এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৩

মেরুদন্ডহীন ডাক্তার সমাজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ছাত্র ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভাংচুর করেছে । এ নিয়ে ডাক্তারদের ব্যাপক ক্ষোভ, হাহুতাশ দেখতে পাচ্ছি । ভার্সিটির ছাত্ররা কী করে এই কাজ করতে পারলো তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ ।

আমি বলি , অবাক হচ্ছেন কেন ? তাদের এইটা করা উচিৎ হয় নাই , আমি এর প্রতিবাদ করছি । কিন্তু এটা তো সামান্য ঘটনা ।

মনে পড়ে – ঢাকা মেডিকেল কলেজেই রাজীব নামে একজনকে ছাদ থেকে ফেলে হত্যা করা হয়েছে , চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে আবিদ নামের একজন ছাত্রকে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে । চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট , রংপুরে মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের সবকিছু আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে । মামলা না থাকার পরেও পুলিশ দিয়ে জেলে পাঠানো হয়েছে । কতজনের হাতপা ভাঙ্গা হয়েছে তার কোন পরিসংখ্যান আমার হাতে নাই । কে করেছে এইসব ? মেডিকেলের ছাত্ররাই । সহপাঠিরাই ।

বলবেন, এগুলো রাজনৈতিক ব্যাপার স্যাপার । তাহলে এখন কেন হাউকাউ করছেন ?  আমি জানি, সব কিছু রাজনৈতিক ছিল না । যখন মেডিকেল স্টুডেন্টরা নিজেদের সহপাঠীকে খুন করে , হাত পা ভাঙ্গে, ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়, জেলে ঢুকায় , বই-পুস্তক জ্বালিয়ে দেয় তখন অন্য কেউ সামান্য ভাংচুর করবেনা এটা কীভাবে চিন্তা করেন ? ভার্সিটিতে তো এসব আরো ডালভাত । নিজেরা নিজেদের সম্মান করতে জানেননা, অন্যদের কাছে আশা করেন কোন মুখে ?

মুল্যবোধের পতন একদিক দিয়ে হয়না । একদিনে হয়না । যখন আমি খুন করে পার পেয়ে যাই, যখন আমার কথায় প্রিন্সিপাল-ভিসি ওঠবস করে, যখন বিএমএ নেতার বাড়িতে আমার জন্য বরাদ্দ থাকে ‘সম্মান’, তখন আপনি কোন বালছালের ‘ডাক্তার’ আমার কথা শুনবেননা ? অপারেশন থিয়েটার, আইসিইউ ভাইঙ্গা চুরমার কৈরা দিমুনাতো কি ?

যখন সামান্য প্রমোশনের জন্য মেট্রিক পাশ লোকের সামনে হাত কচলান , ভাই ভাই করে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন তখন মর্যাদাবোধ কই যায় ?

তাই বলছি, এইসব হাউকাউ বন্ধ করেন । আমি জানি , যারা আজকে ভাংচুর করেছে, পিটিয়েছে - কয়দিন পরে তাঁর সামনে গিয়া এই আপনিই বলবেন ‘ভাই, আমার বিষয়টা একটু...’ ।





শনিবার, ২৫ মে, ২০১৩

ডাঃ আব্দুল হক কিংকর্তব্যবিমূঢ়

ডাঃ আব্দুল হক কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলেন রহমত চাচার দিকে । তারপর উঠে গিয়ে ইঞ্জেকশনটা পুশ করে এলেন । এবং তার পরদিনই একটা সাইনবোর্ড বানিয়ে বাড়ির পাশে টাঙ্গিয়ে দিলেন । ডাঃ আব্দুল হক, এমবিবিএস, এফসিপিএস । সিদ্ধান্তটাও চূড়ান্ত করে ফেললেন, এখানেই প্র্যাকটিস করবেন নিয়মিত । রহমত চাচাদের জন্য ।

পড়াশোনার প্রয়োজনে ছোটবেলাতেই বাড়ি ছেড়েছিলেন দিনাজপুরের আব্দুল হকবাবা ছিলেন গরীব । নিজের চেষ্টাতেই এতদূর আসা । কীভাবে কী করেছেন ঠিকমত তাঁর বাবাও বলতে পারবেন না । পেছন ফিরে তাকাবার সুযোগ হয়নি কখনো । পড়াশোনা করেছেন , নিজের জন্য যতটুকু প্রয়োজন রোজগার করেছেন । বাবা মার খবর রেখেছেন, ব্যস । বিয়েটা পর্যন্ত করা হয়নি ।

এফসিপিএস পাস করার সংবাদ পেয়ে ভাবলেন , এবার কিছুদিন বাড়িতে কাটিয়ে আসি । বাড়িতে তিনি সকালবেলা আঙ্গিনায় বসে আছেন- এমন সময় পাশের পাড়ার রহমত চাচা এসে হাজির । তাঁর হাতে একটা কাগজ, একটা সিরিঞ্জ ও একটা ইঞ্জেকশন

রহমত চাচা বললেন, আব্দুল হক , তুই নাকি ডাক্তোর হচিস রে বাপই । আয় তো একনা হামার বাড়ি । এঞ্জেকশানটা একনা শরীলত ঢুকি দেতো বাবা । বড় ডাক্তোরে দিছে , রমানাথ ডাক্তোরতুই কি ওনার লেখা বুঝবার পারবু ?  এই দেখ পেসকিপশোন ।

আব্দুল হক সাহেব কাগজটি হাতে নিলেন ।

ডাঃ রমানাথ রায় , এল.এম..এফ, মেডিসিন ও সার্জারিতে বিশেষ অভিজ্ঞ ! (রংপুর মেডিকেলের ছাত্ররা বলে L.M.A.F মানে হল লোক মারার আসল ফন্দি । আসলে এটি মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য ৬ মাসের একটি ট্রেনিং । মাইন্ড করার কিছু নাই, আমার একজন চাচা আছেন L.M.A.F তবে তাঁর কোন সাইনবোর্ড বা নিজনামে ছাপানো প্যাড নাই, শিক্ষকতা করেন বলেই হয়তো)


আব্দুল হক সাহেব কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলেন । তিনি বোধহয় ডাঃ রমানাথের লেখা বুঝতে পারছিলেন না । 

শুক্রবার, ২৪ মে, ২০১৩

হাতুড়ে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন

আজ আপনাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছি এক মহান ‘ডাক্তারের’ সাথে আমার কী সৌভাগ্য যে এমন একজন মহান, সর্বগুণে গুণান্বিত, সর্বরোগের বিশেষজ্ঞ ‘ডাক্তারে’র একটি ‘প্রেসক্রিপশন’ আমি নিজ চোখে দেখতে পেলাম ! ধন্য, আমার জীবন ধন্য ! এমন একজন মহান ডাক্তারের সাথে যদি আমি আপনাদের পরিচয় করিয়ে না দেই, তাহলে বাঙালি জাতি হয়তো আমাকে ক্ষমা করবে না ! যুদ্ধাপরাধী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে মামলাও হয়ে যেতে পারে !!

ইনি, অত্যন্ত সম্ভ্রমের সাথে উচ্চারণ করছি তাঁর নামটি- জনাব ডাঃ(?!) ফরিদ আহমেদ । তাঁর ডিগ্রীগুলো দেখার আগে বুকে ফুঁ দিয়ে নেয়ার অনুরোধ করছি ।
শুরু করছি তাঁর ডিগ্রীসমূহ-
‘ই. কে. এম. এস. (ঢাকা)'; (!!!)
‘ডি. এম. এ. এ. এম. সি’ (!!!)
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল মেডিসিন , সার্জারি, নাক, কান, গলা, অর্থোপেডিক ও দন্ত বিভাগে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা !!!!!!!!


ও হ্যা , কেউ যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন সেকথা ভেবে এই মুহূর্তে আমি জানিয়ে দিচ্ছি তাঁর চেম্বারের ঠিকানা । তিনি নিয়মিত বসছেন - ‘খাজা মেডিকো, বটতলী বাজার, খাজা রোড, চট্টগ্রাম’ এই ঠিকানায় !

তো তাঁর আসল মহান কর্মটি , যেটা তাঁকে শীঘ্রই নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করবে-  আপনারা দেখছেন ছবিতে নিচের অংশে


Tab. Rolac  (10mg) , 2+2+2 (???)

ছাত্র ও নন মেডিকেল পাঠক (যদি থাকেন) তাদের জন্য একটু ব্যাখ্যা করছি- এটি একটি ব্যাথানাশক (Non opioid analgesic )  ওষুধ  যার নাম Ketorolac Tromethamine. সাধারণত সার্জিক্যাল কেসে  ব্যাথানাশক হিসেবে ব্যবহার করা হয় । By mouth এর Maximum daily dose – 40mg আর Injectable maximaum daily dose- 90mg আমাদের মহান ডাক্তার দিয়েছেন ট্যাবলেট ৬টি, মোট ৬০ মিলিগ্রাম ! আর এটি তুলনামূলক কম সেফ ড্রাগ, উচ্চমাত্রায় Ulcerant এবং Nephrotoxic ( কিডনির জন্য ক্ষতিকর ) । প্রেগনেন্সিতে Contraindicated.

সো, মাই ডিয়ার কমরেডস । লেট আস বি প্রাউড অফ হিম । এই মহান ডাক্তারের জন্য একটা স্যালুট যে দিতেই হয়, কী বলেন !  


Photo credit- Dr. Rifayet Opu

মঙ্গলবার, ২১ মে, ২০১৩

ডাক্তাররা কি মানুষ নয় ?

‘ডাক্তার’দের নিয়া আর পারা গেলনা । ওরা নাকি ‘ডাক্তার’ হত্যার বিচার চায় ! ‘ডাক্তার’ খুন হয়েছে তো কী হয়েছে ? এখানে তো ‘মানবাধিকার’ লংঘিত হয় নি ! ‘ডাক্তার’ খুন হয়েছে , মানুষ তো নয় !!

এদেশে সাংবাদিক খুন হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন , রাজনৈতিক নেতা খুন হলে ঘরে ঘরে চিরুণী অভিযান হয়, পরকীয়ায় লিপ্ত শিক্ষিকার চোখে আঘাত লাগলে প্রকৌশলী স্বামী গ্রেপ্তার হয় - জেলহাজতে খুন হয় , চিত্রপরিচালক নিহত হলে শোকের বন্যা বয়, কবি মারা গেলে তাঁর জন্য বিশেষ ক্রোড়পত্র বের হয় । তাঁরা সবাই ‘মানুষ’‘ডাক্তার’ তো ‘ডাক্তার’ই । ‘মানুষ’ তো নয় !

ভাবছেন , ‘ডাক্তার’রা  ‘মানুষ’ নয় একথা কে বলেছে ? কেন, আপনাদের নিশ্চয় স্মরণে থাকার কথা – একথা বলেছেন ‘মানবাধিকার’ কমিশনের ‘চেয়ারম্যান’ মিজানুর রহমান । তিনি বলেছিলেন – ডাক্তাররা ‘অমানুষ’ (প্রথম আলো, ২৭/০২/২০১২)মনে পড়েছে ? আশা করি আর কখনো মিজান সাহেবকে খুঁজবেন না । কারণ, তিনি ‘মানবাধিকার’ কমিশনের চেয়ারম্যান, ‘ডাক্তারাধিকার’ নয় । ‘অমানুষ’রা খুন হলে তাঁর কী ?

মিজান সাহেব কক্সবাজার ভ্রমণে গিয়ে হাসপাতালে ঢুকেছিলেন । হাসপাতালের ওয়ার্ড ছিল নোংরা । এই কারণে তিনি প্রশাসনকে নয়, ‘ডাক্তার’দের গালিগালাজ করেছিলেন- অমানুষ , রক্তচোষা বলে । ডাক্তাররা থাকতে কী করে ওয়ার্ড নোংরা থাকে ? ডাক্তাররা করে কী, তাঁরা ওয়ার্ড পরিষ্কার করতে পারেনা ? শুধু কলম আর স্টেথোস্কোপ ধরলেই হবে ? ঝাড়ু ধরতে হবে না ? তাঁর মত একজন ‘মানুষ’কে এই নোংরা ওয়ার্ডে ঢুকতে হলো । ছিঃ । আর ‘ডাক্তার’রা তো এখানে কাজ করবেই , ওরা কি ‘মানুষ’ নাকি ? ( কথা সত্য, ‘ডাক্তার’রা  ‘মানুষ’ হলে মিজান সাহেব নিশ্চয়ই ওখান থেকে গোঁফ নিয়ে ফিরতে পারতেন না !)

এদিকে হয়েছে কি, ‘ডাক্তার’রা গতকাল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ডাঃ শেজাদী হত্যার প্রতিবাদে ‘মানববন্ধন’ করেছে । এটাকে ‘মানব’ বন্ধন বলাটা আসলে ঠিক হয়নি । একচুয়ালি, ওটা ছিল ‘ডাক্তার’বন্ধন !

অনেক কথা বলে আপনাদের বিরক্ত করলাম ।  আসেন, এবার নচিকেতার গানের কলিটা ধরি-
‘ডাক্তার’ মানে সেতো ‘মানুষ’ নয়...
আমাদের চোখে সেতো .........(এখানে কী বসাবেন সেটা আপনাদের ওপরই ছেড়ে দিলাম । স্যরি । )


রবিবার, ১৯ মে, ২০১৩

বিদায় 49

আমার ব্যাচের বন্ধুরা গতকাল ইন্টার্ণশিপ শেষ করে বিদায় নিয়েছে । আমি কবে বিদায় নেব জানিনা । গত আট মাস ধরে হাসপাতাল-ক্যাম্পাসের বাইরে । ছাত্রলীগ আমাকে খুন করার জন্য রেডি হয়ে আছে । ইতোমধ্যে তিনটি খুন করে হাত ভালোই পাকিয়েছে তারা । আমাকে দিয়েই এক হালি পুরণ করার খায়েশ । হয়তো কোন একদিন তাদের এই খায়েশও পূরণ হবে । কয়েকদিন আগে তারা আমার এক নিরীহ বন্ধু কিবরিয়াকে হাসপাতাল থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে দলবেধে পিটিয়ে আধমরা করেছে । (আমি খুব ভীতু !! তাই জানের ভয়ে ক্যারিয়ার আপাতত স্টপ !)

যাহোক, বন্ধুরা তোমাদের আপাতত বিদায় । লোকে বলে- পৃথিবীটা গোল, আর আমরা এখানে পথ চলছি ক্রমাগত । তাই দেখা হয়ে যায় বারবার ...

দেখা হবে বন্ধু কারণে বা অকারণে
দেখা হবে বন্ধু চাপা কোন অভিমানে
দেখা হবে বন্ধু সাময়িক বৈরিতায়
অস্থির অপারগতায় ।
দেখা হবে বন্ধু নাটকীয় কোন বিনয়ী ভঙ্গিতে
দেখা হবে বন্ধু নিয়ত প্রতিদিন পাশ কেটে যাওয়ায়
সন্ধ্যার
হিমেল হাওয়ায়...

ভালো থাকিস সবাই ।



19-05-2013

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৩

'দেয়াল' থেকে নেয়া ইটের টুকরো

‘দেয়াল’ থেকে নেয়া কয়েকটি ইটের টুকরো-

১।
বঙ্গবন্ধু বিরক্ত গলায় বললেন , খন্দকার মোশতাককে আপনি চেনেন না । আমি চিনি ।
আমি যদি তাকে বলি , একমাস ঘাস খেতে হবে , সে দু’মাস ঘাস খাবে ।
রাধানাথ বাবু দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন , আমরা সবাই ঘাস খাওয়া শিখলে দেশের খাদ্যসমস্যার সমাধান হয়ে যেত ।

২।
স্যার বললেন , দুঃখজনক হলেও একটি সত্যি কথা শোনো । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা হলেন অমেরুদন্ডী প্রাণী । অমেরুদন্ডী প্রাণীদের স্রোতের সঙ্গে থাকতে হয় । কী বলছি বুঝতে পারছ ?

৩।
আমাদের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে পরিত্যক্ত এক বিশাল তিনতলা বাড়িতে দলবল নিয়ে থাকতেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি । রক্ষীবাহিনী আমাদের বের করে দেওয়ার পর সাহায্যের আশায় আমি তাঁর কাছেও গিয়েছিলাম । তিনি অতি তুচ্ছ বিষয়ে তাঁকে বিরক্ত করায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন । মহাবিপদে মানুষ খড়কুটো ধরে , আমি বঙ্গবীরকে ধরতে গিয়ে দেখি তিনি খড়কুটোর মতই ।

৪।
বেতারে বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে একতলার রক্ষীবাহিনীর সুবেদার পালিয়ে গেলেন । তাঁর দুই মেয়ে ( একজন গর্ভবতী ) ছুটে এল মা’র কাছে । তাদের আশ্রয় দিতে হবে । মা বললেন , তোমাদের আশ্রয় দিতে হবে কেন ? তোমরা কী করেছ ? তারা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো , খালাম্মা, এখন পাবলিক আমাদের মেরে ফেলবে ।
এই ছোট্ট ঘটনা থেকে রক্ষীবাহিনীর অত্যাচার ও তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ঘৃণাও টের পাওয়া যায় ।

৫।
বাংলাদেশের পাবলিক হলো, ব্রেইন ডিফেক্ট পাবলিক । যেকোন একজন যদি বলে – ধরো, ছানুরে ধরো । পাবলিক দৌড় দিয়া আমারে ধরবে ।

৬।
শফিকের ইচ্ছা করছে ক্যাপ্টেন সাহেবের পা চেপে ধরতে । জীবন রক্ষার জন্যে শুধু পা চেপে ধরা না , পা চাটাও যায় ।

৭।
একটা বয়সের পর বাবা-মা সন্তানদের ভয় পেতে শুরু করে

৮।
একটা পর্যায়ে খালেদ মোশাররফ বললেন , নতজানু হয়ে জীবন ভিক্ষা করে নিজেকে ছোট না করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়া ভালো ।

৯।
কর্ণেল তাহেরকে জড়িয়ে আবেগমথিত কন্ঠে জিয়া বললেন , বন্ধু ! তোমার এই উপকার আমি কোনদিনই ভুলবো না ।
জেনারেল জিয়া কর্নেল তাহেরের উপকার মনে রেখেছিলেন কিনা তা আমরা জানিনা , তবে তিনি যে কর্নেল তাহেরকে ফাসির দড়িতে ঝুলিয়েছিলেন তা আমরা জানি ।
দুঃখিনী বাংলাদেশের প্রদীপসম সন্তানেরা একে একে নিভে যেতে শুরু করল ।

১০।
 Everyone is paid back by his own coin. সবাইকে নিজের পয়সায় হিসাব দিতে হয় ।

১১।
পৃথিবীর সব দেশে সব সময় সব পরিস্থিতিতে ‘টাকা কথা বলে’ ।

১২।
আপনার সাহস দেখে ভাল লাগল ।
আমি মোটেই সাহসী মানুষ না । আমি ভীতু । তবে মাঝে মাঝে সময় ভীতুদের সাহসী করে তোলে ।

১৩।
জিয়া বললেন , হিটলারের ডেজার্ট ফক্স জেনারেল রোমেলের একটি কথা আমার খুব পছন্দ । জেনারেল রোমেল বলতেন, সবাই চোখ কান খোলা রাখে । আমি নাকও খোলা রাখি । গন্ধ শুঁকি । বিপদের গন্ধ শোঁকা যায় ।


হুমায়ুন আহমেদের শেষ উপন্যাস ‘দেয়াল’ থেকে ।  

বৃহস্পতিবার, ১৬ মে, ২০১৩

আম কুড়ানোর দিনগুলি

কালবৈশাখীর ভয়ংকর রুপের কথা বইয়ে পড়েছি, বাস্তবেও দেখেছিকিন্তু কেন যেন ঝড় উঠলেই আমার মনটাও নেচে উঠতো । একটা কারণ বলা যায় – আম কুড়ানো । ঝড়ের সময় সে এক প্রতিযোগিতা ছিল,  ভাইবোনদের সাথে পাল্লা দিয়ে আম কুড়ানো । একদিনে এক বস্তা আমও কুড়িয়েছি কোন কোন সময় । হাফপ্যান্টের দুই পকেটে আম নিয়ে খেয়েছি সারাদিন । নিজেদের গাছের আম, না কুড়ালেও চলে । কিন্তু শো শো বাতাস, মেঘের কড়কড় গর্জন, আর বিজলী চমকের মাঝে আম কুড়ানো - সে এক অপার্থিব আনন্দ !  

নয় বছর হলো বাড়ি ছেড়েছি । পুরনো বড় বড় আমের গাছগুলিও আর নেই । সেই বয়সও আর নেই । আমিও দিনদিন হয়ে উঠছি শহুরে একজন ।  তবু মনটা হাহাকার করে । এ জীবনে আর কখনো আম কুড়ানো হবেনা হয়তো । প্রচন্ড ঝড়ের সময় আম্মার সাথে বসে শতশত বার আয়াতুল কুরসী পড়া হবেনা হয়তো আর কোনদিন । জসীমউদ্দিনের সেই ছড়াটিও এখন পাঠ্য বইয়ে আছে কিনা জানিনা –

ঝড়ের দিনে মামার দেশে
আম কুড়াতে সুখ
পাকা জামের মধুর রসে
রঙ্গিন করি মুখ ।

গাছে উঠে নিজে হাতে পেড়ে আনা কিংবা কুড়ানো আমের রসে এখন আর মুখ রঙ্গিন করা হয়না । তাই মলিন মুখে হৃদয় নিংড়ে আসে -

দিনগুলি মোর সোনার খাঁচায়
রইলো না , রইলো না
সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি ......

সিজদা সাহুঃ ঈমামের ভুল !

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ বলে ডানপাশে সালাম ফেরালেন ইমাম সাহেব । এরপর তিনি আল্লাহু আকবার বলে যেমনি সিজদায় গেলেন , মুসল্লিরা নামাজ ছেড়ে উঠে গেলো । এই ইমামের হইছে কি, এক নামাজে কয়বার ভুল করে !

প্রথম ভুলটা ছিল, ইমাম সাহেব আসরের দুই রাকাত নামাজের পরে বৈঠকে না বসে প্রায় উঠেই পড়ছিলেন , তারপর মনে পরাতে আবার বসে যান । সেইজন্য তিনি চার রাকাত শেষে সিজদায়ে সাহু করার জন্য সালাম ফিরিয়ে সিজদায় যান । আমরা মুর্খ মুসল্লিরা এইটাকেও ভুল মনে করে নামাজ ছেড়ে চম্পট !


আমার দোষ নাই, তখন বয়স কম আছিলো তো । সিজদা সাহু বিষয়টা আমিও জানতাম না । 

মঙ্গলবার, ১৪ মে, ২০১৩

চমেকের মাঠে ফুটবল খেলার দিনগুলি

আকাশে মেঘ জমেছে । বৃষ্টি নামবে । খবর পেলেই আর রক্ষা ছিল না । ক্লাস, আইটেম সবকিছু বাদ দিয়ে ফুটবল নিয়ে এক দৌড়ে মাঠে ।  আকাশে বিজলী চমক , মেঘের গর্জন আর আমাদের কাদায় লুটোপুটি হয়ে খেলা । আমি, নাবিল, তোফা ভাই , জুয়েল । অন্তত এই চারজন- খেলার ব্যাপারে আপোষহীন ।

তোফা ভাই আর জুয়েলের শৈল্পিক খেলা , নাবিল আর মিজানের ক্রেজি খেলা । নেসার ভাই, সবুজ আর মিসবাহর শক্ত ডিফেন্স । সোহান আর সানাউল্লার গোল দেয়ার নিরন্তর চেষ্টা । বল ধরে নিজের গোলবারে ঢুকিয়ে দিতে সিরাজের অপেক্ষা

ডাক দেয়া মাত্রই ছুটে এসেছেন -অপু ভাই । গোলবার নয়, বল নিয়ে কর্ণারের দিকে ছুটে যাওয়াই ছিল যার কাজ !

আনন ভাই থাকা মানে নিশ্চিত ঝগড়া !

পানির খেলোয়াড় রাজী !

সাইফুলের ধাক্কা দিয়ে বল নেয়ার চেষ্টা !  

আউয়াল ভাই , জয়নাল , সোহেল, ইয়াসিন , আকবর, সাইফ, আনোয়ার, জাহেদ, শরীফ, জামান, মুন্না, পিয়াস, আসিফ, ফয়সাল, হাবিব, মামুন, নুরু, রাশেদ, শিমুল, মাসুদ, শাফায়াত......।

আজও আকাশে মেঘ জমে । ভবিষ্যতেও জমবে । বৃষ্টি নামবে অঝোর ধারায় । বৃষ্টিতে ধুয়ে যাবে সময় । যেমন করে ধুয়ে গেছে আমার সোনালী দিনগুলো । হয়তো তোমাদের সাথে আর খেলতে পারবো না আগের মত ।  ফুরিয়ে এসেছে জীবনের এই অধ্যায়ের জন্য বরাদ্দ করা সময় ।

চলো , আরেকবার একসাথে খেলি ।
বৃষ্টিতে ভিজে আরেকবার গলা মিলাই –

বন্ধু তোমায় এ গান শোনাবো বিকেল বেলায়
আরেকবার যদি তোমাদের দলে নাও খেলায়...

রবিবার, ১২ মে, ২০১৩

ধর্মনিরপেক্ষতার দলিল ব্যবচ্ছেদ

ধর্মনিরপেক্ষতার নামে ইসলাম বিদ্বেষীদের কুরআনের জ্ঞান কতটুকু ? তারা কুরআন শরীফ থেকে একটি আয়াত জানে । সেটি হলো সুরা কাফিরুনের আয়াত – ‘লাকুম দ্বীনুকুম অয়ালিয়া দ্বীন’ ।
তারা কথায় কথায় এই আয়াতের উদ্ধৃতি দেয় । এটা নাকি ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে দলিল ! আমরা দেখি তাফসীরে ঐ আয়াতের কী ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে ।

সুরা কাফিরুনের প্রেক্ষাপটঃ

মক্কায় এমন এক যুগ ছিল যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসলামী দাওয়াতের বিরুদ্ধে কুরাইশদের মুশরিক সমাজে প্রচণ্ড বিরোধিতা শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু রসূলুল্লাহ (সা) কে কোন না কোন প্রকার আপোস করতে উদ্বুদ্ধ করা যাবে বলে কুরাইশ সরদাররা মনে করতো। এ ব্যাপারে তারা তখনো নিরাশ হয়নি। এ জন্য তারা মাঝে মধ্যে তাঁর কাছে আপোষের ফরমূলা নিয়ে হাযির হতো। তিনি তার মধ্য থেকে কোন একটি প্রস্তাব মেনে নিলেই তাঁর ও তাদের মধ্যকার ঝগড়া মিটে যাবে বলে তারা মনে করতো । হাদীসে এ সম্পর্কে বিভিন্ন ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেছেন , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললো : আমরা আপনাকে এত বেশী পরিমাণ ধন- সম্পদ দেবো যার ফলে আপনি মক্কার সবচেয়ে ধনাঢ্য ব্যক্তি হয়ে যাবেন। যে মেয়েটিকে আপনি পছন্দ করবেন তার সাথে আপনার বিয়ে দিয়ে দেবো। আমরা আপনার পিছনে চলতে প্রস্তুত । আপনি শুধু আমাদের একটি কথা মেনে নেবেন --- আমাদের উপাস্যদের নিন্দা করা থেকে বিরত থাকবেন। এ প্রস্তাবটি আপনার পছন্দ না হলে আমরা আর একটি প্রস্তাব পেশ করছি। এ প্রস্তাবে আপনার লাভ এবং আমাদেরও লাভ। রসূলুল্লাহ (সা) জিজ্ঞেস করেন , সেটি কি ? এক বছর আপনি আমাদের উপাস্যদের ইবাদাত করবেন এবং আমরাও এক বছর আপনার উপাস্যদের ইবাদাত করবো। রসূলুল্লাহ (সা) বলেন , থামো ! আমি দেখি আমার রবের পক্ষ থেকে কি হুকুম আসে। * এর ফলে অহী নাযিল হয় :
 “ ওদের বলে দাও , হে মূর্খের দল ! তোমরা কি আমাকে বলছো , আল্লাহ ছাড়া আমি আর কারো ইবাদাত করবো ? ” ইবনে আব্বাসের (রা) অন্য একটি রেওয়ায়াতে বলা হয়েছে , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললো :“ হে মুহাম্মাদ ! যদি তুমি আমাদের উপাস্য মুর্তিগুলোকে চুম্বন করো তাহলে আমরা তোমার মাবুদের ইবাদাত করবো। ” একথায় এই সূরাটি নাযিল হয়। ( আবদ ইবনে হুমাইদ )
এর মানে  এই যে , রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ প্রস্তাবটিকে কোন পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য তো দূরের কথা প্রণিধানযোগ্য মনে করেছিলেন । এবং  ( নাউযুবিল্লাহ ) কাফেরদেরকে এ আশায় এ জবাব দিয়েছিলেন যে , হয়তো আল্লাহর পক্ষ থেকে এটি গৃহীত হয়ে যাবে । বরং একথাটি আসলে ঠিক এমন পর্যায়ের ছিল যেমন কোন অধীনস্থ অফিসারের সামনে কোন অবাস্তব দাবী পেশ করা হয় এবং তিনি জানেন সরকারের পক্ষে এ ধরনের দাবী গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। কিন্তু এ সত্ত্বেও তিনি নিজে স্পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করার পরিবর্তে দাবী পেশকরীদেরকে বলেন , আমি আপনাদের আবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি , সেখান থেকে যা কিছু জবাব আসবে তা আপনাদের জানিয়ে দেবো। এর ফলে যে প্রতিক্রিয়াটি হয় সেটা হচ্ছে এই যে , অধীনস্থ অফিসার নিজে অস্বীকার করলে লোকেরা বরাবর পীড়াপীড়ি করতে ও চাপ দিতেই থাকবে , কিন্তু যদি তিনি জানিয়ে দেন , ওপর থেকে কর্তৃপক্ষের যে জবাব এসেছে তা তোমাদের দাবীর বিরোধী তাহলে লোকেরা হতাশ হয়ে পড়বে।

আবুল বখতরীর আযাদকৃত গোলাম সাঈদ ইবনে মীনা রেওয়ায়াত করেন , অলীদ ইবনে মুগীরাহ , আস ইবনে ওয়ায়েল , আসওয়াদ ইবনুল মুত্তালিব ও উমাইয়া ইবনে খালফ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাত করে বলে : “ হে মুহাম্মাদ ! এসো আমরা তোমার মাবুদের ইবাদাত করি এবং তুমি আমাদের মাবুদদের ইবাদাত করো। আর আমাদের সমস্ত কাজে আমরা তোমাকে শরীক করে নিই। তুমি যা এনেছো তা যদি আমাদের কাছে যা আছে তার চেয়ে ভালো হয় তাহলে আমরা তোমার সাথে তাতে শরীক হবো এবং তার মধ্য থেকে নিজেদের অংশ নিয়ে নেবো। আর আমাদের কাছে যা আছে তা যদি তোমার কাছে যা আছে তার চাইতে ভালো হয় , তাহলে তুমি আমাদের সাথে তাতে শরীক হবে এবং তা থেকে নিজের অংশ নেবে। ” একথায় মহান আল্লাহ এ আল কাফেরুন সূরাটি নাযিল করেন। ( ইবনে জারীর ও ইবনে আবী হাতেম । ইবনে হিশামও সীরাতে এ ঘটনাটি উদ্ধৃত করেছেন। )
ওহাব ইবনে মুনাব্বাহ রেওয়ায়াত করেন , কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলে , যদি আপনি পছন্দ করেন তাহলে এই বছর আমরা আপনার দীনে প্রবেশ করবো এবং এক বছর আপনি আমাদের দীনে প্রবেশ করবেন। ( আবদ ইবনে হুমাইদ ও ইবনে আবী হাতেম ।)
এসব রেওয়ায়াত থেকে জানা যায় , একবার একই মজলিসে নয় বরং বহুবার বহু মজলিসে কুরাইশরা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে এ প্রস্তাব পেশ করেছিল। এ কারণে একবার সুস্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন জবাব দিয়ে তাদের এ আশাকে চিরতরে নির্মূল করে দেয়ার প্রয়োজন ছিল। কিছু দাও আর কিছু নাও -- এ নীতির ভিত্তিতে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দীনের ব্যাপরে তাদের কোন চুক্তি ও আপোশ করবেন না , একথা তাদেরকে জানিয়ে দেয়া একান্ত জরুরী ছিল।

প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণঃ

সূরাটি উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে বিশ্লেষণ করলে জানা যাবে , আসলে ধর্মীয় উদারতার উপদেশ দেবার জন্য সূরটি নাযিল হয়নি। যেমন আজকাল কেউ কেউ মনে করে থাকেন । বরং কাফেরদের ধর্ম , পূজা অনুষ্ঠান ও তাদের উপাস্যদের থেকে পুরোপুরি দায়িত্ব মুক্তি এবং তার প্রতি অনীহা , অসন্তুষ্টি ও সম্পর্কহীনতার ঘোষনা দেয়া আর এই সাথে কুফরী ধর্ম ও দীন ইসলাম পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা এবং তাদের উভয়ের মিলে যাবার কোন সম্ভাবনাই নেই একথা ঘোষণা করে দেয়ার জন্যই এ সূরাটি নাযিল হয়েছিল। যদিও শুরুতে একথাটি কুরাইশ বংশীয় কাফেরদেরকে সম্বোধন করে তাদের আপোষ ফরমূলার জবাবে বলা হয়েছিল কিন্তু এটি কেবল এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং একথাগুলোকে কুরআনের অন্তর্ভূক্ত করে সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে কিয়ামত পর্যন্ত এ শিক্ষা দেয়া হয়েছে, যে কুফরী ধর্ম দুনিয়ার যেখানেই যে আকৃতিতে আছে তার সাথে সম্পর্কহীনতা ও দায়িত্ব মুক্তির ঘোষণা  তাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে প্রকাশ করা উচিত। কোন প্রকার দ্বিধা - দ্বন্দ্ব ছাড়াই তাদের একথা জানিয়ে দেয়া উচিত যে ,দীনের ব্যাপারে তারা কাফেরদের সাথে কোন প্রকার আপোস বা উদারনীতির আশ্রয় গ্রহণ করতে প্রস্তুত নয় । এ কারণেই যাদের কথার জবাবে এ সূরাটি নাযিল হয়েছিল তারা মরে শেষ হয়ে যাওয়ার পরও এটি পঠিত হতে থেকেছে। যারা এর নাযিলের সময় কাফের ও মুশরিক ছিল তারা মুসলমান হয়ে যাওয়ার পরও এটি পড়তে থেকেছে। আবার তাদের দুনিয়ার বুক থেকে বিদায় নেবার শত শত বছর পর আজো মুসলমানরা এটি পড়ে চলেছে। কারণ কুফরী ও কাফেরের কার্যকলাপ থেকে সম্পর্কহীনতা ও অসন্তুষ্টি ঈমানের চিরন্তন দাবী ও চাহিদা । 

ঐ আয়াতের ব্যাখ্যাঃ

‘তোমাদের দীন তোমাদের জন্য এবং আমার দীন আমার জন্য ৷’


অর্থাৎ আমার দীন আলাদা এবং তোমাদের দীন আলাদা । আমি তোমাদের মাবুদদের পূজা - উপাসনা - বন্দেগী করি না এবং তোমরা ও আমার মাবুদের পূজা - উপাসনা করো না। আমি তোমাদের মাবুদদের বন্দেগী করতে পারি না এবং তোমরা আমার মাবুদের বন্দেগী করতে প্রস্তুত নও। তাই আমার ও তোমার পথ কখনো এক হতে পারে না। এটা কাফেরদের প্রতি উদারনীতি নয় বরং তারা কাফের থাকা অবস্থায় চিরকালের জন্য তাদের ব্যাপারে দায়মুক্তি , সম্পর্কহীনতা ও অসন্তোষের ঘোষণাবাণী । আর আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি যারা ঈমান এনেছে তারা দীনের ব্যাপারে কখনো তাদের সাথে সমঝোতা করবে না ------ এ ব্যাপারে তাদেরকে সর্বশেষ ও চূড়ান্তভাবে নিরাশ করে দেয়াই এর উদ্দেশ্য। এ সূরার পরে নাযিল হওয়া কয়েকটি মক্কী সূরাতে পর পর এ দায়মুক্তি , সম্পর্কহীনতা ও অসন্তোষ প্রকাশের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সূরা ইউনুসে বলা হয়েছে : " এরা যদি তোমাকে মিথ্যা বলে তাহলে বলে দাও , আমার কাজ আমার জন্য এবং তোমাদের কাজ তোমাদের জন্য । আমি যা কিছু করি তার দায় - দায়িত্ব থেকে তোমরা মুক্ত। " ( ৪১ আয়াত ) এ সূরাতেই তারপর সামনের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলা হয়েছে। : " হে নবী ! বলে দাও , হে লোকেরা , যদি তোমরা আমার দীনের ব্যাপারে ( এখানে ) কোন রকম সন্দেহের মধ্যে থাকো তাহলে ( শুনে রাখো) , আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদের বন্দেগী করছো আমি তাদের বন্দেগী করি না বরং আমি শুধুমাত্র সেই আল্লাহর বন্দেগী করি যার কর্তৃত্বাধীনে রয়েছে তোমাদের মৃত্যু। " ( ১০৪ আয়াত ) সূরা আশ শু'আরায় বরেছেন : " হে নবী ! যদি এরা এখন তোমার কথা না মানে তাহলে বলে দাও , তোমরা যা কিছু করছো তা থেকে আমি দায়মুক্ত।" (২১৬ আয়াত ) সূরা সাবায় বলেছেন : এদেরকে বলো , আমাদের ত্রুটির জন্য তোমরা জিজ্ঞাসিত হবে না এবং তোমরা যা কিছু করে যাচ্ছো সে জন্য আমাদের জবাবদিহি করতে হবে না। বলো , আমাদের রব একই সময় আমাদের ও তোমাদের একত্র করবেন এবং আমাদের মধ্যে ঠিকমতো ফায়সালা করবেন।" ( ২৫-২৬ আয়াত ) সূরা যুমার - এ বলেছেন : " এদেরকে বলো , হে আমার জাতির লোকেরা ! তোমরা নিজেদের জায়গায় কাজ করে যাও। আমি আমার কাজ করে যেতে থাকবো । শীঘ্রই তোমরা জানতে পারবে কার ওপর আসছে লাঞ্ছনাকর আযাব এবং কে এমন শাস্তি লাভ করছে যা অটল। " (৩৯-৪০ আয়াত ) আবার মদীনা তাইয়েবার সমস্ত মুসলমানকে ও এই একই শিক্ষা দেয়া হয় । তাদেরকে বলা হয় : তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সাথীদের মধ্যে রয়েছে একটি ভালো আদর্শ । ( সেটি হচ্ছে :) তারা নিজেদের জাতিকে পরিষ্কার বলে দিয়েছে , আমরা তোমাদের থেকে ও তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যে সব মাবুদদের পূজা করো তাদের থেকে পুরোপুরি সম্পর্কহীন । আমরা তোমাদের কুফরী করি ও অস্বীকৃতি জানাই এবং যতক্ষণ তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান না আনো ততক্ষণ আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরকালীন শক্রতা সৃষ্টি হয়ে গেছে । " (আল মুমতাহিনা ৪ আয়াত )

কুরআন মজীদের একের পর এক এসব সুস্পষ্ট বক্তব্যের পর তোমরা তোমাদের ধর্ম মেনে চলো এবং আমাকে আমার ধর্ম মেনে চলতে দাও -"লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন "- এর এ ধরনের কোন অর্থের অবকাশই থাকে না । বরং সূরা যুমার - এ যে কথা বলা হয়েছে , একে ঠিক সেই পর্যায়ে রাখা যায় যেখানে বলা হয়েছে : "হে নবী ! এদেরকে বলে দাও , আমি তো আমার দীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে তাঁরই ইবাদাত করবো , তোমরা তাঁকে বাদ দিয়ে যার যার বন্দেগী করতে চাও করতে থাক না কেন ।" ( ১৪ আয়াত )
 ( তাফহীমুল কুরআন, সুরা কাফিরুনের তাফসির থেকে । )

মা’রেফুল কুরআনে ‘লাকুম দ্বীনুকুম অয়ালিয়া দ্বীন’ এর তাফসীরে বলা হয়েছে – ‘এর অর্থ এই নয় যে , কুফর করার অনুমতি বা কুফরে বহাল থাকার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে বরং এর সারমর্ম হলো ‘যেমন কর্ম তেমন ফল’ । ( মা’রেফুল কুরআন , অষ্টম খন্ড , পৃ- ৮৮২ )

তাফসীরে ইবনে কাসীরে বলা হয়েছে – ‘এই মুবারক সুরায় আল্লাহ তায়ালা মুশরিকদের আমলের প্রতি তাঁর অসন্তুষ্টির কথা ঘোষণা করেছেন এবং একনিষ্ঠভাবে তারই ইবাদাত করার নির্দেশ দিয়েছেন’ ।
( তাফসীরে ইবনে কাসীর, ১৮ খন্ড, পৃ-৩০১ )

আমরা কার ব্যাখ্যা গ্রহণ করবো ? আলেমদের করা তাফসীরের নাকি ধর্মনিরপেক্ষতার ধ্বজাধারী মুর্খদের ? এরপরেও যদি কেউ এই আয়াতকে ধর্মনিরপেক্ষতার দলিল হিসেবে তুলে ধরতে আসে , তাহলে তার জন্য আফসোস করা ছাড়া আর কী করার থাকবে ?


রবিবার, ৫ মে, ২০১৩

মানুষ এমন এক প্রাণী

মানুষ এমন এক প্রাণী যার ভেতর সবধরণের বৈশিষ্ট্য আছে । 
মানুষ হতে পারে এতটা নৃশংস যা অন্য কোন প্রাণি হতে পারবে না । মানুষ এতটা ভালোবাসতে পারে যা অন্য কোন প্রাণী পারবে না । মানুষের নৃশংসতা দেখে মানুষের চোখ ভিজে যায় । মানুষের ভালোবাসা পেয়ে মানুষের চোখে অশ্রু নামে । 

মানুষ বিনা কারণে আরেকজন মানুষের জীবন বিনষ্ট করে । মানুষ বিনা কারণেই আরেকজন মানুষের জীবন রক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করে । একজন মানুষ যাকে ভালোবাসে তার জন্য যেমন নিজের জীবন দিয়ে দিতে পারে , যে তাকে ভালোবাসে তার জন্যও জীবন দিতে দ্বিধা করে না । নিজের জন্য অন্যের জীবন হরণ করে , আবার অন্যের জন্য নিজের জীবনের কথা ভাবে না ।

মানুষ । একই সাথে সবধরনের বিপরীতমুখী বৈশিষ্ট্য ধারণ করে । যে মানুষ কাউকে ভালোবাসে , সেই একই মানুষ অন্য কাউকে ঘৃণা করে ! যে মানুষ খুব কঠোর তাকেই দেখা যায় কারো সাথে খুবই কোমল ......।

মানুষ আসলেই আল্লাহ তায়ালার সেরা সৃষ্টি । আশরাফুল মাখলুকাত । এজন্যই হয়তো মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ফেরেশতাদের বলেছিলেন ‘আমি যা জানি তোমরা তা জানো না’ । 


বেদুইন স্বপ্ন

মাঝে মাঝে আমি 
শুন্য চোখে তাকিয়ে থাকি 
তুমি জানো কীভাবে শুন্য চোখে তাকাতে হয় ? 
ও তুমি বুঝবে না । পাঁচ তলার জানালা থেকে 
শুন্য চোখে তাকানো যায় না । 

আজ আমার চোখে কোন স্বপ্ন নেই । 
স্বপ্নগুলো 'বেদুইন' হয়ে গেছে । 
আমার হৃদয়ে এখন ভালবাসা নেই । 
ভালবাসা হয়ে গেছে 'হিপ্পি' । 
আর আমি হয়ে গেছি 'বাউণ্ডুলে' ।

মধ্য বৈশাখের মধ্যাহ্ন ।
বালুচর ধুধু করছে ।
মাটি ফেটে চৌচির ।
আকাশে গনগনে সূর্য ।
পাকুড় গাছের নিচে গামছার ওপর ভূপাতিত আমি -
তাকিয়ে আছি শুন্য চোখে ।
কালবৈশাখির অপেক্ষায় ।

গন্তব্যের অচেনা পথে কী ভেবে হঠাত্‍
থমকে দাঁড়িয়েছে এখানে জীবন ।
এবার উড়াল দেবো কালবৈশাখির ডানায় !