এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

শুক্রবার, ৩১ আগস্ট, ২০১২

মাতাল করা চাঁদ

ওরে ওরে মাতাল করা চাঁদ 
তুই তো আবার জাগিয়ে দিলি 
গোপন যত সাধ ! 

মন সায়রে আনলি জোয়ার 
যাচ্ছে ভেঙ্গে বাঁধ ! 

তোর সাদা আলো পড়ছে ঢুকে আমার কুড়েঘরে 
চোখের কোটর নাকে-মুখে বুকের পাজরে 

আমার ভাঙা চালা জানালা খোলা 
নেই তাতে গরাদ ! 
ওরে ওরে মাতাল করা চাঁদ ! 

নেইযে কেহ পাশে আমার 
ধরবো কাহার হাত ? 
এমনি করেই যাবে কেটে 
কত কত সাদা রাত ?

জানিস কি তুই অয়ি প্রিয়ে 
মাতাল করা চাঁদ ? 
তোর নাকি ভাই তাহার সাথে 
গোপন আঁতাত !

জীবন ভরা যুদ্ধ যে মোর 
হৃদয় ভরা খাদ 
তুই ডাকিস কেন অমন করে
পাতিস কেন ফাঁদ ! 

হাসিসনে আর পুর্ণিমাতে করিসনে আহলাদ 
ওরে আমার মাতাল করা চাঁদ !

মোচড় দিয়ে ওঠেরে বুক 
করে হাহাকার 
আমার উথলে ওঠে কষ্ট নদী, 
যায় যে ভেঙ্গে পাড় 

তোর জোত্‍স্না নামের নিঠুর মায়ায় 
দিলে পাই আঘাত !

ওরে ওরে মাতাল করা চাঁদ !


শুক্রবার, আগস্ট 31, 2012
http://goo.gl/ldiHe

বুধবার, ২৯ আগস্ট, ২০১২

ছাগু এবং ভাকু কাহিনী

ব্লগের মাধ্যমে ছাগু (ছাগল) , ভাকু (ভারতীয় কুত্তা) , এই শব্দগুলোর সাথে আমার পরিচয় । পুরনো ব্লগার নতুন ব্লগার কিংবা ব্লগ পাঠক সবাই এখন এই শব্দগুলোরসাথে পরিচিত । এখন ফেসবুকেও এগুলোর ব্যবহার বেড়েছে । মনে হয় পুরো মানবগোষ্ঠি ,অন্তত বাংলাদেশের ব্লগার ফেসবুকাররা এখন দুই ভাগে বিভক্ত । ছাগল প্রজাতি এবং কুত্তা প্রজাতি । আরেকটা প্রজাতি ছিল আগে - বানর প্রজাতি(নাস্তিক ) , তবে বিবর্তনের মাধ্যমে তারা এখন কুত্তা প্রজাতির ভেতর ঢুকে গেছে ।

(পুরাতন ব্লগার-পাঠকরা এ অংশটুকু না পড়লেও চলবে ।)
নতুন পাঠকদের জন্য একটু পুনরাবৃত্তি করি । কুত্তা বলা হয় (কখনো কখনো নেকড়েও বলা হয়) ছাত্রলীগ , নাস্তিক , বামদেরকে । এদের মধ্যে ছাত্রলীগকে বলা হয় ভারতীয় কুত্তা ।
অপরদিকে ছাগু বা ছাগল বলা হয় ছাত্রশিবির এবং অন্যান্য ডানপন্থি ইসলামপন্থিদের । এই বিভাজনরেখায় আমি ছাগল কাতারেই পড়েছি । বলে রাখি , এজন্য আমি অনেক খুশি । কারণ কুত্তা বা নেকড়ের চেয়ে ছাগল অবশ্যই ভালো !

মূলত এই ব্লগীয় বিভাজনটা চিন্তাধারা ভিত্তিক । কিন্তু ইদানিং অনেক কমবখ্ত-নবিশ-কুত্তা বিষয়টাকে ব্লগের বাইরেও নিয়ে এসেছে । তারা দাড়ি-টুপি বা টাখনুর ওপর প্যান্ট পাজামা দেখলেই ছাগু আখ্যা দিচ্ছে । এমনকি চে গুয়েভারার দাড়ি দেখে তাকেও নাকি ছাগু বলেছে , একদিন একবন্ধু জানালো । তবে রবীন্দ্রনাথ বা নির্মলেন্দু গুণ সবার পরিচিত হওয়াতে ছাগু খেতাব পাওয়া থেকে বেঁচে গেছেন । অবশ্য নেড়ি কুত্তার স্বভাব অনুযায়ী এটা ঠিক আছে । অন্ধকারে চিনতে না পারলে কুত্তা অনেক সময় মনিবকে দেখেও ঘেউ ঘেউ করে !

এখন আমরা এইসব নামকরণের স্বার্থকতা বিচার করবো ।

ছাগল শব্দটা শিবির এবং ডানপন্থি ইসলামপন্থিদের জন্য ব্যবহার করা হলেও এখানে একটা বিষয়ে অসংগতি রয়েছে । ছাগল লিখতে যে কয়টি বর্ণপ্রয়োজন অর্থাত্‍ ছ , গ , ল এই সবগুলি আছে 'ছাত্রলীগ' শব্দের মধ্যে । তবে আচার আচরণগত দিক থেকে ছাত্রলীগ ও নাস্তিক বামদের জন্য কুত্তা বা নেকড়ে শব্দটা ঠিক আছে । কুত্তা যেমন প্রভূভক্ত , মাংসখেকো , রক্তখেকো , ঘেউ ঘেউ করে , মানুষকে কামড়ায় , নিজেদের মধ্যেও কামড়াকামড়ি করে , মাদী কুকুরের পেছনে পেছনে ঘোরে , দিনের বেলা ঘুমায় রাতে জেগে থাকে, আর পাগলা হলে তো মানুষের জন্য খুবই ভয়ংকর হয় এই সবগুলো বৈশিষ্ট্যই খুঁজে পাওয়া যায় ছাত্রলীগ ও বামদের মাঝে । তবে প্রকৃত বামদের মধ্যে শৃঙ্খলাটা একটু ভালো । আমরা যারা ৭২-৭৫ বা আওয়ামী লীগের আগের টার্মে নাবালক ছিলাম তারা এবার মোটামুটিভাবে এদের কুত্তা ও নেকড়ে রুপটা দেখতে পেয়েছি । খুন ধর্ষণ রাহাজানি টেন্ডারবাজি...নাহ্ এগুলো লিখে আর লাভ নেই- আপনারা সবাই সবকিছু জানেন ।

অপরদিকে ছাগল একটি নিরীহ তৃণভোজী প্রাণী । ছাগলের কিছু ছাগলামি স্বভাব আছে যা ডানপন্থি ইসলামপন্থিদের ভেতর পাওয়া যায় । তবে সংখ্যাটা খুব বেশি নয় । কুত্তার কুত্তামি স্বভাব থেকে ছাগলের ছাগলামি ভালো ।
আর সার্বিক বিচারেই পাগলা কুত্তার চেয়ে ছাগল অবশ্যই ভালো ।

ঈশপের গল্পটা তো আপনারা সবাই জানেন । তবু শুনুন আরেকবার । নেকড়ে ও মেষশাবকের গল্প । 

একদা এক মেষশাবক নদীতে পানি পান করছিল। একটি নেকড়ে পানি পান করতে এসে তাকে দেখল এবং মেষশাবকটির সুস্বাদু গোশত খেতে চাইল । কিন্তু আক্রমনের জন্য কোন কারন খুঁজে পাচ্ছিল না । নেকড়েটি ছিল নদীর উজানে । 

নেকড়ে বলল,
- তুই পানি ঘোলা করছিস কেন ? দেখছিস না আমার সমস্যা হচ্ছে ?
- পানি তো আপনার দিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে মশাই । কীভাবে আমি আপনার পানি ঘোলা করলাম ? বিনয়ের সাথে জবাব দিল শাবক ।
এবার নেকড়ে বললো- তাহলে তুই গত বছর ঘোলা করেছিলি?
- আমার জন্মই তো মাত্র ৬ মাস আগে জনাব, গতবছর আমি কিভাবে পানি ঘোলা করলাম ?
- তাহলে নিশ্চয় তোর বাপ ঘোলা করেছিল !
এই বলে নেকড়ে মেষশাবকটির উপর চড়াও হল এবং ঘাড় মটকে তাকে খেয়ে ফেলল । 

এই হলো নেকড়ের রুপ । ব্লগে এবং বাস্তবের (কুত্তা) নেকড়েদেরও আসলে একই অবস্থা । বেশিরভাগ সময় তারা গালাগালিতে (ঘেউ ঘেউ) মত্ত থাকে । ডানপন্থি ইসলামপন্থি দের ব্যাপারে ওদের প্রথম কথা হয় -আপনি যুদ্ধাপরাধী । নাহলে আপনার বাপ । নাহলে আপনার দাদা যুদ্ধাপরাধী । নাহলে আপনার শ্বশুর । নাহলে আপনার শ্বশুরের শ্বশুর । নাহলে আপনি 'চেতনায় যুদ্ধাপরাধী' !! হা হা হা ...এরপর কুমিরের লেজ খাঁজকাটা খাঁজকাটা খাঁজকাটা (গালাগালি)...



বুধবার, আগস্ট 29, 2012
http://goo.gl/qkGp4

বৃহস্পতিবার, ২৩ আগস্ট, ২০১২

চাষারু ভালোবাসা

আমার ভালোবাসা কবির মত নয় 
চাষার মত । 

আমি যখন কাউকে ভালবাসবো 
ভালোবাসবো  প্রতি মিলিমিটারকে 
উচু-নিচু বিশেষ অংশকে নয়
পাহার-নদী-উপত্যকা নয় , সমগ্র প্রান্তর 

কল্পনাবিলাসী কবির মত নয়, খাঁটি চাষার মত ।

আমি  কর্ষণ করবো

প্রতি ইঞ্চি ভূমি
ওলট পালট করে দেবো প্রতিটি ধুলিকণা
কলের হাল নয় ,লাঙল জোয়াল দিয়ে
উপেক্ষা করে যাব যত ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাত
খাঁটি চাষার মত ।


নারীর রুপ গেয়ে জীবনের সমাপ্তি টেনেছে অজস্র কবি

পুরুষের চোখে নারী স্রষ্টার অপরুপ সৃষ্টি জানি
রুপ কীর্তন - সে আমার সাধ্য নয়
আমি শুধু জানি  ভূমিতে আছে উর্বরতা
প্রয়োছন অবিরাম সেচ । ক্রমাগত চুম্বনের বারিধারা ।
আর আমি তা-ই করবো
কবির মত নয়, খাঁটি চাষার মত । 



২৩ শে আগস্ট, ২০১২

সাম্প্রদায়িকতা জাতীয়তাবাদ বর্ণবাদ

নিজ সম্প্রদায়কে , নিজের এলাকাকে, এলাকার মানুষকে একটু বেশি ভালোবাসা মানুষের স্বাভাবিক সহজাত বৈশিষ্ট্য । এটাতে দোষের কিছু নেই বরং এটা হওয়া উচিত্‍ । কিন্তু কখন এই 'প্রীতি' সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট হয় ? 

এই বিষয়ে যাওয়ার আগে আমরা দেখি সম্প্রদায় বলতে আমরা কী বুঝি ?

সম্প্রদায় বলা যায় যেকোন একটি মানবগোষ্ঠিকে যা হতে পারে ভৌগলিক অঞ্চল , ভাষা , ধর্ম ,বর্ণ , পেশা ইত্যাদির ভিত্তিতে ।

মানুষের মধ্যে বৈচিত্র্য , ভাষা ধর্ম বর্ণ পেশার ভিন্নতা এটা অবশ্যম্ভাবী সত্য , বরং বলা যায় পৃথিবীতে মানুষের অস্তিত্ব রক্ষার প্রয়োজনে এমনটিই হতে হবে । কিন্তু এই ভিন্নতা কখন দোষণীয় হয়ে ওঠে ? যখন শুধুমাত্র ধর্মীয়/দেশ/ ভাষা/বর্ণ/পেশার ভিন্নতার কারণে একজন মানুষ আরেকজনের/আরেক গোষ্ঠির প্রতি বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে ওঠে । বিদ্বেষাত্নক মনোভাব ধারণ করে এমনকি ক্ষতি করে বা করতে চেষ্টা করে কিংবা অপরকে উত্‍সাহ দেয় । 

বদরুদ্দীন উমরের ভাষায় 'সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে এক ধরনের মনোভাব। কোন ব্যক্তির মনোভাবকে তখনই সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দেওয়া হয় যখন সে এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধচারণ এবং ক্ষতিসাধন করতে প্রস্তুত থাকে। 
-[বদরুদ্দীন উমর/সাম্প্রদায়িকতা/মুক্তধারা, ১৯৮০, পৃ: ৯] 

একটা উদাহরণ দেয়া যায় । ধরা যাক আমার কাছে দুজন লোককে উপস্থিত করা হলো । একজন মুসলমান অন্যজন হিন্দু । দুজনে মিলে একজন মানুষকে খুন করেছে । এখন আমি যদি উভয়ের অপরাধ প্রমাণিত হওয়ার পরে শুধু যে হিন্দু তাকে কঠোর শাস্তি দেই আর মুসলমান যে তাকে মাফ করে দেই বা লঘু শাস্তি দেই তাহলে এতে আমার সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশ পায় ।
কিংবা যদি একজন বাংলাদেশি আর একজন ইন্ডিয়ান সমান অপরাধ করে আর আমি ইন্ডিয়ানকে শাস্তি দিয়ে বাংলাদেশিকে বাঁচাই তাহলে এটাও সাম্প্রদায়িকতা । 

ধর্মগুলোর মধ্যে বিশ্বাস , আচার ও আইনে অনেক ভিন্নতা আছে । যেমন আমরা মুসলিমরা এক আল্লাহকে প্রভু মানি , মূর্তি-প্রতিমা তৈরিকে আমাদের জন্য 'বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত' বলে বিশ্বাস করি । আমরা একে ঠিক মনে করিনা ।
আবার হিন্দু ধর্মীয়রা মূর্তি তৈরি করে , পূজা করে । তারা তেত্রিশ কোটি দেবতায় বিশ্বাস করে । এবং গরু জবাই করা তাদের ধর্মে মহাপাপ ।

এখন দেখা যাক কখন সাম্প্রদায়িকতা বলা যাবে । আমি যখন মুসলিম হিসেবে মূর্তির অযৌক্তিকতার কথা বলি , এক প্রভুর প্রতি বিশ্বাসের কথা বলি কিংবা গরু জবেহ করি তখন কি আমাকে সাম্প্রদায়িক বলা যাবে ?
একজন হিন্দু যদি গরু জবাই করার নিন্দা করেন সেটাকি তার সাম্প্রদায়িকতা হবে ? বিষয়গুলো স্পষ্ট হওয়া দরকার ।

আমার বিশ্বাসের কথা বলাটাই কেন সাম্প্রদায়িকতা হবে ? তাহলে বিশ্বাস ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কোথায় রইলো ? সাম্প্রদায়িকতা তখন হবে যখন আমি বা আমার গোষ্ঠি হিন্দুদের ঘরের ভেতরের পূজামন্ডপগুলো ভেঙ্গে দিয়ে আসব শুধুমাত্র ধর্মীয় বিশ্বাসভিন্নতার কারণে । ( ইসলাম এটা করতে বলেনা ) মূর্তি তৈরির কারণে যখন তাদের নির্যাতন করা হবে ।

আবার হিন্দুধর্মীয় কেউ বা কোন গোষ্ঠি যখন গরু জবাই করার 'অপরাধে' মুসলিমদের নির্যাতন করবে সেটাও হবে সাম্প্রদায়িকতা ।

কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হলো নিজনিজ ধর্মের বিশ্বাস ও প্রচারই সাম্প্রদায়িকতা নয় যদিও তাতে অন্য ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক উপাদান থাকে এবং আপাতদৃষ্টিতে তা অন্য ধর্মের কুত্‍সা মনে হয় । বর্তমান সময়ে ডাঃ জাকির নায়েক ও তাঁর কাজ এর একটি উজ্বল দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে । 

আমার জানামতে মুসলিমদেরকেই সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িকতার দোষে অভিযুক্ত করা হয় । মুসলিমদের মধ্যে কেউ ধর্মের কথা বললে , মুসলিমদের প্রতি অন্যায় আচরণের বিরুদ্ধে কথা বললেই তাদের সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেয়া হয় । অথচ মুসলিমরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও নির্যাতিত হয়েছে অন্যান্য গোষ্ঠির সাম্প্রদায়িকতায় । ৪৭ এ পুর্ব পান্জাবের হত্যাযজ্ঞ , গুজরাট হত্যাকান্ড , বাবরি মসজিদ ধ্বংসযজ্ঞ , চীনের উইঘুর হত্যাযজ্ঞ , ফিলিস্তিন কাশ্মীর চেচনিয়া বসনিয়ার হত্যাযজ্ঞ , আসামের নেইল হত্যাযজ্ঞ , বার্মার আরাকান হত্যাযজ্ঞ সহ সাম্প্রদায়িকতাবাদী নিপীড়নের অনেক কালো অধ্যায়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে মুসলিমদের । এখনো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নামে চলছে মুসলিম নিধন । এসব ঘটনায় নিপীড়িত হাজার হাজার মানুষের দোষ শুধু এটাই যে তারা 'মুসলিম' । 

কয়েকদিন আগে আমি লিখলাম যে কবিগুরু রবিঠাকুর এবং বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গভঙ্গ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিরোধীতা করেছিলেন সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে । তাঁদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি সাম্প্রদায়িকতার দোষে দুষ্ট । এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য ।
কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো কয়েকজনকে দেখলাম তারা কবিগুরুর এ আচরণে দুঃখিত না হয়ে তাঁদের সাম্প্রদায়িকতার কথা বলায় আমাকেই সাম্প্রদায়িক ঠাওরালেন!! এদের দৃষ্টিভঙ্গিটা যেন এমন ,উগ্র সাম্প্রদায়িকদের হাতে বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সমালোচনা করাটাও সাম্প্রদায়িকতা !! 

সাম্প্রদায়িকতা , জাতীয়তাবাদ , বর্ণবাদ বিষয়গুলি আসলে একই । কিন্তু জাতীয়তাবাদ নাকি অনেকের কাছে 'আদর্শ' ! জাতীয়তাবাদ কীভাবে আদর্শ হয় আমার বুঝে আসেনা । জাতীয়তাবাদ যদি আদর্শ হয় তাহলে সাম্প্রদায়িকতা কি দোষ করলো ? 

একইভাবে বর্ণবাদও এক ধরণের সাম্প্রদায়িকতা । শরীরের বর্ণকে ঘৃণা করে মানুষকে দুরে সরিয়ে রাখা , নির্যাতন করা ।

যাহোক , আসুন আমরা সারাবিশ্বের সকল উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই । পাশে দাঁড়াই মজলুমের ।



বৃহস্পতিবার, আগস্ট 23, 2012
http://goo.gl/pB7pL

সোমবার, ২০ আগস্ট, ২০১২

ভুল চিকিত্‍সায় রোগীর মৃত্যু : ডাক্তারকে পিটিয়েছে জনতা (জনগন ও একজন ডাক্তার- ৭)

ভুল চিকিত্‍সায় রোগীর মৃত্যু : ডাক্তারকে পিটিয়েছে জনতা

এরকম খবর আমরা প্রায়ই দেখি পত্রিকায় । ব্যাপারটা ভালো করে খেয়াল করুন । রোগীরা চিকিত্‍সা পেয়ে সুস্থ হবে এটাই সবার কাম্য । কিন্তু সবসময় যে সুস্থ হবেই এরতো কোন নিশ্চয়তা নেই । যদি তাই হতো তাহলে তো কোন ডাক্তার কখনোই মারা যেতনা !


রোগী যে সমস্যা নিয়েই আসুক মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এর প্রথম ধাপই হলো জীবন বাঁচানো । পরে অন্য চিকিত্‍সা । রোগীর চিকিত্‍সা নির্ভর করে অনেক কিছুর ওপর । রোগী কোন অবস্থায় কতক্ষণ পরে এলো Early নাকি Late, সমস্যার প্রকৃতি Acute না Chronic , ঠিকমত সমস্যা বলা (Proper History) , যে হাসপাতালে এসেছে তাতে লোকবল , অবকাঠামো , প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও জরুরী ওষুধপত্রের মজুদ ইত্যাদি সহ আরো অনেক বিষয়ের ওপর । Patient compliance ও একটি গুরুত্বপুর্ণ অংশ । রোগীর আর্থিক সঙ্গতিও নজরে আনতে হয় ।

এরমধ্যে ডাক্তারের জ্ঞান- দক্ষতা- আচরণ কিংবা অবহেলা একটি অংশ মাত্র । অন্য যে ফ্যাক্টরগুলো উল্লেখ করেছি সেগুলো কোনটাই কিন্তু ডাক্তারের আওতার মধ্যে নেই । কিছু রোগীর আওতায় , কিছু পরিচালনাকারি প্রশাসনের কাজ । ডাক্তারের কাজ শুধু বিদ্যমান Condition এর আওতায় চিকিত্‍সা করা - যতটুকু সম্ভব সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো । কিন্তু এখন পর্যন্ত পত্রিকায় কখনো দেখলাম না যে লোকজন হাসপাতালের অবকাঠামো উন্নয়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছে ! কিংবা কোন কর্তাব্যক্তিকে মেরেছে ! তারা পারে শুধু কর্তব্যরত ডাক্তারকে পেটাতে । আর পত্রিকার পাতায় এই সংবাদ এমনভাবে দেয়া হয় যাতে একজন মানুষ পড়ার সাথে সাথে নিজের অজান্তে বুঝে ফেলে 'উচিত্‍ কাজ হয়েছে । সব দোষ ঐ ব্যাটা ডাক্তারের !' এ যেন এক পৈশাচিক আনন্দ ! ডাক্তারদের নিরাপত্তার পক্ষে কোন পত্রিকার সম্পাদকীয়ও এখন পর্যন্ত দেখিনি । 

ডাক্তারের কর্তব্যে অবহেলা কিংবা কোন Misconduct এর জন্য রয়েছে আইনের আশ্রয় নেয়ার সুযোগ ।এতে ডাক্তারের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে , জেলও হতে পারে । (ডাক্তারিপেশার আইনগত দিক শিক্ষার জন্য মেডিকেল কারিকুলামে ফরেনসিক মেডিসিন নামে একটি সাবজেক্ট ২ বছর পড়ানো হয় । তাতে মেডিকেল ইথিকস সহ আইনগত বিভিন্ন দিক পড়ানো হয় ।) কিন্তু সেইটা কেউ করেছে বলে শুনিনি , সবাই ডাক্তারকে পিটিয়ে পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করে । স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের নিরাপত্তার দিকটা এখন ডাক্তারদের কাছে গুরুত্বপুর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেলে সাংবাদিকদের প্রতি ডাক্তারদের সহিংস আচরণ এর একটা নমুনা সূচনা বলা যায় ।

শিরোনামটা আবার দেখুন । 'ভুল চিকিত্‍সায় রোগীর মৃত্যু' ! এভাবেই সংবাদের শিরোনাম করা হয় ।চিকিত্‍সা ভুল ছিল এটা রোগীর আত্নীয় কীভাবে বুঝলেন ? সাংবাদিক কীভাবে বুঝলেন ? চিকিত্‍সায় ভুল ছিল কিনা এটা বলতে পারবেন ঐ বিষয়ের একজন বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সক । কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো চিকিত্‍সাবিজ্ঞানের এক লাইনও না পড়েই সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সক এবং বিচারকের ভূমিকা পালন করেন !

Calculated risk বলে একটা কথা আছে । মেডিকেল টার্ম হিসেবে আমরা Prognosis শব্দটি বেশি ব্যবহার করি । লাখ লাখ রোগীর ওপর দীর্ঘমেয়াদী জরিপ ও গবেষণা চালিয়ে চিকিত্‍সাবিজ্ঞানীরা এগুলো বের করেছেন । রোগীর সার্বিক অবস্থা দেখে অনেক সময় ডাক্তার বলে দিতে পারেন , রোগী কতক্ষণ বাঁচবে !

ডাক্তারের প্রতি অভিযোগ থাকলে তাঁর সাথে কথা বলা যেতে পারে , আদালতে বিচার হতে পারে । সেখানেই প্রমাণিত হবে চিকিত্‍সায় 'অবহেলা' বা 'ভুল' ছিল কিনা । কিন্তু ডাক্তার পেটানো আর নিজেই 'চিকিত্‍সায় ভুল' হওয়ার সিদ্ধান্ত দিয়ে , ডাক্তারকে কসাই গালি দিয়ে বিকৃত পৈশাচিক আনন্দ উপভোগ করতে থাকলে আখেরে এটা কারো জন্যই মঙ্গলজনক হবেনা । (সাংবাদিক ভাইদের জন্য যে মঙ্গল হবেনা সেটাতো ইতোমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেছে নাকি!) 

একদিন পত্রিকায় দেখলাম আমাদের চট্টগ্রাম মেডিকেলের মেডিসিন ওয়ার্ড নিয়ে একটা রিপোর্ট । সম্ভবত প্রথম আলো তে । তারিখটা আমার ঠিক মনে নেই । 
শিরোনামটা এরকম 'চমেক হাসপাতালের বারান্দায় রোগীদের দুর্ভোগঃ পরীক্ষার অজুহাত !'

মেডিসিন ওয়ার্ডগুলোতে এমনিই চাপ বেশি থাকে । স্বাভাবিক সময়েই অনেক রোগী বেড পায়না । অতিরিক্তদেরকে তো আর বিনা চিকিত্‍সা ঘাড় ধরে বের করে দেয়া যায়না ! তাদের স্থান দেয়া হয় 'X' বেডে । অর্থাত্‍ এক্সটেনসনে- ফাঁকা মেঝেতে অথবা বারান্দায় । তো ঐদিন প্রফ অথবা এমডি পরীক্ষা চলছিল । বারান্দায় তো আগে থেকেই রোগী ছিল , পরীক্ষার জন্য আরো কয়েকজন এক্সটেনসন বেডের রোগীকে বারান্দায় পাঠাতে হয়েছিল । এমন সময় মহানহৃদয় সাংবাদিক মহোদয় উপস্থিত । এই অবস্থা দেখে তার অন্তর কেঁদে উঠল । তিনি দুএকজন রোগীর সাথে কথা বললেন । এরপর ক্ষিপ্ত হলেন । 'ব্যাটা ডাক্তাররা কসাই , অসুস্থ মানুষগুলোকে কত কষ্ট দিচ্ছে !' এরপর তিনি তার অগ্নিঝরা কলম দিয়ে লিখে দিলেন পত্রিকায় । শিরোনামটা আগেই উল্লেখ করেছি । 
বলাবাহুল্য , তিনি সব দায় মেডিসিন বিভাগীয় প্রধান বেচারা এফসিপিস এমডি পিএইচডি ডিগ্রীধারী কসাই 'ডাক্তারের' ওপর চাপিয়েছিলেন !

সব দোষ ডাক্তারদের । ওদের আবার কিসের এমডি পরীক্ষা ? যত্তসব ফাউল ! পরীক্ষার নামে রোগীদের কষ্ট দেয়া ! বসার দরকার হলে ডাক্তার বারান্দায় বসবে , পরীক্ষা বারান্দায় হবে ! শুনেছি ডাক্তারদের বাড়িতে নাকি নরম বিছানা আছে । সব রক্তচোষা , কেন ওদের বাসায় বিছানা থাকবে ? ওগুলো সব হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে ।

একটা বিনোদনমূলক কথা দিয়ে শেষ করছি । একটি পত্রিকায় খবর দিয়েছে , ঈদ উপলক্ষে গতকাল শনিবার সরকারি ছুটি থাকা সত্বেও 'বিশেষ ব্যবস্থায়' খোলা রাখা হয় হাসপাতালের জরুরি বিভাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ বিভাগ ! 

বেকুব আর কাকে বলে ! পত্রিকার নামটা শুনতে মনচায় ? তাহলে শুনুন , আপনারই প্রিয় পত্রিকা দৈনিক....। থাক , ওতে আর কাজ নেই । 

আমি পালাই । মহানহৃদয় সাংবাদিক জানলে নিশ্চিত আমার বিরুদ্ধে ভুল চিকিত্‍সার অভিযোগ তুলবেন ! কসাই-রক্তচোষা , সেতো বলবেনই !



সোমবার, আগস্ট 20, 2012
http://goo.gl/idxeW

রবিবার, ১৯ আগস্ট, ২০১২

অবিশ্বাসীদের প্রশ্ন ও আল্লাহর জবাব

প্রশ্নঃ

'যারা নবীর কথা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে তারা বলে, এ ফুরকান একটি মনগড়া জিনিস, যাকে এ ব্যক্তি নিজেই তৈরি করেছে এবং অপর কিছু লোক তার এ কাজে তাকে সাহায্য করেছে ৷'
বলে, এসব পুরাতন লোকদের লেখা জিনিস - যেগুলো এ ব্যক্তি লিখিয়ে নিয়েছে এবং তা তাকে সকাল-সাঁঝে শুনানো হয় ৷ ( আল-ফুরকান- ৪,৫)

জবাবঃ

'বড়ই জুলুম ও ডাহা মিথ্যায় তারা এসে পৌছেছে ৷' - (আল-ফুরকান,৪)
'হে মুহাম্মদ! বলো, একে নাযিল করেছেন তিনিই যিনি পৃথিবী ও আকাশমন্ডলীর রহস্য জানেন ৷ আসলে তিনি বড়ই ক্ষমাশীলও দয়ার্দ্র ৷' -(আল-ফুরকান , ৬ )



প্রশ্নঃ

তারা বলে, “এ কেমন রসূল, যে খাবার খায় এবং হাটে বাজারে ঘুরে বেড়ায়? কেন তার কাছে কোন ফেরেশতা পাঠানো হয়নি, যে তার সাথে থাকতো এবং (অস্বীকারকারীদেরকে) ধমক দিতো?
অথবা আর কিছু না হলেও তাঁর জন্য অন্তত কিছু ধন-সম্পদ অবতীর্ণ করা হতো অথবা তাঁর কাছে থাকতো অন্তত কোন বাগান, যা থেকে সে (নিশ্চিন্তে) রুজি সংগ্রহ করতো?” আর জালেমরা বলে, “তোমরা তো একজন যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছো।”
(সুরা ফুরকান-৭,৮)

জবাবঃ

"দেখো, কেমন সব উদ্ভট ধরনের যুক্তি তারা তোমার সামনে খাড়া করেছে, তারা এমন বিভ্রান্ত হয়েছে যে, কোন কাজের কথাই তাদের মাথায় আসছে না।
বড়ই বরকত সম্পন্ন তিনি , যিনি চাইলে তাঁর নির্ধারিত জিনিস থেকে অনেক বেশী ও উৎকৃষ্টতর জিনিস তোমাকে দিতে পারেন, (একটি নয়) অনেকগুলো বাগান যেগুলোর পাদদেশে নদী প্রবাহিত এবং বড় বড় প্রাসাদ।
আসল কথা হচ্ছে, এরা “সে সময়টিকে” মিথ্যা বলেছে এবং যে সে সময়কে মিথ্যা বলে তার জন্য আমি জ্বলন্ত আগুন তৈরি করে রেখেছি।
আগুন যখন দূর থেকে এদের দেখবে তখন এরা তার ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত চিৎকার শুনতে পাবে।
আর যখন এরা শৃংখলিত অবস্থায় তার মধ্যে একটি সংকীর্ণ স্থানে নিক্ষিপ্ত হবে তখন নিজেদের মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে।
(তখন তাদের বলা হবে) আজ একটি মৃত্যুকে নয় বরং বহু মৃত্যুকে ডাকো।
এদের বলো, এ পরিণাম ভালো অথবা সেই চিরন্তন জান্নাত যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে মুত্তাকীদেরকে?সেটি হবে তাদের কর্মফল এবং তাদের সফরের শেষ মঞ্জিল।
সেখানে তাদের প্রত্যেকটি ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তার মধ্যে তারা থাকবে চিরকাল। তা প্রদান করা হবে তোমার রবের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত একটি অবশ্য পালনীয় প্রতিশ্রুতি। 
আর সেদিনই (তোমার রব) তাদেরও ঘিরে আনবেন এবং তাদের উপাস্যদেরও আল্লাহকে বাদ দিয়ে আজ তারা যাদের পূজা করছে। তারপর তিনি তাদের জিজ্ঞেস করবেন, “তোমরা কি আমার এ বান্দাদের গোমরাহ করেছিলে? অথবা এরা নিজেরাই সহজ সরল সত্য পথ থেকে বিচ্যূত হয়ে পড়েছিল?” 
তারা বলবে, “পাক-পবিত্র আপনার সত্তা! আপনাকে ছাড়া অন্য কাউকে আমাদের প্রভুরূপে গ্রহণ করার ক্ষমতাও তো আমাদের ছিল না কিন্তু আপনি এদের এবং এদের বাপ-দাদাদের খুব বেশী জীবনোপকরণ দিয়েছেন, এমনকি এরা শিক্ষা ভুলে গিয়েছে এবং দুর্ভাগ্যপীড়িত হয়েছে। 
এভাবে মিথ্যা সাব্যস্ত করবে তারা (তোমাদের উপাস্যরা) তোমাদের কথাগুলোকে যা আজ তোমরা বলছো, তারপর না তোমরা নিজেদের দুর্ভাগ্যকে ঠেকাতে পারবে, না পারবে কোথাও থেকে সাহায্য লাভ করতে এবং তোমাদের মধ্য থেকে যে-ই জুলুম করবে তাকে আমি কঠিন শাস্তির স্বাদ আস্বাদন করাবো।
হে মুহাম্মাদ! তোমার পূর্বে যে রসূলই আমি পাঠিয়েছি তারা সবাই আহার করতো ও বাজারে চলাফেরা করতো। আসলে আমি তোমাদের পরস্পরকে পরস্পরের জন্য পরীক্ষার মাধ্যমে পরিণত করেছি। তোমরা কি সবর করবে? তোমাদের রব সবকিছু দেখেন।" 
-(সুরা ফুরকান,৯-২০)



প্রশ্নঃ 

"যারা আমার সামনে হাজির হবার আশা করে না তারা বলে, “ কেন আমাদের কাছে ফেরেশতা পাঠানো হয় না ? অথবা আমরা আমাদের রবকে দেখি না কেন ?" 
-( ফুরকান , ২১ ) 
জবাবঃ 
"বড়ই অহংকার করে তারা নিজেদের মনে মনে এবং সীমা অতিক্রম করে গেছে তারা অবাধ্যতায়৷ 
যেদিন তারা ফেরেশতাদের দেখবে সেটা অপরাধীদের জন্য কোন সুসংবাদের দিন হবে না ৷ চিৎকার করে উঠবে তারা, “হে আল্লাহ ! বাচাও বাচাও” ! 
এবং তাদের সমস্ত কৃতকর্ম নিয়ে আমি ধূলোর মতো উড়িয়ে দেবো ৷ 
সে দিন যারা জান্নাতের অধিকারী হবে তারাই উৎকৃষ্ট স্থানে অবস্থান করবে এবং দুপুর কাটাবার জন্য চমৎকার জায়গা পাবে৷ 
আকাশ ফুড়ে একটি মেঘমালার সেদিন উদয় হবে এবং ফেরেশতাদের দলে দলে নামিয়ে দেয়া হবে৷ 
সে দিন প্রকৃত রাজত্ব হবে শুধুমাত্র দয়াময়ের এবং সেটি হবে অস্বীকারকারীদের জন্য বড়ই কঠিন দিন৷ 
জালেমরা সেদিন নিজেদের হাত কামড়াতে থাকবে এবং বলতে থাকবে, “ হায় ! যদি আমি রসুলের সহযোগী হতাম৷ 
হায়! আমার দুর্ভাগ্য, হায়! যদি আমি অমুক লোককে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ না করতাম৷ 
তার প্ররোচনার কারণে আমার কাছে আসা উপদেশ আমি মানিনি মানুষের জন্য শয়তান বড়ই বিশ্বাসঘাতক প্রমাণিত হয়েছে৷ 
আর রসূল বলবে, “ হে আমার রব! আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা এ কুরআনকে হাসি - ঠাট্টার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল ৷ 
হে মুহাম্মাদ! আমি তো এভাবে অপরাধীদেরকে প্রত্যেক নবীর শক্রতে পরিণত করেছি এবং তোমার জন্য তোমার রবই পথ দেখানোর ও সাহায্য দানের জন্য যথেষ্ট । " 
-( ফুরকান ২২-৩২ )



প্রশ্নঃ 

"অস্বীকারকারীরা বলে, “এ ব্যক্তির কাছে সমগ্র কুরআন একই সাথে নাযিল করা হলো না কেন?” " 
-(সুরা ফুরকান, ৩২) 

জবাবঃ

"হ্যাঁ, এমন করা হয়েছে এজন্য, যাতে আমি একে ভালোভাবে তোমার মনে গেঁথে দিতে থাকি এবং (এ উদ্দেশ্যে) একে একটি বিশেষ ক্রমধারা অনুযায়ী আলাদা আলাদা অংশে সাজিয়ে দিয়েছি।
আর (এর মধ্যে এ কল্যাণকর উদ্দেশ্যও রয়েছে যে) যখনই তারা তোমার সামনে কোন অভিনব কথা (অথবা অদ্ভূত ধরনের প্রশ্ন) নিয়ে এসেছে তার সঠিক জবাব যথাসময়ে আমি তোমাকে দিয়েছি এবং সর্বোত্তম পদ্ধতিতে বক্তব্য স্পষ্ট করে দিয়েছি। 
যাদেরকে উপুড় করে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়া হবে তাদের অবস্থান বড়ই খারাপ এবং তাদের পথ সীমাহীন ভ্রান্তিতে পরিপূর্ণ।" 
(-ফুরকান,৩২-৩৪)



প্রশ্নঃ 

"তারা যখন তোমাকে দেখে,তোমাকে বিদ্রূপের পাত্রে পরিণত করে। (বলে) , “এ লোককে আল্লাহ‌ রসূল করে পাঠিয়েছেন? 
এতো আমাদের পথভ্রষ্ট করে নিজেদের দেবতাদের থেকেই সরিয়ে দিতো যদি না আমরা তাদের প্রতি অটল বিশ্বাসী হয়ে থাকতাম।" 
-(ফুরকান ৪১,৪২) 

জবাবঃ 

"বেশ, সে সময় দূরে নয় যখন শাস্তি দেখে তারা নিজেরাই জানবে ভ্রষ্টতায় কে দূরে চলে গিয়েছিল। 
কখনো কি তুমি সেই ব্যক্তির অবস্থা ভেবে দেখেছো, যে তার নিজের প্রবৃত্তির কামনাকে প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে? তুমি কি এহেন ব্যক্তিকে সঠিক পথে নিয়ে আসার দায়িত্ব নিতে পার? 
তুমি কি মনে করো তাদের অধিকাংশ লোক শোনে ও বোঝে? তারা পশুর মতো বরং তারও অধম। 
তুমি কি দেখ না কিভাবে তোমার রব ছায়া বিস্তার করেন? তিনি চাইলে একে চিরন্তন ছায়ায় পরিণত করতেন। আমি সূর্যকে করেছি তার পথ-নির্দেশক। 
তারপর (যতই সূর্য উঠতে থাকে) আমি এ ছায়াকে ধীরে ধীরে নিজের দিকে গুটিয়ে নিতে থাকি। 
আর তিনিই রাতকে তোমাদের জন্য পোশাক, ঘুমকে মৃত্যুর শান্তি এবং দিনকে জীবন্ত হয়ে উঠার সময়ে পরিণত করেছেন। 
আর নিজের রহমতের আগে ভাগে বাতাসকে সুসংবাদদাতা রুপে পাঠান। তারপর আকাশ থেকে বর্ষণ করেন বিশুদ্ধ পানি । 
একটি মৃত এলাকাকে তার মাধ্যমে জীবন দান করার এবং নিজের সৃষ্টিরমধ্য থেকে বহুতর পশু ও মানুষকে তা পান করবার জন্য। 
এ বিস্ময়কর কার্যকলাপ আমি বার বার তাদের সামনে আনি যাতে তারা কিছু শিক্ষা গ্রহণ করে । কিন্তু অধিকাংশ লোক কুফরী ও অকৃতজ্ঞতা ছাড়া অন্য কোন মনোভাব পোষণ করতে অস্বীকার করে। 
যদি আমি চাইতাম তাহলে এক একটি জনবসতিতে এক একজন ভীতি প্রদর্শনকারী পাঠাতে পারতাম।” 
কাজেই হে নবী, কাফেরদের কথা কখনো মেনে নিয়ো না এবং এ কুরআন নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বৃহত্তম জিহাদ করো।" 
-(সুরা ফুরকান,৪২-৫২)



রবিবার, আগস্ট 19, 2012

বঙ্কিম(চন্দ্র) সাহিত্যে মুসলিম বিদ্বেষ ও উগ্রপন্থা

বঙ্কিমের উপন্যাসগুলোর মধ্যে রাজসিংহ ও আনন্দমঠ সবচেয়ে বেশি সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপূর্ণ । মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টিতে এ দুটি উপন্যাস অনন্য । উপন্যাস দুটি প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে ।

'আনন্দ মঠ' এর কিছু অংশ দেখুন- 

ভবানন্দ মহেন্দ্রকে বলছে ,"..কোন্ দেশের মানুষের সিন্দুকে টাকা রাখিয়া সোয়াস্তি নাই, সিংহাসনে শালগ্রাম রাখিয়া সোয়াস্তি নাই, ঘরে ঝি-বউ রাখিয়া সোয়াস্তি নাই, ঝি-বউয়ের পেটে ছেলে রেখে সোয়াস্তি নাই? পেট চিরে ছেলে বার করে। সকল দেশের রাজার সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণের সম্বন্ধ; আমাদের মুসলমান রাজা রক্ষা করে কই? ধর্ম গেল, জাতি গেল, মান গেল, কুল গেল, এখন ত প্রাণ পর্যন্তও যায়। এ নেশাখোর দেড়েদের না তাড়াইলে আর কি হিন্দুর হিন্দুয়ানী থাকে?
ম। তাড়াবে কেমন করে?
ভ। মেরে।.."


"...দিনে দিনে শত শত, মাসে মাসে সহস্র সহস্র সন্তান আসিয়া ভবানন্দ জীবানন্দের পাদপদ্মে প্রণাম করিয়া, দলবদ্ধ হইয়া দিগদিগন্তরে মুসলমানকে শাসন করিতে বাহির হইতে লাগিল। যেখানে রাজপুরুষ পায়, ধরিয়া মারপিট করে, কখন কখন প্রাণবধ করে,..যেখানে মুসলমানের গ্রাম পায়, দগ্ধ করিয়া ভস্মাবশেষ করে।.."

"..তার পর, তাহারা গ্রামে গ্রামে চর পাঠাইতে লাগিল। চর গ্রামে গিয়া যেখানে হিন্দু দেখে, বলে, ভাই, বিষ্ণুপূজা করবি? এই বলিয়া ২০/২৫ জন জড় করিয়া, মুসলমানের গ্রামে আসিয়া পড়িয়া মুসলমানদের ঘরে আগুন দেয়। মুসলমানেরা প্রাণরক্ষায় ব্যতিব্যস্ত হয়, সন্তানেরা তাহাদের সর্বস্ব লুঠ করিয়া নূতন বিষ্ণুভক্তদিগকে বিতরণ করে। লুঠের ভাগ পাইয়া গ্রাম্য লোকে প্রীত হইলে বিষ্ণুমন্দিরে আনিয়া বিগ্রহের পাদস্পর্শ করাইয়া তাহাদিগকে সন্তান করে। লোকে দেখিল, সন্তানত্বে বিলক্ষণ লাভ আছে।.."

“..সাহেব, আমি স্ত্রীলোক, কাহাকেও আঘাত করি না। তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করিতেছি, হিন্দু মোছলমানে মারামারি হইতেছে, তোমরা মাঝখানে কেন? আপনার ঘরে ফিরিয়া যাও।”
সাহেব। টুমি কে?
শান্তি। দেখিতেছ সন্ন্যাসিনী ।.." 


"..ভবানন্দ তখন নিজে গিয়া কাপ্তেন টমাসের চুল ধরিলেন। কাপ্তেন শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করিতেছিল। ভবানন্দ বলিলেন, “কাপ্তেন সাহেব,তোমায় মারিব না, ইংরেজ আমাদিগের শত্রু নহে। কেন তুমি মুসলমানের সহায় হইয়া আসিয়াছ? আইস–তোমার প্রাণদান দিলাম, আপাতত: তুমি বন্দী। ইংরেজের জয় হউক, আমরা তোমাদের সুহৃদ|..”


"..সেই রজনীতে হরিধ্বনিতে সে প্রদেশভূমি পরিপূর্ণা হইল। সন্তানেরা দলে দলে যেখানে সেখানে উচ্চৈ:স্বরে কেহ “বন্দে মাতরম্” কেহ “জগদীশ হরে” বলিয়া গাইয়া বেড়াইতে লাগিল। কেহ শত্রুসেনার অস্ত্র, কেহ বস্ত্র অপহরণ করিতে লাগিল। কেহ মৃতদেহের মুখে পদাঘাত, কেহ অন্যপ্রকার উপদ্রব করিতে লাগিল।কেহ গ্রামাভিমুখে , কেহ নগরাভিমুখে ধাবমান হইয়া, পথিক বা গৃহস্থকে ধরিয়া বলে, “বল বন্দে মাতরম্, নহিলে মারিয়া ফেলিব |” কেহ ময়রার দোকান লুঠিয়া খায়, কেহ গোয়ালার বাড়ী গিয়া হাঁড়ি পাড়িয়া দধিতে চুমুক মারে, কেহ বলে, “আমরা বজ্রগোপ আসিয়াছি, গোপিনী কই?” সেই এক রাত্রের মধ্যে গ্রামে গ্রামে নগরে নগরে মহাকোলাহল পড়িয়া গেল। সকলে বলিল,মুসলমান পরাভূত হইয়াছে, দেশ আবার হিন্দুর হইয়াছে। সকলে একবার মুক্তকণ্ঠে হরি হরি বল| গ্রাম্য লোকেরা মুসলমান দেখিলেই তাড়াইয়া মারিতে যায়। কেহ কেহ সেই রাত্রে দলবদ্ধ হইয়া মুসলমানদিগের পাড়ায় গিয়া তাহাদের ঘরে আগুন দিয়া সর্বস্ব লুঠিয়া লইতে লাগিল। অনেক যবন নিহত হইল, অনেক মুসলমান দাড়ি ফেলিয়া গায়ে মৃত্তিকা মাখিয়া হরিনাম করিতে আরম্ভ করিল, জিজ্ঞাসা করিলে বলিতে লাগিল, “মুই হেঁদু |”
দলে দলে ত্রস্ত মুসলমানেরা নগরাভিমুখে ধাবিত হইল।.."


"..বল হরে মুরারে! হরে মুরারে! উঠ! মুসলমানের বুকে পিঠে চাপিয়া মার! লক্ষ সন্তান টিলার পিঠে |..”

কিন্তু তিনি যখন এসব লিখেন, তারও ১০০ বছর আগে মুসলিমদের রাজত্ব শেষ হয়েছিল ।

মৃণালিনী উপন্যাসে ব্রাক্ষ্মণ মাধবাচার্য হেমচন্দ্রকে ডেকে বলছেন , "তুমি দেবকার্য না সাধিলে কে সাধিবে ? তুমি যবনকে না তাড়াইলে কে তাড়াইবে ? যবন নিপাত তোমার একমাত্র ধ্যান হওয়া উচিত্‍ ।"

রাজসিংহ রচিত হয় মোগল সম্রাট আওরঙ্গজেবকে নিয়ে । এতে আওরঙ্গজেবকে বিকৃতচরিত্র , ইসলাম ও মুসলমানদের কদর্য রুপ এবং হিন্দু রাজপুতদের সাহসিকতা ,সংগ্রাম ও ঔদার্যকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । কিছু অংশ দেখুন-

"..এসো, একটু আমোদ করা যাক ।
..“কি আমোদ বল বল!”
রাজপুত্রী বলিলেন, আমি এই আল‍মগীর বাদশাহের চিত্রখানি মাটিতে রাখিতেছি। সবাই উহার মুখে এক একটি বাঁ পায়ের নাতি মার। কার নাতিতে উহার নাক ভাঙ্গে দেখি |..
ভয়ে সখীগণের মুখ শুকাইয়া গেল।..
হাসিয়া রাজপুত্রী চিত্রখানি মাটিতে রাখিলেন, কে নাতি মারিবি মার |.."


"..চঞ্চলকুমারী ধীরে ধীরে অলঙ্কারশোভিত বাম চরণখানি ঔরঙ্গজেবের চিত্রের উপরে সংস্থাপিত করিলেন–চিত্রের শোভাবুঝি বাড়িয়া গেল। চঞ্চলকুমারী একটু হেলিলেন–মড়মড় শব্দ হইল–ঔরঙ্গজেব বাদশাহের প্রতিমূর্তি রাজপুতকুমারীর চরণতলে ভাঙ্গিয়া গেল।.."

"..পরদিন চঞ্চলকুমারী ক্রীত চিত্রগুলি একা বসিয়া মনোযোগের সহিত দেখিতেছিলেন। নির্মলকুমারী আসিয়া সেখানে উপস্থিত হইল। তাহাকে দেখিয়া চঞ্চল বলিল, নির্মল ! ইহার মধ্যে কাহাকেও তোমার বিবাহ করিতে ইচ্ছা করে?
নির্মল বলিল, যাহাকে আমার বিবাহ করিতে ইচ্ছা করে, তাহার চিত্রত তুমি পা দিয়া ভাঙ্গিয়া ফেলিয়াছ |
চ। ঔরঙ্গজেবকে!
নি । আশ্চর্‍য হইলে যে?
চ। বজ্জাতের ধাড়ি যে? অমন পাষণ্ডযে আর পৃথিবীতে জন্মে নাই?
নি । বদ্জাতকে বশ করিতেই আমার আনন্দ। তোমার মনে নাই, আমি বাঘ
পুষিতাম? আমি একদিন না একদিন ঔরঙ্গজেবকে বিবাহ করিব ইচ্ছা আছে।
চ। মুসলমান যে?
নি । আমার হাতে পড়িলে ঔরঙ্গজেবও হিন্দু হবে।
চ। তুমি মর।.."

"..ইহার একমাত্র কারণ, ঔরঙ্গজেব মহাপাপিষ্ঠ ছিলেন। তাঁহার ন্যায়ধূর্ত্, কপটাচারী, পাপে সঙ্কোচশূন্য, স্বার্থপর, পরপীড়ক,প্রজাপীড়ক দুই একজন মাত্র পাওয়া যায়। এই কপটাচারী সম্রাট জিতেন্দ্রিয়তার ভাণ করিতেন–কিন্তু অন্ত:পুর অসংখ্য সুন্দরীরা জিতে মধুমক্ষিকা পরিপূর্ণ মধুচক্রের ন্যায় দিবারাত্র আনন্দধ্বনি ধ্বনিত হইত।
তাঁহার মহিষীও অসংখ্য–আর সবার বিধানের সঙ্গে সম্বন্ধশূন্যা বেতনভাগিনী বিলাসিনীও অসংখ্য।.."



রবিবার, আগস্ট 19, 2012
http://goo.gl/sZkm6