এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৭

একক নাকি যৌথ পরিবার?

একক পরিবার নাকি যৌথ পরিবার? এই নিয়ে বিতর্ক ইদানিং বেশ জমে উঠেছে সামাজিক পরিমন্ডলে। কেউ কট্টরভাবে যৌথ পরিবারের পক্ষে, কেউ একক পরিবারের। নব্য নারীবাদিরা নতুন করে এই আলোচনার সূত্রপাত ঘটিয়েছেন। তারা বেশিরভাগই যৌথ পরিবারের বিরুদ্ধে প্রান্তিক অবস্থান নিয়েছেন। আবার পুরুষরা অনেকেই কট্টরভাবে যৌথ পরিবারের পক্ষ নিয়েছেন।
আমার অবস্থান মোটাদাগে পৃথক পরিবারের পক্ষে।
যৌথ পরিবারের বউ মানে যদি হয় পরিবারের 'সবার সেবক', তাহলে আমি এর বিরোধী। আবার একক পরিবার মানেই যদি হয় বাবা-মা, ভাই-বোনদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন থাকা, সেটাকেও আমি সমর্থন করতে পারি না।
মানুষের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হলো, মানুষ দিতে চায় কম, নিতে চায় বেশি। যৌথ পরিবারে এই সমস্যাটা বেশি প্রকট হয়ে দাঁড়ায়। কে ঠিকঠাক কাজ করে না, কে কতটুকু দেয়, কে বেশি নেয়- একটা যৌথ পরিবারে দিনশেষে সম্ভবত প্রত্যেকের ঘরে এগুলোই হয়ে ওঠে কমন আলোচনার বিষয়। গীবত আর চোগলখুরির চর্চাটা শুরু হয় সম্ভবত এখান থেকেই।
একটা পরিবারে টুকটাক অনেক কাজ থাকে। একটা বড় যৌথ পরিবারে সেই কাজের পরিমাণ হয় অনেক অনেক বেশি। কিন্তু সেখানে সত্যিকারার্থে কোন কর্মবন্টণ থাকে না। ফলে, অনেকে মিলে করলেও কাজের 'শেষ' হয় না। দিনশেষে তাই সবার মনে থাকে অতৃপ্তি, অন্যের প্রতি অভিযোগ, আক্ষেপ।
সবচেয়ে বেশি চাপ সহ্য করতে হয় বাড়ির 'বড় বউ'কে। তার নিজের জীবন বলতে কিছু থাকেনা।
সকাল বিকাল চা-নাস্তা বানানো, তিন বেলা ভাত-তরকারি রান্না, কাপড়-চোপড় ধোয়া, ইস্ত্রি করা, ঘরদোর সামলে রাখা- সহজ কাজ নয়। একজন গৃহিনী বউকে সারাদিনে যতবার এঘর ওঘর করতে হয়, হিসাব করলে তাতে তার প্রতিদিন কয়েক কিলোমিটার হাঁটা হয়ে যায়। কাউকে কাউকে সারাদিনে যে পরিমাণ রান্নাবান্না করতে হয়, সেই পরিমাণ রান্না করে হয়তো একটা বড়সড় রেস্টুরেন্ট চালানো যাবে। যে পরিমান কাপড় ধুতে হয় বা ইস্ত্রি করতে হয়, সেই পরিমাণ কাজ করে বোধহয় বাণিজ্যিকভাবে একটা লন্ড্রি দোকানই চালানো সম্ভব।
যৌথ পরিবারে কারো নিজস্ব সময় বলে কিছু থাকেনা। একটু বিশ্রাম, নিজের বাচ্চাটাকে একটু বেশি সময় দেয়া, স্বামীর সাথে একটু অতিরিক্ত গল্পগুজব- কোনোটাই নিশ্চিন্তে করা যায় না। মাথায় অনেক কাজের চাপ, আবার যেকোন সময় যেকেউ ডাক দিতে পারে।
'মা এক কাপ চা দাও না'। 'আমার ঘড়িটা কোথায়?' 'ভাবী এক গ্লাস পানি দাও।' 'বউমা একটু রান্নাঘরে যাও।' যেকোন সময় কানে আসতে পারে যেকোন আদেশ, কিংবা অনুরোধ।
ক্লাস নাইনে থাকতে প্রথম যেদিন আমি নিজে নিজে আমার সব কাপড় ধুয়েছিলাম, আমার কোমর ব্যাথা হয়ে গিয়েছিল। আমার মা এবং বোনেরা কত কষ্ট করে সেটা বুঝতে আর বাকি ছিলনা। এরপর থেকে নিজেই কাপড় ধুই।
গোসল করতে গেলেই আমি দুএকটা কাপড় ভিজিয়ে রাখি। তবুও সপ্তাহ শেষে একগাদা ময়লা কাপড় জমে থাকে। একজনের কাপড় নিয়েই যদি এই হয় অবস্থা, একটা পুরো পরিবারের কাপড় সামলানো কতটা কঠিন, ভাবা যায়?
প্রাপ্তবয়স্ক এবং বিবাহিত ছেলে মেয়েরা তাই পৃথক পরিবার চালানোই ভালো। তবে পৃথক পরিবার মানে বাবা-মা বিহীন পরিবার নয়। বাবা-মা'র দায়িত্ব থেকে মুক্তি নয়। শ্বশুর শ্বাশুড়ির দায়িত্ব থেকে মুক্তি নয়। ভাইবোনদের দায়িত্ব থেকে মুক্তি নয়। ভাই বোনদের মধ্যে যে বেশি স্বচ্ছল, তারই উচিত বাবা-মার দায়িত্ব নেয়া। তারই উচিত বেশি বেশি বাকি সবার খবর নেয়া। সবার বোঝা উচিত, বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেয়াটা বিরাট সুযোগ, এটা কোন বার্ডেন নয়। বাপ-মা কিংবা শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করার জন্য ছেলেমেয়ে বউ-জামাইদের রীতিমত প্রতিযোগিতা করা উচিত।
অনেক ক্ষেত্রে যৌথ পরিবারগুলো শেষ পর্যন্ত ভেঙ্গে যায় ঝগড়াঝাটির মাধ্যমে। এতে করে জীবনের বাকি সময়টাও আর স্বাভাবিক সম্পর্ক থাকে না। এমন তিক্ততা সৃষ্টি হবার আগেই পরিবার পৃথক হওয়া ভালো। এতে করে বাকি জীবনেও সম্পর্কগুলো ভালো থাকে। তিক্ততা নিয়ে, অসন্তুষ্টি নিয়ে যৌথ পরিবারে থাকার চেয়ে পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে পৃথক পরিবারে থাকাই ভালো। খারাপ সম্পর্ক নিয়ে কাছে থাকার চাইতে ভালো সম্পর্ক নিয়ে দূরে থাকা ভালো। 

শুক্রবার, ১৪ জুলাই, ২০১৭

ধার্মিকতা কাকে বলে?

সহযোগী অধ্যাপক ফজল সাহেব তার একটা ফাইল নিয়ে বিপদে আছেন। তার কলেজে নতুন জয়েন করা কয়েকজন শিক্ষকের বিল সংক্রান্ত ফাইল শিক্ষা অফিসে আটকে আছে। বহুদিন ধরে চেষ্টা তদবির করেও কুলকিনারা করতে পারছেন না। এর আগে অন্যদের পাঠিয়েছিলেন, কাজ হয়নি। এবার তাই নিজেই এসেছেন।
ভেবেছিলেন ঘুষ ছাড়াই হয়তো কাজটা হয়ে যাবে, কিন্তু এখন আর সেরকম ভাবতে পারছেন না। তাই নতুন শিক্ষকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে তিনি এসেছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।
চেয়ারে যিনি বসে আছেন তাকে বেশ পরহেজগার মনে হচ্ছে। নাম স.ম. তরফদার। এই লোক ঘুষ খায়? বিশ্বাস হচ্ছেনা ফজল সাহেবের।
-- ভাই সাহেব, আমার কলেজের ফাইলটা যদি একটু দেখতেন। অনেক মাস হয়ে গেল, ছেলেরা বেতন পাচ্ছে না। পরিবার নিয়ে বেশ কষ্টে আছে আরকি। যদি একটু তাড়াতাড়ি করা যেত।
-- দেখেন ফজল সাহেব, আপনার কাজটা জটিল। আমি কাজ করছি। তবে আরো সময় লাগবে। বুঝলেন ভাই, সময় লাগবে।
বেশ কিছুক্ষণ রিকুয়েস্ট করে ফজল সাহেব বুঝলেন, এ চিড়িয়া খালি হাতে কথা বলবে না। তিনি হাতে রাখা প্যাকেটটা বের করলেন।
-- ভাই, আপনার জন্য সামান্য হাদিয়া ছিল। বোঝেনই তো, ছেলেরা কষ্টে আছে। একটু দেখেন ফাইলটা তাড়াতাড়ি কিছু করা যায় কিনা...
চোখ মুখ কুঁচকে তাকালেন তরফদার সাহেব। যেন তাকে ঘুষ সাধাটা অপরাধ হয়ে গেছে। ফজল সাহেবও একটু বিব্রত হলেন। নাহ, একজন ভালো মানুষকে সন্দেহ করা ঠিক হয় নাই।
তিনি প্যাকেটটা আবার পকেটে পুরে উঠে দাড়ালেন। ঠিক এসময় তরফদার সাহেবের ত্রস্ত কন্ঠ কানে এলোঃ ভাই সাহেব, রমজান মাস না! বোঝেনই তো, রোজা আছি। চিন্তা করবেন না, আমি কাজ করে দেবো! আপনি ঐটা নিয়ে ইফতারের পরে যোগাযোগ করেন কেমন?
২.
আব্দুর রহমান সাহেব সৌদি আরবে থাকেন বিগত ১৫ বছর ধরে। এবার মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে দেশে এসেছেন। ড্রইং রুমে বসে নতুন বেয়াই এর সাথে গল্প করছিলেন।
-- বুঝলেন বেয়াই, ১৫ বছরে ৮ বার হজ্জ্ব করছি। আল্লাহর অশেষ রহমত বেয়াই। এরকম সৌভাগ্য কয়জনের হয়?
-- বলেন কী বেয়াই? নিয়ম অনুযায়ী তো এই সময়ে সর্বোচ্চ তিনবার হজ্জ্ব করতে পারতেন, নাকি!! ৮ বার কেমনে করলেন?
-- আরে বেয়াই, এইডা কোন ব্যাপার? তিনবার নিয়ম অনুযায়ী করছি, আর বাকি ৫ বার চুরি কইরা করছি আরকি বুঝলেন!!
৩.
তাবলিগে এক চিল্লা লাগিয়ে আজই বাসায় ফিরেছেন কবির সাহেব। সমস্যাটা হিলো, তিনি অফিস থেকে ছুটি নিয়েছিলেন মাত্র ৭ দিনের। এখন আরো ত্রিশ দিনের ছুটি দরকার। কী করা যায়?
তিনি গেলেন ডাক্তারের চেম্বারে। অসুস্থতার মিথ্যা সার্টিফিকেট দেয়ার জন্য ডাক্তারকে পীড়াপীড়ি করতে লাগলেন। সার্টিফিকেট দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিছুটা ক্ষুব্ধ কন্ঠে তিনি ডাক্তারকে বললেন- 'ডক্টর, আমি তো ভালো কাজেই সময় দিয়েছি তাই না? আপনি দিয়ে দেন, দিয়ে দেন, কোন অসুবিধা নাই। আপনার কোন পাপ হবে না ডক্টর। আপনিও সওয়াবের ভাগীদার হবেন!!!'
***
সাধারণভাবে অধার্মিকদের তুলনায় ধার্মিকরা ভালো মানুষ। সমস্যাটা হলো- কেউ কেউ ধর্ম পালন করছেন বটে, কিন্তু ধর্মের মূল স্পিরিট ধারণ করতে পারছেন না। ধর্মের মূল কথা তাদের ভেতরে প্রবেশ করছে না। ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম যে কেবল কিছু রীতি প্রথার সমষ্টি নয়, তা তারা উপলব্ধি করেন না।
ধর্ম মানুষের ভেতর যে সততা, মানবিকতা, ভালো ব্যবহার, মানুষকে না ঠকানো, মানুষের ক্ষতি না করা, মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর প্রতি দয়ার যে গুণ সৃষ্টির তাগিদ দেয়- তা অনেক ধার্মিকই ধারণ করতে পারছেন না। 

রবিবার, ৯ জুলাই, ২০১৭

সবকিছুই আল্লাহর, সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে

ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এই একটা বাক্যই একজন মানুষের জীবনকে অন্যরকম করে দিতে পারে। মানুষ মারা গেলে, কোন বিপদ হলে অথবা কিছু হারালে আমরা মুসলিমরা পড়ি- ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। যার অর্থ হলোঃ নিশ্চয় সবকিছুই আল্লাহর আর তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। মানুষ মারা গেলে এটা আমাদের সামনে একেবারে চাক্ষুষ এবং অকাট্য প্রমাণ হয়ে দাঁড়ায়, নিশ্চয় তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।
কোরআন শরীফে সুরা বাকারার ১৫৫-৫৬ নম্বর আয়াতে এই অংশটুকু আছে। যেখানে বলা হয়েছে- পৃথিবীতে মানুষকে ভয়, ক্ষুধা, দারিদ্র‍্য, জীবন ও সম্পদের ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করা হবে। মানুষের ভেতর তাদেরকে সুসংবাদ দেয়া হয়েছে- যারা এসময় ধৈর্যধারণ করবে, আর স্মরণ করবে- নিশ্চয়ই সবকিছু আল্লাহর এবং তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।
কোন কিছু হারালে বা কোন ক্ষতি হলে আমাদের খারাপ লাগে। আমাদের কষ্ট হয়। এটা স্বাভাবিক মানবিক প্রবৃত্তি। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে হতাশায় ভোগার কোন সুযোগ নেই। সেটা স্বাভাবিক নয়। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন অর্থ কী? নিশ্চয়ই আমাদের আল্লাহর কাছেই ফিরে যেতে হবে। তো, যেখানে আমি নিজেই এই পৃথিবীতে থাকবো না, আমার নিজের জীবনই যেখানে অনিশ্চিত, আমি নিজেই যেখানে যেকোন মুহূর্তে নাই হয়ে যাবো, সেখানে এই দুনিয়ার এইসব ক্ষতি নিয়ে ভেবে কী হবে?
ধরা যাক, আমার ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়ে গেছে। আচ্ছা, আজ যদি আমি মারা যাই, তাহলে এই ক্ষতির কী মূল্য থাকবে আমার কাছে? আমার যদি আরো হাজার কোটি টাকা থাকে তারই বা কী মূল্য থাকবে?
এটাই হলো 'ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন' এর স্পিরিট।
২.
গত জানুয়ারিতে সেন্টমার্টিনে গিয়েছিলাম। সকাল বেলা বাইসাইকেল নিয়ে দ্বীপের পশ্চিম তীর ধরে ছেড়া দ্বীপে গেলাম। সাধারণত ঐ পথে কেউ ছেড়া দ্বীপ যায় না। অনেক এবড়ো থেবড়ো, অনেক প্রবাল, পাথর আর ঝোঁপ ঝাড়। অনেকটা নির্জনও। অনেকটা পথ সাইকেল হাতে নিয়ে হাঁটতে হয়।
এই এডভেঞ্চারে কখন যে আমার মানিব্যাগ কোথায় পড়ে গেছে বুঝতে পারিনি। ফিরে এসে যখন শিপে ওঠার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন বুঝলাম মানিব্যাগ নেই। ৭-৮ হাজার টাকা, কয়েকটা আইডি কার্ড, এটিএম কার্ড, চাবি, কিছু জরুরি কাগজ- অনেক কিছু ছিল। যেপথে হারিয়েছি, ফিরে পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই। তৎক্ষনাৎ স্মরণ করলামঃ ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। খুব একটা মন খারাপ করলাম না।
জাহাজে ওঠার সময় আমাকে আশ্চর্য করে দিয়ে এক বন্ধু মানিব্যাগটা নিয়ে এলো, ওটা নাকি সে কুডিয়ে পেয়েছে। ওরা কয়েকজন ছেড়াদ্বীপ যায়নি, এমনিই হাওয়া খেতে বেরিয়েছিল, বালুর ওপর মানিব্যাগটা পড়ে থাকতে দেখে নিয়ে এসেছে। আমি খুব খুব খুবই আশ্চর্য হলাম। আল্লাহ আমাকে খুব ছোট একটা পরীক্ষা করলেন!! আলহামদুলিল্লাহ্‌ আমি ধৈর্যের পরীক্ষায় পাশ করলাম, আর তারপর আল্লাহ আমাকে আমার জিনিস পুরোটাই ফিরিয়ে দিলেন!!! সুবহানাল্লাহ।
মার্চ মাসের এক রাতে এক বন্ধুকে সি-অফ করতে কমলাপুর স্টেশনে যাচ্ছিলাম রিকশায়। মোটরসাইকেল আরোহী ছিনতাইকারিরা টান মেরে ব্যাগটা নিয়ে গেলো। ল্যাপটপ ছিলোনা, বই, স্টেথো, চাঁদর, হস্পিটালের ড্রেস, কিছু কাপড় এগুলো ছিল। স্মরণ করলামঃ ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন। যদি আমার রিযিকে থাকে, তাহলে ওটা ঠিকই ফিরে আসবে। আমার তো আরো বেশি ক্ষতি হতে পারতো, রিকশা থেকে পড়ে আহত হতেও পারতাম। আল্লাহর শোকর করলাম, মন খারাপ করলাম না।
ঘন্টা দুয়েক পরের কথা। তখনো কমলাপুর স্টেশনেই আছি। ১১ টার দিকে একটা ফোন পেলাম। মালিবাগ থেকে একজন লোক ফোন করে জানালেন, আমার ব্যাগটা কেউ একজন ফেলে রেখে গেছে। ব্যাগে থাকা আইডি কার্ডে নম্বর পেয়ে উনি ফোন করেছেন। অত রাতে আর গেলাম না। উনার কাছেই রাখতে বললাম।
সপ্তাহখানেক পর উনার বন্ধু মালিবাগের ট্রাফিক সার্জেন্ট এসে সবকিছুসহ ব্যাগটা আমাকে দিয়ে গেলেন।
পরপর দুটো ঘটনায় আমার বিশ্বাস অনেক পোক্ত হলো। আমি অন্তরে তৃপ্তি পেলাম, বিশ্বাসের তৃপ্তি। এরপরে আরো অনেক বড় বড় (আপাত) ক্ষতি হয়েছে। সাময়িক খারাপ লেগেছে, তারপর স্মরণ করেছি- ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি, আর তার কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে। যেটা আমার, সেটা যেকোনভাবে আমারই থাকবে। আর না থাকলেও কোন ব্যাপার না। সবকিছুই আল্লাহর, আমাদের সবাইকে তাঁর কাছেই ফিরে যেতে হবে। 

বৃহস্পতিবার, ৬ জুলাই, ২০১৭

Everybody will be paid back by his own Coin.....

গয়াল চন্দ্র এই শহরের একজন দুধবিক্রেতা। তিনি চিকন বুদ্ধির বাঙালি, তাই ১০ লিটার দুধে ৫ লিটার পানি মিশিয়ে ১৫ লিটার করলেন। সামান্য বুদ্ধিতে পাক্কা পাঁ-চ লিটার লাভ!! খুশিতে চোখ চকচক করে ওঠে তার।
দুধ বিক্রির টাকা পকেটে নিয়ে তিনি চাল কিনতে যান সাব মুদির দোকানে। সাবু মুদি তাকে 'অতি উত্তম চাউল', 'এরকম চাউল কোথাও পাইবেন না' ইত্যাদি বলে শেষে পাথর মেশানো চাল বিক্রি করে। ওজনেও আধা কেজি কম দেয়।
'কত লাভ করে ফেললাম' ভেবে বেজায় খুশি সাবু মুদি লাভের টাকা নিয়ে বাজারে যায় মাছ কিনতে। মাছ বিক্রেতা সুরুজ মিয়া তাকে ফরমালিন মেশানো পচা মাছ ধরিয়ে দেয় কেনা দামের দ্বিগুন মূল্যে। তার লাভ করতে হবে না?
কিছুক্ষণ পরে সুরুজ মিয়ার কাছে খবর আসে, তার ছেলেটা এক্সিডেন্ট করেছে। দ্রুত সে তার ছেলেকে হাসপাতালে নেয়। হাসপাতালের একজন ধান্দাবাজ দালাল 'ভালো চিকিৎসা' র ব্যবস্থা করে দেবার কথা বলে ভংচং বুঝিয়ে সুরুজ মিয়ার কাছ থেকে ভালো পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নেয়।
সেই ধান্দাবাজ বাড়ি ফেরার পথে পড়ে ছিনতাইকারীর হাতে। ছিনতাইকারী তার পেটে ছুরি মেরে সব টাকাপয়সা ছিনিয়ে নেয়।
পালিয়ে যাবার সময় ছিনতাইকারী ধরা পড়ে পুলিশের হাতে। পেদানি দিয়ে সব টাকা নিয়ে নেয় পুলশ। রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা বা ভিক্টিমের কাছে ফেরত দেয়া কোনটাই করেন না পুলিশ অফিসার।
সেই পুলিশের ছেলে আবার হয়ে পড়ে ইয়াবা আসক্ত.. মাদকের পেছনে টাকা ঢেলে প্রতিনিয়ত সে খালি করে দেয় বাবার পকেট...
***
যারাই অবৈধ পথে উপার্জন করে, তারাই মনে করে যে সে 'বিরাট লাভ' করে ফেলেছে। কিন্তু আসলে তা নয়। সে একজনকে ঠকাচ্ছে, আবার তাকে ঠকাচ্ছে অন্যকেউ। যেহেতু সমাজের প্রত্যেকেই একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল, আল্টিমেটলি সবাই চক্রাকারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বাইরে থেকে হয়তো মনে হয় অসৎ লোকগুলোই সফল, তারাই সুখে আছে। আসলে তা নয়। তারা নিজেরা হয়তো মনে করে এইভাবে তারা খুব ভালো থাকবে, আসলে তাও হয় না। অসৎ পথে উপার্জন করে শেষ পর্যন্ত কেউ পার পায় না। পরকাল তো পরের কথা, দুনিয়াতেই তারা পেয়ে যায় ফিরতি হিসাব।
প্রকৃতির নিয়ম হলো, এখানে কাউকেই ছেড়ে দেয়া হয় না। আজ কিংবা কাল, Everybody will be paid back by his own Coin.....