এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ৩১ মার্চ, ২০১৭

বিয়ে করতে কত টাকা লাগে?

বিয়ে করতে আসলে কত টাকা লাগে? বিবাহ কথন সিরিজের এই পর্যায়ে এটাই এখন আমাদের সামনে গুরুতর প্রশ্ন।
তবে এই প্রশ্নে নিজের মন্তব্য দেয়ার আগে আমি দুটি কেস হিস্ট্রি তুলে ধরবো। একতরফা না। একজন ছেলের, আর একজন মেয়ের।

কেস হিস্ট্রি-১:
আমাদের দেশে ছাত্রাবস্থায় বিয়ে করতে চাওয়াটাকে এক ধরণের অপরাধ হিসেবেই ধরা হয়। আমার বাসায়ও ভয় পেয়ে গেল। আমাকে অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে বললো, "কোনমতে জাস্ট পাসটা কর, তারপরই বিয়ে দিয়ে দিব; চাকুরিও পাবার দরকার নাই। এখন বিয়ে করলে মানুষ কি বলবে? মান-সম্মান থাকবে?"

আমিও বুঝলাম। পাস করে বের হবার পর বেকার ছিলাম প্রায় ৯ মাস। তখন তো বিয়ের কথা মুখে আনা প্রায় অসম্ভবই। এরপর মোটামাটি আয়-রোজগারের একটা ব্যবস্থা হলো (মাসে ১৮ হাজার টাকার মত)। এর কিছুদিন পর বাসায় আবার বললাম বিয়ে করার কথা। আব্বা বললেন - এই টাকায় ফ্যামিলি চালাতে পারবি? ঢাকা শহরে তো বাড়িভাড়াই হবেনা এই টাকায়। আমি কিন্তু ১ টাকাও দিতে পারব না। You have to be at your own! ভেবে দেখ।
সাত-পাঁচ ভেবে পিছিয়ে আসলাম। ঠিকই তো! এই টাকায় চলব কিভাবে? এভাবে আরও কিছুদিন গেল। আবার বললাম। আবার একই উত্তর। আবার পিছালাম। এভাবেই চললো কিছুদিন।

শেষমেষ ঠিক করলাম। দরকার হলে রিস্কই নিব। আমার পরিচিত অনেকে তো মাসে ৮ হাজার টাকা স্যালারি পেয়েও ২-৩ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে সুন্দর সংসার চালাচ্ছে, তাঁরা পারলে আমি পারবোনা কেন? লাইফ-স্ট্যান্ডার্ড নিচে নামিয়ে আনতে হবে? আনবো। দরকার হলে বস্তিতে থাকবো।

এরপর বিয়েটা করেই ফেললাম (জুন, ২০১৩)। আমার ২ ফ্রেন্ডের কাছে ২০ হাজার ও ৩০ হাজার করে মোট ৫০ হাজার টাকা ধার করলাম। হবু বউকে আগেই জানিয়ে দিলাম আমি গরিব মানুষ। পুঁজি বলতে আমার এই ৫০ হাজার টাকাই। এর বেশি মোহরানা দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না, আর পুরোটাই নগদ দিতে চাই। সে রাজি হলো।
কিভাবে জানি আরও ১০ হাজার টাকা ম্যানেজ হলো। বিয়ের দিন কি কি সব খরচে দেখি ২ হাজার টাকা শর্ট! দৌড়ায়ে গেলাম ছোট ভাইয়ের কাছে। বিভিন্ন সময়ে সে আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে পাওয়া ১০০, ২০০ টাকা মিলিয়ে যে ২-৩ হাজার টাকা জমিয়েছিল তা থেকে ২ হাজার টাকা ধার দিল। বিয়ে হয়ে গেল।

বিয়ের আগেই একটা বাসা ভাড়া নিয়ে রেখেছিলাম। ভাড়া ৭ হাজার টাকা প্রতি মাসে। বিয়ের ৩-৪ দিন পরই ঢাকায় চলে আসলাম নতুন বাসায়। ফার্নিচার বলতে মেসে থাকার জন্য কেনা ১ হাজার টাকা দামের একটা চৌকি আর ৫০০ টাকা দামের একটা টেবিল আর মেসে মিশুকের ফেলে রেখে যাওয়া একটা প্লাস্টিকের চেয়ার।

সংসার চালানোর জন্য যত খরচ হবে ভেবেছিলাম, দেখলাম বাস্তবে খরচ তার তুলনায় কমই। খরচ বেড়েছে বলতে বাসা ভাড়া ৪ হাজার টাকা (আগে ৩ হাজার লাগত আর তখন ৭ হাজার), খাওয়ার খরচ প্রায় অপরিবর্তিতই আছে (যেহেতু রান্না-বান্না কাজের লোক না রেখে নিজেরাই করি)। তবে আগে যেমন হাতখুলে খরচ করতাম, তখন সেটা মোটামুটি নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে হলো। পার্থক্য এটুকুই। সেই খরচেই সুন্দর চলে যেতে লাগলো।

কয়েকমাস পর বউ বললো একটা ফ্রিজ কেনা দরকার। টাকা জমাতে হবে। কয়েকমাস টাকা জমিয়ে ২০ হাজার টাকার মত হলো। ফ্রিজের দোকানে গেলাম। বউ পছন্দ করলো প্রায় ৩০ হাজার টাকা দামের একটা ফ্রিজ। আমি আনইজি ফিল করা শুরু করলাম। আমার কাছে তো এত টাকা নাই। সব মিলিয়ে বাইশ হাজার টাকা হতে পারে। বউ দেখি হাসে। এই কয়দিনে বউও প্রায় ৮ হাজার টাকার মতো জমিয়ে ফেলেছে সংসারের খরচ সেভ করে।

এখনো মাঝে মাঝে অবাক লাগে। আগে টাকার ভয়ে বিয়ে করতে পারিনি আমি। বিয়ের আগে প্রায় এক-দেড় বছর যে আয় ছিল, বিয়ের প্রায় বছরখানেক পর পর্যন্তও আয় ছিল একই। বিয়ের আগের প্রায় এক বছরে সেভিংস ছিল শূন্য টাকা। বিয়ের পরের এক বছরেও সেভিংস শূন্য, কিন্তু ২ জনের একটা সংসার চালিয়েও ফ্রিজসহ আরও অনেক কিছু কেনা হয়ে গেছে!

বিয়ে করলে আসলেই আয়ে বরকত আসে। রিজিকের মালিক আল্লাহ- এটা নতুন করে অনুভব করেছিলাম তখন। যারা টাকার ভয়ে বিয়ে করতে পারছেন না, সাহস করে বিয়েটা করেই ফেলুন। ইনশাল্লাহ, আয়ে বরকত আসবে। রিজিকের মালিক তো আল্লাহই।

ফুটনোটঃ বিয়ের জন্য যে দুই ফ্রেন্ডের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিলাম, ধার শোধ করে তাঁদের বিয়ের সময়ও সেই একই পরিমান টাকা ধার দিতে পারার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। মাঝে মাঝে এই ৫০ হাজার টাকাকে খুব বরকতময় মনে হয়! কি সুন্দর এই হাত থেকে ঐ হাতে যাবার অছিলায় ৩ জনের বিয়ে সুন্দরভাবে হয়ে গেল! (রনি পারভেজ)

(বিবাহ কথন-১৭)

****

বিয়ে করতে কত টাকা লাগে? এই প্রশ্নে আমি একটা অদ্ভুত উত্তর দেবো, তবে তা আগামী পর্বে। নিজের মন্তব্য দেয়ার আগে যে দুটো কেস হিস্ট্রি উল্লেখ করতে চেয়েছিলাম, আজ থাকছে তার দ্বিতীয়টি।

কেস হিস্ট্রি-২:
আমার বিয়ের শাড়িটির দাম চার হাজার আট'শ টাকা। যেখানে আমারই বোন কিংবা কাজিনদের বিয়ের শাড়ির দাম পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত। আর্থিক সংকটের কারণে যে আমি কম দাম দিয়ে বিয়ের শাড়ি কিনেছি, এমন নয়। আসলে আমার মনে হয়েছে, কী দরকার, একদিনের জন্য এত বেশি টাকা নষ্ট করে! হাতে টাকা পেলে আমি পোশাক কেনার চেয়ে বই কেনায় বেশি মনোযোগ দেই। সে যাক, যার যার রুচির ব্যাপার। তবে এটা বলতে পারি, এক লক্ষ টাকার শাড়ি গায়ে জড়ানো বোনটির চেয়ে আমি মোটেও খারাপ নেই। ভালো থাকা যার যার মানসিকতার ওপর নির্ভর করে। আপনি যদি মনে করেন, আপনি ভালো আছেন, তাহলেই আপনি ভালো থাকবেন।

আমার যখন বিয়ে হয়, আমরা দুজনই স্টুডেন্ট। আমার একুশ, আতিকের তেইশ। আতিক কম বেতনের একটা চাকরি করে, আমার তেমন কোনো আয়-ইনকাম নেই। তবু আমার পরিবার বিয়েতে অমত করেনি। বিয়ের পরে আমরা একরূম সাবলেট নিয়ে উঠেছি। সস্তার আসবাবপত্রের দোকান থেকে কেনা দুই হাজার টাকার একটি খাট, একটি আলনা আর কম্পিউটার ছাড়া আর কিছুই ছিল না আমাদের ঘরে। দীর্ঘদিন আমরা দুইজন কোনো দামী ফোন ব্যবহার করিনি। মনে আছে, দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর আমি কোনো নতুন জামা, জুতো, ব্যাগ কিনিনি। আগের যা ছিল, তাই দিয়েই চালিয়ে নিয়েছি।

এক কেজি গরুর মাংস চার ভাগ করে রান্না করেছি। দিনের পর দিন শুধু সবজি দিয়েই ভাত খেয়েছি। এত যে কষ্ট করেছি, তবু একজনের বিরুদ্ধে আরেকজন কখনো অভিযোগ করিনি। আমাদের পরিবারকেও কখনো বলতে যাইনি, যে আমরা কষ্ট করছি। তারা জানতো, আমরা ভালো আছি। সত্যিই আমরা ভালো আছি। প্রয়োজন ছিল কিছুটা সময় ধৈর্য ধরার। আমরা তা করেছি, তাই দেখতে দেখতে দৃশ্য বদলে গেল, যে জীবন আমরা শুরু করেছিলাম, তার সঙ্গে বর্তমান জীবনের কোনো মিলই নেই! ভাগ্য বদলের জন্য তো প্রচেষ্টা থাকতে হবে, তাই না?

আরেকজনের সাজানো-গোছানো জীবনে প্রবেশ করার চেয়ে দুজন মিলে সাজিয়ে নিলে, সেই জীবনটা আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠতে পারে। (হাবিবা নাসরিন)

(বিবাহ কথন-১৮)

****

এর আগে দুটি কেস স্টাডি দিয়ে আমি প্রমাণ করার চেষ্টা করেছি- বিয়ে করতে খুব বেশি টাকার দরকার নেই। যদি নিয়ত ঠিক থাকে, যদি উভয়ের মেনে নেয়ার মানসিকতা থাকে- তাহলে থাকার জন্য দালানের দরকার হয় না, মাটির ঘরই যথেষ্ট হয়। লাখ লাখ টাকা মোহরানা লাগে না, কোরআনের কয়েকটি সুরাও যথেষ্ট হয়। লাখ টাকার শাড়ি গহনা পাগড়ী শেরোয়ানি লাগে না, লুঙ্গি ফতুয়া আর সাধারণ একটা শাড়ি হলেই চলে। কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে হাজার মানুষ খাওয়ানো ওয়ালিমা দরকার হয়না, এক প্যাকেট খেজুরের ওয়ালিমাই বরকতপূর্ণ হয়।

এইযে এত জাঁকজমকের আয়োজন, এত আনুষ্ঠানিকতা, এত দর-কষাকষি, এইসব কেন করা হয়? করা হয় শুধুমাত্র তথাকথিত এই সমাজের চোখে, সমাজের মানুষের চোখে বড় সাজার জন্য। মানুষের চোখে প্রশংসা পাওয়ার জন্য। মানুষ কী বলবে- এই তাড়না থেকেই শুরু হয় শো-অফ এর যতসব অসুস্থ প্রতিযোগিতা।

কিন্তু বাস্তবে বিয়ের উদ্দেশ্য যে একটা সুন্দর পরিবার গঠন, সেইখানে এতসব খানাদানা জাঁকজমকের একপয়সার মূল্য নেই। দিনশেষে এই তথাকথিত সমাজ আর সমাজের মানুষেরা শুধু নিন্দাই করে, শুধুই পরশ্রীকাতর হয়, শুধু হিংসাই করে, শুধু সমস্যাই বাড়ায়।

সবকিছু মোকাবেলা করতে হয় শুধু দুজনকেই, পরিবারটাকে টেনে নিতে হয় মাত্র দুজনকেই।
বিয়ে করতে কত টাকা দরকার? আমার উত্তর হলোঃ বিয়ে করতে তত টাকাই দরকার, যতটাকা হলে একটা লুঙ্গি কেনা যায়!! অদ্ভুত শোনাচ্ছে? হাদীস থেকে বাস্তব প্রমাণ দিচ্ছিঃ

সাহল ইবনু সা‘দ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার জীবনকে আপনার হাতে সমর্পণ করতে এসেছি। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার দিকে তাঁকালেন এবং সতর্ক দৃষ্টিতে তার আপাদমস্তক লক্ষ্য করলেন। তারপর তিনি মাথা নিচু করলেন। যখন মহিলাটি দেখল, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে কোন ফয়সালা দিচ্ছেন না, তখন সে বসে পড়ল। এরপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের মধ্যে একজন দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আপনার বিয়ের প্রয়োজন না থাকে, তবে আমার সঙ্গে এর বিয়ে দিয়ে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কাছে কিছু আছে কি? সে উত্তর করলো- না, আল্লাহর কসম, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে কিছুই নেই। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি তোমার পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে গিয়ে দেখ, কিছু পাও কিনা। এরপর লোকটি চলে গেল। ফিরে এসে বলল, আল্লাহর কসম! আমি কিছুই পাইনি। এরপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আবার দেখ, লোহার একটি আংটিও যদি পাও। তারপর লোকটি আবার ফিরে গেল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! তাও পেলাম না, কিন্তু এই আমার লুঙ্গি (শুধু এটাই আছে)। লোকটি এর অর্ধেক তাকে দিতে চাইল। তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সে তোমার লুঙ্গি দিয়ে কী করবে? তুমি যদি পরিধান কর, তাহলে তার কোন কাজে আসবে না, আর সে যদি পরিধান করে, তবে তোমার কোন কাজে আসবে না। বেশ কিছুক্ষণ লোকটি নীরবে বসে থাকল। তারপর উঠে দাঁড়াল। সে যেতে উদ্যত হলে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ডেকে আনলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কী পরিমাণ কুরআন মাজীদ মুখস্থ আছে? সে বলল, আমার অমুক অমুক সূরা মুখস্থ আছে এবং সে গণনা করল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন, এগুলো কি তোমার মুখস্থ আছে? সে বলল, হাঁ। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যে পরিমাণ কুরআন তোমার মুখস্থ আছে তার বিনিময়ে এ মেয়েটিকে তোমার অধীনস্থ করে (বিয়ে) দিলাম।
(সহীহ বুখারী)

আপনার যা আছে বিয়ে করার জন্য তা-ই যথেষ্ট। শুধু আপনাকে হতে হবে আরো একটু বেশি কষ্টসহিষ্ণু, টেনে ধরতে হবে আপনার উচ্চাভিলাষের লাগাম, সাময়িকভাবে হয়তো কমিয়ে আনতে হবে জীবনযাত্রার মান। আর হ্যা, খুঁজে বের করতে হবে এমন একজনকে- যিনি আপনার এইটুকু নিয়েই সন্তুষ্টচিত্তে সংসার করতে রাজী আছেন।
(বিবাহ কথন-১৯) 

বুধবার, ২৯ মার্চ, ২০১৭

প্রিয় ভাঁটফুল

ভাঁটফুলেদের কথা তবু মনে পড়ে।
মনে পড়ে, চৈত্রের সেইসব নিঃসঙ্গ দুপুরে
কতটা ভালোবাসা দিয়েছিলো আমাকে-
জাতহীন পাতহীন সেইসব বুনো ভাঁটফুল।
গোলাপ রজনীগন্ধার ভীড়ে কেউ কি ভাবে আজ
ঘাসফুল ভাটফুলেদের কথা? অথচ
গোলাপী গোলাপেরা কখনো দেয় নাই অতটা ভালোবাসা,
যতটা নিখাদ প্রেম ছিল-
ভাটফুলের অজানা সৌরভে।

হা হৃদয়! অকৃতজ্ঞ হয়োনা কভু।
ভুলোনা পুরনো বন্ধুর কথা,
জীবনের রুক্ষ পথে বারবার চিনে নিও তারে।
যে ছিল তোমার আজো সে তোমারি আছে;
খুঁজে নিও
পতিত জমিনে অবহেলা অনাদরে বেড়ে ওঠা
বংশপরিচয়হীন ছিন্নবস্ত্র এক
বুনো ভাটফুল।

শনিবার, ২৫ মার্চ, ২০১৭

'ফ্রি হেলথ ক্যাম্পে'র নামে 'জাতীয় মশকরা'

আগামীকাল মহান স্বাধীনতা দিবস। এই দিনে সারাদেশে 'ফ্রি হেলথ ক্যাম্পে'র নামে জনগনের সাথে 'জাতীয় মশকরা'য় লিপ্ত হবেন শতশত চিকিৎসক।
রাজনৈতিক নেতা-পাতিনেতা আর বিভিন্ন ক্লিনিক-ডায়াগনোস্টিক গুলো তাদের নিজস্ব প্রচার প্রচারণার উদ্দেশ্যে আয়োজন করবে এইসব তথাকথিত 'ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প' নামক তামাশার। আর তাতে ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হবেন বিভিন্ন পর্যায়ের চিকিৎসকবৃন্দ।
আচ্ছা স্বাধীনতা দিবসে আইনজীবিরা কি 'ফ্রি আইন ক্যাম্প' করেন? ইঞ্জিনিয়াররা কি 'ফ্রি নকশা' করে দেন? কৃষিবিদরা কি 'ফ্রি কৃষি পরামর্শ' ক্যাম্প করবেন? শিক্ষকগন কি 'ফ্রি টিউশনি ক্যাম্প' করবেন? ব্যবসায়ীরা কি 'ফ্রি চাল-ডাল বিতরণ' করবেন? ঔষধ ব্যবসায়ী কি 'ফ্রি ঔষধ বিতরন' করবেন?
না। তাহলে আপনি কেন ছুটির দিনটাতে পরিবার পরিজনকে বঞ্চিত করে এইসব ভাওতাবাজি ক্যাম্পিং করবেন? কেন নেতা-পাতিনেতা বা ক্লিনিক-ডায়াগনোস্টিকের প্রচারণার সামগ্রী হবেন? আপনি তো ভালো করেই জানেন, এইসব ক্যাম্প ট্যাম্প দিয়ে জনগনের কোন উপকার হয়না।
যার দরকার সে ঠিকই কমিউনিটি ক্লিনিকে যাবে, উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্সে যাবে, সদর হাসপাতালে যাবে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাবে, ক্লিনিকে যাবে। আর সেখানে এই ছুটির দিনেও আপনার ভাইবোনেরা কেউ না কেউ বসে আছেন চিকিৎসা দেয়ার জন্য।
ডাক্তার ভাই বেরাদরগন, যারা ছুটির দিন পেয়েছেন, পরিবারের সাথে, বন্ধু বান্ধবদের সাথে সময় কাটান। তাদের সুখ দুঃখের অংশীদার হোন। কিছুই না করতে চাইলে সারাদিন ঘুমান। তবুও নিজেদেরকে আর নিচে নামাবেন না। অন্যদের খেলার সামগ্রী বানাবেন না। ফেরিওয়ালা সাজবেন না। ফেরি করে চিকিৎসা দেয়া যায় না।
মানবসেবার কথা বলে আবেগ দিয়ে যদি কেউ আপনাকে ব্ল্যাকমেইল করতে আসে, তাকে স্পষ্ট করে বলে দিন- মানবসেবার দায় আপনার একার নয়।

শুক্রবার, ২৪ মার্চ, ২০১৭

হায় কান্ডজ্ঞান!

ভোর পাঁচটা। সরকারী হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে রাত্রীকালীন দায়িত্বে আছেন ডাঃ মুনীর। ভোরের এই সময়ে বহির্বিভাগীয় রোগীর চাপ একটু কমেছে। এখন তিনি ঘুরে ঘুরে ভর্তি রোগীদের অবস্থা দেখছেন। খেয়াল করলেন, একজন ভদ্রলোক দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে এদিক সেদিক তাঁকিয়ে শেষে এসে দাঁড়ালেন ডেস্কের সামনে। বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে তাকে।

কোন রোগীর এটেন্ড্যান্ট? পোস্ট সিসিইউ বা পোস্ট ক্যাথের কোন রোগীর সমস্যা? নাকি অন্য ওয়ার্ড থেকে রেফারেল? ভাবতে ভাবতে ডেস্কে ফিরে নিজের চেয়ারে বসলেন ডাঃ মুনীর। জিজ্ঞাসু চোখে তাঁকালেন আগত ভদ্রলোকের চোখে। আংকেল, বলুন কী সমস্যা?
ভদ্রলোকের চোখে আরো উদ্বেগ ফুটে উঠলো। তিনি অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- আচ্ছা, 'তিন তলার ৩২ নম্বর বেডটা কোনদিকে?'

মেজাজটা প্রায় বিগড়েই যেতে বসেছিল ডাঃ মুনীরের। তবু অনেক কষ্টে মেজাজের লাগাম টেনে ধরে সুন্দর ভাবে উত্তর দিলেন। চাচা, এই ওয়ার্ডে তো ৩২ নম্বর বেড নাই। অমুক অমুক ওয়ার্ডে আছে। ওইখানে গিয়ে একটু খোঁজ করুন। পেয়ে যাবেন।

ভদ্রলোক চলে গেলেন। আর পেছন থেকে তার দিকে তাঁকিয়ে রইলেন ডাঃ মুনীর। অদ্ভুত ব্যাপার! নিচতলায় দুজন দারোয়ান, এই ওয়ার্ডের প্রবেশপথে দারোয়ান, নার্সেস ডেস্কে কয়েকজন নার্স, টুলে বসে থাকা ওয়ার্ডবয়, আয়া- বলা চলে চার স্তরের মানুষকে পেরিয়ে ইনি কিনা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করতে এসেছিলেন- ৩২ নম্বর বেডটা কোনদিকে? হায় কান্ডজ্ঞান!! এঁদের ধারণা, হাসপাতালের সবকিছু সম্পর্কে ডাক্তারকেই জিজ্ঞেস করতে হবে!!

লোকটা চলে যেতেই ডাঃ মুনীরের মনে পড়লো- একটা ভুল হয়ে গেছে। মনে কষ্ট পেতে পারে ভেবে তাকে বলা হয়নি যে এটা জিজ্ঞেস করার জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই। হায়! কে জানে- এতক্ষণে হয়তো ভদ্রলোক অন্য ওয়ার্ডে গিয়ে কর্তব্যরত ডাক্তারকে খুঁজছেন। আর পেলেই জিজ্ঞেস করে বসবেন তার সেই মোক্ষম প্রশ্নটিঃ আচ্ছা, তিনতলার ৩২ নম্বর বেডটা কোনদিকে?

রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০১৭

ফিফটি ফিফটি চান্স

বিয়ের আলাপ যদি সফল না হয়, অর্থাৎ আলাপ যখন আত্মীয়তায় পরিণত না হয়, তখন কোন না কোন একটা পক্ষকে মনোক্ষুন্ন হতেই হয়। পাত্রপক্ষ অথবা পাত্রীপক্ষ। কারণ, শেষ পর্যন্ত তো কোন এক পক্ষ অপর পক্ষকে অপছন্দ করেই বসে। প্রস্তাব বাতিল হয়। হতে পারে এক ফ্যামিলি অন্য ফ্যামিলিকে অথবা ছেলে বা মেয়ে একজন আরেকজনকে অপছন্দ করে। হয়তো মেয়ে পাত্রকে পছন্দ করলো, কিন্তু ছেলে কিংবা ছেলের ফ্যামিলি মেয়েকে অপছন্দ করলো। হয়তো ছেলে পাত্রী পছন্দ করলো, কিন্তু ছেলের পরিবার অপছন্দ করলো মেয়ের পরিবারকে।

প্রথম প্রস্তাবেই বিয়ে হয় এমনটা খুব কমই ঘটে। সাধারণত প্রত্যেক ছেলে বা মেয়েকেই বিয়ের আগে গড়ে চার পাঁচবার এই দেখাদেখি পর্বের মুখোমুখি হতে হয়। প্রতিটা ক্ষেত্রেই ছেলে কিংবা মেয়ে কাউকে না কাউকে হতাশ হতে হয়। কারো না কারো মন ভেঙ্গে যায়। কাউকে না কাউকে কষ্ট পেতে হয়। প্রত্যাখ্যানের কিংবা স্বপ্নভঙ্গের কষ্ট। 

এই অবস্থা বেশি মোকাবেলা করতে হয় মেয়েদেরকে। বিশেষ করে মেয়ে যদি তথাকথিত প্রচলিত মানদন্ডে একটু কালো হয়, শ্যামলা হয়, বেঁটে হয়। তাই বিয়ের আলাপ শুরুর আগেই গার্ডিয়ানদের উচিত ছেলে এবং মেয়ে উভয়কে মানসিকভাবে তৈরি করা। তাদেরকে জানিয়ে দেয়া, বুঝিয়ে দেয়া উচিত যে- প্রতিটা প্রস্তাব ফিফটি ফিফটি চান্স। যেকোনটাই হতে পারে। যাই হোক, বিশেষ করে নেগেটিভ হলে মনে কষ্ট পাওয়া যাবে না। কেউ যদি তোমাকে অপছন্দ করে তো সেটা তার সমস্যা, তোমার নয়। কোন মানুষই সবার কাছে পছন্দের হয় না। সবার চোখে সুন্দর হয় না। সবচেয়ে যে সুন্দর মেয়েটা বা ছেলেটা, তাকেও কেউ না কেউ অপছন্দ করে। সবচেয়ে যে ভদ্র নম্র মানুষটা, তাকেও অনেকেই পছন্দ করেনা। আর খুব কম মানুষই আছে যারা অন্য কারো ইনার পটেনিশিয়ালিটি উপলব্ধি করার ক্ষমতা রাখে।

পাত্র পাত্রীদের বুঝতে হবে, কেউ যদি আপনাকে অপছন্দ করে, তাহলে আপনার মন খারাপ করার কিছু নেই। কারণ, যে আপনাকে পছন্দ করে না সে কোনভাবেই আপনার জন্য নয়। আপনাকে যার পছন্দ নয়, যার চোখে আপনি সুন্দর নন, তার সাথে বিয়ে হলে আপনি কি সুখী হবেন? আপনাকে খুশি করার জন্য সে কি কখনো কিছু করবে? আপনার জন্য কোন স্যাক্রিফাইস করবে? নিশ্চয় না।

তাহলে কেন আপনি কষ্ট পাবেন? বরং এমন কারো জন্য অপেক্ষা করুন, যে আপনাকে আপনার অবস্থানেই পছন্দ করবে, আপনার যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট হবে।

(বিবাহ কথন-১৬)  

শনিবার, ১৮ মার্চ, ২০১৭

প্রসঙ্গঃ হিন্দুদের হোলি উৎসব

হিন্দু সম্প্রদায়ের 'হোলি' উৎসবকে উপলক্ষ করে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার বিপরীতে অনেককেই দেখা গেল উগ্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে। 'মালাউনদের এত বড় সাহস!! শালাদের ইন্ডিয়া পাঠায় দেয়া উচিত!!! এইরকম আরো অনেক কদর্য মন্তব্য।

কিন্তু ভিডিও ফুটেজ ঘেটে পাওয়া গেলো, এইসব নোংরামির ঘটনায় জড়িত সবগুলা মুসলমানের বাচ্চা!!
আর এর মাধ্যমে একেবারে হাতে নাতে প্রমাণ হলো- এইসব ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের কোন দোষ নাই।
শত শত বছর ধরে এই ভূখন্ডে হিন্দু মুসলিম পাশাপাশি বাস করছে। সুখে দুঃখে একে অপরের সহযোগী হয়েছে। রমজান, পুজা একসাথে হয়েছে। কোন সমস্যা হয় নাই। হিন্দুরা তাদের উৎসবের সীমা বোঝে। একটা মুসলিমপ্রধান দেশে কীভাবে উৎসব পালন করতে হয় সেটা তারা জানে। তাদের উৎসব সবসময়ই ছিল ঘরোয়া প্রকৃতির। নিজেদের মধ্যে আনন্দ উদযাপন। তাদের উৎসবে মুসলমানদের মধ্যে থেকে শুধু বন্ধু বান্ধবরাই আমন্ত্রিত হত। অপরিচিত কেউ হুট করে যেতে পারতো না।

সেভাবেই তারা চলছিল। কিন্তু ইদানীং কিছু সুযোগসন্ধানী কুলাঙ্গার 'ধর্ম যার যার উৎসব সবার' বলে হিন্দুদের উৎসবে গিয়ে বিশৃঙ্খলা করছে। এদের প্রধান টার্গেটই থাকে মেয়েরা। যেকোনভাবে তারা মেয়েদের গায়ে হাত দেবে। এবারের হোলিতে যেভাবে রাস্তায় মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া হয়েছে, কোন ধর্মপ্রাণ হিন্দু একাজ করতে পারেনা। করেওনি।
হিন্দু বন্ধুদের বলবো, আপনাদের উৎসবে একান্ত কাছের বন্ধুবান্ধব ছাড়া অন্যদের অংশ নিতে দেবেন না। এদের হাতে আপনাদের সম্মান নিরাপদ নয়। কোন আশঙ্কা থাকলে স্থানীয় মুসলমান নেতাদের জানান। আমি সাহসের সাথে বলতে পারি, এদেশের মুসলমানরা সবসময়ের মত আগামীতেও হিন্দুদের ধর্মপালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।

মঙ্গলবার, ১৪ মার্চ, ২০১৭

শুধুই কমিশন খাওয়ার ধান্দা?

১.
ডাক্তারের চেম্বারে এসেছেন রহমত সাহেব। দুমাস ধরেই খেয়াল করছেন একটু একটু জ্বর, শরীরটাও দুর্বল হয়ে আসছে। ওজন কমে যাচ্ছে। খাওয়ার রুচিও আগের মত নাই। ইদানিং অফিসের কাজও ঠিকঠাক করতে পারেন না। খুব ক্লান্ত লাগে।
ডাক্তার তার সবকথা শুনে ফুসফুসের ক্যান্সার মনে করলেন। তিনি বললেন FNAC করতে হবে। রোগীকে পরামর্শ দিলেন- পরীক্ষা অমুক ল্যাব থেকে করাবেন।
রহমত সাহেব কিছু বলতে গিয়েও বললেন না। কিন্তু চেম্বার থেকে বেরিয়ে তিনি আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। কথাটা বলেই ফেললেন তিনি। ঐ নির্দিষ্ট ল্যাবেই করাতে হবে কেন? আসলে সবই হইলো গিয়া এদের কমিশন খাওয়ার ধান্দা!!

২.
কিছুদিন ধরেই মাথা ঘুরায় খলিল সাহেবের। পেশায় সাংবাদিক তিনি। মাথা খাটিয়েই কাজ করতে হয়। ভেবেছিলেন ডাক্তারের কাছে যাবেন না। না খেয়ে মরুক ডাক্তারগুলা। এদেশের ডাক্তারে কিছু জানে নাকি?
কিন্তু কয়েকদিন হলো মাথাব্যথাটা বাড়ছে। শেষমেষ তিনি বাধ্য হয়েই একজন মেডিসিন স্পেশালিস্টের শরণাপন্ন হলেন। মেডিসিনের স্বনামধন্য প্রফেসর। খলিল সাহেব ভেবেছিলেন, এতবড় প্রফেসর, নিশ্চয় চেহারা দেখেই রোগ ধরে ফেলবেন। কিন্তু না, ডাক্তার ধরিয়ে দিলেন এমআরআই অব ব্রেইন। আর বললেন- অমুক ইমেজিং সেন্টার থেকে করাবেন।
যা বোঝার বুঝে ফেললেন সাংবাদিক খলিল সাহেব। কচি খোকা তো নন! চেম্বার থেকে বেরোতে বেরোতে মনে মনে একটা নিউজও গুছিয়ে ফেললেন তিনি। একেবারে হাতে নাতে প্রমাণ!! এভাবেই তাহলে কমিশন খাওয়ার ধান্দায় নির্দিষ্ট ডায়াগনোস্টিকে পাঠায় ডাক্তাররা!!

৩.
বুকের ব্যথাটা অনেকদিন থেকেই আছে কবির সাহেবের। প্রথমে এলাকার ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন সময় ওষুধ কিনে খেয়েছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। শেষমেষ বাধ্য হয়ে গতকাল গিয়েছিলেন একজন এমবিবিএস ডাক্তারের চেম্বারে। সিম্পল এমবিবিএস আরকি। ছোকরা ডাক্তার ইসিজি করিয়ে বললো হার্টে কিছু সমস্যা আছে। এতক্ষণ পর্যন্ত ঠিকই ছিল, কিন্তু এর পরেই বের হলো ছোকরা ডাক্তারের আসল চেহারা!! বলে কিনা- ইকোকার্ডিওগ্রাম করাতে হবে। কোথায় করাতে হবে তাও বলে দিলো!! অমুক সেন্টারে গিয়ে অমুক ডাক্তারের হাতে করাবেন।
কবির সাহেব তখনই সব বুঝেছেন। নিজের বয়স তো আর কম হলো না। ঐ ছোকরা ভেবেছে কি, তিনি কিছুই বোঝেন না? সোনালি ফার্মেসির ছেলেটার কথাই ঠিক। ইকো টিকো কিছুনা, সব ঐ ছোকরা ডাক্তারের কমিশন খাওয়ার ধান্দা আরকি!! ছোকরার অভ্যাস এখনই খারাপ হয়ে গেছে। বড় হলে তো নির্ঘাত কসাই হবে!!

****

আপনি অমুক জায়গা থেকে টেস্ট করাবেন। ডাক্তার এরকম কিছু বললেই অনেকের মনে খচ খচ করে ওঠে, নিশ্চয়ই কমিশন খাওয়ার ধান্দা আছে।
কমিশন কমিশন করে এমন শোরগোল তোলা হয়েছে, রোগীরা এখন সাধারণ পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেও সন্দেহ করে- কমিশনের লোভে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিলো না তো?

কিন্তু বাস্তবতা কী? আমার জানা মতে, কমিশনখোর ডাক্তারের সংখ্যা খুবই নগন্য। আর কমিশনখোররাও সহজে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেয়না। যেমন পুলিশ বা সরকারি অফিসের কোন কোন কর্মচারী ঘুষ নেয়, সেটা খারাপ। কিন্তু ঘুষ নিয়ে কাজ করবেনা এতটা বেঈমান তারা এখনো হয়নি। কমিশনখোররাও হলো সেরকম। কমিশন খায় সেটা খারাপ। তাই বলে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দিয়ে কমিশন খাবে এতটা বেঈমান বোধহয় তারাও এখনো হয়নি।
নির্দিষ্ট ল্যাবে টেস্ট করাতে বললেই কমিশন খাওয়ার ধান্দা না। কিছু কিছু টেস্ট আছে - যার জন্য এক্সপার্টদের কাছ থেকেই রিপোর্ট নিতে হয়। যেমন FNAC, Histopathology, MRI, Echocardiogram, Endoscopy, Bronchoscopy ইত্যাদি। আর এক্সপার্টরা তো রাস্তাঘাটে ফুটপাতে বসেন না। তারা থাকেন বিশেষ কিছু সেন্টারে।
সুতরাং, কেউ আপনাকে নির্দিষ্ট ল্যাবে পাঠালেই কমিশন খাওয়ার ধান্দা মনে করে বসবেন না।
বিশ্বাস রাখুন, আমাদের সমাজটা সামগ্রিকভাবে পঁচে গেলেও ভালো মানুষের সংখ্যা এখনো অনেক বেশি।

রবিবার, ১২ মার্চ, ২০১৭

তরুণ ডাক্তারদের পেশা বদলের পরামর্শ !!

বিশেষায়িত ডিগ্রীধারীরা ঝুঁকছেন অন্য পেশায়। খবর বণিক বার্তার, (লিংক কমেন্টে)। নিউজে কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার ও কৃষিবিদের কেস স্টাডি দেয়া হয়েছে যারা সবাই নিজ পেশা ছেড়ে বিসিএস পুলিশে যোগ দিয়েছেন।
খুব স্বাভাবিক। বাংলাদেশের ক্যাডার সার্ভিসের ভেতরে সাধারণ এবং পেশাগত ক্যাডারের যে বৈষম্য তাতে করে পেশাগত ক্যাডারে থাকা মানে নিজেকে অপমান করা। সুযোগ সুবিধা সব কেন্দ্রীভুত করা হয়েছে দুয়েকটি ক্যাডারে। ইঞ্জিনিয়াররা বহু আগে থেকেই পেশা পরিবর্তন অথবা দেশত্যাগ এই দুটির একটি পথ বেছে নিচ্ছেন। ডাক্তাররাই শুধু মানবিকতা, দায়বদ্ধতা, দেশপ্রেম এইসব ফাঁকাবুলিতে আটকে ছিলেন। কিন্তু কিল ঘুষি খেয়ে এখন তাদেরও চোখ খুলছে। তারাও এখন পুলিশ এবং প্রশাসন ক্যাডারে ঢুকছেন। পুলিশ এবং প্রশাসন ক্যাডার আইন প্রয়োগ করে জনগনের ওপর, আর জনগন আইন (!) প্রয়োগ করে ডাক্তারদের ওপর। একই বিসিএস এ নিয়োগ পেয়ে কেউ পায় গাড়ি, বাড়ি, বডিগার্ড। আর কেউ পায় ইউনিয়ন সাবসেন্টারে ভাঙা চেয়ার। গাড়ি তো কল্পনার বাইরে, নৌকা, ঠেলা, ভ্যান, রিক্সায় করে যাওয়া আসার খরচটাও নিজের পকেট থেকে ব্যয় করতে হয়। পেশাগত ক্যাডার মানেই অবহেলিত ক্যাডার। নখদন্তবিহীন ক্যাডার। সবার প্রমোশন হয় বয়স ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে, ডাক্তারের দরকার অতিরিক্ত ডিগ্রী। পুলিশের কনস্টেবল হয় 'স্যার', আর এমবিবিএস এফসিপিএস শেষ করে হতে হয় 'ডাক্তার সাব'। 

স্কুল কলেজ ভার্সিটি সব পরীক্ষায় যারা ছিল সামনের সারিতে, কর্মক্ষেত্রে নেমে তারা এখন নিজেকে দেখছে সবার পেছনের সারিতে। কারও দয়ায় তো বিসিএস পার হচ্ছে না, তাহলে কেন শুধু শুধু নিজেকে খাটো করা? প্রশাসন আর পুলিশ ক্যাডারই যদি হয় রাষ্ট্রের কাছে একমাত্র আদরের 'অফিসার', তাহলে হোক। তাই হোক।

আমার একজন সিনিয়র, ডাঃ রিফায়েত, আসন্ন ৩৮ তম বিসিএস নিয়ে লিখেছেন, "স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জনের পদ ২২০টি, সহকারী ডেন্টাল সার্জনের পদ ৫ টি! প্রশাসন ক্যাডারে সহকারী কমিশনার পদ ৩০০ আর পুলিশে ১০০। লড়াই যেহেতু হবে, শুধু হেলথ ক্যাডার কেন?? পাশাপাশি জেনারেল ক্যাডারেও হোক।"

ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার যারা আগামীতে বিসিএস দিবেন, তাদের সবার জন্য আমারও একই পরামর্শ। প্রশাসন আর পুলিশ ক্যাডারই যদি হয় দেশসেবার একমাত্র উপায়, তবে তাই হোক। রাষ্ট্র যদি তার ক্যাডারদের মধ্যে রাজা প্রজা বিভাজন করে, যোগ্য হয়েও কেন আপনি জেনেশুনে প্রজাই হবেন?

শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭

যদি কিছু মনে না করেন !!

ভাই কিছু মনে না করলে একটা কথা বলি??
ভাই, মাইন্ড কইরেন না, আপনাকে একটা কথা বলি??
অনেকেই কথার আগে পরে এইসব ব্যবহার করেন।

আপনি হয়তো কার্টেসি হিসেবে কোন সেনসিটিভ কথা এভাবে শুরু করেন। কিন্তু বাস্তবে এইটার উদাহরণ হলো পাগলকে সাঁকো নাড়ানোর কথা মনে করিয়ে দেয়ার মত। যাকে বলছেন, হয়তো তিনি খেয়ালই করতেন না, আপনি একটা সিরিয়াস কথা বলে ফেলেছেন। কিন্তু আপনি যখনি বলবেন- ভাই মাইন্ড কইরেন না, ঠিক তখনি উনার মনে হবে- নিশ্চয় এই কথাটা মাইন্ড করার মত!!! নাহলে কেন আমাকে এই কথা বললো?

এবং 'মাইন্ড কইরেন না' বলাতে তিনি আর কোনভাবেই 'মাইন্ড' না করে থাকতে পারলেন না!!!

শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭

নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে

বগুড়া মেডিকেলের ঘটনা সহজে ছেড়ে দেবার সুযোগ নাই। রাষ্ট্র যখন আপনাকে নিরাপত্তা দেবে না, তখন নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। ফাতরা লোকজন হাসপাতালে এসে রসিয়ে রসিয়ে মহিলা ডাক্তারকে 'মাল' বলবে, ফ্যান কোনদিকে, টয়লেট কোনদিকে জিজ্ঞেস করবে, আর পোলারা বসে বসে দেখবে? সালাম করবে?
কুলাঙ্গারগুলাকে শুধু কান ধরে উঠবোস করানো মোটেই যথেষ্ট হয় নাই।

এতদিনে ভালো করে বোঝা হয়ে গেছে, ডাক্তারের নিরাপত্তা আমাদের রাষ্ট্র দেবে না। নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই দিতে হবে। বগুড়া মেডিকেলে ইন্টার্নরা, দে হ্যাভ শোন দেয়ার গাটস। সকল ডাক্তারকে এই শিক্ষা নিতে হবে। প্রতিদিন একতরফাভাবে 'ডাক্তার লাঞ্চিত' হবার খবর আর শুনতে চাই না। 

রাষ্ট্র তার নাগরিকদের চাহিদা না মিটিয়ে ডাক্তারকে গিনিপিগ বানাতে চায়। হাসপাতালে সিট নাই, আছে ডাক্তার। ঔষধ সরবরাহ নাই- আছে ডাক্তার। পরীক্ষা নিরীক্ষার ব্যবস্থা নাই- আছে ডাক্তার। চুরি করবে থার্ড ক্লাস ফোর্থ ক্লাসরা, দোষ হবে ডাক্তারের।

রাষ্ট্র নাগরিকদের স্বাস্থ্যসেবা দেবে না, দোষ হবে ডাক্তারের। রাষ্ট্র এবং মিডিয়া ডাক্তারদেরকে জনগনের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। মৌলিক চাহিদা পূরণে রাষ্ট্রের ব্যর্থতার দায়, আর জনগনের ক্ষোভ তারা ডাক্তারদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে পাশ কাটাতে চায়।

কিসের ভিত্তিতে মন্ত্রী ইন্টার্নদের বরখাস্ত করেন? কোন আইন তাকে এই অধিকার দিয়েছে? হাসপাতালের ওয়ার্ডে এইসব লোক ঢুকলো কী করে, কেন? মন্ত্রীকে আগে সেই জবাব দিতে হবে। ঢাকা মেডিকেলে ডাঃ ফারহানাকে যখন আহত করা হয়, কোথায় ছিলেন মন্ত্রী মহোদয়? কোথায় ছিলেন তিনি, যখন বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ঢাকা মেডিকেলে এসে ভাঙচুর চালায়? কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি?

আর পদলোভী বিএমএ নেতাদেরকে অভিভাবক হিসেবে অস্বীকার করার সময় এসেছে। যে অভিভাবক তার সন্তানের নিরাপত্তা দিতে পারেনা, যে অভিভাবক তার সন্তানকে জঙ্গলে ছেড়ে দিয়ে ঘুমায়, তারা অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। তাদেরকে অস্বীকার না করলে আগামীতেও কোন অধিকার আদায় হবেনা।