এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সোমবার, ৩০ জুন, ২০১৪

তারাবীর নামাজ নিয়ে বিতর্ক বন্ধ করুন ।

কায়রো থেকে বেশ দূরে একটি গ্রাম । মসজিদে মুসল্লিরা সমবেত হয়েছেন । রমজান মাস সমাগত । এখন থেকে অতিরিক্ত হিসেবে তারাবীহ নামাজ পড়তে হবে । কিন্তু আট রাকাত না বিশ রাকায়াত ? এই নিয়ে মুসল্লিদের ভেতর বেশ ভালোরকম বাগবিতণ্ডা শুরু হয়ে গেলো । এই প্রশ্নে লোকেরা দুই দলে ভাগ হয়ে গেলো ।
একদল বললো, উমর ইবনে খাত্তাব (রা)-এর নির্দেশ অনুযায়ী ২০ রাকাত পড়তে হবে । আরেক দল ৮ রাকাতের পক্ষে । তাদের যুক্তি হলো, রাসূলুল্লাহ (সা) কখনো আট রাকাতের বেশি তারাবীহ পড়েননি।

উভয় পক্ষ একে অপরকে বিদাতের অভিযোগে অভিযুক্ত করে গালাগালি করতে লাগলো। এমনকি তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে হাতাহাতির উপক্রম হলো। এমন সময় এক যুবক বিষয়টাতে হস্তক্ষেপ করলেন । তিনি এতক্ষণ লোকদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছিলেন । তিনি সবাইকে থামিয়ে দিয়ে প্রশ্ন করলেন - আচ্ছা আপনারা বলুন, তারাবীহ নামাজ কী ধরনের ইবাদাত ?
মুসল্লিরা জবাব দিলেন- সুন্নাত । পালন করলে সওয়াব, না করলে গুনাহ নেই।
যুবক আবার জিজ্ঞেস করলেন: এবার বলুন, মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ থাকা, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব সম্পর্কে আপনারা কী জানেন ?
তারা জবাব দিলেন: এটা ফরয এবং ঈমানের অন্যতম মৌলিক বিষয় । কুরআনে আল্লাহ্‌ নির্দেশ দিয়েছেন - তোমরা আল্লাহ্‌র রজ্জুকে শক্তভাবে আঁকড়ে ধরো, আর পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়োনা ।
যুবক বললেন: তাহলে শরীয়তের দৃষ্টিতে ফরয এবং সুন্নতের মধ্যে কোন্‌টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ? সুন্নতের জন্য ফরয লংঘন করাটাকি ঠিক হবে ?
মুসল্লিরা তাঁদের ভুল বুঝতে পারলেন ।
এবার যুবক বললেন- আপনারা যদি ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য চান তাহলে বাড়িতে গিয়ে নিজেদের বিশ্বাস অনুযায়ী তারাবীর নামায পড়ুন । তর্ক করে মুসলিমদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্ব নষ্ট করার চেয়ে সেটাই উত্তম হবে ।
এই যুবক ছিলেন ইখওয়ানুল মুসলিমুনের প্রতিষ্ঠাতা, হাসান আল বান্না (র) ।

[ঘটনাটি পড়েছিলাম আল্লামা ইউসুফ আল কারযাভীর 'ইসলামের পুনর্জাগরণঃ সমস্যা ও সম্ভাবনা' বইয়ে ।]

রবিবার, ২৯ জুন, ২০১৪

পলাতক স্বপ্ন !

'স্বপ্ন'কে ভেবেছিলাম বেশ ভালো লোক
তিনবেলা কোরমা পোলাও না খেতে দিলেও
'ভালোবাসা'র মত সে
জানালা দিয়ে পালায় না ।
ভেবেছিলাম সে থাকে সর্বক্ষণের সঙ্গী
শেষ অবলম্বন ।
ভেবেছিলাম , কেউ কথা না রাখলেও
'স্বপ্ন' কথা রাখে
ব্যস্ততায় প্রেম উবে যায় ,
স্বপ্ন তবু থাকে ।
.
.
আমার তো ছিলনা ভালোবাসা কিংবা প্রেম
ওদের অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করেছি
সেই কবে ! আমার ছিল
এতটুকু স্বপ্ন ।
অথচ আজ কিনা একবেলার অনাহারে
ভাবনাগুলো সব মিথ্যে করে , ব্যস্ততার এই ফাঁকে
'স্বপ্ন' পালিয়ে গেছে চোরের মত
সারারাত ধরে দুচোখ পেতেও এখন আর
আমি কোন স্বপ্ন দেখিনা ...

বুধবার, ২৫ জুন, ২০১৪

বিরাণ পথের পথিক

কোথাও জনমানবের চিহ্ন নেই । দূরে দেখা যায়  
আকাশের সীমানা ।  বিরাণ ভূমির এই পথে আমি 
কতোকাল ধরে হাঁটছি তো হাঁটছি
এতটুকু বিশ্রাম নেই । কোথায় যাচ্ছি 
তাও জানা নেই ।

তোমরা কি ভেবেছ আমার বয়স
মাত্র পঁচিশ ? আলমে আরওয়ার কথা 
ভুলে গেলে এভাবেই? অথচ অনন্তকাল আমি
তোমাদের পাশেই ছিলাম । তারপর
আমাকে নামিয়ে দেয়া হলো ধুলোময় পৃথিবীর
এই বিরাণ পথে ।

আদমের মত আমি হাঁটছি শুধুই । 'হাওয়া'র মত আরো একজন
হয়তো হাঁটছে এই পৃথিবীরই
অন্য কোন বিরাণ পথে । জানা নেই 
কতোকাল ধরে কতোটা পথ হেঁটে কোথায় গেলে , 
সিংহল সমূদ্রের কোন পাড়ে অবশেষে 
সেই পথিকের দেখা মিলবে ! 

সোমবার, ২৩ জুন, ২০১৪

সুমাইয়ার বোন

এমন পরিবেশে থাকতে হবে কোনদিন কল্পনাও করেনি ফারহানা । একটা রুম । নোংরা মেঝে । রুমের একপাশে পর্দা দেয়া টয়লেট । সেখান থেকে দুর্গন্ধ আসছে । কোনমতে গাদাগাদি করে এখানে বসে আছে ফারহানা সহ মোট ২৩ জন মেয়ে । ফারহানারা  বিশ জন । আর ৩ জন আগে থেকেই ছিল । একজন শাশুড়ী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত । আরো দুজনকে অসামাজিক কাজের দায়ে আটক করেছে ।
ক্ষুধা পেয়েছে বেশ । সেইযে সকালে নাস্তা করেছে ফারহানা এরপর আর কিছু পেটে যায়নি । শরীরটা ক্লান্ত লাগছে । দেয়ালে যে একটু হেলান দেবে সে রুচি হচ্ছেনা । থুথুর রেশ দেখা যাচ্ছে দেয়ালের গায়ে ।


গ্রিলের ফাঁক দিয়ে একঝলক দেখেছে ফারহানা, আব্বা হাতে একটা খাবারের প্যাকেট নিয়ে ঘুরছেন । নিশ্চয়ই খাবারটা দেয়ার উপায় করতে পারেননি এখনো । অন্য দিন ফারহানা তার আব্বার ওপর খুব রাগ করে , সকাল দুপুর রাত আব্বা যেখানেই থাকুক ফোন করে খবর নেবে কী খেয়েছে । মনে হয় এই পৃথিবীতে ফারহানার জন্মই হয়েছে খাওয়ার জন্য । আর একবেলা ফারহানা ঠিকমত না খেলে যেন আব্বার জীবন ব্যর্থ হয়ে যাবে ! কিন্তু আজ ক্ষুধায় ফারহানার পেট মোঁচড় দিচ্ছে । বাইরে আব্বাকে খাবারের প্যাকেট হাতে এক পলক দেখে হঠাৎ করে খুব কান্না পেতে লাগলো ফারহানার । ইচ্ছে হচ্ছিলো আব্বা বলে ঝাপিয়ে পড়ে । কিন্তু উপায় নেই । যে রুমে ওরা বসে আছে তার একপাশে গ্রিলের দরজায় তালা লাগানো । আর আব্বাও যে কোথায় আছে কে জানে ?  সেই যে এক পলক দেখা গেল, এরপর আর দেখা যায়নি ।

থুথুর চিন্তা ঝেড়ে ফেলে নোংরা দেয়ালেই হেলান দিল ফারহানা । কান্নার দমকে ওর নাক ফুলে ফুলে উঠতে লাগলো ।

****

কপালে মুনা আপুর হাত অনুভব করলো ফারহানা । কিছুটা রাগও হচ্ছিল মুনা আপুর ওপর । কেন এমন হলো ? সব দোষ যেন মুনা আপুর । বিপদে পড়লে কারো ওপর দোষ চাপালে মনটা হালকা হয় । ফারহানা একবার ভাবলো, অকারণে মুনা আপুর ওপর রাগ ঝাড়বে । কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো, এই সময় রাগ করা যায়না ।
কী অদ্ভুত ! এরকম একটা বিপদে পড়েছে ওরা,  অথচ মুনা আপুর কোন বিকার নেই । একদম শান্ত । এমনভাবে এখানে আসছিলেন যেন তিনি নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন । যখন সবাইকে এখানে নিয়ে আসা হচ্ছিল তখন তিনি সবাইকে বললেন, 'কেউ একদম টেনশন করবে না । সব কিছুই স্বাভাবিক' । ফারহানার কিছুতেই মাথায় ধরছে না , এটা কীভাবে স্বাভাবিক হয় ?

ফারহানা মুনা আপুর হাতটা ওর কপাল থেকে সরিয়ে দেয় । ও যে রাগ করেছে মুনা আপুকে বোঝানো দরকার । ফারহানার কোন বোন নেই । এই মুনা আপুটা , কয়েক বিল্ডিং পরে বাসা । এত আদর করে । ফারহানাও অনেক জ্বালায় , তবু কিচ্ছু মনে করেনা মুনা আপু । আপুটা এত ভালো কেন আল্লাহ মালুম ।

মুনা আপু দুহাতে গলা জড়িয়ে ফারহানাকে কাছে টেনে নেন । এবার ঝরঝর করে কেঁদেই ফেলে ফারহানা । আপু , এখন কী হবে ?

মুনা আপু কিছুক্ষণ চুপ থাকেন । ফারহানাকে কাঁদার সুযোগ দেন । বাপ মা'র একমাত্র মেয়ে ফারহানা । ছোট ভাই ছাড়া কেউ নেই । এইচএসসি প্রথম বর্ষে উঠেছে এবার । বাবা মার আদরে আদরে বেড়ে ওঠা ফারহানার জন্য এই পরিবেশ সত্যি অকল্পনীয় । কাঁদুক ও কিছুক্ষণ । তারপর চোখ খুলে বাস্তবতা মেনে নিতে শিখুক । মেয়েটা ঠিকমত নামাজ পর্যন্ত পড়তে পারতো না । একমাস হলো নামাজ শিখে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে । অল্প কিছু ছোট ছোট সুরা মুখস্ত করলেও কুরআন পড়তে পারেনা ভালোমত । সামনে রমজান মাস । ভেবেছিল কুরআন জানা একজন বোনের কাছে নিয়মিত তালিম নিয়ে শিখে ফেলবে ।  কিন্তু আজ কুরআন তালিম নিতে এসে এই অবস্থায় পড়বে কেউ কল্পনাও করেনি ।

মুনা আপু বললেন , ফারহানা , একটা গল্প শুনবি ? তোকে একটা গল্প বলি ?
ফারহানা কোন জবাব দিলনা । শুধু একটু মাথা নাড়ালো । কথা বলতে ইচ্ছে করছে না এখন । এই সময় স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারেন একমাত্র মুনা আপু । এতবড় একটা বিপদে পড়েছে ওরা , মুনা আপুকে দেখে কেউ বুঝতে পারবে ? এখন উনি গল্প বলবেন , ভাবা যায় ?  


কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুনা আপু গল্প বলার ভঙ্গিতে বলতে লাগলেনঃ  শোন্‌ । গল্পটা একটা ছেলে আর তাঁর মা'র গল্প । ছেলেটার জন্ম অনেক অনেক দিন আগে । এখন থেকে প্রায় দেড়হাজার বছর আগে । মক্কায় । ছেলেটার নাম আম্মার ইবনে ইয়াসীর । বাবার নাম ইয়াসির ইবনে আমির আর তাঁর মায়ের নাম সুমাইয়া বিন্তে খুব্বাত । রাসুল (সাঃ) যখন ইসলাম প্রচার শুরু করেন তখন গোপনে অনেকেই মুসলিম হন । প্রথম দিকেই ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেন ইয়াসির ইবনে আমির,  সুমাইয়া বিনতে খুব্বাত এবং আম্মার ইবনে ইয়াসির । কিন্তু তাঁরা ইসলাম গ্রহণের কথা গোপন রাখতে পারেন নি ।

সুমাইয়া ছিলেন বনু মাখযুম গোত্রের আবু হুজাইফার দাসী । আবু জেহেলও ছিল ঐ গোত্রের । তাঁদের ইসলাম গ্রহণের কথা জানতে পেরে বনু মাখযুমের নেতারা এসে বললো- তোমাদের ব্যাপারে যা শুনলাম তা কি সত্যি ?
ইয়াসির বললেন – আপনারা আমাদের ব্যাপারে কী শুনেছেন ?
‘আমরা শুনলাম , তোমরা নাকি মুহাম্মাদের সাথে যোগ দিয়েছো ?
ইয়াসির নিসংকোচে বললেন- ‘হ্যা , আমরা তাই করেছি’ ।
‘তোমরা কি জানোনা সে আমাদের দেবতাদের অপমান করে , আমাদের পূর্বপুরুষদের সমালোচনা করে ?’
‘হ্যা , আমরা জানি’ ।
‘এরপরেও তোমরা তাঁকে মেনে নিয়েছো ?’
‘হ্যা, আমরা আল্লাহ্‌ এবং তাঁর রাসুলের ওপর বিশ্বাস এনেছি’ ।
‘তোমরা কি লাত উজ্জা হোবলের ওপর বিশ্বাস ত্যাগ করেছো ?’
‘হ্যা , আমরা লাত উজ্জা হোবলকে বিশ্বাস করিনা’ । জবাব দেন ইয়াসির রাঃ ।

শুনে বনু মাখযুমের নেতারা বললো – ‘তোমরা যদি মুহাম্মাদের ধর্ম না ছাড়ো, তাহলে আমরা তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবো’ ।
ইয়াসির (রাঃ) এবং সুমাইয়া (রাঃ) বলেন- যাও তোমাদের যা ইচ্ছা করো । আমরা যা সত্য জেনেছি তার ওপর বিশ্বাস ত্যাগ করবো না ।


এই জবাব শুনে আবু জেহেলের লোকেরা ইয়াসির, সুমাইয়া ও তাঁদের ছেলে আম্মারকে বন্দি করে নিয়ে যায় । তাদেরকে মক্কার উত্তপ্ত বালুর ওপর শুইয়ে রাখা হয় । এছাড়াও নানাভাবে নির্যাতন করা হয় । কিন্তু তাঁরা তাঁদের বিশ্বাস ত্যাগ করেন না ।
এক পর্যায়ে আবু জেহেলের বর্শার আঘাতে শহীদ হয়ে যান সুমাইয়া (রাঃ) । তিনিই লাভ করেন ইসলামের প্রথম শহীদ হবার সৌভাগ্য ।

সেসময় গুটিকয়েক মানুষ মুসলিম হয়েছিলেন । রাসুল (সাঃ) এর পক্ষেও সুযোগ ছিলনা ইয়াসির পরিবারকে কোন সাহায্য করার । ইয়াসির (রাঃ)  ছিলেন ইয়েমেনের লোক, মক্কার কোন গোত্রের নন । সুমাইয়া ছিলেন দাসী । মক্কায় তাঁদের পক্ষে দাঁড়াবার কেউ ছিলনা । রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন, ‘ইয়াসির, ধৈর্যধারণ করো । আল্লাহর জান্নাত তোমাদের জন্য অপেক্ষা করছে’ ।

ফারহানার মুখটা নিজের দিকে তুলে ধরে মুনা আপু বললেন- এখন তুইই বল্‌ , তুই কোন অপরাধ করেছিস ? করিস নি । আমরা কেউ কোন অপরাধ করিনি । কুরআনের তালিম নেয়া যদি অপরাধ হয় তাহলে এটা সেই অপরাধ যা সুমাইয়া করেছিলেন । যে কারণে তাঁদেরকে মরুভূমিতে শুইয়ে রাখা হত । যেকারণে তাঁদেরকে হত্যা করেছে কাফেররা । তাঁরা কি কেউ ঈমানহারা হয়েছিলেন ?

ফারহানা আস্তে করে জবাব দিল - না । গল্প শুনতে শুনতে ফারহানা চোখের পানি মুছে ফেলেছে । মনে সাহস ফিরে পেতে শুরু করেছে ফারহানা ।
মুনা আপু প্রশ্ন করলেন - সুমাইয়া তো শহীদ হয়ে গেছেন । সুমাইয়া হতে না পারি, কিন্তু আমরা কি সুমাইয়ার বোন হতে পারি না ? আমাদের কি ধৈর্যহারা হলে চলবে ? তোর কি ইচ্ছা হয় না সেই প্রথম শহীদ সুমাইয়ার বোন হতে ?


****
আদালতে ঢুকে ফারহানা অবাক । এত মানুষ ? মানুষে গিজগিজ করছে আদালত প্রাঙ্গন । এরই মাঝে তাঁদেরকে একটা রুমে নেয়া হল ।  সিনেমা নাটকে যেমন দেখা যায় আসল আদালতগুলো সেরকম না । এখানে একটা বড় রুমে অনেক মানুষ থাকে । হৈ হুল্লোড় ।  সামনে এজলাস । এজলাসের নিচে উকিলরা কাগজপত্র নিয়ে কথা বলেন । জাজ শুনে তাঁর সামনে রাখা কাগজে রায় লিখে দেন ।


ফারহানা শুনলো তাদেরকে জামিন দেয়া হয়নি । বিচারক ওদেরকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিতে বলেছে ।  তার মানে এটা এস্টাবলিশ হয়ে গেলো যে কুরআনের তালিম নেয়াটা একটা অপরাধ ! ঠিক যেমন সুমাইয়ার অপরাধ ছিল ঈমান আনা ! ফারহানা ভাবছিলো, তাহলে আবু জেহেলটা কে ?


আজ আর ফারহানার মনে কোন কষ্ট নেই । প্রিজন ভ্যানের দিকে হাঁটতে হাঁটতে মুনা আপুর দিকে তাকিয়ে ফারহানা দেখলো, আপু হাসছেন । চোখাচোখি হতেই মুনা আপু বললেন – সুমাইয়ার বোন, কেমন আছো ?

ফারহানার বুকটা হঠাৎ অন্যরকম আনন্দে ভরে গেলো । সত্যিই কি আমরা সুমাইয়ার বোন হবার সৌভাগ্য পেয়েছি ? ক’জনের সেই সৌভাগ্য হয় ?

কাপড় চোপড়ের একটা ব্যাগ হাতে আব্বা দাঁড়িয়ে আছেন শুকনো মুখে । ফারহানা আব্বার দিকে তাকিয়ে এমন একটা হাসি দিল, আব্বা বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন ।




***
উৎসর্গঃ সুমাইয়ার (রাঃ) বোনদের । যারা রাষ্ট্রের বর্বরতার শিকার হয়ে কুরআনের তালিম নেয়ার জঘন্য অপরাধে (!) কারাগারে রুদ্ধ ।

সহযোদ্ধার ডায়েরি

সহযোদ্ধার ডায়েরী হতে আজো আসে রক্তের ঘ্রাণ ।
পাতার ফাঁকে চ্যাপ্টা হয়ে থাকা একটা গোলাপের পাপড়ি
আমার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে নির্মম বর্শার মত  
ডায়েরীর সবুজ জমিনে সুন্দর হস্তাক্ষরে লিখে রাখা
সুন্দর আগামীর স্বপ্ন আর মানবতার জয়গান
মেহেদী পাতার মত প্রলেপ বানিয়ে
জড়াই ক্ষতের ওপর । সাময়িক উপশমের ব্যর্থ প্রচেষ্টা
দিনশেষে আমাকেই উপহাস করে
ভীরু কাপুরুষ বলে !


পাতা উল্টাই । সহযোদ্ধার ডায়েরি হতে উঠে আসে 
ঘোড়ার ক্ষুরের আওয়াজ । ভেসে আসে কাঁপা কাঁপা স্বরে 
নকীবের আহ্বান ; দূর দিগন্ত হতে ।


আরো পাতা উল্টালে মাঝে মাঝে
ডায়েরীর পাতা ভেদ করে ফিনকি দিয়ে বেরোয়
মজলুমের আর্তনাদ ।
এতো ডায়েরি নয় ! জীবন্ত রণক্ষেত্র । স্মৃতিভ্রষ্ট আমাকে সে স্মরণ করায় 
পুরনো রণাঙ্গন ।


আমার সহযোদ্ধা আজো ফেরেনি । ওর রক্তিম দেহটা আমরা
রেখে এসেছিলাম রণপ্রান্তরেই ; ভূপৃষ্ঠের নিচে ।
আমাদের বেড়েছে বয়স, তাঁর বাড়েনি একটি মুহূর্তও
চিরযুবা, চিরঞ্জীব আমার সহযোদ্ধা
আজো নিশ্চয় হাঁক ছাড়ে 
আমি পাশে আছি ভেবে । 'খালিদ , চলো সম্মূখে' ! 


হ্যা হ্যা , এইতো শুনতে পাচ্ছি সে ডাক  
ডায়েরির ভেতর থেকে । সহযোদ্ধার মর্মভেদী আহ্বান উপেক্ষা করে আমি এখন  
কী করে বসে থাকি ?

রবিবার, ২২ জুন, ২০১৪

ডাক্তারির সেকাল একাল , কিছু বিক্ষিপ্ত কথা

তরুণ ডাক্তাররা এখন অনেক বেশি অধিকার সচেতন হয়েছে । তারা ঘুণে ধরা সিস্টেমকে বদলাতে চায় । ক্লাসে একশতম রোলধারী ছেলেটা যখন সারাজীবন হেসে খেলে কাটিয়ে এখনো তার চেয়ে ভালো থাকে , উচ্চমর্যাদায় থাকে , বেশি সুযোগ সুবিধা পায় তখন তার ভেতর আক্ষেপ জমা হয় ।
.
আক্ষেপের মাত্রা বাড়ে যখন দেখে তার পূর্বসুরী সিনিয়র ডাক্তাররা চরম বেখেয়াল । বরং ক্ষেত্রবিশেষে ডাক্তারদের স্বার্থের বিপরীত কাজ করেন ।
কেন করেন ? ব্যাপারটা সেই কবিতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় । কী যাতনা বিষে , বুঝিবে সে কিসে কভু আশীবিষে দংশেনি যারে । ক্যারিয়ার গঠনে এখন যতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে সিনিয়রদের ততটা করতে হয়নি । একটা সময় ছিল যখন ভালো ছাত্রদের ধরে ধরে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছে সরকার । এখন যেমন লাখ পরিক্ষার্থীর ভেতর একজন হতে হয় , তখন এটা লাগেনি । আমার এক আংকেল বেচারার খুব ইচ্ছা ছিল ঢাকা ভার্সিটিতে পড়বেন । কিন্তু সরকার তাঁকে ধরে নিয়ে স্টাইপেন্ড দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল ।
.
পাস করে এখন যেমন ডাক্তারদের বিসিএস দিয়ে দুই তিনবছর পরে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে হয় (৩৩তম বিসিএস এর প্রিলি হয়েছিল ২০১২ তে, আজো গেজেট হয়নি) , কোন উচ্চতর ডিগ্রীর ট্রেনিং এ আসার আগে গ্রামে চাকরি করতে হয় ন্যূনতম দুই বা তিন থেকে যতবেশি বছর সম্ভব । তখন এইটা ছিলনা । পাস করলেই নিশ্চিত সরকারি চাকরি । একজন অধ্যাপক স্যার স্মৃতিচারণ করলেন , ইন্টার্ণশিপ শেষ করে কিছুদিন পরেই উনি নিয়োগ পান এসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার হিসেবে । উনার চাকরি জীবনের শুরুতে বেতন ছিল পাঁচশ টাকা । সেসময় একশ টাকায় একটা মোটাতাজা গরু পাওয়া যেত । সরকারি কোয়ার্টারে থাকা ।
তখনকার সময়ের হিসাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই তিনশ টাকা বেঁচে যেত । বলা যায় , নিঃসন্দেহে সম্মানজনক সুখী জীবন । তাঁরা তো এখনো সুখেই আছেন । জুনিয়রদের দুঃখ-কষ্ট তাই তাঁদের খুব বেশি স্পর্শ করেনা ।
সেই সময়ে দেখা ডাক্তারদের সম্মানজনক সুখী জীবন আর নিজেদের অসুস্থতার সময়ের অসহায়ত্বের কথা ভেবে পিতা মাতার কাছে ছেলে মেয়েকে ডাক্তার বানানোটা লক্ষ্য হয়ে ওঠে । কিন্তু সেইদিন কি আর আছে ? সময় বদলেছে অনেক । ৩৫-৪০ বছর বয়স পর্যন্ত নিজ খরচে পড়ালেখা করা মধ্যবিত্তের ছেলেদের পক্ষে সম্ভব না । সুতরাং তারা অন্য দিকে ঝুঁকবে । ইতোমধ্যেই মেডিকেল কলেজগুলোতে মেয়েদের সংখ্যা শতকরা ষাট ভাগ হয়ে গেছে । ছেলেরা অন্য পথ ধরছে । এখানে সেখানে গড়ে উঠছে মেডিকেল কলেজ । প্রতিবছর কয়েক হাজার ডাক্তার বের হচ্ছে কিন্তু তারা যাবে কোথায় ? উপরি হিসেবে আছে নিরাপত্তাহীনতা । বঙ্গদেশে কোনকিছু সহজে পাওয়া গেলে তার দাম থাকে না । যখন তন্ন তন্ন করে খুঁজে ডাক্তার পাওয়া যেত না তখন ডাক্তারের খুব দাম ছিল নাম ছিল । এখন চাইলে আশেপাশে কোথাও না কোথাও ডাক্তার পাওয়া যায় । এখন আর মানুষ টাইফয়েড ডায়রিয়ায় মরে না । সেজন্য ডাক্তারের মানও কমে গেছে মানুষের কাছে । যদিও এখনো ডাক্তারি পেশা মোস্ট ওয়ান্টেড প্রফেশন । কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে সামনে আর তা থাকবেনা । বাঙালি ডান্ডাকে সমীহ করে , বিনয়কে নয় । ডাক্তারদের হাতে তো কোন ডান্ডা থাকেনা , ডান্ডা থাকে কন্সটেবলের হাতে । সুতরাং কন্সটেবলই বস্‌ । এছাড়া বানিজ্যিক ভাবে, ভর্তি পরীক্ষায় দশ মার্ক পাওয়া ছাত্রকেও যখন টাকার বিনিময়ে কোন কোন মেডিকেলে ভর্তি করানো হয়েছে তখন ডাক্তারদের একটা অংশের কোয়ালিটি প্রশ্নবিদ্ধ হবেই । এছাড়া আছে ছাত্র রাজনীতি । মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের একটা অংশ তথাকথিত ছাত্র রাজনীতির নামে জ্বালাও পোড়াও করছে , পিটিয়ে ছাত্র হত্যা করছে । ডাক্তার হিসেবে এদের কাছ থেকে জাতি কী আশা করবে ?

শুক্রবার, ২০ জুন, ২০১৪

থ্যালাসেমিয়া সচেতনতা

মামাতো/খালাতো ভাই/বইনরে খুব পছন্দ করেন ? অরে বিয়া করতে না পারলে এই জীবন আর রাখপেন না ? থামেন মিয়া । ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করেন , তারপর আগান । নাইলে পরে পস্তাইবেন । খালি নিজের কথা ভাবলে হবে ? পরের জেনারেশন নিয়াও তো ভাবতে হবে নাকি !
.
খুব ক্লোজ ব্লাড রিলেশনের মধ্যে বিয়ে হলে বেশ কিছু রোগ জেনেটিকালি বাচ্চাদের হতে পারে । হয়তো আপনারা দুজনেই সম্পূর্ণ সুস্থ । কোন সমস্যাই নেই । কিন্তু আপনি হয়তো জানেন না যে আপনার 'জিনের দোষ' আছে ! এই জিন কোয়েকাফের জিন না, আপনার জেনেটিক বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে যে ডিএনএ(DNA), সেখানে থাকা জিন(gene)। আপনারা দুজনেই হয়তো এমন একটি রোগের জিন বহন করছেন যেগুলো একা একা থাকায় আপনাদের দুজনের কারো মধ্যে রোগ সৃষ্টি করতে পারেনি, আপনারা হচ্ছেন বাহক (Carrier) । এটা আপনারা পেয়েছেন আপনাদের দাদা/দাদী বা নানা/নানীর কাছ থেকে । কিন্তু যেইনা আপনার বাচ্চার মধ্যে আপনাদের দুজনের ঐ দুটি বিশেষ জিন একত্রিত হবে , তারা আপনার বাচ্চার রোগ তৈরি করবে । এই ঘটনাটা বেশি ঘটে প্রথম স্তরের রক্ত সম্পর্কের মধ্যে বিয়ে হলে । যেমন মামাতো/খালাতো/চাচাতো ভাই-বোনের মধ্যে বিয়ে হলে ।
.
এভাবে জেনেটিকালি ট্রান্সফার হওয়া রোগগুলোর মধ্যে বাচ্চার ভয়ংকর একটি রোগ থ্যালাসেমিয়া । থ্যালাসেমিয়া রক্তের একটি রোগ । এতে রক্তের লোহিত রক্তকণিকা অতিরিক্ত ভেঙ্গে যায় । ফলে রক্তশূন্যতা তৈরি হয় । দেখা দেয় জন্ডিস, দাঁতের ম্যালক্লুশান , গালের হাড় উঁচু হয়ে যাওয়া , লিভার ও স্প্লিন বড় হয়ে যাওয়া, শারীরিক দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা , গ্রোথ ফেইলার, হার্ট ফেইলার ইত্যাদি । নিয়মিত রক্ত দিতে হয় । প্লীহা বা স্প্লিন কেটে ফেলে দিতে হতে পারে । এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ চিকিৎসা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন করলেও ১৫-২০ বছরের বেশি বাঁচানো যায় না ।
.
এছাড়া হতে পারে ফ্যামিলিয়াল হাইপার কোলেস্টেরলেমিয়া, যা হার্টের রোগ তৈরি করে । হতে পারে ডায়াবেটিস ইন্সিপিডাস । হিমোফিলিয়া , রিকেটস সহ আরো অনেক অসুখ ।

অন্য ক্ষেত্রে যে হবে না তা নয়, তবে নিজেদের মধ্যে বিয়ের ক্ষেত্রে এর হার বেশি । সুতরাং সাবধান হওয়াই ভালো । যদি নিজেদের মধ্যে বিয়ে করতেই চান , আর কিছু না হোক অন্তত থ্যালাসেমিয়া মাইনর ট্রেইট বহন করছেন কিনা চেক করে নিতে ভুলবেন না ।

বুধবার, ১৮ জুন, ২০১৪

মেঠোপথের আকুতি

পথিক , দোহাই তোমার
এই পথে আবার ফিরে এসো  । তোমার পায়ের ছাপ
এই বুকে জড়িয়ে নিলাম । পূর্বপুরুষের মত
পেরিয়ে গেলে ধুলোর সীমানা ,  বিস্মৃত হয়োনা আমায় । 
একটুকু ভালোবাসা দিও এই
মেঠোপথটারে ।

জীবনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে
একবার স্মরণ কোরো , চলার পথে তোমাদের পদতলে 
ধুলোমাখা আমিও ছিলাম ।


দাঁড়াও পথিক । শোনো ।
তোমার পিতা এবং তাঁদের পিতাও একদিন হেঁটে গেছেন
আমার এই দুর্বাঘাসের ওপর । কেউ আর আসেনিকো ফিরে ,
দোহাই তোমার  ,অন্তত আর একটিবার তুমি
ফিরে এসো । একবার এখানে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস কোরো 
আমার কুশল ।

তোমাদের পদাঘাতে আজীবন পিষ্ট হলাম । বিনিময়ে , হে পথিক
মিনতি আমার  , একটুকু ভালোবাসা দিও এই
মেঠোপথটারে । 

মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০১৪

বৈরাগ

নিশ্চিত জানি, চলে যাওয়া একটি মুহূর্তও আর কখনোই 
ফিরে তাকাবেনা আমার পানে । পেছনের দিকে তাকালে তাই 
হৃদয়ে বৈরাগ আসে । ইচ্ছে করে
আমিও বৈরাগী হয়ে যাই ।
.
কোথায় যাচ্ছি ?  মৃত্যুই তো গন্তব্য , তবে আর
কেন এই জীবনের আয়োজন ? মৃত্যু ;  
সেতো একবার দেখা দিয়ে গেছে । দেখেছি ,
ওপাশে শুধুই ঘোর অন্ধকার । স্রষ্টার ইশারা না পেলে
আর কখনোই জ্বলবেনা এতটুকু আলো । আবার আসবে সে ,
কিংবা আমিই যাবো তার কাছে । আজরাইলই হবেন একদিন আমার  
অতি আপনজন ।
.
তবে আর কেন এই জীবনের আয়োজন ?
কেন এত সাধ , কেন আর ক্ষণিকের ভালোবাসাবাসি ?
.
ভালো থেকো তোমরা সবাই , আমি তবে এইবার আসি ।

সোমবার, ১৬ জুন, ২০১৪

বিড়াল কথন

বিড়াল ভালোবাসে না এমন কে আছে ? মেয়েরা তো বলতে গেলে বিড়াল অন্তপ্রাণ ! বিড়াল না থাকলে তাঁদের চলেই না !

বিড়াল থেকে ছড়ায় এমন একটি রোগের নাম - টক্সোপ্লাজমোসিস । টক্সোপ্লাজমা গন্ডি নামক এক ধরণের পরজীবি এই রোগ সৃষ্টি করে । মূলত বিড়ালের বিষ্ঠার মাধ্যমে মানুষে আসে এই পরজীবি । বাড়িতে বিড়াল তো থাকতেই পারে , আর বিড়ালের বিষ্ঠা হতে এই পরজীবি ছড়িয়ে পড়তে পারে যেকোন খাবারে । খেলেন তো গেলেন !

টক্সোপ্লাজমোসিস রোগে আপনার জ্বর, মাথা ব্যথা, গলা ব্যথা, দূর্বল ভাব হতে পারে । আর ভয়ংকর সমস্যা গুলোর মধ্যে এঙ্কেফালাইটিস, নিউমোনাইটিস, হেপাটাইটিস হতে পারে । হয়ে যেতে পারেন অন্ধও !

গর্ভাবস্থায় সংক্রমিত হলে বাচ্চাও সংক্রমিত হতে পারে । সেক্ষেত্রে বাচ্চা শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধি হয়ে যেতে পারে ।

হু হু, বিড়াল হতে সাবধান হয়ে যান । মানুষকে ভালোবাসুন, বিড়ালকে নয় !

রবিবার, ১৫ জুন, ২০১৪

একঘেয়ে সুখ !

একঘেয়ে জীবন মানেই যন্ত্রণা নয় ।
উপলব্ধিটা জোরালো হয়, যখন জীবনটা 
হয়ে যায় এলোমেলো । ছিন্নভিন্ন রুটিনের সাথে মানিয়ে নিতে
নিরন্তর যুদ্ধ করে চলে শরীর ও মন ।
.
.
একই ইটগাঁথা পথে প্রতিদিন হেঁটে চলা
একই ক্লাসরুমে শেষ বেঞ্চিতে ঘুম
একই জানালায় চোখ রেখে দেখে যাওয়া, পাহাড়ের ঢালে
একটি শালিকের সংসার 

একই বালিশে মাথা রেখে একই গানে  
মন ভেজানো বিকেল 
একই স্লোগানে একই শোষকের বিপরীতে
ঘোরলাগা মিছিল 
একই ছাদের ওপর একই চাঁদের আলোয় রাঙা 
পুরনো আকাশ
একই ঘাসের ওপর কাটিয়ে দেয়া লালচে গোধুলী
বেশতো ছিল একঘেয়ে জীবন ,
মন্দ কী ?
.
একঘেয়ে জীবনে ছিল অকৃত্রিম একঘেয়ে বন্ধুরা । একঘেয়ে আড্ডা ,
একঘেয়ে বন্ধুত্বের টান । দৈনন্দিন ভালোবাসাবাসি ছিল ,
অকৃত্রিম একঘেয়ে ভালোবাসা ।
.
একঘেয়ে জীবনে দিনশেষে তবু ছিল একঘেয়ে সুখ ।
যতই একঘেয়ে হোক
সুখ তো সুখই !
.
কেউ কি এখন আমায় এনে দিতে পারো
এতটুকু একঘেয়ে সুখ ? 

শনিবার, ১৪ জুন, ২০১৪

হতাশার স্পর্ধা !

বদমাশটার আস্পর্ধা কত ! ঘাড় দুলিয়ে এসে আমাকে বলে কিনা  
কেমন আছেন ? চিনেছেন আমায় ?  না চেনারই কথা
আগে তো দেখা হয়নি !


হাত বাড়িয়ে বেয়াদবটা বললে,
আপনাকে আমার খুব আপন মনে হয় !  
হতাশা আমার নাম । নিসঙ্গ লাগছিল তাই , আপনার সাথে কিছুটা 
সময় কাটাতে এলাম !


কী আহ্লাদ রে ! এক নিমেষেই মাথায় খুন উঠে গেল ।
কতজনের জীবন খেয়ে খুনিটা এখন ,
আমার সাথে সাক্ষাৎ করতে এসেছে ? 
সাহস তো কম নয় !


ভদ্রলোকের ঘরে কেউ এলে বসতে দিতে হয় । কিন্তু আমি জানি
ওর সাথে ভদ্রতা করা মানে নিজেকে ঠেলে দেয়া
ঢাকাই নর্দমার খোলা ম্যানহোলে । কালবিলম্ব না করে তাই
ভদ্রতার গুষ্ঠি কিলিয়ে ওকে আমি
ঘাড় ধরে বের করে দিলাম , ঘর হতে ।

দরজার বাইরে বসে এখন সে
ছলনাময়ী ডাইনীর মত কাঁদছে !

শুক্রবার, ১৩ জুন, ২০১৪

যদি কবিতা খেতে পারতাম !

যদি কবিতা খেয়ে জীবন ধারণ করা যেত
তবে আমি তাই করতাম ।
দুটো কাঁচামরিচ আর লবণের ডিব্বাসহ 
সাতসকালে মায়ের বেড়ে দেয়া পান্তাভাতের মত
গোগ্রাসে গিলতাম সকাল সন্ধ্যায় । কঠিন কবিতাগুলিকে চিবিয়ে নরম করে  
আর সহজগুলোকে একেবারে মুখে পুরে গপাগপ গিলেই ফেলতাম
কেঁচোর মত !

কবিতা খেয়ে যদি জীবন ধারণ করা যেত
দুমুঠো চাল আর একটুকরো বস্ত্রের প্রয়োজনে  
হৃদয়টাকে ঘরের খুঁটিতে বেঁধে রেখে আমাকে আর
ছুটতে হতোনা অবিরাম সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত অবধি  
সমরাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে যুদ্ধ করতে হতনা
সময়ের বিপরীতে । ঐযে কবিতাগুলি অবলা নারীর মত 
চুপচাপ পড়ে থাকে টেবিলের এক কোণে 
চেটেপুটে খেয়ে ওদের নিঃশেষ করে ফেলতাম প্রতিদিন 
বুভূক্ষু খেকশিয়ালের মত  !


কবির জীবন খেয়ে জীবন ধারণ করে , কবিতা এমনই সর্বনাশা শব্দের শরীর
হাজার বছরের অভিজ্ঞতা অনুরাগ আর উপলব্ধি
অল্প ক'টা শব্দে গাঁথা ।

কবিতা খেয়ে যদি জীবনধারণ করা যেত ; তবে  
শত শত কবির জীবন যৌবনের নির্যাসে হৃষ্টপুষ্ট 
রাক্ষুসী কবিতার নাদুসনুদুশ শরীর খুবলে খুবলে খেয়ে
চেয়ারে হেলান দিয়ে দিনশেষে আমি
পরম পরিতৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতাম ! 

বৃহস্পতিবার, ১২ জুন, ২০১৪

হায় শাহবাগ !

শাহবাগের সমাবেশে এখন লাঠিচার্জ করা হয় । ছবির হাট গুড়িয়ে দেয়া হয় । এইসব দেখে আমার শুধু মনে হয় , হায় শাহবাগ ! হায় শাহবাগ ! এই কি ছিল তোমার কপালে আমার পা ?
.
তোমরা কি এখনো বোঝনি একটা সরকারকে অন্ধভাবে সমর্থন করলে তার ভেতর ফ্যাসিবাদ কায়েম হয় ? তোমরা কি জানোনা , সাপের কামড়েই সাপুড়ের মৃত্যু হয় ? তোমরা কি এখনো বোঝনা- বিচার চাওয়া যায় , বিচারের স্বচ্ছতা দাবি করা যায় , কিন্তু কারো ফাঁসি 'দাবি' করা যায়না ? সেটা বর্বর সমাজের কাজ হতে পারে, সভ্য সমাজের নয় । বোঝনা ? অপরাধীর জন্যই তো বিচার বিভাগ । অপরাধের বিচার না করা অসভ্যতা , বর্বরতা । বিচারে পক্ষপাতিত্ব করাও বর্বরতা । বিচারবিহীন শাস্তি দেয়াও বর্বরতা । কাউকে অপরাধী মনে হলেই যদি ধরে ধরে ফাঁসি দেয়া হয় , তাহলে বিচার বিভাগের কী দরকার ছিল ? অথচ তোমরা বিচারের স্বচ্ছতা দাবি না করে সরাসরি 'ফাঁসি' দাবি করেছিলে ! সভ্য সমাজে কি কেউ অমন দাবি করে দিনের পর দিন হাসপাতালের সামনে মাইক বাজিয়ে সমাবেশ করে ? নাচা গানা চিৎকার চেচামেচি করে ? মনে আছে , সৌদি আরবে কয়েকজন বাংলাদেশির শিরচ্ছেদ করায় তোমরা তাদের বর্বর বলেছিলে ? অথচ সেই তোমরা কীভাবে স্বচ্ছ বিচার না চেয়ে দিনরাত 'ফাঁসি' দাবি করতে ! অমন দ্বিমুখীতা কোন সভ্য মানুষ করে ?
.
.
তোমাদের অনেকেই নাস্তিক ছিলে । থাকতেই পারো । সেটা তোমাদের বিশ্বাসের ব্যাপার । কিন্তু তোমরা আগ বাড়িয়ে আল্লাহ নবী রসুল ভগবানের নামে অশ্লীলতা চর্চা করতে গেলে কেন ? বিন্দুমাত্র সভ্যতা থাকলে কি কেউ অমন করতে পারে ?
.
তোমরা দাড়ি টুপি নিয়ে হাসি ঠাট্টা করতে । মতিঝিলে কেন দাঁড়ি টুপি পড়া মানুষগুলো জড়ো হয়েছিল জানো ? তোমাদের জন্য । তোমাদের অসভ্যতা ও বেয়াদবির জন্য । মতিঝিলের অলিতে গলিতে আজও যে রক্তের ঘ্রাণ আসে , তার জন্য তো প্রথমত তোমরাই দায়ী । এটুকু বোঝার মত আক্কেলও কি তোমাদের আছে ?
আক্কেল থাকুক আর নাই থাকুক , এটুকু নিশ্চিত থেকো - নিরীহ নিরপরাধ মানুষের রক্তের অভিশাপ তোমাদের ইহকালে এবং পরকালেও ছাড়বে না ।

আর্লি ম্যারেজ ও বাস্তবতা

পোলাপান ফেসবুকে গ্রুপ খুলিয়াছে- আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন । আমি শ্লোগানটার সমর্থক । কিন্তু পোলাপাইনের আহ্লাদ দেখিয়া মাঝে মাঝে বিরক্ত হই । প্রায়শই দেখি, কন্যার পিতাগনের প্রতি উহাদের কেহ কেহ ক্ষোভ প্রকাশ করিয়া থাকে । এই বলিয়া যে, কেন তাহারা বেকার যুবকের সহিত কন্যার বিবাহ দিবেনা ? উহারা চায়- কন্যার পিতাগন চাহিবামাত্র তাহাদের কন্যাকে বিবাহেচ্ছুক ছেলের হাতে সপিয়া দিক । ছেলের কিছু থাকুক বা না থাকুক, সুন্দর একখান মুখ থাকিলেই চলিবে ! আহা , কী আশা !
.
ইহার সপক্ষে উহারা প্রায়শই খুঁজিয়া পাতিয়া নবীর সাহাবাগনের জীবন হইতে উদাহরণ তালাশ করিয়া লয় । কত সহজে তখন বিবাহ সম্পন্ন হইয়াছিল !
.
নিজের কন্যাকে সবটুকু আদর দিয়া কোলে হাতে মানুষ করিয়া সারাজীবনের তরে আরেকজনের নিকট জমা দিবে, পিতামাতা খোজখবর লইয়া নিশ্চিন্ত না হইয়া কীভাবে সেই সিদ্ধান্ত লইবে ? এত সহজ ?
আমি নিশ্চিত করিয়া বলিতে পারি, এইসকল পোলাপান যখন নিজেরাই কন্যার বাপ হইবে- তাহারা নিজেরাও পাত্রের ব্যাপারে এর চাইতে কম খোঁজখবর লইবে না ।
.
হে বৎস, তোমাদিগের এইরুপ কথাবার্তা দেখিলে মুরুব্বীরা হাসিবেন । আর মনে মনে বলিবেন- 'এইসব অপরিপক্ক কথাবার্তাই প্রমাণ করে- পরিবারের দায়িত্ব লইবার যোগ্যতা তোমাদিগের এখনো হয় নাই' ।
.
(আবার কেহ কেহ নিজ পিতার প্রতি ক্ষুব্ধ । পিতা যদি তাঁহার খরচ মিটাইতে পারেন, তাহা হইলে আরেকজনকে খাওয়াইতে অসুবিধা কী ? ওহে বৎস, বিবাহ মানে শুধু একটা নতুন মুখের তিন বেলা আহার নহে , ইহার বহুত মর্তবা আছে । একটা সংসারের কিছু না কিছু অতিরিক্ত খরচ আছে । বেকার অবস্থায় নিম্ন মধ্যবিত্ত কিংবা মধ্যবিত্ত পিতার কাঁধে এইরুপ অতিরিক্ত বোঝা চাপাইয়া দেওয়া নিতান্তই জুলুম বৈ অন্য কিছু নহে । যাহাদিগের পিতার যথেষ্ট রহিয়াছে তাহারা আগাইয়া যান । ক্যাম্পেইন লাগিবে না, গো এহেড । আমাদিগকে দাওয়াত না দিলেও চলিবে !)

বুধবার, ১১ জুন, ২০১৪

ছাপোষা চড়ুই

তুমি কি চড়ুই দেখেছো ? পাতি চড়ুই ? 
ঐযে রজনীকান্তের কবিতায় পড়েছিলে
'বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই !'
সেই চড়ুই । দেখেছো ?


দেখেছো উঠোনে ভোরের আলোয় ওদের ওড়াউড়ি ?
দেখেছো কখনো , ওরা কতটুকু পেয়ে খুশি হয় ! কতটুকু পেলে
কিচিরমিচির করে জানিয়ে দেয়
ওরা কত্ত হ্যাপ্পি ! দেখেছো ওদের ঘর ?
একটুকু খড়কুটো আর শুকনো পাতায় গড়া
সুখের নীড় !


দেখেছো ক'টা দানা খাবার পেলে
কতটা আনন্দে ওরা কাটিয়ে দেয় 
দীর্ঘ দিবস ?

দেখেছো কখনো ওদের সংসার ? এতটুকু চঞ্চুতে ধারণ করে
কী অপরিসীম ভালোবাসা !
দেখলে তোমারও হিংসে হবে খুব । আমার মত ।


দ্যাখোনি কিছুই ? শোন তবে ।
পাহাড়সম প্রত্যাশা আর অট্টালিকার স্বপ্ন ফেলে
চলে এসো একদিন আমার কুড়েঘরে 
দেখে যেও এই গরীবের খড়ের চালায়
দিন কুড়িয়ে দিন খাওয়া একজোড়া ছাপোষা চড়ুইয়ের  
অনন্য সংসার । পাতি চড়ুইয়ের কাছে শিখে যেও 
প্রকৃত ভালোবাসা ! কী করে তুষ্ট থাকা যায়
অতি অল্পে । আর শিখে নিও , জীবনে সুখী হবার 
খুব সহজ এক মূলমন্ত্র ।

মঙ্গলবার, ১০ জুন, ২০১৪

ফেসবুক ভাঁড় !

ফেসবুকে অনেক ধরণের ভাঁড় আছে । তারমধ্যে এক বিশেষ ধরণের গোপাল ভাঁড় আছেন যাদের কাজ হলো সবসময় নারীর পর্দা নিয়ে ভজঘট করা । দুনিয়ার সব নারীকে পর্দা করানোই যেন তাদের এই দুনিয়ায় একমাত্র কাজ । আল্লাহ তাদেরকে এই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করেছেন ! এই কাজ করেই যেন তারা জান্নাতে দাখিল হয়ে যাবে । নিজের নামাজ ঠিক আছে কিনা আল্লাহ মালুম , দায়িত্ব নিয়েছে মহিলাদের পর্দা করানোর !
.
মহিলাদের ঈমান আক্বিদা নামাজ রোযা ঠিক থাকুক আর নাই থাকুক , পর্দা করাতে হবে ! এদের দাওয়াতের নমুনা দেখলে গোপাল ভাঁড়ও লজ্জা পেতেন । বেচারার ভাগ্য ভালো , আগেই অক্কা পেয়ে রক্ষা পেয়েছে ।
.
কেউ কেউ আছে নিকাব নিয়া । মহিলারা নিকাব পড়বে কিনা সেটা তাঁদের ব্যাপার । কিন্তু সেই চিন্তায় এদের ঘুম হারাম (ঘুম কেন হারাম সেটা আর নাইবা বললাম !) । কেউ নিকাব করিয়েই ছাড়বে , নাহলে পারলে নিজেই ঠেলে অনিকাবীদের জাহান্নামে পাঠিয়ে দেয় আরকি ! আবার কেউ কেউ নেকাব খুলিয়েই ছাড়বে ! কেউ নেকাব পড়লে যেন তার গায়ে জ্বালা করে ফোস্কা উঠে যায় !
.
অথচ আল্লাহ মহিলাদের পর্দার আগে পুরুষের পর্দার কথা বলেছেন । সেই ব্যাপারে কোন কথা নাই । এরা আছে মহিলাদের পর্দা নিয়া । আগে মিয়া তোমার চোখ সামলাও , মহিলাদের ব্যাপারে এত নাক গলানোর দরকার নাই । তোমারটা তুমি দেখ , তাদেরটা তারা দেখবে । যদি পারো, নিজের মুহরেমাদের বোঝাও । তাতেই চলবে । পৃথিবীর সব নারীকে পর্দা করানোর দায়িত্ব কেউ তোমারে দেয় নাই ।
.
'মুমিনদেরকে বলুন , তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গের হেফাযত করে । এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে । নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন ।' [সুরা নুরঃ ৩০]

রবিবার, ৮ জুন, ২০১৪

ভালোবাসার কলস !

আজকাল কারো সাথে যেচে গিয়ে পরিচিত হই না তেমন একটা
আগের মত । ভীতু হয়ে গেছি খুব । নতুন কারো সাথে পরিচয় মানে 
ভ্রাতৃত্বের রজ্জুতে নতুন সুতো । আরো একটি বন্ধন । আরো একটি মায়াজালে
নিজেকে পেঁচিয়ে নেয়া । নতুন করে আরো কিছু 
ভালোবাসার আদান প্রদান ।


নতুন পরিচয় মানে নতুন প্রত্যাশার যোগ ।
আরো জোরে হাঁটার তাগিদ । এই ক্ষুদ্র পায়ে দুর্বল আমি
আর কত হাঁটবো বলো ?


ছোট্ট এ জীবনে স্বার্থপর আমি
ভালোবাসা দেয়ার চেয়ে, নিয়েছি যে ঢের বেশি । এইটুকু বুকে  
আর কত রাখবো বলো ?
ভয়ে আছি , এবার বুঝি সবটুকু উথলে উঠে
চোখ বেয়ে নেমে যাবে পথের ধুলোয় !



যদি পরিচিত হই
যদি ভালোবাসতে চাও আমায়, একটা রঙিন কলস দিও উপহার 
তার আগে । কথা দিতে পারি  ,  যতদিন আছে প্রাণ 
এই নরাধমের; কলসে ভরে তোমাদের ভ্রাতৃত্ব - ভালোবাসা 
রাখবো সযতনে ।  হৃৎপিণ্ডের খুব কাছাকাছি ।


যতটা কাছাকাছি হলে কলসের শীতলতা 
অনুভূত হবে রক্তের প্রতিটি কণিকায় । ছড়িয়ে পড়বে আমার
সমস্ত শরীর জুড়ে , প্রতিটি লোমকূপে !

শনিবার, ৭ জুন, ২০১৪

গভীর রাত্রিকে গভীর ভালোবাসা !

গভীর রাত্রিকে আমি ভালোবাসি , গভীরভাবে ।

রাত্রির গভীরতা আমার সারাদিনকার এলোমেলো ঠুনকো ভাবনাগুলোকে 
শিরিষ কাগজ হয়ে ঘষে ঘষে করে ফেলে মসৃন। ধারালো করাত হয়ে 
অতিরিক্ত ডালপালা কেটে সুযোগ করে দেয় গাছের কান্ডটাকে 
শক্ত , ঋজু আর পরিপুষ্ট হবার । নিড়ানী কোদালের মতন কেটেছেটে সাফসুতরো করে তোলে 
আমার চিন্তার ছোট্ট উঠোনটায় অযতনে বেড়ে ওঠা যতসব পরগাছা । শ্যাওলা মাশরুম । স্তব্ধ করে দেয় 
অপাঙ্কতেয় যত কোলাহল ,ঘরের বাইরে । কিছুটা নিস্তার দেয় আমাকেও 
জীবনের ঘানিটানা অনাত্মিক ব্যস্ততা থেকে ।

ধীরে ধীরে ,রাত্রির গভীরতার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলে আমার গবেষণা
চুলচেরা বিশ্লেষণ করে আমি একটু একটু করে আবিস্কার করি 
আমার নিজেকে । 

প্যাঁচাডাকা দ্বিপ্রহর রাত , জনশুন্য বদ্ধ রুমে একা একা 
পুরনো ফ্যানটার নিরন্তর ঘূর্ণনের শব্দের ভেতর 
আমি নিজেকে ব্যবচ্ছেদ করি আত্মসমালোচনার শাণিত স্কালপেলে । নিয়ন বাতির সাদা আলোয়  
খুবলে খুবলে তুলে ধরি চোখের সম্মুখে ,আমার হৃদয় । ভেতরের কলুষ দুর্গন্ধ ঘরময় ছড়িয়ে গেলে 
তারপর ক্ষান্ত হয়ে আবার আমি , পুনঃস্থাপিত হই
পুরনো আমাতে ।
 
এইভাবে 
গভীর রাত্রির প্রতি আমার ভালোবাসা , দিনে দিনে হয়ে ওঠে 
আটলান্টিক কিংবা বৈকাল হ্রদের মত 
অতলান্ত গভীর । 

অম্ল মধুর বিড়ম্বনা

এ এক অম্ল মধুর বিড়ম্বনা । দাদার বয়সী রোগী , সিওপিডি উইদ হাইপারটেনশান । ইনহেলার , নেবুলাইজেশন , অক্সিজেনে শ্বাসকষ্ট কমে না । কিন্তু আমি তাঁর সামনে বসে থাকলে শ্বাসকষ্ট কমে ! কেবিন থেকে বের হতে চাইলেই বলেন , বাবা তুমি আমার সামনে থাকো ।
অদ্ভুত সাইকোলজি !

কী আর করা ! শ্বাসকষ্ট কমে স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁর সামনে বসে থাকতে হলো । স্বান্তনা ও অভয় দিয়ে অবশেষে মুক্তি পেলাম ।

কখনো কখনো ঔষধের চেয়ে ডাক্তারের সাহস যোগানো হাসিমুখ আর সহমর্মিতাই রোগীর বেশি দরকার হয় !

অচেনা রুপাই !

তোর কথা আমার আজো মনে পড়ে । আকাশে মেঘ দেখলেই তোর মন 
হয়ে যেত অন্যরকম । ঝুম বৃষ্টির ভেতর শুনশান পিচঢালা রাস্তায়
একা একা ভিজতে তোর ভালো লাগত খুব । উদাস ভাবুক তোকে দেখে সেসময় মনে হত 
নকশি কাঁথার মাঠ পেরিয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ানো রুপাই এর মত । যেন কোন এক রাতে
নববধূ সোনাইকে একাকী রেখে বেরিয়ে পড়েছিলি নিরুদ্দেশ । আর ফেরা হবে কিনা সে গাঁয়ে 
জানা নেই তোর ।


আশেপাশে কোথাও বাজ পড়লেও তুই তাকাতিস নির্লপ্ত চোখে , কী এক ঘোরের ভেতর 
চুপচাপ দেখতিস প্রকান্ড বটের ভেজা পাতা । ভিজে ভিজে শালিক পাখিগুলো চুপচাপ
বসে আছে ভেজা নীড়ে ।

কবি ছিলিনা তুই, কাউকে কিছু বলারও ছিলনা তোর । তবুও ভাবতিস কবির মত 
এমনো দিনে তারে বলা যায় , এমনো ঘন ঘোর বরিষায় !   অথবা ভেজা দেহখানি  
শুকনো গামছায় মুছে নিয়ে, খোলা জানালায় বসে লেবুর ঝোপের দিকে চেয়ে 
রজনীগন্ধার জলছাপ দেয়া ডায়েরীর পাতায় চুপিসারে লিখেছিলি কবিতায় চিঠি  
স্বপ্নপুরীর কোন এক অচেনা বালিকাকে !



শুনেছি এখন তুই খুব পাল্টে গেছিস । খুব ব্যস্ত । 
আকাশে মেঘ আজো জমে , বৃষ্টি নামে আগের মতই । পথের ওপর
তোকে আর যায়না দেখা বৃষ্টিপাগল পুরনো বালক । খবরও পাসনা শুনেছি । 
এখন তুই পুরোদস্তুর শহুরে নাগরিক । 
সকাল বিকাল হাসপাতালে ডিউটি করিস !


তুই দাবি করিস , এখনো আছিস আমার ভেতর ?
কী জানি , হবে হয়তোবা । কিন্তু জানিস , বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়-
এই আমিই সেই বদলে যাওয়া তুই !


বদলে যাওয়া তোকে আজ, কেমন যেন খুব 
খুব বেশি অচেনা লাগে ।

বৃহস্পতিবার, ৫ জুন, ২০১৪

জিজ্ঞাসাবাদ

সূর্য ডুবলে, প্রতিদিন ঘুমোতে যাই ক্লান্ত শরীরে ।
কখনো ইচ্ছে করেই ঘুমাই । কখনো বিশ্রামের ভেতর ,
ঘুমিয়ে পড়ি নিজের অজান্তে । সুবহে সাদিকে 
ঘুম থেকে জেগে দেখি, বদলে গেছে 
ঘড়ির এক কোণে তারিখের সংখ্যামান । অন্তর্হিত হয়েছে
রাতজাগা মায়াবী চাঁদ । পুবাকাশ হয়েছে রাঙা লালচে আভায় । চিরায়ত নিয়মে 
পুনর্বার  উদয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে রক্তাভ সূর্যটা ।


একদা জীবিত হতাম , কপালে মায়ের হাতের 
কোমল মমতা স্পর্শে । এখন জাগায় ঘড়ির এলার্ম ।
কমদামী মোবাইল ফোনের কর্কশ রিংটোন ।


রোজকার মত এভাবেই একদিন ঘুমিয়ে গিয়ে 
অনন্তকাল পরে হঠাৎ জেগে উঠে হয়তো দেখবো - প্রশ্নপত্র হাতে
শিয়রে দন্ডায়মান মুনকির নকীর । ভীমস্বরে শুধাবেন আমায় -
বল্ , কে তোর রব ? চিনিস এই মহামানবকে ? পৃথিবীর জীবনে কী ছিল তোর
জীবন চলার পথনির্দেশ ?


চূড়ান্ত সফলতা কিংবা ব্যর্থতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে , নির্বোধ আমি
হয়তো সেদিন  প্রশ্নকর্তার দিকে তাঁকিয়ে থাকবো 
ফ্যালফ্যাল করে । আর আমার দুরবস্থা দেখে দু'জন ফেরেশতা
হাত কচলে প্রস্তুত হবেন উপুড় করে ছুড়ে দিতে 
প্রজ্জ্বলিত হাবিয়ায় । 

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
জিজ্ঞাসাবাদ / ০৫-০৬-২০১৪

সোমবার, ২ জুন, ২০১৪

এক টুকরো উঠোন

দালানঘর নাইবা থাকুক । একটুকরো উঠোন আমার চাই   
এক কোণে একটা ডালিম গাছ , সকাল সন্ধ্যায়   
ঝিরি ঝিরি হাওয়ায় যার চিকন পাতা ওড়ে; বিরহী অর্ধাঙ্গিনীর 
আধখোলা চুলের মতন  ।  


নরম বিছানা নাইবা থাকুক । মাঠ থেকে ফিরে এসে  
জুড়োতে পারি যেন রৌদ্রতপ্ত দেহ
উঠোনে মাদুর পেতে ।  মাথার ওপর  
নাইবা থাকুক কনক্রিট ছাদ । খড়ের চালার ছিদ্র গলে  
চুইয়ে আসে যেন মোলায়েম জ্যোৎস্নার শরীর । তারা গুনে গুনে  
যেন কাটিয়ে দিতে পারি দীঘল নিশুতি রাত  
পরম নিসঙ্গতায় । 


মায়াবিনী প্রেয়সী নাইবা থাকুক আমার কুঁড়েঘরে । ভাঙ্গা বেড়ার ফাঁক গলে  
নাহয় বেরিয়ে যাক ঠুনকো প্রণয় । উঠোন হতে 
সুবহে সাদিকে যেন কানে আসে- ডালিম পাতার ফাঁকে  
বৌ-কথা-কও পাখির কুহুতান ।


নাইবা থাকুক একান্ত আপন কেউ , প্রাণের বান্ধব 
বিজলী জ্বলা জোনাকীর কাছে যেন কানে কানে বলে যেতে পারি  
আত্মভোলা এক রাখাল বালকের ফেলে আসা
মোহনীয় জীবনের গল্প । 

▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
এক টুকরো উঠোন / ০২-০৬-২০১৪