এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৫

আত্মজিজ্ঞাসা

অনেক তো পেরুলো সময় !
অনেক অনেক দিন, সাদাকালো রাত,
দুপুর, বিকেল ।
অনেক সূর্যাস্ত হলো পশ্চিম আকাশে
অসংখ্যবার ফিকে হয়ে এলো
গোধূলীর রঙ ।

এখন কি এসেছে সময় নিজেকে শুধাবার?
কতদূর হাঁটা হলো? কতযুগ সময়ের পরে,
কতটুকু চেনা হলো পৃথিবীর পথ? কতটা জমিন, কতটুকু মন, আর
কতজন মানুষের প্রতি-
জন্মালো অধিকার?

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫

চিঠি

জানিস, মাঝে মাঝে আমার
নিজেকে খুব জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়ঃ এইযে সোনালি বিকেলগুলো
কাটিয়ে দিচ্ছি এইভাবে, কনক্রিট ঘেরা চার দেয়ালের
বদ্ধ ঘরে...
কীসের প্রয়োজনে? কিংবা, কীসের প্রলোভনে?
.
তোকে বলা হয়নি- এইসব বিকেলে
গোধূলীর বদলে এখন আমার চোখে আসে
নিয়নের সাদা আলো ; পাখির ডাক হয়ে কানে বাজে
পুরনো এয়ারকুলারের-
একটানা বিদঘুটে শো শো আওয়াজ ।
আর জানিস, বহুদিন ধরে
নরম ঘাসের ভূমিকায় জব্বর অভিনয় করে চলেছে
একজোড়া কাঠের চেয়ার !
.
এই শহরে বিকেল বেলায়
ইউটিউবে দেখি সূর্যাস্ত ! উড়ে যাওয়া সাদা বক,
দোয়েল শালিকের ঝাঁক !
রাখালিয়া বাঁশির সুর-
নিত্য শুনি মিউজিক প্লেয়ারে। বন্ধ জানালায়
হোঁচট খেয়ে ফিরে এলে উদাস দু'চোখ
পুরনো ডায়েরির বদলে, স্ক্রল করে যাই
পুরনো দিনের
ফেসবুক টাইমলাইন !
....
কিন্তু জানিস, ওতে কোন হৃদয়ছোঁয়া ঘ্রাণ আসে না।
ওতে খুঁজে পাইনা হারিয়ে যাওয়া পুরনো হলুদ খাম, কিংবা
চ্যাপ্টা হয়ে থাকা
গোলাপের পাপড়ি...

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৫

পে স্কেল নিয়ে চিকিৎসকদের হতাশা

আমি সরকারি কর্মচারি নই, চিকিৎসক হিসেবে সরকারি চাকরি করা ঠিক হবে কিনা তা নিয়ে প্রায়শই দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে 'না' এর পাল্লাটাই ভারী থাকে । কিন্তু সরকারি কর্মচারিদের জন্য ঘোষিত নতুন পে স্কেল আমাকে আরো বেশি নেতিবাচক ভাবনায় ফেলে দিয়েছে ।
নতুন পে স্কেল নিয়ে সিনিয়র চিকিৎসকদের হতাশা উদ্বেগের বিষয় । একজন চিকিৎসক লিখেছেনঃ '১৩ বছর চাকরি করে আমি এখন ৭ম গ্রেডে, আর প্রশাসন পুলিশ পররাষ্ট্র ক্যাডারে আমার ব্যাচমেটরা ৪র্থ গ্রেডে । চিকিৎসক হিসেবে এই অপমান সহ্য করা যায়না । হয়তো সরকারি চাকরি ছেড়েই দিতে হবে !'
সত্যিই অদ্ভুত ব্যাপার । একই বিসিএস এ উত্তীর্ণ হয়ে, একই পরিমাণ সময় সার্ভিস দিয়েও টেকনিকাল ক্যাডাররা তিন গ্রেড পেছনে কেন? কারা এই মূল্যায়ন করলো ? এর অর্থ কি এটাই যে প্রশাসন ক্যাডার বা পুলিশ ক্যাডার সরকারের জন্য অপরিহার্য? বাকিরা অপশনাল ? তারা হুকুমের গোলাম মাত্র?
এই অবমূল্যায়ন যে বার্তা জানান দিলো তা দেশের জন্য খুব খারাপ । এমনিতেই প্রতিবছর শতশত ডাক্তার সরকারি চাকরি ছেড়ে চলে যান । আগামীতে এই হার নিশ্চিতভাবেই বাড়বে । দেশের মানুষের জন্য এটা কোন ভালো সংবাদ নয় ।

মঙ্গলবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৫

ভিক্ষুক

'ভাইজান, কয়ডা টাহা দ্যান। সকাল থাইকা কিছু খাই নাই। বাচ্চা দুইডারেও কিছু খাওয়াইতে পারি নাই।'
আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে মোড় ঘুরতেই এক মহিলার কন্ঠ কানে আসে নাবিলের। মহিলার সাথে অল্প বয়সের দুটি বাচ্চা।
নাবিল দাঁড়াতেই মহিলা মুখ কাঁচুমাচু করে এগিয়ে আসে। বয়স ত্রিশের কোঠায় হবে বলে মনে হয়। রোগা নয়, শক্তসমর্থই।
-কেন, খাননি কেন? আপনার স্বামী নেই? আপনি কোন কাজ করেন না? প্রশ্ন করে নাবিল।
-ভাইজান, হবিগঞ্জ থাইকা ঢাকা আসছি কাজকামের খোঁজে। কোন কাম জোগাড় করবার পারি নাই। অহন ফিরা যামু তারও কোন ব্যবস্থা নাই। একটা টেহা নাই হাতে।

নামকরা রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সাথে বুফে ডিনার সেরে বাসায় ফিরছিল নাবিল। কোন কোন আইটেম অসাম লেগেছে আর কোনটা একটু খারাপ হয়েছে তা নিয়েই ভাবছিল সে। এমন সময়ে এরকম অনাহারি মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অপরাধী মনে হলো তার । আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল সে। আহা! আমি একবেলা খাবারের জন্য হাজার টাকা খরচ করলাম! কত কিছু খেলাম। অথচ এই মহিলা সকাল থেকে না খেয়ে আছে! আর বাচ্চা দুটো! আহা! না খেয়ে কী কষ্টই না হয়েছে বাচ্চা দুটির।
'আসেন মা, আমার সাথে আসেন। আমি আপনাদের খাওয়াবো। তারপর বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে যাবো। আমি নিজে টিকেট কেটে হবিগঞ্জের গাড়িতে উঠিয়ে দেবো'।
মহিলাকে তার পেছন পেছন আসতে বলে হাঁটতে শুরু করে নাবিল। ভালো রেস্টুরেন্টেই খাওয়াবে সে ওদেরকে। মহিলা অবশ্য একবার বলেছিল, ভাইজান, কিছু টাকা দেন। আমরা খাইয়া নিমু। কিন্তু নাবিল আজকে অল্প কিছু টাকা দিয়েই তার দায় সারতে চায় না। সে নিজে সাথে থেকে তাদেরকে খাওয়াতে চায়, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাবার সুব্যবস্থা করে দিতে চায়।
আনমনা হয়ে হাঁটতে থাকে নাবিল । শাহবাগ মোড়ে ভালো কোন খাবার দোকান নেই। কাঁটাবন বা হাতিরপুল এলাকায় দুএকটা ভালো রেস্তোরাঁ আছে। মিনিট পাঁচেক হাটলে কোন একটায় পৌঁছানো যাবে।
ধীরেই হাটছিল সে। রাস্তায় ভীড়ও তেমন নেই এখন। হাটতে হাটতে দেশের গরীব দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করার পরিকল্পনা করতে থাকে । এভাবে একজন দুজনকে একবেলা দুবেলা খাইয়ে কিছু হবে না। দারিদ্র্যের মূলে কুঠারাঘাত করতে হবে। বৈষম্য রোধ করার ব্যবস্থা করতে হবে। ধনীদের সম্পদ থেকে গরীবের হক আদায় করে নিতে হবে।
ভাবতে ভাবতে 'চায়না কিচেন' রেস্তোরাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় নাবিল । সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢোকার জন্য পেছন ফিরে তাকায় সে। কিন্তু একী? কোথায় গেল মহিলা? এদিক ওদিক ভালো করে নজর বুলায় সে । নাহ, কোথাও নেই। ওরা কি পেছনে রয়ে গেল?
কাঁটাবন মোড় পর্যন্ত ফিরে এসে ভালো করে খুঁজলো সে। কিন্তু কোথাও তাদের আর কোন হদিস পাওয়া গেলনা।
বাসায় ফিরতে ফিরতে একটা প্রশ্ন চকিতে উদয় হলো নাবিলের মনে- মহিলা কি তাহলে মিথ্যা বলেছিল? আসলে সে একজন পেশাদার ভিক্ষুক?