আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, মানবজাতির সবচেয়ে বড় শত্রু কে? পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি মানুষকে খুন করেছে কে? আপনি হয়তো চেঙ্গিস খানের নাম স্মরণ করবেন । হয়তো হিটলারের কথা বলবেন । হয়তো পারমাণবিক বোমার কথা বলবেন । কিন্তু মানবজাতির আসল শত্রু বড় কেউ নয় । বরং তারা এতটাই ক্ষুদ্র যে আমরা তাদের খালি চোখে দেখতে পাই না । সেজন্য তাদেরকে আমরা চিনিও না । পৃথিবীর মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু, সবচেয়ে ভয়ংকর সেই খুনীদেরকে চেনেন শুধু ডাক্তার এবং বিজ্ঞানীরা। তারা এই খুনিদের জাতকে নাম দিয়েছেন ব্যাকটেরিয়া । আসলে ব্যাকটেরিয়াই মানবজাতির সবচেয়ে বড় শত্রু ! এদের জাতভাই আরেক গ্রুপ খুনিকে নাম দেয়া হয়েছে ভাইরাস ।
পৃথিবীর ইতিহাসে কতকোটি মানুষকে যে এরা হত্যা করেছে তার হিসাব করা সম্ভব নয় । একসময় কলেরা বা ওলাবিবিতে ভুগেই সাফ হয়েছে দেশের পর দেশ । যক্ষা, টাইফয়েড, প্লেগে উজাড় হয়েছে জনপদ । তখনো এই ভয়ংকর শত্রুকে আমরা চিনতে পারিনি ।
এই খুনিদের আমরা চিনতে শুরু করি ১৬৭৬ সাল থেকে । লিউয়েনহুক প্রথম ব্যাকটেরিয়াকে দেখতে পান । আর এরাই যে খুনি রোগ সৃষ্টিকারী সেটা জানা যায় আরো দুইশ বছর পরে । কিন্তু এই খুনিদের চিনলেও তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার অস্ত্র ছিলনা আমাদের হাতে । বলতে গেলে এই কিছুদিন আগে ১৯২৮ সালে পেনিসিলিন আবিষ্কারের মাধ্যমে প্রথম অস্ত্র আবিস্কার হয় । আমাদের এই অস্ত্রের নাম এন্টিবায়োটিক । তারপর থেকে অনেক গবেষণা করে এই অস্ত্রে শাণ দেয়া হয়েছে । নানাভাবে ডিজাইন করা হয়েছে । ভার্সন আপগ্রেড করা হয়েছে । ফলে এই খুনিদের আক্রমণ থেকে বেঁচে ফিরে এসেছে কোটি কোটি মানুষ । কিন্তু অনেক খুনি ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর অস্ত্র এখনো আবিস্কার করা যায়নি । আবার ওদিকে সেই খুনি ব্যাকটেরিয়া ভাইরাসরাও কিন্তু বসে নেই । তারাও তাদের প্রতিরক্ষা ও আক্রমণ পদ্ধতি পরিবর্তন করছে প্রতিনিয়ত । একে বলে রেজিস্ট্যান্স । আমাদের অনেক পুরনো অস্ত্রের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্যান্স ডেভেলাপ করেছে তারা । আর না বুঝে আমাদের অনেকেই মীরজাফরের মত তাদের সহযোগিতা করছে । হাতুড়ে অডাক্তারদের কাছ থেকে ইচ্ছামত এন্টিবায়োটিক খেয়ে এন্টিবায়োটিক নামক এই প্রাণরক্ষাকারী মহা অস্ত্রকে দিনদিন অকার্যকর করে তুলছি আমরাই । আবার ডোজ পূর্ণ না করেও ব্যাকটেরিয়াদের সহযোগিতা করছি কেউ কেউ । ইতোমধ্যেই অনেক অস্ত্র অকার্যকর হয়ে গেছে । এভাবে চললে একসময় আমাদের সব অস্ত্র অকার্যকর হয়ে যাবে । বেঘোরে প্রাণ হারানো ছাড়া তখন আর কিছুই করার থাকবে না ।
সবার প্রতি অনুরোধ এই ভয়ংকর খুনিদের সহযোগিতা করবেন না । অবশ্যই রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া এন্টিবায়োটিক খাবেন না । একবার শুরু করলে ডোজ কমপ্লিট না করে ওষুধ বন্ধ করবেন না । আর ডাক্তারদের প্রতি অনুরোধ, বিনা প্রয়োজনে ইচ্ছামত এন্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করবেন না । দুনিয়ার মানুষ এক হও । খুনি ব্যাকটেরিয়াকে রুখে দাঁড়াও !
২৭-০২-২০১৫