এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১২

পাঁচটি হত্যা ও একটি কয়লা চুক্তি

২৯ ও ৩০ জানুয়ারি দু'দিনে বিরোধীদলের পুর্বঘোষিত মিছিলে গুলি চালিয়ে ৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে । 'হঠাত্‍ কেন পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী দিয়ে মাঠ গরম করলো সরকার ? মিছিলে গুলি করে কেন পাঁচটি প্রাণ কেড়ে নিলো হায়েনারুপী পুলিশ ?' এই প্রশ্নগুলো এখন দেশের মানুষের মনে বারংবার আন্দোলিত হচ্ছে ।
সরকার কি ভেবেছে মিছিলে গুলি চালালেই থেমে যাবে মানুষের মিছিল ! আসলেই কি তাই ? বিশ্বাস হচ্ছিলো না । আজকের প্রধানমন্ত্রীও তো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছেন । তার তো ভালোভাবেই জানার কথা মিছিলে গুলি চালিয়ে গদি রাখতে পারেননি আইয়ুব খান , ইয়াহিয়া খান , এরশাদ । এমনকি তার নিজের বিগত সরকারও । শুধু বাংলাদেশ নয় , বিশ্বের কোথাও মিছিলে গুলি চালিয়ে মানুষের প্রতিবাদী কন্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি । সাম্প্রতিক আলোচিত তিউনিসিয়া , মিশর এর জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ । এমনকি ২৯ তারিখে মিছিলে গুলি করে চারজনকে হত্যার পর ৩০ তারিখে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব মিছিল সমাবেশ হয়েছে , সেগুলোতে জনতার বাঁধভাঙ্গা উপস্থিতিই প্রমাণ করেছে গুলির অসাড়তা । অবশ্য স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ কখনো ইতিহাস মানে না । এবং সে কারনেই ঘটে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ।

কিন্তু এবারের এই হত্যাগুলো শুধু সরকারের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের কারণে নয় । তার সাথে যুক্ত হয়েছে আরো একটি কার্যকারণ । ২৯ তারিখেই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট একটি বিষয়ে ভারতকে সুবিধা দিয়ে একটি চুক্তি করেছে সরকার । রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগনের দৃষ্টিকে অন্যদিকে আটকে রাখার জন্যই এই হঠকারিতা এবং গুলি করে মানুষ হত্যা ।

সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায় , সুন্দরবন সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে বহুল আলোচিত কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ- ভারত যৌথ উদ্যেগে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২৯ জানুয়ারি । বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থর্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) লিমিটেডের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ।
২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফরকালে দু দেশের সরকার প্রধানের উপস্থিতিতে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের একটি এমইউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পিডিবি এবং ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ সংস্থা ন্যাশনাল থর্মাল পাওয়ার লিমিটেড (এনটিপিসি) যৌথভাবে বাগেরহাটের রামপালের গৌরম্ভা এলাকায় ১৩২০ মেগাওয়াট সম্পন্ন এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি করে। এটি ২০১৫ সালের মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে ।
ভারত সরকার যে অর্থ এখানে ব্যয় করবে তাতে ১৪ শতাংশ সুদ দিতে হবে ।
প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হবে ১৫ কোটি টাকা ।
এতে বাংলাদেশের লাভের চেয়ে ক্ষতির আশঙ্কা বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন ।

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৭০ ডলার দরে প্রতি টন কয়লা ভারত থেকে কিনতে হবে যা বিশ্ব বাজারের স্বাভাবিক দামের চেয়ে অনেক বেশি । বাংলাদেশের বড়পুকুরিয়া কেন্দ্র থেকে উত্তোলিত কয়লা মাত্র ৮৪ থেকে ৮৫ ডলারে বিক্রি হয় ।
এছাড়া বিশ্ব বাজারে বর্তমানে ১০০ ডলারে উৎকৃষ্টমানের কয়লা পাওয়া যায় । দেশে প্রায় তিনশ কোটি টন কয়লা মজুদ থাকার পরও তা ব্যবহার না করে কয়লা আমদানি কতটা যুক্তিসম্মত সেটা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে ।
তাছাড়া বড় পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়ে প্রায় চার টাকা । সেখানে নতুন এই কেন্দ্রে উৎপাদিত প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৪ থেকে ১৫ টাকা , জানিয়েছে পিডিবি ।
ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৮০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ।

এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কালো ও সীসাযুক্ত ধোঁয়া আকাশে ভেসে থাকার কারণে গোটা সুন্দরবনের পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন । সুন্দরবনের পাশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র না করার দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদগন । তারা সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের রক্ষার জন্য ঝঁকিপূর্ণ এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন না করে পরিবেশ জনিত প্রভাব এবং জনমত যাচাই সাপেক্ষে অন্য কোনো স্থান নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন ।

ভারতকে সুবিধা দিয়ে চুক্তি করার সময় দেশে অস্থিরতা তৈরি করার সরকারের এই কৌশল বেশ পুরনো । বিএসএফ এর নির্যাতন , আকাশপথ পানিপথ সড়কপথে বিনা মাশুলে ট্রানজিটের নামে করিডোর প্রদান , দেশকে পানিবিহীন মরুভূমিতে পরিনত করার প্রক্রিয়া , জরিপের নামে ভূমি প্রদান । আর কী দিলে তবে শোধ হবে বন্ধুত্বের ঋণ ? আর কত নতজানু হবে সরকার ?





মঙ্গলবার, জানুয়ারি 31, 2012

শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১২

বিদঘুটে চিন্তা


মেডিকেল কলেজে মাইক্রোবায়োলজি একটি গুরুত্বপুর্ণ সাবজেক্ট । মাইক্রোবায়োলজি মানে ব্যাকটেরিয়া , ভাইরাস , ছত্রাক , পরজীবিদের গোষ্ঠী উদ্ধার করা । ওরা কিভাবে খায় , ঘুমায় , প্রজনন করে ইত্যাদি । কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ‘tis’ যুক্ত যেকোন শব্দ মাত্রই সেটা এইসব ক্ষুদ্র জন্তুর কাজ !

এইসব ক্ষুদ্র জন্তু মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর শরীরের বিভিন্ন অংশে বাসা বাঁধে । এদের অধিকাংশকে আমরা খালি চোখে দেখতে পাইনা বলে বাঁচা । এরা আমাদের ত্বকে , হাতে পায়ে নাকে মুখে কীভাবে কিলবিল করছে ! খালি চোখে দেখতে পেলে আমরা সম্ভবত কোন কিছু খেতে পারতাম না । হ্যান্ডশেক করতে পারতাম না । পিচ্চিদের দেখলেই চুমু দিতে ইচ্ছে করে ! উফ !! অসম্ভব । দেখতেন জিহ্বা বের করা মাত্রই পুরো মুখ জুড়ে কত ক্ষুদ্র জন্তু কিলবিলিয়ে মনের সুখে ঘুরে বেরাচ্ছে ! আল্লাহ বাঁচিয়েছেন ।

মানুষের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে এই পরজীবি ক্ষুদ্র দানবরা । বেশিরভাগ রোগের কারন হলো এই আপাত অদৃশ্য অর্থাৎ অশরীরি পরজীবিরা । এদের একেকটার আবার গঠন একেকরকম  । নানান বিদঘুটে গড়নের হয় এরা । সেকেন্ড প্রফ পরীক্ষার সময় আমরা বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার নাম গালি হিসেবে ব্যবহার করতাম । ‘ শালা তুই একটা ই-কোলাই !’  একজন স্যারের নাম দেয়া হয়েছিল কক্কাই । কক্কাই হলো গোলাকৃতির ব্যাকটেরিয়া ।

মাইক্রোবায়োলজি পড়ার সময় হঠাত একসময় খেয়াল করলাম নিজেকে পরজীবি মনে হচ্ছে ! প্যাচাল না বাড়িয়ে আসল ব্যাপারটা খুলে বলি ।
এই বিশাল পৃথিবীটাতে মানুষসহ আরো কত প্রাণীর বাস , তাই না ! কত বন বনানী , গাছপালা পাহাড় পর্বত নদী নালায় ভরা এই পৃথিবীতল ।
মনে হত আমরা মানুষসহ সকল প্রাণী হলাম পরজীবি । এখানে গাছপালাগুলো যেন পৃথিবীর লোম । অন্য সকল প্রাণী হলো পরজীবি !
আমাদের শরীরে আছে ক্ষুদ্র  পরজীবিরা । হয়তো ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাসের শরীরেও আছে আরো ক্ষুদ্র কোন পরজীবি ! হয়তো সেইসব পরজীবির দেহেও আছে আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পরজীবি ! ওদের দেহে আছে আরো আরো…………..

হয়তো এই বিশাল পৃথিবীটা নিজেই একটা পরজীবি অন্য কারো শরীরে ! হয়তো সেটা অন্য কারো ……….! ওটা অন্য কারো …………!

মাথাটা চক্কর দিচ্ছে !!
একজন পরজীবির এর বেশি চিন্তা করা ঠিক হবে না ।
ধন্যবাদ ।

 শুক্রবার, জানুয়ারি 27, 2012

সোমবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১২

ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে কিছু ধারনার অসারতা

ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করলেই দেশ ‘রাজনীতিশুন্য’ হয়ে পড়বে , অনেকের কথাবার্তায় এমন হাহাকার দেখা যায় । এই ধারণাটি ভুল । রাজনীতি এমন একটা বিষয় যা পৃথিবীর আদিকাল থেকেই ছিল এবং থাকবে। এটা মরুভুমিতেও গজায় । কেউ কেউ বলেন “মাথা ব্যথা হয়েছে তো মাথা কেটে ফেলতে হবে কেন?” আমি বলি এই উদাহরণটা অযৌক্তিক । ছাত্ররাজনীতিকে মাথার সমতুল্য বলাটাই অযৌক্তিক। বরং ছাত্ররাজনীতি রাজনীতির একটা অঙ্গমাত্র । এটাতে এখন পচন ধরেছে । কোনও অঙ্গে যখন পচন ধরে তখন তাকে Amputation (কেটে ফেলা) করতে হয়। নইলে তা ধীরে ধীরে পুরো শরীরকেই অকার্যকর করে ফেলে । ছাত্ররাজনীতি একটা অঙ্গ যা এখন পচনের ধারায় চলছে । এটাকে কেটে ফেললে বৃহত্তর রাজনীতির জন্য কল্যাণ হবে বলেই আমার মনে হয় ।
অন্ততঃ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে । গতকালের (১৫/০১/১২) প্রথম আলোতে প্রথম পৃষ্ঠায় একজন ছাত্রের ছবি ছাপানো হয়েছে । রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তিনি । ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে পঙ্গু হয়ে এখন ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । এভাবে আর কতকাল ? কতজনের শিক্ষাজীবন এভাবে নষ্ট হবে ? তিনি কিন্তু কোন সংগঠনের নেতা বা কর্মী নন । ( অন্য ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মী হলেই বা কেন পঙ্গু হতে হবে ? ) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যেন এক একটা কারাগার । বিভিন্ন লেজুড়বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনের  হাতে বন্দী । কেউ ‘নিজের মত’ চিন্তা লালন করতে পারে না । প্রকাশ  করতে পারে না । একটা রাজনৈতিক  ব্যাক-আপ থাকতেই হয় । এটা কেন  হবে? এ কেমন স্বাধীনতা?  শিক্ষক রাজনীতির বিষয়েও অনেক  কথা আছে। ছাত্ররাজনীতির একটা বড়  অনুষঙ্গ কিংবা প্রভাবক হলো শিক্ষক  রাজনীতি। এটা নিয়ে পরে কথা বলব  ইনশাআল্লাহ্।


 সোমবার, জানুয়ারি 16, 2012

শুক্রবার, ৬ জানুয়ারী, ২০১২

শেকড়

ফিরে যেতে চাই সেইসব রৌদ্রোজ্বল
ধুলিময় মেঠোপথে
সেখানেই রয়ে গেছে শিকড় আমার
এই
এই অন্তঃসারশুন্য দৌড়
নিয়ে যাবে নিশ্চিত মরু প্রান্তরে
বড্ড নিষ্প্রাণ যেখানে
জীবনের বীজগুলো ।

ফিরতেই হবে আমায় ঐ বটতলায়
হয়তো মরে গেছে সেটি
তবুও ।
এ শুষ্ক জীবনে একটু খাঁটি মমতা চাই
মধুর মতন ।

খুঁজে পেতে হবে আমায়
পুরনো রাখাল বন্ধুকে
বন্ধুত্বের সংজ্ঞা জানেনা সে
জানেনা সুখের সংজ্ঞা
তবু সবচেয়ে সুখী
আর
বন্ধু সে সবচেয়ে খাঁটি ।


শুক্রবার, জানুয়ারি 6, 2012