প্রসঙ্গ নারী নেতৃত্ব, পর্ব-১৩: ডাঃ জাকির
নায়েকের মতামত
প্রশ্নঃ মহিলারা রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারেন কিনা ?
প্রশ্নের উত্তরে ডাঃ জাকির নায়েকঃ
‘‘পবিত্র কুরআন করীমে কথাও একথা উল্লেখ নেই যে, একজন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধান
হতে পারবে না । কিন্তু অনেকগুলো হাদীস এর সাক্ষ্য দেয়, যেমন একটি হাদীসে বলা হয়েছে
‘যে সমাজ মহিলাকে তাদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করেছে তাঁরা সফল হবে না’ ।
কিছু গবেষক বলেন , এটি শুধু একটি বিশেষ সময়ের জন্য যার সাথে হাদীসটি
সম্পর্কিত । বিশেষত , যখন পারস্য সমাজ একজন রানীকে তাদের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছে
। আবার অন্যদের মতে এটা সকল সময়কেই বুঝিয়েছে । চলুন আমরা খতিয়ে দেখি , একজন মহিলার
জন্য রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া উচিৎ কিনা । যদি ইসলামী রাষ্ট্রে মহিলা প্রধান হন , তবে
নিয়মানুযায়ী তাঁকে নামাজের ইমামতি করতে
হবে । যদি একজন মহিলা কোন নামাজে ইমামতি করে তবে তাঁকে কিয়াম , রুকু, সিজদা সহ
বিভিন্ন কাজ করতে হয় । যদি পুরুষদের জামায়াতের সামনে কোন মহিলা এগুলো করে, তবে এটা নিশ্চিত যে, তা
নামাজে ব্যাঘাত ঘটাবে । বর্তমান সমাজে একজন মহিলা রাষ্ট্রের প্রধান হলে তাঁকে
বিভিন্ন সভায় উপস্থিত থাকতে হয় , যেখানে পুরুষরাও উপস্থিত থাকে । অনেক সময়
রুদ্ধদ্বার বৈঠক করতে হয় যেখানে অন্য কেউ উপস্থিত থাকে না , কিন্তু ইসলাম কোন
পুরুষের সাথে কোন নারীর এরকম রুদ্ধদ্বার বৈঠকের অনুমতি দেয় না ।
রাষ্ট্রপ্রধানকে অনেক সময় অন্য রাষ্ট্রপ্রধানদের সাথে –যাদের অধিকাংশই
পুরুষ, ঘনিষ্ঠভাবে মিশতে হয়, করমর্দন করতে হয়, ছবি উঠাতে হয় – যা ইসলাম নারীর জন্য
কখনোই অনুমোদন দেয় না । একজন রাষ্ট্রপ্রধানকে সবসময় সাধারণ জনগনের সাথে মিশতে হয় ।
তাদের সমস্যাসমূহ সমাধান করতে হয় । বিজ্ঞান আমাদের বলছে , একজন মহিলার মাসিক
রক্তস্রাব চলাকালীন সময় তাঁর কতগুলো আচরণগত, মানসিক ও মনোবৈজ্ঞানিক পরিবর্তন দেখা যায়
– ফলে এ পরিবর্তন তাঁকে নিশ্চিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সমস্যার সৃষ্টি করবে ।
বিজ্ঞান আরো বলে যে মহিলাদের পুরুষের তুলনায় অধিক কন্ঠ ও মৌখিক শক্তি রয়েছে এবং
পুরুষের ভবিষ্যত সম্পর্কে কল্পনা করার শক্তি রয়েছে – যা একজন রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য
অতিব গুরুত্বপুর্ণ । আর মেয়েদের মৌখিক দক্ষতা তার মাতৃত্বের জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ । একজন মহিলা গর্ভবতী হতে পারেন –
এসময় তাঁর কয়েকমাসের বিশ্রাম প্রয়োজন – এসময়টিতে রাষ্ট্র পরিচালনার কী হবে ? আবার
মা হিসেবে সন্তানদের লালন পালন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ । তখন যদি একই সাথে
ছেলেমেয়েদের লালন পালন ও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করতে হয় , তবে মহিলাদের
তুলনায় পুরুষদের জন্যই তা করা অধিকতর সম্ভব , বাস্তবিক কারনেই ।
সুতরাং আমিও সেসব বুদ্ধিজীবির অন্তর্ভুক্ত যারা বলেন , মহিলাদের
রাষ্ট্রপ্রধান করা উচিৎ নয় । কিন্তু এর দ্বারা এটি বুঝায় না যে , মহিলারা
সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশ নিতে পারবে না । তাদের মতামত প্রদান ও আইন প্রণয়নে অংশ নেয়ার
আইনত অধিকার রয়েছে । হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় উম্মে সালমা (রাঃ) রাসুল (সাঃ) কে
সমর্থন ও নির্দেশনা দিয়েছেন, যখন সমগ্র মুসলিম সম্প্রদায় সমস্যায় ছিল । সুতরাং
নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত গ্রহণে মহিলারা অংশগ্রহণ করতে পারে । (উৎস - জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র)
.....................
এখানে খেয়াল করা দরকার, ‘উচিৎ নয়’
আর ‘হারাম’ এক কথা নয় । ডাঃ জাকির নায়েক ‘হারাম’ বলেন নি । আবার ডাঃ জাকির নায়েক মহিলাদের যেসব
সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেছেন তার অনেকগুলোই এখনকার রাষ্ট্রপ্রধানদের না করলেও
চলে । যেমন- নামাজে ইমামতি । অন্য দেশের পুরুষ রাষ্ট্রপ্রধানের সাথে রুদ্ধদ্বার
বৈঠক, করমর্দন না করলেও চলে । প্রকৃত সীমাবদ্ধতা বলতে মাসিক ঋতুস্রাব আর গর্ভধারণই
বাকি থাকে । অনেক বড় বড় অফিসের প্রধান হিসেবে নারীরা কাজ করছে , সেখানে তারা
যেভাবে এসব সীমাবদ্ধতাকে ম্যানেজ করছে- একজন রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষেত্রে সেটা কঠিন
হলেও অসম্ভব নয় । তবে এটা সাধারণ ও বৈজ্ঞানিকভাবে সত্য যে মেয়েরা বেশি আবেগপ্রবণ
এবং কম দূরদর্শী । কিন্তু পুরুষ মাত্রই সকল নারীর চেয়ে বাস্তবজ্ঞান সম্পন্ন নয়
সেটাও সত্য । এর ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে । একজন নারীও অনেক পুরুষের চেয়ে বাস্তববাদী
ও দূরদর্শী হতে পারেন ।
এখন তো খিলাফত ব্যবস্থাই নেই । ইসলামী রাষ্ট্রও নেই । সেজন্য ইসলামী
রাষ্ট্রের প্রধান একজন নারীকে করা হবে কিনা সে আলোচনা এই মুহূর্তে খুব একটা জরুরী
নয় । এই আলোচনা এজন্য করতে হচ্ছে- একদল লোক উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’
বলে ঢালাও ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছেন । অথচ প্রকৃতপক্ষে নারী নেতৃত্ব ‘হারাম’ নয় ।
ঢালাওভাবে হারাম বলার সুযোগ নেই । হারাম হলে নারীদের ঘরের কোণে বসে থাকা ছাড়া আর
কিছুই করার সুযোগ থাকেনা । এটা বাস্তবসম্মত নয়, ইসলামের ইতিহাসও তা
বলেনা ।
ডাঃ জাকির নায়েক বলেছেন, ইসলামী
রাষ্ট্রের প্রধান নারী হওয়া উচিৎ নয় । আমিও এটা সমর্থন করি । আর আমি এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চিত বিশ্বাস রাখি যে, কোন নারী কখনো সমগ্র মুসলিম উম্মাহর নেতা বা খলিফা হবেনা। কেউ দাবিও করবে না । কারণ- যখন মুসলমানরা খিলাফতের উপযুক্ত হবে তখন অনেক পুরুষ থাকবে যারা যেকোন নারীর চেয়ে সকল যোগ্যতায় উৎকৃষ্ট । যোগ্যতাবলেই তাঁরা নেতৃত্বে থাকবেন । এটা স্বাভাবিকভাবেই হবে । মুসলিম নারীরা উম্মাহর মঙ্গল কিসে হয় তা বুঝবেন ।
সেজন্য বনী ইসরাইলীদের মত যা আসলে হারাম নয় তাকে 'হারাম' করে নারীদের দূরে রাখার কোন প্রয়োজন হবেনা ।