এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বুধবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

টাকার কাছে মেধার পরাজয় !

টাকার কাছে মেধার পরাজয় ঘটেছে, কেউ আপনার কাছে এমন একটা ঘটনার উদাহরণ চাইলে আপনি এখন নির্দ্বিধায় বলে দিতে পারেন মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের কথা। অদ্ভুত আমাদের দেশ, অদ্ভুত আমাদের সরকার, অদ্ভুত আমরাও। প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মেলে, জড়িত কালপ্রিটরা গ্রেপ্তার হয়, স্বীকারোক্তিও পাওয়া যায়, লেকিন পরীক্ষা বাতিল হয় না! বরং তড়িঘড়ি করে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করা হয় !! এদিকে আমরা, মানে জনগন চুপচাপ দেখে যাই এইসব চুরিচামারি আর কেনাবেচা!!
.
হা, দেশে এখন আর সত্যিকার কোন সরকারি মেডিকেল কলেজ নেই, যেখানে বিনাখরচে/কমখরচে পড়া যায়। ডিএমসিতে ভর্তি হতে এখন মাথার ঘিলু লাগেনা, ১২ লাখ টাকা লাগে। এর পজিটিভ দিকটা হলো- আগামীতে আর কেউ ডাক্তার(!!)দের 'জনগনের টাকায় লেখাপড়া করা'র অপবাদ দিতে পারবে না!! কেউ ওকথা বললেই ভবিষ্যতের ডাক্তার(!)রা খেঁকিয়ে উঠবে- ব্যাটা মুখ সামলে কথা বলবি! ১৪ লাখ দিয়ে ডিএমসিতে ভর্তি হয়েছি। ট্যাকা কি তোর বাপে দিছিলো??
আর ভবিষ্যতে এই ইনভেস্টমেন্ট সুদে আসলে তুলবার জন্যে এরা যে ডাক্তার হবার পর কী করবে তা আল্লাহই ভালো জানেন!!
.
হা বংগদেশ!
সাত কোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী,
রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি।

মঙ্গলবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

সাধু সাবধান !

সরকারি আমলাদের মধ্যে যাদের খায়েশ জেগেছে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার কৃষিবিদ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সবার ওপরে ছড়ি ঘুরানোর, তারা কি এটাই চান যে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়াররা প্রফেশনাল ক্যাডারে না গিয়ে জেনারেল ক্যাডারে ঢুকে পড়ুক? জনাব, তাহলে কিন্তু অবস্থা খুবই খারাপ হবে। এটা আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, পেশাজীবীরা পেশার প্রয়োজনে যে পরিমাণ লেখাপড়া করেন তার অর্ধেকও যদি এইসব বিসিএস টিসিএস এর জন্য পড়েন তাহলেই কিন্তু আপনাদের খেল খতম হয়ে যাবে। দেখবেন কয়েক বছরের মধ্যে জেনারেল ক্যাডারেও সব পোস্ট এরাই দখল করে ফেলবে। (আমার পরিচিত যে কয়জন প্রফেশনাল ক্যাডার ছেড়ে জেনারেল ক্যাডারের জন্য চেষ্টা করেছেন তারা কেউই বিফল হননি ।) বিকজ, এদের ভেতরে আগুন আছে, তারা সে আগুনকে 'পোড়া'নোর চেয়ে 'গড়া'নোর কাজে ব্যবহার করতে চায়। সেটা যদি তাদের সম্মানের সাথে করতে দেয়া না হয়, তাহলে আপনাদের গদি পোড়ানো ছাড়া তাদের আর কীইবা করার থাকে?
.
সুতরাং সাধু সাবধান। গ্রেড-১, গ্রেড-২ এবং শীর্ষপদগুলি কারো জন্য সংরক্ষিত না রেখে যার যার সেক্টর তাদের নিজেদের ওপর ছেড়ে দিন। ক্ষমতার প্রতিযোগিতা নয়, প্রতিযোগিতা হোক সেক্টরভিত্তিক উন্নয়নের, প্রতিযোগিতা হোক দেশসেবার, প্রতিযোগিতা হোক মানবসেবার।

সোমবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

"এতদিন কোথায় ছিলেন?"

দিনে দিনে বৃদ্ধ হয়ে উঠছে আমার কাব্যপিয়াসী মন ।
জীবনানন্দের কবিতা হতে সে আর আগের মত
কাব্যরস নিংড়াতে পারেনা ।
এমন নয় যে তার রসবোধ কমে গেছে । কিংবা
পুরনো হয়ে গেছে জীবনবাবুর কবিতা । বরং, আমার মনে হয়
এখন সে আর শুধুই কল্পনায় সন্তুষ্ট নয় ! সে চায়-
অক্ষরের জিঞ্জির হতে বেরিয়ে এসে একজন 'বনলতা'
শ্রাবস্তীর কারুকার্যখচিত মুখ আর পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে জিজ্ঞেস করুক,
"এতদিন কোথায় ছিলেন?"
-
নাটোরের হতে হবে এমন কোন কথা নেই
বনলতা 'সেন' হতে হবে এমন কোন কথা নেই
হোক শুধু একজন নিপাট 'বনলতা'ই ।
নইলে, ওর পক্ষে কাব্যের সুধা আহরণ
বোধহয় আর সম্ভব নয় !

বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বেহুলার প্রতি

কত পানকৌড়ি উড়ে গেছে কবে, সে হিসেবে আমার আর কাজ নেই।
আমি শুধু চাই আজ মাথার ওপর দিয়ে
অন্তত একটা পাতিহাস উড়ে যাক, দিগন্তের দিকে।
যেন আমি একদৃষ্টে চেয়ে থাকতে পারি-
উড়ালপংখির গমনপথে।
.
জানো বেহুলা, বহুদিন হয়ে গেছে বহুযুগ-
আমি একটিবার বিস্ময়ে অভিভূত হইনি।
নিরাবেগ পাষাণের মত বেঁচে থেকে এতকাল পরে
এই ভয়ে রাতভর তড়পাচ্ছি এখন,
আমি কি হারিয়ে ফেলেছি মনুষ্য হৃদয়?
বেহুলা, তুমি কি এতটুকু নিশ্চিত করে একবার বলতে পারো
আমার হৃদয়বৃত্তিতে আজও কোন হেরফের হয়নি?

প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে হলে

শুধু এবারের ঘটনার প্রতিকার নয়, ভবিষ্যতে প্রশ্ন ফাঁস বন্ধ করতে হলেও প্রকাশিত ফল বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়া জরুরি । যারা ১২-১৪ লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্ন কিনেছিল, পরীক্ষা বাতিল করলেই তাদের আক্কেল হবে । মাথায় হাত উঠবে । কারা প্রশ্ন ফাঁসে জড়িত ছিল তাদেরকেও খুঁজতে হবেনা । প্রশ্ন ক্রেতারাই বিক্রেতাদের ধরিয়ে দেবে ।
পরবর্তী বছরে বিক্রেতারা ক্রেতা পাবে না । পরীক্ষা বাতিলের আশঙ্কায় ক্রেতারা এত টাকা খরচ করে প্রশ্ন কেনার সাহস পাবে না । ফলে প্রশ্ন ফাঁস এমনিতেই বন্ধ হয়ে যাবে ।
আর যদি তা না করা হয়, তাহলে আগামীতে প্রশ্ন ফাঁসটাই ট্রেন্ড হয়ে যাবে । সবাই ভাববে, কই কোন সমস্যা তো হয় না ! আমি নাহয় কিনছিনা, অন্য কেউ তো কিনছে !
.
মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাননীয় পরিচালক, প্রশ্ন ফাঁসের যথেষ্ট প্রমাণ তো আপনারা পেয়েছেন । আর কত প্রমাণ চান? ফল প্রকাশ করা হয়ে গেছে তাতে কিছু যায় আসে না । এখনো সময় আছে, ভর্তির তারিখ ঘোষণা না করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দিন । প্রকৃত মেধার মূল্যায়নের ব্যবস্থা করুন । আপনাদের কাছে আমাদের আকুল আবেদন- একগুঁয়েমি করে জাতির ভবিষ্যত সূর্যসন্তানদেরকে হতাশার আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবেন না ।

সোমবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

'ছিনিমিনি খেলা' !

বাংলাদেশের জাতীয় খেলা হওয়া উচিত 'ছিনিমিনি খেলা'। কারণ,
এখানে এই একটা খেলাতেই সকলেই 'খুব পারদর্শি'। 
শিক্ষামন্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের মেধা এবং ভাগ্য নিয়া ছিনিমিনি খেলেন ।
ভ্যাটমন্ত্রী ভ্যাট নিয়া। স্বাস্থ্যমন্ত্রী খেলেন জনগনের স্বাস্থ্য নিয়া।

রাজনীতিকরা জনগনের ভাগ্য নিয়া ছিনিমিনি খেলেন। আমলারা লাল ফিতা।
আদালত সংবিধান নিয়া।
আর আমাগোর ভোট লইয়া নির্বাচন কমিশন।
গমরুল গম নিয়া ছিনিমিনি খেলেন। 

আর পদ্মাসেতু নিয়া ছিনিমিনি খেলেন মিস্টার 'ফাটাকেষ্ট'। 

ব্যবসায়ীরা দ্রব্যমূল্য নিয়া ছিনিমিনি খেলে। ক্লিনিক মালিকরা রোগী নিয়া।  
বেকার যুবকদের জীবন নিয়া খেলে আদম বেপারিরা । 
ড্রাইভাররা যাত্রী আর পথচারিদের জীবন নিয়া ছিনিমিনি খেলে। 
আর যার খায়াদায়া কাম নাই, 

সেও ফেসবুকে আইসা ছিনিমিনি খেলে । 

যেদিকেই তাকান দেখবেনঃ সবদিকে, সবখানে, সবসময়, 
মহাসমারোহে চলছে 'ছিনিমিনি খেলা' । 
আমরা সবাই ছিনিমিনি খেলার অংশ । কেউ খেলোয়াড়, কেউবা উপকরণ !
সুতরাং,
নামকাওয়াস্তে হাডুডু- কে জাতীয় খেলা রেখে আর লাভ কী?
বরং এই মুহূর্তে ছিনিমিনি খেলাকে বাংলাদেশের জাতীয় খেলা ঘোষণা করা হবে 
সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত কাজ।

রবিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

শিক্ষার পণ্যায়ন

অনেকের কথা শুনে মনে হচ্ছে, শিক্ষার পণ্যায়ন বোধহয় টিউশন ফি তে ভ্যাট আরোপের মাধ্যমে এবারই প্রথম শুরু করা হলো । কিন্তু আসলে তো শিক্ষাকে পণ্য হিসাবে গণ্য করা সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে, যেদিন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের নামে শিক্ষাকে বিক্রয়যোগ্য করা হয়েছে ।
.
জনগনের মৌলিক চাহিদা হিসেবে শিক্ষার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব । কিন্তু সরকার তা না করে শিক্ষার ভার তুলে দেয় ব্যবসায়ীদের হাতে । আর ব্যবসায়ীরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে নতুন উদ্যমে শুরু করে শিক্ষাব্যবসা । তারা ইচ্ছামত টিউশন ফি নির্ধারণ করে, এই সেই নানান খাত দেখিয়ে নানাভাবে শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা আদায় শুরু করে । সরকারের নিয়ন্ত্রণের বালাই নেই । কেউ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় টাকার গরম দেখাতে, আর কেউবা ভর্তি হয় বাধ্য হয়ে । অর্থমন্ত্রীর সাথে যাদের ওঠাবসা তাদের ছেলেমেয়েরা কিন্তু বেসরকারিতে পড়ে টাকার গরমেই । ভ্যাট আরোপ এবং এ সম্পর্কে অর্থমন্ত্রী যা বলেছেন সেসব আসলে তিনি তাদের দিকে তাকিয়েই বলেছেন ।
.
এখন সরকারের তরফে শিক্ষাকে আরো সহজলভ্য না করে ভ্যাট বসিয়ে কঠিন করার চেষ্টা হচ্ছে । আফটার অল, এটা সমর্থন করা যায়না । তবে শুধু ভ্যাট প্রত্যাহার নয়, আন্দোলন হওয়া উচিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসার লাগাম টেনে ধরার দাবিতে । টিউশন ফি কমানোর দাবিতে । নামমাত্র খরচে শিক্ষালাভের দাবিতে । এবং এটা আরো আগেই হওয়া উচিত ছিল ।
সরকারকে ভ্যাট দেবোনা ঠিকাছে, কিন্তু বিনাপ্রশ্নে ব্যবসায়ীদের পকেট ভরিয়ে দেবো- সেটাও নিশ্চয় হতে দেয়া যায় না ।

শুক্রবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমলা বনাম কামলা ?

নতুন পে স্কেলের মাধ্যমে সরকার তার কর্মচারিদের দুই ভাগে ভাগ করে ফেলেছে । আমলা এবং কামলা । এডমিন ক্যাডার হইলো আমলা, আর বাদবাকি সবাই হবে কামলা !
আমলারা নির্দেশ দিবে, আর কামলারা সে নির্দেশ পালন করবে ! আমলারা ফাইলপত্র নাড়াচাড়া করবে, আর কামলারা তাদের নিজের চাকরির ফাইলখানা ঠিক রাখার জন্যে কিছুমিছু হাতে নিয়ে হুজুর হুজুর করবে ! তা সে কামলা যতবড় জ্ঞানীই হোক, যতবড় প্রফেসর হোক, যতবড় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ বা দার্শনিক হোক ।
.
যতবড় ডিগ্রী থাকুক, চাকরির বয়স যতই হোক, কামলাদের দৌড় হবে সর্বোচ্চ গ্রেড-৩ পর্যন্ত । বাসে যেরকম নারী শিশু বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সিট সংরক্ষিত থাকে, তেমনিভাবে গ্রেড-১ এবং ২ আমলাদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে ।
প্রফেসর সাব, ডাক্তার সাব, ইঞ্জিনিয়ার সাব- আপনারা গ্রেড -১, ২ চান? তাইলে আপনাদের ওপর 'আমলা'দের ব্রাহ্মণগিরি থাকে? এইটুকু জ্ঞানও আপনাদের নাই? এই জন্যেই তো আবুল মাল বলেছেন, আসলে 'জ্ঞানের অভাবে'ই আপনারা এই পে-স্কেলের সমালোচনা করছেন ! ঠিকই কইছে । আরে স্যার, আপনারা হইলেন কামলা । কামলাদের আবার কিসের গ্রেড-১,২ হা? আবুল মাল সাব তো বলেছেন, এখন থেকে উনারা মানে আমলারা আপনাদের, মানে কামলাদের কন্ট্রোল করবেন । ঠিকই কইছে ! আসলেই আপনাদেরকে কন্ট্রোল করা খুবই জরুরি হয়া পড়ছে।
.
প্রফেসর সাহেব, ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-কৃষিবিদ সাহেব, কী ভেবেছেন? এমনিই পার পাবেন? জেনারেল সাবজেক্টে লেখাপড়া না কইরা আর বিসিএস এ এডমিন ক্যাডার চয়েস না দিয়া যে মহাপাপ করছিলেন, এখন তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে না?

মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

বড়ই অদ্ভুত এদেশের ব্যবসায়ীরা !

অদ্ভুত আমাদের দেশ এবং দেশের মানুষ । বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা । যদি কোনোভাবে একটা রব ওঠে যে চাকুরেদের বেতন বাড়ছে বা বাড়ানোর ব্যাপারে আলাপ আলোচনা হচ্ছে- তো ব্যস ! আর ঠেকায় কে? কালবিলম্ব না করে এরা তত্‍ক্ষণাত্‍ জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় । অথচ এরা কিন্তু সেগুলো কিনেছিল অনেক আগে, অনেক অল্প দামে ।
বাজেটের আগে যখন পত্রিকায় একটা ধারনা দেয়া হয় কোন্ কোন্ জিনিসের দাম বাড়বে, এরা বাজেট পেশ এবং পাশের অপেক্ষা না করে তখনই ঐসব জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় । অথচ এরা ঐসব জিনিস কিনেছিল অনেক আগে, অল্প দামে ।
সারা বিশ্বে উত্‍সবের আগে বিশেষ ছাড় দেয়া হয় । কিন্তু বাঙালি ব্যবসায়ীরা মুখে লালা জমিয়ে অপেক্ষা করে থাকে কোন একটা উত্‍সবের । ঈদ কিংবা পূজার । তখন এরা বিশেষ গলাকাটা মূল্যে পণ্য বিক্রি করে থাকে ।
.
বেতন বাড়ুক কিংবা বোনাস দেয়া হোক, তাতে ছাপোষা চাকুরেদের জীবনযাত্রায় কোন পরিবর্তন হয় না । যে লাউ সে কদুই থাকে । মাঝখান থেকে ফুলেফেঁপে কলাগাছ থেকে বটগাছ হয় ব্যবসায়ীরা ।
কোনোভাবে যদি তারা বুঝতে পারে কোন একটা জিনিস চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম আছে, ব্যস । হয়ে গেল তাদের পোয়াবারো । মুহূর্তেই ঐ জিনিসের দাম আকাশচুম্বি হয়ে যায় । কখনো কখনো তারাই সিন্ডিকেট বানিয়ে এরকম কৃত্রিম সংকট তৈরি করে । জানা যায়, চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষ নাকি হয়েছিল ব্যবসায়ীদের মজুতদারির কারণে । ঐ দুর্ভিক্ষে বাংলার লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল ।
.
যে কৃষক ফসল ফলায় সে ফসলের দাম পায় না, যে কাঁচামাল উত্‍পাদন করে সে তার শ্রমের দাম পায় না । যে চাকুরিজীবী সকাল সন্ধ্যা দেশের কাজ করে সে তার ঘামের মূল্য পায় না । যা পায় তাতে তাদের জীবনযাত্রায় কোন হেরফের হয় না । লাভের গুড় চেটে খায় ঐ ব্যবসায়ীরাই । গুড় খেয়ে মোটাতাজা হলে পরে তারা ইলেকশনে নামে । টাকা ছড়ায় । এবং পরিশেষে এই ব্যবসায়ীরা টাকার জোরে দেশের হর্তাকর্তা বনে যায় ।
অদ্ভুত । বড়ই অদ্ভুত আমাদের বঙ্গদেশ । বড়ই অদ্ভুত এদেশের ব্যবসায়ীরা ।

রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

জলের জোছনা, নাকি জোছনার জল?

অদ্ভুত অসময়ে অকারণে ভিজে এলে চোখ
প্লাবিত হয়ে গেলে দৃষ্টিসীমা;
বুঝতে পারিনা কিছুতেই-
একি জলের জোছনা, নাকি জোছনার জল?
.
দুর্বার গতিপথে
যখন হঠাত্‍ অনুভবে আসে কোন বাঁধনের টান
ঠাওর করতে পারি না কোনমতে-
সেকি বাঁধনের মায়া, নাকি মায়ার বাঁধন?
.
নিরন্তর দ্বন্দ্ব লেগে আছে মনের ভেতর ।
কে কাকে তাড়িয়ে বেড়ায়? আমি মনকে, নাকি আমাকেই মন?
এইভাবে
নানাবিধ প্রশ্ন আর আলো আঁধারির মাঝে
ক্রমাগত যাচ্ছে কেটে রঙহীন জীবনের যতসব সাদাকালো সুতো-
সময়ের চরকায় ।

শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

টাকাটা মুখ্য নয় !

ইন্টার্ন ডাক্তারদের ভাতা বৃদ্ধির আন্দোলন নিয়ে গতকাল বিকালে টেলিফোনে আলাপচারিতায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন- ইন্টার্নশিপ কোনো চাকরি নয়, এটা ডাক্তারদের ট্রেনিংয়ের একটি অংশ। এই ইন্টার্নশিপ সময়টা বর্তমানের এক বছর থেকে দুই বছর করা দরকার। তিনি বলেন, ডাক্তারদের ইন্টার্নশিপকালে টাকাটা মুখ্য বিষয় নয়। সেবা, ট্রেনিং ও ভাতা এই তিনটা মিলিয়ে ইন্টার্নশিপ। তিনি নিজের মেডিকেল শিক্ষা জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমি যখন ছাত্রনেতা ছিলাম তখন ইন্টার্ন ডাক্তারদের ভাতা শুরু হয় মাসে ২৫০ টাকা দিয়ে। তিনি বলেন, গ্রাম হচ্ছে বাংলাদেশের প্রাণ। নতুন ডাক্তারদের তিন বছর গ্রামে ইউনিয়ন পর্যায়ে কাটাতে হবে।
.
ভেরি ওয়েল । নষ্টের গোড়া কোথায় সেটা আমরা জানতে পারলাম । আমাদেরই সিনিয়র যারা নীতিনির্ধারনী পর্যায়ে আছেন তাদের চিন্তাগুলো মোটামুটি এই রকমই । BCPS নামে যারা আছেন, তারা তো ডাক্তারদের বিনামূল্যে খাটাচ্ছেনই, উপরি হিসেবে হেনতেন নানা উপায়ে টাকা আদায় করছেন । রেসিডেন্সিতে যে নামেমাত্র দশহাজার টাকা দেয়া শুরু করেছিল, সেটাও কারো কারো গাত্রদাহের কারণে এখন বন্ধের পথে ।
তারা ভুলে গেছেন, ক্যারিয়ার গঠনে এখন যতটা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের ততটা করতে হয়নি । একটা সময় ছিল যখন ভালো ছাত্রদের ধরে ধরে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করেছে সরকার । এখন যেমন লাখ পরিক্ষার্থীর ভেতর একজন হতে হয় , তখন এটা লাগেনি । আমার এলাকার এক সিনিয়র ডাক্তার, বেচারার খুব ইচ্ছা ছিল ঢাকা ভার্সিটিতে পড়বেন । কিন্তু সরকার তাঁকে ধরে নিয়ে স্টাইপেন্ড দিয়ে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করিয়ে দিয়েছিল ।
.
পাস করে এখন যেমন ডাক্তারদের বিসিএস দিয়েও দুই তিনবছর পরে সরকারি চাকরিতে ঢুকতে হয়, কোন উচ্চতর ডিগ্রীর ট্রেনিং এ আসার আগে গ্রামে চাকরি করতে হয় বছরের পর বছর, তখন এইটা ছিলনা । পাস করলেই নিশ্চিত সরকারি চাকরি । সেদিনই একজন অধ্যাপক স্যার স্মৃতিচারণ করলেন, ইন্টার্নশিপের শেষদিন তাঁর হাতে সরকার নিয়োগপত্র ধরিয়ে দিয়েছিল এসিস্টেন্ট রেজিস্ট্রার হিসেবে । চাকরি জীবনের শুরুতে তাঁর বেতন ছিল পাঁচশ টাকা । গুরুত্বপূর্ণ কথাটা হলো- সেসময় একশ টাকায় একটা মোটাতাজা গরু পাওয়া যেত । তখনকার সময়ের হিসাবে প্রতি মাসে কমপক্ষে দুই তিনশ টাকা বেঁচে যেত । নিঃসন্দেহে বলা যায়, সম্মানজনক সুখী জীবন । সেই সিনিয়ররা এখনো সুখেই আছেন । জুনিয়রদের দুঃখ-কষ্ট তাই তাঁদের খুব বেশি স্পর্শ করেনা ।
.
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, তাঁরা ২৫০ টাকা ভাতা পেতেন । জনাব, একটু খেয়াল করবেন কি - তখন তো ৮০-১০০ টাকায় একটা মোটাতাজা গরু কেনা যেত, এখন কি দশ হাজার টাকায় একটা মোটাতাজা ছাগলও পাওয়া যায়?
জনাবের প্রস্তাব হচ্ছে, ইন্টার্নশিপ দুই বছর করতে হবে(আট বছর শেষ), এবং তিনবছর পর বিসিএস এর মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে(এর কমে আসলে হয় না) আবার গ্রামে পাঠিয়ে কমপক্ষে তিনবছর রাখতে হবে । তো জনাব, এই সময়ে জুনিয়র ডাক্তাররা নিজে কী খাবে আর বৃদ্ধ বাপ-মাকে কী খাওয়াবে?
শ্রদ্ধেয় জনাব, দয়া করে বলবেন কি- এর বিনিময়ে আপনি জুনিয়র ডাক্তারদের জন্য কোন্‌ অশ্বের কতগুলি ডিম্ব প্রস্তাব করছেন?

বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

হায় ঢাকা !

ঢাকা শহরের ব্যাপারে একটা ফ্যাসিনেশান তৈরি হয়েছিল ছোটবেলাতেই । সব গল্প উপন্যাসে পড়তাম ঢাকার কথা, ঢাকার কাহিনী । সব বড় বড় মানুষেরা থাকতেন ঢাকায় । ইতিহাসের যত নায়ক খলনায়ক সবাই থাকতেন ঢাকায় । রাজনীতি, শিল্প সংস্কৃতি সব এই ঢাকায় । গানে কথায় সিনেমা নাটকে শুধু ঢাকাকেই দেখতাম । বাংলার যত ইতিহাস সবকিছু যেন এই ঢাকাকে কেন্দ্র করে । জীবনে বড় হতে চাইলে ঢাকায় যেতেই হবে- এমন একটা ধারণা তৈরি হয়েছিল আমার । নিজে ইতিহাস গড়তে পারি বা না পারি, ঢাকায় থাকলে অন্তত ইতিহাসের পথপরিক্রমা নিজ চোখে দেখা যাবে- এই ছিল ফ্যাসিনেশানের মূলকথা ।
এইভাবে ভাবতে ভাবতে ঢাকার প্রতি একটা সুপ্ত ভালোবাসা তৈরি হয়েছিল । সেটা আজও আছে । ঢাকায় অন্তত 'সবকিছু' পাওয়া যায় । জুতোসেলাই থেকে চন্ডীপাঠ সবকিছু করা যায় । যা ইচ্ছা তা খাওয়া যায় । পকেটে যত টাকাই থাকুক তত টাকারই কিছু না কিছু কিনে জীবন চালানো যায় ।
.
কিন্তু দিনকে দিন অবস্থা যা দাঁড়াচ্ছে, তাতে হয়তো ঢাকায় আর ইতিহাস সৃষ্টি হবে না । এমনিতেই ঢাকা এখন পৃথিবীর বসবাস অযোগ্য নগরীর তালিকায় সবার শীর্ষে । জ্যাম, জলাবদ্ধতায় নাজুক অবস্থা । ঘর হতে একবার বের হলে হাসিমুখে বাসায় ফেরা যায় না । এখনই ব্যবস্থা না নিলে অদূর ভবিষ্যতে হয়তো ঢাকা নিজেই 'ইতিহাস' হয়ে যাবে । পরবর্তী প্রজন্মের কাছে আমাদেরকে ঢাকার যে ইতিহাস বলতে হবে তা হলোঃ- একসময় ঐখানে ঢাকা নামে এক নগরী ছিল । সেখানে আমরা থাকতাম ।

মঙ্গলবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

ম্যায় হুঁ না !'

জীবনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য নিজের যেমন সাহস দরকার, তেমনি সাহস দেয়ারও কেউ থাকা দরকার। ছোটবেলায় আমরা কীভাবে সাইকেল চালানো শিখেছিলাম? কোন সাহসে নিজেকে ছেড়ে দিয়েছিলাম দুই চাকার ওপর? সাহস যতটুকু ছিল নিজের ভেতর, তারচেয়েও বেশি ছিল এই বিশ্বাসটুকুতেঃ কেউ একজন পেছনে আছেন, পড়ে যাবার আগে ঠিকঠিক ধরে ফেলবেন । প্রথম সাতার কীভাবে শিখেছিলাম? কোন সাহসে অথৈ পানিতে লাফিয়ে পড়েছিলাম? নিজের সাহসের সাথে আরো যা ছিল তাহলোঃ যতই স্রোত থাকুক, কিংবা পানির গভীরতা যতই হোক, পেছনে কেউ একজন আছেন যিনি ঠিক সময়ে ধরে ফেলবেন ।
..
জীবনে অনেকগুলো পথ হয়তো একা একাই পার হওয়া যায়। কিন্তু কোন কোন পথে একা হাঁটতে মানুষের ভয় করে । নতুন কিছু শুরু করতে অথবা খুব বড় কিছু করতে গেলে কখনো কখনো মানুষের শুধু নিজের সাহসে কুলায় না । তখন মনের ভেতর এরকম একটা ভরসা খুব দরকার হয়- 'ভয়ের কিছু নেই, পড়ে যাবার আগে ধরে ফেলার জন্য পেছনে কেউ একজন আছে।' এরকম একটা কণ্ঠ খুব দরকার হয়- 'গো এহেড । কুছ পরোয়া নেহি... ম্যায় হুঁ না !'
.
(এই ভরসাস্থলটা যদি আমরা আমাদের স্রষ্টাকে বানাতে পারতাম তাহলে আর কথা ছিল না । কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা আসলে তা পারি না ।)