এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ৩০ জুন, ২০১৩

অর্থোডন্টিক্স

কোন পারফিউম টা ইউজ করবে তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে টিপু । এরকম তার প্রায়ই হয় । মাঝে মাঝে শার্ট প্যান্ট ম্যাচ করা নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগে । অনেকেই আছে – যা পরে তাতেই মানায় । টিপুর ধারণা, সে ঐরকম না । তার হাইট কিছুটা কম । কিছুদিন আগেও হ্যাংলা পাতলা ছিল । দুই তিন মাস হলো – একটু ওজন বেড়েছে । তাতেও বিপদ কম না । শরীর কিছুটা হৃষ্টপুষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু একই সাথে ভুঁড়িটাও উঁকিঝুঁকি দেয়া শুরু করেছে । সময় করে জিমে যাওয়ার কথা প্রায়ই ভাবে , কিন্তু আজ কাল করে আর জিমে যাওয়া হয়নি ।

আজ টিপুর জীবনে একটি বিশেষ দিন । আজকের দিনটি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে । আজ প্রথম সে নিজের জন্য কনে দেখতে যাচ্ছে । টিপু জানে , এই সিদ্ধান্তটা কত কঠিন । বিয়ে করবে কিনা – এই সিদ্ধান্ত নিতেই যুবকদের কেটে যায় কয়েক বছর । এস্টাবলিশ হতে হবে, তারপর বিয়ের চিন্তা । এই করে করে বেশিরভাগ ছেলের বয়স ত্রিশের কোঠায় চলে যায় । টিপুদের মত টানাটানির পরিবারের ছেলেদের জন্য সেটা আরো কঠিন । নিজেকে এস্টাবলিশ করার চিন্তা, ছোট ভাইবোনের পড়ালেখার চিন্তা , বাড়িঘর গোছগাছ করে একটা মানানসই পর্যায়ে আনা, সব করতে করতে একটু বেশিই দেরি হয়ে যায় ।

টিপু একজন ডেন্টিস্ট । ডেন্টিস্টদের জন্য আরো একটা চিন্তা থাকে – নিজের একটা চেম্বার । ডেন্টাল চেম্বারের খরচ অনেক । একটা ভালো ডেন্টাল চেয়ার কিনতেই লাগে চার-পাঁচ লাখ টাকা । ডেকোরেশন , সহকারী টেকনিশিয়ান নিয়োগ , রিসিপশনিস্ট নিয়োগ – অনেক ঝামেলা । নিজের একটা চেম্বার না হওয়া পর্যন্ত নিজেকে মনে হয় ‘ভাসমান’ , শিকড়বিহীন ।

ছয়মাস হয়েছে টিপুর পোস্টগ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হবার । সে পোস্টগ্রাজুয়েশন করেছে ‘অর্থোডন্টিক্স’ বিষয়ে । আঁকাবাঁকা- উঁচুনিচু দাঁত স্বাভাবিক করার সাবজেক্ট হলো অর্থোডন্টিক্স । এই বিষয়টি নেয়ার পেছনে টিপুর নিজের জীবনের কাহিনী আছে । আসলে তার ডেন্টিস্ট হবার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ঐ বিষয়টি । তার বড়বোনের নাম লিলি । লিলি আপা ছোটবেলা থেকেই দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী ছিলেন । কিন্তু সমস্যা হলো দুধ-দাত পড়ে যাওয়ার পর । তার স্থায়ী দাতগুলি উঠল উঁচুনিচু হয়ে । বিয়ের সময় খুব ঝামেলা হলো । বরপক্ষ প্রথমে ছবি দেখে পছন্দ করে , কিন্তু কনে দেখতে এসে আর পছন্দ করে না । মেয়ের দাঁত উঁচুনিচু, কথা বলার সময় দেখতে ভালো দেখায় না । আপা গোপনে গোপনে কাঁদে । টিপু তখনো ছোট । ক্লাস নাইনে পড়তো । তার কিছু করার ছিল না । কিন্তু একটা বিষয় তার মনের ভেতর গেঁথে যায় – দাঁত নিয়ে পড়াশোনা করবে । বছর দুয়েক অনেক দেখাদেখির পর আপার বিয়ে হয় ।

বিডিএস পাস করার পর কিছুদিন একজন স্যারের চেম্বারে কাজ করেছিল টিপু । স্যার অর্থোডন্টিক্সের সহকারী অধ্যাপক । স্যারের চেম্বারে অনেক রোগী আসত । বেশিরভাগই ছোট বাচ্চা । বাবা মা- রা এখন অনেক সচেতন । বাচ্চাদের দাঁতের ব্যাপারেও অনেকেই সচেতন । হাসপাতালে বা স্যারের চেম্বারে নিয়ে আসেন । লিলি আপার মত কেস টিপু তখনো পায়নি । পোস্টগ্রাজুয়েশন করার জন্য যখন সে ঢাকা যাওয়ার বন্দোবস্ত করছে, এমন সময় একজন পেশেন্ট এলো । মেয়ে ভার্সিটিতে অনার্স পড়ে । এমনিতে চেহারা সুন্দর- কিন্তু দাঁতের সমস্যার কারণে সৌন্দর্য ঢাকা পড়ে যায় ।

ঐ পেশেন্টের প্রাথমিক কাজগুলো টিপু করেছিল । এসব কাজ দীর্ঘমেয়াদী । দুই তিন বছর লেগে যায় । টিপু পরে আর খোজখবর রাখতে পারেনি । ব্যস্ত জীবন- পেছনের কথা এত মনে রাখার কীইবা দরকার ? পেশেন্টের নামটা অবশ্য আবছা আবছা মনে পড়ে – খুব সম্ভবত ‘নীলা’ নাম ছিল । চার-পাঁচ বছর আগের কথা । কে জানে, ‘নীলা’ না হয়ে ‘লীনা’ও হতে পারে !

‘নেসার তুমি কই ? আমি রেডি হয়ে বসে আছি – তোমার খবর নাই । দেরি করার অভ্যাসটা তোমার গেল না । তুমি বুঝতে পারছ – আমি কী রকম টেনশনে আছি ?’
টিপু তার সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড নেসারকে ফোন করে নিজের বিরক্তি ঝাড়লো । বিরক্ত না হয়ে উপায় আছে ? নেসারের আসার কথা সাড়ে তিনটায় , এখন চারটা বিশ বাজে- তার দেখা নাই । সে এখনো ঘুমাচ্ছে । কিন্তু যত দেরিই করুক , তাকে ছাড়া তো আর যাওয়া যাবে না । টিপুর কনে দেখা নিয়ে নেসার ভয়াবহ পরিকল্পনা নিয়েছে । কনে দেখতে যাবে এমন সময়- যাতে নাস্তা সেরে আলাপ সালাপ করার পর ডিনারটাও সেরে আসা যায় । বরকে তো আর যেমন তেমন খাওয়াবে না । কনে পছন্দ হোক আর নাহোক , সেটা টিপুর ব্যাপার । কিন্তু খাওয়াটা হতে হবে সেইরকম । টেবিল থেকে খুব বেশি কিছু ফেরত দেয়া হবে না । খাওয়া ভালো হলে ইয়েস ভোট , মোটামুটি হলে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকবে, আর খাবার পছন্দমত না হলে ‘নো’ ভোট ।

বন্ধুমহলে খাদক হিসেবে নেসার এখনো তার অদ্বিতীয় অবস্থান ধরে রেখেছে । অবশ্য পুরো মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে তার জুড়ি কেউ ছিল না । গত দশ বছরে তার রেকর্ড কেউ ভাংতে পারেনি ।
গাড়ি নিয়ে চলে এসেছে কনে দেখা কমিটির অন্যতম সদস্য – সেলিম । আর দেরি করা যায় না । বের হওয়া যাক । নেসারকে তার বাসা থেকে তুলে নিতে হবে ।

.................................

পকেট থেকে মেয়ের বায়োডাটাটা বের করে আরেকবার দেখে নিল টিপু । তারা এখন বসে আছে মেয়ের বাসার ড্রয়িং রুমে । নামটা দেখে মনে মনে কয়েকবার আওড়ালো । তাহেরা নওশীন । মেয়ের ছোটবোন এসে একটু আগে দুষ্টুমি করে গেছে । বলে গেছে – ‘নীলু আপু কিন্তু আপনাকে চেনে !’ টিপুর বুক ধ্বক ধ্বক করছে । কীভাবে চেনে ?

অবশেষে কনে এসে ঢুকলো । সাথে তার বড় খালাতো বোন । মুখের দিকে তাকিয়েই টিপু বুঝে ফেললো , এই সেই পেশেন্ট । টিপুর প্রথম পেশেন্ট । দাঁত এখন ঠিকঠাক , খুবই সুন্দর লাগছে । হাসিটা তো টিপুর কয়েকটা রিবস (বুকের হাড়) ভেঙ্গে দিয়ে গেল !

বাম হাতে তিনটা চিমটি অনুভব করলো নেসার । মানে তিনটা প্লাস । +++ ।
অর্থাৎ ঘটনা এখানেই শেষ । আর কনে দেখতে যাওয়া হবেনা । সিরিজ প্ল্যান ভেস্তে গেল নেসারের ।

নেসার দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো । এখন প্রস্তুত হবার সময় । টাইম টু গেট রেডি ফর ব্যাটল । টেবিল থেকে কোন ডিশের সামান্য ঝোলও আজ ফেরত দেয়া হবেনা ।

-অর্থোডন্টিক্স / ৩০-০৬-২০১৩

শনিবার, ২৯ জুন, ২০১৩

কিংকর্তব্যবিমূঢ়

‘আজি ঝরো ঝরো মুখর বাদল দিনে
জানিনে জানিনে , কিছুতে কেনযে মন ভরে না
ঝরোঝরো মুখর বাদল দিনে ......’
গুনগুন করে গাইতে গাইতে আনমনে হাঁটছিল জুয়েল । ডাঃ জুয়েল । আগে শুধু জুয়েল বললেই হতো । এখন আর তাতে কাজ হয়না । জুয়েল নিজে কখনো নামের সামনে ডাক্তার লেখেনা , তার ভালো লাগেনা । মনে হয় ‘জুয়েল’ নামটা ডাক্তার শব্দের আড়ালে ঢাকা পড়ে যাচ্ছে । কিন্তু সবাই এখন ডাঃ জুয়েল বলেই চেনে । ফোনে যদি কখনো সে বলে –‘ আমি জুয়েল বলছি’, ওপাশ থেকে জবাব আসে ‘ডাঃ জুয়েল’ ? জুয়েলের বিরক্ত লাগে । কখনো কখনো ভালোও লাগে । অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে বোধহয় ।

আষাঢ় মাস শুরু হয়েছে । আজ কত তারিখ সেটা অবশ্য জানা নেই । মাকে ফোন করলে ঠিকই বলে দেবে । বাংলা মাসের কত তারিখ , চাঁদের কত তারিখ – মা এগুলো ঠিক ঠিক হিসাব রাখেন । জুয়েল প্রতি মাসে ফোন করে জেনে নেয় – পুর্নিমার রাত কবে । ঐদিন কোন ডিউটি সে করেনা । সেই রাতটা যেন ‘শুধুই আমার’ ।
জোছনায় একা একা হাঁটে, কবিতা আবৃত্তি করে । মাঝে মাঝে নিজেও লিখে ফেলে দুয়েকটা কবিতা ।

সকাল বেলা এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে । রাস্তার খানাখন্দে জমে আছে বৃষ্টির পানি । গাড়ি চলাচলের কারণে পুরো রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে আছে । তবু রিক্সা নিতে ভালো লাগছে না । রিক্সায় ঘুরতে ভালো লাগে , কিন্তু মাঝে মাঝে মনটা খচ খচ করে । অমানবিক মনে হয় । আগেকার দিনে কলকাতায় একজন মানুষ আরেকজন মানুষকে মাথায় করে খাল পার করে দিত । রিক্সাকে জুয়েলের কাছে সেটারই একটা উন্নত ভার্সন মনে হয় । একজন মানুষ রিক্সায় বসে থাকবে , আরেকজন মানুষ সেই রিক্সা টেনে নিয়ে যাবে- এটা কি ঠিক ? আজকাল অবশ্য বেশ কিছু ব্যাটারিচালিত রিক্সা বের হয়েছে । ভালোই ।

জুয়েল আজ পড়েছে ফর্মাল পোষাক । একটা বেসরকারি মেডিকেলে ‘মেডিকেল অফিসার’ হিসেবে যোগ দিয়েছে আজ থেকে । তরুণ ডাক্তারদের জীবনটা যে কতটা চ্যালেঞ্জিং- কেউ বোঝে না । সাধারণ মানুষ সব ডাক্তারকেই এক পাল্লায় মাপে । ডাক্তার মানেই যেন ‘টাকার থলি’ ।
আত্মীয় স্বজনদেরও অনেক প্রত্যাশা । ছেলে ডাক্তার হয়েছে , অনেক টাকা পয়সা কামাবে । সবার জন্য ফ্রি চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে । সবার দেখাশোনা করবে । টাকাপয়সার তো আর অভাব নাই !
পোস্ট গ্রাজুয়েশনের জন্য পড়াশোনা, গাধার মত খাটুনি খেটে বিনেপয়সায় ট্রেনিং, নিজের পেট চালানো , পরিবারের দিকে নজর দেয়া সব মিলে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি । জুয়েল অল্পে সন্তুষ্ট । জীবন চালানোর জন্য মোটামুটি ব্যবস্থা হলেই সে খুশি । হাসপাতালে তাকে সপ্তাহে ৭ টা ডিউটি করতে হবে । হাজার বিশেক টাকা পাওয়া যাবে । টেনেটুনে চলে যাবে হয়তো ।

সামনে রাস্তার মাঝখানটায় পুরোটাই ঢালু । ওখানে পানি জমে আছে । চরমভাবে ঘোলা হয়ে গেছে । একপাশে কয়েকটা ইট একটু উঁচু হয়ে আছে । পা টিপে টিপে সেগুলোর ওপর দিয়েই পার হতে হবে । কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে জুয়েল সুযোগ পেল পার হবার । কয়েকটা ইট তখনো বাকি আছে , এমন সময় একটা কার সাৎ করে চলে গেল । কাঁদা পানি ছিটকে এসে পড়লো জুয়েলের কাপড় চোপড়ে । মহা বিরক্ত হয়ে কারের দিকে তাকালো জুয়েল । পাঁচ ছয় বছরের একটা ফুটফুটে বাচ্চা জানালা দিয়ে মুখ বের করে হিহি করে হাসছে । ড্রাইভারকে গালি দিতে গিয়েও থেমে গেল জুয়েল । নাহ । বাচ্চাটা মজা পেয়েছে, এটাই বা কম কিসে !

....................................

বাসায় পৌঁছুতে আরো এক কিলোর মত হাঁটতে হবে । জুয়েল ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে লাগলো । সামনে রাস্তার একপাশে সেই কারটা দাঁড়িয়ে । ব্যাপার কি ? বাসা মনে হয় এখানেই । কিছুই বলবে না, আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সে । তাই নির্বিকার ভাবে উদাস ভঙ্গিতে হাঁটছিল । কারের পাশে পৌছতেই দরজা খুলে পিচ্চি ছেলেটা এসে জাপ্টে ধরলো ।
‘চাচ্চু’, ‘আমি খুব সরি । আপনি কষ্ট পেয়েছেন তাই না ? আমাকে মাফ করে দিবেন । আমাদের বাসায় যাবেন চলুন’ ।
জানালা খুলে তাকিয়ে আছে একজন মহিলা, মুচকি হাসছেন । পিচ্চিটার মা হবে হয়তো ।
জুয়েল কী করবে বুঝতে না পেরে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ।

- কিংকর্তব্যবিমূঢ় / ২৯-০৬-২০১৩

শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৩

ইশারা

চারিদিকে থই থই জলের আধার
ইশারা করেছিল ঝাপিয়ে পড়তে তখনি
বলেছিল, ‘আকন্ঠ ভিজিয়ে শীতল করে দেবো’ ।

পায়ের নিচে কাঁদা ছিল , ছিল চোরাবালি
সেকথা বলেনি কেউ । বেকুব আমি
জলের ইশারা বুঝেছি , কাদার আহ্বান বুঝিনি !

আকাশে কালো মেঘ ইশারা দিয়েছিল
নেমে এসো খোলা প্রান্তরে
‘এখনি গলে যাবো আমি’
‘প্রতিটি লোমকূপে জাগিয়ে দেবো অচেনা শিহরণ’
‘বৃষ্টির কোমল পরশে’ ।

বজ্রের হুংকার ছিল , বিজলির হাতছানি
সেকথা বলেনি কেউ । বেকুব আমি
মেঘের ইশারা দেখেছি , বজ্রের আহ্বান বুঝিনি !

আষাঢ়ের কদম ফুল মিটিমিটি হেসেছিল
‘এসো নিয়ে যাও আমায়’
‘প্রিয়ার হাতে তুলে দিয়ে তাকিয়ে থেকো একটি মুহুর্ত’
‘অবাক চোখে’ ; বেকুব আমি
কদম ফুল এনে রেখেছিলেম টেবিলের ফুলদানিতে ।
দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সাদা পাপড়িতে – ভেবেছি আনমনে
কে আমার প্রিয়ে, কোথায় ?

আমার বোকামিতে আমি মুগ্ধ
ন্যাড়া বেলতলায় যাক বা না যাক -
আমি বারবার ঝাপিয়ে পড়বো নীল শান্ত জলে
ভিজে ভিজে জ্বর বাঁধিয়ে ফেলবো
অঝোর বর্ষায় । ছুটে যাব কদমের আহবানে
এতটুকু অব্যক্ত ইশারায় !

- ইশারা / ২৮-০৬-২০১৩

পাগলা কুত্তা

কোনমতে নাস্তা খেয়েই ল্যাপটপটা চার্জারের সাথে লাগিয়ে শুয়ে পড়লো অপু । চট্টগ্রাম থেকে পঞ্চগড় – দীর্ঘ ১৮ ঘন্টার জার্ণি শেষ হয়েছে কিছুক্ষণ আগে । এরমধ্যে ফেসবুকে ঢোকা হয়নি অপুর । মনটা খুব আকুপাকু করছিল । প্রতি ঘণ্টায় একবার ফেসবুকে ঢুঁ না দিলে তার ভালো লাগে না । নেশা হয়ে গেছে ।
মোবাইল , ল্যাপটপ দুটোরই চার্জ মাঝপথে শেষ হয়ে গিয়েছিল । মহা বিপদ ।

১০ মিনিট হয়েছে কি হয়নি- বাইরে শোরগোল শোনা গেল । এলাকার ছেলেপেলেরা হইহই করে দৌড়াচ্ছে । বাড়ির কাজের ছেলেটা হাপাতে হাপাতে এসে বলে গেল – ‘ অপু ভাইয়া আসেন, পাগলা কুত্তা বাইর হইছে । আইজ অইটাক মারি ফেলামো’ ।

অপুর রক্তও ছলকে উঠলো । পাগলা কুকুর মারাটা গ্রামের ছেলেপেলেদের কাছে একটা মহা বীরত্বের কাজ । ছোটবেলায় একবার পাগলা কুত্তাকে তাড়া করার স্মৃতিটা এখনো চোখে ভাসে । আম্মার জন্যে খুব একটা সুবিধা করা যেত না ।

বাইরে দৌড়াদৌড়ির শব্দ পাওয়া যাচ্ছে । কিন্তু এতবড় ঘটনা ফেসবুকে স্ট্যাটাস না দিলে চলবে কীভাবে ? অপু তাড়াতাড়ি স্ট্যাটাস দিল ‘আইজ পাগলা কুত্তাডারে মাইরা ফালা ফালা কৈরা ফালামু’, ধর হালারে, মার !!’’
আঙ্গিনা থেকে একটা কাঠের চেলা নিয়ে অপুও দৌড় লাগালো । বীরত্বের কাজে অংশগ্রহণ করতে না পারলে জীবনটাই বৃথা কিনা !!

.............................................

তিনদিন পর ।
হঠাৎ অপুদের বাড়ির সামনে পুলিশের গাড়ি এসে উপস্থিত । কিছু বুঝে ওঠার আগেই তড়িৎ বেগে বাড়িতে ঢুকে অপুকে গ্রেপ্তার করে ফেললো পুলিশ । অপুর বড় ভাই এগিয়ে এলেন । অভিযানের নেতৃত্ব দানকারী এসআইকে জিজ্ঞেস করলেন , ‘ভাই সমস্যা কি ? ও আমার ছোট ভাই, চট্টগ্রামে থাকে । কয়েকদিনের জন্য বাড়িতে এসেছে । কী করেছে অপু ? ওকে ধরছেন কেন ?’
- আপনার ভাই ছাত্রলীগকে খুন করার হুমকি দিয়েছে ।
- কন কি ? কখন কোথায় ?
- ফেসবুকে , তিনদিন আগে ।
- কী লিখেছিলিরে অপু ? দেখি ।
অপু স্ট্যাটাসটা দেখালো । কেন দিয়েছিল সেটাও বললো । বড়ভাই অবাক হয়ে পুলিশের এসআইকে বললেন – ‘ভাই আপনাদের ভুল হচ্ছে । গ্রামে একটা পাগলা কুত্তা বের হয়েছিল । অপু ঐটার কথা লিখেছিল’ ।
অপুকে গাড়িতে তুলতে তুলতে পুলিশের এসআই বললেন –‘ ভাই কথা বাড়াইয়া লাভ নাই । পাগলা কুত্তা কাদেরকে বলে আর হায়েনা কাকে বলে দেশের সবাই এখন এইটা জানে’ । 

বাকিটা আদালতেই দেখা যাবে ।

- পাগলা কুত্তা/ ২৮-০৬-২০১৩

বৃহস্পতিবার, ২৭ জুন, ২০১৩

শিকার

‘বদ পোলাডা সারাদিন কোথায় যে থাকে আল্লা মালুম । কোন সময় ডাক দিয়া পাই না’ ।
উঠান ঝাড়ু দিতে দিতে গজগজ করছিলেন আনোয়ারা বেগম । তার একমাত্র ছেলে বাপ্পির উদ্দেশ্যে এই বকবকানি । প্রতিদিন বিকাল বেলা শোনা যায় একই কথা । স্কুল থেকে ফিরে ভাত খেয়েই ছেলে উধাও হয়ে যায় ।
আনোয়ারা বেগমের স্বামী লোকমান হোসেন রিক্সা চালান । সেও সকালেই পেট পুরে পান্তা ভাত খেয়ে রিক্সা নিয়ে বের হয় । তার ইচ্ছা বাপ্পি আরেকটু বড় হলেই গণি সাহেবের কাছ থেকে লোন নিয়ে আরেকটা রিক্সা কিনবে । ছেলেসহ রিক্সা চালাবে । তার একার রোজগারে চলে না । কোনমতে সংসার টানা । ছেলেটা মাঝে মাঝে এটাসেটা আবদার করে, পুরণ করতে পারেনা লোকমান । গণি সাহেব এই এলাকার একজন সজ্জন ব্যক্তি । গরীবদের যেকোন সমস্যায় তিনি হাত বাড়িয়ে দেন । তার কাছে চেয়ে বিমুখ হতে হয় না ।

লোকমান বের হয়ে যাবার কিছুক্ষণ পরেই ঘর থেকে বের হয়ে যায় বাপ্পি । সে এবার চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র । বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের স্কুলে পড়ে । স্কুল থেকে ফিরে দুপুরের খাবার খেয়ে সে আবার বেরিয়ে পড়ে । কখনো খেলাধুলা করে , কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর ঘুরে বেড়ায় । বড় বিল্ডিং গুলোর সামনে দাড়িয়ে উচ্চারণ করে পড়ে – খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগ, ইংরেজী বিভাগ, গণিত বিভাগ আরো অনেক কিছু । শিক্ষকদের নাম দেখে ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে থাকে এক দৃষ্টে । খুব ভালো লাগে তার । মাঝে মাঝে কেউ কেউ ছোটখাট কাজ করতে দেয় । সে খুশিমনে করে দেয় । স্যার বলে ডাকে । কেউ কেউ তাকে দিয়ে সিগারেট আনায় । বাপ্পি অবাক হয়- বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা সিগারেট খায় কেন ? সিগারেটের প্যাকেটে সে লেখা দেখেছে – ‘ধুমপান হৃদরোগের কারণ’ ।
কোন কোনটাতে লেখা থাকে ‘ধুমপান মৃত্যু ঘটায়’ ।
ছাত্ররা কি এগুলো দেখে না ?

কিছু কিছু স্যার খুব ভালো । রফিক স্যার তাদেরই একজন । আসরের নামাজের পর রফিক স্যারকে মসজিদের সামনে পাওয়া যায় । বাপ্পি খুব খেয়াল করেছে- রফিক স্যার একদিনের জন্যও আসরের নামাজ মিস করে না । রফিক স্যার একদিন বাপ্পিকে বললেন- বাপ্পি, তুমি আমাকে স্যার না বলে ভাই বলবে । আমি তোমার বড় ভাই ।
বাপ্পি তবু রফিক স্যারকে ‘ভাই’ বলতে পারে না । তার লজ্জা লাগে । কিন্তু রফিক ভাই তাকে দেখলেই কাছে ডাকেন । চকোলেট , চিপস খেতে দেন । পরিবারের খোজখবর নেন । বাপ্পির খুব ভালো লাগে ।
যেদিন চকোলেট খেতে ইচ্ছে করে , সেদিন বাপ্পি আসরের নামাজের সময় মসজিদের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে । রফিক ভাই অনেক সুন্দর করে কথা বলেন । কুরআন হাদীস জানেন । বাপ্পি দেখেছে , একদিন রফিক ভাই মসজিদের সামনে বসে আরেকজনের সাথে কথা বলছিলেন । কত সুন্দর করে কত কিছু যে বললেন । বাপ্পি পেছনে বসে সব শুনেছে । রফিক ভাই টের পাননি । রফিক ভাই কুরআনের আয়াত মুখস্ত বলে গেলেন , আবার বাংলা অর্থ বলছিলেন । মাঝে মাঝে ইংরেজীতেও কথা বলছিলেন , সেগুলো অবশ্য বাপ্পি বুঝতে পারে নি ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের একটি পথে আনমনে হাঁটছিল বাপ্পি । অনেক কথা মনে পড়ছিল তার । একদিন মসজিদের সামনে গিয়ে রফিক ভাইয়ের জন্য দাঁড়িয়ে থাকলো । কিন্তু রফিক ভাইকে পেল না । পরপর কয়েকদিন দাড়ানোর পরও রফিক ভাইকে পেল না । একদিন সাহস করে- রফিক ভাইয়ের সাথে অনেকবার দেখেছে এরকম একজন কে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো – স্যার, রফিক স্যার নামাজে আসেন না কেন ?
তার প্রশ্ন শুনে থমকে দাঁড়িয়েছিলেন রফিক ভাইয়ের বন্ধু । বাপ্পিকে একদিকে নিয়ে বলেছিলেন- বাপ্পি, রফিক ভাই কোথায় আছেন কেমন আছেন কেউ জানে না । তিনি আর ফিরে আসবেন কিনা তাও কেউ জানে না । তাঁকে গুম করা হয়েছে । বলতে বলতে রফিক ভাইয়ের বন্ধু কেঁদে ফেলেন । বাপ্পিও সেদিন ডুকরে কেঁদে উঠেছিল । বাপ্পি ভাইর মত মানুষকে কে গুম করবে ? তারা কি মানুষ না ?

বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক আন্দোলন হলো । মিছিল মিটিং হলো । রফিক ভাইকে তবু পাওয়া যায়নি । মসজিদের সামনে গেলে বাপ্পির মনটা আকুপাকু করে রফিক ভাইয়ের জন্য । রফিক ভাই কি আর ফিরে আসবে না ?

- হেই বাপ্পি , কই যাস ? কাল সেমিফাইনাল খেলা , মনে আছে তো ? ঠিক সময় মত আসবি কিন্তু । দেরি করবি না ।
বাপ্পিকে দেখে চিৎকার করে বললো ওর বন্ধু মনির । বাপ্পি কোন উত্তর দিল না । নির্বিকার মনে হাটতেই লাগলো ।

.............................................

‘আনোয়ারা বু , ও আনোয়ারা বু । তোর পোলা গুলি খাইছে গো’ ।
ভার্সিটিত সরকারের দলের ছেলেরা দুই দলে গুলাগুলি করিছে । তোর পোলায় গুলি খাইছে আনোয়ারা বু গো ।
আনোয়ারা বেগমের হাত থেকে ঝাড়ুটা পড়ে গেল । ভার্সিটির দিকে দৌড়াতে লাগলো পাগলের মত । আমার পোলা আমার পোলা বলে চিৎকার করতে করতে রাস্তায় উঠতেই দেখতে পেল তার স্বামীর রিক্সায় বাপ্পির নিথর দেহ । বাপ্পির রক্তমাখা শরীরের দিকে একবার নজর পড়তেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল আনোয়ারা ।

(কোন ঘটনার সাথে মিল খুঁজে পেলে সেজন্য লেখক দায়ী থাকিবেন ।)
শিকার / ২৭-০৬-২০১৩

বুধবার, ২৬ জুন, ২০১৩

ট্রাভেল 2013

টাইম স্টেশন -১২১ এ বসে আছে মুন (Human Identification Number 100020003000400050006000711111 ) । অপেক্ষা করছে ট্রেনের জন্য । রিসেন্টলি কিছু সুন্দর টাইম ট্রাভেলিং ট্রেন ছাড়া হয়েছে । এগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা আগের গুলোর চেয়ে অনেক ভালো । পুরনো টাইম ট্রাভেলিং ট্রেনগুলি অনেক সময় আটকে যেত । দেখা গেল খ্রিষ্টপুর্ব ১০০০০ সালে গিয়ে আটকে আছে । চারিদিকে বিকটদর্শন জন্তু জানোয়ার ঘোরাফেরা করছে । বিরক্তিকর অবস্থা ।
হাতের বিশেষ ডিভাইসটির দিকে নজর দিল মুন । এটা তার বাবা নতুন কিনেছে তার জন্য । সর্বশেষ মডেলের ‘এনালিস-৯৯’ ডিভাইস । এটা একটা এনালাইসিস ডিভাইস । যেকোন কিছুকে এনালাইসিস করে তার সকল তথ্য মুহুর্তেই চোখের সামনে তুলে ধরবে এটা । এছাড়া এর মাধ্যমে আন্ত-সময় যোগাযোগ স্থাপন করা যায় । অতীতে কোথাও গিয়ে কোন সমস্যায় পড়লে এটার মাধ্যমে একজাক্ট লোকেশন ও টাইম জানিয়ে সাহায্য চাওয়া যায় ।
সময় দেখল মুন । এখন 22.50.43.21.06.2506 ।
অর্থাৎ ২৫০৬ সালের ২১শে জুন । এখন বাজে 22.50.43 ।
ট্রেন আসবে 23.00 তে । সে ১০ মিনিট আগেই চলে এসেছে । এই স্টেশনটা তার খুব ভালো লাগে । অনেকে অতীতের অনেক সময়ে ভ্রমণ করে , অনেক নমুনা নিয়ে আসে অতীত থেকে । মুন সেগুলো দেখে আর অবাক হয় । তার খুব ভালো লাগে । এটা পড়েছে প্লানেট আর্থ এর টেরিটরি-২৯১ এলাকায় । পৃথিবীতে এখন আর কোন দেশ নাই । পুরো পৃথিবী একটা একক সমন্বিত সিস্টেমে পরিচালিত হয় । পৃথিবীকে ভাগ করা হয়েছে বিভিন্ন টেরিটরিতে ।

মুন এস্ট্রোনোমিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র হলেও ইতিহাস নিয়ে খুবই আগ্রহী । ‘টেরিটরি-২৯১’ এর ইতিহাস ঘাটতে গিয়ে সে জানতে পেরেছে এই এলাকাটা একসময় ‘বাংলাদেশ’ নামে পরিচিত ছিল । সেটা প্রায় পাঁচশ বছর আগের কথা । সেসময়ের মানুষ ছিল খুব সহজ সরল । আবার কেউ কেউ ছিল খুব নিষ্ঠুর । তারা দুই ভাগে বিভক্ত ছিল – ভালো মানুষ , খারাপ মানুষ । মানুষে মানুষে অনেক দল-উপদল ছিল । তারা মারামারি করত । এমনকি মানুষ নাকি মানুষকেই খুন করতো ! ইতিহাসের এই অংশটা পড়ে তার গা শিউরে ওঠে । মানুষ কিভাবে মানুষ খুন করতে পারে ?
মুন ঠিক করেছে সে ২০১৩ সালের বাংলাদেশে নামবে । ঐ সময় নাকি বাংলাদেশে একদল মানুষ আরেকদল মানুষকে বিনা কারণে খুন করেছিল ! এমনকি রাস্তায় নাকি রক্তের লাল রঙ ছোপ ছোপ হয়ে নক্সা তৈরি করেছিল !

.............................................

- ভাইয়া ভাইয়া , ২০১৩ সালের মানুষগুলো কি বিশাল ছিল তাইনা ! আর কত্ত শক্তি ছিল ওদের গায়ে ! ও মাগো !
- কেন ? ওরা তো আমাদের চেয়েও দুর্বল ছিল । পুষ্টিহীনতায় ভুগতো ।
- উম্ম , আমাকে বোকা পেয়েছ ? ৪-৫ জন লোক মিলে ৯ তলা বিল্ডিং ধাক্কা দিয়ে ভেঙ্গে ফেললো । আমি জানি না ভেবেছ ?
ভ্রমণ শেষে ফিরে এসে ক্লান্ত মুন ঘুমিয়ে পড়েছিল । এই ফাঁকে তার ‘এনাসিস-৯৯’ ডিভাইসটা নিয়ে বসেছে ছোট বোন মণি । ওখানে ২০১৩ সালের বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক তথ্য, ছবি , ভিডিও নিয়ে এসেছে মুন । সেগুলোই দেখছিল মণি । ভাইয়ার সবকিছুই সে গোপনে গোপনে দেখে । মুন চোখ খোলামাত্রই শুরু করে দিয়েছে কথা ।
দেয়ালের চতুর্মাত্রিক স্ক্রিণে চোখ রাখলো মুন । সেখানে ভেসে উঠেছে ২০১৩ সালের বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অগা অহিউদ্দিনের একটা উদ্ধৃতি । ‘হরতাল সমর্থকরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে কানা প্লাজা’ ।
‘এনাসিস-৯৯’ এই ব্যক্তি সম্পর্কে এনালিসিস দিয়েছে ‘Mentally Retarded’ ।
মণি একের পর এক স্লাইড চালিয়ে যাচ্ছিল । এরপর আসলো একটা টাক মাথার লোক । এই লোক ছিলেন বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী কাল কুহিত । এই ব্যক্তি সম্পর্কে ‘এনাসিস-৯৯’ একটা তথ্যই দিচ্ছে – ‘রাবিশ’ ।
আবার চেষ্টা করলে এনাসিস-৯৯ এর স্ক্রিণে ভেসে উঠে ‘বোগাস’ ।
এর মানে কী মুন বুঝতে পারলোনা ।
একটা স্লাইডে একজন লোকের ছবি ভেসে উঠলো , নাম বাবুল হোসেন । এই ব্যক্তি বাংলাদেশের যোগাযোগমন্ত্রী ছিলেন । দুর্নীতি করে ধরা খাওয়ার পর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেন- ‘আমি সৎ লোক !’
-ভাইয়া ভাইয়া ! এই দেখো একটা বিড়াল ! কী সুন্দর !
মুন দেখলো পর্দায় একটা বিশালাকার কালো বিড়ালের ছবি । এই বিড়ালটাও নাকি ২০১৩ সালের বাংলাদেশের মন্ত্রী ছিল ! রেলপথ মন্ত্রী ! বিড়ালটার ছিল খুব টাকার লোভ । সেই সময় বাংলাদেশের কারেন্সি ছিল ‘টাকা’ ।
দুর্নীতির ‘টাকা’র বস্তাসহ ধরা পড়েছিল এই বিড়াল । বিড়াল কীভাবে মন্ত্রী হয় মুন বুঝতে পারেনা ।
এরপর স্লাইডগুলো ভয়ংকর হয়ে উঠতে লাগলো ।
চুহারা খাতুন নামের একজন কোন কারণ ছাড়াই বললো- ‘দেশের আইন শৃংখলা পরিস্থিতি যেকোন সময়ের তুলনায় ভালো !’
ভারুক খান নামের একজন এসেই বললো ‘কম খান’ ।
পাজাহান খান নামের একজন পর্দায় এসে বললো –‘চোখ তুলে ফেলবো’ ।
চিমরান সরকার নামের একজন পিঠ বেকিয়ে বললো –‘ফাঁসি চাই’ ।
বাংলাদেশের পার্লামেন্ট কেমন ছিল দেখার জন্য ক্লিক করতেই সাউন্ড হতে লাগলো ‘চুদুরবুদুর চুদুরবুদুর’ ।
আইনশৃংখলায় ক্লিক করতেই একের পর এক লাশের ছবি ভেসে উঠতে লাগলো দেয়ালের চতুর্মাত্রিক পর্দায় । চট্টগ্রামে ২ জন , চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪জন , চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ৩ জন, ঢাকায় ৫০০০, খুলনা, সাতক্ষীরা, নীলফামারি, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, কক্সবাজার সংখ্যা সংখ্যা সংখ্যা । গুলি, বোমা আর লাশ ।
খুনির পরিচয় সম্পর্কে এনাসিস-৯৯ জানাচ্ছে- ‘কুত্তালীগুলিশ’ এসব খুন করেছে । সেই সময়ের একদল নৃশংস মানুষকে ‘কুত্তালীগুলিশ’ নাম দেয়া হয়েছে ।

মুনের মাথা ঝিম ঝিম করতে লাগলো । মণিকে বন্ধ করতে বললো ডিভাইস । মণি খুব জেদি মেয়ে । সে শেষ করেই ছাড়বে । একের পর এক স্লাইড আসতেই লাগলো ।
-ভাইয়া দেখো এই ছিল প্রধানমন্ত্রী । নামটা দেখ- ভেক আচিনা ।
-দাড়াও দাড়াও । এই স্লাইডে রাখ ।
মুন বিছানা ছেড়ে উঠে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সম্পর্কে এনাসিস-৯৯ কে জিজ্ঞেস করতে লাগলো । প্রধানমন্ত্রীর হিংস্রতা গ্রেড এসেছে ১০০৭ ! তার একটি বক্তব্য এনাসিস-৯৯ হাইলাইট করলো –‘ একটা লাশের বদলে দশটা লাশ চাই’ ।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ৬ মে এই দুই দিনে হাজারের ওপরে মানুষ হত্যা করে ‘কুত্তালিগুলিশ’ বাহিনী । আহত হয় কয়েক হাজার মানুষ । একে একে সেই সব বীভৎস ছবি চতুর্মত্রিক পর্দায় ভেসে উঠতে লাগলো । মুনের মাথার ঝিমভাবটা চিনচিনে ব্যথায় পরিণত হলো । মাথা ঘুরতে লাগলো তার । দুহাতে মাথা চেপে ধরে চিৎকার করে উঠলো সে- ‘স্টপ’ ।
চমকে উঠে ডিভাইসটা হাত থেকে ফেলে দিল মণি ।

- ট্রাভেল 2013 / ২৬-০৬-২০১৩

মঙ্গলবার, ২৫ জুন, ২০১৩

খোয়াড়

সুর্য ডোবার আগে আগে একঝাক পাখি মাথার উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছিল । সেলিমদের দলের পরাগ ফুটবলে একটা উড়ন্ত কিক করলে বলটা আকাশে উঠে গেল । পাখিগুলো কিঁচিরমিচির করে উঠলো । গোলকিপার হাসানের চোখটা কিছুক্ষণের জন্য আটকে গেল সেখানে। বলের দিকে তার আর নজর নেই । সে তাকিয়ে আছে পাখিগুলোর দিকে । পাখির ঝাঁকটা পশ্চিম দিকে ঘুরে গেলে হাসানের চোখে পড়লো, সুর্য ডুবে যাচ্ছে । সে আর এক মুহুর্ত দেরি করলো না । সোজা উত্তর দিকে ছুট লাগালো । মাঝে একটা জংলার ওপাশে বাছুরটাকে খুট গেঁড়ে রেখে এসেছিল হাসান । মনের আনন্দে ঘাস খাচ্ছিল বাছুরটা । বয়স মাত্র তিন মাস । সুর্য ডোবার আগেই বাছুর নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে । নাহলে মা খুব রাগ করবে ।

হাসান এবার ক্লাস সেভেনে পড়ে । ক্লাসে তার রোল তিন । কালিকাপুর গ্রামের স্কুল থেকে অনেক বছর পরে একজন ছাত্র প্রাথমিক বৃত্তি পেয়েছে । হাসান । ট্যালেন্টপুল পায় নি , সাধারণ বৃত্তি । স্কুলের স্যাররা এতে খুবই খুশি । সেদিন হাসান অসুস্থ ছিল । স্কুলে যেতে পারেনি । স্কুলের স্যাররা সবাই মিলে এসেছিলেন হাসানের বাড়িতে । হাসানের মা আসমা খাতুন খবর শুনে হাসানকে বুকে জড়িয়ে অনেকক্ষন কেঁদেছিলেন সেদিন । হাসান বোঝেনা- এতে কান্নার কী আছে !
তিনটা ঘর নিয়েই তাদের ছোট্ট বাড়ি । মানুষ মাত্র দুজন । হাসান আর তাঁর মা । মা সেলাই মেশিন চালিয়ে সংসার চালান । আরো দুটি প্রাণ এই বাড়িতে থাকে । গরুটা , আর তার বাছুর ।

জংলা পার হয়ে অবাক হয়ে গেল হাসান । বাছুরটা নেই । খুটের গোড়ায় দড়িটা ছেড়া । হাসান বাছুরটা খুজতে শুরু করলো । জংলার আশেপাশে খুজলো বেশ কিছুক্ষণ । দৌড়ে বাড়িতে গেল । মাকে বললো । মা তাকে কিছুক্ষণ বকলেন । হাসান ঘরে ঢুকে মাটির ব্যাংকটা ভেঙ্গে ফেললো । ৬০ টাকা বেরুলো । ওগুলো পকেটে নিয়ে সে আবার বের হলো ।
পাড়ার সব বাড়িতে খোঁজ নিয়ে কোথাও খুঁজে পাওয়া গেল না । এশার আজান হয়ে গেছে । সারা বিকেল ফুটবল খেলার পর এই হাটাহাটি আর দুশ্চিন্তায় ক্লান্ত হয়ে গেল হাসান । দোস্ত রিফাতের বাড়িতে গিয়ে তাকে সব কথা বললো । রিফাতের মা তাঁকে জোর করে ভাত খাইয়ে দিলেন ।
- বাবা হাসান, পাড়ার সব বাড়িতে খুজেছ ?
- জ্বি খালা । কোথাও নেই ।
- ভাত খেয়ে রিফাত সহ পাশের গ্রামের জব্বারের খোয়াড়ে একবার যাও । হতে পারে কেউ বাছুরটাকে ওখানে দিয়ে এসেছে ।
- এতটুকু বাছুরকে খোঁয়াড়ে দেবে ?
- দিতেও তো পারে । টাকার লোভেও অনেক বদ ছেলেপেলে গরু-ছাগল খোয়াড়ে দিচ্ছে ।
দারুণ দুশ্চিন্তায় ভাত খেল হাসান । পাশের গ্রামে জব্বার খানের বাড়িতে খোয়াড় আছে । সেখানে গরু ধরে নিয়ে জমা দিলে তারা দশ টাকা দেয় । ছাগলের জন্য পাঁচ টাকা । গরু ছাড়িয়ে আনতে গরুর মালিককে গুনতে হয় ৫০ থেকে ১০০ টাকা । তারা গরুকে খাবার দেয় না । এক সপ্তাহের মধ্যে মালিকের খবর না পেলে সে গরু বিক্রি করে দেয়া হয় ।

খোয়াড়ে গিয়ে দেখলো সত্যি সত্যিই বাছুরটাকে ওখানে বেঁধে রাখা হয়েছে । খুব শক্ত করে বেঁধেছে । বাছুরটার মুখ শুকিয়ে গেছে । কতক্ষণ দুধ খায়নি ! দেখে হাসানের চোখ ভিজে উঠল । বাছুরটার গায়ে হাত বুলিয়ে দিল সে । খোয়াড়ওয়ালারা ৮০ টাকা দাবি করল বাছুরটাকে ছাড়ানোর জন্য । অনেক অনুরোধ করে ৬০ টাকা দিয়ে বাছুরটাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাড়ি ফিরলো তারা দুজন ।
বল্টুর কাজ এটা । গত সপ্তাহে বল্টুর সাথে কথা কাটাকাটি হয়েছিল হাসানের । বল্টুই বাছুরটাকে খোয়াড়ে দিয়েছে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ।
................................................

চট্টগ্রাম কারাগারের হালদা-১৮ সেলের গ্রিল ধরে ছোটবেলার সেই দিনের কথা ভাবছিল হাসান । এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করে হাসান এবার শহরের একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছে । থাকে হোস্টেলে । মা এখন বাড়িতে একা । সারাদিন সেলাই মেশিন চালান । বাবা তো মারা গেছেন সেই ছোটবেলায় , হাসান তখন ক্লাস ফাইভে পড়তো ।
দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভালো না । হাসান সেসব নিয়ে খুব বেশি চিন্তাও করেনা । সে খুব গোছালো ছেলে । কলেজে যায়, ক্লাস করে । বিকেলে বিভিন্ন বই-পুস্তক পড়ে । হোস্টেলের ছাদে উঠে মায়ের কথা ভাবে ।
মাগরিবের আযান হলে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়ে । রুমে ফিরে কুরআন তেলাওয়াত করে । কুরআন শরীফ খানা মায়ের দেয়া । ও যেদিন শহরে আসে , মা তাঁর হাতে দুইশ টাকা আর এই কুরআন শরীফটি তুলে দিয়েছিল । এই কুরআন শরীফে প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যা তেলাওয়াত করে চুমু দিতেন মা ।
মঙ্গলবার এশার নামাজ শেষে রুমে ফিরে কুরআন তেলাওয়াত করছিল হাসান । হঠাৎ কয়েকজন পুলিশ এসে ঘরে ঢুকলো । ‘এইযে পাইছি আরেকটা, কোরান পড়তেছে !’ কুরআন তেলাওয়াত রত অবস্থায় ধরে নিয়ে গেল তাঁকে । পুলিশ ভ্যানে হাসান দেখলো আরো কয়েকজনকে ধরে আনা হয়েছে ।
তিনদিন হয়ে গেল সে জেলখানায় । মা এখনো জানে কিনা কে জানে ! জানলে মা কী করবে ? ছোটবেলায় বাছুরটাকে তাঁর মাটির ব্যাংকে জমানো ৬০ টাকা খরচ করে ছাড়িয়ে এনেছিল । মা কোথায় পাবে টাকা ? এই খোয়াড় থেকে মা কি তাঁকে ছাড়াতে পারবেন ?
মায়ের কথা ভেবে হঠাৎ তার চোখ দিয়ে কয়েক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো ।

খোয়াড়/ ২৫-০৬-২০১৩

বুধবার, ১৯ জুন, ২০১৩

লিলুয়া সময়

কিছু সময় হারায় লিলুয়া বাতাসে
কিছু ক্ষণ উড়ে যায় কালবোশেখি ঝড়ে
কিছু কিছু মুহূর্ত আকড়ে থাকে মন
অক্টোপাশের মত । স্মৃতির বালুকণায় গড়ে ওঠে
ঢিবি থেকে টিলা । টিলা থেকে পাহাড়
বয়স যতই বাড়ে -
মানুষের মন হয় স্মৃতিকাতর ,
অতীতচারী ।

অখন্ড অবসর যেন অতীতের একটুকরো ক্ষেত
যেখানে কর্ষণ করে চলে ক্রমাগত
কলের লাঙ্গল । নরম মাটিতে দাগ রেখে হেঁটে যায়
সময়ের খাঁজকাটা চাকা ।
সময় হারালে হারিয়ে যায় দাঁত , বিবর্ণ হয়ে পড়ে চুল
সবকিছু ফ্যাকাশে হয় তবু -
অতীত যেন আসে আরো কাছে ; আরো উজ্জ্বল
পুর্ণিমায় দ্বাদশী চাঁদের মতন ।

তারপর হঠাৎ একদিন , অতীতও ফুরিয়ে যায়
অচেনা আঁধার সমুদ্রে ।

-লিলুয়া সময় / ১৯-০৬-২০১৩

রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৩

অসাধারণ ভ্রাতৃত্ব

ইয়ারমুক যুদ্ধের ময়দান । ক্ষত বিক্ষত আহত অবস্থায় পড়ে আছেন মুসলিম বীর সাহাবী হারিস ইবনে হিশাম  (রাঃ) , ইকরামা ইবনে আবু জাহল (রাঃ) এবং আয়য়াশ ইবনে আবি রবীয়া(রাঃ)পিপাসায় কাতর হারিস ইবনে হিশাম(রাঃ) পানি চাইলেন । তাঁকে যখন পানির পাত্র দেয়া হল, এমন সময় ইকরামা তাঁর দিকে তাকালেন । হারিস বললেন , ইকরামাকে দাও । পানিটুকু ইকরামার কাছে নিয়ে যাওয়া হলে আয়য়াশ তার দিকে তাকালেন । ইকরামা বললেন , আয়য়াশকে দাও । আয়য়াশের কাছে পানির গ্লাস নিয়ে যাওয়া হলে দেখা গেল তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন । তারপর গ্লাসটি নিয়ে একে একে অপর দুই সাথীর কাছে নিয়ে যাওয়া হলে দেখা গেল তাঁরাও একই পথের পথিক হয়েছেন ।

আল্লাহু আকবার । আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর সাহাবীদের ত্যাগ , ভ্রাতৃত্ব, পারস্পরিক ভালোবাসা ছিল এমনই । জীবনের অন্তিম মুহূর্তেও অন্য ভাইয়ের প্রয়োজনকেই তাঁরা বড় করে দেখেছেন ।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও এমনিভাবে পরস্পরকে ভালোবাসার , পরস্পরকে অগ্রাধিকার দেয়ার তৌফিক দিন । আমীন ।


চিলেকোঠার প্রেম

বহুকাল ধরে চিলেকোঠার সাথে চাঁদের
গোপন প্রেম । বলা চলে সেই –
জন্মলগ্ন থেকেই !
সন্ধ্যাতারা জ্বলে উঠলে
জ্যোৎস্নামাখা চিঠি নিয়ে আসে সাদা ছেড়া মেঘ
অমাবশ্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারেও – চিঠি লিখতে ভোলে না চাঁদ ;
সে চিঠি চিলেকোঠায় আসে, সুবহে সাদিকে ।

আষাঢ়ের কালো মেঘ , বজ্রের গর্জন
ভিলেনের মত বাধা হলে পরে
ঘন বরিষায় ভিজে যায় চিলেকোঠার ছাঁদটা ,
আমার শীর্ণ হাতেও লাগে খানিকটা
বিরহের শীতল পরশ । নিঃসঙ্গ কবির মত
আমিও যেন হয়ে যাই- বিরহী প্রেমিক ।

চিলেকোঠার সাথে আমার বন্ধুত্ব শৈশবের মত
পেঁচা ডাকার মত গভীর হলে রাত্রি
নিস্তব্ধ চিলেকোঠায় কান পেতে শুনি
চাঁদের সাথে তাঁর অপার্থিব প্রেমের কাহিনী
হিমেল হাওয়ার ফিসফিসানি কানে আসে
ঐন্দ্রজালিক সুরের নেপথ্য সংগীতের মত ।
তখন হঠাৎ যেন নিঃসঙ্গ কবির মত
আমিও হয়ে যাই- বিরহী প্রেমিক ।


16-06-2013


শনিবার, ১৫ জুন, ২০১৩

প্রহসন !

মাননীয় আদালত, এই ব্যক্তি খুন করেছে । তাঁকে শাস্তি দিতে হবে ।
কোথায় খুন করেছে ?
তা জানিনা , তবে খুন করেছে এটা নিশ্চিত । তার ফাঁসি চাই ।
কী দ্বারা খুন করেছে ?
তা আমি জানিনা , কিন্তু খুন করেছে এটা নিশ্চিত । এটা সবাই জানে ।
কেউ কি তাঁকে খুন করতে দেখেছে ?
না কেউ দেখেনি । তবে সবাই জানে যে খুনটা সেই করেছে ।
কাকে খুন করেছে ? সে সেময় কি এই ব্যক্তি সেখানে ছিল ?
এই লোক সেসময় সেখানে ছিল কিনা জানা নেই । তবে খুন এই লোকই করেছে ।

আদালতঃ এটা প্রমাণিত হলো যে এই লোকই খুনটি করেছে । তাঁকে ১০০ বছরের কারাদন্ড দেয় হলো ।


১৫-০৭-২০১৩ 

বুধবার, ১২ জুন, ২০১৩

ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে ভুল ধারণা ও অহেতুক ভীতি

বাম ঘরাণার এক আপুর একটা স্ট্যাটাস দেখলাম ফেসবুকে । যার শুরুটা এরকম-
‘চোখ বন্ধ করুন । এক মিনিটের জন্য ভাবুন জামাত , জামতের দোসর হেফাজত এবং বিএনপি ক্ষমতায় । তাহলে কি ঘটবে ? সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবেন ফেসবুক বন্ধ। ইন্টারনেট কানেকশন নাই। মোবাইলে সরকারী বার্তা- ইন্টারনেট একটা ইসলাম পরিপন্থী সেবা, তাই বাংলাদেশের মতো একটি ইসলামিক দেশে এই রকম অনৈতিক সেবা বন্ধ করে ইসলামকে হেফাজত করা হলো। আপনি মন খারাপ করে রাস্তায় বের হবেন’ ।

আমি খুব কষ্ট পেলাম । কথাগুলো যদি তিনি শুধুমাত্র বিদ্বেষ থেকে বলে থাকেন তাহলে কিছু বলার নেই । কিন্তু যদি সত্যিকার বিশ্বাস থেকে বলে থাকেন তাহলে এটা সত্যিই দুঃখজনক । এটা আমাদের একটা ব্যর্থতাকে ইঙ্গিত করে । বাংলাদেশে যারা ইসলামের কথা বলেন- তাঁরা অনেক কিছু করতে পারলেও ইসলামের সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গিটাকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারেন নি । যদি তাঁর মত কেউ এরকম মনে করে থাকেন- তাদেরকে বলছি, ভাই-বোনেরা , ইসলাম কোনকিছুকে অহেতুক নিষিদ্ধ করেনা । ইসলাম ছুরিকে ইসলাম পরিপন্থী বলেনা , কিন্তু ছুরি দিয়ে নিরীহ মানুষ হত্যার কঠোর শাস্তি দেয় ।

যদি ইসলামী রাষ্ট্র গঠন হয় তাহলে ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ করা হবে না । প্রশ্নই ওঠে না । তবে ইন্টারনেটে থাকা পর্ণো সাইটগুলো ঠিকই বন্ধ করা হবে । ফেসবুক বন্ধ করা হবে না, ফেসবুকে থাকা চটি পেজ- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টকারী পেজ বন্ধ করা হবে । টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ করা হবে না, টেলিভিশনে অশ্লীল সিনেমা সম্প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে । সিনেমা হল বন্ধ করা হবে না , সেখানে কাটপিস প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হবে ।
এখন সিদ্ধান্ত আপনার- আপনি কী চান ।

তিনি লিখেছেন- ‘দেখবেন রাস্তায় কোন কলেজ , ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে কানে হেডফোন লাগিয়ে ঘুরছে না। কোন মেয়ে কপালে লাল টিপ দেয়নি। কোন গৃহিণী সংসারের প্রয়োজনীয় বাজার করছে না’

পুরোটাই ভুল ধারণা । ইসলাম কোন মেয়ের কপালে টিপ দেয়া কিংবা বাজার থেকে জিনিসপত্র কেনায় আপত্তি করেনা । তবে উত্তেজক পোষাক আশাক পড়ে, সাজগোজ করে একা একা ঘোরাফেরা করতে আপত্তি করে । আর এটা নারীর নিরাপত্তার কথা ভেবে ।

আরো যা যা ঘটবে বলে তিনি লিখেছেন-
‘রাস্তায় ঢোলা পাঞ্জাবি আর টুপি পরা কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী , হিংস্র দৃষ্টিতে লক্ষ্য রাখছে কোথাও জোরে গান বাজছে কিনা, কোন ছেলেমেয়ে এক সঙ্গে হাঁটছে কিনা। সামনে পহেলা বৈশাখ, অথচ কোন কাপড়ের দোকানে লাল সাদা শাড়ি, ফতুয়া পাঞ্জাবি নেই, সব দোকানে কাল বোরখা আর সাদা পাঞ্জাবি ঝুলছে । পাঠ্য বই থেকে রাবীন্দ্রনাথ নজরুলের এর কবিতা সরিয়ে ফেলা হয়েছে । নারী শিক্ষার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে । কোন ছেলে তার প্রিয়াকে দেখে বলে না, তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় সে কি মোর অপরাধ’ ।

কী পরিমাণ ভুল ধারণা তিনি রাখেন – খুবই দুঃখজনক । তিনি একা না, আরো অনেকেই এমন ধারণা রাখে, বিশ্বাস করে । অথচ ইসলামী রাষ্ট্রে এরকম কিছু ঘটবে না । বেপর্দা হয়ে চলাফেরাকে নিরুৎসাহিত করা হবে, তার মানে এইনা যে কাউকে বোরখা ছাড়া দেখলেই মোল্লারা ধরে থাপড়াবে । লাল শাড়ি – ফতুয়াকে অনৈসলামিক ঘোষণা করা হবে কেন ? যেকোন শালীন পোষাকই ইসলামের বিধানে স্বীকৃত । কিন্তু কোন মেয়ে যদি চিপা জিন্স আর ফতুয়া পড়ে, সেটা কি শালীন দেখায় ? রমনার চিপায় চাপায় প্রিয়-প্রিয়ার অবাধ জড়াজড়িকে অবশ্যই ইসলাম সমর্থন করে না । এটা সমাজের জন্য ভালো নয় । বিয়ে করে বাড়িতে যা ইচ্ছা করেন ।

ইসলামী সংস্কৃতি মানেই আরবীয় সংস্কৃতি নয় । স্থানীয় আচার-আচরণ, স্থানীয় সংস্কৃতি , যা কিছু শোভন, যা কিছু সমাজ জীবনে শান্তি-শৃংখলা নষ্ট করে না , যা কিছু ইসলামের মূলনীতিকে চ্যালেঞ্জ করে না – সবকিছুই ইসলামের গন্ডিতে স্বীকৃত । আমাদের দুর্ভাগ্য যে- একপক্ষের লোকজন ইসলামী সংস্কৃতি বলতে আরবীয় সংস্কৃতি হিসেবে তুলে ধরে মানুষকে বিভ্রান্ত করেন । ইসলাম সংস্কৃতি-বিনোদন বিরোধী বলে প্রচার করে মানুষকে ভুল ধারণা দেন । আবার আলেম ওলামাগণ সাংস্কৃতিক দিকটাকে স্পষ্ট করে তুলে ধরেন না । যার ফলে সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধ সবকিছুকে আজ ইসলামের বিপক্ষে দাঁড় করানো হচ্ছে ।

আসুন- ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করি । বসে বসে কল্পনা করে ইসলামের ওপর দোষ চাপিয়ে শিউরে ওঠার দরকার নাই । ওটা বোকামী , ওটা মুক্তচিন্তা নয় । ইসলামী সমাজ মানে কোন জংলী সমাজ নয় ; আধুনিক, শান্তিপুর্ণ, সুশৃংখল সমাজ ।
জামায়াত , হেফাজত, বিএনপি নিয়ে চিন্তিত হবার দরকার নেই । জামায়াত বিদ্বেষকে ইসলাম বিদ্বেষে পরিণত করবেন না । শেখ হাসিনা যদি আজকে বলেন তিনি দেশে ইসলামী মুল্যবোধের শাসনতন্ত্র দিবেন, আমি আজই আওয়ামী লীগে যোগ দিতে রাজী আছি । কিন্তু আমি জানি- সেই আশা দুরাশা মাত্র !


12-06-2013

সোমবার, ১০ জুন, ২০১৩

সৌভাগ্যবান আমি

অতীতের দিকে তাকালে আমার নিজেকে একজন সৌভাগ্যবান বলেই মনে হয় । এই ক্ষুদ্র জীবনে অনেক কিছুই দেখা হয়ে গেলো । অভিজ্ঞতার ঝুলি যথেষ্ট ভারী হলো । প্রাইমারী স্কুল পড়েছি গ্রামে । দেড় কিলোমিটার দূরে স্কুল । রাস্তার পাশে নদী । স্কুলের বিশাল মাঠ । মাঠের একপাশে জঙ্গল । একপাশে নদী । একপাশে ঈদগাহ মাঠ । সাথেই লাগোয়া আলিয়া মাদ্রাসা, হাফেজিয়া মাদ্রাসা । শৈশবে যেমন প্রয়োজন, ঠিক তেমনি একটি স্কুল । চিরায়ত গ্রামের স্কুল । স্যার, ম্যাডামদের আদর পেয়েছি সবচেয়ে বেশি । আম গাছের নিচে সবুজ ঘাসের ওপর বসে আম পাতা জোড়া জোড়া পড়েছি । স্যার ঘুমিয়ে গেছেন চেয়ারে । সেই দৃশ্যটাকে যেন স্বর্গীয়, নৈসর্গিক, অপার্থিব যেকোন বিশেষণে বিশেষিত করা যায় ।
হাইস্কুল ছিল মফস্বল থানা শহরে । বাড়ি থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে । সাইকেলে সকালে স্কুলে যেতাম , সন্ধ্যায় ফিরতাম । সকাল সন্ধ্যা স্বাধীনতা । শত বছরের পুরনো স্কুল । স্কুলের সবুজ মাঠ । শতবর্ষী তেতুল গাছের নিচে বাধানো । তেঁতুল তলায় পন্ডিত স্যারের ব্যাকরণ ক্লাসটা এখনো যেন চোখে ভাসছে ।

কলেজ পড়লাম প্রায়-বিভাগীয় শহরে । বিশ্ববিদ্যালয় পড়লাম বিভাগীয় শহরে , বানিজ্যিক রাজধানীতে । সবগুলো স্টেজে সর্বোচ্চ ভালো ফলাফলই পেলাম । এরপর যাব মেগাসিটি রাজধানীতে । তারপর হয়তো বিদেশ । বয়সের সাথে সাথে এগিয়ে চলেছে জীবন । ঠিক যেন –যখন যেমন প্রয়োজন ।

বাবা মধ্যবিত্ত স্কুল-শিক্ষক । আমার মনে হয়- জীবনকে চেনার জন্য , জীবনের সুখ-দুঃখ গুলো কাছে থেকে উপলব্ধি করার জন্য এরকম মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ অনিবার্য প্রয়োজন । একটু অভাব , একটু স্বচ্ছলতা । কখনো না চাইতেই পাওয়া, কখনো কান্নাকাটি করেও না পাওয়া । এভাবেই অনুভূতিগুলো যেন একটা শক্ত কাঠামোর ওপর দিয়ে গড়ে উঠেছে ।

জাহেলিয়াতের খপ্পরে পড়ার আগেই পেয়েছি জান্নাতি সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের দেখা । সংগঠনের সকল স্তরে – সব ধরণের শাখায় কাজ করার সুযোগ হল । মহানগর/সদস্য শাখা, শহর শাখা , জেলা শাখা, থানা শাখা, সাথী শাখা, সাংগঠনিক থানা শাখা , উপশাখা, আবাসিক ওয়ার্ড, স্কুল, কলেজ, সংস্কৃতি বিভাগ......আলহামদুলিল্লাহ্‌ । শত শত ছাত্রকে আল্লাহর দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার সুযোগ পেলাম । সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে এসএসসির পরের সময়টুকুর কথা । আমার থানা থেকে আমি প্রথম এ প্লাস পেয়েছিলাম । থানার স্কুলে স্কুলে দাওয়াতী টিম নিয়ে ঘুরে ঘুরে দাওয়াতী কাজ করাটা সত্যিই এক অসাধারণ স্বর্গীয় অনুভূতি । আমি কথা বলতাম , সবাই চুপচাপ শুনতো । প্রশ্ন করতো , উত্তর দিতাম । সে একটা নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তখন ।

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি করতে হলো ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্রইউনিয়ন সবার সাথে । বেস্ট থেকে অর্স্ট সব পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে । অনেক সম্মান, অনেক নির্যাতন । জেনেছি সবার রুপ, কর্মপদ্ধতি, ইসলাম ও জাহেলিয়াতের পার্থক্য । আলহামদুলিল্লাহ্‌ ।
ছোটবেলায় কিশোর কন্ঠ , ইয়ুথ ওয়েভ এর এজেন্ট ছিলাম । লেখা পাঠাতাম , ছাপাত । নির্মল আনন্দ পেতাম । নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে হত । বড় হয়ে বছর দুয়েক জাতীয় পত্রিকায় সাংবাদিকতাও করেছি ।

এখন বয়স ২৪ । 

আলহামদুলিল্লাহ্‌ । এই সময়টুকুর কথা যখন চিন্তা করি, মনে হয় অনেক অনেক বেশি দিয়েছেন মহান রাব্বুল আলামীন । সব ধরণের মানুষের সাথে মিশতে পেরেছি । অসংখ্য বই পড়ে আর নানান অভিজ্ঞতায় ইচড়ে পাকা হয়েছি ।

২৫ থেকে ৪০ আরেকটা পিরিয়ড । এই সময়টা নিজেকে গঠন করতে হবে । কাচামাল যোগাড় হয়েছে, এখন সেগুলোকে পোক্ত করতে হবে । ভুলত্রুটিগুলো খুঁজে বের করতে হবে । চিন্তাচেতনায় ঢালাই করতে হবে । পরিপক্ক করতে হবে মন-মানস । তারপর আল্লাহ বাচিয়ে রাখলে ৪০ থেকে ৬০ এই ২০ বছর এক কঠিন সংগ্রামে নেমে পড়তে হবে । মানুষের জন্য, সত্যের জন্য , আল্লাহর দ্বীনের জন্য । দেখা যাক আমার প্রভু সামনে আমার জন্য কী রেখেছেন । আল্লাহ তুমি তাওফিক দিও ভালো থাকার, ভালো কাজ করার । আমীন ।



10-06-2013

হকপন্থী দল নির্ণয়

ইসলামী দল কিংবা ইসলামপন্থি ব্যক্তিদের মধ্যে হকের পথে কে বা কারা আছেন সেটা নির্ণয় করার জন্য আমি সহজ পন্থা অবলম্বন করি । বৃক্ষ তোমার নাম কী , ফলে পরিচয় । যারা ইসলাম ও ইসলাম প্রতিষ্ঠার পথে আসল প্রতিবন্ধকদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে, তারা হকপন্থি । বাকিরা হকের পথে আছেন কিনা তা নিয়ে আমি বাস্তবিক কারণেই অনেক বেশি সন্দিহান ।

বাংলাদেশে ইসলাম ও ইসলামী আন্দোলনের প্রধান শত্রু কারা ? নিঃসন্দেহে কম্যুনিস্ট ও সেক্যুলাররা । কম্যুনিস্ট ও সেক্যুলারদের উত্থান ও লালনপালন করছে কে ? আওয়ামী লীগ ।
আমি যাদেরকে দেখি ইসলামী দল ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন, কিন্তু কম্যুনিস্ট এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলেন না – আমি নিশ্চিত, তারা হকের পথে নেই । অমুক শায়খের অনুসারী, তমুক দলের অনুসারী , বুজুর্গের অনুসারী, পীরের অনুসারী, মুখে মুখে খেলাফত কায়েম করেন , বাস্তবে দেখা যায় তাঁর দাওয়াতী কাজের নামে ৯০% সময় খরচ করেন অন্য কোন আলেম অথবা ইসলামী দলের কুৎসা গেয়ে । বিষোদগার করে । আসল শত্রুদের বিরুদ্ধে ১০% সময়-সামর্থ্যও কাজে লাগান না ।

আমার মনে প্রশ্ন জাগে, আপনারা মওদূদীকে যতবার কাফের বলেন , জাকির নায়েককে যতবার কাফের বলেন, হাসান আল বান্নাকে কাফের বলেন – আমরা হিসাব রাখতে হিমশিম খাই । কই, শেখ হাসিনাকে একবারও কাফের বলেন না কেন ? সাজেদা চৌধুরীকে বলেন না কেন ? মেনন-ইনুকে বলেন না কেন ? শফিক আহমেদকে অলেন না কেন ? অথচ এরা আমাদের সংবিধান থেকে ‘আল্লাহর ওপর আস্থা’ টুকু পর্যন্ত বিলুপ্ত করে দিয়েছে । আপনাদের কাছে কি মাওলানা মওদূদী, হাসান আল বান্না, জাকির নায়েকের চেয়ে এরা বেশি বুজুর্গ ? এরা বেশি ঈমানদার ?

নারী নেতৃত্ব নিয়ে সারাদিন তেনা পেচান । জামায়াতে ইসলামী , খেলাফত মজলিস, ইসলামী ঐক্যজোটের পিন্ডি চটকান । শেখ হাসিনা-খালেদা জিয়াকে বলেন না কেন যে, আপনারা নেতৃত্বে থাকলে আপনাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবো ?
সেইটা তো করেন না । তো আপনাদের এইসব কথাবার্তাকে ফাইজলামি ছাড়া আর কী বলা যাবে ?

ভাইয়ে ভাইয়ে মতবিরোধ থাকলে সেটা ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের পরেও মিমাংসা করা যাবে । কিন্তু আপনারা ইসলামী দলকে ভাই মনে করেন না । সেক্যুলার-নাস্তিক- ও তাদের লালনকারি আওয়ামী লীগের চেয়ে বড় শত্রু মনে করেন ।

ভাইসব , যারা সারাদিন বিভিন্ন ইসলামী দল ও আলেমদের বিরুদ্ধে লেগে আছেন – সাবধান হোন । আমার দৃঢ় বিশ্বাস- ইসলামের প্রকৃত শত্রুদের বিরুদ্ধে না লড়ে, মুসলিমদের ভেতর ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক নষ্ট করে , ঐক্যের পথে বাধা সৃষ্টি করে , আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠাকে বিলম্বিত করে যে ক্ষতি করছেন- আল্লাহর কাছে জবাব দিতে পারবেন না ।


10=06=2013

শনিবার, ৮ জুন, ২০১৩

অনলাইন ডাকাতের কবলে

২০০৮ সালে ছাত্র নামের ডাকাতরা আমার সবকিছু পুড়িয়ে দিলে আমার সবচেয়ে প্রিয় দশটি ফুলের মত সুন্দর ডায়েরি পোড়া গিয়েছিল । আমার ছোটবেলা থেকে লেখা কচি হাতের কাঁচা লেখাগুলি সেদিন ছাই হয়ে গিয়েছিল । ছড়া, কবিতা,ছোটগল্প । আর আত্মজীবনী ! ভেবেছিলাম, জীবনে আমি অনেক বড় হবো, তাই আমার আত্মজীবনীটা লিখে রাখা দরকার ! সেই ডায়েরিগুলো নষ্ট হওয়ায় খুব খারাপ লেগেছিল ।

আজ অনলাইন ডাকাতরা আমার ফেসবুকের ওয়াল থেকে অসংখ্য স্ট্যাটাস গায়েব করে দিয়েছে । ঠিক সেদিনের মত কষ্ট আজও পেলাম । ডায়েরিতে আর লেখা হয়নি । ২০০৯ সাল থেকে ব্যস্ত জীবনের অনুভূতি আর চিন্তাভাবনা গুলো লিখতাম স্ট্যাটাসে । আজ সেগুলো হারিয়ে গেল । সাম্প্রতিক কিছু স্ট্যাটাসের ব্যাকআপ আছে, কিন্তু পুরনো স্ট্যাটাসগুলোর ব্যাকআপ নেই । সেগুলো আর কোনদিন ফিরে পাওয়া যাবে না ।
পুরনো যেসব স্ট্যাটাস ব্যাকআপে রয়েছে মাঝে মাঝে সেগুলো রিআপলোড করবো । দয়া করে কেউ বিরক্ত হবেন না ।
আসুন এইসব অনলাইন ডাকাতদের প্রতি ধিক্কার জানাই ।




০৮-০৬-২০১৩ 

বুধবার, ৫ জুন, ২০১৩

যুগসন্ধিক্ষণের প্রজন্ম আমরা

এখন যেসব বাচ্চার জন্ম হচ্ছে সম্ভবত তারা একটা নতুন যুগের প্রজন্ম । ডিজিটাল প্রজন্ম । এরা যদি হাজার বছর ধরে উপন্যাসটা পড়ে, খুব বেশি কিছু বুঝতে পারবে না । শত শত বছরের চিরায়ত বাংলার সেইসব ঘটনা তারা উপলব্ধি করতে পারবে না । তাদের মনে খুব বেশি দাগ কাটবে না । তারা কল্পনা করতে পারবে না , আসলে কী ঘটতো সেই সময় ।

আমাদের বয়সী যারা, তারা সৌভাগ্যবান । আমরাই বোধহয় হাজার বছর ধরে –তে চিত্রায়িত সেই বাংলার শেষ প্রজন্ম । আমি ঢেকি দেখেছি , ঢেকিতে ধান ভানা দেখেছি । গরুর গাড়ি দেখেছি- গরুর গাড়িতে চড়ে অনেক পথ পাড়ি দিয়েছি । পুথি পাঠ শুনেছি । গাজী-কালু-চম্পাবতীর কিচ্ছা শুনেছি । শহীদে কারবালার কাওয়ালি শুনেছি । গানে গানে ঝগড়ার পালাগান শুনেছি । বায়োস্কোপ দেখেছি । হা্ডুডু খেলেছি , ছি-বুড়ি-দাড়িয়াবান্ধা খেলেছি । বউ পেটানো মকবুল বুড়োকে দেখেছি-চিরায়ত বাংলায় ।

এই সময়ের বাচ্চারা আর সেইসব দেখতে পাবে না । ঐসব বিলুপ্ত হয়ে গেছে প্রায় সবই ।
ওলা বিবিকে তাড়ানোর জন্য থালাবাটি ঢাক ঢোল বাজিয়ে ইয়া আলী ইয়া আলী করাটাও এখন আর কোথাও পাওয়া যাবে না । ছোটবেলায় আমি দুয়েকবার ওলাবিবি তাড়ানোর সুযোগ পেয়েছিলাম । অনেক লোক রাস্তায় নেমেছিল । আম্মা বলেছিলেন, এইগুলা কুসংস্কার । তবু আমি একটা বড় থালা হাতে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলাম । ইয়া আলী ইয়া আলী বলতে বলতে থালায় হাত দিয়ে শব্দ করেছিলাম ।
এরপর আর কখনো দেখিনি ।

আমাদের বেড়ে ওঠার সময়টাতে- গত দশ-পনেরো বছরে বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে খুব দ্রুত । রঙ্গিন টেলিভিশন, মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট সবকিছু । আমরা এই সময়টাও পাচ্ছি এবং খুব ভালোভাবেই ভোগ করছি । কিন্তু আমাদের দাদারা এই সময়টা পান নি । তারা এই নতুন যুগটাকে পাননি । বাবা-চাচারা দেখছেন, কিন্তু ঠিকমত কাজে লাগাতে পারছেন না ।
আমরা –এখন তরুণ প্রজন্ম সত্যিই অনেক অনেক ভাগ্যবান । মনে হয় দুটি সহস্রাব্দের মাঝখানে আমাদের জন্ম । দুই সহস্রাব্দেরই মানুষ আমরা । ভাবতে ভালোই লাগে ।


05-06-2013