এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

আত্মজিজ্ঞাসা

অনেক তো পেরুলো সময় !
অনেক অনেক দিন, সাদাকালো রাত,
দুপুর, বিকেল ।
অনেক সূর্যাস্ত হলো পশ্চিম আকাশে
অসংখ্যবার ফিকে হয়ে এলো
গোধূলীর রঙ ।

এখন কি এসেছে সময় নিজেকে শুধাবার?
কতদূর হাঁটা হলো? কতযুগ সময়ের পরে,
কতটুকু চেনা হলো পৃথিবীর পথ? কতটা জমিন, কতটুকু মন, আর
কতজন মানুষের প্রতি-
জন্মালো অধিকার?

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

চিঠি

জানিস, মাঝে মাঝে আমার
নিজেকে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়ঃ এইযে সোনালি বিকেলগুলো
কাটিয়ে দিচ্ছি এইভাবে, কনক্রিট ঘেরা চার দেয়ালের
বদ্ধ ঘরে...
কীসের প্রয়োজনে? কিংবা, কীসের প্রলোভনে?
.
তোকে বলা হয়নি- এইসব বিকেলে
গোধূলীর বদলে এখন আমার চোখে আসে
নিয়নের সাদা আলো ; পাখির ডাক হয়ে কানে বাজে
পুরনো এয়ারকুলারের-
একটানা বিদঘুটে শো শো আওয়াজ ।
আর জানিস, বহুদিন ধরে
নরম ঘাসের ভূমিকায় জব্বর অভিনয় করে চলেছে
একজোড়া কাঠের চেয়ার !
.
এই শহরে বিকেল বেলায়
ইউটিউবে দেখি সূর্যাস্ত ! উড়ে যাওয়া সাদা বক,
দোয়েল শালিকের ঝাঁক !
রাখালিয়া বাঁশির সুর-
নিত্য শুনি মিউজিক প্লেয়ারে। বন্ধ জানালায়
হোঁচট খেয়ে ফিরে এলে উদাস দু'চোখ
পুরনো ডায়েরির বদলে, স্ক্রল করে যাই
পুরনো দিনের
ফেসবুক টাইমলাইন !
....
কিন্তু জানিস, ওতে কোন হৃদয়ছোঁয়া ঘ্রাণ আসে না।
ওতে খুঁজে পাইনা হারিয়ে যাওয়া পুরনো হলুদ খাম, কিংবা
চ্যাপ্টা হয়ে থাকা
গোলাপের পাপড়ি...

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

পে স্কেল নিয়ে চিকিৎসকদের হতাশা

আমি সরকারি কর্মচারি নই, চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরি করা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে প্রায়শই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 'না' এর পাল্লাটাই ভারী থাকে । কিন্তু সরকারি কর্মচারিদের জন্য ঘোষিত নতুন পে স্কেল আমাকে আরো বেশি নেতিবাচক ভাবনায় ফেলে দিয়েছে ।
নতুন পে স্কেল নিয়ে সিনিয়র চিকিৎসকদের হতাশা উদ্বেগের বিষয় । একজন চিকিৎসক লিখেছেনঃ '১৩ বছর চাকরি করে আমি এখন ৭ম গ্রেডে, আর প্রশাসন পুলিশ পররাষ্ট্র ক্যাডারে আমার ব্যাচমেটরা ৪র্থ গ্রেডে । চিকিৎসক হিসেবে এই অপমান সহ্য করা যায়না । হয়তো সরকারি চাকরি ছেড়েই দিতে হবে !'
সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার । একই বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়ে, একই পরিমাণ সময় সার্ভিস দিয়েও টেকনিকাল ক্যাডাররা তিন গ্রেড পেছনে কেন? কারা এই মূল্যায়ন করলো ? এর অর্থ কি এটাই যে প্রশাসন ক্যাডার বা পুলিশ ক্যাডার সরকারের জন্য অপরিহার্য? বাকিরা অপশনাল ? তারা হুকুমের গোলাম মাত্র?
এই অবমূল্যায়ন যে বার্তা জানান দিলো তা দেশের জন্য খুব খারাপ । এমনিতেই প্রতিবছর শতশত ডাক্তার সরকারি চাকরি ছেড়ে চলে যান । আগামীতে এই হার নিশ্চিতভাবেই বাড়বে । দেশের মানুষের জন্য এটা কোন ভালো সংবাদ নয় ।

মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভিক্ষুক

'ভাইজান, কয়ডা টাহা দ্যান। সকাল থাইকা কিছু খাই নাই। বাচ্চা দুইডারেও কিছু খাওয়াইতে পারি নাই।'
আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে মোড় ঘুরতেই এক মহিলার কন্ঠ কানে আসে নাবিলের। মহিলার সাথে অল্প বয়সের দুটি বাচ্চা।
নাবিল দাঁড়াতেই মহিলা মুখ কাঁচুমাচু করে এগিয়ে আসে। বয়স ত্রিশের কোঠায় হবে বলে মনে হয়। রোগা নয়, শক্তসমর্থই।
-কেন, খাননি কেন? আপনার স্বামী নেই? আপনি কোন কাজ করেন না? প্রশ্ন করে নাবিল।
-ভাইজান, হবিগঞ্জ থাইকা ঢাকা আসছি কাজকামের খোঁজে। কোন কাম জোগাড় করবার পারি নাই। অহন ফিরা যামু তারও কোন ব্যবস্থা নাই। একটা টেহা নাই হাতে।

নামকরা রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সাথে বুফে ডিনার সেরে বাসায় ফিরছিল নাবিল। কোন কোন আইটেম অসাম লেগেছে আর কোনটা একটু খারাপ হয়েছে তা নিয়েই ভাবছিল সে। এমন সময়ে এরকম অনাহারি মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অপরাধী মনে হলো তার । আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল সে। আহা! আমি একবেলা খাবারের জন্য হাজার টাকা খরচ করলাম! কত কিছু খেলাম। অথচ এই মহিলা সকাল থেকে না খেয়ে আছে! আর বাচ্চা দুটো! আহা! না খেয়ে কী কষ্টই না হয়েছে বাচ্চা দুটির।
'আসেন মা, আমার সাথে আসেন। আমি আপনাদের খাওয়াবো। তারপর বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে যাবো। আমি নিজে টিকেট কেটে হবিগঞ্জের গাড়িতে উঠিয়ে দেবো'।
মহিলাকে তার পেছন পেছন আসতে বলে হাঁটতে শুরু করে নাবিল। ভালো রেস্টুরেন্টেই খাওয়াবে সে ওদেরকে। মহিলা অবশ্য একবার বলেছিল, ভাইজান, কিছু টাকা দেন। আমরা খাইয়া নিমু। কিন্তু নাবিল আজকে অল্প কিছু টাকা দিয়েই তার দায় সারতে চায় না। সে নিজে সাথে থেকে তাদেরকে খাওয়াতে চায়, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাবার সুব্যবস্থা করে দিতে চায়।
আনমনা হয়ে হাঁটতে থাকে নাবিল । শাহবাগ মোড়ে ভালো কোন খাবার দোকান নেই। কাঁটাবন বা হাতিরপুল এলাকায় দুএকটা ভালো রেস্তোরাঁ আছে। মিনিট পাঁচেক হাটলে কোন একটায় পৌঁছানো যাবে।
ধীরেই হাটছিল সে। রাস্তায় ভীড়ও তেমন নেই এখন। হাটতে হাটতে দেশের গরীব দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করার পরিকল্পনা করতে থাকে । এভাবে একজন দুজনকে একবেলা দুবেলা খাইয়ে কিছু হবে না। দারিদ্র্যের মূলে কুঠারাঘাত করতে হবে। বৈষম্য রোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। ধনীদের সম্পদ থেকে গরীবের হক আদায় করে নিতে হবে।
ভাবতে ভাবতে 'চায়না কিচেন' রেস্তোরাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় নাবিল । সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢোকার জন্য পেছন ফিরে তাকায় সে। কিন্তু একী? কোথায় গেল মহিলা? এদিক ওদিক ভালো করে নজর বুলায় সে । নাহ, কোথাও নেই। ওরা কি পেছনে রয়ে গেল?
কাঁটাবন মোড় পর্যন্ত ফিরে এসে ভালো করে খুঁজলো সে। কিন্তু কোথাও তাদের আর কোন হদিস পাওয়া গেলনা।
বাসায় ফিরতে ফিরতে একটা প্রশ্ন চকিতে উদয় হলো নাবিলের মনে- মহিলা কি তাহলে মিথ্যা বলেছিল? আসলে সে একজন পেশাদার ভিক্ষুক?

বুধবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৫

সান্ত্বনা

‘বাবা একটু আসবেন, রোগীর খুব শ্বাসকষ্ট হইতাছে’ ।
চোখ তুলে তাকালো মুনির । দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ । বেড নাম্বার তেত্রিশ, মনে পড়লো মুনিরের । ঐ রোগীরই শ্বাসকষ্ট হবার কথা ।
হাসপাতালে নাইট ডিউটিতে আছে ডাঃ মুনির । কয়েক মিনিট হলো, সবগুলো রোগী দেখা শেষ করে ডক্টরস রুমে এসে বসেছে । এরই মধ্যে বৃদ্ধ চলে এসেছেন ডক্টরস রুমের দরজায় ।
বৃদ্ধের স্ত্রীই তেত্রিশ নম্বর বেডের রোগী । মায়মুনা বেগম । অনেকক্ষণ ধরেই শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল তাঁর । মুনির এসে কিছু জরুরি ব্যবস্থা নেয়ায় শ্বাসকষ্ট কমেছিল কিছুটা । কিন্তু এরই মধ্যে আবার বেড়ে গেছে । রোগীর যা অবস্থা, শেষমেষ হয়তো তাকে বাঁচানো যাবেনা । বাঁচানোর জন্য আরো কিছু চেষ্টা করা যায়, কিন্তু সেটা এইখানে, সরকারি হাসপাতালের এই জেনারেল ওয়ার্ডে সম্ভব নয় ।

বৃদ্ধের সাথে আবারো রোগীর কাছে গেল মুনির । আরো একবার পরীক্ষা করে দেখে দায়িত্বরত নার্সকে নতুন কিছু নির্দেশনা দিল । তারপর বৃদ্ধকে একপাশে ডেকে নিলো সে।
‘বাবা, আপনাকে তো আমি আগেও বলেছি, আপনার রোগীর অবস্থা খুব খারাপ । তাঁর কিডনিতে সমস্যা আছে, কিডনি ঠিকমত কাজ করছে না । ফুসফুসে জীবাণু সংক্রমণ হয়েছে, পানি জমে গেছে । সেকারণে ঠিকমত শ্বাস নিতে পারছেন না । শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে । হার্টের ওপর চাপ বাড়ছে । যেকোন সময় হার্ট এটাক হতে পারে । যেকোন কিছু ঘটে যেতে পারে । আইসিইউ তে নিতে পারলে শেষ চেষ্টা করা যেতে পারে । কিন্তু এই হাসপাতালের আইসিইউ তে এই মুহূর্তে কোন বেড খালি নাই । আপনি কি অন্য কোথাও নিতে পারবেন?’
বৃদ্ধ কোন জবাব দিলেন না।
মুনির খেয়াল করলো, বৃদ্ধের চোখ ছলছল করছে । অদ্ভুত শুন্যতা সেখানে । মুখে বলার প্রয়োজন নেই, কখনো কখনো চোখের ভাষাই সব বলে দেয় । বুঝে ফেললো মুনির, এখানেই যা হবার হবে, এর চেয়ে বেশি কিছু করার সামর্থ বৃদ্ধের নেই ।
সুযোগ-সামর্থের মধ্যে যা করার আছে, সবকিছু করে ডিউটি রুমের দিকে পা বাড়ালো মুনির । একবার পেছন ফিরে দেখলো, বৃদ্ধ গিয়ে বসেছেন স্ত্রীর বিছানায় ।
আবেগের একটা তরঙ্গ যেন ছুঁয়ে গেল মুনিরকেও । 'বৃদ্ধ' ! আমরা কত সহজেই শব্দটা উচ্চারণ করি! অথচ একদিনে কেউ বৃদ্ধ হয়না, হওয়া যায়না। বৃদ্ধ হতে হলে পৃথিবীর মাটিতে একটা সম্পূর্ণ জীবন কাটিয়ে দিতে হয়।
তেত্রিশ নম্বর বেডে বসে থাকা এই দু’জন মানুষ কতবছর একসাথে কাটিয়েছেন কে জানে ! কয়েক যুগ তো হবেই । অথচ কী অদ্ভুত! আজ রাতেই হয়তো চিরবিচ্ছেদ হয়ে যাবে দু’জনের মধ্যে । একজন চিরতরে হারিয়ে যাবে পৃথিবী থেকে, আরেকজন অপেক্ষা করবে এমনই কোন দিনের । এমনই কোন রাতের । আর কখনো এই দুজনের দেখা হবে কিনা, কেউ জানে না ।
মুনির ভাবলো, এই মুহূর্তে বৃদ্ধের যে অনুভূতি, পৃথিবীর কোন কবি কিংবা কোন ঔপন্যাসিক কি কখনো তা বর্ণনায় তুলে আনতে পারবে?
বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো মুনিরের । এরকম সময়ে নিজেকে খুব অসহায় লাগে তার । নিজেকে পরাজিত মনে হয়, ব্যর্থ মনে হয়।
মানুষের 'ডেথ সার্টিফিকেট' লেখা কোন সহজ কাজ নয়। কিন্তু এটাও সত্য, মানুষ অমর নয়। মৃত্যুকে ঠেকানো যায় না। প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।
ডক্টরস রুমের পুরনো কাঠের চেয়ারটিতে বসে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় মুনির- ‘আমরা রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারি; মৃত্যু নয়’।

মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০১৫

নামতে হবে পুরনো মেঠোপথে ।

দিন রাত জোছনা সবকিছু একাকার হয়ে আছে এই শহরের
বহুতল ভবনের কার্নিশে।
ফলস সিলিং এর ভেতর নিরন্তর জ্বলে আছে নিয়নের সাদা আলো;
আর আমি
নির্বিকার বসে আছি এইখানে, নির্লিপ্ত হৃদয়ে।
মনে হয় অনন্তকাল পেরিয়ে গেছে! কে জানে,
জানালার বাইরে পৃথিবীটা আছে কিনা আগের মত! এ পৃথিবীতে
আজও কি ভোর হয় সূর্যের লালচে আলোয়?
এখনো কি বিকেল নামে নীড়ে ফেরা পাখিদের কোলাহলে?
...
ফুটপাত জুড়ে অগনিত মানুষের সারি। তবু
অদ্ভুত নির্জনতা বোধ হয় এঘরের কাঁচের জানালায়
দেয়ালের এইপাশে ।
মাথার ওপর-
অবিরাম ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখার শো শো আওয়াজ
যেন জানিয়ে দিচ্ছে এই সময়ের আন্তরিক আহ্বানঃ বদ্ধ প্রকোষ্ঠ ছেড়ে
পথে নামতে হবে, হে পুরনো যোদ্ধা! আরো একবার
নামতে হবে ধুলো ওড়া পুরনো মেঠোপথে ।

মঙ্গলবার, ৩ নভেম্বর, ২০১৫

এবার অবসরে যাবো আমি

আসন্ন শীতের ঠান্ডা বাতাস গায়ে মেখে
হিমায়িত করে নেবো আমার সমগ্র অস্তিত্ব
হৃদয়, শরীর ও মন ।
আমি এক আজন্ম যোদ্ধা, তবু
সবাইকে টপকে যাবার অশুভ যুদ্ধ হতে
এবার অবসরে যাবো আমি; কারবালাফেরত
বৃদ্ধ সৈনিকের মত।
.
রণভেরির অদ্ভুত আওয়াজ, ধুলোর কুয়াশার ভেতর-
ঢাল তলোয়ার নিয়ে দিনভর অস্থির চলাচল,
আর কত?
এইসব যুদ্ধের তো শেষ বলে কিছু নেই!
এইসব যুদ্ধে তো স্থায়ী বিজয় নেই! এখানে
জয় পরাজয় আসে পালাক্রমে; দিনের পরে রাত
গ্রীষ্মের পরে বর্ষার মত।
.
অসংখ্য যুদ্ধের স্মৃতি, বিজয়ের সুখ,
আর পরাজয়ের তীব্র বেদনা বুকে নিয়ে
অবসরে চলে যাবো আমি
এই শীতে।

রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৫

সংশয়

এইসব হেমন্তের ভোরে
প্রতিটি সূর্যোদয় নিয়ে আসে ভিন্ন রঙের নতুন দিগন্ত
আর আমিও নিজেকে জড়াই নিত্যনতুন মোহ মরীচিকায়।
নির্বোধ পতংগের মত
যতটা উজ্জ্বলতা দেখে ছুটে যাই-
তার চেয়ে বেশি উত্তাপ গায়ে মেখে
পোড়া শরীর নিয়ে ফিরে আসি।
.
এইভাবে,
রূঢ় বাস্তবতার সোনালী আভায়
কুয়াশার মত কেটে গেছে অগুণতি মোহের আবরণ।
রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন; সংশয়, দ্বিধা, দ্বন্দ্ব।
প্রতিটি পদক্ষেপেই এখন 'সন্দেহ' জেগে ওঠে -
আমি কি এখনো মোহাবিষ্ট হয়ে আছি? কিংবা
যে পথে বাড়িয়েছি পা
তারও মঞ্জিল কি কোন এক
ঝিলমিল মরীচিকায়?

বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫

ফিনিক্স !

একপাল মাতাল বুলডোজার বহুদিন ধরে
ক্রমাগত গুঁড়িয়ে চলেছে- আমার চলার পথ;
এবং আমাকেও।
তবু আমি-
এক অদ্ভুত ধ্বংসস্তুপ হয়ে আজও বেঁচে আছি।
আমি রুপকথার ফিনিক্স নই; মাথা কাটা গেলে-
আমার শুন্য গর্দানে- একটাও নতুন মস্তক গঁজিয়ে ওঠেনি ।
উন্মত্ত বুলডোজারের অবিরাম আঘাত সয়ে সয়ে
বহুকাল আগেই দেহ-মস্তক বক্ষহীন হয়ে গেছি আমি, তবু
ধ্বংসস্তুপের গভীরে বাঁচিয়ে রেখেছি
হৃদয়ের কোমলতা ।
আর্দ্র হৃদয় ছাড়া
কীইবা অর্থ থাকে মানুষের জীবনে?

বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫

দ্বিমুখ !

মহাবিরক্ত হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন রহমত সাহেব । ব্যাংকের কাজ শেষ করে বের হতে আজ আটটা পেরিয়ে গেছে । ব্যাংকারদের জীবনের এই দিকটা রহমত সাহেবের কাছে এখন অসহ্য লাগে । সকাল হতে সন্ধ্যা, বলা চলে রাত পর্যন্ত একটা জায়গায় প্রতিদিন একই কাজ করে যেতে হয় । দিনের আলো চোখে দেখা হয়না ।
এই যেমন আজ সাড়ে আটটা বেজে গেল অফিস থেকে বের হতে হতে । তারপরও শান্তি নেই । বাসায় ফেরা মানে আরেক যুদ্ধ । কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, কোনো বাসে উঠতে পারছেন না । দুএকবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বাসের দরজার হ্যান্ডেল ধরারও সুযোগ হয়নি । মানুষজনের ওপর তিনি ক্ষুব্ধ । একটু চেপেটেপে দাঁড়ানো যায়না? তাহলে তো আরো দু-একজন উঠতে পারে !
বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে শেষমেষ একটা বাসে উঠতে পারলেন রহমত সাহেব । যথারীতি কন্ডাকটরের চিৎকার কানে আসতে লাগলো। ‘মামা একটু চাইপা খাড়ান, পেছনে খালি আছে । এ ভাই চাইপা খাড়ান না ক্যান?’
এমনিতেই তিরিক্ষি হয়ে ছিল, কিন্তু এবার মেজাজটা একেবারে বিগড়ে গেল রহমত সাহেবের । তিনি গলা চড়িয়ে বললেন- ‘ঐ ব্যাটা, তোগো পেট ভরে না? এত মানুষ তুলছস বাসের ভিত্রে, আর একটা লোকও তুলবি না কইলাম!’ নানা কথায় আরো কিছুক্ষণ গজরাতে থাকলেন তিনি ।
[পরিশিষ্টঃ ঠিক সেই মুহূর্তে বাসের দরজায় ঠাঁই না পেয়ে ফিরে গেলেন আরো একজন ক্লান্ত মানুষ । হয়তো তিনিও একজন অফিস ফেরত রহমত আলী...।]

সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫

একদিন হারিয়ে যাবো

অতীতের দিকে তাঁকালে এখন অনেক কিছুই ঝাঁপসা লাগে, সবকিছু কেমন অস্পষ্ট মনে হয়। কত চেনা মুখ, কত প্রিয় অপ্রিয় মানুষ, কত বন্ধুতা শত্রুতার কাহিনী, কত উজ্জ্বল দিন, স্মরণীয় রাত, কত গান কত কথা, সবকিছু অস্পষ্ট লাগে। সবকিছু যেন আজ ঝাঁপসা মনে হয়।
আজকের দিনগুলোও একদিন ঝাঁপসা হয়ে যাবে, অস্পষ্ট হয়ে যাবে এইসব ছবি । মূল্যহীন হয়ে যাবে এইসব অর্জন কিংবা ব্যর্থতা।
তারপর, একদিন আমিও ঝাঁপসা হয়ে যাবো । একদিন আমার চেহারাও অস্পষ্ট হয়ে যাবে, একদিন আমার কন্ঠটাও অচেনা হয়ে যাবে । আবছায়ায় ঢেকে যাবে আমার মুখ।
তারপর একদিন, পৃথিবীর কেউ- কোথাও আমার কোন চিহ্ন খুঁজে পাবে না ।

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫

নির্বোধ !

কাঠঠোকরার মত ক্রমাগত ঠোকর মেরে আমার হৃদয়ে
অগণিত ক্ষত বানিয়ে চলেছে অদ্ভুত সময় !
আর আমি কিনা এক সুস্পষ্ট মরীচিকার পিছু নিয়ে
বদ্ধ পাগলের মত হো হো করে হাসতে হাসতে এগিয়ে চলেছি
অজানা গন্তব্যে !
.
অদ্ভুত ছলনায় আটকে পড়েছি আমি; পুরোটা শরীর
চোরাবালির মত ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছে বস্তুচেতনায়।
কাল কী হবে- এই ভাবনায় ভুলে যাচ্ছি আজকের গান;
আর
ভবিষ্যতের কথা ভেবে নির্বোধের মত,
লু হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছি প্রতিদিন
মূর্ত বর্তমান।

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫

ঘোড়দৌড় !

নিরবচ্ছিন্ন খাদ্য সরবরাহ পেয়ে
হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠা একপাল টাট্টু ঘোড়ার সাথে
নেমেছি ঘোড়দৌড়ে; আমি এক
অদ্ভুত রেসের ঘোড়া।
জীর্ণশীর্ণ দেহ,
চার পায়ে জড়ানো নানান শেকল
তবুও ছুটছি, অথবা ভান করছি ছুটবার।
.
এই উদ্দাম রেসকোর্সে, বলা চলে ঝিনুক শামুকের মত
গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে চলেছি আমি
গন্তব্যের পানে। প্রশ্নটা হলো,
এইভাবে কি কখনো হর্সরেস জেতা যায়?

বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৫

'সাকিন'

অনেকদিন আগে বিটিভিতে একটা নাটক দেখেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে নাটকের নাম ছিল 'সাকিন'। নাটকে একজন জমিদারের তালুকে অন্য একজন উত্তরাধিকারী তার অংশ দাবি করলে তাকে সুযোগ দেয়া হয়- সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যতদূর পর্যন্ত দাগ দিতে পারবে, সবটুকু জমি তাকে দিয়ে দেয়া হবে।
.
বেচারা পরদিন সূর্যোদয়ের পর থেকে দৌড়ানো শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দৌড়ায়। সূর্য ডোবার সাথে সাথে তার দৌড়ানো শেষ হয়। কিন্তু সারাদিন দৌড়ের ধকল সইতে না পেরে সে সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সারাদিন দৌড়িয়ে যে সম্পত্তি সে অর্জন করেছিলো তা তার কোন কাজে আসে না।
.
বাস্তবে আমরাও যেন একইভাবে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দৌড়াচ্ছি। জন্মের পর থেকে দৌড়াচ্ছি। হয়তো একসময় অনেক কিছু অর্জন হবে, কিন্তু ততদিনে আমাদের অবস্থা হবে আব্দুল করিমের গানের মত-
ইঞ্জিনে ময়লা জমেছে
পার্টসগুলো ক্ষয় হয়েছে
ডায়নামো বিকল হয়েছে
হেডলাইট দুইটা জ্বলে না।।

তারপর একসময়, সূর্য ডুবে গেলে, শুন্য হাতে আমাদের চলে যেতে হবে অচিন জগতে। সারাজীবনের অর্জিত সম্পত্তি কোনই কাজে আসবে না।
কোন মরীচিকার পেছনে কিসের নেশায় দৌড়াচ্ছি আমরা?

বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

টাকার কাছে মেধার পরাজয় !

টাকার কাছে মেধার পরাজয় ঘটেছে, কেউ আপনার কাছে এমন একটা ঘটনার উদাহরণ চাইলে আপনি এখন নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের কথা। অদ্ভুত আমাদের দেশ, অদ্ভুত আমাদের সরকার, অদ্ভুত আমরাও। প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মেলে, জড়িত কালপ্রিটরা গ্রেপ্তার হয়, স্বীকারোক্তিও পাওয়া যায়, লেকিন পরীক্ষা বাতিল হয় না! বরং তড়িঘড়ি করে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হয় !! এদিকে আমরা, মানে জনগন চুপচাপ দেখে যাই এইসব চুরিচামারি আর কেনাবেচা!!
.
হা, দেশে এখন আর সত্যিকার কোন সরকারি মেডিকেল কলেজ নেই, যেখানে বিনাখরচে/কমখরচে পড়া যায়। ডিএমসিতে ভর্তি হতে এখন মাথার ঘিলু লাগেনা, ১২ লাখ টাকা লাগে। এর পজিটিভ দিকটা হলো- আগামীতে আর কেউ ডাক্তার(!!)দের 'জনগনের টাকায় লেখাপড়া করা'র অপবাদ দিতে পারবে না!! কেউ ওকথা বললেই ভবিষ্যতের ডাক্তার(!)রা খেঁকিয়ে উঠবে- ব্যাটা মুখ সামলে কথা বলবি! ১৪ লাখ দিয়ে ডিএমসিতে ভর্তি হয়েছি। ট্যাকা কি তোর বাপে দিছিলো??
আর ভবিষ্যতে এই ইনভেস্টমেন্ট সুদে আসলে তুলবার জন্যে এরা যে ডাক্তার হবার পর কী করবে তা আল্লাহই ভালো জানেন!!
.
হা বংগদেশ!
সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।

মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সাধু সাবধান !

সরকারি আমলাদের মধ্যে যাদের খায়েশ জেগেছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কৃষিবিদ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সবার ওপরে ছড়ি ঘুরানোর, তারা কি এটাই চান যে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা প্রফেশনাল ক্যাডারে না গিয়ে জেনারেল ক্যাডারে ঢুকে পড়ুক? জনাব, তাহলে কিন্তু অবস্থা খুবই খারাপ হবে। এটা আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, পেশাজীবীরা পেশার প্রয়োজনে যে পরিমাণ লেখাপড়া করেন তার অর্ধেকও যদি এইসব বিসিএস টিসিএস এর জন্য পড়েন তাহলেই কিন্তু আপনাদের খেল খতম হয়ে যাবে। দেখবেন কয়েক বছরের মধ্যে জেনারেল ক্যাডারেও সব পোস্ট এরাই দখল করে ফেলবে। (আমার পরিচিত যে কয়জন প্রফেশনাল ক্যাডার ছেড়ে জেনারেল ক্যাডারের জন্য চেষ্টা করেছেন তারা কেউই বিফল হননি ।) বিকজ, এদের ভেতরে আগুন আছে, তারা সে আগুনকে 'পোড়া'নোর চেয়ে 'গড়া'নোর কাজে ব্যবহার করতে চায়। সেটা যদি তাদের সম্মানের সাথে করতে দেয়া না হয়, তাহলে আপনাদের গদি পোড়ানো ছাড়া তাদের আর কীইবা করার থাকে?
.
সুতরাং সাধু সাবধান। গ্রেড-১, গ্রেড-২ এবং শীর্ষপদগুলি কারো জন্য সংরক্ষিত না রেখে যার যার সেক্টর তাদের নিজেদের ওপর ছেড়ে দিন। ক্ষমতার প্রতিযোগিতা নয়, প্রতিযোগিতা হোক সেক্টরভিত্তিক উন্নয়নের, প্রতিযোগিতা হোক দেশসেবার, প্রতিযোগিতা হোক মানবসেবার।

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

"এতদিন কোথায় ছিলেন?"

দিনে দিনে বৃদ্ধ হয়ে উঠছে আমার কাব্যপিয়াসী মন ।
জীবনানন্দের কবিতা হতে সে আর আগের মত
কাব্যরস নিংড়াতে পারেনা ।
এমন নয় যে তার রসবোধ কমে গেছে । কিংবা
পুরনো হয়ে গেছে জীবনবাবুর কবিতা । বরং, আমার মনে হয়
এখন সে আর শুধুই কল্পনায় সন্তুষ্ট নয় ! সে চায়-
অক্ষরের জিঞ্জির হতে বেরিয়ে এসে একজন 'বনলতা'
শ্রাবস্তীর কারুকার্যখচিত মুখ আর পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে জিজ্ঞেস করুক,
"এতদিন কোথায় ছিলেন?"
-
নাটোরের হতে হবে এমন কোন কথা নেই
বনলতা 'সেন' হতে হবে এমন কোন কথা নেই
হোক শুধু একজন নিপাট 'বনলতা'ই ।
নইলে, ওর পক্ষে কাব্যের সুধা আহরণ
বোধহয় আর সম্ভব নয় !

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বেহুলার প্রতি

কত পানকৌড়ি উড়ে গেছে কবে, সে হিসেবে আমার আর কাজ নেই।
আমি শুধু চাই আজ মাথার ওপর দিয়ে
অন্তত একটা পাতিহাস উড়ে যাক, দিগন্তের দিকে।
যেন আমি একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে পারি-
উড়ালপংখির গমনপথে।
.
জানো বেহুলা, বহুদিন হয়ে গেছে বহুযুগ-
আমি একটিবার বিস্ময়ে অভিভূত হইনি।
নিরাবেগ পাষাণের মত বেঁচে থেকে এতকাল পরে
এই ভয়ে রাতভর তড়পাচ্ছি এখন,
আমি কি হারিয়ে ফেলেছি মনুষ্য হৃদয়?
বেহুলা, তুমি কি এতটুকু নিশ্চিত করে একবার বলতে পারো
আমার হৃদয়বৃত্তিতে আজও কোন হেরফের হয়নি?

প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে হলে

শুধু এবারের ঘটনার প্রতিকার নয়, ভবিষ্যতে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে হলেও প্রকাশিত ফল বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়া জরুরি । যারা ১২-১৪ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনেছিল, পরীক্ষা বাতিল করলেই তাদের আক্কেল হবে । মাথায় হাত উঠবে । কারা প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ছিল তাদেরকেও খুঁজতে হবেনা । প্রশ্ন ক্রেতারাই বিক্রেতাদের ধরিয়ে দেবে ।
পরবর্তী বছরে বিক্রেতারা ক্রেতা পাবে না । পরীক্ষা বাতিলের আশঙ্কায় ক্রেতারা এত টাকা খরচ করে প্রশ্ন কেনার সাহস পাবে না । ফলে প্রশ্ন ফাঁস এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে ।
আর যদি তা না করা হয়, তাহলে আগামীতে প্রশ্ন ফাঁসটাই ট্রেন্ড হয়ে যাবে । সবাই ভাববে, কই কোন সমস্যা তো হয় না ! আমি নাহয় কিনছিনা, অন্য কেউ তো কিনছে !
.
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাননীয় পরিচালক, প্রশ্ন ফাঁসের যথেষ্ট প্রমাণ তো আপনারা পেয়েছেন । আর কত প্রমাণ চান? ফল প্রকাশ করা হয়ে গেছে তাতে কিছু যায় আসে না । এখনো সময় আছে, ভর্তির তারিখ ঘোষণা না করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিন । প্রকৃত মেধার মূল্যায়নের ব্যবস্থা করুন । আপনাদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন- একগুঁয়েমি করে জাতির ভবিষ্যত সূর্যসন্তানদেরকে হতাশার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবেন না ।

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

'ছিনিমিনি খেলা' !

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হওয়া উচিত 'ছিনিমিনি খেলা'। কারণ,
এখানে এই একটা খেলাতেই সকলেই 'খুব পারদর্শি'। 
শিক্ষামন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের মেধা এবং ভাগ্য নিয়া ছিনিমিনি খেলেন ।
ভ্যাটমন্ত্রী ভ্যাট নিয়া। স্বাস্থ্যমন্ত্রী খেলেন জনগনের স্বাস্থ্য নিয়া।

রাজনীতিকরা জনগনের ভাগ্য নিয়া ছিনিমিনি খেলেন। আমলারা লাল ফিতা।
আদালত সংবিধান নিয়া।
আর আমাগোর ভোট লইয়া নির্বাচন কমিশন।
গমরুল গম নিয়া ছিনিমিনি খেলেন। 

আর পদ্মাসেতু নিয়া ছিনিমিনি খেলেন মিস্টার 'ফাটাকেষ্ট'। 

ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য নিয়া ছিনিমিনি খেলে। ক্লিনিক মালিকরা রোগী নিয়া।  
বেকার যুবকদের জীবন নিয়া খেলে আদম বেপারিরা । 
ড্রাইভাররা যাত্রী আর পথচারিদের জীবন নিয়া ছিনিমিনি খেলে। 
আর যার খায়াদায়া কাম নাই, 

সেও ফেসবুকে আইসা ছিনিমিনি খেলে । 

যেদিকেই তাকান দেখবেনঃ সবদিকে, সবখানে, সবসময়, 
মহাসমারোহে চলছে 'ছিনিমিনি খেলা' । 
আমরা সবাই ছিনিমিনি খেলার অংশ । কেউ খেলোয়াড়, কেউবা উপকরণ !
সুতরাং,
নামকাওয়াস্তে হাডুডু- কে জাতীয় খেলা রেখে আর লাভ কী?
বরং এই মুহূর্তে ছিনিমিনি খেলাকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা ঘোষণা করা হবে 
সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কাজ।

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

শিক্ষার পণ্যায়ন

অনেকের কথা শুনে মনে হচ্ছে, শিক্ষার পণ্যায়ন বোধহয় টিউশন ফি তে ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে এবারই প্রথম শুরু করা হলো । কিন্তু আসলে তো শিক্ষাকে পণ্য হিসাবে গণ্য করা সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে, যেদিন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নামে শিক্ষাকে বিক্রয়যোগ্য করা হয়েছে ।
.
জনগনের মৌলিক চাহিদা হিসেবে শিক্ষার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব । কিন্তু সরকার তা না করে শিক্ষার ভার তুলে দেয় ব্যবসায়ীদের হাতে । আর ব্যবসায়ীরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নতুন উদ্যমে শুরু করে শিক্ষাব্যবসা । তারা ইচ্ছামত টিউশন ফি নির্ধারণ করে, এই সেই নানান খাত দেখিয়ে নানাভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা আদায় শুরু করে । সরকারের নিয়ন্ত্রণের বালাই নেই । কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় টাকার গরম দেখাতে, আর কেউবা ভর্তি হয় বাধ্য হয়ে । অর্থমন্ত্রীর সাথে যাদের ওঠাবসা তাদের ছেলেমেয়েরা কিন্তু বেসরকারিতে পড়ে টাকার গরমেই । ভ্যাট আরোপ এবং এ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন সেসব আসলে তিনি তাদের দিকে তাকিয়েই বলেছেন ।
.
এখন সরকারের তরফে শিক্ষাকে আরো সহজলভ্য না করে ভ্যাট বসিয়ে কঠিন করার চেষ্টা হচ্ছে । আফটার অল, এটা সমর্থন করা যায়না । তবে শুধু ভ্যাট প্রত্যাহার নয়, আন্দোলন হওয়া উচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসার লাগাম টেনে ধরার দাবিতে । টিউশন ফি কমানোর দাবিতে । নামমাত্র খরচে শিক্ষালাভের দাবিতে । এবং এটা আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল ।
সরকারকে ভ্যাট দেবোনা ঠিকাছে, কিন্তু বিনাপ্রশ্নে ব্যবসায়ীদের পকেট ভরিয়ে দেবো- সেটাও নিশ্চয় হতে দেয়া যায় না ।

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমলা বনাম কামলা ?

নতুন পে স্কেলের মাধ্যমে সরকার তার কর্মচারিদের দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে । আমলা এবং কামলা । এডমিন ক্যাডার হইলো আমলা, আর বাদবাকি সবাই হবে কামলা !
আমলারা নির্দেশ দিবে, আর কামলারা সে নির্দেশ পালন করবে ! আমলারা ফাইলপত্র নাড়াচাড়া করবে, আর কামলারা তাদের নিজের চাকরির ফাইলখানা ঠিক রাখার জন্যে কিছুমিছু হাতে নিয়ে হুজুর হুজুর করবে ! তা সে কামলা যতবড় জ্ঞানীই হোক, যতবড় প্রফেসর হোক, যতবড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ বা দার্শনিক হোক ।
.
যতবড় ডিগ্রী থাকুক, চাকরির বয়স যতই হোক, কামলাদের দৌড় হবে সর্বোচ্চ গ্রেড-৩ পর্যন্ত । বাসে যেরকম নারী শিশু বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সিট সংরক্ষিত থাকে, তেমনিভাবে গ্রেড-১ এবং ২ আমলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে ।
প্রফেসর সাব, ডাক্তার সাব, ইঞ্জিনিয়ার সাব- আপনারা গ্রেড -১, ২ চান? তাইলে আপনাদের ওপর 'আমলা'দের ব্রাহ্মণগিরি থাকে? এইটুকু জ্ঞানও আপনাদের নাই? এই জন্যেই তো আবুল মাল বলেছেন, আসলে 'জ্ঞানের অভাবে'ই আপনারা এই পে-স্কেলের সমালোচনা করছেন ! ঠিকই কইছে । আরে স্যার, আপনারা হইলেন কামলা । কামলাদের আবার কিসের গ্রেড-১,২ হা? আবুল মাল সাব তো বলেছেন, এখন থেকে উনারা মানে আমলারা আপনাদের, মানে কামলাদের কন্ট্রোল করবেন । ঠিকই কইছে ! আসলেই আপনাদেরকে কন্ট্রোল করা খুবই জরুরি হয়া পড়ছে।
.
প্রফেসর সাহেব, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-কৃষিবিদ সাহেব, কী ভেবেছেন? এমনিই পার পাবেন? জেনারেল সাবজেক্টে লেখাপড়া না কইরা আর বিসিএস এ এডমিন ক্যাডার চয়েস না দিয়া যে মহাপাপ করছিলেন, এখন তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে না?

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বড়ই অদ্ভুত এদেশের ব্যবসায়ীরা !

অদ্ভুত আমাদের দেশ এবং দেশের মানুষ । বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা । যদি কোনোভাবে একটা রব ওঠে যে চাকুরেদের বেতন বাড়ছে বা বাড়ানোর ব্যাপারে আলাপ আলোচনা হচ্ছে- তো ব্যস ! আর ঠেকায় কে? কালবিলম্ব না করে এরা তত্‍ক্ষণাত্‍ জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় । অথচ এরা কিন্তু সেগুলো কিনেছিল অনেক আগে, অনেক অল্প দামে ।
বাজেটের আগে যখন পত্রিকায় একটা ধারনা দেয়া হয় কোন্ কোন্ জিনিসের দাম বাড়বে, এরা বাজেট পেশ এবং পাশের অপেক্ষা না করে তখনই ঐসব জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় । অথচ এরা ঐসব জিনিস কিনেছিল অনেক আগে, অল্প দামে ।
সারা বিশ্বে উত্‍সবের আগে বিশেষ ছাড় দেয়া হয় । কিন্তু বাঙালি ব্যবসায়ীরা মুখে লালা জমিয়ে অপেক্ষা করে থাকে কোন একটা উত্‍সবের । ঈদ কিংবা পূজার । তখন এরা বিশেষ গলাকাটা মূল্যে পণ্য বিক্রি করে থাকে ।
.
বেতন বাড়ুক কিংবা বোনাস দেয়া হোক, তাতে ছাপোষা চাকুরেদের জীবনযাত্রায় কোন পরিবর্তন হয় না । যে লাউ সে কদুই থাকে । মাঝখান থেকে ফুলেফেঁপে কলাগাছ থেকে বটগাছ হয় ব্যবসায়ীরা ।
কোনোভাবে যদি তারা বুঝতে পারে কোন একটা জিনিস চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম আছে, ব্যস । হয়ে গেল তাদের পোয়াবারো । মুহূর্তেই ঐ জিনিসের দাম আকাশচুম্বি হয়ে যায় । কখনো কখনো তারাই সিন্ডিকেট বানিয়ে এরকম কৃত্রিম সংকট তৈরি করে । জানা যায়, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ নাকি হয়েছিল ব্যবসায়ীদের মজুতদারির কারণে । ঐ দুর্ভিক্ষে বাংলার লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল ।
.
যে কৃষক ফসল ফলায় সে ফসলের দাম পায় না, যে কাঁচামাল উত্‍পাদন করে সে তার শ্রমের দাম পায় না । যে চাকুরিজীবী সকাল সন্ধ্যা দেশের কাজ করে সে তার ঘামের মূল্য পায় না । যা পায় তাতে তাদের জীবনযাত্রায় কোন হেরফের হয় না । লাভের গুড় চেটে খায় ঐ ব্যবসায়ীরাই । গুড় খেয়ে মোটাতাজা হলে পরে তারা ইলেকশনে নামে । টাকা ছড়ায় । এবং পরিশেষে এই ব্যবসায়ীরা টাকার জোরে দেশের হর্তাকর্তা বনে যায় ।
অদ্ভুত । বড়ই অদ্ভুত আমাদের বঙ্গদেশ । বড়ই অদ্ভুত এদেশের ব্যবসায়ীরা ।

রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

জলের জোছনা, নাকি জোছনার জল?

অদ্ভুত অসময়ে অকারণে ভিজে এলে চোখ
প্লাবিত হয়ে গেলে দৃষ্টিসীমা;
বুঝতে পারিনা কিছুতেই-
একি জলের জোছনা, নাকি জোছনার জল?
.
দুর্বার গতিপথে
যখন হঠাত্‍ অনুভবে আসে কোন বাঁধনের টান
ঠাওর করতে পারি না কোনমতে-
সেকি বাঁধনের মায়া, নাকি মায়ার বাঁধন?
.
নিরন্তর দ্বন্দ্ব লেগে আছে মনের ভেতর ।
কে কাকে তাড়িয়ে বেড়ায়? আমি মনকে, নাকি আমাকেই মন?
এইভাবে
নানাবিধ প্রশ্ন আর আলো আঁধারির মাঝে
ক্রমাগত যাচ্ছে কেটে রঙহীন জীবনের যতসব সাদাকালো সুতো-
সময়ের চরকায় ।

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

টাকাটা মুখ্য নয় !

ইন্টার্ন ডাক্তারদের ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলন নিয়ে গতকাল বিকালে টেলিফোনে আলাপচারিতায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- ইন্টার্নশিপ কোনো চাকরি নয়, এটা ডাক্তারদের ট্রেনিংয়ের একটি অংশ। এই ইন্টার্নশিপ সময়টা বর্তমানের এক বছর থেকে দুই বছর করা দরকার। তিনি বলেন, ডাক্তারদের ইন্টার্নশিপকালে টাকাটা মুখ্য বিষয় নয়। সেবা, ট্রেনিং ও ভাতা এই তিনটা মিলিয়ে ইন্টার্নশিপ। তিনি নিজের মেডিকেল শিক্ষা জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি যখন ছাত্রনেতা ছিলাম তখন ইন্টার্ন ডাক্তারদের ভাতা শুরু হয় মাসে ২৫০ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, গ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ। নতুন ডাক্তারদের তিন বছর গ্রামে ইউনিয়ন পর্যায়ে কাটাতে হবে।
.
ভেরি ওয়েল । নষ্টের গোড়া কোথায় সেটা আমরা জানতে পারলাম । আমাদেরই সিনিয়র যারা নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে আছেন তাদের চিন্তাগুলো মোটামুটি এই রকমই । BCPS নামে যারা আছেন, তারা তো ডাক্তারদের বিনামূল্যে খাটাচ্ছেনই, উপরি হিসেবে হেনতেন নানা উপায়ে টাকা আদায় করছেন । রেসিডেন্সিতে যে নামেমাত্র দশহাজার টাকা দেয়া শুরু করেছিল, সেটাও কারো কারো গাত্রদাহের কারণে এখন বন্ধের পথে ।
তারা ভুলে গেছেন, ক্যারিয়ার গঠনে এখন যতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের ততটা করতে হয়নি । একটা সময় ছিল যখন ভালো ছাত্রদের ধরে ধরে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছে সরকার । এখন যেমন লাখ পরিক্ষার্থীর ভেতর একজন হতে হয় , তখন এটা লাগেনি । আমার এলাকার এক সিনিয়র ডাক্তার, বেচারার খুব ইচ্ছা ছিল ঢাকা ভার্সিটিতে পড়বেন । কিন্তু সরকার তাঁকে ধরে নিয়ে স্টাইপেন্ড দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল ।
.
পাস করে এখন যেমন ডাক্তারদের বিসিএস দিয়েও দুই তিনবছর পরে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে হয়, কোন উচ্চতর ডিগ্রীর ট্রেনিং এ আসার আগে গ্রামে চাকরি করতে হয় বছরের পর বছর, তখন এইটা ছিলনা । পাস করলেই নিশ্চিত সরকারি চাকরি । সেদিনই একজন অধ্যাপক স্যার স্মৃতিচারণ করলেন, ইন্টার্নশিপের শেষদিন তাঁর হাতে সরকার নিয়োগপত্র ধরিয়ে দিয়েছিল এসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার হিসেবে । চাকরি জীবনের শুরুতে তাঁর বেতন ছিল পাঁচশ টাকা । গুরুত্বপূর্ণ কথাটা হলো- সেসময় একশ টাকায় একটা মোটাতাজা গরু পাওয়া যেত । তখনকার সময়ের হিসাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই তিনশ টাকা বেঁচে যেত । নিঃসন্দেহে বলা যায়, সম্মানজনক সুখী জীবন । সেই সিনিয়ররা এখনো সুখেই আছেন । জুনিয়রদের দুঃখ-কষ্ট তাই তাঁদের খুব বেশি স্পর্শ করেনা ।
.
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, তাঁরা ২৫০ টাকা ভাতা পেতেন । জনাব, একটু খেয়াল করবেন কি - তখন তো ৮০-১০০ টাকায় একটা মোটাতাজা গরু কেনা যেত, এখন কি দশ হাজার টাকায় একটা মোটাতাজা ছাগলও পাওয়া যায়?
জনাবের প্রস্তাব হচ্ছে, ইন্টার্নশিপ দুই বছর করতে হবে(আট বছর শেষ), এবং তিনবছর পর বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে(এর কমে আসলে হয় না) আবার গ্রামে পাঠিয়ে কমপক্ষে তিনবছর রাখতে হবে । তো জনাব, এই সময়ে জুনিয়র ডাক্তাররা নিজে কী খাবে আর বৃদ্ধ বাপ-মাকে কী খাওয়াবে?
শ্রদ্ধেয় জনাব, দয়া করে বলবেন কি- এর বিনিময়ে আপনি জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য কোন্‌ অশ্বের কতগুলি ডিম্ব প্রস্তাব করছেন?

বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

হায় ঢাকা !

ঢাকা শহরের ব্যাপারে একটা ফ্যাসিনেশান তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই । সব গল্প উপন্যাসে পড়তাম ঢাকার কথা, ঢাকার কাহিনী । সব বড় বড় মানুষেরা থাকতেন ঢাকায় । ইতিহাসের যত নায়ক খলনায়ক সবাই থাকতেন ঢাকায় । রাজনীতি, শিল্প সংস্কৃতি সব এই ঢাকায় । গানে কথায় সিনেমা নাটকে শুধু ঢাকাকেই দেখতাম । বাংলার যত ইতিহাস সবকিছু যেন এই ঢাকাকে কেন্দ্র করে । জীবনে বড় হতে চাইলে ঢাকায় যেতেই হবে- এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল আমার । নিজে ইতিহাস গড়তে পারি বা না পারি, ঢাকায় থাকলে অন্তত ইতিহাসের পথপরিক্রমা নিজ চোখে দেখা যাবে- এই ছিল ফ্যাসিনেশানের মূলকথা ।
এইভাবে ভাবতে ভাবতে ঢাকার প্রতি একটা সুপ্ত ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল । সেটা আজও আছে । ঢাকায় অন্তত 'সবকিছু' পাওয়া যায় । জুতোসেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবকিছু করা যায় । যা ইচ্ছা তা খাওয়া যায় । পকেটে যত টাকাই থাকুক তত টাকারই কিছু না কিছু কিনে জীবন চালানো যায় ।
.
কিন্তু দিনকে দিন অবস্থা যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে হয়তো ঢাকায় আর ইতিহাস সৃষ্টি হবে না । এমনিতেই ঢাকা এখন পৃথিবীর বসবাস অযোগ্য নগরীর তালিকায় সবার শীর্ষে । জ্যাম, জলাবদ্ধতায় নাজুক অবস্থা । ঘর হতে একবার বের হলে হাসিমুখে বাসায় ফেরা যায় না । এখনই ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ঢাকা নিজেই 'ইতিহাস' হয়ে যাবে । পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদেরকে ঢাকার যে ইতিহাস বলতে হবে তা হলোঃ- একসময় ঐখানে ঢাকা নামে এক নগরী ছিল । সেখানে আমরা থাকতাম ।

মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ম্যায় হুঁ না !'

জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের যেমন সাহস দরকার, তেমনি সাহস দেয়ারও কেউ থাকা দরকার। ছোটবেলায় আমরা কীভাবে সাইকেল চালানো শিখেছিলাম? কোন সাহসে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিলাম দুই চাকার ওপর? সাহস যতটুকু ছিল নিজের ভেতর, তারচেয়েও বেশি ছিল এই বিশ্বাসটুকুতেঃ কেউ একজন পেছনে আছেন, পড়ে যাবার আগে ঠিকঠিক ধরে ফেলবেন । প্রথম সাতার কীভাবে শিখেছিলাম? কোন সাহসে অথৈ পানিতে লাফিয়ে পড়েছিলাম? নিজের সাহসের সাথে আরো যা ছিল তাহলোঃ যতই স্রোত থাকুক, কিংবা পানির গভীরতা যতই হোক, পেছনে কেউ একজন আছেন যিনি ঠিক সময়ে ধরে ফেলবেন ।
..
জীবনে অনেকগুলো পথ হয়তো একা একাই পার হওয়া যায়। কিন্তু কোন কোন পথে একা হাঁটতে মানুষের ভয় করে । নতুন কিছু শুরু করতে অথবা খুব বড় কিছু করতে গেলে কখনো কখনো মানুষের শুধু নিজের সাহসে কুলায় না । তখন মনের ভেতর এরকম একটা ভরসা খুব দরকার হয়- 'ভয়ের কিছু নেই, পড়ে যাবার আগে ধরে ফেলার জন্য পেছনে কেউ একজন আছে।' এরকম একটা কণ্ঠ খুব দরকার হয়- 'গো এহেড । কুছ পরোয়া নেহি... ম্যায় হুঁ না !'
.
(এই ভরসাস্থলটা যদি আমরা আমাদের স্রষ্টাকে বানাতে পারতাম তাহলে আর কথা ছিল না । কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা আসলে তা পারি না ।)

রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

মনে সুখ নাই !

আমাদের মনে সুখ না থাকার মূল কারণ হলোঃ আমরা সবসময় নিজের অবস্থাকে আমাদের আশেপাশের মানুষের সাথে তুলনা করি । এবং বেশিরভাগ সময়ই তার সাথে তুলনা করি, যে আপাতদৃষ্টিতে আমার চেয়ে এগিয়ে আছে । ফলে সবসময় নিজের ভেতর একটা অপ্রাপ্তির কষ্ট বয়ে নিয়ে বেড়াই । অবশ্য এই কাজটা করতে বাধ্য করে আমাদের চারপাশের মানুষ এবং তথাকথিত সমাজ । আমরা নিজের সুখ শান্তির চেয়ে অন্যেরা কী বলবে, কী ভাববে, তাতে গুরুত্ব দেয়া শুরু করি ।
হোয়াই নট? ক্লাস সিক্সে ওঠা বাচ্চাটাকে যখন সবাই জিজ্ঞেস করতে থাকে সে বৃত্তি পেয়েছে কিনা , তখন তার কাছে সেটাকেই একমাত্র পাওয়ার যোগ্য কিছু বলে মনে হয় । এসএসসি পরীক্ষার পর- ছেলের রেজাল্ট কী, এইচএসসির পর কোথায় চান্স পেলো, ভার্সিটিতে কোন সেমিস্টারের কী রেজাল্ট, মেডিকেলে পড়লে প্রফের রেজাল্ট কী, কবে পাস করে বের হবে, তারপর পাস করে বের হয়ে গেলে- কোথায় জব করছে এখন, হায়ার ডিগ্রি নিচ্ছে কিনা, নিলে কোন বিষয়ে, বিসিএস হয়েছে কিনা এবং শেষমেষ মোক্ষম প্রশ্ন 'বিয়ে কবে, বিয়ে করছেনা কেন'?!
...তারপর...পরবর্তী ধাপেঃ বাচ্চা কয়টা, বাচ্চার চেহারা কেমন, বাচ্চা কোথায় পড়ে, বাচ্চার রেজাল্ট কী? বয়স আরেকটু বাড়লে- চাকরিতে প্রমোশন হচ্ছেনা কেন? এইসব প্রশ্ন নিরন্তর তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমাদের সবাইকে । আমরাই একে অপরকে এইসব প্রশ্ন করি আর মনমত জবাব না পেলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দেই 'ও আচ্ছা' ।
.
এই অবস্থায় এই সমাজে এই সময়ে কিছুটা সুখে থাকার সম্ভবত একটাই উপায় আছে, সবাইকে বলে দিতে হবে- 'আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করোনা । আমি তোমাদের কেউ নই । আমি এই সমাজের কেউ নই ।'

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৫

বিসিএস পরীক্ষার্থী ডাঃ কানাই !

ডাঃ কানাই একজন বিসিএস পরীক্ষার্থী । এই উপলক্ষ্যে অনেক বছর পর তিনি কিছু অংক অনুশীলন করিতে মনস্থ করিলেন । বই খুলিবামাত্র তিনি দেখিলেন একটা বানর তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া প্রতি মিনিটে কিছুদুর উঠিতেছে আবার পরের মিনিটে নামিয়া যাইতেছে । ঐ বানর কতক্ষণে বাঁশের আগায় উঠিবে তিনি তাহা হিসাব করিয়া ফেলিলেন । পরক্ষণেই তিনি দেখিলেন একটা নেড়িকুকুর একটা পাতিশিয়ালকে ধাওয়া করিতেছে । ঐ কুকুর কতক্ষণে শিয়ালকে ধরিবে তাহাও হিসাব করিতে হইল । কিছুদূর অগ্রসর হইবামাত্র তাঁহার হাতে কলা ও লেবু ধরাইয়া দেওয়া হইল । বাঙালি কলা কিনিলো অনেক, ফলে কলাতে লাভ হইলো বটে কিন্তু লেবুতে ক্ষতি হইয়া গেল । কলা বেচা হইলেও রথ দেখা হইলো না । অতঃপর পা বাড়াইয়াই তিনি নিজেকে একটা ব্যাংকের ভেতর আবিস্কার করিলেন । ঐ ব্যাংকে কোন লোকজন নাই । ডাঃ সাহেবকে ব্যাংকের সমস্ত সুদের হিসাব করিয়া দিতে হইলো । রাস্তায় নামিয়া তিনি দেখিলেন রাস্তার কাজ চলিতেছে । রাস্তার আয়তন নিয়া ইঞ্জিনিয়াররা গলদঘর্ম!   ডাক্তার সাহেবকেই ঐ হিসাব করিয়া দিতে হইল । রাস্তার দুইপাশে কতগুলি গাছ লাগানো যাইবে তাহাও ডাক্তার সাহেবকেই বলিয়া দিতে হইলো । এতক্ষণে বেলা পড়িয়া গিয়াছে । ফলে তাহাকে বিদ্যুতের খাম্বা ও গাছের ছায়ার দৈর্ঘ্য নির্ণয় করিতে হইলো । ক্লান্ত দেহে চলন্ত ট্রেনে উঠিতে পারিলেন না বটে কিন্তু ট্রেনের গতিবেগ কত তাহা নির্ণয় করিয়া স্টেশন মাস্টারকে জানাইতে ভুল করিলেন না । শেষে তিনি নৌকায় উঠিয়া নদীর প্রস্থ এবং স্রোতের গতিবেগ নির্ণয় করিয়া মাঝির জীবন বারো আনা পর্যন্ত বৃথা প্রমাণ করিলেন । কুত্তা শিয়ালের দৌড় আর কলা বেঁচার হিসাব ডাক্তারিবিদ্যায় কী কাজে লাগিবে তাহা ভাবিতে ভাবিতে ঘরে ফিরিয়া দেখিলেন বানর এতক্ষণে তৈলাক্ত বাঁশের আগায় উঠিয়া বসিয়াছে ।
বানর নাহয় উঠিয়াছে, কিন্তু এই বাঙালি জাতি তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া কবে আগায় উঠিবে- যারপরনাই চিন্তিত হইয়া এইবার ডাক্তার কানাই নবোদ্যমে তাহা হিসাব করিতে লাগিলেন । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডাঃ সাহেব তাহার হিসাব মিলাইতে ব্যর্থ হইয়াছেন এবং বাঙালি জাতি আদৌ কোনদিন তৈলাক্ত বাঁশের আগায় পৌঁছিবে কিনা তাহা লইয়া গুরুতর সন্দেহে পতিত হইয়াছেন ।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

কেউ বোঝে না !

ডিপ ইনসাইড - প্রত্যেক মানুষই চায়, অন্যেরা তাকে বুঝুক । অন্তত কেউ একজন তাকে ভালো বুঝুক । তার ছোট ছোট কষ্টগুলো অনুভব করুক । কেউ অন্তত একজন তাকে সমর্থন করে বলুক 'আসলেই তুমি অনেক কষ্টে আছো ' !
.
কিন্তু দিনশেষে সবাইকে হতাশ হতে হয় । দিনশেষে সবারই নিজেকে একলা মনে হয় । জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে গিয়ে সবারই একবার আক্ষেপ হয়- আহা ! এই পৃথিবীর কেউ আমাকে বুঝলোনা...
.
কিন্তু আক্ষেপ করে কোন লাভ নেই । এটাই বাস্তবতা । মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে রহস্যময় সৃষ্টি । প্রতিটি মানুষই আলাদা এবং ইউনিক । বাবা-মা-ভাই-বন্ধু-বউ-পোলা যেই হোক, একজন 'মানুষ' কে পুরোপুরি বোঝা আরেকজন মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব না ।

স্মৃতিকাতর মানুষের চোখ

স্মৃতিচারন এমন একটা অদ্ভুত ব্যাপার, এসময় মানুষ একই সাথে আনন্দ এবং দুঃখ পায় ! যখন কেউ ভালো কোনো স্মৃতি রোমন্থন করে, তখন সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শেষ করে এভাবে - আহা! কীসব দিন ছিল তখন আমাদের!! আবার যখন কোনো দুঃখের স্মৃতিচারন করে, তখনো শেষবেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে - আহ! কীসব দিন যে তখন আমরা কাটিয়েছি, ভাবা যায় না!!!
উভয় ক্ষেত্রেই স্মৃতিকাতর ব্যক্তির চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে ওঠে। অতীতের সুখ এবং বর্তমানের বেদনা কিংবা অতীতের কষ্ট আর বর্তমানের সুখ একাকার হয়ে এক অন্যরকম আলো তৈরি করে স্মৃতিকাতর মানুষের চোখের তারায়। একই সাথে আনন্দ এবং বেদনা খেলা করে সেখানে।

মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৫

পিশাচ শিক্ষক !

সবার জীবন সরলরেখায় চলে না । কাউকে কাউকে অনেক রকম প্রতিকুলতা, অনেক রকম বিরুপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করে এগোতে হয় । কিন্তু মেডিকেল কলেজগুলোতে এমন কিছু কিছু শিক্ষক আছেন যারা অনেকটা পিশাচ মানসিকতা লালন করেন । কক্ষচ্যুত বা পিছিয়ে পড়া ছাত্রটিকে গর্ত থেকে তুলে আনার পরিবর্তে তাঁরা চেষ্টা করেন কীকরে তাকে আরো গভীর গর্তে ঠেলে দেয়া যায় । উঠে আসার চেষ্টা করলে তাঁরা উপরে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়ার বদলে ক্রমাগত ইট পাথর বালি ছুঁড়তে থাকেন । জীবনে উঠে আসার এই স্বপ্নীল সময়টাতে তারা একেকজন ছাত্রের জন্য হয়ে ওঠেন জীবন্ত বিভীষিকা । হাবুডুবু খেতে থাকা ছাত্রটির জন্য চেনা পথে ফিরে আসার একটা সুনির্দিষ্ট পথ বাতলে না দিয়ে তারা বরং নিত্য নতুন ফন্দি আঁটতে থাকেন, কীকরে পরিস্থিতি আরো জটিল করা যায় । কীকরে ছাত্রদের আরো বেশি নাস্তানাবুদ করা যায় । পিছিয়ে পড়া একেকজন ছাত্রছাত্রী যেন ঐসব শিক্ষকের নিরানন্দ জীবনে এক অফুরন্ত বিনোদনের উত্‍স ! তারা এইসব ছাত্রছাত্রীকে গালমন্দ করে নানারকম জটিলতায় ফেলে পৈশাচিক আনন্দ পেয়ে থাকেন ।
.
শিক্ষক সবসময় শ্রদ্ধার পাত্র । কিন্তু এরকম কিছু কিছু শিক্ষকের ক্ষেত্রে শ্রদ্ধাটা মেকি হয়ে যায় । ওটা আর সবার মত হৃদয়ের ভেতর থেকে উঠে আসে না ।

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫

এতদিনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে !

একই বাঘের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে সবাই । অদ্ভুত ব্যাপার হলো, নিজের ঘরে না ঢোকা পর্যন্ত কেউই বাঘকে থামানোর কথা বলে না । বাঘ যখন অন্যজনের ঘরে ঢুকে ছেলেপুলে গিলে খায়, তখন বাকিরা মজা দ্যাখে । কিন্তু বাঘ যখন একবার রক্তের স্বাদ পেয়ে যায়, তখন সে কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না ।
এতদিন বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করা হচ্ছিল । এখন যেহেতু তাদের লম্ফঝম্প কমে গেছে, বাঘ এবার আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের ওপরেই হামলে পড়েছে । আর অমনি চিত্‍কার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে । থামাও থামাও ! ক্রসফায়ার অসাংবিধানিক, একে বন্ধ করো ! বন্ধ করো ! কিন্তু একথা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়, আজ যদি আবার বিরোধী দলের কাউকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় ফজলে নূর তাপস সাহেব তার প্রতিবাদ করবেন না ।
.
তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এতদিন সরকারবিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল, কেউ টু শব্দটি করে নাই । তারপর গ্রেপ্তার করা হলো প্রবীর সিকদারকে । বেচারা ঘরের লোক । এইবার আর চুপ করে থাকা যায় না । এতদিনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে ! ৫৭ ধারা সংবিধান পরিপন্থি । উহা বাতিল করিতে হইবে !
.
বড়ই হিংসুটে বাঙাল জাত । ইহাদের কে বুঝাইবে যে দড়িছেড়া গরু শুধু পরের ক্ষেতে মুখ দিয়াই থামিয়া থাকে না । সুযোগ পাইলে নিজ মনিবের বাগানও সাবাড় করিয়া দেয় ।

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

পতিতা আমদানি এবং প্রকাশ্য প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য কী?

বিকৃতমনা নাস্তিক ব্লগার খুন অথবা ইন্ডিয়ান পতিতা আমদানি নিয়া কথা বলার রুচি নাই । কিন্তু এই ব্যাপারগুলা নিয়া এইটুকু না বলা অপরাধ হবে যে, এইগুলা আসলে কোনভাবেই আলাদা বা বিচ্ছিন্ন বিষয় না । এইগুলা একটা মাস্টারপ্ল্যানের অংশ । সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের বিশ্বাসে আঘাত করে উগ্রতার দিকে ঠেলে দেয়া । তারপর জঙ্গিবাদ উত্থানের ধুয়া তুলে ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই ভূখণ্ডের ওপর হামলে পড়া, খবরদারি করা অথবা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা ।
বাংলাদেশ নব্বই ভাগ মুসলমানের একটা দেশ । কী কারণে একটা গোষ্ঠি বারবার মুসলমানের ঈমান আক্বিদা আবেগ অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার চেষ্টা করছে? ব্যাপারটা এরকম, আপনি আমার বাপ মা তুলে যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করতেই থাকলেন । আমি ভদ্র মানুষ, আমি আপনার বাপ-মা কে গালি দিতে পারি না । তাই বলে সহ্য করতেও তো পারি না । একসময় ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে আমি আপনারে একটা ঘুষি দেব, আর অমনি আপনি আমাকে সহিংস জঙ্গি বলে প্রচার করবেন । এই খেলাটাই খেলার চেষ্টা হচ্ছে এখানে ।
নাস্তিক ব্লগারদের উস্কে দিয়ে, বিরিয়ানি দিয়ে, তিন স্তরের সাপোর্ট দিয়ে আল্লাহ রসুলকে নিয়ে অশ্লীল গালাগালি করানো হবে, তারপর মই সরিয়ে নেয়া হবে । কেউ না কেউ গিয়ে তাদের কুপিয়ে আসবে । ব্যস, বাংলাদেশ যে জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে সেইটা প্রমাণিত হইলো ।
নতুন করে পতিতা আমদানি এবং প্রকাশ্য প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য কী? বাঙালি মুসলমানের ঈমান নিয়া খেলা করা? দাড়ি টুপি ওয়ালারা রাস্তায় নামবে, আপনারা টিয়ার শেল মারবেন , মোল্লারা আত্মরক্ষার্থে ইট ছুঁড়বে , আপনারা গুলি করবেন । বাংলাদেশে যে জঙ্গিদের উত্থান ঘটছে সেইটা প্রমাণ হয়া গেল ! সবাইরে কইবেন, এই ঘুমা ঘুমা, জুজু আইতাছে !
এই খেলা শুরু হয়েছে জেএমবি দিয়ে সেই ২০০৪ থেকে । ৬৪ জেলায় একযোগে বোমা ফাটায় কোন বেকুবে? এতে কার লাভটা কী ছিল? ঐভাবে কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারে? লাভের লাভ ছিল একটাই, বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দেশ বলে প্রচার করা ।
যারা ঘরপোড়া আগুনে আলু পোড়া খাবার চেষ্টা করছেন তারা সতর্ক হোন। আপনেও যে পুড়বেন না তার নিশ্চয়তা কী? কথায় বলে, নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না ।
আমরা শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশি । কিন্তু কেউ আমাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে আলুপোড়া খাবে সেটা আমরা হতে দিতে পারি না । সেজন্য এই অপরাজনীতির কুশীলবদের বিরুদ্ধে এখনই জেগে উঠতে হবে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষকে ।

শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০১৫

পরিবর্তন !

এমন বর্ষণে আজও হয়তো কেউ কেউ উদাসী হয়
হয়তো কেউ কেউ হয়ে ওঠে রবিঠাকুরের চেয়ে বড় কবি
আদার ব্যাপারীও হয়তো ব্যস্ত হয়ে পড়ে জাহাজের খোঁজে
কিংবা, উলুবনে ছড়িয়ে থাকা মুক্তোর মালা হাতে নিয়ে
হয়তো আনমনে খেলা করে বানরের দল ।
.
অথচ কতটা বদলে গেছি আমি ও আমরা ! ভাবা যায়?
বর্ষণের আওয়াজ আজকাল আমাদের কাছে নিয়ে আসে শুধুই-
নির্বিঘ্ন নিদ্রার আহ্বান । নাসিকাগর্জনের সমানুপাতিক হারে
যে কেউ পরিমাপ করে নিতে পারে বৃষ্টির পরিমাণ
এবং
দখিনা বাতাসের শীতলতা । জানো তুমি হৃদিতা?
কেন এবং ঠিক কবে থেকে আমি-
এমন হলাম?

মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৫

নিঃসঙ্গ সেনাপতি

কথা ছিল - এইসব রাত্রিতে জন্ম নেবে প্রত্যাশিত বিপ্লবের মহীরুহ
কিংবা, অন্তত বিপ্লবের চারাগাছ । কথা ছিল- এইসব রাত্রিতে
অন্তত প্রচন্ড যুদ্ধ হবে বর্তমানের সাথে
অনাগত ভবিষ্যতের নির্বিঘ্নতার প্রয়োজনে ।
.
অথচ আজো প্রতিপক্ষের দেখা নেই,
আজো নির্ধারিত হয়নি আমাদের কুরুক্ষেত্র
রক্ত এবং অশ্রুর অভাবে আজ অবধি
একটিবারও সেচ দেয়া হয়নি রক্তজবার শিকড়ে ।
এখন এই রাত্রিতে, রণ দামামার আওয়াজ কিংবা উড়ন্ত ধুলোর বদলে
কী এক অদ্ভুত ঘ্রাণ উড়ে আসছে পুবাল হাওয়ায়
আমি এক নিঃসঙ্গ সেনাপতি, ঢুলু ঢুলু চোখে বসে আছি
একজন
সহ-অধিনায়কের অপেক্ষায় ।

বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৫

বুলেটের প্রেম !

যদি একদিন চলতি পথে হাঁটতে হাঁটতে
তাজা বুলেটের সাথে জড়িয়ে পড়ি গভীর ভালোবাসায়-
স্টেনগান কিংবা কালাশনিকভের ব্যারেল পেরিয়ে
ভালোবেসে বুকে এসে যদি ঘুমিয়ে পড়ে হঠাৎ
একটি বুলেট;
ভেবোনা চলে গেছি স্বার্থপরের মত; হয়ে গেছি পর
ভেবোনাকো ভেঙ্গে গেছে স্বপ্নের ঘর ।

তোমার অপেক্ষায় অজস্র মহাকাল আমি জেগে রবো
সময়ের ওপারে-
কোন এক অনন্ত উদ্যানে ।

বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০১৫

শকুন!

ছোটবেলায় একবার শকুন দেখেছিলাম ।
নদীর ধারে পড়ে থাকা মরা মহিষটার শরীরে হামলে পড়েছিল
একঝাঁক শকুন শকুনি । দূর হতে আমি এক মুগ্ধ বালক
শকুনের চোখে দেখেছিলাম-
পৈশাচিক তৃপ্তি !
.
তারপর আমি শকুন দেখেছি আরো অনেক অনেক ।
কলেজ ভার্সিটি মেডিকেল ক্যাম্পাসে, রাস্তায়, অলিতে গলিতে,
রাজশাহী রংপুর চিটাগাং এবং
এই ঢাকায় ।
.
তাছাড়া আজকাল পত্রিকা খুললেই চোখে আসে শকুনের রঙচঙা ছবি
বিলবোর্ড রেডিও টেলিভিশন সবখানে শকুনের জয় জয়কার ।
মরা জাতির লাশ খুবলে খাচ্ছে একপাল সুদৃশ্য শকুন
আর আমি এবং আমরা ক্ষুধার্ত শকুনের উদর পূর্তির প্রয়োজনে-
তিনবেলা ঠিকঠাকমত খেয়ে এবং ঘুমিয়ে- ক্রমাগত হৃষ্টপুষ্ট করে নিচ্ছি-
আমাদের শরীর ।

সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫

ক্যারি অন পুনর্বহালের দাবি

মেডিকেল স্টুডেন্টরা ইতোপূর্বে যত আন্দোলন করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে যৌক্তিক আন্দোলন হচ্ছে চলমান 'ক্যারি অন পুনর্বহাল' আন্দোলন । মেডিকেলের একেকটা পরীক্ষায় লিখিত(২ পার্ট), ভাইভা(২ বোর্ড), এমসিকিউ, অসপি, প্রাক্টিকাল, ক্লিনিক্যাল(২ পার্ট) ইত্যাদি মিলিয়ে অনেকগুলো পার্ট পরীক্ষা দিতে হয় । এবং পাশ করার জন্য প্রতিটা সাবজেক্টের পরীক্ষার প্রতিটি অংশে আলাদা আলাদা ভাবে ৬০% মার্কস পেতে হয়।
তো কোন কারণে যদি এতসব পরীক্ষার কোন একটি অংশে কোনভাবে ৬০% এর কম মার্ক পায় তাহলেই ফেইল । এতদিন সিস্টেম ছিল কোন সাবজেক্টে ফেল করলেও সেই শিক্ষার্থী পরবর্তী ইয়ারের সকল ক্লাসে অংশগ্রহন করতে পারতো । এই সময়ে অনুষ্ঠিত পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে পাশ করলেই চলতো। ইয়ার লস হতনা । এখন এই সিস্টেম বাতিল করার অর্থ হলো কোন একটি অংশে ফেল করলেই এক বছর লস! নিজের ব্যাচ থেকে ছিটকে পড়া ! এই সিদ্ধান্ত মেডিকেল স্টুডেন্টদের ওপর কী পরিমাণ মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে, কী পরিমাণ হতাশা ছড়াবে সেটা যে কেউ অনুমান করতে পারেন । এমনিতেই চলমান সিস্টেমের চাপে পিষ্ট হয়েই প্রতিবছর কয়েকজন করে মেডিকেল ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে । নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী 'ক্যারি অন' বাতিল হলে হয়তো সারা বছরই আমাদের শুনতে হবে- মেডিকেল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর । কে নেবে তার দায়? যার হারাবে তাঁর তো সবটুকুই হারাবে । এভাবে একজন ছাত্রছাত্রীও যদি হারিয়ে যায়, কেউ কি তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? 

----

'ক্যারি অন' সিস্টেম বাতিলের আরেকটা ফল দাঁড়াবে- গরীবের ছেলেদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে । স্বাভাবিকভাবে এক দিন লস না করেও এমবিবিএস পাস করে বের হতে ইন্টার্নশিপ সহ সাড়ে ছয় বছর সময় লাগে । ক্যারি অন বাতিলের পরে অনেকের জন্যে এই সময় গিয়ে দাঁড়াবে গড়ে আট থেকে সাড়ে আট বছরে । এই দীর্ঘ সময় লেখাপড়ার খরচ চালাতে নাভিশ্বাস উঠে যাবে গরীব বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। ডাক্তার হয়ে পরিবারের হাল ধরবে, বাবা মাকে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি থেকে একটু রেহাই দেবে, সেই সৌভাগ্য হবেনা ছেলেটির। মেডিকেল কলেজ হতে যখন সে এমবিবিএস সার্টিফিকেট খানা হাতে নিয়ে বের হবে, তখন জাতি পাবে চোখে শর্ষেফুল দেখা একজন জরাজীর্ণ তরুণ । তার ইঞ্জিনিয়ারিং-ভার্সিটি পড়ুয়া বন্ধুরা ততদিনে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে 'জব'-এ ঢুকে যাবে... স্টার্টিং এ পাবে......
এবং একটা সময় গরীব-মধ্যবিত্তের মেধাবী ছেলেরা আর মেডিকেল কলেজমুখো হবার সাহস করবে না। তখন অনেকের জন্যে ডাক্তার হওয়ার 'এইম ইন লাইফ' হয়ে দাঁড়াবে 'গরীবের ঘোড়া রোগ' !

ছেলেদের কথা বললাম , কিন্তু ডাক্তার মেয়েটি ? ওহ ! তার বয়সও কিন্তু তখন প্রায় ২৭-২৮ ! যাহারা ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারে বিবাহের পিড়িতে বসিয়া যাইবে তাহাদের কথা বলিবার দরকার নাই । কিন্তু যাহারা ঐ পথ ধরিবে না তাহারা যে কী করিবে, তাহা আমার বলিতে পারার কথা নয় ।

রবিবার, ২ আগস্ট, ২০১৫

স্থিতিজড়তা

এ এক অদ্ভুত জীবন
ভয়ংকর স্থিতিজড়তা আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাকে ।
কত নার্গিস কোমেন আইলা বয়ে গেল তবু
সমস্ত আবেগ হাতের মুঠোয় নিয়ে-
আদিম স্থানুর মত স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি
পুরনো জায়গায় ।
.
কে আনবে পরিবর্তন?
এই নিস্তরঙ্গ জীবনে নব চাঞ্চল্য আনবার মত-
কার হাতে আছে জীয়ন কাঠি?

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

যুগান্তরের অপসাংবাদিকতা

যুগান্তরের গোষ্ঠি সম্পূর্ণ পাগল হয়ে গেছে । তারা তাদের 'মালিকের' নিজ দোষে পাওয়া অপমানের জ্বালা কোনভাবেই ভুলতে পারছে না । সাংবাদিকতার মুখে চুনকালি মেখে সবরকম নিয়মনীতি ভঙ্গ করে তারা কোমর বেঁধে নেমে পড়েছে ডাক্তারের নামে কুৎসা- কাহিনী লিখতে ।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, একজন এমপি কী করে দলবল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলের মত ব্যস্ত হাসপাতালের ইমার্জেন্সি বিভাগে ডাক্তার- রোগী সবার চেয়ার দখল করে বসে থাকতে পারেন? তিনি কীরকম জনপ্রতিনিধি? সব আলোচনা শুরুর আগে এই প্রশ্নের জবাব দিতে হবে ।
তাঁকে বলা হয়েছে- 'আপনি ডিরেক্টরের রুমে অপেক্ষা করুন, এখানে এত লোক থাকায় জরুরী রোগীদের চিকিৎসায় ব্যাঘাত হচ্ছে।' এর বিপরীতে তিনি কী করেছেন? তিনি তাঁর 'পরিচয়' তুলে ধরেছেন । তিনি এই সেই । তার মানে তিনি 'এই-সেই' বলে তার জন্য জরুরী রোগীদের চিকিৎসা বন্ধ রেখে ডাক্তারকে ঘোড়ার ঘাস কাটতে যেতে হবে? একজন 'জনপ্রতিনিধির'(!) এই কাণ্ডজ্ঞান ? ইমার্জেন্সি রুম ছেড়ে ডিরেক্টরের রুমে বসতে বলাটা তাঁর 'অপমান' হয়ে গেছে?
যুগান্তর সম্পাদক মহিলা এমপির সামনেই তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা নারী ডাক্তারকে তুলে নিয়ে যাওয়ার, দেখে নেওয়ার, বদলি করার হুমকি দিয়েছে । শুধুমাত্র ডাক্তার একজন 'নারী' ছিলেন বলেই হয়তো গায়ে হাত তোলে নাই । তিনি কীরকম এমপি, যার সামনে একজন নারী ডাক্তারকে অপহরণের হুমকী দেয়া হয়?
এবার আসি তাদের হলুদ সংবাদ প্রসঙ্গে । তারা লিখেছে- ''ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এক অভদ্র চিকিৎসকের কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে বিস্মিত হয়েছেন রোগী ও রোগীর স্বজনরা। জরুরি বিভাগে কর্মরত একজন নারী চিকিৎসকের এ ধরেনের অসৌজন্যমূলক, রূঢ় আচরণে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন উপস্থিত লোকজন। ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগী ও তাদের স্বজনরা ওই নারী চিকিৎসক চরম দুর্ব্যবহারে তার সনদ বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।''
আসলে কোন রোগী কিংবা রোগীর স্বজনই বিস্মিত কিংবা বিক্ষুব্ধ হয়নি । কারণ, যুগান্তর সম্পাদকের একপাল সাঙ্গপাঙ্গের ভীড়ে সেখানে রোগী অথবা রোগীর স্বজনরা ভিড়তেই পারেননি । আর ডাক্তার কথা বলেছেন রোগীদের স্বার্থে, সুতরাং রোগীদের বরং ঐ কাণ্ডজ্ঞানহীন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধেই বিক্ষুব্ধ হবার কথা । আসলে রোগী কিংবা রোগীর স্বজন নয়, বিক্ষুব্ধ হয়েছেন যুগান্তরের সাংবাদিকরা । এমপির সাঙ্গপাঙ্গরা । কিন্তু সেটা বলার সাহস তাদের নাই । মুহূর্তেই তারা নিজেরাই হয়ে গেছে - 'রোগী ও রোগীর স্বজন !!' এরপর তারা নিজেদেরকে রোগীর স্বজন হিসেবে ভেবে নিয়ে তাদের মনের ক্ষোভ ঝেড়ে ডাক্তারদের সম্পর্কে তারা এতদিন ধরে যেসব কথা বাজারে ছড়িয়ে এসেছে সেগুলোর সবই ঐ নারী চিকিৎসকের ওপর চাপিয়েছে ।
এ ছিল গতকালের কথা । এরপরের দিন অর্থাৎ আজকে তারা আবার বানিয়ে বানিয়ে ইচ্ছেমত ডাক্তারের ফ্যামিলিয়াল ম্যাটার নিয়ে 'সংবাদ' (!!) লিখেছে !! কতটা নিচুমনের হলে একজন সম্পাদক অথবা এমপি এই কাজ করতে পারেন ভেবে অবাক হই । আর হ্যা, এই ঘটনার মাধ্যমে আরো একবার যুগান্তর পত্রিকার অপসাংবাদিকতা জনগনের চোখে স্পষ্টভাবে ধরা দিল । আর বোঝা গেল, যতদিন আমাদের দেশে এরকম নিচুমনের জনপ্রতিনিধি কিংবা সম্পাদক থাকবে, ততদিন মেধাবীরা এই দেশে কাজ করার পরিবেশ পাবে না ।

রবিবার, ২৬ জুলাই, ২০১৫

হাহাকার !

আমারও তো ইচ্ছে হয়
অন্তত একটা পায়রা পোষবার ।
মুক্ত স্বাধীন পায়রা উড়বে উড়ুক অনন্ত আকাশে-
আমি শুধু এইটুকু চাই
লালচে পাখায় ভেসে গোধুলী বেলায়
যেন সে ঠিক ঠিক ফিরে আসে-
পুরনো কামরায় ।
.

তোমাদের অভিধানে পায়রা নাকি শান্তির প্রতীক ? অথচ
পোষা পায়রা বিনে কতটা বুভুক্ষু হাহাকার জমছে প্রতিদিন আমার হৃদয়ে-
সে খবর কি তোমরা কেউ
নিয়েছো কোনদিন?

শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০১৫

দিবাস্বপ্ন

বাইরে বৃষ্টি তুমুল তবু
রিকশার হুড বেয়ে কাঁধের ওপর নেমে আসা ক'ফোঁটা বৃষ্টিজল
অচেনা কারো অশ্রু বলে ভ্রম হয় ।
এইসব দিবাস্বপ্ন কেন আসে কে জানে ! অথচ
আমার তো বেশ জানা আছে রূঢ় বাস্তবতাঃ মা ছাড়া
একফোঁটা অশ্রু ঝরাবার মত-
এ বিশ্ব চরাচরে আমার আর কেউ নেই ।
কেউ নেই ।

বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৫

হতচ্ছাড়া ইঁদুর !

সব দোষ হচ্ছে গিয়ে ঐ হতচ্ছাড়া ইঁদুরের। ঐ ব্যাটাই যতসব নষ্টের মূল !
হৃদয় বেহালার লাল নীল সুতোগুলো কেটে দিয়ে চলে গেছে
কাল রাতে,
অগোচরে ঘুমের ভেতর ।
কেউ দ্যাখেনি তাকে তবু আমি বেশ জানি
হতচ্ছাড়া ইঁদুরটাই যতসব নষ্টের মূল !
ক্ষতবিক্ষত করে দিয়ে গেছে- কতগুলো অচেনা হৃদয়তন্ত্রী-
বেহালায় আজ তাই- আমি- তুলতে পারিনি কোন সুর;
না ভালোবাসা, না বিরহের ।

মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০১৫

দত্তক

জাতীয় পর্যায়ের একটি এবং স্থানীয় দুইটি পত্রিকার সাংবাদিক এসেছে শামীমের সাক্ষাত্‍কার নিতে ।
-আপনি বাচ্চাটাকে কোথায় পেলেন?
-আমি নিয়মিত মর্নিং ওয়াকে বের হই । আজও তেমনি বের হয়েছিলাম ।
শামীম গুছিয়ে বলার চেষ্টা করে । পত্রিকায় শামিমের ছবিসহ ছাপা হবে । শিরোনাম হয়তো থাকবে 'একজন শামীমের মহানুভবতা' বা এরকম কিছু । সুতরাং যতটা সম্ভব গুছিয়ে সুন্দর করে বলতে হবে ঘটনাটা । যেন মানুষের হৃদয় স্পর্শ করে যায় ।
গলা খাকারি দিয়ে শামীম বলে যায়,
-আমি যখন বের হয়েছিলাম তখন ভোর ছয়টা । দুএকজন মর্নিং ওয়াক করা লোক ছাড়া রাস্তায় কেউই ছিলনা । মেডিকেল কলেজ মাঠের পাশে যে পায়ে চলার পথটা গিয়েছে , ওটা দিয়ে হাঁটছিলাম । হঠাত্‍ কানে এলো শিশুর কান্নার মত একটা অস্ফূট শব্দ । আমি থমকে দাঁড়ালাম । একবার মনে হলো , হ্যালুসিনেশন হবে হয়তো । কিন্তু তবু কৌতুহল দমন করতে পারলাম না । ভালো করে কান পেতে আবার শোনার চেষ্টা করলাম । আবার শোনা গেল শব্দটা । বোঝার চেষ্টা করলাম কোনদিক থেকে শব্দটা আসছে । আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম , কিছুই নেই । তারপর খেয়াল করে দেখলাম, কয়েক গজ দূরে একটা ছোট ঢিবির মত মাটির স্তুপ । আবার কান্নার শব্দ এলে মোটামুটি নিশ্চিত হলাম শব্দটা ঐ ঢিবির কাছে থেকেই আসছে ।
সতর্ক পায়ে ঢিবির দিকে এগিয়ে গেলাম । তখনই চোখে পড়লো চটের বস্তাটা । বাচ্চাটার পুরো শরীর চটের বস্তার ভেতরে ছিল , শুধু মাথাটা ছিল বাইরে । আমি ওভাবেই তুলে নিয়ে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে এসেছি ।
-এই মুহুর্তে আপনার অনুভূতি কী?
-আমি খুবই খুশি যে আমি একটা জীবন রক্ষার জন্য কাজ করতে পেরেছি । সেই সাথে আমি অনেক দুঃখ পেয়েছি , মানুষ কীভাবে এতটা নিষ্ঠুর হয়? এমন একটা ফুটফুটে শিশুকে কীকরে এভাবে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে ফেলে যায়? এরা কি মানুষ?
-এখন কী অবস্থা শিশুটির ?
-আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি , বাচ্চার অবস্থা এখন অনেক ভালো । ডাক্তাররা অনেক হেল্প করছেন । ইন্টার্ণ ডাক্তাররা নিজেদের টাকায় সম্পূর্ণ বিনাখরচে শিশুটির চিকিত্‍সার ব্যবস্থা করেছেন । আর তাছাড়া আমি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি । কোনকিছুর প্রয়োজন হলে আমি তত্‍ক্ষনাত্‍ সেটার ব্যবস্থা করছি । শিশুর জন্য যা লাগে আমি সবকিছু করবো ।
-হাসপাতাল থেকে ডিসচার্জ করলে বাচ্চাকে নিয়ে কী করবেন?
-সেটা এখনো ভাবিনি । তবে ভালো কোন দম্পতির কাছে দত্তক দেব ।
-আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ।
-আপনাকেও ধন্যবাদ ।

********
হোস্টেলে ফিরে অগোছালো বিছানাতে শরীর এলিয়ে দিল শামীম । সারাদিন বেশ ধকল গেল বলা চলে । তবে বাইরের চেয়ে ভেতরের ধকলটাই ছিল বেশি । বানানো কাহিনীটা ভালোই বিশ্বাসযোগ্য করে বলতে পেরেছে সে । বিকেলের দিকে এক নিঃসন্তান দম্পতি যোগাযোগ করেছিল শামীমের সাথে । দুজনেই শিক্ষক । তাঁরা বাচ্চাটিকে দত্তক নিতে চান ।
শামীম রাজি হয়েছে । এমন দম্পতির কাছে হয়তো ভালো থাকবে বাচ্চাটি । হয়তো একদিন সে মানুষের মত মানুষ হবে ।
দত্তকের কথা পাকা হবার পর থেকে বুকটা খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে শামীমের ।
সবাইকে মিথ্যা কাহিনী শুনিয়েছে বটে, কিন্তু এ যে তার নিজের সন্তান ! যে ভুল সে করে ফেলেছে তার জন্য হয়তো দুনিয়া আখেরাতে শাস্তি পেতে হবে । অথবা তওবা করে ক্ষমা চাইতে থাকলে আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন মাফ করেও দিতে পারেন । কিন্তু 'ভুলের' ফসল কিংবা 'অবৈধ' যাই হোক, নিজের সন্তানকে মেরে ফেলার মত অতটা পাষাণ এখনো হতে পারেনি শামীম । ফেলে দেয়ার পরেও তাই আবার কুড়িয়ে নিয়ে এসেছে ।
দত্তকের ধারণাটা হঠাৎ করেই মাথায় আসে শামীমের । অন্তত এটুকু সান্ত্বনা থাকলো- নিজের কাছে না থাকুক, অন্য কোথাও হলেও তার সন্তান বেঁচে থাকবে পৃথিবীর বুকে ।

বৃহস্পতিবার, ২ জুলাই, ২০১৫

আবদার

-এই রিকশা যাইবা?
-যামু ।
-কত?
-রোযা রমজানের মাস, ঈদের বাজার, ন্যায্য ভাড়া দিয়েন ।
-পরে আবার ক্যাচাল করবানাতো?
-না ভাই, আপনেরা আমারে ঠকাইবেন না, হেই বিশ্বাস আমার আছে ।
ঈদে কিছু বাড়তি ইনকামের আশায় ঢাকায় এসেছে আব্বাস । পথঘাট সব যে ভালো চেনে তা নয় । যদিও গতবছরও এসেছিল সে । দিন পনেরো রিক্সা চালিয়ে কিছু টাকা নিয়ে ঈদের আগের দিন বাড়ি ফিরে গিয়েছিল । নিউমার্কেট থেকে দেখে শুনে বড় ছেলেটা আর কোলের মেয়েটার জন্য জামাকাপড় নিয়ে গিয়েছিল ।
এবারও সেই আশাতেই ঢাকায় আসা আব্বাসের । কয়েকটা দিন একটু বেশি কষ্ট হলেও বাচ্চাগুলো আর বউটার মুখে ঈদের দিন যদি একটু হাসি ফোটাতে পারে, সেটাই আব্বাসের জন্য চরম আনন্দ ।
আব্বাস গ্রামেও রিক্সা চালায় । কিন্তু গ্রামে রিক্সা চালিয়ে যা ইনকাম তা দিয়ে কোনরকম দিন গুজরান করা যায়, ঈদে-বরাতে বাড়তি খরচ করা যায় না । সেজন্যেই ঈদের আগে শহরে চলে আসে সে । ভাড়া নিয়ে সে কারো সাথে কোন ক্যাচালে যায় না । আব্বাস দেখেছে, যারা যাত্রীদের সাথে ক্যাচাল বাঁধায় তারা যে ভাড়া বেশি পায় তা নয় । বরং যাত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করলেই ভাড়া বেশি পাওয়া যায় । খুশি হয়ে অনেকে ভাংতি টাকা ফেরত নেয় না । কোন যাত্রী যদি অযথা মেজাজ গরম করে, আব্বাস নরম গলায় বিনয়ের সাথে বলে- স্যার আপনারা দুই চার টাকা বেশি না দিলে আমরা কই যামু?
আব্বাসের বিশ্বাস, ভদ্রলোকেরা তাঁকে ঠকাবেন না । আর কেউ যদি ঠকায় তাহলে আল্লাহ তায়ালাই তার শাস্তি দিবেন । আল্লাহ চাইলে অন্য কোন ভাবে আব্বাসকে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেবেন । বাস্তবেও আব্বাস অনেকবার এর প্রমাণ পেয়েছে ।
রিকশা চালিয়ে যাচ্ছে আব্বাস । রিকশায় বসে আছে এক ভদ্রলোক আর তার পাঁচ ছয় বছর বয়সের ছেলে । টুকটুক করে কথা বলছে তারা । খুব মনোযোগ দিয়ে সেসব কথা শুনছে আব্বাস । বাড়ির কথা মনে পড়ে যায় আব্বাসের । বাড়িতে তার ছেলেটা এখন কী করছে? নিশ্চয়ই মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করছে । আব্বাসের ছেলের বয়স দশ বছর । আবির । গ্রামের স্কুলে ক্লাস ফাইভে উঠেছে এবার । খুবই ভালো ছেলে । সবসময় আব্বাসের কথা শোনে । কোন কথার অবাধ্য হয় না । এমন লক্ষ্মী ছেলে পেয়ে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হয় আব্বাসের। প্রতিদিন সে ছেলেকে রিক্সায় করে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে আসে । ছেলে রিক্সায় বসে এদিক ওদিক তাকায়, আব্বাসের সাথে টুকটুক করে কথা বলে, কী যে ভালো লাগে তখন ! ছেলেটা এবার একটা ঘড়ি কিনে চেয়েছে আব্বাসের কাছে । অনেক দিন ধরেই বায়না করছিল, কিন্তু আব্বাসের উপায় ছিলনা । অভাবের সংসার, ঠিকমত ভাত কাপড়ই জোটেনা । সেখানে ঘড়ি কেনার টাকা কোথায় পাবে? নানা কথায় বুঝ দিয়ে রেখেছিল ছেলেকে । ঈদে কিনে দেবে বলে আশ্বাস দিয়ে রেখেছিল । ঈদ এসেই গেল প্রায়, আর তাছাড়া সামনে আবিরের বৃত্তি পরীক্ষা । ঘড়ি না হলে পরীক্ষার সময়ের হিসাব ঠিক রাখা কঠিন হয়ে যায় । যত কষ্টই হোক, এবার ঘড়ি কিনে দিতেই হবে ।
ঢাকায় এসে আব্বাস একদিন গিয়েছিল ঘড়ির দোকানে । দাম দস্তুর কেমন জানতে । ঘড়ির দোকানদার কেমন যেন তুচ্ছতাচ্ছিল্যের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল । আব্বাস অবশ্য তেমন কিছু মনে করেনি । লুঙ্গি গেঞ্জি পরা, গলায় গামছা বাঁধা একজন লোক যদি ঘড়ির দোকানে গিয়ে দাম জিজ্ঞেস করে, তারা অবাক হতেই পারে । কিন্তু কারও অবজ্ঞাকে পাত্তা দেয়না আব্বাস । একদিন পরেই ঈদ । চাঁদ রাতে বাড়ির পথ ধরবে সে। ছেলেটার জন্য একটা ঘড়ি কিনে নিয়ে যেতে হবে, এটাই শেষ কথা ।
*********
ঈদের ভোর । ধীর পায়ে বাড়ির দিকে হেঁটে চলেছে আব্বাস । মনটা ভীষণ খারাপ । কাঁধের ব্যাগটা যেন পাহাড়সমান । যতই বাড়ির নিকটবর্তী হচ্ছে ততই হার্টবিট বেড়ে যাচ্ছে আব্বাসের ।
সারারাত বাসে কাটিয়েছে । ক্লান্ত দেহে বাসের সিটে বসে ঘুমিয়েই পড়েছিল । আবিরের জন্য কেনা ঘড়িটা পাঞ্জাবির পকেটে রেখেছিল আব্বাস । সকালে যখন বাসের কন্ডাকটর ডেকে বললো যে তারা পৌঁছে গেছে, পকেটে হাত দিয়েই ছ্যাত করে উঠেছিল আব্বাসের বুক ।
ঘড়ি নেই পকেটে !
সিটের নিচে খোঁজাখুঁজি করেছিলো কিছুক্ষণ । কিন্তু পাওয়া যায়নি আবিরের জন্য কেনা ঘড়ি ।
আব্বাসের পাশের যাত্রী আগেই নেমে গিয়েছিল । যে দুএকজন তখনো নামেনি, তাদেরকে জিজ্ঞেস করেও কোন লাভ হলোনা । কেউ কিছুই বলতে পারলো না । আব্বাসের বুক খা খা করছে । ছেলেটা একটা আবদার করেছিল, সেটা পুরণ করতে পারলো না সে ! কী জবাব দেবে সে আবিরকে? ঐটুকু ছেলে, ঘড়ি হারিয়ে গেছে বললে বিশ্বাস করবে তো? বাবাকে মিথ্যাবাদী ভেবে বসবে নাতো?
ব্যাগের ভেতর নিজের একটা নতুন লুঙ্গি, বউয়ের জন্য একটা শাড়ি আছে । কিন্তু ছেলের জন্য কেনা ঘড়ি হারিয়ে ঐ দুটোকে এখন অনেক বড় বোঝা মনে হচ্ছে তার । ছোট ব্যাগটার ওজন যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে কয়েক হাজার টন ।
পা দুটোও খুব ভারী মনে হচ্ছে আব্বাসের । হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে তার । কষ্টের একটা দলা পাকানো স্তুপ যেন আটকে আছে গলার কাছে । এ এক অন্যরকম কষ্ট, কাউকে বোঝানো যাবে না ।
একজন 'পিতা'ই শুধু বোঝে, সন্তানের সামান্য আবদার মেটাতে না পারার কষ্ট ।

সোমবার, ২৯ জুন, ২০১৫

মেডি গল্পঃ 'ভুল'

‘সদ্যোজাত সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করলো পাষণ্ড মা !’ খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে সেদিন ‘মফস্বল’ পাতায় হঠাৎ আমার চোখ আটকে গিয়েছিল এই শিরোনামে ।
প্রতিদিন সকালবেলা পত্রিকা পড়ার সময় আমি চেষ্টা করি আমার জেলার কোন খবর থাকলে সেটাতে চোখ বুলিয়ে নিতে । দূরে থাকি, তবু নিজের জন্মভূমির প্রতি একটা আন্তরিক টান সবসময়ই অনুভব করি । দেখলাম, এই সংবাদ পাঠিয়েছে আমার জেলার সংবাদদাতা । তাছাড়া বেশ চাঞ্চল্যকর সংবাদও বটে । আগ্রহ নিয়ে পুরো সংবাদ পড়ে তো আমি একদম ‘থ’ ! এ যে রফিক ! আমাদের গ্রামের রফিক ! রফিকের নাকি ছেলে সন্তান হয়েছিল । সেই সন্তানকে জন্মের এক সপ্তাহ পরে হঠাৎ করেই গলা টিপে মেরে ফেলেছে রফিকের বউ সালমা !
ব্যস্ততার কারণে তখন রফিককে ফোন করা হয় নি । পরে ভুলেই গিয়েছিলাম । কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই খবর পেলাম, রফিকের বউও মারা গেছে ।
রফিককে সেদিন ফোন করেছিলাম । সান্তনা দিয়েছিলাম । যা হবার হয়ে গেছে ভেবে তখন আর রফিককে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করিনি । তাছাড়া ঐ অবস্থায় বেশি কিছু জিজ্ঞেস করাটাও ভালো দেখায় না ।
তারপর মাসখানেক কেটে গেছে । গতকাল হঠাৎ রফিকের ফোন পেলাম । জানালো, সে নাকি ব্যবসার কাজে ঢাকা এসেছে । কয়েকদিন থাকবে ।
রাতে সময় করে আমার চেম্বারে একবার আসতে বলেছিলাম রফিককে । রফিক এলো রাত দশটার দিকে । ততক্ষণে আমার আজকের সব রোগী দেখা শেষ হয়ে গেছে । কেন যেন রোগীর চাপও অনেকটা কম ছিল আজ । সহকারীকেও বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি ।
রফিকের কাছে ধীরে ধীরে পুরো ঘটনা শুনলাম ।
বছর তিন আগে সালমার সাথে বিয়ে হয় রফিকের । সালমা চেয়েছিল প্রথম বছরেই বাচ্চা নিতে । রফিকের অনিচ্ছাতেই কিছুটা দেরি । কিন্তু সালমা প্রতিদিন একবার হলেও বাচ্চার প্রসংগ তুলতো । কত পরিকল্পনা ! বাচ্চার নাম কী রাখবে, বাচ্চাকে কী খাওয়াবে, কীভাবে মানুষ করবে সারাদিন যেন এইসব নিয়েই ভাবতো সালমা ।
অথচ সেই সালমার কী হয়ে গেল ! ডেলিভারির কয়েকদিন পর থেকে সালমার মেজাজ অল্পতেই চটে যেতে লাগলো । দেখা গেল, বাচ্চার দিকেও তার অতটা নজর নেই তার । ঠিকমত বুকের দুধ খাওয়ায় না । বাচ্চা কান্নাকাটি করলেও ভ্রুক্ষেপ করেনা । আচার ব্যবহারেও নাকি অনেক পরিবর্তন এসেছিল । সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল । কখনো কখনো নিজে নিজে কথা বলতেও দেখা গেছে । মুরুব্বিরা বললেন, খারাপ বাতাস লেগেছে । এত সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা ! আর সালমাও তো কম সুন্দরী নয় !
কবিরাজ ডেকে তাবিজ নেয়া হলো । ‘পানিপরা’ ছিটিয়ে দেয়া হলো সারা বাড়িতে । কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না । সেদিন সকালবেলা হঠাৎ কী হতে কী হয়ে গেল, ফুটফুটে বাচ্চাটার গলা টিপে ধরে মেরে ফেললো সালমা ডাইনিটা ! তারপর মাটিতে শুইয়ে রেখে কীরকম ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো বাচ্চার লাশের দিকে ! ডাইনিটা যেন বুঝে উঠতে পারছিলনা, কী ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে সে !
এরপর সালমা একদম চুপচাপ হয়ে যায় । কয়েকদিন পরে এক রাতে মারা যায় সালমাও । সবাই ভেবেছিল, জ্বিনের আছরেই মারা গেছে সে ।
আরো কিছু প্রশ্ন করে সবকিছু জেনে নিলাম আমি । ঘটনার সবটুকু শুনে আমি বললাম, রফিক- তোর বউ সালমার কোন দোষ ছিলনারে । সে ডাইনি ছিলনা । খারাপ বাতাসও লাগেনি । ওর অসুখ করেছিলো, তোরা বুঝতে পারিসনি ।
রফিক আমার দিকে অবিশ্বাস নিয়ে তাকালো । বললো- ডাইনি ছাড়া কেউ নিজের জন্ম দেয়া এরকম ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে গলা টিপে মারতে পারে?
বুঝিয়ে বললাম রফিককে, এটা ছিল এক ধরনের মানসিক রোগ । বাচ্চা ডেলিভারির পর ৬ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের এরকম মানসিক বৈকল্য হতে পারে । একে বলা হয় পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস । প্রতি পাঁচশ জনে এক জন মায়ের এই রোগ হতে পারে । এইসময় মায়ের হুশ জ্ঞান ঠিক থাকেনা । এমনকি বাচ্চার ক্ষতিও করতে পারে । সেজন্য প্রয়োজনে বাচ্চাকে সরিয়ে রাখতে হয় । আর চিকিৎসা করলে এই রোগ ভালো হয়ে যায় ।
আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো রফিক । তারপর হঠাৎ টেবিলে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে ফেললো সে । আমার হাত জড়িয়ে ধরে ডুকরে উঠলো - ‘এ আমি কী করেছি রে দোস্ত’ । সালমা তো মরেনি রে । আমার বাচ্চাকে মেরেছে বলে সালমাকে আমিই গলা টিপে মেরে ফেলেছিরে । এ আমি কী করেছি দোস্ত...
চমকে উঠলাম আমি । রফিক ওর বউকে খুন করেছে !! সালমার মৃত্যু তাহলে স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলনা ! বিষয়টা বুঝে উঠতে যেন কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো আমার ।
যাহোক,বুঝলাম বটে । কিন্তু এই মুহূর্তে ক্রন্দনরত রফিকের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকলো না ।

শনিবার, ২৭ জুন, ২০১৫

এত অবুঝ কেন বাঙালি মেয়েরা?

প্রায়ই পত্রিকায় শিরোনাম দেখি- 'বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ !' যদিও এটা আসলে ধর্ষণ নয়, ব্যভিচার । যেখানে দুজনের সম্মতি থাকে তাকে ধর্ষণ বলা যায় না, সেটা স্পষ্টতই ব্যভিচার । শাস্তি হলে দুজনেরই হতে হবে ।
প্রশ্ন হচ্ছে, মেয়েরা এত অবুঝ কেন? বিয়ে কি এতই লোভনীয় বা দুর্লভ কিছু যে, কেউ 'বিয়ে করবে' বললেই তাকে সবকিছু বিলিয়ে দিতে হবে?
ধর্ষণের শিকার তো সুন্দরী মেয়েরাই হয়। তাদের তো বিয়ে নিয়ে চিন্তিত থাকার কথা নয়! আর কেউ যদি সুন্দরী না হয়, সে কীভাবে মনে করতে পারে যে বিয়ে ছাড়াই সব পাওয়ার পরেও কেউ তাকে বিয়ে করবে?
শারিরীক সংস্পর্শের আগে আল্লাহ বিয়েকে বাধ্যতামূলক করেছেন । শুধু তাই না, পুরুষের কাছে নগদ মোহরানা নেয়ার অধিকার দিয়েছেন । সেখানে আপনি আল্লাহর চেয়ে বেশি বুঝে বিয়ে মোহরানা ছাড়াই সবকিছু খোয়াবেন কেন? সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ যেখানে পুরুষদের বিশ্বাস করেন নাই(রুপকার্থে), সেখানে আপনি বিশ্বাস করার কে?
মুসলমানের জন্য বিয়ের আগে নারী পুরুষ একান্তে আলাপ করারও অনুমতি নেই। আপনাদের তথাকথিত এইসব 'রিলেশন'ই অবৈধ । তারপরও ধরলাম না বুঝে তথাকথিত 'রিলেশনে' জড়িয়েছেন । এখন, যে পুরুষ বিয়ের আগে শারিরীক সম্পর্কের কথা বলে সে যে একটা লম্পট এটা তো তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় । কোনরকম সম্পর্ক থাকলে তো তখনই ছিন্ন করা উচিত্‍ । তারপরেও তাকে কেউ যদি বিশ্বাস করে এর চেয়ে বড় বেকুব কে হতে পারে?
প্রতারণার কথা বলে পার পাওয়া যাবেনা । বিয়ের 'প্রলোভনে'ই যদি আপনি বিয়ের আগেই সবকিছু সপে দিতে পারেন তাহলে আপনাকে বিশ্বাস না করাটাই তো স্বাভাবিক। বিয়ের পরে অন্য কোন প্রলোভনে অন্য কারো কাছে নিজেকে সপে দিবেন না তার নিশ্চয়তা কী?
কোন লম্পট পুরুষের লাম্পট্যকে সমর্থন করছি না । কিন্তু অন্য কোন দেশের নারীরা এমন 'বিয়ের প্রলোভনে' ভোলে কিনা আমার জানা নেই ।
শুধু বাঙালি মেয়েরা এত অবুঝ কেন?

শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০১৫

এক বর্ষাতি ভোরে

একটা উৎকণ্ঠা যেন জেগে আছে মস্তিষ্কের ভেতর ।
এই ঝুম বৃষ্টির ভোর;
আর হৃদয় হিম করা বেহেশতি হাওয়ায়-
ঘুমিয়ে থাকা যায় অনন্তকাল ।
অথচ
কেন যেন আজ আমার ঘুম ভাঙ্গে বারবার
অর্ধ নিমীলিত চোখে- আলো আঁধারির খেলা-
মরিচীকার মত মনে হয় !

কী এক অব্যক্ত উৎকন্ঠা যেন জেগে আছে মস্তিষ্কের ভেতর ।
তাই
আধো ঘুম আধো জাগরণে- যাচ্ছে কেটে আমার এই-
কদম কেয়ার স্নিগ্ধ সকাল !

মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট !

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট-০১: বাজেট বক্তৃতায় স্বাস্থ্যখাত
মাননীয় স্পিকার
৮৬। কমিউনিটি ক্লিনিকঃ ‘মিনি ল্যাপটপ হবে ডিজিটাল ডাক্তার- এই স্লোগানকে সামনে রেখে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে মোট ১৩ হাজার ৮৬১টি মিনি ল্যাপটপ প্রদানের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী টেলিমেডিসিন সেবা, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য ও স্বাস্থ্য শিক্ষার সুযোগ পাবেন।
৮৭। টেলিমেডিসিন সেবার সম্প্রসারণঃ ৬৪টি হাসপাতাল এবং ৪১৮টি উপজেলা হাসপাতালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য অফিসগুলোতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
৮৮। মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমঃ গরিব, দুস্থ ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৫৩টি উপজেলায় চালানো হচ্ছে মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার কর্মসূচি। আরো ২০টি উপজেলায় এ কর্মসূচি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৩২টি উপজেলায় জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’
৮৯। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়নঃ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়নে আমরা ‘জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৪’ প্রণয়ন করছি। একই সাথে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২, ড্রাগ অ্যাক্ট ১৯৪০, ড্রাগ রুলস ১৯৪৫ ও ১৯৪৬সহ বিভিন্ন সংশোধনী একত্রিত ও যুগোপযোগী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
৯০। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি ।

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট-০২: ক্রমাগতভাবে কমেছে বরাদ্দ
.
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন খাতে মোট ১২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। যা এবারের প্রস্তাবিত মোট ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বাজেটের মাত্র ৪.৩০ শতাংশ। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরে এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার কোটি টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ আপাত দৃষ্টিতে এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেশি দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তা কমেছে।
এবার মোট বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের অংশ মাত্র ৪.৩ শতাংশ। গত বছর এই হার ৪.৪৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হলেও পরে তা সংশোধিত হয়ে ৪.৮১ শতাংশে ওঠে। তবে এর আগে থেকেই ধারাবাহিকভাবে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫.৬৮%, ২০১১-১২ সালে ৫.০৩%, ২০১২-১৩ সালে ৪.৮৬% এভাবেই কমতে থাকে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে একটু বাড়িয়ে ৪.৯৭% করা হলেও চলতি অর্থবছরে তা আবার কমিয়ে ৪.৩% এ নামিয়ে আনা হয়েছে ।
২০১০-১৪ সময়কালে বরাদ্দের গড় হার ছিল জিডিপির মাত্র ০.৮৬ শতাংশ। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বরাদ্দ ছিল সর্বোচ্চ, মোট বাজেটের ৬.৭ শতাংশ এবং জিডিপির ১.০৩ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি দেশের বাজেটের ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া উচিত স্বাস্থ্য খাতে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে সরকারিভাবে মাথাপিছু ন্যূনতম ব্যয় বরাদ্দ ৪৪ মার্কিন ডলারের সমান হওয়া উচিত, যা বাংলাদেশে মাত্র ২৭ ডলার। এ বরাদ্দের হার আমাদের প্রতিবেশী ভারতে ৫৯ ডলার, নেপালে ৩৩ ডলার, শ্রীলংকায় ৯৭ ডলার, পাকিস্তানে ৩০ ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ৯৫ ডলার এবং ভিয়েতনামে ৯৬ ডলার।
প্রতি বছর দেশে গড়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়ছে না বরাদ্দের পরিমাণ। বরং দেখা যাচ্ছে, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের হার ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে ।
একথা যে কেউ স্বীকার করবেন যে, সুস্থ জাতি গঠনে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ক্রমাগতভাবে বাড়ানো উচিৎ । কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্য, আমাদের দেশে তা ক্রমাগতভাবে আরো কমানো হচ্ছে !

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট-৩ঃ গরীব বানানোর বাজেট
.
প্রতি বছর দেশে গড়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাড়ছে । কিন্তু সেই তুলনায় স্বাস্থ্যখাতে আনুপাতিক হারে বাড়ছে না বরাদ্দের পরিমাণ । বরং বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের হার মোট বাজেটের তুলনায় শতকরা হার হিসেবে ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে । এবারের বাজেটেও এর কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। ফলে এ খাতে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত ব্যয় (Out of pocket Expenditure) ।
১৯৯৭ সালে স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় ছিল ৫৬ দশমিক ৯ শতাংশ । ২০০৭ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ । ব্যক্তিগতভাবে খরচ মেটানোর পরিমাণ বিশ্বে প্রায় ৩২ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে বর্তমানে এ হার প্রায় ৬৫ শতাংশ ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকারিভাবে মাথাপিছু ন্যূনতম ব্যয় বরাদ্দ ৪৪ মার্কিন ডলারের সমান হওয়া উচিত, যা বাংলাদেশে মাত্র ২৭ ডলার । আবার এ খাতে বরাদ্দের অর্ধেকই খরচ হয় বেতন-ভাতায় । অবশিষ্ট বরাদ্দ যায় ক্রয় ও অবকাঠামো উন্নয়নে । ফলে সময়ের সাথ সাথে মানুষের ব্যক্তিগত ব্যয় বাড়ছে বৈ কমছে না।

এভাবে সরকারি ব্যয় কমতে থাকলে মানুষের গরীব হবার সম্ভাবনা বাড়বে । সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল হওয়ায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়বে । আর বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে অনেক মানুষ । মধ্যবিত্তরা হয়ে পড়বে নিম্নবিত্ত, নিম্নবিত্তরা ভূমিহীন, আর গরীবরা ভুগবে চিকিৎসাহীনতায়।

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট-৪ঃ বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া
.
স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহউপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ রশীদ-ই-মাহবুব । তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজেট দেখে মনে হয় স্বাস্থ্যের দিকে সরকারের কোনো নজর নাই, মনোযোগ নাই। এই বরাদ্দে চিকিৎসা নিতে মানুষের পকেটের খরচ বাড়বে। এতে দরিদ্র রোগীদের সেবা পাওয়া কঠিন হবে।’
অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব যুগান্তরকে বলেন, ঘোষিত বাজেটের ফলে স্বাস্থ্য খাতে আউট অব পকেট বা ব্যক্তি ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। দেশের গরিব মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়া খুবই কষ্টকর হবে। দেশে অসুস্থতার হার বাড়বে। যার ফলে দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গত বছর যে বরাদ্দ ছিল এবার দৃশ্যমানভাবে তার চেয়ে আকার কিছুটা বেশি দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ বাড়েনি। তিনি বলেন, যে ১৫শ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে তা শুধু বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য। ফলে গত অর্থবছরে সরকারে পক্ষ থেকে যে সেবা প্রদান করা হয়েছে এবার তাও সম্ভব হবে না।
অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন,কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে টাকার অঙ্কে বাজেট কিছুটা বাড়লেও জাতীয় বাজেটের অংশ হিসেবে তা ক্রমেই কমছে। এটা কোনোভাবেই দেশের গরিব মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ইতিবাচক হতে পারে না।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির ফলে স্বাস্থ্য খাতের পাবলিক খাত দুর্বল হয়ে পড়বে, অন্যদিকে ফুলে-ফেঁপে উঠবে প্রাইভেট সেক্টর, যাতে করে ব্যবসার মাত্রা আরো বেড়ে যাবে। ফলে জনগণের চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, প্রাইভেট সেক্টরে ব্যবসা আর দুর্বৃত্তায়নের ফলে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্তরা নিরুপায় হয়ে ভিড় করবে পাবলিক সেক্টরে। কিন্তু সেখানকার দুর্বল অবস্থানের ফলে চাপের মুখে ছিটকে পড়বে একেবারেই নিরীহ গরিব মানুষ।
স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, মোট বাজেটের মাত্র ৪.৩ ভাগের বদলে আমি মনে করি স্বাস্থ্য খাতে অন্ততপক্ষে ১০ ভাগ বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। এতে করেই স্বাস্থ্য খাতের যথার্থ উন্নয়ন সম্ভব বলে আমি মনে করি। এছাড়া তিনি বলেন, আমাদের দেশের তৃণমূল স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটবে বলে আমি আশা করি।
বিএমএর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান কালের কণ্ঠকে বলেন,‘স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধির জন্য আমরা আগে থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিলাম। এ ছাড়া সরকার যেভাবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগোচ্ছিল, তাতে এবার স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে আমরা বড় ধরনের বরাদ্দের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু আমাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ যত বাড়বে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা তত বেশি জোরালো হবে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় কঠোর সমালোচনা করেছে। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাজেটে সবচেয়ে অবহেলিত খাতের একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য।
সিপিডির বাজেট পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ২০০৩ সাল থেকে মোট দেশজ আয় (জিডিপি) বিবেচনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমছে। মূল বাজেটের তুলনায়ও বরাদ্দ কমছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ। এবার তা নেমে এসেছে শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশে। চরম অবহেলিত হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত।
চলবে...

বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫

বুধবার, ১০ জুন, ২০১৫

বহুদিন দেখিনি তোকে, সমূদ্র !

বহুদিন দেখিনি তোকে, হে সমূদ্র ! পোড়া চোখে
বহুদিন আছড়ে পড়েনি একফোঁটা
লোনা জলের ঢেউ ।
প্রচন্ড রুক্ষতা আঁকড়ে ধরেছে আমার সমগ্র সত্ত্বাকে
অসহ্য আগুনে জ্বলছে মাটির শরীর
অথচ
একফোঁটা জল নেই পদ্মায় তিস্তায় ।
দগ্ধ শরীর নিয়ে আমি তবে কোথায় যাবো?


বহুদিন দেখিনি তোকে, সমূদ্র !
বহুদিন শুনিনি তোর মর্মভেদী ডাক । তোর নীল চোখে
বহুদিন রাখিনি চোখ । তবে কি-
ক'দিনের বিরহেই চিড় ধরে গেছে আমাদের ভালোবাসায়?

বুধবার, ৩ জুন, ২০১৫

জিজ্ঞাসু পথিক

এইভাবে কতটা পথ হাঁটা যাবে?
এই আবছা রোদ, এই অন্ধকার-
কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের কাফেলাকে?
মনে পড়ে,
এক আলোকোজ্বল ভোরে যাত্রা শুরু করেছিলাম আমরা ।
তারপর
পথের বন্ধুরতায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে আমাদের দেহ
সূর্যের প্রখর তাপে দগ্ধ হতে হতে
এগিয়ে এসেছি এতদূর ।

এখন গোধূলী নেমেছে,
ধুলোয় ঝাপসা হয়ে আছে আমাদের চোখ ।
গন্তব্য? কোথায় কতদূরে?
এইভাবে আর কতটা পথ হাঁটবো আমরা?
এই আবছা রোদ, এই অন্ধকার-
কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের কাফেলাকে?

রবিবার, ৩১ মে, ২০১৫

এইসব রাত্রিতে

পৃথিবীর পরে ঘনায়ে এসেছে ঘনঘোর অন্ধকার
কতটুকু তার আলোকিত করা যাবে
কৃত্রিম নিয়ন আলোয়?
এইসব রাত্রিতে
জানালার ফোকর বেয়ে ঘরের ভেতর
চোরের মত ঢুকে পড়ে পুরনো স্মৃতিরা
কতটুকু থেকে বলো মুক্তি পাওয়া যাবে
নাগরিক ব্যস্ততায়?

বিবর্তিত ফুটপাতে

সোডিয়াম বাতির আলোয় তবু ছিল
বোনের হাতের মত স্নেহময়
মায়াবী পরশ ।
বলতে না পারা ব্যথা, হাহাকার গুলো
রাত্রির গভীরে ধূসর আলোয় রাঙা ফুটপাতে হেঁটে হেঁটে
উড়িয়ে দেয়া যেত নৈঃশব্দের আকাশে ।

অথচ এখন রাস্তার দুধারে ল্যাম্পপোস্টগুলো হতে
কুষ্ঠরোগীর মত সাদা আলো নেমে আসে
এত তীব্র ! স্পষ্ট দেখা যায় হৃদয়ের ক্ষতগুলো !
এমন নিঝুম রাতে
ক্লান্ত নগরীর প্রশান্ত ফুটপাতে বোধহয় এখন আর
বিরহী কোনও ক্লান্ত পথিকের
তপ্ত হৃদয়ে প্রশান্তি মেলেনা ।

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস

ছোট খোকা বড় হও বড় হবি না? একটানে দুইটানে কিছু হয়না ! এইভাবেই তো শুরু....
হ্যা, এভাবে শুরু হয় ঠিকই । কিন্তু তারপর একটান দুইটান থেকে এক প্যাকেট দুই প্যাকেট, এক চুমুক দুই চুমুক থেকে এক পেগ দুই পেগ ! সিগারেট দিয়ে শুরু করে অবশেষে বিভিন্ন মাদকের ভয়াবহ থাবায় এভাবেই প্রতিদিন আত্মাহুতি দেয় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ । যার বেশিরভাগই শিশু কিশোর যুবক। আর একবার শুরু করলে সহজে এই নেশা থেকে বের হতেও পারেনা তারা ।
সিগারেটের ধোঁয়া কোন নিরীহ ধোঁয়া নয় । এতে থাকে ভয়াবহ বিষ নিকোটিন সহ কয়েক হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান । বলা হয়, একটা সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন থাকে তা যদি আলাদা করে একসাথে সরাসরি কারো রক্তে প্রবেশ করানো হয়, তাহলে তত্‍ক্ষণাত্‍ তার মৃত্যু ঘটবে !
এমন কোন অঙ্গ নেই যার ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব নেই । সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুসের । হতে পারে ফুসফুসের রোগ সিওপিডি/এমফাইসেমা, হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার । এখন তো শ্বাস নিতে কষ্ট হয়না তাই শ্বাসের মর্ম টের পান না । যখন প্রতিটা শ্বাস গুনে গুনে নিতে হবে এবং ফেলতেও হবে গুনে গুনে তখন হয়তো বুঝবেন কষ্ট কাকে বলে !

ধূমপায়ীদের হতে পারে স্ট্রোক, হাটঁ এটাক, পেপটিক আলসার, সিলিয়াক ডিজিজ, ইরিটেবল বাওয়েল ডিজিজ, কোলন ক্যান্সার । বার্জারস ডিজিজ হলে কেটে ফেলতে হতে পারে হাত পা । বলা হয়, প্রতিটি সিগারেট গড়ে এগারো মিনিট আয়ু কমায় ! ধূমপায়ী শুধু যে নিজের ক্ষতি করে তা নয়, ক্ষতি করে আশেপাশের মানুষেরও । গর্ভাবস্থায় ধূমপান বা ধূমপায়ীর সাথে বসবাসে জন্ম হতে পারে বিকলাঙ্গ শিশুর। হতে পারে অসময়ে গর্ভপাত । সময় ও অর্থ অপচয় তো আছেই । আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো- ইসলাম ধর্মে কিন্তু অনেক আলেমের মতে ধূমপান করা পুরোপুরি হারাম !
আর হ্যা, যেসকল ইয়াং ম্যান বা ইয়াং লেডি স্মার্টনেসের জন্য সিগারেটকে 'Important' মনে করেন, তারা হয়তো জানেন না যে যাকে আপনি Important ভাবছেন, সেই জিনিস কিন্তু আপনাকেই 'Impotent' বানিয়ে ফেলতে পারে
[আজ ৩১শে মে । বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস । নিজে সচেতন হোন, আপনার পাশের জনকে সচেতন করুন।]

বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০১৫

এভাবেই কি মানুষ হতে হয়?

একদিন 'মানুষ' হবো তাই 
সময়ের রুক্ষতায় ঘষে ঘষে  
ক্রমশ ক্ষয় করছি মানব জীবন !  
প্রায়শই বিসর্জন দিচ্ছি মানবিক সাধ আহ্লাদ  
জুতোর তলায় পিষ্ট করছি সুখ  
এবং আসন্ন সুখের নানাবিধ মেগা আয়োজন।  
সভ্যতার প্রয়োজনে(!) জনবহুল নগরীতে বোমা হামলার মত-  
'মানুষ' হবার প্রয়োজনে প্রায়শই করে যাচ্ছি  
'অমানুষিক' শ্রম ।


দিনশেষে আজ তাই প্রশ্ন জাগে
এভাবেই কি মানুষ হতে হয়?
আমি কি সত্যিই মানুষ হচ্ছি? নাকি
মানবিক চাহিদা অপূর্ণ রেখে দিনে দিনে
হয়ে উঠছি-
মানবিক বোধের এক পরিপূর্ণ রোবট?

নাগরিক নির্লিপ্তি

আমি এই শহরের এক শান্তিপ্রিয় নাগরিক ।
তবু মাঝে মাঝে বিদ্রোহী হলে
চায়ের কাপে গুলিয়ে ঢকঢক করে খাই দেশের সরকার, সংসদ,
এবং বিরোধী দলকেও !
ঘুমোতে যাবার আগে চ্যানেলে চ্যানেলে রিমোট ঘুরিয়ে
খিস্তিখেউরে মেতে উঠি এ শহরের বুদ্ধিজীবিদের সাথে ।
মনে হয়,
দেশের রাজনীতি অর্থনীতিসহ সবকিছু চক চক করে ওঠে
আমার নখের দর্পণে !


চা-য়ে চুমুক দিতে দিতে আমিও বয়ান করি ঔচিত্যের কথা-
'জনগনের উচিত্‍ জুলুমের প্রতিবাদ করা। আর
আরো শক্তিশালী হওয়া দরকার বিরোধীদলকে !'
(আমি কিন্তু জনগন নই !) আমি এ শহরের এক শান্তিপ্রিয় নাগরিক ।
আর এভাবেই আমি প্রতিরাতে
চা এবং কফিতে গুলিয়ে ঢকঢক করে খাই এদেশের রাজনীতি ।
সরকার, সংসদ,
এবং বিরোধী দলকে !

বয়স ও বিরহ

যতই বাড়ছে বয়স 
সংখ্যা বাড়ছে পরিচিত মানুষের । 
সংখ্যায় বাড়ছে প্রিয় এবং অপ্রিয় মানুষের মুখ  
ডায়েরির পাতায় সংখ্যা বাড়ছে স্মরণীয় ঘটনার ।  
ঝাঁকড়া চুলে ঢাকা আমার শক্ত খুলির ভেতর  
ধুলিকণার মত জমছে ক্রমাগত  
স্মৃতির পাহাড় । 


হারানোর তালিকায়ও বাড়ছে চেনা মানুষের নাম 
গভীর হতে গভীরতর হচ্ছে আটলান্টিক বিরহ।  
একাকি রাত্রিগুলোয় এখন আর জোৎস্নায় ডোবেনা মন  
সাদা মেঘ হয়ে যেন হিমেল হাওয়ায়  
উড়ে আসে অতলান্ত হাহাকার,  
অলৌকিক চাঁদরের মত- আচ্ছন্ন করে রাখে  
সবটুকু হৃদয় ।

শনিবার, ৯ মে, ২০১৫

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কবিগুরু রবিঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার প্রিয় কবি । সাহিত্যাঙ্গনে রবিঠাকুরের অসাধারণত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারবে না । কিন্তু দুঃখের বিষয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কবিগুরু রবিঠাকুর উত্‍রাতে পারেননি । তিনি জমিদার ছিলেন, অভিযোগ আছে বাঙালি প্রজা অত্যাচারের । কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বিরোধী । কলকাতার আধিপত্য ক্ষুন্ন হবার আশঙ্কায় বিরোধিতা করেছেন বঙ্গভঙ্গের, বিরোধিতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার । জীবনের শেষ পর্যন্ত তাঁর এই ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেননি । বলা যায়- রবিঠাকুর বড় কবি ছিলেন, কিন্তু বড় মনের পরিচয় দিতে পারেন নি ।
রবিঠাকুরের নামে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় হবে । আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, হয়তো বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতেন কবিগুরু রবিঠাকুর ।

সোমবার, ৪ মে, ২০১৫

এম্বিশান

কাঠমান্ডু পেরিয়ে পাহাড়ঘেরা খোকানা উপত্যকায়  
প্রবল ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এক সুউচ্চ অট্টালিকার নিচে  
দেখেছিলাম-  
মাথা উঁচু করে ফুটে আছে  
কয়েকটি ঘাসফুল । 
এইসব ভূ-কম্পন যেন তাদের চিরচেনা বন্ধু !  
কিংবা  
নেহায়েত দমকা বাতাস ! 


এখন আমি বসে বসে ভাবি,  
এই ক্ষুদ্র জীবনে-  
কী হবে আমার এমবিশান? আমি কি  
সুউচ্চ কোন ভঙ্গুর অট্টালিকা হবো ?
নাকি হবো পাহাড়ী কোন এক
নির্ভীক ঘাসফুল ? 

০৪-০৫-২০১৫

রবিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৫

শহুরে জীবনে পহেলা বৈশাখ

আপনি যদি চৈত্র মাসের কোন একদিন কাউকে জিজ্ঞেস করেন, আজ বাংলা কত তারিখ? নিশ্চিত বলতে পারবে না । এমনকি বৈশাখের শেষদিকে যদি জিজ্ঞেস করেন আজ বৈশাখের কত তারিখ তাও বলতে পারবে না । আমরা এখন পহেলা বৈশাখ হিসাব করি বাংলা মাস দিয়ে নয়, চৌদ্দই এপ্রিল দিয়ে । পহেলা বৈশাখ এখন আর হালখাতা(দোকানের নতুন খাতা) করা হয়না । সেটা জানুয়ারির এক তারিখেই করা হয় । গ্রামের চাষীরা ফসলের প্রয়োজনে বাংলা মাসের হিসাব এখনো কদাচিত্‍ রাখেন বটে । কিন্তু পহেলা বৈশাখে তাদের খাবারের মেনু থাকে আগের মতই। আলুভর্তা শুটকি ভর্তা শাক সবজি ছোটমাছ । শহুরে জীবনে পহেলা বৈশাখ এখন এক কৃত্রিম আরোপিত উত্‍সবের উপলক্ষ ছাড়া আর কিছু নয় । শহরের এইসব শোভাযাত্রা ইলিশ খাওয়ায় তাই কোন প্রাণ নেই । এইসব আনন্দ আসলে অকৃত্রিম নয়, অভিনয় মাত্র ।

শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৫

আগামীর বাংলাদেশ‬ !

(প্রেক্ষাপটঃ পহেলা বৈশাখে ঢাবিতে নারীদের শ্লীলতাহানি) 
.
একদিন সমগ্র বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাবে 'মানুষ'  
পুরো ঢাকা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও  
একজন 'মানুষে'র হদিস মিলবে না ।  
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হবে দোপেয়ে জানোয়ার  
ক্লাসরুমে নবীন পশুদের পাশবিকতার শিক্ষা দেবে  
কতিপয় জানোয়ার শিক্ষক ।  

পহেলা বৈশাখ আর থার্টি ফার্স্টের রাতে  
বস্ত্রের প্রয়োজন ফুরিয়ে যাবে বলে  
সেদিন আর-  
বস্ত্রহরণের কোন প্রয়োজন হবে না ! 

শনিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৫

চৈত্রদিন

চৈত্রের এইসব রৌদ্রতপ্ত দিনে  
তুঁতে গাছের স্নিগ্ধ ছায়া খুঁজে ফেরে মন  
জানালার তপ্ত হাওয়ার সাথে ফিরে আসে শৈশব  
এমন চৈতালি দুপুরে ঘুঘুর করুণ ডাক  
আজও হাহাকার জাগায় হৃদয় গহীনে ।  

সেইসব অগ্নিঝরা দিনে বেজে ওঠা রাখালের বাঁশি  
আজও আমাকে  
বৈরাগী হবার ডাক দিয়ে যায় ।
আর আমি কিনা সংসারী মানুষের মত  
ইট সুড়কির শহরে পড়ে আছি !  
এখানে ছায়া নেই, মায়া নেই;  
ঘুঘু নেই, বাঁশি নেই;  
চৌচির ধানক্ষেতের মত অতৃপ্ত হৃদয় নিয়ে তবু  
এইখানে আমি-  
সিদ্ধ ডিমের মত বেঁচে আছি ! 

১১-০৪-২০১৫ 

শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৫

একদিন হৃদয় খুলে দেবো

আউশের পাকা ধানের মত
যখন সোনালি হয়ে যাবে এইসব ঘন কালো দীর্ঘ রাত,
যখন খেজুরের রস হয়ে ঝরে যাবে রঙ্গিন শিশির

শুধু তখনই আমি আমার হৃদয় খুলে দেবো । তার আগে
শামুকের খোলসেই গড়বো
একলা ঘরবসতি !

বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০১৫

চিকিৎসা বাজেট

আমরা যখন অসুস্থ হই তখন হঠাৎ করে যেন আমাদের মাথায় বাজ পড়ে । আমরা দিশেহারা হয়ে যাই । শারীরিক কষ্ট কিংবা ভালোবাসা একটা ব্যাপার, কিন্তু এছাড়াও এর আরেকটা কারণ আছে- আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা । আমাদের দেশে হেলথ ইনসুরেন্সের ব্যবস্থা নেই । আর আমরাও চিকিৎসার জন্য আলাদা কোন বাজেট রাখিনা।
মাসের বেতন পেলে আমরা কী করি? আমরা খাওয়ার জন্য বাজেট রাখি । আমরা কাপড় কেনার জন্য বাজেট রাখি । আমরা বাড়ি বানানোর জন্য বাজেট রাখি । কিন্তু চিকিৎসার জন্য কোন বাজেট রাখিনা । সেকারণেই, অসুখ মানেই আমাদের কাছে একটা বিরাট বিপদ । অসুখ হলে- স্বপ্নপূরনের জন্যে জমানো টাকা খরচ করতে হয়, জমানো না থাকলে ধার দেনা করে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গলদঘর্ম হতে হয়।
মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত পরিবারে নিত্যদিনের প্রয়োজন মেটাতেই যেখানে হিমশিম খেতে হয়, সেখানে চিকিৎসার জন্য বাজেট রাখা বা টাকা জমানো অনেকটা উচ্চাভিলাষই মনে হয় । কিন্তু উপায় কী? রাতের খাবারের জন্য যেমন আপনাকে প্রস্তুতি রাখতে হয়, তেমনি এটাও নিশ্চিত, যেকোন সময় আপনি বা আপনার পরিবারের কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন । সেজন্য কোন প্রস্তুতি না রাখাটা নিশ্চয়ই বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে না ।
যতটুকু সম্ভব এখন থেকে আপনার মাসিক কিংবা বার্ষিক বাজেট লিস্টে চিকিৎসা বাজেট নামে আরেকটা খাত যোগ করুন । দেখবেন, মনে কতটা সাহস আসে । বিনা যুদ্ধে নাহি দেবো সূচাগ্র মেদিনী । অসুখ যেহেতু হবেই, তাকে মোকাবেলার প্রস্তুতিও শুরু হোক আজ থেকেই !

সোমবার, ৩০ মার্চ, ২০১৫

উপমা

কীভাবে চেয়ে থাকে চাতক পাখি?
কতটা তৃষ্ণার্ত হলে পরে
'ফটি-ক জল্' বলে ডেকে ওঠে
ভরদুপুরে?
অবুঝ শৈশব হতে তার সাথে
আজন্ম সখ্যতা আমার; তবু
আজও জানা হয়নি
সঠিক উত্তর ।
অথচ ঠিকই উপমা দিয়ে যাচ্ছি রোজ রোজ,
স্বপ্নময় একফোঁটা ফটিক জলের জন্যে
অনন্তকাল ধরে-
চাতক পাখির মত তৃষ্ণার্ত হয়ে
চেয়ে আছি
চেয়ে আছি । 

বৃহস্পতিবার, ২৬ মার্চ, ২০১৫

অন্ধকারের যাত্রী‬

ছুটে চলে নৈশকোচ, ঘুমে ঢুলু ঢুলু যাত্রীর চোখ  
বেপরোয়া চালক, খাদে পড়বার ভয়  
জানালার পর্দা টেনে বাহিরে তাকাই ; চোখে আসে-  
প্রগাঢ় ঘন অন্ধকার ।  

মনে হয়,
নৈশকোচটাই যেন চলমান বাংলাদেশ  
অন্ধকারের ভেতর, এগিয়ে চলেছে তীব্র গতিতে-  
অন্ধকার গন্তব্যের পানে । 

২৬-০৩-২০১৫ 

বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০১৫

পেশেন্ট ডক্টর রিলেশনশিপ

পেশেন্ট ডক্টর রিলেশনশিপ খারাপ হওয়ার ভয়াবহ ফল ভোগ করছে মানুষ । ডাক্তারদের একটা বিরাট অংশ এখন রিস্ক নিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠেছেন । ইজ দেয়ার এনি রিস্ক? রেফার দা পেশেন্ট এনিহয়ার এলস । এই হয়ে উঠছে নিয়ম। ফলাফল, মাঝেমাঝেই রোগীর চিকিৎসায় দেরি, এমনকি মৃত্যু । দিনকে দিন এই প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে । কয়েকদিন আগে এরকমই এক দুঃখজনক ঘটনার অভিজ্ঞতা হলো । রাপচারড একটোপিক প্রেগন্যান্সির পেশেন্টকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে সুদূর ফেনী থেকে ঢাকায় রেফার করা হয়েছে । অথচ এইটা একটা ইমারজেন্সি, ইমেডিয়েট অপারেশন করতে হয় । ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে । পথিমধ্যে শক এবং কার্ডিয়াক এরেস্ট । ঢাকার হাসপাতালে সর্বোচ্চ সাপোর্ট দিয়েও রোগীকে বাঁচানো যায় নি । 

বিভিন্ন স্থানে ডাক্তারের ওপর হামলা, হাসপাতাল ভাঙচুর, হাসপাতালের বিল দিতে অস্বীকার করা এইসব ঘটনা বাড়ার ফলে ডাক্তার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কেউই আর রিস্ক নিতে চায় না । কখনো কখনো ডাক্তার চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চায় না । কে চায় উটকো ঝামেলায় জড়াতে ? এভাবে গুটিকয়েক মানুষের মাতব্বরি, বেয়াদবি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও উচ্ছৃঙ্খলতার কারণে অন্যদেরও দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে । 

ডাক্তাররাও ভুল করেন না তা নয় । মানুষের শরীর একটা রহস্য, মেডিকেল সায়েন্স এক মহাসমূদ্র । ডাক্তাররাও সবকিছু জানেনা । সবকিছুর ব্যাখ্যা তাদেরও জানা নাই, সবকিছুর চিকিৎসা তাদেরও হাতে নাই । ডাক্তারের ওপর হামলা, হাসপাতাল ভাঙচুর আর বিল খেলাপ এর মাধ্যমে কোন সমাধান আসবেনা । বরং অন্যরা চিকিৎসাহীনতার ঝুঁকিতে পড়ছে ।
ডাক্তারদের সাথে বিনয়ী হোন, তাদের সহযোগিতা করুন । আশা করা যায় তারা তাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আপনার স্বজনকে ফিরিয়ে দেবার চেষ্টা করবে ।


২৫-০৩-২০১৫ 

মঙ্গলবার, ২৪ মার্চ, ২০১৫

মাননীয় ট্রাক-১

মাননীয় ট্রাক, কেমন আছেন, ক্যামন?  
বেয়াদবি নেবেন না প্লিজ, আপনার পা থাকলে,  
পা ছুঁয়েই বলতাম । জাতির ক্রান্তিলগ্নে আপনার অসামান্য সেবা-  
আমাদের চিরঋণী করেছে । মনে আছে, সেই আশির দশকে,  
মিছিলের ওপর দিয়ে আপনি হেঁটে গেলেন  
রাজকীয় কায়দায় ! কালো রাজপথ হঠাৎ পেয়ে গেল  
লাল রঙা তরলের নোনতা স্বাদ ! সত্যি,  
জনগনের জন্যে আপনার কী অসীম মমতা । ভাবতেই  
চোখে জল এসে যায় !  
তারপর ধরুন, মাননীয় ট্রাক, এই একবিংশ শতাব্দীতেও  
ক'দিন আগেই, জাতির ক্রান্তিলগ্নে আপনি  
নিজ আগ্রহে এগিয়ে এলেন আমাদের 'নিরাপত্তায়' !  
ইট বালু কাঠ নিয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন,  
দিনের পর দিন ! অমন কষ্ট কে করেছে কবে?  
সত্যিই, মাননীয় ট্রাক, আপনি আমাদের এত ভালোবাসেন? ভাবতেই  
চোখে জল এসে যায় ! 

মাননীয় ট্রাক, বেয়াদবি নেবেন না প্লিজ !  
আমি আপনার একজন খুব সাধারণ প্রজা, ভুলচুক মাফ করবেন !  
আপনার মহিমা বর্ণনা করা, সে আমার সাধ্য নয় ।

শনিবার, ২১ মার্চ, ২০১৫

দেখে দেখে ডাক্তারি শেখা !

আমাদের দেশের মানুষের একটা মারাত্মক অভ্যাস হলো, দেখে দেখে ডাক্তারি শেখার চেষ্টা করা ! এটা যে কত ভয়ংকর একটা ব্যাপার বলে বোঝানো যাবে না । আঃ মতিন সাহেব একদিন পাতলা পায়খানা নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, ডাক্তার তাকে এই এই ঔষধ দিয়েছিলেন । এরপর থেকে কারো পাতলা পায়খানার কথা শুনলে আঃ মতিন সাহেব নির্দ্বিধায় সেই সেই ঔষধ কিনে খেতে বলেন ! একদিন রতন সাহেব হাই প্রেসার নিয়ে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলেন, ডাক্তার তাকে এই এই ঔষধ দিয়েছিলেন । এরপর থেকে কারো হাই ব্লাড প্রেসার শুনলে রতন সাহেব সেই সেই ঔষধ খাওয়ার পরামর্শ দেন ! একদিন মৃত্যুঞ্জয় সাহেব শ্বাসকষ্ট নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলেন, সেদিন থেকে তিনি শ্বাসকষ্টের চিকিৎসা শিখে ফেলেন এবং চিকিৎসা দিতেও শুরু করেন ! আর এইভাবে আঃ মতিন সাহেব, রতন সাহেব আর মৃত্যুঞ্জয় সাহেবরা যে কতজনের মৃত্যুর কারণ হয়েছেন তার ইয়ত্তা নেই ।  

একইভাবে ঔষধের দোকানদার, ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেন্টেটিভ, হাসপাতালের ব্রাদার সিস্টার আয়া দারোয়ান লিফটম্যান, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চেম্বারের দারোয়ান সবাই ডাক্তারি শিখে ফেলে ! তাদেরই কেউ কেউ কোথাও কোথাও নামের সামনে 'ডাক্তার' লিখে প্রাকটিসও শুরু করে ! তারা হয় সর্বরোগের ডাক্তার ! (মারহাবা মারহাবা !) তাদের কাছে রোগের নাম ব্লাড প্রেসার ! রোগের নাম শ্বাসকষ্ট ! রোগের নাম জ্বর ! অথচ এগুলো কোনটাই রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র । হাজারটা কারণে জ্বর হতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে, পাতলা পায়খানা হতে পারে । একই ওষুধ কারো জন্য জীবন রক্ষাকারী হতে পারে, কারো জন্য প্রাণঘাতি হতে পারে । কোন কোন ওষুধ হার্টের ক্ষতি করতে পারে, কিডনি লিভার নষ্ট করে ফেলতে পারে । পেটের বাচ্চাকে বিকলাঙ্গ করতে পারে । বয়স, ওজন, শারীরিক গঠন, রোগের কারণ, শরীরের বিভিন্ন অবস্থা অনুযায়ী ড্রাগের চয়েস ও ডোজিং ভিন্ন হয় । হাজার হাজার বছরের গবেষণার পর এইগুলো আবিস্কৃত হয়েছে । বছরের পর বছর লেখাপড়া আর প্রশিক্ষণ নিয়ে বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররাও নতুন একটা ঔষধ লিখতে ভয় পান, শতবার চিন্তা করেন । আর এরা কিনা একদিনে কয়েকটা ওষুধের বাজারি নাম দেখেই বিরাট ডাক্তার বনে যায় !! 

বলাবাহুল্য, এইসব স্বশিক্ষিত(!!) ডাক্তার(?)দের পরামর্শ নেয়ার লোকেরও অভাব আমাদের দেশে কোনকালে হয়নি । হবেওনা । অশিক্ষিতদের কথা বাদ দিলাম, শিক্ষিত(?)রাও কিন্তু এই কাজে কম যায় না ।  দুই লাইন বেশি বুঝে নিজের পায়ে কুড়াল মেরেই যাচ্ছে বাঙালি জাতির গর্বিত সদস্যরা । 


২১-০৩-২০১৫