এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...

এক রৌদ্রোজ্বল বিকেলে...
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে

মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

যা করার হুটহাট করে ফেলেন...

'হুট করেই বিয়েটা হয়ে গেলো গতকাল। সবকিছু এত দ্রুত করতে হয়েছে, কাউকে জানাতে পারিনি বলে দুঃখিত। সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন।'
বিয়ের ঘটনাগুলো আমরা এখন বেশিরভাগ সময় এভাবেই জানতে পারি। এইটা হল ফেসবুক যুগের ট্রেন্ড। এবং সত্যি বলতে কী, I like this..
আমার পরিচিত ভাই বেরাদরদের আমি সবসময় বলি- ভাই, যা করার হুটহাট করে ফেলেন। নিকটাত্মীয়দের নিয়ে কম খরচে সাদাসিধা আর ঘরোয়াভাবে করে ফেলেন। তারপর ফেসবুকে লিখে দিবেন, হুট করে সব হয়ে গেছে, কাউকে জানাতে পারিনি বলে দুঃখিত।
আমরা দাওয়াত চাই না, শুধু সংবাদটা চাই। Esophagus পর্যন্ত খাওয়া হোক বা নাহোক, শুভেচ্ছা জানাতে আর দোয়া করতে কোনরকম কার্পণ্য করা হবে না।
কিছুদিন আগে ফেসবুকে একটা লেখা খুব ঘুরছিল- কুটিকুটি টাকার ব্যাকআপ ছাড়া নাকি বিয়া করা যায় না।
ইনভাইটেশন কার্ড, পার্লার, দামী দামী সব কাপড়চোপর, স্বর্ণের অলংকার, বিরাট অনুষ্ঠান, কনভেনশন সেন্টারের ভাড়া, হাজারো মানুষের খাওয়া দাওয়া...
এক কথায়- টাকা উড়ানোর যত ধরণের উপায় বের করা সম্ভব, কোনোটাই যেন বাদ দেয়া যাবে না।
তো টাকা আসবে কোত্থেকে? দেশের গুটিকয়েক ধনকুবের পরিবারকে আমরা আমাদের আলোচনার বাইরে রাখছি। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বাবা মায়েরা কিছু টাকা জমিয়ে রাখেন বটে, তবে সেটা মেয়ের বিয়ের জন্যে। ছেলের জন্যে না। মেয়ের বিয়ে দেয়ার পর ছেলের জন্যে আর তেমন একটা জমানো টাকা থাকেনা। তাছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন বাবার পক্ষেই বা কী করে সম্ভব দুই তিনটা ছেলের প্রত্যেকের বিয়েতে পাঁচ ছয় লাখ করে টাকা খরচ করা!
সুতরাং ভংচং যত খরচই হোক, সেগুলো যোগাড় করতে হবে ছেলেকেই। একটা ছেলে তার লেখাপড়া শেষ করে কর্মজীবনের শুরুতে কীভাবে লাখ লাখ টাকা খরচ করবে? চাকরির বাজারও মন্দা, চাকরি পেতেও দিতে হয় লাখ লাখ টাকার ঘুষ। কখনো জমানো টাকাটা সেখানেই চলে যায়। কখনো কখনো ঋণ নিয়ে ঘুষের যোগান দিতে হয়।
তো এইসব ছেলেরা বিয়ের জন্য কীকরে টাকা জমাবে? কতদিন জমাবে? ঋণ করা ছাড়া তার উপায় কী? আর আলতু ফালতু খরচের জন্য কেন তাকে ঋণ করতে হবে?
সুতরাং যতসব ফালতু ট্রেন্ড বন্ধ করে নতুন ট্রেন্ড চালু করতে হবে।
গতবছর পত্রিকায় খবর বেরিয়েছিল, ভারতে এক তরুণী তার বিয়ের মোহরানা হিসেবে বরের হাতে একগাদা বইয়ের লিস্ট ধরিয়ে দিয়েছিলেন। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশের এক তরুণী তার বিয়ের দিন দাদীর শাদা শাড়ি পরে বিয়ে করেন। দামী শাড়ি, গয়না আর পার্লারি সাজগোজের বিপরীতে এটা ছিল নীরব প্রতিবাদ। আউট অব ট্রেন্ড। তার এই ঘটনাটিও অনলাইনে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।
এগুলো ভালো ট্রেন্ড। এরকম ভালো ট্রেন্ড শুরু হোক। বেশি বেশি প্রচলন ঘটুক। প্রথা এবং ঐতিহ্যের শুধু সেটুকুই আমাদের চালু রাখতে হবে- যেটুকু সহজ, স্বাভাবিক এবং কল্যাণকর।
বিয়েগুলো হোক মসজিদে। কিংবা একদম ঘরোয়াভাবে। বারান্দায় হোক, ড্রয়িংরুমে হোক। অসুবিধা কোথায়? জমকালো ইনভাইটেশন কার্ডের বদলে চালু হোক হাতে লেখা 'নিমন্ত্রণ পত্র'! ওয়ালিমা হোক বাড়ির উঠানে, কিংবা মসজিদের বারান্দায়। বিরিয়ানি রোস্টের বদলে একটা ওয়ালিমা হোকনা ডাল ভাত ভর্তার! সবকিছু হোক সহজ স্বাভাবিক।
বিয়েবাড়ির খরচ কমিয়ে হানিমুনেই নাহয় বেশি করে খরচ করুন, তাও ভালো।
(ঠিক করেছি, বিয়ের পর আমার বউকে 'গরুর গাড়িতে' করে তার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাবো। এই সময়ের জন্য আউট অব ট্রেন্ড অবশ্যই। সমস্যা হলো, গরুর গাড়ির খরচটা মোটরগাড়ির তুলনায় আদৌ কম হবে কিনা সে বিষয়ে আমি এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি।  

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন