'ভাইজান, কয়ডা টাহা দ্যান। সকাল থাইকা কিছু খাই নাই। বাচ্চা দুইডারেও কিছু খাওয়াইতে পারি নাই।'
আজিজ সুপার মার্কেটের সামনে মোড় ঘুরতেই এক মহিলার কন্ঠ কানে আসে নাবিলের। মহিলার সাথে অল্প বয়সের দুটি বাচ্চা।
নাবিল দাঁড়াতেই মহিলা মুখ কাঁচুমাচু করে এগিয়ে আসে। বয়স ত্রিশের কোঠায় হবে বলে মনে হয়। রোগা নয়, শক্তসমর্থই।
-কেন, খাননি কেন? আপনার স্বামী নেই? আপনি কোন কাজ করেন না? প্রশ্ন করে নাবিল।
-ভাইজান, হবিগঞ্জ থাইকা ঢাকা আসছি কাজকামের খোঁজে। কোন কাম জোগাড় করবার
পারি নাই। অহন ফিরা যামু তারও কোন ব্যবস্থা নাই। একটা টেহা নাই হাতে।
নামকরা রেস্টুরেন্টে বন্ধুদের সাথে বুফে ডিনার সেরে বাসায় ফিরছিল নাবিল।
কোন কোন আইটেম অসাম লেগেছে আর কোনটা একটু খারাপ হয়েছে তা নিয়েই ভাবছিল সে।
এমন সময়ে এরকম অনাহারি মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে অপরাধী মনে হলো তার ।
আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল সে। আহা! আমি একবেলা খাবারের জন্য হাজার টাকা খরচ
করলাম! কত কিছু খেলাম। অথচ এই মহিলা সকাল থেকে না খেয়ে আছে! আর বাচ্চা
দুটো! আহা! না খেয়ে কী কষ্টই না হয়েছে বাচ্চা দুটির।
'আসেন মা,
আমার সাথে আসেন। আমি আপনাদের খাওয়াবো। তারপর বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে যাবো। আমি
নিজে টিকেট কেটে হবিগঞ্জের গাড়িতে উঠিয়ে দেবো'।
মহিলাকে তার পেছন
পেছন আসতে বলে হাঁটতে শুরু করে নাবিল। ভালো রেস্টুরেন্টেই খাওয়াবে সে
ওদেরকে। মহিলা অবশ্য একবার বলেছিল, ভাইজান, কিছু টাকা দেন। আমরা খাইয়া
নিমু। কিন্তু নাবিল আজকে অল্প কিছু টাকা দিয়েই তার দায় সারতে চায় না। সে
নিজে সাথে থেকে তাদেরকে খাওয়াতে চায়, নিরাপদে বাড়ি ফিরে যাবার সুব্যবস্থা
করে দিতে চায়।
আনমনা হয়ে হাঁটতে থাকে নাবিল । শাহবাগ মোড়ে ভালো কোন
খাবার দোকান নেই। কাঁটাবন বা হাতিরপুল এলাকায় দুএকটা ভালো রেস্তোরাঁ আছে।
মিনিট পাঁচেক হাটলে কোন একটায় পৌঁছানো যাবে।
ধীরেই হাটছিল সে।
রাস্তায় ভীড়ও তেমন নেই এখন। হাটতে হাটতে দেশের গরীব দুঃখী মানুষের জন্য কাজ
করার পরিকল্পনা করতে থাকে । এভাবে একজন দুজনকে একবেলা দুবেলা খাইয়ে কিছু
হবে না। দারিদ্র্যের মূলে কুঠারাঘাত করতে হবে। বৈষম্য রোধ করার ব্যবস্থা
করতে হবে। ধনীদের সম্পদ থেকে গরীবের হক আদায় করে নিতে হবে।
ভাবতে
ভাবতে 'চায়না কিচেন' রেস্তোরাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় নাবিল । সবাইকে নিয়ে
ভেতরে ঢোকার জন্য পেছন ফিরে তাকায় সে। কিন্তু একী? কোথায় গেল মহিলা? এদিক
ওদিক ভালো করে নজর বুলায় সে । নাহ, কোথাও নেই। ওরা কি পেছনে রয়ে গেল?
কাঁটাবন মোড় পর্যন্ত ফিরে এসে ভালো করে খুঁজলো সে। কিন্তু কোথাও তাদের আর কোন হদিস পাওয়া গেলনা।
বাসায় ফিরতে ফিরতে একটা প্রশ্ন চকিতে উদয় হলো নাবিলের মনে- মহিলা কি তাহলে মিথ্যা বলেছিল? আসলে সে একজন পেশাদার ভিক্ষুক?