এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ৩১ মে, ২০১৫

এইসব রাত্রিতে

পৃথিবীর পরে ঘনায়ে এসেছে ঘনঘোর অন্ধকার
কতটুকু তার আলোকিত করা যাবে
কৃত্রিম নিয়ন আলোয়?
এইসব রাত্রিতে
জানালার ফোকর বেয়ে ঘরের ভেতর
চোরের মত ঢুকে পড়ে পুরনো স্মৃতিরা
কতটুকু থেকে বলো মুক্তি পাওয়া যাবে
নাগরিক ব্যস্ততায়?

বিবর্তিত ফুটপাতে

সোডিয়াম বাতির আলোয় তবু ছিল
বোনের হাতের মত স্নেহময়
মায়াবী পরশ ।
বলতে না পারা ব্যথা, হাহাকার গুলো
রাত্রির গভীরে ধূসর আলোয় রাঙা ফুটপাতে হেঁটে হেঁটে
উড়িয়ে দেয়া যেত নৈঃশব্দের আকাশে ।

অথচ এখন রাস্তার দুধারে ল্যাম্পপোস্টগুলো হতে
কুষ্ঠরোগীর মত সাদা আলো নেমে আসে
এত তীব্র ! স্পষ্ট দেখা যায় হৃদয়ের ক্ষতগুলো !
এমন নিঝুম রাতে
ক্লান্ত নগরীর প্রশান্ত ফুটপাতে বোধহয় এখন আর
বিরহী কোনও ক্লান্ত পথিকের
তপ্ত হৃদয়ে প্রশান্তি মেলেনা ।

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস

ছোট খোকা বড় হও বড় হবি না? একটানে দুইটানে কিছু হয়না ! এইভাবেই তো শুরু....
হ্যা, এভাবে শুরু হয় ঠিকই । কিন্তু তারপর একটান দুইটান থেকে এক প্যাকেট দুই প্যাকেট, এক চুমুক দুই চুমুক থেকে এক পেগ দুই পেগ ! সিগারেট দিয়ে শুরু করে অবশেষে বিভিন্ন মাদকের ভয়াবহ থাবায় এভাবেই প্রতিদিন আত্মাহুতি দেয় বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ । যার বেশিরভাগই শিশু কিশোর যুবক। আর একবার শুরু করলে সহজে এই নেশা থেকে বের হতেও পারেনা তারা ।
সিগারেটের ধোঁয়া কোন নিরীহ ধোঁয়া নয় । এতে থাকে ভয়াবহ বিষ নিকোটিন সহ কয়েক হাজার ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান । বলা হয়, একটা সিগারেটে যে পরিমাণ নিকোটিন থাকে তা যদি আলাদা করে একসাথে সরাসরি কারো রক্তে প্রবেশ করানো হয়, তাহলে তত্‍ক্ষণাত্‍ তার মৃত্যু ঘটবে !
এমন কোন অঙ্গ নেই যার ওপর তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব নেই । সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে ফুসফুসের । হতে পারে ফুসফুসের রোগ সিওপিডি/এমফাইসেমা, হতে পারে ফুসফুসের ক্যান্সার । এখন তো শ্বাস নিতে কষ্ট হয়না তাই শ্বাসের মর্ম টের পান না । যখন প্রতিটা শ্বাস গুনে গুনে নিতে হবে এবং ফেলতেও হবে গুনে গুনে তখন হয়তো বুঝবেন কষ্ট কাকে বলে !

ধূমপায়ীদের হতে পারে স্ট্রোক, হাটঁ এটাক, পেপটিক আলসার, সিলিয়াক ডিজিজ, ইরিটেবল বাওয়েল ডিজিজ, কোলন ক্যান্সার । বার্জারস ডিজিজ হলে কেটে ফেলতে হতে পারে হাত পা । বলা হয়, প্রতিটি সিগারেট গড়ে এগারো মিনিট আয়ু কমায় ! ধূমপায়ী শুধু যে নিজের ক্ষতি করে তা নয়, ক্ষতি করে আশেপাশের মানুষেরও । গর্ভাবস্থায় ধূমপান বা ধূমপায়ীর সাথে বসবাসে জন্ম হতে পারে বিকলাঙ্গ শিশুর। হতে পারে অসময়ে গর্ভপাত । সময় ও অর্থ অপচয় তো আছেই । আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো- ইসলাম ধর্মে কিন্তু অনেক আলেমের মতে ধূমপান করা পুরোপুরি হারাম !
আর হ্যা, যেসকল ইয়াং ম্যান বা ইয়াং লেডি স্মার্টনেসের জন্য সিগারেটকে 'Important' মনে করেন, তারা হয়তো জানেন না যে যাকে আপনি Important ভাবছেন, সেই জিনিস কিন্তু আপনাকেই 'Impotent' বানিয়ে ফেলতে পারে
[আজ ৩১শে মে । বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস । নিজে সচেতন হোন, আপনার পাশের জনকে সচেতন করুন।]

বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০১৫

এভাবেই কি মানুষ হতে হয়?

একদিন 'মানুষ' হবো তাই 
সময়ের রুক্ষতায় ঘষে ঘষে  
ক্রমশ ক্ষয় করছি মানব জীবন !  
প্রায়শই বিসর্জন দিচ্ছি মানবিক সাধ আহ্লাদ  
জুতোর তলায় পিষ্ট করছি সুখ  
এবং আসন্ন সুখের নানাবিধ মেগা আয়োজন।  
সভ্যতার প্রয়োজনে(!) জনবহুল নগরীতে বোমা হামলার মত-  
'মানুষ' হবার প্রয়োজনে প্রায়শই করে যাচ্ছি  
'অমানুষিক' শ্রম ।


দিনশেষে আজ তাই প্রশ্ন জাগে
এভাবেই কি মানুষ হতে হয়?
আমি কি সত্যিই মানুষ হচ্ছি? নাকি
মানবিক চাহিদা অপূর্ণ রেখে দিনে দিনে
হয়ে উঠছি-
মানবিক বোধের এক পরিপূর্ণ রোবট?

নাগরিক নির্লিপ্তি

আমি এই শহরের এক শান্তিপ্রিয় নাগরিক ।
তবু মাঝে মাঝে বিদ্রোহী হলে
চায়ের কাপে গুলিয়ে ঢকঢক করে খাই দেশের সরকার, সংসদ,
এবং বিরোধী দলকেও !
ঘুমোতে যাবার আগে চ্যানেলে চ্যানেলে রিমোট ঘুরিয়ে
খিস্তিখেউরে মেতে উঠি এ শহরের বুদ্ধিজীবিদের সাথে ।
মনে হয়,
দেশের রাজনীতি অর্থনীতিসহ সবকিছু চক চক করে ওঠে
আমার নখের দর্পণে !


চা-য়ে চুমুক দিতে দিতে আমিও বয়ান করি ঔচিত্যের কথা-
'জনগনের উচিত্‍ জুলুমের প্রতিবাদ করা। আর
আরো শক্তিশালী হওয়া দরকার বিরোধীদলকে !'
(আমি কিন্তু জনগন নই !) আমি এ শহরের এক শান্তিপ্রিয় নাগরিক ।
আর এভাবেই আমি প্রতিরাতে
চা এবং কফিতে গুলিয়ে ঢকঢক করে খাই এদেশের রাজনীতি ।
সরকার, সংসদ,
এবং বিরোধী দলকে !

বয়স ও বিরহ

যতই বাড়ছে বয়স 
সংখ্যা বাড়ছে পরিচিত মানুষের । 
সংখ্যায় বাড়ছে প্রিয় এবং অপ্রিয় মানুষের মুখ  
ডায়েরির পাতায় সংখ্যা বাড়ছে স্মরণীয় ঘটনার ।  
ঝাঁকড়া চুলে ঢাকা আমার শক্ত খুলির ভেতর  
ধুলিকণার মত জমছে ক্রমাগত  
স্মৃতির পাহাড় । 


হারানোর তালিকায়ও বাড়ছে চেনা মানুষের নাম 
গভীর হতে গভীরতর হচ্ছে আটলান্টিক বিরহ।  
একাকি রাত্রিগুলোয় এখন আর জোৎস্নায় ডোবেনা মন  
সাদা মেঘ হয়ে যেন হিমেল হাওয়ায়  
উড়ে আসে অতলান্ত হাহাকার,  
অলৌকিক চাঁদরের মত- আচ্ছন্ন করে রাখে  
সবটুকু হৃদয় ।

শনিবার, ৯ মে, ২০১৫

রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কবিগুরু রবিঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আমার প্রিয় কবি । সাহিত্যাঙ্গনে রবিঠাকুরের অসাধারণত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারবে না । কিন্তু দুঃখের বিষয়, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কবিগুরু রবিঠাকুর উত্‍রাতে পারেননি । তিনি জমিদার ছিলেন, অভিযোগ আছে বাঙালি প্রজা অত্যাচারের । কিন্তু তার চেয়ে বড় কথা, তিনি ছিলেন বাংলাদেশ বিরোধী । কলকাতার আধিপত্য ক্ষুন্ন হবার আশঙ্কায় বিরোধিতা করেছেন বঙ্গভঙ্গের, বিরোধিতা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার । জীবনের শেষ পর্যন্ত তাঁর এই ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশও করেননি । বলা যায়- রবিঠাকুর বড় কবি ছিলেন, কিন্তু বড় মনের পরিচয় দিতে পারেন নি ।
রবিঠাকুরের নামে বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় হবে । আজ যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, হয়তো বাংলাদেশের মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতেন কবিগুরু রবিঠাকুর ।

সোমবার, ৪ মে, ২০১৫

এম্বিশান

কাঠমান্ডু পেরিয়ে পাহাড়ঘেরা খোকানা উপত্যকায়  
প্রবল ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত এক সুউচ্চ অট্টালিকার নিচে  
দেখেছিলাম-  
মাথা উঁচু করে ফুটে আছে  
কয়েকটি ঘাসফুল । 
এইসব ভূ-কম্পন যেন তাদের চিরচেনা বন্ধু !  
কিংবা  
নেহায়েত দমকা বাতাস ! 


এখন আমি বসে বসে ভাবি,  
এই ক্ষুদ্র জীবনে-  
কী হবে আমার এমবিশান? আমি কি  
সুউচ্চ কোন ভঙ্গুর অট্টালিকা হবো ?
নাকি হবো পাহাড়ী কোন এক
নির্ভীক ঘাসফুল ? 

০৪-০৫-২০১৫