এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

একটা কবিতা হবে?

একটা কবিতা হবে তোমার কাছে?
তোমাদের কাছে?
না না, রবীন্দ্রনাথ কিংবা আল মাহমুদ নয়,
আমার চাই
একদম আনকোরা কবিতা।
হবে?
নারী ও পুরুষের প্রেম ভালোবাসা-
অনেক হয়েছে বিগত শতকে।
অনেক হয়েছে পদ্যের জালে গাঁথা পৌরাণিক কাহিনী।
অথচ,
আজ এই অশান্ত পৃথিবীতে বড্ড প্রয়োজন নতুন কবিতার।
না না কাজী নজরুল নয়,
আজ আমি বিদ্রোহ চাই না; আজ আমি
চাইনা ক্ষোভের বিস্ফোরণ।
আমি চাই-
কবিতার আবেশে খুনিরাও হয়ে যাক নতুন মানুষ
লুটেরার দল ফিরিয়ে দিয়ে যাক যক্ষের ধন
আর রক্তপিপাসু পিশাচেরা সব
ধ্বংস করে দিক অস্ত্রের ভান্ডার।
এমন একটা কবিতা আছে কি ডায়েরিতে? তোমাদের কারো কাছে?
যদি নাই থাকে
এসো তুমি আর আমি মিলে
মানবিক পৃথিবীর স্বপ্ন আঁকি। এসো আজ
একটা নতুন কবিতা লিখে যাই
আগামী পৃথিবীর জন্যে।

শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

জলযাত্রা

অদ্ভুত হাওয়ার টান লেগে গ্যাছে জীবনের পালে
জোয়ারের বেলা শেষে
ভাটির টানে ছুটছে এখন তরী
সময় ভাটায়।

হাল ধরে বসে আছি অজ্ঞ নাবিক ।
হাতে নেই নিখুঁত কম্পাস,
আর জানা নেই জলের সীমানাও;
অসীমের পানে এই অগস্ত যাত্রায়
উত্তাল স্রোতে ভাসা টলোটলো নাও
কী করে সামলে যাবো
সারাটা জীবন?

কেউ কি বলতে পারো-
কতটা শক্ত করে ধরবো মাস্তুল?

মঙ্গলবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

অজ্ঞ সাংবাদিক ও কান্ডজ্ঞানহীন সাংবাদিকতা

সাংবাদিকদের মধ্যে একটা অংশ মনে করেন, সাংবাদিকতা মানেই নেগেটিভ নিউজ করা! এরা এতটুকু জ্ঞানও রাখেন না, কোন নিউজ কীভাবে করলে প্রকৃত অর্থে দেশ ও জনগন উপকৃত হবে।

রাজশাহী মেডিকেলে ঈদের সময় রোগীদের পাশাপাশি দায়িত্ব পালনকারী ইন্টার্ন ডাক্তারদেরকেও হাসপাতালের ব্যবস্থাপনায় খাবার সরবরাহ করা হয়েছে। এটা ছিল অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ। প্রশংসনীয় উদ্যোগ। কারণ, ঈদের সময় যখন হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ এবং হোস্টেলের ক্যান্টিন বন্ধ থাকে, আশেপাশের খাবার দোকান বন্ধ থাকে, এসময় পরিবার পরিজন ছেড়ে হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকারী ডাক্তারদের খাবারের ব্যবস্থা করায় তারা নিশ্চিন্তে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। রোগীরা পাবে আন্তরিক ও ভালো সেবা। নিশ্চয়ই রাজশাহী মেডিকেলে তা পেয়েছেও।

কিন্তু প্রথম আলোর রাজশাহী প্রতিনিধি এতটাই বেকুব যে, তিনি ভালো খারাপ বোঝার মত এতটুকু জ্ঞান রাখেন না। যেহেতু আলাদা কোন বরাদ্দ নেই, ডাক্তারদের খাবারও দেয়া হয়েছে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেট থেকে। বেকুব সাংবাদিক নিউজ করেছে- "রোগীর টাকায় ডাক্তারের ভোজ"! অথচ নিউজটা এভাবেও করা যেত - 'বরাদ্দ নেই ডাক্তারদের জন্য!' সেটা হত ডাক্তার রোগী সবার জন্য উপকারী। 


কিন্তু এই বেকুব তথাকথিত সাংবাদিক এতটাই নেগেটিভ মেন্টালিটির লোক, ভালো মন্দ বোঝার সামান্য যোগ্যতাও তার নেই। একচুয়ালি এদের পত্রিকা অফিস থেকে বের করে দেয়া উচিত। শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কারণ, এদের এইসব আউল ফাউল নিউজ নষ্ট করছে মানুষের বিশ্বাস। সৃষ্টি করছে সন্দেহ সংশয় ও আস্থাহীনতা। সর্বোপরি নষ্ট করছে সেবাদানকারীদের সেবা দেয়ার মানসিকতা। দিনরাত কষ্ট করেও বদনাম পেতে কারো নিশ্চয় ভালো লাগার কথা নয়।

রবিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

সাক্ষাৎ

এই বিরাণ রাস্তায়
আর কতকাল হেঁটে যাবো একা একা?
শীর্ণ পায়ে আমি একাকী পথিক
কী করে পাড়ি দেবো-
এত দীর্ঘ পথ?
.
বন্ধুর এই পথচলায়
যার কথা ছিল সহযাত্রী হবার
কথা ছিল সারাপথ সঙ্গ দেবার
কথা ছিল যার সাথে
দেখা হবে এইখানে পথের বাঁকে,
কোন এক মধ্য দুপুর; স্বর্নবিকেল ;
কিংবা কোন এক গোধূলী বেলায়-
কথা ছিল যার হাত ধরে
হেঁটে যাবো অনন্ত পথ- হায়!
আজও পাইনি দেখা তার,
আজও হয়নি আমাদের সাক্ষাত।
.
আলমে আরওয়া হতে নেমে এসে
এই মহাকালের গর্ভে ক্রমাগত
হাঁটছি তো হাটছিই। কে জানে-
আর কতটা পথ হেঁটে গেলে তবে
কোন খানে কোন ক্ষণে
আমাদের দেখা হবে !


চাকর নাকি প্রভু?

পাবলিক সার্ভেন্ট। অর্থটা সহজেই বোধগম্য- 'জনগনের চাকর'। ভদ্রভাষায় জনতার 'সেবক'ও বলা যেতে পারে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের নিয়োগকৃত কর্মচারীরা দেশের নাগরিকদের সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। নাগরিকদের কষ্টলাঘব করবেন।

কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার সম্পূর্ণ উল্টো ঘটনা। যারা আসলে জনগনের চাকর, তারাই যেন হয়ে উঠেছেন জনগনের প্রভু! কথা ছিল নিজে কষ্ট করে জনগনের কষ্ট লাঘব করবেন, কিন্তু বাস্তবে তারা এখন নিজের আরামের জন্য জনগনকেই কষ্ট দিয়ে থাকেন।

একটা ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যাক। যাচ্ছিলাম ব্যস্ত রাস্তায়। হঠাত দেখি রাস্তা আটকে দেয়া হয়েছে। কারণটা জানা গেল একটু পরেই। একজন উচ্চপদস্থ (!) সরকারি কর্মচারী তার গাড়ি নিয়ে অফিস থেকে বের হবেন। তাই জনতার গাড়ি আটকিয়ে রাস্তা ফাঁকা করে রাখা হচ্ছে!!
কথা ছিল আগে জনগনের চলাচল নির্বিঘ্ন করার, অথচ ঘটছে উল্টো ঘটনা। তাহলে মালিক কে, আর গোলাম কে? এযেন সেই প্রফেসির বাস্তবরুপ- দাসীর পেটে হচ্ছে এখন মালিকের জন্ম!!

বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

স্মার্টফোন ও শিশুমানস

স্মার্টফোন এখন সবার হাতে হাতে। আর স্মার্টফোনে ইন্সটল করা হচ্ছে 'স্মার্ট' গেমস। অনলাইনে বা অফলাইনে যতগুলো গেমস আছে, এর একটা বিরাট অংশ তৈরি হয়েছে সহিংসতাকে ভিত্তি করে। গেমস মানেই সংঘাত, সংঘর্ষ। নায়কের হাতে বন্দুক, গ্রেনেড। শত্রুর হাতে বন্দুক, গ্রেনেড। যুদ্ধ, আক্রমণ, আত্মরক্ষা- এইসব হয়ে দাঁড়িয়েছে গেমসের মূল বিষয়। নিরীহ স্নেক বা মোটো রেসের গেম এখন নিতান্তই সেকেলে।
এতে সমস্যা কী? সমস্যাটা হচ্ছে, এইসব সহিংসতা নির্ভর গেম এখন শিশুরাও খেলছে। বাবার মোবাইল কিংবা মামা চাচা ভাইয়া আপুদের মোবাইল হাতে নিয়ে শিশুরাও নিমগ্ন হয়ে যাচ্ছে এইসব গেমসে।
এটা কোন নির্মল আনন্দ নয়। আসলে অর্থহীন খেলাধুলাতেই শুধু আছে নির্মল আনন্দ। এইসব জটিল গেমস শিশুদেরকে স্মার্ট বানানোর চেয়ে অনেক বেশি জটিল বানাচ্ছে। যতটা জটিলতা থাকার কথা নয় তার চেয়ে বেশি জটিল হয়ে পড়ছে বাচ্চাদের চিন্তাভাবনা। তাদের বেড়ে ওঠাটা হচ্ছে না ধারাবাহিক, হচ্ছে না ক্রমান্বয়ী। এমনকি বাচ্চাদের হাতে এইসব গেমস ভেতরে ভেতরে হয়তো অজান্তেই উগ্র করে তুলছে তাদেরকে! তাদের কাছে মনে হতে পারে, এইসব গোলাগুলি এটাক পাল্টা এটাক বোধহয় খুবই স্বাভাবিক! সবচেয়ে ভয়ংকর দিকটা হচ্ছে- বড় হতে হতে একসময় তারা বাস্তবে এইসব এডভেঞ্চারের স্বাদ নিতে আগ্রহী হতে পারে। আর তাদেরকে এই এডভেঞ্চারের স্বাদ দিতে বর্তমান পৃথিবীতে অনেক গোষ্ঠী তো প্রস্তুত আছেই।
সতর্ক না হলে এইসব গেমসের শেষটা হয়তো ভবিষ্যতে আমাদের অনেক খারাপ কিছুর মুখোমুখি করবে।

সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

একটা রোগী দুইটা রোগী?

একটা রোগী? নাকি দুইটা রোগী? কয়টা রোগী আছে? অনেক ডাক্তার নার্সদের মুখে অনেক সময় এমন কথা শোনা যায়। "একটা" বা "দুইটা", এগুলো বস্তু বা অবোধ প্রাণীর সংখ্যা বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। মানুষের ক্ষেত্রে সংখ্যাবাচক হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত "কতজন"।
হয়তো এই 'একটা' 'দুটা' 'কয়টা' শব্দগুলি উদ্দেশ্যমূলক নয়, হয়তো কেউ কেউ সহজে বলার সুবিধার্থে এভাবে বলে থাকেন, কিন্তু তবু শব্দটা বেশ শ্রুতিকটু। রোগীর জন্য সম্মানজনক নয়। এতে করে কিছুটা হলেও রোগীর প্রতি সম্মানহীনতা ফুটে ওঠে।
ডাক্তার ও নার্সদের মনে রাখতে হবে, রোগী কোন 'বস্তু' নন, রোগী একজন মানুষ, আশরাফুল মাখলুকাত। আর সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রত্যেক মানুষই সম্মানিত। মানুষের কাছেও প্রত্যেক মানুষই সম্মান পাবার অধিকার রাখেন। ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে, ধনী গরীব ভেদাভেদের উর্ধ্বে, সকলেই।
একইভাবে রোগীকে "তুমি" সম্বোধন প্রসংগও উল্লেখ করা যায়। অনেককেই দেখি গরীব রোগীকে "তুমি" সম্বোধন করতে। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত। ধনী গরীব সকল রোগীকে "আপনি" সম্বোধন করা উচিত। মনে রাখতে হবে, রোগী প্রথমত একজন 'মানুষ'।
মানুষের প্রতি সম্মান মানুষকেই করতে হবে। ডাক্তারদের মত উচ্চশিক্ষিত মানুষদের কাছে যদি একজন মানুষ ধর্ম বর্ণ সম্পত্তি নির্বিশেষে সম্মান না পায়, তাহলে এ সমাজে আর কার কাছ থেকে সভ্যতা আশা করা যেতে পারে?

রবিবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৬

উচ্চ মাধ্যমিক জ্যামিতি বনাম মেডিকেল সায়েন্স !

মেডিকেল এবং ভার্সিটির ভর্তি এসএসসির পরেই হওয়া উচিত । আমার মনে হয়, উচ্চ মাধ্যমিকের নামে দুই তিনটি বছর অযথাই নষ্ট করা হচ্ছে। উচ্চ মাধ্যমিকে যা শেখানো হয় তা আসলে পরবর্তী জীবনে কোন কাজে আসে না। বরং এসএসসি পর্যন্ত যা শেখানো হয়, ভিত্তি হিসেবে সেটুকুই যথেষ্ট। সেটুকুই সবার মনে থাকে। পরবর্তীতে কাজে লাগে।

মেডিকেল কলেজে যে ছেলে ভর্তি হয়, তার জন্য উচ্চ মাধ্যমিকের বায়োলজি বই কতটুকু কাজে লাগে? আরশোলার জীবন কাহিনী আর ব্যবচ্ছেদবিদ্যা কী কাজে লাগে? মস ফার্নের জীবনকাহিনী কী কাজে লাগে? উচ্চ মাধ্যমিক জ্যামিতি কী কাজে লাগে? 

একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই একেকটা সাবজেক্ট নিয়ে পড়বে- সেখানে উচ্চ মাধ্যমিকে যা পড়ানো হয়- সেগুলোর কোন দরকার নেই। ভিত্তি হিসেবে ততটুকুই যথেষ্ট, যতটুকু এসএসসি পর্যন্ত পড়ানো হয়।
বরং অতিরিক্ত এই দুইবছর সময় কার্যকরভাবে কাজে লাগানো উচিত। মেডিকেল ছাত্রদের জন্য ট্রেনিং পিরিয়ড বাড়ানো যেতে পারে। এমবিবিএস পাসের পরই বিষয়ভিত্তিক স্পেশালাইজড ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বাংলা ইংরেজী ইতিহাস গণিত পদার্থ রসায়নের ছাত্রদের গ্রামের স্কুলে শিক্ষাদানের জন্য পাঠানো যেতে পারে। শিক্ষানবিশ হিসেবে কোন সরকারী অফিসের কাজে লাগানো যেতে পারে। 


এভাবে প্রত্যেকটা সাবজেক্টের ছেলেমেয়েদের বিশেষ বিশেষ উৎপাদনমুখি কাজে লাগানো যেতে পারে।
অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম আরো কিছুটা বড় করা যেতে পারে। বিহেভিওরাল সায়েন্স, দেশের অর্থনীতি এসব যোগ করা যেতে পারে।


যাকে দিয়ে যে কাজ করাবো, তাকে সেই কাজেই বেশি সময় ব্যয় করার সুযোগ দিতে হবে। যার যার অর্জিত জ্ঞান নিজস্ব ক্ষেত্রে কাজে লাগানোর সুযোগ না পেলে দক্ষ মানবশক্তি কখনোই তৈরি হবে না।