এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০১৩

বিচারপতি মানিককে আপিল বিভাগে নেয়ার রহস্য




আওয়ামী লীগের দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক একজন চরম বিতর্কিত বিচারপতি । তার নামে আছে নানান অভিযোগ । মানি লণ্ডারিং, প্রতারণা, দুর্নীতি, সংবিধান ও শপথ লংঘন ইত্যাদি ।  মাহমুদুর রহমান তার বিরুদ্ধে এনেছেন ২৯ টি অভিযোগ  জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের এমপিরা তার বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল গঠণ করে অভিশংসনের দাবি করেছেন । স্পিকার তার বিরুদ্ধে রুলিং দিয়েছেন ।
এমন একজন দলকানা চরম বিতর্কিত বিচারপতিকে আপিল বিভাগে নিয়োগ দেয়া হলো এমন সময় যখন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল থেকে আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মামলা আপিল বিভাগে আসছে । 

ইতোমধ্যে এটাও স্পষ্ট হয়েছে যে , আল্লামা সাঈদীর মামলা শুনানির জন্যই তাকে আপিল বিভাগে নেয়া হয়েছে । কারণ, আল্লামা সাঈদীর আপিল শুনানির জন্য গঠিত বেঞ্চে রাখা হয়েছে এই বিতর্কিত বিচারপতি শামসুদ্দিনকে ।

আপিল শুনানির বেঞ্চে আরো আছেন বিচারপতি এস কে সিনহাতার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে ট্রাইব্যুনালের বিচার কার্যক্রম প্রভাবিত করার । স্কাইপে কেলেংকারির একটা ডায়লগ ছিল- ‘সিনহা বাবু কইছে, এক-দুইডা রায় দিয়া লন । 
আমরা আপনারে এইখানে নিয়া আসি’ । 

যাহোক, প্রশ্ন হচ্ছে – এমনিতেই যুদ্ধাপরাধের বিচার কার্যক্রম দেশে বিদেশে চরমভাবে বিতর্কিত হয়েছে এবং হচ্ছে । বিশেষ করে আল্লামা সাঈদীর বিষয়ে জনগনের সেন্টিমেন্ট চরম অবস্থায় । এই সময়ে দুইজন বিতর্কিত বিচারপতিকে দিয়ে আপিল শুনানির উদ্দেশ্য কী ? 

এর উদ্দেশ্য স্পষ্ট । আওয়ামী লীগ কোন স্বচ্ছ বিচার চায়না । তারা চায় বিচার কার্যক্রম বিতর্কিত করতে । এবং দেশে সংঘাত জিইয়ে রাখতে । সংঘাত বাড়াতে ।
গৃহযুদ্ধের যে আশংকা বোদ্ধামহল করে আসছেন , আওয়ামী লীগ আসলে সেটাই চায় । অস্বচ্ছ ও বিতর্কিত বিচারের আয়োজন করছে যাতে মানুষ প্রতিবাদে রাস্তায় নামেআবার পুলিশ দিয়ে নির্বিচার গুলি করে গনহত্যা করছে যাতে মানুষ আরো ক্ষুব্ধ হয় । হাতে অস্ত্র তুলে নেয় । একসময় ভাইয়ে ভাইয়ে সংঘাত শুরু করে ।
আরেকটা উদ্দেশ্য হতে পারে । ন্যায়বিচারের আশা তিরোহিত করে জামায়াতের সাথে রাজনৈতিক দরকষাকষির চেষ্টা । 

যেটাই হোক , ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশ । দেশের সাধারণ মানুষ । আওয়ামী লীগের সাধারণ নেতা কর্মিরা । আসল এবং বড় বড় নেতারাতো বিদেশ পালিয়ে যাবে । সব ব্যবস্থা করাই আছে । রক্ত ঝরবে আওয়ামী লীগের যদু, জামায়াতের মধু, বিএনপির কদুর । অথবা কোন দল না করা ইসলামপ্রিয় আব্দুর রহিমের । 
   

শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০১৩

আধাবেলা হরতাল

বহুদিন থেকে দেখে আসছি দলের সাধারণ নেতাকর্মী খুন হলে সংশ্লিষ্ট জেলা বা উপজেলায় ‘আধাবেলা’ হরতালের ডাক দেয়া হয় । আজকে জামালপুরে চলছে আধাবেলা হরতাল । আগামীকাল সিরাজগঞ্জে এবং রাঙ্গামাটিতে আধাবেলা হরতালের ডাক দিয়েছে ১৮ দল ।

আধাবেলা হরতাল জিনিসটা কী ? সকাল বেলা দুয়েকটা খন্ড মিছিল হবে । সকাল ১১টা পর্যন্ত গাড়িঘোড়া চলবেনা । দোকানপাট ১০টার পরেই খুলে যায় । অফিস আদালত খুলে যায় । দেখা যায় ১১ টার পরেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যায় । তেমন কোন প্রভাব পড়েনা ।

আমার কাছে এটা একধরণের ফাজলামি মনে হচ্ছে । শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি । দিলে পুর্ণদিবস হরতাল দেন , নাহলে শুধু বিক্ষোভ মিছিল করেন । দয়া করে ‘আধাবেলা’ হরতালের তামাশা করবেন না ।


বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০১৩

জামায়াত নিষিদ্ধ করার অলীক স্বপ্ন- আখেরে লাভ জামায়াতেরই !

জামায়াত নিষিদ্ধ করার জিগির তুলেছে আওয়ামী লীগ ও বামরা । মুখে বলছে ঠিকই, কিন্তু মনে সাহস পাচ্ছে না । স্বপ্ন দেখতে তাদের ভালোই লাগে , বাস্তবায়ন করতে গেলেই যত বিপদ ! চারিদিকে শুধু ষড়যন্ত্র আর ষড়যন্ত্র ! সব জায়গায় নাকি জামায়াত ঢুকে গেছে । ছাত্রলীগে জামায়াত, আওয়ামী লীগে জামায়াত, বিএনপিতে জামায়াত, জেলখানায় জামায়াত, রাস্তায় জামায়াত, ট্রাইবুনালে জামায়াত- সর্বত্র শুধু জামায়াত আর জামায়াত ।

গভর্ণমেন্ট গেছে পাগল হইয়া, তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে চায় ।

জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে কী হবে ? জামায়াত তার কর্মী-সমর্থকদের জামায়াতকর্মী হিসেবে গড়ে তোলে না , গড়ে তোলে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী-সমর্থক হিসেবে ।জামায়াতের যা জনশক্তি- জনসমর্থন আছে , জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার পরদিনও তাই থাকবে । কোন হেরফের হবে না । সেজন্যই জামায়াত নামে কোন দল বাংলাদেশে থাকল কিনা তাতে কিছু যায় আসে না । এক সপ্তাহের মধ্যে সেই জনবল নিয়ে নতুন রাজনৈতিক দলে রুপ নিতে পারবে জামায়াত ।

মুসলিমরা কখনো নেতৃত্বশুন্য হয়না । বেকুব কাফের-মুশরিক-তাগুতরা সবসময় ইসলামী আন্দোলনের নেতাদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালায় । তারা ভাবে , হয়তো এর মাধ্যমে এর অগ্রযাত্রা রুখে দেয়া যাবে । কিন্তু বিধি বাম ! ইসলামের ইতিহাস বড়ই আশ্চর্য ! যুদ্ধের ময়দানেও মুসলিম সৈনিক কখনো নেতৃত্বশুন্য হয়না । একজনের পর আরেকজন আসে । এমনকি যখন মাত্র তিনজনও বাকি থাকে , তখনো তাদের মধ্যে একজনকে তারা আমীর বা নেতা বানিয়ে নেয় এবং তার আনুগত্য করে । এ এক অসাধারণ ব্যাপার ! এজন্যই মুসলিমরা কখনো পরাজিত হয়না ।

জামায়াতও যেন একটা ফিনিক্স পাখির মত । যত নেতা গ্রেপ্তার করছে সরকার, তত নতুন নেতা বেড়িয়ে আসছে । আন্দোলন হচ্ছে তীব্রতর । আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে অভিনব সব পন্থা । দ্বিতীয়-তৃতীয় সারির নেতারা মাঠে ময়দানে নেতৃত্ব দিয়ে দিয়ে হয়ে উঠছে আরো দক্ষ । হয়ে উঠছে একেকজন প্রথম সারির নেতা ।

জামায়াত নিষিদ্ধ করলে কী হবে ? গত পঞ্চাশ বছর ধরে জামায়াতের নামে যত কুতসা রটানো হয়েছে , অপপ্রচার হয়েছে সবকিছুই অপ্রযোজ্য হয়ে যাবে । তরুণ প্রজন্মের হাত ধরে গড়ে ওঠা জামায়াতের নতুন রাজনৈতিক দল হয়ে উঠবে আরো চৌকস । আরো আধুনিক । আরো অপ্রতিরোধ্য । তৈরি হবে নতুন জাগরণ । বাংলাদেশের দ্বিদলীয় রাজনীতিতে ইসলামভিত্তিক নতুন প্লাটফর্ম হয়ে উঠবে সত্যিকারার্থে বিকল্প শক্তি । জনগন পাবে নতুন আশার আলো ।

আখেরে লাভ হবে জামায়াতেরই । লাভ হবে জনগনের । যেহেতু ‘জামায়াতে ইসলামী’ নামক একটি দলের জন্য কাজ করাই এইদলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্য নয় – তাই তাদের আসল লক্ষ্য ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে যতটাই অগ্রগতি হয়, সেটাই তো জামায়াতের লাভ তাই না ?

শাহবাগ থেকে জামায়াতকে যে শিক্ষাটি নিতেই হবে

অতিউতসাহী বামদের শুরু করা , আওয়ামী লীগ ও ভারত সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় গড়ে ওঠা শাহবাগের তথাকথিত ‘ফাসি’ মঞ্চ আপাতদৃষ্টিতে ব্যর্থ হলেও ইতিহাসে তারও একটা অবস্থান থাকবে । সন্দেহ নেই, সেটা নিশ্চয়ই নেতিবাচক হিসেবেই চিহ্নিত হবে । ব্যর্থতার কারণে হোক, ফ্যাসিবাদের সহযোগিতার কারণে হোক কিংবা আওয়ামী লীগের পতনের কারণ হিসেবেই হোক ।

বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাসও এই ঘটনাকে অস্বীকার করতে পারবে না । কিন্তু ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নিবে কিনা সেটা যথেষ্ট সন্দেহের ব্যাপার । অন্য কেউ শিক্ষা নিক আর না নিক , ইসলামী আন্দোলনকে নিতেই হবে । ইসলামী আন্দোলনকে তার লক্ষ্যে পৌছাতেই হবে ।

অনেকগুলো শিক্ষার মধ্যে আজ আমি যেটা উল্লেখ করতে চাই, সেটা হচ্ছে- ‘জামায়াতে ইসলামী’ নাম নিয়ে এই বাংলাদেশে ইসলামী সমাজ কায়েমের স্বপ্নটা এক প্রকার বালখিল্যতা ছাড়া আর কিছু নয়’ ।

মুক্তিযুদ্ধে জামায়াত কেন বিরোধিতা করেছে তার হয়তো গ্রহণযোগ্য, যুক্তিযুক্ত কারণ থাকতে পারে । যদিও মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের বিরোধিতা জামায়াতের মজলিশে শুরার সিদ্ধান্তের খেলাপ করে কিছু নেতার আপোষকামিতা এবং সাময়িক লাভালাভের অদূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তার ফল বলে আমাদের হাতে তথ্য আছে । কিন্তু তারচেয়েও বড় কথা , মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান কী ছিল এবং কেন ছিল- সে বিষয়টি জাতির সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরতে জামায়াত সাংগঠনিকভাবে সম্পুর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে । আর এই সুযোগে ইসলামবিরোধী গোষ্ঠি এই ইস্যুকে পুজি করে বহু ইসলামপ্রিয় মানুষকে বিভ্রান্ত করতে সক্ষম হয়েছে ।

পত্রপত্রিকায়, রেডিও-টেলিভেশনে, বক্তব্য-বিবৃতিতে, গল্প-কবিতা-উপন্যাস, নাটক-সিনেমায় এমনকি পাঠ্যপুস্তকে পর্যন্ত জামায়াতের নাম তুলে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে ।এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যেন ত্রিশ লাখ মানুষ হত্যা এবং দুই লাখ নারী ধর্ষণ করেছে জামায়াতের গুটিকয় লোকই ! এর ফলে একজন মানুষ ছোটবেলা থেকে জামায়াতকে একটা ভিনদেশি দানব হিসেবে জেনে আসছে । লালন করছে তীব্র ঘৃণা ।

এর একটা সুবিধা আছে যে , এইসব অতিরঞ্জিত অপপ্রচারের ভেতরে বেড়ে ওঠা একজন মানুষ যখন আসল সত্যিটা জানতে পারে তখন সে খুব সহজেই ইসলাম এবং বাতিলদের মতাদর্শের পার্থক্যটা বুঝতে পারে । ইসলামী আন্দোলনে দাখিল হয় । কিন্তু এই সীমাহীন প্রচারের ভেতর গড়ে ওঠার কারণে অসংখ্য মানুষ যে এর আশেপাশেও আসছে না, দাওয়াতের আওতার ভেতরেও আসছে না তার হিসাব কি করতে হবে না ?

জামায়াতের কেউ কাউকে দাওয়াত দিতে গেলে কী ঘটে ? প্রথমে ক্লিয়ার করতে হয় জামায়াতের একাত্তরের ভূমিকা । এরপর ইসলামের কথা । ইসলামী আন্দোলনের কথা । ছাত্রশিবিরের জন্ম স্বাধীনতার অনেক পরে হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দাওয়াতী কাজ শুরু করতে বাধ্য হতে হয় জামায়াতের সাথে শিবিরের সম্পর্ক কী এবং মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের ভূমিকা সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাব দেয়ার মাধ্যমে । এর ফলে দাওয়াতি কাজ কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , হচ্ছে এবং হবে তার কোন অনুমানও কি করা সম্ভব ?

বাকশাল নিপাতের পর ১৯৭৯ সালে যখন ধর্মীয় রাজনীতির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করা হলো তখন জামায়াত নিজ নামে কার্যক্রম শুরু করলো । কেন ? নেতৃবৃন্দ হয়তো ভেবেছিলেন, ৭১ ইস্যুর সমাধান হয়ে গেছে । এটা নিয়ে আর কখনো ভুগতে হবে না ! কিন্তু ৯২ তে ঘাদানিকের কারণে ৭১ ইস্যুতে জামায়াতকে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হলো । আবার ২০০১ এর পর কেউ কেউ ভেবেছিল – সময় অনেক গড়িয়েছে । আর হয়তো ৭১ ইস্যু ভোগাবে না । এলো ২০০৯ । একই ইস্যুতে বড় ধরণের ভোগান্তিতে পড়তে হলো জামায়াতকে , যা এখনো শেষ হয়নি । কিভাবে শেষ হবে এখনো কেউ জানে না । ইনশাআল্লাহ ভালোভাবেই শেষ হবে আশা করি ।

আমার আশংকা, এবারো হয়তো জামায়াত নেতৃবৃন্দ ভাববেন- ৭১ ইস্যু খতম । আর কখনো এই ইস্যু দিয়ে আটকানো যাবে না । কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি সেটা হবে চরম ভুল ধারণা । সত্য হলো- যতদিন বাংলাদেশের এই ভূখণ্ড থাকবে, ততদিন ৭১ এর যুদ্ধের ইতিহাস থাকবে । অস্বীকার করার কিংবা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই, বরং এমন কিছু করা হবে নিজের পায়ে কুড়াল মারার নামান্তর ।

আর প্রহসনমূলক হলেও এবারের বিচারে আদালতের মাধ্যমে রায় দিয়ে জামায়াতের গায়ে চূড়ান্তভাবে কলংকের ছাপ লাগিয়ে দেয়া হয়েছে । এরপরেও যদি একগুয়েমি করা হয় তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে দুঃখজনক ।

জামায়াতকে যথাস্থানে রেখে একই ধাচের একটি ইসলামী সংগঠন গড়ে তুলে তার মাধ্যমে কাজ করা এখন সময়ের দাবি । এবং আমি বিশ্বাস করি, সেটাই হবে এই দেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের বিরোধীদের জন্য চরম প্রতিশোধ ।

আনিসুল হকের কুরআন বিকৃতি - প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে

এর আগে যখন প্রথম আলোতে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে ব্যঙ্গ করে কার্টুন দেয়া হলো ,তখন আমার মন প্রথম আলোর ব্যাপারে কিছুটা নরম ছিল । আমার কাছে মনে হয়েছিল- ব্যাপারটা ওরা ঠিক ইচ্ছাকৃতভাবে করেনি । সবকিছু নিয়ে ফান করতে করতে ‘হয়ে গিয়েছিল’ । ঐ বিষয়ে আমি এখনো সেটাই মনে করি । তখনো প্রতিবাদ করেছিলাম । তবে সেটা ছিল এজন্য – এসব বিষয়ে যেন সবাই আরো সতর্ক হয় । অনিচ্ছাকৃতভাবেও যেন কখনো আল্লাহর রাসুল(সাঃ) এর শানে আঘাত দেয়া না হয় । প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান যখন বায়তুল মোকাররমের খতিব মাওলানা ওবায়দুল হকের কাছে হাতজোড় করে মাফ চাইলেন , তখন হুজুরের সাথে সাথে অন্তত আমিও  অন্তর থেকেই মাফ করে দিয়েছিলাম ।

কিন্তু এবার আনিসুল হক কুরআন নিয়ে যেভাবে ফান করলেন- সেটাকে আমি সহজ ভাবে নিতে পারছি না । কারণটা খুব সহজ । আনিসুল হক নিশ্চয়ই কুরআনের বাংলা অনুবাদ মুখস্থ করে বসে নেই । তাহলে তিনি কীভাবে কুরআনের বিভিন্ন সুরার বিভিন্ন আয়াতের হবহু বাংলা অনুবাদের ‘আল্লাহ’, ‘মুমিন’ ইত্যাদি শব্দকে ‘রাজাকার’ শব্দটি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করলেন ? সহজ বিষয় । তিনি ‘ছহি রাজাকারনামা’ লেখার সময় সামনে কুরআনের অনুবাদ নিয়ে বসেছিলেন । এরপর তিনি প্রয়োজনীয় আয়াতগুলিতে কাটাছেড়া করেছেন । সজ্ঞানে সচেতনভাবেই করেছেন । তখন  তার বিবেকে একটুও বাঁধেনি ।

ধরে নিলাম , তখন তিনি ‘রাজাকার-বিদ্বেষে’ অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন । কিন্তু এরপরেও ওই লেখাটি তার বইয়ে সংকলিত হয়েছে । বইয়ের সংস্করণ বের হয়েছে । একবারও তার অন্তরে নাড়া দেয়নি !
সুতরাং আনিসুল হকের এই ‘কুরআন-বিকৃতি’ সহজ ভাবে নেয়ার সুযোগ নেই ।

এবার আসা যাক তার ক্ষমা প্রার্থনা নিয়ে । তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন কখন ? ‘আমার দেশে’র প্রতিবেদক ফোন করার পরে । অথচ তার এই লেখাটি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনা চলছে । তিনি জানেন না এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় । তিনি এখন যেমন ‘সাচ্চা মুমিন’ সেজেছেন , আসলেই যদি তিনি তাই হতেন তাহলে এটা আলোচনায় আসার সাথে সাথেই প্রকাশ্যে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতেন । কিন্তু তিনি তা করেন নি ।

আমি আনিসুল হককে জাতির কাছে প্রকাশ্যে মাফ চাওয়ার আহবান করছি । অন্যথায় তার জন্য রইলো অভিশাপ এবং সরকারের কাছে আনিসুল হকের শাস্তি দাবি ।
‘সরি’ বললেই সবকিছু শেষ হয়ে যায়না । প্রকাশ্যে কারো পশ্চাদ্দেশে লাথি মেরে যদি বলা হয় ‘সরি’, তাতেই কি সব চুকেবুকে যায় কখনো ?

মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০১৩

স্বাধীনতা তুমি , স্বাধীনতা দিবসের র‍্যালিতে পুলিশের ব্রাশফায়ার

স্বাধীনতা তুমি

জনতার মিছিলে পুলিশের গুলি ,স্বাধীনতা দিবসের র‍্যালিতে ব্রাশফায়ার

আইনশৃংখলা রক্ষার নামে নির্বিচার গণহত্যা

স্বাধীনতা তুমি

রাজাকারের নাতির মুক্তিযোদ্ধা সেজে নিস্ফল আস্ফালন

স্বাধীনতা তুমি

বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্রের মহড়া

ধর্ষণের সেঞ্চুরি করে ছাত্রলীগ নেতার মিষ্টি বিতরণ

স্বাধীনতা তুমি

কুরআন নিয়ে আনিসুল হকের ‘গদ্যকার্টুন’

নবী রাসুলকে ব্যঙ্গ করে থাবা বাবার অশ্লীল ব্লগ

স্বাধীনতা তুমি

কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানির লাশ

স্বাধীনতা তুমি

আবুল হোসেনের পকেটে পদ্মাসেতুর খাম্বা

স্বাধীনতা তুমি

বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশপ্রেমিক সেনা হত্যার মহোৎসব

স্বাধীনতা তুমি

নিরীহ শিক্ষকের শরীরে মরিচের গুঁড়া

কবিতায় আর কী লিখব

যখন প্রতিনিয়তই বুকের রক্তে লিখতে হচ্ছে ‘স্বাধীনতা’ ।

শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৩

কবির মৃত্যু

এই মৃত্যুপুরীতে বসে কবিতা লিখবো 
এতটা নৃশংস তো আমি নই ! 
জাননা , 
কবিতা লিখতে লাগে একটা কোমল হৃদয় ! 
একটা স্বপ্নবিলাসি মন ! 
আজ আর কোনটিই নেই আমার । 

যেখানে ফাগুন এলে 
কোকিলের কুহুতানের বদলে শোনা যায় মুহুর্মূহু গুলির আওয়াজ 
মানুষের আর্তনাদ 
যেখানে ফাগুন এলে 
শিমুল কৃষ্ণচূড়ার চেয়ে বেশি লাল হয়ে ওঠে রাজপথ 
সেখানে কোন কোমল হৃদয় বাঁচতে পারে ? 
এই মৃত্যুপুরীতে বসে কবিতা লিখবো 
এতটা নৃশংস তো আমি নই ! 

এসময় 
কবিতার খাতাটাকে মনে হয় 
একটা রক্তাক্ত জ্যান্ত মানুষ 
কলমটা যেন এক ঘাতক বন্দুক 
কালি যেন রক্তের ফোয়ারা ! 
কবিতা যদি লিখতেই বলো আমায় 
সে হবে আরেক ধ্বংসযজ্ঞ । 
বুকভাঙা বেদনার ইতিহাস । 

এই মৃত্যুপুরীতে বসে কবিতা লিখবো 
এতটা নৃশংস তো আমি নই ! 


শনিবার, মার্চ 9, 2013

http://www.facebook.com/notes/muhsin-abdullah-mu/%E0%A6%95%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AE%E0%A7%83%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%81/10151346656037358