এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০১৩

নারী নেতৃত্ব হারাম ?- ১৩

প্রসঙ্গ নারী নেতৃত্ব, পর্ব-১৩: ডাঃ জাকির নায়েকের মতামত

প্রশ্নঃ মহিলারা রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন কিনা ?
প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ জাকির নায়েকঃ
‘‘পবিত্র কুরআন করীমে কথাও একথা উল্লেখ নেই যে, একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবে না । কিন্তু অনেকগুলো হাদীস এর সাক্ষ্য দেয়, যেমন একটি হাদীসে বলা হয়েছে ‘যে সমাজ মহিলাকে তাদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছে তাঁরা সফল হবে না’
কিছু গবেষক বলেন , এটি শুধু একটি বিশেষ সময়ের জন্য যার সাথে হাদীসটি সম্পর্কিত । বিশেষত , যখন পারস্য সমাজ একজন রানীকে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে । আবার অন্যদের মতে এটা সকল সময়কেই বুঝিয়েছে । চলুন আমরা খতিয়ে দেখি , একজন মহিলার জন্য রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া উচিৎ কিনা । যদি ইসলামী রাষ্ট্রে মহিলা প্রধান হন , তবে নিয়মানুযায়ী তাঁকে নামাজের ইমামতি  করতে হবে । যদি একজন মহিলা কোন নামাজে ইমামতি করে তবে তাঁকে কিয়াম , রুকু, সিজদা সহ বিভিন্ন কাজ করতে হয় । যদি পুরুষদের জামায়াতের সামনে  কোন মহিলা এগুলো করে, তবে এটা নিশ্চিত যে, তা নামাজে ব্যাঘাত ঘটাবে । বর্তমান সমাজে একজন মহিলা রাষ্ট্রের প্রধান হলে তাঁকে বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকতে হয় , যেখানে পুরুষরাও উপস্থিত থাকে । অনেক সময় রুদ্ধদ্বার বৈঠক করতে হয় যেখানে অন্য কেউ উপস্থিত থাকে না , কিন্তু ইসলাম কোন পুরুষের সাথে কোন নারীর এরকম রুদ্ধদ্বার বৈঠকের অনুমতি দেয় না ।
রাষ্ট্রপ্রধানকে অনেক সময় অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে –যাদের অধিকাংশই পুরুষ, ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে হয়, করমর্দন করতে হয়, ছবি উঠাতে হয় – যা ইসলাম নারীর জন্য কখনোই অনুমোদন দেয় না । একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে সবসময় সাধারণ জনগনের সাথে মিশতে হয় । তাদের সমস্যাসমূহ সমাধান করতে হয় । বিজ্ঞান আমাদের বলছে , একজন মহিলার মাসিক রক্তস্রাব চলাকালীন সময় তাঁর কতগুলো আচরণগত, মানসিক ও মনোবৈজ্ঞানিক পরিবর্তন দেখা যায় – ফলে এ পরিবর্তন তাঁকে নিশ্চিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যার সৃষ্টি করবে । বিজ্ঞান আরো বলে যে মহিলাদের পুরুষের তুলনায় অধিক কন্ঠ ও মৌখিক শক্তি রয়েছে এবং পুরুষের ভবিষ্যত সম্পর্কে কল্পনা করার শক্তি রয়েছে – যা একজন রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য অতিব গুরুত্বপুর্ণ । আর মেয়েদের মৌখিক দক্ষতা তার মাতৃত্বের জন্য খুবই  গুরুত্বপুর্ণ । একজন মহিলা গর্ভবতী হতে পারেন – এসময় তাঁর কয়েকমাসের বিশ্রাম প্রয়োজন – এসময়টিতে রাষ্ট্র পরিচালনার কী হবে ? আবার মা হিসেবে সন্তানদের লালন পালন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । তখন যদি একই সাথে ছেলেমেয়েদের লালন পালন ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হয় , তবে মহিলাদের তুলনায় পুরুষদের জন্যই তা করা অধিকতর সম্ভব , বাস্তবিক কারনেই ।
সুতরাং আমিও সেসব বুদ্ধিজীবির অন্তর্ভুক্ত যারা বলেন , মহিলাদের রাষ্ট্রপ্রধান করা উচিৎ নয় । কিন্তু এর দ্বারা এটি বুঝায় না যে , মহিলারা সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারবে না । তাদের মতামত প্রদান ও আইন প্রণয়নে অংশ নেয়ার আইনত অধিকার রয়েছে । হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় উম্মে সালমা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে সমর্থন ও নির্দেশনা দিয়েছেন, যখন সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায় সমস্যায় ছিলসুতরাং নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণে মহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারে ।  (উৎস - জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র)
.....................
এখানে খেয়াল করা দরকার,  ‘উচিৎ নয়’ আর ‘হারাম’ এক কথা নয় । ডাঃ জাকির নায়েক ‘হারাম’ বলেন নি ।  আবার ডাঃ জাকির নায়েক মহিলাদের যেসব সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন তার অনেকগুলোই এখনকার রাষ্ট্রপ্রধানদের না করলেও চলে । যেমন- নামাজে ইমামতি । অন্য দেশের পুরুষ রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক, করমর্দন না করলেও চলে । প্রকৃত সীমাবদ্ধতা বলতে মাসিক ঋতুস্রাব আর গর্ভধারণই বাকি থাকে । অনেক বড় বড় অফিসের প্রধান হিসেবে নারীরা কাজ করছে , সেখানে তারা যেভাবে এসব সীমাবদ্ধতাকে ম্যানেজ করছে- একজন রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে সেটা কঠিন হলেও অসম্ভব নয় । তবে এটা সাধারণ ও বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য যে মেয়েরা বেশি আবেগপ্রবণ এবং কম দূরদর্শী । কিন্তু পুরুষ মাত্রই সকল নারীর চেয়ে বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন নয় সেটাও সত্য । এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে । একজন নারীও অনেক পুরুষের চেয়ে বাস্তববাদী ও দূরদর্শী হতে পারেন ।

এখন তো খিলাফত ব্যবস্থাই নেই । ইসলামী রাষ্ট্রও নেই । সেজন্য ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান একজন নারীকে করা হবে কিনা সে আলোচনা এই মুহূর্তে খুব একটা জরুরী নয় । এই আলোচনা এজন্য করতে হচ্ছে- একদল লোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ বলে ঢালাও ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছেন । অথচ প্রকৃতপক্ষে নারী নেতৃত্ব ‘হারাম’ নয় । ঢালাওভাবে হারাম বলার সুযোগ নেই । হারাম হলে নারীদের ঘরের কোণে বসে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার সুযোগ থাকেনাএটা বাস্তবসম্মত নয়, ইসলামের ইতিহাসও তা বলেনা ।
 ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন, ইসলামী রাষ্ট্রের প্রধান নারী হওয়া উচিৎ নয় । আমিও এটা সমর্থন করি । আর আমি  এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত বিশ্বাস রাখি যে, কোন নারী কখনো সমগ্র মুসলিম উম্মাহর নেতা বা খলিফা হবেনা কেউ দাবিও করবে না কারণ- যখন মুসলমানরা খিলাফতের উপযুক্ত হবে তখন অনেক পুরুষ থাকবে যারা যেকোন নারীর চেয়ে সকল যোগ্যতায় উৎকৃষ্ট যোগ্যতাবলেই তাঁরা নেতৃত্বে থাকবেন এটা স্বাভাবিকভাবেই হবে । মুসলিম নারীরা উম্মাহর মঙ্গল কিসে হয় তা বুঝবেন । সেজন্য বনী ইসরাইলীদের মত যা আসলে হারাম নয় তাকে 'হারাম'  করে নারীদের দূরে রাখার কোন প্রয়োজন হবেনা

বৃহস্পতিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৩

নারী নেতৃত্ব হারাম ? - ১২

প্রসঙ্গ নারী নেতৃত্ব, পর্ব-১২নারী নেতৃত্ব সম্পর্কিত হাদীসের পর্যালোচনা

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়ে ইরানে একবার (৬২৯ থেকে ৬৩২ সালের  দিকে) রোম সম্রাট হিরাক্লিয়াসের আক্রমণে ইরানের রাজা নিহত হলে তাঁর মেয়েকে সিংহাসনে বসিয়েছিল ইরানের পরিষদ সে সংবাদ রাসুল (সাঃ) এর কাছে পৌঁছলে তিনি যে মন্তব্য করেছিলেন , সেটিই নারী নেতৃত্বের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্ত দলীল হিসেবে তুলে ধরা হয়ে থাকে যদিও তাতে বলা নেই যেনারী নেতৃত্ব হারাম
বুখারী শরীফে হাদীসটি সংকলিত হয়েছে
‘‘উসমান ইবনে হাইয়সাম (রঃ) ......... আবু বাকরা (রাঃহতে বর্ণিত তিনি বলেন, একটি কথা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা জঙ্গে জামাল (উষ্ট্রের যুদ্ধ) এর সময় আমাকে বড়ই উপকৃত করেছেন (সে কথাটি হল) নবী (সাঃ) এর নিকট যখন এ সংবাদটি পৌঁছল যে, পারস্যের লোকেরা কিসরার কন্যাকে তাদের শাসক নিযুক্ত করেছে , তখন তিনি বললেনঃ সে জাতি কখনোই সফলকাম হবেনা, যারা তাদের শাসনভার কোন রমনীর হাতে অর্পণ করে’’
(সহীহ বুখারী, ১০ম খন্ড, ফিতনা অধ্যায় , হাদীস নং- ৬৬১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত)    
এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, এই হাদীসের রাবী আবু বাকরা (রাঃ) – খলিফা আবু বকর (রাঃ) নন অন্য একজন

এখন আমাদের এই হাদীসটি সম্পর্কে মোটামুটিভাবে বিস্তারিত বিশ্লেষণে যেতে হবে
() রাবীর দুর্বলতাঃ হাদিসটি রাবীর কারণে দুর্বল হযরত আবু বাকরার  (রাঃ) ব্যাপারে অভিযোগ আছে যেতিনি (হযরত ওমর রাঃ এর খেলাফতকালে এক মামলায়মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ার অপরাধে আদালতে শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছিলেন
(সূত্র-“দ্য ফরগটন কুইন্স অব ইসলাম”- ফাতেমা মার্নিসি)
আর ফাতেমা মার্নিসির এই অভিযোগ বা তথ্যের সত্যতার বিরুদ্ধে কেউ কোন বক্তব্য বা প্রমাণ দিয়েছেন বলে আমি এখনো পাইনি  
তাঁর ব্যাপারে ইতিহাস গ্রন্হতারিখ আল তাবারীথেকে আরো জানা যায়-
উটের যুদ্ধে আলী (রাঃ) বিজয়ী হয়ে বসরায় গেলে আবু বাকরা (রাঃ) তাঁকে এ হাদিস শোনান এসময় তিনি ইরাকের বসরা শহরে বাস করতেন তিনি উটের যুদ্ধে আলী (রাঃ) এর পক্ষে যোগ দেননি
হাদিসটি তিনি বলেছেন আয়েশা (রাঃ) যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর এর আগে এমনকি যুদ্ধের সময়েও বলেছেন বলে জানা যায় না সেজন্য সংশয়বাদী আর কট্টর চিন্তাধারার কেউ কেউ সন্দেহ পোষণ করেন যে , জামাল যুদ্ধে আয়েশা (রাঃ) যদি জিতে যেতেন তাহলে এ হাদিস তিনি প্রকাশ করতেন কিনা !

() বর্ণনার দুর্বলতাঃ  যেসকল গ্রন্থে এই হাদীসটি উল্লেখিত হয়েছে সবখানেই  মাত্র এই একজন সাহাবীরই বর্ণনায় এটা জানা কথা যে, একাধিক বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী এবং বর্ণনার ধারাবাহিকতা হাদীসের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর হাদীসটি তিনি একবারই বর্ণনা করেছেন রাসুল (সাঃ) এর ইন্তেকালের প্রায় ২৫ বছর পরে জঙ্গে জামালের মত মুসলিম উম্মাহর একটি বিশেষ ঘোলাটে পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে আর ঈমাম মালেক (রঃ) এর একটি নীতি ছিল যে- কারো ব্যাপারে একবারও মিথ্যা বলার নজীর থাকলে তিনি তাঁর কাছ থেকে হাদীস নিতেন না

এই হাদীসকে দুর্বল বলেছেন গত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ হাদীস গবেষক শায়খ নাসিরউদ্দিন আলবানী   বুখারী শরীফে আছে মানেই যে তা নিঃসন্দেহে সহীহ তা বলার এখন আর সুযোগ নেই  হাদীস গবেষকগন নানা বিষয় বিবেচনা করে বুখারী হতেও বেশ কিছু হাদীসের দুর্বলতা চিহ্নিত করেছেন মালয়েশিয়ার IIUM বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক, আফগান স্কলার Mohammad Hashim Kamali  রচিত A textbook of Hadith Studies বইয়ের তথ্য অনুযায়ী- যখন ইমাম বুখারী(রহঃহাদীস সংগ্রহের কাজ শেষ করেন , তখনই সেই সময়ের ইসলামী পণ্ডিতগন ( আহমাদ ইবনে হাম্বল রঃ সহ) বুখারী রহঃ নির্বাচিত সহীহ হাদীসের কয়েকটিকে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেন এছাড়া বিভিন্ন সময়ে হাদীস বিশারদগন বুখারী শরীফের ৮০ জন রাবী এবং ৮৯ টি হাদীসের দুর্বলতা চিহ্নিত করেছেন, সন্দেহ প্রকাশ করেছেন আর মানবরচিত কোন গ্রন্থই ভুলের উর্ধ্বে নয়, এটা উল্লেখ করেছেন বুখারী(রঃনিজেও

এখন আমরা যদি হাদীসটির এই দুর্বলতা উপেক্ষা করে ধরে নেই যে হাদীসটি সহিহ, তাহলে যেসব প্রশ্ন আসে-
রাসুল (সাঃ) এর সময়ে বর্তমান ছিল এমন সব বিষয়েই তো কুরআন ও হাদীসে স্পষ্ট করে হালাল হারামের বর্ননা দেয়া হয়েছে মদ খাওয়া হারাম, জুয়া খেলা হারাম ইত্যাদি আর এই হাদীসে স্পষ্ট যে , রাসুল (সাঃ) যখন এই উক্তি করেন তখন একজন নারী শাসক সম্পর্কেই উক্তিটি করেছিলেন এমন একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় যদিহারামহয়- তাহলে রাসুল (সাঃ) স্পষ্টহারামনা বলে কেন অস্পষ্ট ভাষায়উন্নতি করতে পারবে নাবললেন ? রাসুল (সাঃ) যেসময় বললেন যেঐ জাতি উন্নতি করতে পারবে না’ , সেসময়েই তো এও বলতে পারতেন যেএটি হারাম তাহলে কি আমরা মনে করবো যে, সুযোগ থাকা সত্বেও রাসুল (সাঃ) উম্মতকে একটি হারাম সম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়ে যাননি ? (নাউযুবিল্লাহ) এটা কি সম্ভব ? এখানে আমাদের বক্তব্যটি ভালোভাবে খেয়াল করুন যে- রাসুল (সাঃ) কী বলেছেন সেটা নিয়ে আমাদের কোন সংশয় নেই, আমাদের সংশয় হচ্ছেরাসুল (সাঃ) আদতেই তা বলেছিলেন কিনা ?’  যদি আসলেই তিনি এটি বলে থাকেনই- যেখানে তিনিসুযোগ থাকার পরও’  স্পষ্ট করে হারাম ঘোষণা করে যাননি, সেখানে আমরা কেন বনী ইসরাইলের মত নিজেরাহারামবানাচ্ছি ?
পরবর্তী প্রশ্ন জাগে যে- এই বক্তব্য কি সবসময়ের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য ? রাসুল (সাঃ) কি এটি সাধারণভাবে সবসময়ের জন্য, সবার জন্য বলেছিলেন নাকি অব্জেক্টিভলি ঐ সময়কার পারস্য সাম্রাজ্যের ব্যাপারে বলেছিলেন ?
যেহেতু কিসরার ঘটনা শুনে রাসুল (সাঃ) এই উক্তিটি করেছিলেন , সেজন্য প্রথমেই  এটা মনে করা স্বাভাবিক ও উচিৎ যে- এখানেসে জাতিবলতে পারসিয়ান দের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে ঐ জাতির পতন আসছে এবং পরবর্তীতে পারস্যের ব্যাপারে  রাসুলের(সাঃ) এই বানী বাস্তবের সাথে মিলে যায়  
পাকিস্তানে ১৯৬৪ সালে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে  যখন ফাতিমা জিন্নাহকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী  করা হয় তখন পুর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মুনায়েম খান এই হাদিসটি উল্লেখ করে একটি বিবৃতি দেওয়ার জন্য মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরিকে অনুরোধ করেন কিন্তু তিনি এই ধরনের বিবৃতি দিতে রাজি হননি এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন যেহাদিসের অনেক উক্তি  ‘সমকালীন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে’  উচ্চারিত হয়েছেসে পরিপ্রেক্ষিত না জেনে স্বার্থসিদ্ধির জন্য হাদিসকে ব্যবহার করা অপরাধ
এখানে আরো একটি তথ্য উল্লেখ করে রাখতে চাই যে- মাআরেফুল কুরআন এর রচয়িতা আল্লামা মুফতি মুহাম্মাদ শফীও ফাতেমা জিন্নাহকে আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে প্রার্থী করায় সমর্থন দিয়েছিলেন (দেখুন অধ্যাপক গোলাম আযম এরইসলামী ঐক্য ইসলামী আন্দোলনবইয়ে ঐ বৈঠকে জনাব গোলাম আযম নিজেই উপস্থিত ছিলেন)
এছাড়া (কুরআনে বর্নিত সাবার রানী বিলকিসের ঘটনা সহ) আমরা আগের পর্বগুলোয় যেসমস্ত ইতিহাস তুলে ধরেছি এবং বর্তমান সময়ে জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া সহ উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে দেখতে পাই - নারী শাসক থাকার পরেও তারা উন্নতি করছে (খেয়াল রাখুন যে- সেসময়ের পারস্য কিন্তু ইসলামী সাম্রাজ্যভুক্ত ছিলনা, সেকারণে জার্মানী- অস্ট্রেলিয়ার উদাহরণ অপ্রাসঙ্গিক নয় )
এমনটা ভাবার  কি সুযোগ আছে যেরাসুল (সাঃ) এমন কথা বলেছিলেন যা বাস্তবের সাথে মিলে না ? (নাউযুবিল্লাহ) যেহেতু রাবীর ব্যাপারে এমনিতেই সন্দেহ প্রকাশের কারণ আছে এবং অনেক হাদীস বিশারদ সে সন্দেহ প্রকাশও করেছেন  
তাই এটা মনে করাই যুক্তিসঙ্গত যে , রাসুল (সাঃ) ‘উন্নতি করতে পারবে নাবলতে  পারস্যের কথা ইঙ্গিত করেছেন আর সেটা একটা বিশেষ ইঙ্গিত ছিল পারস্যের পরাজয় ও পতনের সবসময়ের জন্য কোন সার্বজনীন কথা নয় ।  আত্মিক বা পরকালীন উন্নতির কথা তৎকালীন পারস্যের ব্যাপারে আসার সুযোগ নেই , কারণ পরকালীন সফলতার প্রথম শর্ত হলোঈমান’, যা তাদের ছিলনা
 
শেষকথা  হচ্ছে, এমন একটি সন্দেহযুক্ত হাদীসসন্দেহ আছে তা সবসময়ের জন্য প্রযোজ্য কিনা তা নিয়েও , এমনকি যেখানেসুযোগ থাকার পরও’  স্পষ্টতহারামঘোষণা করা হয়নিতারই ভিত্তিতে কোনকিছুকে নির্বিশেষে (অপছন্দনীয়/অপ্রয়োজনীয়/অবিজ্ঞতাসুলভ না বলে ) সরাসরিহারামবলার সুযোগ আছে কি ?


  • চলবে...

নারী নেতৃত্ব হারাম ? -১১



কুরআনুল কারীমেও নারী নেতৃত্বের একটি উদাহরণ আছে । হযরত সুলাইমান(আঃ) এর সময়কার একটি রাষ্ট্র ‘সাবা’র শাসক বিলকিস ও তাঁর ঘটনা । ইয়েমেনের পাশের এলাকাটি ছিল সাবা । ইতিহাসে সাবার রাণীর নাম পাওয়া যায়- ‘বিলকিস বিনতে শারাহীল’
সূরা আন-নামলের আয়াত ২০-৪৪ এ বর্ণিত হয়েছে ‘সাবা’র রাণী বিল্‌কিস এবং হযরত সুলাইমান(আঃ) এর ঘটনা

(পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু)
২০) (আর একবার) সুলাইমান পাখিদের খোঁজ-খবর নিলো ।  এবং বললো, “কি ব্যাপার, আমি অমুক হুদহুদ পাখিটিকে দেখছিনা যে! সে কি কোথাও অদৃশ্য হয়ে গেছে?  
২১) আমি তাকে কঠিন শাস্তি দেবো অথবা জবাই করে ফেলবো, নয়তো তাকে আমার কাছে যুক্তিসংগত কারণ দর্শাতে হবে৷
২২) কিছুক্ষণ অতিবাহিত না হতেই সে এসে বললো, “আমি এমন সব তথ্য লাভ করেছি যা আপনি জানেন না৷ আমি সাবা সম্পর্কে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি  
২৩) আমি সেখানে এক মহিলাকে সে জাতির শাসকরূপে দেখেছি৷ তাকে সবরকম সাজ সরঞ্জাম দান করা হয়েছে এবং তার সিংহাসন খুবই জমকালো ৷ 
.                                       
২৪) আমি তাকে ও তার জাতিকে আল্লাহর পরিবর্তে সূর্যের সামনে সিজদা করতে দেখেছি , শয়তান তাদের কার্যাবলী তাদের জন্য শোভন করে দিয়েছে  এবং তাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত করে দিয়েছে এ কারণে তারা সোজা পথ পায় না৷ 
(এ জন্য ) যাতে তারা সেই আল্লাহকে সিজদা না করে যিনি আকাশ ও পৃথিবীর গোপন জিনিসসমূহ বের করেন এবং তিনি সবকিছু জানেন যা তোমরা গোপন করো ও প্রকাশ করো৷

২৬) আল্লাহ, ছাড়া আর কেউ ইবাদতের হকদার নয় তিনি মহান আরশের মালিক৷
২৭) সুলাইমান বললো: এখনই আমি দেখছি তুমি সত্য বলছো অথবা মিথ্যাবাদীদের অন্তরভুক্ত৷ 
২৮) আমার এ পত্র নিয়ে যাও এবং এটি তাদের প্রতি নিক্ষেপ করো, তারপর সরে থেকে দেখো তাদের মধ্যে কি প্রতিক্রিয়া হয়৷

২৯) রাণী বললো, “হে দরবারীরা! আমার প্রতি একটি বড় গুরুত্বপূর্ণ পত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে৷ 
.
৩০) তা সুলাইমানের পক্ষ থেকে এবং আল্লাহ্ রহমানুর রহীমের নামে শুরু করা হয়েছে৷” 

৩১) বিষয়বস্তু হচ্ছে: আমার অবাধ্য হয়ো না এবং মুসলিম হয়ে আমার কাছে হাজির হয়ে যাও৷
৩২) (পত্র শুনিয়ে) রাণী বললো, “হে জাতীয় নেতৃবৃন্দ! আমার উদ্ভুত সমস্যায় তোমরা পরামর্শ দাও ৷ তোমাদের বাদ দিয়ে তো আমি কোন বিষয়ের ফয়সালা করি না৷

৩৩) তারা জবাব দিল, “আমরা শক্তিশালী ও যোদ্ধা জাতি, তবে সিদ্ধান্ত আপনার হাতে, আপনি নিজেই ভেবে দেখুন আপনার কি আদেশ দেয়া উচিত৷ 
৩৪) রাণী বললো, কোন বাদশাহ যখন কোন দেশে ঢুকে পড়ে তখন তাকে বিপর্যস্ত করে এবং সেখানকার মর্যাদাশালীদের লাঞ্ছিত করে  এ রকম কাজ করাই তাদের রীতি৷
৩৫) আমি তাদের কাছে একটি উপঢৌকন পাঠাচ্ছি তারপর দেখছি তোমার দূত কি জবাব নিয়ে ফেরে৷” 
.                                                 
৩৬) যখন সে (রাণীর দূত) সুলইমানের কাছে পৌঁছুলো, সে বললো, তোমরা কি অর্থ দিয়ে আমাকে সাহায্য করতে চাও? আল্লাহ আমাকে যা কিছু দিয়েছেন তা তোমাদের যা কিছু দিয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশী৷  তোমাদের উপঢৌকন নিয়ে তোমরাই খুশি থাকো৷ 
৩৭) (হে দূত!) ফিরে যাও নিজের প্রেরণকারীদের কাছে আমি তাদের বিরুদ্ধে এমন সেনাদল নিয়ে আসবো  যাদের তারা মোকাবিলা করতে পারবে না এবং আমি তাদেরকে এমন লাঞ্ছিত করে সেখান থেকে বিতাড়িত করবো যে, তারা ধিকৃত ও অপমানিত হবে৷” 
৩৮) সুলাইমান বললো,  হে সভাসদগণ! তারা অনুগত হয়ে আমার কাছে আসার আগে তোমাদের মধ্যে কে তার সিংহাসন আমার কাছে নিয়ে আসতে পারে?”
৩৯) এক বিশালকায় জিন বললো, আপনি নিজের জায়গা ছেড়ে ওঠার আগেই আমি তা এনে দেবো৷  আমি এ শক্তি রাখি এবং আমি বিশ্বস্ত৷
৪০) কিতাবের জ্ঞান সম্পন্ন অপর ব্যক্তি বললো আমি আপনার চোখের পলক ফেলার আগেই আপনাকে তা এনে দিচ্ছি৷  যখনই সুলাইমান সেই সিংহাসন নিজের কাছে রক্ষিত দেখতে পেলো অমনি সে চিৎকার করে উঠলো, এ আমার রবের অনুগ্রহ, আমি শোকরগুযারী করি না নাশোকরী করি তা তিনি পরীক্ষা করতে চান৷  আর যে ব্যক্তি শোকরগুযারী করে তার শোকর তার নিজের জন্যই উপকারী৷ অন্যথায় কেউ অকৃতজ্ঞ হলে, আমার রব করো ধার ধারে না এবং আপন সত্তায় আপনি মহীয়ান৷
৪১) সুলাইমান  বললো, “সে চিনতে না পারে এমনভাবে সিংহাসনটি তার সামনে রেখে দাও, দেখি সে সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছে যায় কিনা অথবা যারা সঠিক পথ পায় না তাদের অর্ন্তভুক্ত হয়৷
৪২) রাণী যখন হাজির হলো, তাকে বলা হলো তোমার সিংহাসন কি এরূপই? সে বলতে লাগলো, “এ তো যেন সেটিই  আমরা তো আগেই জেনেছিলাম এবং আমরা আনুগত্যের শির নত করে দিয়েছিলাম৷ (অথবা আমরা মুসলিম হয়ে গিয়েছিলাম৷)
৪৩) আল্লাহর পরিবর্তে যেসব উপাস্যের সে পূজা করতো তাদের পূজাই তাকে ঈমান আনা থেকে ঠেকিয়ে রেখেছিল৷ কারণ সে ছিল একটি কাফের জাতির অর্ন্তভুক্ত৷

৪৪) তাকে বলা হলো, প্রাসাদের মধ্যে প্রবেশ করো৷ যেই সে দেখলো মনে করলো বুঝি কোন জলাধার এবং নামার জন্য নিজের পায়ের নিম্নাংশের বস্ত্র উঠিয়ে নিল৷ সুলাইমন বললো, এতো কাচের মসৃণ মেঝে৷  এ কথায় সে বলে উঠলো হে আমার রব! (আজ পর্যন্ত) আমি নিজের ওপর বড়ই জুলুম করে এসেছি এবং এখন আমি সুলাইমানের সাথে আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের আনুগত্য গ্রহণ করছি৷

আয়াতগুলো পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, সাবা’র রাণী তার শাসনে জ্ঞান, যোগ্যতা এবং দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেনসফলতা ও দেখিয়েছেন রাণী বিলকিস ও সাবা’বাসীর ভুল ছিল তারা আল্লাহর পরিবর্তে ‘সূর্যকে পূজা করতো’ (তাঁদের ভুল এটা বলা হয়নি যে, তারা একজন নারীকে শাসক বানিয়েছে বা মেনে নিয়েছে ।) বিলকিসের যেসব গুণের কথা এখানে প্রকাশিত হয়েছে তা হলো-
১। সুলায়মান(আঃ) যখন সাবার রাণীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণের আহ্বান জানালেন তখন সাবার রাণী  যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত না নিয়ে সুলায়মান(আঃ) এর রাজত্ব ভ্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
তিনি যুদ্ধ না করে শান্তির পথে যেতে চেয়েছেন, যদিও তাঁর লোকেরা যুদ্ধের জন্যেও প্রস্তুত ছিল । আর তারাও ছিল যোদ্ধা জাতি । যুদ্ধে না জড়িয়ে শান্তির পথে হাঁটার যে সিদ্ধান্ত বিলকিস নিয়েছিলেন তা নিঃসন্দেহে একটি প্রশংসনীয় যোগ্যতা
২। এককভাবে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বিলকিস সবসময় তাঁর পরিষদের সাথে আলোচনা-পরামর্শের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতেন । এটা একজন ভালো শাসকের যোগ্যতার পরিচয় দেয় ।
৩।  সাবার রাণীর সিংহাসনকে তিনি আসার আগেই সুলায়মান (আঃ) নিজের দরবারে নিয়ে আসেন, এবং বিল্‌কিস তা দেখেই চিনতে পেরেছিলেন এখান থেকে বিল্‌কিসের বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়।
৪।  সুলায়মান(আঃ) এর যে প্রাসাদে রাণী বিলকিস প্রবেশ করেছিলেন তার মেঝে ছিল পানির মত স্বচ্ছ কাঁচের তৈরি পানি ভেবে বিলকিস তার পা থেকে জুতা খুলেন এবং কাপড় একটু উপরে উঠান যখন তিনি বুঝলেন তিনি ভ্রান্তির শিকার তখন সাথে সাথেই তিনি অনুধাবন করলেন যে তিনি এতদিন এভাবেই ঠুনকো জাগতিক মোহে ভুলে ছিলেন ভুল বুঝতে পেরে সাবার রাণী আল্লাহ্‌র দ্বীন কবুল করলেন। ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে  বিল্‌কিস তাঁর সজাগ বিবেক প্রজ্ঞার পরিচয় দেন এবং নিজেদের মিথ্যা অন্ধ বিশ্বাসকে অগ্রাহ্য করার সামর্থ্য দেখান।  
৫। রানী বিলকিসের শাসনামলে সাবা খুবই সমৃদ্ধ দেশ ছিল । তাঁদের অর্থনীতি, ব্যবসা ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ । এছাড়াও তাদের সমৃদ্ধির আরো উদাহরণ হলো ,সেসময়ে  তারা দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাঁধ নির্মাণ করে পানি সেচের উন্নত ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল। ফলে তাদের সমগ্র এলাকা সবুজ শ্যামল উদ্যানে পরিণত হয়েছিল। তাদের দেশের এ অস্বাভাবিক শস্য শ্যামলিমার কথা গ্রীক ঐতিহাসিকরাও উল্লেখ করেছেন
৬। সুলায়মান (আঃ) এর চিঠি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন বিষয় বিশ্লেষণ করে বিলকিস সুলায়মান (আঃ) এর নবুওত সম্পর্কে বুঝতে পারেন । প্রথম উপকরণটি ছিল সুলাইমানের চিঠি সাধারণ বাদশাহী রীতি এড়িয়ে আল্লাহ রহমানুর রহীমের নামে তা শুরু করা হয়েছিল। দ্বিতীয় উপকরণটি ছিল মূল্যবান উপহার সামগ্রী প্রত্যাখ্যান। এ থেকে রাণী বুঝতে পারলেন যে, ইনি একজন অসাধারণ রাজা। তৃতীয় উপকরণটি ছিল রাণীর দূতের বর্ণনা। এ থেকে সুলাইমানের তাকওয়া ভিত্তিক জীবন, তাঁর প্রজ্ঞা ও বুদ্ধিমত্তা এবং তাঁর সত্যের দাওয়াত সম্পর্কে অবহিত হন। এ জিনিসটিই তাঁকে অগ্রণী হয়ে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করতে উদ্বুদ্ধ করে। নিজের একটি উক্তির মাধ্যমে তিনি এদিকেও ইংগিত করেন। তিনি বলেন : আমরা তো আগেই জেনেছিলাম এবং আমরা মুসলিম হয়ে গিয়েছিলাম। চতুর্থ উপকরণটি ছিল এ মহামুল্যবান সিংহাসনটি মুহূর্তের মধ্যে বাইতুল মাকদিসে পৌঁছে যাওয়া। এর ফলে রাণী জানতে পারেন এ ব্যক্তির পেছনে সর্বশক্তিমান আলাহর শক্তি রয়েছে। সর্বশেষ উপকরণটি ছিল , রাণী দেখলেন যে ব্যক্তি এমন আরাম আয়েশ ও পার্থিব ভোগের সামগ্রীর অধিকারী এবং এমন নয়নাভিরাম ও জাঁকালো প্রাসাদে বাস করেন অথচ তিনি আত্মগরিমা ও আত্মম্ভরিতা থেকে কত দূরে অবস্থান করেন, তিনি কেমন আল্লাহকে ভয় করেন, কেমন সৎ হৃদয়বৃত্তির অধিকারী, কেমন কথায় কথায় কৃতজ্ঞতায় আল্লাহর সামনে মাথা নত করে দেন এবং পৃথিবী পূজারী লোকদের জীবন থেকে তাঁর জীবন কত ভিন্ন
এইযে উপলব্ধি, এটাও বিলকিসের জ্ঞান ও যোগ্যতার কথা তুলে ধরে ।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে , ইসলাম গ্রহণ করার পরেও কি বিলকিস সাবা’র শাসক ছিলেন ? এ বিষয়ে কুরআন স্পষ্ট করে কিছু বলে না । তবে বর্ণনার ধারা অনুযায়ী ধারণা করা যায় যে , এমন যোগ্য রাণীকে শুধুমাত্র ‘নারী’ হওয়ার কারণে শাসন ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি । এ সম্পর্কে তাফসীরে মা’আরেফুল কুরআনে আছে - ইবনে আসাকির হযরত ইকরামা হতে বর্ণনা করেন যে সুলায়মান (আঃ) এর সাথে বিলকিসের বিয়ে হয়েছিল এবং তাঁকে সাবার রাণী হিসেবে বহাল রাখা হয়েছিল সুলায়মান (আঃ) বিলকিসের জন্য তিনটি প্রাসাদ বানিয়ে দিয়েছিলেন এবং মাসে তিনদিন রাণীর কাছে গিয়ে কাটাতেন । ( মা’আরেফুল কুরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৬৪৯ )

[প্রসঙ্গ নারী নেতৃত্ব – ১১]