এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১১

শাশ্বত যুলফিকার

এইসব কষ্ট আমাদের খুব চেনা
আপনজনের মত
হাজারো বছর ধরে ওরা
আমাদের বুকে বিধে আছে ।
আমরা চলি ওদের, ওরা চলে আমাদের
নিত্যসঙ্গী হয়ে ।
এইসব পথঘাট আমাদের খুব চেনা
আমরা এই পথে হাঁটছি সৃষ্টির শুরু থেকে
এই পথ আর আমাদের স্রষ্টাতো একই ।

আমরা চিনি তায়েফ
আমরা ছিলাম শিয়াবে আবি তালিবে
বদরে ওহুদে খন্দক হুনায়েন বালাকোটে
আমরা ছিলাম বাঁশের কেল্লায়
এইসব কষ্ট আমাদের খুব চেনা ।

আমরা চিনি আমাদের রক্ত
এই মাটি জানে আমাদের রক্তের স্বাদ
কোটি বছর ধরে
এই মাটি আর আমরা করি এক্ই স্রষ্টার ইবাদাত ।

আর ওরা, বেশ্যার গর্ভে যাদের জন্ম
ওরাও চেনে আমাদের-আমরা ওদের
হাজারো বছর ধরে
আমাদের সাথেই তো ওদের নিত্য সংঘাত ।

এইসব কষ্ট আমাদের খুব চেনা, হাজারো বছর ধরে ।
এই পল্টন লালদিঘী চেনে আমাদের
অপেক্ষা কর, কসম সময়ের
আবার দেখা হবে হয়তো বদরে নয়
বায়তুল মোকাররম আন্দরকিল্লায়
পল্টনে লালদিঘীতে কিংবা
নতুন কোন দুর্দান্ত পথের ওপর ।

এইসব কষ্ট আমাদের খুব চেনা
আমরা আসছি
লক্ষ লক্ষ খালিদ হাতে নিয়ে আলীর যুলফিকার....

শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১১

‘লাশ বানানোর’ বনাম ‘লাশ নিয়ে’ রাজনীতি এবং মানবতাবোধ

গত কয়েকদিন আগে ফেসবুকে ইনবক্সে কয়েকটি মেসেজ পেলাম । মুলত গালিগালাজ ও হুমকি সম্বলিত মেসেজ । লিখেছেন Devilz dance ।  বাংলা অর্থ শয়তানের নৃত্য । তার অভিযোগ , আমি আবিদের হত্যাকারীদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি । এজন্য আমার অবস্থা ভালো হবেনা । কৌতুহলবশত প্রোফাইল চেক করলাম । পড়ছেন Chittagong medical college এ । এবং Hometown লেখা মানিকগন্জ । দেখে আশ্বস্ত হলাম । এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে শয়তানের নৃত্য খুবই স্বাভাবিক । শয়তানের উদ্দাম নৃত্যের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে ২০তম বিডিএস এর আবিদুর রহমানকে । এর আগেও শয়তানের নৃত্যের শিকার হয়েছে আরো অনেকেই ।

Devilz dance এর ভাষাই বলে দেয় সে খুনি কেউ । কিন্তু তার ভুলটা অন্য জায়গায় । সে ভেবেছে ছাত্রশিবিরের সভাপতিকে গালিগালাজ করে মনের ঝাল মেটাবে । হয়তো আমি ভয় পেতে পারি সে আশাও করতে পারে সে ! কিন্তু সে জানেনা আমি আসলে মৃত্যুর ভয় পেতে জানিনা ,কারণ আমি একবার মরে গিয়েছিলাম বাতিলের নির্যাতনে । এখন আমার জীবনের Extended period চলছে ! আমার সাথে কথা বললে এর প্রমাণ পেতে পারে যেকেউ

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আমি আশাবাদী নই । অনেকেই রাজনীতিকে পেশা মনে করে । লেখেও । রাজনীতি একজন মানুষের পেশা হয় কি করে ? রাজনীতির সাথে এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি শব্দ হলো লাশ । আমি দুভাগে ভাগ করেছি । লাশ বানানোর রাজনীতি এবং লাশ নিয়ে রাজনীতি । তুলনামুলকভাবে লাশ বানানোর চেয়ে লাশ নিয়ে রাজনীতি ভালো । লাশ বানানোর রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে মেরে লাশ বানানো হয় ভয় তৈরি করার জন্য । দমন করার জন্য । যেমনটা হয়েছে আমাদের এখানে । আবিদকে হত্যার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে ছাত্রদলের নাম মুখে আনলে লাশ হতে হবে । লাশ নিয়ে যে রাজনীতি সেটা হয় মুলত দোষীদের বিচার দাবি করে এবং জনগনের সহানুভুতি আদায়ের প্রচেষ্টায় । দোষীদের বিচার দাবি করা অবশ্যই যৌক্তিক এবং দরকারি । কিন্তু তবুও লাশ নিয়ে 'রাজনীতি করছে' কথাটা নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয় । এবং দোষীরা এথেকে সুবিধা পেয়ে থাকে । আমাদের জনগনের কাছে কাউকে মেরে লাশ বানানো এবং সেই লাশ নিয়ে মিছিল করা দুটোই খারাপ । কেউ কেউ এমন কথাও বলেন 'মেরেছে বুঝলাম । ছি ছি লাশটা নিয়েও রাজনীতি করতে হবে কেন বুঝিনা !'
অবাক ব্যাপার । মেরেছে সেটা বোঝেন , রাজনীতি কেন এটা বোঝেন না । কাউকে মেরে ফেলার চেয়ে লাশটা সামনে রেখে মিছিল করা বেশি খারাপ ? এ কেমন সচেতনতা ? এ কেমন মানসিকতা ?

আবিদ হত্যার দায় কার ?

এই প্রশ্নটা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর । আমি বলি , এর আসল দায় তাদের যারা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে শুধুমাত্র ভিন্ন মতাবলম্বনের জন্য । দায় কম নয় আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয়ের । কখনো কখনো আমার মনে হয় প্রকৃত দায় তারই । ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রী নির্যাতন এটা প্রথম নয় । অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি সবকিছু জানতেন । তবু কখনো দোষীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি তিনি । বরং অভিযোগ আছে , তিনি বরং ভুক্তভোগীদের নানাভাবে জেরা করতেন । থানায় অভিযোগ দিতে বলতেন । যার ফলাফল হলো আবিদের নির্মমভাবে খুন হওয়া ।
দায় আছে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর । কারণ , কেউ কখনো প্রতিবাদ করেনি । সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে  । কখনোবা রাজনৈতিক বলে পাশ কাটিয়ে গেছে । ফলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে দিনদিন । ফলাফল- নির্যাতনের শেষ স্তর , মৃত্যু ।
ব্যক্তি হিসেবে আমার এবং সংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবিরেরও পরোক্ষ  দায় আছে  বৈকি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না হওয়ার স্বার্থে ছাত্রশিবির সবসময় ধৈর্যধারণ করেছে । যখন ৫০তম ব্যাচের বাপ্পাকে নির্যাতন করা হয়েছে তখন ছাত্রশিবির চুপ থেকেছে । চুপ থেকেছে ৫১ তম ব্যাচের শাকিল ,জামান , সবুজ ,নাবিল এদের ওপর নির্যাতনের সময় । চুপ থেকেছে ৫২ তম ব্যাচের শিমুল ,শাফায়াত কে নির্যাতনের সময় । ৫৩ তম ব্যাচের আরশাদ ,কাফী কে নির্যাতনের সময় ।
ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির একটি বৃহত্‍ সংঘবদ্ধ ছাত্রসংগঠন । তারা যখন ধৈর্যধারন করেছে সেটা অত্যাচারীদের নিঃসন্দেহে আরও বেপরোয়া করেছে । আর তার চুড়ান্ত ফল হলো একজনের মৃত্যু ।
বিগত সংসদের একটা দাবি ছিল যে তাদের সময়ে নাকি কলেজ বন্ধ হয়নি । এর কৃতিত্ব নাকি তাদের ! তারা ছাত্রসংসদ ভবনে ছাত্রশিবিরের যে পরিমাণ নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছে , ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসের  শান্তি শৃংখলার স্বার্থে ধৈর্যধারণ না করলে কলেজ কয়েকবার বন্ধ হয়ে যেত ।

নৈতিক অবস্থান ও মানবতাবোধ

' وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (آل عمران:104)
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত, যারা সৎকাজের প্রতি আহ্বান করবে, নির্দেশ করবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই হল সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান:১০৪)
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ (لقمان:17)
হে বৎস ! সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও। মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর, এটিই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লোকমান : ১৭)


একজন মুসলিম হিসেবে আমি কুরআনের এই আদর্শে বিশ্বাস করি । এবং আমার নৈতিক অবস্থান এটাই । যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাই । শুধু আবিদ হত্যা নয় , ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মীও  যদি অন্যায়ভাবে কারও আক্রমণের শিকার হয় তারও প্রতিবাদ জানাবো । আমার মানবতাবোধ সবার জন্যে সমান । একচোখা দলান্ধ নয় ।

আমার একজন ক্লাসমেট যিনি ছাত্রলীগ নেতা এবং আবিদ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত , ফেসবুকে লিখেছেন,  আমি নাকি আবিদ হত্যাকে কেন্দ্র করে ছাত্রছাত্রীদের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছি !!
কেন তিনি আমাকে অভিযুক্ত করতে চাইছেন ? ছাত্রশিবিরের সভাপতিকে টেনে এনে এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করে ফায়দা লোটাই কি মূল উদ্দেশ্য নয় ?
ঠিক এ কারণেই আমি আবিদ হত্যার বিষয়ে তাত্‍ক্ষণিক প্রতিবাদ জানানোর পর চুপ ছিলাম । আমি জানি ,আমার প্রতিবাদকে 'লাশ নিয়ে রাজনীতি' বলে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে । (হয়তো বলা হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র !! ) এবং এতে অনেক 'সচেতন(!)' ছাত্রছাত্রী জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করবে । ফলে দোষীদের বিচারের  দাবিতে CMCan দের মুল আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হতে পারে । এবং অপরাধীরা সে চেষ্টাই করছে ।
আবিদ হত্যা সহ সকল নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাই । দোষীদের বিচার দাবি করছি । এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে যেকোন আন্দোলনে কেউ ডাক দিলে যেকোন শক্তির বিপক্ষে আমি সেনাপতি কিংবা সৈনিকের কাতারে থাকবো , কথা দিচ্ছি ।


 শুক্রবার, নভেম্বর 11, 2011

রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১১

তৃষিত অভাগা

চারিদিকে বইছে অমৃত সুধার নদী
তার কলকল হাসি কোথায় যেন করে অগ্নিসংযোগ
অবগাহন ! সেতো আমার জন্য নয় ।
তৃষিত অভাগা আমি পড়ে থাকি নিষিদ্ধ ঘাটে
কিংবা নিরালা কোন এক পাড়ভাঙা কুলে !

হিমেল হাওয়ায় দুলছে অবিরাম
ফুলের কেশরাজি
সুবাস তার হৃদয়ে তোলে ঝড়
মেলতে পারিনা শাখা তবু মধু আহরণে
যদিবা বসে পড়ি হঠাত্‍ বিষাক্ত কোন ফুলে ?

পাকা ফলের ম ম গন্ধে
মাতোয়ারা বাতাসের ঝাপটা লাগে দেহে
লালায়িত ভীরু আমি
এটে থাকি মুখ
যদিবা গন্ধম খেয়ে ফেলি ভুলে ?


 রবিবার, নভেম্বর 6, 2011

শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১১

মন মেরামত

অর্ধমৃত মনটাকে ছড়িয়ে দিলাম আজ
সোনালী ধানের ক্ষেতে
সেখানে ফড়িংগুলো ওকে শিখিয়ে দেবে
জীবনের উচ্ছলতা
সেখানে ইদুরের গর্তগুলো শেখাবে
পথের অন্ধকার

আর সোঁদা মাটির গন্ধ
পুষ্টি যোগাবে যেন ধমনী শিরায়

প্রখর রৌদ্রে জিরিয়ে নিতে দোষ নেই
পারুল ফুলের খোপায় ।

অতঃপর বিকেলের সোনারোদ
কিংবা মুগ্ধ জোছনায়
গোসল সেরে নিক সে
সজীব প্রাণের প্রয়োজনে ।

আবার সময় এলে নামতে হবে পথে
কখনো পদাতিক
কখনো তীরন্দাজ
কখনো ঘোড়সওয়ার হয়ে
সত্য ও সুন্দরের প্রয়োজনে
জীবনের অসীম যুদ্ধে ।

শনিবার, নভেম্বর 5, 2011