এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৫

মনে সুখ নাই !

আমাদের মনে সুখ না থাকার মূল কারণ হলোঃ আমরা সবসময় নিজের অবস্থাকে আমাদের আশেপাশের মানুষের সাথে তুলনা করি । এবং বেশিরভাগ সময়ই তার সাথে তুলনা করি, যে আপাতদৃষ্টিতে আমার চেয়ে এগিয়ে আছে । ফলে সবসময় নিজের ভেতর একটা অপ্রাপ্তির কষ্ট বয়ে নিয়ে বেড়াই । অবশ্য এই কাজটা করতে বাধ্য করে আমাদের চারপাশের মানুষ এবং তথাকথিত সমাজ । আমরা নিজের সুখ শান্তির চেয়ে অন্যেরা কী বলবে, কী ভাববে, তাতে গুরুত্ব দেয়া শুরু করি ।
হোয়াই নট? ক্লাস সিক্সে ওঠা বাচ্চাটাকে যখন সবাই জিজ্ঞেস করতে থাকে সে বৃত্তি পেয়েছে কিনা , তখন তার কাছে সেটাকেই একমাত্র পাওয়ার যোগ্য কিছু বলে মনে হয় । এসএসসি পরীক্ষার পর- ছেলের রেজাল্ট কী, এইচএসসির পর কোথায় চান্স পেলো, ভার্সিটিতে কোন সেমিস্টারের কী রেজাল্ট, মেডিকেলে পড়লে প্রফের রেজাল্ট কী, কবে পাস করে বের হবে, তারপর পাস করে বের হয়ে গেলে- কোথায় জব করছে এখন, হায়ার ডিগ্রি নিচ্ছে কিনা, নিলে কোন বিষয়ে, বিসিএস হয়েছে কিনা এবং শেষমেষ মোক্ষম প্রশ্ন 'বিয়ে কবে, বিয়ে করছেনা কেন'?!
...তারপর...পরবর্তী ধাপেঃ বাচ্চা কয়টা, বাচ্চার চেহারা কেমন, বাচ্চা কোথায় পড়ে, বাচ্চার রেজাল্ট কী? বয়স আরেকটু বাড়লে- চাকরিতে প্রমোশন হচ্ছেনা কেন? এইসব প্রশ্ন নিরন্তর তাড়া করে বেড়াচ্ছে আমাদের সবাইকে । আমরাই একে অপরকে এইসব প্রশ্ন করি আর মনমত জবাব না পেলে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দেই 'ও আচ্ছা' ।
.
এই অবস্থায় এই সমাজে এই সময়ে কিছুটা সুখে থাকার সম্ভবত একটাই উপায় আছে, সবাইকে বলে দিতে হবে- 'আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করোনা । আমি তোমাদের কেউ নই । আমি এই সমাজের কেউ নই ।'

শুক্রবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৫

বিসিএস পরীক্ষার্থী ডাঃ কানাই !

ডাঃ কানাই একজন বিসিএস পরীক্ষার্থী । এই উপলক্ষ্যে অনেক বছর পর তিনি কিছু অংক অনুশীলন করিতে মনস্থ করিলেন । বই খুলিবামাত্র তিনি দেখিলেন একটা বানর তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া প্রতি মিনিটে কিছুদুর উঠিতেছে আবার পরের মিনিটে নামিয়া যাইতেছে । ঐ বানর কতক্ষণে বাঁশের আগায় উঠিবে তিনি তাহা হিসাব করিয়া ফেলিলেন । পরক্ষণেই তিনি দেখিলেন একটা নেড়িকুকুর একটা পাতিশিয়ালকে ধাওয়া করিতেছে । ঐ কুকুর কতক্ষণে শিয়ালকে ধরিবে তাহাও হিসাব করিতে হইল । কিছুদূর অগ্রসর হইবামাত্র তাঁহার হাতে কলা ও লেবু ধরাইয়া দেওয়া হইল । বাঙালি কলা কিনিলো অনেক, ফলে কলাতে লাভ হইলো বটে কিন্তু লেবুতে ক্ষতি হইয়া গেল । কলা বেচা হইলেও রথ দেখা হইলো না । অতঃপর পা বাড়াইয়াই তিনি নিজেকে একটা ব্যাংকের ভেতর আবিস্কার করিলেন । ঐ ব্যাংকে কোন লোকজন নাই । ডাঃ সাহেবকে ব্যাংকের সমস্ত সুদের হিসাব করিয়া দিতে হইলো । রাস্তায় নামিয়া তিনি দেখিলেন রাস্তার কাজ চলিতেছে । রাস্তার আয়তন নিয়া ইঞ্জিনিয়াররা গলদঘর্ম!   ডাক্তার সাহেবকেই ঐ হিসাব করিয়া দিতে হইল । রাস্তার দুইপাশে কতগুলি গাছ লাগানো যাইবে তাহাও ডাক্তার সাহেবকেই বলিয়া দিতে হইলো । এতক্ষণে বেলা পড়িয়া গিয়াছে । ফলে তাহাকে বিদ্যুতের খাম্বা ও গাছের ছায়ার দৈর্ঘ্য নির্ণয় করিতে হইলো । ক্লান্ত দেহে চলন্ত ট্রেনে উঠিতে পারিলেন না বটে কিন্তু ট্রেনের গতিবেগ কত তাহা নির্ণয় করিয়া স্টেশন মাস্টারকে জানাইতে ভুল করিলেন না । শেষে তিনি নৌকায় উঠিয়া নদীর প্রস্থ এবং স্রোতের গতিবেগ নির্ণয় করিয়া মাঝির জীবন বারো আনা পর্যন্ত বৃথা প্রমাণ করিলেন । কুত্তা শিয়ালের দৌড় আর কলা বেঁচার হিসাব ডাক্তারিবিদ্যায় কী কাজে লাগিবে তাহা ভাবিতে ভাবিতে ঘরে ফিরিয়া দেখিলেন বানর এতক্ষণে তৈলাক্ত বাঁশের আগায় উঠিয়া বসিয়াছে ।
বানর নাহয় উঠিয়াছে, কিন্তু এই বাঙালি জাতি তৈলাক্ত বাঁশ বাহিয়া কবে আগায় উঠিবে- যারপরনাই চিন্তিত হইয়া এইবার ডাক্তার কানাই নবোদ্যমে তাহা হিসাব করিতে লাগিলেন । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ডাঃ সাহেব তাহার হিসাব মিলাইতে ব্যর্থ হইয়াছেন এবং বাঙালি জাতি আদৌ কোনদিন তৈলাক্ত বাঁশের আগায় পৌঁছিবে কিনা তাহা লইয়া গুরুতর সন্দেহে পতিত হইয়াছেন ।

বৃহস্পতিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৫

কেউ বোঝে না !

ডিপ ইনসাইড - প্রত্যেক মানুষই চায়, অন্যেরা তাকে বুঝুক । অন্তত কেউ একজন তাকে ভালো বুঝুক । তার ছোট ছোট কষ্টগুলো অনুভব করুক । কেউ অন্তত একজন তাকে সমর্থন করে বলুক 'আসলেই তুমি অনেক কষ্টে আছো ' !
.
কিন্তু দিনশেষে সবাইকে হতাশ হতে হয় । দিনশেষে সবারই নিজেকে একলা মনে হয় । জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে গিয়ে সবারই একবার আক্ষেপ হয়- আহা ! এই পৃথিবীর কেউ আমাকে বুঝলোনা...
.
কিন্তু আক্ষেপ করে কোন লাভ নেই । এটাই বাস্তবতা । মানুষ আল্লাহর সবচেয়ে রহস্যময় সৃষ্টি । প্রতিটি মানুষই আলাদা এবং ইউনিক । বাবা-মা-ভাই-বন্ধু-বউ-পোলা যেই হোক, একজন 'মানুষ' কে পুরোপুরি বোঝা আরেকজন মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব না ।

স্মৃতিকাতর মানুষের চোখ

স্মৃতিচারন এমন একটা অদ্ভুত ব্যাপার, এসময় মানুষ একই সাথে আনন্দ এবং দুঃখ পায় ! যখন কেউ ভালো কোনো স্মৃতি রোমন্থন করে, তখন সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শেষ করে এভাবে - আহা! কীসব দিন ছিল তখন আমাদের!! আবার যখন কোনো দুঃখের স্মৃতিচারন করে, তখনো শেষবেলা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে - আহ! কীসব দিন যে তখন আমরা কাটিয়েছি, ভাবা যায় না!!!
উভয় ক্ষেত্রেই স্মৃতিকাতর ব্যক্তির চোখজোড়া জ্বলজ্বল করে ওঠে। অতীতের সুখ এবং বর্তমানের বেদনা কিংবা অতীতের কষ্ট আর বর্তমানের সুখ একাকার হয়ে এক অন্যরকম আলো তৈরি করে স্মৃতিকাতর মানুষের চোখের তারায়। একই সাথে আনন্দ এবং বেদনা খেলা করে সেখানে।

মঙ্গলবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৫

পিশাচ শিক্ষক !

সবার জীবন সরলরেখায় চলে না । কাউকে কাউকে অনেক রকম প্রতিকুলতা, অনেক রকম বিরুপ পরিস্থিতির মোকাবেলা করে এগোতে হয় । কিন্তু মেডিকেল কলেজগুলোতে এমন কিছু কিছু শিক্ষক আছেন যারা অনেকটা পিশাচ মানসিকতা লালন করেন । কক্ষচ্যুত বা পিছিয়ে পড়া ছাত্রটিকে গর্ত থেকে তুলে আনার পরিবর্তে তাঁরা চেষ্টা করেন কীকরে তাকে আরো গভীর গর্তে ঠেলে দেয়া যায় । উঠে আসার চেষ্টা করলে তাঁরা উপরে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়ার বদলে ক্রমাগত ইট পাথর বালি ছুঁড়তে থাকেন । জীবনে উঠে আসার এই স্বপ্নীল সময়টাতে তারা একেকজন ছাত্রের জন্য হয়ে ওঠেন জীবন্ত বিভীষিকা । হাবুডুবু খেতে থাকা ছাত্রটির জন্য চেনা পথে ফিরে আসার একটা সুনির্দিষ্ট পথ বাতলে না দিয়ে তারা বরং নিত্য নতুন ফন্দি আঁটতে থাকেন, কীকরে পরিস্থিতি আরো জটিল করা যায় । কীকরে ছাত্রদের আরো বেশি নাস্তানাবুদ করা যায় । পিছিয়ে পড়া একেকজন ছাত্রছাত্রী যেন ঐসব শিক্ষকের নিরানন্দ জীবনে এক অফুরন্ত বিনোদনের উত্‍স ! তারা এইসব ছাত্রছাত্রীকে গালমন্দ করে নানারকম জটিলতায় ফেলে পৈশাচিক আনন্দ পেয়ে থাকেন ।
.
শিক্ষক সবসময় শ্রদ্ধার পাত্র । কিন্তু এরকম কিছু কিছু শিক্ষকের ক্ষেত্রে শ্রদ্ধাটা মেকি হয়ে যায় । ওটা আর সবার মত হৃদয়ের ভেতর থেকে উঠে আসে না ।

সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫

এতদিনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে !

একই বাঘের হাতে প্রাণ হারাচ্ছে সবাই । অদ্ভুত ব্যাপার হলো, নিজের ঘরে না ঢোকা পর্যন্ত কেউই বাঘকে থামানোর কথা বলে না । বাঘ যখন অন্যজনের ঘরে ঢুকে ছেলেপুলে গিলে খায়, তখন বাকিরা মজা দ্যাখে । কিন্তু বাঘ যখন একবার রক্তের স্বাদ পেয়ে যায়, তখন সে কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না ।
এতদিন বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ারে দিয়ে হত্যা করা হচ্ছিল । এখন যেহেতু তাদের লম্ফঝম্প কমে গেছে, বাঘ এবার আওয়ামী লীগ ছাত্রলীগের ওপরেই হামলে পড়েছে । আর অমনি চিত্‍কার চেঁচামেচি শুরু হয়ে গেছে । থামাও থামাও ! ক্রসফায়ার অসাংবিধানিক, একে বন্ধ করো ! বন্ধ করো ! কিন্তু একথা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়, আজ যদি আবার বিরোধী দলের কাউকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয় ফজলে নূর তাপস সাহেব তার প্রতিবাদ করবেন না ।
.
তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় এতদিন সরকারবিরোধীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছিল, কেউ টু শব্দটি করে নাই । তারপর গ্রেপ্তার করা হলো প্রবীর সিকদারকে । বেচারা ঘরের লোক । এইবার আর চুপ করে থাকা যায় না । এতদিনে অরিন্দম কহিলা বিষাদে ! ৫৭ ধারা সংবিধান পরিপন্থি । উহা বাতিল করিতে হইবে !
.
বড়ই হিংসুটে বাঙাল জাত । ইহাদের কে বুঝাইবে যে দড়িছেড়া গরু শুধু পরের ক্ষেতে মুখ দিয়াই থামিয়া থাকে না । সুযোগ পাইলে নিজ মনিবের বাগানও সাবাড় করিয়া দেয় ।

শনিবার, ২২ আগস্ট, ২০১৫

পতিতা আমদানি এবং প্রকাশ্য প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য কী?

বিকৃতমনা নাস্তিক ব্লগার খুন অথবা ইন্ডিয়ান পতিতা আমদানি নিয়া কথা বলার রুচি নাই । কিন্তু এই ব্যাপারগুলা নিয়া এইটুকু না বলা অপরাধ হবে যে, এইগুলা আসলে কোনভাবেই আলাদা বা বিচ্ছিন্ন বিষয় না । এইগুলা একটা মাস্টারপ্ল্যানের অংশ । সেটা হচ্ছে, বাংলাদেশের শান্তিপ্রিয় মুসলমানদের বিশ্বাসে আঘাত করে উগ্রতার দিকে ঠেলে দেয়া । তারপর জঙ্গিবাদ উত্থানের ধুয়া তুলে ভূ-রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই ভূখণ্ডের ওপর হামলে পড়া, খবরদারি করা অথবা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা ।
বাংলাদেশ নব্বই ভাগ মুসলমানের একটা দেশ । কী কারণে একটা গোষ্ঠি বারবার মুসলমানের ঈমান আক্বিদা আবেগ অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার চেষ্টা করছে? ব্যাপারটা এরকম, আপনি আমার বাপ মা তুলে যাচ্ছেতাই গালিগালাজ করতেই থাকলেন । আমি ভদ্র মানুষ, আমি আপনার বাপ-মা কে গালি দিতে পারি না । তাই বলে সহ্য করতেও তো পারি না । একসময় ধৈর্যের বাধ ভেঙ্গে আমি আপনারে একটা ঘুষি দেব, আর অমনি আপনি আমাকে সহিংস জঙ্গি বলে প্রচার করবেন । এই খেলাটাই খেলার চেষ্টা হচ্ছে এখানে ।
নাস্তিক ব্লগারদের উস্কে দিয়ে, বিরিয়ানি দিয়ে, তিন স্তরের সাপোর্ট দিয়ে আল্লাহ রসুলকে নিয়ে অশ্লীল গালাগালি করানো হবে, তারপর মই সরিয়ে নেয়া হবে । কেউ না কেউ গিয়ে তাদের কুপিয়ে আসবে । ব্যস, বাংলাদেশ যে জঙ্গিদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে সেইটা প্রমাণিত হইলো ।
নতুন করে পতিতা আমদানি এবং প্রকাশ্য প্রদর্শনীর উদ্দেশ্য কী? বাঙালি মুসলমানের ঈমান নিয়া খেলা করা? দাড়ি টুপি ওয়ালারা রাস্তায় নামবে, আপনারা টিয়ার শেল মারবেন , মোল্লারা আত্মরক্ষার্থে ইট ছুঁড়বে , আপনারা গুলি করবেন । বাংলাদেশে যে জঙ্গিদের উত্থান ঘটছে সেইটা প্রমাণ হয়া গেল ! সবাইরে কইবেন, এই ঘুমা ঘুমা, জুজু আইতাছে !
এই খেলা শুরু হয়েছে জেএমবি দিয়ে সেই ২০০৪ থেকে । ৬৪ জেলায় একযোগে বোমা ফাটায় কোন বেকুবে? এতে কার লাভটা কী ছিল? ঐভাবে কেউ ক্ষমতা দখল করতে পারে? লাভের লাভ ছিল একটাই, বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদের দেশ বলে প্রচার করা ।
যারা ঘরপোড়া আগুনে আলু পোড়া খাবার চেষ্টা করছেন তারা সতর্ক হোন। আপনেও যে পুড়বেন না তার নিশ্চয়তা কী? কথায় বলে, নগর পুড়লে দেবালয় এড়ায় না ।
আমরা শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশি । কিন্তু কেউ আমাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে আলুপোড়া খাবে সেটা আমরা হতে দিতে পারি না । সেজন্য এই অপরাজনীতির কুশীলবদের বিরুদ্ধে এখনই জেগে উঠতে হবে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষকে ।

শুক্রবার, ২১ আগস্ট, ২০১৫

পরিবর্তন !

এমন বর্ষণে আজও হয়তো কেউ কেউ উদাসী হয়
হয়তো কেউ কেউ হয়ে ওঠে রবিঠাকুরের চেয়ে বড় কবি
আদার ব্যাপারীও হয়তো ব্যস্ত হয়ে পড়ে জাহাজের খোঁজে
কিংবা, উলুবনে ছড়িয়ে থাকা মুক্তোর মালা হাতে নিয়ে
হয়তো আনমনে খেলা করে বানরের দল ।
.
অথচ কতটা বদলে গেছি আমি ও আমরা ! ভাবা যায়?
বর্ষণের আওয়াজ আজকাল আমাদের কাছে নিয়ে আসে শুধুই-
নির্বিঘ্ন নিদ্রার আহ্বান । নাসিকাগর্জনের সমানুপাতিক হারে
যে কেউ পরিমাপ করে নিতে পারে বৃষ্টির পরিমাণ
এবং
দখিনা বাতাসের শীতলতা । জানো তুমি হৃদিতা?
কেন এবং ঠিক কবে থেকে আমি-
এমন হলাম?

মঙ্গলবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৫

নিঃসঙ্গ সেনাপতি

কথা ছিল - এইসব রাত্রিতে জন্ম নেবে প্রত্যাশিত বিপ্লবের মহীরুহ
কিংবা, অন্তত বিপ্লবের চারাগাছ । কথা ছিল- এইসব রাত্রিতে
অন্তত প্রচন্ড যুদ্ধ হবে বর্তমানের সাথে
অনাগত ভবিষ্যতের নির্বিঘ্নতার প্রয়োজনে ।
.
অথচ আজো প্রতিপক্ষের দেখা নেই,
আজো নির্ধারিত হয়নি আমাদের কুরুক্ষেত্র
রক্ত এবং অশ্রুর অভাবে আজ অবধি
একটিবারও সেচ দেয়া হয়নি রক্তজবার শিকড়ে ।
এখন এই রাত্রিতে, রণ দামামার আওয়াজ কিংবা উড়ন্ত ধুলোর বদলে
কী এক অদ্ভুত ঘ্রাণ উড়ে আসছে পুবাল হাওয়ায়
আমি এক নিঃসঙ্গ সেনাপতি, ঢুলু ঢুলু চোখে বসে আছি
একজন
সহ-অধিনায়কের অপেক্ষায় ।

বৃহস্পতিবার, ৬ আগস্ট, ২০১৫

বুলেটের প্রেম !

যদি একদিন চলতি পথে হাঁটতে হাঁটতে
তাজা বুলেটের সাথে জড়িয়ে পড়ি গভীর ভালোবাসায়-
স্টেনগান কিংবা কালাশনিকভের ব্যারেল পেরিয়ে
ভালোবেসে বুকে এসে যদি ঘুমিয়ে পড়ে হঠাৎ
একটি বুলেট;
ভেবোনা চলে গেছি স্বার্থপরের মত; হয়ে গেছি পর
ভেবোনাকো ভেঙ্গে গেছে স্বপ্নের ঘর ।

তোমার অপেক্ষায় অজস্র মহাকাল আমি জেগে রবো
সময়ের ওপারে-
কোন এক অনন্ত উদ্যানে ।

বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০১৫

শকুন!

ছোটবেলায় একবার শকুন দেখেছিলাম ।
নদীর ধারে পড়ে থাকা মরা মহিষটার শরীরে হামলে পড়েছিল
একঝাঁক শকুন শকুনি । দূর হতে আমি এক মুগ্ধ বালক
শকুনের চোখে দেখেছিলাম-
পৈশাচিক তৃপ্তি !
.
তারপর আমি শকুন দেখেছি আরো অনেক অনেক ।
কলেজ ভার্সিটি মেডিকেল ক্যাম্পাসে, রাস্তায়, অলিতে গলিতে,
রাজশাহী রংপুর চিটাগাং এবং
এই ঢাকায় ।
.
তাছাড়া আজকাল পত্রিকা খুললেই চোখে আসে শকুনের রঙচঙা ছবি
বিলবোর্ড রেডিও টেলিভিশন সবখানে শকুনের জয় জয়কার ।
মরা জাতির লাশ খুবলে খাচ্ছে একপাল সুদৃশ্য শকুন
আর আমি এবং আমরা ক্ষুধার্ত শকুনের উদর পূর্তির প্রয়োজনে-
তিনবেলা ঠিকঠাকমত খেয়ে এবং ঘুমিয়ে- ক্রমাগত হৃষ্টপুষ্ট করে নিচ্ছি-
আমাদের শরীর ।

সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫

ক্যারি অন পুনর্বহালের দাবি

মেডিকেল স্টুডেন্টরা ইতোপূর্বে যত আন্দোলন করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে যৌক্তিক আন্দোলন হচ্ছে চলমান 'ক্যারি অন পুনর্বহাল' আন্দোলন । মেডিকেলের একেকটা পরীক্ষায় লিখিত(২ পার্ট), ভাইভা(২ বোর্ড), এমসিকিউ, অসপি, প্রাক্টিকাল, ক্লিনিক্যাল(২ পার্ট) ইত্যাদি মিলিয়ে অনেকগুলো পার্ট পরীক্ষা দিতে হয় । এবং পাশ করার জন্য প্রতিটা সাবজেক্টের পরীক্ষার প্রতিটি অংশে আলাদা আলাদা ভাবে ৬০% মার্কস পেতে হয়।
তো কোন কারণে যদি এতসব পরীক্ষার কোন একটি অংশে কোনভাবে ৬০% এর কম মার্ক পায় তাহলেই ফেইল । এতদিন সিস্টেম ছিল কোন সাবজেক্টে ফেল করলেও সেই শিক্ষার্থী পরবর্তী ইয়ারের সকল ক্লাসে অংশগ্রহন করতে পারতো । এই সময়ে অনুষ্ঠিত পরবর্তী পরীক্ষায় অংশগ্রহন করে পাশ করলেই চলতো। ইয়ার লস হতনা । এখন এই সিস্টেম বাতিল করার অর্থ হলো কোন একটি অংশে ফেল করলেই এক বছর লস! নিজের ব্যাচ থেকে ছিটকে পড়া ! এই সিদ্ধান্ত মেডিকেল স্টুডেন্টদের ওপর কী পরিমাণ মানসিক চাপ সৃষ্টি করবে, কী পরিমাণ হতাশা ছড়াবে সেটা যে কেউ অনুমান করতে পারেন । এমনিতেই চলমান সিস্টেমের চাপে পিষ্ট হয়েই প্রতিবছর কয়েকজন করে মেডিকেল ছাত্রছাত্রী আত্মহত্যা পর্যন্ত করছে । নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী 'ক্যারি অন' বাতিল হলে হয়তো সারা বছরই আমাদের শুনতে হবে- মেডিকেল শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার খবর । কে নেবে তার দায়? যার হারাবে তাঁর তো সবটুকুই হারাবে । এভাবে একজন ছাত্রছাত্রীও যদি হারিয়ে যায়, কেউ কি তাঁকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? 

----

'ক্যারি অন' সিস্টেম বাতিলের আরেকটা ফল দাঁড়াবে- গরীবের ছেলেদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে । স্বাভাবিকভাবে এক দিন লস না করেও এমবিবিএস পাস করে বের হতে ইন্টার্নশিপ সহ সাড়ে ছয় বছর সময় লাগে । ক্যারি অন বাতিলের পরে অনেকের জন্যে এই সময় গিয়ে দাঁড়াবে গড়ে আট থেকে সাড়ে আট বছরে । এই দীর্ঘ সময় লেখাপড়ার খরচ চালাতে নাভিশ্বাস উঠে যাবে গরীব বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। ডাক্তার হয়ে পরিবারের হাল ধরবে, বাবা মাকে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি থেকে একটু রেহাই দেবে, সেই সৌভাগ্য হবেনা ছেলেটির। মেডিকেল কলেজ হতে যখন সে এমবিবিএস সার্টিফিকেট খানা হাতে নিয়ে বের হবে, তখন জাতি পাবে চোখে শর্ষেফুল দেখা একজন জরাজীর্ণ তরুণ । তার ইঞ্জিনিয়ারিং-ভার্সিটি পড়ুয়া বন্ধুরা ততদিনে অনার্স মাস্টার্স শেষ করে 'জব'-এ ঢুকে যাবে... স্টার্টিং এ পাবে......
এবং একটা সময় গরীব-মধ্যবিত্তের মেধাবী ছেলেরা আর মেডিকেল কলেজমুখো হবার সাহস করবে না। তখন অনেকের জন্যে ডাক্তার হওয়ার 'এইম ইন লাইফ' হয়ে দাঁড়াবে 'গরীবের ঘোড়া রোগ' !

ছেলেদের কথা বললাম , কিন্তু ডাক্তার মেয়েটি ? ওহ ! তার বয়সও কিন্তু তখন প্রায় ২৭-২৮ ! যাহারা ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড ইয়ারে বিবাহের পিড়িতে বসিয়া যাইবে তাহাদের কথা বলিবার দরকার নাই । কিন্তু যাহারা ঐ পথ ধরিবে না তাহারা যে কী করিবে, তাহা আমার বলিতে পারার কথা নয় ।

রবিবার, ২ আগস্ট, ২০১৫

স্থিতিজড়তা

এ এক অদ্ভুত জীবন
ভয়ংকর স্থিতিজড়তা আচ্ছন্ন করে রেখেছে আমাকে ।
কত নার্গিস কোমেন আইলা বয়ে গেল তবু
সমস্ত আবেগ হাতের মুঠোয় নিয়ে-
আদিম স্থানুর মত স্থবির হয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি
পুরনো জায়গায় ।
.
কে আনবে পরিবর্তন?
এই নিস্তরঙ্গ জীবনে নব চাঞ্চল্য আনবার মত-
কার হাতে আছে জীয়ন কাঠি?