এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৭

বিয়ের প্রস্তাবঃ খুঁত ধরার মহোৎসব?

বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যখন আলাপ আলোচনা শুরু হয়, তখন ছেলে এবং মেয়ে উভয় পরিবারেরই কিছু মানুষ অন্য পরিবারের নানারকম দোষ ত্রুটি উদ্ধারের গুরুদায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন।
যারা ছেলেপক্ষের, তাদের একমাত্র কাজ হয়ে পড়ে যেকোনভাবে মেয়ের এবং মেয়ের ফ্যামিলির খুঁত বের করা। একইভাবে মেয়ের ফ্যামিলির লোকজনের একমাত্র কাজ হয়ে ওঠে ছেলের ও ছেলের ফ্যামিলির খুঁত বের করা।
এক ফ্যামিলির লোকজনের টার্গেট থাকে কীভাবে অন্য ফ্যামিলিকে তাদের চেয়ে ছোট করা যায়। দেখিয়ে দেয়া যায় যে- "আমরা ওদের চেয়ে ভালো বংশ, ভালো ফ্যামিলি!!!" নানান ছোটখাটো বিষয় নিয়ে পরস্পরকে অপদস্থ করার সুযোগ খুঁজতে থাকে কেউ কেউ। 

এইসব কাজে অগ্রণী ভূমিকায় থাকেন ফুপু, খালা মামীরা। কখনো কখনো হবু ননদ ভাবী বা সম্বন্ধীরা। আর এই ডামাডোলে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন বাবা মায়েরা। কখনো কখনো তারাও যুক্ত হন গড্ডালিকা প্রবাহে।
কাছের মানুষ হিসেবে দাবী করা দুয়েকজন প্রতিবেশীও এই কাজে তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের অপরিহার্যতা জানান দেন। তারা যে কতটা শুভাকাঙ্ক্ষী তার প্রমাণ পেশ করেন।

তাদের বক্তব্যটা থাকে এরকম- আহা!! আমরা বেঁচে থাকতে কীকরে আমাদের মেয়ে/ছেলে কে ঐরকম একটা ছোট বংশের, ফকিরা, বেলেহাজ পরিবারে বিয়ে দিতে পারি? মান সম্মান বলে কিছু একটা তো আছে নাকি?
বিয়ের মাধ্যমে একটা নতুন আত্মীয়তার বন্ধন তৈরির চাইতে বিয়েকে প্রতিরোধ করাই যেন থাকে তাদের টার্গেট। 'হ্যা' দিয়ে নয়, তাদের সবকিছু শুরুই হয় 'না' দিয়ে।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ের প্রস্তাবকে কথার মারপ্যাচে মারাত্মক রকম তিতা বানিয়ে ফেলা হয়। এমনকি শেষমেষ 'তরকারিতে ঝোলের পরিমাণ' নিয়ে কলহ করে বিয়ে ভেঙ্গে দেয়ার ঘটনাও দুর্লভ নয়।
শেষমেষ কোথাও না কোথাও বিয়ে তো হয়, কিন্তু তা যেন নেহায়েত বাধ্য হয়ে। আর তাতেও থাকে তিক্ততার নানা অভিজ্ঞতা।

এমনিতেই মানুষের খুঁত ধরার প্রবণতা ভালো নয়। বিয়ের ক্ষেত্রে পাত্র পাত্রীর কোন ত্রুটি থাকলে সেটা জেনে নেয়া ভালো। কিন্তু সেটা নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করা কোন সুস্থ মস্তিষ্কের কাজ নয়। ছোটখাটো বিষয় নিয়ে অহেতুক তিক্ততা সৃষ্টি করার কোন সুযোগ কাউকে দেয়া যাবে না।

মানুষের খুঁত থাকে, কিন্তু না খুঁজলে অনেক খুঁত সারাজীবনই থেকে যায় চোখের আড়ালে। মানুষকে ভালোবাসতে হলে তার খুঁত যত কম জানা যায় ততই ভালো। জেনেশুনে মানুষের দোষ অগ্রাহ্য করার মত মন ক'জনের থাকে?
মনে রাখতে হবে, বিয়ে হলে কিন্তু দুই পরিবার পরস্পরের আত্মীয় হবেন। আপনার আত্মীয়ের অপমান কি আপনার অপমান নয়? যেসব তিক্ত মন্তব্য করে আজ পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছেন, সেই তিক্ততার কিছুটা কি পাত্র-পাত্রীদের মনেও বিরুপ প্রভাব ফেলছে না? সেটা কি ভবিষ্যতে তাদের মধ্যে গভীর আন্তরিক সম্পর্ক সৃষ্টিতে প্রতিবন্ধক হবে না?
সবচেয়ে বড় কথা, একটা স্থায়ী বন্ধন কি কোনোভাবেই তিক্ততা দিয়ে শুরু করা উচিত?

(বিবাহ কথন-২৩) চলবে........

শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৭

মহামানবের গল্প

টেবিলের ওপর খামটা রেখে সামনের চেয়ারে বসে আছে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের প্রতিনিধি। বেশ ফুলে ফেঁপে আছে খামটা। ভেতরে কত টাকা আছে, এখনো জিজ্ঞেস করেননি ডাঃ রফিক। কিন্তু এমাউন্টটা যে একেবারে নগন্য নয়, সেটা আন্দাজ করতে অসুবিধা হয় না।

এর আগে অনেকবার এরকম খামের প্রলোভন নিঃসংকোচে প্রত্যাখ্যান করেছেন ডাঃ রফিক। কিন্তু আজ প্রত্যাখ্যান করতে পারছেন না সহজে। গত কয়েকদিনে যে অভিজ্ঞতা তাঁর হয়েছে, তাতে একা একা এই সততার অহংকার নিয়ে কতদিন চলতে পারবেন তা নিয়ে আজ তিনি বড্ড সন্দিহান।

কয়েকদিন আগে পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলেন। নিয়ম অনুযায়ী সব কাগজপত্রই রেডি করে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে মনে হলো, তিনি বোধহয় পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্তও পড়েন নাই। এটা এভাবে কেন লিখেছেন, এখানে আরেকটা সিল লাগবে, কাল আসেন। বারবার নানা ঝামেলা করতে লাগলো তারা। দারোয়ান কানে কানে বললো, স্যার এত ঝামেলা করতেছেন কেন? দুই হাজার টাকা দেন। আপনের আর কিছু করতে হবে না। 

বাবার পেনশন আটকে আছে বহুদিন। গত সপ্তাহে গিয়েছিলেন অবসর বোর্ডে। সেখানেও তাকে যথেষ্ট পরিমাণে ঘুষ দিতে হয়েছে। ঘুষ না দিয়ে বহুদিন অপেক্ষা করেছেন। বাবারও বয়স বাড়ছে। টাকাটা হাতে পেলে বাবা তার ইচ্ছামত কিছু খরচ দান খয়রাত করতে পারতেন। কিন্তু এভাবে চললে হয়তো বাবা আর টাকাটা দেখে যেতে পারবেন না। বাধ্য হয়ে বখশিষের নামে ঘুষ দিতে হলো সেখানে।

ভেবেছিলেন নিজের এলাকায় নিজেই একটা ছোট হাসপাতাল করবেন। এত টাকা কোথায় পাবেন? এক বন্ধুর পরামর্শে ঋণের জন্য একদিন গেলেন ব্যাংকে। ব্যাংকের ম্যানেজার ঋণ দিতে রাজী হয়েছিলেন। কিন্তু একটা শর্তঃ ঋণের ২% টাকা তাকে দিতে হবে।
হাসপাতালের স্বপ্নটা সেদিন সেখানেই ফেলে আসেন ডাঃ রফিক।

ছোট ভাই বিসিএস দিয়ে নিয়োগের জন্য সুপারিশ পেয়েছে। গত পরশু পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য থানা থেকে একজন এসআই এসেছিলেন। অন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে এসেছিলেন আরেকজন। দু'জনই বেশ মোটা অংকের টাকা দাবি করে গেছেন। এবার দিতেই হবে। নইলে তারা রিপোর্ট লিখে দিবেন মনের মত করে। এতবছর পড়াশোনা করে অর্জন করা একটা সরকারি চাকরি আটকে যাবে তথাকথিত নিরাপত্তা যাচাইয়ের নামে।
কয়েক বছর আগে নিজের বেলায় 'ঘুষ দেবেন না' বলে জেদ ধরেছিলেন ডাঃ রফিক। কিন্তু সেই জেদের ফলাফল ভালো হয়নি। ঘুষ না দেয়ায় তার ব্যাপারে রিপোর্ট দেয়া হয়েছিল- "রাষ্ট্রবিরোধি কর্মকান্ডে জড়িত'। তিনি বাদ পড়েছিলেন নিয়োগের সেই তালিকা থেকে।

এভাবে গত কয়েক বছরে প্রায় সবখানেই অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয়েছে তাঁকে। যখনই কোন প্রয়োজনে কোথাও যান, কেউ না কেউ দাঁত কেলিয়ে বলে 'আরে ভাই আপনারা ডাক্তার মানুষ, আপনাদের কি টাকার অভাব আছে? ডাঃ রফিকের মেজাজ বিগড়ে ওঠে। মনে হয়- খেতা পুরি সততার। টাকা আসবে কোত্থেকে? সব শালাই আছে টাকার ধান্দায়, এইবার আমিও নিমু সামনে যা আসে।
কিন্ত শেষমেষ পারেন না। প্রতিবারই তার হাত ফিরে আসে।
আজও পারলেন না।

যদি সমাজের পিশাচ কুলাঙ্গার দূর্নীতিবাজদের টাকা আলাদাভাবে নেয়া যেত, তাহলে তিনি অবশ্যই নিতেন। কিন্তু, হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এইসব টাকায় যে সেই কৃষকের টাকাটাও আছে, যার শেষ সম্বল ছিল গতকাল বিক্রি করা গরুটা।

পরিশিষ্টঃ
পুরো সমাজ যখন দূর্নীতিতে আকন্ঠ ডুবে আছে, তখন ডাক্তার একা সৎ থাকবে এইটা আশা করা বোকামী । তবুও তুলনামূলকভাবে সৎ ডাক্তারের সংখ্যাই বেশি। এ দেশে সবাই সবাইকে শোষণ করছে। এ যেন এক মহা শোষণচক্র। দিনরাত এতসব শোষণ বঞ্চনা হতাশা আর প্রলোভনের মাঝে দাঁড়িয়েও যেসব ডাক্তার কোনভাবেই কমিশন নেন না, কোনরকম অবৈধ আয় করেন না, তাদেরকে আমার মানুষ মনে হয় না। তারা প্রত্যেকেই আসলে একেকজন সত্যিকারের 'মহামানব'।

রবিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৭

নাগরদোলা

আশা নিরাশার দোলাচলে দুলছি আবিরাম
জীবনের নাগরদোলায়।
প্রতি ঘূর্ণনে প্রতিটি উত্থান পতনে
আজও ছ্যাৎ করে ওঠে বুকের ভেতর; শুধু
শৈশবের মত আনন্দ জাগে না আর।
হায়,
বড় পার্থক্য গড়ে গেছে ফেরারী সময়;
এই নাগরদোলা কোন ছেলেখেলা নয়
জীবন আজ কোন বৈশাখী মেলা নয়।


অস্থির এই নাগরিক জীবনে
দিনভর জীবিকার সংগ্রাম,
প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি,
জয় পরাজয়,
সন্দেহ সংশয় আর
আশা-নিরাশার দোলাচলে দুলছি অবিরাম-
জীবনের নাগরদোলায়।

শুক্রবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৭

বিয়েঃ যেন জীবন্ত পোষাক কেনা

বিয়ে করাকে একটা শার্ট কেনার সাথে তুলনা করা যায়। কারণ, আমাদের স্রষ্টা পবিত্র কুরআনে বলেছেন- হুন্না লিবাসুল্লাকুম ওয়া আনতুম লিবাসুন লাহুন্না। তোমরা (স্বামী-স্ত্রী) পরস্পর পরস্পরের পোষাক স্বরুপ।
এই আয়াতের ব্যাখ্যা দিয়ে পুরো সংসার জীবনকে ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু আমরা আজ শুধু ব্যাচেলর জীবনে এর প্রয়োগ নিয়ে কথা বলবো।
আমরা কাপড় কিনি আমাদের শরীরকে ঢাকার জন্য। শরীর খোলা রাখা হলো জংলীপনা, আদিমতা, অসভ্যতা, এবং পাশবিকতা, নির্লজ্বতা।
বিয়ের মাধ্যমে আপনি একটা জীবন্ত পোষাক খুঁজে নিতে যাচ্ছেন। এর উদ্দেশ্যও একই। আপনি আরো বেশি সভ্য হবেন, মানবিক হবেন, লজ্জাশীল হবেন, সব ধরণের নির্লজ্জ্বতা ও অশ্লীলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন।
পোষাক যেমন আমাদের বাইরের ধুলাবালি থেকে রক্ষা করে। স্বামী/স্ত্রী হয়ে আপনিও তেমনি একজন আরেকজনকে জীবনের সকল ঝড়ঝাপ্টা ধুলোবালি থেকে রক্ষা করবেন।
আপনি যখন বাজারে শার্ট বা প্যান্ট কিনতে যান, কী করেন? কীভাবে কেনেন? বিয়ের ক্ষেত্রেও সেভাবে চিন্তা করতে হবে।
** আপনি যখন কাপড় কিনতে যান, তখন প্রথমেই আপনাকে ঠিক করতে হয় আপনার বাজেট। আপনার সামর্থ। কারণ, বাজারে অনেক দামী কাপড় যেমন আছে, কমদামীও আছে। আপনার দরকার সেইটা, যেটা আপনার বাজেটে কুলোবে। আপনাকে যেতে হবে সেই দোকানে, যেখানে আপনার বাজেটের আওতায় কাপড় পাওয়া যাবে। দামী কাপড়ের দোকানে ঢুকে তো আপনার লাভ নেই, কিনতে পারবেন না। শুধু শুধু মন খারাপ হবে। যদি ভুল করে দামী কাপড়ের দোকানে ঢুকেও পড়েন, আপনাকে বেরিয়ে যেতে হবে। ওখানে আপনার সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না।
বিয়ের ক্ষেত্রেও আপনাকে আপনার লেভেলের পাত্র বা পাত্রীর খোঁজ করতে হবে। প্রস্তাব দিতে হবে। অন্যথায় শুধু কষ্টই বাড়বে। আপনি আপনার পছন্দমত পাত্রী/পাত্র পেলেও বিয়ে করতে পারবেন না।
** আপনার বাজেটের মধ্যে আপনি কোন কাপড়টা কিনবেন? আপনি প্রথমেই দেখবেন কাপড়টা আপনাকে মানায় কিনা!! ভালো লাগে কিনা!! তারপর দেখেন যে সেটা আপনার সাইজের কিনা। খুব সুন্দর প্যান্ট, কিন্তু কোমড় তিন ইঞ্চি বড়, নিবেন? খুব সুন্দর শার্ট, দুই সাইজ ছোট, নিবেন? নিবেন না।
অর্থাৎ আপনাকে আপনার শরীরে ফিট হয় এমন কাপড়ই নিতে হবে। নইলে আপনি সেটা পরে আরাম পাবেন না। স্বস্তি পাবেন না। বেশিদিন পরতে পারবেন না।
ইসলামে এইটাকে বলে কুফু। অর্থাৎ দামে, এবং সাইজে পোষাককে আপনার সাথে মানানসই হতে হবে।
এইটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনাকে অবশ্যই এমন কাউকে বিয়ে কিরতে হবে যার সাথে আপনার মনের মিল হবে। চিন্তাধারার মিল থাকবে।
আপনি যদি হুজুর হন, ডিস্কো মেয়ে বিয়ে করে সংসার করতে পারবেন না। আপনি যদি ডিস্কো হন, নামাজী পর্দাশীল মেয়ে বিয়ে করে আপনি সুখী হবেন না। দু'জনের চিন্তাধারা দুরকম। একজনের কাজ আরেকজনের কাছে বিরক্তিকর মনে হবে। অতিষ্ঠ হয়ে যাবেন। বংশ, সম্পদ, সৌন্দর্য সবকিছুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিকতার মিল।
খুব সুন্দর শার্ট, সাইজে না মিললে কিনবেন? কিনে পরতে পারবেন? দামী শার্ট, সাইজে না মিললে পরবেন? না।
বংশের কুফু সম্পর্কে অনেকে জয়নব (রাঃ) এবং জায়েদ (রাঃ)এর বিবাহ বিচ্ছেদের উদাহরণ দেন। বলেন যে, বংশের সমতা খুব প্রয়োজনীয়। তাদের জন্য পাল্টা উদাহরণ হলোঃ হযরত বেলালের (রাঃ) স্ত্রী ছিলেন আব্দুর রহমান ইবনে আওফের বোন। আর এটাতো সবারই জানা যে আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) ছিলেন কুরাইশ বংশের ধনাঢ্য ব্যক্তি। তার বোন কী করে বেলালের (রাঃ) মত কালো হাবশি (প্রাক্তন) গোলামের সাথে সংসার করে? এটাই হলো সেই মনের মিল, চিন্তাধারার মিল, যার কথা আমি বারবার বলতে চাইছি। জায়েদের সাথে জয়নবের বিচ্ছেদের কারণ বংশমর্যাদার পার্থক্য নয়, ছিল মানসিকতার অমিল। আর তাছাড়া এই ক্ষেত্রে আল্লাহর ইচ্ছাই ছিল ভিন্ন।
** বাজারে তো অনেকে কাপড় আছে। সব কাপড় কি আপনার ভালো লাগে? না। আপনি সেটাই কেনেন যেটা আপনার মনে ধরে। যেটা আপনার ভালো লাগে। হয়তো অন্য কারো চোখে সেটা সুন্দর না। অন্যদিকে যেসব শার্ট আপনি পছন্দ করেন নি, সেগুলোও কিন্তু অবিক্রিত থাকবে না। আপনার চোখে যেটা সুন্দর ছিল না, অন্য একজনের চোখে সেটাই হবে অনেক সুন্দর। যে শার্টটা আপনাকে ফ্রি দিলেও নিতেন না, সেটাই অন্য কেউ কিনে নিয়ে যাবে যথাযোগ্য দামে, অনেক খুশিমনে। তার মানে আপনি কাউকে অপছন্দ করলেন মানেই এইনা যে তিনি খারাপ। কিংবা আপনাকে কেউ অপছন্দ করলেই তার অর্থ এই না যে আপনি খারাপ। বরং বিষয়টা আসলে ম্যাচিং এর। কেউ আপনাকে পছন্দ করেনি বা আপনি কাউকে পছন্দ করেননি মানে তার সাথে আপনার ম্যাচিং হয়নি। নাথিং এলস। একজনের চোখে আপনি সুন্দর নন, কিন্তু অন্য একজনের চোখে হয়তো আপনিই সবচেয়ে সুন্দর। অন্য একজন আপনাকে গ্রহণ করবে আপনার যথাযোগ্য দামেই, যথাযোগ্য মর্যাদায়।
** এক মার্কেটে আপনার পছন্দের বা মাপের শার্ট না পেলে আপনি কী করেন? অন্য মার্কেটে যান না? সেইম হেয়ার। একজনের সাথে ম্যাচিং হচ্ছে না, আরেকজনের খোঁজ করুন। হয়তো ম্যাচিং হবে। হবেই হবে।
বাজারে সবচেয়ে হ্যাংলা মানুষটার জন্য যেমন শার্ট আছে, সবচেয়ে মোটা মানুষটার জন্যেও শার্ট আছে। আল্লাহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়। আপনার ম্যাচিং এর জন্য শার্ট আল্লাহ তৈরি করে রেখেছেন, নো ডাউট।
** ধরুন আপনি একটা শার্ট খুব পছন্দ করলেন, কিন্তু দোকানদার আপনার কাছে বিক্রি করবে না। সে অনেক বেশি দাম চেয়ে বসলো। আপনি কী করবেন? কিছু করার নেই। দোকানদার না দিলে কী করার আছে? মুভ ফরোয়ার্ড।
আপনি আপনার সাধ্যে যা কুলায় সেই দামটা বলে দিন, দোকানদার যদি না দেয়, রিকুয়েস্ট করতে পারেন। তবুও না দিলে মনে করুন ওটা আপনার জন্য নয়। আপনি নিশ্চয় ছিনতাই করবেন না, কারণ আপনি একজন ভদ্র মানুষ। ছিনতাইকারি নন।
এক দোকানে পছন্দ হয়েছে মানে এই নয় যে অন্য দোকানে অন্য কোন শার্ট আপনার পছন্দ হবে না। এগিয়ে যান, খুঁজুন, পেয়ে যাবেন।
*** শার্ট কেনা সম্পর্কে বলার আছে আরো অনেক কিছুই। কিন্তু সব কথা এখন বলা যাবে না। এখন বললে ছোট মুখে বড় কথা হয়ে যাবে। আর তাছাড়া এমন অনেক কথা আছে যা বললে বিবাহিত সমাজের ভাইয়া আপুরা আমার পিঠের চামড়া আস্ত রাখবে না। যা-ই বলেন না কেন, বিয়ের আগেই আমি আমার পিঠের চামড়া হারাতে চাই না :P :P :D
(বিবাহ কথন-২২)

বৃহস্পতিবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৭

আত্মঘাত

মরীচিকা আমাকে করেছে সর্বস্বান্ত
আর
আমাকে প্রতারিত করে চলেছে নিয়ত
আমারই সরলতা।

আত্মার আত্মীয় আমারে করেছে আত্মসাৎ;
বিশ্বাসঘাতকতা করেছে আমার
বিশ্বাসী সহচর।

আমাকে হতাশ করেছে বারবার
আমারই আশার প্রদীপ।
আমারই ধনুকের তীর, বিদ্ধ করেছে এসে
আমারই হৃদপিন্ডে।

এই রক্তাক্ত হৃদয় নিয়ে
আমি কতদূর যেতে পারি?

শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭

না না চাইনা, না না চাইনা, কোনো রম্ভা উর্বশী...

এইটুকুই তো দাবি আমার এইটুকু দাবি
বউতো হবে লক্ষ্মীমন্ত লাখ টাকার চাবি..
না না চাইনা, না না চাইনা, কোনো রম্ভা উর্বশী...
শুধু মেয়ের বাবার ব্যাংক ব্যালেন্সটা হতে হবে বেশি..

নচিকেতার গানে উঠে এসেছিলো বিয়েকে কেন্দ্র করে এই উপমহাদেশের একশ্রেণীর মানুষের অর্থলিপ্সা। এইযে সবাই লক্ষ্মী বউ চায়, এইটার পেছনেও সেই অর্থলিপ্সাই প্রধান, কারণ হিন্দু ধর্ম মতে লক্ষ্মী হলো সম্পদের দেবতা। লক্ষ্মী বউ শব্দটাও সেখান থেকেই এসেছে।

এই অর্থলিপ্সাকে আবার কেউ কেউ উৎসাহ ও বৈধতা দিতে চায়। তারা বলে- "If your Father is Poor, it's not your Fault... But if your Father in Law is Poor, it's definitely your Fault...!!!

অর্থলিপ্সা আর কূপমন্ডুকতার কারণে আজও বাংলাদেশের বেশিরভাগ জায়গায় টিকে আছে অভিশপ্ত পণ প্রথা। কেউ কেউ সরাসরি যৌতুক চায়, কেউ চায় আকারে ইঙ্গিতে।

কোথাও কোথাও মেয়ের বাপ মা দাবির মুখে যৌতুক দিতে বাধ্য হয়, কোথাও বাধ্য হয় 'খুশি হয়ে' দিতে। কারণ, মেয়ের বাপে 'খুশি হয়ে' মেয়েজামাইকে কিছু না দিলে সেই মেয়েকে শ্বশুর বাড়িতে নিজের বাপ মা সম্পর্কে প্রতিনিয়ত নানান অপমানজনক কথাবার্তা হজম করতে হয়।

আর তাই, মেয়ের বিয়ে নিয়ে বাবা মাকে চিন্তিত থাকতে হয় মেয়ের জন্মের পর থেকেই! কেউ কেউ মেয়ের জন্মের পরেই ব্যাংকে ডিপিএস একাউন্ট খোলেন, কেউ গাছ লাগান, কেউ স্বর্ণ কিনে রাখেন। কেউ মনে মনে ঠিক করেন, কোন জমিটা বিক্রি করবেন। কারণ মেয়ের বিয়ে দিতে গেলেই লাগবে লক্ষ লক্ষ টাকা। কীভাবে মেয়ের বিয়ে দেবেন সেই চিন্তায় অনেক বাবারই অর্ধেক চুলে পাক ধরে যায় অকালেই।
নিজের মেয়ের বিয়েতে যৌতুক দিচ্ছে, আবার ছেলের বিয়েতে যৌতুক নিচ্ছে। নিজের বিয়েতে নিচ্ছে, আবার বোনের বিয়েতে দিচ্ছে। এ এক ভয়ংকর অভিশপ্ত দুষ্টচক্র। আর এই দুষ্টচক্রের পার্ট শুধু অশিক্ষিতরা নয়, তথাকথিত শিক্ষিত জনগোষ্ঠিও।
এই অবস্থার পরিবর্তন করতেই হবে। সেজন্য এগিয়ে আসতে হবে এই প্রজন্মের ব্যাচেলরদের। এই কুপ্রথাকে যারা চ্যালেঞ্জ করতে চান, বিয়েকে যারা সহজ করতে চান, আমি তাদেরকে সাহসী হবার আহবান জানাই। বিয়েকে কঠিন করা হয়েছে বলে যারা গার্জিয়ানদের ওপর ক্ষুব্ধ, তাদের জন্যেও একই কথা। শুধু গার্জিয়ানদের দোষারোপ করলে হবে না, নিজেকেও বদলাতে হবে। কমিয়ে আনতে হবে চাহিদা ও প্রত্যাশা। ধনীর দুলালী নয়, আপনার নিজের ফ্যামিলির চেয়ে তুলনামূলক দরিদ্র পরিবারে বিয়ে করুন। বিয়েও অনেক সহজ হবে, নিজেও সম্মানিত হবেন।

কোনভাবেই যৌতুক নেবেন না। শ্বশুরের কষ্ট হয়- এমন কোনকিছু 'খুশি হবার' নাম করে দিলেও নেবেন না।
কী হবে কিছু টাকার যৌতুক না নিলে? কেন নিজেকে আজীবনের জন্য ছোট করবেন? নাহয় এখন একটা ফ্রিজ নাই থাকলো আপনার নতুন সংসারে! এক বছর টাকা জমান। নিজেই কিনতে পারবেন। একটা ৪৮ ইঞ্চি ফ্ল্যাট টিভি নাইবা থাকলো! কিছুদিন অপেক্ষা করুন। একদিন নিজেই কিনতে পারবেন। দামী ব্র‍্যান্ডের ড্রেসিং টেবিল নাইবা থাকলো! নিজের ঘাম ঝরানো টাকায় একটা আয়না কিনে আনুন না! সেই আয়নার পেছনেই হয়তো আছে ক্রনিকলস অব নার্নিয়ার মত সুখের সাগর।

নতুন টাইলস লাগানো ঝকমকে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়ায় কুলাতে পারছেন না, একটা টিনশেড বাসাই নাহয় খুঁজে বের করুন। কিংবা, দুইহাজার স্কয়ার ফিটের বাসা না হোক, দুটো খুপরি ঘর তো পাবেন!
আর সেই ঘরের বারান্দায় বসে, খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে, বউয়ের হাতে হাত রেখে গলা ছেড়ে গেয়ে উঠুন হেমন্তের পুরনো গান-

নীড় ছোট... ক্ষতি নেই...
আকাশ তো বড়ো...
হে মন বলাকা মোর, অজানার আহবানে..
চঞ্চলও পাখা মেলে ধরো...
দেখবেন, সুখ এসে খেলা করছে আপনাদের চোখের তারায়।
(বিবাহ কথন-২১)

বৃহস্পতিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৭

অন্য বসন্তে

এই বসন্তে নাইবা হলো দেখা
না হোক,
দেখা হবে ঠিক জেনো
অন্য বসন্তে....
এই বসন্তে হলো না পরিচয়
না হোক,
আমাদের জানা শোনা হবে
অন্য বসন্তে...

সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০১৭

গার্জিয়ানস হিপোক্রেসি

* ছেলের বয়স যদিও ৩৫, মেয়ের বয়সটা কিন্তু হওয়া চাই ১৯!!! যদি কোনভাবে মেয়ের বয়সটা ২৫ পার হয়, তাহলেই ছেলের গার্জিয়ানদের মাঝে কানাঘুষা!! আ আ মেয়ের বয়সটা বেশি হয়ে যায় না মতির বাপ?
--
* ছেলে/মেয়ে নিজেই পাত্র/পাত্রী পছন্দ করেছে? যতই যোগ্য হোক সেই ছেলে/মেয়ে একটা পঁচা। তার দোষ বর্ণনা করতে গেলে একটা মহাকাব্যে কুলোবে না।
* বন্ধুর ছেলে? বান্ধবীর মেয়ে? আহা! এমন ছেলে সাত আসমানে আর নাই! আহা! এমন মেয়ে সারা দুনিয়া খুঁজে আনো দেখি একটা, হু!! দেখতে হবে না! আমার বোনের মেয়ে যে!!
--
* যখন মেয়ের বাপঃ ছেলেরা তো আমাদের চেয়ে গরীব। গরীবের ঘরে মেয়ের বিয়া দিমু না।
* যখন ছেলের বাপঃ মেয়েরা তো আমাদের চেয়ে গরীব। গরীবের ঘরে ছেলের বিয়া দিমুনা।
(উহাদের কে বুঝাইবে, এই দুনিয়ার প্রত্যেকেই তো কারো না কারো চেয়ে গরীব!!)
--
* যখন মেয়ের বাপঃ কালা ছেলের সাথে মেয়ের বিয়া দিমু না। ছেলের নাক বোঁচা। বিয়া দিমু না।
* যখন ছেলের বাপঃ পুরুষ মানুষের আবার চেহারা কী?
--
* যখন মেয়ের গার্ডিয়ানঃ ফকিরের গোষ্ঠী বিয়া করতে আসছে ক্যান? মোহরানা বিশ লাখের নিচে এক পয়সা কম হইতে পারবো না। মাইয়া কি গাঙের জলে ভাইস্যা আসছে??
(মনে হয় পোলায় গাঙের জলে ভাইস্যা আসছে!)
* যখন ছেলের গার্ডিয়ানঃ বউমা তো আমার মা ফাতেমা। আহা! আসেন বেয়াই, আমরা মোহরে ফাতেমীর ব্যবস্থা করি!!!
(বউমা নাহয় মা ফাতেমা হইলো, কিন্তু পুত্রধন যে হযরত আলী না, সেইটা আর খেয়াল নাই)
--
* নিজের ছেলের বিয়াঃ বেশি খরচ করন যাইবো না। হাদীছে আছে- যে বিয়ার খরচ কম হয়, সেই বিয়ায় বরকত বেশি।
* অন্যের ছেলের বিয়াঃ মকবুল সাব কী কিপ্টার কিপটা দেখছেন! ছেলের বিয়া দিলো, একটু ধুমধামও করলো না!!
--
বিয়ার পরঃ
* মেয়ের বাপ-মাঃ জামাইটা কত্ত ভালা, আহা! আমার মেয়ের কথার বাইরে কোন কাজই করেনা।
* ছেলের বাপ-মাঃ ছেলেটা আর মানুষ হইলোনা! খালি বউয়ের কথায় ওঠে আর বসে!! আগে জানলে বিয়াই দিতাম না। বউটা আমার ছেলের মাথাটা খাইয়া ফেলাইছে গো খাইয়া ফেলাইছে....!!!! :v :v 

(বিবাহ কথন-২০)  

রবিবার, ৯ এপ্রিল, ২০১৭

যদি তুমি আসো

হৃদয়ের কথা বলে আজ আর লাভ নেই।
বহু আগেই বন্ধক দিয়েছি তাকে
সময়ের কাছে।
বিনিময়ে নিয়েছি এক রুক্ষ পৃথিবীর
সব জঞ্জাল।


যদি তুমি আসো,
হয়তো একসাথে সাফ করা যাবে সবকিছু
পূর্ণ দু'হাতে;
শোধ করে পৃথিবীর সব ঋণ
হয়তোবা একদিন,
ফিরিয়েও নেয়া যাবে হারানো হৃদয়।

শনিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৭

কে আছে দয়ালু কৃষক?

গাছে গাছে ফিরেছে নতুন কুঁড়ি
আম গাছ ছেয়ে গেছে হলুদ মুকুলে।
অথচ
ভয়াবহ রুক্ষতা গ্রাস করে আছে আজও
আমার হৃদয়।

বিগত শীতের দিনে শুকিয়ে গেছে হৃদয়ের
সব নদী, খাল বিল। ভূগর্ভস্থ পানির মত
ক্রমাগত নিচে নেমে গেছে হৃদয় তারল্য। আর
খরায় চৌচির হয়ে গেছে
মানব জমিন।
 
চৈত্রের বর্ষণে মাটি হবে কি নরোম আবার?
আছে কেউ দয়ালু কৃষক? মায়াভরা প্রাণ? 
আবাদ করবে এই পতিত জমিন-
জাগাবে এখানে ফের ফসলী মাঠের ঘ্রাণ!

বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল, ২০১৭

ধৈর্য

মাটি কামড়ে পড়ে থাকতে হবে
ঝড়ের সময়টা;
একদিন কালবৈশাখী থামবেই থামবে।
তারপরেই
দেখা মিলবে
লন্ডভন্ড এক স্নিগ্ধ প্রকৃতির।
পশ্চিম আকাশে সাতরঙা রঙধনু।

বুধবার, ৫ এপ্রিল, ২০১৭

আজ কোন বৃষ্টিবিলাস নয়

বৃষ্টির রিমঝিম নয়, আজ আমার কানে শুধুই
বজ্রের শব্দ। শিকারী তীরের মত যেন
এইসব বজ্রপাত-
বিঁধছে এসে ঠিকঠিক হৃদয়ের গালিচায়।
এই বজ্রবৃষ্টি যেন আমারই প্রতিচ্ছবি।
শরীর ভেজেনা এই বৃষ্টিধারায়,
চোখও যায়না রাখা খোলা জানালায়।
বিজলি ঝলক আর ক্রমাগত বজ্র আওয়াজ,
এ হৃদয়ে শুধু আজ কাঁপন ধরায়।
পথিক,
#আজ_কোন_বৃষ্টিবিলাস_নয়