এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১২

যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রসঙ্গে কথকতা

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পর্কে আপনার মতামত কী ?

দেখুন , এটা হবে যুদ্ধাপরাধ বিচার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নয় । কারণ , এখন পর্যন্ত কেউই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে প্রমাণিত হননি । এছাড়া সরকার নিজেই এটাকে যুদ্ধাপরাধ বলছে না , বলছে ‘মানবতা বিরোধী অপরাধের’ বিচার ।

আইনের সংজ্ঞানুযায়ী, যুদ্ধের সময় পরস্পর যুদ্ধরত সামরিক বাহিনীর লোকেরা পরস্পরকে আঘাত করবে, হত্যা করবে এটা ঠিক আছে। যুদ্ধ শেষে বিজয়ী পক্ষ তাদের হাতে বন্দী পরাজিত সৈন্যদের সাথে তাদের বিধি অনুযায়ী আচরণ করবে।
যুদ্ধাপরাধ হলো, যুদ্ধের সময় বেসামরিক লোককে হত্যা, ধর্ষণ,সম্পদ লুন্ঠন, অগ্নি সংযোগ এগুলো। এই কাজগুলো ইসলামের দৃষ্টিতে জঘণ্য অপরাধ। ইসলামের যুদ্ধনীতিতে বেসামরিক নিরীহ মানুষ, তাদের ধন-সম্পদ, গাছপালা এগুলোর ক্ষতি করা নিষিদ্ধ। সুতরাং বেসামরিক ও নিরস্ত্র লোককে হত্যা, ধর্ষণ, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ যেই করুক তার বিচার চাওয়া অবশ্যই একজন মু’মিনের বৈশিষ্ট্য।
যারাই এ ধরনের কাজে জড়িত ছিল, আছে, থাকবে তাদের সবার বিচার চাই। সে রাজাকার হোক কি মুক্তিযোদ্ধা, জামায়াত, বিএনপি, আওয়ামী লীগ যেই হোক।
এই বিচার হওয়াতে সময়ের কোন সীমা নেই। ৪০ বছর পরে হোক আর ৫০ বছর পরে হোক এটা কোন বিষয় না।

তবে বিচার হতে হবে সদুদ্দেশ্যে, নিরপেক্ষ। হতে হবে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ, অকাট্য সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে।
ইসলামে বিচার নীতিতে একটা বিষয় খুব গুরুত্ব দেয়া হয় – প্রমাণের অভাবে হাজার অপরাধী ক্ষমা পেয়ে যায় যাক, কিন্তু নিরপরাধ একজনও যেন শাস্তি না পায়।
কারণ, মু’মিনরা আখিরাতে অবিচল বিশ্বাস রাখে। এই দুনিয়ায় যদি কোন অপরাধীর শাস্তি না হয়, আখিরাতে অবশ্যই হবে। আল্লাহ তায়ালার নজর থেকে কেউ পালাতে পারে না।

আরেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ, বিচার হতে হবে অপরাধ সংঘটনের সময় যে আইন বিদ্যমান ছিল তার ভিত্তিতে। পুরনো অপরাধের বিচার নতুন আইনে হতে পারবে না।
মদ নিষিদ্ধের বিধান আসার আগে কেউ মদ পান করে থাকলে তাকে বেত্রাঘাত করা যাবে না।

বর্তমানে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তার অনেক বিষয় ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।

প্রথমত, এই বিচারের জন্য নতুন করে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। এটা ন্যায়বিচারের পরিপন্থি। যখন যেমন প্রয়োজন তেমনভাবে আইন সংশোধনও করা হচ্ছে । তাহলে তো বিচার হয় না।

দ্বিতীয়ত, বিচারক নিয়োগ দেয়া হয়েছে এমন ব্যক্তিকে যিনি আগে থেকেই আসামীদের শাস্তি প্রদানের ব্যাপারে বদ্ধপরিকর। তিনি অনেক আগেই ঘাদানিকের পক্ষ হতে আসামীদের শাস্তি দিয়ে বিচারের রায় ঘোষণা করেছিলেন।

তৃতীয়ত, বিচারকরা আবেগের বশে বলেই ফেলছেন যে তাঁরা ন্যায়বিচার করবেন না। এরকম ব্যবস্থায় তো ন্যায়বিচার হবে না।

চতুর্থত, নির্দিষ্ট কিছু রাজনৈতিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে যাদেরকে ক্ষমতাসীন দল তাদের জন্য হুমকি মনে করে। যেমন মাওলানা সাঈদীর বিপক্ষের সাক্ষীরা বারবার “মোসলেম মাওলানা” নামক এক ব্যক্তির বিভিন্ন অপরাধের ব্যাপারে স্বপ্রণোদিতভাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন। কিন্তু তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কারণ তিনি এখন পিরোজপুর ওলামা লীগের নেতা। এ থেকে মনে হচ্ছে বিচার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টা চলছে।

পঞ্চমত, সাক্ষী হিসেবে এমন সব লোককে নিয়ে আসা হয়েছে যারা সবাই চুরি, জালিয়াতি, নারী কেলেংকারি, খুন ইত্যাদি অপরাধে আদালতে সাজাপ্রাপ্ত। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যারা পরিচয় ও সাক্ষ্য দিয়েছে তাদের সবার মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর এবং কারো কারো বিচার শুরুর পরে ইস্যু করা। অনেক সাক্ষীকে হাজির করা হয়নি এই বলে যে তারা নাকি অসুস্থ , মানসিক ভারসাম্যহীন , কেউবা নিখোঁজ । অথচ তারা টিভিতে সাক্ষাৎকার দিচ্ছে যেখানে দেখা যায় ঐ সাক্ষীরা সম্পুর্ণ সুস্থ অবস্থায় , বহাল তবিয়তে নিজ বাড়িতেই আছেন । জাফর ইকবাল , শাহরিয়ার কবির যারা বিচারের দাবিতে পত্রপত্রিকায় লিখে এবং কথা বলে  মুখে ফেনা তুলে ফেলেন – তারা সাক্ষী তালিকায় থাকলেও সাক্ষ্য দিতে আসেননি ।

এছাড়াও আরো অনেক অসংগতি দেখা যাচ্ছে যা আমাদের হতাশ করে। ন্যায়বিচারের প্রত্যাশাকে করে সুদূর পরাহত।
আরো একটা বিষয় আমাকে হতাশ করছে – বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করছে, এজন্য বিরোধীদলীয় ও ইসলামী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করছে। কিন্তু একই সময়ে খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের মাফ করে দিচ্ছে। যুদ্ধের সময়কার উত্তাল ও বিশৃঙ্খল অবস্থায় সংঘটিত অপরাধের তদন্ত করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে সংঘটিত গুম, খুনের ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
একজন বিশ্বাসী মুসলিম হিসেবে আমি সকল সময়ে সংঘটিত সকল অপরাধের বিচার চাই। কোন দল-মত-ধর্ম ভিত্তিক বিভাজন চাই না। বিদ্বেষ চাই না ।

কিন্তু যদি পক্ষপাতমূলক বিচারের মাধ্যমে প্রহসন করা হয়, ন্যায়বিচার না করে নিরীহ মানুষকে শাস্তি ও কষ্ট দেয়া হয় ; সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া কাউকে অভিযুক্ত করা হয় – তাহলে তাও মেনে নেবো না ।
এমন অবস্থায় একজন মুমিন মুসলিমের দায়িত্ব হয়ে পড়ে মজলুম মানুষের পক্ষে দাড়ানো ।
এবং তাতে আমিও পিছপা থাকবোনা ইনশাআল্লাহ ।

রাসূল (সা) বলেছেনঃ “যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসলো এবং আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে কাউকে ঘৃণা করলো, আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে দান করলো এবং আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে দান করা থেকে বিরত থাকলো, সে যেন তার ঈমানকে পূর্ণ করে নিল।” (আবু দাউদ)
 শুক্রবার, মে 25, 2012

শুক্রবার, ১৮ মে, ২০১২

মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে আমার অবস্থান

এই প্রসঙ্গে প্রথম প্রশ্ন হবে নিঃসন্দেহে এটাই , আপনি মুক্তিযুদ্ধ সমর্থন করেন কিনা ?

আমার কাছে মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ বলি আর যাই বলি ’৭১ এর এই সংগ্রামটা অনিবার্য হয়ে উঠেছিল। এটা একদিকে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের অবহেলিত, অপমানিত, উপেক্ষিত মানুষের সংগ্রাম, অন্যদিকে তাত্ত্বিকভাবেও পাকিস্তান রাষ্ট্র তার অখন্ডতার বৈধতা হারিয়েছিল।
নিখিল ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মূল প্রেরণা ছিল মুসলমানদের জন্য একটি আলাদা আবাসভূমি এবং একটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র গঠন করা। ইসলামী বিধানের আলোকে একটি ইনসাফ ভিত্তিক কল্যাণ রাষ্ট্র গঠন করা। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরেও এই লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হয়েছিল এই রাষ্ট্র। বরং ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলায় শাসকগোষ্ঠি  বিশ্বের একজন সেরা ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা মওদুদীকে ফাসিকাষ্ঠে পর্যন্ত নিয়েছিল।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময়ে মাওলানা মওদুদী বলেছিলেন, এই রাষ্ট্র ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে তা টিকতে পারবে না এবং বাস্তবেও তাই হয়েছে। শাসকরা বারবার জনগণের সাথে বেঈমানী করেছে। বারবার ওয়াদা ভঙ্গ করেছে।
সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলাকে তারা স্বীকৃতি দিতে চায়নি। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভোটে নির্বাচিত নেতা শেখ মুজিবের কাছে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। এগুলো হলো স্রেফ বেঈমানী।

সর্বশেষ ২৫শে মার্চের গণহত্যা। নিরীহ মানুষের উপর গুলি চালানো।  এটা স্পষ্ট ও বড় জুলুম ।
এরপর এই রাষ্ট্র কোনভাবেই টিকতে পারেনা। আমি শুরুতেই বলেছি , পাকিস্তান তার অখণ্ডতার বৈধতা হারিয়েছিল।

অনেকে বলেন যে, মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের সংকীর্ণ আঞ্চলিকতাবাদের ফসল। হ্যাঁ, হতে পারে, কিন্তু এর দায় তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীরই। তারাই পূর্ব পাকিস্তানী, পশ্চিম পাকিস্তানী, বাংলাভাষী, উর্দুভাষী পার্থক্য করেছিলো এবং এর মাধ্যমে আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদ উস্কে দিয়েছিলো।
ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য না হলেও, শেষ পর্যন্ত সংগ্রামটা হয়ে উঠেছিল ইনসাফ প্রতিষ্ঠার, জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের।
আর আল্লাহ সবসময় মজলুমের পক্ষে থাকেন।


( মুক্তিযুদ্ধ বিষয়টি অনেক বেশি আলোচিত ও বিতর্কিত । এ নিয়ে গত চল্লিশ বছরে অনেক কথা হয়েছে । নানা আঙ্গিকে অনেক বই লেখা হয়েছে । হয়েছে অনেক নাটক, চলচ্চিত্র । হয়েছে রাজনীতি । চর্চা হয়েছে ইতিহাসের , ইতিহাস বিকৃতিরও । তথ্য গোপন এবং অতিরঞ্জিত করা হয়েছে অনেক । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে মানুষের আবেগকে ব্যবহার করা হয়েছে স্বার্থসিদ্ধির জন্য । আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি আমাদের দায়িত্ব এই সবকিছুর ভেতর থেকে সঠিক ইতিহাস বের করে আনা । একটি খোলা মনে নির্মোহভাবে পর্যালোচনা করা । এই অনুভুতি থেকেই আমার পড়াশোনা ও অন্যান্য উপায়ে অর্জিত জ্ঞানের ভিত্তিতে আমি আমার অবস্থান গ্রহন করেছি । আমার অবস্থানের ব্যাপারে আমি স্পষ্ট ও দৃঢ় ।)

রাসূল (সা) বলেছেনঃ “যে আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে কাউকে ভালোবাসলো এবং আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে কাউকে ঘৃণা করলো, আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে দান করলো এবং আল্লাহর (সন্তুষ্টির) উদ্দেশ্যে দান করা থেকে বিরত থাকলো, সে যেন তার ঈমানকে পূর্ণ করে নিল।” (আবু দাউদ)
 শুক্রবার, মে 18, 2012

রবিবার, ১৩ মে, ২০১২

বয়স


মন চায় বয়সটা থেমে থাকুক এখানে
বিশ এবং ত্রিশের কোথাও ।
ঘড়ির কাঁটার মত ফিরে ফিরে আসুক
পুরনো বিন্দুতে ।
চুলের অগ্রভাগে শুভ্রতার আভাস পেলে
কৃষ্ণ আবেগে প্লাবিত করুক মূলের যৌবন ।

কপালে ভাঁজ পড়ুক গভীর চিন্তায়
বয়সে নয় ; সংগ্রামের পথে নতুন উপায়-সন্ধানে
বিপ্লব , সেতো অগ্নিস্ফূলিঙ্গ
চূড়ান্ত বিজয়ের সয়লাব কিংবা ধ্বংসস্তুপ
ক্ষরিত রক্তকণিকা থেকে আমি জন্মাতে চাই আবার
এই এখানে ;
বিশ এবং ত্রিশের কোথাও ।



রবিবার, মে 13, 2012

বৃহস্পতিবার, ৩ মে, ২০১২

চাটুকারদের কবলে মেডিকেল কলেজ !


কিছুদিন আগেই ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের বন্ধুদের কাছ থেকে খবরটা পেয়েছিলাম । কিন্তু তারা এর পেছনের বিস্তারিত তথ্য জানাতে পারছিল না । নতুন মেডিকেল কলেজের নাম নিজ নামে না করে কেন ১৯৯২ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি মেডিকেল কলেজের নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে করা হচ্ছে কেন ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না । এখন বুঝলাম, এগুলো হলো ‘চাটুকার বাহিনী’র কাজ !!!


নিচের খবরটা পড়ুন । প্রথম আলো থেকে ।

প্রস্তাব পাঠিয়েই মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন!
ফরিদপুর অফিস |
« আগের সংবাদ পরের সংবাদ»

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ’ রাখার প্রস্তাবটি এখনো মন্ত্রণালয়ে বিবেচনাধীন। কিন্তু চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই গত ২৬ এপ্রিল ছাত্রলীগের কলেজ শাখার নেতা-কর্মীরা নতুন নামসংবলিত ফলকটি টাঙিয়ে দিয়েছেন মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকে।
মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের কাছ থেকে জানা যায়, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় ‘ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ’-এর নাম পরিবর্তন করে ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ’ রাখার প্রস্তাব করা হয়। ২৬ ফেব্রুয়ারি মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিলে প্রস্তাবটি অনুমোদন করে ২৮ ফেব্রুয়ারি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে গত ১১ মার্চ চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
১৯৯২ সালে স্থাপিত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ১৩-১৫ এপ্রিল কলেজে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৩ এপ্রিল রাতে কলেজ ক্যাম্পাসে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন ফরিদপুর সদর আসনের সাংসদ (ফরিদপুর-৩) শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
অনুষ্ঠানের প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অনুষ্ঠানমঞ্চের সামনে একটি ব্যানার ঢাকা অবস্থায় ছিল। শ্রমমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ব্যানারটি উন্মোচন করেন। ব্যানারে লেখা ছিল ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ’। ব্যানারটি উম্মোচন করে মন্ত্রী ঘোষণা দেন, ‘আজ থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ‘শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ’ হিসেবে যাত্রা শুরু করল। পরবর্তী সময়ে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা ওই ব্যানারটি কলেজের গ্যারেজের বারান্দায় স্থাপন করেন। গত বৃহস্পতিবার সেটি কলেজের মূল ফটকে স্থাপন করা হয়। এ কাজে নেতৃত্ব দেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মাইদুল ইসলাম।
মাইদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নামকরণের বিষয়টি প্রস্তাবিত। শ্রমমন্ত্রীর নির্দেশে আমি মূল ফটকে ব্যানারটি স্থাপন করেছি।’ ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী বলেন, ‘নতুন নামকরণের যে ব্যানারটি মন্ত্রী মহোদয় উন্মোচন করেছেন, ছাত্ররা সেটি কলেজের মূল ফটকে টানিয়েছে। নতুন নামকরণের বিষয়টি এখনো মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছাত্রদের এই ব্যানার টানানোর বিষয়টি আইনসংগত হয়েছে কি না, তা বিচার্য কোনো ব্যাপার নয়। ‘তবে নাম ফলকটি ওঠানোর ব্যাপারে আমার ক্ষমতা যেমন সীমিত, তেমনি নামানোর ব্যাপারেও আমার ক্ষমতা সীমিত।’
মেডিকেল কলেজের নতুন নামকরণের প্রস্তাবের সঙ্গে তিনি একমত দাবি করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, ‘আমি বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছেন, এ নামকরণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার। প্রশাসনিক লোক হিসেবে এ ব্যাপারে তোমার করণীয় কিছু নেই।’



স্পষ্টতই বোঝা যায়, এ কাজের মাধ্যমে তারা প্রধানমন্ত্রীর সম্মান বাড়াননি বরং বিতর্ক সৃষ্টি করে তাঁকে অসম্মানিত করেছেন । অন্যান্য সেক্টরের মত মেডিক্যাল সেক্টরেও ‘জ্বী হুজুর’ প্রকৃতির লোক অনেক আছে । তারা ‘মেরুদন্ড দুর্বল’ টাইপের লোক কিংবা সুবিধাভোগী বলা যায় । কিন্তু চাটুকার তেমন নয় । কিন্তু হায়, এই ঘটনার মাধ্যমে মেডিকেল সেক্টরেও চাটুকার বাহিনীর উত্থান লক্ষ করা গেল । তারা মেডিকেল কলেজের নাম পরিবর্তন করে  প্রধানমন্ত্রীর ‘কাছের লোক’ সাজার চেষ্টা করছে । উদ্দেশ্য স্পষ্ট, ‘ যদি কিছু ফায়দা হাছিল করা যায় !’

আমরা প্রত্যাশা করবো, প্রধানমন্ত্রী এই প্রস্তাব বাতিল করে চাটুকারদের চপেটাঘাত করবেন ।

 বৃহস্পতিবার, মে 3, 2012