গত কয়েকদিন আগে ফেসবুকে ইনবক্সে কয়েকটি মেসেজ পেলাম । মুলত
গালিগালাজ ও হুমকি সম্বলিত মেসেজ । লিখেছেন Devilz dance । বাংলা অর্থ
শয়তানের নৃত্য । তার অভিযোগ , আমি আবিদের হত্যাকারীদের নিয়ে প্রচারণা
চালাচ্ছি । এজন্য আমার অবস্থা ভালো হবেনা । কৌতুহলবশত প্রোফাইল চেক করলাম ।
পড়ছেন Chittagong medical college এ । এবং Hometown লেখা মানিকগন্জ । দেখে
আশ্বস্ত হলাম । এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে শয়তানের নৃত্য খুবই স্বাভাবিক
। শয়তানের উদ্দাম নৃত্যের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে ২০তম বিডিএস এর
আবিদুর রহমানকে । এর আগেও শয়তানের নৃত্যের শিকার হয়েছে আরো অনেকেই ।
Devilz
dance এর ভাষাই বলে দেয় সে খুনি কেউ । কিন্তু তার ভুলটা অন্য জায়গায় । সে
ভেবেছে ছাত্রশিবিরের সভাপতিকে গালিগালাজ করে মনের ঝাল মেটাবে । হয়তো আমি ভয়
পেতে পারি সে আশাও করতে পারে সে ! কিন্তু সে জানেনা আমি আসলে মৃত্যুর ভয়
পেতে জানিনা ,কারণ আমি একবার মরে গিয়েছিলাম বাতিলের নির্যাতনে । এখন আমার
জীবনের Extended period চলছে ! আমার সাথে কথা বললে এর প্রমাণ পেতে পারে
যেকেউ
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আমি আশাবাদী নই । অনেকেই
রাজনীতিকে পেশা মনে করে । লেখেও । রাজনীতি একজন মানুষের পেশা হয় কি করে ?
রাজনীতির সাথে এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি শব্দ হলো লাশ । আমি দুভাগে ভাগ
করেছি । লাশ বানানোর রাজনীতি এবং লাশ নিয়ে রাজনীতি । তুলনামুলকভাবে লাশ
বানানোর চেয়ে লাশ নিয়ে রাজনীতি ভালো । লাশ বানানোর রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে
মেরে লাশ বানানো হয় ভয় তৈরি করার জন্য । দমন করার জন্য । যেমনটা হয়েছে
আমাদের এখানে । আবিদকে হত্যার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে
ছাত্রদলের নাম মুখে আনলে লাশ হতে হবে । লাশ নিয়ে যে রাজনীতি সেটা হয় মুলত
দোষীদের বিচার দাবি করে এবং জনগনের সহানুভুতি আদায়ের প্রচেষ্টায় । দোষীদের
বিচার দাবি করা অবশ্যই যৌক্তিক এবং দরকারি । কিন্তু তবুও লাশ নিয়ে 'রাজনীতি
করছে' কথাটা নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয় । এবং দোষীরা এথেকে সুবিধা পেয়ে
থাকে । আমাদের জনগনের কাছে কাউকে মেরে লাশ বানানো এবং সেই লাশ নিয়ে মিছিল
করা দুটোই খারাপ । কেউ কেউ এমন কথাও বলেন 'মেরেছে বুঝলাম । ছি ছি লাশটা
নিয়েও রাজনীতি করতে হবে কেন বুঝিনা !'
অবাক ব্যাপার । মেরেছে সেটা
বোঝেন , রাজনীতি কেন এটা বোঝেন না । কাউকে মেরে ফেলার চেয়ে লাশটা সামনে
রেখে মিছিল করা বেশি খারাপ ? এ কেমন সচেতনতা ? এ কেমন মানসিকতা ?
আবিদ হত্যার দায় কার ?
এই
প্রশ্নটা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর । আমি বলি , এর আসল দায় তাদের যারা তাকে
নির্মমভাবে পিটিয়েছে শুধুমাত্র ভিন্ন মতাবলম্বনের জন্য । দায় কম নয় আমাদের
অধ্যক্ষ মহোদয়ের । কখনো কখনো আমার মনে হয় প্রকৃত দায় তারই । ক্যাম্পাসে
ছাত্রছাত্রী নির্যাতন এটা প্রথম নয় । অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি সবকিছু জানতেন ।
তবু কখনো দোষীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি তিনি । বরং অভিযোগ আছে , তিনি
বরং ভুক্তভোগীদের নানাভাবে জেরা করতেন । থানায় অভিযোগ দিতে বলতেন । যার
ফলাফল হলো আবিদের নির্মমভাবে খুন হওয়া ।
দায় আছে প্রতিটি
ছাত্রছাত্রীর । কারণ , কেউ কখনো প্রতিবাদ করেনি । সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত
থেকেছে । কখনোবা রাজনৈতিক বলে পাশ কাটিয়ে গেছে । ফলে নির্যাতনের মাত্রা
বেড়েছে দিনদিন । ফলাফল- নির্যাতনের শেষ স্তর , মৃত্যু ।
ব্যক্তি
হিসেবে আমার এবং সংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবিরেরও পরোক্ষ দায় আছে বৈকি।
ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না হওয়ার স্বার্থে ছাত্রশিবির সবসময়
ধৈর্যধারণ করেছে । যখন ৫০তম ব্যাচের বাপ্পাকে নির্যাতন করা হয়েছে তখন
ছাত্রশিবির চুপ থেকেছে । চুপ থেকেছে ৫১ তম ব্যাচের শাকিল ,জামান , সবুজ
,নাবিল এদের ওপর নির্যাতনের সময় । চুপ থেকেছে ৫২ তম ব্যাচের শিমুল ,শাফায়াত
কে নির্যাতনের সময় । ৫৩ তম ব্যাচের আরশাদ ,কাফী কে নির্যাতনের সময় ।
ক্যাম্পাসে
ছাত্রশিবির একটি বৃহত্ সংঘবদ্ধ ছাত্রসংগঠন । তারা যখন ধৈর্যধারন করেছে
সেটা অত্যাচারীদের নিঃসন্দেহে আরও বেপরোয়া করেছে । আর তার চুড়ান্ত ফল হলো
একজনের মৃত্যু ।
বিগত সংসদের একটা দাবি ছিল যে তাদের সময়ে নাকি কলেজ
বন্ধ হয়নি । এর কৃতিত্ব নাকি তাদের ! তারা ছাত্রসংসদ ভবনে ছাত্রশিবিরের যে
পরিমাণ নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছে , ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসের শান্তি
শৃংখলার স্বার্থে ধৈর্যধারণ না করলে কলেজ কয়েকবার বন্ধ হয়ে যেত ।
নৈতিক অবস্থান ও মানবতাবোধ
'
وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ
بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ
الْمُفْلِحُونَ (آل عمران:104)
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা
উচিত, যারা সৎকাজের প্রতি আহ্বান করবে, নির্দেশ করবে ভাল কাজের এবং বারণ
করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই হল সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান:১০৪)
يَا
بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ
الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ
الْأُمُورِ (لقمان:17)
হে বৎস ! সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও। মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর, এটিই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লোকমান : ১৭)
একজন
মুসলিম হিসেবে আমি কুরআনের এই আদর্শে বিশ্বাস করি । এবং আমার নৈতিক
অবস্থান এটাই । যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাই । শুধু আবিদ হত্যা নয় ,
ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মীও যদি অন্যায়ভাবে কারও আক্রমণের শিকার হয় তারও
প্রতিবাদ জানাবো । আমার মানবতাবোধ সবার জন্যে সমান । একচোখা দলান্ধ নয় ।
আমার
একজন ক্লাসমেট যিনি ছাত্রলীগ নেতা এবং আবিদ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ,
ফেসবুকে লিখেছেন, আমি নাকি আবিদ হত্যাকে কেন্দ্র করে ছাত্রছাত্রীদের
ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছি !!
কেন তিনি
আমাকে অভিযুক্ত করতে চাইছেন ? ছাত্রশিবিরের সভাপতিকে টেনে এনে এই ইস্যুকে
রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করে ফায়দা লোটাই কি মূল উদ্দেশ্য নয় ?
ঠিক এ
কারণেই আমি আবিদ হত্যার বিষয়ে তাত্ক্ষণিক প্রতিবাদ জানানোর পর চুপ ছিলাম ।
আমি জানি ,আমার প্রতিবাদকে 'লাশ নিয়ে রাজনীতি' বলে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে ।
(হয়তো বলা হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র !! ) এবং এতে অনেক
'সচেতন(!)' ছাত্রছাত্রী জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করবে । ফলে দোষীদের বিচারের
দাবিতে CMCan দের মুল আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হতে পারে । এবং
অপরাধীরা সে চেষ্টাই করছে ।
আবিদ হত্যা সহ সকল নির্যাতনের প্রতিবাদ
জানাই । দোষীদের বিচার দাবি করছি । এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে যেকোন আন্দোলনে
কেউ ডাক দিলে যেকোন শক্তির বিপক্ষে আমি সেনাপতি কিংবা সৈনিকের কাতারে থাকবো
, কথা দিচ্ছি ।
শুক্রবার, নভেম্বর 11, 2011