আওয়ামী লীগ ও তার দোসররা এমনভাবে প্রচারণা চালায় এতে তরুণ সমাজের মনে হয় আওয়ামী লীগ বুঝি মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা সংক্রান্ত কারণেই জামায়াতের বিরোধিতা করে । আরো সহজভাবে বললে- ' আওয়ামী লীগ জামায়াতের বিরোধিতা করে এজন্যেই যে, জামায়াত মুক্তিযুদ্ধ করেনি ।'
ব্যাপারটা কি আসলে তাই ? মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা ভিন্ন টপিক । এই লেখায় আওয়ামী লীগের জামায়াত বিরোধীতার কারণ ও স্বরুপটা কী সেই ব্যাপারটা স্পষ্ট করতে চাই ।
আসলে মূল কারণটা হলো সম্পূর্ণ আদর্শগত বিরোধ । আওয়ামী লীগ চায় ধর্মহীন-সেক্যুলার রাষ্ট্র, আর জামায়াত চায় ইসলামী রাষ্ট্র ।
১৯৭০ সালে নির্বাচনের আগে পল্টন ময়দানে আওয়ামী লীগ জামায়াতের দুজন কর্মীকে হত্যা করেছিল । তখনো তো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি , তাহলে কেন তারা জামায়াতের কর্মীকে হত্যা করলো ?
১৯৬৯ সালের ১২ই আগস্ট তোফায়েল আহমেদ ও তার সঙ্গীরা ছাত্রসংঘ নেতা আব্দুল মালেককে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল । এই ঘটনার ছবি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল । যেখানে দেখা যায় তোফায়েল আহমেদ আব্দুল মালেককে আঘাত করছেন । কেন ? তখনোতো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি !
আব্দুল মালেক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রির মেধাবী ছাত্র । তুখোড় বক্তা । শিক্ষাব্যবস্থা কেমন হওয়া দরকার তা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সেমিনার হচ্ছিলো । সেমিনারে আব্দুল মালেক ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে মাত্র ৫ মিনিটে জোরালো যুক্তিপুর্ন বক্তব্য রাখেন এবং সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে দেওয়া আগের বক্তাদের বক্তব্য খন্ডন করেন । এতে ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থার পক্ষে ব্যাপক জনমত গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি হয় । তাঁর বক্তব্য ও যুক্তি খণ্ডাতে না পেরে হিংস্র হয়ে উঠেছিলেন তোফায়েল আহমেদরা ।
১৯৯১ সালের আগে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে কাজ করে । আওয়ামী লীগ নেতারা জামায়াতের নেতাদের সাথে করমর্দনও করতেন, এক টেবিলে আলোচনাও করতেন, খাবারও খেতেন । এই গোলাম আযম , নিজামী ,এই মুজাহিদ দের সাথেই । তখন তাঁরা অচ্ছুৎ ছিলেন না ! মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকাই যদি আওয়ামী লীগের জামায়াত বিরোধীতার কারণ হতো তাহলে তারা কীভাবে একমঞ্চে উঠলেন ? এটা তো মুক্তিযুদ্ধের পরের ঘটনা নাকি !!
১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর সরকার গঠনের জন্য আওয়ামী লীগ জামায়াতের সমর্থন চায় । সমর্থন চায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও । সমর্থন পেতে গোলাম আযমের কাছে প্রতিনিধি পাঠায় তারা । এই ঘটনা তো মুক্তিযুদ্ধের অনেক পরের । তখন আওয়ামী লীগের চেতনায় জং ধরেছিল কেন ?
প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের জামায়াত বিরোধীতা মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকার কারণে নয় । মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্কের মাপকাঠি নয় । যদি তাই হতো তাহলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা , শেখ সেলিম এরা রাজাকার পরিবারের সাথে সম্পর্ক করতেন না । পুতুলের দাদাশ্বশুর নুরু মিয়া, তার ছেলে মোশাররফ হোসেন ,আওয়ামীলীগের সাবেক ধর্মমন্ত্রী নুরুল ইসলাম, সাবেক পাটমন্ত্রী একে ফয়জুল হক, মীর্জা আযমের বাবা ওরফে শায়খ আব্দুর রহমানের শ্বশুর মীর্জা আবুল কাশেম এরাও কুখ্যাত রাজাকার। আওয়ামী লীগের মন্ত্রীসভায় পর্যন্ত দালাল আইনে সাজাপ্রাপ্ত রাজাকার ছিল । এখনো রাজাকারের ভাই-বেরাদাররা মন্ত্রী-পাতিমন্ত্রী-আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে বহাল তবিয়তে আছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের নসিহত করছেন ! আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলামের কথা আর নাইবা বললাম ! ( আওয়ামী লীগের রাজাকার কানেকশন বিস্তারিত এখানে - http://www.sonarbangladesh.com/article.php?ID=4412 )
মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় খলনায়ক জুলফিকার আলী ভুট্টোকে স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশে দাওয়াত দিয়ে এনেছিলেন, লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছিলেন । পাকিস্তানে গিয়ে ভুট্টোর গালে চুমু দিয়েছিলেনও তিনি ।
প্রকৃত ব্যাপারটা হলো সেটাই । আওয়ামী লীগ চায় নিরবচ্ছিন্ন ক্ষমতা এবং সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থা । অপরপক্ষে জামায়াত চায় ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং আওয়ামী লীগের নিরবচ্ছিন্ন ক্ষমতাচর্চার জন্যও হুমকি । সেক্যুলারিজম, ফ্যাসিবাদ এগুলো ইসলামের সাথে সর্বদাই বিপরীতমুখী । মুক্তিযুদ্ধে আপনার ভূমিকা যাই হোকনা কেন , আওয়ামী লীগের সাথে থাকলেই আপনার সাত-আট-দশ যত খুন সব মাফ । পেতে পারেন মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটও !!!
রাসূল (সা) বলেছেনঃ “যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসলো এবং আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে কাউকে ঘৃণা করলো, আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে দান করলো এবং আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে দান করা থেকে বিরত থাকলো, সে যেন তার ঈমানকে পূর্ণ করে নিল।” (আবু দাউদ)বৃহস্পতিবার, জুন 21, 2012