সৃষ্টির শুরু থেকে ভয় মানুষের আত্নার গভীরে প্রোথিত ।ভয় মানুষকে
পেতেই হয় ।জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষ ভয় পায় নানান বিষয়কে ।প্রধানত
যেসব বিষয়ে মানুষ ভয় পায় সেগুলো হচ্ছে মৃত্যুর ভয় ,আহত হওয়ার ভয় ,সম্পদের
ক্ষতির ভয় ,কষ্ট পাওয়ার ভয় ,কারাবরণের ভয় ,প্রিয়জনদের হারানো বা কষ্ট
পাওয়ার ভয় ইত্যাদি ।আর এই সবধরনের ভয়েরই কারন হতে পারে ইসলামী আন্দোলন বা
বিপ্লবের পক্ষে কথা বলা ।বিপ্লবের জন্য কাজ করা ।পৃথিবীর আদিকাল থেকে যারাই
আল্লাহর দ্বীনের আইনের শাসন বাস্তবায়নের জন্য কাজ করেছে তারাই শিকার
হয়েছে নির্যাতনের ।শয়তান ও তার মানব দোসররা নির্যাতনের মাধ্যমে থামিয়ে দিতে
চেয়েছে ইসলামের অগ্রযাত্রা ।
(নিশ্চয়ই আমি তোমাদের পরীক্ষা করবো কিছুটা
ভয় ভীতি ,ক্ষুধা এবং মাল জান ও ফল ফসলের ক্ষতি দ্বারা ।আর ধৈর্য
অবলম্বনকারীদের সুসংবাদ দাও ।-বাকারা ১৫৫)
আর এই অত্যাচারের ভয়ে আল্লাহর
দ্বীনের আন্দোলনের পথ থেকে সরে গেছে অনেক মানুষ ।অনেকেই দুরে সরে থেকেছে
।কিন্তু আসলেই কি ভয় পাওয়ার কিছু আছে ?সহজ ভাষায় বলতে গেলে ইসলামের জন্য
কথা বলতে গেলেই নির্যাতনের শিকার হতে হবে আর দুরে থাকলে খুব সুথে থাকা যাবে
প্রকৃত অবস্থা কিন্তু এমন নয় ।যারা মনে করেন আন্দোলনের পথ থেকে বিরত
থাকলেই জীবনটা সুখী হবে তারা বোকা শয়তানের স্বর্গে বাস করেন ।আচ্ছা বলুন তো
বাংলাদেশের কারাগার গুলোতে যত কয়েদী আছেন তাদের মধ্যে কতজন ইসলামী
আন্দোলনের ?খুবই নগন্য সংথ্যক ।বাংলাদেশের হাসপাতাল গুলোতে যতজন আহত মানুষ
যতজন কঠিন রোগে আক্রান্ত মানুষ ভর্তি আছেন তাদের কতজন ইসলামের জন্য আহত
হয়েছেন ?এবার চিন্তা করুন দেখি প্রতিদিন যতলোক মৃত্যুবরন করে তাদের কতজন
ইসলামের কথা বলতে গিয়ে নিহত হয়েছেন ?হিসাব করে হয়তো দেখছেন সংখ্যাটা কত
নগন্য তাই না !হ্যা ,এটাই বাস্তব ।আপনি আল্লাহর দ্বীনের পক্ষে কথা না
বললেও আহত হতে পারেন ,হাত পা ভাঙতে পারেন ।হয়তো গাড়ি Accident এ ,হয়তো
ডাকাতের আক্রমনে অথবা অন্য কোন ভাবে ।আপনি কষ্ট পেতে পারেন ক্যান্সারের মত
কোন কঠিন রোগে ।আপনি কারাবরন করতে বাধ্য হতে পারেন কোন বিরুপ পরিস্থিতির
শিকার হয়ে কিংবা কোন ষড়যন্ত্রের ফলে মিথ্যা মামলায় ।নিজের ঘরে থেকেও পেতে
পারেন কারাগারের চেয়েও বেশি কষ্ট ।আপনার প্রিয়জনরাও পেতে পারে একইরকম কষ্ট
।ইসলামের পথে না থেকেও আপনার সম্পদহানি হতে পারে অগ্নিকান্ডের মাধ্যমে
,বিরুপ ব্যবসায়িক পরিস্থিতির কারনে ,মন্দার কারনে ।
(আল্লাহ তায়ালা যা চান তাই হয় ।-সুরা আরাফ ১৮৮)
আর
মৃত্যু ?সেটাতো আপনি কোনভাবেই ঠেকাতে পারবেন না।আপনার সুনির্দিষ্ট হায়াত
শেষ হলেই আপনি মরতে বাধ্য ।(প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে
হবে ।আর তোমরা কিয়ামতের দিন তোমাদের পূর্ণ প্রতিদান পাবে ।-আল ইমরান ১৮৫)
(আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না ।সেজন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে ।-আল ইমরান ১৪৫)
বাংলাদেশের
ইসলামী সংগঠনগুলোর যতজন তাগুতিশক্তির হাতে শহীদ হয়েছেন ,হিসাব করে দেখুন
এর চেয়ে কতবেশি নিহত হয়েছে ওইসব জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী গোষ্ঠীর
শুধুমাত্র অন্তর্কোন্দলে ।অন্যদের সাথে সংঘর্ষের কথা নাহয় বাদই দিলাম ।এরা
জীবনটা ব্যয় করলো ভুল পথে ।দুনিয়ায় তো কিছু পেলো ই না ,আখেরাতেও পাবে কঠিন
শাস্তি ।,
অপরদিকে যারা আল্লাহর দ্বীনের পথে কাজ করতে গিয়ে ক্ষতির শিকার
হচ্ছে তারা আল্লাহর কাছে উচ্চ সম্মানের অধিকারী হচ্ছেন ।পরকালে তারা এর
অনেকগুন বেশি পূর্ণ প্রতিদান পাবেন ।
(যারা আমারই জন্য হিজরত করেছে
,নিজেদের ঘরবাড়ি থেকে বহিস্কৃত হয়েছে ,নির্যাতিত হয়েছে ,আমারই পথে লড়াই
করেছে ও নিহত হয়েছে ,তাদের সকল অপরাধই আমি ক্ষমা করে দেব এবং তাদেরকে আমি
এমন জান্নাত দান করব যার নিচ দিয়ে প্রবাহমান রয়েছে ঝর্ণাধারা ।এরুপ
প্রতিফলই তাদের জন্য রযেছে আল্লাহর নিকট ।আর উত্তম প্রতিফল তো কেবল আল্লাহর
নিকটই পাওয়া যাবে ।-আল ইমরান ১৯৫)
আর আপনি তো কিছুই পাবেন না বরং আপনার
জন্য থাকবে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ।এবার চিন্তা করুন আপনি কোনটাকে ভয়
পাবেন ।দুনিয়ায় অনিশ্চিত ও নশ্বর এ জীবনে শয়তানের দোসরদের আঘাতের ভয় নাকি
সর্বশক্তিমান মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তায়ালার শাস্তির ভয় ।মনে
রাখবেন-দুনিয়ার এ জীবন চরমভাবে অনিশ্চত ও ক্ষণস্থায়ী অপরদিকে পরকালের জীবন
অবশ্যম্ভাবী এবং অনন্ত ।এই দুনিয়ার বিপদ আপদ থেকে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে
মুক্ত রাখতে পারেন কিন্তু পরকালে আপনার সাহায্যকারী কেউ থাকবে না ।
(কোন বিপদ কখনো আসে না আল্লাহর অনুমতি ছাড়া ।-তাগাবুন ১১)
যেসবকিছু ভালোবেসে আপনি আল্লাহর পথ থেকে দুরে ছিলেন সেগুলোর কিছুই আপনার কাজে আসবে না ।
(মানুষের
জন্য তাদের মনঃপুত জিনিস ,নারী ,সন্তান ,স্বর্ন রৌপ্যের স্তুপ ,বাছাই করা
ঘোড়া ,গৃহপালিত পশু ও কৃষিজমি বড়ই আনন্দদায়ক ও লালসার বস্তু বানিয়ে দেয়া
হয়েছে ।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে উহা দুনিয়ার সাময়িক ও ক্ষণস্থায়ী জীবনের সামগ্রী
মাত্র ।মুলতঃ ভালো আশ্রয় তো আল্লাহর নিকটই রয়েছে ।-আল ইমরান ১৪)
এবার ভাবুন আপনি কী করবেন !
সোমবার, ডিসেম্বর 13, 2010