এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৩

ইসলাম নারীর অবাধ বিচরণে বাধা দেয় !

ইসলাম নারীর অবাধ বিচরণে বাধা দেয় । অক্কে , মেনে নিলাম । 

এবার মনে করা যাক আপনার পরিবার এমন একটা জায়গায় বাস করে যার চারিদিকে ঘন জঙ্গল । সেই জঙ্গলে হিংস্র জন্তুর বিচরণ । একা কাউকে পেলে আক্রমণ করে । ক্ষতি করার চেষ্টা করে । আমার প্রশ্ন, এমন একটা পরিবেশে আপনি কি আপনার ভাইকে একা নিরস্ত্র অবস্থায় যেতে দেবেন ? 

উত্তর- না । বোনকে পাঠানোর তো প্রশ্নই ওঠে না । যদি প্রয়োজন হয় তাহলে নিশ্চয়ই চেষ্টা করবেন কয়েকজন মিলে অথবা অন্তত দুজন মিলে সশস্ত্র অবস্থায় যেতে ।

ধরা যাক, আপনার ছোট ভাই –যে এখনো নিজে নিজেকে রক্ষার উপযোগী হয়নি; কিন্তু যখন তখন বাইরে চলে যায় । আপনি কী করবেন ? আপনি কি তাকে কঠোর শাসনের ভেতর রাখবেন না ?

এখানে দুটো পক্ষ । একটি পক্ষ আপনি । আপনি আপনার ভাইকে ভালোবাসেন । তাই তার কোন ক্ষতি হোক চাননা । এজন্য তাকে কিছু বিধিনিষেধের আওতায় রাখেন । জঙ্গলে যাবার প্রয়োজন হলে তার সাথে যান ।
অপর পক্ষটি ঐ জঙ্গলের হিংস্র জন্তু-জানোয়ারের দল । তারা চায় তার শিকার একা একা নিরস্ত্র অবস্থায় বাইরে আসুক । সারাদিন-রাত তাদের আশেপাশে ঘোরাফেরা করুক ।
এখন , ঐ জন্তুরা যদি অভিযোগ করে আপনার বিরুদ্ধে যে আপনি আপনার ভাইকে অবাধ বিচরণ করতে দিচ্ছেন না । ব্যাপারটা কেমন হয় ?

সৃষ্টিকর্তা নারীকে তৈরি করেছেন পুরুষের তুলনায় দুর্বল ও নরম করে । এটা এখন শুধু তত্ত্বীয় বা অভিজ্ঞতানির্ভর কথা নয় , মেডিকেল সাইন্স দ্বারা প্রমাণিত । নারীর গড় উচ্চতা কম , বডি সারফেস এরিয়া কম, রক্তের পরিমাণ কম , রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম , মস্তিষ্কের ওজন কম , মাসল কম , কম ক্যালরি খরচ করে ইত্যাদি । আরো অনেক কিছু । এছাড়াও এমন কিছু দুর্বলতা আছে যা পুরুষের নেই ।

আর বাইরে কারা ঘোরাফেরা করছে ? এরা কী চায় ? জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মানিক কী করেছিল ? ইডেন কলেজে কী করে ছাত্রলীগ নেত্রীরা ? কী ঘটেছিলো সাভারে চলন্ত বাসে ? কী করেছিল নরপশু পরিমল জয়ধর ? বেশি জন্তু-জানোয়ারের উদাহরণ দিয়ে এই পোস্টটা কলুষিত করতে চাইনা । আশাকরি আপনারা বুঝতে পেরেছেন ।

ইসলাম দিতে চায় ‘সুরক্ষা’ ।
ইসলাম দিতে চায় ‘নিরাপত্তা’ ।
যেসব পুরুষ ইসলামের অনুশাসন মেনে চলে তারা কোন মহিলাকে দেখলে চোখ নামিয়ে নেয় । তাদের কাছ থেকে কোন ক্ষতির আশংকা নেই । কিন্তু মানিকের মত যারা ? তারাই অভিযোগ তোলে , ইসলাম নারীর অবাধ বিচরণে বাধা দেয় !
ঠিক যেন জঙ্গলের ঐ পশুগুলোর মত অভিযোগ ! শিকার পাবে না এই হতাশায় আসা অভিযোগ । হ্যা , ইসলাম তোমাদের মত হিংস্র জন্তু জানোয়ারের সামনে নারীর অবাধ বিচরণে বাধা দেয় । প্রয়োজনে মাহরাম পুরুষ (বাবা, ভাই , যাদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ এমন নিকতাত্মীয়) সাথে নিতে বলে । এটাই ইসলামের সৌন্দর্য । আর নারীর নিরাপত্তা ও সুরক্ষার রক্ষাকবচ । এটা নারীর প্রতি ইসলামের অবজ্ঞা বা কঠোরতা নয় , নিখাদ ভালোবাসা ।

এবার আসি আসল কথায় । ইসলাম আসলে নারীর অবাধ বিচরণে বাধা দেয় না । নারীর প্রকৃতিগত দুর্বলতার কারণে শুধুমাত্র নিরাপত্তার খাতিরে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে মাত্র ।
ইসলামী রাষ্ট্রে নারীরা গার্লস স্কুল ,মহিলা কলেজে শিক্ষকতা করবে । অফিসে চাকুরী করবে । ব্যাংকের মহিলা শাখায় চাকুরি করবে , ব্যাংকিং করবে । এভাবে প্রতিটি সেক্টরে নারীরা তাদের নিজস্ব পরিবেশে অবাধে কাজ করবে । পর্দা রক্ষা করে রাস্তাঘাটেও অবাধে বিচরণ করবে । কেউ কোন জন্তু-জানোয়ারের ভয় করবে না ।

মক্কায় থাকতেই আল্লাহর রাসুল(সাঃ) বলেছিলেন, একদিন সানআ থেকে হাজরামাউত পর্যন্ত একজন নারী একা একা হেঁটে যাবে । আল্লাহ ছাড়া আর কারো ভয় করতে হবে না । (সহীহ বুখারী , ৩৬১২)
আলহামদুলিল্লাহ , খেলাফতের সোনালী যুগে সত্যি সত্যিই এভাবে নারীরা একা একা দূর দূরান্তে ভ্রমণ করেছে । আল্লাহ ছাড়া কারো ভয় সেখানে ছিলনা । আমরা আবার এমন একটি সমাজে ফিরে পেতে চাই । আর সেটা মধ্যযুগে ফিরে গিয়ে নয় – এই একবিংশ শতাব্দীতেই ।

বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা পদবী কোনটা ? উত্তর- ডাক্তার

বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা পদবী কোনটা ? উত্তর- ডাক্তার । নামের সামনে ডাক্তার লিখতে পারে যে কেউ । চিকিৎসা সেবার যেকোন স্তরে যুক্ত থাকলেই একেকজন হয়ে ওঠেন মহ মহা ‘ডাক্তার’ ! মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং নিয়েছে তো নামের সামনে লিখেছে ‘ডাক্তার’, ফার্মাসিতে ডিপ্লোমা করেছে তো নামের সামনে বসিয়েছে ‘ডাক্তার’, এলএমএএফ ট্রেনিং নিয়েছে , ব্যস নামের সামনে ‘ডাক্তার’ ।

একজনের দেখলাম ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন , তো তিনিও যথারীতি ‘ডাক্তার’ ! এমনকি কোন ট্রেনিং নেই ডিপ্লোমা নেই – ঔষধের দোকান আছে, তিনিও ‘ডাক্তার’ ! তাদের সাইনবোর্ডের কীযে বাহার , দেখে যে কেউ টাসকি খেতে বাধ্য । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব ‘ডাক্তার’গণ মেডিসিন , বাত ব্যথা চর্ম , যৌন ও সেক্স (!) বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন !

সাইকেল- মোটরসাইকেলের মেকানিককে দেখিনি নামের সামনে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ বসাতে, উকিলের সহকারীকে দেখিনি নামের সামনে ‘এডভোকেট’ বসাতে , কাউকে দেখিনি ডক্টরেট না করেই নামের সামনে ডক্টর লিখতে । কিন্তু ‘ডাক্তার’ – এইটা বড় সহজ । যে ইচ্ছা নামের সামনে বসিয়ে দিতে পারে ‘ডাক্তার’ ।
এমবিবিএস বা বিডিএস সম্পন্ন করার কোন দরকার নেই !
এদের পসারও ভালো, বিকজ দে হ্যাভ ‘দালালস’ !

আমার এক স্কুলবন্ধু শুনেছিলাম কোন ভার্সিটিতে চান্স পায় নাই । আমি সেকেন্ড প্রফ দিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখি – মহাযজ্ঞ ! ওমা, কী বিশাল সাইনবোর্ড ! ডাঃ মোঃ ......। 

নামের নিচে হাবিজাবি কতকিছু লেখা । গেলাম তার চেম্বারে । সাজানো গোছানো ‘চেম্বার’, ডেন্টাল চেয়ার বসিয়েছে । ‘এখানে সবধরনের দন্তরোগের চিকিৎসা করা হয় !’ বললো - দোস্ত , ঢাকা থেকে ডিপ্লোমা ইন ডেন্টিস্ট্রি করে এলাম ।

ডিপ্লোমাগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেখানো হয় । উদ্দেশ্য , হেলথ ওয়ার্কাররা যেন প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে রেফার করতে পারে । বাট এলাস , সবাই হয়ে গেছে ‘ডাক্তার’ !

এতে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হচ্ছে জনগনের – অপুর্ণাংগ চিকিৎসা । রোগ আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা উপশম হলেই তাদের চিকিৎসা শেষ । ফলে শুরুতেই যথাযথ চিকিৎসা পেলে যে রোগ পরিপুর্ণভাবে সেরে যেত, তাই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে ‘মরণব্যাধি’ ।

আরেকটা ক্ষতি হচ্ছে পুরো চিকিৎসাবিজ্ঞানের । এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বাড়ছে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স । অনেক এন্টিবায়োটিক অলরেডি থার্ড জেনারেশন পর্যন্ত রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে । এই ক্ষতিটা সত্যিকারার্থে পুরো মানবজাতির ।

আমি জানি , গ্রামে গঞ্জে এই ডিপ্লোমাধারীরাই জনগনের কাছে সবচেয়ে সহজলভ্য । এবং আসলে তারা চিকিৎসা খাতে অনেক অবদান রাখছেনও । কিন্তু সেটার জন্য হেলথ এসিস্ট্যান্ট বা হেলথ অয়ার্কার থাকাই যথেষ্ট । ‘ডাক্তার’ সেজে মানব জাতির যে ক্ষতিটা করছেন তা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে ? সেই অধিকার কি তাদের আছে ?

সোমবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৩

বাংলাদেশে ডাক্তার হওয়া কত্ত সহজ !

বাংলাদেশে সবচেয়ে সস্তা পদবী কোনটা ? উত্তর- ডাক্তার । নামের সামনে ডাক্তার লিখতে পারে যে কেউ । চিকিৎসা সেবার যেকোন স্তরে যুক্ত থাকলেই একেকজন হয়ে ওঠেন মহ মহা ‘ডাক্তার’ ! মেডিকেল এসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং নিয়েছে তো নামের সামনে লিখেছে ‘ডাক্তার’, ফার্মাসিতে ডিপ্লোমা করেছে তো নামের সামনে বসিয়েছে ‘ডাক্তার’, এলএমএএফ ট্রেনিং নিয়েছে , ব্যস নামের সামনে ‘ডাক্তার’ । একজনের দেখলাম ডিপ্লোমা ইন মেডিসিন , তো তিনিও যথারীতি ‘ডাক্তার’ ! এমনকি কোন ট্রেনিং নেই ডিপ্লোমা নেই – ঔষধের দোকান আছে, তিনিও ‘ডাক্তার’ ! তাদের সাইনবোর্ডের কীযে বাহার , দেখে যে কেউ টাসকি খেতে বাধ্য । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসব ‘ডাক্তার’গণ মেডিসিন , বাত ব্যথা চর্ম , যৌন ও সেক্স (!) বিষয়ে বিশেষ অভিজ্ঞ হয়ে থাকেন !

সাইকেল- মোটরসাইকেলের মেকানিককে দেখিনি নামের সামনে ‘ইঞ্জিনিয়ার’ বসাতে, উকিলের সহকারীকে দেখিনি নামের সামনে ‘এডভোকেট’ বসাতে , কাউকে দেখিনি ডক্টরেট না করেই নামের সামনে ডক্টর লিখতে । কিন্তু ‘ডাক্তার’ – এইটা বড় সহজ । যে ইচ্ছা নামের সামনে বসিয়ে দিতে পারে ‘ডাক্তার’ । এমবিবিএস বা বিডিএস সম্পন্ন করার কোন দরকার নেই !

এদের পসারও ভালো, বিকজ দে হ্যাভ ‘দালালস’ !

আমার এক স্কুলবন্ধু শুনেছিলাম কোন ভার্সিটিতে চান্স পায় নাই । আমি সেকেন্ড প্রফ দিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখি – মহাযজ্ঞ ! ওমা, কী বিশাল সাইনবোর্ড ! ডাঃ মোঃ ......। নামের নিচে হাবিজাবি কতকিছু লেখা । গেলাম তার চেম্বারে । সাজানো গোছানো ‘চেম্বার’, ডেন্টাল চেয়ার বসিয়েছে । ‘এখানে সবধরনের দন্তরোগের চিকিৎসা করা হয় !’  বললো - দোস্ত , ঢাকা থেকে ডিপ্লোমা ইন ডেন্টিস্ট্রি করে এলাম । 

ডিপ্লোমাগুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা শেখানো হয় । উদ্দেশ্য , হেলথ অয়ার্কাররা যেন প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে হাসপাতালে রেফার করতে পারে । বাট এলাস , সবাই হয়ে গেছে ‘ডাক্তার’ !

এতে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হচ্ছে জনগনের – অপুর্ণাংগ চিকিৎসা । রোগ আপাতদৃষ্টিতে কিছুটা উপশম হলেই তাদের চিকিৎসা শেষ । ফলে শুরুতেই যথাযথ চিকিৎসা পেলে যে রোগ পরিপুর্ণভাবে সেরে যেত, তাই ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে ‘মরণব্যাধি’ ।

আরেকটা ক্ষতি হচ্ছে পুরো চিকিৎসাবিজ্ঞানের । এন্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে বাড়ছে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স । অনেক এন্টিবায়োটিক অলরেডি থার্ড জেনারেশন পর্যন্ত রেজিস্ট্যান্ট হয়ে গেছে । এই ক্ষতিটা সত্যিকারার্থে পুরো মানবজাতির ।


আমি জানি , গ্রামে গঞ্জে এই ডিপ্লোমাধারীরাই জনগনের কাছে সবচেয়ে সহজলভ্য । এবং আসলে তারা চিকিৎসা খাতে অনেক অবদান রাখছেনও । কিন্তু সেটার জন্য হেলথ এসিস্ট্যান্ট বা হেলথ অয়ার্কার থাকাই যথেষ্ট ।  ‘ডাক্তার’ সেজে মানব জাতির যে ক্ষতিটা করছেন তা কীভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে ? সেই অধিকার কি তাদের আছে ? 

মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৩

যান্ত্রিক জীবন

এ এক অন্য জীবন

এ এক মোহ কিংবা ঘোর

তোমরা বলো ব্যস্ততা কিংবা সফলতা

আমি বলি – ‘যন্ত্র হবার জন্য মানুষের আপ্রাণ প্রচেষ্টা’ !



এখানে হয়না দেখা ঊষা কিংবা গোধূলী

ঝড়ের রাতে ভেজা জানালায় চমকে দেয়া বিজলিছটা

হাতের মুঠোয় জোনাকির অপরুপ আলোর খেলা

খোঁজ রাখা হয়না চাঁদের । অমাবশ্যা কিংবা পুর্ণিমার ।

আলো আসে নিয়ন কিংবা সোডিয়াম লাইট হতে

তোমাদের এই সভ্য নগরে !



এখানে পাইনা শুনতে গফুর দাদার মাথা দোলানো পুঁথির সুর

তপ্ত দুপুরে উদাস গাড়োয়ানের বুকভাঙ্গা ভাওয়াইয়া গান

ঝিঁঝিঁ পোকার একটানা একঘেয়ে বিরহী বিলাপ

গহন অন্ধকারে হুতোমপেঁচার পিলেচমকানো ডাক

বসন্তে কোকিলের কুহু কিংবা বর্ষায় ব্যাঙ্গের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙে

চিরচেনা আদিম আহ্বান ।

যন্ত্রের ভেতর দিয়ে মায়ের কন্ঠটা ভেসে সুদূর থেকে

মাঝে মাঝে । কখনোবা তাও ঠেকে অপাংক্তেয় !

তোমাদের এই সভ্য নগরে !



ঝিমঝিম বিকেলে বাঁশঝাড় হতে ভেসে আসা ঘুঘুর ডাক

পায়রার বাকবাকুম – হয়না শোনা কিছুই ।

তোমাদের কানে শুধু রেডিও টিভির যান্ত্রিক শব্দের মোহ

গাড়ির হর্ণ যেন নিত্যদিনের সঙ্গীত !



তোমরা বলো ব্যস্ততা কিংবা সফলতা

আমি বলি – ‘যন্ত্র হবার জন্য মানুষের আপ্রাণ প্রচেষ্টা’ !

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৩

আরাধ্য নাইওর

মাঝে মাঝে কড়া বাতাসেও চোখ জ্বালা করে
ধুলোবালিতে জট বেঁধে যায় চুল
কখনোবা কপালের সাথে সাথে
কুচকে যায় মনটাও
দুপুরের রোদের তীব্রতায় ।

এমন সময় নাইওর যাওয়া যায়না
গাড়োয়ানের কন্ঠ শুকিয়ে হয়ে যায় মরা নদী
তৃষ্ণায় হাহাকার করে ওঠে মহিষের চোখ
খড়ের গাদায় বসে অবাক চেয়ে থাকে চড়ুই ছানা
শুষ্ক ধুলোর মত হৃদয় ওড়ে গাঁয়ের পথধরে ।

বিকেলের মৃদু হাওয়ায় কেঁপে উঠলে নাড়ীর আহ্বান
গরুর গাড়ির সাথে দোলে সমস্ত শরীর
তখনি জীবন প্রবেশ করে
আরাধ্য নাইওরে । শিকড়ের শ্বাসমূলে ।

জীবন

কারো কারো জীবন
হয়ে থাকে কাচের বলের মত
একটু উত্থান পতনেই হয়ে যায় চুরমার

কারো কারো জীবন হয়
রাবারের বল ; যেমন আমার
যত জোরে ছুড়বে নিচে
উপরে উঠবো ততই !

কারো কারো জীবন হয় বেগুন ঝাড়ের মত
উপড়ে ফেলা যায় সহজেই
কারও জীবন বটগাছের মত; যেমন আমার
নরম মাটিতেও শক্ত শেকড় গেঁথে
দাঁড়িয়ে থাকে অবিচল । ফেলে রাখো যদি কোথাও
কাটা ডাল , সেখানেও গজিয়ে নেব শেকড়
নির্ভয়ে করবো উঁচু শির !

কারো কারো জীবন হয় গতিহীন খালের মত
মাটি ফেলে বুজে দেয়া যায় সহজেই
আমার জীবন এক খরস্রোতা নদ
বাঁধ দিতে পারবেনা তোমাদের ঠুনকো কোদাল ।

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

আওয়ামী লীগের দায় বামদের ওপর চাপানোর হীনম্মন্যতা

অনেককেই বলতে শুনি ‘বামরা আওয়ামী লীগের মাথায় কাঠাল ভেঙ্গে খাচ্ছে’ । বামদের প্ররোচনায় আওয়ামী লীগ ইসলামবিরোধী কাজগুলি করছে । এতে করে পরোক্ষ ভাবে যেন বলা হয় ‘আওয়ামী লীগ আসলে ভালো দল ! ঐ বামদের কারণে কিছু ভুল-ভ্রান্তি করে ফেলেছে আরকি !’

ভাবটা এমন – ‘আমার ছেলে খুবই ভালো, যত দোষ ঐ নরেনের বেটার । আমার ছেলের সাথে মিশে সেই আমার ছেলেকে দিয়ে এই খারাপ কাজ করেছে !’

এমনকি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীও ২০০৯ সালে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক সমাবেশে তাঁর সেই জ্বালাময়ী বক্তব্যে এই কথা বলেছিলেন । বামদের তিনি হুতোমপেচার সাথে তুলনা করে বলেছিলেন –‘ফুলবাগান ধ্বংস করার জন্য একটি হুতোম পেঁচাই যথেষ্ট । কিন্তু হুতোমপেঁচা বসে গেছে প্রত্যেক ডালে ডালে, ফুলবাগানের কী হবে আল্লাহই জানে’ । প্রকারান্তরে আওয়ামী লীগকে ‘ফুলবাগানের’ সাথে তুলনা করা হয়েছে ।

আওয়ামী লীগের করা ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের দায় বামদের ঘাড়ে চাপিয়ে আমরা কী বুঝাতে চাই ? আওয়ামী লীগের ইসলামবিরোধী কর্মকান্ডের দায় বামদল কিংবা ‘র’এর ওপর চাপিয়ে আওয়ামী লীগকে দায়মুক্ত করা কিংবা আওয়ামী লীগের দায় লঘু করা কোনভাবেই সঠিক বিচার হতে পারে না । আওয়ামী লীগের দায় অবশ্যই আওয়ামী লীগের ওপরেই চাপাতে হবে , আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে ।

মানুষ সবসময় শক্তিমানের অপরাধের দায় দুর্বলের ওপর চাপিয়ে বাঁচতে চায় । বাড়ির কর্তা কারো কাছে অপমানিত হয়ে এসে ঝাল ঝাড়েন বউয়ের ওপর । ছেলে আর চাকর মিলে কোন অপরাধ করলে শাস্তি পায় চাকর ছেলেটিই ।

বামদের বেলায়ও সেটাই হচ্ছে । বামরা এমনিতেই পরিত্যক্ত হয়ে গেছে । আওয়ামী লীগ শক্তিশালী এবং নানান ধরণের মানুষের একটি দল । মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে যেকোনভাবেই হোক আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পক্ষে ছিল । অপরপক্ষে বেশিরভাগ ইসলামী দল ও ব্যক্তি নৈতিকভাবে পাকিস্তানের অখন্ডতার পক্ষে ছিলো ।

ইসলামপন্থি দলগুলোর ভেতরে কিছুটা হীনম্মন্যতাও রয়েছে । এইসব কারণে সোজাসাপ্টা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে অনেকেই চায় না । তারা কথা বলেন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে । আওয়ামী লীগ যেসব ইসলামবিরোধী কাজ করে সেগুলোর দায় সরাসরি আওয়ামী লীগের ওপর না চাপিয়ে দুর্বল পরিত্যক্ত বামদের ওপর এবং অদৃশ্য ‘র’এর ওপর চাপানো হয় । আর এই সুযোগটা আওয়ামী লীগ কাজে লাগায় । প্রতিবার নির্বাচনের আগে তারা ‘তওবা’ করে । মুখে ইসলামের বুলি আওড়ানো শুরু করে । সারাবছর শেখ হাসিনার নৌকার মালিক মা দূর্গা থাকলেও নির্বাচনের আগে ‘নৌকার মালিক তুই আল্লাহ’ বলে জপ শুরু করে । ‘মুজিবরের বেটি’কে  সরলপ্রাণ জনগন সহজে ক্ষমা করে দেয় ।


সবার কাছে আমার আহ্বান স্পষ্ট । দয়া করে আওয়ামী লীগের ইসলামবিরোধী সকল কর্মকান্ডের দায় সরাসরি আওয়ামী লীগের ওপর বর্তান । পরিত্যক্ত ‘বাম’দের ওপর চাপাবেন না । ‘বাম’দের হিসাব থেকে বাদ দিন । তারা এখন লাইফ সাপোর্টে আছে লাইফ সাপোর্ট খুলে ফেললেই তাদের জীবনাবসান হবে । বরং , ‘বাম’দের লাইফ সাপোর্ট দিয়ে বাচিয়ে রাখার দায়টাও আওয়ামী লীগেরই । জনগনকে এটাও স্পষ্ট করে জানানো দরকার । 

নববর্ষ উদযাপন কি অনৈসলামিক ?

পহেলা বৈশাখ উদযাপন নিয়ে তরুণ সমাজ যথারীতি দুটি পক্ষে সক্রিয় হয়ে ওঠে । একটি গ্রুপ গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যথারীতি মেতে ওঠে নানা উন্মাদনায় । আর ‘ইসলামপন্থি’ হিসেবে অনেকেই নববর্ষ উদযাপনের বিপক্ষে কট্টর অবস্থান নেন । ‘নববর্ষ উদযাপন’ করাটাকেই ‘শিরক’ , ‘অনৈসলামিক’ হিসেবে তুলে ধরেন । এতে করে একটা সন্দেহ সবার মনে ঢুকে যায় ‘এরা যে ইসলামী সমাজের কথা বলে , সেখানে তাহলে পহেলা বৈশাখ বলে কিছু থাকবে না’ !

খন্ডিত ও সংকীর্ণ চিন্তার মাধ্যমে ইসলামী সংস্কৃতিকে স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষিক করে দেখানোটা ঠিক নয় । ইসলাম মানেই সব স্থানিক সংস্কৃতিকে বিসর্জন দেয়া নয় ।

পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে যেসব কাজ করা হয় সেগুলোর একটা অংশ আছে বড় ধরনের গুনাহ এবং ঈমান – আক্বিদার পরিপন্থি । আরেকটা অংশ আছে যেগুলোকে শরীয়াতের দৃষ্টিতে ‘মুবাহ’ বলা যেতে পারে । ‘মুবাহ’ হচ্ছে এমন বিষয় যে সম্পর্কে ইসলাম বাধাও দেয়না , উৎসাহিতও করেনা । নেকীও নেই , গুনাহও নেই । পান্তা ভাত খাওয়া , সামর্থবানদের ইলিশ খাওয়া ,বৈশাখি মেলায় যাওয়া , বেলুন ও ঘুড়ি ওড়ানো, নাগরদোলায় চড়া , পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাওয়া, দোকানে ‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি এই অংশে পড়ে । সারাদেশের সাধারণ মানুষ নববর্ষ উদযাপন বলতে এগুলোকেই বোঝে । এগুলোই করে । এগুলো কি গুনাহের কাজ ? এগুলো কি ঈমান – আক্বিদার সাথে সাংঘর্ষিক ? উত্তর- না ।

বড় শহরগুলোতে বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী এবং এলিটদের একটা অংশ অতিরিক্ত যেসব কাজ করে – সকাল বেলা ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামক বিশেষ শোভাযাত্রা, ঢাকার রমনা বটমূলে এবং চট্টগ্রামে ডিসি হিলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । গান গেয়ে বৈশাখকে স্বাগত জানায় । কোথাও কোথাও কনসার্টের আয়োজন থাকে । এসব স্থানে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ থাকে ।

এই অংশটা ‘মুসলিমদের জন্য’ ঈমান পরিপন্থি কাজ । তবে অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের জন্য নয় । কারণ , তাদের ধর্মে এসব অনুমোদিত ।

পহেলা বৈশাখ দিনটিকে কোন পবিত্র দিন মনে করা , এদিনে দুঃখ কষ্ট দুর হয়ে যায় এরকম কোন বিশ্বাস করা ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে । পহেলা বৈশাখকে উপলক্ষ করে সংকীর্ণ 'জাতীয়তাবাদ' উস্কে দেয়া ,অন্তরে লালন করা এগুলোও মৌলিক আক্বীদার পরিপন্থি । কনসার্টে অংশগ্রহণ , ছেলেমেয়ে অবাধ মেলামেশার সুযোগ গ্রহণ করা স্পষ্ট সীমালংঘন । কিছু রীতি অনুসরণ (মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালানো , শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ , বিদঘুটে চেহারাধারন , প্রতিকৃতি তৈরি ) করা হাদিস অনুযায়ী উম্মতের অন্তর্ভুক্তি হতে বের হওয়ার কারণ । এসকল বিষয়ে মুসলিমদের সতর্ক থাকতে হবে ।

কিন্তু এসব না করেও নববর্ষ উদযাপন করা যায় । ‘শোভাযাত্রা’ নিজে হারাম নয় , এর সাথে যুক্ত হওয়া মুর্তি , বিভিন্ন বিদঘুটে প্রতিকৃতি , বেপর্দা অবস্থায় নারী পুরুষের একসাথে অংশগ্রহণ এসব উপাদান এটিকে দূষিত করেছে । এসব উপাদান বাদ দিয়ে শোভাযাত্রা করলে সেটাও হারাম বা গুনাহ না হয়ে ‘মুবাহ’ পর্যায়ে পড়বে । নিষিদ্ধ বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার না করে এবং নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার সুযোগ না রেখে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও করা যেতে পারে । বিভিন্ন স্থানে শিশু- কিশোর সংগঠন ‘ফুলকুড়ি’ এবং অন্যান্য ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে । এসব অনুষ্ঠান নারীদেরও উপভোগ করার সুযোগ রাখা হয় ।

কেউ কেউ নববর্ষ উদযাপনকে ‘হিন্দু’ সংস্কৃতি বলে পুরোপুরি বর্জন করার কথা বলছেন । ‘কোন ব্যক্তি যে জাতির অনুসরণ করবে সে তাদের অন্তর্ভূক্ত’ এই হাদীসকে ব্যবহার করছেন ।

কীভাবে এটা ‘হিন্দু’ সংস্কৃতি হলো ? বেদ, গীতা , ভগবত , রামায়নে কি পহেলা বৈশাখ উদযাপনের কথা বলা হয়েছে ? নেপালেও তো হিন্দুরা বাস করেন , সেখানকার হিন্দুরা কি পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন করেন ? না । তাহলে কেন ? কলকাতার হিন্দুরা আগে থেকে এটা পালন করেন । শুধুমাত্র এই যুক্তিতে এটাকে ‘হিন্দু সংস্কৃতি’ বলে চালানো ঠিক হবে না । কলকাতা একসময় এই অঞ্চলের রাজধানী ছিল । সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু ছিল । সেজন্য ওখানে হয়তো জাকজমক বেশি ছিল । ওখানকার খবরও প্রচারিত হয়েছিল বেশি ।

অন্য ধর্মের লোকেরা করলেই কি সব ‘পরিত্যাজ্য’ হয়ে যায় ? শিখরা তো দাড়ি রাখে এবং পাগড়ী পড়ে, তাই বলে কি সেসব মুসলিমদের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যাবে ?

মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়েছে অতি সম্প্রতি , ১৯৮৯ সাল থেকে । এটা নববর্ষ উদযাপনের কোন সার্বজনীন অনুষঙ্গ নয় । বাঙ্গালির হাজার বছরের ঐতিহ্যও নয় । এটাকে সহজেই বাদ দেয়া যেতে পারে ।

সুতরাং , ‘পহেলা বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন’ কে সরাসরি ইসলাম বিরোধী বলার কোন যৌক্তিকতা আমি দেখিনা । বিষয়টাকে এভাবে দেখা যেতে পারে- গ্লাসে করে কেউ মদ খায়, তাই বলে গ্লাসটাই হারাম ? তা নয় । মদবিহীন গ্লাসে আমরা পানিও খেতে পারি । এটাকে পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ উদযাপনের 'ইসলামাইজেশন' বলারও দরকার নেই । কথায় কথায় ইসলামাইজেশন শব্দটার ব্যবহার আসলে একধরণের হীন্মমন্যতা । ইসলামাইজেশন কেন ? বরং বলা যেতে পারে দূষিত যেসব উপাদান ঢুকেছে সেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পরিশুদ্ধকরণ


ইসলাম শুধু আরবের জন্য ছিল না , ইসলাম সারা বিশ্বের জন্য । বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে নানারকম স্থানীয় সংস্কৃতি রয়েছে । সবকিছুই ইসলাম বিরোধী নয় , হতেও পারেনা । ইসলামের মৌলিক সীমার ভেতরে যেকোন উৎসব গ্রহণযোগ্য । স্থানিক সংস্কৃতির সাথে আরব সংস্কৃতির মিল না থাকতে পারে , তাই বলে সবকিছুকে ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক করে দেখানো ইসলামের প্রসারের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হবে ।

আমি মনে করি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলেও সেখানে নববর্ষ উদযাপনের ব্যবস্থা থাকতে হবে । যেসব বিষয় মুসলিমদের জন্য ঈমান পরিপন্থি , অন্যান্য ধর্মাবলম্বিদের জন্য সীমিত পরিসরে সেসব উপাদানসহ উদযাপনের সুযোগ দিতে হবে । কারণ, তাদের ধর্মে তো সেসব নিষেধ নেই ।

মোটকথা , ইসলামের সীমার ভেতরে থেকে অবশ্যই নববর্ষ উদযাপন করা যাবে । যদি কেউ সন্দেহ পোষণ করেন তাহলে তিনি তাক্বওয়াবান হিসেবে নিজে বিরত থাকতে পারেন ।

আমি নিজে সাধারণত ঘুমিয়ে এবং বই পড়ে পহেলা বৈশাখ কাটিয়ে দেই । কখনো কখনো বিকেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হই । পান্তা , কাঁচামরিচ আমার মত মানুষের জীবনে নিত্যদিনের খাবার । আর ইলিশ আমার নাগালের বাইরে । তবে কেউ দাওয়াত দিলে মিস করিনা বটে !

বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, ২০১৩

মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তার ও আমার উপলব্ধি

প্রথমবার ২০১২ সালে পহেলা জুন মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো ‘জাতি’র নাতি সজীব ওয়াজেদ ‘জয়’ এর দুর্নীতি নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করায় ।
এবার গ্রেপ্তার হলেন ‘জাতি’র পিতার ৭২-৭৫ শাসনামল সম্পর্কে উইকিলিক্সে যে তথ্য প্রকাশিত হয়েছে তা প্রকাশের উদ্যোগ নেয়ায় ।

কৌতুহলী হয়ে আমি গুগলে সার্চ দিলাম – ‘প্রধানমন্ত্রীকে কটুক্তি’ ।
যা দেখলাম, প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে কেউ টু শব্দ করে পার পায়নি । সবাইকে জেলের ভাত খাইতে বাধ্য করা হয়েছে । অনেকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে ।

আল্লাহ ও মহানবী (সাঃ) সম্পর্কে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও কটুক্তি করার মহোৎসব শুরু হয় এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই । কিন্তু এজন্য কারো বিরুদ্ধেই মামলা হয়নি । নামকাওয়াস্তে দুয়েকটি মামলা হলেও সাজা হয়নি কারোই । যে দুয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল , সেটা করা হয়েছিল নবীপ্রেমিক মুসলিমদের ক্ষোভ থেকে ঐ কুলাঙ্গারদের রক্ষা করার জন্য । পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য । রাসুলের(সাঃ) ভালোবাসায় নয় । এমনকি পুরস্কৃত করারও নজির আছে ।  

এইসব বিবেচনা করে আমার অন্ধ চোখে কিছুটা আলোর সঞ্চার হলো । বুঝলাম , এই দেশে আপনি সব করতে পারেন , কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তার পরিবার সম্পর্কে কোন কথা বলতে পারেন না । বলতে পারেন , তবে সেটা হতে হবে অবশ্যই প্রশংসার তুফান ।

বুঝলাম , এখানে আল্লাহ ও রাসুল(সাঃ) কে কটুক্তি করলে শাস্তি হয়না , প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কিছু বললে শাস্তি অবধারিত । অর্থাৎ………

বুঝলাম, এখানে ‘জাতি’ মানে ১৬ কোটি জনগন নয় । ‘জাতি’ যদি জনগন হত তাহলে জাতির পিতা হতেন ইব্রাহীম (আঃ) । এখানে ‘জাতি’ মানে আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী । তাঁর বাবাই ‘জাতি’র বাবা ।

মোবাইলে ইনবক্স পুর্ণ হয়ে গেছে সরকারের মেসেজ দিয়ে । সরকার নাকি ‘ইসলাম ও মহানবীর অবমাননা বন্ধে বদ্ধপরিকর’ ।
মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করায় বুঝলাম ‘সরকার প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর পিতার সমালোচনা বন্ধে বদ্ধপরিকর’ । ‘সরকার ইসলাম ও মহানবীর অবমাননাকারীদের মুখোশ প্রকাশ বন্ধে বদ্ধপরিকর’ ।

তবে আমার দেশ সামান্য একটু ভুল করেছে বলে মনে হচ্ছে । উইকিলিক্সের তথ্য প্রকাশ করার বিষয়ে আগাম ঘোষণা না দিলেও পারতো । স্কাইপে কেলেংকারি প্রকাশের মত হুট করে একটা গুরুত্বপুর্ণ নথি প্রকাশ করে দিতে পারতো । মাহমুদুর রহমান গ্রেপ্তারের আগে অন্তত এক পর্ব জনগন পড়ার সুযোগ পেত ।

নাস্তিকদের দুনিয়াবী শাস্তি নেই কিন্তু

জ্ঞানপাপী শাহরিয়ার কবিরসহ অনেকেই বলছে নাস্তিকদের কোন দুনিয়াবী শাস্তি ইসলামে নেই । এদিকে হেফাযতে ইসলামের নামে মুসলিম জনগন চাচ্ছে আল্লাহ ও রাসুল(সাঃ) কে নিয়ে বিদ্রুপকারীদের মৃত্যুদণ্ডের বিধানসহ আইন । জনতা শ্লোগান দিচ্ছে ‘নাস্তিকদের বিচার চাই’ ।

‘নাস্তিক’ মানে সহজ বাংলায় ‘যে স্রষ্টায় বিশ্বাস করেনা’ ।
পৃথিবীর ধর্মগুলোর মূল ভিত্তি হচ্ছে ‘স্রষ্টার’ ধারণা । সে কারণে ‘নাস্তিকের’ আসলে কোন ধর্ম থাকেনা । একজন নাস্তিক না মুসলিম, না হিন্দু, না বৌদ্ধ, না খ্রিষ্টান । তার বিশ্বাসকে কেবল ‘নাস্তিকতা’ বলে চিহ্নিত করা যায় । ঈমানের জন্য যে মৌলিক সাতটি বিষয়ের ওপর বিশ্বাস দরকার তা না থাকায় এরা স্পষ্টতই ‘কাফের’ ।

এই অর্থে ‘নাস্তিক’দের দুনিয়াবী কোন শাস্তি নেই । আল্লাহ তা’লার ওপর ঈমান আনা না আনার স্বাধীনতা মানুষকে দেয়া হয়েছে আল্লাহর পক্ষ থেকেই । এদের শাস্তি হবে আখেরাতে এবং তা হবে কঠোর ও চরম লাঞ্চনার ।
( সুরা বাকারা ৯০, ১৯১, আল ইমরান- ১৭৮, সুরা নিসা- ১৫১, ১৬১, হামীম সাজদা- ২৭, আশ শুরা-২৬, আল মুজাদালাহ-০৪, ০৫ )

কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) কে যারা গালমন্দ করে, বিদ্রুপ করে তাদের জন্য রয়েছে সর্বোচ্চ শাস্তি । রাসুল(সাঃ) নিজেই এর নজির রেখে গেছেন । বিশ্বাসের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নেই । একজন হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ কিংবা সাধারণ নাস্তিক যে আল্লাহকে স্রষ্টা হিসেবে , সর্বময় প্রভু হিসেবে মেনে নেয় নি তার ব্যাপারে ইসলামের বক্তব্য স্পষ্ট । সে আখিরাতে কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হবে । কিন্তু দুনিয়ায় যদি সে ইসলামী রাষ্ট্রের নাগরিকও হয় তবু তার জন্য কোন শাস্তি তো নয়ই বরং নিরাপত্তা থাকবে । কিন্তু যদি কেউ আল্লাহ তায়ালাকে , রাসুল(সাঃ) কে নিয়ে নোংরামী করে , ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেয় , ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয় তাহলে তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রেখেছে ইসলাম ।

কয়েকটি নজির দেখুনঃ

কা’ব বিন আশরাফ ছিল মদিনার এক ইহুদী । এই ব্যক্তি কবি ছিল । উস্কানিমূলক কবিতা লিখে  মুশরিকদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতো ।  বদর যুদ্ধের পর মক্কায় গিয়ে কুরাইশদের উত্তেজিত করার চেষ্টা চালিয়েছিল । সে আল্লাহ্‌র রসুলকে অপমান করে এবং মুসলিম নারীদেরকে নিয়ে অশ্লীল কবিতা লিখত । এমনকি উম্মুল মু’মিনীনদের নিয়ে অশ্লীল কবিতা লিখত ।  বুখারী ও মুসলিম উভয় গ্রন্থেই তাকে হত্যা করার ঘটনা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়েছে ।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীদেরকে একত্রিত করে একদিন বলেন, কা’ব বিন আশরাফ আল্লাহ্‌ তায়ালা এবং তার রসুলকে কষ্ট দিচ্ছে । কে আছে যে তার সাথে বোঝাপড়া করতে পারবে?
তখন মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ (রাঃ) , আব্বাদ বিন বিশর (রাঃ), আল হারিস বিন আওস (রাঃ) , আবু আবস বিন হিবর (রাঃ) এবং কা’ব বিন আশরাফের দুধ ভাই আবু নায়েলা ওরফে সালকান বিন সালামাহ(রাঃ)  স্বেচ্ছায় এ দায়িত্ব পালনের জন্য এগিয়ে আসেন। মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(রাঃ)  বলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ (সাঃ) আপনি কি চান আমি তাকে হত্যা করি? তিনি বলেন, হ্যা। তারপর মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(রাঃ)  বলেন, তাহলে আমাকে অনুমতি দিন তার সাথে যে কোন ধরণের কথা বলার ।  তিনি বলেন, তুমি বল (যা তোমার বলা প্রয়োজন)।
তৃতীয় হিজরির রবিউল আউয়াল মাসের ১৪ তারিখ রাতের বেলায় আল্লাহ্‌র রসুলের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন, আর আল্লাহ্‌র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সফলতার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করতে থাকেন।
তারা রাতের বেলায় গিয়ে তাকে ডাক দেন। তাদের ডাক শুনে সে নেমে আসে, যদিও তার স্ত্রী তাকে এই বলে সতর্ক করেছিল যে, ‘আমি কেমন যেন মৃত্যুর গন্ধ পাচ্ছি’।
সে তাকে এই বলে আশ্বস্ত করে যে এ তো শুধু মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহ(রাঃ)  আর আমার দুধ ভাই আবু নায়লা (রাঃ) , তাছাড়া কোন ভদ্র লোককে রাতের বেলায় ডাক দিলে তার অবশ্যই সাড়া দেয়া উচিৎ তাতে যদি সে তলোয়ারের আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় তবুও। এদিকে আবু নায়লা তার সাথীদেরকে আগেই বলে রাখেন যে আমি যখন ঘ্রান শোঁকার ভান করে তার মাথা ধরবো তখন তোমরা তোমাদের কাজ সেরে ফেলবে।
সে নেমে আসার পর তাঁরা তার সাথে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে বিভিন্ন গল্প গুজব করেন ।  তারপর তাকে তাঁরা একটু বাহিরে গিয়ে চাঁদনী রাতে কিছু সুন্দর সময় কাটানোর আহবান জানান ।
বাইরে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আবু নায়লা(রাঃ)  তাকে বলেন যে, আরে তোমার মাথা থেকে তো চমৎকার ঘ্রান আসছে! কা’ব উত্তরে বলে যে আমার এমন একজন রক্ষিতা আছে যে আরবের সবচেয়ে সুগন্ধিনি নারী। আবু নায়লা(রাঃ)  বলেন আমি কি একটু তোমার মাথাটা শুঁকে দেখতে পারি? সে বলে, অবশ্যই।  নাও শুঁকে দেখ।  আবু নায়লা(রাঃ)  তার মাথা ধরে প্রথমে একবার শুঁকে ছেড়ে দেন, একটু পর তিনি আবার তার মাথার ঘ্রান শোঁকার কথা বলে (চুল ধরে) তার মাথাটা নিচু করে ধরে তার সাথীদেরকে বলেন  যে, নাও এবার তোমাদের কাজ সেরে ফেল । তখন তাঁরা তাকে হত্যা করে ফেলে। সাহাবীদের দলটি তাদের মিশন সফল করে ফিরে আসেন ।
অসতর্কতায় একজন সাহাবী হারিস বিন আওস(রাঃ)  তাদেরই তলোয়ারের আঘাতে আহত হন এবং তার রক্তক্ষরণ হতে থাকে। তারা বাকিউল গারকাদ নামক স্থানে এসে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীর ধ্বনি দেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের তাকবীর শুনেই বুঝে ফেলেন যে তারা আল্লাহ্‌র শত্রুকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছে। তারা আল্লাহ্‌র রসূলের কাছে এলে তিনি তাদেরকে বলেন তোমাদের চেহারা উজ্জল হোক! জবাবে তারাও বলেন, ইয়া রসুলাল্লাহ আপনার মোবারক চেহারাও উজ্জ্বল হোক। অতঃপর তারা তার ছিন্ন মস্তক আল্লাহ্‌র রসূলের কাছে হস্তান্তর করেন । রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের সফলতার জন্য আল্লাহ্‌র প্রশংসা করেন।
 (বিস্তারিত জানতে পড়ুন সীরাত গ্রন্থ ইবনে হিশাম ২য় খন্ড পৃ- ৫১, আর রাহীকুল মাখতুম পৃ- ২৪৮, সহীহ বুখারী ১ম খণ্ড পৃ- ৩৪১,৪২৫, ২য় খন্ড পৃ- ৫৭৭, সুনানে আবু দাঊদ ২য় খণ্ড পৃ- ৪২, ৪২)

উম্মু ওয়ালাদ  দাসীর ঘটনাঃ

একজন অন্ধ ব্যক্তির অধীনে একজন দাসী ছিল, যার নাম ছিলো উম্মু ওয়ালাদ। এই মহিলা আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অভিশাপ দিত । এবং তাকে তার মনিব তা না করার জন্য সাবধান করার পরেও সে বিরত হতো না!
এক রাতে সে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অভিশাপ দিয়েই যাচ্ছিলো। তখন তার মনিব একটি ছুরি নিয়ে তার পেটে বিদ্ধ করলেন এবং ভিতরে চাপ দিতে থাকলেন যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয় !
সকালে আল্লাহর রসূলের নিকট খবর পৌঁছল। আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লোকজনকে একত্র করে বললেন, আমি আল্লাহর নামে তোমাদের আদেশ করছি যে কাজটি করেছো উঠে দাড়াও। অন্ধ ব্যক্তিটি উঠে দাঁড়ালেন এবং হেঁটে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সামনে এসে বসে পড়ে বললেন,“হে আল্লাহর রসূল! আমিই সেই ব্যক্তি যে কাজটি করেছে। সে আপনাকে অভিশাপ দিতো এবং তাকে বিরত থাকার কথা বলার পরও সে বিরত হতো না! তার হতে আমার মুক্তার মতো সন্তান আছে এবং সে আমার প্রতি খুব সদয় ছিলো। কিন্তু গত রাতে সে আপনাকে অভিশাপ দিতে লাগলো। তাই আমি একটি ছুরি নিয়ে তাকে আঘাত করলাম এবং তাকে মেরে ফেললাম!”
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“জেনে রেখো যে তার রক্তের কোন মূল্য নেই।”
(দেখুন আবু দাঊদ – ৪৩৬১,  সুনানে নাসাঈ  -৪০৮১)

আবুল হাকিক ওরফে আবু রাফের ঘটনাঃ

সালাম ইবনে আবুল হাকিক ওরফে আবু রাফে’ ছিলো খায়বার অঞ্চলে বসবাসকারী একজন ইহুদী নেতা, হিজাযের বিখ্যাত ব্যবসায়ী । এই ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে কষ্ট দিয়েছিলো । এছাড়া সে ছিলো সেসব লোকদের অন্যতম যারা মক্কার মুশরিদেরকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উস্কানি দিতো । সে খন্দক যুদ্ধে মক্কার মুশরিকদেরকে উস্কানি দাতাদের অন্যতম হোতা । ৫ম হিজরী সনের যুলকা’দাহ কিংবা যুলহজ্জ মাসে রাসুল (সাঃ) এর অনুমতিক্রমে আব্দুল্লাহ ইবনে আতিক(রাঃ)  তাকে হত্যা করেন । ( বিস্তারিত পড়ুন আর রাহীকুল মাখতুম পৃ – ৩২১, ফাতহুল বারী সপ্তম খন্ড পৃ-৩৪৩ )

মক্কা বিজয়ের পর সবাইকে ক্ষমা করা হলেও যারা রাসুল (সাঃ) কে কষ্ট দিত, ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করত তাদেরকে ক্ষমা করা হয়নি । এমনকি কাবার গিলাফ ধরে ঝুলে থাকলেও তাদের হত্যা করার অনুমতি দেয়া হয় ।

এছাড়া আসমা বিনতে মারওয়ান নামক একজন মহিলাকে প্রাণদন্ডের কথা জানা যায় যে তার কবিতার মাধ্যমে কুৎসা রটাতো এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতো । (সুত্র নির্ভরযোগ্য নয় ।)
নিজে আল্লাহকে , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) কে মানা না মানার অধিকার সবার আছে । কিন্তু আল্লাহর পথ থেকে অন্যদের বিচ্যুত করার চেষ্টা, দাওয়াতের কাজে বাধা সৃষ্টি করা, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলদের নামে কুৎসা রটনা, মানুষকে ইসলাম সম্পর্কে বিভ্রান্ত করার অধিকার কারো নেই । যে ব্যক্তি এসব কাজ করবে সে ‘তাগুত’ হিসেবে চিহ্নিত হবে । আর তাগুতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে । 

হেফাযতে ইসলামের পক্ষ থেকে শাহবাগি কুলাঙ্গারদের শাস্তি দাবি করা হচ্ছে । এই দাবি অবশ্যই যৌক্তিক । শাহবাগি ব্লগাররা শুধু ‘নাস্তিক’ নয় , তারা আল্লাহ ও রাসুল (সাঃ) কে নিয়ে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করেছে । সুতরাং এদের জন্য ইসলাম নির্ধারিত শাস্তি রয়েছে এবং তা সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে । 

বুধবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৩

হেফাযতে ইসলামের শক্তি কতটা ?

হেফাযতে ইসলাম কী করে এত বড় ঐতিহাসিক একটি লংমার্চ আয়োজন করে ফেললো ? হেফাযতে ইসলাম কি সত্যিই এত সমর্থন পাওয়া এত সাংগঠনিক শক্তির অধিকারী সংগঠন ?

এই প্রশ্নটি আমার মাথায় ঘুরছিল । সরকারও ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেছে । এর জবাবটা সেদিন টেম্পুযাত্রী এক মুরুব্বীর আলাপ থেকে পেয়ে গেলাম । মাঝবয়েসী ভদ্রলোক আঞ্চলিক ভাষায় আরেকজন যাত্রীকে বলছিলেন- মনে করেন আমরা দশ ভাই । ভাইয়ে ভাইয়ে আমাদের খুব শত্রুতা । একজন আরেকজনকে সহ্য করতে পারি না । কিন্তু কোন কুত্তার বাচ্চা যদি আমার বাপ-মা তুলে গালি দেয় তাহলে কি আমরা দশ ভাই মিলে তার টুটি চেপে ধরবো না ?

ধর্মনিরপেক্ষতার ভেকধারী কুলাঙ্গাররা আল্লাহ, রাসুল (সাঃ), সম্মানিত সাহাবাগণকে নিয়ে নোংরা ভাষায় গালিগালাজ ও কটুক্তি করার কারণে এখানেও একই রকম ঘটনা ঘটেছে ।

বাংলার মুসলমানরা কম বিভক্ত নয় । ঈমান, আমল, ফিকাহ, রাজনীতি নানান কারণে নানা ভাগে বিভক্ত মুসলিমরা । কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সম্মান রক্ষার প্রশ্নে তারা এক হয়েছে । প্রস্তুত হয়েছে কুলাঙ্গার দের 'টুটি' চেপে ধরার ।

সরকারের মদদে দীর্ঘদিন ধরে চলা নোংরা ক্যাম্পেইনের বিষয়ে অনেকেই আগে থেকেই জানলেও একটা গণআন্দোলনের ডাক দেয়ার মত কেউ ছিলনা । এমন অবস্থায় আল্লাহর রহমতে সময়ের সাহসী কলমযোদ্ধা মাহমুদুর রহমানের মাধ্যমে এগিয়ে এলেন আল্লামা আহমদ শফী । তিনি ডাক দিলেন আন্দোলনের । আর তাতে ঝাপিয়ে পড়লো সবাই- যাদের ভেতর ন্যুনতম ঈমান আছে । জামায়াতে ইসলামীসহ সকল ইসলামী সংগঠন, বিএনপিসহ ডানপন্থি দলগুলি । বাদ ছিল শুধু পতিত বাম আর আওয়ামী লীগ ।

এই লংমার্চ শুধু হেফাযতে ইসলাম নামক কোন সংগঠনের নয় । সারা বাংলাদেশের সকল মুসলিমের ।

সংগঠন হিসেবে হেফাযতে ইসলামের শক্তি কতটুকু ? আমি মনে করি , শুধু হেফাযতে ইসলামের শক্তি আসলে ততটুকু, যতটা আমরা দেখেছিলাম মুফতি আমিনীর ডাকা হরতালে ।

বাংলাদেশে এখন দুটো পক্ষ । আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পক্ষ , আর শয়তানের পক্ষ । আর আওয়ামী লীগ শয়তানের পক্ষ হিসেবে ইতোমধ্যে নিজেদের চিহ্নিত করেছে । আল্লাহ আমাদের সারাজীবন তাঁর দ্বীনের পক্ষে থাকার তৌফিক দিন ।

শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৩

গরমে সুস্থ থাকার উপায়

হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের সময় লেখা 

শুরু হয়েছে ঈমান-আক্বিদা রক্ষার আন্দোলন । লং মার্চ, হরতাল , অবস্থান কর্মসূচি । এসময় সবাইকে খুব পরিশ্রম করতে হয় । এর ওপর যুক্ত হয়েছে আগুনঝরা রোদ আর ভ্যাপসা গরম ।
দীর্ঘসময় কীভাবে ময়দানে টিকে থাকবেন ? সেজন্য দরকার সুস্থ, সবল ও সতেজ থাকা ।

এই গরমে প্রথমেই যে সমস্যাটির মুখোমুখি হবেন তা হলো – পানিশুন্যতা (Dehydration). এটি আপনাকে দুর্বল করে দেবে খুব তাড়াতাড়ি । এমনকি আন্দোলনের ময়দান থেকে বের হয়ে যেতে পারেন আপনি ।

যা করতে হবেঃ

১। সাথে এক বা দুই লিটার সাইজের বোতলে পানি রাখবেন । আর রাখবেন খাবার স্যালাইন । খাবার স্যালাইন প্রথমেই পানিতে গুলিয়ে নিতে পারেন অথবা প্রয়োজন মোতাবেক । খেয়াল রাখবেন, পানি অথবা খাবার স্যালাইন ফুরিয়ে গেলেই আবার রিফিল করে নেবেন ।

২। ডাবের পানি খুব উত্তম একটি পানীয় । সুযোগ পেলেই ডাবের পানি পান করার চেষ্টা করবেন । এতে আপনার শরীরের আয়ন ঘাটতিও (Electrolytes) পুরণ হবে যা খুব জরুরি ।

৩। এছাড়াও আখের জুস পাওয়া যায় । সেটাও পান করতে পারেন ।

৪। কোল্ড ড্রিংকস বা জুস বলে বাজারে যা বিক্রি হয় যথাসম্ভব সেগুলো না খাওয়ার চেষ্টা করবেন ।

৫। চা বা কফি না খাওয়ার চেষ্টা করবেন । চা-কফি ঘন ঘন প্রস্রাব(Diuresis) ও পায়খানার জন্য দায়ী । এতে আপনার শরীরের পানি ঘাটতি বেশি হবে ।

৬। কখনো পানি না পেলে আশেপাশে ফার্মেসী থেকে Normal Saline কিনে নেবেন এবং সেটাই পান করবেন ।

দীর্ঘসময় না খেয়ে থাকতে হয় বা হতে পারে । অথবা পরিশ্রম সাধারণ অবস্থার চেয়ে বেশি করতে হতে পারে । যেমন দীর্ঘপথ হেটে মিছিল এবং ক্রমাগত শ্লোগান দেয়া । বিরূপ পরিস্থিতির মোকাবেলাও করতে হতে পারে । এসময় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যেতে পারে (Hypoglycaemia). এতে আপনি খুব দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়বেন এমনকি অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন ।

কী করবেনঃ

১। সাথে চিনি বা গুড় রাখার চেষ্টা করবেন । পানিতে চিনি বা গুড় মিশিয়ে শরবত বানিয়ে খাবেন । এতে আপনি খুব দ্রুত রিকভার করবেন । ভাত খেতে না পারলে একটু চিনি কিনে খাবেন ।
২। সাথে রুটি রাখতে পারলে খুব ভালো । এটা সেটা না খেয়ে চিনিযুক্ত বিস্কুট খাওয়ার চেষ্টা করবেন ।

অতিরিক্ত গরমে আরো যা হতে পারেঃ

১। মাংসপেশির অতিরিক্ত সংকোচন-প্রসারণ জনিত ব্যাথা(Muscle Cramp) হতে পারে । বিশেষ করে হাত এবং পায়ের মাংশপেশিতে ।
কী করবেনঃ 
ঠান্ডা ও নিরিবিলি কোন স্থানে গিয়ে বিশ্রামে থাকবেন । খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, শরবত ইত্যাদি খাবেন । পানিতে অতিরিক্ত ১ চামচ লবণ মিশিয়ে পান করবেন ।

২। হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন( Heat Syncope)দীর্ঘসময় শারীরিক পরিশ্রমের পর হঠাৎ কেউ অজ্ঞান হয়ে পড়তে পারেন এসময় ত্বক ঠান্ডা , নাড়ির গতি(Pulse) দুর্বল হয়ে যেতে পারে এবং রক্তচাপ কমে যেতে পারে ।
কী করবেনঃ  
ঠান্ডা ও নিরিবিলি কোন স্থানে নিয়ে বিশ্রামে রাখবেন । খাবার স্যালাইন, ডাবের পানি, শরবত ইত্যাদি খাওয়াবেন । মুখে খাওয়াতে না পারলে হাসপাতালে বা কোন ক্লিনিকে নিয়ে যাবেন । হাসপাতালে নেয়ার সময়েই ফার্মেসী থেকে একটি Normal saline 1 litre কিনে  নিয়ে যাবেন ।
ডান অথবা বাম কাত করে শোয়াবেন । যতদূর সম্ভব কাপড় খুলে ফেলবেন । ফ্যান থাকলে ভালো , ফ্যান না পেলে হাত পাখা দিয়ে বাতাস করবেন । কুসুম গরম পানি দিয়ে গা মুছিয়ে দেবেন । না হলে অন্তত শুকনো কোন কাপড় বা রুমাল দিয়ে গা মুছে ফেলবেন । গায়ের তাপমাত্রা খুব বেশি হলে বরফ বা আইসক্রিম কিনে বগলে, গলায় এবং কুচকিতে(Groin) রাখবেন । আইসক্রিম খাওয়াতেও পারেন । তবে মুখে খাওয়াতে না পারলে অবশ্যই হাসপাতালে নিতে হবে ।


অবহেলা করবেন না । শুধু দ্বীনি ভাই নয়, একজন ডাক্তার হিসেবে সবার জন্য এই পরামর্শ দিলাম । পড়া শেষে শেয়ার করে সবাইকে জানিয়ে দিন ।


বুধবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৩

অল্প টাকায় বিক্রি হওয়া আলেমরা ঐক্যের পথে বাধা

বাংলাদেশে আলেমরা নানান ভাগে দ্বিধাবিভক্ত । বিভিন্ন মতের রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐক্য হয় । কিন্তু আলেমদের ভেতরে ঐক্য হয়না । সীমিত আকারে যতটুকু ঐক্য মাঝে মাঝে হতে দেখেছি সেগুলো ছিল রাজনৈতিক কারণে । ইসলাম প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে কিংবা সেক্যুলার-নাস্তিক-ইসলামবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে দেখা যায় না । প্রতিবাদ করে তবে সেটা যার যার অবস্থান থেকে । ঐক্যবদ্ধ ভাবে এক প্লাটফর্মে থেকে না

এই বিষয়টি নিয়ে আমার ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে একদিন আলাপ করেছিলাম চট্টগ্রামের একজন বর্ষীয়ান আলেমের সাথে । তাঁর নাম উল্লেখ করছি না কারণ আমি চাইনা তাঁকে নিয়ে কেউ বিতর্ক করুক কিংবা কোন একটি কটু কথাও বলুক ।

তিনি আমার প্রশ্ন শুনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন । বললেন , তোমাদের কাছে আমরা লজ্জিত । সারাজীবন অনেক চেষ্টা করেছি আলেমদের ঐক্যবদ্ধ করার জন্য , কিন্তু পারলাম না । আসলে খুব কষ্ট নিয়ে তোমাকে একটা কথা বলছি – ‘বাংলার আলেমদের একটা অংশ ‘খুব অল্প টাকায়’ বিক্রি হয়ে যান’ ।

আমি অবাক হয়ে বেশ কিছুক্ষণ তাঁর দিকে তাঁকিয়ে থাকলাম । আমার হতাশ চোখ দেখে তিনি বললেন , হতাশ হয়ো না । আমরা পারিনি । তোমরা পারবে ইনশাআল্লাহ । ইনশাআল্লাহ একদিন ঠিকই সব আলেম এক প্লাটফর্মে দাঁড়াবেন ।

সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০১৩

শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন ঃ একজন মাটির মানুষ

সংগঠনের দায়িত্বশীলদের আমি পদবী দিয়ে বিচার করিনা । আমি বিচার করি জ্ঞান, রাজনৈতিক বুঝ, জনশক্তি ও ময়দান পরিচালনার ক্ষেত্রে নতুন নতুন কৌশল প্রয়োগের দক্ষতা, সমস্যার ‘মূল’ বুঝে ত্বরিত পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতা দিয়ে । এবং ব্যক্তিগত আচার-ব্যবহার । কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসাইন ভাইকেও আমি আমার সেই দৃষ্টিভংগী থেকেই বিচার করেছি । ফলে তিনি হয়ে উঠেছেন আমার খুব খুব প্রিয় একজন দায়িত্বশীল । তাঁর ব্যাপারে আমি এককথায় বলবো -তিনি একজন ‘মাটির মানুষ’ ।

দেলাওয়ার ভাই সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব নেয়ার পরেই মূলত তাঁর সাথে পরিচয় । তিনি যখন সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব নিলেন তখন একটা মজার ঘটনা ঘটলো । দৈনিক সমকাল লিখলো , শিবিরে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে !

তিনি যতবারই চট্টগ্রাম আসতেন , চেষ্টা করতাম সাক্ষাৎ করার । কখনো কখনো তিনি ডেকে নিতেন । প্রথমে বুকে জড়িয়ে নিতেন । এরপর গাল ধরে টেনে আদর করতেন । গায়েগতরে আমার মত 'ছোটখাট' হওয়ায় মনে আলাদা একটা শান্তি পেতাম । তাঁকে আমি দেখেছি সহজ সরলভাবে সঠিক চিন্তা করতে ।

দেলাওয়ার ভাই গ্রেপ্তার হয়েছেন । সরকারের চোখে ধুলা দিয়ে এতদিন যে বাইরে ছিলেন , সেটাই তো এক আশ্চর্য ! আল্লাহ তাঁকে হেফাজত করুন । এই কঠিন সময়ে আন্দোলনকে এই পর্যায়ে আনার জন্যে তাঁর সাহসী নেতৃত্ব বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনের ইতিহাস ভুলবে না ।

অবিলম্বে তাঁর মুক্তি দাবি করছি ।
বিষয়: রাজনীতি