আশা নিয়ে- হয়তো নদীর ওপারে গেলে
ঘুমানো যাবে একটা রাত,
হয়তো দুধের বাচ্চাটা পাবে একফোঁটা দুধ,
হয়তো অনাহারী উদরে মিলবে একবাটি পান্তাভাত।
ওপাশে তারা কখনো মানুষ দেখেনি। দেখেছে শুধু দু'পেয়ে জানোয়ার।
ওরা আসছে অনেক আশা নিয়ে,
হয়তো নদীর এইপারে তারা দেখতে পাবে কিছু
সত্যিকার মানুষ। 

(ওরা আসছে/ মুহসিন আব্দুল্লাহ)

বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া উচিত?

পাত্রী নিয়ে যত কথা বলা হয়, পাত্র নিয়ে তত কথা বলা হয় না। কারণটা পুরুষের সামাজিক আধিপত্য। সবসময় ছেলেরাই পাত্রী পছন্দ করে, পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিলনা বললেই চলে। যদিও এটা ধর্মীয়ভাবে স্বীকৃত এবং অত্যাবশ্যক।
পাত্র পছন্দের ক্ষেত্রে কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া উচিত? এই প্রশ্নের উত্তরে আমরা তিন-চারটি বিয়ের ঘটনা উল্লেখ করবো। দেখা যাক, ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ মানুষেরা কীভাবে পাত্র পছন্দ করেছেন।
১.
মুসলিম নারীদের মধ্যে অন্যতম সম্মানিত নারী হলেন খাদিজা (রাঃ)। তিনি সম্মানিত রাসুলের স্ত্রী হিসেবে, সেই সাথে তার নিজের মহান কর্মকান্ডের কারণে। মজার ব্যাপার হলো, মুহাম্মাদ (সাঃ) তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেননি। তিনিই মুহাম্মাদ (সাঃ) কে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
তিনি যখন রাসুল (সাঃ) কে বিয়ের প্রস্তাব দেন তখন তাঁর বয়স ৪০। ইতোপূর্বে তার দু'বার বিয়ে হয়েছিল। তিনি ছিলেন বড় মাপের ব্যবসায়ী ও ধনী মহিলা।
বয়স ও অভিজ্ঞতায় তিনি ছিলেন পরিপক্ক। সুতরাং খাদিজা অল্পবয়সী কিশোরী তরুণিদের মত আবেগে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলার সুযোগ আমাদের হাতে থাকছে না। এছাড়া, তার ছিল সংসার করার অভিজ্ঞতা। এর আগে তার দু'বার বিয়ে হয়েছিল। একজন স্বামী মারা যান, আরেকজনের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
অতএব তিনি জানতেন, সংসার করার জন্য কেমন পুরুষ দরকার। সেজন্য তার বিবেচনাকে অগ্রাহ্য করার কোন সুযোগ আমাদের হাতে নাই।
মক্কায় সেসময় অনেক ধনাঢ্য লোক ছিল। বড় ব্যবসায়ী ছিল। অনেক গোত্রপতি ছিল। খাদিজাকে বিয়ে করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল অনেকেই।
অপরদিকে মুহাম্মাদ (সাঃ) ছিলেন এতিম। চাচা আঃ মুত্তালিবের আশ্রয়ে লালিত। ২৫ বছর বয়সে তিনি নিজে তেমন একটা ধনীও ছিলেন না। মুহাম্মাদ (সা) এর চাচা আবু তালিবের আর্থিক অবস্থাও সেসময় ভালো ছিলনা।
তবু কী কারণে তাঁকে পছন্দ করেছিলেন খাদিজা?
উত্তরটা হলোঃ তিনি পছন্দ করেছিলেন মুহাম্মাদের সততা, বিশ্বস্ততা এবং উত্তম চরিত্র।
মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বয়স যখন পঁচিশ বছর, তখন চাচা আবু তালিব একদিন তাঁকে ডেকে বললেনঃ ভাতিজা, আমি একজন বিত্তহীন মানুষ। সময়টাও আমাদের জন্য খুব সঙ্কটজনক। আমরা মারাত্মক অভাবের মধ্যে আছি। আমাদের কোন ব্যবসা বা অন্য কোন উপায়-উপকরণ নেই। তোমার গোত্রের একটি বাণিজ্য কাফেলা সিরিয়ায় যাচ্ছে। খাদিজা তার পণ্যের সাথে পাঠানোর জন্য কিছু লোকের খোঁজ করছে। তুমি যদি তার কাছে যেতে, হযতো তোমাকে সে নির্বাচন করতো। তোমার চারিত্রিক নিস্কলুষতা তার জানা আছে। যদিও তোমার সিরিয়া যাওয়া আমি পছন্দ করিনা এবং ইহুদীদের পক্ষ থেকে তোমার জীবনের আশঙ্কা করি, তবুও এমনটি না করে উপায় নেই।
সেবছর মুহাম্মাদ (সাঃ) মজুরির বিনিময়ে খাদিজার বাণিজ্য কাফেলার দায়িত্ব নেন। এই সফরের সঙ্গীরা খাদিজার কাছে মুহাম্মাদের ব্যবহার ও চরিত্রের ভূয়সী প্রশংসা করেন। যদিও আগে থেকেই জানতেন, এবার খাদিজা মুহাম্মাদকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি তার একজন দূতের মাধ্যমে মুহাম্মাদ (সাঃ)কে বলেনঃ হে আমার চাচাতো ভাই! আপনার বিশ্বস্ততা, সততা ও উন্নত নৈতিকতা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
খাদিজার প্রতিনিধি নাফিসা বিনতে মুনইয়া'র ভাষায়ঃ মুহাম্মদ সিরিয়া থেকে ফেরার পর তাঁর মনোভাব জানার জন্য খাদিজা আমাকে পাঠালেন। আমি তাঁকে বললামঃ মুহাম্মদ! আপনি বিয়ে করছেন না কেন? তিনি বললেন, বিয়ে করার মতো অর্থ তো আমার হাতে নেই। বললামঃ যদি আপনাকে একটি সুন্দর প্রস্তাবের প্রতি আহবান জানানো হয়, অর্থ-বিত্ত, মর্যাদা ও অভিজাত বংশের প্রস্তাব দেওয়া হয়, রাজি হবেন? বললেনঃ কে তিনি? বললামঃ খাদিজা। বললেনঃ এ আমার জন্য কিভাবে সম্ভব হতে পারে? বললামঃ সে দায়িত্ব আমার।
তিনি রাজি হয়ে গেলেন।
পরে খাদিজা (রাঃ) নিজেই মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সাথে কথা বলেন এবং তাঁর পিতার নিকট প্রস্তাবটি উত্থাপনের জন্য মুহাম্মাদকে (সাঃ) অনুরোধ করেন। কিন্তু মুহাম্মাদ (সাঃ) এই বলে অস্বীকৃতি জানান যে, দারিদ্র‍্যের কারণে হয়তো খাদিজার বাবা তাঁকে প্রত্যাখ্যান করবেন। অবশেষে খাদিজা নিজেই বিষয়টি তাঁর পিতার কাছে উত্থাপন করেন।
খাদিজা(রাঃ)র বাবা এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না। তিনি বলেছিলেনঃ তোমাকে আমি আবু তালিবের এই এতিমের সাথে বিয়ে দিব? আমার জীবনের শপথ! কক্ষণও তা হবে না। কুরাইশ বংশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা তোমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, আর মুহাম্মদের সাথে আমি তোমাকে বিয়ে দেবো?
পরে খাদিজা কৌশলে বাবার সম্মতি আদায় করেন, এবং বিয়ে সম্পন্ন হয়।
খাদিজা (রাঃ) নিজেই উভয় পক্ষের যাবতীয় খরচ বহন করেছিলেন। তিনি দুই উকিয়া সোনা ও রুপা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর কাছে পাঠান এবং তা দিয়ে উভয়ের পোশাক ও ওয়ালিমার ব্যবস্থা করতে বলেন। (তথ্যসূত্রঃ আসহাবে রাসুলের জীবন কথা)
চলবে...
(বিবাহ কথন- ৩২) 

২. 
নির্যাতনের শিকার নিজ গোত্রের একজন মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে নির্যাতনকারী ব্যক্তিকে আঘাত করে বসেন মুসা (আঃ)। এতে ঐ লোক মারা যায়। অনাকাংখিত এই দুর্ঘটনায় মুসা (আঃ) খুব কষ্ট পান। পরে তার কাছে খবর আসে যে তাঁকে হত্যার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে মিশর ছেড়ে মাদিয়ানে (জর্ডান) চলে যান মুসা (আঃ)।
মাদিয়ানে প্রবেশ করে তিনি একটা কূপের কাছে পৌঁছলেন। দেখলেন, সেখান থেকে সবাই পানি নিচ্ছে, কিন্তু দু’টি মেয়ে তাদের তৃষ্ণার্ত পশুগুলি সহ অসহায়ভাবে দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ করছে না। তারাও পানি নিতে পারছে না।
মুসা (আঃ) মেয়ে দু’টির দিকে এগিয়ে গেলেন। তিনি তাদের সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলে তারা বলল, ‘আমরা আমাদের পশুগুলিকে পানি পান করাতে পারি না, যতক্ষণ না রাখালরা তাদের পশুগুলিকে পানি পান করিয়ে চলে যায়। আর আমাদের পিতা খুবই বৃদ্ধ’ (যিনি ঘরে বসে আমাদের অপেক্ষায় উদগ্রীব হয়ে আছেন)।
মুসা (আঃ) তাদের পশুগুলোকে পানি পান করালেন’ (তারপর মেয়ে দু’টি পশুগুলি নিয়ে বাড়ী চলে গেল)।
তারপর মুসা একটি গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। তিনি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমার উপর যে অনুগ্রহ নাযিল করবে, আমি তারই মুখাপেক্ষী’।
কিছুক্ষণ পর ঐ দুজন মেয়ের একজন সলজ্জ পদক্ষেপে তাঁর কাছে এগিয়ে এলো। মেয়েটি এসে লজ্জাজড়িত কণ্ঠে মুসাকে বলল, ‘আমার পিতা আপনাকে ডেকেছেন, যাতে আপনি যে আমাদের পশুগুলোকে পানি পান করিয়েছেন, তার বিনিময় স্বরূপ আপনাকে পুরস্কার দিতে পারেন’।
এই মেয়েদের বাবা ছিলেন মাদিয়ানবাসীদের কাছে প্রেরিত নবী হযরত শুআইব (আঃ)। মুসা (আঃ) ইতোপূর্বে কখনো তাঁর নাম শোনেননি বা তাঁকে চিনতেন না। তাঁর কাছে পৌঁছে মুসা (আঃ) সব বৃত্তান্ত বর্ণনা করলেন। শুআইব (আঃ) সবকিছু শুনে বললেন, ‘ভয় করো না। তুমি যালেম সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি পেয়েছ’।
এমন সময় দুই মেয়ের একজন বলল, আব্বাজান! তাকে আমাদের বাড়িতে চাকরি দিয়ে নিয়োগ দিন। আপনার সাহায্যকারী হিসাবে এমন একজনই উত্তম হবে, যে শক্তিশালী এবং বিশ্বস্ত।
শুয়াইব (আঃ) ছিলেন একজন নবী ও বুদ্ধিমান মানুষ। তিনি মেয়ের মনের কথা বুঝতে পারলেন। তিনি মুসা (আঃ) কে বললেন, আমি আমার মেয়েদের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই।
মুসা রাজী হলেন। তারপর, আট থেকে দশ বছর তাঁদের সাথে থাকার শর্ত দিয়ে শুয়াইব (আঃ) তাঁর মেয়েকে মুসা (আঃ) এর সাথে বিয়ে দিলেন।
এভাবে শুয়াইব (আঃ) ও তাঁর মেয়ে এমন একজন যুবককে পাত্র হিসেবে বাছাই করলেন, ঐ বিদেশ বিভূঁইয়ে যিনি ছিলেন একজন নিঃস্ব, সহায়-সম্বলহীন মানুষ। খুনের দায়ে পলাতক এক ফেরারি যুবক।
সাহস, পরোপকারিতা আর বিশ্বস্ততাই ছিল শুয়াইব (আঃ) ও তার মেয়ের চোখে মুসা (আঃ) এর আসল গুণ, যেকারণে শুয়াইব (আঃ) এর মেয়ে তাঁকে নিজের স্বামী হিসেবে বাছাই করেছিলেন।
(তথ্যসূত্রঃ সুরা কাসাস, ২৩-২৮)
(বিবাহ কথন- ৩৩) চলবে... 

৩. ফাতেমা (রাঃ) কে বিয়ের জন্য রাসুল (সাঃ) এর কাছে আরো অনেকের মত প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিলেন হযরত আবু বকর এবং ওমরও (রাঃ)। কিন্তু রাসুল (সাঃ) বিনয়ের সাথে, ভদ্রোচিতভাবে তাদের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
দারিদ্র‍্যের কারণে রাসুল (সাঃ) এর কাছে ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে সাহস করতে পারছিলেন না হযরত আলী (রাঃ)। তখন অনেকেই আলী (রাঃ) কে উৎসাহিত করেন রাসুলের কাছে ফাতিমার ব্যাপারে প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার জন্য।
অনেকের প্ররোচনা ও উৎসাহে একদিন তিনি সাহস সঞ্চয় করে এগিয়ে গেলেন।
তাঁর ভাষায়ঃ অবশেষে আমি একদিন রাসুলুল্লাহর (সাঃ) নিকট গেলাম। তাঁর সামনে বসার পর আমি যেন বোবা হয়ে গেলাম। তাঁর মহত্ত্ব ও তাঁর মধ্যে বিরাজমান গাম্ভীর্য ও ভীতির ভাবের কারণে আমি কোন কথাই বলতে পারলাম না। এক সময় তিনিই আমাকে প্রশ্ন করলেনঃ কী জন্য এসেছো? কোন প্রয়োজন আছে কি? আমি চুপ করে থাকলাম। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ নিশ্চয় ফাতিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিতে এসেছো?
আমি বললামঃ হ্যা। তিনি বললেনঃ তোমার কাছে এমন কিছু আছে কি, যা দ্বারা তুমি তাকে হালাল করবে? বললামঃ আল্লাহর কসম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! নেই। তিনি বললেনঃ যে বর্মটি আমি তোমাকে দিয়েছিলাম সেটা কী করেছো?
বললামঃ সেটা আমার কাছে আছে। আলীর জীবন যে সত্তার হাতে- তাঁর কসম, সেটা তো একটি “হুতামী” বর্ম। তার দাম চার দিরহামও হবে না।
রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আমি তারই বিনিময়ে ফাতিমাকে তোমার সাথে বিয়ে দিলাম। সেটা তার কাছে পাঠিয়ে দাও এবং তা দ্বারাই তাকে হালাল করে নাও।
আলী (রাঃ) খুব দ্রুত বাড়ি গিয়ে বর্মটি নিয়ে আসেন। কনের সাজগোজের জিনিসপত্র কেনার জন্য রাসুল (সাঃ) সেটি বিক্রি করতে বলেন।
বর্মটি উসমান ইবন আফফান (রাঃ) চারশ সত্তর দিরহাম দিয়ে কিনে নেন। এই অর্থ রাসূলুল্লাহর (সাঃ) হাতে দেয়া হয়। তিনি তা বিলালের (রাঃ) হাতে দিয়ে কিছু আতর-সুগন্ধি কিনতে বলেন, আর বাকি যা থাকে উম্মু সালামার (রাঃ) হাতে দিতে বলেন। যাতে তিনি তা দিয়ে কনের সাজগোজের জিনিস কিনতে পারেন।
সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেলে রাসুল (সাঃ) সাহাবীদের ডেকে পাঠান। তাঁরা উপস্থিত হলে তিনি ঘোষণা দেন যে, তিনি তাঁর মেয়ে ফাতিমাকে চারশ মিছকাল রূপার বিনিময়ে আলী(রাঃ)র সাথে বিয়ে দিয়েছেন। তারপর আরবের প্রথা অনুযায়ী কনের পক্ষ থেকে রাসুল (সাঃ) ও বর আলী (রাঃ) নিজে সংক্ষিপ্ত খুতবা দান করেন। তারপর উপস্থিত অতিথি সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে খোরমা ভর্তি একটা পাত্র উপস্থাপন করা হয়।
এভাবে অতি সাধারণ ও সাদাসিধে ভাবে আলীর সাথে নবী দুহিতা ফাতিমাতুয যাহরার বিয়ে সম্পন্ন হয়। স্থাপিত হয় ইসলামের ইতিহাসে একটি মহান গৌরবময় বৈবাহিক সম্পর্ক।
হিজরী দ্বিতীয় সনে, বদর যুদ্ধের পর আলী (রা) তাঁর স্ত্রীকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য একটি ঘর ভাড়া করতে সক্ষম হন। সে ঘর ছিল অতি সাধারণ মানের। বিত্ত-বৈভবের কোন স্পর্শ সেখানে ছিল না। ছিলনা কোন মূল্যবান আসবাব পত্র, খাট-পালঙ্ক, জাজিম, গদি, কোনোকিছুই। ‘
আলীর (রাঃ) ছিল কেবল একটি ভেড়ার চামড়া, সেটি বিছিয়ে তিনি রাতে ঘুমাতেন আর দিনে সেটি মশকের কাজে ব্যবহার হতো। কোন চাকর-বাকরও ছিল না। আসমা বিনত উমাইস (রাঃ), যিনি আলী-ফাতিমার (রাঃ) বিয়ে ও তাঁদের বাসর ঘরের সাজ-সজ্জা প্রত্যক্ষ করেছিলেন, বলেছেন, খেজুর গাছের ছাল ভর্তি বালিশ-বিছানা ছাড়া তাঁদের আর কিছুই ছিল না।
আলী (রাঃ) তাঁর একটি বর্ম এক ইহুদীর কাছে বন্ধক রেখে কিছু যব আনেন। তা দিয়েই তৈরি হয়েছিল তাঁদের বাসর রাতের খাবার, সম্পন্ন হয়েছিল সাদাসিধে ওয়ালিমা।
****
কেন ফাতিমার জন্য আরো অনেক প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে নিঃস্ব আলীকে বাছাই করেছিলেন মহানবী (সাঃ)? উত্তরটা তিনিই দিয়ে গেছেন ফাতিমাকে।
আলীর প্রস্তাব সম্পর্কে ফাতিমাকে জানাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেনঃ ফাতিমা! আমি তোমাকে সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, সবচেয়ে বেশী বিচক্ষণ এবং প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী ব্যক্তির সাথে বিয়ে দিচ্ছি।
বিয়ের পর বিদায় নেয়ার সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ফাতিমা (রাঃ)। তাঁর কান্নায় আবেগাপ্লুত হন রাসুল(সাঃ) নিজেও।
আবেগাক্রান্ত রাসুল (সাঃ) ফাতিমাকে বলেনঃ আমি তোমাকে সবচেয়ে শক্ত ঈমানের অধিকারী, সবচেয়ে বড় জ্ঞানী, সবচেয়ে ভালো নৈতিকতা আর উন্নত মন-মানসের অধিকারী ব্যক্তির নিকট গচ্ছিত রেখে যাচ্ছি।
(তথ্যসূত্রঃ আসহাবে রাসুলের জীবন কথা)
(বিবাহ কথন-৩৪) 

মঙ্গলবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

কাউকে কাউকে প্রথম দেখাতেই খুব আপন মনে হয় কেন?

কাউকে কাউকে প্রথম দেখাতেই খুব আপন, খুব পরিচিত মনে হয়। আবার কারো কারো সাথে অনেক বছর কাটিয়ে দিলেও সম্পর্কটা আলগাই থেকে যায়।
তো, এর একটা স্পিরিচুয়াল ব্যাখ্যা আছে। ব্যাখ্যাটা হলোঃ আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী সৃষ্টির আগেই আমাদের রুহগুলো সৃষ্টি করেন। তারপর তাদেরকে আলমে আরওয়া বা রুহের জগতে রাখেন। পৃথিবীতে আসার আগ পর্যন্ত আমরা সেখানেই ছিলাম।
ঐসময় যেসব রুহ কাছাকাছি ছিল, পাশাপাশি ছিল, পৃথিবীতে যদি তারা একটা নির্দিষ্ট সময়ে জন্মগ্রহণ করে- তাহলে এখানেও তাদের পরস্পরকে পরিচিত মনে হয়। অনেক বেশি আপন মনে হয়।
আমার পরিচিত মানুষের সংখ্যাটা নেহায়েত কম না। আবার জীবনে অপরিচিত এমন অনেক মানুষকে পেয়েছি, যারা বলেছেন- 'বাবা, তোমারে দেইখ্যা খুব চিনা চিনা লাগতাছে', কিংবা 'ভাই, আপনাকে এত চেনা চেনা লাগছে কেন?'
মাঝে মাঝে মনে হয়,  আলমে আরওয়াতে আমার রুহটা কি সারাক্ষণই শুধু ঘোরাঘুরি করত? 

রবিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

কুরবানির পশুর গোশত তিন দিনের বেশি জমা রেখে খাওয়া

স্বাভাবিক সময়ে কুরবানির গোশত জমা রেখে যেকোন সময় খাওয়া যায়। কিন্তু, আমার মনে হয়, এইবছর কুরবানির পশুর গোশত তিন দিনের বেশি জমা রেখে খাওয়া বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য উচিত হবে না। 
একবার মদীনার বেদুইনদের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। সেইবছর রাসুল (সাঃ) ঘোষণা করেন, কেউ যেন তিনদিনের বেশি কুরবানির গোশত না খায়। অর্থাৎ তিন দিনের জন্য রেখে বাকিটা যেন দান করে দেয়। পরে অবস্থার উন্নতি হলে রাসুল (সাঃ) এই নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেন।  
এইবছর বাংলাদেশেও অনেকটা সেরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে হয়।  
প্রথমে হাওরে বন্যা হলো। ফসল নষ্ট হলো। মাছ, গবাদিপশু মারা গেল। আমি নিজে সেসময় হাওরবাসীর দুরবস্থা দেখে এসেছি। 
তারপর সম্প্রতি উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যা হলো। মানুষের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে, গবাদিপশু মারা গেছে, গোলার ধান ভেসে গেছে। ফসল নষ্ট হয়েছে। চরম দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছে উত্তরাঞ্চলের মানুষ। 
তাছাড়া মায়ানমারের আরাকানে সেনাবাহিনীর হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। আরাকান থেকে লাখ লাখ মানুষ পালিয়ে আসছে বাংলাদেশে। তারা তাদের সব সহায় সম্বল ফেলে শুধু জীবন নিয়ে পালিয়ে আসছে। 
এত এত দুর্দশাগ্রস্ত মানুষকে রেখে আমরা কীভাবে গোশত জমা করে খাই? দেশে যদি কোন কার্যকর ইসলামী শরীয়া পরিষদ থাকত, আমার মনে হয় তারা আমার এই বক্তব্য ফতোয়া হিসেবে জারি করতেন। কিন্তু সেটা যেহেতু নেই, আমাদের নিজেদেরকেই সচেতন হতে হবে। 
আসুন, আমরা কুরবানির গোশত তিনদিনের বেশি জমিয়ে না রেখে যত বেশি সম্ভব গরীব অসহায় দুর্দশাগ্রস্ত মানুষদের দান করি। 
(আগ্রহীদের মুসলিম শরীফের কুরবানি অধ্যায় পড়ে নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।) 

শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আজকে ঈদের দিন

-কী রুবেল মিয়া, মন খারাপ করে বসে আছো ক্যান?
-আইজকা ঈদের দিন ছার, বাড়িত যাইতে পারলাম না।
-তো কী হইছে, আমিও তো আছি, না?
-আপনে তো ছার ব্যাচেলার মানুষ। আপনার চিন্তা কী! বাচ্চাডায় খুব কানতেছিলো ছার। ইচ্ছা হইতাছিল চাকরি বাকরি ছাইড়া চইলা যাই। 
চোখ ছলছল করে ওঠে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় রুবেল মিয়ার। মনটা আনচান করে ওঠে ডাঃ মুনীরেরও।
-রুবেল মিয়া, যাও সবার জন্যে চা নিয়া আসো। আর সবাইকে আমার রুমে আসতে বলো।
ঈদের দিনেও যাদের ছুটি হয় না তাদের একটা বড় অংশ হলেন এরা। হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয়, দারোয়ান, হাসপাতালের অন্যান্য স্টাফ। কী সরকারি হাসপাতাল, কী বেসরকারি। ঈদের সময়কার ডিউটির জন্য নেই অতিরিক্ত এলাউয়েন্স। মনটা অনেকেরই খারাপ থাকে। সকাল থেকেই তাই কর্মচারীদের দিকে খেয়াল রাখছিলেন ডাঃ মুনীর। অনেকেরই বিমর্ষ মুখ চোখে পড়ে তার। 
সবাই চলে এসেছে ডক্টরস রুমে। সবার হাতে চায়ের কাপ। এই ক্ষুদ্র পরিসরে কিছু সময়ের জন্যে হলেও সবার ভেতর যেন একটা সাম্যের অনুভূতি তৈরি হয়। 
ডাঃ মুনীর চায়ে চুমুক দিয়ে কথা শুরু করেন। আজকে ঈদের দিন। আপনারা যারা আজ এখানে ডিউটি করছেন, আমি খেয়াল করেছি, অনেকেরই মন খারাপ। আমার অনুরোধ, আপনারা মন খারাপ করবেন না। আপনারা যে কত বড় একটা কাজ করছেন, সেটা হয়তো এখন উপলব্ধি করতে পারছেন না। আমি শুধু এটুকু বলবো, এই হাসপাতালে যে শত শত রোগী ভর্তি আছেন, তাদের কথা একবার চিন্তা করুন তো! তারা, তাদের পরিবার, কতটা কষ্টে আছে! আজ এমনও তো হতে পারতো, হাসপাতালের বেডে এরকম অবস্থায় আপনি বা আমিও থাকতে পারতাম! কিংবা আমাদেরই কোন নিকটাত্মীয়! কিন্তু তা না হয়ে আমরা এই অসুস্থ মানুষগুলোর সাথে আছি। এটাকি আল্লাহর রহমত না?
আজ হয়তো ভালো আছি, কিন্তু অন্যকোন ঈদে, পূজায়, কোন ছুটির দিনে, আমরা অসুস্থ হয়ে যেতে পারিনা! আজ যদি আমরা কষ্ট স্বীকার না করি, সেদিন আমাদের জন্য কে কষ্ট করবে? 
মন খারাপ করবেন না। সবকিছুর প্রতিদান আল্লাহ সরাসরি দেন না। আবার সবকিছুর প্রতিদান এই দুনিয়ায় পাওয়া যায় না। শুধু এইটুকু মনে রাখবেন, কোন ভালো কাজই শেষ পর্যন্ত আনপেইড থাকে না। দুনিয়ায় এবং আখেরাতেও, যেকোন ভালো কাজের প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা অনেকগুণ বেশি করে ফিরিয়ে দেন। 
কথা বলতে বলতে রুবেল মিয়াকে খেয়াল করেন ডাঃ মুনীর। বেদনার কালো মেঘ সরে গিয়ে ধীরে ধীরে তার মুখে ফিরে আসছে স্বাভাবিক সূর্যের আলো। 

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

অবাস্তব শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে জাতীয়ভাবে পঙ্গু করে রেখেছে

অবাস্তব শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে জাতীয়ভাবে পঙ্গু করে রেখেছে। আমাদের দেশে শিক্ষা মানে শুধুই বুকিশ নলেজ। এখানে প্রাক্টিকাল কিছুই শেখানো হয়না। যেমন, পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য শেখানো হয়, উগান্ডার রাজধানীর নাম শেখানো হয়, আমাজন জঙ্গলের প্রাণীদের নাম মুখস্ত করানো হয়। কিন্তু সাঁতার শেখানো হয় না।
সাতার না জানার কারণে প্রতিবছর কত শিশু কিশোর এবং বয়স্ক মানুষ মারা যায় ধারণা আছে? লঞ্চডুবিতে, লেকের পানিতে, নদীতে, পুকুরে ডুবে কত মানুষ মারা যায়? সাতার জানলে নিশ্চয় এত মানুষ মারা যেতো না।
স্কুলগুলোতে শত শত পৃষ্ঠার বুকিশ জ্ঞান দেয়া হয়, সাতার শেখানো হয়না কেন? কারণ, এটাকে কোন শিক্ষা মনে করা হয় না।
জীবন বাঁচানোর জ্ঞান না দিয়ে আমাদের শুধু দেয়া হচ্ছে 'চাকরি পাবার' জ্ঞান।
আমি মনে করি, ১০ বছর বয়সের মধ্যে প্রত্যেক শিশুর সাতার শেখা বাধ্যতামূলক করা দরকার।
তারপর ধরুন, সাইকেল চালানো। সাইকেল চালাতে পারা একটা বেসিক স্কিল। কিন্তু কোন স্কুলে কি সাইকেল চালানো শেখায়? আমি অবাক হই, অসংখ্য ছেলে সাইকেল চালাতে পারেনা। মোটরসাইকেল বা কার ড্রাইভিং- এগুলোও বেসিক স্কিল। কিন্তু কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এইসব শেখানো হয় না। শিক্ষানীতিতে, শিক্ষাব্যবস্থায় এর কোন গুরুত্ব নেই।
বাচ্চাদের আত্মরক্ষার কৌশল শেখানো খুব জরুরি। বিশেষ করে মেয়েদের। কিছুদিন আগে মিরপুরে এক ইভটিজারকে ক্লাস সিক্স পড়ুয়া দুইটা বাচ্চা মেয়ে ব্যাপক প্যাদানি দিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছিল। কারণ, ঐ বাচ্চারা তায়কোয়ান্দো জানতো।
কিন্তু কোন স্কুলে, কলেজে কোথাও আত্মরক্ষার কোন শিক্ষা দেয়া হয় না। ড্রিল ক্লাস বা শারীরিক শিক্ষা নামে যে ক্লাস হয় তা নামকাওয়াস্তে কিছু ইনডোর গেমস দিয়ে শেষ করা হয়।
স্কুলের বাচ্চারা কি জানে, কীভাবে ধান রোপন করতে হয়? কীভাবে ধানক্ষেতে সেচ দেয়া হয়? কীভাবে ধান মাড়াই করা হয়?
কৃষি শিক্ষা বইয়ে অনেক থিওরি আছে, কিন্তু বাস্তবে আমি কখনো দেখিনি স্কুলের বাচ্চাদের কোন ক্ষেতখামারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই বাচ্চারা বই-পুস্তকে কৃষকদের চেহারা দেখে, ধুলিমলিন খালি গায়ের কিছু মানুষ। তারা শুধু জানে- কৃষকেরা গরীব। অনেকেই এই কৃষকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে শিখে যায়। ফসল ফলানো যে একটা মহৎ কাজ, জরুরি কাজ, এইটা কেউ উপলব্ধি করতে শেখে না। ধান উৎপাদন করার আগ্রহ কারো জন্মে না, সবাই শুধু শেখে ধান বিক্রির হিসাব। সুদের হার আর লাভ ক্ষতির হিসাব।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা আমাদের উৎপাদন করতে শেখায় না, শেখায় মধ্যস্বত্ত্ব ভোগী হতে।
কর্মমুখী শিক্ষার নামে যে কারিগরি বিভাগ চালু আছে, সেখানেও থিওরির কপচানি বেশি, বাস্তব কাজ শেখানো হয় খুবই কম। ঘরের একটা ইলেক্ট্রিক বাতি নষ্ট হলে আমরা ক'জন সেটা নিজে নিজে ঠিক করতে জানি? এই বেসিক শিক্ষাগুলো কি আমাদের স্কুল কলেজ থেকে পেয়ে আসা উচিত ছিলনা?
যতদিন শুধু এইরকম হাওয়াই জ্ঞাননির্ভর শিক্ষাব্যবস্থা চালু থাকবে, ততদিন আমরা অনেক শিক্ষিত 'তত্ত্ববাগীশ' জ্ঞানী মানুষ পেতে থাকবো। কিন্তু প্রকৃত অর্থে আমাদের অবস্থার উন্নতি হবে না

বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

বোনদের প্রতি অনুরোধ

মেয়েদের কী করা উচিত বা কী করা উচিত না, সে বিষয়ে আমি সাধারণত কিছু বলিনা। সবসময় ভাবি, নিজেদের ভালো তারা নিজেরাই বোঝার কথা। কী করবে আর কী করবে না, সেটা তারা নিজেরাই ঠিক করবে।
কিন্তু আজ কিছু কথা না বলে পারছি না। গত শুক্রবার এক দুর্ভাগা মেয়েকে চলন্ত বাসে রেপ করার পর মাথায় আঘাত করে খুন করেছে বাসের হেল্পাররা। তারপর লাশ ফেলে দিয়েছে টাঙ্গাইলের মধুপুর জঙ্গলের মধ্যে। খবরটা পড়ে শিউরে উঠেছি। পুরুষ হিসেবে লজ্জিত হয়েছি। মানুষ হিসেবে লজ্জিত হয়েছি। সেই সাথে বারবার এইটাও মনে হয়েছে, মেয়েটা এত বোকা কেন? রাতের বেলা একটা বাসে সে একা ছিল কোন সাহসে? একা হয়ে যাবার পর তার নেমে যাওয়া উচিত ছিলনা?
বোনদের প্রতি অনুরোধঃ নিজের বাবা, ভাই, হাজব্যান্ড ছাড়া আর কারো সাথে কোন জায়গায় একা থাকবেন না। কোন পুরুষকে পুরোপুরি বিশ্বাস করবেন না। যতই কাছের বন্ধু হোক, কাজিন হোক, কলিগ হোক, পরিচিত বা অপরিচিত হোক। নেভার। যখনই দেখবেন আপনি একা হয়ে যাচ্ছেন, আপনিও তৎক্ষণাৎ ওই জায়গা ত্যাগ করবেন।
বাসায় একা থাকলে কলিং বেলের আওয়াজ শুনেই দরজা খুলবেন না। একা একা সিএনজি, বা উবারে উঠবেন না। বাসে যদি দেখেন আপনি একা হয়ে যাচ্ছেন, নেমে পড়ুন।
কোন কিছু আশঙ্কা করলেই নিকটাত্মীয় কাউকে জানান।
আর প্লিজ... আত্মরক্ষার জন্য সাথে কিছু না কিছু রাখবেন। নিজের মত করে। মরিচের গুড়া হলেও রাখুন। যেকোন সময় কাজে লাগতে পারে।
এইখানে আপনি নিরাপদ না। এই রাষ্ট্র, এই সমাজ আপনার নিরাপত্তা দিতে পারছে না, পারবে না। সুতরাং যতটুকু সম্ভব নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই।
পর্দা করবেন কিনা বা কতটুকু করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। তবে করতে পারলে ভালো। এটাও একটা প্রিভেন্টিভ মেজার। আপনার মূল্যবান স্বর্ণের অলংকারগুলো যেমন সিন্দুকে বা ব্যাংকের লকারে সুরক্ষিত করে রাখেন, আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখেন- নিজেকে মূল্যবান মনে করলে নিশ্চয়ই নিজেকেও ঢেকে রাখবেন। এখন আপনি নিজে নিজেকে কতটা মূল্যবান মনে করেন সেটা আপনার ব্যাপার।
নিজেকে আপনার নিজের কাছে যেমনই মনে হোক, পুরুষের কাছে আপনি লোভনীয়। আপনি মূল্যবান। মূল্যবান কোনকিছু অরক্ষিত থাকলে এমন কেউ না কেউ থাকবেই, যে লোভ সামলাতে পারবে না।
পুরুষ মানুষরা হলো হরমোন ড্রাইভেন। যাদের বিবেক সজাগ, তারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যারা বিবেকহীন, তারা অনেকেই জন্তুর মত হয়ে যায়।
এখন এত এত পুরুষের ভেতর কে জন্তু আর কে মানুষ এইটা তো আপনার বোঝার উপায় নাই। সেজন্য জন্তুর হাত থেকে বাঁচতে নিজেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
রাতের বেলা যথাসম্ভব বাইরে না থাকার চেষ্টা করবেন।
হিংস্র জন্তুর হাত থেকে বাঁচার জন্য রাতে বের না হওয়া কিংবা ঘরে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে রাখা বোকামী বা বন্দীত্ব নয়, বরং এটাই সত্যিকারের বুদ্ধিমানের কাজ।

মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

যা করার হুটহাট করে ফেলেন...

'হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেলো গতকাল। সবকিছু এত দ্রুত করতে হয়েছে, কাউকে জানাতে পারিনি বলে দুঃখিত। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।'
বিয়ের ঘটনাগুলো আমরা এখন বেশিরভাগ সময় এভাবেই জানতে পারি। এইটা হল ফেসবুক যুগের ট্রেন্ড। এবং সত্যি বলতে কী, I like this..
আমার পরিচিত ভাই বেরাদরদের আমি সবসময় বলি- ভাই, যা করার হুটহাট করে ফেলেন। নিকটাত্মীয়দের নিয়ে কম খরচে সাদাসিধা আর ঘরোয়াভাবে করে ফেলেন। তারপর ফেসবুকে লিখে দিবেন, হুট করে সব হয়ে গেছে, কাউকে জানাতে পারিনি বলে দুঃখিত।
আমরা দাওয়াত চাই না, শুধু সংবাদটা চাই। Esophagus পর্যন্ত খাওয়া হোক বা নাহোক, শুভেচ্ছা জানাতে আর দোয়া করতে কোনরকম কার্পণ্য করা হবে না।
কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা লেখা খুব ঘুরছিল- কুটিকুটি টাকার ব্যাকআপ ছাড়া নাকি বিয়া করা যায় না।
ইনভাইটেশন কার্ড, পার্লার, দামী দামী সব কাপড়চোপর, স্বর্ণের অলংকার, বিরাট অনুষ্ঠান, কনভেনশন সেন্টারের ভাড়া, হাজারো মানুষের খাওয়া দাওয়া...
এক কথায়- টাকা উড়ানোর যত ধরণের উপায় বের করা সম্ভব, কোনোটাই যেন বাদ দেয়া যাবে না।
তো টাকা আসবে কোত্থেকে? দেশের গুটিকয়েক ধনকুবের পরিবারকে আমরা আমাদের আলোচনার বাইরে রাখছি। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বাবা মায়েরা কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন বটে, তবে সেটা মেয়ের বিয়ের জন্যে। ছেলের জন্যে না। মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর ছেলের জন্যে আর তেমন একটা জমানো টাকা থাকেনা। তাছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন বাবার পক্ষেই বা কী করে সম্ভব দুই তিনটা ছেলের প্রত্যেকের বিয়েতে পাঁচ ছয় লাখ করে টাকা খরচ করা!
সুতরাং ভংচং যত খরচই হোক, সেগুলো যোগাড় করতে হবে ছেলেকেই। একটা ছেলে তার লেখাপড়া শেষ করে কর্মজীবনের শুরুতে কীভাবে লাখ লাখ টাকা খরচ করবে? চাকরির বাজারও মন্দা, চাকরি পেতেও দিতে হয় লাখ লাখ টাকার ঘুষ। কখনো জমানো টাকাটা সেখানেই চলে যায়। কখনো কখনো ঋণ নিয়ে ঘুষের যোগান দিতে হয়।
তো এইসব ছেলেরা বিয়ের জন্য কীকরে টাকা জমাবে? কতদিন জমাবে? ঋণ করা ছাড়া তার উপায় কী? আর আলতু ফালতু খরচের জন্য কেন তাকে ঋণ করতে হবে?
সুতরাং যতসব ফালতু ট্রেন্ড বন্ধ করে নতুন ট্রেন্ড চালু করতে হবে।
গতবছর পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল, ভারতে এক তরুণী তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বরের হাতে একগাদা বইয়ের লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের এক তরুণী তার বিয়ের দিন দাদীর শাদা শাড়ি পরে বিয়ে করেন। দামী শাড়ি, গয়না আর পার্লারি সাজগোজের বিপরীতে এটা ছিল নীরব প্রতিবাদ। আউট অব ট্রেন্ড। তার এই ঘটনাটিও অনলাইনে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
এগুলো ভালো ট্রেন্ড। এরকম ভালো ট্রেন্ড শুরু হোক। বেশি বেশি প্রচলন ঘটুক। প্রথা এবং ঐতিহ্যের শুধু সেটুকুই আমাদের চালু রাখতে হবে- যেটুকু সহজ, স্বাভাবিক এবং কল্যাণকর।
বিয়েগুলো হোক মসজিদে। কিংবা একদম ঘরোয়াভাবে। বারান্দায় হোক, ড্রয়িংরুমে হোক। অসুবিধা কোথায়? জমকালো ইনভাইটেশন কার্ডের বদলে চালু হোক হাতে লেখা 'নিমন্ত্রণ পত্র'! ওয়ালিমা হোক বাড়ির উঠানে, কিংবা মসজিদের বারান্দায়। বিরিয়ানি রোস্টের বদলে একটা ওয়ালিমা হোকনা ডাল ভাত ভর্তার! সবকিছু হোক সহজ স্বাভাবিক।
বিয়েবাড়ির খরচ কমিয়ে হানিমুনেই নাহয় বেশি করে খরচ করুন, তাও ভালো।
(ঠিক করেছি, বিয়ের পর আমার বউকে 'গরুর গাড়িতে' করে তার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাবো। এই সময়ের জন্য আউট অব ট্রেন্ড অবশ্যই। সমস্যা হলো, গরুর গাড়ির খরচটা মোটরগাড়ির তুলনায় আদৌ কম হবে কিনা সে বিষয়ে আমি এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।  

রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭

দান

আজকে সকালে অফিসে এসে খবরটা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো মাসুদ সাহেবের। তার কোম্পানি বন্যা দুর্গতদের জন্য মোটা অংকের সাহায্য করছে। পাঁচ লাখ টাকা।
মাসুদ সাহেব একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বেতন যা পান, তা দিয়ে মোটামুটি চলে যায়। তবে কোনোমাসে বাড়তি খরচ থাকলে বেশ টানাটানি পড়ে যায়। এই যেমন গতমাসে হঠাৎ ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়লো। সবার হচ্ছে চিকনগুনিয়া, কিন্তু ছেলের হলো টাইফয়েড জ্বর। অবস্থা বেশ খারাপের দিকে ছিল। সাতদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে দামী ইঞ্জেকশন দিতে হলো।
সব মিলে এ মাসে বেশ টানাটানি করেই চলতে হবে। বেশ কিছু ধারদেনাও হয়ে গেছে এরমধ্যে।
পত্রিকায় টিভিতে বন্যার খবর দেখে মাসুদ সাহেবের অনেক খারাপ লাগে। মন চায় কিছু হলেও সাহায্য করতে। কিন্তু এইমাসে অনেক টানাটানি। সম্ভব হবে না। এনিয়ে মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। মানুষের এমন দুর্দিনে কিছুই করতে পারলেন না ভেবে অস্থির বোধ করছিলেন। কিন্তু আজকে খবরটা শুনে মনের ভার কিছুটা হলেও লাঘব হলো। কোম্পানি থেকে সাহায্য করা হচ্ছে। কোম্পানির সাহায্য মানে তো তারই সাহায্য করা। কোম্পানিতে তার একটা অংশ আছে না! আর কোম্পানির চেয়ারম্যান লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলেন, লোকটা বোধহয় আসলে অতটা খারাপ না। লোকটার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো মাসুদ সাহেবের।
২.
এক তারিখে বেতন তুলতে গিয়ে অবাক হলেন মাসুদ সাহেব। দেখলেন, তার একাউন্টে বেতন থেকে ১ হাজার টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। কারণ জিজ্ঞেস করায় তাকে দেখিয়ে দেয়া হলো, একাউন্টস সেকশনের সামনে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে, 'বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য সব কর্মচারীর এক দিনের বেতন কেটে নেয়া হলো'।
কোম্পানির কর্মচারীর সংখ্যা ৫ শতাধিক। বেতন থেকে কাটা হয়েছে ন্যুনতম এক হাজার টাকা করে। আর ওদিকে সাহায্য দেয়া হয়েছে ৫ লাখ। হিসাবটা তার সামনে দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে গেলো। আর মনের পর্দায় ভেসে উঠলো কোম্পানি চেয়ারম্যানের ত্রাণ সাহায্য প্রদানরত ছবিটা। কে দান করে কার পকেটের টাকা?

শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৭

গীবত করছি না ভাই...

"বলা উচিত না ভাই, তারপরও বলছি। ঘটনা হইছে কী... "
"গীবত করছি না ভাই, আপনার জানার জন্যে বলছি... অমুক ভাইয়ের সাথে সেইদিন পথে দেখা বুঝলেন, কী আর বলবো.."..
আমাদের আড্ডায় আলোচনায় সাধারণত এভাবেই শুরু হয় পরনিন্দা, গীবত আর চোগলখুরির যত আলাপ। হয় আমরাই শুরু করি, অথবা আমরাই হই একনিষ্ঠ শ্রোতা।
বলা উচিত না ভাই, তারপরও বলছি... এইটুকু শুনেই যদি থামিয়ে দিতে পারতাম.. বলতে পারতাম- ভাই, বলা যেহেতু উচিত না, তো আর বইলেন না। আমারও বোধহয় শোনা উচিত হবে না।
অথবা, গীবত করার জন্য বলছি না... এইটুকু শোনার পর যদি থামিয়ে দিতে পারতাম; তাহলে কতই না ভালো হত।
কিন্তু বেশিরভাগ সময় আমরা তা পারিনা। কখনো এমন হয় যে, সিনিয়র কেউ একজন এইরকম আলাপ শুরু করলেন। এখন তাকে থামিয়ে দিলে হয়তো তিনিই বলে বেড়াবেন- আরে অমুকে তো একটা বেয়াদব!! আবার কখনো কখনো আমরা লোভ সামলাতে পারি না। শুনি না কী হলো!!!
এইভাবে আমরা সবাই মিলে একে অপরের নামে নিন্দা, গীবত আর চোগলখুরির দুষ্টচক্র চালিয়ে যাই। আমি তার, সে আরেকজনের, আর সেই 'আরেকজন' আমাকে নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যায়- আমার অজান্তে। 

বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭

বিয়ের ক্ষেত্রে 'সৌন্দর্য' বিবেচনা

বিয়ের ক্ষেত্রে 'সৌন্দর্য' বিবেচনা নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। ছেলেরা বরাবরই সুন্দরী বউ চায়, ছেলে যে একাই চায় তাও নয়। ছেলের বাপ মা ভাই বোন তারাও চায়। কখনো কখনো তারাই বেশি করে চায়। যে মা নিজেই শ্যামলা, তিনিও তার ছেলের জন্যে একটা ফর্সা সুন্দরী বউ চান। যে বাবার নিজেরও শ্যামলা মেয়ে আছে (শ্যামলা বলছি কারণ, এই উপমহাদেশে সত্যিকার কালো মানুষ নেই। পিওর ব্ল্যাক বলা যায় শুধু আফ্রিকার মানুষকে), তিনিও ছেলের জন্য ফর্সা মেয়ে চান। সুন্দরী মেয়ে চান।
আর ছেলে তো বই পুস্তক নাটক উপন্যাস বিজ্ঞাপন সবখান থেকে একটাই উদ্দীপনা পেয়ে বড় হয়- তার একটা 'সুন্দরী বউ' লাগবেই লাগবে। ইদানীং মেয়েরাও যুক্ত হয়েছে এই ক্যাটাগরিতে। তারা কম যাবে কেন? তারাও লম্বা, 'ড্যাশিং', 'হ্যান্ডসাম' ছেলে চায়।
যাহোক, চাওয়ায় দোষ নেই। বন্ধুত্ব যদি হতে হয় পাতানো, তাহলে সুন্দরী বা হ্যান্ডসাম দেখা হতেই পারে। দোষ তখনই, যখন সৌন্দর্য হয়ে ওঠে অন্যান্য যোগ্যতার ওপরে প্রধান মাপকাঠি। সুন্দরী চাইবেন, আবার অন্যসব যোগ্যতাও চাইবেন, তাইলে আপনার পথটা কঠিন। আমি ছেলেদের বলি, সৌন্দর্য দেখুন, তবে তার চেয়ে অন্য দিকগুলো বেশি গুরুত্ব দেয়াটাই ভালো। শিক্ষা দীক্ষা আচার আচরণ। আপনি যদি সুন্দরীই চান, করুন না- অশিক্ষিত কোন সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করুন। তা কি করবেন?
সুন্দর একটা কাপড় কিনলেন, কিন্ত তা যদি গায়ে দিলেই শরীর চুলকায়, ফুসকুড়ি উঠে যায়, তাহলে সেই সুন্দর পোষাকের মূল্য কী? খুব সুন্দর কোন জিনিস যদি দুমাসেই রংচটা হয়ে যায়, ছিদ্র হয়ে যায়, তখন মেজাজটা ঠিক থাকবে?
কথায় আছে, চকচক করলেই সোনা হয় না।
আমি আরেকটু বাড়িয়ে বলি- ঘরে সোনা না থাকলেও জীবন ব্যর্থ হয়ে যায় না। সোনা সিন্দুকে রাখার জন্য ভালো, প্রতিদিনকার জীবনের উত্থান পতনে তার ভূমিকা নিতান্তই নগন্য। সোনা নয়, মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন 'মানুষ'কেই। 

বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭

ভুল মানদন্ডে 'সফল' হবার 'উস্কানি !!

তুমিই পারবে। তুমিও জিতবে। হাল ছেড়ো না, লেগে থাকো। 'দেখিয়ে দাও' যে তুমিও পারো।
এগুলোই হলো বর্তমান সময়ের সব ধরণের সো-কলড মোটিভেশনাল বই-পুস্তক-প্রবন্ধ-লেকচারের মূলকথা। শিব খেরা থেকে শুরু করে নব্য মোটিভেশানিস্ট, যারাই অন্য কাউকে মোটিভেশন দিতে চান, দিনশেষে এইসব কথাই হয়ে দাঁড়ায় তাদের বক্তব্যের সারমর্ম।
এইসব তথাকথিত মোটিভেশন আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভেতর সত্যিকার কোন স্পিরিট তো দিচ্ছেই না, বরং হতাশাই বাড়াচ্ছে। কারণ, প্রচলিত মোটিভেশন মূলক কথাবার্তাগুলোতে দুটি মৌলিক ও গুরুতর সমস্যা আছে। একটা হচ্ছে, সাফল্যের সংজ্ঞাটা এখানে কেবলই টাকার অংকে নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই ভুল মানদন্ডে 'সফল' হবার জন্য সবাইকে 'উস্কানি' দেয়া হচ্ছে। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। অবাস্তব স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। যার ফলে বেশিরভাগ তরুণই একটা সময় গিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে।
মোটিভেশনাল বই পড়ে, বক্তব্য শুনে কেউ কোনদিন সফল হয়নি, হয় না। বাস্তবতা হচ্ছে, চাইলেই সবাই 'সফল' হতে পারে না। চাইলেই সবাই জয়ী হতে পারে না। প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস, মন থেকে চাওয়া, লেগে থাকা, কঠোর পরিশ্রম, কেবল এগুলোই সাফল্যের একমাত্র নির্ণায়ক নয়। পরিশ্রম করলেই সবাই ধনী হয় না, লেগে থাকলেই সবাই টপে ওঠে না, পড়ালেখা করলেই সবাই ভালো চাকরি পায় না।
ব্যবসা করলেই সবাই ফুলে ফেপে ওঠে না, রাজনীতি করলেই সবাই প্রেসিডেন্ট হয় না, লিখলেই সবাই জনপ্রিয়তা কিংবা নোবেল প্রাইজ পায় না।
আপনি একটা ক্লাসের সব ছাত্রকে মোটিভেশন দিলেন- তুমিই ফার্স্ট হতে পারবে। তোমাকেই ফার্স্ট হতে হবে। পড়ো পড়ো পড়ো!! You Can Win!!
অথচ বাস্তবতা হলো, মাত্র একজনই ফার্স্ট হবে। আর কেউ ফার্স্ট হতে পারবে না। আপনি যদি শুধু ফার্স্ট হওয়াকেই সাফল্য বলেন, তাহলে কি বাকি সবাই ব্যর্থ!! আপনার এই মোটিভেশন দিনশেষে বেশিরভাগ ছাত্রের মনেই হতাশা ছড়াবে।
ভালো চাকরি করা, ব্যবসা করে অনেক টাকা কামানো, কেবল এগুলোকেই এখন সফলতা হিসেবে তুলে আনা হচ্ছে। আলীবাবা, মার্ক জুকারবার্গ, স্যামসন এইচ, এদেরকেই এখন সাফল্যের আইকন হিসেবে তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। যেকোনভাবেই হোক, অগুণতি টাকা উপার্জন করতে পারাটাই যেন 'সাফল্য'।
কিন্তু আসলে কি সবারই ধনী হওয়া সম্ভব? ব্যবসায় কি সবাই তরতর করে ওপরে উঠতে পারবে? সবাই কি উচ্চ বেতনের চাকরি পাবে?
তার মানে কি এই যে, ঐ গুটি কয়েকজন মানুষ ছাড়া বাকি সবাই অসফল? ব্যর্থ? ক্লাসের ফার্স্ট বয়টাই শুধু সফল? বাকিরা ব্যর্থ?
এই ধরণের ফালতু মোটিভেশন বন্ধ করা দরকার। এগুলো মোটেই মোটিভেশন না, সত্যিকার অর্থে এগুলো হলো চরম মাত্রার দীর্ঘমেয়াদী ডিমোটিভেশন।
২.
আসলে সফলতা কী?
আমি বলবো, ভালো মানুষ হওয়াটাই সাফল্য। সৎ মানুষ হওয়াটাই সাফল্য। বিনয়ী হওয়াটাই সাফল্য, ভালো ব্যবহার করতে জানাটাই সাফল্য।
নিজের সীমা ও সামর্থের মধ্যে সবচেয়ে ভালোটুকু করার পর, ফলাফল যাই হোক- সেটাই সাফল্য। সেটাকেই মেনে নেয়ার মোটিভেশান চালানো দরকার।
অন্যের দোকানে কাজ করে কেরোসিনের অভাবে পড়তে না পারা ছেলেটা যদি কোনমতে মেট্রিক পাশ করে- সেটাই সাফল্য। অক্ষম বাপ মায়ের একমাত্র অবলম্বন ছেলেটা যখন রিকশা চালিয়ে সংসারের জন্য উপার্জন করে- সেটাই সাফল্য। অনেক কষ্ট করে বিধবা মায়ের যে ছেলেটা গ্রামের ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়েছে- সেটাই তার সফলতা।
ছয় ডিজিটের স্যালারি, আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস, কর্পোরেট সিইও- এইসব হওয়াকেই যদি সাফল্যের মাপকাঠি ধরেন, তাহলে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষকেই ব্যর্থ বলতে হয়। যে কৃষক বাবা তার ঘামের টাকায় ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন, আপনার কি তাকে ব্যর্থ মনে হয়?
কেন সাফল্যের এই অবাস্তব সংজ্ঞা ফেরি করে বেড়াচ্ছেন? কেন তরুণদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন?
একজন মানুষের জন্য, ভালো মানুষ হওয়াটাই হলো সফলতা। কেউ যদি সৎ থাকে, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করে, মানুষের ক্ষতি না করে, পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে তার নিজের দায়িত্বটুকু পালন করে, আমার দৃষ্টিতে সে-ই সফল। সে যেই হোক। মুচি, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, অফিসের দারোয়ান, বাদাম বিক্রেতা গরীব ছেলেটা।
মোরওভার, একজন মুসলিমের কাছে সফলতার সংজ্ঞাটা আরো চমৎকার। পৃথিবীর জীবনের কোন লাভ, ক্ষতি, প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তিতে তাদের জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ধারিত হয় না। তাদের কাছে পৃথিবীর সবকিছুই আপাত। পরকালে পুরস্কৃত হওয়াটাই হলো একজন মুসলিমের জন্য সত্যিকার সফলতা।

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭

এভাবেই সময় চলে যায়...

ছোটবেলায় আপনার অনেক বন্ধু ছিল। সবার সাথে নিশ্চয় আজ আর যোগাযোগ নেই! হয়তো সবার নামও মনে নেই। কাউকে কাউকে হয়তো এখন আর প্রথম দেখায় চিনতেও পারবেন না।
যার সাথে আপনার ধুন্দুমার মারামারি হয়েছিলো, স্যারের কাছে মিথ্যা নালিশ করে যে আপনাকে মার খাইয়েছিলো, তার কথা কি মনে আছে? আজ যদি রাস্তায় সেরকম কারো দেখা হয়, কী করবেন আপনি?
আমি জানি। জড়িয়ে ধরবেন। দু'জনে মিলে পাশের কোন একটা কফিশপে ঢুকে যাবেন। হয়তো মনের ভেতর বেজে উঠবে পুরনো গানের সুরঃ বন্ধু, কী খবর বল! কতদিন দেখা হয়নি!!
সেদিনের তিক্ত দিনগুলি আজ হয়ে উঠবে হাসির খোরাক।
কতদিন আগের কথা? দশ বছর? বিশ বছর? ১৫ বছর আগে এই দিনে আপনি ঠিক কী করেছিলেন, মনে আছে? কারো জন্য ভালোলাগা, কারো জন্য কিছু কষ্ট... কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা... কিছু মনে পড়ছে না? নট শিওর?
হুম্মম্ম।
সময়। এভাবেই সময় চলে যায়। সময়ের সাথে সাথে আমরা নিজেকে হারিয়ে ফেলি। নিজেকেই ভুলে যাই।
বন্ধুকে ভুলে যাই। শত্রুকে ভুলে যাই। পেছনের একেকটা দিন হয়ে থাকে শুধু স্বপ্নের মত কিছু সাদাকালো স্মৃতি।
"আজকে"র বিষয় নিয়ে আমরা কতই না চিন্তিত থাকি। সামান্য বিষয় নিয়ে মানুষে মানুষে কত শত্রুতা, কত রেষারেষি। অথচ, মৃত্যুর পর হয়তো লক্ষ বছর পরে যখন ঘুম থেকে উঠবো, তখন পৃথিবীর এই পুরো জীবনটাকে মনে হবে একটা ক্ষণিকের স্বপ্ন।
এখন যেমন দশ বছর আগের দিনগুলোকে মনে হয়।

শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭

টাইমিং টা ইম্পর্ট্যান্ট...

বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে ৪০ লাখ সৌদি তরুণী। তারা এখনো রয়ে গেছে অবিবাহিত। খবর সৌদি গেজেটের।
ধারণা করি, তরুণদের সংখ্যাটাও সেখানে বোধহয় কম হবে না। তার মানে, বিয়ে সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে মুসলিম বিশ্বের একটা কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যা মাত্র তিন কোটির কিছু বেশি। তার মধ্যে যদি নারীর সংখ্যা অর্ধেক ধরি, তাহলে দেড় কোটি হয়। এর মধ্যে আছে শিশু, আছেন মধ্যবয়সী থেকে বয়স্কা নারীরা। অর্থাৎ বিয়ের বয়সী তরুণীর সংখ্যা যদি ৬০ লাখ হয়, তার মধ্যে ৪০ লাখেরই বয়স ত্রিশের উপরে হয়ে গেছে। অথচ তাদের বিয়ে হয়নি।
অবস্থাটা কি স্বাভাবিক মনে হয়? নাহ, এটাকে স্বাভাবিক মনে করার কোন সুযোগ নেই।
কেন এই অবস্থা? অতিরিক্ত মোহরানা দাবী, যোগ্য পাত্র পাওয়ার পরও আরো ভালোর জন্য অপেক্ষা, এসবই কারণ বলে আমার মনে হয়।
আজ মনে পড়ে হযরত ওমরের সময়কার কথা। যখন কিছু যুবক হযরত ওমরের কাছে এসে অভিযোগ করেছিলেন যে, নারীরা অত্যধিক মোহরানা দাবি করার কারণে বিয়ে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ওমর (রাঃ) অবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করে জুমার খুতবায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি মোহরানার পরিমাণ সর্বোচ্চ চারশ দিরহামে সীমাবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতে নারীর অধিকার ক্ষুন্ন হয় বলে পরে তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন।
মোহরানা নারীর প্রাপ্য অধিকার। কিন্তু ব্যাপারটা হলো- কোন ন্যায্য অধিকারেরও যদি অপব্যবহার করা হয়, তাহলে তা ক্ষতির কারণ হয়। সৌদি আরবে সেটাই হয়েছে।
বাংলাদেশে কী অবস্থা? এনিয়ে কোন জরিপ হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। তবে ধারণা করি, বাংলাদেশের অবস্থাও সুবিধাজনক না।
এর জন্য প্রধানত দায়ী অভিভাবকরা। সহজ একটা উদাহরণ দিচ্ছি। সুন্দরী না হওয়াটা বাংলাদেশের অনেক মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা। কিন্তু খেয়াল করবেন, ৩০ বছর বয়সে যে মেয়েকে দেখতে খুব একটা সুন্দর মনে হয় না, ১৫-২০ বছর বয়সে সেই মেয়েকেও দেখে অনেকেরই পছন্দ হবে। তার মানে, টাইমিং টা ইম্পর্ট্যান্ট। এইটা গার্জিয়ানদের খেয়াল রাখতে হবে।
আবার যারা একটু বেশি সুন্দরী, তাদের গার্জিয়ানদের পা মাটিতে থাকে না। তারা সব চান। যোগ্য পাত্র পেলেও তারা নানান ছুতো নাতায় দেরি করেন। 'আরো ভালো' পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
বাংলাদেশের অবস্থা সম্ভবত এখনো অতটা খারাপ হয়নি। কিন্তু হচ্ছে। আয়্যাম নট শিওর, তবে কয়েক বছর পরে যদি বাংলাদেশে এই বিষয়ে জরিপ করা হয়, খবরটা হয়তো এরকম বেরোবেঃ 'বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে ১ কোটি বাংলাদেশি তরুণীর'।

বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭

ছার, রুগীরে কলা খাওয়ান যাইবো নি?

ছার, রুগীরে কলা খাওয়ান যাইবো নি? আপেল? কমলা?
হাসপাতালে এলেই রোগীদের কেন যেন আপেল কমলা খাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। যারা বছরের কোন একটা দিনও আপেল কমলা খেয়েছে কিনা সন্দেহ, তারাও হঠাৎ করে আপেল কমলার নিয়মিত খাদক হয়ে যায়।
GIT প্যাথলজি পড়ানোর সময় জিল্লুর রহমান স্যার সবার আগে বোর্ডে একটা সিলিন্ডার আঁকতেন। সিলিন্ডারের উপরে এঁকে দিতেন মুখ, আর নিচে দিতেন .... 
বলতেন, এইটাই হলো মানুষ। সিলিন্ডারের একপাশ দিয়ে খায়, আর অন্যপাশ দিয়ে বের করে...
তারপর স্যার সিলিন্ডারের দুইপাশে টান দিয়ে হাত পা বানিয়ে দিতেন। মানুষের খাওয়ার জন্যই নাকি এই হাত পা গুলো দরকার!!
হাসপাতালে ডিউটির সময় স্যারের কথা প্রায়ই জাজ্জ্বল্যমান সত্য হয়ে ধরা দেয়। একজন ডাক্তারকে প্রতিদিন যতবার রোগীর খাদ্য গ্রহণ, বর্জন ও ত্যাগ বিষয়ক বয়ান দিতে হয়, মূল রোগ সম্পর্কে সম্ভবত অতবার কথা বলতে হয়না। রোগ নিয়ে কেউ চিন্তিত নয়, সবাই চিন্তিত থাকে রোগীর খাওয়া আর ত্যাগ নিয়ে।
মণিষীরা বলে গেছেনঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। আসলে কিসে প্রকৃত সুখ? ভোগে, নাকি ত্যাগে? রোগীর এটেন্ড্যান্টদের খাদ্য বিষয়ক উৎকণ্ঠা দেখে এবিষয়ে আমি প্রায়শই ধন্দে পড়ে যাই।

মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭

আমি কিন্তু একটু অন্যরকম'!!

মানুষের ভেতর কিছু অদ্ভুত রকম বৈপরীত্য কাজ করে। সে চেষ্টা করে অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা, একটু অন্যরকম হবার। যেমন, অনেকেই বলেন- 'ভাই, আমি কিন্তু একটু অন্যরকম'!!
আবার একই মানুষ যখন আরেকজনকে খুঁজে পায়, যার সাথে তার আচরণে, কথায়, বা চিন্তায় অনেক মিল- তখন সে খুশি হয়। বলেঃ আরে আরে! তুমি তো দেখি একেবারে আমার মতন!!! আর নিজের মত কাউকে পেলে মানুষ যেন তাকে অজান্তেই ভালোবেসে ফেলে।
বেশ অদ্ভুত মানুষের চিন্তাধারা। অদ্ভুত 'মানুষ' নামক এই প্রাণীটার মন।

বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭

মানুষ অকৃতজ্ঞ প্রাণী

ধরুন আপনি একজনের খুব উপকার করেন। যখনই সে কোন সমস্যায় পড়ে, আপনি জানতে পারলে সাধ্যমত সহযোগিতা করেন।
তারপর একদিন, কোন একটা সমস্যায় আপনি তাকে কোনভাবে হেল্প করতে পারলেন না।
ব্যস, আপনার এতদিনের সবকিছু এক মুহূর্তেই শুন্য হয়ে গেলো। হয়তো আপনাকে এও শুনতে হবে, 'তুমি তো কখনোই আমার কোন উপকার করনি!!!'
আমরা নিজেরাও কখনো কখনো হয়তো এরকম করে থাকি। মানুষ অকৃতজ্ঞ প্রাণী। একবার আমাদের চাওয়ামত না পেলে আমরা আগের সব উপকার নিমেষেই ভুলে যাই।
উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকাটা খুব খুব জরুরি। এতে করে উপকারী মানুষটা আরো বেশি উপকার করার উৎসাহ পায়। পৃথিবীতে এমনিতেই উপকারী মানুষের সংখ্যা বেশি নয়। আর আমাদের অকৃতজ্ঞতা প্রতিদিন তাদের সংখ্যা আরো কমিয়ে দেয়।
২.
পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এরকম হয়ে থাকে। হয়তো আপনার সাথে আমার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। তারপর আমার কোন একটা কথায় হয়তো আপনি কষ্ট পেলেন। ব্যস, আমার সাথে আপনার আগেকার সবকিছু মূল্যহীন হয়ে গেলো!!!
পরদিন থেকে আপনি আর আমি সম্পূর্ণ আলাদা!!!
এরকম হওয়াটা মোটেও উচিত নয়। মানুষের প্রতিটা কাজকে আমি আলাদাভাবে বিচার করার পক্ষে। আজ যদি আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকেন, তার জন্য আজ হয়তো আমি অনেক কষ্ট পেতে পারি। কিন্তু তাই বলে আমার সাথে আপনার অতীতের অসংখ্য ভালো ব্যবহার, অসংখ্য উপকার ভুলে যেতে পারি না।
কোন একটা কাজ একজন মানুষের সমগ্র জীবনকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে না। মানুষের জীবন কখনোই এতটা ঠুণকো নয়।

নৈঃশব্দের গান

রাত্রির গভীরতা আমাকে শোনায় নিয়ত
নৈঃশব্দের গান।
কন্ঠের ব্যবহার নেই, বাদ্যযন্ত্র নেই, তবু;
কী এক নীরব সুরের মূর্চ্ছণায় একের পর এক-
বেহুঁশ হতে থাকে পৃথিবীর মানব মানবীরা।
আর
শেষ রাগটুকু শুনবার আশায়,
আমি শুধু একা একা- নিপাট অন্ধকারের ভেতর,
ব-হু কষ্টে চোখ খুলে বসে থাকি।

বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭

খরা

মনে হয়, পাষাণ হয়ে গ্যাছে আমার হৃদয়!
বোধহয়, নিদারুণ খরা লেগে আছে,
দু'চোখের ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ডে।
এই ঘোর বর্ষার বর্ষণমূখর আকাশের মত 
আমারও মাঝে মাঝে খুব খুব কাঁদতে ইচ্ছে হয়।
মন চায়-
আমারও ভেতর তিলে তিলে গড়েছে যে নগর
প্লাবিত হোক তার সকল গলিপথ।
অশ্রুর বন্যায়। পিচঢালা রাজপথ হোক সব নদী,
ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত নৌকা চলুক-
জলাবদ্ধ হৃদয়ের পথে ঘাটে।
আফসোস!
পাষাণ হয়ে আছে আমার হৃদয়।
কোন বেদনাই এইখানে আজ আর হয়নাকো মেঘ!
জানিনা কাটবে কবে এই খরা,
জাগবে এ হৃদয়ে ফের-
জলোচ্ছাসের মত ভীষণ আবেগ!

মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০১৭

কবিতা কোথায় হারালে?

বহুদিন কবিতার দেখা নাই।
একসাথে চলতে চলতেই
হঠাৎ সে যে কোথায় হারিয়ে গেলো,
নিদারুণ ব্যস্ততায়-
খোঁজ রাখতে পারিনি একদম।
এখন কি তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে? এই রাত্রিতে?
এই ঝড়ো হাওয়ায়?
বিজলি ঝলকের ক্ষণিক আলোকে
মিলবে কি দেখা তার?
তোমরা কেউ কি তাকে দেখেছো কোথাও?
কেউ কি জানাবে তাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ আমারঃ
পুরনো দিনের কথা ভেবে- যেন সে ফিরে আসে-
পুরনো আবাসে!
উপেক্ষায় অবহেলায়,
তিলেতিলে জমে ওঠা সকল অভিমান তার
টুকরো টুকরো করে ভাঙবো বলে
আমি আজ-
কালিভরা কলম হাতে বসে আছি।

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭

একক নাকি যৌথ পরিবার?

একক পরিবার নাকি যৌথ পরিবার? এই নিয়ে বিতর্ক ইদানিং বেশ জমে উঠেছে সামাজিক পরিমন্ডলে। কেউ কট্টরভাবে যৌথ পরিবারের পক্ষে, কেউ একক পরিবারের। নব্য নারীবাদিরা নতুন করে এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। তারা বেশিরভাগই যৌথ পরিবারের বিরুদ্ধে প্রান্তিক অবস্থান নিয়েছেন। আবার পুরুষরা অনেকেই কট্টরভাবে যৌথ পরিবারের পক্ষ নিয়েছেন।
আমার অবস্থান মোটাদাগে পৃথক পরিবারের পক্ষে।
যৌথ পরিবারের বউ মানে যদি হয় পরিবারের 'সবার সেবক', তাহলে আমি এর বিরোধী। আবার একক পরিবার মানেই যদি হয় বাবা-মা, ভাই-বোনদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকা, সেটাকেও আমি সমর্থন করতে পারি না।
মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হলো, মানুষ দিতে চায় কম, নিতে চায় বেশি। যৌথ পরিবারে এই সমস্যাটা বেশি প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। কে ঠিকঠাক কাজ করে না, কে কতটুকু দেয়, কে বেশি নেয়- একটা যৌথ পরিবারে দিনশেষে সম্ভবত প্রত্যেকের ঘরে এগুলোই হয়ে ওঠে কমন আলোচনার বিষয়। গীবত আর চোগলখুরির চর্চাটা শুরু হয় সম্ভবত এখান থেকেই।
একটা পরিবারে টুকটাক অনেক কাজ থাকে। একটা বড় যৌথ পরিবারে সেই কাজের পরিমাণ হয় অনেক অনেক বেশি। কিন্তু সেখানে সত্যিকারার্থে কোন কর্মবন্টণ থাকে না। ফলে, অনেকে মিলে করলেও কাজের 'শেষ' হয় না। দিনশেষে তাই সবার মনে থাকে অতৃপ্তি, অন্যের প্রতি অভিযোগ, আক্ষেপ।
সবচেয়ে বেশি চাপ সহ্য করতে হয় বাড়ির 'বড় বউ'কে। তার নিজের জীবন বলতে কিছু থাকেনা।
সকাল বিকাল চা-নাস্তা বানানো, তিন বেলা ভাত-তরকারি রান্না, কাপড়-চোপড় ধোয়া, ইস্ত্রি করা, ঘরদোর সামলে রাখা- সহজ কাজ নয়। একজন গৃহিনী বউকে সারাদিনে যতবার এঘর ওঘর করতে হয়, হিসাব করলে তাতে তার প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার হাঁটা হয়ে যায়। কাউকে কাউকে সারাদিনে যে পরিমাণ রান্নাবান্না করতে হয়, সেই পরিমাণ রান্না করে হয়তো একটা বড়সড় রেস্টুরেন্ট চালানো যাবে। যে পরিমান কাপড় ধুতে হয় বা ইস্ত্রি করতে হয়, সেই পরিমাণ কাজ করে বোধহয় বাণিজ্যিকভাবে একটা লন্ড্রি দোকানই চালানো সম্ভব।
যৌথ পরিবারে কারো নিজস্ব সময় বলে কিছু থাকেনা। একটু বিশ্রাম, নিজের বাচ্চাটাকে একটু বেশি সময় দেয়া, স্বামীর সাথে একটু অতিরিক্ত গল্পগুজব- কোনোটাই নিশ্চিন্তে করা যায় না। মাথায় অনেক কাজের চাপ, আবার যেকোন সময় যেকেউ ডাক দিতে পারে।
'মা এক কাপ চা দাও না'। 'আমার ঘড়িটা কোথায়?' 'ভাবী এক গ্লাস পানি দাও।' 'বউমা একটু রান্নাঘরে যাও।' যেকোন সময় কানে আসতে পারে যেকোন আদেশ, কিংবা অনুরোধ।
ক্লাস নাইনে থাকতে প্রথম যেদিন আমি নিজে নিজে আমার সব কাপড় ধুয়েছিলাম, আমার কোমর ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল। আমার মা এবং বোনেরা কত কষ্ট করে সেটা বুঝতে আর বাকি ছিলনা। এরপর থেকে নিজেই কাপড় ধুই।
গোসল করতে গেলেই আমি দুএকটা কাপড় ভিজিয়ে রাখি। তবুও সপ্তাহ শেষে একগাদা ময়লা কাপড় জমে থাকে। একজনের কাপড় নিয়েই যদি এই হয় অবস্থা, একটা পুরো পরিবারের কাপড় সামলানো কতটা কঠিন, ভাবা যায়?
প্রাপ্তবয়স্ক এবং বিবাহিত ছেলে মেয়েরা তাই পৃথক পরিবার চালানোই ভালো। তবে পৃথক পরিবার মানে বাবা-মা বিহীন পরিবার নয়। বাবা-মা'র দায়িত্ব থেকে মুক্তি নয়। শ্বশুর শ্বাশুড়ির দায়িত্ব থেকে মুক্তি নয়। ভাইবোনদের দায়িত্ব থেকে মুক্তি নয়। ভাই বোনদের মধ্যে যে বেশি স্বচ্ছল, তারই উচিত বাবা-মার দায়িত্ব নেয়া। তারই উচিত বেশি বেশি বাকি সবার খবর নেয়া। সবার বোঝা উচিত, বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেয়াটা বিরাট সুযোগ, এটা কোন বার্ডেন নয়। বাপ-মা কিংবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করার জন্য ছেলেমেয়ে বউ-জামাইদের রীতিমত প্রতিযোগিতা করা উচিত।
অনেক ক্ষেত্রে যৌথ পরিবারগুলো শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে যায় ঝগড়াঝাটির মাধ্যমে। এতে করে জীবনের বাকি সময়টাও আর স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকে না। এমন তিক্ততা সৃষ্টি হবার আগেই পরিবার পৃথক হওয়া ভালো। এতে করে বাকি জীবনেও সম্পর্কগুলো ভালো থাকে। তিক্ততা নিয়ে, অসন্তুষ্টি নিয়ে যৌথ পরিবারে থাকার চেয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে পৃথক পরিবারে থাকাই ভালো। খারাপ সম্পর্ক নিয়ে কাছে থাকার চাইতে ভালো সম্পর্ক নিয়ে দূরে থাকা ভালো। 

শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭

ধার্মিকতা কাকে বলে?

সহযোগী অধ্যাপক ফজল সাহেব তার একটা ফাইল নিয়ে বিপদে আছেন। তার কলেজে নতুন জয়েন করা কয়েকজন শিক্ষকের বিল সংক্রান্ত ফাইল শিক্ষা অফিসে আটকে আছে। বহুদিন ধরে চেষ্টা তদবির করেও কুলকিনারা করতে পারছেন না। এর আগে অন্যদের পাঠিয়েছিলেন, কাজ হয়নি। এবার তাই নিজেই এসেছেন।
ভেবেছিলেন ঘুষ ছাড়াই হয়তো কাজটা হয়ে যাবে, কিন্তু এখন আর সেরকম ভাবতে পারছেন না। তাই নতুন শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তিনি এসেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
চেয়ারে যিনি বসে আছেন তাকে বেশ পরহেজগার মনে হচ্ছে। নাম স.ম. তরফদার। এই লোক ঘুষ খায়? বিশ্বাস হচ্ছেনা ফজল সাহেবের।
-- ভাই সাহেব, আমার কলেজের ফাইলটা যদি একটু দেখতেন। অনেক মাস হয়ে গেল, ছেলেরা বেতন পাচ্ছে না। পরিবার নিয়ে বেশ কষ্টে আছে আরকি। যদি একটু তাড়াতাড়ি করা যেত।
-- দেখেন ফজল সাহেব, আপনার কাজটা জটিল। আমি কাজ করছি। তবে আরো সময় লাগবে। বুঝলেন ভাই, সময় লাগবে।
বেশ কিছুক্ষণ রিকুয়েস্ট করে ফজল সাহেব বুঝলেন, এ চিড়িয়া খালি হাতে কথা বলবে না। তিনি হাতে রাখা প্যাকেটটা বের করলেন।
-- ভাই, আপনার জন্য সামান্য হাদিয়া ছিল। বোঝেনই তো, ছেলেরা কষ্টে আছে। একটু দেখেন ফাইলটা তাড়াতাড়ি কিছু করা যায় কিনা...
চোখ মুখ কুঁচকে তাকালেন তরফদার সাহেব। যেন তাকে ঘুষ সাধাটা অপরাধ হয়ে গেছে। ফজল সাহেবও একটু বিব্রত হলেন। নাহ, একজন ভালো মানুষকে সন্দেহ করা ঠিক হয় নাই।
তিনি প্যাকেটটা আবার পকেটে পুরে উঠে দাড়ালেন। ঠিক এসময় তরফদার সাহেবের ত্রস্ত কন্ঠ কানে এলোঃ ভাই সাহেব, রমজান মাস না! বোঝেনই তো, রোজা আছি। চিন্তা করবেন না, আমি কাজ করে দেবো! আপনি ঐটা নিয়ে ইফতারের পরে যোগাযোগ করেন কেমন?
২.
আব্দুর রহমান সাহেব সৌদি আরবে থাকেন বিগত ১৫ বছর ধরে। এবার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে দেশে এসেছেন। ড্রইং রুমে বসে নতুন বেয়াই এর সাথে গল্প করছিলেন।
-- বুঝলেন বেয়াই, ১৫ বছরে ৮ বার হজ্জ্ব করছি। আল্লাহর অশেষ রহমত বেয়াই। এরকম সৌভাগ্য কয়জনের হয়?
-- বলেন কী বেয়াই? নিয়ম অনুযায়ী তো এই সময়ে সর্বোচ্চ তিনবার হজ্জ্ব করতে পারতেন, নাকি!! ৮ বার কেমনে করলেন?
-- আরে বেয়াই, এইডা কোন ব্যাপার? তিনবার নিয়ম অনুযায়ী করছি, আর বাকি ৫ বার চুরি কইরা করছি আরকি বুঝলেন!!
৩.
তাবলিগে এক চিল্লা লাগিয়ে আজই বাসায় ফিরেছেন কবির সাহেব। সমস্যাটা হিলো, তিনি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলেন মাত্র ৭ দিনের। এখন আরো ত্রিশ দিনের ছুটি দরকার। কী করা যায়?
তিনি গেলেন ডাক্তারের চেম্বারে। অসুস্থতার মিথ্যা সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য ডাক্তারকে পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিছুটা ক্ষুব্ধ কন্ঠে তিনি ডাক্তারকে বললেন- 'ডক্টর, আমি তো ভালো কাজেই সময় দিয়েছি তাই না? আপনি দিয়ে দেন, দিয়ে দেন, কোন অসুবিধা নাই। আপনার কোন পাপ হবে না ডক্টর। আপনিও সওয়াবের ভাগীদার হবেন!!!'
***
সাধারণভাবে অধার্মিকদের তুলনায় ধার্মিকরা ভালো মানুষ। সমস্যাটা হলো- কেউ কেউ ধর্ম পালন করছেন বটে, কিন্তু ধর্মের মূল স্পিরিট ধারণ করতে পারছেন না। ধর্মের মূল কথা তাদের ভেতরে প্রবেশ করছে না। ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম যে কেবল কিছু রীতি প্রথার সমষ্টি নয়, তা তারা উপলব্ধি করেন না।
ধর্ম মানুষের ভেতর যে সততা, মানবিকতা, ভালো ব্যবহার, মানুষকে না ঠকানো, মানুষের ক্ষতি না করা, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর প্রতি দয়ার যে গুণ সৃষ্টির তাগিদ দেয়- তা অনেক ধার্মিকই ধারণ করতে পারছেন না। 

রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

সবকিছুই আল্লাহর, সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে

ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এই একটা বাক্যই একজন মানুষের জীবনকে অন্যরকম করে দিতে পারে। মানুষ মারা গেলে, কোন বিপদ হলে অথবা কিছু হারালে আমরা মুসলিমরা পড়ি- ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। যার অর্থ হলোঃ নিশ্চয় সবকিছুই আল্লাহর আর তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। মানুষ মারা গেলে এটা আমাদের সামনে একেবারে চাক্ষুষ এবং অকাট্য প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়, নিশ্চয় তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।
কোরআন শরীফে সুরা বাকারার ১৫৫-৫৬ নম্বর আয়াতে এই অংশটুকু আছে। যেখানে বলা হয়েছে- পৃথিবীতে মানুষকে ভয়, ক্ষুধা, দারিদ্র‍্য, জীবন ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। মানুষের ভেতর তাদেরকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে- যারা এসময় ধৈর্যধারণ করবে, আর স্মরণ করবে- নিশ্চয়ই সবকিছু আল্লাহর এবং তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।
কোন কিছু হারালে বা কোন ক্ষতি হলে আমাদের খারাপ লাগে। আমাদের কষ্ট হয়। এটা স্বাভাবিক মানবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে হতাশায় ভোগার কোন সুযোগ নেই। সেটা স্বাভাবিক নয়। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন অর্থ কী? নিশ্চয়ই আমাদের আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। তো, যেখানে আমি নিজেই এই পৃথিবীতে থাকবো না, আমার নিজের জীবনই যেখানে অনিশ্চিত, আমি নিজেই যেখানে যেকোন মুহূর্তে নাই হয়ে যাবো, সেখানে এই দুনিয়ার এইসব ক্ষতি নিয়ে ভেবে কী হবে?
ধরা যাক, আমার ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। আচ্ছা, আজ যদি আমি মারা যাই, তাহলে এই ক্ষতির কী মূল্য থাকবে আমার কাছে? আমার যদি আরো হাজার কোটি টাকা থাকে তারই বা কী মূল্য থাকবে?
এটাই হলো 'ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন' এর স্পিরিট।
২.
গত জানুয়ারিতে সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। সকাল বেলা বাইসাইকেল নিয়ে দ্বীপের পশ্চিম তীর ধরে ছেড়া দ্বীপে গেলাম। সাধারণত ঐ পথে কেউ ছেড়া দ্বীপ যায় না। অনেক এবড়ো থেবড়ো, অনেক প্রবাল, পাথর আর ঝোঁপ ঝাড়। অনেকটা নির্জনও। অনেকটা পথ সাইকেল হাতে নিয়ে হাঁটতে হয়।
এই এডভেঞ্চারে কখন যে আমার মানিব্যাগ কোথায় পড়ে গেছে বুঝতে পারিনি। ফিরে এসে যখন শিপে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন বুঝলাম মানিব্যাগ নেই। ৭-৮ হাজার টাকা, কয়েকটা আইডি কার্ড, এটিএম কার্ড, চাবি, কিছু জরুরি কাগজ- অনেক কিছু ছিল। যেপথে হারিয়েছি, ফিরে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। তৎক্ষনাৎ স্মরণ করলামঃ ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। খুব একটা মন খারাপ করলাম না।
জাহাজে ওঠার সময় আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে এক বন্ধু মানিব্যাগটা নিয়ে এলো, ওটা নাকি সে কুডিয়ে পেয়েছে। ওরা কয়েকজন ছেড়াদ্বীপ যায়নি, এমনিই হাওয়া খেতে বেরিয়েছিল, বালুর ওপর মানিব্যাগটা পড়ে থাকতে দেখে নিয়ে এসেছে। আমি খুব খুব খুবই আশ্চর্য হলাম। আল্লাহ আমাকে খুব ছোট একটা পরীক্ষা করলেন!! আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি ধৈর্যের পরীক্ষায় পাশ করলাম, আর তারপর আল্লাহ আমাকে আমার জিনিস পুরোটাই ফিরিয়ে দিলেন!!! সুবহানাল্লাহ।
মার্চ মাসের এক রাতে এক বন্ধুকে সি-অফ করতে কমলাপুর স্টেশনে যাচ্ছিলাম রিকশায়। মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারিরা টান মেরে ব্যাগটা নিয়ে গেলো। ল্যাপটপ ছিলোনা, বই, স্টেথো, চাঁদর, হস্পিটালের ড্রেস, কিছু কাপড় এগুলো ছিল। স্মরণ করলামঃ ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। যদি আমার রিযিকে থাকে, তাহলে ওটা ঠিকই ফিরে আসবে। আমার তো আরো বেশি ক্ষতি হতে পারতো, রিকশা থেকে পড়ে আহত হতেও পারতাম। আল্লাহর শোকর করলাম, মন খারাপ করলাম না।
ঘন্টা দুয়েক পরের কথা। তখনো কমলাপুর স্টেশনেই আছি। ১১ টার দিকে একটা ফোন পেলাম। মালিবাগ থেকে একজন লোক ফোন করে জানালেন, আমার ব্যাগটা কেউ একজন ফেলে রেখে গেছে। ব্যাগে থাকা আইডি কার্ডে নম্বর পেয়ে উনি ফোন করেছেন। অত রাতে আর গেলাম না। উনার কাছেই রাখতে বললাম।
সপ্তাহখানেক পর উনার বন্ধু মালিবাগের ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে সবকিছুসহ ব্যাগটা আমাকে দিয়ে গেলেন।
পরপর দুটো ঘটনায় আমার বিশ্বাস অনেক পোক্ত হলো। আমি অন্তরে তৃপ্তি পেলাম, বিশ্বাসের তৃপ্তি। এরপরে আরো অনেক বড় বড় (আপাত) ক্ষতি হয়েছে। সাময়িক খারাপ লেগেছে, তারপর স্মরণ করেছি- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি, আর তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। যেটা আমার, সেটা যেকোনভাবে আমারই থাকবে। আর না থাকলেও কোন ব্যাপার না। সবকিছুই আল্লাহর, আমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। 

বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭

Everybody will be paid back by his own Coin.....

গয়াল চন্দ্র এই শহরের একজন দুধবিক্রেতা। তিনি চিকন বুদ্ধির বাঙালি, তাই ১০ লিটার দুধে ৫ লিটার পানি মিশিয়ে ১৫ লিটার করলেন। সামান্য বুদ্ধিতে পাক্কা পাঁ-চ লিটার লাভ!! খুশিতে চোখ চকচক করে ওঠে তার।
দুধ বিক্রির টাকা পকেটে নিয়ে তিনি চাল কিনতে যান সাব মুদির দোকানে। সাবু মুদি তাকে 'অতি উত্তম চাউল', 'এরকম চাউল কোথাও পাইবেন না' ইত্যাদি বলে শেষে পাথর মেশানো চাল বিক্রি করে। ওজনেও আধা কেজি কম দেয়।
'কত লাভ করে ফেললাম' ভেবে বেজায় খুশি সাবু মুদি লাভের টাকা নিয়ে বাজারে যায় মাছ কিনতে। মাছ বিক্রেতা সুরুজ মিয়া তাকে ফরমালিন মেশানো পচা মাছ ধরিয়ে দেয় কেনা দামের দ্বিগুন মূল্যে। তার লাভ করতে হবে না?
কিছুক্ষণ পরে সুরুজ মিয়ার কাছে খবর আসে, তার ছেলেটা এক্সিডেন্ট করেছে। দ্রুত সে তার ছেলেকে হাসপাতালে নেয়। হাসপাতালের একজন ধান্দাবাজ দালাল 'ভালো চিকিৎসা' র ব্যবস্থা করে দেবার কথা বলে ভংচং বুঝিয়ে সুরুজ মিয়ার কাছ থেকে ভালো পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।
সেই ধান্দাবাজ বাড়ি ফেরার পথে পড়ে ছিনতাইকারীর হাতে। ছিনতাইকারী তার পেটে ছুরি মেরে সব টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়।
পালিয়ে যাবার সময় ছিনতাইকারী ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। পেদানি দিয়ে সব টাকা নিয়ে নেয় পুলশ। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা বা ভিক্টিমের কাছে ফেরত দেয়া কোনটাই করেন না পুলিশ অফিসার।
সেই পুলিশের ছেলে আবার হয়ে পড়ে ইয়াবা আসক্ত.. মাদকের পেছনে টাকা ঢেলে প্রতিনিয়ত সে খালি করে দেয় বাবার পকেট...
***
যারাই অবৈধ পথে উপার্জন করে, তারাই মনে করে যে সে 'বিরাট লাভ' করে ফেলেছে। কিন্তু আসলে তা নয়। সে একজনকে ঠকাচ্ছে, আবার তাকে ঠকাচ্ছে অন্যকেউ। যেহেতু সমাজের প্রত্যেকেই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল, আল্টিমেটলি সবাই চক্রাকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাইরে থেকে হয়তো মনে হয় অসৎ লোকগুলোই সফল, তারাই সুখে আছে। আসলে তা নয়। তারা নিজেরা হয়তো মনে করে এইভাবে তারা খুব ভালো থাকবে, আসলে তাও হয় না। অসৎ পথে উপার্জন করে শেষ পর্যন্ত কেউ পার পায় না। পরকাল তো পরের কথা, দুনিয়াতেই তারা পেয়ে যায় ফিরতি হিসাব।
প্রকৃতির নিয়ম হলো, এখানে কাউকেই ছেড়ে দেয়া হয় না। আজ কিংবা কাল, Everybody will be paid back by his own Coin.....

শুক্রবার, ৩০ জুন, ২০১৭

'সম্মানজনক পেশা' বলে কিছু আছে?

ডাক্তারি একটা 'সম্মানজনক' পেশা, অতএব ডাক্তার হইতে হইবে। শিক্ষকতা একটি 'সম্মানজনক' পেশা, অতএব শিক্ষক হইতে হইবে। ইঞ্জিনিয়ার, লইয়ার, ব্যাংকার, মিলিটারি কিংবা পুলিশ... যেকোনভাবে হোক, একজন 'অফিসার' হতেই হবে। 'সম্মানজনক' পেশায় নিয়োজিত থাকতে হবে।
এইযে এভাবে পেশার মধ্যে সম্মান অসম্মানের একটা ধারণা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে, সমাজের মধ্যকার বিভেদ, ঘৃণা, বিদ্বেষ ও শ্রেণী বৈষম্যের মূলে এইটা হলো একটা প্রধান কারণ। কেউ নিজেকে সম্মানজনক পেশার লোক ভেবে অহংকারী হয়, অন্যদের তুচ্ছজ্ঞান করে, আর কেউবা নিজের পেশাকে হীন ভেবে হীনম্মন্যতায় ভোগে। মনে আছে, একবার ক্লাসে একজন শিক্ষিকা 'তোমার বাবা কী করে' জিজ্ঞেস করায় আমার বন্ধু মাথা নিচু করে জবাব দিয়েছিলো- তিনি মুহুরি। উকিলের সহযোগী। তার কাছে বাবার পেশাটা হয়তো 'সম্মানজনক' ছিল না।
আসলে কি 'সম্মানজনক পেশা' বলে কিছু আছে? আমি মনে করি, পেশার সাথে সম্মানের কিছু নাই। পেশার কারণে কেউ সম্মানিত বা অসম্মানিত হতে পারে না। সম্মান আসে জ্ঞান, চরিত্র আর সততা থেকে।
আপনি একজন পুলিশ অফিসার, বা কাস্টমস অফিসার, বা যেকোন অফিসের একজন 'অফিসার'। আপনি দু'হাতে ঘুষ খান। মানুষ আপনাকে সম্মান করবে? নাহ। মানুষ হয়তো আপনাকে সামনাসামনি সমীহ করতে পারে- সেটা ভয় থেকে। ডাকাতের সামনে যদি কেউ হাতজোড় করে দাঁড়ায়, কেউ কি বলবে যে- সে ডাকাতকে সম্মান করছে? ব্যাপারটা সেরকম।
মানুষ আপনাকে ভয় করতে পারে, কিন্তু সম্মান করবে না।
আপনি একজন শিক্ষক। কিন্তু আপনার জ্ঞান জোড়াতালি মার্কা, আপনি ভালো পড়াতে পারেন না, কিংবা পড়ান না-- ছাত্ররা আপনাকে সম্মান করবে? করবে না। তারা হয়তো পরীক্ষায় ফেলের ভয়ে আপনাকে তোয়াজ করবে, কিন্তু মন থেকে সম্মান করবে না। পরিমল বাবু একজন শিক্ষক ছিলেন, তাকে কি আপনারা সম্মান করেন?
আপনার চরিত্র যদি খারাপ হয়, আপনি যেই হোন- কেউ আপনাকে সম্মান করবে না। আপনি প্রেসিডেন্ট হলেও সম্মান পাবেন না, শিক্ষক হলেও না, অফিসার হলেও না।
আপনি ডাক্তার, রোগীর সাথে যদি ভালো ব্যবহার না করেন, শুধুমাত্র ডাক্তার হওয়ার কারণে কেউ আপনাকে সম্মান করবে? না। করবে না।
পেশার কারণে কেউ সম্মানিত বা অসম্মানিত হতে পারে না। পেশা হলো জীবিকা অর্জনের মাধ্যম মাত্র।
বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খেতে হয়, ভাত কাপড়ের দরকার হয়, থাকার জায়গা দরকার হয়। অসুস্থ হলে চিকিৎসা দরকার হয়। আমাদের ঘর বাড়ি রাস্তাঘাট পরিস্কার রাখতে হয়, আমাদের পারস্পরিক যোগাযোগ রাখতে হয়। আর এইসব কাজ আমরা মানুষেরা ভাগাভাগি করে করি। আমাদের খরচ নির্বাহ করি। এইটাই পেশা। এইখানে আলাদা করে সম্মান অসম্মানের কিছু নাই।
প্রত্যেকের জন্য রিযিক আছে, এবং সেটা কীভাবে আসবে তারও একটা পদ্ধতি আল্লাহর পক্ষ থেকেই নির্ধারণ করা আছে। সেটারই নাম 'পেশা'। পরিবেশ পরিস্থিতি সময় ও প্রয়োজনের তাগিদে একেকজনকে একেক কাজ করতে হয়, একেকজন একেক কাজে পারদর্শী হয়, একেক জন একেক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
সৎ পথে, কাউকে না ঠকিয়ে, কারো সম্পদ লুট না করে, বৈধভাবে অর্জিত যেকোন জীবিকাই সম্মানের, যেকোন পেশাই সম্মানের। সবাইকে সবার প্রয়োজন হয়। কাউকে ছাড়া কারো চলে না।
ধরেন একজন মেথর, তো তার পেশাটাকে কি আপনি খুব অসম্মানজনক মনে করেন? যদি করেন, কেন? আপনার কি টয়লেট বাথরুম পরিষ্কার করতে হয় না? নিজেকে পরিষ্কার করতে হয় না? তখন কি আপনি অসম্মানিত হয়ে পড়েন?
নবী রাসুলগণ অনেকেই 'রাখাল' ছিলেন, সেটা কি কোন 'হীন' পেশা? অনেক মহামানব খুব সাধারণ কাজ করতেন। তারা কি পেশার কারণে মহান হয়েছেন? না, হয়েছেন তাদের জ্ঞান ও চিন্তাচেতনার কারণে। উত্তম ব্যবহারের কারণে। উত্তম শিক্ষার কারণে।
অর্থকরী পেশা মানেই সম্মানজনক পেশা নয়। পেশার কারণে কেউই সম্মানিত হয় না। মানুষ সম্মানিত হয় তার জ্ঞানে, তার সততায়, তার চরিত্রে, তার পরোপকারিতায়, ভালো ব্যবহারে, মহানুভবতায়। আর তাই, অর্থকরী পেশায় নিয়োজিত হতে পারাই জীবনের সফলতা হতে পারে না। সফলতা হলো সৎ, চরিত্রবান, জ্ঞানবান, পরোপকারী ও ভালো মানুষ হওয়া।
পেশা হলো জীবনধারণের প্রয়োজনে ব্যয় নির্বাহের মাধ্যম মাত্র, আর কিছু নয়। মানুষ হিসেবে পৃথিবীর সব মানুষের মানবিক মর্যাদা সমান। পেশা যাই হোক তাতে আপনি খুব বড় কিছু বা খুব ছোট কেউ হয়ে যান না। 

মঙ্গলবার, ২৭ জুন, ২০১৭

নারীদের মসজিদে যাওয়া কতটা জরুরী?

ঈদের জামাতে মহিলাদের অংশগ্রহণের সুযোগ আছে কোথাও? বাংলাদেশের কোন ঈদগাহে কি মহিলারা অংশ নেন? আমার জানা নাই। আর উত্তরটা সম্ভবত 'না'। কীভাবে মেয়েদেরকে ধর্মের কাজ থেকেও দূরে রাখা হয়েছে এইটা হলো তার একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ।
আর এর কারণ হলো আমাদের দেশের, বলতে গেলে এই উপমহাদেশের আলেম-ওলামাদের অতিবুযুর্গীপনার নামে নারীদের বঞ্চিত করার বিশেষ প্রবণতা।
অথচ আল্লাহর রাসুল (সাঃ) মহিলাদের ঈদের জামাতে অংশ নিতে জোর তাগিদ দিয়েছেন। এমনকি যেসময় নারীদের জন্য নামাজ পড়াই নিষিদ্ধ, সে অবস্থায়ও তাদের ঈদগাহে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যাদের ওড়না নেই, তাদেরকে অন্য বোনের ওড়না ধার করে নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল।
দেশের কতগুলি মসজিদে নারীদের নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা আছে? প্রাত্যহিক নামাজ তো দূরের কথা, জুমার নামাজেও তাদের অংশগ্রহণের কোন সুযোগ কোথাও আছে কি? নেই।
কেন নেই? রাসুলের সময় যেখানে নারীরা ফযর এবং এশার নামাজও মসজিদে গিয়ে পড়তে পারতেন, আজ কে এমন বুজুর্গ হলো যে নারীদের মসজিদে যাওয়াই বন্ধ করে দিলো? খুবই আশ্চর্যের কথা, কোন কোন মসজিদে নাকি এরকমও লেখা থাকে- মহিলাদের প্রবেশ নিষেধ!!
জাতি হিসেবে মুসলিমদের দুরবস্থা বা অধঃপতনের কারণ হিসেবে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন। আমি এই দুরবস্থার পেছনে দায়ী করি মুসলিম নারীদের মসজিদ বিমুখ করে রাখাকে। মসজিদ থেকে দূরে রাখাকে।
এজন্য কোন গুরুতর তত্ত্বীয় আলোচনার প্রয়োজন নেই। কমনসেন্স এপ্লাই করাই যথেষ্ট।
মুসলিম সমাজের অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। মসজিদে যাওয়ার সুযোগ না থাকায় এই অর্ধেক সংখ্যক মুসলিম ইসলামের শিক্ষা পাচ্ছেন না। কোন একটা জনগোষ্ঠির অর্ধেক মানুষকে জ্ঞানহীন রেখে কীকরে একটা সুন্দর সমাজ তৈরি করা সম্ভব?
পুরুষেরা মসজিদে গিয়ে কিছু হলেও ধর্মীয় আলোচনা শুনতে পারে, মসজিদের এইসব আলোচনা থেকে তারা ইসলাম সম্বন্ধে কিছুটা হলেও জানার সুযোগ পায়। যদিও কাজের ব্যস্ততায় তারা অনেকেই সে সুযোগ নেয় না। আমাদের দেশের মেয়েরা ধর্মীয় আলোোচনা শোনার কোন সুযোগই পায় না। সাংসারিক কাজ শেষে সারাদিন বাড়ীতে বসে থাকা ছাড়া সময় কাটানোর অন্য কোন সুযোগ তারা পায় না।
যারা মেয়েদের সিরিয়াল দেখা নিয়ে কটাক্ষ করেন, হাসি তামাশা করেন, ক্ষোভ প্রকাশ করেন- আমি তাদের জিজ্ঞেস করি, সিরিয়াল না দেখে তাদের উপায়টা কী? ঘরে বসে তারা করবেটা কী সারাটা দিন?
বাচ্চাদের প্রথম শিক্ষক হলো মা। সেই মায়েরাই যদি থেকে যায় জ্ঞানহীন, তারাই যদি থেকে যায় ধর্ম সম্পর্কে উদাসীন, তাহলে বাচ্চাদের ধর্ম ও চরিত্রের শিক্ষা দেবে কে? দিনকে দিন সমাজে যে ধর্মীয়ভাবে উদাসীন একটা ডিজুস প্রজন্ম বেড়ে উঠছে এর একটা কারণ হলো মায়েদের জ্ঞানশুন্যতা। মায়েরা নিজেরাই যেখানে জ্ঞান রাখে না সেখানে তারা বাচ্চাদের কী শেখাবে?
মায়েরা মসজিদে গেলে ছোট বাচ্চারা মায়ের সাথে মসজিদে যেতে অভ্যস্ত হবে। বাচ্চারা যদি ছোট থেকেই ধর্মীয় অনুশাসন, সততা, ন্যায়, আর উত্তম চরিত্রের শিক্ষা পায়, তবেই একটা সুস্থ সুন্দর প্রজন্ম গড়ে তোলা সম্ভব। যারা সমাজটাকে সুন্দর করবে, দেশকে সুন্দর করবে।
মুসলিম নারীদেরকে ধর্ম সম্বন্ধে জানার সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য বাংলাদেশের সব/বেশিরভাগ মসজিদেই মহিলাদের জন্য স্থান রাখা দরকার। পাশের বাসার ভাবীদের সাথে গীবত পরনিন্দা আর চোগলখুরির আসর বসানোর চাইতে তাদের মসজিদে যাওয়া ভালো না?
যারা বলতে চান যে, এই ফেতনার যুগে মহিলারা মসজিদে গেলে ফেতনা/বিশৃংখলা সৃষ্টি হবে, ফেতনা বৃদ্ধি পাবে, তারা বোকার স্বর্গে আছেন।
ভাইসাব, নারীদের মসজিদ থেকে দূরে রেখে কি ফেতনা বন্ধ করতে পারছেন? নাকি ফেতনা বাড়াচ্ছেন? নারীরা স্কুলে কলেজে ভার্সিটিতে বাজারে সবখানে যেতে পারবে, শুধু মসজিদে গেলেই ফেতনা?
দুনিয়ায় ফেতনা সৃষ্টির জন্য শয়তানের একটা প্রধান মাধ্যম হলো নারী। আর তাদেরকেই যদি ধর্মানুরাগী, ধর্মের বিধিবিধান অনুসারী না বানাতে পারেন, তাহলে তো ফেতনা বাড়তেই থাকবে। মহিলারা মসজিদে যাওয়া আসা করলেই বরং ফেতনা বন্ধ হবে। সমাজে বিশৃংখলা কমবে।
কবি বলেছিলেন, দ্বার বন্ধ করে দিয়ে ভ্রমটারে রুখি, সত্য বলে আমি তবে কোথা দিয়ে ঢুকি? আপনারা অন্ধকারের ভয়ে দরজা বন্ধ করতে চান, এদিকে আলো ঢোকার পথটাই যে বন্ধ করে দিয়েছেন সে খেয়াল নেই। মক্কা মদীনায় যে নারীরা মসজিদে নামাজ পড়ছে, সেখানে কি খুব ফেতনা হচ্ছে?
ইবনে উমর (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন- “নারীদেরকে তাদের মসজিদে যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করো না।”
আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) এর ছেলে বিলাল একবার বলেছিলেন- 'আল্লাহর কসম আমি তাদেরকে (নারীদেরকে) অবশ্যই নিষেধ করব।'
কথিত আছে যে, ইবনে উমর (রাঃ) নাকি ছেলের এমন কথায় ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে থাপ্পড়ই মেরে বসেছিলেন!!!!