এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৪

বিষন্ন পেয়ালার দিনরাত্রি !

সারাদিন রাত অনাদরে পড়ে থাকি আমি । চুপচাপ । একেবারে
শব্দহীন । জোহর, আছর পেরিয়ে- এশার আযান হলে পরে
হঠাৎ সমগ্র শরীর জুড়ে ছলকে ওঠে- বৃষ্টির মত-
টলটলে স্বচ্ছ জল । ফোটানো, তীব্র গরম
অসহ্য সে উত্তাপ !
বুকের ভেতরটা আমার- সমস্ত হৃদয় যেন – জ্বলে পুড়ে
খাক হয়ে যায় ; মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশনের মত ! মুহূর্তকাল পরে–
খয়েরি রঙা পেটমোটা টি-ব্যাগ
কে যেন ছুঁড়ে দেয় নিতান্ত অবহেলায়, আনাড়ি হাতে । অবাক বিস্ময়ে
চেয়ে দেখি আমি , ধীরে ধীরে- বদলে যাচ্ছে আমার
ভেতরের রঙ ! ব্যথা- সর্বাঙ্গে এখনো ; মনে হয়
অন্তত একটা প্যারাসিটামল খাওয়া
খুব দরকার !

***

প্রথমে আমাকে স্পর্শ করে তোমার আঙুল । মধ্যমা
অথবা তর্জনি । কখনো কখনো
অনামিকাও । খুব শক্ত করে চেপে রাখে– যেন আমি হাত ফসকে না যাই । তারপর
তোমার ঠোঁট নেমে আসে
আমার উত্তপ্ত ঠোঁটে । সব ব্যথা নিমেষেই ভুলে যাই আমি
মরফিনের মত ! এ এক অবর্ণনীয় সুখ ! মনে হয়
স্বার্থক জনম আমার ! কে জানে, মানব ঠোঁটের চেয়ে উৎকৃষ্ট ব্যথানাশক
হয়তো আবিস্কৃত হয়নি আজো, হবেওনা কোনকালে !

***

তারপর তুমি কাকে যেন ডেকে বলো –
মলি, কাপটা নিয়ে যা । (ততক্ষণে) ফুরিয়ে গেছে আমার রঙিন তরল । কিংবা
হয়তো পড়ে আছে কিছু কালচে অধক্ষেপ , আমিও হয়েছি শীতল
নেই উত্তাপ । ফিরে যাই বিষন্ন মনে উচ্ছিষ্টের মত । তারপর-
তারপর তোমার স্পর্শের সুখস্মৃতিটুকু নিয়ে আমি
কাটিয়ে দেই আরো একটি (একঘেয়ে)
দীর্ঘ দিবস ।

বেশ আছি

বেশ আছি , কারণ -
বেশি কিছু চাইনি । আশা করিনা তাই হতাশাও নেই
এক মুঠো পান্তা, এক চিলতে লবণ
গনগনে আগুনে পোড়া একটা লালচে মরিচ
ক্ষুধা নিবারণের জন্যে এর চেয়ে বেশি কিছু
আছে কি প্রয়োজন ?
আমি তো রাক্ষস নই !

শনিবার, ৩০ আগস্ট, ২০১৪

কালাশনিকভ উদ্যান !

একটা উদ্যান গড়বো আমি, এ আমার
আজন্ম লালিত সাধ । গোলাপের বদলে
আমার বাগানজুড়ে থাকবে সারি সারি
'কালাশনিকভ' গাছ !
.
বৈশাখে আষাঢ়ে ভাদ্রে
ডালে ডালে ঝুলে থাকবে- ডালিমের মত -
তরতাজা গ্রেনেড ! চন্দ্রমল্লিকার বদলে
আমার স্বপ্নের উদ্যানে শোভাবর্ধন করবে
দূরপাল্লা স্নাইপারের ঝোপ !
উদ্যান প্রাঙ্গনে-
লুকোচুরি
ছি বুড়ি
দাড়িয়াবান্ধা নয় , সকাল বিকাল-
'Kill Zionist' খেলবে দুরন্ত শিশুরা !
আর আমি
রোজ রোজ নিয়ম করে তিন বেলা
গাছের গোড়ায় ঢেলে দেবো গ্যালন গ্যালন ডিজেল
পেট্রোল, অকটেন !
.
***
সমস্যা একটাই,
ভূমিহীন নিঃস্ব যাযাবর বেদুইন আমি
কালাশনিকভ ফলানোর মত উর্বর জমিন
কোথায় পাবো ?

শুক্রবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৪

আত্রাই নদীর তীরে

ইদানিং খুব একা একা লাগে সজীবের । একা লাগাটাই স্বাভাবিক । এমনিতে এই বয়সে হঠাৎ করেই সবাই বন্ধুহীন হয়ে পড়ে ।
স্কুলের বন্ধুদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটে এসএসসির পর , তাদের কথা হয়তো মনে পড়ে, খারাপ লাগাও কাজ করে , কিন্তু সেই শূন্যতা থাকেনা বেশিদিন । কিছুদিনের মধ্যেই কলেজে নতুন বন্ধু জুটে যায় । একই ব্যাপার কলেজ শেষেও । কলেজের বন্ধুরা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় , কিন্তু ভার্সিটির ক্লাস শুরু হলেই আবার জোটে নতুন মাত্রার বন্ধুরা । স্কুলের পর ভার্সিটি লেভেলেই বন্ধুত্ব হয় দীর্ঘদিনের । কলেজে তো মাত্র মোটে দুটো বছর , দেখতে দেখতেই পার হয়ে যায় । তার ওপর ক্লাস , কোচিং , প্রাইভেট , পরীক্ষা । সবমিলে কলেজের সময়টা কাটে খুব তাড়াতাড়ি । বন্ধুত্ব গাঢ় হবার সুযোগ পায়না সে সময়টায় ।

মেডিকেল কলেজে ছাত্রদের অফুরন্ত সময় নেই , সেভেন্টি ফাইভ পার্সেন্ট ক্লাস এটেন্ডেন্স । আইটেম , কার্ড , টার্ম , ওয়ার্ড ফাইনাল , ব্লক পোস্টিং , প্রফেশনাল পরীক্ষা নামের বিভীষিকা । তবুও পাঁচ ছয় বছর তো কম সময় নয় ! এতগুলো দিন একসাথে থাকা , খাওয়া , ক্লাস ওয়ার্ড করা , পরীক্ষা দেয়া , এটা সেটা প্রোগ্রাম করা , ক্লাস ফাঁকি দিয়ে , আইটেম পেন্ডিং দিয়ে ঘুরতে যাওয়া । এসব কিছুর মাঝেই বন্ধুত্ব দিন দিন বাড়তেই থাকে ।

তারপর একটা সময় আসে , পাশ করে যাবার পর । সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ে । একই হাসপাতালে ডিউটি , কারো হয়তো মেডিসিনে । কারো সার্জারিতে , কারো গাইনি । একজনের মর্নিং তো আরেকজনের নাইট । একই রুমে থেকেও দেখা হয়না । বিকালে কফি খাওয়ার সময় বয়ে যায় , সার্জারির বন্ধুকে ফোন করলে হয়তো রিসিভই করতে পারেনা , অথবা কোনমতে ফোনটা কানে লাগিয়ে বলবে, দোস্ত তোরা যা । আমি ওটিতে দাঁড়িয়েছি ।
মেডিসিনে ডিডটি যার সে হয়তো বলবে, দোস্ত আমি বের হতে পারবো না । একটা পেশেন্ট খারাপ , ডিকে ডেভেলাপ করেছে । গাইনিতে যার পোস্টিং সে হয়তো ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলবে , আমি একটু ঘুমাই রে । তোরা যা । কাল নাইট ডিউটি ছিল , মর্নিং করে এসে শুয়েছি । গাইনির নাইট মানে তো বুঝিস ।

কার্ডিওলজিতে দম ফেলার ফুরসত নেই । এদিকে ইসিজি করো , ট্রিটমেন্ট অর্ডার লেখো , ওষুধ কিনতে পাঠাও । ফলোআপ দাও । সিপিআর দাও । এর মাঝেই হয়তো কেউ ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে চলে গেছে পরপারে । মন খারাপ করে ডেথ সার্টিফিকেট লেখো ।

এর মাঝেও তবু এর ওর সাথে শিডিউল এক্সচেন্জ করে বন্ধুরা মিলে কোথাও খেতে বসা যায় । গভীর রাতে হোস্টেলের ছাদে বসে কথা বলা যায় ।
কিন্তু এর পরের সময়টা আরো ভয়ংকর । ইন্টার্নশিপ শেষ মানে ছড়িয়ে পড়ো । কে যে কখন কীভাবে কোনদিক দিয়ে কোথায় চলে যায় , ঠিকমত বিদায় নেয়াও হয়না । এই কথাটাও বলা হয়না- দোস্ত , গেলাম ।
কেউ শহর ছাড়ে , কেউ দেশ ছাড়ে । কেউ বিয়ে করে , কেউ টাকা জমায় , কেউ উচ্চতর ডিগ্রীর জন্যে নাক ডুবিয়ে পড়াশোনা করে , কেউ ট্রেনিং করে । কেউ বিসিএস দিয়ে পোস্টিং নিয়ে গ্রামে চলে যায় । এক অন্যরকম শুন্যতা , বন্ধুহীনতা , একাকীত্ব ঘিরে ধরে এসময় ।
যারা বিয়ে করে ফেলে তারা হয়তো একাকীত্ব থেকে কিছুটা মুক্তি পায় , কিন্তু যারা বিয়েও করেনি তাদের একাকীত্ব জেঁকে বসে । কারণ , গভীর বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার জন্য যতটা সময় একজন আরেকজনকে দেয়া দরকার , এসময় কারো হাতেই অতটা সময় নেই । সবাই ব্যস্ত জীবনের ঘোড়দৌড়ে । নতুন পরিচয় হয়তো হয় , কিন্তু বন্ধুত্ব যাকে বলে সেটা আর হয়না ।
এরকমই একটা সময় কাটাচ্ছে সজীব ।
বিসিএস দিয়ে সরকারি চাকরিতে ঢুকেছে । পোস্টিং হয়েছে যে উপজেলায় , সেটাকে গ্রাম বলাটাই শ্রেয় । মানুষগুলো এত সহজ সরল , ওদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে । দিনের বেলাটা তাই ভালোই কাটে হাসপাতালের ব্যস্ততায় । সময় গড়ায় , পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে একাকীত্ব ।
বিকেল হলেই হাসপাতাল এরিয়াটা খা খা করে । একা একা ঘরে বসে না থেকে মাঝে মাঝে রিক্সা ভাড়া করে বেরিয়ে পড়ে সজীব । আজও বেরিয়েছে । গন্তব্য আত্রাই নদী । দুই কিলো দুরে আত্রাই নদী । বড় নয় , ছোট নদী । পানি থাকে কম , কোথাও কোথাও হাঁটু পানি বলা চলে । সজীব শুনে অবাক হয়ে যায় , বর্ষায় নাকি এই নদীর পানিতেই তলিয়ে যায় আশেপাশের কয়েক গ্রাম । মেডিকেল কলেজে থাকতে প্রায় বিকেলেই যাওয়া হত পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত । এখানে সমুদ্র নেই , একটা নদী যে আছে তাতেই খুশি সজীব । রিক্সাওয়ালা টুংটাং শব্দে বেল বাজাচ্ছে । ফাঁকা কাচা রাস্তার দুধারে বাশঝাড় , বট গাছ গাবগাছ । কারো বাড়ির পেছন দিকটায় নারকেল সুপারির সারি । খারাপ লাগে না । সবকিছু ভালোই লাগে , সমস্যা শুধু একটাই , খুব একা লাগে এখানে । মোবাইল আছে বলে রক্ষা । তবু ফোনে কথা বলা যায় । যদিও মোবাইলে কথা বলাটা সজীবের পছন্দ না খুব একটা । ফোনে কথা বলে কখনো মন ভরেনা । ফোনে এক ঘন্টা কথা বলার চেয়ে সরাসরি দশ মিনিট কথা বলাও অনেক ভালো । মানুষের মুখের কথাই সব নয় । কথার সাথে চাহনি , আন্তরিক ভঙ্গি এসব অনেক গুরুত্বপূর্ণ । ফোনে অবলীলায় মিথ্যা বলা যায় । মন খারাপ থাকলেও বলে দেয়া যায় , ভালো আছি । সামনাসামনি কারো চোখের দিকে তাকিয়ে সহজে মিথ্যা বলা যায়না । কাছের মানুষেরা ঠিকই ধরে ফেলে , সামথিং ইজ রং ।
কিন্তু এখানে আর উপায় কী ?

রাস্তার পাশে একটা ছোট হোটেল । খুব সাধাসিধে একটা নাম , ভাই ভাই চা বিতান । সজীব দেখলো , গরম পরোটা তৈরি হচ্ছে । রিক্সা থামিয়ে দুজনের জন্য চারটা পরোটা আর দুকাপ চা অর্ডার করলো । চায়ে পরাটা চুবিয়ে খাওয়া শুরু করলো সজীব । চট্টগ্রামের মানুষদের এই অভ্যাসটা আছে , চায়ে পরোটা বা রুটি ভিজিয়ে খাওয়া । ব্যাপারটা কেমন বিদঘুটে লাগে সজীবের । কিন্তু মন খারাপ থাকলে বিদঘুটে কাজগুলোই করতে ইচ্ছে করে কেন যেন । ওর দেখাদেখি রিক্সাওয়ালাও ঐভাবে খেতে লাগলো ।

নদীর পুব পাড়ে একটা ঘাসে ঢাকা ঢিবির ওপর এসে বসেছে সজীব । পাশে একটা মসজিদে আসরের নামাজটা সেরে নিয়েছে । বেশ ভালো লাগছে এখানে । ঢিবিটার সামনের ঢালু জায়গাটাতে বেশ বড় বড় ঘাস । কাশফুল ফুটেছে বেশ কয়েকটা । আসলেই অসাধারণ লাগছে জায়গাটা । মোবাইলটা বের করে ফেসবুকে লগইন করে কিছুক্ষণ হোমপেজ স্ক্রল করলো । তারপর বিরক্ত হয়ে আবার লগআউট করলো । ফেসবুকটাও এখন আর ভালো লাগেনা । লাগবে কীভাবে ? বাঙালির রাজনীতি আগে ছিল শুধু চায়ের কাপে , এখন সেটা এসেছে ফেসবুকে । সামান্য রাজনৈতিক মতভেদ নিয়ে কত বিভেদ বিশৃঙ্খলা যে করছে এই বাঙালিরা । একে অপরের বিরুদ্ধে ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোই যেন কিছু লোকের মূল কাজ । শেখ মুজিবের চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার , জিয়ার চেয়ে বড় বিএনপি সেজেছে কেউ কেউ । কেউ আবার হয়ে গেছে স্বঘোষিত আলেম , এরা যখন যাকে ইচ্ছা কাফের ফতোয়া দিয়ে দেয় । এসব দেখে মনটা বিষিয়ে উঠছে দিনদিন । ভালো এতটুকু , এর মাঝেই বন্ধুবান্ধবদের খোঁজখবর পাওয়া যায় , বিভিন্ন সংবাদ পাওয়া যায় । আর তাছাড়া এই চরম একাকীত্বে তবু ভার্চুয়ালি হলেও বন্ধুদের সাথে থাকাটাও বা কম কিসে !

আনমনে মোবাইলের টাচস্কৃনে আঙুল চালাতে লাগলো সজীব । ফেসবুক এপটির নিচেই আরেকটা এপ । আগে থেকেই আছে , এই মুহূর্তে হঠাৎ যেন নতুন করে চোখে পড়লো সজীবের । মিগ ৩৩ ! হাহ । সে একটা সময় ছিল বটে । ফেসবুক জনপ্রিয় হবার আগের সময়টার কথা । মোবাইলে ইন্টারনেট আর মিগ ৩৩ । প্রথমে উদ্দেশ্য ছিল মোবাইলের বিল কমানো । সেসময় একমিনিট কলের দাম পড়তো সাত থেকে দশ টাকা । কোন পালস নেই । দশ সেকেন্ড কথা বললে সাত টাকা ! অথচ মিগে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করতে কয়েক টাকা খরচ হয় । সেজন্য জরুরি কথা ছাড়া বেশিরভাগ কথা হত মিগ চ্যাটেই । চ্যাট রুম বানিয়ে গসিপ করা ছিল ক্লাস চলাকালীন সময়টার উপযুক্ত সদ্ব্যবহার !
একটা আইডি খুলে সজীবও ঢুকে পড়ে একদিন সেই মিগের ভার্চুয়াল জগতে । আর মিগের মাধ্যমেই ‘ড্রিমবয় সজীবে’র ভার্চুয়াল পরিচয় হয় আকাশনীলার সাথে । শব্দটা ঠিক আকাশনীলা নাকি আকাশলীনা তা নিয়ে সজীব আজো কনফিউজড । হায় আকাশলীনা ! কোথায় আছে কে জানে ?

আকাশলীনাই প্রথম নক করেছিল সজীবকে । Hi ! হাই সম্বোধনটা তখন মিগের কল্যাণে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল । ভদ্রতার খাতিরে সজীবও রিপ্লাই দিয়েছিল । হাই ! তারপর হাই থেকে হ্যালো , টুকটাক কথাবার্তা । একটা সময় সজীব বুঝতে পারলো আকাশলীনা ওর প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছে । একদিন দেখা করতে চাইলো আকাশলীনা । বেঁকে বসলো সজীব । না , দেখা করবে কেন ? সজীব কেবল ফার্স্ট ইয়ারে , আকাশলীনা আরো ছোট । দেখা করার উদ্দেশ্য কী ? প্রেম করা ? এভাবে প্রেম করা কি ধর্মে স্বীকৃত ? শুধুমাত্র বিয়ের উদ্দেশ্যে হয়তো দেখা হতে পারে, অথবা খুব জরুরি কোন প্রয়োজনে । এখানে কোনটা আছে ?
আকাশলীনাকে স্পষ্ট করে সেকথা জানিয়ে দিয়েছিল সজীব ।
আকাশলীনাও আর কথা বাড়ায়নি । এতটা বছর , মানে গত পাঁচটা বছর আর কখনো নক করেনি সে । অবশ্য ফেসবুক জনপ্রিয় হবার পর থেকে মিগ কেউ তেমন একটা চালায়ও না বলা যায় । দিনে দিনে আরো কতকিছুই তো এসেছে । ভাইবার, নিমবায, হোয়াটসাপ, স্কাইপে ।

সজীব মিগে লগইন করার চেষ্টা করলো । পাসওয়ার্ড ভুলে গেছে । পাসওয়ার্ড তো দূরের কথা, কবে শেষ মিগে লগইন করেছিল সেটাও তো মনে নেই ! ফরগট পাসওয়ার্ড এ ক্লিক দিয়ে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করে লগইন করলো । আকাশলীনার শেষ মেসেজটা এখনো মনে পড়ে সজীবের ।
একদিন সে আসবে । পূর্ণ অধিকার নিয়ে আসবে ! কথাটার অর্থ এখনো পরিষ্কার করে বোঝেনা সজীব ।

পকেটে রাখা দ্বিতীয় মোবাইলে রিংটোন বেজে উঠলো । বড় আপা ফোন করেছে ।
-সালাম আলিকুম আপু । তুই তো হাজার বছর বাঁচবি ।
-ওয়ালাইকুম সালাম । রাখ তোর প্যাচাল । কোথায় তুই এখন ?
-আমি কোথায় তা দিয়ে কার কী আসে যায় ? আছি বনবাসে ।
-কার কী আসে যায় একটু পরেই বুঝবি । একটু সেজেগুজে নে । তোকে দেখতে গেছে মেয়েপক্ষ ।
-কীসব আবোল তাবোল বকছিস ? মেয়েপক্ষ মানে কী ?
-মানে মেয়ে নিজে । সাথে তার বড়ভাই । কাউকে কিছু না জানিয়েই চলে গেছে । এখন তোকে খুঁজে না পেয়ে ফোন করেছে আমাকে ।
-দুষ্টামি ছাড় । আসল খবর কী সেইটা বল ।
-দুষ্টামি না । সব ষড়যন্ত্র পাকা হয়ে গেছে । তোকে কেউ কিছু জানায় নি এতদিন । কিন্তু মেয়ে দেখাদেখি আমরা সেরে ফেলেছি । ওরাই প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল । আমাদেরও পছন্দ হয়েছে । তোর ছবি দেখেই নাকি মেয়েরও পছন্দ হয়েছে । একটু আগে ফোন করে জানালো ওরা এখন আত্রাই গেছে । তোকে দেখার জন্য । কী ডাঙর মেয়েরে বাবা , তোর হাড্ডি চিবিয়ে খাবে । এখন যা , একটু ফ্রেশট্রেশ হয়ে থাক ।
-হা , তুই বললেই হলো ? বানিয়ে বানিয়ে একটা কাহিনী বললি আর আমি পাগল হয়ে গেলাম ? ছোট হতে পারি , কিন্তু অত বোকা না আমি । আর কোন সে রাক্ষসী ? হাড্ডি চিবায় কেন ? বলে দিস, আমার হাড্ডি শক্ত আছে , দাঁত ভেঙে যাবে ।
-ঠিক আছে । থাক তুই তোর চালাকি নিয়ে । দেখবো তোর হাড্ডির জোর । শেষে তো বউয়ের আঁচল ছাড়া নড়বি না !

মোবাইল পকেটে রেখে কিছুটা ভাবনায় পড়ে গেলো সজীব । আচ্ছা, আপা যা বললো সেটা কি সত্য হতে পারে ? হলে কেমন হবে । ও যে এখানে এসেছে এটাতো কেউ জানে না । এসে ফিরে যাবে মেয়েপক্ষ ! যাক । এখানে নিশ্চিন্তে থাকা যায় ।
মোবাইলের স্ক্রিনে মিগ ওপেন আছে । পর্দায় চোখ দিয়েই হতবাক হয়ে গেল সজীব । একি ! আকাশলীনা লিখেছে এক মিনিট আগে । মিঃ ড্রিমবয় , একটু পেছনে তাকানো যায় ?
ঢিবির ওপরেই তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল সজীব । ভয়ে ভয়ে পেছনে ঘুরে তাকালো । একজন , হ্যা একজনই তো ! দাঁড়িয়ে আছে ছায়ামূর্তির মত । হঠাৎ করেই মাথায় এলো , দারোয়ান তো জানে ও মাঝেমাঝে এখানে আসে ! তাহলে ওই ব্যাটার কাছেই জেনেছে । হায় হায় , এ কী হলো ?
ছায়ামূর্তিটা এগিয়ে এলো । বললো , হাই ড্রিমবয় , আমি আকাশলীনা ! এলাম , পূর্ণ অধিকার নিতে !

সজীবের পেছনে গোধূলীর সূর্যটা টকটকে লাল । এতক্ষণে ডুবে যাওয়ার কথা ছিল, হয়তো এই মুহূর্তটা দেখার জন্যই এখনো ডুবে যায়নি ! সজীব নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না । সবকিছু ঝাপসা লাগছে তার । সামনে যে দাঁড়িয়ে আছে সেকি সূর্য না চন্দ্র, মানবী না অতিমানবী , পরী না পেত্নি, প্রেয়সী না রাক্ষসী তা ঠাহর করা এই মুহূর্তে সজীবের পক্ষে সম্ভব নয় ।

বৃহস্পতিবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৪

অধরা অপ্সরা !

ধানক্ষেতের আল ধরে হেঁটে হেঁটে অবিরাম
বহুদিন গিয়েছি আমি দিগন্তের পানে । আশৈশব,
পুরোটা কৈশোর
মাটিরঙা হাতে জড়াতে চেয়েছি একফোঁটা নীল ।
পুবের সূর্য ডুবেছে পশ্চিমে । মধ্যাকাশের চাঁদ
ফিরে গেছে কালপুরুষ পেরিয়ে আরো দক্ষিণে । তবু
দিগন্তের সাথে আমার দূরত্ব রয়ে গেছে
ধ্রুবক সংখ্যায় ।
.
সে যেন এক অধরা অপ্সরা !
দূর হতে অপলক চেয়ে থাকা যায় ,
ছুঁয়ে দেখবার নেশায় ছুটে যাওয়া যায়
বৈরাগী হয়ে কাটিয়ে দেয়া যায় পুরোটা যৌবন
তবু
স্পর্শ করা যায়না !
.
আমি কি বৈরাগী হবো ?
নাহ । ও আমার ধাতে সইবে না ।
তারচেয়ে ভালো মরিচীকার পেছনে ছোটা
কাছে গেলে তবু এটুকু জানা যাবে
এখানে কোনকালে কোন নদী ছিলনা ,
পিপাসার জল আমায় খুঁজে নিতে হবে
অন্য কোথাও ।

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

ইসরাইলি পণ্য বর্জন চালিয়ে যাচ্ছেন তো ?

অবশেষে দুই হাজার লাশের বিনিময়ে ইসরাইল স্থায়ী যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে । এতে গাজাবাসীরা যেমন খুশি , খুশি আমরাও । কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবেনা , ইসরাইল নামের বিষফোঁড়াটা কিন্তু পুরোমাত্রায় রয়ে গেছে । এই বিষফোঁড়া আবার যেকোন সময় কষ্ট দিতে পারে । বিষফোঁড়া না বলে ক্যান্সার বলাই বোধহয় ভালো । আপাতত ওষুধের প্রভাবে সে কিছুটা শান্ত হয়েছে । কিন্তু পুরোপুরি বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত স্থায়ী শান্তির আশা করা যাবেনা । এরকম যুদ্ধবিরতি এর আগেও হয়েছে । গাজা এর আগেও অবরোধমুক্ত ছিল । কিন্তু গত ষাট বছরের ইতিহাসে ইসরাইল নামের এই বিষফোঁড়া কিংবা ক্যান্সার বারবারই শান্তিতে বিঘ্ন ঘটিয়েছে । বারবার হামলে পড়েছে ফিলিস্তিনের নিরীহ মানুষের ওপর । চালিয়েছে গনহত্যা , উচ্ছেদ করেছে ভিটেমাটি থেকে । ফিলিস্তিনের মাটি দখল করে ইহুদী বসতি স্থাপন করেছে । এবারের এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি , অবরোধ শিথিল তারা কতদিন বজায় রাখবে বলা মুশকিল । মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক মার্কিন সাংবাদিক নোয়াম চমস্কি মনে করেন , ইসরাইল কখনোই মধ্যপ্রাচ্যে পুরোপুরি শান্তি বজায় রাখবে না । অতীতের মত তারা মাঝে মাঝেই হামলা করবে ।
আসলে ইসরাইলের মূলোৎপাটন এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন ছাড়া শান্তি আসবে না । হামাস নেতা খালেদ মিশাল বলেছিলেন , বর্তমান পৃথিবীতে একমাত্র দখলদার রাষ্ট্র অবৈধ ইসরাইল । এই দখলদারিত্বের অবসান হতেই হবে ।
গাজায় হামলার পর সারাবিশ্বে প্রো ইসরাইলি পণ্য বর্জন শুরু করে শান্তিকামী মানুষ । ইসরাইলের বিরুদ্ধে ঘৃণা বাড়ছিল ক্রমাগত । ইহুদিবাদ বিরোধী মানসিকতাও বাড়ছিল ইউরোপসহ সারাবিশ্বে । যুদ্ধবিরতি এবং অবরোধ শিথিলের পেছনে এটারও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল । জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধান নাভি পিল্লাই তাঁর বিদায়ের আগে শেষ বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদকে ইসরাইল ইস্যুতে তুলোধুনা করেছেন ।
হামাস এবং গাজাবাসীর অকুতোভয় প্রতিরোধ, বিশ্ববাসীর অকুন্ঠ সমর্থন ও প্রতিবাদ- এসবের সাথে সাথে এগুলোও ছিল ইসরাইলের পিছু হঠার পেছনের প্রভাবক ।
.
এই সাময়িক বিজয়ে আমাদের সন্তুষ্ট থাকলে চলবে না । ইসরাইলবিরোধী প্রচার প্রপাগান্ডা চালিয়ে যেতে হবে । আর প্রো ইসরাইলি পণ্য বর্জন চালিয়ে যেতে হবে । আমরা যদি আবার ইসরাইলি পণ্যে ফিরে যাই , যদি বেখবর হয়ে পড়ি , তাহলে নিশ্চিত করে বলা যায়, তা হবে ফিলিস্তিনি শহীদদের সাথে সুস্পষ্ট বেইমানি।

আগাম ধন্যবাদ !

কেউ আমায় ভুলেও গেলে বেমালুম  
তুলবোনা অভিযোগের আঙুল ।
জড়বস্তু নই বলে
এক ফোঁটা কষ্ট যদিবা আসে হৃদয়ে, ভেবে নেবো
সে শুধু মানবিক তাড়নায় ।
.
জানি এইসব কাব্যগাঁথা খুব বেশিদিন
মনে রাখবেনা ঘূর্ণায়মান পৃথিবী
কত মহাকাব্য হারিয়ে গেছে ফোরাতের মোহনায়
কত ইলিয়াড কত চর্যাপদ পাচিত হয়েছে
মহাকালের পরিপাকতন্ত্রে
সে খবর কে রাখে ? কে রেখেছিল কবে ?
যার রাখবার কথা , সেও তো মিশে গেছে
কোন এক বিরাণ নগরীর শুষ্ক ধুলোয় ।
যেমন করে হারিয়ে যাবো তুমি আমি
আমরাও ।
.
তবু লিখে যাবো কিছু হৃদয়ের কথা
হারিয়ে যাবার আগে পৃথিবীর বাতাসে ছড়িয়ে দিয়ে যাবো
কিছু হাহাকার কিছু সুখ কিছু ভালোবাসা ।
কেউ যদি কোন এক গোধূলী বেলায় রক্তাভ সূর্যের পানে চেয়ে
একবার স্মরণে আনো আমায় ; সেরেব্রাল কর্টেক্সের
কোন একটি মেমোরি সেলে কেউ যদি গেঁথে রাখো
এই অধমের নাম , আমিতো থাকবোনা সেদিন-
এই নাও বন্ধু , আজ তোমায়
আগাম 'ধন্যবাদ' দিলাম !

মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৪

হয়তো একদিন !

পৃথিবীটা দেখতে চাইলে বেরিয়ে পড়তে হবে এখনি । নইলে
কে জানে
হয়তো স্রোতস্বিনী নদীর নীলচে প্রবাহ
একদিন মাথানত করে চলে যাবে দূরে
ঘাড় পেরিয়ে নেমে আসা একগুচ্ছ কেশরাজির কাছে
হার মেনে !
.
কিংবা
হয়তো একদিন থেমে যাবে শুভলং ঝর্ণা
কারো ভেজা চোখে জমে থাকা
এক ফোঁটা টলটলে অশ্রুর তাপদাহে
হয়তো বিঠোফেনের কালজয়ী সুর লজ্জা পেয়ে
বেসুরো হয়ে যাবে একদিন
উচ্চ কম্পাঙ্কের চিকন স্বরগামে অস্ফুটে উচ্চারিত
একটি শব্দের মুর্ছনায় !
.
হয়তো পাহাড়ের অনাদিকালের মৌনতা ভেঙ্গে হবে খানখান
উঠোনে কারো মৃদু পদশব্দে !
হয়তো
এভারেস্ট চূড়ায় সূর্যোদয় দেখার সাধ মিটে যাবে
ফযর নামাজ থেকে ফিরে জানালার গ্রিলের ফাঁকে
অপেক্ষমান এক জোড়া চোখের পানে চেয়ে !

আর এভাবেই , হয়তো
পৃথিবী দেখার আশা ফুরিয়ে যাবে একদিন
সামান্য একটুকরো ভূমির অধিকারে !

সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৪

বাঙাল চরিত



১ ।
একজন প্রকৃত সুখী মানুষ , বন্ধু ডাঃ tanzim refat একদা বলিল –
‘আমরা যখন ক্যান্টনমেন্টের বাসায় থাকতাম , আমি চলার সময় রাস্তায় দাঁড়ানো সেন্ট্রি, দারোয়ানরা সালাম দিত । স্যালুট দিত । যে আগে সালাম দেয় তার মর্যাদা ইসলামে বেশি আর সবাইকে সালাম দেয়া দরকার জেনে পরে একসময় আমি সবাইকে আগে সালাম দেয়া শুরু করলাম ।
কয়েকদিন পর দেখি সেন্ট্রি-দারোয়ানরা কেউ আর সালাম স্যালুট দিচ্ছেনা ! কেউ কেউ সালামের উত্তরও দিচ্ছে না । কেমন অবজ্ঞার চোখে তাকায় ! ওদের ভাবটা এমন, আমাকে সালাম দিচ্ছে মানে ব্যাটা নিশ্চয়ই আমার চেয়ে নিচু স্তরের কোন কর্মচারী হবে !!’’ 


২।
অনেকক্ষণ ধরে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছেন আসলাম সাহেব । অফিস শেষে বাসায় ফেরার সময় প্রতিদিনই তাকে এই ঝক্কি পোহাতে হয় ।
এর আগে কয়েকটা বাস চলে গেছে । লোক বেশি, তাকে নিতে চায় নাই । বাসে উঠতে পারলেই হয়, কিছুদূর দাঁড়িয়ে গেলেও সামনে সিট পাওয়া যাবে । কিন্তু ব্যাটা হেল্পার উঠতেই দিলনা !
যাক, অবশেষে ঐযে একটা বাস আসছে । তিনি তড়িঘড়ি করে উঠে পড়লেন । পেছনের দিকে একটা সিটও পেয়ে গেলেন । আরো অনেক লোক উঠল ।  এখনো সবাই উঠতে পারেনি ।
লোক তুলছে হেল্পার ।
আসলাম সাহেব এবার চিৎকার দিলেন- ঐ ব্যাটা হেল্পার, আর কত লোক তুলবি ? তোগো পেট ভরেনা ? গাড়ি ছাড় !!! এত লোক তোলে এরা , অসহ্য !


৩।
যেখানে যে নিয়ম, ডাঃ আব্দুল্লাহ চেষ্টা করেন একজন সাধারণ নাগরিকের মত তার ভেতরে থেকে কাজ করতে । কোন অফিসে গেলেন, হয়তো সেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনেকেই । তিনিও লাইনেই দাড়ানপরিচয় না দিয়েই কাজ করার চেষ্টা করেননিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে ভাবতেই স্বচ্ছন্দবোধ করেন তিনি ।
তিনি গেলেন পাসপোর্ট অফিসে । অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছে । তিনিও দাঁড়ালেন । বেশিরভাগ লোকই হয়তো শ্রমিক হিসেবে বিদেশে যাবে ।
তিনি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করলেন, বিনা কারণে লোকদের ধমকাধমকি করছে অফিসের লোকজন । ফরমে এটাসেটা ভুল ধরছে । দালালের ছড়াছড়ি । তাঁর ফরমেও একটা ভুল বের করে ফেললো ! সিলটা অর্ধেক পড়ার কথা ছিল ছবিতে, আপনারটাতে একটু কম পড়েছে । যান, আবার নতুন ফরম পুরণ করে ঠিকমত সিল দিয়ে নিয়ে আসেন ! কয়েকজন দালাল এসে বললো- ভাইজান, চিন্তা কইরেন না । আমারে দেন, সব ঠিক করে দিমু ।
অবশেষে সারি থেকে বের হলেন ডাঃ আব্দুল্লাহ । তিনি ভেতরে ঢুকে দায়িত্বরত অফিসারকে নিজের পরিচয় দিলেন । সব ঠিক হয়ে গেল !

যেকোন অপরিচিত মানুষকে সাধারণভাবে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখার কথা । কিন্তু আমাদের দেশে প্রথমেই সবাইকে অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয় । তারপর যদি আপনার পরিচয় দেন এবং যদি সেটা তাদের উপরে হয়- তবেই আপনি হয়তো পাবেন কিছুটা সম্মানজনক আচরণ ।
এখন কোথাও গেলে পরিচয় দেন ডাঃ আব্দুল্লাহতাতে করে কাজ হয় তাড়াতাড়ি । মাঝে মাঝে মনে হয়- এটা কি অতিরিক্ত সুবিধা নেয়া ?
পরক্ষণেই মনে হয়, নাহ । এটাতো আমার এমনিতেই পাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু বাঙাল চরিতের কারণে তা আর হয়না...



৪।
গায়ে গতরে আমি মোটেই হোমরা চোমরা নই । মুরুব্বিরা বলেন , চেহারায় এখনো বাচ্চাভাবটা রয়ে গেছে ।  কিছুটা শিশুসুলভ স্বভাবও নাকি আছে ! এ ব্যাপারে বন্ধু রিয়াদ সবসময়ই অভিযোগ করে এসেছে, আর আমি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছি । আর এজন্য বিব্রতকর অবস্থাতেও কম পড়তে হয়নি ! তবে নাক টিপলে দুধ বের হবে কিনা তা অবশ্য জানিনা , কারণ নাক টেপার সাহস এখনো কেউ করেনি !
.
যাহোক আসল কথায় আসি । ভবঘুরে ব্যাচেলর বলে অনেক সময়ই হোটেলে খেতে হয় । যেখানে ক্ষুধা সেখানেই উদরাপ্যায়ন । খাদ্য গ্রহণের নিমিত্তে হোটেলে গিয়ে বসি । ওয়েটারকে নরম স্বরে সুন্দর করে ডাকি , ভাইয়া এখানে খাবার দিয়ে যান । তারপর মোবাইল গুতাতে গুতাতে অপেক্ষা করি । বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় , ডাক শোনার পরেও ওয়েটার ঢিমেতালে হাঁটাহাটি করছে । খোশগল্প করছে । এ টেবিলে ও টেবিলে যাচ্ছে । একেতো চেহারা সুরতে কম , তার ওপর এমন বিনয়ী ভাব আমার , সেজন্যে সম্ভবত আমাকে পাত্তা দেয়া অতটা জরুরি মনে হয়না ওয়েটারের । কী আর করা ?
বাধ্য হয়ে এবার আমি কন্ঠ পাল্টাই । মোটা গলায় বলি , ঐ কে আছস । এদিকে আয় । কী আছে দে দেখি ।
ওমা ! এইবার দেখি সুড়সুড় করে ভাত পানি নিয়া হাজির । হাত কচলাতে কচলাতে বলে , স্যার কী খাইবেন ?
আমি সেভাবেই মোটা গলায় তুই তোকারি লেভেল বজায় রেখেই বাকি অর্ডার করি । আর মনে মনে বলি , হায়রে বাঙাল জাত ! ভালো ব্যবহারের মূল্য বুঝলি না !
.
একই অবস্থা রিক্সাওয়ালাদের ক্ষেত্রেও । সুন্দর করে জিজ্ঞেস করি , ভাই যাবেন ? রিক্সাওয়ালার ভাব বেড়ে যায় । ভাড়া হাকে দ্বিগুনের কাছাকাছি । হয়তো মনে মনে বলে , পাইছি মক্কেল একটা ! শহরে মনে হয় নতুন আইছে ! 
পরের রিক্সাওয়ালাকে বলি , ওই খালি যাইবা ? হাহ , এবার সব ঠিক । ভাড়া নির্দিষ্ট ভাড়ার কাছাকাছিই বলবে । অথবা কাচুমাচু করে বিনয়ের সাথে বলবে , স্যার আপনেগো কাছে দুই পয়সা চাইয়া নিমুনা তো কার কাছে নিমু ?
.
পেশা হিসেবে কোন পেশাকেই ছোট করে দেখতে ইচ্ছে করেনা । সবাইকে সম্মান দিয়ে কথা বলতেই ভালো লাগে । ইসলামের শিক্ষাও সেটিই কিন্তু  এ যে বাঙাল জাত , তা করিতে দিলে জাতের মর্তবা রহিবে কীরুপে ? 
৫। 
মানুষকে চেনার জন্য বাঙালি সবসময় তার খারাপ দিকটা নামের সাথে জুড়ে দেয়। যেমনঃ খাঁটো আবুল, কানা বাবুল, ল্যাংড়া মকবুল, কাইল্যা মফিজ, কানকাটা জগলু, মোটা অমুক, চিকনা তমুক ইত্যাদি। এইটা আমাদের কীরকম মানসিকতা? মানুষের ভালো কোনকিছুই কি আমাদের চোখে পড়ে না? 
৬। 
কেউ কোনো ভালো কাজ করে প্রচার করলে অনেকেই বলতে আসেনঃ লোক দেখানোর জন্য এসব করছেন!! আমি বলি- ভাই, যার যে  উদ্দেশ্যই থাকুক না কেন, সবাই ভালো কাজ করুন। আল্লাহর ওয়াস্তে হলেও ভালো কাজ করুন। লোক দেখানোর জন্যে হলেও ভালো কাজ করুন। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হলেও ভালো কাজ করুন। সুনাম অর্জনের জন্য হলেও ভালো কাজ করুন। দুর্নাম ঘুচানোর জন্য ভালো কাজ করুন। সওয়াবের জন্যে ভালো কাজ করুন, গুনাহের কাফফারা হিসেবে ভালো কাজ করুন। যার যে উদ্দেশ্যই থাকুক, সকলের সকল ভালো ও কল্যাণকর কাজের প্রতি সর্বদা আমার অকুন্ঠ সমর্থন। একটা ভালো কাজ করে মন চাইলে গোপন রাখুন, মন চাইলে ফেসবুকে বাহারি ঢঙ্গে ছবি দিন। আমি 'লাইক' দিবোই দিবো- কথা দিলাম। 


রবিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৪

এই সময়ের অভিধান !

অদ্ভুত এক সময়ে এসে পড়েছি আমরা
চোখের সামনে সবকিছু খুল্লাম খুল্লা করে 
কদর্য শরীর নিয়ে হেঁটে যাবে বারবণিতার দল -
সে কিছু নয় ! শুধু তুমি আমি আমরা কিছু বললেই
বড্ড অবমাননা হবে তার !
.
এই সময়ে 
চেতনার দগদগে ঘা হতে নেমে আসা পচা রক্তপ্রবাহকে
তুলনা করতে হয় নায়াগ্রা ফলসের সাথে !
দুর্গন্ধে নাক চাপা দিলেও 
প্রশংসায় পঞ্চ ষষ্ঠ অষ্টমুখ হয়ে বলতে হয়
আহ ! এ আমি কী পেলাম !  
মেশক আম্বরের ঘ্রাণ ! 
রাজার শরীরে যদি নাও থাকে এক টুকরো আবরণ 
তবুও বলতে হয়- ব্রাভো ! কী অসাধারণ ! 
এমন জমকালো মোটা জামা আমি 
জীবনেও দেখিনি মাইরি !  
.
অদ্ভুত এক সময়ে এসে পড়েছি আমরা । 
এখন বাকস্বাধীনতা মানে গণিকার রুপকীর্তন 
লাথির অপর নাম 'বিশেষ পদসঞ্চালন' ! 
এখানে এখন 'খুন' হয়না মানুষ । বরং
কেউ কেউ ঢং করে রং মেখে 
শুয়ে থাকে রাস্তায় ! 
এই সময়ের অভিধানে 
ধর্ষণ মানে প্রগতির প্রতিশব্দ । মানবাধিকার হলো 
দানবের নাগপাশে ক্রমাগত পিষ্ট হবার 
অপূর্ব সুযোগ ! 
.
আহ ! কী সৌভাগ্য আমাদের ! 
হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রীর দেশে 
অদ্ভুত সুন্দর এক সময়ে এসে পড়েছি আমরা !  
.

ছোট বড়

ছেলে যতই বড় হোক , মা বাবার কাছে নাকি সবসময় শিশুই থাকে ! কথাটা আগে বুঝতাম না । কেন , এরকম হবে কেন ? চোখের সামনে একটা ছেলে বড় হচ্ছে তারপরেও ছোট মনে হবে কেন ?
পরে এক সময় ব্যাপারটা আমার বুঝে আসে । শুধু বাবা মা নয় , অন্য সবার ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই রকম । আসলে ব্যাপারটা বয়স বৃদ্ধি বা বড় হওয়ার সাথে জড়িত না , ব্যাপারটা হলো বয়সের পার্থক্যের । আমার জন্মের সময় যার বয়স ছিল চল্লিশ , আমার বয়স যতই হোক , তিনি বেঁচে থাকলে বয়সের পার্থক্য সবসময় চল্লিশই থাকবে ! আমার বয়স বাড়বে , তাঁর বয়সও বাড়বে ! ফলে আমাদের বয়সের পার্থক্য থাকবে ধ্রুব ! যখন আমার বয়স হবে পঞ্চাশ , তখন তাঁর হবে নব্বই । ফলাফল - আমি মধ্যবয়স্ক পাকাদাঁড়িওয়ালা একজন লোক হলেও তখনো তাঁর কাছে সেই 'সেদিনের ছেলেটা'ই রয়ে যাবো !

শনিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৪

কলম বন্ধুকে পত্র !

প্রিয় কার্লোস ,
তুমি যদি দেখতে চাও আইনের শাসন , তবে
তোমাকে আসতেই হবে বাংলাদেশে ।
বাংলাদেশ চেননা? খুঁজে দেখতে পারো গিনেস বুকে
উদ্ভট মানুষের উদ্ভট কীর্তির মাঝে হয়তো তুমি খুঁজে পাবে
একটি রাষ্ট্রের নাম । বাংলাদেশ ! 
একদা এদেশ নাকি চলেছিল উদ্ভট উটের পিঠে । আর এখন 
দেশের পিঠেই সওয়ার হয়েছে
উদ্ভট গন্ডারের দল ! 
.
তুমি যদি দেখতে চাও আইনের শাসন , তবে 
তোমাকে আসতেই হবে বাংলাদেশে । এখানে 
ইচ্ছে হলেই সুস্থ সবল মানুষকে ধরে নিয়ে যায়
পোষাকধারীরা ! তারপর ,
আইনের শাসন তাকে পরদিন বসিয়ে দেয় হুইল চেয়ারে ! 
রাত পোহালে কাউকে খুঁজে নিতে হয় হাসপাতালের আইসিইউতে 
কাউকে পাওয়া যায় শীতলক্ষ্যায় , কাউকে ভিনদেশি কারাগারে 
কাউকে কখনোই নয় !
আইনের শাসন যদি দেখতে চাও ,
তোমাকে আসতেই হবে বাংলাদেশে । তবে তার আগে 
অবশ্যই ভালো করে চিনে নিতে হবে 'পাখি ড্রেস' ,
নইলে তুমিও পড়তে পারো আইনের শাসনের কবলে ! কারণ , 
ওটাই যে এখন এই দেশে আইনের শাসনের 
সবচেয়ে প্রিয় পোশাক !

বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০১৪

নির্লিপ্তের বর্ষাকাহন

আকাশ জুড়ে ভিড় করেছে নিকষ কালো মেঘ ,
মাঠে ঘাটে নেমেছে অবিরল বর্ষা 
সব কিছু আজ আমার কাছে অর্থহীন
আমার কী ?
বলতে পারো,
হাহাকার ছাড়া বর্ষার জলধারা
কবে কী এনেছে আমার জন্যে ?


ঝরো ঝরো বর্ষণে
হয়তো বেণুবনে বায়ু নাড়ে এলোকেশ
কাগজের নৌকোর মত যাচ্ছে ভেসে সোনার তরী
কদম গুলো পড়ছে ঝরে মৃদু হাওয়ায়
মহুয়ার বনে ছড়িয়ে আছে 
নাম না জানা ফুলের গন্ধ !  
আমার কী ?
সবকিছু আজ আমার কাছে অর্থহীন
বলতে পারো ,
হাহাকার ছাড়া বর্ষার জলধারা
কবে কী এনেছে আমার জন্যে ? 

বুধবার, ২০ আগস্ট, ২০১৪

এনে দাও একটা লাগাম

চাইনা ১০৮ টা নীলপদ্ম  
বিশ্বসংসার তন্ন তন্ন করে কেউ আমায় খুঁজে এনে দাও
একটা লাগাম
পাগলা ঘোড়ার মত আমার কল্পনা ছুটছে দিগ্বিদিক   
ওকে যেন আটকাতে পারি হাতের মুঠোয় 
সাত সাগর তেরো নদী পেরোবার আগেই ।
আর কতকাল বদমাশটাকে ছুটতে দেয়া চলে নিরুদ্দেশ 
তেপান্তরের মাঠে ?


হীরে মণি মুক্তো নেই আমার সিন্দুকে 
আছে শুধু চার প্রকোষ্ঠের একটা হৃদয়
ওটাই দিয়ে দেবো চাও যদি বিনিময় 
তবু এনে দাও একটা লাগাম ,
পাগলা ঘোড়ার মত দুরন্ত আমার কল্পনা 
সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে সাতআকাশ পেরিয়ে 
ছুটছে শুন্যতায়
ওকে আটকাতে হবে হাতের মুঠোয়
সাত সাগর তেরো নদী পেরোবার আগেই ।
আর কতকাল বদমাশটাকে ছুটতে দেয়া চলে নিরুদ্দেশ
তেপান্তরের মাঠে ? 

মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

নাগরিক হতে হবে তাই !

পুরনো দিনের মত বিলিয়ে মোলায়েম আলো
ধীর পায়ে ফিরে যায় চাঁদ 
পুরনো পথে । 
ফুরিয়ে যায় পূর্ণিমা রাত 
ক্রমাগত গভীর থেকে গভীরতর হয়ে । 
এককালের চন্দ্রালু কিশোর
আজ আর জোছনায় খোঁজেনাকো মায়া
নেই তার এতটুকু অবসর, চোখ তুলে তাকাবার-
একবার আকাশের পানে ।
তারা গুনবার নেইতো সময়    
নাগরিক হতে হবে তাই 
যেন সে ভুলেই গেছে ফেলে আসা কৈশোরের ছায়া
নাগরিক ব্যস্ততায় !

ঝুম বৃষ্টি নামে নিঃসঙ্গ পিচঢালা রাস্তায়
টেলিফোনের তারের ওপর ভিজে  নিশ্চুপ দাঁড়কাক 
কাদা ছিটিয়ে চলে যায় নব্য ধনীদের চকচকে গাড়ি 
সবুজ পাতা বেয়ে বৃষ্টি নামে মাটির বুকে
ফোঁটা ফোঁটা অশ্রুর মতন ।
হয়তোবা ডাকে ব্যাঙ দূর গাঁয়ে কোন এক ডোবার ধারে
আদিম তাড়নায় । ঝাপসা হয়ে ওঠে বহুতল ভবনের কাঁচের জানালা
সেকালের বৃষ্টিপাগল কিশোর আজ তবু ভ্রুক্ষেপহীন
নাগরিক হতে হবে তাই 
মগ্ন সে কোন এক ব্যস্ত নগরীর
নাগরিক ব্যস্ততায় ! 

সোমবার, ১৮ আগস্ট, ২০১৪

ফেসবুকীয় অহংকার !

***
অহংকারের অনেক রুপ । এর মধ্যে সবচেয়ে হাস্যকর রুপটি হলো ফেসবুকীয় অহংকার । প্রায়ই দেখি , ফেসবুক আইডি ধারী ভ্রাতাগনের কেউ কেউ স্ট্যাটাস দেন- 'খামোশ এই করবেন না ! সেই করবেন না ! ফ্রেন্ডলিস্ট থেকে বের করে দেবো ! আনফ্রেন্ড করে দিতে বাধ্য হবো !' ইত্যাদি ।
তো আসলে এর দ্বারা কী বোঝায় ? এর দ্বারা তাদের কিছুটা অহংকার প্রকাশ পায় । ফেসবুকে কেউ কাউকে আনফ্রেন্ড করলে , ব্লক করলে কারো কিছু আসে যায় না । এটা বাস্তব জীবন না । বাস্তবে পরিচিত নয় এমন যে কেউ এখানে একটা নাম ছাড়া আর কিছু না । যাকে আপনার পছন্দ নয় তাকে আপনি নীরবেই আনফ্রেন্ড করতে পারেন । ডিস্টার্ব করলে ব্লক করতে পারেন । সেজন্য ফেসবুকে হম্বিতম্বি করাটা চরম হাস্যকর একটা ব্যাপার । (এইরকম কিছু দেখলেই আমি হাসি থামাতে পারিনা !)
ফেসবুকীয় বেকুবরাও কম যায়না । আমি অমুক অমুক সেলিব্রেটির ফেসবুক ফ্রেন্ড !! অমুকের সাথে আমার চ্যাটে আলাপ হয়েছে !!
ওরে খাইছে ! কী বিশাল অর্জন !!!
অতিমাত্রায় বেকুব এবং অহংকারী , ইহাদের নিকট হইতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই ।
***
সেলিব্রেটি হিসেবে যাদের কথা পত্রপত্রিকায় আসে, তারা প্রকৃতপক্ষে মানুষের মনোরঞ্জক । কেউ গান গেয়ে, কেউ অভিনয় করে মানুষের মনোরঞ্জন করেন । সেই হিসেবে ফেসবুক সেলিব্রেটি কথাটাও ঠিক আছে । ফেসবুক সেলিব্রেটি = যাহারা ফেসবুকে জনগনের মনোরঞ্জন করেন !
বহুদিন ধরিয়াই তো দেখিতেছি , হালকা ঠাট্টা কৌতুক আর পারস্পরিক ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোর বাইরে ইহারা ভালো কিছু দিয়াছেন বলিয়া চোখে পড়ে না । তথাকথিত ফেসবুক সেলিব্রেটিগন হইতে আমি সাধারণত শতহস্ত দূরে থাকিতে চেষ্টা করি । ইহাদের নিকট হইতেও আল্লাহ্‌র কাছে পানাহ চাই ।

রবিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৪

বিশ্বাসের সুতোয় গেঁথেছি হৃদয়মাল্য – ২

মুহাম্মাদ (সাঃ) যে আসলে নবী নন, তাঁর পাঠকৃত কুরআন যে আসলে আল্লাহ্‌র কালাম নয়- এটা প্রমাণ করার একটা মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করেছিল আবু লাহাব । আর এর ফলে মিথ্যা প্রমাণিত হবার বদলে কুরআন আল্লাহ্‌র কালাম ও মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নবী হবার ব্যাপারে আরো একটি প্রমাণ যোগ হয় ।

মক্কী যুগের মাঝামাঝি সময়ে নাযিল হয় কুরআনের 'আল লাহাব' সুরাটি । এতে রাসুলের(সাঃ) চাচা আবু লাহাবের সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয় ।

পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে শুরু  
১। আবু লাহাবের হস্তদ্বয় ধ্বংস হোক এবং ধ্বংস হোক সে নিজে
২। কোন কাজে আসেনি তার ধন-সম্পদ ও যা সে উপার্জন করেছে 
৩। সত্বরই সে প্রবেশ করবে লেলিহান অগ্নিতে
৪। এবং তার স্ত্রীও-যে ইন্ধন বহন করে 
৫। তার গলদেশে খর্জুরের রশি নিয়ে ।  

 এই সুরা নাযিলের পর আবু লাহাবের সামনে একটা মোক্ষম সুযোগ তৈরি হয় ইসলামকে মিথ্যা প্রমাণ করার । যদি সে লোক দেখানোর জন্যে হলেও ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’  কালেমা পাঠ করে মুসলিম হয়ে যেত, তাহলেই প্রমাণ হয়ে যেত- মুহাম্মাদ (সাঃ) আসলে কোন নবী নন । আর তাঁর তেলাওয়াত করা কুরআন আসলে আল্লাহ্‌র পাঠানো কালাম নয় । মিথ্যা প্রমাণিত হত কুরআনের ভবিষ্যদ্বাণী । তাহলে একথা বলার সুযোগ তৈরি হত যে, যদি কুরআন আল্লাহ্‌র কালামই হত, তাহলে তো এরকম ভুয়া সুরা নাযিল হতনা !

কিন্তু আবু লাহাব আসলে ইসলামের বিরোধিতায় এতটাই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তার আর কোনভাবেই ইসলামের আলোয় আসা সম্ভব ছিলনা । এই সুরার প্রতিটি অক্ষর আবু লাহাবের জন্য সত্য বলে প্রমাণিত হয় ।

এই সুরা নাযিল হবার পরেও আবু লাহাব সাত-আট বছর বেঁচে ছিল । আবু লাহাব মারা যায় বদর যুদ্ধের পর । সবাই বদর যুদ্ধে গেলেও আবু লাহাব নিজে না গিয়ে তার বদলে অন্য একজনকে পাঠায় । এই সময়ে সে এমন রোগে আক্রান্ত হয় যে, তার সারা শরীরে দুর্গন্ধযুক্ত ঘা হয়ে যায় । এমনকি তার পরিবারের কেউও তার ধাঁরেকাছে ঘেষতো না । বদরে পরাজিত হয়ে সবাই ফিরে দেখে আবু লাহাব মরে গেছে । কিন্তু তার লাশের দুরবস্থা ও দুর্গন্ধের কারণে তাঁকে দাফন করার কোন উদ্যোগ এমনকি তার ছেলেরাও নেয়নি । কয়েকদিন পরে গর্ত খুঁড়ে লম্বা বাঁশের লাঠি দিয়ে কোনমতে তাকে গর্তে ফেলে মাটিচাপা দেয়া হয় ।


ইসলামের বিরোধিতায় সর্বশক্তি নিয়োগ করেও কোন লাভ হলো না আবু লাহাবের । ধ্বংস হয়ে গেল আবু লাহাবের দুই হাত, কোন কাজে আসলো না তার ধন সম্পদ সন্তান সন্ততি , আর আখেরাতে তো সে থাকবেই  জাহান্নামের আগুনের লেলিহান শিখায় ।

আবু লাহাবের এই পরিণতি আর কুরআনের এই ভবিষ্যৎবাণীর সত্যতা রয়ে গেল পৃথিবীর মানুষের জন্য বিশ্বাসের উপাদান ও পথপ্রদর্শক হিসেবে ।

শনিবার, ১৬ আগস্ট, ২০১৪

রুমাকে ভালোবেসেছিলাম

ক্ষেত্র ফল শূন্য

চান্দের গাড়ি থেকে রুমা বাজারে নেমেছি , এদিক ওদিক তাকাচ্ছি । এরই মাঝে ছোটখাটো চেহারার লুঙ্গি- শার্ট পরা একজন এসে জিজ্ঞেস করলো- আপনারা কোথায় যাবেন ? বললাম , আমরা বগা লেক যাবো । কেওক্রাডং যাবো । রাইখ্যং লেক যাবো ।
সে বললো- আমি আপনাদের গাইড !
আমরা তো অবাক । বলা নেই কওয়া নেই, আমাদের পছন্দ অপছন্দের বালাই নেই - সে নিজে নিজেকে আমাদের গাইড নিয়োগ দিয়ে ফেললো !
আমরা বললাম , আপনার নাম কী ?
উত্তরে সে বললো, ক্ষেত্র বাবু ।
আমরা বললাম , আমরা তো বেলাল গাইডকে খুঁজছি ।
ক্ষেত্র জানালো, বেলাল নাই । অন্য টুরিস্ট নিয়ে পাহাড়ে গেছে । আমিই আপনাদের গাইড ।

গাইডদের সমিতি আছে , সমিতির অফিসে গেলাম আমরা । ক্ষেত্রবাবুই নিয়ে গেল । ওটাই নিয়ম । কোন গাইড যদি পর্যটক নিয়ে পাহাড়ে যেতে চায়, তাকে প্রথমে গাইড অফিসে রিপোর্ট করতে হবে । গাইড সমিতির সেক্রেটারির সাথে দেখা হলো সেখানে । গাইডদের ফি কেমন সেটা জানলাম । বগালেক পর্যন্ত গেলে দিনপ্রতি পাঁচশ টাকা । আর বগালেক পার হলে প্যাকেজ বিল পাঁচহাজার টাকা । গাইডের থাকা খাওয়ার বিল টুরিস্টের ।
গাইড সমিতির সেক্রেটারি জাকির সাহেব জিজ্ঞেস করলেন , আমরা এই গাইডকে পছন্দ করেছি কিনা ।
আমরা বললাম , আমরা তো গাড়ি থেকে নামার পর উনাকে পেয়েছি । কিন্তু আমরা আসলে বেলাল নামে একজনকে খুজছিলাম । সে আমাদের পরিচিত । আমাদের বন্ধুদের গাইড হিসেবে আগে সে কাজ করেছে ।
ক্ষেত্রবাবু বললেন, আমি এদের প্রথমে ‘ধরেছি’, আমিই গাইড হবো !
আমরা বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়লাম । এরই মাঝে বেলাল চলে এলো । কেউ একজন তাকে খবর দিয়েছে যে আমরা তার খোঁজ করছি । বেলালকে দেখেই আমাদের পছন্দ হলো । প্রায় আমাদের সমবয়সী । ইয়াং, এনার্জেটিক ম্যান । ওকে নিয়ে দীর্ঘ পথ হাঁটা সম্ভব । ওদিকে ক্ষেত্র বাবু মধ্যবয়স্ক , দুর্বল মানুষ । তারওপর এরই মধ্যে আমরা জেনে গেছি- ক্ষেত্রবাবু আসলে একজন মাদকাসক্ত । তার কাজকর্মের ঠিক নাই । এর আগেও পর্যটক নিয়ে গিয়ে সে ভজঘট করেছিল ।

আমরা এরপর গেলাম আর্মি ক্যাম্পে । পাহাড়ে রওয়ানা দেবার আগে অবশ্যই আর্মি ক্যাম্পে গাইডসহ রিপোর্ট করতে হয় । সেখানে সৈনিকদের সাথে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করলাম আমরা । আমাদের ডাক্তার পরিচয় দিলাম , আর্মিতে থাকা আমাদের বন্ধুদের পরিচয় দিলাম ।
বেলাল এবং ক্ষেত্রবাবু দুজনেই আমাদের সাথে এসেছে । এখানেই চূড়ান্ত ফায়সালা হবে – কে হবে আমাদের গাইড । আর্মির সিপাহী আমাদের জিজ্ঞেস করলেন – আপনারা কাকে নিতে চান ? আমরা বললাম – বেলালকে ।
ক্ষেত্রবাবু বললে – আমি আগে ধরেছি , আমিই গাইড হবো ।
সিপাহী বললেন – এখানে ধরাধরির তো কিছু নাই । ট্যুরিস্ট যাকে পছন্দ করবে- সেই হবে গাইড ।
আর্মি ক্যাম্পের রেজিস্টার খাতায় আমরা আমাদের পাঁচজনের নাম ঠিকানা লিখলাম । বেচারা ক্ষেত্রবাবুর গাইড হওয়া হলো না ।
ক্ষেত্র হলো ফলশূন্য !  


আমরা হলাম ‘বন্দু’


গাইডের সাথে পরামর্শ করে আমরা পাহাড়ে আগামী চারদিনের খাওয়ার জন্য চাল ডাল তেল মরিচ পেঁয়াজ কিনলাম । পাহাড়ে হাঁটার জন্য কিনলাম বিশেষ ধরণের প্লাস্টিকের স্যান্ডেল । দাম দেড়শ টাকা প্রতি জোড়া । দুপুরের খাওয়া খেয়ে নিলাম একটা হোটেলে । খারাপ না । একটা ল্যান্ড রোভার ভাড়া করলাম বগা লেক পর্যন্ত । আড়াই হাজার টাকা । সব ব্যবস্থা অবশ্য আমাদের সাথে পরামর্শ করে গাইডই করছিলো ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই খেয়াল করলাম – আমাদের গাইড বেলাল সবাইকে ‘বন্দু’(উচ্চারণটা ‘বন্ধু’ নয় কিন্তু ! ) বলে সম্বোধন করছে !  বুঝলাম , পাহাড়ে ‘বন্দু’ সম্বোধনটা বেশ চলে । যে কয়দিন পাহাড়ে আছি, আমরা এদের ‘বন্দু’ হয়েই থাকবো !
  
পথের বাপই বাপরে মনা...


মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করে বের হবার পর বন্ধুরা বেশ বিচ্ছিন্নই হয়ে পড়েছিলাম । মান্না দে'র 'কফি হাউজ'  গানের মত । নিখিলেশ প্যারিসে, মইদুল ঢাকাতে । আমরা ছিলাম কেউ ঢাকায় , কেউ চট্টগ্রামে, কেউ ফেনীতে । ছাত্র থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রায় সবখানেই ঘুরেছি । বান্দরবানেও গেছি , কিন্তু চিম্বুক পর্যন্ত । বগা লেকটা যাওয়া হয়নি । কেওক্রাডং বিজয় বাকি ছিল ।  এবার বের হয়েছি সেই অভিযানে । এপ্রিলের আট তারিখ ঢাকা থেকে আমি এবং মাসুম গিয়ে পৌঁছলাম চট্টগ্রামে । সেখানে রাতে থেকে বন্ধু জনি, জুয়েল এবং ইয়াসিনকে সাথে নিয়ে ভোরবেলা বহদ্দারহাট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে উঠে পড়লাম বান্দরবানের বাসে । তখন সকাল সাড়ে সাতটা প্রায় । সকালের নাস্তা বাসেই করলাম । বাসভাড়া জনপ্রতি ১১০ টাকা ।
এগারোটা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম বান্দরবান শহরে । সেখানে আমাদের দুবছরের জুনিয়র সাইফের বাসা । সেসময় সাইফ বাসাতেই ছিল, ওকে ফোন করে ডেকে নিলাম । আরেকদফা নাস্তা করে আমরা সাইফের সাহায্যে একটা চান্দের গাড়ি ভাড়া করলাম রুমা বাজার পর্যন্ত । চান্দের গাড়ি হলো পাহাড়ে চলার উপযোগী খোলা জিপ । ভাড়া ২২০০ টাকা লাগলো । বান্দরবান থেকে আমাদের বিদায় দিল সাইফ ।

বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের পথটাও অসাধারণ । আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথ । গাড়ি চলেছে ঝড়ের বেগে । আর আমরা গাইছি – পথের বাপই বাপরে মনা ... পথের মা-ই মা ! পথের মাঝেই খুঁজে পাবি, আপন ঠিকানা !
দুপুর একটা নাগাদ পৌঁছে গেলাম রুমা বাজারে ।

পা পিছলে আলুর দম !


রুমা বাজার পার হয়ে কিছুদূর পরেই পুলিশ চেক পোস্ট । পুলিশ চেক পোস্টেও রিপোর্ট করতে হয় । একটা লেকের ওপর পুলিশ চেক পোস্টটি । আমরা ওখানে নেমে আবার আমাদের নামধাম লিখে দিলাম । গাড়ি আবার ছুটলো আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথে । চরম রিস্কি পথ । গাড়ির চাকা পিছলে গেলেই অক্কা পাবার সমূহ সম্ভাবনা । গাড়ি গিয়ে পড়বে গভীর খাদে । দূরে দেখা যাচ্ছে আঁকাবাঁকা সাঙ্গু নদী । শো শো বাতাস । সে এক অন্যরকম অনুভূতি ।


পাহাড়ের ফাঁকে বয়ে চলেছে সাঙ্গু নদী ।পাহাড়ের ফাঁকে বয়ে চলেছে সাঙ্গু নদী ।

প্রায় দুঘন্টা পর আমরা বগালেকের নিচের পাহাড়ে এসে পৌছলাম । এখান থেকে আরো আধা ঘন্টার পথ ।
বগা লেকের নিচ থেকে ওঠা এই রাস্তাটা আরো বেশি রিস্কি । প্রায় ৬০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে গাড়ি উঠবে । মনে হবে যেন গাড়ি উল্টেই যাবে ! আমরা সবাই শক্ত করে গাড়ির সিট ধরে রেখেছি । মনে হচ্ছিলো যেন ঝুলে আছি । লা ইলাহা ইল্লা আনতা সোবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ জোয়ালেমিন দোয়া পড়ছি । এরই মাঝে একবার একটা বাঁক নেয়ার সময় গাড়ি আটকে গেল ! গাড়ির চাকা শুন্যের ওপর ঘুরতে লাগলো । এখন যদি গাড়ি পেছনের দিকে পড়ে যায় – কমপক্ষে দুই হাজার ফুট নিচে গিয়ে পড়বে ।
আমরা কালেমা পড়া শুরু করলাম ।



কয়েক মিনিট পরে আল্লাহর রহমতে কীভাবে যেন আবার গাড়ি সামনে এগুতে শুরু করলো । অল্পের জন্য আমরা পা পিছলে ‘আলুর দম’ হওয়া থেকে বেঁচে গেলাম ।


অবশেষে বগা লেক  


অবশেষে যখন বগা লেকে পৌছলাম , তখন বিকেল হয়ে গেছে । ওখানে পৌঁছেও আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হলো । বগা লেকের পাড়ে আমরা উঠলাম লারামের কটেজে । এখানে আরো দুএকটা কটেজ আছে ।
পাহাড়ের ওপরে ছোট ছোট ঘর বানিয়ে তৈরি করা হয়েছে পর্যটকদের জন্য এইসব কটেজ । ভাড়া যথেষ্ট কমই বলা যায়- প্রতিরাত জনপ্রতি একশ টাকা । আমাদের গাইড জানালো- এদের কাছে একশ টাকাই অনেক কিছু ।
দেখা হয়ে গেলো কটেজের মালিক লারাম দাদার সাথেও । ব্যাগপত্র রেখে আমরা লেকে নেমে গেলাম গোসল করতে ।


বগা লেকে ফুটে আছে শাপলা ফুল ।বগা লেকে ফুটে আছে শাপলা ফুল ।

বগা লেকের প্রকৃত নাম - বগাকাইন হ্রদ । স্থানীয়রা সংক্ষিপ্ত করে বগা লেক বলে থাকে । অবশ্য তাদের বাংলা এক্সেন্টে এটার উচ্চারণ শোনায় 'বুগা লেক' !  পাহাড়ের ওপরে এতবড় একটা লেক, আশ্চর্যই বটে । এটি  বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতার স্বাদু পানির একটি  হ্রদ ।  বান্দরবান  শহর থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে বগাকাইন হ্রদের অবস্থান ।  কেওকারাডং পর্বতের গা ঘেষে, রুমা উপজেলায় । সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ১,৫০০ ফুট ।


উপর হতে বগা লেকের চিরসবুজ দৃশ্য ।উপর হতে বগা লেকের চিরসবুজ দৃশ্য ।

বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিকদের মতে বগাকাইন হ্রদ মৃত আগ্নেয়গিরির  জ্বালামুখ অথবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিন্ডের পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আবার ভূমিধ্বসের কারণেও এটি সৃষ্টি হতে পারে বলে মনে করেন । বগা লেকের পানি সুপেয় । লেকের জলে প্রচুর শ্যাওলা, শালুক, শাপলা ও অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ এবং প্রচুর মাছ রয়েছে।


বগালেকের রুপকথা


বগালেকের স্থানীয়রা বম,  মুরং বা ম্রো, তঞ্চংগ্যা এবং ত্রিপুরাসহ অন্যান্য আদিবাসী। স্থানীয় আদিবাসীদের উপকথা অনুযায়ী, অনেক কাল আগে পাহাড়ের গুহায় একটি ড্রাগন বাস করতো । বম ভাষায় ড্রাগনকে "বগা" বলা হয়। ড্রাগন-দেবতাকে তুষ্ট করতে স্থানীয়রা গবাদী পশু উৎসর্গ করতেন। কিন্তু লোকেরা এই ড্রাগন দেবতাকে হত্যা করলে চূঁড়াটি জলমগ্ন লেকে পরিণত হয় এবং গ্রামগুলোকে ধ্বংস করে ফেলে  ।

এই হ্রদটি তিনদিক থেকে পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত। এর গভীরতা হচ্ছে ৩৮ মিটার (১২৫ ফুট)। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ হ্রদ— এ থেকে পানি বের হতে পারে না এবং কোনো পানি ঢুকতেও পারে না। এর আশেপাশে পানির কোনো দৃশ্যমান উৎসও নেই। তবে হ্রদ যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগা ছড়া নামে পরিচিত। হ্রদের পানি কখনও পরিষ্কার আবার কখনওবা ঘোলাটে হয়ে যায়। কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। এই প্রস্রবণ থেকে পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের পানির রঙ বদলে যায়।

স্থানীয় অধিবাসীদের ধারণা এই হ্রদের আশেপাশে দেবতারা বাস করে। এজন্য তারা এখানে পূজা দেন ।

জীবনটা কত ঠুনকো !


রাতে বগা লেকের পাড়ে বসে আমরা পাঁচ বন্ধু অনেক জমানো গল্প করলাম । এক ফাঁকে হয়ে গেল জম্পেশ ঝালমুড়ি খাওয়া । নয়টার দিকে ভাত খেয়ে আমরা শুয়ে পড়লাম । শরীর ক্লান্ত ছিল সারাদিনের জার্নির শারীরিক ও মানসিক ধকলে । আর তাছাড়া পরদিন সকালেই আমাদের রওনা দিতে হবে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে ।

সকালে খুব ভোরে উঠে নাস্তা করেই আমরা আমাদের ব্যাগ কাঁধে নিলাম । কেওক্রাডং যাবার আগে আমরা হারমুন পাড়া নামে একটি পাড়ায় বিরতি দেবো । সেটাই হবে আমাদের পরবর্তী স্টেশন । ওখানে ব্যাগ রেখে কেওক্রাডং যাবো , ফিরে এসে রাতেও সেখানেই থাকবো । পরদিন সেখান থেকেই রওনা হবো রাইখ্যং লেক – স্থানীয় ভাষায় 'পুকুর পাড়ে'র উদ্দেশ্যে ।

বগা লেক থেকে কেওক্রাডং এর দূরত্ব প্রায় ১৫ কিমি । আমরা একটা ট্রাকে উঠলাম । ট্রাক যাবে হারমুন পাড়া পর্যন্ত, ৫-৬ কিলোমিটার পথ । সে আরেক ভয়ংকর জার্নি । ৬০-৭০ ডিগ্রি খাড়া পাহাড় বেয়ে উঠছে ট্রাক , আবার নামছেও খাড়া পাহাড়ের গা বেয়ে । ভয়ে আত্মারাম খাঁচাছাড়া হবার জোগাড় ।
দুর্বল চিত্তের কারো পক্ষে এই পথে গাড়িতে যাওয়া অসম্ভব । অজ্ঞান হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে । এইসময় মনে হচ্ছিলো- জীবনটা কত ঠুনকো । যেকোন সময় এইসব পাহাড়ের কোন এক খাদে আমাদের সলিল সমাধি হয়ে যেতে পারে ।


কেওক্রাডং চূড়ায় আমরা



হারমুন পাড়ায় গিয়ে আবার কটেজ ভাড়া করলাম আমরা । একটা কাঠের ঘরের মেঝেতে থাকার ব্যবস্থা । ওখানে ব্যাগ রেখে আমরা হাঁটা শুরু করলাম কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে ।

একের পর এক পাহাড় পেরিয়ে হাঁটছি তো হাঁটছি । মাঝে মাঝে জিরিয়ে নিচ্ছি । সবাই হাতে একটা করে লাঠি নিয়েছি । হাঁটার সময় লাঠিটা অনেক মানসিক শক্তি যোগায় ।

চলছি পাহাড় ডিঙ্গিয়ে কেওক্রাডং এর পথে । লেখক কালো পোষাকে ।চলছি পাহাড় ডিঙ্গিয়ে কেওক্রাডং এর পথে । লেখক কালো পোষাকে ।

পথে পড়লো দার্জিলিং পাড়া । দার্জিলিং পাড়ায় বম উপজাতিদের বাস । ধর্মে তারা খ্রিস্টান । বমরা অন্যান্য উপজাতির তুলনায় বেশ অগ্রসর । বমদের নিজস্ব ভাষা আছে । তবে নিজস্ব বর্নমালা নেই । ইংরেজী বর্ণমালাতেই বম ভাষায় লিখতে হয় । খ্রিস্টান মিশনারীরা বম ভাষায় বাইবেল ট্রান্সলেট করে দিয়েছেন ।


দার্জিলিং পাড়ায় বম ভাষায় লিখিত একটি নোটিশ ।দার্জিলিং পাড়ায় বম ভাষায় লিখিত একটি নোটিশ ।

দার্জিলিং পাড়ায় বসে কিছুক্ষণ জিরিয়ে নিলাম । প্রত্যেক পাড়ায় একটা করে দোকান আছে পাহাড়িদের । দোকানে বসে পাহাড়ী কলা খেলাম পেট পুরে । সাথে ঝালমুড়ি । ক্যাসেট প্লেয়ারে একটা গান বাজছিল – ঝিরি ঝিরি লাসাই লাসাই... এই কথাটা কেন যেন মাথায় ঢুকে গেল । বাকি পথটা আমরা বম ভাষার এই গানের কলি আওড়াতে আওড়াতে হাঁটতে লাগলাম ।

দার্জিলিং পাড়া পার হয়ে কেওক্রাডং । দুপুর বারোটা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম কেওক্রাডং চূড়ায় । উড়িয়ে দিলাম বাংলাদেশের পতাকা ।


কেওক্রাডং পর্বতের ঢালে এভাবেই লেখা আছে তার নাম ।কেওক্রাডং পর্বতের ঢালে এভাবেই লেখা আছে তার নাম ।

কেওক্রাডং বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। এক সময় এটিই বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ ছিল । আমরা ছোটবেলায় বই-পুস্তকে এটার কথাই পড়েছি । তবে বর্তমানে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ তাজিং ডংকে ধরা হয় । যদিও বাংলাদেশের বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তক এবং সিআইএ ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকে এখনও একে সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে উল্লেখ করা হচ্ছে।

বান্দরবান জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী কেওক্রাডং এর উচ্চতা ৪৩৩০ ফুট । কেওক্রাডং চূড়ায় একটি সেনা ক্যাম্প আছে । সেনাবাহিনীর ফলকে কেওক্রাডং এর উচ্চতা লেখা হয়েছে- ৩১৭২ ফুট ।
কেওক্রাডং শব্দটি মারমা ভাষা থেকে এসেছে। মারমা ভাষায় কেও  মানে 'পাথর', ক্রো  মানে 'পাহাড়' আর এবং ডং  মানে 'সবচেয়ে উঁচু'। অর্থাৎ কেওক্রাডং মানে সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়।


কেওক্রাডং পেরিয়ে


কেওক্রাডং বিজয় শেষে আমরা রওনা হলাম কেওক্রাডং পেরিয়ে আরো সামনে । পাসিং পাড়া । পাহাড়ের পাড়া গুলো সাধারন লোকালয়ের মত নয় । এসব পাড়ায় ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টি পরিবার থাকে । পাসিং পাড়ায় আছে ১৮ টি পরিবার । পাসিং পাড়ার প্রতিষ্ঠাতা পাসিং দাদার সাথে দেখা হল । কথাও হলো । তার বাসায় বসে আমরা আবার ঝালমুড়ি এবং পাহাড়ি কলা দিয়ে পেটপুজো করলাম । প্রায় ঘন্টাখানেক রেস্ট নিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম হারমুন পাড়ার উদ্দেশ্যে ।

হারমুন পাড়ায় এসে গোসল করার জন্য আমাদের নামতে হলো পাহাড়ের নিচে ঝিরিতে । ঝিরি হলো পাহাড়ের নিচ দিয়ে প্রবাহিত ঝরণার পানির গতিপথ । সেগুলোই পাহাড়ে পানির উৎস ।
দুই আড়াই হাজার ফুট নিচে নেমে গোসল করে এলাম ।  গভীর রাত পর্যন্ত কাটালাম বারান্দায় চেয়ার পেতে । চারিদিকে নিস্তব্ধ । মোবাইলে নেটয়ার্ক নেই ।  বারবার শুধু মনে হচ্ছিল- এই পাহাড়ে , এইভাবে বসে বসে আর কি কখনো আকাশের তারা দেখা হবে ?


রাইখ্যং লেকের উদ্দেশ্যে


সকালে উঠেই নাস্তা সেরে আমরা আবার রওনা দিলাম । এবারের লক্ষ্য রাইখ্যং লেক । এবার ব্যাগসহ হাঁটতে হবে আমাদের । কারণ , আমরা আর এই পথে ফিরবো না । রাইখ্যং লেক থেকে ভিন্ন পথে আমরা চলে যাবো রুমা বাজারে ।

ব্যাগ কাঁধে, হাতে লাঠি । সারি বেঁধে গাইডসহ আমরা ছয়জন হাঁটতে লাগলাম । হাঁটছি হাঁটছি আর হাঁটছি । পাহাড় পেরিয়ে পাহাড় ।

হাঁটতে হাঁটতে পথে আরেকটি পাড়া পড়লো । মুরং অধ্যুষিত মেনতক পাড়া । মেনতক পাড়ার উঠোনে দেখলাম বেশ কিছু শূকর ছানা ঘোরাফেরা করছে । মনের আশ মিটিয়ে ওদেরকে ডাক দিলাম- ঐ শুয়োরের বাচ্চা ! এদিকে আয় !


মেনতক পাড়ায় অবাক চোখে আমাদের দেখছে মুরং শিশু ।মেনতক পাড়ায় অবাক চোখে আমাদের দেখছে মুরং শিশু ।


ঝিরিঝিরি লাসাই লাসাই


ঘন্টা তিনেক হাঁটার পর ঝিরিপথের দেখা পেলাম । পাহাড়ের ঝরণা থেকে নেমে আসা পানির গতিপথকেই ঝিরি বলা হয় । ঝিরিপথ তুলনামূলক সহজ । ঝিরির পথে ছড়িয়ে আছে বড় বড় সব প্রকান্ড পাথর । মাঝে মাঝে ছোট ছোট ডোবার মত জলাশয় । এরই একটাতে নেমে ঠান্ডা পানিতে গোসল সেরে নিলাম আমরা । আমাদের গাইড সেখানেই ঝালমুড়ির আয়োজন করলো । কলাও সাথে নিয়েছিলাম আমরা । কলা এবং ঝালমুড়ি ভোজনটা অমৃতের মত লাগলো ।

আধাঘন্টা বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু হলো পথচলা । ঝিরিঝিরি লাসাই লাসাই । লাসাই লাসাই মানে – ধীরে ধীরে ।

ঝিরির পথ ।ঝিরির পথ ।


রাইখ্যং লেকে


আরো ঘন্টা দুয়েক হাঁটার পর শেষ হয়ে এলো ঝিরির পথ । ভাবছেন- রাইখ্যং লেকে চলে এসেছি ? নাহ । এরপর শুরু হলো আবার পাহাড় ডিঙ্গানো । পাহাড়ের ঢাল বেয়ে পায়ে চলার পথ । পথ বললে ভুল হবে- এই পথে শুধু একজনই যেতে পারবে সতর্কতার সাথে । কোথাও কোথাও একসাথে দুইপা রাখারও সুযোগ নেই । পাশেই দুই হাজার ফুট নিচু খাদ । একবার পা পিছলে গেলে আর রক্ষে নেই । অনেক বেশি মানসিক শক্তি আর গুড লাক ছাড়া এই পথ মাড়ানো অসম্ভব ।
কিছুদূর এগিয়ে রেস্ট , আবার পথচলা । এভাবে আরো প্রায় পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা হাঁটতে হলো । রাইখ্যং লেকে যখন পৌঁছলাম, তখন বিকাল প্রায় চারটা বাজে । প্রায় দশ ঘন্টা হেঁটেছি । রাইখ্যং লেকের পাশে পুকুর পাড়ায় সুজন মাস্টারের কটেজে গিয়ে উঠলাম আমরা । আগের মতই, কাঠের ঘরের মেঝেতে থাকার ব্যবস্থা । প্রতিরাত জনপ্রতি একশ টাকা ভাড়া ।


গাইড দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করলো । কিছু খেয়ে নিয়েই আমরা রাইখ্যং লেকে চলে গেলাম গোসল করতে । তবে এখানেও আর্মি ক্যাম্প আছে । ওটাই বাংলাদেশের ঐ সীমানায় শেষ ক্যাম্প । নিয়ম অনুযায়ী আর্মি ক্যাম্পে আমাদের রিপোর্ট করতে হলো । সুবেদার সাহেব আমাদের দেখে বিস্মিত হয়ে বললেন – ‘আমাদের আসতেই অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, আপনারা এলেন কী করে ?’

দূরে পুকুর পাড়া ও রাইখ্যং লেক । পাহাড়ের ওপর থেকে তোলা ছবি ।দূরে পুকুর পাড়া ও রাইখ্যং লেক । পাহাড়ের ওপর থেকে তোলা ছবি ।

রাইখ্যং লেক বগা লেকের চেয়ে বড় পরিসরের লেক । দিনাজপুরের রামসাগরের মত অনেকটা । খুব দুর্গম হওয়ায় পর্যটকরা তেমন একটা যেতে পারেন না ঐ পর্যন্ত । রাইখ্যং লেকে গোসল করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেল । আমরা উঠে এলাম আমাদের কটেজে ।

রাইখ্যং লেকের দুরত্ব রুমা বাজার থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটারের মত । তবে পুরোটাই পাহাড়ি রাস্তা ।  পাহাড়িদের ৮-১০  ঘন্টা হাটার রাস্তা । সাধারন মানুষের লাগে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা ।

যারা অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন , সেই সাথে উঁচু নিচু পাহাড়ী রাস্তা ও খাল অতিক্রম করার শারীরিক ও মানসিক সামর্থ রাখেন তারাই কেবল রাইখ্যং যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন । অন্যথায় চরম বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির শিকার হতে হবে দলের সবাইকে ।
  
ফিরতি পথেঃ চাঁদের আলোয় কয়েকজন যুবক


পরদিন ভোরে উঠেই ভাত খেয়ে নিলাম । গাইড এবং সুজন মাস্টারের বৌ মিলে রান্না করেছে । গাইডকে দিয়ে আমরা দুটি পাহাড়ি মোরগ কিনেছিলাম । বেশ ভালোই খাওয়া হলো ।
সকালে বের হয়ে এবার ভিন্ন পথে হাঁটতে লাগলাম আমরা । একের পর এক পাহাড় ডিঙ্গিয়ে চলছি, উদ্দেশ্য রুমা বাজার । আকাশে গনগনে সূর্য , পাহাড়ের পথ যখন শেষ হলো তখন সন্ধ্যা হয়ে এসেছে । বগা লেকের নিচে বগামুখ পাড়ায় এসে পৌঁছেছি আমরা । বগামুখপাড়ায় আবার কলা , রুটি খেয়ে নিলাম ।  দুপুরে এক পাহাড়ের ঢালে কিছু কাঠুরের দেখা হয়েছিল । তাদের সাথে ঘন্টাখানেক রেস্ট নিয়েছি । তাদের হাড়ি পাতিলে আমাদের সাথে নেয়া চাল রান্না ও আলুর ভর্তা করে কিছুটা ভাত খেয়েছিলাম । জোহরের নামাজটাও সেখানেই সেরে নিয়েছি । এছাড়া বাকি সময়টা শুধু হেঁটেছি । বিকালে পড়েছিলাম আরেক বিপদে । জুম চাষ করার জন্য পাহাড়িরা পাহাড়ের ঢালে শুকনো গাছপালায় আগুন লাগিয়ে দেয় । আমরা পড়লাম সেই আগুনের ফাঁদে । সামনে পেছনে আগুন । যাবার উপায় নেই । সাহস করে আগুনের ভেতর দিয়েই লাফিয়ে পার হতে হলো । এক ঝলকের জন্য শরীর যেন ঝলসে গেল আমাদের ।


জুম চাষের জন্য পাহাড়ের ঢাল পুড়িয়েছে পাহাড়িরা । ফিরছি আমরা পুকুর পাড়া হতে ।জুম চাষের জন্য পাহাড়ের ঢাল পুড়িয়েছে পাহাড়িরা । ফিরছি আমরা পুকুর পাড়া হতে ।

বগামুখ পাড়া পার হয়ে মাগরিব নাগাদ আমরা একটা ঝিরিপথ পেয়ে গেলাম । ততক্ষণে সূর্য ডুবে গেছে । চারিদিকে সুনশান । আকাশে চাঁদ উঠেছে । কাঁধে ব্যাগ, হাতে লাঠি – সারি বেঁধে পায়ে হাঁটা সমতল রাস্তায় আমরা হেটে হেটে ফিরছি । চারদিনের হাঁটার ধকল , শেষ দিনে টানা চৌদ্দ ঘন্টা হাঁটার ধকলে শরীর অসাড় হয়ে আসছিল । শুধু মনের জোরে হাঁটছিলাম । চাঁদের আলো কিছুটা ভালো লাগার অনুভূতি দিচ্ছিল আমাদের । আরো তিনঘন্টা হেঁটে রাত নটা নাগাদ আমরা রুমা বাজারে এসে পৌঁছলাম ।

রাতে একটা হোটেল ভাড়া করে থাকলাম । পরদিন সকাল আটটায় আবার মিলিটারি ক্যাম্পে গিয়ে রিপোর্ট করলাম- আমরা ফিরে এসেছি । আমাদের গাইড বেলালকে বিদায় দিয়ে সকাল ন’টার বাসে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ফিরতি পথ ধরলাম আমরা । ক্লান্ত শরীর । অনুভব করছিলাম, এ কয়দিনে আমরা ‘রুমা’কে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি । রুমার কথা কোনদিন ভুলতে পারবো না ।

বুধবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৪

পরীক্ষার রেজাল্টের অর্থ কী ?

আজকেও বিভিন্ন জায়গায় সুইসাইড এটেম্পটের খবর পাওয়া গেছে । একটা পরীক্ষার রেজাল্ট কারো জীবনের সফলতা ব্যর্থতা নির্ধারণ করেনা । অথচ আমরাই এমন একটা পরিবেশ চারপাশে তৈরি করে রাখি যাতে একটা ছেলে বা মেয়ের মনে হওয়াই স্বাভাবিক , এই পরীক্ষায় এ প্লাস না পেলে জীবনটা অর্থহীন ! ষোল আনাই বৃথা !
সবাইকে অংক পারতে হবে এমন তো কথা নেই । সবাইকে ইংলিশে ফটফট করে কথা বলতে হবে এমন তো কোন কথা নেই । সবাইকে বাংলা ব্যাকরণের পন্ডিত হতে হবে এমন তো কোন কথা নেই । থাকার কথা নয় । বারাক ওবামা কি বাংলা ব্যাকরণ জানে ? কাজী নজরুল কি ইংরেজি ভয়েস চেন্জ করতে পারতেন ?
কেউ হয়তো ইংরেজিতে কাঁচা কিন্তু সে বাংলায় খুব ভালো কবিতা বা গল্প লেখে । কেউ হয়তো অংকে কাঁচা কিন্তু খুব ভালো খেলে । কারো ইতিহাসে আগ্রহ বেশি , কারো হয়তো ধর্মতত্ত্বে আগ্রহ বেশি । এদেরকে আমরা কীভাবে বিচার করবো ? আমরা সবাইকে এক ছাপে নিয়ে আসতে চাই , একই মানদন্ডে বিচার করি । অথচ উচিৎ ছিল যার যেদিকে আগ্রহ , যার যেদিকে ঝোঁক , যার যে বিষয়ে ন্যাচারাল পারদর্শিতা তাকে সেদিকেই ঠেলে দেয়া । সেই বিষয়ের মানদন্ডে তার যোগ্যতা বিচার করা ।
ছোটবেলায় দেখেছি , সবাই এমনভাবে কথা বলতো , বৃত্তি পরীক্ষার আগে মনে হত বৃত্তি না পেলে আর বোধহয় বেঁচে থাকাই ঠিক হবে না ! এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার আগে মনে হয়েছিল , এ প্লাস না পেলে সব শেষ ! ভর্তি পরীক্ষার আগে মনে হয়েছিল , মেডিকেলে চান্স না পেলে সবই বৃথা !
অথচ এখন মনে হয় , এভাবে চিন্তা করাটা ভুলই ছিল । হয়তো ডাক্তার না হলেই মানুষের জন্য আরো ভালো কোন কাজ করতে পারতাম !
একটা অল্পবয়স্ক ছেলে বা মেয়ে চারপাশের মানুষের এত চাপ উপেক্ষা করবে কীভাবে ? প্রতিবছর পরীক্ষার রেজাল্টের পর কেউ না কেউ আত্মহননের পথ বেঁছে নেয় । হাজারো ছাত্রছাত্রী হতাশাগ্রস্ত হয় । আর আমরা শুধু দেখে যাই , আফসোস করি ।
ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা দেয়া উচিৎ যে এটা তোমার জীবনের একটা পর্যায় মাত্র । এটাতে সফলতা পেলে ভালো । না পেলে চেষ্টা চালিয়ে যাও । পথ পরিবর্তন করতে পারো । একজন মানুষ জীবনের যেকোন পর্যায়ে গিয়েই সফল হতে পারে । এরচেয়েও বড় কথা হলো , সফলতার প্রকৃত সংজ্ঞাটা ছাত্রছাত্রীদের শেখানো উচিৎ । পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট নয় , একজন সৎ , ন্যায়পরায়ণ , কর্তব্যনিষ্ঠ এবং দয়া মায়া মানবিকতাবোধ সম্পন্ন মানুষ হওয়াই প্রকৃত সফলতা । এবং আফটার অল , মৃত্যুর পরের অনন্ত জীবনের সফলতাই হলো চূড়ান্ত সফলতা ।

মঙ্গলবার, ১২ আগস্ট, ২০১৪

আমি যদি যাই হারিয়ে

আমি যদি যাই হারিয়ে, কীইবা  বলো হবে ?
ক'দিন পরে আমার কথা, কাহার মনে রবে ? 
একটা কালো ছায়া কেবল, পড়বে না আর পথের বাঁকে 
কেবল একটা নামের ডায়রি, উঠে যাবে বইয়ের তাকে ।  
কেবল একটা মুখের ছবি, ঝাপসা হবে চোখের তারায় 
প্রতিদিন তো এমনি করে, কতজনই শুন্যে হারায় !
চোখের জলে কতটা ক্ষণ, চোখের পাতা ভেজা থাকে ?
দিন ফুরিয়ে মাস পেরোলে, কে বা কাকে মনে রাখে ?
মৃত্যু সেতো সমাপ্তি নয়, একটুখানি চোখের আড়াল 
এখানটাতে কয়েকটা দিন, কাটিয়ে গেলেই অনন্তকাল ।

কেমন হবে কাটিয়ে দিলে, জীবনটা সৈনিকের মত 
নাইবা হলো শোনা হেথায়, তোমার মনের কথা যত !
কেমন হবে বিলিয়ে দিলে, জীবনটা মানুষের তরে 
নাইবা হলো প্রাণ জুড়ানো, তোমার ছোট্ট হৃদয় ঘরে ! 

হলে দেখা ফিরদাউসের এক,  দুগ্ধনহর লেকের ধারে  
শুনবো ভালোবাসার গল্প, ছায়াঘন গাছের আড়ে !  

সোমবার, ১১ আগস্ট, ২০১৪

বিশ্বাসের সুতোয় গেঁথেছি হৃদয়মাল্য – ১

একটা সময় এমন প্রশ্নগুলো আমাকেও ভাবিয়েছে -  আচ্ছা এমন কি হতে পারেনা যে মুহাম্মাদ (সাঃ) আসলে আল্লাহর রাসুল নন ? যেরকমটা মক্কার ইহুদী ও মুশরিক নেতারা দাবি করতো সেটাই সঠিক ? হয়তো তিনি কোনভাবে কিছু জ্ঞান লাভ করেছিলেন পুরনো কিতাব থেকে । হয়তো তিনি ছিলেন একজন ভালো  , ক্যারিশমাটিক নেতা মাত্র ! হয়তো তাঁর ছিল অসাধারণ সম্মোহনী ক্ষমতা আর ছিলেন অনেক চতুর ও ধুরন্ধর একজন ! হয়তো তিনি চেয়েছিলেন কোনভাবে আরবের ক্ষমতাবান কেউ হতে । হয়তো কোন জ্বিন তাঁকে সাহায্য করতো ! আর সবকিছু মিলিয়ে তিনি সফল হয়েছিলেন ! এমন কি হতে পারেনা ?

আল্লাহ্‌ , ফেরেশতা, দোযখ, বেহেশত, পরকাল । বিশ্বাসের এই মূল বিষয়গুলো নিয়েই এমনি কত প্রশ্ন , কত সন্দেহ সংশয় বারবার আঘাত করেছে মনে । আমি জানি, এরকম বিভ্রান্তি থেকেই কতজনে পথ হারিয়ে চলে গেছে ইবলিশের রাস্তায় । আল্লাহর রহমতে বিশ্বাসীদের কাতার থেকে আমাকে কখনো বিচ্যুত করতে পারেনি শয়তান । ইসলামের মূল টেক্সট কুরআন ও হাদীসেই আমি একে একে পেয়ে গেছি সব সন্দেহের জবাব । ধীরে ধীরে কেটে গেছে সন্দেহ সংশয় । দিনে দিনে বিশ্বাসের ভিত হয়েছে শক্ত । এই সিরিজে আমি টুকরো টুকরো করে লিখে রাখবো কীভাবে আমার বিশ্বাস ক্রমে ক্রমে দৃঢ়তা পেয়েছে । হয়তো এতে করে অন্য কেউ পেয়ে যেতে পারেন তাঁর সংশয়ের জবাব ।

***
হাদীস পড়ার সময় আমি সূর্যগ্রহণ সম্পর্কিত একটি হাদীস পাই সহীহ বুখারীর দ্বিতীয় খন্ডে ।

‘আবদুল্লাহ ইবন মুহাম্মদ (র.).............. মুগীরা শু’বা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) এর সময় যে দিন (তাঁর পুত্র) ইব্রাহীম (রাঃ) ইন্তেকাল করেন, সেদিন সূর্য গ্রহণ হয়েছিল। লোকেরা তখন বলতে লাগল, ইব্রাহীম (রাঃ) এর মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে। তখন রাসূলুল্লাহ্‌ (সা) বললেনঃ কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না। তোমরা যখন তা দেখবে, তখন সালাত আদায় করবে এবং আল্লাহর নিকট দু’আ করবে’।  
( সহীহ বুখারী )

রাসুল (সাঃ) বলেন , সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণ কারো মৃত্যু কিংবা জন্মের কারণে হয়া । আল্লাহ্‌র নিদর্শন সমূহের মধ্যে এ হলো দু’টি নিদর্শন , যা আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের দেখিয়ে থাকেন । (বুখারী)


***
নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রমাণ করার ইচ্ছা সব মানুষেরই স্বাভাবিক প্রবৃত্তি । একজন মানুষের শিশুসন্তান মারা গেছে আর সেদিনই সূর্যগ্রহণ হয়েছে । লোকেরা বলাবলি করছে যে অমুকের ছেলের মৃত্যুর কারণেই সূর্যগ্রহণ হয়েছে । যে লোক নিজেকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরতে চায়, যে নিজেকে বিশেষ কেউ হিসেবে মানুষের মাঝে প্রচার করে, যে নিজেকে সবার চেয়ে আলাদা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় , এমন কোন ব্যক্তি কি নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের এরকম একটা মোক্ষম সুযোগ হাতছাড়া করবে ?

এ তো এখন থেকে দেড় হাজার বছর আগের আরবের কথা । যদি মুহাম্মাদ (সাঃ) সত্যি সত্যি আল্লাহ্‌র নবী না হয়ে সাধারণ কেউ হতেন , নবুয়তের মিথ্যা দাবিদার হতেন, তাহলে তিনি নিশ্চিতভাবেই বলতেন – হ্যা । আমার ছেলের  মৃত্যুর কারণেই আজ সূর্যগ্রহণ হয়েছে । আর সেকথা লোকেরা তো আগে থেকে বলাবলি করছিলোই । তাদের সে বিশ্বাস আরো পাকাপোক্ত হত । মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি তাঁদের বিশ্বাস নিশ্চয়ই আরো দৃঢ় হতো । এই একবিংশ শতাব্দীতেও মানুষ অলৌকিক কিছু ভাবতে, দেখতে, শুনতে ভালোবাসে । সেই সময়ের মানুষ তো নবীদের কাছে দাবিই করতো অলৌকিক কিছু দেখানোর ।
মিথ্যা দাবিদার হলে মুহাম্মাদ (সাঃ) কি এই সুযোগ হাতছাড়া করতেন ?

অথচ কী নির্দ্বিধায় রাসুল (সাঃ) মানুষকে জানিয়ে দিলেন- কারো মৃত্যু অথবা জন্মের কারণে সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয় না ।

তাঁর শৈশব কৈশোর যৌবনের সর্বজনস্বীকৃত সততা ও সচ্চরিত্রের অনন্যতা তো রয়েছেই ।  মুহাম্মাদ (সা:) যে প্রকৃতই আল্লাহ্‌র প্রেরিত নবী- এই হাদীসে উল্লেখিত ছোট্ট ঘটনাটি আমার সেই বিশ্বাসের সুতোয় আরো একটি ফুল হিসেবে গেঁথে যায় ।

রবিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৪

একটি শিরোনামহীন গল্প

কাঁপা কাঁপা হাতে কাবিন নামায় স্বাক্ষর করে প্রায় এক ঘন্টা ধরে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে শানু । যেন নিজের মৃত্যুদন্ডের আদেশে স্বাক্ষর করেছে সে নিজেই । মৃত্যু !  মৃত্যুর কথাও কি তার মনে আসেনি ? এসেছিল । গত কয়েকটা দিন , কয়েকটা রাত তাকে যুদ্ধ করতে হয়েছে নিজের সাথে । বারবার মনে হয়েছে, মরে গেলেই হয়তো ভালো হবে ! কতবার মনে হয়েছে , নীল ওড়নাটা কাজে লাগাবে । খুব কি কঠিন কাজটা ? সবাই ঘুমিয়ে পড়লে ফ্যানটার সুইচ অফ করতে হবে । তারপর একটা চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে ওড়নাটা ফ্যানের সিলিং এর সাথে বেঁধে নিলেই কাজ শেষ । শুধু ঝুলানো প্রান্তটা গলায় পেঁচিয়ে নিয়ে লাথি মেরে চেয়ারটা সরানোই বাকি থাকবে । সব শেষ হয়ে যাবে মুহূর্তেই ।
শেষ হবে কি ? পরক্ষণেই সে প্রশ্নটাও এসেছে মনে । শেষ যদি হত , কতইনা ভালো হত !  কিন্তু তা তো হবেনা । মৃত্যুই যে সবকিছুর শেষ নয় এতটুকু বিশ্বাস আছে শানুর । আত্মহত্যা করা মহাপাপ , নিশ্চিতভাবে অনন্তকাল দোযখে কষ্ট পেতে হবে । কারনটাও জানা আছে শানুর । আত্মহত্যা করা মানে সৃষ্টিকর্তার ওপর থেকে সম্পূর্ণভাবে নিরাশ হয়ে যাওয়া । যার আরেক অর্থ দাঁড়ায় সৃষ্টিকর্তাকেই অস্বীকার করা । শেষমেষ আর ওড়নাটাকে ওভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি শানু । পৃথিবীতে ক'টা দিনই বা জীবন । অনন্তকাল কষ্টভোগের চেয়ে পৃথিবীতে ক'টা দিন কষ্ট করাই ভালো । কে জানে , এই হয়তো ওর ভাগ্যে ছিল । আর তাছাড়া নিজেকে শেষ করে দিয়ে ও নিজে হয়তো আপাতত মুক্তি পেত , কিন্তু বাবা মা ? তাঁরা কী নিয়ে বেঁচে থাকবেন ? ওর চেয়ে কী তাঁদের কষ্ট কম হচ্ছে ? নিশ্চয়ই তাঁদের অন্তর পুড়ে যাচ্ছে । হয়তো তাঁদেরও ইচ্ছে করছে মেঘনায় ঝাপিয়ে পড়ে এ দুনিয়া ছেড়ে যাবার । হয়তো শানুর কথা ভেবেই পারেননি , নিজে যেমন পারেনি শানু ।
আচ্ছা ওরা কি পারতো না , রাতের আঁধারে সবাই মিলে দূরে কোথাও চলে যেতে ? ওই সন্ত্রাসীরা  কি এতটাই ক্ষমতাশালী যে সবখান থেকেই খুঁজে বের করতে পারতো ? অথবা সবাই না হোক , শানু একাই কি কোথাও চলে যেতে পারতো না ?
পরক্ষণেই মনে হলো , একা হয়তো পালিয়ে বাঁচতে পারতো কিন্তু বাবা মা লাশ হয়ে যেতেন ক'দিনেই । আর পালিয়ে বাঁচতে যে পারতো তারই বা নিশ্চয়তা কী ? কাকে বিশ্বাস করা যায় এই নষ্ট সমাজে ? হয়তো ওকে শিকার হতে হত অন্য কোন হায়েনার । হয়তো ওর স্থান হত কোন এক নষ্টপল্লীতে । কে জানে ? তবুও সে অনিশ্চয়তাকে বেছে নেয়াই হয়তো ভালো ছিল । এখন আর সেকথা ভেবে লাভ কী ? কাবিন নামায় স্বাক্ষর তো করেই ফেলেছে শানু ।

আয়নার পর্দাটা ফ্যানের বাতাসে উড়ছে । নিজের মুখটা বারবার ভেসে উঠছে আয়নায় । নিজের প্রতিবিম্ব দেখে নিজেই চমকে উঠছে শানু । ধক করে উঠছে বুক । এই সুন্দর মুখটাই কাল হলো ওর জীবনে ? একটু সুন্দর হবার জন্যে , মেয়েরা কতকিছুই না করে ! নিজের সৌন্দর্যের জন্য মনে মনে একটু ভালোলাগা , একটু অহংকার কি ওরও ছিলনা ? অন্যদের মুখে ওর সৌন্দর্যের প্রশংসা শুনে গর্ব হতনা শানুর ? অথচ আজ ! আজ মনে হচ্ছে নিগ্রো হওয়াই ভালো ছিল !  দূর গাঁয়ের কোন পাতাকুড়ানি মেয়ে হওয়াই ভালো ছিল । হায় ,  এই যদি ছিল ভাগ্যে , এরচেয়ে হয়তো ক্যান্সার হয়ে মরে যাওয়াই ভালো ছিল ! এখন তো মনের ক্যান্সারে ধুঁকে ধুঁকে কাটাতে হবে বাকি জীবনটা ।

নিজের ওপর খুব রাগ হয় শানুর । রাগ হয় বাবা মার ওপরও । কী দরকার ছিল শালিস করতে একজন সন্ত্রাসীর কাছে যাবার ? কী দরকার ছিল ওকে সাথে নেবার ? শানু যদি সেদিন জেলগেটে না যেত , আজ হয়তো এমন হতনা ।

***
ঘটনা শানু জানতে পারে অনেক দেরিতে । যখন সব শেষ হয়ে গেছে ।  রাস্তার ধারে ওদের তিনবিঘা জমি নিয়ে বহুদিন ধরেই ঝামেলা চলছিল মোজাফফর সাহেবের সাথে । মোজাফফর সাহেব জাল দলিল দেখিয়ে জমি দখল করতে চেয়েছিল । দখল করার জন্য মোজাফফর সাহেব যোগাযোগ করে বিপু বাহিনীর সাথে । এই জেলা শহরে সবকিছু চলে বিপু ও তার বাবার কথায় । বিপুর বাবা এই জেলা শহরের পৌরসভা মেয়র ।  বিপু নিজে ফাঁসির আসামী । বহুবছর ধরে জেলবন্দি ।

প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের নেতা হত্যার দায় প্রমাণিত হওয়ায় ফাঁসির আদেশ হয়েছিল তার । সরকার পরিবর্তন হওয়ায় নিজদলের প্রাক্তন নেতা, রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ক্ষমা করিয়ে নিয়েছে । নিজে বন্দী থাকলে কী হবে , এই শহরের আন্ডারগ্রাউন্ড চলে বিপুর নির্দেশে । জেলখানা থেকেই সে পরিচালনা করে তার সন্ত্রাসী বাহিনী । পুলিশবাহিনীও ওদের কাছে অসহায় ।
উপায় না দেখে জমি বাঁচাতে বিপুর শরনাপন্ন হয়েছিল শানুর পরিবার । জেলখানায় দেখা করার ব্যবস্থা করেছিল বিপুর সাথে । বাবা মায়ের সাথে গিয়েছিল শানুও । কিছুক্ষণ কথা বলেই বিপু শানুর বাবাকে বলে দেয় , ‘যান আপনার জমিতে কেউ হাত দিতে পারবেনা । দায়িত্ব আমি নিলাম’  । সেদিন বিপু  বারবার তাকাচ্ছিল শানুর দিকে । ওর অস্বস্তি লাগছিল । তবু খুশি মনেই বাড়ি ফিরেছিল ওরা ।
সেদিন কে জানতো , জেলবন্দী ফাঁসির আসামি এভাবে বিয়ে করতে চাইবে ? দু’দিন পরে শানুর বাবার কাছে খবর আসে মেয়রের কাছ থেকে । বিপুর বাবা মেয়র সাহেব বলেন , ‘মোক্তার , বিপুর সাথে বিয়ে দিতে হবে তোমার মেয়ে শানুর ! নাহলে শানুর বা তোমার পরিবারের কী হবে সে ব্যাপারে আমি কোন দায়দায়িত্ব নিতে পারবো না’ ।

সেই জবাব আজকে দিতে হলো শানুকে কাবিন নামায় সাইন করে ! নিজের চেয়ে বিশ বছরের বড় জেলখানায় বন্দী একজন সন্ত্রাসী আজ থেকে ওর স্বামী ! যে ফাঁসির দড়ি চেপে বসার কথা ছিল বিপুর গলায় , আজ অদৃশ্য সে  ফাঁসির দড়ি যেন চেপে বসেছে শানুর গলায় ! মেয়ে হয়ে জন্মানোই কি ওর অপরাধ ছিল ? এ থেকে কবে মুক্তি মিলবে ? মৃত্যুর আগে আদৌ কি কোনদিন মুক্তি মিলবে ? যদি ছাড়াছাড়ি হয় , সেটাকে কি মুক্তি বলা যাবে ?  শানুর ভাবনা বিক্ষিপ্তভাবে ছোটাছুটি করে ।
পূনর্জন্মে বিশ্বাস থাকলে শানু হয়তো ভাবতে পারতো , আগের জন্মে নিশ্চয় বড় কোন পাপ করেছিল সে ! নইলে এমন হবে কেন ? জীবনটা হঠাৎ করেই পানসে ধূসর হয়ে গেল কেন ? মুক্ত স্বাধীন পছন্দের কাউকে হৃদয়ের রাজা বানাবার স্বপ্নতো শানুরও ছিল ! এভাবে কেন ধূলিস্যাৎ হয়ে গেল সব ? স্বপ্নেও তো কখনো সে এমন কোন নায়কের কথা কল্পনা করেনি !

কাজী চলে যাবার ঘন্টা পেরিয়ে গেছে । কিছুক্ষণের মধ্যে নিশ্চয়ই চাউর হয়ে যাবে খবরটা । কেউ জানবেনা কোন্‌ পরিস্থিতিতে, কতটা অসহায়ত্বের মুখে কাবিন নামায় সাইন করতে হয়েছে শানুকে । সবাই ছিঃছিঃ করবে । একটা লম্পট খুনি সন্ত্রাসীকে বিয়ে করেছে ঐ মেয়েটা ! ছিঃছিঃ । মাথা খারাপ নাকি ?

সবকিছু এলোমেলো লাগছে শানুর । আশেপাশে কে কে আছে সে ব্যাপারে কোন ধারণা নেই ওর । চোখ ঝাঁপসা হয়ে আসছে । অস্পষ্ট কিছু একটা কানে এলো ,  কে যেন ডাকছে । শানু শানু , এই শানু । কী হলো ? এই ওকে ধর , পড়ে যাচ্ছে তো ।
জ্ঞান হারাবার আগে শেষ মুহূর্তে কাঁধে কোন একজনের হাতের ছোঁয়া অনুভব করে শানু ।

***
ফুটনোটঃ আচছা , বিশ বছর বয়সের একটা মেয়ে কি  জেলখানায় বন্দী  দ্বিগুন বয়সের একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে সানন্দে বিয়ে করবে ? লক্ষীপুরের মেয়র খুনি তাহেরের ছেলে খুনি সন্ত্রাসী বিপ্লব জেলগেটে বিয়ে করেছে শুনে প্রশ্নটা আমার মনে জেগেছিল । ভেবেছিলাম , নিশ্চয়ই কিছু একটা ঘাপলা আছে । দু’দিন আগে একটা মাধ্যমে জানলাম সেই ঘাপলাটা । মাধ্যম নিশ্চিত করে বলতে পারেনি , তবে এরকমটাই হওয়া স্বাভাবিক । আসলে মেয়ের পরিবার বাধ্য হয়েছে এই বিয়েতে । এছাড়া তাদের গত্যন্তর ছিলনা । ওই বিয়ে হয়তো কাগজপত্রে ঠিক আছে , কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সেটি হয়েছে আরেকটি জঘন্য অপরাধ । একটা অণুগল্পে ঘটনাটা তুলে রাখা ছাড়া এই মুহূর্তে ঐ সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ঘৃণা জানানোর কিংবা ঐ হতভাগী ও তার পরিবারকে স্বান্তনা দেবার জন্য আমার আর কীইবা উপায় আছে ?

বুধবার, ৬ আগস্ট, ২০১৪

আশ্চর্য সিন্দুক

ভিক্ষার চাল বেঁচে অট্টালিকা যায় কিনা গড়া ,
আমার জানা নেই । তবে
এইটুকু বেশ জানি, কুড়িয়ে পাওয়া ভালোবাসায়
ভরানো যায়না হৃদয় । ইতিহাস বলে , রাজত্ব না থাকলে
বানানো যায়না তাজমহল ।


তৃষ্ণার্ত আমি তাই মাইলকে মাইল পেরিয়ে
ফিরে যাই বারবার আশ্চর্য সিন্দুকে
যেখানে বেড়ে উঠেছিল আমার ক্ষুদ্র দেহের
প্রতিটি কোষ ,
ক্ষীনাঙ্গী এক মহীয়সীর ভেতর  ।

ফিরে যাই সেই আশ্চর্য ভান্ডারে । যেন এক জাদুর কলস   
যেখানে জমজম কূপের মত থইথই করে ভালোবাসা
সারাটি জীবন সেচেও কমাতে পারিনা , 
একফোঁটা শিশিরবিন্দু জল ।


আকণ্ঠ পান করি আমি, আশ্বিনের খরতাপে-
প্রখর রৌদ্র পেরিয়ে আসা ভিক্ষুকের মত

তৃষ্ণা মেটে তবু তৃষিত রয়ে যাই
ভয়ে কাঁপে হৃদয় , যদি সিন্দুকটা চুরি হয়ে যায়  ?
যদি মহাজাদুকর কাটিয়ে দেয় জাদুর প্রভাব  ?
কোথায় পাবো আমি একফোঁটা তৃষ্ণার জল ? কে তখন
হাতের পরশে মিশিয়ে দেবে
অনাবৃষ্টি-খরায় চৌচির হৃদয়ের সবটুকু ক্ষত ? না চাইতেই
কে হায়
ঢেলে দেবে এক ঘটি ভালোবাসা, আমার মাথায় ?

মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০১৪

ফিলিস্তিন ইস্যুতে সৌদি আরব

সৌদি শাসকরা এমন বোকার মত কাজ করছে দেখে অবাক হচ্ছি । নিজেদের পতন তারা নিজেরাই ডেকে আনছে । নবীর জন্মস্থান হওয়ায় এবং কাবা শরীফ থাকায় মুসলমানদের আধ্যাত্মিক নেতৃত্ব স্বাভাবিকভাবেই সৌদিআরবের ওপর বর্তায় । মুসলিমদের মনে কাবা শরীফ , মক্কা , মদীনা এবং গোটা সৌদিআরবের জন্য একটা নরম স্থান বরাদ্দ আছে । নিজের অজান্তেই মুসলিম জাতির মানুষেরা আশা করে সৌদিআরব মুসলিম বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে । মুসলিম উম্মাহর যেকোন বিপদে পাশে দাঁড়াবে , উদ্ধার প্রচেষ্টায় উদ্যোক্তার ভূমিকায় থাকবে । এই প্রত্যাশা পূরণে যদি সৌদি বাদশারা একটুও মনোযোগ দিত , একটু সফলতা দেখাতে পারতো , তাহলে খুব সহজেই মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্বও সৌদিআরবই নিতে পারতো । সৌদি শাসকদের সাথে তো কারো বিরোধ নেই , তারা কীভাবে ক্ষমতায় থাকছে এটাও কারো বিবেচনায় আসতো না । কিন্তু এখন তাদের বোকামীর কারণে বিশ্ব মুসলিম জনমত তাদের বিরুদ্ধে যাচ্ছে । ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা যতই কূটকৌশল অবলম্বন করছে , ইসরাইল আমেরিকার সাথে বন্ধুত্ব রক্ষার খাতিরে মুসলিম বিশ্বের সাথে প্রতারণা করছে , প্রকারান্তরে তারা নিজেদের পায়েই কুড়াল মারছে । আরবের জনগন ধীরে ধীরে ক্ষেপে উঠছে । এর একটা প্রতিক্রিয়া আজ বা কাল প্রকাশ পাবেই । তখন এই শাসকরা কাউকেই পাশে পাবেনা । আমেরিকা ইসরাইল কোন পতনোন্মূখ শাসককে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনা এটা ইতিহাস । সুতরাং এদের বিদায় নিতে হবে চরম অসম্মানজনক ভাবে । গনধিকৃত হয়ে । সৌদি প্রিন্স ফয়সাল বললেন ,ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গাজা গনহত্যার জন্য হামাস দায়ী । বাদশা বললেন গাজায় হত্যাযজ্ঞ চলছে , কিন্তু তিনি ইসরায়েলের নাম নিলেন না । সৌদি মূফতি ফতোয়া দিলেন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ডেমোনস্ট্রেশন ইসলামের দৃষ্টিতে মূল্যহীন । সারাবিশ্বের মুসলিম অমুসলিম সবাই যখন ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসন ও গনহত্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তখনো সৌদিআরব ছিল নিশ্চুপ । যদিও এতে মুসলিমরা ক্ষুব্ধ ছিল , কিন্তু বর্তমান অবস্থার চেয়ে তাও ভালো ছিল । এখন তো পরোক্ষভাবে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে চলমান ফিলিস্তিন সংকটে সৌদি শাসকরা ইসরায়েলের পক্ষ নিয়েছে । সৌদিআরবসহ বিশ্বের মুসলিমদের মনে এটা একটা দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করলো ।
ভুল পন্থায় গদি টেকানোর এই প্রচেষ্টা থেকে এটা ধারণা করা যায় , অদূর ভবিষ্যতে সৌদিতেও লাগবে আরব বসন্তের হাওয়া । আর মানুষের ক্ষোভ উস্কে দিয়ে সেই ক্ষেত্রটা তৈরি করে দিচ্ছে বোকা শাসকরাই । এদের পতনের সময় ঘনিয়ে আসছে , এখন যত তাড়াতাড়ি হয় ততই মঙ্গল । কারণ , মুসলিম বিশ্বের রাজনৈতিক নেতৃত্ব সৌদিআরবের হাতে না গেলে বৃহত্তর ঐক্য সাধিত হবেনা ।

সোমবার, ৪ আগস্ট, ২০১৪

ইসরাইলি পণ্য বর্জনই কার্যকর সমাধান নয়

ইসরায়েলি এবং প্রো ইসরায়েলি কোম্পানির পণ্য বর্জন ইসরায়েলবিরোধী সচেতনতার প্রাথমিক ধাপ । অনলাইনে এ সম্পর্কীয় সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনেকেই কাজ করছেন । এ থেকে একটা ব্যাপার পরিষ্কার হওয়ার কথা , নিত্য প্রয়োজনীয় সব জিনিসের ভালো ভালো ব্রান্ড সব প্রো ইসরায়েলি ইহুদি মালিকানাধীন কোম্পানির । এই অবস্থা দেখে একজন আক্ষেপ করে বললেন , সব যদি ইহুদীরা করেছে তাহলে বাকিরা কী ঘোড়ার ঘাস কাটছে ? প্রশ্নটা খুবই যৌক্তিক এবং মারাত্মক ।
সাবান , শ্যাম্পু , ব্রাশ , পেস্ট , বডি স্প্রে , লোশন , বাচ্চাদের খাবার , ড্রিংকস , বার্গার , অভিজাত হোটেল , মিডিয়া , সিনেমা , কার্টুন , অস্ত্র - কোথায় নেই ইহুদিদের হাত ? শুধু যে তাদের মালিকানায় কোম্পানি আছে তাই নয় , তাদের কোম্পানির পণ্য মানসম্পন্ন । তাদের কোম্পানিগুলোই সেরা ।
তারা একটা সভ্যতা গড়ে তুলেছে নিজেদের মত করে । তারা শুধু ফিলিস্তিনে ঢুকেছে তা নয় , তারা ঢুকে আছে আমাদের ঘরে ঘরে । এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কী ?
ফিলিস্তিন থেকে অবৈধ রাষ্ট্র বিলোপের জন্য মুসলমানদের অন্তত ইহুদীদের সমপর্যায়ের যোগ্যতা লাগবে ।
গাজায় এবারের আগ্রাসনে ইসরাইল গনহত্যা চালানো ছাড়া আর কোন সফলতা পায়নি । এর একটা বড় কারণ , হামাসের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন । আমাদের মিডিয়া নেই , শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক টুইটারের প্রচারণাতেই ইসরায়েলকে অনেকটা ঘায়েল করা গেছে । ফিলিস্তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মনস্তাত্বিক ও মিডিয়া সাপোর্ট দেয়া গেছে । এতেই জায়নিস্টরা চরম উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে । সত্যিকার কোন মানসম্পন্ন মিডিয়া থাকলে কেমন হত ভাবা যায় ?
বয়কটের মাধ্যমে যে প্রতিবাদের শুরু , এটাকে এখানেই সীমাবদ্ধ না করে চলুন বড় কিছু করার স্বপ্ন দেখি । কাজ শুরু করি উদারনৈতিক মুসলিম নেতৃত্বাধীন সভ্যতা নির্মানের ।

শুক্রবার, ১ আগস্ট, ২০১৪

পরাজিত মুসলিম মানস

ফিলিস্তিনিদের হাতে পর্যাপ্ত অস্ত্র নাই । তাদেরকে বাধ্য হয়ে ইট পাটকেল নিয়েই কামান ট্যাংকের সামনে দাঁড়াতে হয় । এটা কোনভাবেই কাম্য নয় । কিন্তু মুসলমান ভাইদের মানসিকতা বড়ই অদ্ভুত । তারা এর জন্য দুঃখ না করে , অস্ত্রের ব্যবস্থা করার কোন চেষ্টা না করে ইট পাটকেলের যুদ্ধকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করেন । সুবহানাল্লাহ , আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা ইট পাটকেল দিয়ে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে ! ভাবখানা এমন , ফিলিস্তিনি ভাইয়েরা অনন্তকাল ধরে ইট পাটকেল নিয়ে ট্যাংকের সামনে দাঁড়াক , আর উনারা সুবহানাল্লাহ বলে জমিন থেকে আসমান পর্যন্ত সওয়াব কামাইতে থাকেন !

কেউ কেউ তো অনেক আনন্দিত , ফিলিস্তিনি মায়েরা মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিচ্ছেন বেশি সন্তান জন্ম দানের উদ্দেশ্যে ! মারহাবা !

আসলে আমরা মানসিকভাবে পরাজিত হয়ে আছি যুগযুগ ধরে ।
এই পরাজিত মানসিকতা যতদিন উত্‍রানো যাবেনা , ততদিন মুসলিমদের ইট পাটকেল নিয়েই থাকতে হবে । আর ইজরায়েলের মিসাইল খেয়ে যেতে হবে ।

আফসোস , কোনটা গৌরবের ব্যাপার আর কোনটা লজ্জা কিংবা হতাশার ব্যাপার সেইটাও আমরা এখনো বুঝলাম না ।