এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মঙ্গলবার, ২৪ মে, ২০১১

কষ্ট ও জীবন

মাঝে মাঝে কষ্টগুলো বুকের ছোট্ট খালে আটকে থাকে না । উপচে পড়ে গলা পেরিয়ে চোখের কোণ দিয়ে । সিক্ত করে শুষ্ক মুখের কপোল জমিন । সুর্যের আলো পড়লে হয়তো চিকচিক করতো । শিশিরকণার মত । তা অবশ্য হয় না ।কারণ ,যখন খাল উপচে পড়ে তখন সুর্যের আলো কিংবা অন্য কোন চোখ সেখানে পৌঁছতে পারে না । ওরা সংগোপনেই মিশে যেতে চায় । উপচে পড়া কষ্টগুলি শুকিয়ে গেলে চোখটা টনটন করে ওঠে । ঘুম বেচারা আসতে সাহস করে না । ঘুম আসলে ভীতুর ডিম । যখন চোখ থাকে শান্ত ,তখন সে ঠিকমতই আসে । অশান্ত চোখের আঙিনায় তার দেখা মিলবে না । সময় গড়িয়ে যায় । এলোমেলো ভাবনার মাঝে স্তিমিত হয়ে জিরোয় ক্লান্ত কষ্টেরা । এই ফাঁকে জীবনের চাকায় টান পড়ে । গরুর গাড়ির মত নিশ্চিন্ত গতিতে হয়তো কিছুটা সামনে এগোয় । চোখের কোণ দিয়ে যেটুকু কষ্ট উপচে পড়েছিল , খালি হয়ে যাওয়া সেই অংশটুকু প্রতীক্ষা করে পুর্ণ হবার । হয়েও যায় একসময় । তখন আবার পুরনো চক্রে আটকে যায় জীবনের কাটা । এরপর ....
(আবার শুরু থেকে )



মঙ্গলবার, মে 24, 2011

নিশাচর ও আধখানা চাঁদ

মধ্যরাত । চার তলা হোস্টেলের বিস্তীর্ণ ছাদ । নিস্তব্ধ গাছের নিচে একা আমি । মৃদু হিমেল হাওয়ায় কাঁপছে গাছের পাতা । আকাশে ক্ষয়ে যাওয়া আধখানা চাঁদ । নিশ্চুপ । সাদাকালো মেঘের আনাগোনা বেড়েছে । অনেক নিচ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে মেঘগুলি । চাঁদের সাথে ওদের কানাকানি খুব গোপনে হচ্ছে যেন । পাশের পাহাড় থেকে শেয়ালের আর একপাল কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে । ওরা নিশাচর । চাঁদটাও নিশাচর । ওই মেঘগুলিও নিশাচর । আজ আমিও নিশাচর হতে দোষ কি ? বহুরাত হলো নিশাচর পেঁচার হুতুম ডাক কানে আসে না । আজও মনে হয় পেঁচার দেখা পাব না । ছেলেবেলার কচি হৃদয়ে পেচাও দাগ কেটে গিয়েছিলো । আর দোয়েল ,শালিক , ঘুঘু । ওরা নিশাচর নয় । আজ রাতে ওদের কথা খুব মনে পড়লেও উপায় নেই । ওদের দেখা পেতে হলে আমাকে বাড়ি যেতে হবে । বাঁশবাগানের পাশের কাঠাল গাছটার নিচে তপ্ত দুপুরে স্নিগ্ধ ছাঁয়ায় শুয়ে থাকতে হবে মাদুর পেতে । আগে যেমন থাকতাম । রাস্তা দিয়ে একটা গাড়ি তীব্র বেগে ছুটে গেলো । আমার খুব ইচ্ছে , রাতের শহরে অনেক বেশি স্পিডে বাইক চালাবো । কিন্তু উত্‍সাহে ভাটা পড়ে যেখানে সেখানে স্পিডব্রেকারের আধিক্য আর ছিনতাইকারীর ভয়ে । ছিনতাইকারি রাও নিশাচর । রাতের নিস্তব্ধতাকে ওরা করে তোলে ভীতিকর । ওদের চেয়ে ভুত অনেক ভালো । ভুতও নিশাচর । ভুত শুধু ভয় দেখায় ,
আর ছিনতাইকারিরা সবকিছু ছিনিয়ে নেয় । কখনোবা পেটে ছুরি মেরে দেয় । নিশাচর প্রেমিকরা আজ মনে হয় তাদের রাতের আলাপন শেষ করে ফেলেছে । সাধারনত রাতে সিড়ির গোড়ায় , ছাদের বিভিন্ন প্রান্তে এইসব বিদঘুটে নিশাচরের দেখা মেলে । লম্বা ইউক্যালিপ্টাস গাছটা দুলছে । গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে ক্ষয়ে যাওয়া অর্ধেক চাঁদটা অতিপ্রাকৃতিক লাগছে । রাস্তায় একজন রিক্সাওয়ালা খালি রিক্সা নিয়ে দরাজ গলায় গান গাইতে গাইতে পুব দিকে যাচ্ছে । মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্র । এখন রাত তিনটা বেজে পনেরো মিনিট । কেউ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত রুমে নরম ফোমে গভীর ভাবে ঘুমাচ্ছে । আর ওই রিক্সাওয়ালা ভাই এখনও রাস্তায় । ক্ষয়ে যাওয়া অর্ধেক চাঁদটাকে একটা কালো মেঘ ঢেকে দিচ্ছে । জীবনের সাথে কী মিল ! আমাদের জীবনও ক্ষয়ে যাচ্ছে । কখন যে সমাপ্তির কালো মেঘ সবকিছু ঢেকে দেবে আল্লাহই জানেন !


 মঙ্গলবার, মে 24, 2011