এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৪

পুকুর সেঁচার দিন



রবি, জলদি আয় বাপ ।
মায়ের ডাক শুনে রবি চিন্তায় পড়ে যায় । গত রাতে খবরটা পাবার পর থেকেই সে বেশ উত্তেজিত । কিন্তু কী করে আজকের স্কুল কামাই দেবে সেই উপায় বের করতে পারছে না ।
একবার ভাবলো একটা কোন মিথ্যা অজুহাত দেবে । পেট ব্যথা, মাথা ব্যাথা ,  ডায়রিয়া ।  কিন্তু পরক্ষণেই আবার নিজেকেই ধিক্কার দিলো । ছিঃ ছিঃ । মিথ্যা বলে যারা তারা হলো পঁচা । মিথ্যাবাদী । তাদের পরিণতি হবে মিথ্যাবাদি রাখালের মত । আর তাছাড়া একটা মিথ্যা বললে সেটার জন্য আরো অনেক মিথ্যা বলতে হয় । মিথ্যা কখনো একা চলতে পারেনা । মিথ্যা বলার শাস্তি আল্লাহর কাছে ভয়ংকর । আম্মার কাছেও ভয়ংকর । মিথ্যা বলাটা আম্মা একদমই সহ্য করতে পারেন না ।

রবি বারান্দায় এসে খেজুর পাতার চাঁটাইয়ে বসে । এটাই ওদের ভাত খাওয়ার জায়গা । সন্ধ্যাবেলায় কখনো কখনো চেয়ার টেবিল ছেড়ে এখানে বসে পড়াশোনাও করে রবি । বড় ভাই শহরে চলে যাওয়ায় বাড়িতে এখন রবি একা । আম্মাও সবসময় চোখে চোখে রাখেন ওকে ।

ভাত নাড়াচাড়া করতে থাকে রবি । আলুভর্তা , ডাল, ডিমভাজি, লালশাক । ওর ভাবভঙ্গি আম্মার চোখ এড়ায় না । ছেলের চেহারা দেখলেই মায়েরা বুঝতে পারেন- কোনটা স্বাভাবিক, কোনটা অস্বাভাবিক । না বুঝবেনই বা কেন ? মায়ের রক্তেই তো পুষ্ট হয় সন্তানের প্রতিটি কোষ ।
‘কিরে, আবার কী চাস ?’
‘আম্মা , আইজ স্কুল না যাই ?’
‘কেন ? বলেছি না, বিনা কারণে স্কুল কামাই করা ভালো না’ ।
‘বিনা কারণে কে বললো ? আজকে পুকুরে মাছ ধরবে না ?’
‘পুকুরে মাছ ধরবে , তোর কী ?’
‘আমিও মাছ ধরবো । স্কুল তো প্রতিদিন যাই । প্রতিদিন কি মাছ ধরতে পারবো ?’
মায়ের কন্ঠে রাগ দেখে রবির কান্না পায় । কান্না দেখে আম্মা দমে যান । ভেজা চোখ এক বিশাল অস্ত্র । ছেলের কান্না মায়েরা সহ্য করতে পারেন না ।

চুপ থাকেন আম্মা । ছেলের কথায় নিজের ছোটবেলার কথা মনে পড়ে সাহেরা বেগমের । বাড়ির পাশেই ছিল ছোট নদী । বড় ভাই মাছ ধরতেন, তিনি দাঁড়িয়ে থাকতেন খলুই হাতে । ভাইদের ছুড়ে দেয়া মাছ ডাঙ্গায় এসে পড়তো । সেই মাছ ধরে ধরে খলুইয়ে রাখতেন । ভাইরা পানিতে মাছ ধরেন , আর তিনি ছোট্ট খুকি তখন- ডাঙ্গায় মাছ ধরেন । ঠিকমত ধরতে না পারায় দু-একটা মাছ আবার পানিতেই নেমে যেত । ভাইরা অবশ্য সেজন্য রাগ করেনি কোনদিন । নিজেও কখনো সখনো দুএকটা মাছ ধরেছেন নদীর কিনারে ,  সে কতদিন আগের কথা ।

বড় ছেলেটার কথাও মনে পড়লো । ছেলেটা কতদিন হলো শহরে গেছে । হিসাব করলে হয়তো দু’মাসের বেশি হবেনা , কিন্তু মায়ের কাছে দু’মাস যে অনেক বেশি সময় । কলেজে ছুটি পায় না । বাড়িতে আসতে পারেনা । শেষ চিঠিতেও লিখেছে – আম্মা, পুকুর সেঁচা হবে কবে ? ইস , এবার মাছ ধরতে পারবো না । পুকুর সেচলে আমার জন্য খলসে মাছের শুটকি করে রাখবেন ।  বড় বড় চিংড়ি রাখবেন । বোয়াল মাছ তো রাখা যাবে না । চিন্তা কি, আমি এসে নিজের হাতে বোয়াল মাছ ধরবো এবার’ ।

ক্লাস ফাইভে উঠেছে রবি । আর ক’টা বছর পর হয়তো ওকেও শহরে পাঠিয়ে দিতে হবে । ভালো কলেজ কোথায় এই মফস্বলে ? ছেলেটা চলে গেলে কীকরে যে থাকবেন – সে চিন্তায় মাঝে মাঝে ঘুম হারাম হয়ে যায় সাহেরা বেগমের ।


প্রতিবছর একবার রবিদের পুকুরে শ্যালো মেশিন লাগিয়ে সব পানি তুলে ফেলা হয় । তখন শুধু হাঁটুসমান পানি থাকে । কাদায় ডুবে যায় পায়ের পাতা । সেই পানিতে হাত ডুবালেই উঠে আসে মাছ । কত মাছ ! পুটি মাছ, চিংড়ি মাছ, রুই মাছ , কাতল মাছ, টেংরা মাছ, খলসে মাছ, শিং মাছ, কই মাছ, বোয়াল মাছ , বাইম মাছ , বেলে মাছ , টাকি মাছ । চাচাতো ভাইরা সহ পাড়ার সব ছেলেমেয়ে মাছ ধরতে নেমে যায় । মাছগুলো স্তুপ করে রাখা হয় পুকুরের পাশে । ডালাভরে বাড়ির আঙ্গিনায় নেয়া হয় সেইসব মাছ । দুপুর হতে না হতেই মাছ শুন্য হয়ে যায় পুকুর । বড়রা থাকে বড় মাছ ধরার চেষ্টায় । পুটিমাছ-চিংড়ি মাছে তাঁদের আগ্রহ নেই । গর্তে হাত ঢুকিয়ে বাইম মাছ বের করে আনেন । বোয়াল মাছের সাথে যুদ্ধ করে বোয়াল মাছ ধরেন । শিং মাছ ধরার বিশেষ কায়দা আছে । কায়দামত না ধরলে মাছের কাটা লাগবে । বিষাক্ত কাঁটা । খুব ব্যথা হয় । বড়রা সেই কায়দা জানেন ।

কখনো কখনো মাছের গর্তে সাপ লুকিয়ে থাকে । একবার তো জাহেদ ভাই একটা আস্ত সাপ ধরে বের করেছিলেন । সাপ ধরারও কায়দা আছে । সবাই পারেনা ।

গতবছর রবি জানতো না কবে পুকুর সেঁচা হবে । কেউ ওকে কিছু বলেনি । স্কুল থেকে ফিরে দেখে ডালাভরা মাছ । মা-কে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘এত মাছ কোত্থেকে এলো আম্মা ?’ মা ভান করে বলেন, কেন পুকুর সেচেছে আজকে । তুই জানিস না ?
মন খারাপ করে দু’দিন মাছই খায়নি রবি । নিজের হাতে মাছ ধরতে না পারলে সে মাছ খেয়ে মজা আছে ?

এবার তক্কে তক্কে ছিল । কান খাড়া করে রেখেছিল । আমান চাচার ছেলে আশিককে বলে রেখেছিল আগেই , পুকুর সেঁচার কথা উঠলেই যেন ওকে জানায় । বিনিময়ে দুই ডজন মার্বেল কিনে দেবে রবি । আমান চাচাকে ছাড়া কখনো পুকুর সেঁচা হয়না । আমান চাচা হলেন আব্বার ফুফাতো ভাই । এ বাড়ির কোন কাজই হয়না তাঁকে ছাড়া । আর আমান চাচা জানা মানেই আশিক জানবে । এই হলো সমীকরণ । সমীকরণ কাজে দিয়েছে । ঠিক ঠিক কাল রাতেই খবর পেয়ে গেছে রবি ।

আম্মার চুপ থাকা দেখে রবিও চুপচাপ খায় । মনে কিছুটা আশা জেগেছে । আম্মাও একটা প্লেটে ভাত তুলে নেন । আম্মা সবসময় সবার শেষে ভাত খান । দাদী বলতেন,  বাড়ির বউকে নাকি সবার শেষে খেতে হয় । কথাটা রবির একদম ভালো লাগেনা । এ আবার কেমন কথা ? এ নিয়ে দাদীর সাথে প্রায়ই বাগবিতন্ডা হত রবির । তিনবছর হলো , দাদী ইন্তেকাল করেছেন । দাদির কথা খুব মনে পড়তে লাগলো এই মুহূর্তে । আজ দাদী থাকলে নিশ্চিত রবির পক্ষ নিতেন । দুনিয়ায় দাদী নানীদের কাজই হলো ছেলেমেয়ের কাছ থেকে নাতি নাতনীদের স্বার্থ আদায় করা । আদর দিয়ে মাথায় তোলা ।

সাধারণত আম্মাকে ছাড়া রবি খায় না । মাঝে মাঝে স্কুলে দেরি হবে বলে আগে আগে খেয়ে নেয় , আম্মা ব্যস্ততার অজুহাত দেখান । না শুনে তখন আর উপায় থাকেনা ।


******

-কিরে বাপ, বসে আছিস ক্যান ?
-আব্বা , আমার মাথা ঘুরাচ্ছে । পায়ে শিং মাছের কাঁটা লেগেছে । ব্যথা ।
-তাইলে বাড়ি যা এখন ।

পুকুরের পাড়ে বসে আছে রবি । মাথা আর মুখ ছাড়া  প্রায় পুরো শরীরে কাদা লেপ্টে আছে । ডান পায়ের গোড়ালির কাছে একটু একটু ব্যথা হচ্ছে । কিছুক্ষণ আগে হঠাৎ মনে হলো, পায়ে কিসের যেন ঠোকর লাগলো । তারপর থেকেই ব্যথা । ধীরে ধীরে ব্যথাটা বাড়ছে ।

অনেকক্ষণ হলো পুকুরে মাছ ধরতে এসেছে রবি । ধরেছেও অনেক মাছ । একটা ছোট বালতি ভরা মাছ । পুটি, চিংড়ি আর টাকিমাছের সংখ্যাই বেশি । পুকুরের পানি প্রায় শুকিয়ে এসেছে । সকাল থেকেই শ্যালো ইঞ্জিন দিয়ে পানি তোলা হচ্ছে ।
আনিস এসে বসলো রবির পাশে । রবির দুঃসম্পর্কীয় চাচাতো ভাই । ওদের কয়েকবাড়ি পরেই আনিসদের বাড়ি । ওরা প্রায় সমবয়সি । আনিস অবশ্য স্কুলে যায় না । সে ওর বাবার সাথে ক্ষেতে কাজ করে ।

- কিরে আনিস , তুই উঠলি ক্যান ? আনিসকে উঠতে দেখে জিজ্ঞেস করে রবি ।
- কামড়াইছে, কিছু একটা কামড়াইছে পায় । ব্যাথা লাগে ।
- চল বাড়ি যাই ।

বাড়িতে এসে জোহরের নামাজ পড়ে ভাত খেয়ে নেয় রবি । শরীরটা ধীরে ধীরে আরো দুর্বল হয়ে আসছে যেন ওর । একবার বমিও করলো ।
মাছ ধরা শেষ করে আব্বাও ফিরে এসেছেন । 'ছেলেটার কী হলো একটু ভালো করে দেখেনতো' । আম্মা উদ্বিগ্ন কন্ঠে বললেন ।

আব্বা মনোযোগী হন । রবির পায়ে যেখানে ব্যথা তার চারপাশটা একটু ফুলে উঠেছে । পুকুরপাড়ে বেশি গুরুত্ব দেননি, শিং মাছের কাঁটাই ভেবেছিলেন । একটু ব্যথা করবে- তারপর এমনি এমনিই ঠিক হয়ে যাবে । তাছাড়া তখন পায়ে কাদা লেপ্টে থাকায় ঠিকমত দেখারও উপায় ছিলনা । এবার ভালো করে খেয়াল করে তিনি দেখলেন – দুটি চিহ্ন দেখা যায় ।
তাঁর মনে পড়ে গেলো এরকম চিহ্ন তিনি আগেও দেখেছেন । একবার সাপ মারতে গিয়ে হাতে সাপের কামড় খেয়েছিলেন । হ্যা, ঠিক ঠিক মিলে যাচ্ছে । আজ পুকুরের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে একটা মরা সাপকে পড়ে থাকতে দেখা গেছে । মাছুয়া আলাত । বিষাক্ত সাপ । ইয়া আল্লাহ্‌ । ইয়া মাবুদ ।

দেরি করা যাবেনা । এক্ষুনি হাসপাতালে নিতে হবে । ওঝা-ফকিরে বিশ্বাস করেন না রবির আব্বা । বিষ ঢুকেছে রক্তে, বাইরে ঝাড়ফুঁকে কী হবে ? জেলা সদর হাসপাতাল প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে । একটা কাপড় দিয়ে রবির হাঁটুর ওপরে শক্ত করে বেঁধে ভ্যান চালক করিমকে ডাকতে গেলেন তিনি । রবি দুর্বল কন্ঠে বললো- আব্বা, আনিসরেও কামড়াইছে ।


ভ্যানে শুয়ে আছে রবি । পেছনে আরেকটা ভ্যানে নেয়া হচ্ছে আনিসকেও ।   আম্মার কোলে রবির মাথা । ভ্যানের পেছনে সাইকেল চালিয়ে আসছেন আব্বা । মুখ শুকনো, গম্ভীর । বাবাদের কখনো ভেঙ্গে পড়তে নেই । তাঁদের মুখ গম্ভীর করে রেখে সব বিপদ মোকাবেলা করতে হয় । সামাল দিতে হয় । আব্বা একটু পরপর উদ্বিগ্ন কন্ঠে  জিজ্ঞেস করছেন- রবি, কেমন লাগছে বাপ ?

আম্মা একটা করে সুরা পড়ছেন আর রবির গায়ে হাত বুলাচ্ছেন । ইয়া আল্লাহ্‌, জীবনে যদি কোন ভালো কাজ করে থাকি তার উসিলায় আমার ছেলেরে ভিক্ষা দাও ।

রবির মাথা ঘুরছে । নিস্তেজ লাগছে । চোখ খুলে রাখতে কষ্ট হচ্ছে ওর ।


শনিবার, ২৬ এপ্রিল, ২০১৪

ইমাসকুলেশন

ও নদীরে...
ও নদীরে ভেসে চলে, লখিন্দরের ভেলা
উথাল পাথাল ভরা নদী
ঢেউযে কুটিলা ...
কন-নাগিনীর বিষে লখার দেহ হইলো কালা রে
ভেসে চলে ... লখিন্দরের ভেলা ...


একতারা  বাজিয়ে গান গাইছে রমিজুদ্দিন । মাথায় লম্বা চুল, লম্বা গোঁফ । মেহেদী রাঙ্গা দাড়ি । পরণে লম্বা আলখেল্লা । পাশে রাখা একটা চটের ঝোলা । বাইরে থেকেই দেখা যাচ্ছে সেখানে কী কী আছে । কয়েকটা পুরনো কাপড় , থালা , বাটি ও মগ ।

রমিজের বয়স ৩৩ বছর । কিন্তু এখন বয়স আন্দাজ করা মুশকিল রমিজের । ৪০ এর আশেপাশেই হবে । হয়তো বেশি হবে । এমনভাবে নিজেকে সাজিয়েছে যাতে তাকে দেখেই বয়স ৫০ এর কোটায় মনে হয় ।

সুমন চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে বটগাছের তলায় বসেছে আসর । অনেকদিন পর মন খুলে গান শুনছে এলাকার লোকজন । উদাস-ভরাট কন্ঠে রমিজ শোনাচ্ছে বেহুলা লখিন্দরের কাহিনী ।

কান্দে বনের পশু পাখি
কান্দে প্রিয়জন
আকাশ কান্দে বাতাস কান্দে
কান্দে ত্রিভুবন
ঢেউ চলে বুকে নিয়ে...উজানী ঐ ভেলা
কন-নাগিনীর বিষে লখার দেহ হইলো কালারে...
ভেসে চলে...লখিন্দরের ভেলা...

উপস্থিত শ্রোতাদের অনেকেরই চোখ ছলছল করছে । বিশেষ করে মহিলাদের । রমিজের মত আবেগ দিয়ে কে-ই বা গাইতে পারবে এই গান ? এই গান যে মিশে আছে রমিজের হৃদয়ের ভেতরে । রমিজের চোখও বারবার সিক্ত হয়ে আসে । আজও তার ব্যতিক্রম হলোনা । গান শেষ হলে এক ফোঁটা অশ্রু তার গাল স্পর্শ করলো ।

মোবাইলের স্কৃনে ভিডিওটা পজ করলেন শিশির । ডাঃ শিশির । ইজি চেয়ারটায় হেলান দিয়ে ভিডিওটা দেখছিলেন তিনি । গোপন ক্যামেরায় ধারণ করা ভিডিও ।  রমিজের আবেগ তাঁকেও কিছুটা স্পর্শ করলো যেন । ডাঃ শিশির এখন বসে আছেন বান্দরবানের নিরিবিলি এলাকায় তাঁর ভাড়া করা বাংলোতে ।

যেখানে রমিজ এই গান গেয়েছিল, সেখান থেকে দুই মাইল পুবেই শুয়ে আছে রমিজের বেহুলা । হয়তো এতদিনে তার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই , হয়তো সবকিছু মিশে গেছে মাটিতে । কিন্তু রমিজের মনে সে আছে অমলিন । মানুষরুপী কালনাগ সাপের ছোবলে প্রাণ দিতে হয়েছিল রমিজের বেহুলাকে ।

রমিজ তার কাজ ভালোমতই করেছে । তার এতবছরের সঞ্চিত ক্ষোভ এবার তার চোখের সামনেই মেটানো হবে ।  সার্জারিটা আজ সকালেই হবে ।

পরিকল্পনামত  আসর সমাপ্ত করে চেয়ারম্যানের বাড়ির পেছনের দিকে গাছতলায় ছোট তাঁবু খাটিয়েছিল রমিজ ।  তিনদিন ধরে সেখানেই ছিল সে । খাবার দাবারও পেয়েছিল চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকেই । চেয়ারম্যানের গতিবিধির সব তথ্য জানিয়ে দিয়েছিল সময়মত ।
গত রাতে সেই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে ডাঃ শিশিরের স্পেশাল টিম রংপুর থেকে  ধরে নিয়ে এসেছে সুমন চেয়ারম্যানকে । রাখা হয়েছে গোপন কক্ষে । ভ্রাম্যমান অপারেশন থিয়েটারের সবকিছু রেডি আছে । যদিও রাতের অভিযানের পর টিমের সবাই ক্লান্ত । তবুও অপারেশনটা আজ সকালেই করা হবে । কারো যেন তর সইছে না আর ।

রমিজকে ডাকলে কেমন হয় ? রমিজের কাছে তার জীবনের কথাগুলো আরেকবার শুনলে খারাপ হয় না । রমিজকে কল করলেন ডাঃ শিশির । কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পৌছলো রমিজ । এখন পুরোপুরি ফিটফাট ।
-রমিজ ভাই, বলো তোমার কাহিনী । অপারেশন শুরুর আগে আরেকবার শুনি ।


২।
অল্পবয়সে বিয়া করছিলাম ভাই । কতইবা হইবো তহন বয়স ? ২২ কি ২৩ । এরকম বয়সে মন থাকে রঙ্গিন । নারীর প্রতি আকর্ষন সবচেয়ে বেশি থাকে এসময়টাতেই ।

বাপে ব্যবসা করতো । আমি বাপের এক পোলা । সেই জন্যে লেখাপড়া বেশি করলাম না । বাপে কয়- লাগবো না তোর এত লেহাপড়া । ব্যবসা দ্যাখ । অল্পবয়স থেইকাই আব্বার সাথে ব্যবসা দেখি ।  ব্যবসার কাজে পাশের জেলায় যাইতে হইছিল  । সেখানেই জুলেখারে দেখলাম । প্রথম দেখাতেই চউখ আটকাইয়া গেল  । খোজখবর নিলাম, ঠিকানাপাতি নিলাম । বাড়িতে আইসা লাজ লজ্জার মাথা খাইয়া আব্বাকে মুখ ফুটে বইলা দিলাম সেই কথা । সময় কইরা আব্বা গেলেন একদিন মাইয়া দেখতে । তারও পছন্দ হইলো । মেয়ে সুন্দরী, বংশও খারাপ না । আমার মা মারা গেছেন ৩ বছর । বাপ ছেলেই সংসার । বাড়িতে ছেলের বউ আসলে খারাপ হয়না । আর মেয়েও মাশাল্লাহ খুব সুন্দর ।

বিয়াটা হয়া গেলো । বউয়ের সাথে তহন কী উথাল পাথাল প্রেম । এক মাস তো বাড়ি থেইক্কা বাইরই হই নাই ।

বিয়ার তিন মাসের মাথায় চট্টগ্রাম যাইতে হইলো আমাকে । ১০ বছর আগের কথা । তখন আজকের মত মোবাইল ফোন আছিলনা । টেলিফোনও  আছিলনা খুব একটা । জুলেখা খুব কানলো বিদায় বেলায় । নীল রুমালে সুতার গাথুনিতে লিখে দিলো ‘ভালো থেকো’ । ‘ভুলোনা আমায়’ । সেই রুমাল দিলো আমার পাঞ্জাবীর পকেটে ।

বারবার কইরা বললো সাবধানে থাকতে । আর তাড়াতাড়ি ফিরা আসতে ।

আমি বইলা গেলাম , যদি বাড়িতে একা একা ভালো না লাগে , বাবাকে বইলো , তোমাকে তোমার বাবার বাড়ি রাইখা আসব ।

চট্টগ্রাম হইতে তাড়াতাড়িই ফিরছিলাম । ফিরা দেখি বাড়ি খা খা করছে । কেউ নাই । জুলেখাকে নাকি হাসপাতালে ভর্তি করছে ।

রমিজ আবারো কাঁদতে শুরু করলো । যতবারই রমিজ তার কাহিনী বলা শুরু করে , এই পর্যন্ত এলেই আর নিজেকে আটকাতে পারেনা । কাঁদুক রমিজ ।

ডাঃ শিশির নিজেই স্মরণ করেন রমিজের শেষের কথাগুলো । এর আগেও তো শুনেছেন তিনি রমিজের কাহিনী ।

রমিজ হাসপাতালে গিয়েছিল । জুলেখার তখন শেষ সময় উপস্থিত । অনেক কষ্টে কী ঘটেছে বলেছিলো জুলেখা । সে রাতেই জুলেখা সেই যে ঘুমিয়ে পড়লো আর তাকে জাগানো গেলনা ।
সে বছরেই রমিজের বাবাও মারা গেলেন । সবকিছু বিক্রি করে দিয়ে এলাকা ছাড়ল রমিজ । কোথায় গেলো কেউ জানেনা । বুকে নিয়ে গেলো প্রতিশোধের ঝিকি ঝিকি আগুন ।

৩।
রমিজকে খুঁজে পেয়েছিলেন ডাঃ শিশির তাঁর ইন্টার্ণশিপ ট্রেনিং এর সময় । এমবিবিএস টা হলো ডাক্তারি পেশায় বলতে গেলে ‘মাদার ডিগ্রী’ । এমবিবিএস পাসের পর বেছে নিতে হয় কোন একটি সাবজেক্টকে – বিশেষজ্ঞ হবার জন্য । মেডিকেল সায়েন্স এত বিশাল একটা ব্যাপার, কোন একজন মানুষের পক্ষে সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হওয়া সম্ভব না ।

ডাঃ শিশির সার্জারিকেই বেছে নেন । জীবনের দুইটি  ঘটনা তাঁকে সার্জারি বিশেষজ্ঞ হতে প্রেরণা জোগায় । ঠিক প্রেরণা নয়, বলা চলে একপ্রকার ‘বাধ্য করে’ ।

এমবিবিএস পাস করে ইন্টার্ণশিপ করছেন তখন শিশির । শৈশবের সেই ভয়ংকর ঘটনা ভুলেই গিয়েছিল । ভুলে থাকতেই তো চেষ্টা করে সে । কিন্তু রমিজ আবারো সেটা মনে করিয়ে দেয় । আর তখনই নতুন একটা চিন্তা মাথায় আসে শিশিরের । সিদ্ধান্ত নেয় সার্জারিতেই ক্যারিয়ার করার ।

হাসপাতালের রোগীদের সাথে অতি আপনজনের মত মিশে যাওয়ার চেষ্টা করতো শিশির । হাসপাতালে আসা এই মানুষগুলো- কত অসহায় অবস্থায় আসে । কত কষ্ট । অসুস্থতার চেয়ে বড় দুঃখ আর কী ? খেতে ইচ্ছে করছে , খেতে পারছে না । পা আছে, হাঁটতে পারছে না । কারো পা-ই নেই । একজন তাগড়া মানুষ , বিছানায় নির্জীব হয়ে পড়ে আছে । কী কষ্ট ! গরীব হলে তার কষ্ট তো এমনিতেই আরো কয়েকগুন বেশি হয়ে যায় ।
প্রত্যেক অসুস্থ মানুষের পরিবার পরিজনের কষ্টটাও অপরিসীম । নিজে অসুস্থ না হয়ে , নিজের কেউ অসুস্থ না হলে হয়তো সেই অনুভূতিটা পাওয়া যায় না । ডাক্তাররা চেষ্টা করেন যতটুকু জ্ঞান, যতটুকু সামর্থ আছে তা দিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শারীরিক কষ্টটা দূর করতে । যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে ।
শিশির চেষ্টা করতো শারীরিক অসুস্থতার হিস্ট্রির বাইরে আরো কিছু জানতে । মানুষগুলোর মনের খবর জানতে । এভাবেই একদিন রমিজের কাহিনী জানতে পারে শিশির ।

তখন মেডিসিন ওয়ার্ডে প্লেসমেন্ট । একদিন একজন অজ্ঞান মানুষকে ভর্তি করা হলো । লোকটার পোষাক আশাক মলিন । শরীরের কোন যত্ন নেয়না বোঝাই যায় । পাগলের মত অবস্থা । এই লোক নাকি বাউল । গান গেয়ে গেয়ে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়ায় । আজ সকালে এই শহরের এক আসরে গান গাইছিল । মানুষজন জড়ো হয়ে গান শুনছিল । গান গাইতে গাইতেই হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছে । দুই-তিনজনে ধরে নিয়ে এসেছে সরকারি হাসপাতালে ।


ঐ রোগীর বেড পড়লো শিশিরের দায়িত্বে । তার ওষুধ কেনার মত টাকা পয়সাও নাই । শিশিরের উদ্যোগে ইন্টার্ণ ডাক্তাররা চাঁদা তুলে তার ঔষধের ব্যবস্থা করলো । দু-তিন দিনের মধ্যে তার খুব আপন হয়ে উঠলো শিশির । শিশির গল্পচ্ছলে জিজ্ঞেস করেছিল- আচ্ছা রমিজ ভাই, আপনি যে গান করেন- তা কোন গানটা আপনার বেশি প্রিয় ?
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে রমিজ বলেছিল – ভাইজান, আমি শুধু একটা গানই গাই ।
-     মাত্র একটা গান ? অবাক হয় শিশির ।
-     হ ভাইজান ।
-     কিন্তু ... কেন ? মাত্র একটা গান কেন ? গানটা আমাকে শোনাবেন ?

রমিজ বলেছিল- ঠিক আছে ভাইজান , আপনার ওয়ার্ডে যেইদিন রোগী ভর্তি হয়না  সেইদিন ব্যবস্থা করেন । এই খানেই শোনামু গান । সবাই শুনবে । এরপরে আপনারে কমু ক্যান আমি খালি একটা গান গাই ।

হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ভেতরে গান – ব্যাপারটা কেমন হয় এ নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিল শিশির । কিন্তু কথাটা তুলতেই ইন্টার্ণ ডাক্তাররা সবাই উৎসাহে হৈ হৈ করে উঠলো । ওয়ার্ডে রোগীরা এখন সবাই স্ট্যাবল । নন-এডমিশন ডে । কোন বাদ্যযন্ত্র নাই- শুধু একটা একতারার টুংটাং শব্দ আর খালিমুখে গান – সমস্যা নাই ।  অসাধারণ হবে ব্যাপারটা ।

সেদিন ইভেনিং রাউন্ডের পর রমিজ তার একতারা নিয়ে দাড়িয়েছিল মেডিসিন ওয়ার্ডের বিশাল রুমটার একপাশে । ইন্টার্ণ ডাক্তাররা পাশের দুটি খালি বেডে বসেছিল । ওয়ার্ডের বাকি রোগীরা হঠাৎ অবাক হয়ে শুনতে লাগলো রমিজের ভরাট গলায় দরদী কন্ঠের গান-

ও নদীরে ভেসে চলে, লখিন্দরের ভেলা
কন-নাগিনীর বিষে লখার , দেহ হইল কালারে...
ভেসে চলে লখিন্দরের ভেলা...

এত আবেগ দিয়ে কেউ গাইতে পারে ? চোখ বন্ধ ছিল রমিজের । চোখের কোণ হতে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রুবিন্দু ।
আবেগ স্পর্শ করেছিল শিশিরকেও । নিশ্চয়ই কোন ঘটনা আছে । জানতে হবে , কী সেই ঘটনা ?


৪।
হাসপাতালে মৃত্যুশয্যায় রমিজকে কী বলেছিল জুলেখা ? প্রথম দিনও সেইসব কথা বলার সময় রমিজ কিছুটা কেঁদে ফেলেছিল । কিন্তু তারপরেও নিজেকে সামলে নিয়ে সবকথাই শিশিরকে বলেছিল রমিজ ।

সেইরাতে জুলেখার ওপর পাশবিক নির্যাতন হয়েছিল । মন্ডল চেয়ারম্যানের ছেলে, আজকের চেয়ারম্যান সুমন মন্ডল তার পাঁচ-ছয়জন সাঙ্গপাঙ্গ সহ গভীর রাতে হামলে পড়েছিল রমিজের বাড়িতে । প্রথমেই তারা হাত-পা মুখ বেঁধে ফেলে জুলেখার । তারপর কয়েকঘন্টা ধরে পশুগুলো তাদের পশুত্ব ফলায় জুলেখার ওপর ।

জুলেখার শ্বশুর, রমিজের বাবার কী হয়েছিল তা জুলেখা জানতে পারেনি । অজ্ঞান জুলেখাকে সকালে হাসপাতালে ভর্তি করায় প্রতিবেশিরা । রমিজের বাবাকেও অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায় । তাঁর হাত পা বাঁধা ছিল । মাথায় আঘাত ছিল । সেই আঘাতেই ঐ ঘটনার মাস চারেকের মাথায় মৃত্যুর কোলে নিজেকে সপে দেন তিনিও । একা হয়ে যায় রমিজ । বাড়ির প্রতিটি আসবাব, প্রতিটি বালুকণাও একসময় অসহ্য হয়ে ওঠে রমিজের কাছে । সবসময় শুধু জুলেখার কথা মনে পড়ে । হ্যালুসিনেশন হয় তার । সবকিছু অসহ্য হয়ে উঠলে একদিন এলাকা ছেড়ে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় রমিজ ।

রেলস্টেশনে এক বাউল ফকিরের সাথে দেখা হয়ে যায় তার । দলে ভিড়ে যায় রমিজ । কী আছে আর এই জীবনে ? সব তো শেষ হয়ে গেলো । উস্তাদ বয়াতির সাথে থেকে একতারা বাজানো শেখে , গান শেখে । বেহুলা-লখিন্দরের গান যেন তার নিজেরই গান । সাপের বিষে লখিন্দর মারা গিয়েছিল, রমিজের বেলায় বেহুলাই মারা গেছে সাপের বিষে । এই সাপের নাম ‘মানুষ’ সাপ । সেই থেকে ঐ একটা গানই গেয়ে চলেছে রমিজ । কী দরকার অন্য গানের ?


সবকিছু শুনে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো শিশির । তাঁর মনে পড়ে গিয়েছিল নিজের ছোটবেলার কথা ।


৫।
রাতে নিজের রুমে ফিরে শিশির তাঁর ড্রয়ার থেকে ডায়েরিটা বের করেছিল । পত্রিকার একটি কাটিং-এর দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিল । শিরোনাম- ‘ধর্ষণের  শিকার স্কুলছাত্রীর আত্মহত্যা’ ।
খবরের বিবরণে জানা যায় – অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী শিথীকে বেশ কিছুদিন ধরে উত্যক্ত করে আসছিল স্থানীয় কয়েকজন বখাটে যুবক । গত বৃহস্পতিবার স্কুলে যাবার পথে  স্কুলছাত্রী শিথীকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় মুখোশ পরিহিত বখাটেরা । পরে বিকেলে সেই ছাত্রীকে স্কুলের পাশে রেখে যায় তারা ।
পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় নিজ ঘরে ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে স্কুলছাত্রী শিথী । ধারণা করা হচ্ছে, অপহরণ করার পর ঐ স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করেছে বখাটেরা । অপমানে লজ্জায় আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে সে ।
পুলিশ অপহরনকারী বখাটদের খুঁজছে’ ।

বারকয়েক পুরনো খবরের কাগজটি পড়েছিল শিশির । শিথীর কথা খুব করে মনে পড়ছিল শিশিরের । শিথী ছিল শিশিরের কাজিন, খালাতো বোন । মনে মনে শিথীকে ভালোবাসতো শিশির । শিথীও তাই । শিশিরকে লেখা শিথীর নকশাকরা চিঠিগুলির পরতে পরতে কি তার ভালোবাসার কথা লেখা ছিলনা ?

পারিবারিকভাবেও কিছুটা কথা হয়ে ছিল । শিশির নিজেই একদিন খালাকে আম্মার সাথে আলাপ করতে দেখেছে ওদের দুজনকে নিয়ে । শিশির একমাত্র ছেলে , শিথীরও কোন ভাইবোন ছিলনা তখন । বয়স হলেই বিয়ে দিয়ে দেবে । লজ্জাও লাগতো , ভালোও লাগতো শিশিরের । কেমন যেন একটা অদ্ভুত ভালোলাগা শিরশিরে অনুভূতি হতো !
কিন্তু তা আর হলো কই ?

পুলিশ সেই বখাটেদের ধরেছিল । কিন্তু এই দেশে কারো বিচার হয় ? রাজনৈতিক কানেকশন আর টাকার জোরে ঠিকই ছাড়া পেয়ে যায় ওরা ।

দু-তিনটি চিঠি বের করে সেরাতে আবার চোখের জলেই ভিজিয়ে ফেলেছিল শিশির । আরো একটি নির্ঘুম রাত কাটিয়েছিল সে । ধীরে ধীরে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছিল  তার । তখনই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করে ফেলেছিল, সার্জারিতেই স্পেশালিস্ট হতে হবে ।


৬ ।
গত ছয় বছর ধরে রমিজকে সাথে নিয়ে পত্রিকা ঘেটে  আরো কয়েকজনকে খুঁজে বের করেছে শিশির । যাদের নিকটাত্মীয় কেউ এমন বর্বরতার শিকার হয়েছে , কিন্তু বিচার পায়নি । তথ্য-প্রমাণ যোগাড় করে নিশ্চিত হয়েছে –প্রকৃত দোষী কে ? তাদেরকে চোখে চোখে রেখেছে । প্ল্যান করেছে । কীভাবে তাদেরকে ধরা যাবে । এই দেশের আইনের প্রতি শিশিরের আর ভরসা নেই । সিদ্ধান্ত নিয়েছে- নিজেই শাস্তি দেবে এই নরপশুদের । গড়ে তুলেছে ভ্রাম্যমান অপারেশন থিয়েটার । আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার শিখিয়ে তৈরি করেছে দক্ষ স্পেশাল টিম । সেই টিম প্রথম সফল অভিযান চালিয়ে ধরে এনেছে রমিজের স্ত্রী জুলেখার ওপর নির্যাতনকারী নরপশু চেয়ারম্যান সুমন মন্ডলকে । এরপরের টার্গেট শিথীকে অপহরণকারীরা । একে একে সবাইকে শাস্তি দেয়া হবে ।

মেরে ফেললেই তো হয় ? রমিজের প্রশ্ন ছিল ।  সেটা নিয়ে চিন্তা করেছিল শিশির । তারপর ওদেরকে বলেছে- নাহ, আমরা খুনি হতে পারিনা । আর মেরে ফেললেতো শেষ হয়ে গেলো ।  আমরা বরং এমন শাস্তি দেবো ওদের, যেন জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত এই নরপশুগুলোকে প্রায়শ্চিত্ত করতে হয় । কষ্ট পেতে হয় । আমরা ওদের লিঙ্গ কেটে দেবো । অণ্ডকোষ ফেলে দেবো । হাতের আঙুলগুলো কেটে ফেলে দেবো । এই হবে ওদের দুনিয়ার শাস্তি । আর বাকিটা পরকালে পাবে ওরা ।


৭।
রমিজের কান্না থেমেছে । ডাঃ শিশিরের পাশের চেয়ারে চুপচাপ বসে আছে এখন ।  ডাঃ শিশির বললেন-
-‘ঠিক আছে রমিজ ভাই , ওকে দিয়েই আমরা আমাদের কাজ শুরু করছি । যাও , সবাইকে রেডি করো । দশ মিনিট পরে আমি আসছি’ ।

ওটিতে ঢুকে ডাঃ শিশির দেখলেন, সুমন চেয়ারম্যানকে বেঁধে ফেলা হয়েছে । এনেস্থেশিয়া ছাড়াই ,অর্থাৎ অজ্ঞান বা অবশ না করেই- চরম কষ্ট দিয়ে করা হবে এই Emasculation and Castration (লিঙ্গ কর্তন) অপারেশন । পেনিস কেটে ফেলা হবে । অণ্ডকোষও রিমুভ করা হবে । পুরোপুরি পুরুষত্বহীন করে ফেলা হবে । কেটে ফেলা হবে হাতের আঙ্গুল । বাকি জীবনটা এই নরপশুদের এভাবেই কাটাতে হবে ।
অণ্ডকোষ (Testes) ফেলে দেয়ায় এদের শরীরে হরমোনাল ইম্ব্যালেন্স হবে । ফলে ধীরে ধীরে আরো নানারকম রোগের কবলে পড়বে এই নরপশুরা ।

জীবনে যতদিন বাঁচবে, প্রতিটি মুহূর্ত এরা যেন ভাবতে বাধ্য হয়- কী ভুল জীবনে করেছিলাম ।


একটা গভীর নিঃশ্বাস নিয়ে হাতে গ্লাভস পরলেন ডাঃ শিশির ।

বৃহস্পতিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৪

দ্বিধা

মাঝে মাঝে মনে হয় , এই জীবনে লেখাপড়া তো কম করলাম না । এবার একটুখানি GRE, একটুখানি IELTS বা TOEFL ঘুঁটা দিয়ে চলে যাই বিদেশে । দেশে যে কষ্ট করে নিজের খেয়ে রাত দিন খেঁটে পেটের ভাত + ডিগ্রী অর্জন করতে হবে , এরচেয়ে কম কষ্টেই বরং বিদেশে আরাম আয়েশে থাকা যাবে । Fixed hour duty, High salary, luxurious life, মন্দ কী ! সবাই যখন বিদেশ বিদেশ করে, বিদেশে এই বিদেশে ঐ, চিকিৎসাটাও নাহয় বিদেশ থেকেই নিবে ! দেশে বসে ভুল চিকিৎসা আর চিকিৎসায় অবহেলা করার কী দরকার ? চেষ্টা থাকলে দুনিয়ার যেকোন ডিগ্রীই যে নিতে পারবো সে আত্মবিশ্বাসটাও তো দিনে দিনে একটু একটু করে বেড়ে উঠেছে । আমার মধ্যবিত্ত বাবা-মা , একটুখানি সম্মান চেয়েছিল বলেই না ছেলেকে ডাক্তার বানাবার স্বপ্ন দেখেছিল । মধ্যবিত্তের সন্তান, আমিও তো হয়তো নিজের অজান্তেই একটুখানি সম্মানের কাঙ্গাল ! চলে যাই- অর্থও থাকবে, সম্মানও থাকবে ।

আবার সেই লোকদের কথা মনে পড়ে- যার ঔষধ কেনার টাকা নেই বলে ডাক্তাররা চাঁদা তুলে ঔষধ কিনে দিয়েছিলাম । তাঁদের কথা মনে পড়ে , রক্ত ম্যানেজ করতে পারছেনা বলে নিজের শরীরের রক্ত দিয়েছিলাম । হাড় জিড়জিড়ে সেই বৃদ্ধ বাবা- রাত বিরাতে এসে শ্বাসকষ্টের যন্ত্রণা ভুলতে পেরেছিল বলে বুকে ডাক্তারের মাথা টেনে অফুরন্ত দোয়া করেছিল । সন্তান সুস্থ হয়েছিলো বলে - বহুদিন পর দেখেও রাস্তার ওপর হাউমাউ করে কেঁদে উঠেছিল যে মা - গুটিকয়েক কুলাঙ্গারের কারণে এদের ছেড়ে চলে যাবো ?

দ্বিধায় আছি । দ্বিধা । বাহির বলে দেশেই থাকো, ভেতর বলে চলেই যা...

বুধবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৪

সাংবাদিক ফ্যাক্ট !

নামকরা দৈনিক পত্রিকার এডিটর’স রুম । সাংবাদিক নিয়োগের ভাইভা চলছে ।
- সম্পাদকঃ আমরা আসলে মেডিকেল বিটের জন্য একজন রিপোর্টার নেবো । তুমি মেডিকেল বিট কাভার করতে পারবে ?
- জ্বি স্যার । অবশ্যই পারবো । না পারার কী আছে স্যার !
- মেডিকেলের কোন বিষয়গুলোর বেশি সংবাদমূল্য আছে বলে তোমার মনে হয় ? তুমি কীভাবে সংবাদ সংগ্রহ করবে ? মাসে কমপক্ষে ১০টা রিপোর্ট আমরা চাই ।
- সংবাদের অভাব হবেনা স্যার । মেডিকেলে তো স্যার সবই সংবাদ ।
- কীভাবে ?
- হাসপাতালে স্যার রোগী আসবে, কোন কোন রোগী মারাও যাবে । আর রোগীর মৃত্যু মানেই ‘সংবাদ’ । যদি স্যার রোগী হাসপাতালে আসার পথেই মারা যায় অথবা এমন অবস্থায় আসে যখন ডাক্তারের কিছুই করার নেই- তাহলে স্যার ‘ চিকিৎসকের অবহেলায় রোগীর মৃত্যু’ । আর যদি চিকিৎসা দেয়ার পর মারা যায় তাহলে হবে স্যার ‘ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু’ !
- শাব্বাশ বেটা ! কিন্তু যদি রোগী মারা না যায় ?
- তাহলে স্যার সোজা গিয়ে প্রফেসরের কলার চেপে ধরবো । জুনিয়র ডাক্তারদের হাতে দুই-চারটা চড় থাপ্পড় হয়তো খেতে হবে । কিন্তু তারপরের ইতিহাস কী হবে স্যার আপনি ভালো করেই জানেন- সবই 'সংবাদ' । রোগী মরুক বা না-ই মরুক পত্রিকার হেডলাইন হবে, টিভিতে স্ক্রল হবে- ‘রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতালে উত্তেজনা, সাংবাদিক লাঞ্চিত !’ ধর্মঘট-মানববন্ধন-স্মারকলিপি, মন্ত্রীর হুংকার ! দেশ তোলপাড় হয়ে যাবে স্যার !
- শাবাশ বেটা ! ব্রিলিয়ান্ট ! তুমি আজই জয়েন করো ! এতদিন কোথায় ছিলে ?

মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল, ২০১৪

ডাক্তারদের কর্মবিরতি - ইন ট্রু সেন্স

ইন ট্রু সেন্স , ডাক্তারদের ধর্মঘট সত্যি সত্যি একটা ভয়ংকর ব্যাপার । ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে গা শিউরে ওঠার মত ব্যাপার ।

একটা দৃশ্য কল্পনা করলেই ভয়াবহতা বুঝতে পারবেন । আজকে যদি ডাক্তাররা সত্যি সত্যি পূর্ণমাত্রায় কর্মবিরতি দেন, বিশেষ করে আইসিইউ(নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) এবং সিসিইউ (হৃদরোগ বিভাগ)তে যদি মাত্র এক ঘন্টা ডাক্তার না থাকেন তাহলেই দেখবেন শহরে লাশের মিছিল বের হয়েছে । ক্রন্দনরত মানুষে ভরে যাবে পথঘাট । কিন্তু অন্যরা ডাক্তারদের মানুষ হিসেবে বিবেচনায় না আনলেও ডাক্তাররা তাঁদের মানবিকতা পুরোপুরি বিসর্জন দিতে পারেন না । সেজন্যই জীবনের নিরাপত্তার প্রয়োজনে একান্ত বাধ্য হয়ে ধর্মঘটে গেলেও তাঁদের ধর্মঘট হয় খুব সাময়িক, প্রতিকী । এক গ্রুপ কর্মবিরতিতে থাকলেও আরেক গ্রুপ ঠিকই চিকিৎসা দিতে থাকে ।

এইযে সাংবাদিকরা মার খাচ্ছে , এই অবস্থা তো একদিনে তৈরি হয়নি । সহ্য করতে করতে ডাক্তারদের সহ্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেছে । কোন দুর্ঘটনা ঘটলে (অনেকসময় কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই) একতরফাভাবে ডাক্তারদের ওপর দোষারোপ করার এবং যখন তখন ডাক্তারদের ওপর হামলে পড়ার একটা কালচার শুরু হয়েছে । আর সবসময় সাংবাদিকরা সন্ত্রাসীদের পিঠ চাপড়ে দেয়, উৎসাহ দেয় । কখনো কখনো নিজেও তেড়ে যায় ডাক্তারের দিকে । কোনরকম চিন্তাভাবনা ছাড়াই , মেডিকেল জ্ঞান ছাড়াই ডাক্তারের ওপর দোষ চাপিয়ে সংবাদ ছাপিয়ে দেয় । আর এতে করে জনগন বরং দিনদিন এই সন্ত্রাসে উৎসাহিত হচ্ছে ।

পত্রিকায় এমন কোন সংবাদ দেখেছি বলে আমার স্মরণে আসে না যেখানে দুর্ঘটনার জন্য রোগীর আত্মীয়দের দোষারোপ করা হয়েছে । কোন যাচাই বাছাই তদন্ত ছাড়াই সবক্ষেত্রেই ডাক্তারকে দোষী বলে আগেই ঘোষণা করে বসে সাংবাদিক । যদিও বাস্তবে দেখা যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রোগীর স্বজনরাই ডাক্তারের কথামত কাজ না করে রোগীর বারোটা বাজান । যেমন বারডেমের ঘটনায় রোগীর স্বজনরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীকে যথাসময়ে আইসিইউতে নেননি ।

খেয়াল করলে বোঝা যায়, দেশের চিকিৎসাব্যবস্থার ওপর দেশের মানুষকে আস্থাহীন করে তোলার একটা প্রচেষ্টা চলছে । ফলে কী হবে ? রোগীরা যাবে পাশের দেশে । দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে । আমাদের সাংবাদিকরা বেকুবের মত সেই কাজটি করে চলেছে । অথচ আমাদের দেশের স্বাস্থ্যখাত, চিকিৎসাব্যবস্থা কোনভাবেই কম নয় ।

ডাক্তারদের কর্মস্থল হতে বেরিয়ে এসে আন্দোলন করা কারো জন্য মঙ্গলজনক নয় । সচেতন সবারই এই অবস্থা নিরসনে এগিয়ে আসতে হবে । নিজের নিরাপত্তা না থাকলে কেউ আপনার স্বজনের জীবন বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে কেন ? দেশের ডাক্তারদের ওপর আস্থা রাখুন । কোন চিকিৎসক চান না তার রোগীর ক্ষতি হোক । সহজ কথা, এতে যে সেই চিকিৎসকেরই বদনাম ।

ডাক্তারের ভুল হতেও পারে । সেক্ষেত্রে যথাযথ পন্থায় তার প্রতিকার হোক । আপনি ভুল মনে করলেই সেটা ভুল নয় । অনেক সময় সাধারণভাবে আপনি যা ভুল মনে করেন চিকিৎসাবিদ্যা অনুযায়ী সেটাই সঠিক ।

আর যেন কোন চিকিৎসক কর্মক্ষেত্রে অপমানিত না হন , লাঞ্চিত না হন , হামলার শিকার না হন । ডাক্তারদের যেন ধর্মঘট করতে না হয় । কেউ কি নিশ্চয়তা দিতে পারে , অসুস্থ অবস্থায় এই ধর্মঘটের শিকার একদিন আপনারই মা-বাবা কিংবা আপনি নিজেই হবেন না ?

সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৪

রাজশাহী মেডিকেলে অপসাংবাদিক প্রতিরোধ

এবার আগুন রাজশাহী মেডিকেলে । ডাক্তারকে মারতে এসে প্রতিরোধের শিকার সন্ত্রাসী এবং হলুদ সাংবাদিকগোষ্ঠী । এক হাসপাতালে মার খেয়ে আরেক হাসপাতালে ভর্তি ! সেলুকাস !

সাংবাদিকতা, মেডিকেল শিক্ষা এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্পর্কে যে এদেশের সাংবাদিক ভাইদের বিন্দুমাত্র জ্ঞান নেই সেটার প্রমাণ গতকালও দিয়েছে তারা। 'কালের কন্ঠ' নিউজ করেছিল-' নিজের চিকিৎসায় মৃত শিশুকে হাসপাতালের বারান্দায় রেখে পালিয়ে গেলেন চিকিৎসক !'
কোন এক গ্রামের কোয়াকের অপচিকিৎসার দায়ভার চাপিয়ে দিয়েছিল 'চিকিৎসক'দের ওপর । এইটুকু জ্ঞান নেই- এমবিবিএস পাস না করিলে চিকিৎসক হওয়া যায় না । বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন না থাকলে তাকে ডাক্তার লেখাটা 'অপরাধ' ।

এমবিবিএস কোর্স পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিনতম কারিকুলামগুলোর একটি । এইটা শেষ করে তবেই ডাক্তার হতে হয় । চিকিৎসা করা একটা স্ট্রেসফুল কন্ডিশন । ডাক্তারের মাথাও কিন্তু গরম থাকে । যেনতেন কিছু একটা লিখে দেওয়া সাংবাদিকতা হইতে পারে , কিন্তু দুইটা ওষুধ লিখে দেয়ার নাম ডাক্তারি না । সাংবাদিক হইয়া নিজেরে দেশের দন্ডমুন্ডের মালিক মনে করার কোন কারণ নাই ।

অনেক হয়েছে । বাংলা সিনেমার মত যখন তখন তেড়ে এসে কলার ধরার দিন শেষ । মনে রাখবেন, ডাক্তারদেরও হাত পা আছে । তারাও সেগুলোর ব্যবহার জানে ! মাথা ব্যবহার করতে না দিলে হাতের ব্যবহার হবে । আর তার ফলাফল কেমন - সেটা নিশ্চয়ই হলুদ ভাইয়েরা হাসপাতালের বেডে শুয়ে উপলব্ধি করছেন !

শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৪

গরম !

এই গরমে যেভাবে খুব সহজে বানাতে পারেন গ্রিল চিকেনঃ

সকালে মুরগি জবাই করে চামড়া ছাড়িয়ে নিন । তারপর তাতে মসলা মাখিয়ে নিন । সকাল ৮ টার পর সেটি হাতে করে বাসা থেকে বের হয়ে একটি লোকাল বাসে উঠে পড়ুন । বাসে ঘন্টাখানেক বসে থাকুন । এক ঘন্টা পর বাস থেকে নেমে পড়ুন আপনার পছন্দমত জায়গায় ।

ব্যস , চুলার আগুন ছাড়াই হয়ে গেছে গ্রিল চিকেন ! এবার মজা করে খান !


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ ভয়াবহ গরমে মুরগীর সাথে সাথে আপনি নিজেও 'কাবাব' হয়ে গেলে এই রেসিপি প্রদায়ক দায়ী থাকিবেন না !
অনুভূতি গরম।

শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৪

আপনারা কি মনে করেছেন...

আপনারা কি মনে করেছেন আপনাদের মানববন্ধন আর স্মারকলিপিতে খুব কাজ হবে ? বারডেমে ডাক্তারের ওপর হামলাকারী পুলিশের ঢাকা জোনের এসি মাসুদ আর সাবেক মন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানের এপিএস বাবুকে খুব শাস্তি দেবে সরকার ? আদর করে কিল দেবে ? হা হা হা । ডাক্তার সাহেব, আপনার রসবোধ আছে বটে ! এই নেন, ললিপপ খান । আর হাসপাতালে বসে জনগনকে চিকিৎসা 'সেবা' দেন ।

শোনেন ভাইসাহেব, এর প্রতিবিধান যতটুকু সম্ভব আপনাদের নিজেদেরকেই করতে হবে । ভবিষ্যতে কোন হাসপাতালে যদি কোনভাবে ঐ দুইজনের কারো পরিচয় পান - যে অবস্থাতেই থাকুক ডাইরেক্ট চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করবেন । (এইটা অমানবিক শোনাচ্ছে ? তাহলে বাথরুমে পালিয়ে লুকানোর পরও নারী ডাক্তারকে ধরে এনে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা কোন্ মানবিকতা ?)
যদি সেই সাহস না থাকে তাহলে অন্তত Inj. Distilled water 1 ampoule I/M stat & 6 hourly দিবেন । এতটুকু করতে পারবেন না ? হা হা । যান মিয়া, পিঠে বালিশ বাইন্ধা ললিপপ খান । আর বসে বসে চিকিৎসা সেবা করেন । কে কইছে আপনারে এইখানে আইতে !

বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৪

জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক !

ধরুন হঠাৎ আপনার বুকে ব্যথা শুরু হলো , আপনি কী করবেন ? ঢাকা মেডিকেল, বারডেম সহ সবখানে যেভাবে ভুল চিকিৎসা আর চিকিৎসায় অবহেলা হচ্ছে - ঐখানে তো আর যাওয়া যায়না নাকি !

আপনাদের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে আমি আপনাদের দুটি শ্রেষ্ঠ হাসপাতালের ঠিকানা দিচ্ছি যেখানে আপনি পাবেন সবচেয়ে ভালো ডাক্তারের সবচেয়ে ভালো চিকিৎসা । কোন অবহেলা নাই । এমন চিকিৎসা পাবেন - ফেরার সময় নিজেকে আর কষ্ট করে নিশ্বাসটাও নেয়ার দরকার পড়বে না !

১। প্রথম আলো হসপিটাল । সিএ ভবন, ১০০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫ ।
এখানে বসছেন ডাঃ মতিউর রহমান । সশরীরে গেলে ঢোকার আগে 'প্রথম আলো' দেখে ঢুকবেন । চিকিৎসা নিতে পারেন ফোনে এমনকি ফ্যাক্সেও । ফোনঃ ৮১৮০০৭৮-৮১, ফ্যাক্সঃ ৯১৩০৪৯৬, এছাড়াও রয়েছে ই-মেইলঃ info@prothom-alo.info ।

২। কালের কন্ঠ হসপিটাল । প্লট-৩৭১/এ, ব্লক-ডি, বসুন্ধরা, বারিধারা । এখানে চিকিৎসা দিচ্ছেন ডাঃ ইমদাদুল হক মিলন, ইমেইলেও চিকিৎসা নিতে পারেন - E-mail : info@kalerkantho.com ।

জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক !

বুধবার, ১৬ এপ্রিল, ২০১৪

হাসপাতালে কেউ ঝামেলা করতে এলে

হাসপাতালে আপনার সাথে বা আপনার কোন কলিগের সাথে কেউ ঝামেলা করতে চাচ্ছে বা ঝামেলা শুরু করে দিয়েছে , কী করবেন ? প্রথম কাজটি করবেন- যেকোন ভাবে (পিয়ন, আয়া, ওয়ার্ডবয়, নার্স) যে কাউকে দিয়ে ওয়ার্ডের/হাসপাতালের গেট বন্ধ করে দেয়ার ব্যবস্থা করবেন । এরই মধ্যে যদি আপনি কয়েকটা মার খেয়েও যান , অসুবিধা নাই । গেট লাগানো দেখলেই বীরপুরুষের তেজ অর্ধেক কমে যাবে । তারপর ডাক্তার নার্স ওয়ার্ডবয় সবাই মিলে বীরপুরুষকে পিটান । স্টেথোস্কোপ দিয়েই পিটান । স্টেথোস্কোপের পিটুনি কী জিনিস একবার খাইলেই বুঝবে, আশা করা যায় সারাজীবন ভুলবে না । আগে যথাযথ পিটুনি দিন , তারপর পুলিশকে খবর দিন । সিভিল সার্জনকে জানান । আপনার বন্ধু বান্ধব-কলিগদের খবর দিন । আরো পদ্ধতিতো জানাই আছে আপনাদের ।

সময়ের কাজ সময়ে করতে হবে । পরে হাউকাউ করে কোন লাভ নাই । ভালোর জন্য সর্বোত্তম ব্যবহার ও সেবা , বদমাশী করতে আসলে চরম শাস্তি - এই নীতিতে চলুন । মনে রাখবেন, এটা আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশ । এখানে উপযুক্ত মুগুর ছাড়া কুকুর শায়েস্তা করা যায় না ।

মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১৪

শুয়োরের সাথে বসবাস !

ভ্রমনপিয়াসী আমরা ক’জন যুবক-

কেওক্রাডং পেরিয়ে রাইখ্যং লেকের পথে

বান্দরবানের গহীন এবড়ো থেবড়ো দুর্গম পাহাড়ে হাঁটতে হাঁটতে সেদিন  

হঠাৎ দেখি এক শুকরছানা ঘুরঘুর করছে

মুরং অধ্যুষিত মেনতক পাড়ার উঠোনে । বেশ খানিকক্ষণ মজা করলুম ওকে  নিয়ে

বন্ধুদের বললুম – এই দ্যাখ দ্যাখ , একটা খাঁটি ‘শুয়োরের বাচ্চা !’ পাশে দাঁড়িয়ে

ক্যামেরায় তুলে নিলুম ফটোগ্রাফ । ক্যাপশন ঠিক হলো  –

‘শুয়োরের বাচ্চার সাথে একদিন’ !



২।

ঢাকার নাগরিক জীবনে ফিরে চোখ বুলাই পত্রিকার পাতায় 

দেশের খবর জানতে মনটা উশখুশ করছিলো বটে । বেশ কয়েকদিন

নেটওয়ার্কের সম্পূর্ন বাইরে ছিলাম কিনা !

বরাবরের মত এক নজরে দেখে যাই শিরোনামগুলো । ‘গনধর্ষণের শিকার তরুণী’ ।

‘স্বামীর হাতে স্ত্রী খুন !’ ‘যৌতুকের দাবীতে

গৃহবধুর শরীরে আগুন !’ ছাত্রলীগের গুলিতে

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু !’

‘শাহবাগে সমকামীদের রংধনু শোভাযাত্রা’ । এবং

‘বারডেমে ডাক্তারের ওপর নির্মম হামলা’ ।



শিরোনাম দেখি আর অবাক হই ।

এদের সাথেই কি বাস করি এই শহরে ? হায় ! এদের তুলনায়

মুরং পারার সেই ‘শুয়োরের বাচ্চাটা’

কতই না নিরীহ ছিল !



[শুয়োরের সাথে বসবাস !/ ১৫-০৪-২০১৪] 

রবিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৪

চলে গেছে বসন্তের দিন


চলে গেছে বসন্তের দিন । ভীরু পায়ে

নীরবে নিভৃতে । ফিরে আসবার প্রয়োজনে । সইতে না পেরে চৈত্রদিনের

কাঠ ফাটা রোদ । পৈশাচিক দাবদাহ

স্বৈরশাসকের মত দোর্দন্ড প্রতাপ ।



চলে গেছে বসন্তের দিন । দিয়ে গেছে

যা কিছু দেবার । ফুল, পাখি, গান । অকৃতজ্ঞ এই পৃথিবীকে

নিসন্তান দুখী দম্পতির মত পাতাঝরা গাছে

দিয়ে গেছে সবুজ সবুজ মায়াবিনী কন্যা সন্তান ।



কী এক অলঙ্ঘনীয় অমোঘ নিয়মে

চলে গেছে বসন্তের দিন । কবির হৃদয়ে

রেখে গেছে তবু তার অমর ভালোবাসার-

অমোচনীয় রঙিন ছাপ ।





বসন্ত , আবার কি দেখা হবে ?







[চলে গেছে বসন্তের দিন/ ১৩-০৪-২০১৪]

সোমবার, ৭ এপ্রিল, ২০১৪

বোকা পুরুষের পর্যবেক্ষণ !

তুমি চাও কেউ একজন ছিনতাই করুক -

হামলে পড়ুক তোমার ওপর । অন্দরমহলে ঢুকে  

লুটে নিক সব - যা আছে সম্বল

যেভাবে সেদিন দলবল নিয়ে হামলে পড়েছিল অনিল ডাকাত-

ওপাড়ার মনু বেপারীর ঘরে !





চাও না ?     

ওহ সরি । আমিই বোধহয় ভুল বুঝেছি

বোকা পুরুষ  তো, বুদ্ধিশুদ্ধি কম  

আধুনিকতা – প্রগতিশীলতার জ্ঞান নেই !

কী করবো বলো

তোমার ভাবভঙ্গি দেখেই না আমার অমন ধারণা হলো !





তুমি চাও কেউ তোমাকে ব্যবচ্ছেদ করুক

খুলে খুলে দেখুক ভেতর ও বাইরের সবকিছু

যেভাবে অটোপসি বিভাগে কাটাকুটি করে মদ্যপ কমল ডোম

অথবা এনাটমি ডিসেকশন ক্লাসে

ছিন্নভিন্ন ডেডবডি দ্যাখে  প্রথম বর্ষের স্টুডেন্টরা

ফরমালিনের গন্ধের ভেতর  !





তুমি চাও কেউ তোমাকে খুবলে খুবলে খাক

যেভাবে চাঁদের আলোয় নিশাচর শিয়ালের দল

কামড় বসায় বেওয়ারিশ লাশের শরীরে ।





চাও না ?     

ওহ সরি । আমিই বোধহয় ভুল বুঝেছি

বোকা পুরুষ তো , বুদ্ধিশুদ্ধি কম

আধুনিকতা – প্রগতিশীলতার জ্ঞান নেই !

কী করবো বলো

তোমার ভাবভঙ্গি দেখেই না আমার অমন ধারণা হলো !



আর

এ তল্লাটে নেকড়ের সংখ্যাটাও যে নেহায়েৎ কম নয় !



[ বোকা পুরুষের পর্যবেক্ষণ / ০৭-০৪-২০১৪ ] 

শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, ২০১৪

সাধারণ মানুষ

কী দেখো তাকিয়ে অমন করে
মাছের চোখের মত নিষ্পলক !
ভেবেছিলে তোমাদেরই মত
আমিও কি কোন ডিস্কো লোক ?

উহু ! আমি একজন খুব সাধারণ
মানুষ
হৃদয় আকাশে তাই, ওড়াই নাকো নাটাই
ফানুস !

০৪-০৪-২০১৪

চাহনি

কী দেখো তাকিয়ে অমন করে 
মাছের চোখের মত নিষ্পলক !
ভেবেছিলে তোমাদেরই মত 
আমিও কি কোন ডিস্কো লোক ?



উহু ! আমি একজন, খুব সাধারণ
মানুষ
হৃদয় আকাশে তাই, ওড়াই নাকো নাটাই
ফানুস !

বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৪

দূরেই থাকো !

দূরে থাকো , এসো নাকো কাছে

মোহভঙ্গ হয়  যদি পাছে   !

সইতে পারবেনা হয়তো

মোহভঙ্গের নিঃসীম বেদনা !





দূরে থাকো , সেই ভালো ।

মায়া আছে, মোহ আছে

কাছে আসবার ব্যকুলতা আছে 

আছে আকাংখা , আছে ভালোলাগা ঘোর

দূর হতে হয়তো আমায় দেখো মায়াবী মানুষ

পূর্ণিমার চাঁদের মতন !





কাছে এলে

হয়তো অকস্মাৎ  টুটে যাবে এইসব সুকুমার কল্পনা   

মরীচিকার মত ! হয়তো পারবেনা সইতে

মোহভঙ্গের নিঃসীম বেদনা !





কিছু আলো না দেখাই ভালো । থাকনা কিছুটা অন্ধকার

আলোর নেশায় , রংধনুর আমন্ত্রণে

ছুটে এসে উল্কার মত – কে জানে

হয়তো পতিত হবে কৃষ্ণগহ্বরেই !



দূরে থাকো , সেই ভালো ।







[ দূরেই থাকো / ০৩-০৪-২০১৪ ]

বুধবার, ২ এপ্রিল, ২০১৪

ভালোবাসার শেষ অংক !

-‘হ্যালো , জ্বি, স্লামালিকুম । জানেন খবর ?

মুহসিন আব্দুল্লাহ, হ্যা হ্যা , ঐযে ইয়াং ডাক্তার । আর নেই

আমাদের মাঝে । চলে গেছেন ওপারে !

হ্যা হ্যা । আজ সকালেই , এইমাত্র খবর পেলাম ।  ডিটেলস সংবাদ  

পাইনি এখনো’ ।

-‘আহা বেচারা ! বড় ভালো লোক ছিলেন !’





মিনিট পাঁচেক পরে

ডাক্তার মহাশয় পুনরায় ব্যস্ত হবেন রোগী নিরীক্ষায়   

ইঞ্জিনিয়ার মনোযোগ দেবেন নতুন নকশাটায়

কবি সাজাবেন তাঁর কবিতার মায়াজাল

শব্দগুলো কাটাকুটি করবেন বারবার

নিষ্ঠুর খুনি কিংবা অবোধ শিশুর মত !



শিক্ষক একটু দম নিয়ে শুরু করবেন –

‘যাহোক, আমরা যেন কোথায় ছিলাম ?’

ব্যাংকার সরু চোখে তাঁকাবেন চেকের পাতায়

আপনার কত যেন ? পাঁচশত কোটি টাকা মাত্র !

আচ্ছা , এইখানে আরেকটা স্বাক্ষর করুন !

............





কেন তবে মিছেমিছি

বলো মোরে দিবানিশি

ভালোবাসি ভালোবাসি ?

এইতো হবে শেষ অংক, তোমাদের ভালোবাসা নাটকের

নাকি ?







[ভালোবাসার শেষ অংক / ০২-০৪-২০১৪] 

মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল, ২০১৪

কবিতা অথবা বন্দুক

তোমায় ভালোবাসি বলে প্রিয়তমা ‘কবিতা’

ভেবোনা আমি হয়ে গেছি শুধুই তোমারই   

ভেবোনা বন্ধক দিয়েছি এ প্রাণ-

অক্ষরবৃত্তে ।





তোমায় ভালোবাসি বলে ‘কবিতা’

ভেবোনা হারিয়েছি প্রতিবাদী মন- 

ভুলে গেছি দৃপ্ত শ্লোগান । রক্তের গভীরে মিশে থাকা- 

বিপ্লবের ঢেউরাঙ্গা গান ।





আসে যদি আবার দুর্দিন-

জামাল কামাল কিংবা অরুণচন্দ্রের উঠোনে   

ক্রুর দৃষ্টি হানে কোন নরপশু, স্বামীহারা নন্দিনীর বুকের ওপর

চাপিয়ে দিতে চায় যদি শোষণের যাতাকল । স্বাধীনতার পায়ে

লাগাতে আসে লৌহ- জিঞ্জির

নিভাতে চায় কেউ যদি সত্যের প্রদীপ

কিংবা বৈষম্য হয় মানুষে মানুষে





প্রস্তুত থেকো প্রিয়তমা কবিতা

তোমাতে আমাতে হবে সেদিন বিচ্ছেদ । কলম ফেলে-

হাতে নেবো রাইফেল

‘নকশী কাঁথার মাঠ’  হবে ‘রক্তাক্ত প্রান্তর’  ।



২.

রণাঙ্গনে সঙ্গী হয়ে বুকপকেটে থাকতে চাও ?

না না  , তা কী করে হয় ? শত্রুর স্টেনগানের গুলি  

লাগে যদি সেখানেই !







[কবিতা অথবা বন্দুক / ০১-০৪-২০১৪]