এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

'স্বামীগিরি'র দিন আর নাই...

আহা কেউ যদি মশারিটা টাঙিয়ে দিত!! আলোচ্য বাক্যাংশটুকু মশার কামড়ে অতিষ্ঠ অলস ছেলেদের স্বগতোক্তি হইতে চয়ন করা হইয়াছে। ইহা ব্যাচেলর ছেলেদের বিবাহের ইচ্ছা প্রকাশের একটি মার্জিত রুপ।

তবে ঠাট্টাচ্ছলে বলা হলেও কথাটা এমনি এমনি আসেনি। এর একটা ঐতিহাসিক পটভূমি আছে। তিরিশ চল্লিশ বছর আগেও বাংলাদেশের গরীব, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং গ্রামীণ মধ্যবিত্ত পরিবারে স্ত্রীদের একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল স্বামীর পা টিপে দেয়া। স্বামী মানে স্বামীই, সংসারের সত্যিকার রাজা। তাঁর একমাত্র কাজ উপার্জন করা আর সংসারের খরচ জোগানো। আর স্ত্রীর কাজ স্বামীর সেবা করা। মশারি টাঙানো সেখানে স্ত্রীর আরেকটি রুটিন কাজ মাত্র। এমন অনেক পুরুষ তাদের সারাটা জীবন পার করে দিয়েছেন, একদিনও নিজে মশারি টাঙান নি। তাদের সব কাজ করে দিয়েছে ছোটবেলায় মা, বিয়ের পরে বউ। উচ্চবিত্তদের ক্ষেত্রে এই কাজগুলো করার জন্য আলাদা পরিচারিকা থাকতো।
আহা, কেউ যদি মশারিটা টাঙিয়ে দিত! আজও পুরুষের মনে এই ভাবনাটা তাই সেই চিরাচরিত 'স্বামী'সুলভ চেতনা থেকেই উঠে আসে।

এটা হয়তো ক্ষতিকর কিছু নয়। কিন্তু এই চিন্তার অর্থ যদি এই হয় যে পুরুষ তার সংসারে কোন সাংসারিক কাজই করবেন না, সব কাজ সবসময় স্ত্রীকেই করতে হবে, সেটাকে নিশ্চয়ই ঠিক বলা চলে না।

ডিয়ার ব্যাচেলরস টু বি ডেড, দিন বদলাইছে। 'স্বামীগিরি'র দিন আর নাই। বিয়ে করলেই মশারি এখন আর আপনা-আপনি জায়গামত উঠে যাবে না। এই যে আপনি ইচ্ছে করলে মশারি ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়েন, দেখার কেউ নাই। সম্ভাবনা প্রবল যে বিয়ের পর এই সুযোগটাও হারাবেন। সময়মতই মশারি টাঙাতে হবে :P :P এবং তা হয়তো আপনাকেই :P ইহার কোনরুপ ব্যতিক্রম হইলে তাহা হইবে আপনার নেহায়েৎ সৌভাগ্য মাত্র :D :D
ডোন্ট বি আপসেট ম্যান। একদিন দুদিন মশারি টাঙালে পুরুষের মান ইজ্জত চলে যায়না!! পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পুরুষ, মহানবী মুহাম্মাদ(সাঃ) ও নিজের অনেক কাজ নিজেই করতেন। আর তাছাড়া, ইউ নো, মানীর মান জুতা দিয়ে পিটালেও যায় না :D :D
(বিবাহ কথন-১৫)

শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

তোমায় নিয়া ঘর বান্ধিবো গহীন বালুর চর....!!

বিয়ের আগে নানান অলীক কল্পনায় ভোগে ব্যাচেলর সমিতির সদস্যরা। তারা মনে করে- বিয়ে করলেই জীবনের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!! জীবনে আর কোন দুঃখ থাকবে না!! কোনমতে বিয়েটা করলেই কেল্লা ফতেহ!! এরপর শুধু সুখ আর সুখ।

মন্তু মিয়ার গান তাদের জাতীয় সঙ্গীত হয়ে যায়।
"আশা ছিল মনে মনে
প্রেম করিবো তোমার সনে
তোমায় নিয়া ঘর বান্ধিবো গহীন বালুর চর...."


বাস্তবে গহীন বালুর চরে কারোই ঘর বাঁধা হয়না। কিছুদিন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করে শেষে ঘর বাঁধতে হয় ইট কাঠের শহরে। যেখানে বাসা ভাড়া যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হয়। যেখানে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। অফিসে কাজের চাপ, বসের ঝাড়ি, ব্যবসায় টেনশন, সিটি বাসে বাঁদুড় ঝোলা।
আবার ঘরে ফিরে ব্যাগ হাতে বাজারে যাওয়া। এই দাম কত? দশ টাকা কম নাও। গত সপ্তাহেই তো বিশ টাকায় কিনলাম!!

এই নাই সেই নাই, এই করতে হবে, সেই করতে হবে- শুনে শুনে কান ঝালাপালা হয়ে যায়।

বলা হয়, বিয়ের পর প্রথম ছয় মাস থেকে এক বছর সবাই মহাকাশে উড়তে থাকে :P । মাটিতে তাদের পা পড়ে না। তারপর ধীরে ধীরে মহাকাশযান মহাশুন্য থেকে প্রথমে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে, তারও পরে পৃথিবীর মাটিতে :p অবতরণ করে। এতে নাকি আনুমানিক দেড় থেকে দু'বছর সময় লাগে। :D
 
তারপর জীবন স্বাভাবিক হয়ে আসে, জীবন একঘেয়ে হয়ে আসে। সেই প্রাগৈতিহাসিক সাংসারিক জীবন। আগে থেকে মানসিকভাবে তৈরি না থাকলে ইউফোরিক মুডে ব্যাঘাত ঘটে এমন সবকিছুই তখন বিরক্তিকর লাগে। হঠাৎ মনে হয়- নাহ, আগেই বোধহয় ভালো ছিলাম!! মানসিকভাবে তৈরি না থাকায় নতুন যেকোন সমস্যায় বিগড়ে যায় মন। সংসারে লেগে যায় অশান্তি। ফেসবুকে দেখা যায় নতুন আপডেট- গিবনে কী প্লাম?? :D
 
ব্যাচেলর সমিতির সদস্যদের এইসব অলীক কল্পনা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বুঝতে হবে- বিয়ে মানেই সুখের সাগর নয়। বরং বিয়ে করা মানে জীবনের সকল কাঠিন্যের বিপরীতে নিজেকে দায়িত্ববান পুরুষ হিসেবে ঘোষণা করা। বিয়ে মানে সমস্যাসংকুল পৃথিবীর সব বাধা মোকাবেলায় একজন যোগ্য সঙ্গী খুঁজে নেয়া।

বিয়ের পরে একজন পুরুষ কিংবা নারীর জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলোঃ হাজারটা সমস্যার ভেতরেও একটা হাসিমুখ, আর একটা সবুজ মন বাঁচিয়ে রাখা। সত্যিকার একটা সুখী সংসারের জন্য এইটাই বোধহয় সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
(বিবাহ কথন-১৪)


শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ভাই পেটে ব্যথা, কী ঔষধ খাবো?

ভাই পেটে ব্যথা, কী ঔষধ খাবো?????? ভাই মাথা ব্যথা, কী ঔষধ খাবো?????? বুকটা ব্যথা করছে, কী ঔষধ খাবো???? আপনার ভাবীর কেমন কেমন লাগছে। কী ঔষধ খাওয়াবো??????

Every doctors have to answer these questions everyday.... অত্যন্ত নিরীহ প্রশ্ন। প্রশ্নকর্তাদের দোষ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু প্রশ্নগুলো অতীব সাদাসিধা হলেও উত্তর দিতে গিয়ে ডাক্তারদের ঘাম ছুটে যায়।
অনেকেরই ধারণা, ডাক্তারিবিদ্যা মানে রোগের লক্ষণ অনুযায়ী কিছু ওষুধের নাম মুখস্ত করা। তারপর এই সমস্যায় এই ওষুধ, ঐ সমস্যায় ঐ ওষুধ দুই বা তিনবেলা খাওয়ার উপদেশ দেয়া। জ্বর হলে একটা এন্টিবায়োটিক দেয়া। ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ। এই তো, ডাক্তারিতে আর কী এমন আছে??? 

এইরকম ধারণার বশবর্তী হয়ে ঔষধের দোকানদাররাও প্রেসক্রিপশন পড়ে পড়ে ডাক্তার হয়ে যায়। জনগন ভাবেন- রোগীর দুইদিনের জ্বর, একটা এন্টিবায়োটিক দিলেই হয়ে যায়। কিন্তু তা না, যাওয়ামাত্রই দিলো একগাদা পরীক্ষা নিরীক্ষা। বললাম তলপেটে একটু ব্যথা করছে। একটু পেটে চাপ দিয়ে দেখলো। আবার এটা ওটা পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে বললো। কেনরে ভাই, খালি কমিশন খাওয়ার ধান্দা ক্যান। ব্যথার ঔষধ দিলেই তো হয়। এত পরীক্ষা নিরীক্ষার দরকার কী??

সমস্যাটা হলো- পেটে ব্যথার অসংখ্য কারণ আছে। বুকে ব্যথার অসংখ্য কারণ আছে। মাথা ব্যথারও অনেক কারণ আছে। কিছু কারণ খুব ছোটখাটো, কিন্তু কিছু কারণ খুব ভয়াবহ। পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয় সঠিক কারণটা খোঁজার জন্য। খারাপ কিছু নেই এটা কনফার্ম হওয়ার জন্য। থাকলেও যেন ডায়াগনোসিস মিস না হয় সেজন্য। সো, আপনি যদি একজন সচেতন নাগরিক হোন- ডাক্তারকে কম পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য না বলে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারগুলোকে বলুন ফি কমাতে। সরকারকে বলুন পরীক্ষা নিরীক্ষার ফি কন্ট্রোল করতে। যাতে আপনি কম টাকায় পরীক্ষাগুলো করাতে পারেন। যতবেশি প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাবেন তত ভালো ডায়াগনোসিস হবে। তত ভালো চিকিৎসা পাবেন। বিকজ, ডায়াগনোসিস ইজ দা কী ফর ট্রিটমেন্ট।

শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

খারাপের ভেতরেও ভালো কিছু বের করার চেষ্টা?

ইদানীং কিছু কিছু মানুষকে দেখা যাচ্ছে তারা যেকোন খারাপের ভেতরেও ভালো কিছু বের করার চেষ্টা করছেন। খারাপকে বাতিল না করে তাকে একটা ভালো দিকে ডাইভার্ট করার ব্যর্থ চেষ্টা করছেন। যেমন- ভালোবাসা দিবস বা ভ্যালেন্টাইন দিবস। এই দিবস উদযাপন করাটা নিঃসন্দেহে খারাপ। ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও এর কোন ভালো দিক কেউ আমাকে দেখাতে পারবেন না। এই দিবসের নামে যা কিছু হয় সবই খারাপ। এখন কেউ কেউ এই দিনকে মায়ের জন্য ভালোবাসা, বাবার জন্য ভালোবাসা, বন্ধুর জন্য ভালোবাসা প্রকাশের দিবস হিসেবে গ্রহণ করতে চাইছেন। কখনো বলা হয়নি মা তোমাকে ভালোবাসি- এমন কিছু কথা বলে আবেগ সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। এই দিবসকে সামাজিকভাবে গ্রহনযোগ্যতা দেয়ার চেষ্টা করছেন।

এই সকল প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। সব খারাপকেই ভালোয় রুপ দেয়ার সুযোগ নেই। কিছু কিছু খারাপকে সরাসরি বাতিল করে দিতে হবে। ভালোবাসা বা ভ্যালেন্টাইন দিবস এমনই একটা খারাপ উদ্যোগ যাকে কোনোভাবেই এবং কোনো রুপেই প্রশ্রয় দেয়া উচিত হবে না। এটিকে সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য একটি মন্দ উদ্যোগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

বৃহস্পতিবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মৎস্যকথা

আমরা যে একসময় আসলেই 'মাছে ভাতে বাঙালি' ছিলাম এতে কোন সন্দেহ নাই। মাছের সাথে বাঙালির সম্পর্ক কতটা গভীর তা বোঝা যায় বাঙালি সমাজে প্রচলিত প্রবাদ প্রবচনে। বাঙালি মাত্রই 'গভীর জলের মাছ'। তারা 'শাক দিয়ে মাছ ঢাকতে' ওস্তাদ। 'চুনোপুঁটি' বাঙালিরা 'কই মাছের প্রাণ' হলেও তাদেরকে নানা কারণে প্রায়শই বেঘোরে মারা পড়তে দেখা যায়। 'রুই কাতলা'রা এইসব অঘটনে জড়িত থাকলেও 'রাঘব বোয়াল'দের আশ্রয়ে থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদেশের রাজনীতিবিদরা যেন একেকজন 'মাছের মা'। এইসব 'মাছের মায়ের পুত্রশোক' দেখে দেখে আমরা ক্লান্ত। 'ইলশেগুঁড়ি' উপভোগ করার মত সুখ এখন আর আমাদের মনে অবশিষ্ট নাই।

মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ডাক্তার ছাড়া সবাই লাটসাহেব!

'আমার রোগীর স্যালাইন চলে না!' হাসপাতালে ডাক্তারদের কানে আসা একটা কমন এবং বলা চলে 'বিরক্তি উদ্রেককারী' সংলাপ।
কারণ, স্যালাইন চলছে কিনা তা দেখার জন্য নার্সরা আছেন। হয়তো নার্স সামনেই আছে, অথবা বেডের পাশ থেকে একটু আগে হেঁটে এসেছে। কিন্তু তবুও এই সমস্যার কথা নার্সকে না বলে ডাক্তারকেই বলতে হবে কেন?

প্রথমত, হাসপাতালে এসে যদি কারো কাছে ভালো করে একটু কথা বলার আশা থাকে তা একমাত্র ডাক্তার। দারোয়ান, ওয়ার্ড বয়, এমনকি নার্সদেরও একটা অংশ নানাভাবে রোগীর স্বজনদের সাথে খবরদারি ও দুর্ব্যবহার করেন। ফলে কথা বলার জায়গাটা থাকে একমাত্র ডাক্তারের কাছেই।

সরকারি হাসপাতালে ডাক্তার ছাড়া সবাই যেন লাটসাহেব! 


দ্বিতীয় কারণ, কার কী দায়িত্ব সে সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখেন না বেশিরভাগ মানুষ। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার জন্য যে অ-ডাক্তার প্রশাসন আছে সে খবর বলতে গেলে কেউই রাখে না।
হাসপাতালের অপরিচ্ছন্নতা কিংবা অব্যবস্থাপনার জন্য যতজন কুমন্তব্য করেছেন, তাদের মধ্যে একজনও কোনদিন হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তরে অভিযোগ করেছেন বলে আমি শুনি নাই।

তৃতীয়ত, ডাক্তার বলতে আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের মনে ভেসে ওঠে তাদের গ্রামের 'মোখলেছ ডাক্তারে'র চেহারা। যিনি আদতে একজন প্যারামেডিক। রাত বিরাতে রোগীর বাড়িতে যান, নিজেই ঔষধ সরবরাহ করেন, নিজেই ইঞ্জেকশান পুশ করেন। সেকারণেই বড় হাসপাতালে এসেও মানুষ আশা করে, ডাক্তারই ঝুলিয়ে দেবে স্যালাইন , ডাক্তারই পুশ করে দেবে ইঞ্জেকশান।

সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

The Ultimate Weapon: গার্জিয়ানরা সবসময় সন্তানের মঙ্গল চান?

বলা হয়- গার্জিয়ানরা সবসময় সন্তানের মঙ্গল চান। কখনো যুক্তিতে টিকতে না পারলে এই বাক্যটা হয়ে ওঠে তাঁদের মোক্ষম যুক্তি, শেষ অস্ত্র!!

কিন্তু কথাটা অন্যক্ষেত্রে ঠিক হলেও বিয়ের ক্ষেত্রে বোধহয় পুরোপুরি ঠিক না। এই জায়গায় এসে গার্জিয়ানরা সন্তানের চেয়ে নিজের স্বার্থটাকেই অনেক বেশি বড় করে দেখেন।

ছেলের বা মেয়ের বিয়ের জন্য কীভাবে চিন্তা করেন বাবা মায়েরা? তারা প্রথমেই চিন্তা করেন- নিজের ভাই বোন বা বন্ধু বান্ধবীর ছেলে/মেয়ের সাথে নিজের ছেলে/মেয়ের বিয়ে দেবেন। প্রথম 'খোঁজ দা সার্চ'টা চলে এদের মধ্যেই। অনেক সময় দেখা যায়- বাচ্চার জন্মের আগেই তার বিয়ের কথাবার্তা পাকা হয়ে আছে!! :D আমার মেয়ের সাথে তোর ছেলের বিয়ে দেবো, পাকা কথা দিলাম কিন্তু!!! :P
 
যদি এটা সম্ভব না হয়- তাহলে কী ঘটে? যখনই কোন প্রস্তাব আসে, অভিভাবকের প্রথম প্রশ্নটা থাকে- ছেলের/মেয়ের বাবা কী করে? অর্থাৎ তারা চিন্তা করেন তাঁদের বেয়াইটা কে হচ্ছে! ছেলেটা বা মেয়েটা কে, কী, তার চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়ায় ছেলের/মেয়ের বাপ কে এবং কী!! পাত্র-পাত্রীর নিজের যোগ্যতার চেয়ে কার ছেলে বা কার মেয়ে অভিভাবকদের কাছে সেটাই হয়ে ওঠে 'বড় যোগ্যতা'।

সন্তান দেখে তার নিজের স্বার্থ, তার থাকে নিজস্ব চিন্তাভাবনা, নিজস্ব পছন্দের মাপকাঠি। আর অভিভাবক দেখেন তাঁর নিজের স্বার্থ, তাঁদের থাকে আলাদা মাপকাঠি। দুয়ের মাঝে প্রায়শই দেখা যায় বিস্তর ফারাক।
এই নিয়ে অভিভাবকদের সাথে সন্তানের টানাপোড়েন হয় নাই, এমন পরিবার বোধহয় বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। যে পরিবারে কখনোই কোন মতবিরোধ হয় নাই, বিয়ের প্রসঙ্গে সেখানেও 'ঝামেলা' লেগেই যায়। কখনো বাবা মন খারাপ করেন, কখনো মা, কখনো ভাই বোন কিংবা খালা মামা চাচা।

সবার মন রক্ষা করতে গেলে বেশিরভাগ সময় সন্তানদেরকে নিজের মনটাকেই বিসর্জন দিতে হয়। আর এই মন বিসর্জনের 'বধ' পর্বে অভিভাবকরা সবচেয়ে মোক্ষম যে যুক্তি সামনে নিয়ে আসেন তা হলো- "গার্জিয়ানরা কি কখনো ছেলেমেয়ের অমঙ্গল চাইতে পারেন!!" যদিও বাস্তবে তা সবসময় সত্য না।

অনেক সময়ই সিদ্ধান্তের ব্যাকগ্রাউন্ডে সন্তানের মঙ্গল অমঙ্গলের চেয়ে অভিভাবকদের নিজেদের স্বার্থচিন্তাই প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে।

(বিবাহ কথন-১৩)

শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

যদি কেউ বিয়ে করে ঘরজামাই হতে চান..

আমাদের দেশে এক বিচিত্র কারণে 'ঘরজামাই'দেরকে বাঁকা চোখে দেখা হয় । সিনেমা নাটকেও ঘরজামাইকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য মূলক পার্ট দেয়া হয়। ঘরজামাইকে নিয়া সবাই হাসাহাসি করে । মেয়ে, মানে ঘরজামাইয়ের বউ নিজেও হীনম্মন্যতায় ভোগে । 'স্বামীর বাড়ি' যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে । বাপের বাড়ি থেকে চলে যেতে চায় ।
কিন্তু প্রয়োজন সাপেক্ষে 'ঘরজামাই' বিষয়টাতে আমি খারাপ কিছু দেখিনা। মেয়ে যদি বাপের বাড়ি ছেড়ে ছেলের বাড়িতে গিয়ে সারাজীবন থাকতে পারে- একই কাজ (পরিবারের প্রতি ঠিকঠাকমত দায়িত্ব পালন সাপেক্ষে) ছেলে করলে সমস্যা কী? এতে ছেলের মান যাবে কেন? আপনি কোথায় থাকছেন তাতে কিছু আসে যায় না। আপনার কাজ, আপনার দায়িত্বনিষ্ঠাই আপনাকে সম্মানিত করবে।

ঘরজামাই মানেই এই না যে শ্বশুরবাড়িতে বসে বসে খাবেন। শ্বশুরের অন্ন ধ্বংস করবেন। সেইটা করলে কিন্তু ভাতের পাশাপাশি জুটবে লাঞ্চনা গঞ্জনা। সন্দেহ নাই।

শ্বশুরবাড়িতে থাকা মানেই শ্বশুরের গোলাম হওয়া নয়। যে বাবার কোন ছেলে নেই, তাদের পরিবারে একজন ঘরজামাই যে কতটা জরুরী, সেটা তারা ছাড়া আর কেউ হয়তো বুঝবেন না।

ভাইবেন না যে এইকথা কইছি বইলা আমারে পচাইবেন । মনে রাখবেন, আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)ও কিন্তু হযরত খাদিজা (রাঃ)কে বিয়ে করার পর একপ্রকার ঘরজামাইই ছিলেন ।

আর মুসা(আঃ) তাঁর বিয়ের পর মিশরে না ফেরা পর্যন্ত ছিলেন পুরোদস্তুর ঘরজামাই।

ভাইসব, লজ্জা করবেন না। এগিয়ে যান। কবি হেলাল হাফিজের কবিতার ভঙ্গিতে বলি-

যদি কেউ বিয়ে করে ঘরজামাই হতে চান,
তবে তাই হয়ে যান । 
উৎকৃষ্ট সময় কিন্তু আজ বয়ে যায়।

Disclaimer: এই পর্বের বক্তব্য সম্পূর্ণই তত্ত্বীয়। ইহার সহিত লেখকের ব্যক্তিগত চিন্তাভাবনার কোনরুপ সামঞ্জস্য সন্ধানের অপচেষ্টা পাঠকের বাতুলতা মাত্র হইবে, এবং তাহা অবিধারিতভাবেই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইবে।

(বিবাহ কথন-১২)

বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

মেয়ের অমতে বিয়েঃ জ্যান্ত কবর

বিয়ের ক্ষেত্রে মেয়ের মতামতকে কতটা গুরুত্ব দেয়া হয়? আমাদের সমাজে একে সাধারণত তেমন ধর্তব্যের মধ্যে গণ্য করা হয় না। প্রথমত, মতামত নেয়াই হয়না। দ্বিতীয়ত, মেয়েরা মতামত দিলেও তা উপেক্ষা করা হয়। অথবা এমন অবস্থায় এনে ফেলা হয়, যখন মেয়ের যতই অপছন্দ হোক, 'হ্যা' বলা ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

মুসলিমদের মাঝেও এর ব্যতিক্রম দেখা যায় না। যদিও ইসলামী বিধানে মেয়েদের ব্যাপক স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে।

"হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মেয়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বললো, হে আল্লাহর রাসুল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসুল (সাঃ) তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, মেয়েটি সত্যি বলেছে। তখন রাসুল (সাঃ) মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। (সুনানে সাঈদ বিন মানসূর)
---
ইসহাক ইবনু মানসূর (রহঃ) .... আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, অকুমারী মহিলাকে তার সুস্পষ্ট অনুমতি ব্যতিরেকে বিবাহ দেওয়া যাবে না। কুমারী মহিলাকেও তার সম্মতি ব্যতিরেকে বিবাহ দেওয়া যাবে না।( ইবনু মাজাহ, বুখারি, মুসলিম, তিরমিজী)
---
এমনকি মেয়ের অমত থাকলে বিয়ে হয়ে যাবার পরেও রাসুল (সাঃ) তা বাতিল করার অধিকার দিয়েছেন।

"হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। এক কুমারী মেয়ে রাসুল (সাঃ) এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্বেও বিয়ে দিয়েছেন। তখন রাসুল (সাঃ) সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, [যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে]।" (মুসনাদে আহমাদ, সুনানে ইবনে মাজাহ, সুনানে আবু দাউদ)
---
সাবালিকা মেয়ের নিজ বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অভিভাবক অপেক্ষা তার নিজেরই বেশি। (মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী)
এমনকি কোনো মেয়ে যদি প্রাক্তন স্বামীকে আবার বিয়ে করতে চায়, তাতেও বাধা দিতে নিষেধ করা হয়েছে।
"তারা যদি ন্যায়সঙ্গতভাবে পরস্পর সম্মত হয়, তবে স্ত্রীগণ নিজেদের (প্রাক্তন) স্বামীদেরকে বিবাহ করতে চাইলে তোমরা তাদের বাধা দিও না। (সূরা বাকারা : ২৩২)"
---
মেয়েদের এই অধিকার ও স্বাধীনতা সম্পর্কে পুরুষদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা দরকার। বিয়ের মত এত গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারে যদি কারো পছন্দ অপছন্দকে গুরুত্ব না দেয়া হয়, এর অর্থ দাঁড়ায় মানুষ হিসেবে তার স্বাধীন স্বত্ত্বাকে অস্বীকার করা। নিজের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়ার যোগ্যতা একজন মেয়ের আছে, এই বিশ্বাস সকল পুরুষকেই রাখতে হবে।

সবচেয়ে গুরুতর ব্যাপারটা হলো- কোন মেয়ের অমতে তার বিয়ে দেয়া হলে তা জায়েজ/বৈধই হয় না। আর এই সময়ের মুসলিম স্কলাররা মনে করেন- একজন মেয়েকে জোর করে তার অপছন্দের কারো সাথে বিয়ে দেয়া আসলে ইসলামপূর্ব যুগে মেয়েশিশুকে জ্যান্ত কবর দেয়ার সমতুল্য।

(বিবাহ কথন-১১)

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

আকাশচুম্বী মোহরানাঃ বরের 'অর্থদন্ড' ??

শুধু পণ্যই নয়, আমাদের সমাজে মানুষেরও মূল্য নির্ধারিত হয় টাকার অংকে।

আর এর সবচেয়ে উৎকৃষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় বিয়ের আসরে। মোহরানা নিয়ে যেভাবে দরকষাকষি করা হয়- মাছের বাজারেও ততটা করা হয় কিনা সন্দেহ।

অথচ বিয়ে কোন পণ্য কেনাবেচা নয়। বিয়ে মানে মানুষে মানুষে গড়া পবিত্র বন্ধন। প্রাণের সাথে জুড়ে দেয়া প্রাণ।
মোহরানা নির্ধারণ করা উচিৎ নারীর সম্মান, আর কিছুটা আর্থিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে। বাস্তবসম্মত ও পরিশোধযোগ্য সাধ্যের ভেতর। সেটাকে এমন অবাস্তব, আকাশচুম্বী, অপরিশোধ্য অংকে নির্ধারণ করা ঠিক না যাতে করে তা বরের কাছে 'আর্থিক দন্ডে'র মত মনে হয়!!

প্রথমেই মাথার ওপর বোঝা চাপিয়ে দিলে নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও তা কাঁটা হয়ে বিধে থাকে।
অতিরিক্ত মোহরানা পারস্পরিক সম্পর্কের কোন রক্ষাকবচ নয়। সম্পর্ক টিকে থাকে শ্রদ্ধা, বিশ্বাস, ভালোবাসার ওপর। পারস্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতার ওপর। শ্রদ্ধা কিংবা বিশ্বাস হারালে, পারস্পরিক আকর্ষণ হারালে, কাগুজে কাবিন সেখানে মূল্যহীন হয়ে যায়।

টাকার অভাবে কখনো সংসার ভাঙ্গে না। তার প্রমাণ লাখ লাখ ভূমিহীন কৃষক, ভিক্ষুক ভিখারিনীর সংসার। কোন একটা পরিবার শুধুমাত্র তখনই ভাঙতে পারে, কোন সংসারে শুধুমাত্র তখনই বিচ্ছেদ ঘটতে পারে, যখন পরস্পরের প্রতি কোন আবেগ অবশিষ্ট থাকে না। থাকে না একজনের প্রতি আরেকজনের কোন আকর্ষণ, শ্রদ্ধাবোধ।

কাবিনের টাকার অংক যে সংসারে বন্ধনের একমাত্র সুতো, সেখানে কোন সুখ অবশিষ্ট থাকে না। সেখানে সুত্রপাত হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের নানা কাহিনীর। কিছু প্রকাশ্যে আসে, বেশিরভাগই রয়ে যায় চোখের আড়ালে।
আবেগহীন সংসারে স্বামী যেন হয়ে যায় একজন দাস, আর স্ত্রীর সাথে তার আচরণ হয়ে থাকে দাসীর মত।

কাবিনের টাকা অধিক নির্ধারণ নয়, সমাজকে গুরুত্ব দিতে হবে নারীর শিক্ষা ও স্বনির্ভরতার ওপর। যে নারী নিজে নিজেকে, নিজের পরিবারকে চালানোর মত আর্থিক সক্ষমতা রাখেন, তার কাবিন নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই।
টাকার গোলামী নয়, পবিত্র সুন্দর বন্ধনগুলো টিকে থাকুক পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসার তারকাটায় গাঁথা হয়ে।

(বিবাহ কথন-১০)

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সাধ্যাতীত মোহরানাঃ দায়ী কে?

"নিমকহারাম" বলে হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো বুড়ো মকবুল। তারপর অকস্মাৎ এক অবাক কান্ড ঘটিয়ে বসলো সে। ঘরের মাঝখানে, এতগুলো লোকের সামনে হঠাৎ আমেনা আর ফাতেমা দুজনকে একসঙ্গে তালাক দিয়ে দিলো সে। রাগে কাঁপতে কাঁপতে বললো, তোরা বাইরইয়্যা যা আমার বাড়ি থাইক্যা।
(হাজার বছর ধরে/জহির রায়হান)।

বর্তমান সময়ে অতিরিক্ত/সাধ্যাতীত মোহরানা কাবিনে লেখা হয় মূলত আর্থিক নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে।
অদ্ভুত ব্যাপারটা হলোঃ একটা বিয়ের শুরুতেই মাথায় রাখা হয় 'তালাকের' কথা!!

কীভাবে এই অবস্থার উদ্ভব হলো? আমার বিশ্বাস, এর জন্য নারীসমাজ দায়ী নয়। পুরুষরাই দায়ী। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও প্রতিটি গ্রামে আট দশজন করে তালাকপ্রাপ্তা নারীর দেখা মিলত। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের মকবুল বুড়োর মত পুরুষরা বিনাকারণে একাধিক বিয়ে করতো, আর যখন তখন বলে দিত- "তিন তালাক"।

এইসব নারীর বেশিরভাগই পেতেন না তাদের মোহরানা, পেতেন না বাবার সম্পত্তির ভাগ। কারো কারো দ্বিতীয় বিয়ে হত। সতীনের ঘরে জুটতো লাঞ্চনা গঞ্জনা। আর যাদের তাও হতনা, তাদেরকে হাতে নিতে হত ভিক্ষার ঝুলি।
এখনো গ্রামে গঞ্জে যেসব নারী ভিক্ষুক দেখা যায়, তারা আসলে তালাকপ্রাপ্তা নারী, যারা বঞ্চিত হয়েছেন মোহরানা থেকে, বঞ্চিত হয়েছেন বাবার সম্পত্তি থেকে। বঞ্চিত তারা রাষ্ট্রের আইন এবং সমাজের সুরক্ষা থেকে।

তালাকের এই অপব্যবহার রোধের প্রয়োজনেই শুরু হয়েছে অতিরিক্ত এবং সাধ্যাতীত মোহরানা নির্ধারণের চল। যদিও বর্তমান তরুণ প্রজন্ম এর জন্য দায়ী নয়, কিন্তু আগের প্রজন্মের কৃতকর্মের বিষফল ভোগ করতে হচ্ছে তাদেরকেই।
(বিবাহ কথন-৯)