এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শনিবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০১৭

বুড়াটা মরি গ্যালো, মহরানা শোধ করি গ্যালো না...

আমাদের গ্রামের গফুর দাদা মারা যাবার বহুদিন পরে একদিন গফুর দাদীকে বলতে শুনেছিলাম, বুড়াটা মরি গ্যালো, মহরানা শোধ করি গ্যালো না। আরেক দাদী তখন বলেছিলেন- মাফ করি দে গো বু (বু মানে বোন)। মনে কষ্ট রাখিস না। কবরে কষ্ট পাইবে।

ছোট ছিলাম, তখন বুঝিনি। কিন্তু পরে যখন দাদীর কথাগুলোর গুরুত্ব বুঝেছিলাম, I was thundered... স্বামী মারা গেছে সেটাই একটা বড় কষ্ট, কিন্ত সেই কষ্টও তার মোহরানা না পাবার কষ্টকে আড়াল করতে পারেনি।
আমাদের সমাজে অনেক পুরুষই মোহরানা পরিশোধ না করার ধান্দায় থাকেন। ধার্য যা-ই হোক, কোনরকমে অল্প কিছু দিয়ে বাকিটা মাফ চেয়ে নেয়ার একটা গোপন ইচ্ছা পোষণ করেন। অনেকে তা করেনও। 

এরকম চিন্তাভাবনা পুরুষত্বের অপমান। কাপুরুষ ছাড়া কেউ এমন চিন্তা করতে পারে না।

প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) খেজুরের আঁটির সমপরিমাণ স্বর্ণ মোহরানা দিয়েছিলেন। আর রাসুল (সাঃ) একজন সাহাবীকে বিয়ে দিয়েছিলেন এতটুকু মোহরানায় যে, ঐ সাহাবী তার নিজের মুখস্থ থাকা কয়েকটি সুরা স্ত্রীকে শেখাবেন।

আপনি যা পারবেন বলে মনে করেন, তাই নির্ধারণ করবেন। ইট ডিপেন্ডস আপন ইওর ক্যাপাবিলিটি।
কিন্তু যা-ই নির্ধারণ করুন, শোধ করার ইচ্ছা রেখেই করুন। বিয়ের কয়েকদিনের মধ্যে মাফ চাবেন, তা হবে না। ঐসময় হয়তো নতুন বউ চক্ষুলজ্জায় কিছু বলতে পারবে না। মৃত্যুশয্যায় শুয়ে মাফ চাবেন, সে সুযোগ কপালে নাও জুটতে পারে। আর এরকম সময়ে কেউ মাফ করলেও তা খুশিমনে বা স্বতস্ফূর্ত হবে না।

পরিস্থিতির চাপে হয়তো কেউ বাধ্য হয়ে তার দাবী ছাড়তে পারেন। কিন্তু আপনার মৃত্যুর পর কখনো অভাবে পড়লে গফুর দাদীর মত হয়তো তিনিও বলবেন- বুড়াটা মরি গ্যালো, মহরানা শোধ করি গ্যালো না।
(বিবাহ কথন-৮)

শুক্রবার, ২৭ জানুয়ারী, ২০১৭

মোহরানাঃ কম দেয়ার মানসিকতা ঠিক না

বিয়ের মোহরানা নিয়ে অনেকের খেদ আছে।

মোহরানা নির্ধারণ যেভাবে করা হয় তাতে ক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতাও আছে। আমিও ক্ষুব্ধ হইনা তা নয়। মোহরানা নির্ধারণের নামে যেভাবে পণ্যের মত দর-কষাকষি করা হয়, এতে নারীর সম্মান বাড়ে নাকি অপমান হয় সেটা নিয়ে মেয়েদেরকেই ভাবতে হবে। মেয়েদের কী করা উচিৎ তা নিয়ে আমি কখনো কথা বলি না। তাদের ব্যাপার নিয়ে তারাই ভাবুক। আমার আজকের বক্তব্য সেইসব পুরুষদের উদ্দেশ্যে যারা অধিক মোহরানা নিয়ে ক্ষুব্ধ, হতাশ।
মোহরানা নিয়ে ক্ষুব্ধ পক্ষের অনেকের বক্তব্য শুনে আমার মনে হয়েছে, তারা মোহরানাটাকে বিয়ের একটা প্রথামাত্র মনে করেন। যেন কোনমতে অল্প কিছু মোহরানা দিয়ে বিয়ে করতে পারলেই তারা খুশি হন। 

মোহরানা না দেয়ার চিন্তা যেমন জঘন্য, আমার মনে হয়, শুধু শুধু কম দেয়ার মানসিকতাও ঠিক না। এমন মেন্টালিটি থেকে সবাইকে সরে আসতে হবে। ছেলেদের মানসিকতা থাকা উচিৎ মোহরানা কম দেয়া নয়, সামর্থের মধ্যে সর্বোচ্চ বেশি দেয়ার।

কম দেয়ার উদ্দেশ্যে মোহরে ফাতেমীর জিগির তুলবেন না।

মোহর পরিশোধ করা শুধু বাধ্যবাধকতাই নয়, এটা সওয়াবেরও কাজ। হাদিসে আছে- তোমরা স্ত্রীর মুখে যা তুলে দাও তাও সদকা হিসেবে গন্য হবে। নিজের বউয়ের সমস্ত চাহিদা মেটানো আপনার বাধ্যবাধকতা, কিন্তু তারপরেও সেটাকে সদকা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আপনি কেন এই সুযোগ হেলায় হারাবেন?

আপনার স্ত্রী আপনার কাছে কতটা Precious সেটা যদিও টাকার অংকে নির্ধারণ করার সুযোগ নেই, তবে টাকার অংক একেবারে ফেলনাও নয়। বিশেষত এমন সমাজে, যেখানে টাকাই আপনার সামাজিক অবস্থান নির্ধারণ করে।

(বিবাহ কথন-৭)

বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারী, ২০১৭

এইবার তাইলে দ্বীনদার পাত্রীই দেখুম!!!

পাত্র পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর একটা হাদীসকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়।

হাদীসটি হলোঃ আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রেখে শাদী করা হয়- তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারী। সুতরাং তুমি দ্বীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে। অন্যথায় তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (বুখারী)

আমি অনেককেই বলতে শুনেছি- তারা এই হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে বলেন যে, বিয়ের জন্য অবশ্যই সম্পদ, সৌন্দর্য, বংশমর্যাদা দেখতেই হবে!! 

কিন্তু আসলে কি হাদীসের বক্তব্য তা? বরং এখানে তো সম্পদ, সৌন্দর্য, বংশমর্যাদা সবকিছুর ওপরে পাত্র/পাত্রীর দ্বীনদারীকে স্থান দিতে বলা হয়েছে। ধনী বেদ্বীনের চেয়ে দ্বীনদার গরীব ভালো, উচ্চবংশের অদ্বীনদারের চেয়ে সাধারণ বংশের দ্বীনদার ভালো, অতিসুন্দর অদ্বীনদার/কম দ্বীনদারের চেয়ে কমসুন্দর বেশি দ্বীনদার পাত্র/পাত্রী ভালো।
এইভাবে পাত্র/পাত্রীর দ্বীনদারিতাকে সবকিছুর ওপরে স্থান দিতে বলা হয়েছে।

আর অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে অন্য হাদীসে বলা হয়েছে- তোমাদের নিকট যখন এমন কেউ প্রস্তাব নিয়ে আসে যার দ্বীন (ধর্মপরায়ণতা) ও আখলাক (উত্তম স্বভাব চরিত্র) তোমাদের কাছে সন্তোষজনক হয়, তখন তোমরা বিয়ে দিয়ে দাও। অন্যথায় পৃথিবীতে ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। (তিরমিজী)

হ্যা, আপনি সুন্দর, সম্পদশালী, উচ্চ বংশের পাত্র/পাত্রী বিয়ে করতে পারবেন না তা নয়, কিন্তু হাদিসে এসব ক্রাইটেরিয়াকে আবশ্যক করা হয়নি। হাদীসকে নিজের খায়েশের পক্ষে ব্যাখ্যা করার সুযোগ নেই।
***
***
ডিয়ার ব্যাচেলরস, যারা মনে মনে ভাবা শুরু করছেন- এইবার তাইলে দ্বীনদার পাত্রীই দেখুম!!! বেরাদর, আপনার নিজের দ্বীন আখলাক ঠিক আছে তো?? নিজে ভংচং জীবন যাপন করবেন, ধর্মের আশেপাশে হাঁটবেন না, নামাজ কালামের ধার ধারবেন না, আবার নামাজী, পর্দাশীল ভদ্র পাত্রী খুঁজবেন, তা অয় না মিয়া।

দ্বীনদার পাত্রী খোঁজার আগে নিজে দ্বীনদার হন। নিজের চরিত্র ঠিক করেন। নাইলে দ্বীনদার পাত্রীরা ঠিকই আপনাকে ঠেঙ্গানি দিয়া বিদায় করবে :P :P
কোরআন হাদীসের ওপর আমল করার ক্ষেত্রে তারা কিন্তু আপনার চেয়েও অনেক অনেক বেশি সিরিয়াস :)  

(বিবাহ কথন-৬) 

বুধবার, ২৫ জানুয়ারী, ২০১৭

আর্লি ম্যারেজ নয়, বিয়ে হোক যথাসময়ে

ইদানিং অনেককেই আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন করতে দেখা যায়। আমি এই তথাকথিত আর্লি ম্যারেজের পক্ষে নই। আর্লি ম্যারেজ সত্যিকার কোন সমাধান নয়। অল্প বয়সে বিয়ে দিলেই কারো সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায় না।
জৈবিক চাহিদা পূরণই বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বিয়ে হলো পরিবার গঠনের উদ্যোগ। বিয়ে হলো সুস্থ সুন্দর সমাজ গঠনের উদ্যোগ। বিয়ে হলো সুনাগরিক তৈরির উদ্যোগ।

ছেলে মেয়ে সবারই বিয়ের জন্য অন্তত এতটা বয়স হওয়া উচিৎ যখন সে তার সঙ্গীর প্রতি কী দায়িত্ব, সমাজের প্রতি কী দায়িত্ব তা বুঝতে পারে। যখন তারা একটা শিশুকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মত মানসিক পরিপক্কতা ও যোগ্যতা অর্জন করে। আর্লি ম্যারেজ নয়, বিয়ে হতে হবে যথাসময়ে। বিয়ের জন্য বয়সই একমাত্র যোগ্যতা নয়।
কেউ কেউ মনে করেন তাড়াতাড়ি অল্প বয়সে বিয়ে দিলেই চারিত্রিক অবক্ষয় থেকে ব্যক্তি ও সমাজ রক্ষা পাবে। নীতি নৈতিকতা রক্ষা পাবে। কিন্তু বিষয়টা আসলে তা নয়। চরিত্র রক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ, আইনের যথাযথ প্রয়োগ আর সামাজিক সুরক্ষা।

যে ছেলের মন সুস্থ নয়, তাকে ধরে বিয়ে দিলেই কোনকিছু ঠিক হয়ে যাবে না। অবিবাহিত মাত্রই চরিত্রহীন নয়, আর বিবাহিত হলেই কারো চরিত্র রাতারাতি ফুলের মত পবিত্র হয়ে যায় না। চরিত্রহীনদের তালিকায় বিবাহিতদের সংখ্যা নিতান্তই নগন্য নয়।

আর্লি ম্যারেজের নামে বেকার অবস্থায় কোন ছেলেকে বিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। বিয়ে দিলেই ঠিক হিয়ে যাবে- এটা কোন কাজের কথা হতে পারেনা। বিয়ে এমন কোন দাওয়াই নয়- যাতে নিমেষেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। একটা ছেলের বিয়ের আগে অন্তত এতটুকু উপার্জন থাকা উচিত, যাতে অন্তত দু'জন মানুষ ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। বিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে!!" গেলে ভালো কথা, কিন্তু ঠিক না হলে যে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, সেকথাও তো ভাবতে হবে নাকি?

বাবা মায়ের ওপর কোন দায়িত্ব নেই আপনার বউকে খাওয়ানোর। তারা যদি খাওয়াতে চান, খুব ভালো। নইলে আপনার বউয়ের সব চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব সম্পূর্ণই আপনার।

কৃষিনির্ভর সমাজে মানুষ বৃদ্ধি মানেই ছিল আয় বৃদ্ধি। কিন্ত আধুনিক নগরভিত্তিক সমাজে তা নয়। এখানে বেশিরভাগ পিতামাতার নাভিশ্বাস উঠে যায় দু-তিনজন সন্তান মানুষ করতে। বাবার যখন অবসরে যাবার বয়স, তখন বেকার অবস্থায় আপনাকে বিয়ে করিয়ে নতুন একটা অতিরিক্ত সংসার টানার সামর্থ তার থাকবার কথা নয়।

আরে ভাই, ক্যাম্পেইন ট্যাম্পেইন করার আগে বুকে হাত দিয়া বলেন তো- আপনি কি আপনার বোনকে একজন পরিপূর্ণ বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন?
(বিবাহ কথন-৫)

তথাকথিত আর্লি ম্যারেজ চাই না...

ইদানিং অনেককেই আর্লি ম্যারেজ ক্যাম্পেইন করতে দেখা যায়। আমি এই তথাকথিত আর্লি ম্যারেজের পক্ষে নই। আর্লি ম্যারেজ সত্যিকার কোন সমাধান নয়। অল্প বয়সে বিয়ে দিলেই কারো সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যায় না।
জৈবিক চাহিদা পূরণই বিয়ের একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। বিয়ে হলো পরিবার গঠনের উদ্যোগ। বিয়ে হলো সুস্থ সুন্দর সমাজ গঠনের উদ্যোগ। বিয়ে হলো সুনাগরিক তৈরির উদ্যোগ।

ছেলে মেয়ে সবারই বিয়ের জন্য অন্তত এতটা বয়স হওয়া উচিৎ যখন সে তার সঙ্গীর প্রতি কী দায়িত্ব, সমাজের প্রতি কী দায়িত্ব তা বুঝতে পারে। যখন তারা একটা শিশুকে মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মত মানসিক পরিপক্কতা ও যোগ্যতা অর্জন করে। আর্লি ম্যারেজ নয়, বিয়ে হতে হবে যথাসময়ে। বিয়ের জন্য বয়সই একমাত্র যোগ্যতা নয়।
কেউ কেউ মনে করেন তাড়াতাড়ি অল্প বয়সে বিয়ে দিলেই চারিত্রিক অবক্ষয় থেকে ব্যক্তি ও সমাজ রক্ষা পাবে। নীতি নৈতিকতা রক্ষা পাবে। কিন্তু বিষয়টা আসলে তা নয়। চরিত্র রক্ষার জন্য সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ধর্মীয় শিক্ষা, সামাজিক মূল্যবোধ, আইনের যথাযথ প্রয়োগ আর সামাজিক সুরক্ষা।

যে ছেলের মন সুস্থ নয়, তাকে ধরে বিয়ে দিলেই কোনকিছু ঠিক হয়ে যাবে না। অবিবাহিত মাত্রই চরিত্রহীন নয়, আর বিবাহিত হলেই কারো চরিত্র রাতারাতি ফুলের মত পবিত্র হয়ে যায় না। চরিত্রহীনদের তালিকায় বিবাহিতদের সংখ্যা নিতান্তই নগন্য নয়।

আর্লি ম্যারেজের নামে বেকার অবস্থায় কোন ছেলেকে বিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। বিয়ে দিলেই ঠিক হিয়ে যাবে- এটা কোন কাজের কথা হতে পারেনা। বিয়ে এমন কোন দাওয়াই নয়- যাতে নিমেষেই সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। একটা ছেলের বিয়ের আগে অন্তত এতটুকু উপার্জন থাকা উচিত, যাতে অন্তত দু'জন মানুষ ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে। বিয়ে দিলে ঠিক হয়ে যাবে!!" গেলে ভালো কথা, কিন্তু ঠিক না হলে যে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাবে, সেকথাও তো ভাবতে হবে নাকি?

বাবা মায়ের ওপর কোন দায়িত্ব নেই আপনার বউকে খাওয়ানোর। তারা যদি খাওয়াতে চান, খুব ভালো। নইলে আপনার বউয়ের সব চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব সম্পূর্ণই আপনার।

কৃষিনির্ভর সমাজে মানুষ বৃদ্ধি মানেই ছিল আয় বৃদ্ধি। কিন্ত আধুনিক নগরভিত্তিক সমাজে তা নয়। এখানে বেশিরভাগ পিতামাতার নাভিশ্বাস উঠে যায় দু-তিনজন সন্তান মানুষ করতে। বাবার যখন অবসরে যাবার বয়স, তখন বেকার অবস্থায় আপনাকে বিয়ে করিয়ে নতুন একটা অতিরিক্ত সংসার টানার সামর্থ তার থাকবার কথা নয়।

আরে ভাই, ক্যাম্পেইন ট্যাম্পেইন করার আগে বুকে হাত দিয়া বলেন তো- আপনি কি আপনার বোনকে একজন পরিপূর্ণ বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দিবেন?

(বিবাহ কথন-৫)

মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারী, ২০১৭

এক গ্লাস তরল ভালোবাসা...

গার্জিয়ানদের ইচ্ছা- তারা মেয়েকে এমন ঘরে বিয়ে দেবেন, যেখানে গিয়ে মেয়ে সবকিছু রেডিমেড পাবে। সবকিছু পাবে সাজানো গোছানো। যেন সে শুধু একটা সাজানো বাগানে গিয়ে প্রবেশ করবে মাত্র!!!

কিন্তু আমার মনে হয়, একটা নতুন সংসার হওয়া উচিৎ একেবারেই নতুন। এমনকি খাটটাও যদি স্বামী স্ত্রী দু'জনে একসাথে মিলে কিনতে পারে সেটাও ভালো। বিষয়টা হওয়া উচিৎ এমন- নিজেদের জন্য একেকটা প্লেট, গ্লাস, রান্নার চুলা, কড়াই, হাড়ি পাতিল- সবকিছু তারা নিজেরা নিজেরা কিনুক, নিজের মত করে একটা একটা করে কিনে সাজাক নতুন সংসার।

উইমেন সাইকোলজিই বোধহয় পৃথিবীর সবচেয়ে রহস্যময় সাবজেক্ট :P আর আমার জ্ঞান সেখানে হিমাংকেরও শত ডিগ্রী নিচে। তবুও মা, খালা, বোনদের কর্মকান্ড দেখে যতটুকু বুঝেছি- প্রত্যেক মেয়েই নিজের সংসারটা একান্তই নিজের মনের মত করে সাজাতে চায়। একটা একটা করে আসবাব কিনে তিল তিল করে যে সংসার একজন নারী সাজিয়ে নেন, তার প্রতি মায়া থাকে অন্যরকম। প্রতিটি জিনিসকে মনে হয় তার নিজের সন্তানের মত। একান্তই নিজের। যদি কখনো বাইরের পৃথিবী অসহ্য হয়ে ওঠে, এইসব তৈজসপত্রের মাঝেও তারা খুঁজে পান সুখ।
যতটা চিন্তা গবেষণা করে তারা একটা ডিনার সেট কেনেন, ততটা চিন্তা নিজের বিয়ের সময়ও কেউ করেন কিনা সন্দেহ :P
 
নতুন সংসারে খুনসুটি করে কেনা একেকটা আসবাব হয়ে থাকে জীবনের একেকটা মাইলফলক।

ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিলেই সবকিছু সাজিয়ে গুছিয়ে দেবেন না। তাদের নিজেদের সংসার নিজেদের মত করে সাজাতে বলুন।

নিজেদের কষ্টের টাকায় নিজেরা কিনে আনা একটা টিনের থালায়- পান্তাভাতকেই তাদের মনে হবে যেন বেহেশত থেকে পাওয়া মান্না সালওয়া।

আর গ্লাস কিংবা মগে পানি খাওয়ার সময় মনে হবে- এ যেন পানি নয়, হৃদয় নিঙরানো এক গ্লাস তরল ভালোবাসা  

(বিবাহ কথন-৪)

সোমবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৭

বিয়েঃ যুদ্ধটা হোক একসাথে

মেয়েদের গার্জিয়ানরা সবসময় চান- ছেলে যেন পুরোপুরি এস্টাবলিশড হয়! তার যেন অলরেডি বাড়ি গাড়ি থাকে!
তারা হয়তো ভুলে যান, অথবা জানেন না, যে ছেলে সবসময় সবকিছু না চাইতেই পেয়ে এসেছে, কিংবা যে ছেলে সবকিছু নিজে নিজে গুছিয়ে ফেলেছে- তার ঘরে নতুন বউ নতুন একটা আসবাবের মত বাড়তি সংযোজন মাত্রঃ যা তার কিছু শারীরিক ও মানসিক চাহিদা মেটাবে।

আসলে এস্টাবলিশমেন্ট নয়, দেখা উচিৎ পটেনশিয়ালিটি। দেখা উচিত স্বভাব চরিত্র।

আর বিয়েটা দেয়া উচিৎ সবকিছু গুছিয়ে নেয়া বা প্রতিষ্ঠিত হবার পর নয়, ছেলেমেয়েদের জীবনে সংগ্রাম বাকি থাকতেই। যাতে করে জীবনের বাকি যুদ্ধটা তারা দু'জনে একসাথে চালিয়ে নিতে পারে। যুদ্ধ করে করে জীবন এগিয়ে গেলে তবেই সম্পর্কটা হবে ইস্পাতকঠিন। নিঃস্বার্থ ভালোবাসাময়।

মানুষ সবসময় তাকেই বেশি ভালবাসে, বেশি আপন মনে করে, যে ছিল বিপদ মুহূর্তের সাথী। জীবনের বিভিন্ন কঠিন সময়ে যারা আমাদের সঙ্গে থাকে তাদেরকে আমরা ভুলতে পারিনা। তাদের সাথে সম্পর্কটা একসময় সত্যি সত্যিই স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে যায়।

বিয়ের ক্ষেত্রেও অবস্থাটা ভিন্ন কিছু নয়। যে স্বামী স্ত্রী একসাথে সংগ্রাম করে করে জীবনের পথে এগিয়ে যায়- তাদের বন্ধনটাই হয় সবচেয়ে দৃঢ়। তাদের ভালোবাসা হয় সবচেয়ে গাঢ়। সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী। কারণ, কঠিন সময়গুলোই মানুষের অন্তরে দাগ কেটে যায়। জীবনের শেষ দিনেও হয়তো মনে পড়ে - একদিন আমরা এক বেলা উপোস ছিলাম।
খাদিজা (রাঃ) এর মৃত্যুর পর আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আরো বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো খাদিজা (রাঃ)কে ভুলে যাননি। খাদিজার কথা ভেবে তিনি কাঁদতেন। খাদিজার আত্মীয় ও বান্ধবীদের খোঁজ খবর নিতেন, উপহার পাঠাতেন।
কারণ, খাদিজা (রাঃ) ছিলেন তাঁর দুঃখের দিনের সাথী, কঠিন সময়ের সহযোদ্ধা।

রাসুল(সাঃ) যখন হেরা গুহায় ধ্যান করতেন খাদিজা (রাঃ) তখন রাতের আঁধারে তাঁকে খাবার দিয়ে আসতেন। নবুয়ত পাওয়ার পরের সবচেয়ে কঠিন সময়গুলোয় সবসময় সাহস ও সমর্থন যুগিয়ে গেছেন একজন বয়সী নারী, হযরত খাদিজা(রাঃ)।

এমন প্রাণের বন্ধুকে, এমন আত্মার আত্মীয়কে কখনোই ভোলা যায় না।

(বিবাহ কথন-৩)

রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

বিয়েঃ হোক বন্ধুত্ব

বিয়েতে উভয়পক্ষেরই অনেক কিছুই দেখা হয়। কী কী দেখা হয় তার ফিরিস্তি দিয়ে শেষ করা যাবে না। এমনকি পাত্র/পাত্রীর বাড়ির চায়ের কাপটা কেমন, কী নাস্তা দিয়েছিল, চায়ে কতটুকু চিনি দেয়া হয়েছিল সেটাও অনেকের কাছে ইম্পর্ট্যান্ট হয়ে দাঁড়ায়। বাড়ির কুকুরটা একটু বেশি ঘেউ ঘেউ করলেও অনেক সময় ভেস্তে যায় বিয়ের আলাপ।

বিয়েতে অনেক কিছুই দেখা হয়। চেহারা, চাকরি, ধনসম্পদ, শিক্ষা, এলাকা, পরিবার। শুধু দেখা হয়না পাত্রপাত্রীর মানসিক মিল অমিলের ব্যাপারটা। বিবেচনায় নেয়া হয়না ছেলেমেয়েদের চিন্তাচেতনার মিল অমিল। যেন এটা কোন বিষয়ই নয়!! যেন বিয়ে মানে টাকা ঘরবাড়ি আর বংশের সুনাম দেখে দু'জন মানুষকে এক ঘরে ঢুকিয়ে দেয়া!!
আমাদের সমাজের এইসব বিয়ে কি পাত্রের সাথে পাত্রীর, নাকি পাত্রের চাকরির সাথে পাত্রীর চামড়ার- এ নিয়ে প্রায়শই আমার ঘোরতর সন্দেহ হয়। 


অথচ বাস্তবিক অর্থে বিয়ে হচ্ছে একটা বন্ধুত্ব। স্বামী স্ত্রীর মাঝেই হতে হবে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্ব।
ভাবুন তো, আপনার খুব ক্লোজ যে বন্ধু, সে কীভাবে আপনার বন্ধু হলো? কেন আপনাদের বন্ধুত্ব দীর্ঘস্থায়ী হলো?
যার সাথে আপনার মনের মিল, যার সাথে আপনি প্রাণখুলে কথা বলতে পারেন, যার সাথে কথা বলে আপনার সময় কেটে যায় অনায়াসে- তারাই কিন্তু আপনার প্রিয় বন্ধু। তাই না! তাদের মধ্যে আছে পাটকাঠির মত হ্যাংলা বন্ধু, আছে মোটা, পাতলা, আছে বেঁটে, আছে লম্বা। আছে গরীব, আছে ধনী। কালো, শ্যামলা, ফর্সা। এইসব কোনকিছুই কিন্তু বন্ধুত্ব নির্মানের পথে বিবেচ্য ছিলনা। বন্ধুত্ব তৈরি হয় মনের মিল, বিশ্বাস আর ভালোলাগা থেকে।

বিয়ের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। মনের মিল না হলে বিয়ে সুখের হয় না। বন্ধুত্ব না হলে দীর্ঘস্থায়ী হয় না সম্পর্ক। চিন্তাভাবনার অমিলের কারণে, অর্থের প্রাচুর্যের মাঝেও প্রতিনিয়ত ভেঙ্গে যাচ্ছে অনেক সংসার। আর অনেক পরিবার টিকে আছে বুকের ভেতর ছাইচাপা কষ্ট নিয়ে।

আপনি বিবাহিত হলে স্ত্রী/স্বামীর বন্ধু হোন, আর বিয়ে না করে থাকলে এমন কাউকে পছন্দ করুন, যার সাথে আছে আপনার চিন্তাচেতনার মিল। যাকে আপনার সত্যিকারের বন্ধু বানাতে ইচ্ছে হয়।
মনের মিল না হওয়ায় তিন বছরে চারবার বিয়ে ভাঙ্গে সুন্দরী কমলার। আর ওদিকে নাক বোঁচা কলিমের বাপ দাঁত উচু কলিমের মার প্রাণের বন্ধু হয়ে পার করে দেন ষাট বছরের এক ম্যারাথন সংসার জীবন।

(বিবাহ কথন-২) 

শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

সবকিছু নিখুঁত হওয়া চাই?

একজন মানুষকে আল্লাহ একসাথে সবকিছু দেন না। কোন একদিকে বেশি থাকলে অন্যদিকে কম থাকে। প্রত্যেক মানুষেরই কোন না কোন অভাব থাকবেই। আল্লাহ তায়ালা আমাদের মানুষ বানিয়েছেন, অতিমানব না। প্রত্যেকেরই খুঁত আছে, কেউই নিখুঁত নয়।

গার্জিয়ানরা ছেলেমেয়ের বিয়ের সময় এই চিরসত্যটা ভুলে যান। এবং ছেলেমেয়েরা নিজেরাও। সবাই একজনের মাঝেই সবকিছু পেতে চায়। পাত্রীর বাবা খোঁজেন এমন পাত্র, যে একইসাথে দেখতে হ্যান্ডসাম, অসম্ভব মেধাবী, সেটলড ক্যারিয়ার (আবার বয়সও কম!!), উচ্চ বেতন, কথাবার্তায় স্মার্ট ও বুদ্ধিমান, আচার ব্যবহার ভালো, চরিত্র ভালো, গভীর জীবনবোধের অধিকারী, চিন্তাশীল, উচ্চ বংশীয়, শিক্ষিত ও ধনী পরিবারের এবং একই অঞ্চলের। কিন্তু বাস্তবে এই সবকিছু আল্লাহ তায়ালা কাউকেই একসাথে দেন না।

ছেলে হয়তো খুবই স্মার্ট, হ্যান্ডসাম। ভালো চাকুরি করে। কিন্তু ঘরের ভেতর আসলে তার ব্যবহার ভালো নয়। সে মানুষকে সম্মান দিতে জানে না। হয়তো সে ভেতরে ভেতরে খুবই অহংকারী !! হয়তো সে বদরাগী!! হয়তো সে চরম অসহিষ্ণু একজন মানুষ!!

আবার ছেলের বাপ মায়েরা বোঝেন না যে ধনী, সুন্দরী, উচ্চশিক্ষিত, বুদ্ধিমতি, সংসারী (আরো যেসব চাওয়া থাকে!) সবকিছু একসাথে পাওয়া যায় না। অতিসুন্দরী মেয়ে অহংকারী হতেই পারে!! আপনি ছেলের বউ হিসেবে ধনীর দুলালী চান, তো সেই বউ আপনাকে শ্বাশুড়ীর সম্মান নাও দিতে পারে!! ক্রুড রিয়ালিটি।

অতিরিক্ত ও অবাস্তব প্রত্যাশার কারণে দেখা যায় পাত্র পাত্রী মিলছেই না। নানা ছুতোনাতায় একের পর এক প্রস্তাব বাতিল করছে ছেলে অথবা মেয়ের অভিভাবকরা।

একেবারে নিখুঁত একটা ছেলে কিংবা মেয়ের সন্ধানে কেটে যায় বছরের পর বছর।

একসময় তারা ক্লান্ত হয়ে যান।

হয়তো অনেকদিন পরে হুঁশ হয়। ততদিনে পদ্মা মেঘনায় গড়িয়ে যায় অনেক জল। হয়তো জোয়ারের শেষে ভাটা নামে আবেগ উচ্ছ্বাসে। মাঝখানে নিদারুণ বঞ্চনায় পেরিয়ে যায় ছেলেমেয়েদের জীবনের কিছু সোনালি সময়।
(বিবাহ কথন-১)

শ্মশান

বিগত গ্রীষ্মের মত চলে গেছে পৌষের দিন,
আর
ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে মাঘেরও রাত্রিগুলো।
হৃদয়ের তার ধরে নাড়াচাড়া করে গেছে পুবালি বাতাস
তবু
সুরের লহরী তারা বাঁজাতে পারেনি।
আসছে ফাল্গুনে কি শোনা যাবে কৃষ্ণচূড়ার গান?
নাকি
কালবৈশাখির অপেক্ষায় অনাবাদী থেকে যাবে
হৃদয় #শ্মশান?

বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী, ২০১৭

এলোমেলো প্রশ্ন

কোথায় উড়ে যায় কোথাকার মেঘ
কোন পাহাড়ের টানে
কোথায় গিয়ে পরে হয়ে যায় বৃষ্টি!
কোথায় উড়ে যায় ওপাড়ের গাংচিল
আর এপাড়ের সাদা বক
এক পায়ে দাঁড়িয়ে কী ভাবে সারাটা বিকেল? 


কে কার খবর রাখে এইসব দিনে
যখন অদ্ভুত রুক্ষতায় ভরে আছে মানুষের মন!
কে ভাবে আজকাল হৃদয়ের কথা?
যখন সকলেই ভাবছে কেবল অর্থের প্রয়োজন!
কার কাছে আজো
কিছুটা মূল্য আছে মানবিকতার?
কিছুটা মূল্য আছে হৃদয়বৃত্তি আর
মনুষ্য স্বত্ত্বার?
-----
#এলোমেলো_প্রশ্ন

মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭

'চিকিৎসা সেবা আইন, ২০১৬' - খসড়া পর্যালোচনা

স্বাস্থ্যখাতে, বিশেষ করে বেসরকারি খাতে চিকিৎসা ব্যবস্থায় শৃংখলা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার এ সংক্রান্ত নতুন আইন করতে যাচ্ছে । 'চিকিৎসা সেবা আইন, ২০১৬' নামে আইনটির একটি খসড়া প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় । আইনটিতে বেশ কিছু ভালো দিক আছে । তবে কিছু বিষয়ে এখনো রয়ে গেছে অস্পষ্টতা । কিছু বিষয় অগ্রহণযোগ্য।
প্রথমেই নজর দেয়া যাক ধারা ৯ এর ১ (খ) তে । এতে বলা হয়েছে ‘সরকারি বা কোন সংবিধিবদ্ধ সংস্থায় চাকুরিরত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি’ নির্ধারিত অফিস সময়ের বাইরে ও ছুটির দিনে ‘স্ব স্ব কর্মস্থলের জেলার বাহিরে’ ‘নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের লিখিত পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে’ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা চেম্বারে চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন।
সরকারি চাকরিরত ডাক্তার/নার্স গন যারা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও সেবা প্রদান করেন তারা মূলত নিজ কর্মস্থলের আশেপাশেই তা করে থাকেন । নিজ কর্মস্থলের জেলার বাহিরে গিয়ে বেসরকারি সেবা প্রদান আদতে অসম্ভব প্রায় । সেক্ষেত্রে এই আইন বলবত হলে বাস্তবে অনেকেই আর বেসরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রমে যুক্ত থাকতে পারবেন না । আবার অনেকেই সরকারি চাকরি ত্যাগ করতে বাধ্য হবেন ।
এই ধারাটি সংশোধন করা দরকার । অন্যথায় বিশৃংখলা সৃষ্টির আশংকা থেকে যায় ।
ধারা ১৮ তে বিদেশী চিকিৎসা সেবা প্রদানকারীদের সম্পর্কে বলা হয়েছে – ‘সরকারের পূর্বানুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানে বিদেশী চিকিৎসা সেবা প্রদানকারী নিয়োগ করা যাইবে ।
এখানে সরকারের অনুমতির পাশাপাশি বিদেশী সেবাদানকারীদের বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য লাইসেন্সিং পরীক্ষা পাশ ও নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতা রাখা দরকার ।
ধারা ৬ (১) অনুযায়ী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিদর্শন, প্রবেশ, তল্লাশি ও জব্দ করার ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ ‘সরকার বা সরকার কর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ বা তৎকর্তৃক নিযুক্ত কোন কর্মকর্তা বা কমিটি কোন চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠানে যেকোন সময়ে প্রবেশ, পরিদর্শন, রেজিস্টার ও চিকিৎসা সেবা সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি বা নমুনা বা কাগজপত্র পরীক্ষা এবং জব্দ করতে পারবে।
এখানে পরিদর্শক টিমে অন্তত একজন সরকারি ডাক্তারের অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক করা উচিৎ ।
ধারা ২০ (১) এ বলা হয়েছে- স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই আইনের অধীনে পেশাগত দায়িত্ব পালনে বা চিকিৎসা প্রদানে অবহেলা অপরাধ হিসেবে গন্য হইবে ।
২(২) ধারা অনুযায়ী অবহেলাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে- স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সেবা গ্রহীতার প্রাপ্য সেবা প্রদান না করা যাহা তাহার পক্ষে ‘বাস্তব অবস্থায় ও মানবিকভাবে’ পালন করা সম্ভব ছিল ।
আগেকার খসড়া আইনে পেশাগত অবহেলাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছিল এভাবেঃ 'ভুল চিকিৎসা' যা দ্বারা 'রোগ মুক্তি ঘটে না' বা 'বিলম্বিত হয়'।
সে তুলনায় এবারের সংজ্ঞায়ন ভালো হয়েছে । তবে আরো স্পেসিফিক করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে ।
খসড়া এই আইনের কিছু ভালো দিক হলোঃ
ধারা ২১(১) –এ চিকিৎসা সংক্রান্ত অভিযোগ আদালতে আমলে নেয়ার আগে ন্যুনতম দুইজন চিকিৎসক সহ তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন আবশ্যক করা হয়েছে । কমিটিতে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অন্তর্ভুক্তি আবশ্যক করা হয়েছে।
২১(৪) ধারায় বলা হয়েছে - আদালতের নির্দেশনা ব্যতিত কোন স্বাস্থ্যসেবা প্রদনকারী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা যাইবে না ।
ধারা ২০ (২) এ বলা হয়েছেঃ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ব্যক্তির প্রতি হুমকি প্রদান , ভীতি প্রদর্শন, দায়িত্ব পালনে বাধাদান, আঘাত করা সহ যেকোন ধরণের অনিষ্ট সাধন বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের কোন সম্পত্তির ক্ষতিসাধন, বিনষ্ট, ধ্বংস বা উক্তরুপ সম্পত্তি নিজ দখলে গ্রহণ অপরাধ বলিয়া গন্য হইবে।
ধারা ২১(৫) অনুযায়ী ২০(২) এ উল্লেখিত অপরাধ হবে আমলযোগ্য ও জামিন অযোগ্য।
এগুলো এই আইনের ভালো দিক ।
তবে ধারা ২২(২) অনুযায়ী ২০(২) এ উল্লেখিত অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করা হয়েছে অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বা তিন বছর কারাদন্ড বা উভয় দন্ড।
শাস্তির পরিমাণ কম হয়েছে । শাস্তির মাত্রাকে আরো সংজ্ঞায়িত করা দরকার । ক্ষতির পরিমাণ বা আঘাতের প্রকৃতি অনুযায়ী অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ হওয়া উচিৎ। ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিসাধন করলে অনধিক পাঁচ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড কি গ্রহণযোগ্য? অথবা শারীরিকভাবে গুরুতর আঘাত করা হলে তিন বছর কারাদন্ড কি যথেষ্ট হবে? বিভিন্ন দেশে এইরুপ অপরাধের শাস্তি আরো বেশি ।
এখানে ‘অনধিক’ এর স্থলে ন্যুনতম শব্দ প্রয়োগ করা উচিৎ হবে ।

বুধবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১৭

তরুণ লেখকদের কী করা উচিত?

তরুণ লেখকদের একটা বড় অংশ তাদের গল্প উপন্যাস লেখায় হুমায়ুন আহমেদের স্টাইল ফলো করেন। আপনি নতুন কোন লেখকের একটা গল্প পড়তে শুরু করলেন, কিছুটা পড়ার পরেই দেখবেন- কেমন যেন হুমায়ুন আহমেদের লেখার গন্ধ পাচ্ছেন।

লেখালেখি শুরু করার জন্য এটা ভালো। হুমায়ুন স্টাইলে লেখার সুবিধা হলো- খুব সহজেই ছোট ঘটনাকে টেনে বড় করা যায় আর তা পাঠকের কাছে পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের লেখার মত প্যাচালো বা জটিল মনে হয় না। তবে দীর্ঘমেয়াদে হুমায়ুনীয় স্টাইল ফলো করা একজন উদীয়মান লেখকের জন্য আত্নঘাতী হবে। পাঠক আপনার লেখা পড়তে গিয়ে হুমায়ুন আহমেদকে খুঁজে পাবে, আপনাকে নয়।

হুমায়ুন আহমেদ ঠিকই নিজের মত করে তার নিজের সময়কে ধারণ করে গেছেন। আপনার উচিৎ, আপনার নিজস্ব স্টাইলে আপনার সময়কে ধারণ করা।

মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারী, ২০১৭

দূর্নীতি কারা করে?

অনেকের ধারণা, দুর্নীতি শুধু বড় অফিসাররাই করে। পুলিশ অথবা যারা বিভিন্ন অফিসে কাজ করে, দুর্নীতি বোধহয় শুধু তারাই করে। অন্য কেউ না।

কেউ কি মনে করেন যে একজন রিক্সাওয়ালাও দুর্নীতি করে? কিংবা, একজন কামলাও কি দুর্নীতি করে?
উত্তর হচ্ছে- হ্যা। তারাও দুর্নীতি করে। পার্থক্য শুধু টাকার অংকে। যে যতটুকু পারে, সে ততটুকু করে।
যেদিন রাস্তায় একটু জ্যাম থাকে, যেদিন গাড়ি সংকট থাকে, বা হরতাল থাকে সেদিন রিক্সাভাড়া দ্বিগুন হয়ে যায়। সিএনজি ভাড়া দ্বিগুন তিনগুন হয়ে যায়।

একজন কামলা দুর্নীতি করে তার কাজে ফাঁকি দেয়ার মাধ্যমে। যে কাজ সে একদিনে করতে পারে, সেই কাজকেই সে করবে তিনদিন লাগিয়ে।
ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি করে মজুদদারীর মাধ্যমে। অতিরিক্ত মুনাফাখোরীর মাধ্যমে। রমজান মাসে আমরা সেটা হাড়ে হাড়ে টের পাই।

অফিসের লোকেরা দুর্নীতি করে কখনো ফাইল আটকিয়ে, কখনো গ্রাহকের কাছে সরাসরি টাকা আদায় করে, কাজে ফাঁকি দিয়ে, অপ্রয়োজনীয় ওভারটাইম করে।

আসলে যার মনে অসততা বাসা বেঁধে আছে, সে যেই হোক, যে পেশাতেই থাকুক, দুর্নীতি করবেই। দুর্নীতি প্রতিরোধের জন্য বদলাতে হবে ভেতরের মানুষটাকে।

সোমবার, ২ জানুয়ারী, ২০১৭

মোটরবাইকের নেশা

ক্ষুদ্র ডাক্তারি জীবনে রোড এক্সিডেন্টের যতজন রোগী দেখেছি, বেশিরভাগই মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট। কারণ, মোটর সাইকেল জিনিসটাই আসলে একটা নেশা।

যেদিন থেকে মোটর সাইকেলে বসে কোনমতে মাটি ছুঁতে পারি, সেদিন থেকে বাইক চালানো শুরু। এরপর এক যুগ ধরে রংপুরের সমতলভূমি আর চট্টগ্রামের পাহাড়ী রাস্তায় হাজার হাজার মাইল বাইকের ওপর বসে পাড়ি দিয়েছি। ফিলিংসটা হলো- বাইকে উঠলেই নেশা ধরে যায়। স্পিডোমিটারের কাটা ষাটের নিচে থাকা মানে যেন একজন বাইকারের চরম অপমান। আর কেউ যদি ওভারটেক করে, তাহলে যেন মাথায় আগুন ধরে যায়। শুরু হয়ে যায় অঘোষিত রেস। 

ভয়ংকর ব্যাপারটা হচ্ছে- কখনো কখনো সেই রেসের সমাপ্তি ঘটে জীবনের বিনিময়ে।
ডিয়ার বাইকার্স, প্লিজ কন্ট্রোল ইওরসেলফ, কন্ট্রোল স্পিড। বিকজ, একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না।

রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

সময় এত দ্রুত কেনে??

অনেককেই বলতে শুনি "ভাই, কী করি বলেন তো! সময় যে কাটেনা! "
আমি অবাক হয়ে যাই। খুব অদ্ভুত লাগে।

পৃথিবীতে কত কিছু করার আছে, কত কিছু জানার আছে, কত কিছু দেখার আছে!! হাজার বছরেও তো এক জীবনের স্বাদ মিটবে না। অথচ একজন জ্বলজ্যান্ত মানুষ কোন কাজ খুঁজে পাচ্ছে না, তার সময় কাটছে না, এ কীকরে হয়?
অথচ প্রতিটি দিনের শেষে আফসোস আমার নিত্যসঙ্গী। আহা! কিছুই তো করা হলো না। কিছুই তো দেখা হলো না। কিছুই তো শেখা হলো না।


তারাশঙ্কর বলেছিলেন- ভালোবেসে মিটিলো না সাধ, জীবন এত ছোট কেনে?
আমাকে বলতে হয়- দিনের শেষেও ফুরালো না কাজ,
সময় এত দ্রুত কেনে??