এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০১১

শাশ্বত যুলফিকার

এইসব কষ্ট আমাদের খুব চেনা
আপনজনের মত
হাজারো বছর ধরে ওরা
আমাদের বুকে বিধে আছে ।
আমরা চলি ওদের, ওরা চলে আমাদের
নিত্যসঙ্গী হয়ে ।
এইসব পথঘাট আমাদের খুব চেনা
আমরা এই পথে হাঁটছি সৃষ্টির শুরু থেকে
এই পথ আর আমাদের স্রষ্টাতো একই ।

আমরা চিনি তায়েফ
আমরা ছিলাম শিয়াবে আবি তালিবে
বদরে ওহুদে খন্দক হুনায়েন বালাকোটে
আমরা ছিলাম বাঁশের কেল্লায়
এইসব কষ্ট আমাদের খুব চেনা ।

আমরা চিনি আমাদের রক্ত
এই মাটি জানে আমাদের রক্তের স্বাদ
কোটি বছর ধরে
এই মাটি আর আমরা করি এক্ই স্রষ্টার ইবাদাত ।

আর ওরা, বেশ্যার গর্ভে যাদের জন্ম
ওরাও চেনে আমাদের-আমরা ওদের
হাজারো বছর ধরে
আমাদের সাথেই তো ওদের নিত্য সংঘাত ।

এইসব কষ্ট আমাদের খুব চেনা, হাজারো বছর ধরে ।
এই পল্টন লালদিঘী চেনে আমাদের
অপেক্ষা কর, কসম সময়ের
আবার দেখা হবে হয়তো বদরে নয়
বায়তুল মোকাররম আন্দরকিল্লায়
পল্টনে লালদিঘীতে কিংবা
নতুন কোন দুর্দান্ত পথের ওপর ।

এইসব কষ্ট আমাদের খুব চেনা
আমরা আসছি
লক্ষ লক্ষ খালিদ হাতে নিয়ে আলীর যুলফিকার....

শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০১১

‘লাশ বানানোর’ বনাম ‘লাশ নিয়ে’ রাজনীতি এবং মানবতাবোধ

গত কয়েকদিন আগে ফেসবুকে ইনবক্সে কয়েকটি মেসেজ পেলাম । মুলত গালিগালাজ ও হুমকি সম্বলিত মেসেজ । লিখেছেন Devilz dance ।  বাংলা অর্থ শয়তানের নৃত্য । তার অভিযোগ , আমি আবিদের হত্যাকারীদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছি । এজন্য আমার অবস্থা ভালো হবেনা । কৌতুহলবশত প্রোফাইল চেক করলাম । পড়ছেন Chittagong medical college এ । এবং Hometown লেখা মানিকগন্জ । দেখে আশ্বস্ত হলাম । এখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে শয়তানের নৃত্য খুবই স্বাভাবিক । শয়তানের উদ্দাম নৃত্যের শিকার হয়ে প্রাণ হারাতে হয়েছে ২০তম বিডিএস এর আবিদুর রহমানকে । এর আগেও শয়তানের নৃত্যের শিকার হয়েছে আরো অনেকেই ।

Devilz dance এর ভাষাই বলে দেয় সে খুনি কেউ । কিন্তু তার ভুলটা অন্য জায়গায় । সে ভেবেছে ছাত্রশিবিরের সভাপতিকে গালিগালাজ করে মনের ঝাল মেটাবে । হয়তো আমি ভয় পেতে পারি সে আশাও করতে পারে সে ! কিন্তু সে জানেনা আমি আসলে মৃত্যুর ভয় পেতে জানিনা ,কারণ আমি একবার মরে গিয়েছিলাম বাতিলের নির্যাতনে । এখন আমার জীবনের Extended period চলছে ! আমার সাথে কথা বললে এর প্রমাণ পেতে পারে যেকেউ

বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আমি আশাবাদী নই । অনেকেই রাজনীতিকে পেশা মনে করে । লেখেও । রাজনীতি একজন মানুষের পেশা হয় কি করে ? রাজনীতির সাথে এখন ওতপ্রোতভাবে জড়িত একটি শব্দ হলো লাশ । আমি দুভাগে ভাগ করেছি । লাশ বানানোর রাজনীতি এবং লাশ নিয়ে রাজনীতি । তুলনামুলকভাবে লাশ বানানোর চেয়ে লাশ নিয়ে রাজনীতি ভালো । লাশ বানানোর রাজনীতিতে প্রতিপক্ষকে মেরে লাশ বানানো হয় ভয় তৈরি করার জন্য । দমন করার জন্য । যেমনটা হয়েছে আমাদের এখানে । আবিদকে হত্যার মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যে ছাত্রদলের নাম মুখে আনলে লাশ হতে হবে । লাশ নিয়ে যে রাজনীতি সেটা হয় মুলত দোষীদের বিচার দাবি করে এবং জনগনের সহানুভুতি আদায়ের প্রচেষ্টায় । দোষীদের বিচার দাবি করা অবশ্যই যৌক্তিক এবং দরকারি । কিন্তু তবুও লাশ নিয়ে 'রাজনীতি করছে' কথাটা নেতিবাচক অর্থে ব্যবহৃত হয় । এবং দোষীরা এথেকে সুবিধা পেয়ে থাকে । আমাদের জনগনের কাছে কাউকে মেরে লাশ বানানো এবং সেই লাশ নিয়ে মিছিল করা দুটোই খারাপ । কেউ কেউ এমন কথাও বলেন 'মেরেছে বুঝলাম । ছি ছি লাশটা নিয়েও রাজনীতি করতে হবে কেন বুঝিনা !'
অবাক ব্যাপার । মেরেছে সেটা বোঝেন , রাজনীতি কেন এটা বোঝেন না । কাউকে মেরে ফেলার চেয়ে লাশটা সামনে রেখে মিছিল করা বেশি খারাপ ? এ কেমন সচেতনতা ? এ কেমন মানসিকতা ?

আবিদ হত্যার দায় কার ?

এই প্রশ্নটা প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর । আমি বলি , এর আসল দায় তাদের যারা তাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে শুধুমাত্র ভিন্ন মতাবলম্বনের জন্য । দায় কম নয় আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয়ের । কখনো কখনো আমার মনে হয় প্রকৃত দায় তারই । ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রী নির্যাতন এটা প্রথম নয় । অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি সবকিছু জানতেন । তবু কখনো দোষীদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি তিনি । বরং অভিযোগ আছে , তিনি বরং ভুক্তভোগীদের নানাভাবে জেরা করতেন । থানায় অভিযোগ দিতে বলতেন । যার ফলাফল হলো আবিদের নির্মমভাবে খুন হওয়া ।
দায় আছে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর । কারণ , কেউ কখনো প্রতিবাদ করেনি । সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থেকেছে  । কখনোবা রাজনৈতিক বলে পাশ কাটিয়ে গেছে । ফলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়েছে দিনদিন । ফলাফল- নির্যাতনের শেষ স্তর , মৃত্যু ।
ব্যক্তি হিসেবে আমার এবং সংগঠন হিসেবে ছাত্রশিবিরেরও পরোক্ষ  দায় আছে  বৈকি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট না হওয়ার স্বার্থে ছাত্রশিবির সবসময় ধৈর্যধারণ করেছে । যখন ৫০তম ব্যাচের বাপ্পাকে নির্যাতন করা হয়েছে তখন ছাত্রশিবির চুপ থেকেছে । চুপ থেকেছে ৫১ তম ব্যাচের শাকিল ,জামান , সবুজ ,নাবিল এদের ওপর নির্যাতনের সময় । চুপ থেকেছে ৫২ তম ব্যাচের শিমুল ,শাফায়াত কে নির্যাতনের সময় । ৫৩ তম ব্যাচের আরশাদ ,কাফী কে নির্যাতনের সময় ।
ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবির একটি বৃহত্‍ সংঘবদ্ধ ছাত্রসংগঠন । তারা যখন ধৈর্যধারন করেছে সেটা অত্যাচারীদের নিঃসন্দেহে আরও বেপরোয়া করেছে । আর তার চুড়ান্ত ফল হলো একজনের মৃত্যু ।
বিগত সংসদের একটা দাবি ছিল যে তাদের সময়ে নাকি কলেজ বন্ধ হয়নি । এর কৃতিত্ব নাকি তাদের ! তারা ছাত্রসংসদ ভবনে ছাত্রশিবিরের যে পরিমাণ নেতাকর্মীকে নির্যাতন করেছে , ছাত্রশিবির ক্যাম্পাসের  শান্তি শৃংখলার স্বার্থে ধৈর্যধারণ না করলে কলেজ কয়েকবার বন্ধ হয়ে যেত ।

নৈতিক অবস্থান ও মানবতাবোধ

' وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (آل عمران:104)
আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত, যারা সৎকাজের প্রতি আহ্বান করবে, নির্দেশ করবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে। আর তারাই হল সফলকাম। (সূরা আলে ইমরান:১০৪)
يَا بُنَيَّ أَقِمِ الصَّلَاةَ وَأْمُرْ بِالْمَعْرُوفِ وَانْهَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَاصْبِرْ عَلَى مَا أَصَابَكَ إِنَّ ذَلِكَ مِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ (لقمان:17)
হে বৎস ! সালাত কায়েম কর, সৎকাজের আদেশ দাও। মন্দকাজে নিষেধ কর এবং বিপদাপদে সবর কর, এটিই তো দৃঢ় সংকল্পের কাজ। (সূরা লোকমান : ১৭)


একজন মুসলিম হিসেবে আমি কুরআনের এই আদর্শে বিশ্বাস করি । এবং আমার নৈতিক অবস্থান এটাই । যেকোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাই । শুধু আবিদ হত্যা নয় , ছাত্রলীগের কোন নেতাকর্মীও  যদি অন্যায়ভাবে কারও আক্রমণের শিকার হয় তারও প্রতিবাদ জানাবো । আমার মানবতাবোধ সবার জন্যে সমান । একচোখা দলান্ধ নয় ।

আমার একজন ক্লাসমেট যিনি ছাত্রলীগ নেতা এবং আবিদ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত , ফেসবুকে লিখেছেন,  আমি নাকি আবিদ হত্যাকে কেন্দ্র করে ছাত্রছাত্রীদের ইমোশনকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার চেষ্টা করছি !!
কেন তিনি আমাকে অভিযুক্ত করতে চাইছেন ? ছাত্রশিবিরের সভাপতিকে টেনে এনে এই ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত করে ফায়দা লোটাই কি মূল উদ্দেশ্য নয় ?
ঠিক এ কারণেই আমি আবিদ হত্যার বিষয়ে তাত্‍ক্ষণিক প্রতিবাদ জানানোর পর চুপ ছিলাম । আমি জানি ,আমার প্রতিবাদকে 'লাশ নিয়ে রাজনীতি' বলে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে । (হয়তো বলা হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচালের ষড়যন্ত্র !! ) এবং এতে অনেক 'সচেতন(!)' ছাত্রছাত্রী জ্বি হুজুর জ্বি হুজুর করবে । ফলে দোষীদের বিচারের  দাবিতে CMCan দের মুল আন্দোলন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হতে পারে । এবং অপরাধীরা সে চেষ্টাই করছে ।
আবিদ হত্যা সহ সকল নির্যাতনের প্রতিবাদ জানাই । দোষীদের বিচার দাবি করছি । এবং অন্যায়ের প্রতিবাদে যেকোন আন্দোলনে কেউ ডাক দিলে যেকোন শক্তির বিপক্ষে আমি সেনাপতি কিংবা সৈনিকের কাতারে থাকবো , কথা দিচ্ছি ।


 শুক্রবার, নভেম্বর 11, 2011

রবিবার, ৬ নভেম্বর, ২০১১

তৃষিত অভাগা

চারিদিকে বইছে অমৃত সুধার নদী
তার কলকল হাসি কোথায় যেন করে অগ্নিসংযোগ
অবগাহন ! সেতো আমার জন্য নয় ।
তৃষিত অভাগা আমি পড়ে থাকি নিষিদ্ধ ঘাটে
কিংবা নিরালা কোন এক পাড়ভাঙা কুলে !

হিমেল হাওয়ায় দুলছে অবিরাম
ফুলের কেশরাজি
সুবাস তার হৃদয়ে তোলে ঝড়
মেলতে পারিনা শাখা তবু মধু আহরণে
যদিবা বসে পড়ি হঠাত্‍ বিষাক্ত কোন ফুলে ?

পাকা ফলের ম ম গন্ধে
মাতোয়ারা বাতাসের ঝাপটা লাগে দেহে
লালায়িত ভীরু আমি
এটে থাকি মুখ
যদিবা গন্ধম খেয়ে ফেলি ভুলে ?


 রবিবার, নভেম্বর 6, 2011

শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০১১

মন মেরামত

অর্ধমৃত মনটাকে ছড়িয়ে দিলাম আজ
সোনালী ধানের ক্ষেতে
সেখানে ফড়িংগুলো ওকে শিখিয়ে দেবে
জীবনের উচ্ছলতা
সেখানে ইদুরের গর্তগুলো শেখাবে
পথের অন্ধকার

আর সোঁদা মাটির গন্ধ
পুষ্টি যোগাবে যেন ধমনী শিরায়

প্রখর রৌদ্রে জিরিয়ে নিতে দোষ নেই
পারুল ফুলের খোপায় ।

অতঃপর বিকেলের সোনারোদ
কিংবা মুগ্ধ জোছনায়
গোসল সেরে নিক সে
সজীব প্রাণের প্রয়োজনে ।

আবার সময় এলে নামতে হবে পথে
কখনো পদাতিক
কখনো তীরন্দাজ
কখনো ঘোড়সওয়ার হয়ে
সত্য ও সুন্দরের প্রয়োজনে
জীবনের অসীম যুদ্ধে ।

শনিবার, নভেম্বর 5, 2011

সোমবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১১

জনগন ও একজন ডাক্তার- ৬ : মানুষের শরীর কোন যন্ত্র নয়

মাঝে মাঝে পত্রিকাগুলোতে ডাক্তারদের বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে সংবাদ , সম্পাদকীয় , উপসম্পাদকীয় দেখা যায় । সেসবে 'অপ্রয়োজনীয়' টেস্ট দেয়া ও দামী ওষুধ দেয়া নিয়ে ডাক্তারদের দোষারোপ করা হয় । মজার বিষয় হলো ঐ কলামগুলো লেখেন অডাক্তার সাংবাদিক ও কলামিস্টগন । এটা স্বতসিদ্ধ যে তাদের চিকিত্‍সাবিদ্যা সম্পর্কে যথাযথ ও যথেষ্ট জ্ঞান নেই । তাদের এ বিষয়ে কোন প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান নেই । তারা আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন । জনসাধারনের চিকিত্‍সা ব্যবস্থা সম্পর্কিত সচেতনতা ও সঠিক ধারণা না থাকায় তাদের এসব মন্তব্যে অনেকেই প্রভাবিত ও বিভ্রান্ত হচ্ছে । এবং এর প্রভাব পড়ছে সামাজিকভাবে । এর প্রমাণ আমরা পাচ্ছি কোথাও কেউ মারা গেলেই তার আত্নীয় স্বজন ডাক্তারদের দোষারোপ করে হামলা চালাচ্ছে । হাসপাতালে ভাংচুর চালাচ্ছে । আদালতে মামলা ঠুকে দিচ্ছে । জজ উকিল মোক্তাররাও টুপাইস কামানোর উদ্দেশ্যে অভিযোগ আমলে নিয়ে হয়রানি করছে । এই প্রবণতার শেষ ফলাফল ভালো নয় । এতে করে ডাক্তাররা আর কোন রোগীকে ঝুঁকি নিয়ে চিকিত্‍সা দিতে আগ্রহী হবেন না । সমস্যা মনে হলেই অন্য কোথাও রেফার করে দেবেন । পথে পথেই চিকিত্‍সা না পেয়ে মারা যাবে রোগী । কিছুই বলার থাকবে না ।

এইসব সাংবাদিক কলামিস্ট এবং জনগনের মুখপাত্রকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করি , টেস্ট কিংবা ওষুধ অপ্রয়োজনীয় কিনা আপনি বুঝলেন কেমনে ? এতই যদি বোঝেন , তাহলে কাল থেকে আপনিই চেম্বার দিয়ে বসে যান । রোগী দেখে সঠিক ওষুধ আর টেস্ট নাহয় আপনিই দিলেন ! অন্তত আমার কোন আপত্তি নেই এতে ।

একজন ডাক্তার বছরের পর বছর পড়াশোনা এবং বাস্তব শিক্ষা থেকে যে ওষুধ দিলেন , আপনি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখেই বলে দিলেন এটা অপ্রয়োজনীয় ! পা অবশ হয়ে গেলে ডাক্তার যখন সিটিস্ক্যান কিংবা MRI করান তখন তারা সেটাকে 'অপ্রয়োজনীয়'র কাতারে ফেলে দেন । তাদের ধারণা , অবশ হয়েছে পা , মাথার এক্সরে করাচ্ছে কেন ? নিশ্চয়ই কমিশনের আশায় ! সমস্যা প্রস্রাবে , রক্তপরীক্ষা করাচ্ছে কেন ? নিশ্চয় প্যাথোলজি ল্যাব থেকে ডাক্তার কমিশন নেয়ার জন্যই এটা করাচ্ছে ! এটার আদতে কোন প্রয়োজন ছিলনা !
নচিকেতা মজা করে সুর (ভুল বুঝবেনা , শুড় নয় কিন্তু !) দিয়ে গেয়েছেন 'ডাক্তার চাইবেন রক্তরিপোর্ট , খদ্দের পাঠালেই কমিশন !' নচিকেতার গান নিয়ে আগের একটি পোস্টেও বলেছি । Brain function disturbance এর ফলে যে পা নাড়াতে পারছেনা ,পায়ে অনুভূতি পাচ্ছেনা এটাতো নচিকেতার জানার কথা না । রক্তসঞ্চালন অথবা রক্তের উপাদানগুলোর কমবেশির ফলেই যে প্রস্রাবে সমস্যা সেটাতো নচিকেতার মত গায়ক কিংবা সাংবাদিক ভাইদের জানার কথা না । তবু তারা লিখবেন ! তবু তারা গাইবেন ! কারন ,বলার যে কেউ নেই !

শরীরের প্রতিটি অঙ্গ কিভাবে গঠিত ও সজ্জিত হয়েছে , শরীরের প্রতিটি কাজ কিভাবে সম্পাদিত হয় একজন ডাক্তারকে তা জানতে হয় । কোন কারণে কোন সমস্যাটি তৈরি হয় তা জানতে হয় । জানতে হয় প্রতিটি ওষুধের উপাদান কী , ওষুধের উপাদানগুলো কিভাবে কাজ করে , কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে সব । পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্সে (ইন্টার্নশিপ ছাড়া) সাড়ে চার বছরই এসব পড়তে হয় । এই সকল বিষয় বিবেচনা করেই একজন ডাক্তার ওষুধ দিয়ে থাকেন । টেস্ট করাতে দিয়ে থাকেন ।

মানুষের শরীর কোন জীবনহীন যন্ত্র নয় । আরেকটি গুরুত্বপুর্ণ ব্যাপার হলো মানুষের শরীর কিংবা জীবন কোন মানুষ তৈরি করেনি এবং করেনা । এমনকি মানুষের শরীরের সব রহস্য এখনও উদঘাটন করতে পারেনি মানুষ । সব কার্যপ্রণালী এখনো জানতে পারিনি আমরা । ,
তাই কোন অসুখেই ডাক্তাররাও বলতে পারেননা যে এটাই একমাত্র কিংবা প্রকৃত কারণ । বলা সম্ভব নয় এটাই একমাত্র এবং সঠিক ওষুধ ।
অর্জিত জ্ঞান , টেস্টের রিপোর্ট এবং অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ধারনা করেই চিকিত্‍সা দেয়া হয় ।

রোগের সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য নতুন নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার করা হচ্ছে । সেগুলোই মেডিকেল টেস্ট । একটা যন্ত্র সমস্যাগ্রস্ত হলে সেটাকে খুলে দেখা যায় । আবার সব পার্টস লাগিয়ে দেয়া যায় । একাজটি করা যায় যখন ইচ্ছে তখনই । যেকোন পার্টস সহজে বদলে ফেলা যায় । কিন্তু মানুষের শরীরের অঙ্গ গুলো কি ইচ্ছেমতন খোলা কিংবা লাগানো যায় ? পেটের সমস্যা হলেই কি পেটটা কেটে দেখা সম্ভব ভেতরে কী হয়েছে ? মাথার সমস্যা থাকলেই কি মাথাটা খুলে পরীক্ষা করা যাবে ? উত্তর -না ।
এজন্যই সকল পরীক্ষা করতে হয় বাইরে থেকে । যতবেশি পরীক্ষানিরীক্ষা করা যাবে , রোগনির্ণয় হবে তত নির্ভুল । চিকিত্‍সা হবে তত সহজ ,সঠিক এবং উপকারি ।
আমাদের দেশে এখনো CT Scan, Ultrasonogram এগুলোকে উচ্চমানের টেস্ট হিসেবে ধরা হয় । উন্নতবিশ্বে এগুলো রুটিন চেকআপের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে । শুনেছি প্রবাসী অনেক বাংলাদেশি অসুস্থ হলে দেশে চলে আসেন । চিকিত্‍সা করিয়ে আবার চলে যান । কারণ , জ্বর সারানোর জন্য চিকিত্‍সা করতে গেলে যা খরচ- সেই খরচে দেশে আসা যাওয়া , চিকিত্‍সা এবং বাসায় একটা পার্টি দেয়া যায় !



 সোমবার, সেপ্টেম্বর 26, 2011

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১১

মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষা নেয়নি চেতনার দাবিদাররা

বর্তমান বাংলাদেশ এক জগাখিচুড়ী অবস্থা পার করছে । ক্ষমতায় আছে স্বঘোষিত স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি । তারা নিজেদের প্রয়োজন মাফিক সবাইকে যুদ্ধাপরাধী এবং রাজাকার বলে আখ্যা দেন । সর্বশেষ রাজাকার ঘোষিত হয়েছেন বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী । টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতারা কাদের সিদ্দিকীকে রাজাকার আখ্যা দিয়ে মিছিল সমাবেশ করেন । কাদের সিদ্দিকীর দল কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সেখানে সমাবেশ ডাকলে সেটা পন্ড করে দেয় আওয়ামী লীগ । (কাদের সিদ্দীকি একমাত্র ব্যক্তি যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ করেছিলেন । আজকের সুবিধাভোগীরা তখন গর্তে লুকিয়ে ছিল । কেউ টু শব্দটি করেনি ।)

অপরদিকে বিরোধী দলগুলো সরকারের আজ্ঞাবাহী পুলিশ , গোয়েন্দা সংস্থা , আদালত এবং সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে চরম নিপীড়নের শিকার । চারিদিকে শোষণ , বঞ্চনা ও অব্যবস্থাপনার মহামারীরুপ । এই বিষয়গুলোর সবই পরিবর্তনের নিয়ামক । বিরোধী রাজনৈতিক দল শক্তিশালী হলে পরিবর্তন হবে দ্রুত । অন্যথায় জনগনের বিপ্লব বিলম্বিত হবে ।

ইতিহাস সবসময় শোষণ , বঞ্চনা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে । কিন্তু নিপীড়নকারীরা তবুও নিপীড়ন চালিয়ে যায় । চালিয়ে যায় নির্যাতন । একজন মণিষী বলেছিলেন ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা নাকি এটাই যে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না । সেজন্যই বারবার ফিরে আসে ইতিহাস ।

প্রথমেই ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে বলি । যুদ্ধটা হয়েছিল কেন ? পাকিস্তান গঠনের পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পুর্ব পাকিস্তানের জনগনকে নানাভাবে বঞ্চিত করে আসছিলো । তারা পুর্ব পাকিস্তানের মানুষকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক মনে করত । এতে করে মানুষ ক্রমাগতভাবে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠেছিল । জমা হয়েছিল আক্রোশের বারুদ । কিন্তু তবুও যুদ্ধ শুরু হয়নি ২৩টি বছর । আন্দোলন হয়েছে । পুলিশের লাঠিপেটা , হামলা মামলা গুলি হয়েছে । শেখ মুজিবুর রহমানের মত নেতাকে ষড়যন্ত্রের মামলায় গ্রেপ্তার করে জেলে পুরে রাখা হয়েছে । এরপর ২৫ মার্চ ১৯৭১ ।
 রাতের আঁধারে নিরীহ মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছে সেনাবাহিনী রাইফেল আর কামান নিয়ে ।
তারপর ধীরে ধীরে সংগঠিত হয় সাধারন মানুষ । শুরু হয় যুদ্ধ । যুদ্ধ শুরুর সময় যারা ছিলো নিরস্ত্র , অপ্রশিক্ষিত । তারাই জিতলো যুদ্ধে । ২৫শে মার্চ সেনাবাহিনী নিরীহ জনতার ওপর ঝাঁপিয়ে না পড়লে কি যুদ্ধটা শুরু হত ? সম্ভবত হত না । অত্যাচারের চুড়ান্তরুপ ছিলো সেটা । তাই চুড়ান্ত পতন হয় অত্যাচারীদের ।

এটা সবাই জানেন । কিন্তু এ থেকে শিক্ষা নেয়না কেউই । কোন দল বা গোষ্ঠির প্রতি বঞ্চনা , নিপীড়ন করলে তা মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে । বঞ্চিত মানুষেরা একসময় ঘুরে দাড়াবেই । আপাতদৃষ্টিতে তাঁদের দুর্বল মনে হলেও শেষ বিজয়টা তাঁদেরই হবে ।

মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক পরিবর্তনের জোয়ারটা কোথায় শুরু হয়েছিল মনে আছে ? তিউনিশিয়ার মোহাম্মদ বুআজিজি স্নাতক পাশ করে কোন চাকরি পাননি । বেকার বুআজিজি রাস্তার ধারে একটা সবজির দোকান দেন । পুলিশ তাকে সেখান থেকেও উচ্ছেদ করে । রাগে ক্ষোভে দুঃখে আত্নহত্যা করেন তিনি । এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ জনতা রাস্তায় নেমে আসে । একজন নিরীহ মানুষের মৃত্যু আগুন ধরিয়ে দেয় বারুদের স্তুপে । একের পর এক উত্‍খাত হয় তিউনিশিয়ার বেন আলি , মিশরের হোসনি মোবারক । একই জোয়ারের ঢেউ লেগেছে সিরিয়ায় , ইয়েমেনে ।
শাসকশ্রেণী কি ভেবেছিল এই সামান্য কাজের জন্য এতবড় বিপদ হবে তাঁদের ? ভাবেনি ।

বাংলাদেশের বর্তমান শাসকশ্রেণী মুক্তিযুদ্ধের চেতনার দাবিদার । কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে , তারা মুক্তিযুদ্ধ থেকে শিক্ষাগ্রহন করেনি । ,মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল শোষণ বঞ্চনা ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে যুদ্ধ । দুর্ভাগ্যজনক যে এই শাসকগোষ্ঠী পাকিস্তানি শাসকদের মত আচরন করছে । বিরোধীদলগুলো এবং জনগনের ওপর এমন আচরন করা হচ্ছে যেন তারা এদেশেরই মানুষ না । নিজেদের মহাশক্তিমান ভেবে সবাইকে তুচ্ছজ্ঞান করছে । জ্বালানি , দ্রব্যমুল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয়ের উর্ধ্বগতি , গ্যাস পানি বিদ্যুতসংকট , দেশবিরোধী চুক্তি , হত্যা ,ধর্ষণ , গুম , দুর্নীতি , শেয়ারবাজার লুট ইত্যাদি মানুষকে দিন দিন ক্রুদ্ধ করে তুলছে । মুখের ভাষা বাধাগ্রস্ত করায় মানুষ হাতের ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে । শান্তিপুর্ন প্রতিবাদে বাধা দেয়ায় প্রতিবাদ হয়ে উঠছে সহিংস । দেশ আবারো চরম সংকটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ।
ইতিহাস থেকে শিক্ষা না নিলে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঠেকানো যাবে না । নিজের দেশেই জীবনের প্রয়োজনে মানুষ মুক্তির জন্য নতুন পথ খুঁজবে । সুত্রপাত হবে হয়তো নতুন যুদ্ধের । সেটা কি গৃহযুদ্ধ হতে পারে ? যাই হোক না কেন , নিপীড়নকারীদের পতন হবেই । সকল ইতিহাস তাই বলে ।


মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর 20, 2011

শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১১

জনগন ও একজন ডাক্তার- ৫ঃ ডাক্তার বাইরে প্রাকটিস করেন কেন ?

ডাক্তার বাইরে প্রাকটিস করেন কেন ? প্রশ্নটা এভাবেই আসে । শিক্ষা এবং চিকিত্‍সা মানুষের মৌলিক অধিকার । কোন মানুষই যেন শিক্ষা এবং চিকিত্‍সা থেকে বঞ্চিত না হয় সেরকমটাই হওয়া উচিত্‍ । চাই সে ধনী হোক কিংবা কপর্দকহীন হোক । শিক্ষা এবং চিকিত্‍সার বেসরকারিকরণ আমি সমর্থন করিনা । কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে , এই মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব কার ? জনগনের ভাবগতিক দেখে মনে হয় এটার দায়িত্ব 'ডাক্তারের' !

এত এত ক্লিনিক , ডায়াগনোস্টিক সেন্টার গড়ে উঠছে । সেগুলোতে অতিরিক্ত খরচ ও নানা অনিয়মের কথা বলার সময় অনেকেরই গলা চড়ে যায় , যদিও রোগীরও অভাব হয়না । সমস্যাটা হলো . এজন্য ডাক্তারকেই দায়ী করা হয় ।
জনগনের মৌলিক অধিকার চিকিত্‍সা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের । ডাক্তারের নয় ।
এজন্য যত ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন সেটা সরকারকেই নিতে হবে । যারা সরকারি চাকুরিতে যোগ দিয়েছেন তাদের নির্ধারিত সময়ে দায়িত্ব ফাঁকি দেয়াটা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য নয় । কিন্তু এর বাইরে প্র্যাকটিস করতে ডাক্তারদের বাধ্য করছে সরকারই ! চার বছরে বিবিএ কোর্স করে কিংবা ইন্জিনিয়ারিং এর বন্ধুরা যখন চল্লিশ হাজার টাকা বেতনে চাকুরি শুরু করে তখন ছয় বছরে এমবিবিএস কোর্স শেষ করা একজন ডাক্তার বেকার ! স্বাভাবিকভাবেই ডাক্তারও চাইবে ত্রিশ চল্লিশ হাজার টাকা আয় করতে । বিবিএ করা বন্ধু তার অফিসে সময় দেয় ৮ ঘন্টা । একই পরিমাণ উপার্জন করতে সদ্য ডাক্তারকে দৈনিক ১৬ ঘন্টা ডিউটি দিতে হবে ক্লিনিকে ।
এভাবেই একজন নবীন ডাক্তারের মনে প্রথমেই একটা 'জেদী' এবং পুঁজিবাদী চেতনার বীজ বপিত হয় । ইন্টার্নশীপ শেষ করার পরেই যখন একজন ডাক্তার নিজের অবস্থান , নিজের এতদিনের কষ্টগুলোর কথা অন্য বন্ধুদের অবস্থার সাথে তুলনা করেন তখন তাঁর মনে একটা কঠোরতা তৈরি হয় । 'সেবা'র বিষয়টা তাঁর কাছে
একটা প্রহসনের মত মনে হয় তখন । কারণ , সেবার কথাটা শুধুমাত্র 'ডাক্তার' শব্দটার সাথেই উচ্চারিত হয় । ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ এর ব্যাপারে 'সেবা'র কথাটা কি শোনা যায় ?


সবাই সেবার ব্রত নিয়ে ডাক্তার হয় এটাই জনগনের ধারণা এবং বিশ্বাস । অথবা ভাবটা এমন যে ডাক্তার হলেই তাকে বাধ্যতামূলকভাবে সেবার মনোভাব রাখতেই হবে । ব্লগে একজনের কমেন্ট দেখলাম এরকম 'সেবার জন্য ডাক্তার হয়েছেন , এখন আবার ফি চান কেন ?' মামা নয় , এ যেন খালার বাড়ির আব্দার ! স্বভাবতই প্রশ্ন করতেই পারি , যারা বিবিএ করেছেন তারা কি সেবার ব্রত নিয়ে করেছেন ? যারা ইলেক্ট্রিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং এ পড়েন তারা কি সেবার ব্রত নিয়ে পড়েন ? অবশ্যই না ।

ডাক্তার সেবা দিতে বাধ্য ! গরীবদের ফ্রি চিকিত্‍সা করাতে বাধ্য ! বাংলাদেশের কোন দোকানে গরীবদের বিনামুল্যে দুইটাকার তেল দেয়া হয় ? চিনি দেয়া হয় ?
গরীব বলে কাকে বিনামুল্যে চাল ডাল দেয়া হয় ?
ডাক্তাররা সেবার মনোভাব রাখবেননা কিংবা মানুষকে সেবা দেবেননা আমি এমনটা বলছিনা । তবে ডাক্তার সেবা দিতে বাধ্য , জনগনের এমন ধারনার অসাড়তার কথা বলছি । খাদ্য , বস্ত্র , বাসস্থান , শিক্ষা , চিকিত্‍সা মানুষের মৌলিক অধিকার । এগুলো নিশ্চিত করার দায়িত্ব সবার , কোন নির্দিষ্ট পেশার মানুষের নয় । ডাক্তারি প্রথমত একটা পেশা , এরপর যোগ হতে পারে জনকল্যানের ব্রত । বিস্তারিত পরে লিখব , আজ এটুকুই বলছি যে এখন পর্যন্ত ডাক্তাররাই সবচেয়ে বেশি জনকল্যান করেন ।

বিদেশে তো বটেই , বাংলাদেশের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়োগ দেয়া হয় তিন চার লাখ টাকা বা তারও বেশি বেতনে । শর্ত থাকে তাঁরা বাইরে প্র্যাকটিস করবেন না । ,
ঐ একই মানের একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সরকারি হাসপাতালে বেতন পান ত্রিশহাজার টাকা । তাহলে তিনি বাইরে প্রাকটিস করতে বাধ্য হবেন না কেন ?

এইবার সেই মোক্ষম যুক্তির অবতারণা করবেন অনেকেই । আপনারা জনগনের টাকায় পড়াশোনা করেন ! এই যুক্তিটি শোনার জন্যই আমি যেন মুখিয়ে ছিলাম !
তো ভাই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কার টাকায় পড়াশোনা করেন ? বুয়েট চুয়েটের ছাত্ররা ? তাদের বেলায় তো আপনাকে 'জনগনের পক্ষে' খুঁজে পাইনা ! বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের জন্য কী বলবেন ? তারা কার টাকায় পড়াশোনা করে ?

আরেকটি বিষয় খোলাসা করা দরকার । স্বাস্থ্যখাতে যে বাজেট দেয়া হয় তা কিন্তু শুধু মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য খরচ করা হয়না ! এর প্রায় পুরোটাই জনগনের জন্যই ব্যয় হয় । কয়েকটি বেসিক সাবজেক্ট ছাড়া বাকি সকল সাবজেক্টের টিচারগনকে হাসপাতালে ডিউটি করতে হয় । জনগনের সেবার জন্যই তো নাকি !
বাজেটের সিংহভাগ ,বাঘভাগ কিংবা গন্ডারভাগই ব্যয় হয় হসপিটাল ম্যানেজমেন্টে । মেডিকেল স্টুডেন্টদের জন্য নয় ।

আরেকটি বিষয় লিখেই আজকের পর্বের ইতি টানবো । সেদিন হাসপাতালের করিডোরে একজনকে আক্ষেপ করতে দেখলাম । তার রোগী নাকি হাসপাতালে বেড পাচ্ছেনা । ডাক্তাররা বড্ড বজ্জাত ! জনগনের ধারণা , রোগী বেড না পেলে সেটাও ডাক্তারের দোষ ! আরে ভাই ডাক্তারের কাজ চিকিত্‍সা দেয়া , সিট ম্যানেজমেন্ট না । আর সরকারি হাসপাতালে এমনিতেই সিট সংকট । চমেক হাসপাতালে ১২00 বেড , প্রতিদিন চিকিত্‍সা নেয় গড়ে ২০০০ রোগী । এখানে ডাক্তার কী করবে ? এই সাধারণ বিষয়গুলো যদি কেউ না বোঝে ,সেটা আসলেই কষ্টের নয় কি ?


 শনিবার, আগস্ট 27, 2011

বুধবার, ১৭ আগস্ট, ২০১১

বিপ্লবী কুম্ভকর্ণ


এই রাত ভোর হবে
আবৃত্তি করে অনেকেই । এরপর হাই তোলে
হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে মুখটা ঢাকতেও ভুলে যায়
কখন ঘুমিয়ে পড়ে -
জানতেও পারেনা কেউ ।

সুবহে সাদিকের আভাস পেয়ে
ডেকে ওঠে ভোরের পাখিরা
এরপর ভোর হয় ; দুপুর পেরিয়ে সন্ধ্যা নামে পটে
মহান বিপ্লবী কবি তখন স্বপ্নে বিভোর
পা ছোড়েন তিনি শুন্যে
মুষ্ঠিবদ্ধ করেন হাত
তাঁর কন্ঠে আচমকা শোনা যায়
কালজয়ী কাব্য-
'এইরাত ভোর হবে' ।
হবেই হবে ।



বুধবার, ১০ আগস্ট, ২০১১

জনগন ও একজন ডাক্তার -৪ ঃ 'ডাক্তাররা রোগীকে আইসিইউ তে পাঠায় টাকার জন্য !'

মাসুদ সাহেব আজকের মত দুঃখ আর কখনো পান নাই । তিনি ভাবছেন , এখন থেকে তিনিও স্বার্থপর হয়ে যাবেন । কারো কাছে ফি কম নিবেন না । রাত বিরাতে নিজের সুখ দুঃখ ভুলে কারো চিকিত্‍সা করারও প্রয়োজনবোধ তিনি করছেন না । এতটুকু কৃতজ্ঞতাবোধ যাদের নেই , তাদের জন্য অযথা কষ্ট করবেন কেন তিনি ? মাসুদ সাহেব গরীব পরিবারের সন্তান । অনেক কষ্টের মাঝে পড়ালেখা করেছেন । ডাক্তার হয়েছেন । সম্পূর্ণ বিনামুল্যে চিকিত্‍সাসেবা দেয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় । তাঁর ইচ্ছা ছিল তিনি যথাসম্ভব কম খরচে মানুষের চিকিত্‍সা করবেন ।
মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় মাসুদ সাহেবের এক বন্ধু তাঁর এই ইচ্ছার কথা শুনে যা বলেছিলেন তার বাস্তব প্রমাণ হাতে হাতে পেয়ে আজ সেকথা মনে পড়লো তাঁর । তাঁর বন্ধু বলেছিলেন একটা প্রবাদের কথা ।
জনগন যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন ডাক্তারকে 'বাবা' ডাকে । যেকোন মুল্যে সুস্থ হতে চায় । এরপর সুস্থ হয়ে গেলে প্রথম এক মাস খুব কৃতজ্ঞ থাকে । পথেঘাটে দেখা হলে ভক্তিতে গদগদ হয়ে পড়ে । দ্বিতীয় মাসে দেখা হলে শ্রদ্ধার সাথে সালাম দেয় । তৃতীয় মাসে দেখা হলে কোনমতে শ্রদ্ধাভক্তি বিহীন সালাম দিয়ে চলে যায় । ছয় মাসের পর দেখা হলে মুখরক্ষার খাতিরে সালাম দেয় । আর ডাক্তার চোখের আড়াল হলেই বলে 'শালা ডাক্তার । আমার কাছে ২০০ টাকা ফি নিছিলো !'
কাশেম সাহেব যেদিন রাত তিনটায় ডাঃ মাসুদকে ডেকে ঢোক গিলতে গিলতে কোনমতে তার ছেলের অসুস্থতার কথা বলছিলেন সেই রাতের কথাও মনে পড়লো । একটা জরুরী কাজ সেরে এসে তিনি ঘন্টাখানেক আগে ঘুমিয়েছিলেন মাত্র । এরই মধ্যে কাশেম সাহেব এসে ডাক দিয়েছেন । ডাঃ মাসুদ তাড়াতাড়ি উঠে ব্যাগটা নিয়ে গেলেন কাশেম সাহেবের বাসায় । ছেলেটাকে দেখে ওষুধপত্র দিলেন । এরপরেও কয়েকবার তিনি নিজে গিয়ে ছেলেটার খোঁজখবর নিয়েছেন । ফিও নিয়েছেন যথেষ্ট কম । সে মাস পাঁচেক আগের কথা । একটু আগে চায়ের দোকানে চা খেতে বসে শুনলেন কাশেম সাহেবের কথা । কাশেম সাহেব তাঁর নামে কটুক্তি করে বলেছেন , 'ডাঃ মাসুদ চিকিত্‍সার নামে মানুষ ঠকাচ্ছেন !
তিনি আমার কাছে এতটাকা বিল নিয়েছিলেন !'
আপনি যতকিছুই করেন না কেন , জনগন শেষমেষ মনে রাখবে আপনার ফি-র অংকটা । তা যত কমই হোকনা কেন ! মাসুদ সাহেব আজ সিদ্ধান্ত নিলেন , খুব গরীব হলে একেবারে বিনামুল্যে চিকিত্‍সা দেবেন আর বাকিদের ক্ষেত্রে যথাযোগ্য পরিমানেই ফি নিবেন । নো মার্সি ।

অকৃতজ্ঞতার আরেকটা উদাহরণ দিচ্ছি । খুব কষ্ট পাই এধরনের কথায় । আমার এক বন্ধু একদিন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলো , তাকে নাকি কে একজন বলেছে 'ডাক্তাররা রোগীকে আইসিইউ তে পাঠায় টাকার জন্য !'
শুনে তো আমার ঙঞ অবস্থা । এ কীরকম অজ্ঞতা আর অকৃতজ্ঞতা ? আইসিইউ (Intensive care unit) একটি বিশেষায়িত চিকিত্‍সাব্যবস্থা । মুমূর্ষু রোগীদের এখানে নিবিড় পরিচর্যা ও তত্বাবধানে রাখা হয় । দেহের প্রধান প্রধান অংশগুলি (Vital organ) যখন প্রায় অক্ষম হয়ে পড়ে তখন সেগুলোকে কৃত্রিম সহায়তা (Artificial support) দিয়ে সক্রিয় রাখা হয় । এর মাধ্যমে অনেকেই বলতে গেলে 'জীবন ফিরে পান' । ডাক্তারের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকে রোগীর কষ্টলাঘব এবং যথাসম্ভব দ্রুত রোগ নিরাময় । স্বভাবতই এখানে খরচ কিছুটা বেশি হয় । এই অতিরিক্ত খরচটা কিন্তু ডাক্তারের পকেটে যায়না । ডাক্তার তার নির্দিষ্ট বেতন-ফি টাই পান । এখন কেউ যদি বলে অতিরিক্ত টাকার জন্য 'ডাক্তার' রোগীকে আইসিইউ তে পাঠান , এর চেয়ে বড় অকৃতজ্ঞতা আর কী হতে পারে ? আর ডাক্তার কি জোর করে আপনাকে চিকিত্‍সা দেয় ? আপনি তো ডাক্তারের কাছে না গেলেও পারেন নাকি ?


 বুধবার, আগস্ট 10, 2011

মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০১১

এই বর্ষায়

বৃষ্টির সাথেই যেন মিশে যায় বারবার
হৃদয়ের আকুলতা
এই বর্ষায় ।

ভেজা খড়ের চালার সোঁদা গন্ধ
আহ্বান করে হয়তোবা জীবনের প্রারম্ভিকতাকেই
আর চুঁইয়ে পড়া বৃষ্টির ফোঁটাগুলি
মনে হয় যেন সৃষ্টির আদিম তরল !

হুহু বাতাস বাতায়ন পথে আসে
মনটাকে নিয়ে যায় ভেজা আকাশের দিঘীতে
সেখানে উথাল পাথাল প্রেম
সৃষ্টি আর স্রষ্টার ।

বৃষ্টির সাথেই যেন মিশে যায় বারবার
গহন অন্তর
এই বর্ষায় ।

নিরন্তর টুপটাপ শব্দ
আর ব্যাঙের ঘ্যাঙর ডাক
জানিয়ে যায় কী এক অবর্ণন আমন্ত্রণ ।
সে আবেগকে প্রশ্রয় দেয় সময়ও
সময়ের প্রয়োজনে
তবুও থমকে থাকি , সময়ের অপেক্ষায় !

বৃষ্টিভেজা ঘাসফুলগুলি মুচকি হাসে
'তুমি কৃষক ,
নিষ্ক্রীয় কেন লাঙ্গল তোমার ?
কর্ষণ করো ভেজা মাটি ; বপন করো বীজ
বর্ষাই তো প্রকৃত সময় !'

অতঃপর
বৃষ্টির সাথেই নিয়ত মিশে যায়
প্রণোদিত অতৃপ্ত হৃদয়
এই বর্ষায় ।


 মঙ্গলবার, আগস্ট 9, 2011

রবিবার, ৭ আগস্ট, ২০১১

জনগন ও একজন ডাক্তার -৩ঃ নাপিত আর ডাক্তার একই তো নয়

নাপিত আর ডাক্তার একই তো নয়
কিন্তু দুটোই আজ প্রফেশান !
বুঝতেই পারছেন ,খুবই জনপ্রিয় একটি গানের দুটি লাইনের প্যারোডি । পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত গায়ক নচিকেতার 'সামাজিক গঠনমুলক' হিসেবে খ্যাত গানগুলির একটি হলো 'ও ডাক্তার' গানটি । বহুল প্রচারিত ও জনপ্রিয় । শুনতেও খারাপ লাগেনা বটে ! আমাদের মহান জনগনের কাছে এই গানটি একটি মোক্ষম অস্ত্র । যতজনের সাথে মিশেছি তার একটা বৃহত্‍ অংশ উপদেশ দিতে ভোলেননি 'ডাক্তারি পড়ছো , ভালো । এখনতো ডাক্তার আর কসাইর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই । তুমি যেন ওরকম না হও ।' কেউ কেউ আবার গানটি হেড়ে গলায় গেয়ে শোনানোর চেষ্টা করে । তারা হয়তো এতেই আনন্দ পায় । হায়রে জনগন ! কেযে কিসে আনন্দ পায় বোঝা মুশকিল । মুচকি হেসে বলি , 'ঠিক আছে । ভবিষ্যতে কখনো জ্বর হলে আমাকে আর ফোন করিয়েন না । কসাইকেই করিয়েন ।' তখন আবার মুখটা মলিন করে বলেন , 'না আমি আসলে ওটা বোঝাতে চাইনি !' যাকগে , উনারা যে কী বোঝেন আর কীইবা বোঝাতে চান সেটা বোঝার চেষ্টা করে মাথায় অতিরিক্ত বোঝা চাপানোর কোন যৌক্তিকতা আমি এইমুহূর্তে দেখছি না ।
যাহোক , গোড়ার কথায় ফিরে যাই ।
কসাই এবং নাপিতরা অনেক আগে থেকেই ধারালো বস্তু ব্যবহার করে । আসলে তাদের কাজটাই এমন যে ধারালো উপকরণই প্রধানত দরকার ।
একসময় , চিকিত্‍সা ছিল শাস্ত্রের পর্যায়ে । চিকিত্‍সাবিদ্যা তখনো বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নীত হয়নি । তখনকার দিনগুলোতে এই কসাই আর নাপিতরা ছিল জনগনের জন্য 'বিশিষ্ট সার্জন' । জনগন যেসব সমস্যাকে মনে করত 'কেটে ফেলার মত' সেগুলোর জন্য নাপিতের দোকানে যেত । যেমন , ফোড়া হলে নাপিত সেটা ছিদ্র করে পুজ বের করে দিত ইত্যাদি । এরপর আবিস্কৃত হলো মানবদেহের বিভিন্ন কার্যকলাপের গতিপ্রকৃতি । আবিস্কৃত হলো রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া । Artery , vein এর গতিপথ । তখনো পর্যন্ত সেই 'নাপিতীয়' চিকিত্‍সাতেই জনগন অভ্যস্ত ছিলো । এতে করে অনেকেই হয়তো সাময়িকভাবে সুস্থ হতো । কিন্তু পরবর্তীতে Secondary এবং opportunistic infection হয়ে Septicaemia র মত ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে লাগলো । শেষমেষ ডাক্তাররাই ভরসা ।
এক অঞ্চলে একজন নাপিত খুব দক্ষ , নিষ্কম্প হাতে কাটাকুটির কাজ করতো । যথেষ্ট খ্যাতি পেয়েছিল সে । লোকজন ডাক্তারের কাছে না গিয়ে ঐ নাপিতের কাছেই যাওয়া অব্যাহত রাখলো । ভালোর চেয়ে খারাপই হচ্ছিল বেশি । একদিন ডাক্তার নাপিতকে বললেন , তুমিতো অনেক ভালো কাজ কর । তুমি মাঝে মাঝে আমার কাছে এসে মানবদেহ নিয়ে কিছু কিছু শিখে যেও । আমিতো অনেক পড়াশোনা করেছি । জানাশোনা থাকলে তুমি আরো ভালোভাবে কাজ করতে পারবে । নাপিত আনন্দিত হয়ে তাই করতে লাগলো । সে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে এসে শিক্ষা নিতে লাগলো । ডাক্তার তাকে রক্তনালী (Artery) ও স্নায়ুর (Nerve) গতিপথ সম্পর্কে জানালেন । 'দেখ , এদিক দিয়ে গেছে এই রক্তনালী আর এই স্নায়ু । সাবধানে কাজ করিও । এই স্নায়ু কাটা গেলে এই হাতটা অকেজো (Paralysed) হয়ে যাবে ।' এসব জানার আগে নাপিতের হাত কাঁপত না । জানার পর থেকে নাপিত কোন কিছু ঠিকমত কাটতে পারলো না । তার হাত কাঁপতে লাগলো । এখানে কাটবো , যদি নার্ভ কেটে যায় ! এরপর থেকে রোগী আসলে নাপিত ডাক্তারের কাছেই পাঠিয়ে দিত । এভাবেই অবসান হলো কসাই ও নাপিতীয় চিকিত্‍সাব্যবস্থার ।
,
নাপিতরা এখনো আছে । থাকা দরকারও । মাস দুয়েকের অনুশীলনে শেখা বিদ্যায় কাচি খচখচ করে অনেক নাপিত জীবনরক্ষাকারী ডাক্তারের চেয়েও বেশি বিল পেয়ে যায় ।(উদাহরণ হিসেবে হাবিবস এর কথা বলা যায় , সেখানে হাজার টাকার বিনিময়ে চুল কাটানো হয় !) কেউ প্রশ্ন করেনা , চুল কেটে এত টাকা দিব কেন ? শুধু বছরের পর বছর পড়াশোনা আর দিনরাত খেটে চিকিত্‍সা করা ডাক্তারের বেলায়ই যতসব । নাপিত তার কাচি দিয়ে চুল কাটে , আর ডাক্তারের কাচি আপনার জীবন বাঁচায় । একজন সন্ত্রাসী কিংবা কসাইর ছুরি মানুষের জীবন নাশ করে অন্যদিকে ডাক্তারও ছুরি ব্যবহার করে কিন্তু সেটা জীবন রক্ষা করে । জনগনের চোখ আজো নাপিত আর ডাক্তারের মধ্যেকার পার্থক্য বুঝতে শেখেনি । দুর্ভাগ্যই বটে ।
দুঃখের সাথে তাই বলতে হয়
'নাপিত আর ডাক্তার একই তো নয় ,
কিন্তু দুটোই আজ প্রফেশান !!!'

নচিকেতা কি গানটি আরেকবার নতুন করে গাইবেন ?


 রবিবার, আগস্ট 7, 2011

শুক্রবার, ৫ আগস্ট, ২০১১

জনগন ও একজন ডাক্তার -২ : দ্বৈত মনোভাব

আগের পোস্টে কথা বলছিলাম ডাক্তারের ফি নিয়ে । সেখানেই আরেকটি বিষয় উঠে এসেছিল যে ডাক্তাররা রোগী দেখায় খুব কম সময় দেন । এখানেই জনগনের বাস্তববিমুখতা ও দ্বৈত মনোভাব প্রকাশ পায় । বাস্তবতা হচ্ছে , সরকারিভাবে চিকিত্‍সাসেবা এতই অপ্রতুল যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন ক্লিনিক ও হাসপাতাল গড়ে উঠলেও রোগীর ঠাই দেয়া যাচ্ছে না । ডাক্তারদের চেম্বারেও সিরিয়াল নিয়ে টানাটানি । (এই সুযোগে ডাক্তার যেমন তেমন ডাক্তারের পিএস এর ভাবটা উঠে যায় আসমানে !) এখন ডাক্তার যদি প্রতিজন রোগীর জন্য আধাঘন্টা করে সময় দেন (যদিও তা অবাস্তব ও অপ্রয়োজনীয়) তাহলে অনেক পেশেন্ট চিকিত্‍সা না পেয়েই ফিরে যেতে বাধ্য হবে । ডাক্তার তো আর সারাদিন রাত রোগী দেখবেন না । তারও তো একটা ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু আছে নাকি ? যাহোক পেশেন্ট নিজে চান ডাক্তার তাকে অনেকক্ষণ সময় দিন । আবার যখন ডাক্তার প্রয়োজনবশত একজন পেশেন্টকে বেশি সময় দেন তখন অপেক্ষায় থাকা অন্য পেশেন্ট ও এটেনড্যান্টরা অধৈর্য হয়ে ওঠেন । তারা ক্ষেপে যান । 'কি ভুয়া ডাক্তারের কাছে আসলাম , এতক্ষণ সময় লাগে একজন রোগী দেখতে !' বুঝুন ঠেলা । কীরকম দ্বৈত মনোভাব । ওনারা যে কী চান নিজেরাই বোঝেন না ।
আর প্রকৃত বাস্তবতাটা হলো ১৫-২০ বছর ধরে একটা বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে তারপর একজন ডাক্তার একটা বিষয়ের ওপর স্পেশালিস্ট হন । এসময়ের মধ্যে তাকে একইরকম হাজার হাজার পেশেন্ট নিয়ে কাজ করতে হয়েছে । এমবিবিএস কমপ্লিট করতে কমপক্ষে ৬.৫ বছর , এফসিপিএস শেষ করতে কমপক্ষে ৬ বছর , এমডি করতে কমপক্ষে ৬ বছর । এত সময় ব্যয় করেছে তো এজন্যই যেন অল্প সময়ে ট্রিটমেন্ট দিতে পারেন । এভাবে এত পড়াশোনা , এত পেশেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার পরও যদি একজন ডাক্তার অল্প সময়ে পেশেন্ট ম্যানেজ করতে না পারেন তাহলে ঐ ডাক্তারের ক্লিনিক্যাল আই এবং শিক্ষাব্যবস্থার গলদ নিয়েই প্রশ্ন তুলতে হবে । Clinical eye হলো একজন ডাক্তারের সন্ধানী চোখ । অনেক প্র্যাকটিসের ফলে যে অভিজ্ঞতা অর্জিত হয় তার সাথে জ্ঞান মিলিয়ে তৈরি করে ক্লিনিক্যাল আই । এতে একজন ডাক্তার রোগীর Appearance , attitude থেকেই অনেকাংশে ডায়াগনোসিস এর কাছাকাছি পৌঁছে যান । যার ক্লিনিকাল আই যত বেশি প্রখর , তিনি ততোবেশি দক্ষ চিকিত্‍সক বলে গন্য হবেন । তার ডায়াগনোসিস হবে তত দ্রুত ও নির্ভুল । পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ বিধান চন্দ্রের এ বিষয়ে ব্যাপক খ্যাতি ছিল । আমাদের স্কুলের বাংলা স্যার বলতেন 'ডাক্তার হলে বিধান চন্দ্রের মত হবি '। তিনি নাকি একজন রোগীকে একনজর দেখেই ডায়াগনোসিস করে ফেলতে পারতেন । ওনার ভাগ্য ভালো যে তাঁকে এই সময়ে বাংলাদেশে প্র্যাকটিস করতে হচ্ছে না । তিনি যদি এই সময় রোগীকে একনজর দেখেই প্রেসক্রিপশন লিখে দিতেন , তাহলে আমাদের উপরোল্লিখিত জনগন কীযে বলতো আল্লাহ মালুম !


 শুক্রবার, আগস্ট 5, 2011

বুধবার, ৩ আগস্ট, ২০১১

জনগন ও একজন ডাক্তার- ১ঃ ডাক্তারের ফি

ফ্যাক্টরি অচল । কয়েকদিন থেকে মেশিন চলছে না । বিকল মেশিন কোনভাবেই সারাতে পারছে না ফ্যাক্টরির লোকেরা । উত্‍পাদন বন্ধ । বড় বড় অর্ডার হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে । এভাবে চলতে থাকলে দেউলিয়া হয়ে যাবে কোম্পানি । ব্যাংকের লোন পরিশোধ করা যাবে না । শ্রমিকরা বিক্ষোভ করবে । বাধ্য হয়ে ফ্যাক্টরির ম্যানেজার একজন বিশেষজ্ঞ ইন্জিনিয়ার ডাকলেন । বিশেষজ্ঞ ভালোভাবে সব পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেন একটি গুরুত্বপুর্ণ জায়গায় একটি পেরেক খুলে গেছে । তিনি কর্মচারীদের দেখিয়ে দিলেন এবং সেখানে পেরেকটি মেরে দিতে বললেন । যথাস্থানে পেরেকটি লাগানোর পরই আবারও মেশিন চালু হলো ।পরদিন বিল পাঠানো হলো ১ লাখ টাকা । মালিক বেঁকে বসলেন । মাত্র একটা পেরেক ঠুকানোর জন্য এক লাখ টাকা ! তিনি বিল ফেরত পাঠালেন ।পরদিন বিশেষজ্ঞ নতুন করে বিল পাঠালেন । পেরেক ঠুকানো বাবদ ১ টাকা । আর পেরেক কোথায় লাগাতে হবে সেটা খুঁজে বের করা বাবদ ৯৯৯৯৯ টাকা ! এবার ফ্যাক্টরি মালিক কোন উত্তর খুঁজে পেলেন না ।পোস্টের শিরোনামের সাথে গল্পটি মিলিয়ে বুদ্ধিমান পাঠক এতক্ষণে হয়তো আসল কথাটি বুঝে ফেলেছেন । ঠিকই ধরেছেন , আজকের বিষয় ডাক্তারের ফি । ডাক্তারের ফি নিয়ে অনেককেই উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায় । এদের মধ্যে 'বুঝদার' লোকের সংখ্যাও কম নয় । নিজে কোটি টাকার মালিক , ব্যবসায় আসল দামের দ্বিগুন মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করে মার্সিডিজ বেন্জে ঘোরেন । ডাক্তারের ফি টা দেয়ার বেলায়ই কেবল তার পকেটে টান পড়ে ! এইতো সেদিন রেস্টুরেন্টে বসে একজন ডাক্তারদের চৌদ্দ দুগুনে আঠাশ গোষ্ঠীর কুষ্ঠি উদ্ধার করলেন । এই পোস্টের কমেন্টেও হয়তো অনেকেই কাজটা করবেন । 'ওনাদের' মহা ক্ষোভ । 'ওমুক কার্ডিওলজিস্ট এর কাছে গেলাম , পালস আর ব্লাড প্রেসার মেপে ইসিজিটা দেখে ১০ মিনিটের মধ্যে কিনা কি লিখে ছেড়ে দিলো । বিল নিলো ৫০০ টাকা । ডাহা জোচ্চুরি !' ওনাদের এটুকু বলা প্রয়োজন মনে করছি - মামা কি দরকার ছিলো কার্ডিওলজিস্টের কাছে যাবার ? মুদি দোকানে গেলেই পারতেন ! দোকানদার আপনাকে দশঘন্টা ধরে চেকআপ করে লজেন্স দিতো , মজা করে সেটাই খেতেন !এই বেকুবের দলকে আবার দেখবেন মেন্জ ক্লাবের শার্ট আর ক্যাটস আইর ক্যাপ মহানন্দে কিনছে । শৈল্পিক থেকে পান্জাবি । মহিলারা কে ক্রাফট থেকে ওয়ান টু থ্রিপিছ কিনছে । যেটার উত্‍পাদন খরচ সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা । সেটাই বিনা প্রশ্নে কিনছেন ওনারা ১৫০০ টাকায় । শোরুম থেকে বের হয়ে আফসোস করেন । ইস্ নতুন ক্যাটালগে একটা চরম ডিজাইন আসছে । আর কিছু টাকা থাকলে ওটাও নিতাম !'ওনাদের' জন্য আর বেশি কিছু বলতে চাই না । শুধু এটুকু বলবো , যে ছেলেটা আজকে কার্ডিওলজিস্ট হয়েছে সে এমনি এমনি হয়নি । আপনি যখন বন্ধুদের সাথে চুটিয়ে আড্ডা মেরেছেন তখন সে হাসপাতালে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছে । আপনি যখন মুভি দেখে সময় কাটিয়েছেন , তখন তার সময় কেটেছে বইয়ের পাতায় আর অপারেশন থিয়েটারে । এমনি করেই সে জীবনের অনেক স্বাদ আহ্লাদ বিসর্জন দিয়ে কমপক্ষে ৪০ বছর নষ্ট করেছে । এমবিবিএস করার পরও এমডি , এফসিপিএস ইত্যাদি ডিগ্রি নিয়েছে । এখনো দিনেরাতে সেবা দিয়ে যাচ্ছে মানুষকে।



বুধবার, আগস্ট 3, 2011

শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০১১

অনুভূতি !

পাহাড়ের ঢালে বেড়ে ওঠা গাছের মগডালটা কয়েকটা বৃষ্টিভেজা পাখি কাঁধে নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে আমার চোখের সামনে । অতিপ্রাকৃতিক লাগছে বিষয়টা আমার কাছে । এই সমাজে টিকে থাকার সংগ্রামের মাঝে এমন কিছু দৃশ্য হঠাত্‍ সবকিছুকে অর্থহীন করে দেয় । বৈরাগ্যবাদী করে মনকে । তবে এটাও সত্য , ভরপেট সুস্বাদু খাবার খেয়ে চারতলার জানালার সামনে ফোমের চেয়ারে গা এলিয়ে এমন দৃশ্য দেখছি বলেই এটা মনোহর লাগছে । ঠেলাগাড়ি হাতে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে দেখলে এটাকেই নিশ্চয়ই চরম অসহ্য লাগত !




শনিবার, জুলাই 16, 2011

রবিবার, ১০ জুলাই, ২০১১

শম্বুকের জন্য উপদেশ (নিজেকে শামুক ভেবে )

হে শম্বুক -
তুমি এগিয়ে চলো তোমার দুর্বার গতিতে ।
তোমার চেয়ে দ্রুতগতিতে হয়তো অনেকেই চলে
তাতে তোমার কী ?
তোমার সাথে
তুলনা হবে শুধু তোমারই ।
জেনে রেখো ,
প্রত্যেকেই কারো না কারো পিছনেই থাকে ।
হে শম্বুক -
এগিয়ে চলো অবিরাম সময়ের সাথে
যেখানে গিয়ে সমাপ্ত হবে পথ
ভেবে নিও
সেটাই তোমার গন্তব্যের সীমানা ।
হে শম্বুক -
চলার পথের সকল ভাঙ্গা সেতু
যতোটা পারো চেষ্টা করো পেরোবার
ফিরে দ্যাখো পেছনে
ভয় নেই - অনেকেই আছে , থাকবেও ।
মন খারাপ করো না । সাধ্যের অতিরিক্ত
কিছুই করার
প্রয়োজন নেই তোমার ।



 রবিবার, জুলাই 10, 2011

মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০১১

মিনতি (বাঁশকাব্য)

ট্রানজিট করিডোর
তেল গ্যাস পানি
নেন দাদা সবকিছু
দিতে আমি জানি ।

সীমান্তে লাশ চান
আরো কিছু ভুমি ?
হাতটা বাড়ান শুধু
দিয়ে দেই চুমি ।

বিনিময় ? ছিঃ ছিঃ !
অসভ্যদের মত
ট্রানজিট ফি চায়
দেশদ্রোহী যত !

আমার চেয়ে দেশপ্রেমিক
আছে কেউ দাদা ?
বুঝলনা জনগন
যতসব গাধা !

একটাই আব্দার
শুধু কভু যদি
পড়ে যাই ঝামেলায়
রাখতে এ গদি -

অবুঝ আমারে প্রভু
করিবেন স্মরণ
যা চান তাই দিয়ে
যাবো আমরণ ।



 মঙ্গলবার, জুলাই 5, 2011

রবিবার, ৩ জুলাই, ২০১১

যুদ্ধে যাবো মা

ভেবেছো মা তুমি ছেলেকে তোমার
রাখবে আঁচলে বেঁধে
জাননা মাগো ওদের সামনে
লাভ হবে নাকো কেঁদে ।

নোমানী , বকর , রাজীবের মা
কাঁদিয়াছে কতদিন
তাই দেখে ওরা নবউদ্যমে
বাজিয়েছে সুখ- বীণ ।

আমরা যদি না নামি আজ
প্রতিবাদ সংগ্রামে
তোমাকেই মাগো বিকোবে ওরা
সিকি পয়সা দামে ।

রাজপথে আজ দাড়াতেই হবে
মুষ্টিবদ্ধ হাতে
দাবানল বুকে জ্বালাতেই হবে
প্রগাঢ় কৃষ্ণ রাতে ।

ভয় নেই মা এই পথে আজ
লক্ষ কিশোর ছেলে
ভয় করে নাকো স্বৈরাচারের
বুলেট -মামলা - জেলে ।



 রবিবার, জুলাই 3, 2011

শনিবার, ২ জুলাই, ২০১১

টিউ'র জন্য কষ্ট (বর্ষার অনুগল্প)


-মা ক্ষুধা লেগেছে । কিছু খেতে দাওনা ।
-দিচ্ছি বাবা । বৃষ্টিটা একটু থামুক । দেখিস তোর জন্য কত কিছু নিয়ে আসবো !
-পেট ব্যথা করছে মা । কিছু খেতে দাও ।
-আমার লক্ষ্মী ছেলে । আয় আমার কোলে আয় । তোর বাবা আসুক । অনেক মজার মজার খাবার দেবো আজ তোকে ।
মা পাখিটা তার ভেজা ডানাটা ঝাপটিয়ে নেয় । ছোট্ট বাচ্চাটাকে ডানার ভেতর ঢুকিয়ে উম দেয়ার চেষ্টা করে । নিজেও খুব ক্ষুধার্ত । এদিকে বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার পথে ছোট্ট বাসাটা । এই বৃষ্টির মধ্যেও পরিবারের জন্য খাবার সংগ্রহে গেছে বাবা পাখিটা । সে অনেকক্ষণ হলো । এখনো ফেরেনি । ভেজা ডানা নিয়ে বৃষ্টির ভেতর ওড়া যায় না । হেঁটে হেঁটে খাবার খুঁজতে হয় । বাইরে কোন খাবারও সহজে পাওয়া যায় না । সব বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় । শুকনো ভালো খাবারের জন্য মানুষের বাড়িতে ঢুকতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ।
-বাবা আসছে না কেন মা ? ডানার ভেতর থেকে প্রশ্ন করে বাচ্চাটা । ওর নাম টিউ । মা পাখিটা আর কোন উত্তর দেয় না । তার নিজেরও অনেক দুশ্চিন্তা হচ্ছে ।
গত তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে । যেটুকু খাবার ছিল প্রথম দিনটা কোনরকম চালিয়ে নিয়েছে । নিজেরা না খেয়ে বাচ্চাটার জন্য কিছু রেখেছিল । সেটুকুও শেষ হয়ে গেছে গতরাতে ।
সকালে কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি থামতেই বাবা পাখিটা তাঁর দুর্বল শরীর নিয়ে উড়াল দেয় । এখন দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে । বৃষ্টি নেমেছে আবার । এখনো ফেরেনি বাবা পাখিটা । ক্ষুধার্ত টিউ মায়ের ডানার উমে ঘুমিয়ে পড়ে । মা পাখিটা খেয়াল করে তার নিজেরও পেট মোচড় দিচ্ছে ক্ষুধায় । কিন্তু কিছু করার নেই । এমনিতে টানা বৃষ্টি । তারওপর ছোট্টমণি টিউকে একা রেখে কোথাও যেতেও পারছে না ।
নানারকম দুশ্চিন্তায় কখন যে তন্দ্রা এসেছিল বুঝতে পারেনি মা পাখিটা । বৃষ্টিটা একটু কমেছে । এমন সময় ডাক শুনে চমকে উঠলো । বাবা পাখিটা ফিরে এসেছে । ছোট্ট একটা পুটলি মুখে ।
-এই বাবা ওঠ ওঠ । টিউকে ডাকে মা পাখি । আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় টিউ । সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে । বাসাটা ভিজে একাকার হয়ে আছে তিনদিন ধরে । এতটুকু রোদের দেখা নেই ।
টিউর এ অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো মা ও বাবা । ওকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো মা পাখিটা ।
বাবাটা সামান্য কিছু খেয়ে আবারো নেমে পড়লো বৃষ্টির মধ্যেই । পাশের গ্রামের বাঁশবাগানে একটা ডাক্তার ঘুঘু পাখি আছে । তাকে ডেকে আনতে হবে ।
এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে । বৃষ্টি এখনো থামলো না । সন্ধ্যা নামার একটু পর ব্যর্থ ও হতাশ হয়ে ফিরে এলো বাবাটা । ডাক্তার পাখিটাকে পাওয়া যায়নি । কয়েকদিন আগে নাকি সে তার বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেছে শহরে । বৃষ্টির কারণে এখনো ফিরতে পারেনি ।
টিউকে আদর করে বাবা পাখিটা । তাকে একটা রুপকথার গল্প শোনায় । টিউর জ্বর আরো বেড়েছে । টিউকে খাইয়ে দেয় বাবাটা অনেক আদর করে । টিউ ঘুমিয়ে পড়লে তারাও ঘুমাতে চেষ্টা করে ।
পরদিন । সকাল হয় । টিউ আর ঘুম থেকে ওঠে না । জ্বরও নেই তার গায়ে । বৃষ্টি তখনো থামেনি । টিউর বাবা মা দুজনার চোখের জল মিশে যায় বৃষ্টিতে । কেউ দেখে না ।
সিদ্ধান্ত নেয় , বৃষ্টিটা থামলেই উড়াল দেবে অজানার উদ্দেশ্যে ।


শনিবার, জুলাই 2, 2011

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুন, ২০১১

বেয়াড়া স্বপ্ন

বেওয়ারিশ স্বপ্নগুলো ইদানিং হয়ে গেছে বড্ড বেয়াড়া
এদের ব্যবচ্ছেদ করে হাত করবো পাকা । হয়ে যাবো
হৃদয় খামছে ধরা এক দক্ষ শল্যচিকিতসক ।

অনুভূতির প্রতিটি তন্ত্রীতে কাঁচা ধুলোর প্রলেপ
ধাতব পয়সার মত ঝনঝন করে উঠবে হয়তো
তবুও থামবোনা আমি । ব্যবচ্ছেদ করবোই
প্রতিটি জিনের ভেতর খুঁজবো মূলের শিরা
প্রয়োজনে র‌্যাব পুলিশকে লেলিয়ে দেবো
তবু থামবোনা আমি । ব্যবচ্ছেদ করবোই
হয়ে যাবো-
হৃদয় খামছে ধরা এক দক্ষ শল্যচিকিতসক ।




বুধবার, জুন 30, 2010

সোমবার, ২৭ জুন, ২০১১

ফিরে যাবো

ফিরে যাবো আমি আমার কুড়েঘরে
মাটির দেয়াল
বাঁশের চাটাই
ছাদটি ছাওয়া আমন ধানের শুকনো খড়ে ।

দরজাপাশে চুপটি বসে
মাখবো গায়ে বৃষ্টি
বুঝবেনা কেউ কিসের ব্যথায়
ঝাপসা যে মোর দৃষ্টি ।

পড়বে বৃষ্টি ঘরের ভেতর
ছাদের ফুটো গলে
কাগজ দিয়ে নৌকো গড়ে
ভাসিয়ে দেব জলে ।

কাজের শেষে আসবে ফিরে
আঁচল ভেজা মা
আদর মেখে বলবে আমায়
বাপটি ঘরে যা ।

ভেজা শরীর ভেজা মাটি
ভেজা মায়ের মুখ
ভাবছি কবে পাবো ফিরে
সেই সে স্বর্গসুখ ।



সোমবার, জুন 27, 2011

সোমবার, ২০ জুন, ২০১১

এই পথে হাঁটো

এই পথে তুমি হাটতেই থাকো
কিংবা দৌড়াও
দোহাই তোমার ,
পথের ওপর বসে থেকো না ।
এখন আষাঢ় মাস
পথ খানিকটা পিচ্ছিল হতেই পারে
বিজলি চমকাতেই পারে আকাশে
বজ্রপাতও হতে পারে হয়তো কোথাও ।
তবু তুমি হাটতেই থাকো কিংবা দৌড়াও
দোহাই তোমার , পথের ওপর শুয়ে পড়ো না ।
যারা এই সড়কে একবার নামে
তারা সোল্লাসে যোগ দেয় অগ্রগামী মিছিলে
কিংবা পেছনে শিকার হয় নেকড়ের ।
তুমি তো জানো
এ পথের শেষ মন্জিল
মাফ করো আমায় , সমাপ্তির নিশান ছাড়া
মাঝপথে থেমে যেও না ।
পথের ওপর বসে থেকো না ।
পথের ওপর শুয়ে পড়ো না ।



 সোমবার, জুন 20, 2011

নিষ্ফল ইলশেগুড়ি

ইলশেগুড়ির মত যাচ্ছে জীবন
কালো কালো মেঘগুলি উড়ছে এলোমেলো
দমেনি সুর্যটাও দিচ্ছে মুগ্ধ আলো
খেকশিয়ালটা কাঁদছে
বিয়েটা তার আজ ভেঙ্গে গেলো ।


 সোমবার, জুন 20, 2011

শনিবার, ১৮ জুন, ২০১১

৩রা আষাঢ়ের বৃষ্টি

যেদিন আমার অপমৃত্যু হয়েছিল
শেষবারের মত সেদিন তোমার হাত ছুঁয়েছিলাম
মনে আছে , সেদিন ছিল ৩রা আষাঢ়
আকাশের নীল ভেঙ্গে
তুমি ঝরেছিলে অঝোর ধারায় ।

মাঠের কোণে সবুজ ঘাসফুলগুলি
তোমার প্রিয় ছিল খুব
দু'ফোঁটা অশ্রু তোমাকে দিয়েছিলাম উপহার
বিদায়ের আগে , নীলচে কাঁচের ফ্রেমে
ঘাসফুলের ডগায় মেখে ।
তুমি কেড়ে নিয়ে নষ্ট করেছিলে ঝড়ো হাওয়ায়
মনে আছে , সেদিন ছিল ৩রা আষাঢ়
আকাশের নীল ভেঙ্গে
তুমি ঝরেছিলে অঝোর ধারায় ।


 শনিবার, জুন 18, 2011

মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০১১

বাংলাদেশ একটি অবৈধ রাষ্ট্র !

সম্ভবত ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে একটি অবৈধ রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের দলীয় তল্পিবাহী অদূরদর্শী উচ্চ আদালত । পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের মাধ্যমে জিয়ার শাসনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে । এরশাদের সৈরশাসনও অবৈধ । তত্বাবধায়ক সরকারও অবৈধ । অবৈধ তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচিত সকল সরকারও অবৈধ ।( অবৈধ বিয়ের ফসল যে সন্তান সেতো অবৈধই হবে নাকি ?) এখন যদি রায় দেয়া হয় যে শেখ মুজিবের শাসন অবৈধ তাহলেই কেল্লা ফতে ! (সম্ভবত সামনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে এধরনের রায় আসবে ।) কারণ শেখ মুজিব পুর্ব পাকিস্তানের জন্য নির্বাচিত ছিলেন , স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য নন । স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য তিনি ছিলেন অনির্বাচিত ও অবৈধ শাষক ! এমনকি ৭২ এর সংবিধানই অবৈধ ঘোষণা করা যেতে/হতে পারে । কারন , যারা ঐসময় সংবিধান রচনা করেছেন তাদের স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য সংবিধান রচনার ম্যান্ডেট ছিল না । আমরা এক অবৈধ রাষ্ট্রে অবৈধ সংবিধান ও অবৈধ সরকারের অধীনে বসবাসকারী অবৈধ নাগরিক ! বাহ বাহ । সবাই জোরসে বগল বাজান ....

দৃষ্টি আকর্ষণ : বিএসএফ কিংবা র্যাব এর গুলিতে কেউ নিহত হলে দয়া করে কেউ বেহুদা চিল্লাবেন না । আগে গোড়ায় পানি ঢালেন ।


 মঙ্গলবার, জুন 7, 2011

শনিবার, ৪ জুন, ২০১১

বদনা শাহর কেরামতি !

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষক কিংবা কর্মচারিদের মধ্যে বদনা শাহর মাজার চেনেনা এমন দুর্লভ প্রাণী সম্ভবত নাই । ক্যাম্পাসের পশ্চিম গেটের সাথে লাগোয়া বিশেষভাবে খ্যাত বদনা শাহর মাজার । সেখানে গেলেই আপনি দেখবেন শত শত বদনা ঝুলানো আছে । হরেক রকম বদনা । আপনার প্রয়োজন হলে আপনি এখান থেকে কিনতে পারেন । শুনেছি ভক্তরা মাজারে বদনা দান করেন । বদনা শাহর জীবনবৃত্তান্ত জানা না গেলেও তার কেরামতির আশায় অনেকেই লালসালুর ওপর তোহফা ঢালেন । এহেন মহান ব্যক্তির কেরামতি সম্পর্কে চমেকের সবার জানা দরকার বৈকি !
যাহোক আসল কথায় আসি । একদিন বদনা শাহর এক ভক্তের সাথে দেখা । মাজার নিয়ে কথা ওঠায় তিনি আমাকে বদনা শাহর কেরামতির এক চমকপ্রদ কাহিনী শোনালেন ।
সে অনেকদিন আগের কথা । চট্টগ্রামে একজন বুজুর্গ দরবেশ এলেন । তার নাম কেউ মুখে উচ্চারণ করতো না । পাছে আবার বেআদবি না হয়ে যায় এই ভয়ে । ফলে সাধারন মানুষ তাকে শুধু হুজুর বলেই ডাকতো । বহুদিন ধরে তিনি চট্টগ্রামে ধর্ম প্রচার করলেন । এরপর তিনি তার কিছু শিষ্যকে খুলনা অঞ্চলে পাঠালেন ধর্ম প্রচারের জন্য । শিষ্যরা নৌকায় রওয়ানা হলেন । কয়েকদিন পরে তারা খুলনায় পৌছলেন । তখনো ওই অঞ্চলে খুব বেশি বসতি ছিল না । সুন্দরবনের বাঘসহ অন্যান্য প্রাণীগুলো নির্বিঘ্নে ঘোরাফেরা করতো । হুজুরের শিষ্যরা ফাঁকা জায়গা দেখে তাঁবু খাটালেন । ভ্রমনের ক্লান্তিতে সবাই বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলেন । শেষ রাতে হঠাত্‍ বাঘের চিত্‍কারে ঘুম ভেঙ্গে গেল তাদের । তাঁবুর সামনেই চলে এসেছে বাঘ । এখন কী হবে ? সবাই প্রাণভয়ে আল্লাহর নাম জপতে লাগলো । এমন সময়ে হঠাত্‍ একটা আর্তচিত্‍কার দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো বাঘ । সাহস করে বাইরে এসে শিষ্যরা তো হতবাক । একি ! হুজুরের বদনা এখানে ! হুজুরের বদনার আঘাতেই প্রাণ হারিয়েছে বাঘটা !
হুজুর ওইসময় চট্টগ্রামে বদনা হাতে ওজু করছিলেন । এমন সময় তিনি বুঝতে পারলেন যে তার শিষ্যরা বিপদগ্রস্ত । তখন তিনি তার হাতের বদনা ছুড়ে মারেন । সেই বদনার আঘাতে মারা যায় বাঘ ! আর বিপদ মুক্ত হন শিষ্যরা । শিষ্যরা পরে বদনাটি নিয়ে ফিরে আসেন ।
এই হলো বদনা শাহর কেরামতি !

পাদটীকা : এধরনের কাহিনী ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক । দয়া করে কেউ এসবে বিশ্বাস করবেন না ।


 শনিবার, জুন 4, 2011

শুক্রবার, ৩ জুন, ২০১১

গ্ল্যাডিয়েটরের ক্ষোভ

১.
সময়ের পাগলা ঘোড়ার সাথে
দৌড়াতে পারিনা আর
ক্লান্ত হয়ে গেছে আমার ক্ষীণকায় পদযুগল
ফিরে যেতে চাই খৃষ্টপুর্ব যুগে ।

২.
গ্ল্যাডিয়েটর মনে হয় নিজেকে ।
নফসের সিংহটা বারবার পরাজিত করে আমায়
লুটোপুটি খাই ব্যর্থতা আর পাপের ধুলোয়
আনাড়ি সাতারুর মত ক্রমাগত হাতড়াই-
মহাকালের বন্যাপ্লাবিত চরে ।

৩.
হাত ধরে সামনে এগিয়ে নেয়ার কেউ নেই
সবাই শুধু পেছন হতে ধাক্কাতেই জানে ।


 শুক্রবার, জুন 3, 2011

মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১১

কষ্ট ও জীবন

মাঝে মাঝে কষ্টগুলো বুকের ছোট্ট খালে আটকে থাকে না । উপচে পড়ে গলা পেরিয়ে চোখের কোণ দিয়ে । সিক্ত করে শুষ্ক মুখের কপোল জমিন । সুর্যের আলো পড়লে হয়তো চিকচিক করতো । শিশিরকণার মত । তা অবশ্য হয় না ।কারণ ,যখন খাল উপচে পড়ে তখন সুর্যের আলো কিংবা অন্য কোন চোখ সেখানে পৌঁছতে পারে না । ওরা সংগোপনেই মিশে যেতে চায় । উপচে পড়া কষ্টগুলি শুকিয়ে গেলে চোখটা টনটন করে ওঠে । ঘুম বেচারা আসতে সাহস করে না । ঘুম আসলে ভীতুর ডিম । যখন চোখ থাকে শান্ত ,তখন সে ঠিকমতই আসে । অশান্ত চোখের আঙিনায় তার দেখা মিলবে না । সময় গড়িয়ে যায় । এলোমেলো ভাবনার মাঝে স্তিমিত হয়ে জিরোয় ক্লান্ত কষ্টেরা । এই ফাঁকে জীবনের চাকায় টান পড়ে । গরুর গাড়ির মত নিশ্চিন্ত গতিতে হয়তো কিছুটা সামনে এগোয় । চোখের কোণ দিয়ে যেটুকু কষ্ট উপচে পড়েছিল , খালি হয়ে যাওয়া সেই অংশটুকু প্রতীক্ষা করে পুর্ণ হবার । হয়েও যায় একসময় । তখন আবার পুরনো চক্রে আটকে যায় জীবনের কাটা । এরপর ....
(আবার শুরু থেকে )



মঙ্গলবার, মে 24, 2011

নিশাচর ও আধখানা চাঁদ

মধ্যরাত । চার তলা হোস্টেলের বিস্তীর্ণ ছাদ । নিস্তব্ধ গাছের নিচে একা আমি । মৃদু হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে গাছের পাতা । আকাশে ক্ষয়ে যাওয়া আধখানা চাঁদ । নিশ্চুপ । সাদাকালো মেঘের আনাগোনা বেড়েছে । অনেক নিচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে মেঘগুলি । চাঁদের সাথে ওদের কানাকানি খুব গোপনে হচ্ছে যেন । পাশের পাহাড় থেকে শেয়ালের আর একপাল কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে । ওরা নিশাচর । চাঁদটাও নিশাচর । ওই মেঘগুলিও নিশাচর । আজ আমিও নিশাচর হতে দোষ কি ? বহুরাত হলো নিশাচর পেঁচার হুতুম ডাক কানে আসে না । আজও মনে হয় পেঁচার দেখা পাব না । ছেলেবেলার কচি হৃদয়ে পেচাও দাগ কেটে গিয়েছিলো । আর দোয়েল ,শালিক , ঘুঘু । ওরা নিশাচর নয় । আজ রাতে ওদের কথা খুব মনে পড়লেও উপায় নেই । ওদের দেখা পেতে হলে আমাকে বাড়ি যেতে হবে । বাঁশবাগানের পাশের কাঠাল গাছটার নিচে তপ্ত দুপুরে স্নিগ্ধ ছাঁয়ায় শুয়ে থাকতে হবে মাদুর পেতে । আগে যেমন থাকতাম । রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি তীব্র বেগে ছুটে গেলো । আমার খুব ইচ্ছে , রাতের শহরে অনেক বেশি স্পিডে বাইক চালাবো । কিন্তু উত্‍সাহে ভাটা পড়ে যেখানে সেখানে স্পিডব্রেকারের আধিক্য আর ছিনতাইকারীর ভয়ে । ছিনতাইকারি রাও নিশাচর । রাতের নিস্তব্ধতাকে ওরা করে তোলে ভীতিকর । ওদের চেয়ে ভুত অনেক ভালো । ভুতও নিশাচর । ভুত শুধু ভয় দেখায় ,
আর ছিনতাইকারিরা সবকিছু ছিনিয়ে নেয় । কখনোবা পেটে ছুরি মেরে দেয় । নিশাচর প্রেমিকরা আজ মনে হয় তাদের রাতের আলাপন শেষ করে ফেলেছে । সাধারনত রাতে সিড়ির গোড়ায় , ছাদের বিভিন্ন প্রান্তে এইসব বিদঘুটে নিশাচরের দেখা মেলে । লম্বা ইউক্যালিপ্টাস গাছটা দুলছে । গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া অর্ধেক চাঁদটা অতিপ্রাকৃতিক লাগছে । রাস্তায় একজন রিক্সাওয়ালা খালি রিক্সা নিয়ে দরাজ গলায় গান গাইতে গাইতে পুব দিকে যাচ্ছে । মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র । এখন রাত তিনটা বেজে পনেরো মিনিট । কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে নরম ফোমে গভীর ভাবে ঘুমাচ্ছে । আর ওই রিক্সাওয়ালা ভাই এখনও রাস্তায় । ক্ষয়ে যাওয়া অর্ধেক চাঁদটাকে একটা কালো মেঘ ঢেকে দিচ্ছে । জীবনের সাথে কী মিল ! আমাদের জীবনও ক্ষয়ে যাচ্ছে । কখন যে সমাপ্তির কালো মেঘ সবকিছু ঢেকে দেবে আল্লাহই জানেন !


 মঙ্গলবার, মে 24, 2011

শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১১

মলম পার্টির খপ্পরে এক মলম(MLM) ব্যবসায়ী

রাগে ক্ষোভে দুঃখে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আর মলম বিক্রি করব না । ঘটনাটা খুলেই বলি ।অধৈর্য হবেন না । আগে আমার পরিচয়টা দেই আপনাদেরকে । আমার নাম গনেশ । আমি চকবাজারে কাটা ছেড়া চুলকানি চর্মরোগ ইত্যাদির মলম বিক্রি করতাম । আমার কোম্পানির নাম আবুল মলম এন্ড কোং । জীবনে লেখাপড়া তেমন করতে পারি নাই । পাঠশালায় পড়েছিলাম কিছুদিন । বয়স ১৬ তে বাবায় বিয়া করায়ে দিলো । এর বছর দুয়েকের মধ্যে বাবা মারা গেলেন । তখন আমার এক দুঃসম্পর্কীয় মামায় আমাকে এই ব্যবসায় নামিয়ে দিলো । দীর্ঘ প্রায় ১0 বছর থেকে আমি মলম বিক্রি করে জীবন চালাই ।
একদিন বুধবার । কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় মফিজের চায়ের দোকানে বসেছি । দেখি একজন লোক আরো কয়েকজনকে কীসব বোঝাচ্ছে । আমিও উত্‍সাহী হয়ে কাছে গিয়ে বসলাম । ইতোমধ্যে সেই ব্যক্তি তার ব্যাগটা খুলে সেখান থেকে একটা যন্ত্র বের করল । টিভির মত একটা স্ক্রিন আছে দেখলাম । ওটা বের করার সময় দেখা গেল তার ব্যাগে অনেক টাকা আছে । ভাবটা এমন ,টাকা তার কাছে কোন ব্যাপারই না । যাহোক যন্ত্রটার নাম নাকি ল্যাপটপ ,লোকটা আমাদের বলল । সে ওখানে কিসব বের করে আমাদের দেখাতে লাগলো । মুখে বলতে লাগলো কিসব হাত বেহাতের কথা । ডান হাত বাম হাত উপরের হাত নিচের হাত এইসব ।
-মনে করেন আপনি হইলেন আমার ডাইন হাত , আর আপনে হইলেন আমার বাম হাত । আর উনি হইলো আপনার ডান হাত আবার উনি হইতেছেন গিয়া আপনের বাম হাত । আবার এইদিকে ওই উনি হইবেন ওনার ডান হাত আর তিনি হইবেন ওই ভাইয়ের বাম হাত । এছাড়াও আপনারা আপনাদের মা বাবা ভাই বোন আত্নীয় স্বজনদের বাম বা ডান হাতে নিতে পারেন ।
-ভাই আমার হাত কয়খান কইলেন ?
-কেন , আপনার তো দুই হাত ।
-না ,কিসব জানি কইলেন । ডান হাত বাম হাত আবার উপরে নিচে ।
-হ্যা ,আপনি ডান হাতে নিবেন ওনাকে আর বাম হাতে নিবেন ওনাকে । তার নিচে ওনার বাম হাতে দেবেন আপনার ভাইকে আর ওনার ডান হাতে দিবেন আপনার বোনকে । আবার...
-আরে মিয়া কি আবোল তাবোল কইতাছেন । ওগোর মত দুইটা মোটকুরে আমি দুইহাতে নিব ক্যামনে । আবার কইতাছেন আমার বইনরে অর ডান হাতে তুইলা দিতে হবে । ফাজলামি করেন আমাদের সাথে ? ক্ষেপে গেলো একজন ।
আমি আর সেখানে থাকলাম না । কেযে কার কোন হাতে পড়বে কিছুই বুঝলাম না । আবার ৬০০০ টাকা দিয়া নাকি একটা আকাউন্ট কিনতে হবে । মাইনষেরে হের মতন বুঝাইয়া টাকার লোভ দেখায়া আকাউন্ট করাইলে আমি ডলার পাব । টাকা না । এইটাও নাকি একটা ব্যবসা । আশ্চর্যের কথা শুনলাম এইটার নাম নাকি মলম নাকি মেলেম ব্যবসা । জিজ্ঞাস করছিলাম কী মলম ? কয় এই মলমের কোম্পানির নাম উনিপেটু ।
এইগুলা শুনে ওইদিন আমি চলে যাই ।পরে শুনেছি মফিজের কাছে ,দুএক জন নাকি টাকা দিয়া আকাউন্ট কিনছিলো ।
গত পরশু বাজার থেকে ফেরার পথে মফিজের দোকানে বসলাম চা খাওয়ার জন্যে । মফিজ বলল ,গনেশদা বাইচা গেছ তুমি । আমি অবাক হইলাম । ক্যান ,কী হইছে ? মফিজ জানাল ,ওইযে একটা মলম ব্যবসায়ী আসছিল না একদিন । শুনলাম মাইনষের টাকা নিয়া মলম না দিয়াই পালায়া গেছে ওই কোম্পানি ।
আমি বললাম ,মফিজ ভাই আমি কোনদিন মলম বেচতে গিয়া কাউরে ঠকাই নাই । এইজন্যেই মনে হয় রক্ষা পাইছি ।
আজকে মলম বেচা শেষে লোকাল বাসে ফিরছিলাম । একেবার শেষ সিটটাতে বসেছি । সবার নামা শেষ । দেখি আমার সামনের সিটে একলোক ঘুমাচ্ছে । নেমেই যাচ্ছিলাম । হেলপার লোকটাকে ডাকাডাকি করছিলো নামার জন্য । সে উঠছিলো না । অজ্ঞান হয়ে আছে । আমিও ফিরলাম । খেয়াল করে দেখি এতো সেই মলম ব্যবসায়ী । লোকটার জন্য মায়া হলো ।,
আহা ! বেচারা মলম পার্টির খপ্পড়ে পড়েছে । এমনিতেই তার মলম কোম্পানি পালিয়ে গেছে ,আবার তাকেও মলম পার্টি অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে গেছে । বেচারাকে সর্বসান্ত করে দিল মলম বিজনেস আর মলম পার্টি । তার জন্য আসলেই খুব কষ্ট হচ্ছিল । তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলাম । আর হঠাত্‍ করে একটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম ,ছেড়েই দেবো আমার মলম ব্যবসা । মফিজের মত একটা চা দোকান দেব রাস্তার মোড়ে ।



 শনিবার, এপ্রিল 23, 2011

মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০১১

হাতের মুঠোয় নেবো সুর্য

সুর্যের উত্তাপ আমার শরীরে আঁচড় কাঁটে না
হৃদয়ে আগুন ধরায় ।
আমাকে হাত পুড়ে যাবার ভয় দেখিও না
সেটা আমি জানি
একদিন ।অবশ্যই সেদিন
সুর্যটাকে আমি ভরে নেবো হাতের মুঠোয় ।

শনি গ্রহে কতটি বলয় আছে
সেকথা আমাকে বলতে এসো না ।
নিষ্ঠুর পদাঘাতে সবকটি বলয় আমি ভাংবোই ।
আমার সামনে দাঁড়িয়ে থেকোনা
বৃহস্পতিটাকে ছুঁড়ে দেবো তোমার দিকেই ।
ফু দিয়ে উড়িয়ে দেবো হিমালয় আর এভারেস্ট
এক চুমুকে শুষে নেবো সবকটি মহাসাগর
(তুমি আমার প্রভুকে চেনো না ।
তার ইচ্ছায় সবকিছু করতে পারি এক নিমেষেই)
একদিন ।অবশ্যই সেদিন
সুর্যটাকে আমি ভরে নেবো হাতের মুঠোয় ।

 মঙ্গলবার, মার্চ 29, 2011

সোমবার, ২৮ মার্চ, ২০১১

শ্রাবণের কান্না

শ্রাবণের বিষন্ন সন্ধ্যাগুলি
হারিয়ে গেছে অনেক আগেই
এখন শ্রাবণ আসে
মেঘভরা কান্না নিয়ে ।
পৃথিবীর জন্য খুব বেশি কষ্ট
ছাড়িয়ে গেলে তার সহ্যের বাঁধন
শ্রাবণ আসে
মেঘভরা কান্না নিয়ে ।

সুর্যের দোসর ঐ বৈশাখ জৈষ্ঠ আর ভাদ্র চৈত্র
মাটির সাথে যেন ওদের চিরবৈরিতা
চৌচির মৃত্তিকাকে ভালবেসে শ্রাবণ আসে
বিষন্ন সন্ধ্যার শেষে
মেঘভরা কান্না নিয়ে ।


সোমবার, মার্চ 28, 2011

বুধবার, ২৩ মার্চ, ২০১১

বিদঘুটে স্বপ্ন

স্বপ্নগুলো যখন ফিকে হয়ে আসে
খুব বিদঘুটে লাগে ওদের ।
ওদের ভেংচি কাটতে ইচ্ছে করে খুব
কিংবা ওরাই বিদ্রুপ করে আমাকে ।
যখন ওরা ক্রুর বাস্তবতার নির্মম আক্রমণে আহত হয়
অন্ধ হয়ে যায় কেউ ,কেউবা  বধির
ল্যাংড়া স্বপ্নের দল ভিক্ষা করে জীবনের ফুটপাতে
প্রভুর দোহাই দিয়ে ওরা বলে
'একটু করুণা করো হে সময় !'

স্বপ্নেরাও একদিন স্বপ্ন দেখত প্রজননের
ভাবতো অনেক লুতুপুতু বাচ্চাকাচ্চা জন্ম দেয়ার কথা ।
আমার মানসপটে ক্ষুদ্র ভিটেয় তাঁবু গেড়ে
স্বপ্নেরাও গড়তে চেয়েছিল স্বপ্নের সংসার ।
আজ ওরা নিজেরাই প্রতিবন্ধী
ভুগছে চরম রক্তশুন্যতায় ,ফ্যাকাশে মুখ ও শরীর

আসলেই ,স্বপ্নগুলো যখন ফিকে হয়ে আসে
খুব বিদঘুটে লাগে ওদের ।
23.03.2011

রবিবার, ১৩ মার্চ, ২০১১

দোহাই তোমার (শহীদ নোমানী স্মরণে)

দোহাই তোমার
আজ তুমি আমাকে কোন কবিতা লিখতে বলো না
দোহাই তোমার ,আজ আমায়
গাইতে বলোনা কোন গান ।
স্বপ্ন দেখতে বলোনা আজ
স্বপ্নের কথা বলোনা আজ

জিজ্ঞেস করোনা তুমি
কেন আমি নিশ্চুপ ।কেন আমি
ফুলের ঘ্রান সহ্য করতে পারছি না
তোমার প্রিয় বিকেলের সোনারোদ
কেন আমার কাছে লাগছে তেতো বিস্বাদ ।

ঝর্ণার কলকল শব্দ
কেন লাগছে অসুরের গর্জনের মত
এই ফাগুনে কোকিলের কুহুরব
মনে হচ্ছে ভুভুজেলার বিদঘুটে শব্দের মত ।

দোহাই তোমার
তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকো না
তুমি যা অশ্রু ভেবেছো ,তা অশ্রু নয় ।
আজ আমি শহীদ নোমানী ভাইকে
চরম হিংসা করছি
জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছি ।
আমি তার প্রতি আজ চরম ক্ষুব্ধ ।
তিনি কেন প্রভুর কাছে
আমাদের শাহাদাতের জন্য আবেদন করেন না ?
দোহাই তোমার
আমাকে সান্তনা দিতে এসো না ।


 রবিবার, মার্চ 13, 2011

বৃহস্পতিবার, ১০ মার্চ, ২০১১

মরিচীকার প্রেমিক

রাত্রির গভীরতা যখন থেমে যায়
ঝিঁঝি পোকার একঘেয়ে আর্তনাদে
মনে হয় অন্ধকার ডাকছে আমায়
জীবনের শেকড় সেথা বাদ সাধে ।

কৃত্রিম আলোয় বসে থাকি দিনরাত ।কারন
মরিচীকার সাথে আমার অবিনাশি প্রেম
ছ্যাঁকা খাওয়া প্রেমিক আমি
হোঁচট খেয়ে ফিরে আসার আগে
আরেকবার হোঁচট খাই ।
আছড়ে পড়ি বালুকাময় প্রান্তরে
ভেঙ্গে যায় জীবনের ভঙ্গুর ফ্রেম

ভুল পথে যাই ধেয়ে
পেছনে ফিরে আসা যে অনেক কঠিন
সামনে এগোনোর চেয়ে ।



 বৃহস্পতিবার, মার্চ 10, 2011

বুধবার, ৯ মার্চ, ২০১১

সময়ের কষাঘাত

অস্থির সময় আমাকে ভাঙছে ক্রমাগত
ইটের মত টুকরো টুকরো
যেন সে এক অক্লান্ত শ্রমিক ।

যেন সে এক বিরতিহীন পথিক
গন্তব্য বহুদুর ।বগলদাবা করে আমায়
চলছে অবিরাম ।
ঝরিয়ে নিজের ঘাম ।

আমাকে নাকি সে গড়বে যোগ্য করে
এই পৃথিবীর জন্য ।
বোকা সময় জানো না
পৃথিবীটা অপরিপক্কদের জন্যে ।যেদিন
তুমি আমায় গড়বে
পৃথিবীর পরিপুর্ণ উপযোগী করে
ততদিনে ফুরিয়ে যাবে হয়তো
এই অধিবেশনের পাট ।
ভবের মায়াবি হাট ।

সময়ের অবিরাম কষাঘাতে জর্জরিত আমি
মিলাতে পারিনা ছন্দ
বানাতে পারিনা শব্দের নেকলেস

কেবলই বিড়বিড় করি
এই যেমন এখন...



 বুধবার, মার্চ 9, 2011

দিনযাপন

ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখি অনেক কাজ ।ভাবি ,কিভাবে করবো এগুলো ।ভাবতে ভাবতে ক্লান্ত হয়ে যাই ।চোখ মুদে আসে ধীরে ধীরে ।সময়ের স্রোত বয়ে যায় ,পাল্টে যায় মানুষ ।পাল্টে যায় পরিবেশ ,মন্চের পর্দা উঠে আসে নতুন দৃশ্য ।
আবার নতুন করে সাজাই সবকিছু ।দিন দিন বাড়ে কাজের বোঝা ।বাড়ে আমার ক্লান্তি ।ঘিরে ধরে হতাশা ।তবুও টানতে হয় জীবনের ঘানি ।তাই টেনে যাই -কখনো কচ্ছপের মত ,কখনো নির্বাক গাধার মত । সমাপ্তির নেশায় ।



বুধবার, মার্চ 9, 2011

সোমবার, ৭ মার্চ, ২০১১

দুরের কেউ

১.
বহুদিন থেকে দুরে থাকতে থাকতে
বাবা মাকেও হঠাত্‍ কখনোবা
মনে হয় - দুরের কেউ ।
ভাইবোনদের কথা মনে পড়ে ।কখনোবা
মনে হয় - দুরের কেউ ।

মনে পড়ে শৈশবের সময়কে
পথঘাট ,নদী ,মাঠ ,গরুর গাড়ি ,ধানক্ষেত
মনে পড়ে পূর্ণিমা রাত
হঠাত্‍ চমকে দেয়া পেঁচার ডাক
মাদুরে শুয়ে এক দুই তিন ,সাত ভাই চম্পা
আকাশের তারা গোনা ।
আর উল্কাপতন ।
মনে পড়ে সাদাকালো ছবির মতন
কখনোবা মনে হয় দুরের সব
দুরের কেউ ।

গভীর রাতে চোখ রাখি বইয়ের পাতায়
সাদা পাতায় লিখি খসখস করে
মনের শুন্য গহীনেও খসখস করে ওঠে
মনে হয় আমি একা নিস্তব্ধ নিশুতি রাতে
আপনজন থেকে ,নির্মল জীবন থেকে
দুরের কেউ ।

২.
কলমটা হঠাত্‍ হাত থেকে পড়ে গেলে
অজান্তে ভয় পাই ।এই বুঝি পাশের ঘরে মা জেগে গেলেন
কী হলো রে বাবা ? পানি খাবি ?
বাবা হয়তো কিছুক্ষণ বারান্দায় পায়চারি করে বলবেন
আর পড়ার দরকার নেই ।এখন ঘুমা ।

পেছনে শব্দ হলে হঠাত্‍ মনে হয়
ছোটবোনটা বোধহয় খাট থেকে পড়ে গেলো
ও কথা শোনে না ,
পিটুনি দিতে হবে ।
বিছানায় পায়ের সাথে দেয়ালটা লাগলেই ভাবি
ভাইয়া বুঝি এখনই ঝগড়া শুরু করবে রাতদুপুরে ।

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে যায়
এই বুঝি পেঁচাটা ডেকে উঠবে ।

রাত শেষে দিন আসে আবার রাত
রূঢ় জীবন চলে ঘড়ির কাটার মত
আমি এখন ,
দুরের কেউ ।

 সোমবার, মার্চ 7, 2011

শনিবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০১১

গদ্য ও পদ্য

গদ্য লেখায় আমার একদম হাত নেই ।হয়তো শুরুটা করতে পারি ,কিন্তু কিছুদুর গিয়েই শেষ ।কি লিখব খুঁজে পাইনা ।মুখে যেমন আমি কম কথা বলি ,লেখার বেলায়ও সেই একই রকম ।কথার পিঠে কোলে ঘাড়ে কথার স্তুপ চাপিয়ে বিশাল গদ্য লেখাটা আমার ধাতেই নেই ।আমার অনেক লেখক এবং চাপাবিশিষ্ট বন্ধু একবাব বলতে বা লিখতে শুরু করলে আর রক্ষে নেই ।সে এক ভয়াবহ অবস্থা ।গদ্য বেচারা মনে হয় ক্লান্ত হয়ে যায় তাদের হাতে পড়ে। পড়েছি মোগলের হাতে জাতীয় অবস্থা আর কি ! অবশ্য মানুষ এখন গদ্যই ভালোবাসে ।কারন এতে সাধারন ও সংক্ষিপ্ত কথাকে অনেক মধু খাইয়ে ,বাহারি রং দিয়ে সুখাদ্য করে তোলা হয় ।আর এটা যারা করতে পারেন তারাও নিশ্চয়ই চরম ধৈর্যশীল ।ওদিকে হতচ্ছাড়া পদ্য !বিশাল ভাবসম্পন্ন কিছুকে এত ছোটকথায় নিয়ে আসে ,অনেক সময় তার গোষ্ঠী উদ্ধার করা অসাধ্য হয়ে ওঠে ।আর পড়তেও হয় অনেক মনোযোগ দিয়ে ধৈর্য ধরে ।এত টাইম আছে নাকি আজকাল !
হায় হায় আমি আবার এইসব কি আজাইরা প্যাচাল শুরু করলাম ।আহা !আপনাদের জন্য আমার খুব দুঃখ হচ্ছে ।ঠিক আছে ,আমি দুঃখিত ।মাফ করে দিবেন ।