এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫

ফিনিক্স !

একপাল মাতাল বুলডোজার বহুদিন ধরে
ক্রমাগত গুঁড়িয়ে চলেছে- আমার চলার পথ;
এবং আমাকেও।
তবু আমি-
এক অদ্ভুত ধ্বংসস্তুপ হয়ে আজও বেঁচে আছি।
আমি রুপকথার ফিনিক্স নই; মাথা কাটা গেলে-
আমার শুন্য গর্দানে- একটাও নতুন মস্তক গঁজিয়ে ওঠেনি ।
উন্মত্ত বুলডোজারের অবিরাম আঘাত সয়ে সয়ে
বহুকাল আগেই দেহ-মস্তক বক্ষহীন হয়ে গেছি আমি, তবু
ধ্বংসস্তুপের গভীরে বাঁচিয়ে রেখেছি
হৃদয়ের কোমলতা ।
আর্দ্র হৃদয় ছাড়া
কীইবা অর্থ থাকে মানুষের জীবনে?

বৃহস্পতিবার, ২২ অক্টোবর, ২০১৫

দ্বিমুখ !

মহাবিরক্ত হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন রহমত সাহেব । ব্যাংকের কাজ শেষ করে বের হতে আজ আটটা পেরিয়ে গেছে । ব্যাংকারদের জীবনের এই দিকটা রহমত সাহেবের কাছে এখন অসহ্য লাগে । সকাল হতে সন্ধ্যা, বলা চলে রাত পর্যন্ত একটা জায়গায় প্রতিদিন একই কাজ করে যেতে হয় । দিনের আলো চোখে দেখা হয়না ।
এই যেমন আজ সাড়ে আটটা বেজে গেল অফিস থেকে বের হতে হতে । তারপরও শান্তি নেই । বাসায় ফেরা মানে আরেক যুদ্ধ । কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন, কোনো বাসে উঠতে পারছেন না । দুএকবার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু বাসের দরজার হ্যান্ডেল ধরারও সুযোগ হয়নি । মানুষজনের ওপর তিনি ক্ষুব্ধ । একটু চেপেটেপে দাঁড়ানো যায়না? তাহলে তো আরো দু-একজন উঠতে পারে !
বিরক্তির শেষ সীমায় পৌঁছে শেষমেষ একটা বাসে উঠতে পারলেন রহমত সাহেব । যথারীতি কন্ডাকটরের চিৎকার কানে আসতে লাগলো। ‘মামা একটু চাইপা খাড়ান, পেছনে খালি আছে । এ ভাই চাইপা খাড়ান না ক্যান?’
এমনিতেই তিরিক্ষি হয়ে ছিল, কিন্তু এবার মেজাজটা একেবারে বিগড়ে গেল রহমত সাহেবের । তিনি গলা চড়িয়ে বললেন- ‘ঐ ব্যাটা, তোগো পেট ভরে না? এত মানুষ তুলছস বাসের ভিত্রে, আর একটা লোকও তুলবি না কইলাম!’ নানা কথায় আরো কিছুক্ষণ গজরাতে থাকলেন তিনি ।
[পরিশিষ্টঃ ঠিক সেই মুহূর্তে বাসের দরজায় ঠাঁই না পেয়ে ফিরে গেলেন আরো একজন ক্লান্ত মানুষ । হয়তো তিনিও একজন অফিস ফেরত রহমত আলী...।]

সোমবার, ১৯ অক্টোবর, ২০১৫

একদিন হারিয়ে যাবো

অতীতের দিকে তাঁকালে এখন অনেক কিছুই ঝাঁপসা লাগে, সবকিছু কেমন অস্পষ্ট মনে হয়। কত চেনা মুখ, কত প্রিয় অপ্রিয় মানুষ, কত বন্ধুতা শত্রুতার কাহিনী, কত উজ্জ্বল দিন, স্মরণীয় রাত, কত গান কত কথা, সবকিছু অস্পষ্ট লাগে। সবকিছু যেন আজ ঝাঁপসা মনে হয়।
আজকের দিনগুলোও একদিন ঝাঁপসা হয়ে যাবে, অস্পষ্ট হয়ে যাবে এইসব ছবি । মূল্যহীন হয়ে যাবে এইসব অর্জন কিংবা ব্যর্থতা।
তারপর, একদিন আমিও ঝাঁপসা হয়ে যাবো । একদিন আমার চেহারাও অস্পষ্ট হয়ে যাবে, একদিন আমার কন্ঠটাও অচেনা হয়ে যাবে । আবছায়ায় ঢেকে যাবে আমার মুখ।
তারপর একদিন, পৃথিবীর কেউ- কোথাও আমার কোন চিহ্ন খুঁজে পাবে না ।

বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫

নির্বোধ !

কাঠঠোকরার মত ক্রমাগত ঠোকর মেরে আমার হৃদয়ে
অগণিত ক্ষত বানিয়ে চলেছে অদ্ভুত সময় !
আর আমি কিনা এক সুস্পষ্ট মরীচিকার পিছু নিয়ে
বদ্ধ পাগলের মত হো হো করে হাসতে হাসতে এগিয়ে চলেছি
অজানা গন্তব্যে !
.
অদ্ভুত ছলনায় আটকে পড়েছি আমি; পুরোটা শরীর
চোরাবালির মত ক্রমাগত ডুবে যাচ্ছে বস্তুচেতনায়।
কাল কী হবে- এই ভাবনায় ভুলে যাচ্ছি আজকের গান;
আর
ভবিষ্যতের কথা ভেবে নির্বোধের মত,
লু হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছি প্রতিদিন
মূর্ত বর্তমান।

বৃহস্পতিবার, ৮ অক্টোবর, ২০১৫

ঘোড়দৌড় !

নিরবচ্ছিন্ন খাদ্য সরবরাহ পেয়ে
হৃষ্টপুষ্ট হয়ে ওঠা একপাল টাট্টু ঘোড়ার সাথে
নেমেছি ঘোড়দৌড়ে; আমি এক
অদ্ভুত রেসের ঘোড়া।
জীর্ণশীর্ণ দেহ,
চার পায়ে জড়ানো নানান শেকল
তবুও ছুটছি, অথবা ভান করছি ছুটবার।
.
এই উদ্দাম রেসকোর্সে, বলা চলে ঝিনুক শামুকের মত
গড়িয়ে গড়িয়ে এগিয়ে চলেছি আমি
গন্তব্যের পানে। প্রশ্নটা হলো,
এইভাবে কি কখনো হর্সরেস জেতা যায়?

বুধবার, ৭ অক্টোবর, ২০১৫

'সাকিন'

অনেকদিন আগে বিটিভিতে একটা নাটক দেখেছিলাম। যতদূর মনে পড়ে নাটকের নাম ছিল 'সাকিন'। নাটকে একজন জমিদারের তালুকে অন্য একজন উত্তরাধিকারী তার অংশ দাবি করলে তাকে সুযোগ দেয়া হয়- সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যতদূর পর্যন্ত দাগ দিতে পারবে, সবটুকু জমি তাকে দিয়ে দেয়া হবে।
.
বেচারা পরদিন সূর্যোদয়ের পর থেকে দৌড়ানো শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত দৌড়ায়। সূর্য ডোবার সাথে সাথে তার দৌড়ানো শেষ হয়। কিন্তু সারাদিন দৌড়ের ধকল সইতে না পেরে সে সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। সারাদিন দৌড়িয়ে যে সম্পত্তি সে অর্জন করেছিলো তা তার কোন কাজে আসে না।
.
বাস্তবে আমরাও যেন একইভাবে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দৌড়াচ্ছি। জন্মের পর থেকে দৌড়াচ্ছি। হয়তো একসময় অনেক কিছু অর্জন হবে, কিন্তু ততদিনে আমাদের অবস্থা হবে আব্দুল করিমের গানের মত-
ইঞ্জিনে ময়লা জমেছে
পার্টসগুলো ক্ষয় হয়েছে
ডায়নামো বিকল হয়েছে
হেডলাইট দুইটা জ্বলে না।।

তারপর একসময়, সূর্য ডুবে গেলে, শুন্য হাতে আমাদের চলে যেতে হবে অচিন জগতে। সারাজীবনের অর্জিত সম্পত্তি কোনই কাজে আসবে না।
কোন মরীচিকার পেছনে কিসের নেশায় দৌড়াচ্ছি আমরা?