-মা ক্ষুধা লেগেছে । কিছু খেতে দাওনা ।
-দিচ্ছি বাবা । বৃষ্টিটা একটু থামুক । দেখিস তোর জন্য কত কিছু নিয়ে আসবো !
-পেট ব্যথা করছে মা । কিছু খেতে দাও ।
-আমার লক্ষ্মী ছেলে । আয় আমার কোলে আয় । তোর বাবা আসুক । অনেক মজার মজার খাবার দেবো আজ তোকে ।
মা
পাখিটা তার ভেজা ডানাটা ঝাপটিয়ে নেয় । ছোট্ট বাচ্চাটাকে ডানার ভেতর
ঢুকিয়ে উম দেয়ার চেষ্টা করে । নিজেও খুব ক্ষুধার্ত । এদিকে বৃষ্টির
পানিতে ভিজে নষ্ট হওয়ার পথে ছোট্ট বাসাটা । এই বৃষ্টির মধ্যেও পরিবারের
জন্য খাবার সংগ্রহে গেছে বাবা পাখিটা । সে অনেকক্ষণ হলো । এখনো ফেরেনি ।
ভেজা ডানা নিয়ে বৃষ্টির ভেতর ওড়া যায় না । হেঁটে হেঁটে খাবার খুঁজতে হয়
। বাইরে কোন খাবারও সহজে পাওয়া যায় না । সব বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় । শুকনো
ভালো খাবারের জন্য মানুষের বাড়িতে ঢুকতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ।
-বাবা
আসছে না কেন মা ? ডানার ভেতর থেকে প্রশ্ন করে বাচ্চাটা । ওর নাম টিউ । মা
পাখিটা আর কোন উত্তর দেয় না । তার নিজেরও অনেক দুশ্চিন্তা হচ্ছে ।
গত
তিনদিন ধরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে । যেটুকু খাবার ছিল প্রথম দিনটা কোনরকম
চালিয়ে নিয়েছে । নিজেরা না খেয়ে বাচ্চাটার জন্য কিছু রেখেছিল । সেটুকুও
শেষ হয়ে গেছে গতরাতে ।
সকালে কিছুক্ষণের জন্য বৃষ্টি থামতেই বাবা
পাখিটা তাঁর দুর্বল শরীর নিয়ে উড়াল দেয় । এখন দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে ।
বৃষ্টি নেমেছে আবার । এখনো ফেরেনি বাবা পাখিটা । ক্ষুধার্ত টিউ মায়ের
ডানার উমে ঘুমিয়ে পড়ে । মা পাখিটা খেয়াল করে তার নিজেরও পেট মোচড়
দিচ্ছে ক্ষুধায় । কিন্তু কিছু করার নেই । এমনিতে টানা বৃষ্টি । তারওপর
ছোট্টমণি টিউকে একা রেখে কোথাও যেতেও পারছে না ।
নানারকম
দুশ্চিন্তায় কখন যে তন্দ্রা এসেছিল বুঝতে পারেনি মা পাখিটা । বৃষ্টিটা
একটু কমেছে । এমন সময় ডাক শুনে চমকে উঠলো । বাবা পাখিটা ফিরে এসেছে ।
ছোট্ট একটা পুটলি মুখে ।
-এই বাবা ওঠ ওঠ । টিউকে ডাকে মা পাখি ।
আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায় টিউ । সারা শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে । বাসাটা
ভিজে একাকার হয়ে আছে তিনদিন ধরে । এতটুকু রোদের দেখা নেই ।
টিউর এ অবস্থা দেখে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলো মা ও বাবা । ওকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতে লাগলো মা পাখিটা ।
বাবাটা
সামান্য কিছু খেয়ে আবারো নেমে পড়লো বৃষ্টির মধ্যেই । পাশের গ্রামের
বাঁশবাগানে একটা ডাক্তার ঘুঘু পাখি আছে । তাকে ডেকে আনতে হবে ।
এদিকে
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে । বৃষ্টি এখনো থামলো না । সন্ধ্যা নামার
একটু পর ব্যর্থ ও হতাশ হয়ে ফিরে এলো বাবাটা । ডাক্তার পাখিটাকে পাওয়া
যায়নি । কয়েকদিন আগে নাকি সে তার বন্ধুর বাড়িতে বেড়াতে গেছে শহরে ।
বৃষ্টির কারণে এখনো ফিরতে পারেনি ।
টিউকে আদর করে বাবা পাখিটা ।
তাকে একটা রুপকথার গল্প শোনায় । টিউর জ্বর আরো বেড়েছে । টিউকে খাইয়ে
দেয় বাবাটা অনেক আদর করে । টিউ ঘুমিয়ে পড়লে তারাও ঘুমাতে চেষ্টা করে ।
পরদিন
। সকাল হয় । টিউ আর ঘুম থেকে ওঠে না । জ্বরও নেই তার গায়ে । বৃষ্টি তখনো
থামেনি । টিউর বাবা মা দুজনার চোখের জল মিশে যায় বৃষ্টিতে । কেউ দেখে না
।
সিদ্ধান্ত নেয় , বৃষ্টিটা থামলেই উড়াল দেবে অজানার উদ্দেশ্যে ।
শনিবার, জুলাই 2, 2011