এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বুধবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৬

আজ সবাই ভীত !

রফিক সাহেব বিরোধী দলের কর্মী। তিনি বহুদিন ধরে বাড়িতে ঘুমান না। মাঝে মাঝে এসে বাচ্চাদের দেখে যান। সবসময় মনে ভয়, যেকোন সময় গুম করে দেয়া হবে তাকে। হয়তো কোন এক সকালে লাশ পড়ে থাকবে কোন এক ডোবার ধারে।

২/ নূরুদ্দিন সরকারি দলের যুববাহিনীর পাতিনেতা। নানামহলে যোগাযোগ আছে। নিজস্ব একটা গ্রুপ মেইনটেইন করেন। তবু সবসময় মনে ভয়, অন্য গ্রুপের কে কখন গুলি করে দেবে! এমনকি নিজের গ্রুপের কেউও যে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না তারও কোন নিশ্চয়তা নেই।

৩/ ফজলুর রেহমান একজন নাস্তিক। আল্লাহ-ভগবান-ঈশ্বরে তার বিশ্বাস নেই। তিনি মাঝে মাঝে ফেসবুক-ব্লগে নিজের মতামত প্রকাশ করেন। এখন তার ভয়ে ঘুম হয় না। কোথাও হাটতে বের হলে চারিদিকে চোখ রাখেন। কে জানে, কখন যেন ঘাড়ে চাপাতির কোপ এসে পড়ে! 

৪/ মাওলানা শফিকুল ইসলাম মসজিদের ইমাম। তিনি স্পষ্ট ভাষায় সমাজের অন্যায় অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন। জনগনকে নিয়ে অনৈতিক আয়োজনের বিরোধিতা করেন। কিন্তু এখন তারও ভয় হয়। সবসময় মনে হয়, কখন যেন সন্ত্রাসীদের গুলি এসে বুকে বিঁধবে। সবচেয়ে বেশি ভয় সাদা পোশাকধারী সরকারের বাহিনীর লোকদেরকে।  


৫/ শ্রী অরুন চন্দ্র মন্দিরের পুরোহিত। এতটা কাল নিশ্চিন্তে ধর্মকর্ম করেছেন। কিন্তু আজকাল মনে ভয় ঢুকে গেছে। কার রাজনীতির বলি হতে হয় তার ঠিক নেই। দেশে যেভাবে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে, কে যে কখন মন্দিরে হামলে পড়ে কে জানে! 



কেউ ভালো নেই। আস্তিক নাস্তিক মাওলানা পুরোহিত পাদ্রী রাজনৈতিক কর্মী সবাই ভীত। সবার দিন কাটে উদ্বেগ উৎকন্ঠায়। বাংলার মানুষের জীবনে এখন সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হলো 'ভয়'।

জোরজবরদস্তি, স্বৈরাচারী আর বিভক্তির রাজনীতি দেশকে আজ এক অদ্ভুত শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় নিয়ে এসেছে।

শুক্রবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৬

বীর বাঙালি জনতা !

ঘটনা-১: একটা লাশ পাওয়া গেল কুমিল্লায়, বিশেষ জায়গায়। তরুণীর লাশ।
ফলাফলঃ মিডিয়ায় হৈচৈ। জনতার প্রতিবাদ, খুনির শাস্তি দাবি।
ঘটনা-২: একটা লাশ পাওয়া গেল ঝিনাইদহে। এক কিশোরের লাশ। কর্তিত হাত, উৎপাটিত চোখ। থেতলানো মস্তক।
ফলাফলঃ নিঃশব্দ মিডিয়া। নিশ্চুপ জনতা। খুনিদের শাস্তি? বিষয়টা যেন কী?
#This defines who we are!! আমরা খুনির লেজ দেখে তারপর বিচার চাওয়া বীর বাঙালি জনতা।
আমাদের উৎসাহ পেয়েই নির্বিঘ্নে খুন করে চলে বর্বর খুনিরা।
খুনিদের সহযোগী আমরাই।

শনিবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৬

মধ্যরাতে লঞ্চের ছাদ !

অসীম কালো এই আকাশ,
এক পাশে আধখানা নিষ্প্রভ চাঁদ,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কয়েকটি অনুজ্জ্বল তারা,
দুপাশে বিশাল জলরাশি....

.. মধ্যরাতে লঞ্চের ছাদ,
যেন এক অলৌকিক মাঠ...

বৃহস্পতিবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৬

জনমানস


১। হত্যার শিকার তনুর ফরেনসিক রিপোর্ট নিয়ে নাকি সন্দেহ আছে। তাতে নাকি ধর্ষণের আলামত মেলেনি। আর এতে আমাদের জনগনের হায় হায় শুরু হয়ে গেছে। অবস্থা দেখে মনে হয়, এতে করে বোধহয় বিচার দাবি অযৌক্তিক হয়ে গেছে! যেন তারা হত্যা নয়, শুধু ধর্ষণের বিচার চায়! আরে ভাই, হত্যার আগে কি "ধর্ষণ" হতেই হবে? এ আপনাদের কী ধরণের চিন্তাভাবনা?
ধর্ষন হোক বা না হোক, খুন তো হয়েছে নাকি? খুনেরই বিচার হোক।
২। আমাদের বঙ্গসন্তানেরা হঠাৎ হঠাৎ প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। সবসময় না, ক্ষেত্রবিশেষে। আগুপিছু ভেবে তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেয় কোন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দেখাবে আর কোনটায় দেখাবে না।
তনু হত্যার বিচার দাবি জোরালো হবার কারণগুলি হলোঃ (ক) সে সাংস্কৃতিক সংগঠন করতো। (খ) সে মাথা ঢাকতো। (গ) সে যথেষ্ট সুন্দরী ছিল। (ঘ) সে কলেজ ছাত্রী ছিল। (ঙ) ঘটনাটা বিশেষ জায়গায় ঘটেছে। (চ) খুনি অজ্ঞাত।
এইসব উপাদান না থাকায় অন্য অনেক ধর্ষিতা/নির্যাতিতাদের বিচার দাবি করে না আমাদের সমাজ। আমাদের জনগন।

এই হলাম আমরা। এই আমাদের মানসিকতা।

বুধবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৬

চৈত্র

ক'দিনের এই ভেজা মেঘ,
আর ঝিরিঝিরি বৃষ্টির গান
প্রমাণ করে দিয়ে গেছে আমাদের যতসব
প্রাগৈতিহাসিক ভ্রান্ত ধারণা।
প্রমাণ করে গেছে-চৈত্র মানেই
খরার দাবদাহ নয়,
চৌচির মাঠ নয়,
ধুলিময় পথ নয় ।
চৈত্র মানেই নয় উতাল হাওয়ার
সর্বনাশী ঝড়।

মঙ্গলবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৬

বেনিয়াদের টাকার কাছে পরাজিত মানবতা

বাপ দাদার ভিটা মানুষ কখনো সহজে ছাড়ে না। ভিটা মানে শুধু জমি নয়, জমিতে মিশে থাকে পিতার শরীরের ঘাম, মায়ের আঁচল। থাকে পূর্বপুরুষের কবর, শৈশবের স্মৃতি। ভিটার একেকটা গাছও যেন একেকটা ইতিহাস। এই জমিন কে ছাড়বে? কেন ছাড়বে? ছেড়ে কোথায় যাবে? ন্যায্যমূল্য (অবশ্যই তা হতে হবে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক গুন বেশি) পেলে তবু হয়তো ছেড়ে যেতে পারে। কিন্তু তা কখনো হয় না। বেনিয়াদের টাকার অভাব নেই, কারখানা-বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করে তারা আরো টাকা বানাবে, অথচ মানুষের বাপ দাদার ভিটার ন্যায্যমূল্য দেবে না। বিকল্প জমি, বাড়ি, কর্মসংস্থানের কোন ব্যবস্থা না করেই বেনিয়ারা বুলডোজার নিয়ে হাজির হয় মানুষের চৌদ্দপুরুষের ভিটায়। জমি অধিগ্রহনের নামে চলে ভিটামাটি হতে উচ্ছেদ অভিযান। তারপরঃ সিঙুর, কানসাট, আড়িয়াল বিল কিংবা বাঁশখালি; সবখানে দেখা যায় ঘটনার একই রুপ। বেনিয়াদের টাকার কাছে, লোভের কাছে পরাজিত হয় মানবতা। রাজপথে প্রবাহিত হয়- গরীব মানুষের লাল রক্ত।