এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১১

মলম পার্টির খপ্পরে এক মলম(MLM) ব্যবসায়ী

রাগে ক্ষোভে দুঃখে অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম আর মলম বিক্রি করব না । ঘটনাটা খুলেই বলি ।অধৈর্য হবেন না । আগে আমার পরিচয়টা দেই আপনাদেরকে । আমার নাম গনেশ । আমি চকবাজারে কাটা ছেড়া চুলকানি চর্মরোগ ইত্যাদির মলম বিক্রি করতাম । আমার কোম্পানির নাম আবুল মলম এন্ড কোং । জীবনে লেখাপড়া তেমন করতে পারি নাই । পাঠশালায় পড়েছিলাম কিছুদিন । বয়স ১৬ তে বাবায় বিয়া করায়ে দিলো । এর বছর দুয়েকের মধ্যে বাবা মারা গেলেন । তখন আমার এক দুঃসম্পর্কীয় মামায় আমাকে এই ব্যবসায় নামিয়ে দিলো । দীর্ঘ প্রায় ১0 বছর থেকে আমি মলম বিক্রি করে জীবন চালাই ।
একদিন বুধবার । কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় মফিজের চায়ের দোকানে বসেছি । দেখি একজন লোক আরো কয়েকজনকে কীসব বোঝাচ্ছে । আমিও উত্‍সাহী হয়ে কাছে গিয়ে বসলাম । ইতোমধ্যে সেই ব্যক্তি তার ব্যাগটা খুলে সেখান থেকে একটা যন্ত্র বের করল । টিভির মত একটা স্ক্রিন আছে দেখলাম । ওটা বের করার সময় দেখা গেল তার ব্যাগে অনেক টাকা আছে । ভাবটা এমন ,টাকা তার কাছে কোন ব্যাপারই না । যাহোক যন্ত্রটার নাম নাকি ল্যাপটপ ,লোকটা আমাদের বলল । সে ওখানে কিসব বের করে আমাদের দেখাতে লাগলো । মুখে বলতে লাগলো কিসব হাত বেহাতের কথা । ডান হাত বাম হাত উপরের হাত নিচের হাত এইসব ।
-মনে করেন আপনি হইলেন আমার ডাইন হাত , আর আপনে হইলেন আমার বাম হাত । আর উনি হইলো আপনার ডান হাত আবার উনি হইতেছেন গিয়া আপনের বাম হাত । আবার এইদিকে ওই উনি হইবেন ওনার ডান হাত আর তিনি হইবেন ওই ভাইয়ের বাম হাত । এছাড়াও আপনারা আপনাদের মা বাবা ভাই বোন আত্নীয় স্বজনদের বাম বা ডান হাতে নিতে পারেন ।
-ভাই আমার হাত কয়খান কইলেন ?
-কেন , আপনার তো দুই হাত ।
-না ,কিসব জানি কইলেন । ডান হাত বাম হাত আবার উপরে নিচে ।
-হ্যা ,আপনি ডান হাতে নিবেন ওনাকে আর বাম হাতে নিবেন ওনাকে । তার নিচে ওনার বাম হাতে দেবেন আপনার ভাইকে আর ওনার ডান হাতে দিবেন আপনার বোনকে । আবার...
-আরে মিয়া কি আবোল তাবোল কইতাছেন । ওগোর মত দুইটা মোটকুরে আমি দুইহাতে নিব ক্যামনে । আবার কইতাছেন আমার বইনরে অর ডান হাতে তুইলা দিতে হবে । ফাজলামি করেন আমাদের সাথে ? ক্ষেপে গেলো একজন ।
আমি আর সেখানে থাকলাম না । কেযে কার কোন হাতে পড়বে কিছুই বুঝলাম না । আবার ৬০০০ টাকা দিয়া নাকি একটা আকাউন্ট কিনতে হবে । মাইনষেরে হের মতন বুঝাইয়া টাকার লোভ দেখায়া আকাউন্ট করাইলে আমি ডলার পাব । টাকা না । এইটাও নাকি একটা ব্যবসা । আশ্চর্যের কথা শুনলাম এইটার নাম নাকি মলম নাকি মেলেম ব্যবসা । জিজ্ঞাস করছিলাম কী মলম ? কয় এই মলমের কোম্পানির নাম উনিপেটু ।
এইগুলা শুনে ওইদিন আমি চলে যাই ।পরে শুনেছি মফিজের কাছে ,দুএক জন নাকি টাকা দিয়া আকাউন্ট কিনছিলো ।
গত পরশু বাজার থেকে ফেরার পথে মফিজের দোকানে বসলাম চা খাওয়ার জন্যে । মফিজ বলল ,গনেশদা বাইচা গেছ তুমি । আমি অবাক হইলাম । ক্যান ,কী হইছে ? মফিজ জানাল ,ওইযে একটা মলম ব্যবসায়ী আসছিল না একদিন । শুনলাম মাইনষের টাকা নিয়া মলম না দিয়াই পালায়া গেছে ওই কোম্পানি ।
আমি বললাম ,মফিজ ভাই আমি কোনদিন মলম বেচতে গিয়া কাউরে ঠকাই নাই । এইজন্যেই মনে হয় রক্ষা পাইছি ।
আজকে মলম বেচা শেষে লোকাল বাসে ফিরছিলাম । একেবার শেষ সিটটাতে বসেছি । সবার নামা শেষ । দেখি আমার সামনের সিটে একলোক ঘুমাচ্ছে । নেমেই যাচ্ছিলাম । হেলপার লোকটাকে ডাকাডাকি করছিলো নামার জন্য । সে উঠছিলো না । অজ্ঞান হয়ে আছে । আমিও ফিরলাম । খেয়াল করে দেখি এতো সেই মলম ব্যবসায়ী । লোকটার জন্য মায়া হলো ।,
আহা ! বেচারা মলম পার্টির খপ্পড়ে পড়েছে । এমনিতেই তার মলম কোম্পানি পালিয়ে গেছে ,আবার তাকেও মলম পার্টি অজ্ঞান করে সবকিছু নিয়ে গেছে । বেচারাকে সর্বসান্ত করে দিল মলম বিজনেস আর মলম পার্টি । তার জন্য আসলেই খুব কষ্ট হচ্ছিল । তাড়াতাড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলাম । আর হঠাত্‍ করে একটা অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম ,ছেড়েই দেবো আমার মলম ব্যবসা । মফিজের মত একটা চা দোকান দেব রাস্তার মোড়ে ।



 শনিবার, এপ্রিল 23, 2011