এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শনিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে আমাদের করণীয়

ড. আহমদ তোতুনজি ‘ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থট’-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট . বেশ কয়েকবার তিনি  বাংলাদেশ সফরে  এসেছিলেন। এসময়  ড. আহমদ তোতুনজি বিভিন্ন  উন্মুক্ত আলোচনা সভায় যা বলেছিলেন  তার
ভিত্তিতে একটি  নিবন্ধ লেখেন বিশিষ্ট সাংবাদিক শাহ আব্দুল হালিম । সেই নিবন্ধ থেকে গুরুত্ববহ পয়েন্টগুলি তুলে আনা হয়েছে এই নোটে .

গবেষণা , সৃজনশীলতা ও পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন

মুসলমানরা কেন পিছিয়ে আছে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ড. আহমদ তোতুনজি বলেন,  আমরা গবেষণা  ও উন্নয়নে বিশেষ গুরুত্বারোপ করছি না। এ কারণে আমরা নিজেদের অধিকার রক্ষায় যথাযথ কৌশল নির্মাণে সক্ষম নই এবং অন্যদের মাধ্যমে ব্যবহৃত হচ্ছি।’ তিনি নতুন প্রজন্মকে সৃজনশীলতা ও কর্মে নৈপুণ্য অর্জন এবং কাজ যথাযথভাবে সম্পাদন করার জন্য প্রয়োজনে অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জন ও সর্বোত্তম উৎকর্ষ সাধনেরও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

ছায়া মন্ত্রিসভা ও থিংক ট্যাংক গঠন


মূলধারার ইসলামি আন্দোলনকে ছায়া মন্ত্রিসভা ও থিংক ট্যাংক গঠন করতে হবে । এক একটি থিংক ট্যাংক এক একজন মন্ত্রী পরিচালনা করবেন।  ‘এর ফলে তিন-চার বছর সময়ের মধ্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে  অনেক গবেষণা করা যাবে , যা আমাদের  জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমস্যার যথাযথ সমাধান নির্ণয়ে সহায়তা করবে। আমাদের  এ দেশ ও জাতিকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত করবে। তবেই আমরা  পাশ্চাত্যের বুদ্ধিবৃত্তিক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলায় ইতিবাচক ও কার্যকর প্রতিউত্তর দিতে সক্ষম হব ।’
 ‘আমরা সবসময় প্রতিক্রিয়া  ব্যক্ত করি, কিন্তু পরিকল্পনা করি না। ভালো কাজ সবসময় গ্রহণযোগ্য হবে, যদি তা সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়। যদি আমরা এক পা এগোই তবে আল্লাহর সাহায্য অবশ্যম্ভাবী।’

নতুন ও বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টি

আমাদের  প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন ও বিকল্প নেতৃত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে দায়িত্ব অর্পণ করা প্রয়োজন ।  ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এ বিশ্বে আমরা  সফলতা অর্জন করতে পারবো  না, যদি আমরা  প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টিতে সক্ষম না হই ।’ কর্মপন্থা ও কর্মসূচি প্রণয়নে তিনি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ পেশাজীবীদের সাহায্য নেয়া দরকার ।
‘নবপ্রজন্মকে অবশ্যই সাম্প্রতিক ইসলামি সাহিত্য পাঠ করতে হবে। এটা যথেষ্ট নয় যে, আমরা শুধু  সাইয়েদ কুতুব ও মওদূদীর বই অধ্যয়ন করবো । তারা তাদের সময়ের বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ, পণ্ডিত ও কুশলী। এসব ট্রাডিশনাল বইপুস্তক পড়ার সাথে সাথে আমাদের  সমকালীন ইসলামি সাহিত্য অবশ্যই পাঠ করতে হবে, যদি আমরা  সত্যই চাই পাশ্চাত্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে।’ আরবি ভাষা শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ  করতে হবে , যাতে প্রতিটি মুসলমান কুরআন পাঠের সময় এর অর্থ সরাসরি বুঝতে সক্ষম হয়।

স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে ইসলামি সংস্কৃতির পার্থক্য নির্ণয় ও পদক্ষেপ গ্রহণ 

কোনো কোনো ইসলামি আন্দোলন স্থানীয় সংস্কৃতির সাথে ইসলামি সংস্কৃতির পার্থক্য নির্ণয়ে ব্যর্থ।
মুসলমানদের পিছিয়ে থাকার এটি একটি কারণ। মহিলাদের মুখ আবৃত করা (নেকাব পরা) একটি স্থানীয়
সংস্কৃতি। এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। কিছু লোক মহিলাদের মুখ আবৃত করাকে অধিক গুরুত্ব
দিয়ে থাকেন। যারা এটা করতে চান, তা তাদের জন্য একটি অধিকার। কিন্তু এটা ইসলামের একমাত্র পদ্ধতি
নয়। এসব লোক বিশ্বাস করেন না, মহিলাদের রয়েছে পৃথক সত্তা।
‘কিছু সংগঠন ইসলামের অগ্রযাত্রা নয়, বরং তাতে বাধা সৃষ্টির জন্য কাজ করছে। কোনো কোনো সময় আমরা
মহিলাদের নিগৃহীত করি এবং তাদের কণ্ঠস্বর স্তব্ধ করে দিই। এটা ইসলামসম্মত নয়।’

অসহিষ্ণুতা ও মতানৈক্য পরিহার

‘মুসলিম উম্মাহর পিছিয়ে থাকার অন্য একটি কারণ হচ্ছে অসহিষ্ণুতা। যেসব বিষয়ে একমত পোষণ করি, সেগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে আমরা যেসব বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করি, তাকে গুরুত্ব দেই। আমরা প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে একমত পোষণ করি। আর দ্বিমত পোষণ করি শুধু ১০ শতাংশ ক্ষেত্রে। তা সত্ত্বেও আমরা আমাদের মতানৈক্যকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছি। মতানৈক্যকে আমাদের অবশ্যই পরিহার করতে হবে। একমাত্র ব্যাখ্যা বলে কিছু নেই। অনেক মত, পথ ও ব্যাখ্যা বিরাজমান। ইসলামি আন্দোলনকে মতপার্থক্য মেনে নিতে প্রস্তুত হতে হবে। অন্যথায় অগ্রযাত্রার কোনো সম্ভাবনা নেই।’

দাওয়াত ও রাজনীতি একাকার না করে ফেলা

ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের ‘দাওয়াত ও রাজনীতি একাকার করে ফেলা  ঠিক হবে না । ‘রাজনীতি হচ্ছে সম্ভাব্য অর্জনের নীতি এবং পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট ও অবস্থার কারণে কৌশল পরিবর্তন ও সমন্বিত করতে হতে পারে।’ইসলামি আন্দোলনের কর্মীদের সংখ্যালঘুদের উপেক্ষা না করা উচিত । কেননা ইসলাম শান্তির ধর্ম এবং
ধর্মে জোর-জবরদস্তি নেই।’

প্রহরী

প্রতিটি লোমকূপের দোরগোড়ায় 
দাঁড়িয়ে থাকে অতন্দ্র সৈনিক 
আট কুঠুরি নয় দরোজা 
সবখানেই আছে প্রহরীর দল 
বদ্ধ দ্বার হয়না খোলা অপ্রয়োজনে 
শুধু মনের দরোজা খোলা অহর্নিশ 
প্রহরীবিহীন । 

ঢুকে পড়ে অনায়াসে সব 
মেঘ বৃষ্টি রোদ্দুর 
ঘৃণা ভালোবাসা ক্রোধ ; ভালো এবং মন্দ । 

চলে যায় ফিরে আসে বহুদূর 
অজানা সীমানা পেরিয়ে ;অনন্ত আসমানে 
পাতাল কিংবা মহাশুন্যে 
একা একা । 

বিছানায় ফেলে রেখে জ্যান্ত অবয়ব 
উড়ে যায় ইচ্ছেমত । সময় অথবা শরীর 
কেউ নেই আটকাবার । 
ফিরে এসে বলে , 'কেমন দেখলে স্বপ্ন !' 

প্রহরী চাই একজন । চাবুক হাতে 
তুলতুলে নরম চাবুক । 

বলতে পারো কেউ , 
কোথা পাই মনের প্রহরী ?



শনিবার, সেপ্টেম্বর 29, 2012
http://goo.gl/ViOtG

চাঁদতারার অতীত

বটগাছটার নিচে বুড়ি 
চরকায় সুতা কাটে 
বানিয়ে জামা বেচবে নাকি 
সাদা মেঘের হাটে 

চাঁদের বুড়ির দুঃখ বড় 
নেইযে ছেলেপুলে 
বলতো বুবু কানে কানে 
বিলি কেটে চুলে । 

একটা তারা দুইটা তারা 
ঐ তারাটার মা মরা 
দ্যাখ্তো ভাই পাসকি খুঁজে 
আকাশভরা তারার মাঝে 
সাত ভাই চম্পা আর 
বোন পারুল- নকশা করা ! 

আঙিনাতে বিছিয়ে পাটি 
আকাশ পানে চেয়ে 
তারা দেখার রাতগুলি সব 
হারিয়ে গেছে ধেয়ে 

মেঘে আর চাঁদে কত 
লুকোচুরি খেলা 
এভাবেই কেটে গেছে 
অবেলায় বেলা 

আজও হারায় মন রুপোলি আলোয় 
মায়াভরা চাঁদে 
ব্যস্ত জীবন ছেড়ে তাই হাঁটি পুর্ণিমায় 
কনক্রিট ছাদে ।



শনিবার, সেপ্টেম্বর 29, 2012
http://goo.gl/RyT7V

শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১২

মানব লাটিম

বিকেল হয়ে গেল 
কই তোরা সব , চলে আয় পাকুড় তলায় 
কথা দিচ্ছি 
আজ কারো লাটিম ফাটাবো না । 

মায়ের কাছে তিনটি টাকা নিয়ে 
হাটের দিনে হাটতে হাটতে গিয়ে 
মণিহারী দোকানে আঙুলে ভর দিয়ে 
'চাচা একটা লাটিম । বিহারী লাটিম ।' 

ওরে বাবা ! 
তোর নতুন লাটিমে ডান্ডা কী চোখা ! 
তোকে আজ নেবোনা খেলায় । 

এই বোকা , কাঁদিস ক্যান ? 
একটা গেছে তো কী হয়েছে ! 
দেখতো দা'টা কোথায় ; কাঠালের ডাল কেটে 
আয় তোকে বানিয়ে দিচ্ছি লাটিম 
আরেকটা লাটিম । 

কখন পেরিয়ে এসেছি সেইসব দিন 
হারিয়ে ফেলেছি লাটিম-লতি 
আত্নায় জড়ানো বন্ধু । নিজের অজান্তে । 

তারপর ঘুরতে শুরু করেছি নিজেই ; ঘুরছি ক্রমাগত 
সময়ের অদৃশ্য সুতোর টানে 
এখন আমি এক মানব লাটিম !



শুক্রবার, সেপ্টেম্বর 28, 2012
http://goo.gl/6OEhl

বৃহস্পতিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ক্রলিং

নীলনদ থেকে টুইন টাওয়ার 
একদিন আমি হেঁটে পাড়ি দেব ; 
কিংবা ক্রলিং করে । 

পথের ওপর যত উপত্যকা 
যত লতা পাতা গাছ 
মাড়িয়ে দেব নিরাপদ কোমল মুষ্ঠিতে 
ক্লান্ত হওয়ার আগে অগ্নি নিঃশ্বাসে 
পুড়িয়ে দেব যত বিপরীত আঘ্রাণ । 

আমার পদভারে যদি কেঁপে ওঠে মাঠ 
ফিনকি দেয় কোন ঝর্ণা 
দুলে ওঠে মায়াবী পর্বত - 
তবু থামবোনা আমি । হাঁটবোই ।
নীলনদ থেকে টুইন টাওয়ার 
পাড়ি দেব আমি একদিন ক্রলিং করেই ।

যদি জাপ্টে ধরে আমায় সরীসৃপ 
হুল ফোঁটাতে আসে মৌরাণী 
চোখে মুখে ঝাপটা দেয় কৃষ্ণ চাবুক 
দূর থেকে বিজলির মত চমকায়- অপ্সরী কুহেলিকা দৃষ্টি 
হাওয়ায় দুলে ওঠে ক্ষীণাঙ্গি সেতু 

তবু থামবোনা আমি । যতক্ষণ না নিংড়ে যায়
সবটুকু হৃদয় , আকাঙ্খার অর্জুন ।

নীলনদ থেকে টুইন টাওয়ার 
পাড়ি দেব আমি একদিন নিশ্চিত 
হেঁটে ; কিংবা ক্রলিং করেই ।



বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর 27, 2012
http://goo.gl/j23fZ

সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২

আকুল প্রাণের শরত্‍

এই শরতেও কাশবনে যাওয়া হলোনা 
জাগলোনা কোন শিহরণ বুক-পিঠের লোমে 
অপরুপ শুভ্র ছোঁয়ায় । 

পিচঢালা পথে উদোম পায়ে হাঁটতে হাঁটতে 
হয়নিতো ভেজা আকুল বৃষ্টিতে 
এই বর্ষায় । চোখ রাখা হয়নি সাতরঙা রঙধনুতে 
হয়নি খুঁজতে যাওয়া নীল-সাদা বৃষ্টিস্নাত বুনোফুল 
পড়ন্ত বিকেলবেলায় । 

নদীর বাঁকে টলটলে হাঁটুজলে দাঁড়িয়ে 
দেখা হয়নি বালুতে ডোবা পায়ের আঙ্গুল 
এই শীতে । কাঁঠালতলায় আগুনের পাশে বসে 
হয়নি শোনা হাছিমন বুড়ির গল্প 
কালু গাজী চম্পাবতী । 

আর বসন্ত ! 
গাঁথা হয়নি আগুন রঙা শিমুল-মালাখানি । 

কিসের এত ব্যস্ততা আমার ? বলতে পারো কেউ ? 
শক্ত করে আমার হাতটা ধরো কেউ 
দেখো , সভ্যতার মরিচীকা ডাক 
ছিড়ে নিয়ে যাচ্ছে আমার- নীল সুতো হৃদয়ের টান ।



সোমবার, সেপ্টেম্বর 24, 2012
http://goo.gl/2xtv9

মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

উপমহাদেশের মুসলিমদের 'দ্বীন ইসলাম' সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণ

আগের পোস্টে বলেছি বাংলাদেশের তথা এই পাক-ভারত উপমহাদেশের মানুষ ইসলাম বলতে বোঝে ‘ধর্ম’ ইসলাম । দ্বীন ইসলাম নয় । কেন এই অবস্থা ?
এই উপমহাদেশের মানুষ ইসলাম সম্পর্কে জানতে পেরেছে খুব কম । প্রাথমিক যুগে যেসব সাহাবা ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন , তাঁরা ঈমানের দাওয়াত দিতে দিতেই তাদের জীবন শেষ হয়ে যায় । এরপর ৭১২ খ্রিস্টাব্দে  মুহাম্মদ বিন কাশিম  দক্ষিণ পাঞ্জাবের  সিন্ধ ও মুলতান বিজয়ের ফলে ভারতীয় উপমহাদেশে মুসলমান শাসনের সূচনা হয় । মুহম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু জয়ের মাধ্যমে এই অঞ্চলে ইসলামের রাজনৈতিক আগমন ঘটে । কিন্তু রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবার আগেই তৎকালীন পরশ্রীকাতর খলিফা ও তার সাগরেদ দের ষড়যন্ত্রে হত্যা করা হয় মুহাম্মদ বিন কাসিমকে । গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ইসলামী সালতানাত প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন কাসিম , অংকুরেই তার বিনাশ ঘটে ।
এরপর এই অঞ্চলে দীর্ঘসময় শাসন করে মুসলিম নামধারী শাসকরা । খিলজী-তুর্কি-মোঙ্গল-তুঘলক বংশীয় শাসকগন । তারা অধিকাংশই ব্যস্ত ছিল তাদের ভোগ-বিলাসে । ব্যস্ত ছিল পারস্পরিক দ্বন্দ্ব- সংঘাতে । যুদ্ধে- রাজ্যদখলে । সিংহাসন দখলের পাঞ্জা লড়তে ।
কী করেছে তারা মুসলিমদের শিক্ষাদীক্ষার উন্নয়নের জন্য ? অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ? কী অবদান রেখেছে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নয়নে ? কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেনি । কোন লাইব্রেরি তৈরি করেনি । তেমন কোন মাদ্রাসা তৈরি করেনি যেখানে ইসলামের সাথে সমসাময়িক জ্ঞানের শিক্ষা দেয়া হয়, চর্চা হয় । কী করেছে ? বউয়ের প্রেমের নিদর্শন স্বরুপ তাজমহল বানিয়েছে !
যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছিল, বেশিরভাগই বেসরকারি উদ্যোগে । যেটুকু পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, তা যথেষ্ট ছিল বলে আমি মনে করি না ।
মাদ্রাসাগুলো ছিলো বেশিরভাগ মসজিদ ভিত্তিক ।  অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়াকফ ও উইলের সম্পত্তি দ্বারা পরিচালিত হয়। দীনদার লোকেরা পারলৌকিক পূণ্য লাভের জন্য ওয়াকফ এবং সম্পত্তি প্রদানের অসিয়ত করে যান।



পাক ভারতীয় মসজিদ কেন্দ্রিক মাদ্রাসার এ অবস্থা ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর আমল পর্যন্ত বলবত থাকে।

এরই মাঝে হিন্দু-খৃষ্টান-বৃটিশ শাসনে এই অঞ্চল শাসিত হয়েছে দুইশ বছর । এসময় মুসলমানদের অবস্থা হয়েছে আরো করুণ । আরো অধঃপতিত ।
এমনকি অবস্থা এই পর্যায়ে গিয়েছিল যে ধুতি হয়ে উঠেছিল মুসলমানদের পোষাক । তারা লুঙ্গি পড়তে লজ্জা পেত । সেলাইবিহীন লুঙ্গি কেউ পড়লে গাছের আড়াল থাকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে টেনে খুলে ফেলা হয়ে উঠেছিল ছেলেপেলেদের কাছে এক মজার-আনন্দের খেলা ! মুসলমানদের নামের আগে শ্রী লেখা শুরু হয়েছিল । 
  (আত্নকথাঃ আবুল মনসুর আহমদ )
[ তাবলীগ জামাতের বয়ান ও ইতিহাসের গতিধারা শীর্ষক আগামী একটি পোস্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত লিখব ইনশাআল্লাহ ]
আমি অনেককেই দেখি মুসলমানদের দুরবস্থার জন্য বৃটিশদের গালিগালাজ করে তাদের গোষ্ঠিসুদ্ধ উপড়ে ফেলেন । বৃটিশরা অবশ্যই মুসলমানদের পক্ষে ছিল না । কিন্তু বাস্তবিক অর্থে শাসকগোষ্ঠির দুর্বলতা-অনৈতিকতা আর মুসলিম জনগনের শিক্ষাদীক্ষা হীনতা , অজ্ঞতা যে পর্যায়ে গিয়েছিল তাতে মুসলমানরা ক্ষমতায় থাকার সকল যোগ্যতাই হারিয়েছিল । একজন বৃটিশ নাকি লিখেছিলেন , ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিজয়ী বাহিনীর ওপর যদি রাস্তার দুপাশে দাঁড়ানো লোকেরা একটি করে ঢিলও ছুড়তো তাহলেই ঐ বাহিনী ধ্বংস হয়ে যেত । এ থেকেই তৎকালীন মুসলিম জনগনের রাজনৈতিক অজ্ঞতা-অসচেতনতার মাত্রা বোঝা যায় ।

তবুও উর্দু এবং ফার্সি ভাষায় যাও কিছুটা ইসলামী বই-পুস্তক ছিল, বাংলা ভাষায় ছিল আরো কম । বাংলা ভাষাকে মনে করা হত হিন্দুয়ানী ভাষা । এখনো কওমি গোষ্ঠীর অনেকেই এরকম মনে করে থাকে । আর ইংরেজিও ছিল বিধর্মীর ভাষা । ( এ বিষয়ে তৎকালীন আলেমদের যুক্তি নিয়ে সামনে লিখা হবে )

বাংলা ভাষায় প্রথম কুরআন অনুবাদ হলো ১৮০৮ সালে । রংপুরের মাওলানা আমীরউদ্দিন বসুনিয়া ১৮০৮ সালে করলেন আংশিক অনুবাদ । এরপর অনুবাদ করলেন গিরিশচন্দ্র সেন । এছাড়াও এ প্রসঙ্গে নাম পাওয়া যায় রাজেন্দ্রনাথ মিত্র এবং মৌলভী নঈমুদ্দিন এর ।

বাংলায় প্রথম ইসলামী সাহিত্য হলো ‘ মোকসেদুল মোমেনিন’ (?) । 
এই বইয়ে যে কী পরিমাণ ভুল তা নিয়ে লিখলে সে আরেকটা বই হয়ে যাবে !
হাদীস গ্রন্থগুলোর অনুবাদ তো হলো আরো পরে । এই সাম্প্রতিক ৫০-৬০ বছরের মধ্যে । আল্লামা আজিজুল হক বুখারি শরীফের বাংলা অনুবাদ শুরুই করেন ১৯৫২ সালে ।
প্রকৃত অর্থে বাংলায় ইসলামী সাহিত্যের ভান্ডার এখনো সমৃদ্ধ হয়নি ।
এর মাঝে যারা যেটুকু জানতেন , তাই নিয়ে তারা হয়ে গেলেন ‘পীর’ । 
এভাবেই এই অঞ্চলে ইসলামের শিক্ষা হয়ে গেল পীরনির্ভর । আর পীরদের নানান তরিকার মাধ্যমে কী পরিমাণ ভ্রান্ত বিশ্বাস ও শিরক যে ঢুকল সেইটা নিয়ে আমি কিছু বলতে চাচ্ছিনা । কেউ আগ্রহী হলে মতিউর রহমান মাদানীর এ সংক্রান্ত লেকচার থেকে শুনে নিয়েন ।
মক্কা-মদীনা ফেরত কয়েকজন নেতা যেমন নেসার আলী তিতুমীর, হাজী শরীয়তুল্লাহ, সৈয়দ আহমদ বেরেলভী ইসলামের রাজনৈতিক রুপ বুঝতেন । কিন্তু তাঁরা ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে শহীদ হয়ে যাওয়ায় তাদের মাধ্যমে ইসলামের রাজনৈতিক শিক্ষা ও ধ্যান-ধারণা প্রচার- প্রসারের যে সুযোগ ছিল তাও শেষ হয়ে যায় ।
এভাবে দেখা গেল, বাংলার মানুষ এবং এই উপমহাদেশের মানুষ কখনোই ইসলামকে পরিপুর্ণরুপে দেখার সুযোগ পাননি । সুযোগ পায়নি তাঁরা ইসলামকে পরিপুর্ণ দ্বীন হিসেবে শেখার ।
সেজন্যই এই উপমহাদেশ , বাংলাদেশের মানুষের ইসলাম ‘ধর্মীয়’ আচার অনুষ্ঠানভিত্তিক । ইসলামের রাজনৈতিক রুপটা তাদের কাছে তাই অনেকটাই অপরিচিত, নতুন । মনে করে- বাপ দাদা কারো কাছে শুনি নাই , এরা কোত্থেকে পাইছে এইসব কথা ? ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নতুন হাদীস বানাইছে এই বদমাইশের দল !


মঙ্গলবার, সেপ্টেম্বর 11, 2012
http://goo.gl/p7Rr4

সোমবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০১২

বাংলাদেশে ইসলামী দলের ভ্রান্তি ও বিপদ

বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী এবং আরো কয়েকটি দল ইসলামী শাসনব্যবস্থা চালুর জন্য কাজ করছে । কিন্তু একটা বিষয়ে তারা ভুল অনুসিদ্ধান্তের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন ।
জামায়াতের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠাতা সাইয়েদ আবুল আলা মওদূদী (রঃ) এবং অধ্যাপক গোলাম আযমের চিন্তা এরকম ছিল । তিনি বলেন,
দেশের মানুষ ইসলাম চায়, নেতৃত্বই সমস্যা…..।
প্রয়োজন শুধু নেতৃত্বের এবং যোগ্যতার । এবং এই চিন্তাধারায় প্রভাবিত জামায়াতের অনেক নেতা ও দায়িত্বশীল কর্মী ।
আসলে কি তাই ? আসলে এই উপমহাদেশের মানুষ ইসলামকে ভালো করে বোঝেই না, চাওয়াতো দূরের কথা।
সত্যিকারার্থে বাংলাদেশের মানুষ যে ইসলাম চায় তা হলো তা হলো ‘ধর্ম’ ইসলাম , দ্বীন ইসলাম নয় । অনেক ক্ষেত্রে তারা ইসলামকে দ্বীন হিসেবে চেনেই না । পুর্ণাংগ জীবন বিধান হিসেবে তারা ইসলামকে বোঝেনা এবং চায়ও না । পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রোজা , হজ্জ । শুক্রবারের নামাজ , আশুরা, শবে কদর , শবে বরাত, ঈদের নামাজ, কুরবানী করে গোশত খাওয়া এগুলোই হলো কাম্য ইসলাম ।
রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যাকাত, ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের সঠিক বাস্তবায়ন, সুদ ও সকল দুর্নীতির মূলোৎপাটন , ইসলামের দণ্ডবিধির সঠিক বাস্তবায়ন , জিহাদের বাধ্যবাধকতা , সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিষয়ে বেশিরভাগ মানুষের তেমন জ্ঞান নেই । গীবত , পরনিন্দা , অপবাদ ইত্যাদি আচরনগত বিধিবিধানের ব্যাপারেও রয়েছে অজ্ঞতা ও উদাসীনতা ।
ইসলামের রাজনৈতিক দিক নিয়ে সত্যিই চরম কুধারণা আছে জনগনের মধ্যে । তাদের অনেকেই ইসলামের জন্য বা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতিকে ভণ্ডামী মনে করে থাকে ।
ইসলাম প্রতিষ্ঠা মানে সাধারণ মানুষের এবং প্রচলিত ইসলামী দলের অনেক কর্মীর ধারণা হলো -
১।
ইসলামী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পরদিনই সকল গার্লস স্কুল , মহিলা কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে । কালো বোরকা পড়ে রাস্তায় বের না হলে পুলিশ দিয়ে ঠেঙ্গাবে । মহিলাদের ঘর থেকে বের হওয়াটাই বন্ধ করে দেবে । পুরুষদের একাধিক বিয়ে করতেই হবে ইত্যাদি ইত্যাদি ।
২।
সকল সিনেমা হল একযোগে বন্ধ করে দেয়া হবে । গান নাটক সিনেমার সকল বই সিডি ক্যাসেট খুঁজে খুঁজে ধ্বংস করে ফেলা হবে । বিনোদন বলতে কিছু থাকবে না ।
৩।
দেশে হিন্দু বৌদ্ধ দের ধরে ধরে কচুকাটা করা হবে । কিংবা তাদের দ্বিতীয় তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে থাকতে হবে ।
৪ ।
কেউ চুরি করেছে শুনলেই ধরে খচ করে দুই হাত কেটে দেয়া হবে । ছেলেমেয়ে একসাথে চলতে দেখলেই ধরে দোররা মারা হবে । ব্যভিচার বা ধর্ষণের অভিযোগ উঠলেই ধরে এনে পুতে ফেলা হবে । পাথর মেরে সঙ্গেসার করে দেয়া হবে ।
একজন তো অভিযোগ তুলেছে , সাঈদী এমপি ছিল , কই একটা সিনেমা হলও বন্ধ করেনাই । আবার ইসলামের কথা কয় !
মাদ্রাসার ছাত্ররাই রাস্তায় নেমে শ্লোগান তুলবে , সরকারের ১ বছর হয়ে গেল । এখনো একজনকেও রজম করা হলো না । এই সরকার ইসলাম বাস্তবায়ন করছে না ।
বিগত জোট সরকারে জামায়াতের দুজন মন্ত্রী (৬৪ জনের মধ্যে দুইজন !) থাকায় এই প্রশ্ন অনেককেই করতে শুনেছি যে , কী করেছে ওরা সরকারে গিয়ে ? ইসলামের একটা আইনও এস্টাবলিশ করে নাই । ইসলামের নামে ওরা আসলে শুধু ক্ষমতা পেতে চায় ইত্যাদি ।
ইসলামী দলগুলো ইসলাম কায়েমের কথা বলে । কিন্তু ইসলাম কায়েম হলে জনগন বাস্তব জীবনে কীভাবে উপকৃত হবে তা তারা ঠিকমত উপস্থাপন করতে পারেনি । এবং এটা জনগনের সামনে উপস্থাপন করে জনগনকে বোঝানোর মত বাস্তবসম্মত কর্মসূচীও দেখা যায় না ।
মানুষকে অবশ্যই তার লাভ দেখাতে হবে । এটা আল্লাহর সুন্নাত । কুরআনুল কারীমে যেখানেই কোন নির্দেশ দেয়া হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেখানেই তার পুরস্কার হিসেবে জান্নাতের কথা বলা হয়েছে । জান্নাতের মনোরম বর্ণনাও দেয়া হয়েছে ।
কিন্তু ইসলামী দলগুলো জনগনকে বাস্তব লাভ দিতেও ব্যর্থ হয়েছে এবং লাভের স্বপ্ন দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছে । সেদিক থেকে অন্যান্য দলের নেতারা দুটোই করতে সক্ষম হয় । তারা নির্বাচনের আগে মানুষকে অনেক উজ্জ্বল ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায় । কালভার্টের টাকা লুটেপুটে খেলেও নির্বাচনের আগে হাতে হাতে নগদ টাকা ধরিয়ে দেয় । প্রচুর চা , বিড়ি খাওয়ায় । কর্মীদের বিরিয়ানি খাওয়ায় । ফলে ভোট তাদের মার্কাতেই পড়ে ।
ইসলামী দলগুলো ভোটের আগে টাকা দিতে গেলেও বিপদ । জনগন টাকা নেয় , কিন্তু ভোট দেয়না । কারণ জনগন এটাকে ইসলামী দলের আদর্শচ্যুতি মনে করে । ইসলামের কথা কয় , আবার টাকা দিয়া ভোট কিনতে আসছে , বেটারা ভন্ড !
তাহলে করণীয় কী ?
উপরের আলোচনা থেকে কিছু অংশ আবার উল্লেখ করছি ।
১।
অনেক ক্ষেত্রে তারা ইসলামকে দ্বীন হিসেবে চেনেই না । পুর্ণাংগ জীবন বিধান হিসেবে তারা ইসলামকে বোঝেনা এবং চায়ও না । রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় যাকাত, ইসলামী উত্তরাধিকার আইনের সঠিক বাস্তবায়ন, সুদ ও সকল দুর্নীতির মূলোৎপাটন , ইসলামের দণ্ডবিধির সঠিক বাস্তবায়ন , জিহাদের বাধ্যবাধকতা , সমাজের সর্বস্তরে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি ইসলামের মৌলিক বিষয়ে বেশিরভাগ মানুষের তেমন জ্ঞান নেই । গীবত , পরনিন্দা , অপবাদ ইত্যাদি আচরনগত বিধিবিধানের ব্যাপারেও রয়েছে অজ্ঞতা ও উদাসীনতা ।
ইসলামের রাজনৈতিক দিক নিয়ে সত্যিই চরম কুধারণা আছে জনগনের মধ্যে ।

২।

ইসলাম কায়েম হলে জনগন বাস্তব জীবনে কীভাবে উপকৃত হবে তা তারা ঠিকমত উপস্থাপন করতে পারেনি । এবং এটা জনগনের সামনে উপস্থাপন করে জনগনকে বোঝানোর মত বাস্তবসম্মত কর্মসূচীও দেখা যায় না ।
মানুষকে অবশ্যই তার লাভ দেখাতে হবে । এটা আল্লাহর সুন্নাত । কুরআনুল কারীমে যেখানেই কোন নির্দেশ দেয়া হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেখানেই তার পুরস্কার হিসেবে জান্নাতের কথা বলা হয়েছে । জান্নাতের মনোরম বর্ণনাও দেয়া হয়েছে ।

এই সমস্যাটিকে মোকাবেলার জন্য দলীয় দাওয়াত নয় , ব্যাপকভিত্তিক , বৃহৎ পরিসরে জ্ঞানের প্রসারের ব্যবস্থা করতে হবে । দলীয় ব্যানারে নয় – স্রেফ একটা মিশনারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে । হতে পারে কোন এনজিও হিসেবেও । ইসলামের জ্ঞান ছড়িয়ে পড়লে , মানুষ সচেতন হলে কোন সংগঠনের দাওয়াত দেয়া লাগবে না । মানুষ নিজেরাই যার যার স্থান থেকে কাজ শুরু করে দিবে ইসলামের প্রতিষ্ঠার জন্য ।
সোমবার, সেপ্টেম্বর 10, 2012

http://goo.gl/5ykE2

বুধবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১২

শিবিরও কি গাড়ি ভাংচুর করছে ? দায় কার ?

বাংলাদেশের রাজনীতিতে গাড়ি ভাংচুর, দোকান-পাট ভাংচুর একটা পরিচিত কালচার । বিশেষ করে হরতালের সময় । আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমাদের দেখতে হয়েছে চলন্ত বাসে আগুন লাগিয়ে ১১ জন মানুষকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল । আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক করেছিলেন এই কাজ । আমরা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখেছিলাম সেই নারকীয় দৃশ্য ।

এভাবে বাংলাদেশের মানুষের ভেতরে ঢুকে গেছে যে , আন্দোলন করতে হলে গাড়ি ভাংতেই হয় । এর আরেকটি কারণ হলো কোন সরকারই শান্তিপুর্ণ উপায়ে তোলা দাবির যৌক্তিকতা বিচার করে না । সবকিছুকেই ‘দমন’ করে সরকার অত্যন্ত নিষ্ঠুরভাবে । সম্প্রতি আমরা দেখেছি- কীভাবে সরকার নিরীহ স্কুলশিক্ষকদের লাঠিপেটা করেছে । টিয়ারশেল মেরেছে । মরিচের গুড়া মেরেছে । দুইজন শিক্ষক এতে মারা গিয়েছেন । অথচ শিক্ষকদের আন্দোলন ছিল সর্বাংশে শান্তিপুর্ণ, নিরীহ একটা আন্দোলন । দাবি ছিল যৌক্তিক । পেটের দায় মেটানোর দাবি । বেঁচে থাকার দাবি ।

এই কলূষিত রাজনীতির মাঝেও জামায়াত-শিবিরের অবস্থান ছিলো পরিষ্কার । তারা গাড়ি-ঘোড়া দোকানপাট ভাংচুর করে না । জনগনের কষ্ট হয় এমন কাজ করেনা । এবং এটা ছিলো সর্বস্তরে প্রশংসিত ।

এই সরকারের আমলে এই শেষ বছরে এসে দেখা যাচ্ছে কোথাও কোথাও জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের মাধ্যমেও কম হলেও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটছে । এতে করে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন যে এটা কেন হচ্ছে ? ছাত্রশিবির কি লাইনচ্যুত হচ্ছে –এমন প্রশ্ন তুলেছেন অনেকেই ।

কীভাবে এসব ঘটছে ? সেটাই বলছি । বাস্তবে শিবিরের এরকম কোন সিদ্ধান্ত থাকেনা । সিদ্ধান্ত হচ্ছে- সরকারের জুলুমের প্রতিবাদ করতে হবে । ২০০৯ সালটা মোটামুটি শান্তিপুর্ণভাবেই কেটেছে । নির্বিঘ্নে মিছিল মিটিং সভা সমাবেশ করা গেছে । কিন্তু ২০১০ সালের শুরু থেকেই সরকার চলে গেল হার্ডলাইনে । কোথাও দাঁড়াতে পর্যন্ত দেয়না । নিষিদ্ধ সংগঠনের মত আচরণ করা শুরু করলো । সংগঠনের সিদ্ধান্ত ছিলো , জুলুমের প্রতিবাদ চলবেই । তবে আইনশৃংখলা বাহিনীর সাথে কোনরকম ঝামেলায় যাওয়ার দরকার নেই । শিবির কোথাও মিছিল বের করলে ৫ মিনিটের মধ্যে পুলিশ হাজির । কোনমতে কয়েকটা শ্লোগান দিয়েই সবাইকে কেটে পড়তে হত ।দিনে দিনে পুলিশ-ছাত্রলীগের সাহসও গেল বেড়ে । এমনও হয়েছে , একা একজন পুলিশ একহাজার মানুষের একটা মিছিলকে তাড়া করেছে । সেই পুলিশ সদস্য শিবিরকে কাপুরুষের দল আর নিজেকে মহাবীর ভেবে ফিরে গিয়েছে । জামায়াত-শিবিরের মিছিল তাড়া করা পুলিশের জন্য একটা মহাআনন্দের ব্যাপারে পরিণত হলো ।

নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে পালটা প্রতিরোধের কোন সিদ্ধান্ত না পেয়ে হতাশ হতে লাগলো জনশক্তি । কমে যেতে লাগলো মিছিলের উপস্থিতি । সব জনশক্তিকে খবরও দেয়া হতনা । ২০১০-২০১১ দুটি বছর এই অবস্থায় গেলো । দিনে দিনে সরকারের জুলুমের মাত্রা বাড়তে লাগলো । সরকার জামায়াত-শিবিরকে চুনোপুটি মনে করতে লাগলো । জামায়াতের কী করার সামর্থ আছে তা আমরা ভালো করেই জানি এমন ঔদ্ধত্যমূলক কথা বলতে লাগলেন আওয়ামী লীগের নেতারা । আন্দোলন-সংগ্রামে গণমানুষকে সম্পৃক্ত করার আর বিকল্প রইলো না ।

১০০-২০০ জনের মিছিল কন্ট্রোল করা যায় সহজে । কিন্তু ৫০০০-১০০০০ মানুষের মিছিল সম্পুর্ণ কন্ট্রোল করা যায় না । কোন ঝামেলা না হলে তাও হয়তো যেত । পুলিশ আগের ধ্যানধারণায় ১০-১৫ হাজার লোকের মিছিলে পর্যন্ত আক্রমণ করা শুরু করলো । এরপরেই পাশার দান গেল উল্টে । প্রতিরোধের সম্মূখীন হলো তারা । হাঙ্গামার মাঝে পড়ে দু-একটা গাড়িও ভাংচুরের শিকার হতে লাগলো । পুলিশের বাড়াবাড়ির কারণে এত লোকের মাঝে কে কখন কী করছে তা আর নেতৃবৃন্দের নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না । যেখানে জনশক্তির ওপর পুলিশ আক্রমণ করছে, আহত হচ্ছে অনেকেই । গ্রেপ্তার হচ্ছে । সেগুলো ম্যানেজ করবেন নাকি উলটো জনশক্তিকে ঠেকাবেন । সামনে পড়ে গেলে দায়িত্শীলরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন যাতে গাড়ি ভাংচুর না হয় । এমনো হয়েছে , জনশক্তির হাতে মার খেতে হয়েছে দায়িত্বশীলকে ।

এরপর শুরু হলো গুলি পর্ব । সম্পুর্ণ বিনাকারণে মিছিল-সমাবেশে গুলি চালাতে লাগলো পুলিশ । একটা মিছিল শুরু করলাম । কয়েক হাজার লোকের মিছিল । মিছিল শেষ করে দিয়েছি, লোকজন চলে যাবে এমন সময় হঠাত পুলিশ এসে গুলি করে দিল । অনেকেই গুলিবিদ্ধ হলো । এরপরের পরিস্থিতি আমরা কীভাবে কন্ট্রোল করবো ? আহত ভাইদের আহাজারি , তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো, সন্ত্রাসী বাহিনীকে প্রতিরোধ করে জনশক্তিকে নিরাপদ করা দরকার । এসময় উত্তেজিত সাধারণ মানুষের হাতে যদি কোন অপ্রীতিকর ঘটনায় জানমালের ক্ষতি হয় সেটা কে ঠেকাতে পারবে ?

এরপরেও কি কেউ বলতে পারবেন- এসব ঘটনায় জামায়াত বা ছাত্রশিবিরের দায় আছে ? এ পর্যন্ত যা কিছু ঘটেছে তার দায় সম্পুর্ণভাবে সরকার এবং পুলিশের ।ছাত্রশিবিরের অবস্থান পরিষ্কার । আর সেটা হলো জুলুমের প্রতিবাদ এবং প্রয়োজনে প্রতিরোধ ।

শনিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১২

ছায়াপথ হন্টক

এই কালো কালো পিচঢালা পথে আর কত হাটবো বলো ?

অথচ ছায়াপথগুলো হাহাকার করছে পথিক নেই বলে !

এবার হাটবো আমি বৃত্তের বাইরে

সীমাহীন ছায়াপথ ধরে অবিরাম

হয়তো, ঐ পথে হাটলেই পৌঁছে যাবো একদিন

আমার অস্তিত্বে । সূচনারও আগে ।

পৃথিবীর পথের ধারে গাছের ছাঁয়ায়

জিরিয়ে নিতে নিতেই বারবার হারাচ্ছি পথ

গন্তব্যের নিশানা ।

মায়া, ভালোবাসার কথা বলে বলে

আমায় আটকে রেখেছো তোমরা

গোলকধাঁধায় ।

এবার বাঁধন ছিড়ে যাবোই আমি

হাজার বছর ধরে হাঁটতেই থাকবো

গোলকের বাইরে , নিঃসীম নিস্তব্ধ ছায়াপথে ।