ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ স্যার ৩০০ টাকা ভিজিটে রোগী দেখেন। আরো অনেক প্রফেসর এরকমভাবে খুবই কম ভিজিট রাখেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটাকে তাঁদের মহানুভবতা বলা যায়। কিন্ত সমগ্র চিকিৎসক সমাজের জন্য এইটা কোন ভালো ব্যাপার না। চিকিৎসা পেশার জন্য এটা ক্ষতিকর, অপমানজনক।
আমি সবসময় প্রফেসরদের কম ভিজিটে রোগী দেখার বিপক্ষে। প্রফেসর যখন ৩০০ টাকায় রোগী দেখেন, তখন লোকেরা ভাবে- ডাক্তারের ভিজিট ৩০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত না। একবার যখন কেউ প্রফেসরকে ৩০০ টাকায় দেখায়, এরপর অন্যকেউ চারশ বা পাঁচশ টাকা ভিজিট নিতে চাইলেই তাকে অর্থলিপ্সু মনে হয়। কারণ, তার স্ট্যান্ডার্ডটা ঠেকে আছে সেই ৩০০ টাকায়।
এভাবে প্রকারান্তরে নিজেদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। কেউ যখন ৩০০ টাকায় প্রফেসরের কনসালটেন্সি পাচ্ছে, তখন সে কেন একজন এমবিবিএস, একজন রেজিস্ট্রার বা সহকারী অধ্যাপককে দেখাতে যাবে? আর যদি প্রফেসরের সিরিয়াল না পেয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসরকেও দেখায়, তবু তার মনে একটা অসন্তুষ্টি থেকে যায় না? আহ, ৩০০ টাকা দিয়া তো অধ্যাপককেই দেখাতে পারতাম!!
গরীবকে ফ্রি চিকিৎসা দিন। কম নিন। কিন্তু যার টাকা আছে, তার কাছে কেন কম নেয়া হবে? তাকে তো দয়া দেখানোর কোন দরকার নেই। যার একবেলার নাস্তার বিল ১০০০ টাকা, সেলুনে গিয়ে যে দুইহাজার টাকা খরচ করে আসে, পার্লারে গিয়ে যে পাঁচহাজার টাকায় ফেসিয়াল করে আসে, তাকে কেন আপনারা ৩০০ টাকায় কনসালটেন্সি দিবেন? বলুন স্যার!
৩০০ টাকা যদি হয় প্রফেসরের ফি, তাহলে অন্যদের ফি কত হওয়া উচিত? পঞ্চাশ টাকা?
২.
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক স্যার, জুনিয়র ডক্টর রেফার না করলে সে রোগী দেখবেন না প্লিজ। অনুগ্রহ করে ফি বাড়ান। ৩০০ টাকায় ৫০-৬০ জন রোগী না দেখে দুইহাজার টাকা ফি নিয়ে ১০ জন জটিল রোগী দেখুন। দেশের ১৬ কোটি মানুষকে তো একা সেবা দিতে পারবেন না।
কিন্তু আপনারা নির্বিচারে সব রোগী দেখাতে সত্যিকারের জটিল রোগীরাই আপনার কন্সালটেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক স্যার, জুনিয়র ডক্টর রেফার না করলে সে রোগী দেখবেন না প্লিজ। অনুগ্রহ করে ফি বাড়ান। ৩০০ টাকায় ৫০-৬০ জন রোগী না দেখে দুইহাজার টাকা ফি নিয়ে ১০ জন জটিল রোগী দেখুন। দেশের ১৬ কোটি মানুষকে তো একা সেবা দিতে পারবেন না।
কিন্তু আপনারা নির্বিচারে সব রোগী দেখাতে সত্যিকারের জটিল রোগীরাই আপনার কন্সালটেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক স্যার, আমি আপনাদেরকে চেম্বারে রোগী না দেখে ছাত্রদের শেখানোয় বেশি সময় দেয়ার অনুরোধ করছি। আপনি হয়তো নিজে ১০০ জন রোগীর ভালো চিকিৎসা দিচ্ছেন, কিন্তু আপনি আমাদের ১০০ জন ছাত্রকে আরো সময় দিলে, আরো ভালো করে শেখালে, আমরা হাজার হাজার মানুষকে ভালো চিকিৎসা দেবো।
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক স্যার, রাত দুইটা পর্যন্ত রোগী দেখবেন না প্লিজ। রাত ২ টায় রোগী দেখে ঘরে ফিরলে, পরদিন সকাল বেলায় এসে ছাত্রদের শেখানোর ব্যাপারে কতটুকু আগ্রহ অবশিষ্ট থাকে? মাথা কতটুকু ঠান্ডা থাকে? প্রতিষ্ঠানে আপনাদের বেশিরভাগ সময় কাটে রাউন্ড দেয়া আর নানান প্রশাসনিক মিটিং এ। ছাত্ররা একটু ভুল করলেই মাথা গরম হয়ে যাওয়া কি স্বাভাবিক না? প্রিয় স্যার, আপনারা যখন রেগে যান, তখন আমরা শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।
শ্রদ্ধেয় স্যার, ভেবেছেন কি- আপনারা আপনাদের মেধা ও জ্ঞান ছাত্রদের চেয়ে চেম্বারে রোগীদের পেছনে বেশি ব্যয় করছেন!!! তাও আবার ৩০০ টাকায়??? আর তার প্রতিদানে আজ কিনা আদালতের বারান্দায় গিয়ে বসতে হচ্ছে!! পলাতক আসামী হতে হচ্ছে!! আফসোস!! বড় আফসোস!!! কী নিদারুণ প্রতিদান দিচ্ছে আপনাদের রোগীরা!!
শ্রদ্ধেয় প্রফেসর স্যারদের কাছে আমার বিনম্র অনুরোধ, সারাজীবনের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যতবেশি সম্ভব আপনার ছাত্রদের দিয়ে যান। যত বেশি সময় সম্ভব ছাত্রদের পড়ান। হাতে কলমে শেখান।
সকালে শেখান। বিকালে শেখান। রাতে শেখান।
আমরা ছাত্ররা শেখার জন্য বুভুক্ষু হয়ে আছি। তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি। রাত ১২ টা পর্যন্ত চেম্বারে রোগী না দেখে আমাদেরকে শেখান। নতুন নতুন বই লিখুন। আপনাদের কথাগুলো বইয়ের পাতায় রেখে যান প্লিজ।
সকালে শেখান। বিকালে শেখান। রাতে শেখান।
আমরা ছাত্ররা শেখার জন্য বুভুক্ষু হয়ে আছি। তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি। রাত ১২ টা পর্যন্ত চেম্বারে রোগী না দেখে আমাদেরকে শেখান। নতুন নতুন বই লিখুন। আপনাদের কথাগুলো বইয়ের পাতায় রেখে যান প্লিজ।
প্রিয় স্যার, আপনারা বেঁচে থাকবেন ছাত্রদের মাঝে। রোগীর মাঝে নয়। রোগী আপনাকে ফি দেবে, কিন্তু ছাত্ররা আপনাকে যা দেবে তা আপনারা টাকায় মাপতে পারবেন না।