এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

রবিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৭

দান

আজকে সকালে অফিসে এসে খবরটা শুনে মনটা ভালো হয়ে গেলো মাসুদ সাহেবের। তার কোম্পানি বন্যা দুর্গতদের জন্য মোটা অংকের সাহায্য করছে। পাঁচ লাখ টাকা।
মাসুদ সাহেব একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। বেতন যা পান, তা দিয়ে মোটামুটি চলে যায়। তবে কোনোমাসে বাড়তি খরচ থাকলে বেশ টানাটানি পড়ে যায়। এই যেমন গতমাসে হঠাৎ ছেলেটা অসুস্থ হয়ে পড়লো। সবার হচ্ছে চিকনগুনিয়া, কিন্তু ছেলের হলো টাইফয়েড জ্বর। অবস্থা বেশ খারাপের দিকে ছিল। সাতদিন হাসপাতালে ভর্তি থেকে দামী ইঞ্জেকশন দিতে হলো।
সব মিলে এ মাসে বেশ টানাটানি করেই চলতে হবে। বেশ কিছু ধারদেনাও হয়ে গেছে এরমধ্যে।
পত্রিকায় টিভিতে বন্যার খবর দেখে মাসুদ সাহেবের অনেক খারাপ লাগে। মন চায় কিছু হলেও সাহায্য করতে। কিন্তু এইমাসে অনেক টানাটানি। সম্ভব হবে না। এনিয়ে মনে মনে খুব কষ্ট পাচ্ছিলেন তিনি। মানুষের এমন দুর্দিনে কিছুই করতে পারলেন না ভেবে অস্থির বোধ করছিলেন। কিন্তু আজকে খবরটা শুনে মনের ভার কিছুটা হলেও লাঘব হলো। কোম্পানি থেকে সাহায্য করা হচ্ছে। কোম্পানির সাহায্য মানে তো তারই সাহায্য করা। কোম্পানিতে তার একটা অংশ আছে না! আর কোম্পানির চেয়ারম্যান লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছিলেন, লোকটা বোধহয় আসলে অতটা খারাপ না। লোকটার প্রতি শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো মাসুদ সাহেবের।
২.
এক তারিখে বেতন তুলতে গিয়ে অবাক হলেন মাসুদ সাহেব। দেখলেন, তার একাউন্টে বেতন থেকে ১ হাজার টাকা কেটে নেয়া হয়েছে। কারণ জিজ্ঞেস করায় তাকে দেখিয়ে দেয়া হলো, একাউন্টস সেকশনের সামনে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তি ঝুলছে, 'বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য সব কর্মচারীর এক দিনের বেতন কেটে নেয়া হলো'।
কোম্পানির কর্মচারীর সংখ্যা ৫ শতাধিক। বেতন থেকে কাটা হয়েছে ন্যুনতম এক হাজার টাকা করে। আর ওদিকে সাহায্য দেয়া হয়েছে ৫ লাখ। হিসাবটা তার সামনে দিনের আলোর মত পরিস্কার হয়ে গেলো। আর মনের পর্দায় ভেসে উঠলো কোম্পানি চেয়ারম্যানের ত্রাণ সাহায্য প্রদানরত ছবিটা। কে দান করে কার পকেটের টাকা?

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন