এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই, ২০১৪

কে কার মত ?

ভরা বর্ষায় এখানেও আসে দুকূল ছাপিয়ে ঢেউ
খরস্রোতে ভেসে যায় খড়কুটো গাবগাছ ভেলা
তপ্ত বৈশাখে এখানেও থাকে টলটলে হাঁটুজল
এখানেও চলে এপাড় ভেঙ্গে ওপাড় গড়ার খেলা ।

এইতো জীবন বাঁকে বাঁকে চলা ছোট্ট নদীর মত 
কখনোবা মহাউদ্ধত সে কখনো বিনয়াবনত ।

উভয়েই তো অসীমের পানে ছুটে চলে নিরবধি
নদীর মত কি জীবন, নাকি জীবনের মত নদী  ?  

মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই, ২০১৪

ঈদ মোবারক ঈদ

মন ভালো নেই তবুও জানাই
ঈদ মোবারক ঈদ
দুআ করো সবার জন্য
বন্ধু ও সুহৃদ ।

ফিলিস্তিনে মরছে মানুষ
ইজরায়েলের বোমায়
গাজা গেল রক্তে ভেসে
বিশ্ববিবেক ঘুমায় ।

চীন হতে ঐ আসছে ভেসে
উইঘুরদের কান্না
কেমন করে খুশি মনে
করবো সেমাই রান্না ?

আরাকানের মুসলিমদের
শুনছি আহাজারি
কেমন করে ওদের ছাড়া
ঈদ করতে পারি ?

পথে আজো কত অসহায়
বৃদ্ধ শিশু নারী
পরনে তাদের ছেঁড়া জামা
ছিন্ন তালি শাড়ি ।

ছেলেহারা মায়ের কান্না
আসছে হাওয়ায় ভেসে
ঈদের খুশি কোথায় বলো
মিশর বাংলাদেশে ?

মন ভালো নেই তবুও জানাই
ঈদ মোবারক ঈদ
দোয়া করো সবার জন্য
বন্ধু ও সুহৃদ ।

রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০১৪

ঈদুল ফিতরঃ কিছু জিজ্ঞাসা

> ঈদের নামাজের পর খুৎবা কি শুনতেই হবে ?

- মুহাম্মাদ ইব্ন ইয়াহ্য়া (র) .......... আব্দুল্লাহ ইব্ন সায়িব (রা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সা) ঈদের সালাত আদায় শেষে বললেন, যে চলে যাওয়া ভাল মনে করে সে যেন চলে যায়, আর যে খুৎবা শ্রবণের জন্য অপেক্ষা করা ভালো মনে করে সে যেন অপেক্ষা করে।
( সুনানে নাসাঈ )


> ঈদের দিন কি খেলাধুলা আনন্দ উল্লাস করা যাবে ?

- অবশ্যই যাবে । (তবে ইসলামের সীমারেখা অতিক্রম করা যাবে না ।)

- কুতায়বা ইব্ন সাঈদ (র) ............ আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা) একদিন তাঁর কাছে গেলেন, তখন তাঁর সামনে দুইটি বালিকা দফ্ বাজাচ্ছিল। আবূ বকর (রা) তাদের নিষেধ করলেন। নবী (সা) বললেন, তাদের নিষেধ করো না। কেননা প্রত্যেক জাতির জন্যই একটি আনন্দ স্ফূর্তির দিন থাকে। (সুনানে নাসাঈ)

- মুহাম্মাদ ইব্ন আদম (র) ............ আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, কয়েকজন হাবশী এসে ঈদের দিনে নবী (সা)-এর সম্মুখে খেলাধূলা করতে লাগল। তিনি আমাকে ডাকলেন। আমি নবী (সা)-এর কাঁধের উপর দিয়ে তাদের খেলা দেখতে লাগলাম । (সুনানে নাসাঈ)


> মেয়েরাও কি ঈদের নামাজে যাবে ?

- হ্যা । ( অবশ্যই যথাযথভাবে পর্দা রক্ষা করে । )

- আমর ইব্ন যুরারাহ (র) .......... হাফসা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মে ‘আতিয়্যা (রা) 'আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হোক' বলা ব্যতীত রাসূলুল্লাহ (সা)-কে স্মরণ করতেন না। একবার আমি তাকে বললাম, তুমি কি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে এরূপ বলতে শুনেছ? সে বলল হ্যাঁ; তাঁর উপর আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছিলেন, কিশোরী, যুবতী এবং ঋতুমতিগণ যেন বের হয়। এবং তারা যেন ঈদগাহ এবং মুসলামানদের দোয়ায় উপস্থিত থাকে আর ঋতুমতিগণ যেন সালাতের স্থান থেকে দূরত্বে অবস্থান করে । (সুনানে নাসাঈ )

- আমরুন নাকিদ (র)......উম্মে আতিয়্যা (রা-) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা) আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সাবলিকা মেয়েদেরকে, ঋতুমতীদেরকে ও পর্দানশীলদেরকে ঈদের সালাতে যাওয়ার জন্য বের করতে । তবে ঋতুমতী মহিলারা সালাতে অংশ-গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে । তারা কল্যাণ কর্ম ও মুসলিমদের দুআতে অংশ:গ্রহণ করবে । আমি আরয করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমাদের কারো ওড়না থাকে না (সে কি করবে?) তিনি বললেন, একে অন্যকে ওড়না পরিধান করতে দিয়ে সাহায্য করবে । ( সহীহ মুসলিম )


> গরীবদেরকে ফিতরের সদকা কখন দেয়া উচিৎ ?

- ঈদের নামাজের উদ্দেশ্যে বের হবার আগেই ।
- আদম (র)... (আবদুল্লাহ) ইব্ন ‘উমর (রা) থেকে বর্ণিত যে, নবী (সাঃ) লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই সাদকাতুল ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন । ( সহীহ বুখারী )


> ঈদুল ফিতরের সকালে কিছু খাওয়া কি উচিৎ ?

- হ্যা ।
- মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রাহীম (র:) …… আনাস ইবনে মালিক (রা:) খেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা:) ঈদুল ফিতরের দিন কিছু খেজুর না খেয়ে বের হতেন না। অপর এক রিওয়ায়েতে আনাস (রা:) নবী করীম সা: থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি তা বেজোড় সংখ্যক খেতেন। ( সহীহ বুখারী )

> কীভাবে ঈদগাহে যাওয়া উচিৎ ?

- জাবির (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ঈদের দিন নবী (সা) এক রাস্তায় ঈদগাহে যেতেন এবং আরেক রাস্তায় সেখান থেকে ফিরতেন। (বুখারী)


> ঈদের নামাজের জন্য কি আযান বা ইকামাতের প্রয়োজন আছে ?

- না ।
- মুহাম্মাদ ইবন রাফি (র)......ইবন আব্বাস (রাঃ) ও জাবির ইবন আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত । তারা বলেন- ফিতরের দিবস ও আযহার দিবসে আযান দেয়া হত না । ইবন জুরায়জ (র) বলেন, কিছুক্ষণ পর আমি তাকে {আতাকে} এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম । তিনি আমাকে বললেন যে, জাবির ইবন আব্দুল্লাহ আনসারী (রাঃ) আমার কাছে রিওয়ায়াত বর্ণনা করেছেন যে, ঈদুল ফিতরের সালাতের জন্য কোন আযান নেই । ইমাম (হুজরা থেকে) বের হওয়ার মুহূর্তেও নয়, পরেও নয় । ইকামতও নেই, নেদা-আহবান কিছুই নেই । সেদিন আহবানও নেই, ইকামতও নেই । (সহীহ মুসলিম )


> ঈদের নামাজে কোন সুরা তেলাওয়াত করা উচিৎ ?

- সুরা আল আ'লা এবং সুরা আল গাশিয়াহ , ক্রম ৮৭, ৮৮ ।

- কুতায়বা (র) ........... নু’মান ইব্ন বাশীর (রা) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা) উভয় ঈদ এবং জুমুআর সালাতে ‘‘সাবিব হিসমা রাবিবকাল আ’লা’’ এবং ‘‘হাল আতাকা হাদীছুল গাশিয়া’’ পাঠ করতেন। (সুনানে নাসাঈ)


> একই দিনে ঈদ এবং জুমআ হলে জুমার নামাজ কি পড়তে হবে ?

- জুমার নামাজ না পড়লেও চলবে ।
- মুহাম্মাদ ইব্ন বাশ্শার (র) ........... ওয়াহাব ইব্ন কায়সান (রা) বর্ণনা করেন যে, ইব্ন যুবায়র (রা)-এর যুগে একবার ঈদ এবং জুমুআ একত্রিত হয়ে গিয়েছিল। তিনি সূর্য উপরে না উঠা পর্যন্ত ঈদের সালাত আদায় করার জন্য বের হতে বিলম্ব করলেন। অতঃপর বের হলেন এবং খুৎবা দিলেন এবং খুৎবাকে দীর্ঘ করলেন, তারপর নীচে অবতরণ করলেন এবং সালাত আদায় করলেন। আর সেদিন লোকদের নিয়ে জুমুআর সালাত আদায় করলেন না। এ ঘটনা ইব্ন আব্বাস (রা)-এর সমীপে উল্লেখ করা হলে তিনি বললেন, তিনি সুন্নাত মতই করেছেন। (সুনানে নাসাঈ)


- আমর ইব্ন আলী (র) ........... ইয়াস ইব্ন আবূ রমলা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি মু’আবিয়া (রা)-কে যায়দ ইব্ন আরকাম (রা)-কে প্রশ্ন করতে শুনেছি, ‘‘আপনি কি রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সাথে ঈদ এবং জুমুআর সালাতে শরীক ছিলেন?’’ তিনি বললেন, হ্যাঁ; তিনি ঈদের সালাত দিনের শুরুতে আদায় করে ফেলেছিলেন। অতঃপর (গ্রামের অধিবাসীদেরকে) জুমুআর সালাতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন ।
(সুনানে নাসাঈ)


> কোন কারণে ঈদের নামাজের জামায়াত মিস হয়ে হয়ে গেলে কী করতে হবে ?

- দুই রাকাত নামাজ আদায় করে নিতে হবে । ( সহীহ বুখারী )

চাইনা এতটা আলো

চাইনা এতটা আঁধার
যে আঁধারে পথ ভুলে যাই
পা বাড়াই
অনন্ত অগ্নিকুন্ডপানে  ।
চাইনা এতটা আলো
এতটা তীব্র রোদ 
যে রোদে ঝলসে যায় চোখ
রোদচশমা ছাড়া 
যায়না মাপা পথের দূরত্ব । 

কিছুটা আলো থাকুক
কিছুটা অন্ধকার
সুবহে সাদিক কিংবা
গোধূলীর মত  ।

বয়ে যাক নাতিশীতোষ্ণ হাওয়া
যাতে নির্বিঘ্ন হয়
আমার এই
নিরন্তর পথ হেঁটে যাওয়া । 

ওরা কী চায় ?

ঢাকার অনেক স্কুলে ক্লাস এইটের শিক্ষার্থীদের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে 'নিজেকে জানো' নামক বই । এই নিজেকে জানা মানে সক্রেটিস এর Know Thyself না, এর মানে ছেলেমেয়েদের শরীর সম্পর্কে জানা ! শরীর মানে আবার চোখ মুখ হাত পা পাকস্থলী ফুসফুস হার্ট এগুলো না, আমাদের দেশের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় মনে করে শরীর মানে যৌনতা । শরীর মানেই প্রজনন বিষয়ক কর্মকান্ড । এবং তারা মনে করে প্রতিটি শিশুকে জন্মের পরপরই এ বিষয়ে রগরগে বর্ণনাসমৃদ্ধ বই পড়িয়ে শিক্ষা দেয়া দরকার । যেহেতু বইটা আমি দেখিনি তাই ভয়ে আছি, বইয়ে সচিত্র বর্ণনা দেয়া হয়েছে কিনা ! আরো ভয়ে আছি, কোনদিন আবার স্কুল থেকে ছোটভাই বোনেরা এসে হাতে ডিভিডি তুলে দিয়ে বলবে , ভাইয়া তোমরা তো আমাদের কিছুই শেখাও নি । এই ভিডিও দেখে আমরা অনেক কিছু শিখেছি !

যাহোক , ছেলেমেয়েদের বিশেষ শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে কিছুটা শিক্ষা দেয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমিও মনে করি । কিন্তু সেটা হওয়া উচিৎ ছিল এভাবে- শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন কী কী বিপদ টেনে আনতে পারে, জীবনে কী ক্ষতি করতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক করা । ভীতি জাগানো । হওয়া উচিৎ ছিল কিশোর কিশোরীদের নৈতিক অবক্ষয় রোধের জন্য ধর্মীয় ও সামাজিক মোটিভেশন । কিন্তু তা না করে যে বই দেয়া হয়েছে, এটাকে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে যাতে করে ছেলেমেয়েরা অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক তৈরিতে আগ্রহী হয় । নিরাপদে অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারে । এমনকি একাধিক শারীরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে !

বইয়ের শিরোনামগুলো দেখলেই গা রি রি করে উঠবে । ক্রমানুযায়ী কয়েকটি অধ্যায়ের শিরোনাম- 'আকর্ষণ', ‘বন্ধুত্ব ও ভালবাসা’ , ‘ভালো লাগার পরের পর্যায়’, ‘দৈহিক সম্পর্ক’ (!) ।

এসব ব্যাপারে বলা হয়েছে- ছেলেমেয়ের পারস্পরিক ভালোলাগা স্বাভাবিক, বন্ধুত্ব হওয়া দোষের কিছু নয়, সে ভালোলাগা প্রকাশ করতে হবে চিঠি লিখে, শারীরিক সম্পর্ক তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক (!), একাধিক শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটু বেশি সতর্ক হতে হবে (!) , গর্ভসঞ্চার হলে নিকটস্থ এনজিওচালিত ক্লিনিকে যোগাযোগ করতে হবে ।
আর সতর্কতামূলক কথা বলা হয়েছে এটুকুই- তবে বিয়ের আগে এসবে না জড়ানোই ভালো !

# বইটির ‘বন্ধুত্ব ও ভালবাসা’ শীর্ষক অধ্যায়ে একটি শিরোনাম হলো ‘প্রেম করলে কেন ছেলেমেয়েরা ধরাধরি করে?’

(এটা কী ধরণের শিরোনাম ?)

অনেক বর্ণনার পরে শেষে বলা হয়েছে- কৈশোর হলো জীবন গড়ার সময়। এ বয়সে এসব করে তাই সময় নষ্ট না করাই ভালো।

(রগরগে বর্ণনার পরে এটুকু সতর্কবানী ? এতে করে শুধু সময় নষ্ট হবে ! আর কোন সমস্যা নেই ? )

# ‘পরিস্থিতির চাপে যদি দৈহিক মিলনের সম্ভাবনা দেখা দেয় তবে আমি সে অবস্থায় কী করবো?’
-যদি কারো মনে হয় যে তার প্রেমিক এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে তুলতে আগ্রহী, তবে মেয়েটাকে এ প্রস্তাবে সায় না দিয়ে বড় কারো সাথে বিষয়টি আলোচনা করা ভালো। যদি তা না করা যায় আর দৈহিক সম্পর্ক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে গর্ভধারণ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য কোনো অস্থায়ী পদ্ধতি ব্যবহার করা জরুরি। এরপরও যদি কোনো সমস্যা হয় তবে উপদেশের জন্য তুমি কাছের কোনো ক্লিনিকে যেতে পারো। ( বিভিন্ন এনজিও পরিচালিত বেশ কয়েকটি ক্লিনিক/সেবা সংস্থার তালিকা )।

# অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ বিভিন্নভাবে ঘটতে পারে, যেমন-চিঠি লিখে, দেখা করে, হাত ধরে বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরেকটু কাছাকাছি এসে। যৌন অনুভূতি প্রকাশ করা দোষের কিছু নয়, তবে সেটি হতে হবে দুইজনের সম্মতিতে, মার্জিত ও শালীনভাবে (!)

# অনেকের সাথে দৈহিক সম্পর্ক থাকলে কনডম ব্যবহার খুবই জরুরি ।

এই হলো পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে নেয়া সেই বইয়ের শিক্ষার কিছু নমুনা । এছাড়া এমন এমন বর্ণনা সেখানে দেয়া হয়েছে যা পত্রিকায় প্রকাশযোগ্য নয় বলে সংবাদে লেখা হয়েছে ।

এরকম একটা ব্যাপার নিয়ে লিখতে যাওয়াটাও সহজ কাজ না । এসবের প্রতিবাদ করতেও রুচিতে বাঁধে । কিন্তু বাধ্য হয়ে রুচিবোধকে নিচে নামাতে হলো । যদি এই কার্যক্রম থামানো না হয় , তাহলে ইন্ডিয়ার মত বাংলাদেশও অচিরেই ধর্ষণের দেশে পরিণত হবে । এখনই পত্রিকার পাতা খোলা যায়না । শুধু ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মূল্যবোধ বা রুচিবোধ রক্ষাই নয়, সামাজিক নিরাপত্তার প্রয়োজনেও এই উদ্যোগকে এখনই থামানো জরুরি । এই উদ্যোগের সাথে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা উচিৎ ।

যারা এই বই লিখেছে এবং ছাত্রছাত্রীদের সরবরাহ করেছে তাদেরকে সর্বনিম্ন কুকুর নামক ইতর প্রাণির সাথে তুলনা করা যায় । যদিও এরা আসলে আরো বড় রকমের বিকৃত রুচির অমানুষ ।

এদের নাম পরিচয় প্রকাশ্যে প্রচার করা উচিৎ । নিজেকে জানার আগে 'কুত্তাদেরকে জানো' । যাতে সুযোগ পেলেই দেশের মানুষ এদেরকে উত্তম মধ্যম সহকারে তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে পারে ।

শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০১৪

নারী নেতৃত্ব হারাম ? -১৭

সমসাময়িক খ্যাতিমান ইসলামী স্কলার ড. তারিক আল-সোয়াইদান নেতৃত্বের উপর একটি যুগান্তকারী বক্তব্য দিয়েছেন। চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় এক কনফারেন্সে তিনি এ বক্তব্য প্রদান করেন। 



নারী নেতৃত্বের বিষয় আসলে অনেকেই যথাসম্ভব বিরোধিতা করেন। তারা নারী নেতৃত্বের বিরোধিতা করার সময় যে হাদীসটি উল্লেখ করে থাকেন তা হলো –‘যারা নারী নেতৃত্বের অধীনে থাকে তারা সফল হতে পারে না’। কেউ যদি কোনো হাদীসের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই সে সংক্রান্ত সবগুলো হাদীসের খুঁটিনাটি জানতে হবে। নারী নেতৃত্ব সংক্রান্ত তিনটি বিষয় আলোচনার দাবি রাখে।
প্রথমত, উল্লেখিত হাদীসটির অনেকগুলো সংস্করণ আছে। দুর্বল হাদীস বাদ দিয়েও এই হাদীসটির২০টি সংস্করণ আছে যার প্রত্যেকটি সহীহ।হাদীসশাস্ত্র আনুযায়ী, যদি একই বিষয়ে হাদীসের দুইটি সংস্করণ থাকে, তাহলে দুইটি হাদীসের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যদি দুইটি হাদীসই সহীহ হয় তাহলে একটি গ্রহণ করে অন্যটিকে বাদ দেয়া যাবে না। যেমন, কুরআনে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা দাসদের মুক্ত করে দাও’। অন্য আর একটি আয়াতে একই বিষয়ে আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা মুসলিম দাস মুক্ত করে দাও’।এখন, এ বিষয়ে আমাদের উচিত হবে একজন মুসলিম দাস মুক্ত করার অর্থকে গ্রহণ করা। যখন কেউ মুসলিম দাস মুক্ত করবেন তখন তার সাধারণ অর্থে দাস মুক্ত করাও হয়ে যাবে। কিন্তু যদি কেউ অমুসলিম দাস মুক্ত করেন তাহলে তিনি অন্য আর একটি আয়াতের নির্দেশনা মানছেন না।
নারী নেতৃত্ব নিয়ে যে হাদীসটির কথা বলা হয়ে থাকে, সেই হাদীসের একটি সহীহ সংস্করণে কতগুলো সুস্পষ্ট শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমন, ‘মুলক’। আমরা জানি, ‘ওয়ালাও’ শব্দের অর্থ হলো কারো নেতৃত্বের অধীনে থাকা, আর ‘মালাকু’ শব্দের অর্থ হলো কোনো রাণীর অধীনে থাকা।হাদীসের ঐ বর্ণনায়একজন নারীর কোনো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকা নিয়ে বলা হয়েছে। সুতরাং এই হাদীসটির বরাতে কেউ নারীদেরকে সংসদ সদস্য কিম্বা বিচারক ইত্যাদি হতে বারণ করতে পারেন না। কারণ, যদি কেউ তা করার চেষ্টা করেন, তাহলে হাদীসের অন্য একটি সহীহ বর্ণনাকেঅস্বীকার করা হবে।
দ্বিতীয়ত, ইমাম বুখারী বর্ণিত এই হাদীসটির পিছনে একটি ঘটনা আছে। ঘটনাটি হলো, পারস্যকে সাসানাইড সম্রাটরা এক হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে শাসন করেছেন। যখন প্রথম খসরুর শাসন চলছিল, তখন রাজ্যের ভবিষ্যত কর্ণধর কে হবে তা নিয়ে ব্যাপক ষড়যন্ত্র শুরু হয়। এ নিয়ে প্রথম খসরু খুবই বিরক্ত ছিলেন। তিনি একদিন সবাইকে অবাক করে যুবরাজ এবং নিজেকে বাদ দিয়ে সাসানাইড রাজবংশের সকল পুরুষ সদস্যকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত দিলেন। তবে ভাগ্যক্রমে ইয়াযদেগারদ নামের একজন ছোট ছেলে বেঁচে যায়। পরবর্তীতে যাকে পারস্যের কিসরার রাজা বানানো হয়। মুসলমানরা যখন উমর (রা)-এর নেতৃত্বে কাদেসিয়ার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়, সে সময় তিনি পারস্য সাম্রাজ্যের রাজা ছিলেন।
যা হোক, ঘটনাক্রমে সম্রাটের মৃত্যুর আগেই যুবরাজ মৃত্যুবরণ করেন। সে সময় তারা পারস্য শাসনের জন্য রাজপরিবারের কোনো পুরুষকে খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন কিসরার মেয়েকে সিংহাসনে বসানো হয়। এই খবর রাসূল (সা)-এর কাছে পৌঁছলে তিনি আলোচ্য মন্তব্যটি করেন। রাসূল (সা) কোনো আদেশ করেননি। তিনি শুধুমাত্র তার অর্ন্তদৃষ্টি থেকে তাদের সম্পর্কে একটি সাধারণ ভবিষ্যৎবাণী করেছেন।
সহীহ বুখারী মনোযোগ দিয়ে পড়লে দেখবেন, ইমাম আবু ইসমাঈল আল-বুখারী হাদীস বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি একজন ফকিহও ছিলেন। যদিও তিনি ফিকাহর উপর কোনো বই লিখেননি। তিনি তার মতামত সহীহ বুখারীর বিভিন্ন অধ্যায়ের শিরোনামের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। ‘যারা নারী নেতৃত্বের অধীনে থাকে তারা সফল হতে পারে না’ এই হাদীসটি বুখারী শরীফের কোন অধ্যায়ে আছে?
বুখারী শরীফে ‘কিতাবুল ফিতনা’ একটি অধ্যায় এবং ‘কিতাবুল আহকাম’ আরেকটি অধ্যায়। এই হাদীসটি ‘কিতাবুল ফিতনা’য় সংযোজিত। ‘কিতাবুল আহকাম’ অধ্যায়ে ‘ইমারত’ তথা নেতৃত্ব সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা থাকা সত্ত্বেও এ হাদীসটিকে সে অধ্যায়ে রাখা হয়নি। সুতরাং নেতৃত্বের সাথে সর্বপর্যায়েজেন্ডারের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করাউচিত নয়। নারীরা যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে যে কোনো বিষয়ে নেতৃত্ব দিতে পারেন, তা হতে পারে রাষ্ট্রপ্রধানের মতো দায়িত্ব।

বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০১৪

রোযার প্রতি ভালোবাসা

বয়স্ক একজন মানুষ সেদিন হাসপাতালে ভর্তি হলেন । পেশায় শিক্ষক । বয়স ষাটের কোঠায় হবে । ডায়রিয়া উইথ মডারেট ডিহাইড্রেশন । অবস্থা কাহিল, তবুও রোজা আছেন ।

তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করা হলো , ওরস্যালাইন এবং ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজনে রোযা ভেঙ্গে ফেললে ভালো হবে । আমাদের জানামতে এরকম অসুস্থতায় রোযা না রাখার সুযোগ আছে ।
কিন্তু উনি কিছুতেই রোযা ভাংবেন না । অগত্যা ইন্ট্রাভেনাস স্যালাইন এবং ইঞ্জেকট্যাবল ড্রাগ দেয়া হলো । আমরা বললাম- আপনি একজন আলেমের কাছে ফতোয়া নেন । আপনাকে তো ওষুধ ছাড়াও সবকিছুই শিরার মাধ্যমে দিতে হচ্ছে । এভাবে রোযা থাকাটা কতটুকু জরুরি বা কতটুকু যৌক্তিক ?
উনি তাই করলেন । একজন আলেমকে ফোন করলেন । আলেম সম্ভবত আমাদের মতই বললেন- রোযা ভাঙ্গাই উচিৎ হবে ।
ফোনে কথা বলতে বলতেই কেঁদে ফেললেন আমাদের রোগী । রোযা ভাঙতে হবে সেই কষ্টে !
একটা রোযার জন্য কত ভালোবাসা ! কতজনেই তো কতভাবে রোযা নষ্ট করছে । অবাক হয়ে যাই । আমি নিজেকে শক্ত মানুষ বলেই মনে করি । অথচ আমাকেও অনেক কষ্টে নিজেকে সামলাতে হলো । ডাক্তারদের তো আবেগ অনুভূতি প্রকাশ করতে নেই ।

কত সহজেই আল্লাহ্‌র কত আদেশ অমান্য করি । আহা, কবে আল্লাহ্‌র প্রতিটি আদেশকে উনার মত করে ভালোবাসতে পারবো ?

বুধবার, ২৩ জুলাই, ২০১৪

বুজুর্গের কবিতা পাঠ !

দেখুন জনাব , আপনাকে গা বাঁচিয়ে চলতে হবে
সব কথা কবিতায় বলা যাবেনা । মুসলমানের মানবাধিকারের মত ,
আবেগ অনুভূতিও থাকতে নেই !
ইচ্ছে হয় তো লিখে যান আদমের কথা ,
হাওয়া এখানে অপাংক্তেয় ।
গন্ধম কী ফলাফল বয়ে এনেছিলো
সেকথা বলতে গেলে তেড়ে আসবে নিশ্চিত
কোন বুজুর্গ !

অথচ কে না জানে
আল মাহমুদ কিংবা নির্মলেন্দুর কবিতায়
'হাওয়া'র সুনিপূণ বর্ণনা পড়ে তারাই
নিজের অজান্তে বলে ওঠেন
অসাম কবিতা বটে !

আড়াই দশকের শুষ্কতা

আড়াই দশক পেরিয়ে গেল
এখনো শুষ্ক শরীর ও মন !
আর কতকাল পেরিয়ে গেলে তবে
নাদের আলী আমায় বলবে এসে
চলো দেখে আসি তিন প্রহরের বিল !
চলো কাটবে সাতার ইচ্ছেমত শাপলা ফোটা বিলে !
চলো রাখবে চোখ আকাশ কিংবা
অতল চোখের নীলে ?

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০১৪

স্বৈরাচার পতনের ডাক !

চক্ষুলজ্জার মাথা খেয়ে অশিষ্ট অনুভূতিরা 
স্বৈরাচারবিরোধী মিছিলের মত এগিয়ে আসে প্রতিদিন  
একটাই দাবি ওদের , আমাকে গদিচ্যুত হতে হবে ।
বহুদিন রাজত্ব করেছি , টুঁটি চেপে ধরেছি
কথা বলতে দেইনি কাউকে । কতশত অনুভূতি আবেগের ওপর
চালিয়ে দিয়েছি ট্রাক ট্যাংক কাভার্ড ভ্যান
রক্তাক্ত করেছি হৃদয়ের রাজপথ
তবুও মরেনি ওরা, চিরঞ্জীব শহীদের মত 
আজও বেঁচে আছে !   

ঐতো মিছিল এগিয়ে আসছে রাজভবনের দিকে ,
উচ্চকিত কণ্ঠের আওয়াজ গমগম করছে বাতাসে । একটাই দাবি 
আমাকে গদিচ্যুত হতে হবে । বহুদিন রাজত্ব করেছি নিজের ওপর
একনায়ক স্বৈরাচারের মত । এবার গনতন্ত্র চাই ,
শরীর ও মনের অর্ধেক রাজত্ব ছেড়ে দিতে হবে 
অন্য কাউকে !

কে একজন বক্তৃতা করছে সাতই মার্চের মত , কেউ ওদের আর
দাবায়া রাখতে পারবে না ! ঘরে ফিরবার জন্য তো পথে নামেনি ।
দাবি আদায় না করে
আর ফিরবে না কেউ ! আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে , 
ক্ষমতা না ছাড়ুন , অন্তত জোট সরকার হোক ! 
আপনি রাষ্ট্রপতি হোন , প্রধানমন্ত্রীত্ব দিন অন্য কাউকে ! 

শ্লোগানের শব্দে কান ঝালাপালা হয় । বড্ড বাড় বেড়েছে ওরা ।  
আবার কি চালিয়ে দেব লেফটেন্যান্ট জেনারেল ট্রাক ? নির্দেশ দেবো     
আরো একটি ৫ইমে মধ্যরাতের ? মতিঝিল ট্রাজেডির ? নাকি 
তৃতীয় বিশ্বের এই টালমাটাল দরিদ্র দেশটা চালাবার মত 
একজন সর্বংসহা প্রধানমন্ত্রী পেলে 
চলে যাবো অবসরে !

সোমবার, ২১ জুলাই, ২০১৪

অবুঝ আমি

একটা অবুঝ ছেলে 
কীভাবে যেন ঢুকে পড়েছে আমার ভেতর । ওর নাম আমি ।
দিনে দিনে হয়ে গেছে সে আমার 
পরম আপনজন । লুকিয়ে রাখতে চাই তবু কখনোই 
খুব বেশি লুকোতে পারিনা তাকে । 
কথা বলতে মুখ খুললেই দৌড়ে এসে বলে 
আমি আমি !
কিছু লিখতে বসলেই খুশিতে ডগমগ হয়ে 
লুটিয়ে পড়ে ডায়েরীর পাতায় । বলে 
আমি আমি !  

গল্পের ভেতরেও সে শুধু নিজেকেই খোঁজে । নিজের মত 
কাউকে দেখলেই পরম উচ্ছ্বাসে বলে ওঠে ,
ঐতো আমি, আমি !  
উপন্যাসের পাতায় পাতায় 
গানের সুরে এবং কথায় 
কবিতারও ছন্দ গাঁথায় 
সবখানেতে সর্বদা সে , নিজকে শুধুই খুঁজে বেড়ায়  
অসময়ে আপন মনে চেচিয়ে ওঠে পরম সুখে 
আমি আমি ! 

হাত বুলিয়ে মাথায় কখনো কখনো 
আদর করে বলি , একটু লুকিয়ে থাকতে পারো না ?
চোখ পাকিয়ে সে আমাকেই শাসায় , লুকোব কেন ? 
মন চায় তুমিই লুকিয়ে থাকো । আমি 'আমি' , 
সবসময় চিৎকার করে বলবো  
এইযে এখানে আমি !

বড্ড বিপদে আছি । 
এই অবুঝ 'আমি'কে নিয়ে এখন আমি 
কী করি ?

রবিবার, ২০ জুলাই, ২০১৪

অচিন শহর

ইবনে বতুতার মত ভ্রমণপিয়াসী আমি
কতকিছুই তো দেখলাম ঘুরে ঘুরে
শুধু বাকি রয়ে গেল একটা শহর 
কত দূর দূরান্ত ভ্রমণ করলাম কতদিন ধরে
শুধু বাকি রয়ে গেছে ঐ একটা শহর
সেই শহরের নাম নারী । 

দেখা হলোনা সেই শহরের টিলা পাহাড় নদী কিছুই
জানা হলোনা কী আছে তার অলিতেগলিতে
কোথা গুপ্তধন কোথা পুরনো ইতিহাস কোন্ জাদুঘরে  ।
রাখা হলোনা হাত সেই শহরের সদর দরোজার চৌকাঠে 
হলোনা বপন করা একটিও বীজ সেই শহরের 
অকর্ষিত সুফলা জমিনে  ।

জানিনা কবে কীভাবে কোন সাগরের ঢেউ মাড়িয়ে
সে শহরে ফেলবে নোঙর আমার জাহাজ
তবু যেতে হবে ।
ও শহরের মাটি একটিবার না পেরোলে যে
অসমাপ্ত রয়ে যাবে আমার
জীবনভর ভ্রমণের ইতিহাস ! 

শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০১৪

হৃদয় খুঁড়ে যাই

শুনুন জীবনানন্দ বাবু , আমি সেই লোক
হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসি ।
দারুণ খরায় হৃদয় জমিন হয়ে গেলে শুকনো খটখটে 
খুঁড়ে খুঁড়ে সন্ধান করি একফোঁটা অশ্রু
মনেপ্রাণে কামনা করি  প্রখর রৌদ্রের ভেতর
এতটুকু বেদনা জাগুক । মহামহিয়ান স্বত্ত্বার সম্মূখে
সপে দিয়ে চৌচির হৃদয় , বর্ষিত দয়ায় সিক্ত হোক প্রাণ ।
খেকশিয়ালের বিয়ে হোক বা না হোক  
হৃদয়ের খরা হোক অবসান ।


খুঁড়ে খুঁড়ে আমি তাই নরোম করি হৃদয়ের প্রকোষ্ঠগুলি ।
সেখানে যেন নির্দ্বিধায় বেড়ে ওঠে মানুষের জন্য
শতবর্ষী অশ্বথের মত 
মহীরুহ ভালোবাসা ।

শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০১৪

হবো আমি নিভৃতচারী

সময় এসেছে এবার হতে হবে নিভৃতচারী 
অনেক তো হলো ভালোবাসাবাসি 
হলো কাছাকাছি থাকা , মখমল মাখামাখি 
অনেক তো হাঁটা হলো  একসাথে পাশাপাশি 
মেটাতে পারবোনা কভু ভ্রাতৃত্বের দাম 
ফিরিয়ে দেবার মত অত ভালোবাসা নেই আমার সিন্দুকে
তোমাদের মায়াজাল দিনে দিনে বাঁধছে আমায় । কে জানে
পুরোপুরি বাঁধা পড়ে গেলে  হয়তো একদিন গোধূলী বেলায়
ধূপওঠা পাথর বেদীতে নিজের অজান্তে 
বধ হয়ে যাবো ! 

সময় এসেছে এবার হতে হবে নিভৃতচারী । তোমাদের ডাকে আর
দেবোনাকো সাড়া । ধ্যানমগ্ন হয়ে গেলে পরে
নতুন কাউকে বোলো , নতুন করে ডাকে যেন নতুন সুরে
হাওয়া ভুলানো ছলনাময়ী সাপের মতন 
হয়তো সে ছলনায় আদমের মত 
আমিও স্বর্গভ্রষ্ট হবো !
আবার আসবো নেমে মায়ার পৃথিবীতে । পুরনো দিনের মত
মুষ্টিবদ্ধ হাত একলয়ে উচ্চকিত করে
কাঁপিয়ে দেবো শোষকের প্রাণ ।

সবার মাঝেই তো আছি এতকাল , তবু কেন হৃদয়ে জাগে 
একাকীত্বের অনুভব ?  গুহাবাসি না হলে বুঝি
আসেনা আদিম প্রেরণা !

এবার তবে হয়েছে সময় ;  
হবো আমি পুরোদস্তুর নিভৃতচারী । ভালো থেকো, চললাম । 

ইফতার !

খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করছিল
আহমদের । সেহরিতে খায়নি কিছুই । দিন পেরিয়ে
ইফতারের সময়ও হয় গেল প্রায় ।
কী খাবে ইফতারে ?

ভাবতে ভাবতেই একটা মিসাইল 
ছুটে এলো তখনি । পেটপুরে তাই খেয়ে আহমদ 
ঘুমিয়ে পড়লো বারান্দাতেই ।  ধ্বংসস্তুপের নিচে
পরম তৃপ্তিতে !



#PrayForPalestine

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই, ২০১৪

যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব !

এসো যুদ্ধবিরতি করি । এবারের মত বেশ হয়েছে ।
এখন কিছুটা বিশ্রাম নেয়া যাক ।
মানুষের মন থেকে মুছে যাক রক্তের দাগ । পৃথিবী ভুলে যাক 
তোমাদের লাশ । কিছুটা সময় দাও 
তোমাদের ভাইয়েরাও ভুলে যাবে
রক্তাক্ত শিশুর প্রাণহীন মায়াবী মুখ । মায়ের আর্তনাদ ।
আমাদের বিপরীতে 
ঘৃণার বিষবাষ্পে আকাশ ছেয়ে আছে পৃথিবীর ।
ভাটা পড়ুক সে জোয়ারে ।

এসো যুদ্ধবিরতি করি ।
মেনে নাও সাময়িক শান্তির প্রস্তাব । টু বি ফ্রাংক ,
কিছুটা ক্লান্তও বটে আমরা । প্রত্যাশা করিনি এতটা প্রতিরোধ ।

দখল অবরোধ থাকুক ,
এসো কিছুক্ষণ যুদ্ধবিরতি করি ।  তারপর
তোমাদের অবশিষ্ট সন্তানদের নাহয় 
কিছুদিন পরেই হত্যা করবো !  

বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০১৪

অসভ্যতার ইশতেহার !

সবটুকু আবেগ লুকিয়ে রাখতে হবে চোরাপকেটে
কেউ যেন দেখতে না পায় । তোমাদের ভদ্রসমাজের 
এইতো নিয়ম !
ল্যাক্রিমাল গ্লান্ডে তালা মেরে  রাখতে হবে । 
যখন তখন যেন না নেমে আসে চোখের জল ! 
তোমাদের কাছে চোখের জল মানে 
নারীসুলভ দুর্বলতা !

ঠোঁটের দরোজার ছিটকিনি  আটকাতে হবে খুব ভালো করে ।
হঠাৎ যেন এতটুকু প্রসারিত না হয়  ! 
দৃষ্টিগোচর না হয় যেন একটিও দাঁত ! 
প্রসারিত ঠোঁট মানে তোমাদের কাছে
চরম অভদ্রতা ! কান্ডজ্ঞানহীন বেআক্কেলের মত
অসভ্য আচরণ !

ভালো । খুব ভালো । তোমাদের ইচ্ছে হয় ,
ভদ্রতার খোলস জড়িয়ে বসে থাকো বেশ । ভদ্রতার মুখোশ   
বইতে বইতে আমি ক্লান্ত । কীইবা এমন হবে ?
ক'দিনের এই জীবনে আমি নাহয়  
ভদ্রমানুষ নাইবা হলাম !

মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই, ২০১৪

আগামীর কবিতা হবে রকেট লাঞ্চারে

ফিলিস্তিনি শিশুদের জন্যে একটি কবিতা লিখবো বলে
কলম হাতে নিয়ে আমি হতবাক ! বলপয়েন্ট কলমের নিব বেয়ে   
কালির বদলে চুইয়ে পড়ছে লাল রক্ত ! কবিতার বদলে  
অজান্তেই আমার আনাড়ি হাতে  
ডায়েরির পাতাজুড়ে আঁকা হয়ে আছে  
রক্তাক্ত এক নবজাতকের ছিন্নভিন্ন বুক ! 



আমি জায়নিস্ট নই যে এরপরও কলম চালাবো ।
এরপরে কলম চালানো মানে 
ইজরাইলি বর্বরতা । পুতুল খেলায় রত শিশুর ওপর  
মিসাইল নিক্ষেপের পশুত্ব ।  


আমি জানি , রক্তাক্ত নবজাতক মানে  
বিজয় অবধি প্রতিরোধ যুদ্ধের ডাক  
ছিন্নভিন্ন আত্মজার অর্থ একটাই 
জালিমের শেষচিহ্ন মুছে দেবার প্রয়োজনে 
বজ্রশপথের আহ্বান । 



ব্যর্থ হয়ে তাই অবশেষে আমি  
কবিতায় ক্ষান্ত দিলাম। কবিতার মায়ায় ওদের আটকানো 
আমার সাধ্য নয় । ওরা চলে গেছে সীমানা ছাড়িয়ে  
মিসাইল কিংবা কবিতার নাগালের বাইরে...
ভয় নেই হে বন্ধু কাব্য অনুরাগী  
কলম ছাড়লেও কবিতা তো ছাড়ছিনা   
আগামীর কবিতা হবে রকেট লাঞ্চারে । 

সোমবার, ১৪ জুলাই, ২০১৪

পণ্য বর্জন কি কার্যকর প্রতিবাদ ?

ইসরাইলি পণ্য বর্জন একটা আবেগনির্ভর ও হুজুগে প্রতিবাদ। এটাকে আমি কার্যকর প্রতিবাদ বলতে পারিনা। তবুও এই আবেগটুকুর প্রতি আমার সমর্থন আছে। এজন্য যে, উম্মাহর জন্য অন্তত এটুকু ভালোবাসা আমাদের অবশিষ্ট আছে। এছাড়া কোন অন্যায়ের প্রতিবাদের যে চারটি ধাপ হাদিসে বলা হয়েছে তার শেষ ধাপটি হচ্ছে অন্যায়ের প্রতিরোধ করতে না পারলে অন্তত অন্তরে ঘৃণা করা। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে পণ্য বর্জনের ইচ্ছা অবশ্যই ভালো দিক। কিন্তু এটা কোন সত্যিকার কার্যকর প্রতিবাদ নয়।

কতজনে কয়টা পণ্য বর্জন করবে? এতে ইসরাইলের কতটুকু গায়ে লাগবে? তাদের পণ্য তো সবাই ব্যবহার করে, শুধু মুসলিমরা নয়। সব মুসলিমও তো বর্জন করবেনা। আবার সব পণ্যের বিকল্পও নেই। এছাড়া ইহুদী মালিকানাধীন মানেই জায়নবাদী নয়।

আমরা যারা বাংলাদেশের মত তৃতীয় বিশ্বের মানুষ তাদের জন্য আরো সমস্যা। ভারত আমাদের ওপর ছড়ি ঘুরায়, সীমান্তে মানুষ মারে। ওকে, আমরা ভারতীয় পণ্য বর্জন করলাম। আমরা ইহুদী মালিকানাধীন পণ্য বর্জন করলাম। আমরা মার্কিন পণ্য বর্জন করলাম, তারা ইরাকে আফগানিস্তানে মানুষ হত্যা করে, তারা ইসরাইলকে সাপোর্ট দেয়।
তাহলে আমরা কোন পণ্য ব্যবহার করবো?

একদিন দুদিনের হুজুগে প্রতিবাদ সত্যিকারার্থে মুসলিমদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করতে কোনই কার্যকর ভূমিকা রাখেনা। যে চেতনা শুধু পিঠে বোমা পড়লেই জেগে ওঠে সেই চেতনা কোনদিনই কাউকে মুসলিম নির্যাতন থেকে বিরত রাখবেনা। ইহুদীরা সারাবিশ্ব শাসন করছে জ্ঞানের জোরে। একতার জোরে। যোগ্যতায় এবং একতায় শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করতে না পারলে পণ্য বর্জনের জিগির তোলা ছাড়া আর কিছু করা আমাদের পক্ষে কোনদিনই সম্ভব হবেনা। পণ্য বর্জন শব্দটাই আমাদের অসহায়ত্বকে করুণভাবে প্রকাশ করে । এর অর্থ হলো, আমরা তাদের তৈরিকরা পণ্য ব্যবহার করি, করতে বাধ্য । কারণ, আমাদের নিজস্ব পণ্য নেই। নিজে কিছু তৈরির যোগ্যতাই আমাদের নেই।

মুসলিমদের ভালো মন্দ মুসলিমরা নিজেরাই বোঝেনা। মুসলিম দেশগুলোর শাসক কারা? বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অবচেতন পুঁজিবাদী সেকুলার গোষ্ঠী। এদেরকে ক্ষমতায় বসায় কে? এদের ক্ষমতার তোষামোদ করে কে? মুসলিমরাই।
ইজরায়েলি পণ্য বর্জন করুন, আপত্তি নাই। কিন্তু নিজেরা নিজেরা এই ফেরকা সেই ফেরকায় মারামারি না করে ঐক্যবদ্ধ না হলে, জ্ঞান বিজ্ঞানে উন্নতি না করলে এভাবেই অন্যদের বুটের তলায় পিষ্ট হতে হবে।

রবিবার, ১৩ জুলাই, ২০১৪

জায়নবাদ বিরোধী লড়াই

জাতি হিসেবে ইহুদীরা অভিশপ্ত । তারা বেশিরভাগ সময় সত্যকে অস্বীকার করেছে, অনেক নবী রাসুলকে হত্যা করেছে । কিন্তু জায়নবাদ আর ইহুদীবাদ এক নয় । জায়নবাদের সাথে যদিও ইহুদী ধর্মের একটা সম্পর্ক আছে তবুও সব ইহুদীই জায়নবাদী নয় । ইজরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্রটি গঠিত হয়েছে ( আমরা এটাকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেইনা, দিতেও পারিনা - অবৈধ দখলদার বলি) জায়নবাদী দৃষ্টিভঙ্গী এবং আমেরিকা-ব্রিটেনের তেলের চাহিদা পূরণের প্রয়োজনে, মধ্যপ্রাচ্যকে অস্থিতিশীল রেখে নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য ।

জায়নবাদ উগ্র , সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদেরই আরেকটি রূপ । জায়নবাদী ইহুদিরা বিশ্বাস করে যে , আল্লাহর সাথে ইহুদিদের চুক্তি আছে - জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিন ভূখণ্ড একমাত্র ইহুদিদের প্রাপ্য। এর অধিকার একমাত্র ইহুদীদেরই । আর এই অধিকার বজায় রাখার প্রয়োজনে কোনরকম নীতি নৈতিকতার প্রশ্ন তারা স্বীকার করে না । যেকোন উপায়ে- তা যতই অনৈতিক হোক , যতই নির্মম নৃশংস হোকনা কেন - জেরুজালেম এবং ফিলিস্তিন তাদের নিজেদের দখলে রাখতে হবে ।

এজন্যই তারা এর প্রয়োজনে নিজেদের মেয়েদেরকে পর্যন্ত চরম লজ্জাজনক কাজে ব্যবহার করে , কোনরকম নীতিনৈতিকতা দয়ামায়ার পরোয়া না করে ফিলিস্তিনি মুসলমানদের নিরীহ বেসামরিক মানুষ, নারী ও শিশুদের নির্দ্বিধায় হত্যা করে । মায়ের পেটের শিশুকেও হত্যা করে । একে তারা ধর্মীয়ভাবে কোন পাপ বা অপরাধ মনে করেনা ।

জায়নিজম শুধু ইহুদীদের ভেতরই আছে তা নয় । খ্রিষ্টানদের মধ্যে আছে খ্রিষ্টীয় জায়নবাদ । এই খ্রিষ্টীয় জায়নবাদীরা আবার ইহুদী জায়নবাদের সমর্থক । তারাও মনে করে ইহুদীদেরকে ফিলিস্তিনে পুনর্বাসন করা ধর্মীয় কর্তব্য । ইহুদী জায়নবাদী এবং আমেরিকা ব্রিটেনের খ্রিষ্টীয় জায়নবাদীদের একত্রিত প্রভাবের কারণেই ইজরাইল হয়ে উঠেছে আরো বেশি বেপরোয়া এবং উদ্ধত । তারা নিজেরাতো কোনরকম নীতি নৈতিকতার পরোয়া করেনা , আবার প্রভাবশালী দেশগুলো থেকে খ্রিষ্টীয় জায়নবাদীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সমর্থন পেয়ে আসছে ।

জায়নবাদী হতে পারে যে কেউ । যদি আমি মনে করি যে, বাংলাদেশে শুধু বাঙ্গালিরাই থাকতে পারবে- তাহলে আমিও জায়নবাদের মতাদর্শের আওতায় পড়লাম ।

ইহুদী মানেই জায়নবাদের সমর্থক নয় । ইহুদি ধর্মের গোঁড়া অনুসারীরা, যেমন নেতুরাই কারটা (Neturei Karta, ইহুদীদের মধ্যে এরা একটা গোষ্ঠী, যারা জায়নবাদের ঘোর বিরোধী) ।

লন্ডনে ট্রাফালগার স্কোয়ারে রাব্বি আহরণ কোহেন গত ২০০৫ সালের ৩০ অক্টোবর ফিলিস্তিনী জনগণের প্রতি আল কুদস দিবসে সংহতি জানাতে এসে বলেন, ‘গোঁড়া ইহুদিরা ফিলিস্তিনীদের প্রতি পুরাপুরি একাত্ম। ধর্ম বিশ্বাস, ইহুদি ধর্ম এবং মানবিক নীতিনৈতিকতার দিক থেকে ইহুদি ধর্মের মৌলিক শিক্ষা জায়নবাদের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমাদের ধর্ম বিশ্বাস এই রকম যে, হাজার বছর বা তারও বেশি সময় ধরে ইহুদি জনগণ মহান আল্লাহ তাআলার ডিক্রি অনুযায়ী নির্বাসিত জীবন পালন করছে, কারণ তাদের কাছ থেকে যে উন্নত মানের প্রত্যাশা করা হয়েছিল তা তারা রক্ষা করতে পারে নি। আমরা দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছি এবং আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য হচ্ছে যে দেশে আমরা বাস করি সেই দেশের প্রতি পূর্ণ আনুগত্য বজায় রাখা। তাছাড়া ফিলিস্তিনে আমাদের নিজেদের কোন রাষ্ট্র কায়েম করা নিষিদ্ধ, যদি এমন কিছু করবার চেষ্টা করা হয় তাহলে তার কঠিন পরিণতি সম্পর্কে আমাদের হুঁশিয়ার করা হয়েছে। এমন কিছু করা মানে পরম শক্তিমানের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা। অতএব ধর্মবিশ্বাসের জায়গা থেকে ফিলিস্তিনে আমাদের কোন রাষ্ট্র গঠনের অধিকার নাই।’

যদিও ইসরাইল ধর্মের ভিত্তিতে গঠিত একটি অবৈধ রাষ্ট্র , তবু এর গঠনের পেছনে মূল ভূমিকা পালন করেছে জায়নবাদ । ইহুদীবিহীন ইউরোপের ধারণা । মধ্যপ্রাচ্যের ওপর প্রভাব বজায় রাখার পাশ্চাত্য আধিপত্যবাদী ধ্যানধারণা ।

জায়নবাদ একটা ভয়ংকর চেতনা । ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গী ছাড়াই জায়নবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবার অংশ নেয়া উচিৎ । এমনকি কম্যুনিস্টরা যারা এই জায়নবাদের তত্ব বোঝে তারা অতীতে জায়নবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ফিলিস্তিনের সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল ।

শুক্রবার, ১১ জুলাই, ২০১৪

নিরাপত্তাহীন ডাক্তার, ক্ষতিগ্রস্ত জনগন

কয়েকদিন পরেই বিদেশ যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু চোখের সামনে একটা মেয়েকে সন্ত্রাসীরা অপহরণ করে নিয়ে যাবে , আর তিনি নিজের কথা ভেবে চুপ থাকবেন তাঁর বিবেক এটা মানতে পারেনি । নিজের বিপদকে উপেক্ষা করে বিপদগ্রস্ত মানুষকে বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন গেট সিকুরিটি লিটন । সন্ত্রাসীরা গুলি করলো তাঁর বুকে । ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন লিটন ।
এটি কয়েকদিন আগে ঢাকার উত্তরায় ঘটে যাওয়া একটি ঘটনা । লিটনের সাহসিকতা ও মানবতা প্রশ্নাতীত । কিন্তু আমাদের দৃষ্টি অন্যখানে । একটি দৈনিক পত্রিকায় রিপোর্ট এসেছে - লিটনকে স্থানীয় দুইটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে, পুলিশ কেস হিসেবে পুলিশী হয়রানির ভয়ে তাঁর চিকিৎসা দেয়া হয়নি । ঢাকা মেডিকেলে রেফার করা হয়েছিল ।
যদিও সাংবাদিক অন্যসব বিষয় উপেক্ষা করে যথারীতি ডাক্তারদেরকেই দোষারোপ করে আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন । হয়তো ডাক্তারদের নিয়ে নেগেটিভ নিউজ করার লক্ষ্যেই রিপোর্টটি করাও হয়েছে । কিন্তু বিষয়টি আসলেই ভয়ংকর । ডাক্তাররা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগলে , চিকিৎসাক্ষেত্রে নিজেকে অনিরাপদ বোধ করলে আল্টিমেট ক্ষতি যে জনগনেরই সেটা আবারো স্পষ্ট হয়েছে । অবশ্য ঐ ক্লিনিকে এরকম রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিল কিনা সেটা আমার জানা নেই ।
মুমূর্ষু রোগী বাঁচতেও পারেন , মারাও যেতে পারেন । ডাক্তারের কাজ হলো বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করা । কিন্তু অবস্থা যা দাঁড়িয়েছে , কোনভাবে রোগী মারা গেলেই ডাক্তারের ওপর চড়াও হওয়া , হাসপাতাল ভাংচুর করা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে । আর কোনরকম তদন্ত ছাড়াই সাংবাদিক মহোদয়গন ডাক্তারের ওপর দোষ চাপিয়ে সংবাদ ছাপিয়ে মানুষকে উস্কে দেন । বেশ কিছ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, কোনরকম তদন্ত কিংবা মামলা ছাড়াই পুলিশ ডাক্তারকে গ্রেপ্তারও করেছে । ডাক্তারদের কমুনিটিতে এসব সংবাদ এখন খুব দ্রুত ছড়ায় । ফলে ডাক্তাররাও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকার কারণে ঝামেলা এড়াতে চাচ্ছেন ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও ঝামেলা এড়ানোর জন্য খারাপ রোগী রেফার করতে ডাক্তারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে । জানা থাকা ভালো , হাসপাতালের মালিকরা ব্যবসায়ী । ব্যবসা তাদের মূল লক্ষ্য ।
অবহেলা যে একেবারে কোথাও হয়না তা নয় । তবে তার দায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডাক্তারের চেয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষেরই বেশি ।
যার স্বজন মারা যায় সেই বোঝে কষ্ট । কিন্তু তার মানে এই নয় ডাক্তাররা কষ্ট পায়না । রোগীকে সুস্থ করতে না পারলে ডাক্তারেরও কষ্ট লাগে । তারওপর ডাক্তার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি নিরাপত্তাহীন বোধ করে তাহলে তারা গুরুতর অসুস্থ রোগীকে চিকিৎসা দিতে চাইবেন না এটাই স্বাভাবিক । প্রত্যেকেরই ব্যক্তিগত জীবন আছে ।
এছাড়া ভয় আছে পুলিশি ঝামেলার । এরকম ক্রিমিনাল অফেন্সে কখনো কখনো ডাক্তারদের সাক্ষী বানিয়ে টানাহেঁচড়া করা হয় । বাঘে ছুঁলে আঠারো ঘা , পুলিশ ছুঁলে ছত্রিশ ঘা । সেটাও ডাক্তারদের জন্য অহেতুক ঝামেলা ছাড়া আর কিছুই নয় ।
আমাদের নিজেদের স্বার্থেই এখন ডাক্তারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরী । অবহেলা বা ভুল চিকিৎসা প্রতিরোধের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও প্রশাসনিক লোকের সমন্বয়ে বিশেষ কমিটি গঠিত হোক । কিন্তু সাংবাদিক বা রোগীর আত্মীয়রা নিজেরাই যেন বিচারক হয়ে না যান । ডাক্তাররা নিরাপত্তাহীনতাবোধ করলে, শেষমেশ আমাদেরই ক্ষতি হবে ।
আমাদের মূর্খতার কারণে আর কোন লিটন যেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন ।
কোন লিটনের চিকিৎসা দিতে ডাক্তাররা যেন ভয় না পান ।

বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০১৪

গাজা গনহত্যা, করণীয় কী ?

ফিলিস্তিনের গাজায় ইজরাইল গনহত্যা চালাচ্ছে । নির্বিচারে হত্যার শিকার হচ্ছে নিরপরাধ মানুষ । নারী শিশুর রক্তে ভিজে যাচ্ছে ইফতার, সেহরি । সারা বিশ্বের মুসলিম ব্যথিত । কিন্তু তাঁদের সাহায্যে কী করা যায় ?
মুসলিম দেশগুলোর শাসকরা বেখবর । ওআইসি নীরব । কষ্টের গীতিকবিতা লেখা ছাড়া সাধারণ মুসলিমরা আর কিছু কি করতে পারে ?
হ্যা, একটা কাজ করা যেতে পারে । যদি কোনভাবে সম্ভব হয়- যেখানে যেখানে ইসরাইলের দূতাবাস আছে, সেগুলোতে হামলা করলে কিছুটা হলেও অভিশপ্ত জায়নিস্ট দের ক্ষতি হবে । এখন সবাই চুপ হয়ে আছে । স্বঘোষিত মুরুব্বি দেশগুলো চুপ, জাতিসংঘ চুপ, তথাকথিত মানবতাবাদিরা চুপ । ইজরাইলের দূতাবাসে কিংবা ইজরাইলের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট স্থাপনায় হামলা হোক , দেখা যাবে সবার মুখ খুলে গেছে । সবার মুখের সামনে ধান রাখলে খই হয়ে বের হচ্ছে ।
বাংলাদেশে ইজরাইলের দূতাবাস নেই । থাকলেও কী করতে পারতাম জানিনা । কিছু না পারলেও , পাথরের টুকরা হাতে ফিলিস্তিনি বালকের মত অন্তত একটা ঢিল ছুড়বার চেষ্টা করতাম ।
মাঝে মাঝে হৃদয়
যুদ্ধের জন্য হাহাকার করে ওঠে ।
মনে হয়
রক্তই সমাধান ,
বারুদেই অন্তিম তৃপ্তি ।
(-আল মাহমুদ)

বুধবার, ৯ জুলাই, ২০১৪

সমূদ্রসীমা বিরোধ মীমাংসা , তালপট্টি দ্বীপ কী করে আমরা পেতাম ?

দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ হাতছাড়া হওয়ার কথা তুলে যারা হাহুতাশ করছেন তারা বাস্তবতাকে অস্বীকার করছেন । প্রথম কথা হলো তালপট্টি দ্বীপ এখন অস্তিত্ববিহীন । কমপক্ষে ২ মিটার পানির নিচে তলিয়ে গেছে এককালের জেগে ওঠা সে দ্বীপ । আর কখনো জেগে উঠবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই । যার অস্তিত্বই নেই তা নিয়ে হাহুতাশ হাস্যকর ।
দ্বিতীয়ত , ১৯৮১ সালেই ভারত তালপট্টি দ্বীপে পতাকা উড়িয়ে দখল নিয়েছিল । বাংলাদেশের কি সাধ্য আছে ভারতের সাথে গায়ের জোর খাটিয়ে দ্বীপের দখল পুনরুদ্ধার করবে ? দ্বীপ থাকলেও সেই দ্বীপের দখল নেয়া বাংলাদেশের পক্ষে কখনো সম্ভব ছিলনা । বিচারেও দ্বীপের অস্তিত্বকেই আমলে নেয়া হয়নি । সুতরাং দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ ভারতকে দিয়ে দেয়া হয়েছে এই ধরণের অভিযোগ অতিমাত্রায় স্থুল দৃষ্টিভঙ্গির মন্তব্য ।
সমূদ্রসীমা অমীমাংসিত থাকায় কোনরকম অনুসন্ধান , গ্যাস উত্তোলন ও অন্যান্য সম্পদ আহরণ সম্ভব হচ্ছিল না । আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দরপত্র আহ্বান করলে ভারত সেখানে আপত্তি জানাতো । সেজন্য সমূদ্রসীমার একটা মীমাংসা হওয়া দরকার ছিল । এখন বাংলাদেশ পঁচিশ হাজার বর্গকিলোমিটারের যে উণিশ হাজার পেয়েছে এতে ঐ অংশের ওপর একটা স্বীকৃত ও মীমাংসিত অধিকার স্থাপিত হলো ।
এছাড়াও ইকুইটির ভিত্তিতে বিচার হওয়ায় বাংলাদেশ অনেকটা ন্যায়বিচার পেয়েছে বলা যায় ।
সার্বিক বিচারে এটা বাংলাদেশের জন্য ভালোই হয়েছে । এটা একটা মীমাংসা । যার যা প্রাপ্য তাকে তা দেয়াই বিচার, বিরোধ মীমাংসার উদ্দেশ্য । এখানে জয় কিংবা পরাজয়ের প্রশ্নই অবান্তর ।

মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০১৪

বাঙালির কূটবুদ্ধি, হিল্লা বিয়ে ও একটি জঘন্য অপরাধ

এক লোক খুব ঘুষ খায় । তাঁকে ঘুষ খাওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হলো । ভাই, ঘুষ খাওয়া তো ঠিক না । আপনার কি দোযখের ভয় নাই ? বেহেশতের আশা কি আপনি করেন না ?
মুচকি হেসে ঘুষখোরের জবাব- আরে ব্যাপার না ! বেহেশতের দারোয়ানকে ঘুষ দিয়ে ঠিকই ঢুকে যাবো !

***
মজু মেম্বারের ছেলে ফজু মিয়া । ছয় মাস হলো বিয়ে হয়েছে । কিন্তু এরই মধ্যে বউয়ের সাথে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি করে । কারণে অকারণে বউটাকে পিটায় । আজ সকালেও তরকারিতে লবণ কম হয়েছে বলে বউটাকে আচ্ছামত মারধোর করলো । শুধু মারধোর করলে তো মজু মেম্বারের টেনশনের কিছু ছিলনা । ঘটনা আরো বড় । সে বউকে একেবারে তিন তালাক বায়েন দিয়ে ফেলেছে । এখন বলছে এই বউ সে ছাড়তে পারবে না । কী মুশকিল !
মুয়াজ্জিন সাহেব বলেছেন - তালাক হইয়া গেছে । হিলা বিয়া ছাড়া এই বউ ফেরত নিবার আর উপায় নাই । টেনশনে মজু মেম্বারের মাথা গরম হয়ে আছে । কী করা যায় ?
অবশেষে বুদ্ধি পাওয়া গেলো । মজু মেম্বারের ছোট ভাই এসে বুদ্ধি দিল - ১০১ টাকা কাবিন লিখা আমার পোলা সাবুদ্দির সাথে বিয়া দেও । বাসর কইরা পরে হেয় তালাক দিয়া দিব ! অসুবিধা কী ?

***

বাঙ্গালির অনেক বুদ্ধি ! আল্লাহকে ঠকাতে চায় ! হিল্লা বিয়ের নামে একটা জঘন্য সিস্টেম তারা চালু করেছিল (এখন কম, আগে এইটার খুব প্রকোপ ছিল) , যেটা নারীর প্রতি অমানবিক জুলুম তো বটেই - আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের অপমান করার শামিল । আল্লাহ্‌র বিধানের সাথে তামাশা । আল্লাহ্‌র বিধানে ফাঁকফোকর বানিয়ে নিজের খায়েশ পুরণের জন্য এরা আল্লাহ্‌র সাথে 'সিস্টেম' করে চলে !

ইসলাম তালাকের সিস্টেমটাকেই কঠিন করেছে , মারাত্মকভাবে নিরুৎসাহিত করেছে । যখন তখন তালাক দিবে আবার ফেরত নিবে এরকম স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ রাখা হয়নি । প্রথমত তালাক দেয়ার জন্য যুক্তিসংগত কারণ লাগবে । সামান্য মতবিরোধ, কথা কাটাকাটিতেই ইচ্ছামত তালাক দিতে পারবে না ।
দ্বিতীয়ত , একবারে তিন তালাক দেয়া যাবেনা । এর জন্য কমপক্ষে তিন মাস সময় নিতে হবে । পবিত্র অবস্থায় এক তালাক দেয়ার পর একমাস সময় দিতে হবে । এরমধ্যে যদি সমস্যার কোন সমাধান না হয় তাহলে দ্বিতীয় তালাক দিতে পারবে । এই সময়ের ভেতর কোনরকম শারীরিক সম্পর্ক থাকতে পারবে না । আরো একমাসেও যদি কোন সমাধান না হয় এবং চিরতরে বিচ্ছিন্ন হবার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয় তবেই তৃতীয় তালাক বা স্থায়ী তালাক দিতে পারবে । আর এই তৃতীয় তালাক দেয়ার আগে তাঁকে অবশ্যই  ভাবতে হবে - এই তালাক মানে হলো এই স্ত্রীকে আর হয়তো এই জীবনে কোনদিন ফিরে পাওয়া যাবে না । চিরতরে বিদায় ।
একটাই উপায় যেটা খুবই অনিশ্চিত, যদি সেই স্ত্রী আবার স্বাভাবিকভাবে কাউকে বিয়ে করে তারপর সেই স্বামীর সাথে কোন কারণে বিচ্ছেদ হয় বা সেই দ্বিতীয় স্বামী মারা যায় তবেই উভয়পক্ষ চাইলে পুনরায় বিয়ে হতে পারবে । এটা স্বাভাবিকভাবে প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার । ( পুরনো স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দেবার প্রকাশ্য/গোপন/মনে মনে ইচ্ছা/চুক্তি থাকলেই সেই বিয়েই অবৈধ হবে । এমনকি এরকম ইচ্ছা নিয়ে বিয়ে করলে যতবছরই সেই বিয়ে টিকে থাকুক, অবৈধই থাকবে । অর্থাৎ ব্যাভিচার হিসেবে গণ্য হবে ।)

এটা নারীর জন্য শাস্তি না, ছিল রক্ষাকবচ । কিন্তু বাঙ্গালির বুদ্ধির তো অভাব নেই । তারা বেহেশতের দারোয়ানকে ঘুষ দিয়ে ঢুকবে ! সুতরাং তারা একটা সিস্টেম দাঁড় করালো 'হিল্লা বিয়ে' ! একজনের সাথে চুক্তি হবে - সে তালাক দেয়া বউকে বিয়ে করবে , তারপর বাসর করার পর তালাক দিয়ে দেবে ! এরপর আগের স্বামী তাঁর পুরনো বউকে আবার বিয়ে করবে ! দুদিনেই কেস ডিসমিস ! দুই পুরুষেরই মনের আশা পূরণ হলো , আবার ধর্মের বিধানও  রক্ষা হলো ! মারাহাবা ! কত্তবড় চালাক ঈমানদার ব্যাক্তি ! আল্লাহকে পুরা বোকা বানিয়ে দিয়েছে (নাউযুবিল্লাহ) !
আগের মোহরানা তো পরিশোধ করে নাই , বন্ধু/ভাই এর সাথে হিল্লা বিয়ে দিয়ে আবার ১০১ টাকা মোহরে নিজে বিয়ে করেছে ! বাহ বাহ !

এই জঘন্য অপরাধটা অনেক জায়গায়ই ঘটেছে । অথচ আলেম ওলামাদের এই ব্যাপারে তেমন একটা জোর গলায় কথা বলতে দেখা যায় নাই । এটাও একটা অবাক করা ব্যাপার । এরকমই একটা ঘটনার বিচারের প্রেক্ষিতে ফতোয়া নিষিদ্ধের আদেশ দিয়েছিল বাংলাদেশের একটি আদালত । সেই আদেশের বিরুদ্ধে আলেম ওলামাদের গর্জে উঠতে দেখা গেছে । কিন্ত যে ফতোয়ার অপব্যবহারের ফলে ফতোয়া নিষিদ্ধের আদেশ এসেছিল- তার ব্যাপারে তাঁদের বেশি উচ্চবাচ্য করতে দেখা যায়নি ।  হিল্লা বিয়ের নামে এতবড় অপরাধ - চোখের সামনে ব্যাভিচার করার ব্যাপারে ততটা সচেতনতা তৈরিতে আলেম সমাজকে পাওয়া যায়নি ।

হিল্লা বিয়ের নামে এরকম ঘটনা যদি কেউ ঘটাতে চায় তাকে বাধা দিতে হবে । আর যদি কেউ ঘটিয়েই ফেলে তবে হিল্লা বিয়ে প্রদানকারী এবং হিল্লা বিয়েকারী উভয়কে ব্যাভিচারের শাস্তি দেয়া উচিৎ । সহযোগীদেরও শাস্তি হওয়া উচিৎ ।


ইব্‌ন মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিল্লাকারী এবং যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়কে লানত করেছেন।”

কুবাইসা ইব্‌ন জাবের ওমর রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেনঃ “হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয়, তাদেরকে আমার সামনে পেশ করা হলে আমি উভয়কে প্রস্তরাঘাত করব”।

“ইব্‌ন ওমরকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, স্ত্রীকে তার স্বামীর জন্য হালাল করার বিধান কি, তিনি বলেন : এটা যেনা, যদি ওমর তোমাদের দেখতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি তোমাদের শাস্তি দিতেন”।

ইব্‌ন ওমর (রাঃ) কে হিল্লাকারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বলেন : “তারা উভয়ে যেনা অবস্থায় থাকবে, যদিও এভাবে তারা বিশ বছর পার করে, যদি আল্লাহ জানেন যে, এদের উভয়ের নিয়ত হচ্ছে স্ত্রীকে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করা”।

আল্লাহ্‌র কাছে হালাল কাজসমূহের মধ্যে সবচেয়ে ঘৃণিত হলো 'তালাক' ।

একবারে তিন তালাক প্রদানকারীকে হযরত উমর (রাঃ) শারীরিক শাস্তি দিতেন ।

.............................................

টীকাঃ হিল্লা বিয়ের প্রসঙ্গ টেনে ইসলামকেই বিতর্কিত করা হয় । বলা হয় ইসলাম হিল্লা বিয়ের মত অমানবিক সিস্টেম দিয়ে নারীকে অপমানিত করেছে । অথচ এই হিল্লা বিয়ের কোন অবস্থান ইসলামের বিধানে নেই । বরং প্রকৃতপক্ষে ইসলামে এটা একটা শাস্তিযোগ্য জঘন্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত ।

( বিস্তারিত জানতে সুরা বাকারা ২৯-৩০ আয়াত ও সুরা তালাক - তাফসীরসহ পড়ুন ।)

সোমবার, ৭ জুলাই, ২০১৪

অতীতচারী বৃষ্টিস্নাত বক

বৃষ্টিস্নাত একাকী বকের মত ভিজে ভিজে 
এই নগরীর ব্যস্ততা মাড়িয়ে ধানমন্ডি লেকে একটি বিকেল 
তবু এনে দেয় কিছুটা অবকাশ 
জীবন ও অতীত নিয়ে ভাববার ।

ভবিষ্যৎ !
সেতো জন্মলগ্ন থেকে ধোঁয়া ও কুয়াশার আড়ালে 
ঘোমটা পরে বসে আছে ।  গরীবেরা তাকে নিয়ে ভাবলে 
সে বড্ড অপমানিত হয় !
তার অবগুণ্ঠন উন্মোচন করতে হলে
কোন্‌ গোলকধাঁধা পেরিয়ে কতদূর যেতে হবে  
কে জানে !

তারচেয়ে এই ভালো , এক পা পালকের নিচে লুকিয়ে 
এতটুকু জলের ডোবায় একাকী বকের মত 
অতীতের পাতা উল্টিয়ে 
বৃষ্টিস্নান করি ।

একটি পুটিমাছ লেজ নাচিয়ে এসে ঠোঁটে ধরা দিলে নাহয়  
গাপুস গুপুস করে টপাটপ খেয়ে নেবো !
কানা বগির মত ওতেই আমার  কয়েকটা দিন    
বেশ চলে যাবে !  


রবিবার, ৬ জুলাই, ২০১৪

কবিকে আমার খুব ভয় হয় !

কবিকে আমার খুব ভয় হয় ।

কবি তাঁর দৃঢ়তাকে আড়াল করে আমাদের জন্যে
উন্মুক্ত করে রাখে নরোম হৃদয় 
কবি চায় আমাদের আন্তরিক প্রশান্তি
মানুষে মানুষে আত্মার মেলবন্ধন ।
আমাদের নাগরিক জীবনের বিষন্ন সময়ে 
কবি আনে ক্ষণিকের ভাবালু অবসর ।

তার মানে এই নয় , কবি স্টেনগান চালাতে জানেনা
মনে করোনা কবি ধ্যানমগ্ন কেউ  
জানা নেই বারুদের ব্যবহার
ভেবোনা কবির কণ্ঠ মৃদু ম্রিয়মান , জানেনা শ্লোগান
জানেনা বিদ্রোহের মৌখিক হাক ।

শোনো ।   
কবি স্টেনগান হাতে তুলে নিলে পৃথিবীর সমূহ বিপদ হবে
ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে এ নগর । কবির রুদ্রমূর্তি দেখে পলায়নপর সুনামি
ভাসিয়ে নিয়ে যাবে এর অধিবাসীদের !
কালবৈশাখী ভয় পেয়ে গেলে  
উড়িয়ে নিয়ে যাবে সুখ দুঃখ প্রেম ।  ভালোবাসা, সংসার ।
আমাদের সব ।


কবিকে আমার তাই খুব বেশি
ভয় হয় !

শনিবার, ৫ জুলাই, ২০১৪

চিঠি

ডাকপিয়নে ভরসা পাইনা আমি ।
ডাকপিয়নের হাত পেরিয়ে সব চিঠি পৌঁছোয় না
প্রাপকের ঠিকানায় । কখনো কখনো
ডাকপিয়ন হারায় চিঠি পথের মাঝেই
কখনোবা চিঠি পৌঁছুবার আগেই ,
প্রাপক হারিয়ে যায় কালের গর্ভে ।

কখনো সখনো চিঠি পৌঁছোয় ঠিকই । কিন্তু
ফিরতি চিঠি পাবার আগে 
প্রেরকই ফিরে যায় চিরন্তন ঠিকানায় । 



আমার চিঠিগুলো তাই , পাঠানো হয়নি কাউকে ।
কোথায় পাঠাবো , কাকে ? আমি তো জানিনা প্রাপকের নাম ,
চিঠি লিখবার ঠিকানা ! খাকি শার্টের রানার কখনো বলেনি এসে ,
'চিঠি দাও, বিলিয়ে দেবো !'



কিছু চিঠি তাই বন্দী রেখেছি হৃদয় সিন্দুকে ,
কিছু কিছু চিঠি ডায়েরীর গোলাপী পাতায়
কিছু চিঠি আটকে থাকুক দু'টাকার ডাকটিকেট লাগানো
হলুদ খামেই । 

যতদিন না অচিন প্রাপক নিজে এসে হাত বাড়িয়ে বলে ,
'কই আমার চিঠি , দিয়ে দাও !' দেখি,
কী সম্ভাষণ করেছো আমায় ? কী লিখেছো কুশল ,
'পরসমাচার' ! 

শুক্রবার, ৪ জুলাই, ২০১৪

নীল জলের সরোবর

একটা টলমলে নীল জলের সরোবরে
মাঝে মাঝে শরীরটা ভিজিয়ে নিলে
মন্দ হয়না বটে !


বাইরে কী প্রখর রৌদ্র ! ধুলোবালি উড়ে এসে জাপটে ধরছে 
আমার ঝাঁকড়া চুল । ডাইনীর আক্রমণে পর্যুদস্ত হতে হতে
কোনমতে টিকে আছি ।
ভেতরের উত্তাপ জেগে ওঠে বারবার
ঘেমে নেয়ে একাকার বিধ্বস্ত আমি 
দুচোখ বাঁচিয়ে পথের ধারে খুঁজে ফিরি অহর্নিশ 
একটা টলমলে নীল জলের সরোবর ।
ছোট হোক , নাইবা থাকুক শান বাঁধানো ঘাট
তবু শরীরটা ভেজানো দরকার ।

***

আমাকে তো পেরোতে হবে সুদীর্ঘ পথ । করতে হবে লড়াই
গন্তব্যের পথে ওঁৎ পেতে থাকা পালকে পাল জানোয়ারের সাথে
হিংস্র নেকড়ে হায়েনা শকুনের বিপরীতে । মরুতপ্ত লু হাওয়া পেরিয়ে
যেতে হবে অবিরাম । আমার কাঙ্খিত গন্তব্য যে
বহুদূরের পথ ।


ক্ষণেক বিরতি দিয়ে
একটা টলমলে নীল জলের সরোবরে
মাঝে মাঝে শরীরটা ভিজিয়ে নিলে তাই
মন্দ হয়না বটে !
অগ্রপথিক , যতদূর চোখ যায় কোথাও কি
অমন কোন সরোবরের নিশানা 
চোখে পড়েছে ? 

বৃহস্পতিবার, ৩ জুলাই, ২০১৪

মাটির আয়না

মাঝে মাঝে মনে হয়
একটা মাটির আয়না আমার খুব দরকার । ব্যাগের চোরাপকেটে রাখা
নিশ্চুপ আয়নাটার মত নয় । কথা বলা -
মুখরা আয়না ।


ঠোঁটের ভাঁজ কিংবা শার্টের রঙ নয় । আমার চোখের সামনে যে  
ভালোবেসে তুলে আনবে আমারই
হৃদয়ের কলুষ । আমার ভাবনার অন্ধত্ব ছাপিয়ে 
বাক্যবাণে চিরে দেবে বুকের জিঞ্জির । 

প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা আয়নাটার সামনে দাঁড়াবো
অথবা আমি না দাঁড়ালেও আয়নাই দাঁড়াবে এসে
আমার সামনে । অথবা আয়নাটা যেখানেই থাকুক, 
পাশে কিংবা পেছনে , ঘরের চৌকাঠ কিংবা আলমারির ওপর
আমি শুধু চাইবো সে কথা বলুক 
আমাকে নিয়ে । প্রবেশ করুক আমার অন্তরের একান্ত অন্দরমহলে 
যতটা গভীরে সম্ভব । ডুবুরির মত তুলে আনুক 
যতসব পঙ্কিলতা । চোখের সম্মূখে । 

বেশ জানি , আয়নার অভাবে দেখতে পাচ্ছিনা বলে 
এডিস মশার মত নিশ্চিন্তে বাসা বেঁধে একপাঁক কলুষ 
বংশবৃদ্ধি করে চলেছে ক্রমাগত আমার হৃদয় সরোবরের 
টলটলে স্বচ্ছ জলে ! 

***
তারপর 
হৃদয়ের কলুষ মোচনে আমি যদি একা একা ব্যর্থ হয়ে যাই
আয়নাটা আমাকে সাহায্যও করুক
একজন পরিশুদ্ধ মানুষ হতে ।

বুধবার, ২ জুলাই, ২০১৪

এপিটাফের আবেগ

তুমি নিশ্চিন্তে হেঁটে চলো গন্তব্যে 
হাতের মুঠোয় আটকে থাকে আমার আঙুল । আমি আছি তাই
কী এক অসীম নির্ভরতা জেগে ওঠে তোমার
প্রতিটি পদক্ষেপে ।



রাস্তার পুবপাশে সারি সারি এপিটাফ নিশব্দে নিশ্বাস ফেলে 
আমাদের ধীর লয়ে হেঁটে চলা দেখে 
হয়তো ওরা কিছু বলতে চায় । হয়তো শোনাতে চায় পৃথিবীর ইতিহাস ।
হয়তো উপহাস করে মানুষের জীবনকে ! ইনফ্রাসনিক সে তরঙ্গ
আমাদের কানে শব্দ জাগায় না । কিংবা
ঝরা পাতার মর্মর ধ্বনিতে 
চাপা পড়ে যায় । 



এইযে আমরা হাঁটছি  ইটগাঁথা শেওলাপিচ্ছিল পথ ধরে
সড়ক ছেড়ে নদীতীর । সেতু । 
সেতু পেরিয়ে অন্য কোথাও । এভাবেই হাঁটতে হাঁটতে একদিন 
মুঠো খুলে হয়তো দেখবে- হাতে নিয়ে বসে আছো
আমার নাম লেখা এক টুকরো এপিটাফ
ওতে কোন রক্তসঞ্চালন নেই । ওতে চুমু দিলে 
লাল হয়ে ওঠে না ক্ষণিকের তরে ।



যদি একফোঁটা চোখের জল ফেলতে চাও
যদি আমায় দিতে চাও একটা গোলাপ । আজই দিয়ে দাও
একহাতে একটা অশ্রুসিক্ত গোলাপ
তোমার মুঠোয় আরেকটি হাত রেখে , কিছুদূর হেঁটে যাই ।
এপিটাফের অপেক্ষায় বসে থেকোনা । মনে রেখো,
এপিটাফের কোন আবেগ নেই ।

মঙ্গলবার, ১ জুলাই, ২০১৪

শ্বশুর শাশুড়ির সেবা করা কি বউয়ের দায়িত্ব ?

- কিরে মনু, শুনলাম তোর নাকি বিয়া ?
- হ ভাই, কী করুম কন ? বাপ -মা'র বয়স হইছে, দেখভাল করার জন্যে একজন মানুষ তো দরকার । কী কন ?
- হ, তা অবশ্য ঠিকই কইছস । তয় বেবাকরে ঠিকমতন দাওয়াত টাওয়াত দেস কিন্তু কইলাম !

মনু এবং মনুর সমর্থন করার মত লোক বাঙালি সমাজে অহরহই মিলবে । নিজের বাপ - মায়ের 'খেদমতে'র দায় বউয়ের ওপর চাপিয়ে নিশ্চিন্ত হতে কে না চায় ? যৌথ পরিবার থেকে যদি কেউ বিচ্ছিন্ন হতে চায় , সেটাকেও বাঙালি সমাজে ভালো চোখে দেখা হয় না । আর এ ব্যাপারে আড়ালে আবডালেও বউকেই দোষ দেয়া হয় ।
......

কিন্তু ইসলাম একক পরিবারের ধারণাকেই প্রাধান্য দেয় । মাওলানা আশরাফ আলী থানভী তাঁর 'কোরআন হাদিসের আলোকে পারিবারিক জীবন' বইয়ে লিখেছেন, ছেলে মেয়েদের বিয়ের পর তাদেরকে পৃথক করে দিতে হবে । তারা আলাদা পরিবার গড়ে আলাদাভাবে পারিবারিক জীবন শুরু করবে ।
তাঁর মতে- পিতামাতার সেবা, খেদমত ও দেখাশুনা করার দায়িত্ব সন্তানের ; স্ত্রীর নয় । ছেলের বউ যদি শ্বশুর শ্বাশুড়ী নিয়ে এক পরিবারে থাকাকে পছন্দ করে তাহলে সেটা হতে পারে , কিন্তু যখনই বোঝা যাবে যে ছেলের বউ পৃথক হওয়াকে পছন্দ করছে , তখন সে ব্যবস্থাই গ্রহণ করা দরকার ।
মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর মতে, স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘর ও তাঁর খোরপোষের ব্যবস্থা করা স্বামীর ওপর স্ত্রীর হক এবং এ হকের দাবি পূরণ করা ওয়াজিব । এ ক্ষেত্রে পিতা মাতা স্ত্রীকে আলাদা করে রাখতে আপত্তি করলেও বা মত না দিলেও তা করা উচিৎ, ওয়াজিব আদায়ের জন্য ।

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউসুফ আলী তাঁর 'মু'মিনের পারিবারিক জীবন' বইয়ে এ ব্যাপারে আরো যোগ করেছেন- স্ত্রী গ্রহণের উদ্দেশ্য হলো পারিবারিক শান্তি লাভ । পিতামাতার খেদমত করা, পারিবারিক কাজ-কর্ম করা এসব এর উদ্দেশ্য নয় । স্বামী স্ত্রীর প্রধান সম্পর্ক হবে পবিত্র দাম্পত্য জীবন যাপন , যাতে শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় । অবশ্য স্ত্রী যদি সমঝদার ও বিনয়ী হয় তবে তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর খেদমত করতে আপত্তি থাকার কথা নয় । তা ছাড়া সাংসারিক কাজকর্ম করা- এটাও অভ্যন্তরীণ দায়িত্ব হিসেবে পালন করতে পারে । এটাও পারিবারিক শান্তির কারণ হতে পারে , কেননা প্রত্যেক স্বামীর পক্ষে কাজের লোক রেখে পাক-শাক করানো ও পারিবারিক অন্যান্য কাজ আঞ্জাম দেয়া সম্ভব নয় । কিন্তু এসব কাজ যদি পারিবারিক শান্তির ব্যাঘাত সৃষ্টি করে তাহলে স্ত্রীকে আলাদাভাবে রাখারই ব্যবস্থা করতে হবে স্বামীকে ।
......
......
বিশেষ কারণে পারিবারিক জীবনে ইসলামের বিধিবিধান নিয়ে পড়তে গিয়ে বেশ আশ্চর্য হচ্ছি ।
ইসলাম নারীকে চরম অবমাননাকর অবস্থা থেকে শুধু উদ্ধারই করেনি, এত বেশি অধিকার দিয়েছে যে, মাঝে মাঝে পুরুষ হিসেবে নিজেকে বেশ অসহায় মনে হয় । ইসলাম নারীকে সন্তানের দেখাশোনা করা ছাড়া প্রায় আর সব কিছু থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে । এমনকি ঘরের কাজকর্ম করতেও বউকে বাধ্য করা যাবে না ! পারলে বেতন দিয়ে অন্য লোক রেখে করান , নাহলে নিজেই করুন । আপনার বাপ-মায়ের সেবা বউ করলে সেটা তাঁর মহানুভবতা, না করলে দোষ দেয়ার সুযোগ নাই ।
নারীরা যদি তাঁদের অধিকার নিয়ে সচেতন হয় , তাহলে তো বেচারা পুরুষ প্রজাতির ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা হবে । এই জন্যেই বোধহয় একসময় পর্দা এবং শিক্ষাকে বিপরীত হিসেবে তুলে ধরে, পর্দার নামে নারীদের শিক্ষাবিমুখ করার চেষ্টা হয়েছিল । সম্ভবত এখনো ছেলেরা মনে করেন , এসব ব্যাপারে মেয়েরা যত কম জানে ততই মঙ্গল !

ফুটনোটঃ এইটা জেনে ভাইয়ারা সচেতন হোন । কিন্তু আপারা (যদি কেউ দেখে থাকেন) আজকেই রান্নাবান্না বন্ধ করে দিয়েন না । অধিকার থাকলেই তা সাথে সাথে আদায় করতে হয়না । আর তাছাড়া যুগ যুগ ধরে যে আচার-বিশ্বাস সমাজের গভীরে প্রোথিত হয়েছে তা একদিনে পরিবর্তন করতে পারবেন না । এতে বিশৃংখলা হবে । শ্বশুর শাশুড়ীর সেবা করা আপনার দায়িত্ব নয়, কিন্তু করতে পারলে নিশ্চয়ই ভালো । পরিবারে শান্তি রক্ষা করে ধীরে ধীরে আপনাদের অধিকার আদায় করবেন । আর শ্বশুর শাশুড়ীর সেবা করার দায়িত্ব না চাপালেও নিজের বাবা মায়ের সেবা করার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি কিন্তু নারী পুরুষ কাউকেই দেয়া হয়নি , সেটাও খেয়াল রাখতে হবে ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করার পর বিভিন্ন জনের প্রশ্নের জবাবে আরো যা বলেছিলাম -
১। মেয়েদেরকে ইসলাম কী অধিকার/সুযোগ দিয়াছেন তাহা না বলিলে তো উহারা মরিচীকার পেছনে ছুটিবে । যেমনটা হইয়াছে পর্দার ক্ষেত্রে । আপনারা যদি আগেই বলিতেন যে পর্দা করিয়া বাহিরের প্রায় সকল কাজই উহারা করিতে পারিবে , তাহা হইলে হয়তো উহারা আর পর্দা 'ছাড়িয়া' বাহির হইতো না । কিন্তু পর্দা করাইয়া ঘরে আটকাইয়া দেওয়ায় উহারা শেষে পর্দাকেই ছুড়িয়া ফেলিয়াছে , শয়তান ইহার সুযোগ লইয়াছে ।
যাহারা ভালো মনের অধিকারী , তাহারা এমনিতেই পিতা-মাতার সেবা করিবে । কিন্তু ইহা যে ফরয ওয়াজিব নহে তাহা জানা থাকা দরকার । না হইলে ছেলে/শ্বশুর/শাশূড়ির পক্ষ হইতে বউয়ের ওপর জুলুম করিবার সম্ভাবনা থাকে । অনেক ক্ষেত্রে ঘটিয়াছেও তাহাই । ফলে বিবাহের উদ্দেশ্যই এক পর্যায়ে ব্যর্থ হইয়া গিয়াছে । 


২।
অনেক সিঙ্গেল ফ্যামিলিকে দেখেছি যাদের প্রতি বাবা-মা খুবই সন্তুষ্ট । আবার অনেক যৌথ ফ্যামিলির বাবা মা ছেলে-বউয়ের ওপর সন্তুষ্ট না । এবং বাস্তবে এই অসন্তুষ্টি থেকেই পরবর্তীতে যৌথ ফ্যামিলি ভেঙ্গে যায় । সম্পর্ক খারাপ হয়ে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে গেলে পরে সেটাকে আর আগের জায়গায় নেয়া যায় না । বাবা-মা কে সন্তুষ্ট করার জন্য একসাথে থাকাটা জরুরী না । দেয়ার আর সো মেনি ফ্যাক্টরস টু স্যাটিসফাই প্যারেন্টস । আধুনিক যুগে চাইলেও আর পরিবারগুলো একত্রে থাকতে পারবে না । পাশ্চাত্যের প্রভাবের অভিযোগটা সত্য হবে না , কারণ পাশ্চাত্যের পরিবারগুলোর ভাঙ্গন মহামারী আকার ধারণের আগেই আলেমরা এই ব্যাপারে কথা বলে গেছেন । 

৩।
বউ যদি স্বামীর অধীন হয়, স্বামী যদি তার পিতা-মাতার অধীন হয়, তাহলে ব্যাপারটা কি দাঁড়াল?

মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর মতে, স্ত্রীর জন্য আলাদা ঘর ও তাঁর খোরপোষের ব্যবস্থা করা স্বামীর ওপর স্ত্রীর হক এবং এ হকের দাবি পূরণ করা ওয়াজিব । এ ক্ষেত্রে পিতা মাতা স্ত্রীকে আলাদা করে রাখতে আপত্তি করলেও বা মত না দিলেও তা করা উচিৎ, ওয়াজিব আদায়ের জন্য । 


৪। 
দায়িত্ব না / ফরজ-অয়াজিব না মানে কি 'করা যাবে না' ? বউ যদি এতটুকু মানবিক হয়, তাহলে সামান্য অনুরোধেই সব করবে । ব্যাপারটা হচ্ছে আপনি বউকে 'বাধ্য করতে' পারবেন না । বিষয়টা আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে একটু জটিল , কিন্তু অতটা জটিল না । আমি তো দেখি অনেকেই বাবা মাকে শহরে নিয়ে এসে নিজের সাথে রাখছেন । খুব ইজি । কিন্তু সব ভাইবোন একত্রে সংসার চালানোটা (পুরনো যৌথ পরিবার) আসলেই প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার । 

৫।
বাবা মায়ের সেবা করা সন্তানের ওপর ফরয । সন্তানের বউয়ের ওপর তো নয় । আর বউ শ্বশুর-শ্বাশুড়ির সেবা করতে বাধ্য নয় মানে এই না যে সব ধরণের সম্পর্ক ছেদ করবে । বউ তার স্বামীরও সেবা করবে, সন্তানেরও সেবা করবে, নিজের বাবা মায়ের সেবা করবে , আবার স্বামীর বাবা মায়ের সেবা করবে - এতকিছু তার পক্ষে সম্ভব নাও হতে পারে । এই ক্ষেত্রেই অনেক সময় জুলুম করা হয় । সে হয়তো বাধ্য হয়ে শ্বশুর শ্বাশুড়ির সেবা করছে কিন্তু তার মন পড়ে থাকে নিজের বাবা মায়ের কাছে । হয়তো তার নিজের বাবা মা অসুস্থ, তাঁদের সেবা করার সুযোগ তাঁকে দেয়া হচ্ছে না । 

৬।
সবাই মনে প্রানে বিশ্বাস করে বসে আছে - শ্বশুর-শাশুড়ির সেবা করা বউয়ের এক নম্বর দায়িত্ব ! একটু কম হলেই বউয়ের নামে গীবত চোগলখুরী শুরু হয়ে যায় । আর নিজের বাপ মা অল্প সেবাতেই অনেক খুশি হয়, কিন্তু শ্বশুর শাশুড়িকে সেবা করে সন্তুষ্ট করা নাইন্টি পার্সেন্ট ক্ষেত্রে সম্ভব না । তারা বউয়ের কোন একটা ভুল বের করবেই । 

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যেন নষ্ট না হয়

'রাজধানীর গেন্ডারিয়ায় তারাবীর নামাযে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ' এরকম একটা খবরকে কেন্দ্র করে অনেককেই দেখছি উস্কানি-উত্তেজনা ছড়াচ্ছেন । আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে কেউ এই ব্যাপার নিয়ে উস্কানি ছড়াবেন না । দেশ ভারত হয়ে গেছে, হিন্দুরা বাইড়া গেছে এ জাতীয় কথা বলবেন না । হিন্দু সম্প্রদায়ের গুটিকয়েক মাথাগরম অবুঝ লোকের জন্য পুরো হিন্দু সম্প্রদায় কোনভাবেই দায়ী হতে পারেনা । আর এই ঘটনা দেশ ভারত হয়ে যাবার প্রমাণও হতে পারেনা ।
এইসব বলে মুসলিমদের অপমান করবেন না । আমাদের দেশে আমরা হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক ধর্মের ভিত্তিতে দেখি না, প্রতিবেশি ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখি । বিভিন্ন সময় রোজা এবং পূজা একসাথে হয়েছে । আগামীতেও হবে । এই সমস্যাটা হিন্দু সম্প্রদায় এবং মুসলিমদের বয়স্ক লোকেরা আলোচনার মাধ্যমে খুব সহজেই সমাধান করেছেন । সাধারণত হিন্দুদের পূজায় সারাদিন মাইক বাজানো হয় । কিন্তু দিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের জন্য আধা ঘন্টা করে মাইক বন্ধ রাখা হয় । রমজানে তারাবীর জন্য অতিরিক্ত আধাঘন্টা একঘন্টা মাইক বন্ধ রাখতে হয় । বুঝিয়ে বললে এটা হিন্দুরা করবেন না তা আমার বিশ্বাস হয় না । অতীতে তাঁরা এরকম করেছেন । ভবিষ্যতেও করবেন । এতে পূজার ক্ষতি হয়না ।
যেখানে যেখানে সমস্যা মনে হয় , স্থানীয় ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা আলোচনা করুন । মুসলিম যুবকরা মন্দিরে গিয়ে পুরোহিতের সাথে যথাযথ সম্মান দিয়ে কথা বলুন । হিন্দু বন্ধুদের সাথে কথা বলুন । কোনভাবেই যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট না হয় । দাঙ্গা-সংঘাত লাগিয়ে কেউ যেন রাজনৈতিক বা অন্য কোন ফায়দা নিতে না পারে ।
তাঁদের ধর্ম আলাদা, এই কারণে যেন কোন হিন্দু কষ্ট না পান ।
যারা উস্কানি ছড়াচ্ছেন তারা মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি করছেন । আমি আলেম-মুফতি নই, কিন্তু এটুকু বলতে পারি - এতে যদি কোন সমস্যা সৃষ্টি হয় তার জন্য বিরাট পাপ হবে ।
সুতরাং যারা উস্কানিমূলক কথা বলেছেন তারা তাঁদের কথা প্রত্যাহার করুন ।