একটা সময়
ছিল পুরো পৃথিবীটা ছিল ‘মানুষের’ ।
পৃথিবীর যেকোন প্রান্ত থেকে মানুষ যেতে পারতো
অন্য কোন প্রান্তে । বিনা বাধায় । এভাবেই সারা পৃথিবীর মানুষ ছড়িয়ে পড়ত পৃথিবীর
বিভিন্ন প্রান্তে । আরব থেকে ভারত, চীন , আফ্রিকার দেশে ।
আজ আর
সেটা সম্ভব নয় । এখন অনেক বাধা বিপত্তি পার হতে হয় কোথাও যেতে হলে । পৃথিবীটা ভাগ
হয়ে গেছে অনেকগুলো ‘কারাগারে’ ।
এই কারাগারগুলোকে বলা হচ্ছে ‘দেশ’ ।
এই কারাগারগুলোকে বলা হচ্ছে ‘দেশ’ ।
একটা
কারাগারে কী থাকে ? অনেক কিছুই থাকে , আবার অনেক কিছুর অভাব থাকে । কিন্তু সবচেয়ে
বড় বিষয়টা যা মানুষকে কষ্ট দেয়- যেখানে ইচ্ছা যেতে না পারার কষ্ট । বিপদে পড়া
প্রিয়জনের সাহায্যে আসতে না পারার কষ্ট । খোলা আকাশের নিচে হাঁটতে না পারার কষ্ট ।
বাইরে অনেক খাবার আছে , কিন্তু সীমানা প্রাচীরের কারণে কেউ খাবার দিতে পারবেনা ।
‘দেশ’
এর সীমানা আমাদের আজ একেকটা বড় বড় কারাগারে আবদ্ধ করে রেখেছে । সীমান্তে পাহারা ,
কাটাতারের বেড়া । এক ভূখন্ড থেকে আরেক ভূখন্ডে যেতে লাগবে ‘পাসপোর্ট’, ‘ভিসা’ । এই
সিস্টেমটা ১০০ বছর আগেও এরকম ছিল না । আধুনিক পাসপোর্টের যাত্রা শুরু হয় সম্ভবত
ব্রিটেনে ১৯১৪ সালের দিকে ।
১৯৪৭
সালের আগে রংপুরের একজন মানুষ যেতে পারতো দিল্লী, যেতে পারতো ইসলামাবাদ ।
আফগানিস্তান । একটা সময় বাংলাদেশের মানুষ হেঁটে হেঁটে চলে যেত বোম্বে । সেখান থেকে
জাহাজে চড়ে আরব ।
অথচ এখন
আমরা ‘বাংলাদেশ’ নামক একটা কাঁটাতার ঘেরা ভূখন্ডে বন্দী । মিয়ানয়ারের মানুষ আরেকটা
ভুখন্ডে বন্দী । সেখানে মানুষকে খুন করা হচ্ছে, আমরা যেতে পারছি না তাদের সাহায্যে
।
তারা আসতে পারছে না আমাদের কাছে । কারাগার নয়তো কী ?
তারা আসতে পারছে না আমাদের কাছে । কারাগার নয়তো কী ?
মিশরে
সিরিয়ায় কাশ্মীরে নিরীহ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে , আমরা বসে আছি কাছেই,
যেতে পারছি না তাদের সাহায্যে । এ যেন একেকটা বৃহৎ কারাগার ।
সংকীর্ণ
জাতীয়তাবাদ আমাদের হৃদয়কে সংকীর্ণ করে দিয়েছে । ‘দেশপ্রেম’ নামে এক অবাস্তব চেতনা
ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে আমাদের মন মগজে । ‘মানব প্রেম’ এর চেয়ে বড় হয়ে
দাঁড়িয়েছে ‘ভূমিপ্রেম’ । মানুষের জীবনের
চেয়ে মাটির দাম বেশি ? সাগরে ভাসে মানুষ দিনের পর দিন অনাহারে । কিসের সীমানা
তাদের আশ্রয় দিতে বাধা দেয় ?
সীমান্তে
বাংলাদেশি দেখলেই গুলি করে মেরে ফেলে ভারতের বিএসএফ । আমরা কি তাহলে কারাগারে নেই
?
জাতীয়তাবাদ
।
ভাষা, ভূমি, সীমানা । প্রতিটি দেশকে একেকটা কারাগারে পরিণত করেছে জাতীয়তাবাদ । এই পৃথিবী মানুষের , গোটা পৃথিবী । যে যেখানে ইচ্ছা যাবে । পৃথিবীর বিশাল বিশাল ভূখন্ড পড়ে আছে জনমানবহীন । অথচ সীমানার কারাগারে আটকে আছে কোটি কোটি মানুষ ভূমিহীন, আশ্রয়হীন । পৃথিবীর বিশাল বিশাল জমিন পড়ে আছে অনাবাদী । অথচ দুর্ভিক্ষ হয়ে বাংলাদেশে, সোমালিয়ায় । তুলে দাও সীমানা, দেখো পৃথিবীতে কেউ না খেয়ে মরবে না । পৃথিবীতে কারো আশ্রয়ের অভাব হবে না । কারো খাদ্যের অভাব হবে না । আফ্রিকায়ও থাকবে সাদা মানুষ , আমেরিকায়ও থাকবে কালো মানুষ । গায়ের চামড়া ভালোবাসায় –ভ্রাতৃত্বে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না ।
ভাষা, ভূমি, সীমানা । প্রতিটি দেশকে একেকটা কারাগারে পরিণত করেছে জাতীয়তাবাদ । এই পৃথিবী মানুষের , গোটা পৃথিবী । যে যেখানে ইচ্ছা যাবে । পৃথিবীর বিশাল বিশাল ভূখন্ড পড়ে আছে জনমানবহীন । অথচ সীমানার কারাগারে আটকে আছে কোটি কোটি মানুষ ভূমিহীন, আশ্রয়হীন । পৃথিবীর বিশাল বিশাল জমিন পড়ে আছে অনাবাদী । অথচ দুর্ভিক্ষ হয়ে বাংলাদেশে, সোমালিয়ায় । তুলে দাও সীমানা, দেখো পৃথিবীতে কেউ না খেয়ে মরবে না । পৃথিবীতে কারো আশ্রয়ের অভাব হবে না । কারো খাদ্যের অভাব হবে না । আফ্রিকায়ও থাকবে সাদা মানুষ , আমেরিকায়ও থাকবে কালো মানুষ । গায়ের চামড়া ভালোবাসায় –ভ্রাতৃত্বে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না ।
স্বপ্ন দেখি
সীমানাহীন পৃথিবীর । যে পৃথিবীতে থাকবে না ‘বাংলাদেশি’, ‘পাকিস্তানি’, ‘ভারতীয়’, ‘চীনা’
ভেদ । পৃথিবীটা হবে ‘মানুষের’ ।
মানুষ
মুক্তি পাবে জাতীয়তাবাদের কারাগার থেকে ।