এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

বৃহস্পতিবার, ৩১ আগস্ট, ২০১৭

বোনদের প্রতি অনুরোধ

মেয়েদের কী করা উচিত বা কী করা উচিত না, সে বিষয়ে আমি সাধারণত কিছু বলিনা। সবসময় ভাবি, নিজেদের ভালো তারা নিজেরাই বোঝার কথা। কী করবে আর কী করবে না, সেটা তারা নিজেরাই ঠিক করবে।
কিন্তু আজ কিছু কথা না বলে পারছি না। গত শুক্রবার এক দুর্ভাগা মেয়েকে চলন্ত বাসে রেপ করার পর মাথায় আঘাত করে খুন করেছে বাসের হেল্পাররা। তারপর লাশ ফেলে দিয়েছে টাঙ্গাইলের মধুপুর জঙ্গলের মধ্যে। খবরটা পড়ে শিউরে উঠেছি। পুরুষ হিসেবে লজ্জিত হয়েছি। মানুষ হিসেবে লজ্জিত হয়েছি। সেই সাথে বারবার এইটাও মনে হয়েছে, মেয়েটা এত বোকা কেন? রাতের বেলা একটা বাসে সে একা ছিল কোন সাহসে? একা হয়ে যাবার পর তার নেমে যাওয়া উচিত ছিলনা?
বোনদের প্রতি অনুরোধঃ নিজের বাবা, ভাই, হাজব্যান্ড ছাড়া আর কারো সাথে কোন জায়গায় একা থাকবেন না। কোন পুরুষকে পুরোপুরি বিশ্বাস করবেন না। যতই কাছের বন্ধু হোক, কাজিন হোক, কলিগ হোক, পরিচিত বা অপরিচিত হোক। নেভার। যখনই দেখবেন আপনি একা হয়ে যাচ্ছেন, আপনিও তৎক্ষণাৎ ওই জায়গা ত্যাগ করবেন।
বাসায় একা থাকলে কলিং বেলের আওয়াজ শুনেই দরজা খুলবেন না। একা একা সিএনজি, বা উবারে উঠবেন না। বাসে যদি দেখেন আপনি একা হয়ে যাচ্ছেন, নেমে পড়ুন।
কোন কিছু আশঙ্কা করলেই নিকটাত্মীয় কাউকে জানান।
আর প্লিজ... আত্মরক্ষার জন্য সাথে কিছু না কিছু রাখবেন। নিজের মত করে। মরিচের গুড়া হলেও রাখুন। যেকোন সময় কাজে লাগতে পারে।
এইখানে আপনি নিরাপদ না। এই রাষ্ট্র, এই সমাজ আপনার নিরাপত্তা দিতে পারছে না, পারবে না। সুতরাং যতটুকু সম্ভব নিজেকে রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকেই।
পর্দা করবেন কিনা বা কতটুকু করবেন সেটা আপনার ব্যাপার। তবে করতে পারলে ভালো। এটাও একটা প্রিভেন্টিভ মেজার। আপনার মূল্যবান স্বর্ণের অলংকারগুলো যেমন সিন্দুকে বা ব্যাংকের লকারে সুরক্ষিত করে রাখেন, আবরণ দিয়ে ঢেকে রাখেন- নিজেকে মূল্যবান মনে করলে নিশ্চয়ই নিজেকেও ঢেকে রাখবেন। এখন আপনি নিজে নিজেকে কতটা মূল্যবান মনে করেন সেটা আপনার ব্যাপার।
নিজেকে আপনার নিজের কাছে যেমনই মনে হোক, পুরুষের কাছে আপনি লোভনীয়। আপনি মূল্যবান। মূল্যবান কোনকিছু অরক্ষিত থাকলে এমন কেউ না কেউ থাকবেই, যে লোভ সামলাতে পারবে না।
পুরুষ মানুষরা হলো হরমোন ড্রাইভেন। যাদের বিবেক সজাগ, তারা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু যারা বিবেকহীন, তারা অনেকেই জন্তুর মত হয়ে যায়।
এখন এত এত পুরুষের ভেতর কে জন্তু আর কে মানুষ এইটা তো আপনার বোঝার উপায় নাই। সেজন্য জন্তুর হাত থেকে বাঁচতে নিজেকেই সতর্ক থাকতে হবে।
রাতের বেলা যথাসম্ভব বাইরে না থাকার চেষ্টা করবেন।
হিংস্র জন্তুর হাত থেকে বাঁচার জন্য রাতে বের না হওয়া কিংবা ঘরে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে রাখা বোকামী বা বন্দীত্ব নয়, বরং এটাই সত্যিকারের বুদ্ধিমানের কাজ।

মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

যা করার হুটহাট করে ফেলেন...

'হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেলো গতকাল। সবকিছু এত দ্রুত করতে হয়েছে, কাউকে জানাতে পারিনি বলে দুঃখিত। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।'
বিয়ের ঘটনাগুলো আমরা এখন বেশিরভাগ সময় এভাবেই জানতে পারি। এইটা হল ফেসবুক যুগের ট্রেন্ড। এবং সত্যি বলতে কী, I like this..
আমার পরিচিত ভাই বেরাদরদের আমি সবসময় বলি- ভাই, যা করার হুটহাট করে ফেলেন। নিকটাত্মীয়দের নিয়ে কম খরচে সাদাসিধা আর ঘরোয়াভাবে করে ফেলেন। তারপর ফেসবুকে লিখে দিবেন, হুট করে সব হয়ে গেছে, কাউকে জানাতে পারিনি বলে দুঃখিত।
আমরা দাওয়াত চাই না, শুধু সংবাদটা চাই। Esophagus পর্যন্ত খাওয়া হোক বা নাহোক, শুভেচ্ছা জানাতে আর দোয়া করতে কোনরকম কার্পণ্য করা হবে না।
কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা লেখা খুব ঘুরছিল- কুটিকুটি টাকার ব্যাকআপ ছাড়া নাকি বিয়া করা যায় না।
ইনভাইটেশন কার্ড, পার্লার, দামী দামী সব কাপড়চোপর, স্বর্ণের অলংকার, বিরাট অনুষ্ঠান, কনভেনশন সেন্টারের ভাড়া, হাজারো মানুষের খাওয়া দাওয়া...
এক কথায়- টাকা উড়ানোর যত ধরণের উপায় বের করা সম্ভব, কোনোটাই যেন বাদ দেয়া যাবে না।
তো টাকা আসবে কোত্থেকে? দেশের গুটিকয়েক ধনকুবের পরিবারকে আমরা আমাদের আলোচনার বাইরে রাখছি। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বাবা মায়েরা কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন বটে, তবে সেটা মেয়ের বিয়ের জন্যে। ছেলের জন্যে না। মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর ছেলের জন্যে আর তেমন একটা জমানো টাকা থাকেনা। তাছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন বাবার পক্ষেই বা কী করে সম্ভব দুই তিনটা ছেলের প্রত্যেকের বিয়েতে পাঁচ ছয় লাখ করে টাকা খরচ করা!
সুতরাং ভংচং যত খরচই হোক, সেগুলো যোগাড় করতে হবে ছেলেকেই। একটা ছেলে তার লেখাপড়া শেষ করে কর্মজীবনের শুরুতে কীভাবে লাখ লাখ টাকা খরচ করবে? চাকরির বাজারও মন্দা, চাকরি পেতেও দিতে হয় লাখ লাখ টাকার ঘুষ। কখনো জমানো টাকাটা সেখানেই চলে যায়। কখনো কখনো ঋণ নিয়ে ঘুষের যোগান দিতে হয়।
তো এইসব ছেলেরা বিয়ের জন্য কীকরে টাকা জমাবে? কতদিন জমাবে? ঋণ করা ছাড়া তার উপায় কী? আর আলতু ফালতু খরচের জন্য কেন তাকে ঋণ করতে হবে?
সুতরাং যতসব ফালতু ট্রেন্ড বন্ধ করে নতুন ট্রেন্ড চালু করতে হবে।
গতবছর পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল, ভারতে এক তরুণী তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বরের হাতে একগাদা বইয়ের লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের এক তরুণী তার বিয়ের দিন দাদীর শাদা শাড়ি পরে বিয়ে করেন। দামী শাড়ি, গয়না আর পার্লারি সাজগোজের বিপরীতে এটা ছিল নীরব প্রতিবাদ। আউট অব ট্রেন্ড। তার এই ঘটনাটিও অনলাইনে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
এগুলো ভালো ট্রেন্ড। এরকম ভালো ট্রেন্ড শুরু হোক। বেশি বেশি প্রচলন ঘটুক। প্রথা এবং ঐতিহ্যের শুধু সেটুকুই আমাদের চালু রাখতে হবে- যেটুকু সহজ, স্বাভাবিক এবং কল্যাণকর।
বিয়েগুলো হোক মসজিদে। কিংবা একদম ঘরোয়াভাবে। বারান্দায় হোক, ড্রয়িংরুমে হোক। অসুবিধা কোথায়? জমকালো ইনভাইটেশন কার্ডের বদলে চালু হোক হাতে লেখা 'নিমন্ত্রণ পত্র'! ওয়ালিমা হোক বাড়ির উঠানে, কিংবা মসজিদের বারান্দায়। বিরিয়ানি রোস্টের বদলে একটা ওয়ালিমা হোকনা ডাল ভাত ভর্তার! সবকিছু হোক সহজ স্বাভাবিক।
বিয়েবাড়ির খরচ কমিয়ে হানিমুনেই নাহয় বেশি করে খরচ করুন, তাও ভালো।
(ঠিক করেছি, বিয়ের পর আমার বউকে 'গরুর গাড়িতে' করে তার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাবো। এই সময়ের জন্য আউট অব ট্রেন্ড অবশ্যই। সমস্যা হলো, গরুর গাড়ির খরচটা মোটরগাড়ির তুলনায় আদৌ কম হবে কিনা সে বিষয়ে আমি এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।  

রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭

দান

আজকে সকালে অফিসে এসে খবরটা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো মাসুদ সাহেবের। তার কোম্পানি বন্যা দুর্গতদের জন্য মোটা অংকের সাহায্য করছে। পাঁচ লাখ টাকা।
মাসুদ সাহেব একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বেতন যা পান, তা দিয়ে মোটামুটি চলে যায়। তবে কোনোমাসে বাড়তি খরচ থাকলে বেশ টানাটানি পড়ে যায়। এই যেমন গতমাসে হঠাৎ ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়লো। সবার হচ্ছে চিকনগুনিয়া, কিন্তু ছেলের হলো টাইফয়েড জ্বর। অবস্থা বেশ খারাপের দিকে ছিল। সাতদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে দামী ইঞ্জেকশন দিতে হলো।
সব মিলে এ মাসে বেশ টানাটানি করেই চলতে হবে। বেশ কিছু ধারদেনাও হয়ে গেছে এরমধ্যে।
পত্রিকায় টিভিতে বন্যার খবর দেখে মাসুদ সাহেবের অনেক খারাপ লাগে। মন চায় কিছু হলেও সাহায্য করতে। কিন্তু এইমাসে অনেক টানাটানি। সম্ভব হবে না। এনিয়ে মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। মানুষের এমন দুর্দিনে কিছুই করতে পারলেন না ভেবে অস্থির বোধ করছিলেন। কিন্তু আজকে খবরটা শুনে মনের ভার কিছুটা হলেও লাঘব হলো। কোম্পানি থেকে সাহায্য করা হচ্ছে। কোম্পানির সাহায্য মানে তো তারই সাহায্য করা। কোম্পানিতে তার একটা অংশ আছে না! আর কোম্পানির চেয়ারম্যান লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলেন, লোকটা বোধহয় আসলে অতটা খারাপ না। লোকটার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো মাসুদ সাহেবের।
২.
এক তারিখে বেতন তুলতে গিয়ে অবাক হলেন মাসুদ সাহেব। দেখলেন, তার একাউন্টে বেতন থেকে ১ হাজার টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। কারণ জিজ্ঞেস করায় তাকে দেখিয়ে দেয়া হলো, একাউন্টস সেকশনের সামনে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে, 'বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য সব কর্মচারীর এক দিনের বেতন কেটে নেয়া হলো'।
কোম্পানির কর্মচারীর সংখ্যা ৫ শতাধিক। বেতন থেকে কাটা হয়েছে ন্যুনতম এক হাজার টাকা করে। আর ওদিকে সাহায্য দেয়া হয়েছে ৫ লাখ। হিসাবটা তার সামনে দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে গেলো। আর মনের পর্দায় ভেসে উঠলো কোম্পানি চেয়ারম্যানের ত্রাণ সাহায্য প্রদানরত ছবিটা। কে দান করে কার পকেটের টাকা?

শনিবার, ২৬ আগস্ট, ২০১৭

গীবত করছি না ভাই...

"বলা উচিত না ভাই, তারপরও বলছি। ঘটনা হইছে কী... "
"গীবত করছি না ভাই, আপনার জানার জন্যে বলছি... অমুক ভাইয়ের সাথে সেইদিন পথে দেখা বুঝলেন, কী আর বলবো.."..
আমাদের আড্ডায় আলোচনায় সাধারণত এভাবেই শুরু হয় পরনিন্দা, গীবত আর চোগলখুরির যত আলাপ। হয় আমরাই শুরু করি, অথবা আমরাই হই একনিষ্ঠ শ্রোতা।
বলা উচিত না ভাই, তারপরও বলছি... এইটুকু শুনেই যদি থামিয়ে দিতে পারতাম.. বলতে পারতাম- ভাই, বলা যেহেতু উচিত না, তো আর বইলেন না। আমারও বোধহয় শোনা উচিত হবে না।
অথবা, গীবত করার জন্য বলছি না... এইটুকু শোনার পর যদি থামিয়ে দিতে পারতাম; তাহলে কতই না ভালো হত।
কিন্তু বেশিরভাগ সময় আমরা তা পারিনা। কখনো এমন হয় যে, সিনিয়র কেউ একজন এইরকম আলাপ শুরু করলেন। এখন তাকে থামিয়ে দিলে হয়তো তিনিই বলে বেড়াবেন- আরে অমুকে তো একটা বেয়াদব!! আবার কখনো কখনো আমরা লোভ সামলাতে পারি না। শুনি না কী হলো!!!
এইভাবে আমরা সবাই মিলে একে অপরের নামে নিন্দা, গীবত আর চোগলখুরির দুষ্টচক্র চালিয়ে যাই। আমি তার, সে আরেকজনের, আর সেই 'আরেকজন' আমাকে নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যায়- আমার অজান্তে। 

বুধবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৭

বিয়ের ক্ষেত্রে 'সৌন্দর্য' বিবেচনা

বিয়ের ক্ষেত্রে 'সৌন্দর্য' বিবেচনা নিয়ে কিছু কথা বলা দরকার। ছেলেরা বরাবরই সুন্দরী বউ চায়, ছেলে যে একাই চায় তাও নয়। ছেলের বাপ মা ভাই বোন তারাও চায়। কখনো কখনো তারাই বেশি করে চায়। যে মা নিজেই শ্যামলা, তিনিও তার ছেলের জন্যে একটা ফর্সা সুন্দরী বউ চান। যে বাবার নিজেরও শ্যামলা মেয়ে আছে (শ্যামলা বলছি কারণ, এই উপমহাদেশে সত্যিকার কালো মানুষ নেই। পিওর ব্ল্যাক বলা যায় শুধু আফ্রিকার মানুষকে), তিনিও ছেলের জন্য ফর্সা মেয়ে চান। সুন্দরী মেয়ে চান।
আর ছেলে তো বই পুস্তক নাটক উপন্যাস বিজ্ঞাপন সবখান থেকে একটাই উদ্দীপনা পেয়ে বড় হয়- তার একটা 'সুন্দরী বউ' লাগবেই লাগবে। ইদানীং মেয়েরাও যুক্ত হয়েছে এই ক্যাটাগরিতে। তারা কম যাবে কেন? তারাও লম্বা, 'ড্যাশিং', 'হ্যান্ডসাম' ছেলে চায়।
যাহোক, চাওয়ায় দোষ নেই। বন্ধুত্ব যদি হতে হয় পাতানো, তাহলে সুন্দরী বা হ্যান্ডসাম দেখা হতেই পারে। দোষ তখনই, যখন সৌন্দর্য হয়ে ওঠে অন্যান্য যোগ্যতার ওপরে প্রধান মাপকাঠি। সুন্দরী চাইবেন, আবার অন্যসব যোগ্যতাও চাইবেন, তাইলে আপনার পথটা কঠিন। আমি ছেলেদের বলি, সৌন্দর্য দেখুন, তবে তার চেয়ে অন্য দিকগুলো বেশি গুরুত্ব দেয়াটাই ভালো। শিক্ষা দীক্ষা আচার আচরণ। আপনি যদি সুন্দরীই চান, করুন না- অশিক্ষিত কোন সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করুন। তা কি করবেন?
সুন্দর একটা কাপড় কিনলেন, কিন্ত তা যদি গায়ে দিলেই শরীর চুলকায়, ফুসকুড়ি উঠে যায়, তাহলে সেই সুন্দর পোষাকের মূল্য কী? খুব সুন্দর কোন জিনিস যদি দুমাসেই রংচটা হয়ে যায়, ছিদ্র হয়ে যায়, তখন মেজাজটা ঠিক থাকবে?
কথায় আছে, চকচক করলেই সোনা হয় না।
আমি আরেকটু বাড়িয়ে বলি- ঘরে সোনা না থাকলেও জীবন ব্যর্থ হয়ে যায় না। সোনা সিন্দুকে রাখার জন্য ভালো, প্রতিদিনকার জীবনের উত্থান পতনে তার ভূমিকা নিতান্তই নগন্য। সোনা নয়, মানুষের জীবনে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন 'মানুষ'কেই। 

বৃহস্পতিবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৭

ভুল মানদন্ডে 'সফল' হবার 'উস্কানি !!

তুমিই পারবে। তুমিও জিতবে। হাল ছেড়ো না, লেগে থাকো। 'দেখিয়ে দাও' যে তুমিও পারো।
এগুলোই হলো বর্তমান সময়ের সব ধরণের সো-কলড মোটিভেশনাল বই-পুস্তক-প্রবন্ধ-লেকচারের মূলকথা। শিব খেরা থেকে শুরু করে নব্য মোটিভেশানিস্ট, যারাই অন্য কাউকে মোটিভেশন দিতে চান, দিনশেষে এইসব কথাই হয়ে দাঁড়ায় তাদের বক্তব্যের সারমর্ম।
এইসব তথাকথিত মোটিভেশন আমাদের তরুণ প্রজন্মের ভেতর সত্যিকার কোন স্পিরিট তো দিচ্ছেই না, বরং হতাশাই বাড়াচ্ছে। কারণ, প্রচলিত মোটিভেশন মূলক কথাবার্তাগুলোতে দুটি মৌলিক ও গুরুতর সমস্যা আছে। একটা হচ্ছে, সাফল্যের সংজ্ঞাটা এখানে কেবলই টাকার অংকে নির্ধারণ করা হয়েছে। আর এই ভুল মানদন্ডে 'সফল' হবার জন্য সবাইকে 'উস্কানি' দেয়া হচ্ছে। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। অবাস্তব স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। যার ফলে বেশিরভাগ তরুণই একটা সময় গিয়ে হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছে।
মোটিভেশনাল বই পড়ে, বক্তব্য শুনে কেউ কোনদিন সফল হয়নি, হয় না। বাস্তবতা হচ্ছে, চাইলেই সবাই 'সফল' হতে পারে না। চাইলেই সবাই জয়ী হতে পারে না। প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস, মন থেকে চাওয়া, লেগে থাকা, কঠোর পরিশ্রম, কেবল এগুলোই সাফল্যের একমাত্র নির্ণায়ক নয়। পরিশ্রম করলেই সবাই ধনী হয় না, লেগে থাকলেই সবাই টপে ওঠে না, পড়ালেখা করলেই সবাই ভালো চাকরি পায় না।
ব্যবসা করলেই সবাই ফুলে ফেপে ওঠে না, রাজনীতি করলেই সবাই প্রেসিডেন্ট হয় না, লিখলেই সবাই জনপ্রিয়তা কিংবা নোবেল প্রাইজ পায় না।
আপনি একটা ক্লাসের সব ছাত্রকে মোটিভেশন দিলেন- তুমিই ফার্স্ট হতে পারবে। তোমাকেই ফার্স্ট হতে হবে। পড়ো পড়ো পড়ো!! You Can Win!!
অথচ বাস্তবতা হলো, মাত্র একজনই ফার্স্ট হবে। আর কেউ ফার্স্ট হতে পারবে না। আপনি যদি শুধু ফার্স্ট হওয়াকেই সাফল্য বলেন, তাহলে কি বাকি সবাই ব্যর্থ!! আপনার এই মোটিভেশন দিনশেষে বেশিরভাগ ছাত্রের মনেই হতাশা ছড়াবে।
ভালো চাকরি করা, ব্যবসা করে অনেক টাকা কামানো, কেবল এগুলোকেই এখন সফলতা হিসেবে তুলে আনা হচ্ছে। আলীবাবা, মার্ক জুকারবার্গ, স্যামসন এইচ, এদেরকেই এখন সাফল্যের আইকন হিসেবে তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা হচ্ছে। যেকোনভাবেই হোক, অগুণতি টাকা উপার্জন করতে পারাটাই যেন 'সাফল্য'।
কিন্তু আসলে কি সবারই ধনী হওয়া সম্ভব? ব্যবসায় কি সবাই তরতর করে ওপরে উঠতে পারবে? সবাই কি উচ্চ বেতনের চাকরি পাবে?
তার মানে কি এই যে, ঐ গুটি কয়েকজন মানুষ ছাড়া বাকি সবাই অসফল? ব্যর্থ? ক্লাসের ফার্স্ট বয়টাই শুধু সফল? বাকিরা ব্যর্থ?
এই ধরণের ফালতু মোটিভেশন বন্ধ করা দরকার। এগুলো মোটেই মোটিভেশন না, সত্যিকার অর্থে এগুলো হলো চরম মাত্রার দীর্ঘমেয়াদী ডিমোটিভেশন।
২.
আসলে সফলতা কী?
আমি বলবো, ভালো মানুষ হওয়াটাই সাফল্য। সৎ মানুষ হওয়াটাই সাফল্য। বিনয়ী হওয়াটাই সাফল্য, ভালো ব্যবহার করতে জানাটাই সাফল্য।
নিজের সীমা ও সামর্থের মধ্যে সবচেয়ে ভালোটুকু করার পর, ফলাফল যাই হোক- সেটাই সাফল্য। সেটাকেই মেনে নেয়ার মোটিভেশান চালানো দরকার।
অন্যের দোকানে কাজ করে কেরোসিনের অভাবে পড়তে না পারা ছেলেটা যদি কোনমতে মেট্রিক পাশ করে- সেটাই সাফল্য। অক্ষম বাপ মায়ের একমাত্র অবলম্বন ছেলেটা যখন রিকশা চালিয়ে সংসারের জন্য উপার্জন করে- সেটাই সাফল্য। অনেক কষ্ট করে বিধবা মায়ের যে ছেলেটা গ্রামের ডিগ্রী কলেজে ভর্তি হয়েছে- সেটাই তার সফলতা।
ছয় ডিজিটের স্যালারি, আর ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিসিএস, কর্পোরেট সিইও- এইসব হওয়াকেই যদি সাফল্যের মাপকাঠি ধরেন, তাহলে পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষকেই ব্যর্থ বলতে হয়। যে কৃষক বাবা তার ঘামের টাকায় ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করিয়েছেন, আপনার কি তাকে ব্যর্থ মনে হয়?
কেন সাফল্যের এই অবাস্তব সংজ্ঞা ফেরি করে বেড়াচ্ছেন? কেন তরুণদের মিথ্যা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন?
একজন মানুষের জন্য, ভালো মানুষ হওয়াটাই হলো সফলতা। কেউ যদি সৎ থাকে, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করে, মানুষের ক্ষতি না করে, পূর্ণ নিষ্ঠার সাথে তার নিজের দায়িত্বটুকু পালন করে, আমার দৃষ্টিতে সে-ই সফল। সে যেই হোক। মুচি, রিকশাওয়ালা, শ্রমিক, ব্যবসায়ী, অফিসের দারোয়ান, বাদাম বিক্রেতা গরীব ছেলেটা।
মোরওভার, একজন মুসলিমের কাছে সফলতার সংজ্ঞাটা আরো চমৎকার। পৃথিবীর জীবনের কোন লাভ, ক্ষতি, প্রাপ্তি বা অপ্রাপ্তিতে তাদের জীবনের সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ধারিত হয় না। তাদের কাছে পৃথিবীর সবকিছুই আপাত। পরকালে পুরস্কৃত হওয়াটাই হলো একজন মুসলিমের জন্য সত্যিকার সফলতা।

মঙ্গলবার, ১৫ আগস্ট, ২০১৭

এভাবেই সময় চলে যায়...

ছোটবেলায় আপনার অনেক বন্ধু ছিল। সবার সাথে নিশ্চয় আজ আর যোগাযোগ নেই! হয়তো সবার নামও মনে নেই। কাউকে কাউকে হয়তো এখন আর প্রথম দেখায় চিনতেও পারবেন না।
যার সাথে আপনার ধুন্দুমার মারামারি হয়েছিলো, স্যারের কাছে মিথ্যা নালিশ করে যে আপনাকে মার খাইয়েছিলো, তার কথা কি মনে আছে? আজ যদি রাস্তায় সেরকম কারো দেখা হয়, কী করবেন আপনি?
আমি জানি। জড়িয়ে ধরবেন। দু'জনে মিলে পাশের কোন একটা কফিশপে ঢুকে যাবেন। হয়তো মনের ভেতর বেজে উঠবে পুরনো গানের সুরঃ বন্ধু, কী খবর বল! কতদিন দেখা হয়নি!!
সেদিনের তিক্ত দিনগুলি আজ হয়ে উঠবে হাসির খোরাক।
কতদিন আগের কথা? দশ বছর? বিশ বছর? ১৫ বছর আগে এই দিনে আপনি ঠিক কী করেছিলেন, মনে আছে? কারো জন্য ভালোলাগা, কারো জন্য কিছু কষ্ট... কোন তিক্ত অভিজ্ঞতা... কিছু মনে পড়ছে না? নট শিওর?
হুম্মম্ম।
সময়। এভাবেই সময় চলে যায়। সময়ের সাথে সাথে আমরা নিজেকে হারিয়ে ফেলি। নিজেকেই ভুলে যাই।
বন্ধুকে ভুলে যাই। শত্রুকে ভুলে যাই। পেছনের একেকটা দিন হয়ে থাকে শুধু স্বপ্নের মত কিছু সাদাকালো স্মৃতি।
"আজকে"র বিষয় নিয়ে আমরা কতই না চিন্তিত থাকি। সামান্য বিষয় নিয়ে মানুষে মানুষে কত শত্রুতা, কত রেষারেষি। অথচ, মৃত্যুর পর হয়তো লক্ষ বছর পরে যখন ঘুম থেকে উঠবো, তখন পৃথিবীর এই পুরো জীবনটাকে মনে হবে একটা ক্ষণিকের স্বপ্ন।
এখন যেমন দশ বছর আগের দিনগুলোকে মনে হয়।

শনিবার, ১২ আগস্ট, ২০১৭

টাইমিং টা ইম্পর্ট্যান্ট...

বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে ৪০ লাখ সৌদি তরুণী। তারা এখনো রয়ে গেছে অবিবাহিত। খবর সৌদি গেজেটের।
ধারণা করি, তরুণদের সংখ্যাটাও সেখানে বোধহয় কম হবে না। তার মানে, বিয়ে সংক্রান্ত সমস্যাটা আসলে মুসলিম বিশ্বের একটা কমন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সৌদি আরবের মোট জনসংখ্যা মাত্র তিন কোটির কিছু বেশি। তার মধ্যে যদি নারীর সংখ্যা অর্ধেক ধরি, তাহলে দেড় কোটি হয়। এর মধ্যে আছে শিশু, আছেন মধ্যবয়সী থেকে বয়স্কা নারীরা। অর্থাৎ বিয়ের বয়সী তরুণীর সংখ্যা যদি ৬০ লাখ হয়, তার মধ্যে ৪০ লাখেরই বয়স ত্রিশের উপরে হয়ে গেছে। অথচ তাদের বিয়ে হয়নি।
অবস্থাটা কি স্বাভাবিক মনে হয়? নাহ, এটাকে স্বাভাবিক মনে করার কোন সুযোগ নেই।
কেন এই অবস্থা? অতিরিক্ত মোহরানা দাবী, যোগ্য পাত্র পাওয়ার পরও আরো ভালোর জন্য অপেক্ষা, এসবই কারণ বলে আমার মনে হয়।
আজ মনে পড়ে হযরত ওমরের সময়কার কথা। যখন কিছু যুবক হযরত ওমরের কাছে এসে অভিযোগ করেছিলেন যে, নারীরা অত্যধিক মোহরানা দাবি করার কারণে বিয়ে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। ওমর (রাঃ) অবস্থার গুরুত্ব উপলব্ধি করে জুমার খুতবায় বক্তব্য দিয়েছিলেন। তিনি মোহরানার পরিমাণ সর্বোচ্চ চারশ দিরহামে সীমাবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এতে নারীর অধিকার ক্ষুন্ন হয় বলে পরে তিনি তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলেন।
মোহরানা নারীর প্রাপ্য অধিকার। কিন্তু ব্যাপারটা হলো- কোন ন্যায্য অধিকারেরও যদি অপব্যবহার করা হয়, তাহলে তা ক্ষতির কারণ হয়। সৌদি আরবে সেটাই হয়েছে।
বাংলাদেশে কী অবস্থা? এনিয়ে কোন জরিপ হয়েছে কিনা আমার জানা নাই। তবে ধারণা করি, বাংলাদেশের অবস্থাও সুবিধাজনক না।
এর জন্য প্রধানত দায়ী অভিভাবকরা। সহজ একটা উদাহরণ দিচ্ছি। সুন্দরী না হওয়াটা বাংলাদেশের অনেক মেয়ের বিয়ের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা। কিন্তু খেয়াল করবেন, ৩০ বছর বয়সে যে মেয়েকে দেখতে খুব একটা সুন্দর মনে হয় না, ১৫-২০ বছর বয়সে সেই মেয়েকেও দেখে অনেকেরই পছন্দ হবে। তার মানে, টাইমিং টা ইম্পর্ট্যান্ট। এইটা গার্জিয়ানদের খেয়াল রাখতে হবে।
আবার যারা একটু বেশি সুন্দরী, তাদের গার্জিয়ানদের পা মাটিতে থাকে না। তারা সব চান। যোগ্য পাত্র পেলেও তারা নানান ছুতো নাতায় দেরি করেন। 'আরো ভালো' পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
বাংলাদেশের অবস্থা সম্ভবত এখনো অতটা খারাপ হয়নি। কিন্তু হচ্ছে। আয়্যাম নট শিওর, তবে কয়েক বছর পরে যদি বাংলাদেশে এই বিষয়ে জরিপ করা হয়, খবরটা হয়তো এরকম বেরোবেঃ 'বিয়ের বয়স পেরিয়ে গেছে ১ কোটি বাংলাদেশি তরুণীর'।

বুধবার, ৯ আগস্ট, ২০১৭

ছার, রুগীরে কলা খাওয়ান যাইবো নি?

ছার, রুগীরে কলা খাওয়ান যাইবো নি? আপেল? কমলা?
হাসপাতালে এলেই রোগীদের কেন যেন আপেল কমলা খাওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। যারা বছরের কোন একটা দিনও আপেল কমলা খেয়েছে কিনা সন্দেহ, তারাও হঠাৎ করে আপেল কমলার নিয়মিত খাদক হয়ে যায়।
GIT প্যাথলজি পড়ানোর সময় জিল্লুর রহমান স্যার সবার আগে বোর্ডে একটা সিলিন্ডার আঁকতেন। সিলিন্ডারের উপরে এঁকে দিতেন মুখ, আর নিচে দিতেন .... 
বলতেন, এইটাই হলো মানুষ। সিলিন্ডারের একপাশ দিয়ে খায়, আর অন্যপাশ দিয়ে বের করে...
তারপর স্যার সিলিন্ডারের দুইপাশে টান দিয়ে হাত পা বানিয়ে দিতেন। মানুষের খাওয়ার জন্যই নাকি এই হাত পা গুলো দরকার!!
হাসপাতালে ডিউটির সময় স্যারের কথা প্রায়ই জাজ্জ্বল্যমান সত্য হয়ে ধরা দেয়। একজন ডাক্তারকে প্রতিদিন যতবার রোগীর খাদ্য গ্রহণ, বর্জন ও ত্যাগ বিষয়ক বয়ান দিতে হয়, মূল রোগ সম্পর্কে সম্ভবত অতবার কথা বলতে হয়না। রোগ নিয়ে কেউ চিন্তিত নয়, সবাই চিন্তিত থাকে রোগীর খাওয়া আর ত্যাগ নিয়ে।
মণিষীরা বলে গেছেনঃ ভোগে নয়, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। আসলে কিসে প্রকৃত সুখ? ভোগে, নাকি ত্যাগে? রোগীর এটেন্ড্যান্টদের খাদ্য বিষয়ক উৎকণ্ঠা দেখে এবিষয়ে আমি প্রায়শই ধন্দে পড়ে যাই।

মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০১৭

আমি কিন্তু একটু অন্যরকম'!!

মানুষের ভেতর কিছু অদ্ভুত রকম বৈপরীত্য কাজ করে। সে চেষ্টা করে অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা, একটু অন্যরকম হবার। যেমন, অনেকেই বলেন- 'ভাই, আমি কিন্তু একটু অন্যরকম'!!
আবার একই মানুষ যখন আরেকজনকে খুঁজে পায়, যার সাথে তার আচরণে, কথায়, বা চিন্তায় অনেক মিল- তখন সে খুশি হয়। বলেঃ আরে আরে! তুমি তো দেখি একেবারে আমার মতন!!! আর নিজের মত কাউকে পেলে মানুষ যেন তাকে অজান্তেই ভালোবেসে ফেলে।
বেশ অদ্ভুত মানুষের চিন্তাধারা। অদ্ভুত 'মানুষ' নামক এই প্রাণীটার মন।

বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭

মানুষ অকৃতজ্ঞ প্রাণী

ধরুন আপনি একজনের খুব উপকার করেন। যখনই সে কোন সমস্যায় পড়ে, আপনি জানতে পারলে সাধ্যমত সহযোগিতা করেন।
তারপর একদিন, কোন একটা সমস্যায় আপনি তাকে কোনভাবে হেল্প করতে পারলেন না।
ব্যস, আপনার এতদিনের সবকিছু এক মুহূর্তেই শুন্য হয়ে গেলো। হয়তো আপনাকে এও শুনতে হবে, 'তুমি তো কখনোই আমার কোন উপকার করনি!!!'
আমরা নিজেরাও কখনো কখনো হয়তো এরকম করে থাকি। মানুষ অকৃতজ্ঞ প্রাণী। একবার আমাদের চাওয়ামত না পেলে আমরা আগের সব উপকার নিমেষেই ভুলে যাই।
উপকারীর প্রতি কৃতজ্ঞ থাকাটা খুব খুব জরুরি। এতে করে উপকারী মানুষটা আরো বেশি উপকার করার উৎসাহ পায়। পৃথিবীতে এমনিতেই উপকারী মানুষের সংখ্যা বেশি নয়। আর আমাদের অকৃতজ্ঞতা প্রতিদিন তাদের সংখ্যা আরো কমিয়ে দেয়।
২.
পারস্পরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এরকম হয়ে থাকে। হয়তো আপনার সাথে আমার দীর্ঘদিনের সুসম্পর্ক। তারপর আমার কোন একটা কথায় হয়তো আপনি কষ্ট পেলেন। ব্যস, আমার সাথে আপনার আগেকার সবকিছু মূল্যহীন হয়ে গেলো!!!
পরদিন থেকে আপনি আর আমি সম্পূর্ণ আলাদা!!!
এরকম হওয়াটা মোটেও উচিত নয়। মানুষের প্রতিটা কাজকে আমি আলাদাভাবে বিচার করার পক্ষে। আজ যদি আপনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে থাকেন, তার জন্য আজ হয়তো আমি অনেক কষ্ট পেতে পারি। কিন্তু তাই বলে আমার সাথে আপনার অতীতের অসংখ্য ভালো ব্যবহার, অসংখ্য উপকার ভুলে যেতে পারি না।
কোন একটা কাজ একজন মানুষের সমগ্র জীবনকে সংজ্ঞায়িত করতে পারে না। মানুষের জীবন কখনোই এতটা ঠুণকো নয়।

নৈঃশব্দের গান

রাত্রির গভীরতা আমাকে শোনায় নিয়ত
নৈঃশব্দের গান।
কন্ঠের ব্যবহার নেই, বাদ্যযন্ত্র নেই, তবু;
কী এক নীরব সুরের মূর্চ্ছণায় একের পর এক-
বেহুঁশ হতে থাকে পৃথিবীর মানব মানবীরা।
আর
শেষ রাগটুকু শুনবার আশায়,
আমি শুধু একা একা- নিপাট অন্ধকারের ভেতর,
ব-হু কষ্টে চোখ খুলে বসে থাকি।

বুধবার, ২ আগস্ট, ২০১৭

খরা

মনে হয়, পাষাণ হয়ে গ্যাছে আমার হৃদয়!
বোধহয়, নিদারুণ খরা লেগে আছে,
দু'চোখের ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ডে।
এই ঘোর বর্ষার বর্ষণমূখর আকাশের মত 
আমারও মাঝে মাঝে খুব খুব কাঁদতে ইচ্ছে হয়।
মন চায়-
আমারও ভেতর তিলে তিলে গড়েছে যে নগর
প্লাবিত হোক তার সকল গলিপথ।
অশ্রুর বন্যায়। পিচঢালা রাজপথ হোক সব নদী,
ঢাকা ও চট্টগ্রামের মত নৌকা চলুক-
জলাবদ্ধ হৃদয়ের পথে ঘাটে।
আফসোস!
পাষাণ হয়ে আছে আমার হৃদয়।
কোন বেদনাই এইখানে আজ আর হয়নাকো মেঘ!
জানিনা কাটবে কবে এই খরা,
জাগবে এ হৃদয়ে ফের-
জলোচ্ছাসের মত ভীষণ আবেগ!

মঙ্গলবার, ১ আগস্ট, ২০১৭

কবিতা কোথায় হারালে?

বহুদিন কবিতার দেখা নাই।
একসাথে চলতে চলতেই
হঠাৎ সে যে কোথায় হারিয়ে গেলো,
নিদারুণ ব্যস্ততায়-
খোঁজ রাখতে পারিনি একদম।
এখন কি তাকে খুঁজে পাওয়া যাবে? এই রাত্রিতে?
এই ঝড়ো হাওয়ায়?
বিজলি ঝলকের ক্ষণিক আলোকে
মিলবে কি দেখা তার?
তোমরা কেউ কি তাকে দেখেছো কোথাও?
কেউ কি জানাবে তাকে সনির্বন্ধ অনুরোধ আমারঃ
পুরনো দিনের কথা ভেবে- যেন সে ফিরে আসে-
পুরনো আবাসে!
উপেক্ষায় অবহেলায়,
তিলেতিলে জমে ওঠা সকল অভিমান তার
টুকরো টুকরো করে ভাঙবো বলে
আমি আজ-
কালিভরা কলম হাতে বসে আছি।