এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৩

ডাক্তারদের চামড়া , তুলে নেবো আমরা !

ডাক্তারদের চামড়া , তুলে নেবো আমরা !

এইটা হলো হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের শ্লোগান । সরকারী হাসপাতালে ডাক্তার ও কর্মচারীদের বিরোধটা ইদানীং বেশ ভালোভাবেই দেখা যাচ্ছে । সম্প্রতি সলিমুল্লাহ মেডিকেল এবং ময়মনসিং মেডিকেলে পাল্টাপাল্টি ধর্মঘট পর্যন্ত হয়েছে । অন্যান্য মেডিকেলের অবস্থাও কাছাকাছি ।
ডাক্তারদের সাথে কর্মচারীদের বিরোধটা কোথায় ? ‘টাকায়’ । সরকারী হাসপাতালে ভর্তি বাবদ ১৫ টাকা আর কিছু জরুরী ঔষধ কেনা ছাড়া তেমন কোন খরচ হবার কথা না রোগীর । কিন্তু তৃতীয়- চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের কারণে সেই খরচ বাড়ে অনেক । প্রতি পদে পদে এরা টাকা আদায় করে । হাসপাতালে ঢুকলেই টাকা । ট্রলিতে করে রোগী উঠাবে ১০০-২০০ টাকা । লিফটে উঠলে টাকা । টাকা দেন, আমি ডাক্তারকে বলে ভালো করে দেখাবো ! হাসপাতালের টেস্ট ভালো না, এই সেই নানারকম কথা বলে বাইরে টেস্ট করাতে পাঠায় । ছাড়পত্র দিতে টাকা , ডেথ সার্টিফিকেট দিতে টাকা । আরো নানান উপায়ে টাকা আদায় করে ।

অনেক সময় তারা ডাক্তারের নাম ভাঙ্গিয়েও টাকা নেয় । ‘বোঝেন না , এই টাকা থেকে স্যারকেও দিতে হবে । উনি ডাক্তার মানুষ, নিজ মুখে তো বলতে পারে না !’

বড় স্যাররা তো মহামানব হয়ে গেছেন , তাদের সময় নেই এগুলো দেখার । আর তাঁদের দায়িত্বও না হাসপাতালের এইসব দেখার । এগুলো দেখার দায়িত্ব প্রশাসনের । (যারা জানেন না তাদের জন্য – ডাক্তার আর হাসপাতাল প্রশাসন আলাদা । ডাক্তাররা এর একটা পার্ট মাত্র ।)

কিন্তু ইন্টার্ণ ডাক্তাররা তো দুনিয়ার ভেলকিবাজি এখনো চেনে নাই, ওদের দিল-মন ফ্রেশ । তারা প্রতিবাদ করে । আর তখনই লাগে ঝামেলা ।
শুরু হয় শ্লোগান - ডাক্তারদের চামড়া , তুলে নেবো আমরা !
মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয় – ওদেরই বা কী দোষ দেয়া যায় ? স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বউয়ের সম্পদ যখন ৭৮২% বাড়ে- তা ওদেরও তো বউ আছে নাকি !

শুধু দুঃখ লাগে, সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার পরেও এইসব কারণে যখন অবুঝ জনগন দিনশেষে সব দায় ডাক্তারদের ওপর চাপিয়ে নচিকেতার কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে গেয়ে ওঠে –
‘সরকারী হাসপাতালের পরিবেশ, আসলে তো তোমরাই করেছ শেষ ......!’

(পাদটীকাঃ সবাই এরকম না )

রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১৩

We are guilty of many errors



We are guilty of many errors & many faults 
But our worst crime is abandoning the children 
Neglecting the fountain of life  
Many of the things we need can wait  
The child can not  
Right now is the time his bones are being formed 
His blood is being made and his sense are being developed 
To him we can not answer ‘tomorrow’  
His name is ‘today’……

-        Gabriela Mistral ( Poet, Chile, Nobel lauriet 1945)

শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৩

অতি চালাক রোগীর চিকিৎসা !

মাঝে মাঝে কিছু অতিচালাক রোগী হাসপাতালে আসে ভুয়া কমপ্লেইন্ট নিয়া । আমার এক বন্ধুও ছ্যাকা খেয়ে এই কাজ করছিল, কিন্তু সাধারণত এরা হয় নারী সমাজের মাননীয় সদস্য ! বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এরা আসে রাতের বেলা । জামাইয়ের সাথে / বয়ফ্রেন্ডের সাথে খটমট হইছে, অসুস্থতার ভান ধরে চলে আসে হাসপাতালে ।
অতিচালাকিতে যা হয় – গলায় দড়ি আরকি ! এমনিতেই রোগীর ভীড়ে এডমিশন ওয়ার্ডের ডাক্তারের মেজাজ গরম থাকে । তার ওপর irrelevant history, আর complaint অনুযায়ী শরীরে রোগের Sign না পেয়ে যখন ডায়াগনোসিস হয় HCR ( ঢং রোগী) , তখন যেন সব রাগ গিয়ে পড়ে তার ওপর । সাথে অবশ্য বিনোদনের উপলক্ষও হয় বটে ! কারণ, HCR এর চিকিৎসার মজাই আলাদা ! এই চিকিৎসার মূলনীতি হলো- নাকে নল, মাংসে ও শিরায় জল, মুখে মেট্রোনিডাজল । রোগীকে দেয়া হয় -
১। Inj. Lasix 2 amp i/v stat (Diuretic, প্রস্রাব করতে করতে রোগীর জান হালাক ! অজ্ঞান ভাব ধরা রোগী উঠে বাথরুমে দৌড় লাগায় !)
২। Inj. Distilled water i/m (মাংসে ইনজেকশন, খুব পেইনফুল)
৩। মুখে Tab. Metronidazole , by chewing ! ( জম তিতা )
৪। NG Tube (নাকে নল, অবশ্যই কয়েকবার চেষ্টা করার পর ! )
৫। Syp. Avolac 4-6 tsf stat( Laxative, ডায়রিয়া করে ছাড়বে ! )
এই চিকিৎসার ফল হয় ভয়াবহ । ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দে । নাকে নল নিয়া একজন রমণী বারবার বাথরুমের দিকে দৌড়াচ্ছে দৃশ্যটা কেমন পৈশাচিক না ! ফলে সকাল হতে না হতেই আধামরা রোগী লাপাত্তা !

ওহে বাঙালি রমনীকূল , ডাক্তারদের সহিত চালাকি খাটে না । ডাক্তার নামক এইসব প্রাণী রাত্র জাগিয়া হাসপাতালে বসিয়া থাকে মুমূর্ষু রোগী বাচাইবার নিমিত্তে । তোমাদিগের ঢং দেখিবার জন্য নহে...

শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০১৩

কোথাও কেউ নেই



শীতের রাতগুলি বড় নির্জন , চারিদিকে অসহ্য নীরবতা 
অগণিত মানুষের এই শহরেও মনে হয়  
কেউ নেই ।
কোথাও কেউ নেই ।

ফাঁকা রাস্তায় ছেলেপুলে নিয়ে খেলা করছে কুয়াশা   
নির্বাক দর্শকের মত চেয়ে আছে পাতাঝরা গাছের সারি 
পিচঢালা কালো রাজপথও হয়ে গেছে ‘ভিজে বেড়াল’  
এ যেন সৃষ্টির আগেকার মত অসহনীয় নীরবতা । মনে হয় –
কেউ নেই
কোথাও কেউ নেই ।

দু’ধারে বহুতল অট্টালিকাগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে
জিরাফের মত । টোকাইরা আশ্রয় নিয়েছে চটের বস্তার ভেতর
নেড়ি কুকুরের দল ঠাঁই খুঁজে পেয়েছে ময়লার স্তুপে
রাতজাগা পেঁচাও যেন ডাকতে ভুলে গেছে শীতের তীব্রতায়
চারিদিকে শুনশান নীরবতা  
আমি শুধু হেঁটে যাই নির্জনতা ভেঙ্গে । মনে হয়
কেউ নেই
কোথাও কেউ নেই ।

-কোথাও কেউ নেই / ২৭-১২-২০১৩

বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৩

গাজী কালু চম্পাবতীর রাত



নভেম্বরের মাঝামাঝি । শীত পড়া শুরু হয়েছে । সেজন্য অবশ্য চিন্তা নেই , গায়ে চাঁদর আছে মুনিরের । মুনিরের সাথে আছে ওর দাদা ডাঃ আব্দুল্লাহএকমাত্র নাতিকে নিয়ে তিনি বসে আছেন নির্জন এই এলাকায় । ধূধূ প্রান্তর , কোথাও কোন সাড়াশব্দ নেই । আকাশে  শুক্লা দ্বাদশীর চাঁদ । আলোয় ভরে গেছে চারপাশ । ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা ডাক কানে আসছে । দূরে কোথাও থেকে মাঝে মাঝে ভেসে আসছে কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ ।

মাথার ওপর ছোট্ট তাঁবু । ঠিক তাঁবু বলা যায় না । এটাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ধুরাধান কাটার পর পাহারা দেয়ার জন্য চারটে খুঁটির ওপর ধানসমেত কাটা ধানগাছ দিয়ে বানানো হয় চালা । কোন দেয়াল নেই । নিচে মাটি আর উপরে ধানগাছের চালা ছাড়া সবদিকেই খোলা । কাথামুড়ি দিয়ে ধানগাছের বালিশে মাথা রেখে শুয়ে শুয়ে দেখা যায় আকাশ । আকাশের তারার মেলা, মাঝে মাঝে ছুটে আসা উল্কা । আর এরকম চাঁদনী রাত হলে তো কথাই নেই । এ যেন এক স্বর্গীয় পরিবেশ ।
যতদূর চোখ যায় শুধু ধানক্ষেত । এখন অবশ্য বেশিরভাগ জমির ধানই কাটা হয়ে গেছে । মাঝে মাঝে এরকম ছোট্ট চালা বানিয়ে পাহারা দিচ্ছে লোকজন । একটু পরপর হাক ছাড়ে- ঐ কে রে হাহ ? এর মাধ্যমে জানান দেয়া হয়- আমরা জেগে আছি, চোরেরা যেন না আসে । প্রত্যেক তাঁবুতেই টর্চলাইট থাকে । মাঝে মাঝে বিনা কারণেই টর্চের আলো ফেলা হয় এদিক-সেদিকে । সেই একই উদ্দেশ্য, চোরদের সতর্ক করা । আমরা কিন্তু জেগে আছি
ডাঃ আব্দুল্লাহ ও মুনির যে তাবুতে আছেন সেটার একটু দূরে একটা বাঁশঝাড় । ওখানে একটা কবরস্থানও আছে । বাড়িঘরগুলো আর আগের মত নেই, কিন্তু তবুও সেই পুরনো আবেশটা একেবারে হারিয়েও যায়নি ।
-     বুঝলে দাদুভাই, আমরা গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে । এই জমিগুলো আমার দাদার আমলের । সেই থেকে এই জমিগুলোতে ধান চাষ করা হয়এই জমির ধানের ভাত খেয়ে বড় হয়েছি । তোমাদের মত বয়সে ধান কাটা, গরুর গাড়িতে করে ধান বাড়িতে নিয়ে যাওয়া, স্তুপ করে রাখা সেইসব কাজ দেখাশোনা করেছি । নিজেও কাজ করেছি । জীবনের ভিত্তিটা এখানেই । রাতের বেলা এরকম করে ধান পাহারা দিয়েছি । আর সকালবেলা ফযরের নামাজ পড়েই গরম গরম ভাপা পিঠা খেয়েছি কাঁচা মরিচ আর লবণ মিশিয়ে । ঐ যে বাড়িটা দেখছো ওখানেই আমরা পিঠা খেতে যেতাম । আমি, বড় ভাই, জ্ঞাতি চাচারা, আমাদের বাড়ির চাকর কাওছার ভাই । চাকর বলছি- কিন্তু আমরা তাঁকে দেখতাম ভাইয়ের মতই
চুপ করলেন ডাঃ আব্দুল্লাহ । ভাবলেন , অনেক্ষণ তো বসে থাকা হলো । এবার শুয়ে শুয়ে গল্প করা যাক । মুনিরকে নিয়ে শুয়ে পড়লেন তিনি । মুনীর ক্লাস নাইনে পড়ে । বার্ষিক পরীক্ষা শেষ । মুনীরের দাদু ডাঃ আব্দুল্লাহ ওকে খুব পছন্দ করেন । তিনি প্রায়ই বলেন, এইভাবে শুধু শহরে থেকে বাসা আর স্কুল যাওয়া আসা করতে থাকলে জীবনকে উপলব্ধি করতে পারবা না । জীবনকে চিনতে হবে গোড়া থেকে । তবেই উপলব্ধি করতে পারবে জীবনের আসল রূপ ।
এজন্য তিনি মুনীরকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় যান । কখনো গ্রামে , কখনো শহরের বস্তিতে । কখনো রেলস্টেশনের ভাসমান টোকাইদের আস্তানায় ।  জীবনের নানান রুপ দেখান তিনি মুনিরকে । মুনিরেরও খুব ভালো লাগে । আজ মুনিরকে নিয়ে তিনি এসেছেন গ্রামে, ধানক্ষেতে । ধান কেটে রাখা হয়েছে । পাহারা দেবার জন্য ধুরা তৈরি করা হয়েছে । সেখানেই এখন শুয়ে আছে ওরা । আজ রাতটা এখানেই কাটাবে ।
মুনির বললো , দেখেছ দাদু, ঐ বাঁশঝাড়টায় কী অন্ধকার
ডাঃ আব্দুল্লাহ যেন উৎসাহ পেলেন । তিনি আবার বলতে শুরু করলেন,
-     সবাই বলতো , ঐ বাঁশঝাড়টাতে জ্বিনের আনাগোনা আছে । অনেকে নাকি রাত দুপুরে সাদা ঘোড়ায় চড়ে লম্বা লম্বা সাদা আলখেল্লা পড়া লোকদের এই বাঁশঝাড়ে ঢুকতে দেখেছে । আদৌ কেউ কোনদিন দেখেছিল কিনা কে জানে, কিন্তু কথায় কথায় সেই গল্প ছড়িয়ে পড়েছিল মুখে মুখে । ঐ বাশঝাড় থেকে কেউ বাঁশ কাটতো না । এখনো বোধ হয় কাটেনা । সেজন্যেই তো এত ঘন অন্ধকার ওখানে ।
একবার কী হলো শোন , তখন আমি ক্লাস এইটে । বার্ষিক পরীক্ষা , বৃত্তি পরীক্ষা শেষ । এদিকে ধান কাটা শুরু হয়েছে । সুতরাং আমাকে আর পায় কে । আমি দিনরাত ধানক্ষেতে সময় কাটাই । হাতে থাকে শরৎচন্দ্র অথবা বিভূতিভুষণের কোন উপন্যাস । একটা রেডিও । রেডিওতে গান শুনি, আর গল্পের বই পড়ি । সন্ধ্যে হলে ঐ পাড়া থেকে এক বুড়োমত লোক আসতো তাঁকে আমি দাদা বলে ডাকতাম । তিনি আমাকে গল্প শোনাতেন । তাঁর নামটা পরে জেনেছি শমশের দাদা । কেন যেন আমাকে খুব ভালোবাসতেন তিনি । হয়তো তাঁর কথা বলার খুব বেশি কেউ ছিলনা । অথবা কেউ আর তাঁর গল্প শুনতে চাইতো না । কিন্তু আমি খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতাম । জোলা জুলির গল্প, গাজী কালু চম্পাবতীর গল্প ।
মাঝে মাঝে পুঁথির সুরে আবৃত্তি করতেন, আর আমাকে সহজ বাংলায় কাহিনী শোনাতেন ।
মুকুট রাজার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যায় বৈরাগনগরের সিকান্দর শাহর ছেলে গাজীর ভাই কালু । কালুকে বন্দী করে রাজা । সেজন্য রাজার সাথে গাজীর যুদ্ধ বাঁধে-
সাত শত গাড়ল লয়ে
দাবার ঘাট পার হয়ে 
গাজী চলিলেন খুনিয়া নগরে    
খুনিয়ানগরে যেয়ে মুকুট রাজার মেয়ে
গাজী বিয়া করিলেন কৌশল্যা সুন্দরী।

চম্পাবতীর মা চম্পাকে গাজীর হাতে তুলে দিলেন
         বড় আহ্লাদের মোর কন্যা চম্পাবতী
       সাতপুত্র মধ্যে সেই আদরের অতি।
    তার প্রতি দয়া তুমি সদয় রাখিবা
    অনিষ্ট করিলে কোন মার্জনা করিবা । 

চম্পাবতীর রুপে গাজী বেহুশ হয়ে গেলেন-
         জ্বলিতেছে রূপ যেন লক্ষ কোটি শশী
    হঠাৎ চম্পার রূপ নয়নে হেনিয়া
    মুর্ছিত হইয়া গাজী পড়িল ঢলিয়া।

প্রতিবছরই এই সময়ে তাঁর কাছে গল্প শুনতাম । তারপর পড়াশোনার জন্য আমি শহরে চলে গেলাম । তাঁর সাথে আর দেখা হয়নি ।  আজও যেন কানে বাজছে সমশের দাদার কন্ঠ । তিনি আর নেই- ঐ বাঁশঝাড়ের পাশেই তাঁকে কবর দেয়া হয়েছে ।

এই দেখো বয়স তো আমারও কম হলো না । কী বলতে গিয়ে কী বলি । কত কথাই তো মনে পড়ছে । যাহোক, যেকথা বলছিলাম সেদিনও রাত দশটা পর্যন্ত গল্প শুনেছি । বাড়ি থেকে টিফিন ক্যারিয়ারে করে রাতের খাবার এনেছে বড় ভাই । খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি । 
সে রাতেও ছিল এরকম  পুর্ণিমা । আমার যখন ঘুম ভাংলো, তখন চাঁদের আলোয় চারদিক প্লাবিত । দেখে মনে হয় যেন সকাল হয়ে গেছে । দেখলাম বড় ভাইও পাশে নেই । ভাবলাম, বোধহয় ফযর হয়ে গেছে । ভাই হয়তো মসজিদে গেছেন নামাজ পড়তে । সাধারণত আমরা  মসজিদে ফযরের নামাজ পড়ে ভাপা পিঠা খেতে যাই ।
আমি নিজের মত করে হাঁটতে লাগলাম । আমার যাওয়ার কথা মসজিদের দিকে, কিন্তু আমি নিজের অজান্তে হাঁটছিলাম ঐ বাঁশঝাড়ের দিকে । জ্বিনের বাসা ওখানে । হাঁটছি তো হাঁটছিই... কোনদিকে খেয়াল নেই । প্রায় বাঁশঝাড়ের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি এমন সময় বড় ভাই কোত্থেকে এসে খপ করে আমাকে ধরে ফেললো । এই কোথায় যাস তুই ? আমি বললাম, কেন- মসজিদে যাই । দেখোনা সকাল হয়ে গেছে !
ভাই আমাকে ধরে হিড়হিড় করে টেনে নিয়ে গেলেন আবার তাঁবুতে । বলছিস কি তুই হ্যা ? এখন তো কেবল রাত তিনটা বাজে ! ঐ দ্যাখ চাঁদের আলো । আর মসজিদ তো উল্টাদিকে , তুই ঐদিকে যাচ্ছিলি কেন ? ভাগ্যিস, আমি ঠিক সময়ে তোকে ধরেছি । নইলে আজ নিশ্চিত তোকে জ্বিনেরা ধরে নিয়ে যেত !

মুনির চুপচাপ শুনে গেল । ওর কাছে সবকিছু অন্যরকম ঠেকছে । এই রাত, এই গল্প, এই ধূধূ প্রান্তরে অসীম আকাশের নিচে শুয়ে থাকা ।
দূর থেকে গাঁয়ের কোন কৃষকের কন্ঠের গান ভেসে আসছে ।
     আমি বা কে আমার মনটা বা কে  
আজও পারলাম না আমার মনকে চিনিতে    
পাগল মনরে , মন কেনো এত কথা বলে...

জীবন এমনও হয় ? চাষীর কন্ঠের গানে বোঝা যাচ্ছে, জীবন আসলে খুবই রহস্যময় । এক জীবনে নিজেকেই চেনা হয়ে ওঠে না ।  কয়েকদিন আগে মুনির জহির রায়হানের উপন্যাস পড়েছে । হাজার বছর ধরেমুনিরের মনে হলো- এ যেন সেই হাজার বছরের রাত ।
এ যেন শত শত বছরের পুঁথি কাহিনী গাজী কালু চম্পাবতীর রাত ।
এরকম একটা রাত জীবনের অমূল্য প্রাপ্তি । অসামান্য স্মৃতি । হয়তো বয়স হলে দাদুর মত  একদিন সেও এই রাতের গল্প করবে অন্য কারো কাছে !  

(গাজী কালু চম্পাবতীর রাত / ২৫-১২-২০১৩)

জন্মদিনের ছড়া

শত শত উইশ এসেছে
ইনবক্স আর ওয়ালে
উইশ করেছে রুই কাতলা
এবং রাঘব বোয়ালে !

বলবো কি আর দুঃখের কথা
যাচ্ছে বয়স বেড়ে
আজরাইলও হচ্ছে রেডি
আসবে কখন তেড়ে !

তোমরা তবু বলছো সবাই
‘শুভ জন্মদিন’
কেমনে বলো শুধবো এত
ভালোবাসার ঋণ ?

সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৩

পথিকের উপলব্ধি



মাঝে মাঝে মনে হয়  
চলছি যেন একটা শেওলাধরা ইটের রাস্তায়  
প্রতিটি মুহুর্ত যেন একেকটা ইট , গাঁথা আছে একের পর এক  
জীবনের আঁকাবাঁকা নির্জন সড়কে । 

ভেবেছিলাম  
একটু দাঁড়িয়ে ভালো করে দেখে নেবো চারপাশটা  
পরক্ষণেই দেখি - আগের ইটটা নেই আর পায়ের নিচে !  
চলমান ইট নিজেই সরে গেছে পেছনের দিকে   
এখানে একটুও দাঁড়াতে দেবে না আমাকে  !

পেছনে তাকিয়ে দেখি       
পাড়ি দিয়ে এসেছি তো অনেকটা পথ, অনেকগুলোগুলো বাঁক ।  অথবা
পথই ঠেলে দিয়েছে আমায় 
দূরে । আরও দূরে । 

জানিনা আরও কতটা পথ দিতে হবে পাড়ি  
কতটা পথ পেরুলে আমি,
পথিক হবো  

পথিকের উপলব্ধি/ ২৩-১২-২০১২