এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শনিবার, ২৭ মে, ২০১৭

অধ্যাপক স্যারদের প্রতি নিবেদন....

ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ স্যার ৩০০ টাকা ভিজিটে রোগী দেখেন। আরো অনেক প্রফেসর এরকমভাবে খুবই কম ভিজিট রাখেন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এটাকে তাঁদের মহানুভবতা বলা যায়। কিন্ত সমগ্র চিকিৎসক সমাজের জন্য এইটা কোন ভালো ব্যাপার না। চিকিৎসা পেশার জন্য এটা ক্ষতিকর, অপমানজনক।
আমি সবসময় প্রফেসরদের কম ভিজিটে রোগী দেখার বিপক্ষে। প্রফেসর যখন ৩০০ টাকায় রোগী দেখেন, তখন লোকেরা ভাবে- ডাক্তারের ভিজিট ৩০০ টাকার বেশি হওয়া উচিত না। একবার যখন কেউ প্রফেসরকে ৩০০ টাকায় দেখায়, এরপর অন্যকেউ চারশ বা পাঁচশ টাকা ভিজিট নিতে চাইলেই তাকে অর্থলিপ্সু মনে হয়। কারণ, তার স্ট্যান্ডার্ডটা ঠেকে আছে সেই ৩০০ টাকায়।
এভাবে প্রকারান্তরে নিজেদের অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। কেউ যখন ৩০০ টাকায় প্রফেসরের কনসালটেন্সি পাচ্ছে, তখন সে কেন একজন এমবিবিএস, একজন রেজিস্ট্রার বা সহকারী অধ্যাপককে দেখাতে যাবে? আর যদি প্রফেসরের সিরিয়াল না পেয়ে এসিস্ট্যান্ট প্রফেসরকেও দেখায়, তবু তার মনে একটা অসন্তুষ্টি থেকে যায় না? আহ, ৩০০ টাকা দিয়া তো অধ্যাপককেই দেখাতে পারতাম!!
গরীবকে ফ্রি চিকিৎসা দিন। কম নিন। কিন্তু যার টাকা আছে, তার কাছে কেন কম নেয়া হবে? তাকে তো দয়া দেখানোর কোন দরকার নেই। যার একবেলার নাস্তার বিল ১০০০ টাকা, সেলুনে গিয়ে যে দুইহাজার টাকা খরচ করে আসে, পার্লারে গিয়ে যে পাঁচহাজার টাকায় ফেসিয়াল করে আসে, তাকে কেন আপনারা ৩০০ টাকায় কনসালটেন্সি দিবেন? বলুন স্যার!
৩০০ টাকা যদি হয় প্রফেসরের ফি, তাহলে অন্যদের ফি কত হওয়া উচিত? পঞ্চাশ টাকা?
২.
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক স্যার, জুনিয়র ডক্টর রেফার না করলে সে রোগী দেখবেন না প্লিজ। অনুগ্রহ করে ফি বাড়ান। ৩০০ টাকায় ৫০-৬০ জন রোগী না দেখে দুইহাজার টাকা ফি নিয়ে ১০ জন জটিল রোগী দেখুন। দেশের ১৬ কোটি মানুষকে তো একা সেবা দিতে পারবেন না।
কিন্তু আপনারা নির্বিচারে সব রোগী দেখাতে সত্যিকারের জটিল রোগীরাই আপনার কন্সালটেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক স্যার, আমি আপনাদেরকে চেম্বারে রোগী না দেখে ছাত্রদের শেখানোয় বেশি সময় দেয়ার অনুরোধ করছি। আপনি হয়তো নিজে ১০০ জন রোগীর ভালো চিকিৎসা দিচ্ছেন, কিন্তু আপনি আমাদের ১০০ জন ছাত্রকে আরো সময় দিলে, আরো ভালো করে শেখালে, আমরা হাজার হাজার মানুষকে ভালো চিকিৎসা দেবো।
শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক স্যার, রাত দুইটা পর্যন্ত রোগী দেখবেন না প্লিজ। রাত ২ টায় রোগী দেখে ঘরে ফিরলে, পরদিন সকাল বেলায় এসে ছাত্রদের শেখানোর ব্যাপারে কতটুকু আগ্রহ অবশিষ্ট থাকে? মাথা কতটুকু ঠান্ডা থাকে? প্রতিষ্ঠানে আপনাদের বেশিরভাগ সময় কাটে রাউন্ড দেয়া আর নানান প্রশাসনিক মিটিং এ। ছাত্ররা একটু ভুল করলেই মাথা গরম হয়ে যাওয়া কি স্বাভাবিক না? প্রিয় স্যার, আপনারা যখন রেগে যান, তখন আমরা শেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলি।
শ্রদ্ধেয় স্যার, ভেবেছেন কি- আপনারা আপনাদের মেধা ও জ্ঞান ছাত্রদের চেয়ে চেম্বারে রোগীদের পেছনে বেশি ব্যয় করছেন!!! তাও আবার ৩০০ টাকায়??? আর তার প্রতিদানে আজ কিনা আদালতের বারান্দায় গিয়ে বসতে হচ্ছে!! পলাতক আসামী হতে হচ্ছে!! আফসোস!! বড় আফসোস!!! কী নিদারুণ প্রতিদান দিচ্ছে আপনাদের রোগীরা!!
শ্রদ্ধেয় প্রফেসর স্যারদের কাছে আমার বিনম্র অনুরোধ, সারাজীবনের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা যতবেশি সম্ভব আপনার ছাত্রদের দিয়ে যান। যত বেশি সময় সম্ভব ছাত্রদের পড়ান। হাতে কলমে শেখান।
সকালে শেখান। বিকালে শেখান। রাতে শেখান।
আমরা ছাত্ররা শেখার জন্য বুভুক্ষু হয়ে আছি। তৃষ্ণার্ত হয়ে আছি। রাত ১২ টা পর্যন্ত চেম্বারে রোগী না দেখে আমাদেরকে শেখান। নতুন নতুন বই লিখুন। আপনাদের কথাগুলো বইয়ের পাতায় রেখে যান প্লিজ।
প্রিয় স্যার, আপনারা বেঁচে থাকবেন ছাত্রদের মাঝে। রোগীর মাঝে নয়। রোগী আপনাকে ফি দেবে, কিন্তু ছাত্ররা আপনাকে যা দেবে তা আপনারা টাকায় মাপতে পারবেন না।

বুধবার, ২৪ মে, ২০১৭

ভুল চিকিৎসার অভিযোগ: বিল ফাঁকি দেয়াই উদ্দেশ্য

রাগ বা ক্ষোভ নয়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তোলা বা হাসপাতালে হামলা করার প্রধান উদ্দেশ্য হলো- হাসপাতালের বিল ফাকি দেয়া। এবং সম্ভব হলে হাসপাতালের মালিক পক্ষের কাছ থেকে বাড়তি কিছু আদায় করা। এতদিন ধরে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ বা হামলার যত ঘটনার কথা শুনেছি এবং দেখেছি, সবখানেই ছিল একই চিত্র। এই উদ্দেশ্যে অনেক সময় মাস্তান ও সাংবাদিক ভাড়াও করা হয়।
গত বছরের ঘটনা। এক বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ তে ডিউটি করছিলাম। পোস্ট অপারেটিভ রুম থেকে একজন রোগীকে আনা হলো। ব্লাড প্রেসার নন রেকর্ডেবল, গাস্পিং রেস্পিরেশন। Intubation, Ventilation, inotropes... কিছুক্ষণের মধ্যে Cardiac arrest. রোগীকে বাঁচানো গেলনা। ডায়াগনোসিসও করা গেলনা। ধারণা করা হলো ম্যাসিভ পালমোনারী এমবলিজম।
রোগীর লোকজনকে সব বুঝিয়ে বলা হলো। কিন্তু তারা ঘন্টাখানেক পরে কিছু মাস্তান এবং সাথে সাংবাদিক নিয়ে এলেন। রাত দুইটায় সাংবাদিকদের সাথে আমাদের ভালোরকম বচসা হয়ে গেল। তাদের নাম ধাম জেনে নিয়ে বললাম, অভিযোগ তুলেছেন ভালো কথা, কিন্তু তদন্ত কমিটির মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত হবার আগে নিউজ করলে আপনাদের নামে মামলা হবে।
কিছুক্ষণ পরেই রোগীর পার্টি লাশ নিয়ে গেলো। জানলাম, তারা কোন বিল পরিশোধ করেনি।
২.
দেশের স্বাস্থ্যখাতকে বিতর্কিত করতে একটা প্রচেষ্টা যে চলছে, সেটা স্পষ্টই বোঝা যায়। আর এই চেষ্টার মূল ক্রীড়নক হিসেবে কাজ করছে সংবাদমাধ্যম আর কিছু অবুঝ সাংবাদিক। কেউ অভিযোগ তুললেই তারা হেডলাইন দেয়ঃ ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু। যেন ভুল চিকিৎসার ব্যাপারে তারা শতভাগ নিশ্চিত।
তো এরকম শিরোনাম দিনের পর দিন দেখলে যে কারো মনে একটা বদ্ধমূল ধারণা জন্মাবে যে- দেশে প্রচুর ভুল চিকিৎসা হচ্ছে। ভুল চিকিৎসায় প্রচুর মানুষ মারা যাচ্ছে। এরপর কেউ মারা গেলেই প্রথম যে কথাটা মনে আসে- ভুল চিকিৎসা হলো নাতো! এখান থেকেই উগ্রতার উদ্ভব।
সুতরাং, এই অসহিষ্ণু পরিস্থিতির পেছনে সাংবাদিকদের দায় সিংহভাগ।
সংবাদ প্রকাশের ব্যাপারে স্পষ্ট আইন করা এখন জরুরী হয়ে পড়েছে। মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করলে সাংবাদিকের/সম্পাদকের শাস্তির ব্যবস্থা করে আইন করতে হবে। হাসপাতাল ভাংচুর, ডাক্তারের ওপর হামলা মামলায় যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর যোগ দেন, তখন অবস্থার ভয়াবহতা আমলে না নিয়ে উপায় নেই।
সাংবাদিক ভাইদের উপলব্ধি করতে হবে- মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে মিথ্যা প্রকাশের স্বাধীনতা নয়।
৩.
ডাক্তারদের কেউ কেউ পর্যাপ্ত কাউন্সেলিং করতেন না, এটা ঠিক। তবে দিন পাল্টেছে। এখন সবাই কাউন্সেলিং করে। আমার আহবান, যে ডাক্তার কাউন্সেলিং করেন না, তাদের কাছে কেউ চিকিৎসা নিতে যাবেন না। কেউ রোগী পাঠাবেন না।
কিন্তু একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন ১৫-২০ জন লোক আলাদাভাবে ঘন্টায় ঘন্টায় জানতে আসবেন- 'রোগীর কী অবস্থা" সেটাও কারো পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব না।
অবস্থা যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে করে এখন আর শুধু কাউন্সেলিং করলেই হবে না, অপারেশনের আগে যেভাবে Informed written Consent নেয়া হয়, কাউন্সেলিং এর পরও সেইভাবে কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে রাখতে হবে। প্রমাণ রাখতে হবে।
এতে করে উটকো লোকদেরকে অতিরিক্ত কাউন্সেলিং এর চাপ যেমন কমবে, প্রফেশনাল নেগলিজেন্সির অভিযোগ উঠলেও এই ডকুমেন্ট কাজে লাগবে।

রবিবার, ২১ মে, ২০১৭

হাসপাতালে হামলাকারীরা কাপুরুষ

হাসপাতালে যারা হামলা করে, সবগুলা নপুংসক কাপুরুষ। ঢাকা ভার্সিটির পোলাপান যারা হাসপাতালে হামলাইতে গেছিলো সেগুলাও কাপুরুষ। এরা হইলো রিকশাওয়ালাকে চড় মারা বীর। এরা হইলো টোকাইকে থাপ্পড় মারা বীর।
যেখানে মরণাপন্ন রোগীরা ভর্তি, যেখানে গুটিকয়েক ডাক্তার আর নার্স কাজে ব্যস্ত, এরা যায় সেখানে হামলা করতে। আচ্ছা, দেশে পুলিশ হেফাজতে মানুষ মারা যায়- এরা কখনো যাইতে পারবে থানায় হামলা করতে?
বিনা অপরাধে ঢাকা ভার্সিটির এক ছাত্রের পায়ে গুলি করেছিলো পুলিশ, এরা কি থানায় হামলা করতে গেছিলো?
আমি কাউকে কোথাও হামলা করতে বলছি না, আমি শুধু দেখাতে চাইছি এই নপুংসক গুলার কাপুরুষতা।
এই কাপুরুষদের জন্যে ডান্ডার ব্যবস্থা হাসপাতালগুলোকেই নিতে হবে। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এখন আনসার বাহিনী আছে, কোথাও কোথাও পুলিশের ক্যাম্পও আছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়া পুলিশের পক্ষে সম্ভব না।
সুতরাং প্রত্যেক হাসপাতালকে নিজস্ব প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী নিয়োগ দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। একটা হাসপাতালে দশজন প্রশিক্ষিত নিরাপত্তারক্ষী থাকলেই দেখবেন, কাপুরুষগুলা আর হাসপাতালের দিকে আসবে না। তারা তখন নিজের লেজের উকুন বাছতে ব্যস্ত থাকবে।
নিরাপত্তারক্ষীদের বেতন অবশ্যই রোগীর চিকিৎসা খরচ থেকে আসবে। রোগীর চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে, কিছু করার নাই।
গুটিকয়েক দুষ্কৃতিকারীকে প্রতিরোধ করার জন্য আমরা আমাদের ট্যাক্সের টাকায় বিভিন্ন বাহিনী তৈরি করেছি না? বিদেশী আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য আমরা আমাদের টাকায় সেনাবাহিনী পুষছি না? একইভাবে, আমাদের নিরাপত্তার স্বার্থে, জনগনের চিকিৎসা প্রাপ্তি নির্বিঘ্ন করার স্বার্থেই এই অতিরিক্ত ব্যয় জনগনকে করতে হবে।
কথা পরিস্কার। মুগুরের ব্যবস্থা না করলে কুকুরদের উৎপাত বন্ধ করা যাবে না।

শনিবার, ২০ মে, ২০১৭

কুল্লু নাফসিন যায়েকাতুল মউত...

ভালো মানুষ নিয়া আইছিলাম হাসপাতালে... অহন লাশ নিয়া যাইতাছি... ভুল চিকিৎসা হইছে...ও আল্লাগো... এইখানে কোনো চিকিৎসা নাই... ডাক্তারে আমার রুগী মাইরা ফালাইছে গো...
কমন ডায়লগ। কোথাও ঝামেলা হলেই এই ডায়লগ শোনা যায়। সবাই মনে করে হাসপাতাল মানেই জাদুর বাক্সো। রোগী যে অবস্থাতেই আসুক, হাসতে হাসতে বাড়ি চলে যাবে।
কথা হলো, ভালো মানুষরে কেউ হাসপাতালে আনে? আনে না। অসুস্থ মানুষকেই হাসপাতালে আনা হয়। আর ভালো মানুষকে কি ডাক্তাররা হাসপাতালে ভর্তি করে?
আপনি হয়তো মাথা ব্যথা নিয়ে আসলেন। ডাক্তার আপনাকে ব্রেনের সিটি স্ক্যান করতে দিলো। আপনি ক্ষ্যাপা। সামান্য মাথা ব্যথায় সিটি স্ক্যান?
হয়তো সিটি স্ক্যান নরমাল আসলো। আপনি আরো ক্ষ্যাপা। বেহুদা সিটি স্ক্যান করাইলো। কিছু তো আইলো না। আসলে কমিশন খাওয়ার ধান্দা।
কিন্তু আপনি যখন মাথা ব্যথা নিয়ে চিন্তিত, ডাক্তার তো তখন মাথা ব্যথার কারণ নিয়ে চিন্তিত। সেটা হতে পারে স্ট্রোক, হতে পারে ব্রেন টিউমারও।
আচ্ছা, যদি ডাক্তার সিটি স্ক্যান না করায়, আর আপনার সত্যিই ব্রেন টিউমার থেকে থাকে তাহলে? হয়তো সেটা আরো পরে একেবারে শেষ পর্যায়ে ধরা পড়লো। আপনি কি খুশি হবেন? আপনি কি তখন ডাক্তারকে দোষ দিবেন না, যে কেন প্রথমেই সিটি স্ক্যান করানো হলো না?
আপনি সামান্য জ্বর নিয়ে আসলেন। আপনার জ্বরের অসংখ্য কারণ থাকতে পারে। জ্বর তো কোন অসুখ না, এইটা অসুখের একটা লক্ষণ মাত্র। হইতে পারে ইনফেকশান, হইতে পারে অন্য কিছু। হইতে পারে ব্লাড ক্যান্সারও। একসাথে একাধিক রোগও হইতে পারে।
এখন আসল যে রোগ, সেই রোগের চিকিৎসা দেয়া সত্ত্বেও তা আরো খারাপের দিকে যেতে পারে। এমনকি চিকিৎসা বা ওষুধ কাজ না করলে রোগী মারাও যেতে পারেন। আপনি যখন এনেছেন তখন তো রোগের আক্রমণ কেবল শুরু হইছে। ড্যামেজ হয় শুরু হইছে অথবা অলরেডি অনেকটা হয়া গেছে। চিকিৎসায় বা ঔষধে ঠেকাইতে পারলে ভালো।
না পারলেই আপনার মনে করবেন- আনলাম ভালো মানুষ, কথা কইলো, ভাত খাইলো। আর অহন লাশ নিয়া যাইতাছি.. এইখানে কোন চিকিৎসা হয় নাই... আল্লাগো তোমার কাছে বিচার দিলাম...
যে রোগী হাসপাতালে মারা যায়, সেই রোগী বাসায় থাকলেও মারা যেত।
পৃথিবীর ইতিহাস কত মিলিয়ন বছরের, তা নিয়ে আজো বিতর্ক আছে। কিন্তু তা যত কোটিই হোক, একজন মানুষও আজ পর্যন্ত চিকিৎসা করে অমর হইতে পারে নাই। শেষ পর্যন্ত সবাইকেই মরতে হইছে...
পৃথিবীর কোথাও গ্যারান্টি দিয়া চিকিৎসা হয় না.. ভবিষ্যতেও হবে না...
কুল্লু নাফসিন যায়েকাতুল মউত।

মঙ্গলবার, ১৬ মে, ২০১৭

বিয়েঃ মেয়ের মতামতটাই শুধু উপেক্ষিত

সেদিন একটা বিয়েতে গেলাম। মসজিদে আকদ হলো। বিয়ে পড়ানোর আগে ঈমাম সাহেব তার খুতবা দেয়ার সময় মেয়ের বাবা উপস্থিত আছেন কিনা খুঁজে নিলেন। তারপর সেই হাদিসের উল্লেখ করলেনঃ পিতার অমতে মেয়ের বিয়ে হলে সে বিয়ে বাতিল। (যদিও এর প্রয়োগ নিয়ে আলেমদের মাঝে মতবিরোধ আছে। হানাফি আলেমদের মতে, এটা শুধু নাবালিকার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।)

ঈমাম সাহেব বেশ সময় নিয়ে খুতবা দিলেন। কিন্তু একবারও জানতে চাইলেন না যে, এই বিয়েতে মেয়ের সম্মতি আছে কিনা? তিনি তার খুতবায় একথার উল্লেখও করলেন না যে, মেয়েরও সম্মতি ছাড়া কোন বিয়ে হতে পারে না। সেটাও বাতিল বলে গন্য হবে। অথচ সেই বিষয়েও হাদিসে স্পষ্ট নির্দেশ দেয়া আছে। 

আরো অনেক বিয়েতে উপস্থিত থেকেছি। কোথাও ইমামদেরকে এই বিষয়ে জোর দিয়ে বলতে শুনিনি যে, মেয়ের অমতে বিয়ে দেয়া যাবে না। সবসময়ই তারা এটাকে এড়িয়ে যান। আলোচনার প্রয়োজন মনে করেন না। তারা হয়তো মনে করেন- এতে মেয়েরা লাই পেয়ে যাবে!! মেয়ে মানুষকে নাকি বেশি লাই দিতে নাই!!!

মেয়ের বাপ উপস্থিত, তার মানে তিনি রাজী এবং আগ্রহীও। বোঝাই যায়। কিন্তু মেয়ে কি স্বতস্ফূর্তভাবে রাজী হয়েছে? নাকি তাকে বাধ্য করা হয়েছে? ইমামের কি বিয়ের আগে এটাও নিশ্চিত হওয়া উচিত না? বাপ মায়ের পছন্দের পাত্রের সাথে জোর করে মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ঘটনা তো এই সমাজে বিরল নয়। তবু কেন ধর্মীয় নেতাদের এই উদাসিনতা?

মেয়ের পছন্দ অপছন্দকে উপেক্ষা করে, তাদের মতামতকে অগ্রাহ্য করে বিয়ে দিলে ভবিষ্যতে পরকীয়ার রাস্তা খুলে যায়। তাছাড়া সে বিয়েই বৈধ হবে না। একটা বিয়ের বৈধতার সব শর্ত পূরণ হচ্ছে কিনা তা কি ঈমাম সাহেব জেনে নিচ্ছেন? নিচ্ছেন না। অন্যসব খবর হয়তো নিচ্ছেন, শুধু মেয়ের মতামতটাই সবসময় উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। পরকীয়াসহ পারিবারিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলার পেছনে এটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ কার্যকারণ।

আমি মনে করি, একটা মেয়ের অসম্মতিতে কোথাও বিয়ে দেয়ার চেয়ে তার অবিবাহিত থাকাও ভালো।

একজন মেয়ের অমতে, তার অপছন্দের জায়গায় বিয়ে দেয়া যে কতটা ভয়ংকর ব্যাপার, আমি যখন নিজেকে একটা মেয়ের জায়গায় রেখে চিন্তা করি- ভয়ে আতকে উঠি।

একটা মেয়ে, সে যতই শিক্ষিত আর মডার্ন হোক, নিজের অজান্তেই হাজব্যান্ডকে সুপেরিওর হিসেবে মেনে নেয়। সংসারের অথরিটি হিসেবে মেনে নেয়।

যাকে সে পছন্দ করেনা, যাকে তার ভালো লাগেনা, এমন একজনের সব আদেশ নিষেধ মেনে চলা, এমন একজনের সাথে কথা বলা, এমন একজনকে সার্ভ করা কীভাবে সম্ভব?

সামাজিক পারিবারিক চাপে বাধ্য হয়ে বিয়ে করা, মানে কি আবেগ অনুভূতিহীন শারীরিক সম্পর্কের চুক্তি মাত্র? নারীবাদীরা এটাকে ধর্ষণের সমতুল্য মনে করে। আমি অতটা বলবো না, কিন্তু এটা যে একটা ভয়ংকর ব্যাপার তা বলতে আমার আপত্তি নাই। একজন নারীর জন্য এটা কত বড় মানসিক আঘাত, আমাদের পক্ষে বোধহয় তা কল্পনা করা সম্ভব না।

আমাদের নবী (সাঃ) কতটা আধুনিক চিন্তার মানুষ ছিলেন সেটা ভাবলে আশ্চর্য হতে হয়। দেড় হাজার বছর আগে তিনি যেরকম চিন্তা করে গেছেন, যেরকম আচরণ দেখিয়ে গেছেন, আজকের আধুনিক যুগে আধুনিক দাবিদার পুরুষরাও সেরকম উদার চিন্তা করতে পারেন না।

(বিবাহ কথন-২৬) চলবে...

রবিবার, ১৪ মে, ২০১৭

জামাই আদর?

আমাদের সমাজে জামাই আদর নামে একটা কথা খুব প্রচলিত আছে। কোথাও খাওয়া দাওয়া একটু ভালো হলেই অথবা এটা সেটা খাবারের আইটেম বেশি থাকলেই সেটাকে বলা হয় 'জামাই আদর'।
কিন্তু ঠাট্টাচ্ছলে বলা হলেও এইটার সাইকো-সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট হয়েছে বহুমাত্রিক।

বিয়ের সময় 'জামাই আদরে'র ভিক্টিম হতে হয়েছে অনেক মেয়েকে। এমন ঘটনা অহরহ ঘটেছে যে, 'মেয়ের মা বেঁচে নেই' এই কারণ দেখিয়ে মেয়েকে অপছন্দ করা হয়েছে। বিয়ের প্রস্তাব বাতিল করা হয়েছে। কারণ, যে মেয়ের মা নেই, সেখানে বিয়ে হলে ছেলের নাকি 'জামাই আদর' হবে না!!!

কী অদ্ভুত যুক্তি!! মা মারা গেছেন, সেটাতে মেয়ের কী দোষ? অথচ এমন ভাব করা হয় যে, মেয়ের বিয়ের আগে মা মারা গেছেন, এ যেন তার বিরাট অপরাধ!!

আপনি নিজেই কখন মারা যাবেন তার কোন ঠিকঠিকানা আছে? ভবিষ্যতে আপনার ছেলে মেয়েরাও যে বাপহারা মাহারা হবে না তার কোন নিশ্চয়তা আছে?

যার মা নেই, এমনিতেই তার মনে অনেক কষ্ট। তার ওপর যখন তাকে নাম দেয়া হয় 'মা মরা মেয়ে' তখন সেই মেয়ে কতটা কষ্ট পায় তা শুধু তারাই জানে। আর এই অজুহাতে যদি বিয়ে ভেঙ্গে দেয়া হয়, সেটাকে আমি পৈশাচিকতা ছাড়া অন্য কিছু বলতে পারি না।

বিয়ের পরের জীবনেও এর এডভার্স ইফেক্ট আছে। জামাই বাবু (যদিও জামাই মানেই বাবু হতে হবে বিষয়টা তেমন না) মনে মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল করে বসে থাকে যে, শ্বশুর বাড়িতে গেলেই তাকে হুলস্থুল করে খাওয়া দাওয়া করানো হবে! তাই যখনই শ্বশুর বাড়িতে কবজি ডুবিয়ে খাওয়া হয় না, তখনই তার মন খারাপ হয়। আর এর প্রভাব পড়ে অন্যখানে। সুযোগ পেলেই বউকে খোটা দেয়, তোমার বাপের বাড়িতে কী খাওয়াইলো শুনি!!!!

এই 'জামাই আদরে'র প্রথা শ্বশুরবাড়িতেও বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। জামাই এলেই অনেক কিছু রান্না করে খাওয়াতে হবে- এই সামাজিক চাপে শ্বশুর শাশুড়িকে প্রায়শই কষ্টে পড়তে হয়। জামাই কী মনে করবে, শ্বশুরবাড়িতে মেয়েটার বদনাম হবে, কটু কথা শুনতে হবে, এই আশঙ্কায় অনেক কষ্ট হলেও তাঁরা জামাই আদরের ব্যবস্থা করেন। হাতে টাকা না থাকলে ধার করে হলেও জামাইয়ের জন্য মোঘলাই ধাঁচের খানাপিনার ব্যবস্থা করেন শ্বশুর শাশুড়ি।

***
এই যুগটাকে বলা হয় উত্তরাধুনিক যুগ। মানে, আধুনিকতার চরম মাত্রায় এসে পৌঁছেছে পৃথিবী। এই সময়ে এসেও যদি কেউ 'মেয়ের মা নেই' শুনে বিয়ে করতে না চায়, শ্বশুর বাড়িতে জম্পেশ খাওয়া না হলে বউকে খোটা দেয়, বউকে যদি শ্বাশুড়ি ননদের কাছে কটু কথা শুনতে হয়, তাহলে বলতে হবে- সে বা তারা মন-মানসিকতায় এখনো আদিম যুগেই রয়ে গেছে। তাদের চেতনায় আধুনিকতার বিন্দুমাত্র আলোক ছটা প্রবেশ করে নাই।

ডাল ভাত খেয়ে যদি কেউ শ্বশুরবাড়ির প্রশংসা না করতে পারে, বুঝতে হবে শ্বশুরবাড়ির সাথে তার সম্পর্কটা আন্তরিক হয়ে ওঠেনি। বউয়ের প্রতি তার ভালোবাসায়ও যথেষ্ট ঘাটতি আছে। নিজের ঘরে কচুপাতা খেলেও কেউ কি মায়ের ওপর অসন্তুষ্ট হয় বা বদনাম করে?

আমি ডাক্তার মানুষ। জামাই আদরের স্বাস্থ্যগত দিকটা না বললে বোধহয় নিজের নামের প্রতি অবিচার হবে :) তাই বর্তমান ও ভবিষ্যত জামাইদের বলি- বেরাদর, জামাই আদরের নামে যা খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলবেন বলে ভাবছেন- তাতে সাময়িক রসনা বিলাস হলেও শরীরের ক্ষতি কিন্তু কম হবে না! পেট খারাপ থেকে শুরু করে ভবিষ্যতে হাইপারটেনশন ডায়াবেটিস সবই হতে পারে। চর্বি জমতে জমতে দিনে দিনে শরীরটা যেমন নাদুশনুদুশ হবে, তেমনি ভুঁড়িটাও হতে পারে দেখার মতন :P :D
 
সুতরাং, আসুন আধুনিক হই। অবসান ঘটাই জামাই আদরের নামে প্রচলিত অদ্ভুত প্রথার। এই আধুনিক যুগে- ডাল ভাত ভর্তা আর ডিমভাজিই হোক জামাই আদরের আধুনিক রীতি।

(বিবাহ কথন-২৫) চলবে....

শনিবার, ১৩ মে, ২০১৭

হাওরের দুঃখগাঁথা

"আমার বয়স ৮০ বছরেরও বেশি হইছে। এই হাওরেই বড় হইছি। আমার জীবনে আমি এরকম বিপর্যয় দেখি নাই।"
বলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জনাব মুসলিম উদ্দিন। হামলাদিঘা হাওরে সম্ভবত তিনিই সবচেয়ে প্রবীণ মানুষ। নিজে শারিরীকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন, জোরেসোরে হাঁটতে পারেন না। কিন্তু হাওরের এই মারাত্মক বিপর্যয়ে হাওরের মানুষকে তিনিই সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন। ত্রাণ নিতে আসা হাওরবাসীদের উদ্দেশ্যে তিনি বললেনঃ আপনারা সাহস হারাবেন না। হতাশ হবেন না। আল্লাহ আমাদের এই বিপদ থেকে উদ্ধার করবেন।
হাওরের মানুষের বিপদে সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলাম সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়। যতদূর চোখ যায় পানি আর পানি। মাঝে জেগে আছে ছোট ছোট চর। সেখানেই মানুষের বাস। ১০-২০ টি পরিবার নিয়ে একেকটি পাড়া। এক পাড়া হতে আরেক পাড়ায় যাওয়ার জন্য নৌকাই একমাত্র বাহন। সেখানে হাওরবাসীদের দুর্দশা সচক্ষে দেখলে যে কারো মন কেঁদে উঠবে।
হাওরে বন্যা প্রতিবছরই হয়। পানির ঢল নামে, বাঁধ উপচে ঘরবাড়িতে পর্যন্ত পানি ঢুকে যায়। কিন্তু সেটা এই সময়ে নয়। আরো মাস দুই পরে। ততদিনে ফসল ঘরে তোলা হয়ে যায়। হাওরের থৈ থৈ পানি তখন কোন সমস্যা তৈরি করে না।
কিন্তু এবার সেই ঢল এসেছে বড় অসময়ে। ধান তখনো পাকেনি। এমনকি কাঁচাও নয়। হঠাৎ উজানী ঢলে সব ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। একটা দানাও ঘরে তোলা যায় নাই।
ক্ষেত নাই, শ্রমজীবি মানুষের হাতে কোন কাজ নাই। কাজ নাই, অতএব উপার্জনও নাই। তাদের দিন কাটছে তাই চরম অনিশ্চয়তায়। কিছু জমানো টাকা, কিছু সাহায্য, কিছু ত্রাণ, এই হচ্ছে এখন তাদের জীবন চালানোর উপকরণ।
হাওর থেকে লক্ষ লক্ষ টন ধান উৎপাদন হত। এবার হয়নি কিছুই।
ধান চাষের জন্য কৃষকরা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণও এখন তাদের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কারো কাছে যে আবার ঋণ নেবে সেই অবস্থাও নাই। ঋণদাতারা নিজেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। আর চাষীদের ঋণ দিলে তারা শোধ করতে পারবে কিনা সে নিশ্চয়তাও নেই। দোকানীরা বাকিতে বিক্রি করছেন না। বাকির টাকা শোধ করবে কী করে?
মাছ মরে গেছে। এর কারণ হিসেবে চাউর হয়েছে ইউরেনিয়ামের কথা। তবে ইউরেনিয়ামের বাইরে আরেকটা ব্যাখ্যা হলো- ধানক্ষেতে যে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়েছিল, সেগুলো পানিতে মিশে গেছে। সেকারণেই মরে গেছে মাছ এবং বেশকিছু পশুপাখি।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা আশঙ্কা করছেন, পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না নিলে দুর্ভিক্ষ হতে পারে হাওর এলাকায়।
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মধ্যনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রবীর দাশ বললেন, তার ইউনিয়নে ৬০০০ পরিবারের বসবাস। সরকারী সাহায্য থেকে দু'হাজার পরিবারকে কিছু সাহায্য করা যাচ্ছে। বাকি থাকছে আরো চারহাজার পরিবার। তিনি অনুরোধ করেছেন, হাওরের মানুষের কষ্টের কথা যেন আমরা ঢাকার মানুষদের কাছে বলি। সরকারের কাছে বলি। সবাই যেন বিপন্ন মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসে।
সবমিলিয়ে অনেক কষ্টে আছে হাওরের মানুষ। এখন তবুও কিছু জমানো টাকা খরচ করা যাচ্ছে। কিছু সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে। দু-তিন মাস পরে যখন সবাই এই বিপর্যয়ের কথা ভুলে যাবে, তখন কী হবে ভাবতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন তারা।
হাওরের মানুষের সামনে এখন শুধুই অনিশ্চয়তা। ভবিষ্যতের কথা ভাবলে এখন তাদের চোখে শুধুই অন্ধকার।

রবিবার, ৭ মে, ২০১৭

কাঁচায় না নোয়ালে বাশ...

এইসময়ের গার্জিয়ানদের মাঝে ছেলেমেয়েদের বিয়ের ব্যাপারে এক অদ্ভুত রকমের উদাসীনতা লক্ষ করা যাচ্ছে। এইটা যে শুধু কোন নির্দিষ্ট অংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ তাও নয়। কী উচ্চবিত্ত, কী নিম্নবিত্ত, কী মধ্যবিত্ত- সবার মাঝেই এই প্রবণতা প্রায় সমান। কেবল প্রান্তিক পর্যায়ের নিম্নবিত্তদের মাঝে কিছুটা কম বলা যায়।

আমি আমার নিকটাত্মীয়দের মধ্যেও দেখেছি, মেয়ের বয়স ২৫-২৬ হয়ে গেলেও তাদের বিয়ের ব্যাপারে কোন পেরেশানি নাই। ছেলের ক্ষেত্রে নাহয় এস্টাবলিশমেন্টের একটা ব্যাপার থাকে, কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে কেন এই উদাসীনতা তা আমার বুঝে আসে না। মেয়েকে অনার্স মাস্টার্স শেষ করতে হবে, চাকরি বাকরি করতে হবে, তারপরে বিয়ের কথা শুরু করতে হবে! কেন? অদ্ভুত এই মানসিকতার শুরু হয়েছে খুব সম্প্রতি। ৮-১০ বছর আগেও এই প্রবণতা এতটা প্রকট ছিল বলে আমার মনে হয় না। 

এর ফলে বিরাট সংখ্যক মেয়ের বিয়ে হচ্ছে লেট টুয়েন্টিতে। ২৭-২৮ এ। কেউ কেউ ৩০ পার করে দিচ্ছে।
প্রশ্ন হলো- ২৭-২৮ এ যদি মেয়ের বিয়ে হয়, বাচ্চা নিবে কবে? ৩০ এর আগে নিশ্চয়ই নয়! আর এইখানেই সমস্যার শুরু।

গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, বেশি বয়সে বাচ্চা নিতে চাইলেও বাচ্চা না হবার সম্ভাবনা বেশি। ইনফার্টিলিটি আজকের দিনে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর মেয়েদের দেরিতে বিয়ে হলো এর একটা প্রধান কারণ।
আমি আশেপাশের অনেকের কথাই জানি, যারা তাদের ৩০-৩২ বছর বয়সে এসে বাচ্চা নিতে চাইছেন। কিন্তু এখন তাদের প্রতিনিয়ত গাইনোকলজিস্টের চেম্বার আর ইনিফার্টিলিটি সেন্টারে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

মেয়েদের বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সন্তানধারণের সম্ভাবনা কমতে থাকে। বলা হয়, Age is the single most important factor affecting fertility and chances of having a child.

ত্রিশ এর আগে যদি সম্ভাবনা থাকে ২০%, ত্রিশ এর পর তা নেমে দাঁড়ায় ৫% এ। ৩৫ বছর বয়সে সন্তান ধারণে অক্ষম হবার সম্ভাবনা ২৫ বছর বয়সের তুলনায় কমপক্ষে তিনগুন বেশি। আর ৪০ এ এই সম্ভাবনা নেমে যায় অর্ধেকে।
বেশি বয়সে যাদের প্রথম বাচ্চা হয়, তাদের ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশন, ওভারিয়ান সিস্ট, ফাইব্রয়েড ইউটেরাস, গর্ভের শিশুর বিকলাঙ্গতা, গর্ভাবস্থায় শিশুর মৃত্যু, মিসক্যারেজ, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী ঝুঁকি এবং সিজারিয়ান অপারেশনের সম্ভাবনা কয়েকগুন বেড়ে যায়।

তাছাড়া বয়স যত বাড়ে, জীবিত বাচ্চার চেয়ে মৃত বাচ্চা জন্মের সম্ভাবনাও তত বাড়ে।

এমনকি বাচ্চার জন্মের পরেও তার মৃত্যু ঝুঁকি বেশি বয়সের মায়েদের ক্ষেত্রে বেশি থাকে।

আজকে যারা গার্জিয়ান তাঁদের বেশিরভাগের বিয়ে হয়েছিল নব্বইয়ের দশকে। তখন ছেলের বয়স থাকতো ২৫ এর মধ্যে আর মেয়ের বয়স ২০ এর মধ্যে। তখনো যৌথ পরিবার পদ্ধতি এস্টাবলিশড ছিল, সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন ভালো ছিল। সে কারণে এই অভিভাবকেরা বোঝেন না যে, এই সময়ে এসে ২৫ এর পর ছেলেমেয়েরা কীরকম নিঃসঙ্গতায় ভোগে। আর বেশি বয়সে বিয়ের ফলে ইনিফার্টিলিটি সহ অন্যান্য স্বাস্থ্যগত ক্ষতির দিক নিয়েও তাদের চিন্তা পরিস্কার নয়।

সুতরাং, আমার মনে হয়, আধুনিক ও সচেতন মেয়েরা যদি কেউ নিঃসন্তান জীবনের ঝুঁকি নিতে না চান, তাহলে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে উদাসীন বাপ মাকে নিজেই নিজের বিয়ের কথা বলার সময় এসেছে।

কথায় আছেঃ
কাঁচায় না নোয়ালে বাশ,
পাকলে করে ঠাশ ঠাশ।
(বিবাহ কথন-২৪) চলবে...

শুক্রবার, ৫ মে, ২০১৭

অনলাইনঃ শো অফের মহড়া?

অনলাইন মাধ্যম গুলোর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, এখানে মানুষের বয়সের কোন ফারাক থাকছে না। সবাই সমানভাবে সবখানে এক্সেস পাচ্ছে। যে বয়সে একজন ছেলের যা জানার কথা নয়, সে তাই জেনে যাচ্ছে। বরং অনেক বেশি কিছু জেনে যাচ্ছে। ফলে স্বাভাবিক মনোবৃত্তির বিকাশ না হয়ে একটা জগাখিচুড়ি ধরণের মনোবিকাশ হচ্ছে এই প্রজন্মের। হাঁটতে শেখার আগে মোটরসাইকেল চালানো শিখে যাচ্ছে তারা।

আপনি আপনার বন্ধুদের সাথে আড্ডায় যে ভাষায় কিংবা যেধরণের আলাপ করেন, মুরুব্বিদের সামনে বা বাচ্চাদের সামনে কি সেধরণের আলাপ করেন? নিশ্চয় না। কিন্তু ফেসবুকে হয়তো আপনি তা লিখছেন। ভাবছেন, এই লেখা আপনার বন্ধুরাই পড়বে। কিন্তু আসলে তা পরিচিত অপরিচিত ছেলে থেকে বুড়ো সবাই পড়তে পারছে।
একটা বাচ্চাছেলে এখানে সহজেই বড়দের আলোচনায় ঢুকে যাচ্ছে। এটা কিন্তু তাদেরকে জ্ঞানী করছে না। বরং এটা তাদের জ্ঞানার্জনের স্বাভাবিক ধারাবাহিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে।

ভয়ের কথা হলো, অনেক কুরুচিপূর্ণ লেখা, মন্তব্য, ছবি দেখতে দেখতে একসময় মনে হচ্ছে 'এটাই তো স্বাভাবিক'। যদিও আসলে তা মোটেই স্বাভাবিক নয়।

দ্বিতীয় যে বিষয়টা গুরুতর তা হলো- ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম হয়ে গেছে পুরোপুরি শো-অফের জায়গা। একটা বিরাট অংশের মানুষ ফেসবুককে ব্যবহার করছে শুধুমাত্র শো অফ করার জন্য। এইযে এত সেলফি তোলার হিড়িক, এত ভুংভাং ফুংফাং, হ্যাং আউট ঠ্যাং আউট, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এসবের উদ্দেশ্যই থাকে ফেসবুক ইন্সটাগ্রামে শো-অফ করা।
এতে অসুবিধাটা হলো, মানুষের মধ্যে সবসময় একটা না পাওয়ার বেদনা আর জেলাসি ছড়াচ্ছে। যে ব্যাচেলর, সে অন্যদের বউয়ের ছবি দেখে হাপিত্যেশ করে, যে বিবাহিত সে আরেকজনের সুন্দরী বউ, কিউট বাচ্চার ছবি দেখে, যার চাকরি নাই সে আরেকজনের অফিসের ছবি দেখে, যে কাজের চাপে পিষ্ট সে অন্যদের ঘোরাঘুরির ছবি দেখে অসুখী হচ্ছে। 'কী আছে', তার চেয়ে বড় হয়ে দাঁড়াচ্ছে 'কী নেই' সেটাই। আপনি যখন 'ফিলিং হ্যাপি’ বা ‘ফিলিং এক্সাইটেড’, তখন আরেকজনের বুকে তা যেন শেলের মত বিঁধে যাচ্ছে। কারণ, তার সময়টা হয়তো ভালো যাচ্ছে না। সে ভাবছে, জগতের সবাই সুখী, একমাত্র আমি ছাড়া।

সবাই না পাওয়ার বেদনায় আক্রান্ত। কারণ, 'সবকিছু' তো কারোই থাকে না। একজনের 'এটা' আছে তো 'ওটা' নেই। আরেকজনের 'ওটা' আছে, কিন্তু 'এটা' নেই। দু'জনেই ভাবছে, "ইস! ওর তো সব আছে, আমার কিছু নেই!" দিনশেষে সবারই মনে হচ্ছে় যে, আমার চেয়ে আমার বন্ধুরা সবাই অনেক বেশি ভালো আছে!'

এইভাবে ক্রমাগত বাড়ছে হতাশা। বাড়ছে অসুস্থ প্রতিযোগিতা। বাড়ছে হিংসাপ্রবণতাও।

-------শো-অফ কৌতুকঃ --------
রোগীঃ স্যার পেটের ব্যথায় মরে যাচ্ছি... কিছু একটা করেন তাড়াতাড়ি প্লিজ...
ডাক্তারঃ রাতে কী দিয়ে ভাত খেয়েছেন?
রোগীঃ সাদা ভাত তো স্যার গত পাঁচ বছরে চোখে দেখি নাই। আমার নিজস্ব চাইনিজ রেস্টুরেন্ট আছে ১০ টা। বুফে ছাড়া আমার একদিনও চলে না। একেকদিন একেক রেস্টুরেন্টে বুফে লাঞ্চ, বুফে ডিনার করি স্যার। গতকাল...
ডাক্তারঃ (ধমক দিয়ে) থামেন মিয়া, ফাইজলামি করেন? এইডা কি ফেসবুক পাইছেন?
রোগীঃ না মানে...আসলে স্যার, বউ বাপের বাড়ি গেছে তো, ঘরে ভাত আছিলো না। বাসি ভাতে পানি দিয়া বাসি তরকারি দিয়া খাইয়া ফালাইছি.....আ ব্যথা!! আমাকে বাঁচানগো স্যার...আমাকে বাঁচান......