‘সদ্যোজাত সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করলো পাষণ্ড মা !’ খবরের কাগজ পড়তে
গিয়ে সেদিন ‘মফস্বল’ পাতায় হঠাৎ আমার চোখ আটকে গিয়েছিল এই শিরোনামে ।
প্রতিদিন সকালবেলা পত্রিকা পড়ার সময় আমি চেষ্টা করি আমার জেলার কোন খবর থাকলে সেটাতে চোখ বুলিয়ে নিতে । দূরে থাকি, তবু নিজের জন্মভূমির প্রতি একটা আন্তরিক টান সবসময়ই অনুভব করি । দেখলাম, এই সংবাদ পাঠিয়েছে আমার জেলার সংবাদদাতা । তাছাড়া বেশ চাঞ্চল্যকর সংবাদও বটে । আগ্রহ নিয়ে পুরো সংবাদ পড়ে তো আমি একদম ‘থ’ ! এ যে রফিক ! আমাদের গ্রামের রফিক ! রফিকের নাকি ছেলে সন্তান হয়েছিল । সেই সন্তানকে জন্মের এক সপ্তাহ পরে হঠাৎ করেই গলা টিপে মেরে ফেলেছে রফিকের বউ সালমা !
ব্যস্ততার কারণে তখন রফিককে ফোন করা হয় নি । পরে ভুলেই গিয়েছিলাম । কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই খবর পেলাম, রফিকের বউও মারা গেছে ।
রফিককে সেদিন ফোন করেছিলাম । সান্তনা দিয়েছিলাম । যা হবার হয়ে গেছে ভেবে তখন আর রফিককে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করিনি । তাছাড়া ঐ অবস্থায় বেশি কিছু জিজ্ঞেস করাটাও ভালো দেখায় না ।
তারপর মাসখানেক কেটে গেছে । গতকাল হঠাৎ রফিকের ফোন পেলাম । জানালো, সে নাকি ব্যবসার কাজে ঢাকা এসেছে । কয়েকদিন থাকবে ।
রাতে সময় করে আমার চেম্বারে একবার আসতে বলেছিলাম রফিককে । রফিক এলো রাত দশটার দিকে । ততক্ষণে আমার আজকের সব রোগী দেখা শেষ হয়ে গেছে । কেন যেন রোগীর চাপও অনেকটা কম ছিল আজ । সহকারীকেও বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি ।
রফিকের কাছে ধীরে ধীরে পুরো ঘটনা শুনলাম ।
বছর তিন আগে সালমার সাথে বিয়ে হয় রফিকের । সালমা চেয়েছিল প্রথম বছরেই বাচ্চা নিতে । রফিকের অনিচ্ছাতেই কিছুটা দেরি । কিন্তু সালমা প্রতিদিন একবার হলেও বাচ্চার প্রসংগ তুলতো । কত পরিকল্পনা ! বাচ্চার নাম কী রাখবে, বাচ্চাকে কী খাওয়াবে, কীভাবে মানুষ করবে সারাদিন যেন এইসব নিয়েই ভাবতো সালমা ।
অথচ সেই সালমার কী হয়ে গেল ! ডেলিভারির কয়েকদিন পর থেকে সালমার মেজাজ অল্পতেই চটে যেতে লাগলো । দেখা গেল, বাচ্চার দিকেও তার অতটা নজর নেই তার । ঠিকমত বুকের দুধ খাওয়ায় না । বাচ্চা কান্নাকাটি করলেও ভ্রুক্ষেপ করেনা । আচার ব্যবহারেও নাকি অনেক পরিবর্তন এসেছিল । সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল । কখনো কখনো নিজে নিজে কথা বলতেও দেখা গেছে । মুরুব্বিরা বললেন, খারাপ বাতাস লেগেছে । এত সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা ! আর সালমাও তো কম সুন্দরী নয় !
কবিরাজ ডেকে তাবিজ নেয়া হলো । ‘পানিপরা’ ছিটিয়ে দেয়া হলো সারা বাড়িতে । কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না । সেদিন সকালবেলা হঠাৎ কী হতে কী হয়ে গেল, ফুটফুটে বাচ্চাটার গলা টিপে ধরে মেরে ফেললো সালমা ডাইনিটা ! তারপর মাটিতে শুইয়ে রেখে কীরকম ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো বাচ্চার লাশের দিকে ! ডাইনিটা যেন বুঝে উঠতে পারছিলনা, কী ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে সে !
এরপর সালমা একদম চুপচাপ হয়ে যায় । কয়েকদিন পরে এক রাতে মারা যায় সালমাও । সবাই ভেবেছিল, জ্বিনের আছরেই মারা গেছে সে ।
আরো কিছু প্রশ্ন করে সবকিছু জেনে নিলাম আমি । ঘটনার সবটুকু শুনে আমি বললাম, রফিক- তোর বউ সালমার কোন দোষ ছিলনারে । সে ডাইনি ছিলনা । খারাপ বাতাসও লাগেনি । ওর অসুখ করেছিলো, তোরা বুঝতে পারিসনি ।
রফিক আমার দিকে অবিশ্বাস নিয়ে তাকালো । বললো- ডাইনি ছাড়া কেউ নিজের জন্ম দেয়া এরকম ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে গলা টিপে মারতে পারে?
বুঝিয়ে বললাম রফিককে, এটা ছিল এক ধরনের মানসিক রোগ । বাচ্চা ডেলিভারির পর ৬ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের এরকম মানসিক বৈকল্য হতে পারে । একে বলা হয় পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস । প্রতি পাঁচশ জনে এক জন মায়ের এই রোগ হতে পারে । এইসময় মায়ের হুশ জ্ঞান ঠিক থাকেনা । এমনকি বাচ্চার ক্ষতিও করতে পারে । সেজন্য প্রয়োজনে বাচ্চাকে সরিয়ে রাখতে হয় । আর চিকিৎসা করলে এই রোগ ভালো হয়ে যায় ।
আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো রফিক । তারপর হঠাৎ টেবিলে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে ফেললো সে । আমার হাত জড়িয়ে ধরে ডুকরে উঠলো - ‘এ আমি কী করেছি রে দোস্ত’ । সালমা তো মরেনি রে । আমার বাচ্চাকে মেরেছে বলে সালমাকে আমিই গলা টিপে মেরে ফেলেছিরে । এ আমি কী করেছি দোস্ত...
চমকে উঠলাম আমি । রফিক ওর বউকে খুন করেছে !! সালমার মৃত্যু তাহলে স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলনা ! বিষয়টা বুঝে উঠতে যেন কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো আমার ।
যাহোক,বুঝলাম বটে । কিন্তু এই মুহূর্তে ক্রন্দনরত রফিকের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকলো না ।
প্রতিদিন সকালবেলা পত্রিকা পড়ার সময় আমি চেষ্টা করি আমার জেলার কোন খবর থাকলে সেটাতে চোখ বুলিয়ে নিতে । দূরে থাকি, তবু নিজের জন্মভূমির প্রতি একটা আন্তরিক টান সবসময়ই অনুভব করি । দেখলাম, এই সংবাদ পাঠিয়েছে আমার জেলার সংবাদদাতা । তাছাড়া বেশ চাঞ্চল্যকর সংবাদও বটে । আগ্রহ নিয়ে পুরো সংবাদ পড়ে তো আমি একদম ‘থ’ ! এ যে রফিক ! আমাদের গ্রামের রফিক ! রফিকের নাকি ছেলে সন্তান হয়েছিল । সেই সন্তানকে জন্মের এক সপ্তাহ পরে হঠাৎ করেই গলা টিপে মেরে ফেলেছে রফিকের বউ সালমা !
ব্যস্ততার কারণে তখন রফিককে ফোন করা হয় নি । পরে ভুলেই গিয়েছিলাম । কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই খবর পেলাম, রফিকের বউও মারা গেছে ।
রফিককে সেদিন ফোন করেছিলাম । সান্তনা দিয়েছিলাম । যা হবার হয়ে গেছে ভেবে তখন আর রফিককে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করিনি । তাছাড়া ঐ অবস্থায় বেশি কিছু জিজ্ঞেস করাটাও ভালো দেখায় না ।
তারপর মাসখানেক কেটে গেছে । গতকাল হঠাৎ রফিকের ফোন পেলাম । জানালো, সে নাকি ব্যবসার কাজে ঢাকা এসেছে । কয়েকদিন থাকবে ।
রাতে সময় করে আমার চেম্বারে একবার আসতে বলেছিলাম রফিককে । রফিক এলো রাত দশটার দিকে । ততক্ষণে আমার আজকের সব রোগী দেখা শেষ হয়ে গেছে । কেন যেন রোগীর চাপও অনেকটা কম ছিল আজ । সহকারীকেও বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি ।
রফিকের কাছে ধীরে ধীরে পুরো ঘটনা শুনলাম ।
বছর তিন আগে সালমার সাথে বিয়ে হয় রফিকের । সালমা চেয়েছিল প্রথম বছরেই বাচ্চা নিতে । রফিকের অনিচ্ছাতেই কিছুটা দেরি । কিন্তু সালমা প্রতিদিন একবার হলেও বাচ্চার প্রসংগ তুলতো । কত পরিকল্পনা ! বাচ্চার নাম কী রাখবে, বাচ্চাকে কী খাওয়াবে, কীভাবে মানুষ করবে সারাদিন যেন এইসব নিয়েই ভাবতো সালমা ।
অথচ সেই সালমার কী হয়ে গেল ! ডেলিভারির কয়েকদিন পর থেকে সালমার মেজাজ অল্পতেই চটে যেতে লাগলো । দেখা গেল, বাচ্চার দিকেও তার অতটা নজর নেই তার । ঠিকমত বুকের দুধ খাওয়ায় না । বাচ্চা কান্নাকাটি করলেও ভ্রুক্ষেপ করেনা । আচার ব্যবহারেও নাকি অনেক পরিবর্তন এসেছিল । সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল । কখনো কখনো নিজে নিজে কথা বলতেও দেখা গেছে । মুরুব্বিরা বললেন, খারাপ বাতাস লেগেছে । এত সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা ! আর সালমাও তো কম সুন্দরী নয় !
কবিরাজ ডেকে তাবিজ নেয়া হলো । ‘পানিপরা’ ছিটিয়ে দেয়া হলো সারা বাড়িতে । কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না । সেদিন সকালবেলা হঠাৎ কী হতে কী হয়ে গেল, ফুটফুটে বাচ্চাটার গলা টিপে ধরে মেরে ফেললো সালমা ডাইনিটা ! তারপর মাটিতে শুইয়ে রেখে কীরকম ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো বাচ্চার লাশের দিকে ! ডাইনিটা যেন বুঝে উঠতে পারছিলনা, কী ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে সে !
এরপর সালমা একদম চুপচাপ হয়ে যায় । কয়েকদিন পরে এক রাতে মারা যায় সালমাও । সবাই ভেবেছিল, জ্বিনের আছরেই মারা গেছে সে ।
আরো কিছু প্রশ্ন করে সবকিছু জেনে নিলাম আমি । ঘটনার সবটুকু শুনে আমি বললাম, রফিক- তোর বউ সালমার কোন দোষ ছিলনারে । সে ডাইনি ছিলনা । খারাপ বাতাসও লাগেনি । ওর অসুখ করেছিলো, তোরা বুঝতে পারিসনি ।
রফিক আমার দিকে অবিশ্বাস নিয়ে তাকালো । বললো- ডাইনি ছাড়া কেউ নিজের জন্ম দেয়া এরকম ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে গলা টিপে মারতে পারে?
বুঝিয়ে বললাম রফিককে, এটা ছিল এক ধরনের মানসিক রোগ । বাচ্চা ডেলিভারির পর ৬ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের এরকম মানসিক বৈকল্য হতে পারে । একে বলা হয় পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস । প্রতি পাঁচশ জনে এক জন মায়ের এই রোগ হতে পারে । এইসময় মায়ের হুশ জ্ঞান ঠিক থাকেনা । এমনকি বাচ্চার ক্ষতিও করতে পারে । সেজন্য প্রয়োজনে বাচ্চাকে সরিয়ে রাখতে হয় । আর চিকিৎসা করলে এই রোগ ভালো হয়ে যায় ।
আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো রফিক । তারপর হঠাৎ টেবিলে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে ফেললো সে । আমার হাত জড়িয়ে ধরে ডুকরে উঠলো - ‘এ আমি কী করেছি রে দোস্ত’ । সালমা তো মরেনি রে । আমার বাচ্চাকে মেরেছে বলে সালমাকে আমিই গলা টিপে মেরে ফেলেছিরে । এ আমি কী করেছি দোস্ত...
চমকে উঠলাম আমি । রফিক ওর বউকে খুন করেছে !! সালমার মৃত্যু তাহলে স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলনা ! বিষয়টা বুঝে উঠতে যেন কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো আমার ।
যাহোক,বুঝলাম বটে । কিন্তু এই মুহূর্তে ক্রন্দনরত রফিকের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকলো না ।