এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

সোমবার, ২৯ জুন, ২০১৫

মেডি গল্পঃ 'ভুল'

‘সদ্যোজাত সন্তানকে গলা টিপে হত্যা করলো পাষণ্ড মা !’ খবরের কাগজ পড়তে গিয়ে সেদিন ‘মফস্বল’ পাতায় হঠাৎ আমার চোখ আটকে গিয়েছিল এই শিরোনামে ।
প্রতিদিন সকালবেলা পত্রিকা পড়ার সময় আমি চেষ্টা করি আমার জেলার কোন খবর থাকলে সেটাতে চোখ বুলিয়ে নিতে । দূরে থাকি, তবু নিজের জন্মভূমির প্রতি একটা আন্তরিক টান সবসময়ই অনুভব করি । দেখলাম, এই সংবাদ পাঠিয়েছে আমার জেলার সংবাদদাতা । তাছাড়া বেশ চাঞ্চল্যকর সংবাদও বটে । আগ্রহ নিয়ে পুরো সংবাদ পড়ে তো আমি একদম ‘থ’ ! এ যে রফিক ! আমাদের গ্রামের রফিক ! রফিকের নাকি ছেলে সন্তান হয়েছিল । সেই সন্তানকে জন্মের এক সপ্তাহ পরে হঠাৎ করেই গলা টিপে মেরে ফেলেছে রফিকের বউ সালমা !
ব্যস্ততার কারণে তখন রফিককে ফোন করা হয় নি । পরে ভুলেই গিয়েছিলাম । কিন্তু তার কয়েকদিন পরেই খবর পেলাম, রফিকের বউও মারা গেছে ।
রফিককে সেদিন ফোন করেছিলাম । সান্তনা দিয়েছিলাম । যা হবার হয়ে গেছে ভেবে তখন আর রফিককে বেশি কিছু জিজ্ঞেস করিনি । তাছাড়া ঐ অবস্থায় বেশি কিছু জিজ্ঞেস করাটাও ভালো দেখায় না ।
তারপর মাসখানেক কেটে গেছে । গতকাল হঠাৎ রফিকের ফোন পেলাম । জানালো, সে নাকি ব্যবসার কাজে ঢাকা এসেছে । কয়েকদিন থাকবে ।
রাতে সময় করে আমার চেম্বারে একবার আসতে বলেছিলাম রফিককে । রফিক এলো রাত দশটার দিকে । ততক্ষণে আমার আজকের সব রোগী দেখা শেষ হয়ে গেছে । কেন যেন রোগীর চাপও অনেকটা কম ছিল আজ । সহকারীকেও বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছি ।
রফিকের কাছে ধীরে ধীরে পুরো ঘটনা শুনলাম ।
বছর তিন আগে সালমার সাথে বিয়ে হয় রফিকের । সালমা চেয়েছিল প্রথম বছরেই বাচ্চা নিতে । রফিকের অনিচ্ছাতেই কিছুটা দেরি । কিন্তু সালমা প্রতিদিন একবার হলেও বাচ্চার প্রসংগ তুলতো । কত পরিকল্পনা ! বাচ্চার নাম কী রাখবে, বাচ্চাকে কী খাওয়াবে, কীভাবে মানুষ করবে সারাদিন যেন এইসব নিয়েই ভাবতো সালমা ।
অথচ সেই সালমার কী হয়ে গেল ! ডেলিভারির কয়েকদিন পর থেকে সালমার মেজাজ অল্পতেই চটে যেতে লাগলো । দেখা গেল, বাচ্চার দিকেও তার অতটা নজর নেই তার । ঠিকমত বুকের দুধ খাওয়ায় না । বাচ্চা কান্নাকাটি করলেও ভ্রুক্ষেপ করেনা । আচার ব্যবহারেও নাকি অনেক পরিবর্তন এসেছিল । সবার সাথে খারাপ ব্যবহার করছিল । কখনো কখনো নিজে নিজে কথা বলতেও দেখা গেছে । মুরুব্বিরা বললেন, খারাপ বাতাস লেগেছে । এত সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা ! আর সালমাও তো কম সুন্দরী নয় !
কবিরাজ ডেকে তাবিজ নেয়া হলো । ‘পানিপরা’ ছিটিয়ে দেয়া হলো সারা বাড়িতে । কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না । সেদিন সকালবেলা হঠাৎ কী হতে কী হয়ে গেল, ফুটফুটে বাচ্চাটার গলা টিপে ধরে মেরে ফেললো সালমা ডাইনিটা ! তারপর মাটিতে শুইয়ে রেখে কীরকম ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলো বাচ্চার লাশের দিকে ! ডাইনিটা যেন বুঝে উঠতে পারছিলনা, কী ভয়ংকর ঘটনা ঘটিয়ে ফেলেছে সে !
এরপর সালমা একদম চুপচাপ হয়ে যায় । কয়েকদিন পরে এক রাতে মারা যায় সালমাও । সবাই ভেবেছিল, জ্বিনের আছরেই মারা গেছে সে ।
আরো কিছু প্রশ্ন করে সবকিছু জেনে নিলাম আমি । ঘটনার সবটুকু শুনে আমি বললাম, রফিক- তোর বউ সালমার কোন দোষ ছিলনারে । সে ডাইনি ছিলনা । খারাপ বাতাসও লাগেনি । ওর অসুখ করেছিলো, তোরা বুঝতে পারিসনি ।
রফিক আমার দিকে অবিশ্বাস নিয়ে তাকালো । বললো- ডাইনি ছাড়া কেউ নিজের জন্ম দেয়া এরকম ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে গলা টিপে মারতে পারে?
বুঝিয়ে বললাম রফিককে, এটা ছিল এক ধরনের মানসিক রোগ । বাচ্চা ডেলিভারির পর ৬ সপ্তাহের মধ্যে মায়ের এরকম মানসিক বৈকল্য হতে পারে । একে বলা হয় পোস্ট পার্টাম সাইকোসিস । প্রতি পাঁচশ জনে এক জন মায়ের এই রোগ হতে পারে । এইসময় মায়ের হুশ জ্ঞান ঠিক থাকেনা । এমনকি বাচ্চার ক্ষতিও করতে পারে । সেজন্য প্রয়োজনে বাচ্চাকে সরিয়ে রাখতে হয় । আর চিকিৎসা করলে এই রোগ ভালো হয়ে যায় ।
আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে থাকলো রফিক । তারপর হঠাৎ টেবিলে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে ফেললো সে । আমার হাত জড়িয়ে ধরে ডুকরে উঠলো - ‘এ আমি কী করেছি রে দোস্ত’ । সালমা তো মরেনি রে । আমার বাচ্চাকে মেরেছে বলে সালমাকে আমিই গলা টিপে মেরে ফেলেছিরে । এ আমি কী করেছি দোস্ত...
চমকে উঠলাম আমি । রফিক ওর বউকে খুন করেছে !! সালমার মৃত্যু তাহলে স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলনা ! বিষয়টা বুঝে উঠতে যেন কয়েক মুহূর্ত সময় লাগলো আমার ।
যাহোক,বুঝলাম বটে । কিন্তু এই মুহূর্তে ক্রন্দনরত রফিকের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমার আর কিছুই করার থাকলো না ।

শনিবার, ২৭ জুন, ২০১৫

এত অবুঝ কেন বাঙালি মেয়েরা?

প্রায়ই পত্রিকায় শিরোনাম দেখি- 'বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তরুণীকে ধর্ষণ !' যদিও এটা আসলে ধর্ষণ নয়, ব্যভিচার । যেখানে দুজনের সম্মতি থাকে তাকে ধর্ষণ বলা যায় না, সেটা স্পষ্টতই ব্যভিচার । শাস্তি হলে দুজনেরই হতে হবে ।
প্রশ্ন হচ্ছে, মেয়েরা এত অবুঝ কেন? বিয়ে কি এতই লোভনীয় বা দুর্লভ কিছু যে, কেউ 'বিয়ে করবে' বললেই তাকে সবকিছু বিলিয়ে দিতে হবে?
ধর্ষণের শিকার তো সুন্দরী মেয়েরাই হয়। তাদের তো বিয়ে নিয়ে চিন্তিত থাকার কথা নয়! আর কেউ যদি সুন্দরী না হয়, সে কীভাবে মনে করতে পারে যে বিয়ে ছাড়াই সব পাওয়ার পরেও কেউ তাকে বিয়ে করবে?
শারিরীক সংস্পর্শের আগে আল্লাহ বিয়েকে বাধ্যতামূলক করেছেন । শুধু তাই না, পুরুষের কাছে নগদ মোহরানা নেয়ার অধিকার দিয়েছেন । সেখানে আপনি আল্লাহর চেয়ে বেশি বুঝে বিয়ে মোহরানা ছাড়াই সবকিছু খোয়াবেন কেন? সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ যেখানে পুরুষদের বিশ্বাস করেন নাই(রুপকার্থে), সেখানে আপনি বিশ্বাস করার কে?
মুসলমানের জন্য বিয়ের আগে নারী পুরুষ একান্তে আলাপ করারও অনুমতি নেই। আপনাদের তথাকথিত এইসব 'রিলেশন'ই অবৈধ । তারপরও ধরলাম না বুঝে তথাকথিত 'রিলেশনে' জড়িয়েছেন । এখন, যে পুরুষ বিয়ের আগে শারিরীক সম্পর্কের কথা বলে সে যে একটা লম্পট এটা তো তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় । কোনরকম সম্পর্ক থাকলে তো তখনই ছিন্ন করা উচিত্‍ । তারপরেও তাকে কেউ যদি বিশ্বাস করে এর চেয়ে বড় বেকুব কে হতে পারে?
প্রতারণার কথা বলে পার পাওয়া যাবেনা । বিয়ের 'প্রলোভনে'ই যদি আপনি বিয়ের আগেই সবকিছু সপে দিতে পারেন তাহলে আপনাকে বিশ্বাস না করাটাই তো স্বাভাবিক। বিয়ের পরে অন্য কোন প্রলোভনে অন্য কারো কাছে নিজেকে সপে দিবেন না তার নিশ্চয়তা কী?
কোন লম্পট পুরুষের লাম্পট্যকে সমর্থন করছি না । কিন্তু অন্য কোন দেশের নারীরা এমন 'বিয়ের প্রলোভনে' ভোলে কিনা আমার জানা নেই ।
শুধু বাঙালি মেয়েরা এত অবুঝ কেন?

শুক্রবার, ২৬ জুন, ২০১৫

এক বর্ষাতি ভোরে

একটা উৎকণ্ঠা যেন জেগে আছে মস্তিষ্কের ভেতর ।
এই ঝুম বৃষ্টির ভোর;
আর হৃদয় হিম করা বেহেশতি হাওয়ায়-
ঘুমিয়ে থাকা যায় অনন্তকাল ।
অথচ
কেন যেন আজ আমার ঘুম ভাঙ্গে বারবার
অর্ধ নিমীলিত চোখে- আলো আঁধারির খেলা-
মরিচীকার মত মনে হয় !

কী এক অব্যক্ত উৎকন্ঠা যেন জেগে আছে মস্তিষ্কের ভেতর ।
তাই
আধো ঘুম আধো জাগরণে- যাচ্ছে কেটে আমার এই-
কদম কেয়ার স্নিগ্ধ সকাল !

মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০১৫

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট !

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট-০১: বাজেট বক্তৃতায় স্বাস্থ্যখাত
মাননীয় স্পিকার
৮৬। কমিউনিটি ক্লিনিকঃ ‘মিনি ল্যাপটপ হবে ডিজিটাল ডাক্তার- এই স্লোগানকে সামনে রেখে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে মোট ১৩ হাজার ৮৬১টি মিনি ল্যাপটপ প্রদানের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এর মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী টেলিমেডিসিন সেবা, স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য ও স্বাস্থ্য শিক্ষার সুযোগ পাবেন।
৮৭। টেলিমেডিসিন সেবার সম্প্রসারণঃ ৬৪টি হাসপাতাল এবং ৪১৮টি উপজেলা হাসপাতালে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের স্বাস্থ্য অফিসগুলোতে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’
৮৮। মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার স্কিমঃ গরিব, দুস্থ ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য ৫৩টি উপজেলায় চালানো হচ্ছে মাতৃস্বাস্থ্য ভাউচার কর্মসূচি। আরো ২০টি উপজেলায় এ কর্মসূচি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১৩২টি উপজেলায় জরুরি প্রসূতিসেবা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।’
৮৯। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়নঃ জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়নে আমরা ‘জাতীয় ওষুধ নীতি ২০১৪’ প্রণয়ন করছি। একই সাথে ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২, ড্রাগ অ্যাক্ট ১৯৪০, ড্রাগ রুলস ১৯৪৫ ও ১৯৪৬সহ বিভিন্ন সংশোধনী একত্রিত ও যুগোপযোগী করার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।
৯০। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করছি ।

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট-০২: ক্রমাগতভাবে কমেছে বরাদ্দ
.
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জন্য অনুন্নয়ন ও উন্নয়ন খাতে মোট ১২ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। যা এবারের প্রস্তাবিত মোট ২ লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা বাজেটের মাত্র ৪.৩০ শতাংশ। এর মধ্যে অনুন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা।
গত অর্থবছরে এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১১ হাজার কোটি টাকা, যা ছিল মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ আপাত দৃষ্টিতে এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বেশি দেখালেও প্রকৃতপক্ষে তা কমেছে।
এবার মোট বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের অংশ মাত্র ৪.৩ শতাংশ। গত বছর এই হার ৪.৪৫ শতাংশ প্রস্তাব করা হলেও পরে তা সংশোধিত হয়ে ৪.৮১ শতাংশে ওঠে। তবে এর আগে থেকেই ধারাবাহিকভাবে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫.৬৮%, ২০১১-১২ সালে ৫.০৩%, ২০১২-১৩ সালে ৪.৮৬% এভাবেই কমতে থাকে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে একটু বাড়িয়ে ৪.৯৭% করা হলেও চলতি অর্থবছরে তা আবার কমিয়ে ৪.৩% এ নামিয়ে আনা হয়েছে ।
২০১০-১৪ সময়কালে বরাদ্দের গড় হার ছিল জিডিপির মাত্র ০.৮৬ শতাংশ। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় বরাদ্দ ছিল সর্বোচ্চ, মোট বাজেটের ৬.৭ শতাংশ এবং জিডিপির ১.০৩ শতাংশ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একটি দেশের বাজেটের ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া উচিত স্বাস্থ্য খাতে। এছাড়া স্বাস্থ্য খাতে সরকারিভাবে মাথাপিছু ন্যূনতম ব্যয় বরাদ্দ ৪৪ মার্কিন ডলারের সমান হওয়া উচিত, যা বাংলাদেশে মাত্র ২৭ ডলার। এ বরাদ্দের হার আমাদের প্রতিবেশী ভারতে ৫৯ ডলার, নেপালে ৩৩ ডলার, শ্রীলংকায় ৯৭ ডলার, পাকিস্তানে ৩০ ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ৯৫ ডলার এবং ভিয়েতনামে ৯৬ ডলার।
প্রতি বছর দেশে গড়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাড়লেও আনুপাতিক হারে বাড়ছে না বরাদ্দের পরিমাণ। বরং দেখা যাচ্ছে, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের হার ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে ।
একথা যে কেউ স্বীকার করবেন যে, সুস্থ জাতি গঠনে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ক্রমাগতভাবে বাড়ানো উচিৎ । কিন্তু অদ্ভুত হলেও সত্য, আমাদের দেশে তা ক্রমাগতভাবে আরো কমানো হচ্ছে !

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট-৩ঃ গরীব বানানোর বাজেট
.
প্রতি বছর দেশে গড়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাড়ছে । কিন্তু সেই তুলনায় স্বাস্থ্যখাতে আনুপাতিক হারে বাড়ছে না বরাদ্দের পরিমাণ । বরং বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দের হার মোট বাজেটের তুলনায় শতকরা হার হিসেবে ক্রমাগতভাবে হ্রাস পাচ্ছে । এবারের বাজেটেও এর কোন ব্যতিক্রম ঘটেনি। ফলে এ খাতে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের ব্যক্তিগত ব্যয় (Out of pocket Expenditure) ।
১৯৯৭ সালে স্বাস্থ্য খাতে ব্যক্তিগত ব্যয় ছিল ৫৬ দশমিক ৯ শতাংশ । ২০০৭ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৬৪ দশমিক ৭ শতাংশ । ব্যক্তিগতভাবে খরচ মেটানোর পরিমাণ বিশ্বে প্রায় ৩২ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে বর্তমানে এ হার প্রায় ৬৫ শতাংশ ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী একটি দেশের স্বাস্থ্য খাতে সরকারিভাবে মাথাপিছু ন্যূনতম ব্যয় বরাদ্দ ৪৪ মার্কিন ডলারের সমান হওয়া উচিত, যা বাংলাদেশে মাত্র ২৭ ডলার । আবার এ খাতে বরাদ্দের অর্ধেকই খরচ হয় বেতন-ভাতায় । অবশিষ্ট বরাদ্দ যায় ক্রয় ও অবকাঠামো উন্নয়নে । ফলে সময়ের সাথ সাথে মানুষের ব্যক্তিগত ব্যয় বাড়ছে বৈ কমছে না।

এভাবে সরকারি ব্যয় কমতে থাকলে মানুষের গরীব হবার সম্ভাবনা বাড়বে । সরকারিভাবে স্বাস্থ্যসেবা অপ্রতুল হওয়ায় বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা বাড়বে । আর বেসরকারি খাতে স্বাস্থ্যসেবার ব্যয় মেটাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়বে অনেক মানুষ । মধ্যবিত্তরা হয়ে পড়বে নিম্নবিত্ত, নিম্নবিত্তরা ভূমিহীন, আর গরীবরা ভুগবে চিকিৎসাহীনতায়।

অস্বাস্থ্যকর স্বাস্থ্য বাজেট-৪ঃ বিশিষ্টজনদের প্রতিক্রিয়া
.
স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্যবিদ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহউপাচার্য অধ্যাপক ডাঃ রশীদ-ই-মাহবুব । তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজেট দেখে মনে হয় স্বাস্থ্যের দিকে সরকারের কোনো নজর নাই, মনোযোগ নাই। এই বরাদ্দে চিকিৎসা নিতে মানুষের পকেটের খরচ বাড়বে। এতে দরিদ্র রোগীদের সেবা পাওয়া কঠিন হবে।’
অধ্যাপক ডা. রশীদ-ই-মাহবুব যুগান্তরকে বলেন, ঘোষিত বাজেটের ফলে স্বাস্থ্য খাতে আউট অব পকেট বা ব্যক্তি ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে। দেশের গরিব মানুষের চিকিৎসা সেবা পাওয়া খুবই কষ্টকর হবে। দেশে অসুস্থতার হার বাড়বে। যার ফলে দারিদ্র্যবিমোচন সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে গত বছর যে বরাদ্দ ছিল এবার দৃশ্যমানভাবে তার চেয়ে আকার কিছুটা বেশি দেখা গেলেও প্রকৃতপক্ষে বরাদ্দ বাড়েনি। তিনি বলেন, যে ১৫শ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে তা শুধু বেতন-ভাতা বৃদ্ধির জন্য। ফলে গত অর্থবছরে সরকারে পক্ষ থেকে যে সেবা প্রদান করা হয়েছে এবার তাও সম্ভব হবে না।
অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব কালের কণ্ঠকে বলেন,কয়েক বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে টাকার অঙ্কে বাজেট কিছুটা বাড়লেও জাতীয় বাজেটের অংশ হিসেবে তা ক্রমেই কমছে। এটা কোনোভাবেই দেশের গরিব মানুষের স্বাস্থ্যসেবার জন্য ইতিবাচক হতে পারে না।
তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতির ফলে স্বাস্থ্য খাতের পাবলিক খাত দুর্বল হয়ে পড়বে, অন্যদিকে ফুলে-ফেঁপে উঠবে প্রাইভেট সেক্টর, যাতে করে ব্যবসার মাত্রা আরো বেড়ে যাবে। ফলে জনগণের চিকিৎসা ব্যয় বাড়বে। তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, প্রাইভেট সেক্টরে ব্যবসা আর দুর্বৃত্তায়নের ফলে মধ্যবিত্ত বা নিম্ন-মধ্যবিত্তরা নিরুপায় হয়ে ভিড় করবে পাবলিক সেক্টরে। কিন্তু সেখানকার দুর্বল অবস্থানের ফলে চাপের মুখে ছিটকে পড়বে একেবারেই নিরীহ গরিব মানুষ।
স্বাস্থ্য খাতের বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খান বলেন, মোট বাজেটের মাত্র ৪.৩ ভাগের বদলে আমি মনে করি স্বাস্থ্য খাতে অন্ততপক্ষে ১০ ভাগ বরাদ্দ বাড়ানো উচিত। এতে করেই স্বাস্থ্য খাতের যথার্থ উন্নয়ন সম্ভব বলে আমি মনে করি। এছাড়া তিনি বলেন, আমাদের দেশের তৃণমূল স্বাস্থ্য সেবায় কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আর সরকার আগামী অর্থবছরের বাজেটে এটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন ঘটবে বলে আমি আশা করি।
বিএমএর মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান কালের কণ্ঠকে বলেন,‘স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধির জন্য আমরা আগে থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিলাম। এ ছাড়া সরকার যেভাবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে এগোচ্ছিল, তাতে এবার স্বাস্থ্য খাতে বাজেটে আমরা বড় ধরনের বরাদ্দের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম, কিন্তু আমাদের সেই আশা পূরণ হয়নি। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ যত বাড়বে, দেশের সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাপনা তত বেশি জোরালো হবে।’
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে কৃষি, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় কঠোর সমালোচনা করেছে। সংস্থাটির বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, বাজেটে সবচেয়ে অবহেলিত খাতের একটি হচ্ছে স্বাস্থ্য।
সিপিডির বাজেট পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, ২০০৩ সাল থেকে মোট দেশজ আয় (জিডিপি) বিবেচনায় স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ কমছে। মূল বাজেটের তুলনায়ও বরাদ্দ কমছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল জিডিপির শূন্য দশমিক ৯০ শতাংশ। এবার তা নেমে এসেছে শূন্য দশমিক ৭৪ শতাংশে। চরম অবহেলিত হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত।
চলবে...

বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫

বুধবার, ১০ জুন, ২০১৫

বহুদিন দেখিনি তোকে, সমূদ্র !

বহুদিন দেখিনি তোকে, হে সমূদ্র ! পোড়া চোখে
বহুদিন আছড়ে পড়েনি একফোঁটা
লোনা জলের ঢেউ ।
প্রচন্ড রুক্ষতা আঁকড়ে ধরেছে আমার সমগ্র সত্ত্বাকে
অসহ্য আগুনে জ্বলছে মাটির শরীর
অথচ
একফোঁটা জল নেই পদ্মায় তিস্তায় ।
দগ্ধ শরীর নিয়ে আমি তবে কোথায় যাবো?


বহুদিন দেখিনি তোকে, সমূদ্র !
বহুদিন শুনিনি তোর মর্মভেদী ডাক । তোর নীল চোখে
বহুদিন রাখিনি চোখ । তবে কি-
ক'দিনের বিরহেই চিড় ধরে গেছে আমাদের ভালোবাসায়?

বুধবার, ৩ জুন, ২০১৫

জিজ্ঞাসু পথিক

এইভাবে কতটা পথ হাঁটা যাবে?
এই আবছা রোদ, এই অন্ধকার-
কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের কাফেলাকে?
মনে পড়ে,
এক আলোকোজ্বল ভোরে যাত্রা শুরু করেছিলাম আমরা ।
তারপর
পথের বন্ধুরতায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে আমাদের দেহ
সূর্যের প্রখর তাপে দগ্ধ হতে হতে
এগিয়ে এসেছি এতদূর ।

এখন গোধূলী নেমেছে,
ধুলোয় ঝাপসা হয়ে আছে আমাদের চোখ ।
গন্তব্য? কোথায় কতদূরে?
এইভাবে আর কতটা পথ হাঁটবো আমরা?
এই আবছা রোদ, এই অন্ধকার-
কোথায় নিয়ে যাবে আমাদের কাফেলাকে?