এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১২

ডাক্তারের ওপর হামলাকারী নরপশুদের বিরুদ্ধে জেগে উঠুন


গতকাল সারাদিন ব্যস্ত ছিলাম । ফেসবুকে কিংবা অনলাইন পত্রিকাগুলোয় ঢুঁ মারার সময় পাইনি । রাত ১ টায় যখন বিছানায় শুয়ে ফেসবুকে নজর বুলাচ্ছি, তখনি চোখে পড়লো লোমহর্ষক খবরটা । সকালে উঠে খোজ নিলাম কুমিল্লা মেডিকেলে । কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের একজন ভাই লিখেছেন ,
‘ডাঃ শাহ আনিসুর রহমান রানা, চুপচাপ সাদাসিধে একজন মানুষ। অন্যান্য সব ইন্টার্ন ডাক্তার এর মত ৯৫০০ টাকা মাসিক বেতনে দিয়ে যাচ্ছিলেন দৈনিক ১৬ ঘন্টার ডিউটি। কিন্তু তাও বাধ সাধল। নিত্যদিনের মতই মেডিসিন ওয়ার্ডে ডিউটিতে ছিলেন ভাইয়া। একজন রোগী এল ওয়ার্ডে ভর্তি নিয়ে, স্ট্রোকের পেশেন্ট, যথারীতি ফাইল ঠিক করে তাকে সীট দেয়া হল, তবে ফ্লোরে, এইতো আপনারা মানবতাবাদীরা চিত্‍কার শুরু করেন এবার, চিকিত্‍সকের অবহেলা ফ্লোরে রোগী. . . এখন আপনারাই বলেন ৫০০ বেডের হাসপাতালে ৬৮০ জন রোগী ভর্তি হলে তো আপনাদের বাসায় রাখা যায়না, হাসপাতালেই রাখতে হবে। মজার ব্যাপার হলো রোগীর স্বজন ও ছেলে পাশের বেডের এক রোগীকে নামিয়ে দিয়ে তাকে বেডে উঠানোর দাবি জানায়। কি বুঝলেন? জেল যদি শ্বশুরবাড়ি হয় তাহলে হাসপাতালও মামাবাড়ি বলা যায়, নাকি ? আবদারের এখানেই শেষ না, ওয়ার্ড ৫ তালায় আর CT scan নিচতলায়। CT scan তার জন্য ৫ তালায় আনা যাবে না কেন ইত্যাদি। বেড দিতে অপারগতা জানানোয় স্যালাইন স্ট্যান্ড দিয়ে ভাইয়ার মাথায় আঘাত করা শুরু করে। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে রেজিস্টার ডাঃ এনাম, ইন্টার্ন ডাঃ ফরহাদ, ডাঃ মিনহাজ সহ আটজন ভাইয়া আপু আহত হন। রানা ভাইয়ার মাথায় ১২টা সেলাই লেগেছে, তাত্‍ক্ষনিক CT scan report বলছে মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়েছে। মেডিকেলে ১১ টা সাবজেক্টের সাথে কমান্ডো ট্রেনিংটা থাকা উচিত কি বলেন ?’

প্রথম আলোর খবরটাও পড়ুন –

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
চিকিৎসকদের ওপর রোগীর স্বজনদের হামলা, আহত ৮ 
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা | তারিখ: ২৮-০৪-২০১২

« আগের সংবাদ
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্বজনের চিকিৎসা করাতে এসে চিকিৎসকদের ওপর হামলা চালিয়েছে একদল দুর্বৃত্ত। ওই ঘটনায় হাসপাতালের ইন্টার্নি চিকিৎসক শাহ আনিসুর রহমানসহ কমপক্ষে আটজন আহত হয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। হাসপাতালের ইনডোর মেডিকেল কর্মকর্তা মো. শাহজালাল ভূঁইয়া কাছ থেকে পাওয় তথ্য, মামলার এজাহার ও সরজমিনে জানা গেছে, আজ বেলা ১১টার দিকে কুমিল্লা শহরের উত্তর চর্থা এলাকার বাসিন্দা ওবায়দুল ইসলাম ওরফে বাবর তাঁর ভাই নাদের ইসলামকে (৪২) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান। ওই সময়ে কর্তব্যরত ইন্টার্নি চিকিৎসক শাহ আনিসুর রহমান রোগী নাদের ইসলামকে হাসপাতালের পঞ্চম তলার মেডিসিন বিভাগের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি করান। চিকিৎসক ওই সময়ে রোগীর সিটি স্ক্যান করতে হবে বলে তাঁর স্বজনদের জানান। ওবায়দুল সিটি স্ক্যান মেশিন হাসপাতালের নিচতলা থেকে উপরে নিয়ে আসার দাবি জানান। চিকিৎসক এতে অপারগতা প্রকাশ করলে সঙ্গে সঙ্গে তিনি স্যালাইনের স্ট্যান্ড, লোহার পাইপ ও মশারির স্ট্যান্ড দিয়ে চিকিৎসক শাহ আনিসুর রহমানের ওপর হামলা চালান। এ সময় রোগীর অন্য স্বজনেরাও তাতে যোগ দেন। এতে আটজন আহত হন। অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘চিকিৎসা প্রদানে বিলম্ব হওয়ায় ঝামেলা হয়েছে।’ এই ঘটনার প্রতিবাদে ইন্টার্নি চিকিৎসকেরা হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নূর মোহাম্মদের কক্ষে পুলিশ প্রশাসন, বিএমএ, ইন্টার্নি চিকিত্সক ও অন্যান্য চিকিৎসকের নিয়ে বৈঠক হয়। বৈঠকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ, বিএমএ কুমিল্লা জেলার সভাপতি মো. শহীদউল্লাহ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মহসিনুজ্জামান চৌধুরী, ইন্টার্নি চিকিৎসক নাদিয়া আফরোজ ও মিনহাজ হোসেন ভূঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। পরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক নূর মোহাম্মদ বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলার পরও ইন্টার্নি চিকিৎসকেরা দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেন। তাঁরা ওই ঘটনার বিচার দাবি করে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, কাল রোববার সকাল ১০টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত প্রতিদিন তিন ঘণ্টা করে বহির্বিভাগে রোগী দেখা বন্ধ এবং বেলা ১১টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন। কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ও কর্তব্যকাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার আইনে মামলা হয়েছে। আসামিদের বিকেলে আদালতের মাধ্যমে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ডাঃ রানা ১৫ তম ব্যাচের ছাত্র । তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জ জেলায় । ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত নিরীহ, ভদ্র ও কোন সাতে পাঁচে না থাকা মানুষ ।
ঘটনার পর তাঁর বাস্তব উপলব্ধি হলো-
  ‘সন্ধায় দেখা করতে গিয়েছিলাম, কথা বলতে পারছিলেন, প্রচন্ড জ্বর। আস্তে আস্তে বললেন "বুঝলাম যে রোগীর আত্নীয়দের সাথে ভাল আচরণ করে কোন লাভ নাই বুঝলা, বরং খারাপ আচরণ করলে তুমিও বাঁচবা রোগীও বাঁচাতে পারবা"


সিটিস্ক্যান মেশিন উপরে তুলে আনতে হবে রোগীর জন্য !! এবং সেটা করতে হবে ডাক্তারকে !! আমাদের দেশে এখনো এমন বেকুব, গাধা, মুর্খ লোক আছে ! শুধু মুর্খ হলেও মানা যেত । কিন্তু এত হিংস্র হায়েনার দল । নরপশু । তারা আটজনকে পিটিয়ে আহত করলো !

এখন কুমিল্লা মেডিকেল কলেজে ইন্টার্ন ডাক্তারদের ধর্মঘট চলছে । এই ধর্মঘটে আমাদের পুর্ন সমর্থন থাকবে । এটা চলতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক ও কঠিন শাস্তি নিশ্চিত না হয় । অনেকে হয়তো বলবেন এতে সাধারণ জনগনের কষ্ট হচ্ছে, তাঁদের কী দোষ ? তাঁদের জন্য বলছি, ডাক্তারদের চেয়ে সাধারণ জনগনের কাছাকাছি  কেউ নেই, জনগনের দুঃখ কষ্ট ডাক্তাররা হৃদয়ে উপলব্ধি করে । কিন্তু এই যদি হয় ‘জনগনের’ কাণ্ডজ্ঞান এবং কর্ম তাহলে নিরাপত্তার দাবিতে এই মিনিমাম প্রতিবাদ টুকু না করে উপায় নেই । এখন জনগনেরই দায়িত্ব ওই কুলাঙ্গার গুলোকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া । অন্যথায় ‘জনগন’ এর দুঃখ-কষ্টের জিগির তোলার অধিকার আপনার নেই ।

রবিবার, এপ্রিল 29, 2012