এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ৩০ নভেম্বর, ২০১২

কবি ও বিপ্লবী


কবিরা বিপ্লবী হয় কিনা জানিনা । তবে
বিপ্লবীরা কালে-ভদ্রে কবিতা লেখে !

কবিদের কবিতায় রক্তের ফোয়ারা
বারুদের তীব্র কটু গন্ধ ভুরভুর করে
তারা বলে আবেগের কথা ।

আর বিপ্লবী 
সেতো কবিতা লেখে হৃদয়-মাধুরী দিয়ে
ভালোবাসার কবিতা । মানুষের জন্য ।
অস্বাভাবিক বলিষ্ঠতায় ।

কবি
ঘরের কোণে বসে লেখে বিপ্লবের কথা
আর বিপ্লবী
যুদ্ধের ময়দান হতে শোনায় –
মানবতার জয়গান ।


শুক্রবার, নভেম্বর 30, 2012
http://goo.gl/fVEyu

শুক্রবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১২

বোকা মেয়ে

বোকা মেয়ে । কাঁদার মত কী আছে এখানে ? 
নাহয় কয়েকটা দিন থাকবোনা 
মনে করে দেখো - 
যখন তোমার বিশ বছর বয়স 
তখনো কি আমি ছিলাম পৃথিবীতে ? 

বোকা মেয়ে , এত ছিঁচকাদুনে কেন তুমি ? 
যদিবা নাও ফিরে আসি- 
মাত্রতো ক'টা দিন 
তারপর তুমি আমায় দেখবে 
এক অসীম উদ্যানের স্বর্ণদরজায় 
এক পাহাড় ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো আমি 
তোমার জন্য । 
ইচ্ছে হলে তাকিয়ে থেকো আমার মুখপানে 
ভুলে যেয়ো পলক ফেলতেও 
অনন্তকাল । 

এখন যাই তবে ? 
ঐ শোন, শ্লোগান শোনা যায় 
মিছিল শুরু হয়ে গেছে ; বদরের মিছিল ।



শুক্রবার, নভেম্বর 16, 2012
http://goo.gl/P60Kg

"গণতন্ত্র কি কুফরি?" আমার স্ট্যাটাস সমগ্র


০১।
গনতন্ত্র কি কোন জীবন বিধান ?

গনতন্ত্র কোন জীবন বিধান নয় । এটি একটি রাজনৈতিক মতবাদ মাত্র । ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান । এতে আছে ধর্মীয় বিশ্বাস , ব্যক্তিগত জীবনের জন্য বিধান , অর্থনৈতিক বিধান , রাজনৈতিক মতবাদ সব । গনতন্ত্রে কোন ধর্মীয় মতবাদ ,ব্যক্তিগত জীবনের জন্য কোন নিয়ম নীতি, সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক মতবাদ নেই । আমেরিকা ধর্মে খ্রিষ্টান , অর্থনৈতিক ভাবে পুজিবাদী , রাজনীতিতে গনতন্ত্র । একইভাবে বিভিন্ন দেশে এই কম্বিনেশন বিভিন্ন ।

গনতন্ত্রের প্রকৃত রুপ কী ?

গনতন্ত্রের কোন নির্দিষ্ট রুপ নেই । এর মূলকথা হলো জনগন শাসক বা পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচন করবে । বিভিন্ন দেশে গনতান্ত্রিক সরকার কাঠামোর রুপ বিভিন্ন । বাংলাদেশের সাথে ভারত কিংবা আমেরিকার গনতন্ত্রের বিস্তর ফারাক । বৃটেনে এখনও রাণী আছে এবং যদিও রাণীর তেমন কোন ক্ষমতা নেই তারপরও রাণী চাইলে নাকি যেকোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন কিংবা বাতিল করতে পারেন !

(গনতন্ত্র ও ইসলাম : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ- স্ট্যাটাস ১)


০২।
আমেরিকা কি গনতন্ত্র চায় ?

পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর কাছে গনতন্ত্রের শ্লোগান তাদের স্বার্থোদ্ধারের হাতিয়ার মাত্র । তারা গনতন্ত্র চায় বটে তবে আপোষহীনভাবে নয় । গনতন্ত্রের মাধ্যমে অন্যান্য দেশে তাদের হস্তক্ষেপের সুযোগ বেশি , খেল জমে ভালো । এটা তাদের লাভ । তারা যদি গনতন্ত্রের প্রশ্নে আপোষহীন হয়ে থাকে , তাহলে তারা মিশরের হোসনি মোবারক কে কেন সাপোর্ট দিত ? সৌদি রাজপরিবারের সাথে কেন তাদের এত সখ্য ? পাকিস্তানের সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফ কে সমর্থন ও সহযোগিতা দিত কেন ?
আসলে গনতন্ত্র তাদের এমন কোন আদর্শ নয় যা তারা সব দেশে যেকোন মূল্যে প্রতিষ্ঠা করবেই ,বরং স্বার্থোদ্ধারের মুখরোচক বুলি মাত্র ।
তবে আমেরিকা ব্রিটেন অস্ট্রেলিয়া জার্মানি প্রভৃতি উন্নত রাষ্ট্র তাদের রাজনীতি এবং তাদের গনতান্ত্রিক রীতিনীতি ভালোমতই প্রতিষ্ঠিত করেছে এবং এতে তারা সত্যিকারার্থেই লাভবানও হচ্ছে ।
সেখানে কোন রাজনৈতিক সংঘাত নেই , লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মী হত্যা করা হয়না , গান পাউডার দিয়ে গাড়ি পোড়ানো হয়না , গুলি করে কিংবা পিটিয়ে ছাত্রহত্যা হয়না , পুলিশ দিয়ে রাজনৈতিক নিপীড়ন তেমন নেই । অথচ ঠিক ঠিক নির্দিষ্ট সময় পরপর নির্বাচন হচ্ছে , শাসনক্ষমতার হাতবদল হচ্ছে ।

(গনতন্ত্র ও ইসলামঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস- ২)



০৩।

'জনগনই সকল ক্ষমতার উত্‍স ' বাংলাদেশ সংবিধানের এই কথাটিই যত আপত্তির উত্‍স । এই কথার উপর ভিত্তি করেই গনতন্ত্র কুফর এবং শিরক বলা হচ্ছে ।
কথাটিকে যেভাবে শিরকের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে বিষয়টি কি আসলেই সেরকম ?

হিজবুত তাহরির সহ কয়েকটি গোষ্ঠি এই বিষয়টিকে এমনভাবে তুলে ধরছে যাতে মনে হয় এই বাক্যের মাধ্যমে জনগন বা জনগনের নির্বাচিত প্রতিনিধিকে 'ইলাহ' বানানো হয়েছে । সত্যিই কি এটি বাস্তব ?

ইলাহ শব্দের অর্থগুলো কি? সৃষ্টিকর্তা , রিজিকদাতা , পালনকর্তা , আইনদাতা ইত্যাদি । 'জনগন'ই সৃষ্টিকর্তা , পালনকর্তা এই কথা কি সংবিধান প্রণেতারাও কেউ বিশ্বাস করে ? করেনা ।

তাহলে বাকি থাকল কী ? কিছুলোককে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে এই বক্তব্য !
নির্বাচনের মাধ্যমে কাউকে সংসদে পাঠানো মানেই কি এমন যে তারা যে আইনই করুক তাই আমরা বা জনগন নির্দ্বিধায় মেনে নেবো ?

সেরকম তো হচ্ছেনা । বরং সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার আগেই একটা রুপরেখা জনগনের সামনে পেশ করে যে তারা সরকার পরিচালনার ক্ষমতা পেলে কীভাবে পরিচালনা করবে । অধিকাংশ জনগন সম্মত হলেই পরে তারা ক্ষমতা পাচ্ছে । এরপরেও যদি কোন আইন বা আদেশ এমন হয় যা কুরআন সুন্নাহ বা জনগনের স্বার্থ -মতের বিরুদ্ধে তখন কিন্তু তারা প্রতিবাদ করছে । অর্থাত্‍ এই জনতা প্রকৃতপক্ষে সরকার বা সংসদকে সার্বভৌম হিসেবে বিশ্বাস করেনা ।
আমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করি । তাই যেকোন বিবাদ বিসম্বাদে যখন কোন আয়াত বা হাদিস পাওয়া যায় তখন আমরা সেটাকেই চূড়ান্ত রায় বলে নির্দ্বিধায় মেনে নেই । কোন প্রতিবাদ করিনা । এটাকেই বলে সার্বভৌমত্ব। অর্থাত্‍ বাস্তবে কোন সরকার বা সংসদকেই সার্বভৌম বলা যাচ্ছেনা ।

তাহলে ঐ 'জনগন সকল ক্ষমতার উত্‍স' এই কথার ব্যাখ্যা কী ? এর ব্যাখ্যা হলো দেশের প্রশাসন কারা পরিচালনা করবে সেটা নির্ধারিত হবে জনগনের মতামতের ভিত্তিতে । এটুকুই । এর বাইরে কী ক্ষমতা আছে জনগনের ?
আপনি যে কাউকে জিজ্ঞেস করতে পারেন যে '' জনগন সকল ক্ষমতার উত্‍স' এর অর্থ আসলে কী ? এর বাস্তব প্রয়োগ কোথায় ?
উপরোক্ত সহজ কথাটাই এর ব্যাখ্যা । অযথা ভজঘট ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর কোন দরকার নাই ।

মানুষের মতামত নেওয়াটাই যদি শিরক হয় তাহলে কি হযরত ওসমান (রাঃ) শিরকের মাধ্যমে খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন ?(নাউযুবিল্লাহ)

(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস-৩ )



০৪।
জনগনের শাসক , জনগনের নেতা নির্বাচনে জনগনের 'মতামত নেওয়া' টাকে আমি যৌক্তিক মনে করি । এবং এটাতে ইসলামের মূলনীতি বিরুদ্ধ কিছু পাইনা । তবে হ্যা , জনগন যাদের ব্যাপারে মতামত দিতে পারবে তাদের কিছু নির্দিষ্ট যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে । ঐসব নির্দিষ্ট যোগ্যতা যাদের নেই তাদের ব্যাপারে মত এলে বাতিল বলে গন্য হবে । (এইরকম বিধিনিষেধ এখনো আছে । নির্বাচন কমিশনের নির্ধারিত নিয়মে ভোট না দিলে যেকোন ভোট বাতিল হয় ।)

গতকালের স্ট্যাটাসে এটা পরিস্কার হয়েছে যে 'জনগন সকল ক্ষমতার উত্‍স' কথাটি প্রকৃতপক্ষে একটি রাজনৈতিক রুপক মাত্র । তবু এই কথাটিকে সরাসরি এইভাবে গ্রহণ করাটা কঠিন এবং সন্দেহজনক । এটাকে ভাষাগত পরিবর্তন এনে ভিন্নভাবে লিখতে হবে । এটা সত্য ,বাংলাদেশ সংবিধান কুরআন হাদিসের ভিত্তিতে রচিত নয় । বাংলাদেশ সরকারও কোন ইসলামী সরকার নয় । কিন্তু এই 'জনগন সকল ক্ষমতার উত্‍স' রুপক/ভুলভাবে প্রকাশিত কথাটি আছে বলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাই 'কুফরি' , এমনটি যারা বলছেন তাদের সাথে আমি একমত নই । (তারা কিভাবে দ্বিমুখী আচরণ করছেন তা পরবর্তী স্ট্যাটাসে দেখানো হবে ইনশাআল্লাহ) ।

আচ্ছা ইসলামী রাষ্ট্র/খিলাফত ব্যবস্থায় 'খলিফা' নিযুক্তহবেন কীভাবে ? সরাসরি তো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা নিয়োগ দিবেন না । মানুষই নির্বাচিত বা মনোনীত করবে । মজলিশে শূরার সদস্যরা কীভাবে নিযুক্ত হবেন ? মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই তো ! ( মানুষের মধ্যে হয়তো গ্রহণযোগ্য/ শিক্ষিত একটা গোষ্ঠি ! আমেরিকার ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেমটা অনেকটা সেরকম )
কিন্তু ঐযে মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই কিছু মানুষকে ক্ষমতা দেয়া হলো (খলিফা /গভর্নর /মজলিশে শুরা সদস্য নিয়োগ) সেটাতে কি আপাতদৃষ্টিতে মানুষই ক্ষমতার উত্‍স হয়ে গেলো না ?
প্রশ্নঃ ক. এই বাড়ির সর্বময় কতা নাসির সাহেব । খ. এই জমির মালিক আমি ।
আমাদের দেশে এভাবে বলা হয়, লেখা হয় । লিখিত দলিলও করা হয় । এভাবে বলা কি কুফরি হবে ?
ইসলামী রাষ্ট্রেও একটা সর্বোচ্চ পরিষদ থাকতে হবে যারা যেকোন বিরোধ বা সমস্যা নিষ্পত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা রাখবে । এই 'সর্বোচ্চ' শব্দটা বলাটা কি কুফরি ? অথচ সবাই জানে যে এটা 'আপাতঃভাবে' বলা হচ্ছে ।
(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস- ৪)



০৫।

কুরআন হাদীসে সব আইন কানুন একেবারে খুঁটিনাটি সহ এমন বিস্তারিতভাবে নেইযে আর কোনদিন নতুন কিছু যোগ করতে হবেনা । মূলনীতি আছে । ইজতিহাদের মাধ্যমে এ থেকে বিধান বের করতে হবে। অনেক আইনকে স্থানীয় প্রেক্ষাপটে নতুন করে লিখতে হবে ।
আইন লিখলেই সেটা আইন হয়ে যায়না । ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হয় । আর অনুমোদিত কোন আইনও যদি প্রয়োগ না হয় , তাহলে তার কোন মূল্য থাকেনা । ইসলামী রাষ্ট্রেও আইন অবশ্যই
রাষ্ট্রের কারো মাধ্যমে অনুমোদিত হতে হবে। কে অনুমোদন করবে ? খলিফা অথবা মজলিশে শূরা ? একজন বা কিছু মানুষ ? তাহলে পার্থক্যটা কোথায় রইলো ? মানুষের দ্বারা অনুমোদিত বলে কি সেটা পালন করা কুফরি হবে ? বলতে পারেন যে খলিফা অথবা শূরা কুরআন হাদীসের বিরুদ্ধে কোন আইন করবেন না । এটা হতে পারে আমাদের বিশ্বাস ,কিন্তু বাস্তবে সবসময় এরকম হয়নি। এজন্যই খোলাফায়ে রাশেদীনের পর খিলাফত পরিণত হয়েছে রাজতন্ত্রে কিংবা স্বৈরতন্ত্রে । যেখানে ব্যক্তির ইচ্ছাই হলো আইন ।

নিরঙ্কুশ ক্ষমতাবলে খলিফা মজলিশে শূরাকে নিজের ইচ্ছামত এবং নিজের পছন্দমত লোকদের দিয়ে সাজিয়েছেন । হকপন্থি আলেমদের করেছেন নির্যাতন । ইমাম ইবনে তাইমিয়া , ইমাম আবু হানিফা এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ । আরো অনেক উদাহরণ আছে ।

এজন্য প্রকৃত বিষয়টি হলো কে কিভাবে আইন বানালো সেটা বড় কথা নয় , আইনটি কুরআন হাদীসের নীতির সাথে সামঞ্জস্যপুর্ণ কিনা সেটাই হচ্ছে বিবেচ্য বিষয় । যে যেভাবেই আইন তৈরি করুক বা প্রয়োগ করুক তা যদি কুরআন সুন্নাহ বিরোধী হয় সেটাই কুফরি , আর যদি কুরআন সুন্নাহর বিরুদ্ধে না হয় সেটাই পালনীয় । কুফরি হওয়ার প্রশ্নই অবান্তর ।

প্রশ্নঃ সংসদে মানুষের মাধ্যমে আইন পাশ করা হয় বলেই যদি সেটা কুফরি হয় তাহলে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যরা যদি কোন ইসলামী আইন বাস্তবায়নের জন্য পাশ করে তাহলে কি তা কুফরি হবে ? সেই আইন অনুসারে কাজ করাও কি কুফরি হবে ?

(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস- ৫)



০৬।
পলাশীর যুদ্ধে সিরাজের পরাজয়ের পর ইংরেজরা উপমহাদেশের ক্ষমতা গ্রহণ করে । তত্‍কালীন আলেমদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ ফতোয়া দিয়েছিলেন যে ইংরেজরা বিধর্মী শাসক । ইংরেজি বিধর্মীর ভাষা । তাই ইংরেজি শেখা হারাম । ইংরেজের চাকরি করা হারাম । কোন ব্যক্তি যে জাতির অনুসরন করবে সে তাদের অন্তর্ভুক্ত - সম্ভবত এই হাদিসটিকেও ব্যবহার করা হয়েছিলো । আবেগপূর্ণ সাময়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে হয়তো তাদের এই ফতোয়াকে কেউ কেউ ঠিক বলতে পারেন , কিন্তু ইতিহাসে প্রমাণিত হয়েছে যে এতে করে দীর্ঘমেয়াদে মুসলমানদের ক্ষতি হয়েছে ।পরবর্তীতে মুসলমানরা ইংরেজি শিখেছে , শিখতে বাধ্য হয়েছে । কিন্তু আলেমদের কাছ থেকে সমাজের নেতৃত্ব চলে গেছে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের হাতে । আলেমরা ধীরে ধীরে সমাজের একটা অযোগ্য এবং অবহেলিত অংশ হয়ে গেছেন । ছড়িয়ে পড়েছে অনেক কুসংস্কার এবং শিরক ।

আলেম সমাজের এই হ্রস্বদৃষ্টি , বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণের অযোগ্যতা এবং অনন্যোপায় হওয়ার আগ পর্যন্ত কোন নতুন বিষয় গ্রহণ না করার প্রবণতাটা রয়েই গেছে । তাঁরা সহজ করে , সময় ও সমাজের বাস্তবতার সাথে ইসলামকে মিলাতে ব্যর্থ হন। কিন্তু একসময় আবার ফিরে আসেন বাস্তবে , ততদিনে ঘুড়ি উড়ে চলে যায় হাত থেকে ।

বাংলাদেশে যেটা হলো- শায়খুল হাদীস আল্লামা আজিজুল হক , চরমোনাইর পীর , হাফেজ্জি হুজুর , মাওলানা শামসুল হক সহ বিশিষ্ট অনেক আলেম নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত রাজনীতি হারামের ফতোয়া দিয়েছিলেন । পরে যখন 'উপায়ান্তর' খুঁজে পেলেন না তখন তাঁরাও রাজনীতিতে নামলেন ।

এখন হিজবুত তাহরির এবং সৌদি প্রভাবিত সালাফিগন এবং আরো দুএকটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠি নির্বাচনে অংশগ্রহণ শিরকের ফতোয়া দিচ্ছেন । ইংরেজি শেখা হারাম-কুফরি ফতোয়া দিয়ে ২০০ বছর আগে উপমহাদেশের মুসলমানদের যে ক্ষতি হয়েছিল , বর্তমানে যারা নির্বাচনে অংশগ্রহণকে কুফরি ফতোয়া দিচ্ছেন তাঁরাও সেই একই ক্ষতি করছেন । এর ফলে সমাজ-রাষ্ট্র পরিচালনার ভার থাকছে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ লোকদের হাতে । আলেম এবং ইসলামী দলগুলো থাকছে সমাজের নির্যাতিত নিগৃহীত উপেক্ষিত অংশে । মুসলমানরা ঘুরপাক খাচ্ছে বিভ্রান্তির পাঁকে ।

(প্রশ্নঃ মিশর এবং তিউনিসিয়ার সালাফিরা রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন । তাঁদের ব্যাপারে অবশিষ্টদের মন্তব্য কী ? )

(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস-৬)


০৭।
রাসুল (সাঃ) কি গনতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন ? এই প্রশ্নটা অনেকেই আমাকে করেছে । কিন্তু প্রশ্নটা আসলে একেবারেই অবান্তর । কারণ তখন সেখানে গনতন্ত্রের কোন অস্তিত্ব ছিলনা । প্রশ্নটা এমনই বেকুবের মত যে - রাসুল (সাঃ) কি প্লেনে চড়ে মক্কা থেকে মদীনায় হিজরত করেছিলেন ?

রাসুল সাঃ এর যুগে আরবে সত্যিকারার্থে কোন প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ছিলনা । ছিল গোত্রীয় ব্যবস্থা । অর্থাত্‍ একেকটা গোত্র যেন একেকটা আলাদা আলাদা রাষ্ট্র । রাসুল সাঃ মদীনায় যাওয়ার পরে সেখানে একটি রাষ্ট্র কাঠামো দাঁড় করান।

এছাড়াও পৃথিবীর অন্য কোন দেশেও বর্তমানের মত গনতান্ত্রিক কাঠামোর কোন অস্তিত্ব ছিলনা । প্রায় সব অঞ্চলেই রাজতন্ত্র অথবা গোত্রীয় ব্যবস্থা চালু ছিল । গ্রিসে গনতন্ত্রের প্রাথমিক তত্বগুলো ছিল তত্ত্বীয় আলোচনার পর্যায়ে । তত্‍কালীন পরাশক্তি রোম এবং পারস্যেও ছিল রাজতন্ত্র । ক্ষমতা পরিবর্তনের উপায় ছিল দুটি- রাজার মৃত্যু অথবা অন্য দেশের আক্রমণ ও যুদ্ধে বিজয় ।
খ্রিষ্টপুর্ব ৫০০ অব্দের দিকে এরিস্টটল , প্লেটো প্রমূখ মণিষী জনগনের সমর্থনে সরকার গঠনের কথা আলোচনা করলেও গনতন্ত্রের বিকাশ শুরু হয় মূলত ম্যাগনা কার্টা স্বাক্ষরের মাধ্যমে । সেটা ১৫ শতকের কথা । এতে জনসাধারন রাজাকে বাধ্য করে তাদের কথা শুনতে এবং চুক্তি সাক্ষর করতে । এর মাধ্যমে রাজার ক্ষমতা কমানো হয় । ফরাসি বিপ্লব , শিল্প বিপ্লবের ফলে এটা আরো গতি পায় । এগুলো রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকাল এবং খিলাফাতের স্বর্ণযুগের অনেক পরের কথা ।

এজন্য রাসুল (সাঃ) আসলে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের কোন নির্দিষ্ট পন্থা বলে যাননি । তিনি কখনো বলেননি যে গনতন্ত্র হারাম-কুফরি ,রাজতন্ত্রকেও তিনি হারাম বা কুফরি ঘোষণা করে যাননি । মূলত শাসকরা যদি ইসলামী ব্যবস্থা চালু রাখে তাহলে সে বৈধ । সে কীভাবে নির্বাচিত হলো সেটা বিষয় নয় ।
কেউ কেউ হযরত আবুবকর (রাঃ), ওমর (রাঃ) , ওসমান (রাঃ) , আলী (রাঃ) এর ক্ষমতাগ্রহণ প্রক্রিয়াকে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন । কিন্তু তাঁরা ভুলে যান যে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে প্রতিষ্ঠিত খিলাফতের ভেতর । কিন্তু আমরা এখন প্রতিষ্ঠিত খেলাফতের মধ্যে নেই । তাই এসব উদাহরণ এই মুহূর্তে প্রযোজ্য নয় ।

আমরা বাংলাদেশের মুসলমানরা এখন এমন একটা পরিস্থিতিতে পড়েছি যার নজির রাসুল (সাঃ) এর জীবন বা সাহাবাদের জীবনে সরাসরি পাওয়া যাবেনা ।
শুধু একটা জায়গায় আংশিক মিল পাওয়া যায় যে আমরা এখন যেমন খিলাফত বিহীন অবস্থায় নতুনভাবে ইসলামী অনুশাসন ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি , রাসুল (সাঃ) মদিনার শাসনভার গ্রহণ করার আগ পর্যন্ত তাই ছিল । কিন্তু সবচেয়ে বড় যে অমিলটা আছে সেটা হলো তত্‍কালীন আরব ও বর্তমান বাংলাদেশ বা অন্য যেকোন দেশের সমাজব্যবস্থা এক নয় ।
তখন ছিল গোত্রভিত্তিক দুর্বল ও বিক্ষিপ্ত সমাজব্যবস্থা , আর এখন আছে শক্তিশালী রাজতান্ত্রিক বা গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ।

তবু রাসুল (সাঃ) সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থনেই মদীনায় রাষ্ট্রব্যবস্থার পত্তন করেছিলেন । তিনি কোন জবরদখলকারি ছিলেন না । মক্কায় তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন পেতে ব্যর্থ হন । তাই সেখানে তিনি রাষ্ট্রীয় পরিচালন ব্যবস্থা হাতে নিতে পারেননি । জবরদখল করে তিনি ইসলামের আইন মানুষের ওপর চাপিয়ে দেননি ।

অপরদিকে মদীনায় তাঁকে সংখ্যাগরিষ্ঠ গোত্র সমর্থন ও সুরক্ষা দেয় । এমনকি ইহুদী গোত্রগুলিও তেমন কোন জোরালো বিরোধিতা করেনি ।
(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস-৭ )


০৮।

এখন আমি কিছু গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই ।
যেহেতু গনতন্ত্র ,এমনকি নির্বাচনে অংশগ্রহণকেই কুফরি বলা হচ্ছে তাহলে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত সরকার অবৈধ বা শিরক । এখন গনতান্ত্রিক সরকার যে ট্যাক্স নেয় সেটাও অবৈধ ।
১. তাহলে এই সরকারকে ট্যাক্স দেয়া কুফরি কিনা?
২. এই সরকারের অধীনস্ত বিচারকরা যারা এই দেশের সংবিধানকে সমূচ্চ রাখার শপথ নেন এবং এই সংসদে পাশকৃত আইন অনুসারে বিচারকাজ চালান - তারা কাফের কিনা ?
৩. আইনজীবিরা আদালতকে সহযোগিতা করেন । নির্বাচনে অংশগ্রহণই যদি কুফরি হয় তাহলে আইনজীবিরা কাফের কিনা ?
৪. পুলিশ ছাড়া বিচার বিভাগ অচল । আবার পুলিশ , বিচার বিভাগ , সেনাবাহিনী ছাড়া সরকার অচল । তাহলে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি করা কুফরি কিনা ?
৫. প্রশাসন , স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য সকল সরকারি বিভাগও ট্যাক্সের টাকায় চলে । যেকোন সরকারি চাকরির বেতন দেয়া হয় ট্যাক্সের টাকায় , কাফের রাষ্ট্রের অনুদানের টাকায়। সেই বেতন নেয়া হারাম এবং কুফরি কিনা ?
৬. সরকারি বেসরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় চলে সংসদের অনুমোদনে , সরকারের টাকায় । এসব প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস ইসলামী নয় । আছে সহশিক্ষা । তাহলে স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া, সার্টিফিকেট নেয়া কুফরি কিনা ?
৭. মাদ্রাসাগুলোও সরকারি অনুদান/ বেতন নেয় । অনেক মসজিদও সরকারি বেতন অনুদানে চলে । ঐসব মাদ্রাসায় পড়ানো বা পড়াশোনা করা এবং ঐসব মসজিদে নামাজ পড়া কি কুফরি হবে ?
৮. এমনকি কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডও সরকারি অনুমোদন নিয়ে চলে । 'বেফাক' হলো কওমী মাদ্রাসার একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি । হজ্ব করতে যাওয়ার জন্য সরকারি অনুমতি ও ব্যবস্থাপনা আছে । গনতান্ত্রিক সরকারের অনুমোদনে বা ব্যবস্থাপনায় হজ্ব করতে যাওয়া কি নাজায়েজ হবে ? হজ্ব করতে যাওয়ার সময় সোনালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি ব্যাগ দেয়া হয় টাকা পয়সা রাখার জন্য যেটা বুকে বা কোমরে বেধে নিতে হয় । সুদী ব্যাংকের উপহার নিয়ে হজ্ব করা কি ঠিক হচ্ছে ?
.......
উপরের গুলো যদি কুফরি না হয় তাহলে শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা , যার মাধ্যমে বাতিল শক্তিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয় সেটাকে কুফরি বলার মাজেজা কী ?
আর যদি বলেন ওগুলো বাধ্য হয়ে করছেন , তাহলে অন্যরা যখন বলে আমরা এই অনৈসলামিক সংবিধান মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছি কিন্তু পরিবর্তনের চেষ্টা করছি তখন সেটাকে কুফরি বলার এই দ্বিমুখীতা কেন ?
(বাধ্য হওয়ার বিষয়টাও আপেক্ষিক । রেড ইন্ডিয়ান ,এস্কিমোরা এবং অনেক উপজাতি জঙ্গলে থাকে । তাদের কোন গনতন্ত্র নাই , রাজতন্ত্র নাই । এরকম কোন জঙ্গলে গিয়ে নির্বিঘ্নে বসবাস করা যায় ! কিন্তু কথা হলো , ইসলাম কি সেটা করতে বলে ?)
-(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস- ৮ )



০৯।

ক.
রাসুল (সাঃ) যখন ঈমানের দাওয়াত দিয়েছেন তখন তিনি স্পষ্ট করে বাকিদের কাফের বলেছেন । আবু জেহেল , আবু লাহাব , আবু সুফিয়ানকে কাফের ঘোষণা করেছেন । এখন যে সকল গোষ্ঠি নির্বাচনে অংশগ্রহণকে কুফর শিরক বলে ইসলামী দলগুলো বিশেষ করে জামায়াত থেকে কর্মী ভাগানোর ধান্দায় আছেন তারা কেন এখনো গনতান্ত্রিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া এবং অন্যান্যদের কাফের ঘোষণা দিচ্ছেন না ? তাঁরা পারেন কী ? তাঁরা পারেন শুধু ইসলামী দলগুলোর ভেতরে ঘুরঘুর করতে । কুফরির অপবাদ দিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াতে । তাঁরা তাদের কর্মকান্ডের নব্বই ভাগ সময় ব্যয় করেন অন্যান্য ইসলামী দলের কুত্‍সা গাওয়ায় । প্রকৃত সেক্যুলার পুঁজিবাদি ও ইসলামবিরোধী দলগুলোর বিপক্ষে নয় ।

খ.
হিযবুত তাহরিরের একটা প্রাথমিক দাওয়াতি বই হলো 'এই আমার পথ' । তো এই বইয়ের লেখক হলেন 'শেখ ওমর রাসেল' । বইয়ে অনেক কঠোরভাবে গনতন্ত্রকে স্পষ্ট কুফরি , জামায়াতে ইসলামীকে ভ্রান্ত ও কুফরি দল ইত্যাদি বলা হয়েছে । তো বইটা পড়া শেষ করে যখন কাভারটা নাড়াচাড়া করছিলাম তখনই চোখে পড়লো লেখকের পরিচয়টা । তিনি তাঁর নামের নিচে লিখেছেন - এডভোকেট , সুপ্রিম কোর্ট ! এটাই তাঁর পরিচয় ! স্ববিরোধীতা আর কাকে বলে ! তিনি লিখছেন যে গনতান্ত্রিক সরকার কুফরি , আদালত কুফরি , অথচ নিজের পরিচয় দেয়ার সময় বলছেন 'এডভোকেট , সুপ্রিম কোর্ট' ! ভাবলাম , আসল ঘটনা কী হতে পারে ? মনে হলো - ফায়সালাটা আসলে এরকম , জামায়াত যেটা করে সেইটা কুফরি , বাট আমরা করলে ঠিকাছে !
দুধ হারাম , কিন্তু সেই দুধ থেকে মিষ্টি বানালে সেইটা হালাল !

(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস- ৯)


১০।

গনতন্ত্র কি জনগনের 'সার্বভৌমত্বের' কথা বলে ?অথবা গনতন্ত্রে 'জনগনের সার্বভৌমত্বের' ধারণা কি জরুরি ?
গনতন্ত্রকে সরাসরি নির্ভেজাল শিরক যারা বলছেন তারা এই বিষয়টিকেই গুরুতরভাবে উত্থাপন করছেন যে , গনতন্ত্র 'জনগনের সার্বভৌমত্বের' কথা বলে যেখানে প্রকৃতপক্ষে সার্বভৌমত্ব একমাত্র আল্লাহ তায়ালার ।
কিন্তু অধিকাংশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বা সমাজবিজ্ঞানীর মতে গনতন্ত্রে জনগনের সার্বভৌমত্বের ধারণা কোন আবশ্যক বিষয় নয় । অর্থাত্‍ এটি গনতন্ত্রের মূল বিষয় নয় । প্রকৃত ব্যাপারটা হলো " গনতন্ত্রের মূলকথা 'জনগনের সার্বভৌমত্ব' নয় , বরং 'শাসনব্যবস্থায় জনগনের অংশীদারিত্ব বা অংশগ্রহণ' । প্রখ্যাত সমাজবিজ্ঞানীদের দেয়া সংজ্ঞা আমরা একটু পরেই তুলে ধরবো ।
'জনগনই সকল ক্ষমতার উত্‍স' এই কথাটি গনতন্ত্রের কোন মৌলিক বিষয় নয় । এটা বাংলাদেশের অতিউত্‍সাহী রাজনীতিকদের অতিরঞ্জিত বক্তব্য । মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি । প্রকৃত গনতান্ত্রিক দেশগুলোতে এরকম ধারণা নেই ।
আসুন দেখি বিশ্ববিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানীদের দেয়া গনতন্ত্রের সংজ্ঞা -

¤Democracy is not a way of governing whether by majority or otherwise but primarily a way of determining who shall govern and broadly to what ends..(Prof. R.M. MacIver )
-গনতন্ত্র বলতে সংখ্যাগরিষ্ঠের বা অন্য কারো দ্বারা শাসনকার্য পরিচালিত হওয়ার পদ্ধতিকে বোঝায় না , বরং প্রধানত এটা কে বা কারা পরিচালনা করবে এবং মোটামুটিভাবে কোন্ উদ্দেশ্যে শাসন করবে তা নির্ধারণ করারই উপায় বিশেষ ।
¤ Democracy implies that government which shall rest on the active consent of the governed....(Prof. C.F. Srong)
-যেখানে শাসনব্যবস্থা শাসিতের সক্রিয় সম্মতির ওপর প্রতিষ্ঠিত তাই গনতন্ত্র ।
¤Democracy presupposes a fundamental agreement as to the methods by which political and social changes shall be brought about....(Prof. Carle. J. Friedrick)
-রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তন আনয়নের একটি প্রধান স্বীকৃত উপায় হলো গনতন্ত্র ।

¤ Democracy may either be a form of government, a form of state, a form of society, or a combination of all the three....(Prof. Giddings)
-গনতন্ত্র একটি শাসনব্যবস্থা. রাষ্ট্রব্যবস্থা , সমাজব্যবস্থা অথবা এসবের সম্মিলিত রুপ ।
¤ Democracy is an ideal, is a society of equals in the sense that each is an integral and irreplacable part of the whole....(Prof. C. D. Burns)
-গনতান্ত্রিক সমাজে প্রত্যেকেই সমান এ অর্থে যে প্রত্যেকেই সমাজের এক অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশ ।
¤ Democracy is a theory of society as well as a theory of government and from that point of view its main theme is liberty and equality....(Prof. Lindsay)
-গনতন্ত্র একাধারে একটি সামাজিক ও রাষ্ট্রনৈতিক মতবাদ এবং সে হিসেবে এর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো স্বাধীনতা ও সাম্য ।

¤ Democracy is that form of government in which the ruling of a state is legaly vested not in any particular class or classes, but in the members of the community as a whole.....(Prof. Lord bryce/ Modern democracies/ vol.1/p.20)
-গনতন্ত্র এমন এক ধরনের সরকার যাতে রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা আইনগতভাবে কোন নির্দিষ্ট শ্রেণী বা শ্রেণীসমূহের হাতে নিয়োজিত না থেকে বরং সমাজের সকল সদস্যের হাতে নিয়োজিত থাকে ।
¤ Democracy is a government in which everyone has a share....(Prof. Seeley/ Introduction to political science)
-গনতন্ত্র এমন এক ধরনের সরকার যেখানে সকলের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে ।

¤ গনতন্ত্র এমন এক ধরণের সরকার ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে যাতে রাষ্ট্রের শাসনক্ষমতা ব্যাপকভাবে সমাজের সকল সদস্যের উপর ন্যস্ত থাকে । (-হিরোডেটাস)
¤ Democracy is such a government in which governing is a comparatively large fraction of the total population....( Prof. Dicey)
-গনতন্ত্র এমন একটি শাসনব্যবস্থা যেখানে শাসকবর্গ তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ।

¤ A democratic state is simply one in which the community as a whole posseses sovereign authority maintains ultimate control over affairs and determines what post of governmental machienary shall be set up because democracy as a form of state is not merely a mode of government but merely a mode of appointing controlling and dismissing government..... (Prof. Hearnshaw/ Democracy of the crossways/ p.20-21)
-গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো এমন এক রাষ্ট্রব্যবস্থা যেখানে সমগ্র সম্প্রদায়ের হাতে সার্বভৌম কর্তৃত্ব ন্যস্ত থাকে , সকল বিষয়ে সম্প্রদায়ের হাতে চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ বিদ্যমান এবং সেটিই নির্ধারন করে কী ধরনের সরকারি যন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে । কেননা গনতন্ত্র শুধুমাত্র সরকার পদ্ধতিই নিয়ন্ত্রণ করেনা বরং তা সরকারের নিয়োগ , নিয়ন্ত্রণ এবং ক্ষমতাচ্যুত করার প্রক্রিয়াও নির্ধারণ করে ।
¤ Democracy is a system of government by discussion....( Barker)
-গনতন্ত্র একটি আলোচনা নির্ভর সরকারব্যবস্থা ।

¤ গনতন্ত্র বলতে আমরা সেই শাসনব্যবস্থাকে বুঝি যেখানে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সব বিষয়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে এবং সকলের মধ্যে নিজনিজ মত প্রকাশ করতে পারে । (-স্যার ক্রিপস)

প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের Democracy is agovernnment of the people, by the people and for the people....(Abraham Lincoln) কথাটিকে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় । কিন্তু এটি আসলে তিনি সংজ্ঞা হিসেবে দেননি । এটি তাঁর একটি রাজনৈতিক বক্তব্য বা শ্লোগান । তিনি গনতন্ত্রের প্রবক্তা বা রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ছিলেননা । ছিলেন একজন সফল রাজনীতিক আর পেশায় আইনজীবি । তিনি খুব ভালো বক্তৃতা করতেন । গেটিসবার্গ বক্তৃতা তাঁর একটি বিখ্যাত বক্তৃতা । অথচ তাঁর এই বক্তব্যটাকে গনতন্ত্রের সংজ্ঞা হিসেবে তুলে ধরে গনতন্ত্র মাত্রই শিরক বলার চেষ্টা করা হচ্ছে । যদিও এই বক্তব্যেও 'জনগনের সার্বভৌমত্ব নয় , জনগনের অংশীদারিত্বে'র বিষয়টি ফুটে উঠেছে।
এছাড়াও গনতন্ত্রের নানান রুপ- প্রত্যক্ষ গনতন্ত্র ,পরোক্ষ গনতন্ত্র এগুলোরও রয়েছে নানারকম সংজ্ঞা । কোনটিই জনগনের 'সার্বভৌমত্ব'কে অত্যাবশ্যক হিসেবে চিহ্নিত করেনা । আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো ,এখন পর্যন্ত গনতন্ত্রের কোন সর্বসম্মত সংজ্ঞা নেই।
(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস-১০) 


১১।

সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ কীভাবে শিরক ? বলা হয় যে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে সংসদ তথা একটি পরিষদকে স্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে যারা আইন তৈরি করার ক্ষমতা পাচ্ছে । অথচ আইন দেয়ার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালা । অর্থাত্‍ কাউকে 'আইন তৈরি করার ক্ষমতা' দেয়া হচ্ছে যা শিরক ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে আইন তৈরি করার ক্ষমতাটাই কি কুফরি ? নাকি কুরআন হাদিসের পরিপন্থি আইন তৈরির পর তা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা কুফরি ? আমি বলবো যে আইন তৈরির ক্ষমতাটাই কুফরি বা শিরক নয় ।
আল্লাহ তায়ালাই মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন আল্লাহকে মানার অথবা না মানার । আল্লাহ মানুষকে স্বাধীনতা দিয়েছেন আল্লাহর দেয়া বিধান অনুসরন করার অথবা নিজের খেয়ালখুশিমত চলার । নিজের তৈরি বিধান অনুসারে চলার ।
আমাদের হাত আছে যা দিয়ে ভালো কাজও করা যায় । খারাপ কাজও করা যায় । এখন হাত থাকাটাই কি হারাম ? নাকি হাত দিয়ে হারাম কাজ করাটা হারাম ? আমাদের চোখ আছে । চোখ দিয়ে ভালো কিছুও দেখা যায় , খারাপ কিছুও দেখা যায় । এখন চোখ বা দৃষ্টিশক্তিটাই কি হারাম নাকি হারাম কিছু দেখাটা হারাম ?

সুতরাং কারো আইন তৈরি করার ক্ষমতা থাকাটাই শিরক বা কুফরি নয় । বরং সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে কুরআন সুন্নাহ বিরোধী আইন তৈরি করা হলে সেটা হবে কুফরি ।
প্রচলিত গনতান্ত্রিক সিস্টেমে একটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিছু ব্যক্তি বা গোষ্ঠিকে দায়িত্ব দেয়া হয় মাত্র । তারা রাষ্ট্রের প্রশাসন পরিচালনা করে । দায়িত্ব দেয়া হয় এই বিশ্বাস করে যে তারা ভালোভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করবে ,যেমনটি তারা তাদের ইশতেহারে উল্লেখ করেছে ।
খলিফাকেও দায়িত্ব দেয়া হয় এই বিশ্বাস রেখে যে তিনি সবচেয়ে ভালো পরিচালনা করবেন । (খলিফাকেও আল্লাহ তায়ালা সরাসরি নিয়োগ দেননা ।) এরপর তারা যা করেন- প্রেসিডেন্ট হোন , প্রধানমন্ত্রী হোন আর খলিফাই হোন তা তাদের দায়িত্ব । তার দায় তাদের ঘাড়েই বর্তাবে ।

আমাদের অর্থাত্‍ জনগনের করণীয় কী ? আমাদের দায়িত্ব হলো এমন লোকদের দায়িত্ব দেয়া তথা নির্বাচিত করা যারা কুরআন সুন্নাহ অনুসারে সর্বাধিক যোগ্যতার সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন ।
একটা কথা কিন্তু মনে রাখতেই হবে - আল্লাহ তায়ালার দেয়া কুরআন সুন্নাহর আইনই হোক আর মানুষের তৈরি আইনই হোক সেই অনুসারে সমাজ রাষ্ট্র পরিচালিত হবে কিনা তা অনুমোদনের ক্ষমতাও কিন্তু শেষ পর্যন্ত মানুষেরই হাতে । আর এটা আল্লাহই দিয়েছেন ।

(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস-১১)


১২।
গনতন্ত্রকে কুফরি বলার মূল উপাদান হলো 'সার্বভৌমত্বে'র প্রশ্ন । আমরা আগেই রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের দেয়া গনতন্ত্রের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছি যে, গনতন্ত্রে 'জনগনের সার্বভৌমত্বের ধারণা' আবশ্যক নয় । অন্যকথায় বলতে গেলে এর কোন প্রয়োজন নেই। গণতন্ত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন গ্রন্থে সার্বভৌমত্বের ধারণাকে তেমন গুরুত্বের সাথে আলোচনাও করা হয় না । এছাড়া সার্বভৌমত্বের ধারণা পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে একরকম তো নয়ই, তাদের অনুসৃত গনতান্ত্রিক শাসনপদ্ধতিও বিভিন্ন । রয়েছে বিস্তর ফারাক ।
একধরণের মুসলিম এবং ওলামার বৈশিষ্ট্যই হলো তাঁরা নিজেদের কোন ত্রুটিই দেখেন না , 'সবই পাশ্চাত্যের ইহুদি নাছারাদের ষড়যন্ত্র' বলে গলা ফাটান । কেউ কেউ গনতন্ত্রকে শুধুমাত্র এজন্যই কুফরি ভাবেন যে , 'আমেরিকা গনতন্ত্রের কথা বলে' ! আমার ভাবতে খুব কষ্ট হয় যে একসময় আলেমদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মাইক ব্যবহার করাকে নাজায়েজ বলেছেন । এখনো নাকি দুএকটি মসজিদে মাইকে আজান দেয়া হারাম ভেবে মুখেই আজান দেয়া হয় !
কোনকিছু সম্পর্কে কুরআন হাদিসের মূলনীতি দিয়ে যাচাই করাটাই ঈমানের দাবি। কিন্তু তাই বলে নতুন সবকিছুকেই হারাম ঘোষণা করা কিংবা যাকে তাকে কুফরির খাতায় ফেলা নিশ্চয়ই ঈমানের দাবি তো নয়ই , পরিপন্থিই বলা যায় । প্রথমে হঠাত্‍ করেই হারাম ঘোষণা করা হয় , এরপর ধীরে ধীরে সেটাকে গ্রহণ করা হয় । একসময় টিভি দেখাকেই হারাম বলা হয়েছে । (অবশ্যই টিভির কোন হারাম কন্টেন্ট দেখা হারাম , কিন্তু টিভিতো নয় নাকি !)

সার্বভৌমত্ব শব্দটির আপত্তি সম্পর্কে এ সময়ের বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী তাঁর ‘Priorities of The Islamic Movement in the coming Phase’ বইয়ের ‘The Movement and the political Freedom and Democracy’ শীর্ষক অংশে লিখেছেন-
"The fear of some people here is that democracy makes the people a source of power and even legislation (although legislation is Allah’s alone) should not be heeded here, because we are supposed to be speaking of a people that is Muslim in its majority and has accepted Allah as its Lord, Mohammad as its Prophet and Islam as its Religion. Such a people would not be expected to pass a legislation that is contestable in Islam and its incontestable principles and conclusive rules. Any way these fears can be over come by one article (in the constitution) that any legislation contradicting the incontestable provisions of Islam be null and void."
-কিছু সংখ্যক মানুষের ভয় গণতন্ত্র মানুষকে ক্ষমতার উৎসে পরিণত করে এবং আইন প্রণয়ন করার অধিকার দেয় (যদিও আইন প্রণয়ন করার ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর), তার প্রতি কর্ণপাত করা উচিত হবে না। কারণ আমরা এমন এক মানবগোষ্ঠী সম্পর্কে কথা বলছি যারা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং আল্লাহকে তাদের প্রভু হিসেবে, মুহাম্মদ (সা) -কে তাদের নবী এবং ইসলামকে তাদের ধর্ম হিসেবে মেনে নিয়েছে। আশা করা যায়, এ ধরনের মানুষ এমন আইন প্রণয়ন করবে না, যা ইসলামের অকাট্য নীতি ও সিদ্ধান্তমূলক আইনের পরিপন্থী হবে। যা হোক, 'ইসলামের অলংঘনীয় বিধানের পরিপন্থী যে কোন আইন বাতিল বলে গণ্য করা হবে' এমন একটি অনুচ্ছেদ সংবিধানের সংযোজন করে এ আশংকা দূর করা যেতে পারে।

আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভী এতে আরো দেখিয়েছেন যে, ইসলাম কোন স্বৈরাচার বা রাজতন্ত্র সমর্থন করে না। তিনি তুলে ধরেছেন যে Political Freedom-এর মধ্যেই ইসলাম বিকশিত হয়। যদিও ইসলাম গণতন্ত্র থেকেও ব্যাপক একটি বিষয়, একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা, তবুও তিনি গণতন্ত্রকে ইসলামের সাথে সংগতিপূর্ণ মনে করেন এবং ইসলামে মানুষের জন্য যে সব মৌলিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে তা গণতন্ত্রের মাধ্যমেই পূরণ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন । তিনি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতার পক্ষে লিখেছেন। তবে যারা ভয় পান যে, গণতন্ত্রের নামে ইসলামবিরোধী আইন প্রণীত হতে পারে, তাদেরকে আশ্বস্ত করার জন্য সংবিধানে ‘কুরআন ও সুন্নাহ বিরোধী কোন আইন পাশ করা যাবে না’ এমন একটি ধারা সংযোজনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি ।

তিনি আরও বলেন,
'যা হোক, গণতন্ত্র যে সকল নীতি ও নিশ্চয়তা দান করেছে তা শাসকদের উচ্চাশাও খেয়ালীপনার উপর একটি নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য ইসলাম পৃথিবীতে যে সকল রাজনৈতিক নীতির অবতারণা করেছে তার নিকটতম। এ সকল নীতিসমূহ হচেছ শূরা (consultation), নসিহত (পরামর্শ প্রদান), যা সংগত তার আদেশ দেওয়া, যা খারাপ তা বর্জন করা, অবৈধ আদেশসমূহ অমান্য করা, অবিশ্বাস প্রতিরোধ করা এবং যখনই সম্ভব শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিবিধান করা । স্বাধীন রাজনৈতিক পরিবেশ এবং গণতন্ত্রেই কেবল সংসদীয় পদ্ধতির বৈধতা ও ক্ষমতা স্বীকৃত এবং জনগণের প্রতিনিধিগণ যে কোন সরকারের উপর সংবিধান লংঘনের অপরাধে অনাস্থা জ্ঞাপন করতে পারে এবং এটি (গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা) এমন একটি পরিবেশ যেখানে স্বাধীন সংবাদপত্র, নিরপেক্ষ সংসদ,বিরোধী দলের অবস্থান এবং জনসাধারণের মতামত সর্বাপেক্ষা অধিক প্রতিফলিত ।'

এই অনুবাদের ভাষাটা সম্ভবত খুব একটা সরল হয়নি । আমি নিজে অনুবাদ না করে এটা নিয়েছি জনাব শাহ্ আব্দুল হান্নানের অনুবাদ থেকে । তবে এটুকু নিশ্চয়ই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে আল্লামা কারদাওয়ী গনতন্ত্রকে সরাসরি কুফরি বা শিরক বলতে রাজি নন । বরং তিনি এটাকে ইসলামের অনেক কাছাকাছি একটি রাজনৈতিক সিস্টেম হিসেবে মনে করছেন । আর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য সংবিধানে একটি মূলনীতি যোগ করার কথা বলছেন যা কুরআন সুন্নাহ বিরোধী সকল বিধানকে বাতিল করবে ।

(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস-১২)



১৩।
ড. আবু সাঈদ নূরুদ্দীন-এর ‘মহাকবি ইকবাল’ বইটিতে আমরা দেখতে পাই যে, আল্লামা ইকবাল গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট ছিলেন না । কিন্তু তিনি তার লেখায় উল্লেখ করেছেন যে , গণতন্ত্রের কোন বিকল্প নেই। তিনি তার Reconstruction of Religious Thought in Islam-এর ৬ষ্ঠ ভাষণে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্র সম্পর্কে মতামত দিতে গিয়ে আরও বলেন,‘ইসলামী রাষ্ট্র স্বাধীনতা, সাম্য, এবং স্থিতিশীলতার চিরন্তন বিধানসমূহের উপর
প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতির নীতিমালা শুধু ইসলামের মৌলিক ভাবধারার সাথেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বরং যেসব শক্তি মুসলিম বিশ্বে কার্যরত রয়েছে তাকেও সুসহংহত করা অপরিহার্য।’ [মহাকবি ইকবাল, ড. আবু সাঈদনূরুদ্দীন, পৃ-২৩৫]

ইকবালের মতে, গণতন্ত্রের ভিত্তি যদি রূহানী ও নৈতিক হয় তাহলেই তা হবে সর্বোৎকৃষ্ট রাজনৈতিক পদ্ধতি। ইসলামী রাষ্ট্রকে এ কারণেই তিনি “রূহানী গণতন্ত্র” বলে আখ্যায়িত করেছেন। ইংরেজী সাময়িকী ‘The New Era’ – এর ২৮ জুলাই ১৯১৭ সংখ্যায় তিনি বলেন, ‘ইসলামে গণতন্ত্র অধিকাংশ ইউরোপীয় সমাজসমূহের মতো অর্থনৈতিক সুযোগের সম্প্রসারণ থেকে উৎপন্ন হয়না; বরং এটি একটি রূহানী নীতি, যা ঐ কথার ভিত্তিতে এসেছে যে, প্রত্যেক ব্যক্তিই কতকগুলো সুপ্ত শক্তির এমন একটি আধার, যার সম্ভানাসমূহকে এক বিশেষ গুণ ও চরিত্রের দ্বারা উন্নত করা যেতে পারে। ’ [প্রাগুক্ত, পৃ-২৩৯]

রাজনৈতিক কর্মকান্ডে মানুষ তথা উম্মতের দায়িত্ব সম্পর্কে মহাকবি ড. আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল- এর মতামত হচেছ এরকমঃ
‘ইসলাম গোড়াতেই স্বীকার করে নিয়েছে যে, বাস্তবে রাজনৈতিক ক্ষমতার ধারক ও বাহক হল উম্মত এবং যেসব কার্যক্রম নির্বাচকমন্ডলী তাদের নেতা নির্বাচনের নিমিত্ত গ্রহণ করে তার অর্থ শুধু এই যে, তারা তাদের সম্মিলিত ও স্বাধীন নির্বাচন পদ্ধতি দ্বারা উক্ত রাজনৈতিক ক্ষমতাকে এমন একজন নির্দিষ্ট ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের মাঝে ন্যস্ত করে দেয়, যারা তাকে উক্ত ক্ষমতা প্রাপ্তির জন্য উপযুক্ত বিবেচনা করে। ইসলামী আইন প্রণয়নের ভিত্তি মিল্লাতের সংখ্যাগরিষ্ঠের সম্মতি ও যৌথ মতের উপর প্রতিষ্ঠিত।’ [ইসলামের রাজনৈতিক চিন্তাধারা, লাহোর ১৯১০-১৯১১, ‘মহাকবি ইকবাল’,ড. আবু সাঈদ নূরুদ্দীন, পৃ -২৩৪]

পাকিস্তানে যখন আধুনিক বিশ্বের প্রথম ইসলামী সংবিধান রচিত হচ্ছিল তখন তার মধ্যে গণতন্ত্র শব্দটি নেওয়া হয়েছিল আলেমদের সমর্থনে। প্রকৃতপক্ষে একটি আদর্শ প্রস্তাবনা রূপে পাকিস্তানে শাসনতন্ত্রের ভূমিকা আলেমরাই প্রণয়ন করেছিলেন। এই ভূমিকায় গণতন্ত্রের বিষয়টি বলা হয়েছে এভাবেঃ
Wherein the principles of democracy, freedom, equality, tolerance and social justice, as enunciated by Islam, shall be fully observed.
গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, সমতা, সহনশীলতা এবং সামাজিক ন্যায়পরায়ণতার নীতি ইসলামে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, পুরোপুরি সেভাবে মান্য করতে হবে।

অর্থাৎ ইসলাম গণতন্ত্রকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে তা সেভাবে অনুসৃত হবে। এর অর্থ হচ্ছে আলেমগণ, ইসলামী রাজনীতিকগণ শর্তসাপেক্ষে গণত্ন্ত্র শব্দটি, গনতন্ত্র পরিভাষাটি এবং তা দ্বারা যা বোঝায় তা গ্রহন করেছেন।
(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস-১৩)


১৪।
বিংশ শতাব্দীর আধুনিক বিশ্বে ইসলামী জাগরণের অগ্রদূত সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী(রঃ) পঞ্চাশ বছর আগে তাঁর “ইসলামের রাজনৈতিক মতবাদ” বইয়ে ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্য Theo-democracy শব্দ দু’টি ব্যবহার করেছেন। অর্থাৎ তিনি Democracy বা গণতন্ত্র শব্দটি পরিত্যাগ করেননি বরং আল্লাহর সার্বভৌমত্বের অধীনে এটি গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায়ে - করাচির ‘আখবারে জাহান’ পত্রিকায় ১৯৬৯ সালের ২রা এপ্রিল সং
খ্যায় প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ইসলাম ও গণতন্ত্র পরস্পর বিরোধী নয়। গণতন্ত্র সেই শাসন ব্যবস্থার নাম, যেখানে জনমতের ভিত্তিতে সরকার গঠিত, পরিচালিত ও পরিবর্তিত হয়। ইসলামী শাসন ব্যবস্থাও তদ্রুপ। তবে পাশ্চাত্য গণতন্ত্র থেকে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ভিন্ন। কেননা পাশ্চাত্য গণতন্ত্র লাগামহীন হয়ে থাকে। জনগণের রায় হলালকে হারাম করে দিতে পারে, যেমন বৃটেনে হয়েছে এবং হচেছ। পক্ষান্তরে ইসলামী গণতন্ত্র কুরআন ও হাদিস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে। গোটা জাতি চাইলেও ইসলামের সীমানার বাইরে গিয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। সমাজতন্ত্র এর ঠিক বিপরীত। সমাজতন্ত্র এক জীবন দর্শনের নাম। তার রয়েছে নিজস্ব আকীদা, বিশ্বাস, দর্শন ও নৈতিকতা। ইসলামের সাথে তার কোনোই মিল নেই। [মাওলানা মওদূদীর সাক্ষাৎকার, আধুনিক প্রকাশনী , ১ম সংস্করণ, পৃ-২৬৩]

লন্ডনের মাজাল্লাতুন গুরাবা পত্রিকায় ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারী সংখ্যায় প্রকাশিত এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, 'যুগের মানুষদের কথা বুঝানোর জন্য আধুনিক পরিভাষা ব্যবহার কার অপরিহার্য। তবে এগুলো ব্যবহারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। কোনো কোনো পরিভাষা বর্জন করা ভালো এবং ওয়াজিব, যেমন সমাজতন্ত্র। আর কোনো কোনোটার ব্যবহার এ শর্তে জায়েজ যে, তার ইসলামী তাৎপর্য ও পাশ্চাত্য তাৎপর্যের পার্থক্য পুরোপুরিভাবে বুঝিয়ে দিতেহবে। যেমন- গণতন্ত্র, সাংবিধানিক ব্যবস্থা ও সংসদীয় পদ্ধতি। [মাওলানা মওদূদীর সাক্ষাৎকার, আধুনিক প্রকাশনী প্রকাশিত, ১ম সংস্করণ, পৃ-২৫৫]

আমরা স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে দেখি যে -ইসলাম এমন একটি সমাজের কথা বলে যেখানে সকলের মত প্রকাশের অধিকার থাকবে, একজন সাধারণ নাগরিক রাষ্ট্রের শাসককে সরাসরি জবাবদিহী করতে পারবে, আইনের শাসন থাকবে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা থাকবে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষিত হবে । আমরা দেখি যে, যখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কথা বলা হয় তখন তার পূর্বশর্ত হিসেবে এসবের কথাই বলা হয়। অর্থাৎ গভীর বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, ইসলামী দলগুলোর সরকার ও রাষ্ট্র সংক্রান্ত ধারণা এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার গঠন কাঠামো মোটামুটিভাবে একই ধরণের।
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান । ইসলাম যেসকল রাজনৈতিক মূল্যবোধের কথা বলে গনতন্ত্রও ভিন্ন নামে সেগুলোরই কথা বলে । শুধু নাম বা Term বদলের কারণেই কি তা কুফরি হয়ে যাবে ? দুধের বোতলের গায়ে মদ লিখে রাখলেই কি তা হারাম হয়ে যাবে ?
(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস- ১৪)

১৫।

আলজেরিয়ার ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক মালেক বেন্নাবীর গুরুত্বপূর্ণ 'La Democratie en Islam' বইটি প্রকাশিত হয় ১৯৮০ তে ।
বইটিতে তিনি ইসলামে গনতন্ত্রের রুপ নিয়ে আলোচনা করেছেন ।

বেন্নাবীর মতে ইসলামেই রয়েছে প্রকৃত গনতন্ত্র । ইসলামে রাজনৈতিক গনতন্ত্র ও সামাজিক গনতন্ত্রের সমন্বয় ঘটেছে । তিনি বলেন,ইসলামের যাকাত ব্যবস্থাই বড় ধরনের সামাজিক বিধান । কুরআনে ব্যক্তির এ অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে । ইসলাম

ের প্রথম খলিফাগনের যুগে শাসক ও শাসিতের মধ্যে যোগসূত্র রচিত হয়েছিল । এর মাধ্যমেই প্রমাণিত হয় যে , ইসলামে গনতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠিত ছিল । (পৃ-৩৬)
বেন্নাবীর মতে, প্রথম খলিফাদের যুগ ছিল ইসলামের গনতন্ত্রের সোনালী যুগ । এরপর পর্যায়ক্রমে বিপরীত অবস্থা ঘটতে থাকে । ক্ষমতা যখন একচ্ছত্র বিষয়ের ব্যাপার হয়ে যায় তখন মুসলমানদের নৈতিক আদর্শের বিলুপ্তির সাথে সাথে ইসলামী গনতান্ত্রিক আদর্শও বিলুপ্ত হয় ।

তাঁর বিশ্বাস , যেসব দেশে সামাজিক চিন্তা চেতনা কুরআনের ধারণার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সেখানে ইসলাম গনতন্ত্রের পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি ভাবতে পারে ।
বেন্নাবী কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন , কুরআনে ব্যক্তির গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা এবং স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে । মানুষকে কুরআনে স্বাধীনভাবে চলাফেরা এবং কাজ করার স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে । ইসলামে মানুষকে বাক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। রাসুল (সাঃ) নিজেও সাহাবীদেরকে তাঁর নিজের সিদ্ধান্তের সমালোচনার জন্য সুযোগ দিতেন ।
বেন্নাবী বলেন , কুরআনে কাউকে বিনা অনুমতিতে কারো গৃহে প্রবেশে নিষেধ করা হয়েছে । তবে পশ্চিমা আইনের ন্যায় ইসলামি আইনেও সামাজিক অধিকারকে ব্যক্তির অধিকারের চেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে ।

বেন্নাবী আরো মনে করেন , ইসলামি গনতান্ত্রিক ধারণা আর ফরাসি, রাশিয়ান বা চীনা গনতান্ত্রিক ধারণার মধ্যে পার্থক্য হলো ইসলাম এমন একটি তাত্‍পর্যপূর্ণ ধারণা যার মধ্যে রাজনৈতিকও সামাজিক মূল্যবোধ বিদ্যমান রয়েছে । গনতন্ত্রের অন্য ধারণার মধ্যে দেখা যায় এই ধারণার সাথে মানুষের মানবিকতা ও সামাজিক অনুভূতি রয়েছে । অপর পক্ষে ইসলামি গনতান্ত্রিক ধারণার মধ্যে আল্লাহর ধারণার উপস্থিতি বিদ্যমান । প্রথম ধারণার মধ্যে রয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতাব াদ আর দ্বিতীয় ধারণার মধ্যে রয়েছে আল্লাহর ধারণা আর এটি হলো অন্য ধারণা থেকে পবিত্র ।

বেন্নাবী পশ্চিমা গনতন্ত্রের একজন বড় সমালোচক ছিলেন । তাঁর মতে পশ্চিমা গনতন্ত্রে সামাজিক অধিকার লংঘিত হয় । পশ্চিমা গনতন্ত্রে ব্যক্তি ক্ষমতাশালীদের কাছে দাসে পরিণত হয় ।

তিনি মনে করেন , গনতন্ত্র হলো মানবিক সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ফলশ্রুতি বিশেষ । বিধিবিধানের মাধ্যমে কোন সার্বভৌম জনগোষ্ঠি বা জনগোষ্ঠির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের নামই গনতন্ত্র নয় । গনতন্ত্র হলো মনোভঙ্গি, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল উপাদান যা মানুষের চেতনা ও রীতিনীতিসমূহের মধ্যে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করে এবং মূলনীতিসমূহের পরিপূর্ণতা বিশেষ ।
(গনতন্ত্র ও ইসলাম নিয়ে বিভ্রান্তিঃ প্রেক্ষিত বাংলাদেশ । স্ট্যাটাস-১৫)


শুক্রবার, নভেম্বর 16, 2012
http://goo.gl/xXMwr

বৃহস্পতিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০১২

বিসর্জিত বর্তমান

কোন একদিন সফল হব বলে 
দুপায়ে মাড়িয়ে চলছি আজকের 
যত পরাজয় 

কোন একদিন সুখী হবার আশায় 
দুহাত পেতে নিয়েছি যত 
কষ্টের নুড়ি 

একদিন ধনী হবো ভেবে 
আপন করে নিয়েছি দারিদ্র্যের 
রূঢ় আঘাত 

কোন একদিন আকাশে উড়বো তাই 
শক্ত মাটিতে অবিরাম হেঁটে 
ক্ষয়েছি পদযুগল 

একদিন মানুষ হবার প্রয়োজনে 
নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করে চলেছি প্রতিনিয়ত 
নিজেকেই... 



বৃহস্পতিবার, নভেম্বর 15, 2012
http://goo.gl/rh2GT

বুধবার, ১৪ নভেম্বর, ২০১২

অবসর

আমাকে কেউ কি দিতে পারো 
একটুকু অবসরের সন্ধান ? 
আমি আঁচড়াতে চাই আমার ঝাঁকড়া চুলগুলি 
ঢিলেঢালা গেরুয়া রঙের ফতুয়াটা 
জড়িয়ে নিতে চাই উর্ধাঙ্গে 
ঘড়িটা নাইবা জড়ালাম হাতে ; 
এখন ক'টা বাজে - জানার অবসর নেই আমার । 

নীলরঙা জিন্স আর একজোড়া চামড়ার চপ্পল 
এইতো সম্বল , ইট বিছানো লালচে উদাস সড়কে । 

কালভার্টের পাশে মোটা গাছটার গুঁড়িতে 
বসতে চাই কয়েকটা ছায়াঢাকা মুহূর্তের জন্য 
বুক ভরে একবার টেনে নেবো হিমেল হাওয়া 
তারপর, আসমানে ছড়িয়ে দেবো 
আমার চিকন গলার নাঁকি সুর । 
ভালো না লাগলে তোমরা চলে যেও 
অন্য কোন পথে, ইচ্ছেমত । 

আমাকে এইটুকু অবসরের কথা বলো 
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলার জন্য । 
নিজেকে বলার জন্য- 'আমি ক্লান্ত' , আ-হ্ ! 



বুধবার, নভেম্বর 14, 2012
http://goo.gl/3BKa3

মঙ্গলবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১২

বধিরের পথচলা

এই পথে হাঁটতে হাঁটতে 
ভুলে গেছি কালের হিসাব 
আমার অতীত নেই ; নেই ভবিষ্যত 
আমি তাকাই সামনে- এ এক অনন্ত পথ ! 

জীবনের অর্থ খুঁজে খুঁজে -হারিয়েছে জীবন কতজন 
আমি অর্থ জানিনা জীবনের 
খুঁজিনা হৃদয় রহস্য ; 
আমি এক বধির- শুনিনা কিছুই 
শুধুই সামনে তাকাই, অথবা 
আমি যেদিকে তাকাই সেটাই সম্মূখ 
অবিরাম চলি আমি 
এ এক অনন্ত পথ !



মঙ্গলবার, নভেম্বর 13, 2012
http://goo.gl/I2AYV